19-01-2019, 01:11 PM
পর্ব ৪২।।
‘নাহ!... এবার ঘরে চলো... আজ অনেক ভিজেছি বৃষ্টিতে...’ অর্নবের বুক থেকে মুখ তুলে বলে ওঠে পৃথা... অদৃশ্য হাতটাকে ধরে টান দেয় সাথে করে নিয়ে যাবার তাগিদে... অন্য হাতে ধরে রাখে খানিক আগে শরীর থেকে খুলে ফেলা লেগিংস আর দেহের রস মেখে থাকা প্যান্টিটা... ফিরিয়ে আর পরতে ইচ্ছা করে না তার... আর তাছাড়া এই ভেজা লেগিংস পরাও সম্ভব নয় এখন... তাই হাতে করে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করে...
আজ অর্নবের ভিষন ভালো লাগছে বৃষ্টির জলে এই ভাবে ভিজতে... কত দিন... না, না... কত বছর যে সে এই ভাবে খোলা আকাশের নীচে ভেজেনি... বৃষ্টি নামলেই তার মনে পড়ে যেতো সেই সেদিনের ঘটনাটা... বাজের আওয়াজে চমকে চমকে উঠত ফ্ল্যাটের নিভৃত কোনায়... কিন্তু আজ পৃথাকে পাশে পেয়ে তার মনে হচ্ছে সে মুছে দিতে পেরেছে তার সেই অনর্থক ভীতিটাকে... আরো, আরো ভিজতে ইচ্ছা করে তার এই তুমুল বৃষ্টির ধারার নীচে দাঁড়িয়ে... গাঢ় কন্ঠে সে বলে, ‘তুমি যাও... আমি আসছি... আর একটু থাকি...’
‘না সোনা... তোমায় একা ছেড়ে যাবো না আমি... তাহলে আমিও থাকি তোমার সাথে...’ আদুরে গলায় বলে ওঠে পৃথা... আসলে অর্নবকে একা এই ভাবে ছাদে ছেড়ে যেতে মন চায় না তার কিছুতেই...
‘দূর বোকা মেয়ে... আমি কি বাচ্ছা ছেলে? যে আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব...
‘কেন? বাচ্ছা ছেলেদেরই কি শুধু শাসন দরকার? এই ধাড়ী খোকাটার দরকার নেই?’ চোখ পাকায় পৃথা...
‘আমি ধাড়ী খোকা?’ হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে অর্নব...
‘হুউউউ... ধাড়ী খোকাই তো... একটা ভিষণ মিষ্টি দুষ্টু বদমাইশ ছেলে...’ বলতে বলতে এগিয়ে এসে অর্নবের ভেজা দাড়িতে হাত রাখে... লেগে থাকা বৃষ্টির জলগুলো মুছে দেবার চেষ্টা করে দাড়ির ওপর থেকে... ‘দেখো তো... কি রকম ভিজে গেছো তুমি... আরো বৃষ্টিতে থাকলে এবার ঠান্ডা লেগে যাবে যে সোনা...’ গলার স্বরে অর্নবের প্রতি উৎকন্ঠার আভাশ মিশে যায়...
পৃথার কোমরটা ধরে টেনে নেয় নিজের পানে অর্নব, ‘আমায় এত কেন ভালোবাসো তিতির?’
অর্নবের হাতের ছোঁয়া যেন গলে যায় পৃথা... ঢুকে যায় অর্নবের বুকের মধ্যে সে... বুকের লোমের মধ্যে মুখ গুঁজে গুনগুনায়, ‘ইশশশ... বয়েই গেছে ভালোবাসতে... একটা বিচ্ছিরি অসভ্য লোক...’
‘কিন্তু এই বিচ্ছিরি অসভ্য লোকটার জন্য যে মেয়েটা পাগল... সেটা কি মুখে বললে তবে বুঝবো?’ গাঢ় স্বরে বলে অর্নব...
‘কে বলেছে সব বুঝতে? আমি কি বলেছি নাকি?’ বলতে বলতে হাত তুলে আঁচড় কাটে ছাতির ওপরে...
‘সব কি বলে দিতে হয়?’ মাথা নামায় পৃথার ভেজা চুলের ওপরে... চুমু খায় সেখানে...
আকাশ ডেকে ওঠে গুড়গুড় করে...
