Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 2.83 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চাঁদের অন্ধকার_Written By Tumi_je_amar
#7
শুরু হবার আগের কথা –

আমি প্রথম রাঁচির তথাকথিত পাগলা গারদে যাই ১৯৮৭
সালে। যাবার আগে কলিগরা বেশ মজা করে বলে
যে স্বপন আসল রাঁচিতে যাচ্ছে। তখন ওই সংস্থার
নাম ছিল ‘রাঁচি মানসিক আরোগ্যশালা’ বা আর.এম.এ।
আমি গিয়েছিলাম ওদের প্রথম ফটোকপিয়ার বা
জেরক্স মেসিন ইন্সটল করতে। আমি সংশ্লিষ্ট মিঃ
সরকারের সাথে দেখা করি। যখন পৌঁছেছি তখন
কারেন্ট ছিল না। যে ঘরে মেসিন রাখা ছিল
সেখানে ঢুকে দেখি একদম অন্ধকার। মিঃ
সরকারকে বলি জানালা খুলে দিতে যাতে আমি কাজ
কিছু এগিয়ে রাখতে পাড়ি। উনি কোন এক ভোলা
কে বলেন জানালা দুটো খুলে দিতে। বেশ
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরেও ভোলা আসে না।
আমি জিজ্ঞাসা করি যে আমি জানালে খুলে দেব
কিনা। মিঃ সরকার উত্তর দেন যে আমি ভেতর
থেকে জানালা খুলতে পারবো না। আমি অবাক
হতেই উনি বলেন গ্রাউন্ড ফ্লোরের সব জানালার
ছিটকিনি বাইরে থেকে লাগানো। ঘরের ভেতর
থেকে জানালা খোলা যায় না।
আমি আরও অবাক হই। মিঃ সরকার আমাকে বলেন,
এই ঘর গুলো সব বানানো হয়েছে পাগলদের
থাকার জন্যে। ওরা যাতে যখন তখন জানালা খুলে
ঝামেলা না বাধায় তাই সব জানালাই বাইরে থেকে বন্ধ
করা। এটা ছিল আমার প্রথম ঝটকা।
কারেন্ট ছিল না তাই আমি মিঃ সকারের সাথে গল্প
করি। আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করি যদিও সংস্থাটার নাম রাঁচি
মানসিক আরোগ্যশালা তবু সাবাই পাগলা গারদ কেন
বলে আর আগে কেনই বা লুনাটিক আসাইলাম বলা
হত। মিঃ সরকার বলেন –
ইউরোপিয়ানদের ধারনা ছিল চাঁদের আলো
লাগলেই লোকে পাগল হত। তার একটা কারন ছিল
পূর্ণিমার সময় বেশীর ভাগ রুগিই একটু বেশী
অস্থির হয়ে ওঠে। তার থেকেই ওদের ধারনা
হয়েছিল চাঁদই দায়ী এই অসুখের জন্যে।
সেইজন্যে তখনকার দিনের সব ব্রিটিশ বাড়িতে
জানালার ওপর খড়ের বা টালির সেড দেওয়া থাকে
যাতে ভেতরে চাঁদের আলো সরাসরি ঢুকতে না
পারে। আর এইজন্যেই মানুষের পাগলামোর নাম
রাখা হয়েছিল লুনাটিক। আর যেখানে ওদের রাখা হত
সেই জায়গা কে লুনাটিক আসাইলাম বলা হত। সেই
সময় পাগলদের শুধুই রাখা হত, কোন চিকিৎসা হত না।
সেই সময় কোন চিকিৎসাই ছিল না। তখন এই
হাসপাতাল পাগলদের বন্দীর মতই আটকে রাখা হত।
সাধারণ কারাগারের সাথে একটাই তফাত ছিল যে
এখানে কোন পুলিশ থাকতো না। বাকি সব কিছু একই
ছিল। তাই এটাকে পাগলা গারদ বলা হত। বেশীরভাগ
ক্ষেত্রেই এই বন্দীদশা সত্যিকারের আজীবন
কারাগার হত।
এমন সময় বাইরে কারো আর্তনাদ শুনি। আমি আর মিঃ
সরকার দুজনেই বেরিয়ে আসি। দেখি একটা বছর
পঁচিশের ছেলেকে পাঁচ ছ’জন মিলে চেপে
ধরে আছে। একজন লোক ওর ছবি তুলবে।
কিন্তু ছেলেটা ফটো তুলতে দেবে না। ও
‘মুঝে মত মারো’ বলে আর্তনাদ করছে। মিঃ
সরকার ওদের মধ্যে যান আর কিছু কথা বলে
ফিরে আসেন। উনি বলেন ওই ছেলেটার মানসিক
ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেছে। ওর বাড়ি জাহানাবাদ
জেলার এক গ্রামে। মাস দুয়েক আগে এক রাতে
কিছু গুন্ডা ওর সামনে ওর মা বাবা ভাই বোন সবাইকে
গুলি করে মেরে ফেলে। কোন কারণে
ওকে মারেনি বা মারতে পারেনি। কিন্তু সেই রাত
থেকেই ওই ছেলেটার সামনে কেউ গেলেই
ও ভাবছে ওকে বন্দুক দিয়ে গুলি করবে। আর
তাই ও "মুঝে মত মারো মুঝে মত মারো" বলে
আর্তনাদ করে। আমি আজও সেই আর্তনাদ ভুলিনি।
এর পর কারেন্ট চলে আসে আর আমিও আমার
কাজ শেষ করি। ফিরে আসার সময় সেইদিন প্রথম
উপলব্ধি করি যে রাঁচির পাগলাগারদ কোন হাসির জায়গা
নয়। পৃথিবীতে মনে হয় এর থেকে বেশী
দুঃখের জায়গা আর নেই।
[+] 1 user Likes FuckEr BoY's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চাঁদের অন্ধকার_Written By Tumi_je_amar - by FuckEr BoY - 02-11-2019, 08:33 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)