08-11-2019, 07:31 AM
মেসো মানুষটা ছিলেন রাশভারী ও একটু কিপটে টাইপের। উটকো ঝামেলা বলে, আমাকে প্রথমে বাড়িতে স্থান দিতে চাননি। পরে মাসির ক্রমাগত অনুরোধ-উপরোধে একরকম বাঁ-হাতে মনসা পুজোর মতো, আমাকে বাড়িতে থাকতে দেন। আমি মেসোদের প্রাচীন পৈত্রিক-বাড়িটার একতলার পিছনদিকে একটা সরু ঘরে থাকতাম। স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটার পিছন-দিকটাতেই পায়খানার চেম্বার আর একটা দুর্গন্ধময় কাঁচা-ড্রেন ছিল। মাঝেমধ্যেই ওই ড্রেনের পাইপ গলে রাত-বিরেতে ধেড়ে-ইঁদুর আমার ঘরে ঢুকে আসত। এসব নিয়ে আমি অবশ্য কখনও কিছু কমপ্লেইন করিনি। এমনিতেই গলগ্রহ হয়ে থাকতাম, তার উপরে আবার থাকা-খাওয়া নিয়ে অভিযোগ করলে, মেসো নির্ঘাৎ বাড়ি থেকে ঘাড়-ধাক্কা দিত!...
মাসির মেয়ের নাম ছিল সায়ন্তী। আমার চেয়ে দু-বছরের বড়ো। ও-ও হিস্ট্রি নিয়ে পাশ করেছে বলে শুনেছিলাম। বাড়িতে সবাই ওকে সোনা/সোনাই বলে ডাকতো। আমি মুখে কখনও কিছু বলিনি, কিন্তু মনে-মনে ডাকতাম, ‘আমার সোনাদি’ বলে!... সত্যি, চব্বিশবছর বয়সী ওই মেয়েটাকে দেখবার পর থেকেই, আমার বাইশবছর বয়সী মনের মধ্যে যেন এক-সমুদ্র উথালপাথাল শুরু হল। রাজহাঁসের মতো গ্রীবা, গায়ের রঙটাও ঠিক যেন কাঁচা-সোনার মতো। টিকোলো নাক, টানা-টানা চোখ, উড়ন্ত-পাখির মতো ভুরু, পুরুষ্টু লাল ঠোঁট, ঠোঁটের নীচে ছোট্টো কলো তিল, পানপাতার মতো থুতনি, কোমড় পর্যন্ত লম্বা, ঘন-কালো কোঁকড়ানো চুল। যেন নিখুঁত কোনো রূপকথার দেশ থেকে মানুষের সংসারে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কোনো মোমের-পুতুল! সোনাদি যখন বাইরে থেকে এসে, একতলার সদর-দরজা খুলে দোতলার সিঁড়ি ভাঙতো, তখন একঝলক ওর কামিনীতরুর মতো দেহটার এঁকেবেঁকে উঠে যাওয়া দেখে, আমার শরীরের সব লোম কেমন-যেন নিজের অজান্তেই খাড়া হয়ে যেত।…
সোনাদি আমাকে বিশেষ পাত্তা দিত না। আমার মতো একটা তুচ্ছ জীবও যে বাড়িতে থাকে, এটা যেন ওর নজরেও পড়ত না। আমিও কখনও সোনাদির সঙ্গে যেচে, সাহস করে কথা বলতে পারিনি। ওর নীল চোখের মণির দিকে সোজাসুজি তাকানোরই সাহস ছিল না আমার; মনে হতো, ওই চোখের দিকে তাকালে, আমি বুঝি কোনো অতলে ডুবে যাব! আর কখনও উঠতে পারব না, জাগতে পারব না, চিরকালের জন্য রূপকথার রাজ্যে বন্দি হয়ে যাব!...