‘না গো... বড্ডো চিন্তা হয় তোমায় নিয়ে... তোমার যদি শরীর খারাপ হয়, আমি কি করবো বলো তো? আর পাঁচটা লোকের মত যদি তোমায় দেখতে পেতাম, আমার হয়তো এতটা চিন্তা থাকতো না, কিন্তু...’ বলতে বলতে বুকের থেকে মুখ থেলে থাকায় আবছায়া অবয়বটার পানে... হাত তুলে ফের রাখে অর্নবের গালের ওপরে... ‘তুমি যে আমার কাছে কি, তুমি জানো না...’ বলতে বলতে গলার স্বর বুজে আসে আবেগে...
‘আমার কিচ্ছু হবে না... তুমি আছো না!’ আস্বস্থ করার চেষ্টা করে অর্নব...
‘হ্যা... লোকটা সব জেনে বসে আছে... কতদিন পর বৃষ্টিতে ভিজলে বলো তো... এখন যদি ঠান্ডা লেগে যায়?’ ফের গলার স্বরে উৎকন্ঠা ফিরে আসে পৃথার...
‘ও আচ্ছা... আমি ভিজলাম... আমি তো বৃষ্টি আসতেই বলেছিলাম নীচে যেতে... তখন কে আটকেছিল শুনি... কে আদর খাবার জন্য আমার বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব...
শুনে কান লাল হয়ে ওঠে পৃথার... তাড়াতাড়ি অর্নবের বুকের মধ্যে মুখ লোকায় সে... ‘বেশ করেছি আদর খেয়েছি...’ গুনগুনিয়ে বলে ওঠে অর্নবের বুকের মধ্যে থেকে... ছোট ছোট চুমু খায় বুকের লোমে... একটা হাতের বেড়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের দেহটাকে... চেপে ধরে পায়রার মত নরম বুকটাকে অর্নবের ছাতির সাথে... শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা ভেজা কুর্তির কাপড়টা বিশেষ আড়াল সৃষ্টি করতে পারে না... অর্নব নিরাকার দেহের ওপরে স্পর্শ পায় শক্ত নুড়ির মত স্তনের বোঁটার...
শক্তিশালী হাতের আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে পৃথার নরম দেহটাকে নিজের বুকের মধ্যে... হাত রাখে পৃথার ভেজা পীঠে... অন্য হাতটা দিয়ে পৃথার চিবুকটা ধরে তুলে ধরে তার মুখটাকে ওপর পানে... তারপর মুখ নামিয়ে ছুয়ে দেয় নিজের ওষ্ঠ প্রিয়ার ওষ্ঠে... ‘উমমম...’ গুঙিয়ে ওঠে পৃথা... হাত তুলে খামচে ধরে বৃষ্টির জলে ভিজে ওঠা অর্নবের বড় বড় চুলটাকে হাতের মুঠোয়... টেনে ধরে রাখে তার মুখটাকে নিজের মুখের ওপরে... গুঁজে দেয় জিভটাকে অর্নবের মুখের মধ্যে... আরো মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে অর্নবের বুকের মধ্যে সে...
দুটো জিভ মুখের মধ্যে খেলা করে বেড়ায়... ঘুরে বেড়ায় একে অপরকে সাথে নিয়ে... কারুর মুখে কোন কথা থাকে না... শুধু নিঃশ্বাস ঝরে পড়ে অপরের ভেজা মুখের চামড়ার ওপরে... পৃথার পীঠের ওপরে থাকা অর্নবের হাতটা নেমে যায় নীচের পানে... হাতের তালুর মধ্যে চেপে ধরে পৃথার সুগোল নিতম্বের নরম দাবনা একটা... চটকায় সেটাকে হাতের মধ্যে নিয়ে মুখের মধ্যে পুরে রাখা জিভটাকে চুষতে চুষতে... মনে পড়ে যায় সে দুটির সৌন্দর্যের কথা, কিছুক্ষন আগেই যেটা সে মন ভরে নিরিক্ষণ করেছিল... গুঁজে দিয়েছিল মুখ এই হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা নরম নিতম্বের অববাহিকায়... জিভের সাহায্যে কামনার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল পৃথার শরীরে ওর এই নরম নিতম্বের ফাঁকে থাকা পায়ুছিদ্র লেহনে...
