Thread Rating:
  • 43 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram
#15
[শ্বেত পাথরের মূর্তি (#01, #02)]


শ্বেত পাথরের মূর্তি (#01)

কেউ চলে গেলে কি কারুর জীবন থেমে যায়? পুবালি ছেড়ে চলে যাবার পরে কি অরুন্ধুতির জীবন থমকে গিয়েছিল, না অরুনা আবার ফিরে পেয়েছিল তার জীবন। আমিও মন কে প্রবোধ দেই যে আমার দূর্ভাগ্যের জন্য আজ আমাদের এই দশা। ভাগ্য আমাদের একসাথে এনেছিল এক সময়ে, কিন্তু সেই ভাগ্যের পরিহাসে আমরা দুইজন আজ পৃথক পৃথক পথে চলে গেছিলাম। এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। দিন যায়, আমি আমার মন শক্ত করতে চেষ্টা করি। কিন্তু বারে বারে পাপী মন মানে না, বারে বারে তার কথা মনে পরে যায়। দিনে দিনে আমি শুকিয়ে গেছিলাম। ছোটমা বাবু দুজনেই আমার শরীর খারাপ দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন।

এক রবিবার সকালবেলায় বাবু আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে তোমার? ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করছ না তুমি। ওজন কমে গেছে, দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছও? এই ভাবে কত দিন চলবে, পরী?” ছোটমা গলায় চিন্তার সুর। সেদিন বিকেলে ছোটমা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান, কিন্তু সেই অসুধে আমার শরীর ঠিক হয় না। আমার ওষুধ যে অন্য কারুর কাছে, সেটা আমি বলে বুঝাতে পারিনা।

শীতের ছুটির পরে কলেজ শুরু হয়ে যায়। আমি নিজেকে পড়াশুনায় আর কলজের কাজে ব্যাস্ত রাখতে চেষ্টা করি। আমার সেই চঞ্চল, উচ্ছল হাসি মুখ হারিয়ে যায়। ছোটমায়ের মন যেন কেঁদে ওঠে আমার ম্লান চেহারা দেখে।

একদিন ছোটমা আমাকে বলেন, “পরী তোকে এইরকম ভাবে ভেঙ্গে পড়লে ত হবে না। তুই বড় হয়েছিস, তোকে তোর অতীত ভুলে নতুন জীবনে পা রাখতে হবে। তোর সামনে এক বিশাল সুন্দর জীবন পরে আছে।”

আমি ছোটমায়ের দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলি, “তুমি কি করে আমাকে বল সেই সব দিনের কথা ভুলে যেতে?”

ছোটমা আমার হাত ধরে বলেন, “আমি ওর মা, পরী। আমি যদি থাকতে পারি তাহলে তুই কেন পারবি না।”

আমি ছোটমায়ের দিকে তাকিয়ে কাষ্ঠ হেসে উত্তর দিয়েছিলাম, “আমি নিজেকে পড়াশুনায় ডুবিয়ে দেব, ছোটমা। আমি প্রানপন চেষ্টা করব নিজেকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু ছোটমা, তোমার ছেলে তুমি হারিয়েছ, তার বেলায় তুমি কি করবে?”

ছোটমা, “ও হয়ত একদিন বুঝতে পারবে, যে আমি যা করেছি ওর ভালর জন্য করেছি।”

আমি ধরা গলায় বলি, “ছোটমা, আমি একটু একা থাকতে চাই।”

ছোটমা ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পরে আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমি জানতাম ছোটমায়ের প্রান তাঁর ছেলের জন্য প্রতিরাতে কাঁদে, কিন্তু সেই কান্নার আওয়াজ কোনদিন বুক থেকে মুখে আনেননি ছোটমা, শুধু মাত্র সমাজ আর আত্মীয় সজ্জনের কাছে মুখ দেখানর ভয়ে। ছোটমা কি জানে যে তার একমাত্র পুত্র দেশ ছেড়ে চলে গেছে? হয়ত জানে না।

ছোটমা আর বাবু বুঝতে পারেন যে আমি নিজেকে বদলে ফেলেছি আর নিজেকে পড়াশুনায় ডুবিয়ে দিয়েছি। আমার স্বাধিনতার বেড়ি একটু বেড়ে যায় তারপর থেকে।

শীতকাল চলে যায়। চিতকুলের ভ্রমণের পর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের ঘটনা। একদিন আমরা সব বন্ধু বান্ধবী মিলে মেডিকেলের দিকে হেটে যাচ্ছিলাম।

দেবব্রত আমাকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা সেই চিঠি টা তুমি নিয়ে নিলে কেন?”

