Thread Rating:
  • 43 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram
#14
ম্লান আশার আলো (#02)

দেবব্রত আমাকে অনেক খেপাত, সবসময়ে যেন প্রানপন চাইত আমার ম্লান ঠোঁটে হাসি ফোটানোর। আমি ওর কথা শুনে ব্যাগ ছুঁড়ে মারি ওর দিকে। সঙ্খ ওর কথা শুনে লজ্জায় পরে যায়। দেবব্রত সঙ্খর পিঠে থাবড়ে বলে, “যা ভাই বাড়ি যা, এখান থেকে আমি ওকে নিয়ে যাবো।”

আমি ওর দিকে জোর গলায় বলে উঠি, “শয়তান ছেলে এই রকম ভাবে বলছিস যেন আমি তোর কেনা বাঁদি?”

দেবব্রত আবার আমাকে খেপিয়ে বলে, “এখনো নয় তবে...”

সঙ্খ আমাদের মারামারি দেখে বেশি ক্ষণ দাঁড়ায় না, চুপ চাপ ওখান থেকে চলে যায়।

সঙ্খ চলে যাওয়ার পরেই দেবব্রত গম্ভির হয়ে আমাকে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা বলো তো কি হয়েছে তোমার? কয়েক দিন থেকে নজর করছি তুমি যেন কেমন হয়ে গেছ, কারুর সাথে ঠিক করে কথা বলছ না বা হাসছ না।”

আমি মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেই, “কিছু না রে, আমার বড় বৌদি মারা গেছেন তাই মন খারাপ।”

আমার কাঁধে হাত রেখে বলে, “আরে বাবা, এতে আর দুঃখ করে কি হবে।”

ওর হাতের বন্ধুতের স্পর্শ আমার ভারাক্রান্ত মনের মাঝে একটু শান্তির বারি প্রদান করে। আমাকে জিজ্ঞেস করে দেবব্রত, “শীতের ছুটিতে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছও নাকি?”

আমি মাথা নাড়াই, “নারে যাচ্ছি না, তুই কোথাও যাচ্ছিস কি?”

দেবব্রত, “হ্যাঁ।”

আমি, “কোথায়?”

দেবব্রত, “দিল্লী, আমার বড়দি থাকে ওখানে।”

দিল্লীর নামে শুনেই আমার মন নেচে ওঠে, আমার ভালোবাসা দিল্লীতে থাকে, কিছু করে যদি একটা খবর পাঠানো যায়।

দেবব্রত আমাকে জিজ্ঞেস করে, “কি হল?”

আমি প্রায় ভিক্ষে চাওয়ার মতন কাতর প্রার্থনা করি ওর সামনে, “আমার একটা কাজ করে দিবি?”

দেবব্রত, “হ্যাঁ নিশ্চয়, কি করতে হবে বলো?”

আমি শুধু জানতাম যে সুপ্রতিমদা সিআরপার্কে থাকে কিন্তু বাড়ির ঠিকানা জানতাম না। আমার শুধু মনে আছে যে বাড়ির কাছে একটা বড় কালি মন্দির ছিল আর একটা বড় বাজার ছিল। জায়গার নাম জানতাম না ঠিক মতন।

আমি ওকে বলি, “আমি তোকে একটা চিঠি দেব আর একটা ফোন নাম্বার দেব। তুই প্লিস দিল্লী গিয়ে সেই ফোন নাম্বারে ফোন করে আমার চিঠি পৌঁছে দিবি?”

আমার কথা শুনে ওর চোখ যেন দুষ্টুমিতে জ্বলজ্বল করে ওঠে, “হুম্মম্ম... পুরান ভালোবাসা, হ্যাঁ?”

আমি বুকের ভাষা লুকিয়ে ওকে বলি, “না না, সেই রকম কিছু নয়। চিঠিটা আমার এক বান্ধবীর বর কে দিতে হবে।”

আমার কথা কিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি চাও আমি তোমার বান্ধবীর বরের সাথে দেখা করে তাঁর হাতে চিঠি দেই?”