‘উমমম...’ অর্নবের মুখের মধ্যেই ফের গুঙিয়ে ওঠে পৃথা... আপন জঙ্ঘাটাকে ঠেলে দেয় সামনের পানে... ভেজা কুর্তির আড়ালে থাকা লোমে আবৃত যোনিবেদীটা ঠেঁকে অর্নবের জানুর সাথে... ‘উমমম...’ জানুর স্পর্শে গোঙায় সে... কোমরটাকে ডাইনে বাঁয়ে করে ঘসে ঠেসে ধরে যোনিটাকে অর্নবের জানুর সাথে... একটু একটু করে ফের তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে দুটো শরীর... হাত থেকে খসে পড়ে ধরে রাখা ভেজা লেগিংস আর প্যান্টি... অর্নবের আদুল পীঠের মাংসে পৃথার আঙুলের নখের আঁচড় পড়ে... কোন রকমে মুখ তুলে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে সে... ‘আদর করো আমায়... লাভ মী ওয়ান্স মোর...’ যেন স্থান কাল পাত্র পরিবেশ পরিস্থিতি... সব... সব কিছু বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে তাদের কাছে... যেন এই পৃথিবীতে শুধুই তারা... দুটো মাত্র প্রাণ... মিশে যেতে থাকা দুটো ভালোবাসা ভরা শরীর... আর কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই কোথাও...
পৃথার কথায় স্ফিত হয়ে উঠতে থাকে অর্নবের পুরুষাঙ্গটা ফের... মাথা তুলে দাঁড়াতে থাকে পৃথার কোলের মধ্যে... হাতের পেষণ বাড়ে তার... নির্মম শক্তিতে আরো জোরে চেপে ধরে পৃথার নরম তুলতুলে নিতম্বটাকে... একটা হাত তুলে রাখে পৃথার বুকের ওপরে... চেপে ধরে মুঠিভর স্তন... মুখ নামিয়ে ফের চেপে ধরে নিজের ঠোঁট পৃথার ঠোঁটের ওপরে...
কড়...কড়...কড়াৎ...
কাছেই কোথাও একটা বাজ পড়ে সম্ভবতঃ... আঁধার আকাশটা চিরে আলোকিত করে বিদ্যুতের লকলকে রেখা ছুটে যায় এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে... দুজনেই কেমন অজানা আতঙ্কে কেঁপে ওঠে...
তাড়াতাড়ি অর্নবকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় পৃথা... ‘এই... আর না... চলো... নীচে যাই...’ গলার স্বরে উদ্বেগ ফুটে ওঠে... ‘আর থাকা উচিত হবে না এখানে...’ মেঝেতে পড়ে থাকা কাপড়গুলো তুলে নেয় ফের হাতের মধ্যে...
এবার অর্নবও আর বারণ করে না... বাজ পড়তেই কেমন যেন গুটিয়ে যায় সে... যেন পুরানো আতঙ্কটা ফের ফিরে আসে তার বুকের মধ্যে... পৃথার হাতটাকে চেপে ধরে মুঠোয়... ভীত গলায় বলে ওঠে, ‘হ্যা... সেই ভালো... চলো নীচেই যাই...’
দ্রুত হেঁটে পার হয়ে যায় ছাদটাকে... ছাদের দরজা ঘুরে সবে একটা পা দিয়েছে সিড়িতে, হটাৎ করে পৃথার মনে পড়ে ফ্ল্যাটের চাবিটা তার কাছে নেই... সেটা সে পাঁচিলের ওপরে রেখেছিল তখন... সেটা খেয়াল হতেই সে বলে ওঠে, ‘আরে! চাবিটা ফেলে চলে যাচ্ছি... দাঁড়াও... নিয়ে আসি...’ বলে ফিরে যাবার জন্য উদ্যত হয় পৃথা...
বাধা দেয় অর্নব... তার কাঁধে হাত রেখে বলে... ‘তুমি থাকো... আমি নিয়ে আসছি...’
অর্নবের বাজ পড়ার প্রতি ভয়ের কথা পৃথার অজানা নয়... তাই সে বাধা দিতে যায়... বলে ওঠে... ‘কিন্তু...’ কিন্তু তার মুখের কথা শেষ হয় না... তার আগেই বোঝে অর্নব তার পাশে নেই... দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছে খোলা ছাদে, ঘরের চাবি আনতে... একরাশ উৎকন্ঠায় তাকিয়ে থাকে পৃথা শূণ্য অন্ধকার ছাদের পানে... বৃষ্টির ঝাপটায় দৃষ্টি আড়াল করা ছাদের দিকে দরজার এপার থেকে... ভেজা কুর্তি থেকে জল চুঁইয়ে পড়ে ভিজে ওঠে শুকনো মেঝে...
