Thread Rating:
  • 43 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram
#13
 [ম্লান আশার আলো (#01, #02)]



ম্লান আশার আলো (#01)

দিনের পর দিন চলে যায়। দমদমে ফিরে আসার পরে আমাকে কিছু টা স্বাধীনতা দেওয়া হয়। রাতের বেলা দরজা বন্ধ করে শুতে গেলে ছোটমা আর বকেন না। একদিন রাতে খাওয়ার পরে আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে সেই ডায়রি খুলে বসি। অনেক দিন পরে ডায়রি হাতে নিয়ে আমার মনটা খুব ভালো লাগে। শুরুর কয়েক পাতা শুধু আবল তাবল কবিতায় ভর্তি যার কোন মাথা মুন্ডু নেই। অনেক দিন পরে ওর কথা ভেবে আমার হাসি পায় আর মনের ভেতরের সেই কালো মেঘ যেন উড়ে চলে যায়। রোজ রাতে ওর ডায়রি খুলে বসতাম আর ওর হাতের লেখা পড়ে মনে হত যেন ও মার পাসে বসে আমার সাথে কথা বলছে। বুকের মাখে এক নতুন আশার আলো উঁকি দিয়ে ওঠে। ছোটমা আর বাবু আমার হাসি মুখ দেখে খুশি। ওরা ভাবে যে আমি পুরানো কথা ভুলে গেছি, কিন্তু আসল কথা যে আমার বুকে, ও যে ডায়রির মাধ্যমে রোজ রাতে আমার সাথে কথা বলে।

ক্রিসমাসের ঠিক দিন পনেরো আগের ঘটনা, সুব্রত আর মৈথিলীর প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিল সেইদিন। আর সেইদিন ওর সাথে বড় হওয়ার পড়ে আমার প্রথম দেখা। আমার পক্ষে খুব স্মরণীয় দিন ছিল সেদিন। সকাল থেকেই আমি বেশ খুশি ছিলাম, কোলকাতার শীত যেমন মিষ্টি তেমন মিষ্টি মনে হয়েছিল সেদিনের সকাল। আমার প্রথম চুম্বনের দিন, কপালে চুমু খেয়েছিল কিন্তু খুব মিষ্টি সেই পরশ। সকালে ঘুম জড়ানো চোখে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি সেই চুম্বনের পরশ কপালে অনুভব করেছিলাম। বুকের মাঝে যেন এক অনাবিল আনন্দের ঢেউ খেলে বেড়ায়। আমার হৃদয় জানে, যেখানেই থাকুক ও সেই এক অনুভব করছে নিজের ঠোঁটের ওপরে।

ছোটমা আর বাবু এই সবে সুব্রত আর মৈথিলীকে ফোন করে। ছোটমা আমাকে ও মৈথিলীর সাথে কথা বলতে বলে, কিন্তু সেইদিনের ঘটনার পরে ওর নাম শুনলেও যেন আমার গা পিত্তি জ্বলে যেত। তাই আমি ছোটমাকে বলি যে বলে দিতে আমি বাথরুমে আছি আর পরে ওদের ফোন করে নেব। মৈথিলীর সেই ভয়ঙ্কর অভিশাপের কথা মনে পরে যায়, মনে হয় যেন ওর জন্যেই আজ আমার দুজনা একসাথে নেই। রাগে বুক কেঁপে ওঠে আমার।

তারপরে ছোটমা কলেজে বেড়িয়ে যান। আমি কলেজের জন্য তৈরি হচ্ছিলাম নিজের ঘরে। বাবু ফোনের কাছেই কিছু করছিলেন, ঠিক সেইসময়ে ফোন বেজে ওঠে। আমার মন বলছিল যে ফোন যেন ওর হয়।

বাবু, “হ্যালো, কে বলছে?”

আমি চুপ করে দরজায় দাঁড়িয়ে। যেই ওপারে ছিল, তাঁর গলার আওয়াজ শুনে বাবুর চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বাবু আমার দরজার দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাই আমাকে দেখতে পান না। আমি বাবুর মুখ দেখতে পাই।

বাবু, “আমরা সবাই ভালো আছি। কেন ফোন করেছিস তুই?”

বাবুর কথা শুনে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। বুকের মাঝে যেন রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। ওপারে যে ও কথা বলছে সেটা বুঝতে একটুও দেরি হয় না আমার। আমি ঝাঁপ দিয়ে ওই ফোনের রিসিভারের মধ্যে ঢুকে যেতে চাই যেন, মন চায় যে ওই ফোনের তার আমাকে ওর কাছে নিয়ে যাক। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি, যদি একটু ওর গলার আওয়াজ শোনা যায়।

বাবু, “না ও বাড়িতে নেই, ও গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে।”

বাবুর মুখে মিথ্যে কথা শুনে আমার গা রিরি করে জ্বলে ওঠে। ও জানে না যে আমার গ্রামের বাড়িতে টেলিফোন এসে গেছে, না হলে নিশ্চয় বাড়িতে ফোন করে খবর নিত। আমি চোখ বন্ধ করে নেই, আমার চোখের পাতা ভিজে ওঠে, কান গরম হয়ে যায়, বুক কাঁপতে থাকে।

বাবু, “হ্যাঁ, ও এমএসসি পড়ছে। আমরা ওর বিয়ের ঠিক করে ফেলেছি, এমএসসি শেষ হলেই ওর বিয়ে হয়ে যাবে।”

