08-11-2019, 02:21 PM
একসময় দরজা ধরাম করে বন্ধ হোল। আমি একটা জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লাম। বাঁচা গেল। কেউ ধরতে পারে নি আমি আছি বলে। দরজায় তালা লাগিয়ে কাজী আর তনু নেমে গেল। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম যতক্ষণ না সিঁড়িতে ওদের পায়ের শব্দ মিলিয়ে যায়। আরও কিছুক্ষন ওয়েট করে আমি ধীরে ধীরে বেড়িয়ে এলাম ঘরের বাইরে। চলে গেলাম ছাদে। পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। বুক ভরে ধোঁওয়া নিলাম। উফ, কতক্ষন সিগারেট খাই নি। আরও কিছুক্ষন ওয়েট করে আবার পিছনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম। সরু রাস্তা ধরে বাড়ীর সামনে চলে এলাম। চারপাশ দেখে নিলাম কেউ আছে কিনা। লোকজন ঘুরতে শুরু করেছে। কিন্তু আমাকে দেখে কেউ সন্দেহ করে নি। আমি বাড়ীর সামনে এসে পকেট থেকে মোবাইল বের করে অন করে দিলাম। জানি না কতজন কল করেছে আর পায় নি। এসে যাবে সব একেক করে কারন মিস কল আলার্ট অন করা আছে। পকেট থেকে চাবি বার করে আমি ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে তালা খুলে ঘরে ঢুকলাম যে ঘরে আমি এতক্ষন চোরের মত কাজী আর তনুর কারবার দেখছিলাম। কি দেখলাম। তনুর কারবার। মেয়েটা কোথায় নেমে গেছে। সেক্সের জন্য তো অনেক কিছু করতে পারে। করতে পারে টাকার জন্য। করতে পারে ও আমার গলার চেন নিয়ে নেবার জন্য। ওই সন্ধ্যেবেলা আমি এক পেগ মদ খেয়ে নিলাম যা দেখেছি, যা ভেবেছি সব মদে গুলে মিশিয়ে দিতে। আমাকে ভাবতে হবে তনুকে নিয়ে। কিন্তু আমার যে স্নেহা আছে। আলাদাভাবে কি করে ভাববো? জানি না আমি। এর উত্তরও পাবো কিনা কে জানে।এরপরে যে ঘটনা আমার মনকে আরও বেশি প্রভাবিত করেছিল সেটা আমি কস্মিনকালেও চিন্তা করতে পারি নি যে এমনটা হতে পারে। একটা মেয়ে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, আমার কাছে সেটা একটা বিস্ময়। কয়েকদিন ধরে কাজী নেই। ওর বাবার ক্যান্সার হয়েছে। ওর বাড়ীতে এমন কেউ নেই যে ওর বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাই কাজী ছুটি নিয়ে চলে গেছে। আমি বলেই দিয়েছি এমন ভাবে বাবাকে যেন ছেড়ে না আসে যাতে ওর মায়ের কোন অসুবিধে হয়। আর যদি টাকাপয়সার দরকার হয় তাহলে যেন আমাকে ফোন করে। আমি এখান থেকে টাকা পাঠিয়ে দেব। কাজীর খুব চিন্তা ছিল যে আমি কি খাব, আমার টিফিন কে বানাবে। আমি ওকে বলেছিলাম ওই সব ব্যাপার না চিন্তা করতে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। প্রায় চার দিন হয়ে গেল কাজী যাওয়ার পর। না তনুকে আমি বলেছি, না পার্থকে। তনুকে বললেই জানতাম ও আগ বাড়িয়ে আমাকে সাহায্য করতে চলে আসবে। আর আগের সব ঘটনার পর থেকে আমি তনুকে এড়িয়েই চলি। ফোনে যে কথাবার্তা হয় না তা নয়। আমাকে ফোন করে বলে, ‘কিরে আজকাল বাড়ী আসাই ভুলে গেছিস। আসিস না কেন?’ আমি কাজের চাপের দোঁহাই দিই। সত্যি চাপ খুব বেড়ে গেছিল। প্রায় আমাদেরকে রাত দশটা এগারোটা নাগাদ যেতে হত সাইট ছেড়ে। পার্থও তাই। তাই কাজের চাপের যুক্তিটা খেটে গেছিল। তনু চেনের ব্যাপারটা আর ওঠায় না। কি জানি হয়তো জেনে গেছে আমি না দেবার তালেই আছি। স্নেহা ফোন করলে আমি ওর সাথে অনেকক্ষণ কথা বলতাম। মনে হতো যেন এই খাটনির জগতে ও একটা তরতাজা ফুর্তি। অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতাম। পার্থ আর আমার সাথে আড্ডা এখন কাজের চাপে হয় না বললেই হয়। সাইটে যা দুটো একটা ইয়ার্কি ব্যস। সবাই ব্যস্ত। প্ল্যান্ট কমিশন করতে হবে। ফাইনাল ডেট দিয়ে দিয়েছে ক্লায়েন্ট। সুতরাং আমরা সবাই ওর পিছনে। এর মধ্যে আনন্দ কি আর নেই। আছে। মাঝে মাঝে আমরা নিজেদের মধ্যে পার্টি করতাম। মদ খাওয়া, গান সব হতো। জাস্ট চাপের থেকে একটু মুক্তি পাওয়া আর কি। এইভাবেই চলছিল। একদিন পার্থ বলল, ‘অ্যাই দীপ, আজ আমি দুপুরে চলে যাবো বুঝলি। ছোড়দিরা চলে যাবে। খেতে ডেকেছে আমাদের সবাইকে। আমাকে, তনুকে আর স্নেহাকে। তোকেও বলেছিল, কিন্তু আমি বলেছি দুজনে একসাথে আসতে পারবো না। কাজের খুব চাপ। যেকোনো একজন আসতে পারবে। অজয়ও ব্যাপারটা সমর্থন করেছে বলে ছোড়দি আর প্রেসার দেয় নি। অবশ্য জয়া বলেছিল তোকে নাকি পড়ে ডেকে একদিন খাইয়ে দেবে।‘ আমি ওকে বললাম, ‘একদম ঠিক বলেছিস। দুজনের যাওয়া সাইট ছেড়ে মুশকিল হতো। ছোড়দিকে আমার প্রনাম জানাস। আর বলিস আবার যেন আসে।‘ ওর ছোড়দি খুবই ভালো। আমার অবাকই লাগে তনু কেন মানিয়ে নিতে পারলো না এতো সুন্দর এক ভদ্রমহিলার সাথে। যাইহোক, আমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ওদের ব্যাপার ওরা বুঝুক গে যাক। পার্থ চলে গেছিল দুপুরে। তখন জাস্ট সন্ধ্যে হয়েছে। আমি অফিসে বসে চা খাচ্ছি আর মেল দেখছি। এরমধ্যে মোবাইল বেজে উঠলো। দেখি তনুর ফোন। আমি ভাবলাম যে ছোড়দির বাড়ী থেকে ও আবার ফোন করছে কেন। কি হোল আবার, না ওইখান থেকে আমার সাথে প্রেম করার ইচ্ছে হয়েছে ওর। তনুর ফোন এলেই ভয় হতো কি আবার চেয়ে বসে। আমি ফোন তুললাম। তনুর ভারী গলা শুনতে পেলাম। তনু বলছে, ‘অ্যাই দীপ, আমরা এখান থেকে তোর ওখানে যাবো। তুই কটায় বাড়ী যাবি?’ ছোড়দির ওখান থেকে আমার এখানে? কেন রে বাবা? আমি বললাম, ‘তোরা মানে সবাই? তাহলে ছোড়দির ওখানে খাওয়া?’ তনু উত্তর দিল, ‘ও আমি বলে দিয়েছি খাবার আমরা নিয়ে যাবো। বাড়ীতে খাব।‘ আমার মুখ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেড়িয়ে এলো, ‘ছোড়দি মেনে নিলো? ওদের ওখানে খেলি না কেন?’ তনু ঝাঁজিয়ে উঠলো যেন, ‘তুই ছাড় না এসব কথা। কখন আসবি তুই সেটা জানা।‘ ওর গলার আওয়াজ শুনে বোঝা গেল মামলা যথেষ্ট গম্ভির। আমি জানালাম, ‘এই ধর আটটা তো হবেই।‘ তনু বলল, ‘ঠিক আছে। আমরা সাড়ে আটটার সময় চলে আসবো। তুই থাকিস।‘ বলে তনু ফোন অফ করে দিল। আমি ভাবলাম এটা আবার কি হোল? তনুর সাথে ছোড়দির বনে না এটা তো জানি। তা বলে নিমন্ত্রন ছেড়ে চলে আসা তাও পার্থ সাথে, খুব জটিল কোন সমস্যা নিশ্চয়ই। কার কাছ থেকে জানি? অজয়ের কথা মনে পড়লো, কিন্তু ও তো চলে গেছে পার্থর সাথে। তাহলে? হ্যাঁ, স্নেহা হয়তো জানতে পারে। আমি স্নেহাকে ফোন লাগালাম। স্নেহা ফোন ধরে বলল, ‘হাই।‘