আমি, “সুপ্রতিমদা, যার জন্য সেই চিঠি লিখেছিলাম সে আর দিল্লীতে থাকেনা, সে ব্যাঙ্গালর থাকে।”

দেবব্রত, “একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি? সেদিন সেই চিঠি পৌঁছানর ব্যাপারে তোমাকে খুব মরিয়া লাগছিল?”

আমি বুকের বেদনা লুকিয়ে হেসে উত্তর দিয়েছিলাম, “না আমাকে কোন প্রশ্ন করতে পারিস না তুই। আমার বান্ধবীর কাছে লেখা সেই চিঠি আর এই সব মেয়েলি ব্যাপার।”

কি বুঝল দেবব্রত জানিনা। কিন্তু তিস্তা আর দেলিসা আমাদের দেখে ফিকফিক করে হেসে ফেলে।

তিস্তা আমাকে জিজ্ঞেস করে, “কি গো, কিছু যেন গন্ধ পাচ্ছি মনে হচ্ছে?”

দেবব্রত ওর মাথার ওপরে চাঁটি মেরে বলে, “নিজের মতন সবাইকে ভাবিস কেন বলত?”

দেলিসা, “হুম খুব বেশি ভাব মনে হচ্ছে, এখন থেকেই এত আগলে রাখা।”

দেবব্রত, “শোন, আমি তির্থাঙ্কর নই আর মিতা, তিস্তা নয়। সুতরাং তোরা মুখে কুলুপ এটে থাকলে ভালো হবে।”

আমি বুঝতে পারলাম যে কথার প্রসঙ্গ আমাকে নিয়ে আর সেই প্রসঙ্গ ধিরে ধিরে বিরূপ ধারন করছে। আমি সবাইকে বলি, “আমরা সবাই বন্ধু বান্ধবী, সেই সম্পর্ক যেন আমাদের মধ্যে থাকে আর সেটাই বিবেচ্য। আর যেন এই নিয়ে কোন কথা না হয় আমাদের মধ্যে।”

দেবব্রত সবাইকে বলে, “ভালো ত, এই তোরা সিনেমা দেখতে যাবি?”

রজত, পুশপাঞ্জলি, সঙ্খ সবাই এক মত। আমার সেদিন সিনেমা দেখতে যাওয়ার মন ছিল না। আমি চুপ করে ছিলাম। দেবব্রত আমাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি হল?”

আমি বলি, “না আজকে নয়, অন্য কোনদিন যেতে পারি।”

দেবব্রত, “রবিবার?”

আমি জানালাম যে ছোটমাকে না জানিয়ে আমি কথা দিতে পারছিনা। দেবব্রত, “ঠিক আছে, রবিবার, গ্লোব।”

রজত পুশপাঞ্জলি একসাথে চেঁচিয়ে ওঠে, “এক জনের জন্য কেন সিনেমা দেখা বন্ধ করা হবে?”

তিস্তা আমার মনের কথা বুঝে ফেলে ওদের বলে, “না না, আজ নয়, রবিবার হলে, তির্থাঙ্কর আমাদের সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারবে।”

দেলিসা ওদের বলে, “ভালো ভালো, তাহলে দানিস কে আমি ডেকে নেব।”

শনিবার রাতে আমি ছোটমাকে রবিবারের সিনেমা দেখার কথা জিজ্ঞেস করি। ছোটমাকে আমাকে সিনেমা দেখতে অনুমতি দিলেন সাথে সাথে সাবধান বানী দিলেন, যেন সন্ধ্যের আগেই বাড়ি ফিরে আসি। মায়ের মন, সর্বদা যেন চিন্তিত কিন্তু তাও যেন আমি সোনার খাচায় বন্দিনী এক রাজকন্যে। সেই প্রথম বার বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাওয়া। বুকের মাঝে স্বাধীনতার মলয় কিন্তু সেই বাতাসে যেন পরাধীনতার কটু গন্ধ ভেসে আসে মাঝে মাঝে।

রবিবার সকালে তিস্তা আমাকে ফোন করে জানায় যে ও আমাকে নিতে আসবে। আমি ওর কথা শুনে একটু থমকে যাই কেননা ওর সাথে নিশ্চয় তির্থাঙ্কর থাকবে। প্রথম দিনে তির্থাঙ্কর যেরকম ভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিল তাতে আমার মনে ওর প্রতি একটু ঘৃণা ভাব জাগে। মন শক্ত করে নিলাম আমি, দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। আমি বাসস্টান্ডে ওদের জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বেশ কিছু পরে মারুতি চেপে তির্থাঙ্কর আর তিস্তা এসে পৌঁছায়।