আমি, “হ্যাঁ প্লিস আমার এই কথাটা রাখ।”

দেবব্রত, “আচ্ছা দিয়ে দেব। আমি কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চলে যাবো। চিঠিটা তার আগেই দিয়ে দিও।”

আমি খুব খুশি হয়ে গেছিলাম, আমার চিঠি অন্তত কিছু একটা খবর নিয়ে আসবে এই ভেবে। কেউ ত ছিল যে কিনা আমার মনের খবর আমার ভালোবাসার কাছে পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু সেইসাথে মনের মধ্যে একটা সংশয় জাগে, দেবব্রত ঠিক মানুষের হাতে চিঠি পৌঁছে দেবে ত? আমি যে সুপ্রতিমদার বাড়ির ঠিকানা জানতাম না, শুধু মাত্র একটা ফোন নাম্বার সম্বল করে আমি চিঠি পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিছুদিন পরে আমি সুপ্রতিমদার নামে একটা চিঠি লিখে দেবব্রতর হাতে দেই। সেই চিঠিতে আমি সুপ্রতিমদাকে লিখেছিলাম যে আমার ভালোবাসা যেন আমার ওপরে বিশ্বাস রাখে আর আমি ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকব।

সেইবারে আমি আরও এক কারনে খুব খুশিতে ছিলাম, ছোটমা কথা দিয়েছিলেন যে আমাকে সেলফোন কোনে দেবেন। কিন্তু বাড়িতে কেউ সেই নিয়ে কোনদিন কথা বলেনা তাই সেলফোন পাওয়া নিয়েও আমার মনের মধ্যে সংশয় থেকে যায়। আদৌ কি বাবু আমাকে সেলফোন উপহার দেবে?

ক্রিসমাসের দিন সকালবেলা। ছোটমা বাবুর অভ্যাস, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার, আমি উঠে দেখি যে ছোটমা বাবু বসার ঘরে বসে চা খাচ্ছিলেন। আমি বাথরুমে থেকে বেড়িয়ে ঘরে ঢুকে দেখি বিছানার ওপরে একটা উপহারের বাক্স। সেই বাক্স খুলে দেখি তাঁর মধ্যে সেলফোন, নোকিয়া 3330, আমার স্বাধিনতার প্রথম পদক্ষেপ ভেবে বুকে চেপে ধরি সেই বাক্স। দৌড়ে বসার ঘরে গিয়ে ছোটমাকে জড়িয়ে ধরি।

ছোটমা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “এবারে খুশি ত?”

আমি তখন খুব খুশি, “হ্যাঁ, খুউউউউউব...”

ছোটমার সাবধান বানী ঠিক তারপরে, “কিন্তু আমাকে একটা কথা দিতে হবে। তুমি এমন কোন পদক্ষেপ নেবেনা যার জন্য অপমানিত হয়ে সবার সামনে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়।”

মনের ভেতরে যত খুশি যত আনন্দ ছিল, সব যেন এক ফুঁ তে উবে গেল। আমি সেলফোন ধরে নিজের ঘরে ঢুকে পরি। ছোটমা আমার পেছন পেছন আসেন। ছোটমা আবার জিজ্ঞেস করেন, “পরী আমি কিন্তু উত্তর পেলাম না।”

আমার বুকে যেন শক্তিশেল ফুটে, আমি ধিরে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেই যে আমি কোন পদক্ষেপ নেবনা যার জন্য ছোটমায়ের মাথা অপমানে সবার সামনে নিচু হয়ে যায়। আমি সেদিন মিথ্যে কথা বলেছিলাম, আমি যদি কোন রকমে ওর একটা খবর পেতাম তাহলে ঘুরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতাম। ছোটমা আমার উত্তরে খুশি হয়ে চলে গেলেন।

চলে যাবার পরেই আমার মনে হয়েছিল ওকে ফোন করার কিন্তু আমি যে ওর ফোন নাম্বার জানতাম না। মন কেঁদে উঠেছিল, কিন্তু আমি নিরুপায়। রাতের বেলা খাওয়ার পরে আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে প্রথম ফোন ওর খবর নেওয়ার জন্য করি। আমি সুপ্রতিমদার বাড়িতে ফোন করেছিলাম, মনে একটু সংশয় ছিল যে অত রাতে হয়ত বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পরে যাবে কিন্তু ব্যাথিত মন মানতে চায় নি।

সুপ্রতিমদার মা ফোন ধরেছিলেন, “হ্যালো, কে বলচ্ছে?”