আমি জানতে পারিনা যে ওই কথা শুনে ওর মনের কি অবস্থা হতে পারে। কিন্তু এই টুকু বিশ্বাস ছিল যে বাবুর কথা ও বিশ্বাস করবে না। আমি দরজার পর্দা ধরে পাথরের মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকি। ঝাপসা চোখের সামনে সারা পৃথিবী দুলতে শুরু করে দেয়। বুকের মাঝে শুধু এক চিন্তা ঘুরে বেড়ায়, এত কাছে এসেও আমি ওকে আবার হারিয়ে দিলাম, শুধু মাত্র বাবুর একটি ছোটো মিথ্যে কথার জন্য। না, বিশ্বাস যে বড় জিনিস, আমার ওপর সেই বিশ্বাস যেন ওর থাকে।

বাবু, “এখানে ফোন করে আর ওকে জ্বালাতন করিস না। ও সব কিছু ভুলে সুখী আছে এখন।”

আমি চুপচাপ দরজা বন্ধ করে বিছানায় লুটিয়ে পরি। রাগে দুঃখে বালিশ ছিঁড়ে ফেলি কুটি কুটি করে। বিছানায় মাথা পিটিয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করে। বুক ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করে। ফোন করেছিল আমাকে, কিন্তু অদৃষ্ট আমার, শেষ পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলতে পারেনা। আমি বালিশ কামড়ে নিজের বুক ফাটার আওয়াজ ঢেকে ফেলি।

বাবু আমার দরজায় টোকা মেরে বলেন, “সোনা মা, কলেজের দেরি হয়ে যাবে যে।”

আমি বুক ফাটিয়ে আর্তনাদ করে ছিলাম, “না আমি ভালো নেই, আমাকে তোমরা মেরে ফেললে না কেন। চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে। কি করে এত বড় মিথ্যে কথা তুমি বলতে পারলে বাবু?”

না গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হয়নি সেদিন। বুকের কান্না বুকের মাঝে ঢাকা পরে যায়। দাঁতে দাঁত পিষে নিচু স্বরে উত্তর দেই, “আমার শরীর ভালো লাগছে না বাবু, আজকে আর কলেজ যাবো না।”

বাবু, “ঠিক আছে, বিশ্রাম করো। বিকেলে তোমার ছোটমা এলে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে খানে।”

আমার ভাগ্য এই টুকু ভালো যে বাবু জানতেন না যে আমি তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে বাবুর আর ওর সব কথা শুনে ফেলেছিলাম। যদি জানতে পারতেন তাহলে হয়ত বাড়িতে আরও একটা কুরুক্ষেত্র বেঁধে যেত।

সেইদিনের ঘটনার পরে আমি খুব মর্মাহত হয়ে পরি। আমার বেদনা আমার ব্যাথা আমার চেহারায় ছড়িয়ে পরে আর সেই ছায়া ডেলিসা আর তিস্তা বুঝতে পারে। বারে বারে ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার ভারাক্রান্ত মনের কথা কিন্তু আমি কাউকে আসল কারন জানাইনি। সেই দিনের ঘটনার পরে আমি নিজেকে একটা শামুকের খোলের মধ্যে গুটিয়ে ফেলি। মাথার মধ্যে শুধু একটাই চিন্তা ঘুরে ফিরে দানা বাঁধে যে এত কাছে আসা সত্তেও আমি ওকে আবার হারিয়ে ফেললাম। বাবুর একটা বাক্য আমার সব আশার আলো মুছে দিয়ে চলে গেল।

সেইদিনের কিছু দিন পরে আমি কলেজ স্ট্রিটের বাসস্টান্ডে বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোলকাতায় শীত কাল চলে এসেছিল। ক্রিসমাসের আমজে যেন আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। সালোয়ার আর কারডিগান ছিল গায়ে। শীত বিশেষ ছিল না কিন্তু মনের দুখের জন্যে আমার যেন বেশি করে শীত লেগেছিল। ঠিক সেই সময়ে আমার কাঁধে কেউ হাত রাখে, আমি চমকে যাই।

আমাদের কলেজের সঙ্খ চক্রবর্তী, “অনেক ক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছি তোমাকে, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কিন্তু কোন বাসে উঠছ না।”

সঙ্খ আমার সাথে এমএসসি পরে, খুব কম কথা বলে। বিশেষ লম্বা নয় ছেলেটা, খুবই সাধারন দেখতে কিন্তু ভারী বুদ্ধিমান এবং পড়াশুনায় খুব ভালো। আমার ধারে কাছে কোনদিন ঘেঁসেনি কেননা সবসময়ে আমার চারদিকে তিস্তা, ডেলিসার বাঁ দেবব্রত থাকত। এমনিতে ক্লাসে আমার নামের পেছনেও সবাই বলত বইয়ের পোকা, আর আমি শুধু তিস্তা বাঁ দেলিসা ছাড়া কারুর সাথে বিশেষ কথাও বলতাম না।

আমি ওর দিকে হালকা হেসে জিজ্ঞেস করি, “এমনি দাঁড়িয়ে, বাস গুলো সব খুব ভিড় ছিল তাই আর চরিনি।”

সঙ্খ, “শিয়ালদা পর্যন্ত হাঁটবে আমার সাথে? ওখান থেকে তুমি বাড়ি ফেরার অনেক বাস পেয়ে যাবে।”

আমি মাথা নাড়িয়ে বলি, ঠিক আছে।

আমি আর সঙ্খ হাটা শুরু করেছি কি দেবব্রত আমদের দেখে শীষ দেয়। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে যাই যে শয়তানটা অনেক কিছু ভেবে বসে আছে। দেবব্রত আমাদের দিকে দৌড়ে এসে বলে, “সঙ্খ, তুই? হ্যাঁ রে তুই আমার গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলি?”
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মধ্যরাত্রে সূর্যোদয় (Dawn at Midnight) Written By pinuram - by Nefertiti - 04-11-2019, 12:21 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)