আমাকে দেখে তিস্তা আনন্দে দৌড়ে এসে বলে, “তোমাকে সব কিছুতেই মানিয়ে যায়।”

আমি সেদিন একটা খুব সাধারন গোলাপি রঙের চুরিদার পড়েছিলাম। তিস্তা একটা চাপা গাড় নীল রঙের টপ আর হাল্কা নীল রঙের জিন্স পড়েছিল। তিরথাঙ্করের দিকে তাকিয়ে একটু মাথা নারিয়েছিলাম ভদ্রতার খাতিরে। আমাকে দেখে তির্থাঙ্কর ইশারা করে পেছনের সিটে বসতে বলে। আমি আর তিস্তা পেছনের সিটে বসে পরি।

তিস্তা তির্থাঙ্করের মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “একদম পেছনের দিকে দেখবে না, বুঝলে, সোজা গাড়ি চালাও।”

তির্থাঙ্কর, “পেছনের সিটে যদি এত সুন্দরী দুই মহিলা বসে থাকে তাহলে কি করে মন দিয়ে গাড়ি চালাই বল?”

আমি জানতাম যে ওর কথার ছোবল আমার দিকে, তাও আমি চুপ করে থাকি। আমি চুপ করে বসে থাকি আর তিস্তা গল্প শুরু করে, একবার বকতে শুরু করলে তিস্তা যেন আর থামতে চায় না।

আমাকে চুপচাপ দেখে তিস্তা আমাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি হয়েছে বলতো? তুমি এত চুপচাপ কেন?”

আমি মৃদু হেসে বলি, “আমার স্বভাব এইরকম তাই।”

মাথা নাড়ায় তিস্তা, “না না, একদম নয়। সেই পুরানো মিতা যেন নেই, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই মিতা।”

আমি হেসে উত্তর দিয়েছিলাম, “আরে বাবা, জগত পরিবর্তনশীল। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বুঝলি না রে।” সবাই আমরা হেসে ফেলি।

গ্লোবে পৌঁছে দেখি দানিস আর দেলিসা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দানিস কে সেই প্রথম বার দেখলাম। অনেক লম্বা চওড়া ছেলে, প্রায় ছ ফুটের মতন লম্বা, ফর্সা আর দারুন দেখতে। হালকা নীল রঙের জিন্স আর গোলাপি চেক শার্টএ দারুন মানিয়ে ছিল ওকে।

দেলিসা আমকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি আর বদলাবে না। সেই সাদা মাটা কাপড় কিন্তু কত আভিজাত্য আছে তোমার মধ্যে।”

দানিস কে দেখে আমি হাত জোর করে অভিবাদন জানাই। দানিস সেই দেখে হেসে ফেলে। দানিস যেন অন্য মাটির মানুষ, ওর চোখের চাহনি যেন সব ছেলেদের থেকে অনেক আলাদা। আমাকে দেখে হেসে বলে, “প্রনাম করতে নেই আপা।”

আমি বুঝতে পারিনা ও কি বলে আমাকে ডাকল। দেলিসা আমাকে জানিয়ে দিল যে দিদিকে আপা বলে ডাকে। দানিস আমার কাছে এসে বলে, “আপা, আমার বড় আপা দুবাই থাকে। অনেকদিন তাঁর সাথে দেখা হয়নি। তোমাকে দেখতে ঠিক আমার বড় আপার মতন, তাই তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।”

ওর কথা শুনে আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল। দেলিসা আমার ঝাপসা চোখ দেখে বলে, “আরে চল, সিনেমা দেখি।”

আমি দেলিসা কে বলি, “হ্যাঁ রে, তোর দানিস ত ভারী হ্যান্ডসাম ছেলে। তোদের দুজনকে যেন ভগবান একসাথে বানিয়েছে।”

ওদের দেখে আমার নিজের ভালোবাসার কথা মনে পরে যায়। মনে পরে যায় আমাদের “সিন্ডলারস লিস্ট” সিনেমা দেখতে যাওয়ার ঘটনা। কিছু পরেই পুশপাঞ্জলি আর সঙ্খ এসে পৌঁছে যায়। কিন্তু আমাদের দলের মাথা, দেবব্রতর দেখা নেই। আমি সিনেমার পোস্টার দেখলাম, গ্লোবে সেদিন স্টালনের “ক্লিফহ্যাঙ্গার” চলছিল।

তিস্তা সঙ্খর সাথে পুস্পাঞ্জলিকে দেখে উত্যক্ত করার জন্য বলে, “কিরে তুই আর পুশপাঞ্জলি একসাথে, কি ব্যাপার?”

