03-11-2019, 06:16 PM
ডাঃ সুধীর রাও (০৫)
দিন কেটে যায়। সব ভাই বোনেরই ছেলে
মেয়ে হয়। গণেশের একটাই ছেলে সুধীর।
বাকি ভাইদের তিন চারটে করে ছেলেমেয়ে।
সবাইকে ছাড়িয়ে যায় কানিমলি। ওর সাতটা ছেলে
মেয়ে। আরও চারটে বাঁচেনি। পনেরো বছর
পরে একদিন সদানন্দ রাও সব ছেলে মেয়েকে
ডাকেন।
সদানন্দ রাও – আমার বয়েস হয়েছে। আর
তোমাদের সংসার দেখতে পারছি না।
বড় ছেলে – কি করতে বল আমাদের
সদানন্দ রাও – আমি এবার তোমাদের মধ্যে জমি
ভাগ করে দিচ্ছি। এবার জমি তোমাদের নামে
লিখে দেব। তোমরা নিজেদের মত থাকো।
মেজ ছেলে – ঠিক আছে বাবা তুমি যা বলবে তাই
হবে।
সদানন্দ রাও সব ঠিক করেই রেখেছিলেন।
সবাইকে যার যার জমি বুঝিয়ে দেন। জমি প্রায় সমান
নয় ভাগে ভাগ করেছেন।
বড় ছেলে – তোমাদের দুজনের চলবে কি
করে?
সদানন্দ রাও – কেন তোরা খাওয়াবি না?
বড় ছেলে – আমরা খাওয়াতেই পারি।
মেজ ছেলে – কে কত দিন খাওয়াবে? শুধু এক
ছেলে খাওয়ালে ঠিক হবে না।
গণেশ – বাবা মাকে আমি খাওয়াবো। আমার জীবন
তৈরি করেছেন আমার বাবা আর মা। তাই ওনাদের সব
দায়িত্ব আমার।
সদানন্দ রাও – কিন্তু বাবা তুমি একা কেন করবে?
গণেশ – আমার যা দায়িত্ব সেটা পালন করবো।
সদানন্দ রাও – তোমার বাকি ভাই রা?
গণেশ – ওরা কে কি করবে সেটা আমার দেখা
দরকার নেই। আমার বাবা মা, আমার কাছেই থাকবে।
কানিমলি – সারা জীবন তো বাড়ির কোন কাজ
করেনি, এতদিনে একটা কাজ করবে বলেছে
সদানন্দ রাও – তুমি চুপ করো, তোমার কথা কেউ
শুনতে চায়নি।
কানিমলি – কিন্তু বাবা আমার একটা কথা আছে
সদানন্দ রাও – হ্যাঁ বলো
কানিমলি – তুমি সবাইকে সমান ভাবে জমি দিয়েছ।
আমার ভাগে যতটা জমি পড়েছে সেই জমি চাষ
করে আমার এতোগুলো ছেলে মেয়ে মানুষ
করবো কি করে?
সদানন্দ রাও – সেটা কি আমার দায়িত্ব?
কানিমলি – এতদিন তুমিই আমাদের সব দায়িত্ব নিয়েছ।
সদানন্দ রাও – তোমরা আট ভাই বোন।
তোমাদের জন্ম আমি দিয়েছি। তাই আমি
তোমাদের দায়িত্ব নিয়েছি। তোমার ফুটবল
খেলার দলের জন্ম আমি দেই নি। ওদের জন্ম
দিয়েছ তুমি আর চন্দ্রান। ওদের দায়িত্বও
তোমাদের দুজনের।
কানিমলি – আমার ছেলে মেয়েরা না খেতে
পেয়ে মরে যাবে
সদানন্দ রাও – আমি কি করতে পারি। আমি আমার
ক্ষমতা অনুযায়ী বাচ্চা পয়দা করেছিলাম। তোমরা শুধু
বাচ্চা পয়দা করেছো, তাদের কি খাওয়াবে সেটা
কোনদিন ভাবোনি।
সদানন্দ রাও ওনার কথা বলে নিজের ঘরে চলে
জান। সবাই কে কি ভাবে জমি চাষ করবে সেই
প্ল্যান করতে থাকে। গণেশ ওদের কোথায়
থাকে না। গণেশ নিজের প্রতিজ্ঞা মত ছেলে
সুধীর কে পড়ায়। সুধীর কে ডাক্তারি পড়তেই
হবে। বাকি ভাইদের ছেলে মেয়েরা কেউ
কেউ একটু লেখা পড়া করে। ওরা একটু লেখা পড়া
করে আর বাবা মায়ের সাথে জমিতেও কাজ করে।
কিন্তু সুধীর শুধুই লেখা পড়া করে। গণেশ ওকে
জমিতে যেতেই দেয় না। কানিমলির ছেলে
মেয়েদের পড়ার কোন কারন নেই। ওরা একটু
বড় হতেই বাবা মায়ের সাথে কাজে লেগে যায়।
স্বাভাবিক কারণেই সুধীর লেখা পড়ায় খুব ভালো
ছিল। গণেশ তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী সুধীর কে
তৈরি করতে থাকে। সুধীরও বাবা, মা, দাদু, ঠাকুমাকে
খুব শ্রদ্ধা করে।
সদানন্দ রাও – দাদু ভাই তুই একটুও খেলা করিস না
কেন?