আমি, “আমি সুপ্রতিমদার বান্ধবী, কোলকাতা থেকে বলছি।”

আমার গলা শুনে মাসিমা চিনতে পেরেছিলেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, তোমরা আমার বাড়িতে এসেছিলে। কেমন আছো?”

যাক শেষ পর্যন্ত একটা আশার আলো দেখা গেল, খড়া বুকের মাঝে যেন শান্তির জল পরে। আমি মাসিমা কে জিজ্ঞেস করি যে সুপ্রতিমদার সাথে কথা বলা যাবে কি?

মাসিমা জানালেন, “সুপ্রতিম তো দিল্লী থাকেনা। বিয়ের পরে কর্ম সুত্রে ব্যাঙ্গালর চলে গেছে।”

সুপ্রতিমদার চলে যাওয়ার খবর শুনে একটু ধাক্কা লাগে বটে কিন্তু আশা হারিয়ে ফেলিনা। আমি মাসিমাকে সুপ্রতিমদার ফোন নাম্বার জিজ্ঞেস করি।

তারপরে আমি জিজ্ঞেস করি, “অভিমন্যুর কোন খবর আছে আপনার কাছে?” অনেক দিন পরে ওর নাম নিজের ঠোঁটে শুনে আমার মন কেমন করে ওঠে, ঠোঁট চেপে কেঁদে ফেলেছিলাম আমি।

মাসিমা।, “হ্যাঁ, সপ্তাহ দুয়েক আগে বাড়িতে এসেছিল।”

সেই কথা শুনে মনে হল যেন আমার জীবনে এক নতুন সূর্যোদয় ঘটতে চলেছে, আমি জিজ্ঞেস করি, “ওর ফোন নাম্বার দেবেন?”

মাসিমা, “ঠিক বলতে পারব না, এখন ও দিল্লীতে আছে কি না।”

আমার সেদিন মনে হয়েছিল যেন আমি প্রানপন দৌড়ে রেসের শেষ সীমানায় পৌছাতে চেষ্টা করছি কিন্তু শেষ প্রান্তে এসে দেখি যে সেই লাল ফিতে কেউ যেন টেনে নিয়ে চলে গেছে। বুকের মাঝে কান্নার রোল বেজে ওঠে, নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করি, “কোথায় গেছে কিছু জানেন?”

মাসিমা, “না মা, তবে সুপ্রতিম জানতে পারে হয়ত, ওকে ফোন করতে পার।”

বাবুর একটা বাক্য আমাদের জীবন আবার ধ্বংস করে দিল। আমি ফোন রেখে সুপ্রতিমদাকে ফোন করি। সুপ্রতিমদা আমার ফোন পেয়ে খুব অবাক। আমার বুকের মাঝে উত্তাল ঢেউ দোলা দেয়, যদি কিছু খবর পাই ওর, আর না পেলে আমি কি করব জানিনা। কিন্তু যে খবর সুপ্রতিমদা আমাকে দেয় সেই শুনে আমার সব আশা সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।

সুপ্রতিমদা, “অভি লাস্ট সপ্তাহে কল করেছিল আমকে। ও বলল তোমার নাকি বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে?”