সঙ্খ এমনিতে চুপচাপ থাকার ছেলে, তাই লাজুক হেসে বলে, “নারে, পুশপাঞ্জলি আমার বাড়ির পাসে থাকে তাই আমরা একসাথে এসেছি।”

আমি পুস্পাঞ্জলিকে রজতের কথা জিজ্ঞেস করাতে একটু বিরক্ত হয়ে উত্তর দেয়, “আমি কি করে জানব ওর কথা।”

দেলিসা আমার কানে কানে এসে বলে, “কিছু জিজ্ঞেস করো না, তেতে আছে মেয়ে। কাল দুজনার মাঝে এক চোট হয়ে গেছে।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মানে, ওরা কি পস্পরের সাথে...” আমি ওদের ভেতরের খবর জানতাম না যে রজত আর পুশপাঞ্জলির মাঝে প্রেমের খেলা চলছে।

বেশ কিছু পরে লক্ষ করি যে দেবব্রত আর রজত সিগারেট ধরিয়ে আমাদের দিকে হেঁটে আসছে। আমাদের সাথে দানিস আর তিরথাঙ্করকে দেখে চেঁচিয়ে ওঠে, “আজ দেখি সব জামাইদের মেলা, আমরা তাহলে আর খরচ কেন করব, জামাই রা করুক।” ওর কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে, দানিস সবার টিকিট কাটে।

সিনেমা হলে ঢুকে সবাই সিনেমা দেখতে বসে পরে। আমার একদিকে তিস্তা আর তার পাসে তির্থাঙ্কর। আমার অন্য পাসে পুশপাঞ্জলি তাঁর পাশে দেবব্রত, পুশপাঞ্জলি রাগে রজতকে পাশে বসতে দেয়না। সিনেমা শুরু হওয়ার কিছু পরে আমার মনে হল যেন কেউ আমার পিঠে হাত রেখেছে, ঠিক ঘাড়ের খোঁপার নিচে, আঙুল দিয়ে আঁচর কেটে দিচ্ছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি তির্থাঙ্করের হাত, রাগে আমার মাথা জ্বলে ওঠে। চোখে জল চলে আসে, মনে হল যেন ওই আঙুল আমাকে ;., করছে। কামুক প্রব্রিতির মানুষ, পাসে ওর প্রেমিকা বসে তাও আমার ওপরে ওর নজর। আমি সামনের দিকে ঝুঁকে যাই। পুশপাঞ্জলি আমাকে জিজ্ঞেস করে যে কেন আমি সামনে ঝুঁকে আমি ওকে কিছু বলি না। কিছু পরে পেছনে ফিরে দেখি সেখানে আর তির্থাঙ্করের হাত নেই, তাই আমি আবার সিটে হেলান দিয়ে বসি। কিছু পরে আবার সেই একি ঘটনা, তির্থাঙ্করের হাত আমার পিঠে এসে পরে। আমি রাগে অপমানে কেঁপে উঠি, কিন্তু আবার কিছু না বলে সামনে ঝুঁকে যাই। এবারে দেবব্রত আমাকে লক্ষ্য করে। দেবব্রত পেছনে দেখে যে আমার সিটের ওপরে তির্থাঙ্করের হাত। চুপচাপ পুশপাঞ্জলির পেছন দিয়ে হাত বাড়িয়ে আমার সিটের পেছনে হাত রাখে। আমি বুঝতে পারি যে একটা মারামারি লাগবে এবারে কেননা দেবব্রত খুব গরম মাথার ছেলে।

ঠিক সেই, কিছু পরে আবার তিরথাঙ্কর হাত দিতে চেষ্টা করে আমার পিঠে আর এবারে ওর হাত ধরে ফেলে দেবব্রত। সিনেমা হলের মাঝে দেবব্রত তিরথাঙ্করের দিকে গম্ভির গলায় বলে, “ওঠ সিট ছেড়ে, বাইরে আয় তোর সাথে কথা আছে।”

তিস্তার অগোচরে ওর পিঠের পেছনে যে এত কান্ড ঘটে যায় সেটা তিস্তার খেয়াল নেই। আমার দিকে, দেবব্রতর দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে তিস্তা। তিস্তা জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে?”