কড়...কড়...কড়াৎ...
পৃথার চোখ দুটো ঝলসে যায় একটা প্রচন্ড সাদা আলোর ঝলকানিতে... আর সেই সাথে কান ফাঁটা আওয়াজে... সাথে সাথেই নিকশ কালো অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো ফ্ল্যাট বাড়িটাই... ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে...
হটাৎ কেঁপে ওঠে পৃথার শরীরটা... অর্নব?... তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তাকায় সামনের পানে... প্রথমটায় সব ঝাপসা ঠেকে... চকিত আলোর ঝলকানি মনে হয় যেন অন্ধ করে দিয়েছে তাকে... তারপর একটু একটু করে সয়ে আসে অন্ধকারটা... ভালো করে তাকায় সে... অর্নব?... বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে পৃথার... বুঝতে অসুবিধা হয় না বাজটা তাদের বাড়িতেই পড়েছে... দৌড়ে ছাদের মধ্যে বেরিয়ে আসে... অস্ফুট গলায় ডাক দেয়... ‘অর্নব!’ কোন সাড়া পায় না... ফের ডাকে... ‘অর্নব!’ এবারেও কোন সাড়া আসে না তার ডাকে... বুকের ভেতরটা শুকিয়ে যায় পৃথার... শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হীমশীতল অনুভুতি নেমে যায় যেন... মুচড়ে ওঠে বুকটা... ‘অর্নব!’ ফের ডাক দেয় সে... এবার আর একটু জোরে... পাগলের মত ইতি উতি তাকায়... কেউ নেই... থাকবেই বা কি করে? তাকে তো দেখতে পাবে না খালি চোখে এই ভাবে... তবে কি? না, না... তা কি করে হবে? অর্নবের কিচ্ছু হয় নি... হতে পারে না... সে যে বলেছিল আমি সাথে আছি, ওর কিচ্ছু হবে না... তবে সাড়া দিচ্ছে না কেন? ‘অর্নব কোথায়? সাড়া দাও না অর্নব... প্লিজ...’ গলার মধ্যেটায় পাকিয়ে ওঠে কান্নাটা... ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায় সেটা... ‘ওহ! ফর গডস্ সেক... সাড়া দাও না... প্লিজ অ্যান্সার মীইইইইইই... অর্নঅঅঅঅঅব!’ আরো গলা চড়ে... চিৎকারের সাথে কান্না মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকে... পাগলের মত ছুটে যায় ছাদের পাঁচিলটার দিকে... যেখানটায় চাবিটা রাখা ছিল... বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যায় চোখের কান্না... ‘অর্নওওওওওব!’ চিৎকার করে ডাক দেয় ছুটে যেতে যেতে...
কিছুতে হোঁচট খেয়ে ছিটকে পড়ে পৃথা ছাদের বৃষ্টিতে ভেজা কর্কশ কঠিন মেঝেতে... ছেঁচে যায় হাঁটু আর কুনুইটা... ‘মাগো...’ কোঁকিয়ে ওঠে যন্ত্রনায়... হাতের মধ্যে ধরা পরনের প্যান্টি আর লেগিংসটা ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে...
কোন রকমে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে বসে সে... হাত বোলায় হাঁটুর ওপরে... এই ভাবে ছেঁচড়ে পড়ে কেটে গিয়েছে বেশ খানিকটা... তার ওপরে বৃষ্টির জলে জ্বালা করে কাটা জায়গা... ফের মনে পড়ে যায় অর্নবের কথা... ভুলে যায় নিজের শরীরের যন্ত্রনা... তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়াতে যায় সে... আর তখনই নজর পড়ে তার পায়ের কাছেই পড়ে থাকা দেহটার দিকে...