আমি চাপা কেঁদে উঠে বলি, “না, মিথ্যে কথা।”

সুপ্রতিমদা, “অভি খুব মর্মাহত হয়ে পড়েছিল সেই খবর শুনে। শুধু মাত্র তোমার সাথে কথা বলার জন্য ফোন করেছিল। ও জানাতে চেয়েছিল যে নিজের মাথা উঁচু করে সমাজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তোমাকে নিয়ে যাবে। জানো ত এই সমাজ শুধু টাকা চেনে, তাই টাকা রোজগার করতে এখন ব্যাস্ত কিন্তু বিপথে যায়নি তোমার অভি। শুধু তোমার ভালোবাসা বুকে বেঁধে এখন বেঁচে আছে, কিন্তু...”

আমি, “কিন্তু কি? ও এখন কোথায়? আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই, ওর নাম্বার দেবে আমাকে?”

সুপ্রতিমদা, “অভি আমাকে জানিয়েছিল যে ও ইস্রায়েল যাচ্ছে, ওর কম্পানি ওকে কয়েক বছরের জন্য ওখানে পাঠাবে। ও আমাকে বলে, যেহেতু তোমার বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে তাই ও আর কোনদিন কোলকাতা ফিরবে না। মাত্র চারদিন আগে ইসরায়েল চলে গেছে অভিমন্যু। তুমি যদি আর কিছুদিন আগে ফোন করতে তাহলে হয়ত কিছু হত। এখন কি করতে চাও তুমি?”

আমি একদম ভেঙ্গে পরি, চোখের সামনে যেন কালো ঘন অন্ধকারে ঢেকে যায়। সুপ্রতিমদা, “তোমরা যে হেরে গেলে।”

আমি চিৎকার করে উঠি, “না আমি হেরে যেতে পারিনা। আমি হারিনি, আমাকে ছল কপট করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমার অভি হারতে পারেনা।”

আমি ফোন রেখে বিছানায় শুয়ে থাকি অনেকক্ষণ ধরে। কান্না চাপার জন্য বুকের ওপরে বালিশ চেপে ধরেছিলাম। অনেক পরে বিছানা ছেড়ে উঠে আমি তাক থেকে ওর সেই ডায়রি নামাই। ঝাপসা চোখে সেই ডায়রির পাতা গুলো এক এক করে পড়তে থাকি। সেই ডায়রির সব লেখা আমার কেমন যেন মেকি মনে হয়, সব প্রেমের কথা, ভালোবাসার কথা যেন মিথ্যে। একবারের জন্য মনে হয় সেই ডায়রির পাতা গুলো ছিঁড়ে ফেলে জ্বালিয়ে দেই। সেই “অপ্টিক্স নোটবুক” যেন একটা মিথ্যে প্ররোচনার বাসা। এই ডায়রি গত কয়েক মাসে আমার প্রানের উৎস ছিল, কিন্তু সেদিনের খবর শুনে মনে হয়েছিল যে সেই ডায়রি মিথ্যে। কিন্তু আম্মি সেই ডায়রি ছিঁড়ে ফেলতে পারিনি আবার সযত্নে তাকে তুলে রেখে দিয়েছিলাম।

প্রথম এই সমাজের বন্ধন আমাদের ভালোবাসার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু একটা আশা ছিল যে আমার অভি আমার বুকে আবার ফিরে আসবে। বাবুর একটা ছোট্ট মিথ্যে আবার যেন আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে দিয়ে চলে যায়। আমার সব আশা, সব স্বপ্নের আলো যেন চোখের সামনে থেকে নিভে আসে ধিরে ধিরে। যদি একবারের জন্যেও আমার প্রতি ওর বিশ্বাস থাকে তাহলে নিশ্চয় বিশ্বাস করবে যে বাবুর কথা মিথ্যে আর আমি সেই বিয়েতে মত দেই নি। কিন্তু সেই কথা আমি ওকে জানাতাম কি করে।

কিচুদিন পরে আমি দেবব্রতর কাছে সেই চিঠি ফেরত চাই। তার কিছুদিন পরে আমি গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমি কল্যাণীর হাতে সেই ডায়রি তুলে দিয়ে বলেছিলাম। ডায়রি খুলে আমাকে কল্যাণী জিজ্ঞেস করে যে এতে কি আছে। আমি জানিয়েছিলাম যে ওই ডায়রি আমার কাছে প্রানের উৎস, কিন্তু এখন আর নয়।

কল্যাণী অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “এটা ত অভিমন্যুর ডায়রি, এটা আমি নিয়ে কি করব?”