সুধীর – কি হবে খেলা করে?
সদানন্দ রাও – এতো পড়েই বা কি হবে?
সুধীর – আমি জানি আমাকে ডাক্তার হতে হবে।
আপনিই চান আমি ডাক্তার হই
সদানন্দ রাও – তা হলেও একটু তো খেলে ধুলা
করবি
সুধীর – আমি যদি জীবনের প্রথম কুড়ি বছর
খেলে করে কাটাই তবে পরের আশি বছর
কষ্টে কাটবে। আর যদি প্রথম কুড়ি বছর একটু
কষ্ট করে পড়াশুনা করি তবে পরের আশি বছর
অনেক আরামে কাটাতে পারবো।
সদানন্দ রাও – তোকে কে বলল এই কথা
সুধীর – বাবা বলেছে
সদানন্দ রাও – তা বলে একদম খেলবি না সেটাও
ঠিক নয়
সুধীর – আমার খেলার দরকারই হয় না। পড়তেই
খুব ভালো লাগে। পড়ে পড়েই সময় পাই না।
খেলবো কখন।
সুধীর যখন ক্লাস টেনে পড়ে তখন সদানন্দ রাও
দেহত্যাগ করেন। গণেশ কেঁদে কেঁদে
একটাই কথা বার বার বলতে থাকে, "বাবা তুমি দেখে
গেলে না, কিন্তু আমি আমার প্রতিজ্ঞা ঠিক পালন
করবো ।"
সদানন্দ রাও মারা যাবার এক বছরের মধ্যে
গণেশের মাও মারা জান। জীবনের এই নিয়ম
কেউ বদলাতে পারবে না।
কানিমলি – গণেশের তো দুঃখের থেকে
আনন্দ বেশী হবার কথা
গণেশ – কেন?
কানিমলি – বাবা মায়ের খরচা বেঁচে যাবে তোর।
একটা বোঝা কমলো তোর।
গণেশ – আমার কোনদিন বাবা মাকে বোঝা বলে
মনে হয়নি। বাবা মা আরও পঞ্চাশ বছর বাঁচলেও
আমার কোন দুঃখ হত না।
কানিমলি – সে মুখে যাই বলিস, আসলে তো
তোর টাকা বেঁচে যাবে।
গণেশ – সে হয়ত বাঁচবে, কিন্তু তাতে কি আর বাবা
মা সাথে থাকার আনন্দ পাব।
কানিমলি – তোর টাকা বেচে গেলে যদি আনন্দ
নাই হয় তবে তোর ভাগে থেকে কিছু জমি
আমাকে দিয়ে দে না।
গণেশ – বাবা আমাকে যা দিয়ে গিয়েছেন সে
আমি কাউকে দিতে পারবো না। তোর যদি টাকার
দরকার হয় আমার কাছ থেকে চেয়ে নিবি।
কানিমলি – আমি ভিক্ষা করি না।
সব ভাইয়ের সংসার মোটামুটি চলছিল। সবাই নিজের
চেষ্টায় আরও কিছু করে জমি কিনেছিল। কিন্তু
কানিমলি আর চন্দ্রানের অবস্থা খুব খারাপ । ওরা
কোন জমিও কিনতে পারে নি। যা জমি আছে তার
ফসলে বছরে সাত মাস চলে, বাকি পাঁচ মাস খেতে
পায় না। সব সময় চাষ করার পুঁজিও থাকে না। অন্য
ভাইদের থেকে ধার করে চাষ করে। অনেক
সময়েই সেই ধার শোধ করতেও পারে না।
গণেশের কাছ থেকে টাকা ভিক্ষা নেয় নি কিন্ত
ধার নিয়েছে অনেক বার। আর যত বার ধার
দিয়েছে কোনদিনই টাকা ফেরত দিতে পারেনি।
গণেশও ফেরত চায় নি।
দিন কেটে যায়। সব ভাই বোনেরই ছেলে
মেয়ে হয়। গণেশের একটাই ছেলে সুধীর।
বাকি ভাইদের তিন চারটে করে ছেলেমেয়ে।
সবাইকে ছাড়িয়ে যায় কানিমলি। ওর সাতটা ছেলে
মেয়ে। আরও চারটে বাঁচেনি। পনেরো বছর
পরে একদিন সদানন্দ রাও সব ছেলে মেয়েকে
ডাকেন।
সদানন্দ রাও – আমার বয়েস হয়েছে। আর
তোমাদের সংসার দেখতে পারছি না।
বড় ছেলে – কি করতে বল আমাদের
সদানন্দ রাও – আমি এবার তোমাদের মধ্যে জমি
