Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.25 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
একজন মা, আর একটি ছেলে (সংগৃহীত)
#9
আমার অপরিপক্ক বয়সের পাকা কথায় মা কি কোন কষ্ট পেলো কিনা কে জানে! রাগ করেই উঠে চলে গেলো কিনা, তাও বুঝতে পারলাম না। এমন কিছু কথা মাকে বলবো বলবো বলে, অনেক দিন ধরেই মনে মনে সাজিয়ে রেখেছিলাম। হঠাৎ যে সেগুলো, ঝোঁকের বশে বলে ফেলে, মাকে কষ্ট দেবার জন্যে, মনটা খুব খারাপই হয়ে গেলো। আমি মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্যেই এগিয়ে গেলাম ভেতরে।

মা তখন বসার ঘরের জানালার প্রশস্ত কার্ণিশ এর উপরই বসেছিলো। পরনের বোতাম খুলা পোষাক এর অস্তিন দুটি দু পাশে সরে গিয়ে, বিশাল বক্ষ দুটি উদোম করেই রেখেছিলো। বক্ষের ডগায় গাঢ় খয়েরী প্রশস্ত বৃন্ত প্রদেশ যেনো চোখ মেলেই তাঁকিয়ে আছে আমার দিকে। এমন সুদৃশ্য বক্ষ যে কোন পুরুষ দেহে, আগুন জ্বালিয়ে দেবার মতো। আমার ষোল বছর বয়সের বাড়ন্ত দেহেও উষ্ণতা অনুভব করছিলাম ঠিকই, অথচ তার চেয়ে লজ্জাটাই যেনো আরো বেশী অনুভব করছিলাম। 

আমি লজ্জা আর ভয় মিশ্রিত ভাব নিয়েই মায়ের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি ভয়ে ভয়েই বললাম, স্যরি মা!
মা বোধ হয় খানিকটা অন্য কোন জগতেই হারিয়েছিলো। মুচকি হেসেই বললো, স্যরি কেনো?
আমি বললাম, হঠাৎ আবেগের বশে, তোমাকে কষ্ট দিলাম।

মা বললো, কষ্ট দিলি কোথায়? এমন কিছু কথা, আমিও ভাবছিলাম!
মা খানিকটা থেমেই বললো, আসলে, একটা ছেলেকে আমিও খুব ভালোবাসি। ভাবছি তাকে কাছে পেলে, নুতন করেই আবার জীবন শুরু করবো!

মায়ের কাছে আমি হঠাৎই যেনো খুব সহজ হয়ে পরলাম। খুব আগ্রহ নিয়েই বললাম, কে সে? কোথায় থাকে? আমাকে বলো, আমি সব কিছু ম্যানেজ করবো!
মা বললো, ছেলেটা এই কক্সবাজারেই থাকে। খুবই হ্যাণ্ডসাম! কিন্তু জানিনা, ছেলেটা আমাকে ঠিক পছন্দ করে কিনা!
আমি বললাম, তার সাথে আলাপ হয়নি কখনো?

মা বললো, সাধারন আলাপ হয়েছে। টুকটাক কথা বার্তা আর কি?
আমি আরো বেশী আগ্রহ নিয়ে, অশান্ত হয়েই বললাম, তুমি লোকটার নাম ঠিকানা বলো, আমি তার কাছে সব খুলে বলবো!
মা চোখ বড় বড় করেই বললো, বলিস কি? যদি ছেলেটা রাজী না হয়, তাহলে খুবই লজ্জার কথা! না না, তা কক্ষনো সম্ভব না। আমাকে আরো কয়টা দিন সময় দে! আমি নিজেই সব কিছু খুলে বলবো।

আমি খানিকটা শান্ত হয়ে বললাম, ঠিক আছে, তাহলে আমি কিছু করবো না। তবে, লোকটার নাম ঠিকানাটা তো বলতে পারো! দূর থেকে লোকটাকে চিনে রাখতে তো আপত্তি নেই!
মা খানিকটাক্ষণ ভাবলো। তারপর বললো, এখন না! অন্যদিন বলবো!