আমার গলা ধরে আসে, কিন্তু আমি কল্যাণীকে সব ঘটনা খুলে জানাই। সবকিছু শুনে আমাকে বলে, “তুই এটা তোর কাছেই রাখ।”

আমি, “আমাকে ছেড়ে যখন চলেই গেছে তাহলে আর ডায়রি রেখে কি করব।”

কল্যাণী ডায়রি হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এটা তোর সম্পত্তি, তুই এটা জ্বালিয়ে দিচ্ছিস না কেন তাহলে?”

আমি বুক ভরা শ্বাস নিয়ে ওকে জানিয়েছিলাম, “এই ডায়রির পাতায় ওর ছোটবেলা আছে, এই ডায়রির পাতায় ওর লেখা আছে সেই 1992 থেকে। এই ডায়রি শুধু মাত্র আমাদের ভালোবাসা নয়, এই ডায়রিতে আছে ওর ছোটবেলা, ওর দুঃখ, ওর কষ্ট, ওর সুখ, ওর শান্তি, ওর খুশি ওর বন্ধু ওর বান্ধবী। আমি নিজে থেকে ওকে হত্যা করতে পারব না, কল্যাণী।”

কল্যাণী, “তুই এখন কি করবি তাহলে?”

আমি মাথা দুলিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “আমি জানি না রে আমার ভবিষ্যতে কি হবে, তবে যাই আসুক আমি তাই মেনে নেব।”

কল্যাণী, “মানে?”

আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে কল্যাণীর মানের উত্তর দেই, “আমার মাও মনে হয় আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না। আমার থেকে দু বছরের ছোটো আর আমাদের মাঝে যদিও একটা ক্ষীণ সম্পর্কের বন্ধন আছে। এইমত অবস্থায় আমার কাছে কে বেশি গুরুত্তপূর্ণ আমার ভালোবাসা না আমার মা আর ছোটমা? আমি এক গ্রামের সাধারন ঘরের মেয়ে, আমাদের জীবনে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়, জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করে চলতে হয় আমাদের। যদি ও আমাকে এই রকম ভাবে ছেড়ে চলে না যেত তাহলে আমি ওর জন্য সারা জীবন বসে থাকতাম, সারা পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে যেতাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে ছেড়ে চলে গেল, আমি আর কি নিয়ে থাকব?”

কল্যাণী আমার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে বলে, “তোরা দুজনেই জানতিস তোদের ভবিষ্যৎ, তোরা প্রন করেছিলিশ যে দুজনে মিলে একসাথে সেই ভবিষ্যতের সাথে যুদ্ধ করবি। সেই প্রতিজ্ঞার কথা কি হল? এটাও ত হতে পারে যে, ও কিছু করার জন্য বাইরে গেছে, এটাও ত হতে পারে যে তোর জন্য একদিন ও আবার ফিরে আসবে। এত তাড়াতাড়ি সব আশার জলাঞ্জলি দিস না।”

আমি, “আমি খুব ক্লান্ত রে কল্যাণী। সুপ্রতিমদার কাছে যদি কোন কিছু বলে যেত তাহলে না হয় অন্য কথা ছিল, কিন্তু অজে কিছুই বলে যায়নি। ও যে শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গা মন নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছে।”

কল্যাণী, “তোর বাবুর মুখে ওই কথা শোনার পরে যে তোর বিয়ের ঠিক হয়ে গেছে, কি করা উচিত ছিল ওর?”

আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম যে আমাদের ভালোবাসার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢাকা। আমার চোখের সামনে সব আশা, সব স্বপ্নের আলো ধিরে ধিরে ম্লান হয়ে যায়।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram - by Nefertiti - 04-11-2019, 12:30 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)