‘কেহহহ...’ ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে পৃথা... হাতে পায়ের ভরে হামা দিয়ে এগিয়ে যায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকা দেহটার দিকে... বুকের মধ্যেটায় একটা অনাহুত ভয় দামামা পেটায় যেন... ‘কেহহহহ...’ ফের প্রশ্ন করে অস্ফুট স্বরে... জোরে কথা বলতেও যেন ভয় হয় তার... কান্না ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে উপুড় হয়ে থাকা নগ্ন দেহটাকে... তাড়াতাড়ি মুখের ওপরে এসে পড়া বৃষ্টি জল মুছে নেয়... চোখদুটোয় হাত বুলিয়ে পরিষ্কার করে কান্নার জলের রেশ... আরো খানিকটা কাছে এগিয়ে যায়... বড় বড় চুলগুলো লেপটে রয়েছে সারা মাথার থেকে নেমে ঘাড়ের ওপরে... পেশল পীঠটা তার দিকেই ফেরানো... হাতটাকে বাড়াতে যায় পড়ে থাকা শরীরটার দিকে... পরক্ষনেই টেনে পিছিয়ে নেয়... ইতস্থত করে... তারপর ফের হাত বাড়ায়... আলতো করে হাত রাখে নগ্ন পীঠের ওপরে... স্পর্শ করে দেহটাকে... সারা শরীরটায় একটা শিহরণ খেলে যায় দেহটাকে স্পর্শ করা মাত্রই... হুমড়ি খেয়ে পড়ে পৃথা... চিৎকার করে ডাক দিয়ে ওঠে... ‘অর্নওওওওব!’
দেহটাকে ধরে চিৎ করে দেয় সে... আধো অন্ধকারের মধ্যেই ঝুঁকে পড়ে শরীরটার মুখের ওপরে... এক মুখ দাড়ি ভরা গালের ওপরে হাত রাখে... ‘সোনা... অর্নব... শুনতে পাচ্ছ... দেখো না সোনা... এই দেখো... তোমার তিতির... চোখ খোলো না সোনা... প্লিজ... প্লিজ... একবার তাকাও... দেখো... তোমার তিতির তোমার কাছে... বলো না সোনা... তাকাও না তোমার তিতিরের দিকে...’ পাগলের মত হাত বোলায় দাড়ি ভরা গালে, মাথায়, কপালে... ঝুঁকে পড়ে চুমু খায় মুখটায় একের পর এক... ক্রমাগত ডেকে চলে সে... ‘অর্নব সোনা... এই যে আমি... তাকাও... প্লিজ...’
কেমন ভয় হয় তার... তারপরই অমূলক ভয়টাকে সরিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে... ‘না, না... আমার অর্নবের কিচ্ছু হবে না... আমি জানি... ও বলেছিল তিতির ওর সাথে থাকলে ওর কিছু হবে না...’ উপঝরন্তে পড়া বৃষ্টি নীচে বসে পাগলের মত প্রলাপ বকে চলে সে... তাড়াতাড়ি করে ঝুকে পড়ে দেহটার বুকের ওপরে... কান পাতে সেখানে... কানে আসে ক্ষীণ হৃদস্পন্দন... উঠে বসে ঝাঁকাতে থাকে দেহটাকে ধরে... যত গায়ের শক্তি অবশিষ্ট আছে, তাই দিয়েই... এক নাগাড়ে ডাক দিয়ে যেতে থাকে... ‘অর্নব... ওঠো... অর্নব... প্লিজ কথা বলো... প্লিজ... আমি জানি তোমার কিছু হবে না... তুমি শুধু একবার তোমার তিতিরকে ডাকো... অর্নব...’
হটাৎ চুপ করে যায় পৃথা... কেমন যেন মনে হয় তার একটা অস্ফুট গোঙানীর আওয়াজ শোনে সে... তাড়াতাড়ি করে দেহটার বুকের ওপর থেকে মাথা তুলে ঝুঁকে পড়ে মুখের ওপরে... কান খাড়া করে শোনা চেষ্টা করে... ‘ওওওফফফফ...’ হ্যা... এই তো... অর্নব সাড়া দিয়েছে... হাত তুলে গলার কাছটায় ছোয়ায় সে... অনুভব করার চেষ্টা করে দেহটার প্রাণস্পন্দন... ‘উমমমফফফ...’ একটা অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে আসে দেহটার মুখ থেকে... ফের ঝুঁকে পড়ে পৃথা... চাপা স্বরে ডাক দেয়... ‘অর্নব... শুনতে পাচ্ছ?’
নিজের মুখের ওপরে উপলব্ধি করে এসে পড়া নিঃশ্বাসের স্পর্শ... ঝুঁকে গালটা চেপে ধরে দেহটার গালের সাথে... কানে আসে অস্ফুট স্বরের ডাক... ‘তিতির...’