ভাগ করে দিচ্ছি। এবার জমি তোমাদের নামে
লিখে দেব। তোমরা নিজেদের মত থাকো।
মেজ ছেলে – ঠিক আছে বাবা তুমি যা বলবে তাই
হবে।
সদানন্দ রাও সব ঠিক করেই রেখেছিলেন।
সবাইকে যার যার জমি বুঝিয়ে দেন। জমি প্রায় সমান
নয় ভাগে ভাগ করেছেন।
বড় ছেলে – তোমাদের দুজনের চলবে কি
করে?
সদানন্দ রাও – কেন তোরা খাওয়াবি না?
বড় ছেলে – আমরা খাওয়াতেই পারি।
মেজ ছেলে – কে কত দিন খাওয়াবে? শুধু এক
ছেলে খাওয়ালে ঠিক হবে না।
গণেশ – বাবা মাকে আমি খাওয়াবো। আমার জীবন
তৈরি করেছেন আমার বাবা আর মা। তাই ওনাদের সব
দায়িত্ব আমার।
সদানন্দ রাও – কিন্তু বাবা তুমি একা কেন করবে?
গণেশ – আমার যা দায়িত্ব সেটা পালন করবো।
সদানন্দ রাও – তোমার বাকি ভাই রা?
গণেশ – ওরা কে কি করবে সেটা আমার দেখা
দরকার নেই। আমার বাবা মা, আমার কাছেই থাকবে।
কানিমলি – সারা জীবন তো বাড়ির কোন কাজ
করেনি, এতদিনে একটা কাজ করবে বলেছে
সদানন্দ রাও – তুমি চুপ করো, তোমার কথা কেউ
শুনতে চায়নি।
কানিমলি – কিন্তু বাবা আমার একটা কথা আছে
সদানন্দ রাও – হ্যাঁ বলো
কানিমলি – তুমি সবাইকে সমান ভাবে জমি দিয়েছ।
আমার ভাগে যতটা জমি পড়েছে সেই জমি চাষ
করে আমার এতোগুলো ছেলে মেয়ে মানুষ
করবো কি করে?
সদানন্দ রাও – সেটা কি আমার দায়িত্ব?
কানিমলি – এতদিন তুমিই আমাদের সব দায়িত্ব নিয়েছ।
সদানন্দ রাও – তোমরা আট ভাই বোন।
তোমাদের জন্ম আমি দিয়েছি। তাই আমি
তোমাদের দায়িত্ব নিয়েছি। তোমার ফুটবল
খেলার দলের জন্ম আমি দেই নি। ওদের জন্ম
দিয়েছ তুমি আর চন্দ্রান। ওদের দায়িত্বও
তোমাদের দুজনের।
কানিমলি – আমার ছেলে মেয়েরা না খেতে
পেয়ে মরে যাবে
সদানন্দ রাও – আমি কি করতে পারি। আমি আমার
ক্ষমতা অনুযায়ী বাচ্চা পয়দা করেছিলাম। তোমরা শুধু
বাচ্চা পয়দা করেছো, তাদের কি খাওয়াবে সেটা
কোনদিন ভাবোনি।
সদানন্দ রাও ওনার কথা বলে নিজের ঘরে চলে
জান। সবাই কে কি ভাবে জমি চাষ করবে সেই
প্ল্যান করতে থাকে। গণেশ ওদের কোথায়
থাকে না। গণেশ নিজের প্রতিজ্ঞা মত ছেলে
সুধীর কে পড়ায়। সুধীর কে ডাক্তারি পড়তেই
হবে। বাকি ভাইদের ছেলে মেয়েরা কেউ
কেউ একটু লেখা পড়া করে। ওরা একটু লেখা পড়া
করে আর বাবা মায়ের সাথে জমিতেও কাজ করে।
কিন্তু সুধীর শুধুই লেখা পড়া করে। গণেশ ওকে
জমিতে যেতেই দেয় না। কানিমলির ছেলে
মেয়েদের পড়ার কোন কারন নেই। ওরা একটু
বড় হতেই বাবা মায়ের সাথে কাজে লেগে যায়।
স্বাভাবিক কারণেই সুধীর লেখা পড়ায় খুব ভালো
ছিল। গণেশ তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী সুধীর কে
তৈরি করতে থাকে। সুধীরও বাবা, মা, দাদু, ঠাকুমাকে
খুব শ্রদ্ধা করে।
সদানন্দ রাও – দাদু ভাই তুই একটুও খেলা করিস না
কেন?