তিরথাঙ্কর অকাঠ মিথ্যে কথা বলে তিস্তা কে, “আরে বাবা, কিছু হয়নি, আমি তোমার পিঠে হাত রাখতে গিয়েছিলাম আর হয়ত মিতার পিঠে হাত লেগে গেছে।”

আমি ওর মিথ্যে কথা শুনে রেগে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরি, “আমি আর সিনেমা দেখব না, আমি বাড়ি যাচ্ছি।”

দেবব্রত গর্জে ওঠে তিরথাঙ্করের দিকে, “এই শুয়রের বাচ্চা, বেড়িয়ে আয় তারপরে তোকে মজা দেখাচ্ছি।”

দানিস দেবব্রতর পাশেই বসে ছিল। দেলিসা আর দানিস আমাকে ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে আমি জানাই যে আমার শরীর খারাপ লাগছে তাই আমি বাড়ি যেতে চাই। দেবব্রত রেগে ফেটে পড়েছিল। তিরথাঙ্করের হাত ধরে সিট থেকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “সেই শুয়োরের বাচ্চা, তুই বের হবি হল থেকে না এখানে তোকে মেরে ফেলব।”

তিস্তা হাঁ করে আমাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকে।

আমি তিস্তাকে বলি, “আমি বাড়ি যাচ্ছি রে, শরীর ভালো লাগছে না।”

আমি হল ছেড়ে বেড়িয়ে আসি। দেবব্রত আর রজত আমার পেছন পেছন হল থেকে বেড়িয়ে আসে। দেবব্রত আমাকে জিজ্ঞেস করে, কিন্তু আমি শুধু জানাই যে আমার শরীর ভালো লাগছে না। রাগে অপমানে আমার গাঁ হাত পা কাঁপছিল। চোখে জল এসে গেছিল, আমি ওদের নজর লুকিয়ে চোখের কোল মুছে ফেলি কিন্তু দেবব্রত সেটা লক্ষ্য করে ফেলে। কিছু পরে দেলিসা আর দানিস বেড়িয়ে আসে হল থেকে। দানিস আমাকে সেই এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। দেবব্রত দানিস কে তিরথাঙ্করের আচরনের কথা জানায়, সেই শুনে দানিস রেগে যায়। কিছু পরে তিস্তা পুস্পাঞ্জলিকে সাথে নিয়ে হল থেকে বেড়িয়ে আসে। তিস্তা কে দেখে আমি রাগে ফেটে পরি।

দেবব্রত তিস্তা কে দেখে জোর গলায় বলে ওঠে, “তুই কুত্তা, তোর কুকুরটাকে বেঁধে রাখ না হলে কোন দিন আমার হাতে মারা পড়বে।”

তিস্তা দেবব্রতর কথা শুনে রেগে গিয়ে বলে, “একদম মুখ সামলে কথা বলবি তুই।”

আমি থাকতে না পেরে তিস্তা কে বলি, “ওই জায়গায় তুই থাকলে তোর কেমন লাগত সেটা একবার ভেবে দেখিস।”

তিস্তা বলে, “না না, ও ইচ্ছে করে করেনি, হয়ত হটাত করে হাত লেগে গেছে।”

রাগে আমার ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল, আমি ঠোঁট মুছে ওর দিকে রেগে বলি, “তুই ভালো করে জানিস তুই কাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিস।”

তিস্তা আমার হাত ধরে অনুনয় করে, “প্লিস রাগ কোর না। যদি ও কিছু করে থাকে তাহলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তোমার কাছে, আমি ওর সাথে কথা বলে নেব এই ব্যাপারে, কিন্তু একটি বার ভেতরে চলো।”

আমার আর সিনেমা দেখার মন ছিল না, আমি ওকে জানাই, “না, আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। আমার ছোটমা আমাকে বলেছিলেন যে, এই জগতে প্রকৃত বন্ধু পাওয়া দুস্কর, তোদের সাথে মেশার আগে আমাকে ভেবে দেখা উচিত ছিল রে।”

আমরা দুজনে বুঝতে পারি যে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরেছে। আমি ওর দিকে ব্যাথা ভরা চাহনি নিয়ে তাকাই।

দেলিসা আমাকে বলে, “ছাড় ওর কথা।”

তিস্তার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে, “তোর স্বভাবের জন্য একদিন তুই পস্তাবি। তোর স্বভাবের জন্য তোর আশেপাশের বন্ধু বান্ধব তোকে ছেড়ে চলে যাবে একদিন।”

দেলিসার কথা শুনে তিস্তা কেঁদে ফেলে।

দানিস আমার কাছে এসে বলে, “আপা, ওকে ছেড়ে দাও। চল আমার বাড়ি চল, আমার বড়দি, তিন বছর হল বাড়ি আসেনি আম্মি তোমাকে দেখে খুব খুশি হবে।”

দেলিসাও আমাকে অনুরধ করে ওর শ্বশুর বাড়ি যেতে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram - by Nefertiti - 04-11-2019, 12:33 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)