মাকে আমি ভালো করেই চিনি। মাঝে মাঝে খুবই চঞ্চলা হরীনীর মতো এক কিশোরী, মাঝে মাঝে চাপা স্বভাবের কঠিন মনেরই এক মহিলা। মায়ের পছন্দের লোকটির কথা আর সেদিন জানা হলো না। মা রান্না বান্নার কাজেই ব্যস্ত হয়ে পরলো।


তারও অনেকদিন পর।

মায়ের কথা মতোই, চায়ের দোকানের কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে নাপিত এর দোকানে যাই সেভটা করার জন্যে! নাপিতের দোকানের বড় আয়নায় নিজেকে দেখে, হঠাৎ কেনো যেনো নায়ক নায়ক একটা ভাবই জেগে উঠতে থাকলো আমার মনে। সাধারনত মলিন পোষাক পরেই চায়ের দোকানে কাজ করি। হঠাৎই ইচ্ছে হলো খুব ভালো কিছু পোষাক পরতে।

সেদিনও বিকাল বেলাটায় ছুটি নিলাম, চায়ের দোকান থেকে। নিজে একটা চায়ের দোকান দেবো বলে ব্যাংকে টাকা জমানো শুরু করেছিলাম। আমি ছুটে গেলাম ব্যাংকে। জমানো টাকার কিছু অংশ তুলে নিয়ে, সুপার মার্কেটের সেরা পোষাকের দোকানটাতেই ঢুকলাম। বেছে নিলাম, চক চক করা ছাই রং এর দামী একটা টি শার্ট, আর জিনস এর প্যান্ট! ট্রায়াল রুমে গিয়ে পরেও দেখলাম। লম্বায় আমি খুব একটা খারাপ না। স্বাস্থ্যটাও ভালো। সিনেমার নায়কদের মতোই লাগলো নিজেকে। তবে, পায়ে এক জোড়া দামী শো থাকলে আরো মানাবে। আমি জুতোর দোকানে গিয়ে, দামী এক জোড়া জুতোও কিনে ফেললাম।

পোষাক মানুষকে এতটা বদলে দিতে পারে, ধারনা ছিলো না আমার! পথে বেড়িয়ে, আমি যেনো হাওয়ার উপরই উড়তে থাকলাম। আমার উরু উরু মনটা যেনো সিনেমার নায়কদের মতোই রাজপথ থেকে, পাহাড়ী পাদদেশে নেমে, রোমান্টিক গানের সুরেই নাচতে থাকলো। আমি পাহাড়ী পথ ধরেই ছুটতে ছুটতে বাড়ীতে ফিরে এলাম।

মা তখন উঠানেই নিসংগ সময় কাটাচ্ছিলো। পরনে লাল রং এর পাতলা একটা ওড়না দিয়ে, বক্ষ দুটি মিছি মিছি ঢেকেই উদাস মন নিয়ে পায়চারী করছিলো। আমাকে দেখেই মা খুব চমক ভরা গলায় বললো, একি দেখছি তোকে? হঠাৎ এক্কেবারে, নায়ক সেজে! কারো প্রেমে ট্রেমে পরেছিস নাকি?

মায়ের কথায় আমি হঠাৎই কেমন যেনো লজ্জিত হয়ে পরলাম। আমতা আমতা করেই বললাম, না মানে, হঠাৎ শখ হলো! মাঝে মাঝে তো ভালো পোষাকও পরতে হয়!
মা খুব মমতার গলাতেই বললো, না, মাঝে মাঝে না। তুই সব সময় এমন ভালো পোষাক পরবি!

আমি বললাম, অশিক্ষিত মানুষ, চায়ের দোকানে কাজ করি। সব সময় ভালো পোষাক পরলে, লোকে টিটকারী করবে! আসার পথেও অনেকে করেছে!
মা বললো, করুক! তুই লোকের কথা শুনবি কেনো? তুই আমার পথিক! তুই শুধু আমার কথা শুনবি! শুনবি না?

মায়া মমতার ব্যাপারগুলো এমন কেনো জানিনা। মায়ের কথায় হঠাৎই কেনো যেনো, আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরার উপক্রম হলো। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, জী মা, শুনবো।
মা খুবই রোমান্টিক গলাতেই বললো, তাহলে চল, ওখানটায় বসি। প্রতিদিন অনেক রাত পর্যন্ত্য চায়ের দোকানে থাকিস, তোর সাথে অনেকদিন ভালো করে কথা বলা হয়না। আজ যখন একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছিস, তখন অনেক অনেক গলপো করবো তোর সাথে।

মা ছোট রাধাচূড়া গাছটার পশেই, দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসলো। আমি খানিকটা দূরেই দাঁড়িয়েছিলাম। মা বললো, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বোস!
আমি খানিকটা দূরেই একটা ছোট পাথরের উপর বসলাম। মা বললো, আরো কাছে আয়! এত দূর থেকে কি কথা বলা যায়?
আমি মায়ের কাছাকছি গিয়েই বসলাম। মা খুব আব্দার করা গলাতেই বললো, আরো কাছে! আমার গা ঘেষে বোস!

