07-11-2019, 04:28 PM
অবশ্য এটা ওদের সহজ ব্যাপার। কাকে আপনি আর কাকে তুমি বলবে এটা ওরা ঠিক বুঝতে পারে না। একটা কথা ঠিক ও আমাকে বা বর্ষাকে কোনদিন তুমি বলে ডাকে নি। তনু বলল, ‘কেন তুই খাটিস না তোর সাহেবের জন্য? রান্না করে দিস, পুস্পা না এলে মাঝে মাঝে কাপড় ধুয়ে দিস, ঘর ঝাঁট দিয়ে দিস। করিস তো এইসব?’ কাজী বলল, ‘হ্যাঁ করি। আচ্ছা তুমি বলতো আমাদের এখানে খাওয়ার জন্য কত খরচ হয়?’ তনু সিপ মেরে বলল, ‘কত হবে হাজার দুয়েক?’ কাজী হেসে বলল, ‘কচু জানো তুমি। আমাদের খরচ হয় সাড়ে তিন হাজারের মত। আমি আর সাহেব শুধু খাই। এই টাকা সাহেবই দ্যায়, আমাকে এখনও পর্যন্ত একটা টাকাও দিতে হয় নি। এমনকি জানো, ডাক্তারের খরচ পর্যন্ত সাহেব দ্যায়।‘ তনু তাচ্ছিল্য করে বলল, ‘ও তোর সাহেব বেশি মাইনে পায় বলে দ্যায়। নাহলে দেবার ক্ষমতা থাকে নাকি কারো?’ কাজী বলল, ‘ওই তো তুমি বিশ্বাস করবে না। সাহেবের কাছে যতদিন থেকে আছি খরচা আমার সাহেবই দ্যায়।‘ তনু বলল, ‘ও তোর সাহেব খুব বড় মনের মানুষ কিনা, তাই দিতে পারে।‘ কিছুক্ষণ চুপচাপ। আমি তনুর মুখ লক্ষ্য করলাম। কোন বিকার নেই ওর মুখে। ওই মুখ দেখে বোঝাও যাচ্ছে না ও কি উদ্দেশ্যে এসেছে। আছি যখন তখন নিশ্চয় জানতে পারবো। তনু আবার মুখ খুলল, ‘হ্যাঁরে কাজী, আবার তোর সাহেব এসে পরবে নাতো? ভয় হয় যদি চলে আসে তাহলে কি জবাব দেব।‘ কি বাজে মেয়ে একটা। এসেছিস এসেছিস, আবার কাজীকে এমন ঘটা করে বলার কি আছে? কাজী বলল, ‘সাহেব আসতেই পারে না। যদি একবার সাইটে চলে যায় তাহলে কিছুতেই সাইট ছেড়ে আসবে না ছুটি না হওয়া পর্যন্ত। সাহেবের এই কাজ নিয়ে বৌদি কতবার বলেছেন। সাহেব শুনলে তো। জানো সাহেব কি বলেন, এই চাকরি আমাদের খেতে দিচ্ছে। আমি এর প্রতি কোন অন্যায় করতে পারি না।‘ তনু বলে উঠলো, ‘তোর সাহেবের আবার বেশি বেশি। আমি তো তোর দাদাকে আগে আটকে দিতাম যাতে ডিউটি না যেতে পারে। এখানে তোর সাহেব আছে বলে পারছি না।‘কাজী তনুকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা বৌদি, তুমি তো বললে যে খেয়ে এসেছ। কিন্তু খাবার পর মদ খাচ্ছ, ভালো লাগছে?’ তনু উত্তর দিল, ‘মদ খাবার আবার কোন সময় আছে নাকি? খাবার আগে বা পরে? আমার তো কোন অসুবিধে হচ্ছে না। কেন তোর সাহেব কি খাবার পরে মদ খায় না?’ কাজী বলল, ‘কোনদিন না।‘ তনু গ্লাস শেষ করে বলল, ‘দে আরেক পেগ দে। একটু বড় করে দিস।‘ ইস শালী যেন মদের আসর বসিয়েছে এখানে। কিভাবে মদ খাচ্ছে। হঠাৎ পকেটে মোবাইলটা কেঁপে উঠলো। আমার সারা শরীর একটা হিম স্রোত বয়ে গেল। ছিটকে আমি সরে গেলাম দরজার সামনে থেকে। একটা কোনায় গিয়ে মোবাইলটা বার করে দেখলাম একটা ম্যাসেজ এসেছে। ভগবানের লাখ লাখ শুক্রিয়া। যদি ফোন আসতো তাহলে নির্ঘাত ধরা পরে যেতাম। ভুলেই গেছিলাম মোবাইলের কথা। আমি মোবাইলটা বন্ধ করে আবার পকেটে ঢুকিয়ে দিলাম। গা দিয়ে যেন ঘাম ঝরে পড়ছে এমন আতঙ্ক এসে গেছিল সারা শরীরে। আবার এসে চোখ রাখলাম ফুটোয়। তনু ওইভাবেই বসে আছে। কাজী ওর কাছে গিয়ে মদ ঢেলে দিলো। গ্লাসে দেখলাম প্রায় অর্ধেক ঢেলে দিয়েছে। এটা কি করছে কাজী, তনুকে মাতাল করে ছাড়বে নাকি? কিন্তু তনু আমাকে যেন নিশ্চিন্ত করার জন্য বলল, ‘ঠিক আছে মাপটা। জল দে একটু।‘ কাজী জল ঢেলে দিল। তনু বলল, ‘বোতল থেকে অনেকটা কমে গেছে রে। এতে জল মেশালে তোর সাহেব ঠিক তোকে ধরে ফেলবে।‘ কাজী হাসতে হাসতে বলল, ‘আরে আমি জল মেশাবো বলেছি বলে সত্যি জল মেশাবো। সাহেবকে আমি একটা কিনে এনে দেব, সাহেব জানবেও না।‘ তনু সিপ দিয়ে বলল, ‘তাহলে তুই আমাকে মদ খাওয়াচ্ছিস বল?’ কাজী বোতলটা টেবিলের উপর রেখে বলল, ‘ওই রকমভাবে বলছ কেন? আমি খাওয়াবো কেন? এটা সাহেবের মদ আর তুমি সাহেবের পরিচিত। তুমি খেতেই পারো।‘ তনু এবার আবার ওর লোভী দাঁত বের করলো, কাজীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কাজী, একটা কথা বলতে পারবি, তোর সাহেবের গলায় যে চেনটা আছে ওটা তো সোনার। কোথায় নিয়েছিল রে?’ যত তনুকে জানছি তত ওর উপর ঘৃণা বেড়ে যাচ্ছে। ওই এক সোনার হারের পিছনে পরে আছে ও। মনে একটু একটু ভাব ছিল যদি সম্ভব হয় তাহলে একটা দিয়েই দেব। কিন্তু সেটা উবে গেছে। তনু কাজীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আমাকে তোর কেমন লাগে?’ কাজী মুখ নিচে নামিয়ে উত্তর দিল, ‘ভালো।