সুধীর – কি হবে খেলা করে?
সদানন্দ রাও – এতো পড়েই বা কি হবে?
সুধীর – আমি জানি আমাকে ডাক্তার হতে হবে।
আপনিই চান আমি ডাক্তার হই
সদানন্দ রাও – তা হলেও একটু তো খেলে ধুলা
করবি
সুধীর – আমি যদি জীবনের প্রথম কুড়ি বছর
খেলে করে কাটাই তবে পরের আশি বছর
কষ্টে কাটবে। আর যদি প্রথম কুড়ি বছর একটু
কষ্ট করে পড়াশুনা করি তবে পরের আশি বছর
অনেক আরামে কাটাতে পারবো।
সদানন্দ রাও – তোকে কে বলল এই কথা
সুধীর – বাবা বলেছে
সদানন্দ রাও – তা বলে একদম খেলবি না সেটাও
ঠিক নয়
সুধীর – আমার খেলার দরকারই হয় না। পড়তেই
খুব ভালো লাগে। পড়ে পড়েই সময় পাই না।
খেলবো কখন।
সুধীর যখন ক্লাস টেনে পড়ে তখন সদানন্দ রাও
দেহত্যাগ করেন। গণেশ কেঁদে কেঁদে
একটাই কথা বার বার বলতে থাকে, "বাবা তুমি দেখে
গেলে না, কিন্তু আমি আমার প্রতিজ্ঞা ঠিক পালন
করবো ।"
সদানন্দ রাও মারা যাবার এক বছরের মধ্যে
গণেশের মাও মারা জান। জীবনের এই নিয়ম
কেউ বদলাতে পারবে না।
কানিমলি – গণেশের তো দুঃখের থেকে
আনন্দ বেশী হবার কথা
গণেশ – কেন?
কানিমলি – বাবা মায়ের খরচা বেঁচে যাবে তোর।
একটা বোঝা কমলো তোর।
গণেশ – আমার কোনদিন বাবা মাকে বোঝা বলে
মনে হয়নি। বাবা মা আরও পঞ্চাশ বছর বাঁচলেও
আমার কোন দুঃখ হত না।
কানিমলি – সে মুখে যাই বলিস, আসলে তো
তোর টাকা বেঁচে যাবে।
গণেশ – সে হয়ত বাঁচবে, কিন্তু তাতে কি আর বাবা
মা সাথে থাকার আনন্দ পাব।
কানিমলি – তোর টাকা বেচে গেলে যদি আনন্দ
নাই হয় তবে তোর ভাগে থেকে কিছু জমি
আমাকে দিয়ে দে না।
গণেশ – বাবা আমাকে যা দিয়ে গিয়েছেন সে
আমি কাউকে দিতে পারবো না। তোর যদি টাকার
দরকার হয় আমার কাছ থেকে চেয়ে নিবি।
কানিমলি – আমি ভিক্ষা করি না।
সব ভাইয়ের সংসার মোটামুটি চলছিল। সবাই নিজের
চেষ্টায় আরও কিছু করে জমি কিনেছিল। কিন্তু
কানিমলি আর চন্দ্রানের অবস্থা খুব খারাপ । ওরা
কোন জমিও কিনতে পারে নি। যা জমি আছে তার
ফসলে বছরে সাত মাস চলে, বাকি পাঁচ মাস খেতে
পায় না। সব সময় চাষ করার পুঁজিও থাকে না। অন্য
ভাইদের থেকে ধার করে চাষ করে। অনেক
সময়েই সেই ধার শোধ করতেও পারে না।
গণেশের কাছ থেকে টাকা ভিক্ষা নেয় নি কিন্ত
ধার নিয়েছে অনেক বার। আর যত বার ধার
দিয়েছে কোনদিনই টাকা ফেরত দিতে পারেনি।
গণেশও ফেরত চায় নি।