আমি খানিকটা ক্ষণ মায়ের চোখে চোখেই তাঁকিয়ে রইলাম। কেনো যেনো মনে হলো, মায়ের চোখ দুটি নিসংগতার যন্ত্রণাতেই অশান্ত হয়ে আছে। আমি মায়ের নরোম ডান বাহুটার সাথে ঠেস দিয়ে বসেই বললাম, ঠিক আছে বসলাম! বলো, কি বলবে!

মা খানিকটাক্ষণ চুপচাপই থাকলো। তারপর, আমার দিকে মাথা ঘুরিয়েই বললো, সত্যিই কারো প্রেমে পরেছিস?
আমি চোখ কপালে তুলেই বললাম, কি যে বলো মা! আমার মতো চায়ের দোকানের একটা ছেলেকে পছন্দ করবে কে?
মা যুবতী একটি মেয়ের মতো করেই বললো, মেয়েদের বিশ্বাস নেই। হ্যাণ্ডসাম ছেলে দেখলে, ছেলে কি করে, কি পরিচয়, এসব নিয়ে ভাবে না।

আমি বললাম, ওসব বাদ দাও! তোমার কথা বলো। সেদিন বলেছিলে, কাকে নাকি তোমার খুব পছন্দ! কিছু এগুতে পারলে?
মা কাৎ হয়ে, আমার বাম উরুটা পেঁচিয়ে ধরে, থুতনীটা আমার হাঁটুর উপর ঠেকিয়ে বললো, মোটেও এগুতে পারিনি! ভাবছি, আজকে ছেলেটাকে সব খুলে বলবো!

আমি খুব আনন্দিত হয়েই বললাম, বেশ তো! তাহলে এখানে বসে আছো কেনো? তাড়াতাড়ি গিয়ে বলে ফেলো। আমাকে যদি কিছু করতে হয়, তাও বলো!
মা বিড় বিড় করেই বললো, বলতে তো চাই, সাহসই পাচ্ছি না শুধু। যদি ছেলেটা ফিরিয়ে দেয়!
আমি বললাম, মা, তুমি শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছো! কোন কিছু মনে মনে রেখে তো লাভ নেই। মনের কথা প্রকাশ না করলে, লোকটা জানবেই বা কেমন করে? তোমাকে ফিরিয়ে দেবে কি, বরন করে নেবে, তাও বা জানবে কি করে?

মা সোজা হয়ে বসে বললো, ঠিক আছে, সব খুলে বলবো। তবে, তুই বলেছিস, আমার সব কথা শুনবি। এখন আমার একটা কথা রাখবি?
আমি বললাম, কি?
মা বললো, আমাকে অমন মা, মা বলে ডাকতে পারবি না। শুনতে আমার খুব খারাপ লাগে।
আমি বললাম, ঠিক আছে, তাহলে কি ডাকবো, খালা?
মা বললো, না, তাও না।
আমি বললাম, ঠিক আছে! তোমার সাথে তো আমার কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। পথ থেকে কুড়িয়ে আশ্রয় দিয়েছিলে বলেই, মা বলে ডাকতাম। তোমার যদি এতই খারাপ লাগে, তাহলে, আপা বলেই ডাকবো।

মা তৎক্ষনাত রাগ করেই উঠে দাঁড়ালো। বললো, না!
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েই বললাম, তাহলে কি ডাকবো?
মা বললো, নাম ধরে ডাকবি, নাম! আমার একটা নাম আছে, মা বাবার দেয়া নাম, সাবিহা। সেই নামে ডাকবি!
এই বলে মা অন্যত্র ছুটতে থাকলো পাগলের মতো। 

হঠাৎ মায়ের কি হলো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না আমি। শুধু তাঁকিয়ে রইলাম, তার ছুটার পথে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: একজন মা আর একটি ছেলে (সংগৃহীত) Part: 01 - by Johnny Da - 10-11-2019, 07:50 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)