গাল ছেড়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসে পৃথা... দুহাত দিয়ে দেহটাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে... ‘হ্যা সোনা... এই তো আমি... কষ্ট হচ্ছে সোনা?’ বলে ঠিকই কিন্তু অর্ধেক কথা মিশে হারিয়ে যায় কান্নার সাথে...
খুব ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় অর্নব... পরক্ষনেই বন্ধ করে নেয়... তারপর আবার তাকায়... হাত তোলে... রাখে বুকের ওপরে থাকা পৃথার পীঠের ওপরে... অনেক কষ্টে টেনে টেনে বলে ওঠে... ‘আমি ঠিক আছি... তুমি ভেবো না...’
হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে পৃথা... দুহাত দিয়ে মাটির ওপরে পড়ে থাকা অর্নবের শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে... ‘ওহ! সোনা... আমি জানতাম তোমার কিচ্ছু হবে না... এই দেখো তোমায় দেখতে পাচ্ছি আমি... তোমায় দেখতে পাচ্ছি... ওহ! সোনা... আমার...’ বলতে বলতে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে অর্নবের সারা মুখমন্ডল...
খুব আস্তে আস্তে উঠে বসার চেষ্টা করে অর্নব... পৃথা পেছন থেকে ঠেকনা দিয়ে সাহায্য করে তাকে... উঠে বসলে পাশে এসে বসে... প্রবল বৃষ্টির ধারা দুজনকেই যেন ধুইয়ে দিতে থাকে... যেন দুজনেরই নবজন্ম হয় তখনই...
বেশ খানিকক্ষন অপেক্ষা করে কোনরকমে টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায় অর্নব... পৃথার কাঁধে হাতের ভর রেখে বলে, ‘কি হয়েছিলো বলো তো?’
‘জানি না... মনে হয় বাজটা ওই ট্রান্সফর্মারেই পড়েছিল, আর তাতেই...’ আর বলতে পারে না সে... যদি ট্রান্সফর্মারে না পড়ে... ভাবতেই কেঁপে ওঠে ভয়ে সারা শরীরটা তার... ‘ছাড়ো ওসব কথা... নীচে চলো...’ বলে ছাদের পাঁচিল থেকে হাতে তুলে নেয় চাবির গোছাটাকে... নিজের ওড়নাটা গায়ের থেকে খুলে জড়িয়ে দেয় অর্নবের নগ্ন কোমর পেঁচিয়ে... তারপর তাকে ধরে ধীরে ধীরে নেবে যায় নিজের ফ্ল্যাটের দিকে...
‘এই, জানো... রাই না, ভিষন অভিমানী হয়ে উঠেছে দেখছি... ভাবতে পারো? ও কাজলর সাথে কথাই বলছিল না... ওই টুকু একটা মেয়ে... কি? না কাজল একটু জোর গলায় রাইকে বলেছিল দুধটা তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নিতে... বলো... এখন থেকেই ওই রকম অভিমানী হয়ে উঠেছে মেয়ে তোমার... বকা ঝকা তো দূর, এতটুকুও জোরে কথা বলা যায় না ওর সাথে...’ অর্নবের সাথে গাড়িতে যেতে যেতে বলে পৃথা...
‘হুম... এ আর আশ্চর্যের কি? মেয়ের মা কে দেখতে হবে তো... তাই না?’ স্টিয়ারিংএ হাত রেখে সামনের পানে তাকিয়ে ছুঁড়ে দেয় কথাটা অর্নব পৃথার দিকে...
পাশের সিটে বসা পৃথা সাথে সাথে ঘাড় ফেরায় লক্কা পায়রার মত... চোখ পাকিয়ে বলে ওঠে... ‘কি? আমার মেয়ে বলে এমন হয়েছে? মেয়ের মত আমিও অভিমানী?’
আড় চোখে একবার নিজের সুন্দরী স্ত্রীর পানে তাকিয়ে মিচকি হেসে, ফের সামনের দিকে তাকিয়ে বলে অর্নব... ‘না, না... ভুল বললাম, আমার বউটা একটুও অভিমানী নয়... শুধু যা মাঝে মধ্যেই গালটা ভারী হয়ে যায়... তখন না আদর করলে এই মিষ্টি মেয়েটার গালটা কিছুতেই আগের মত হয়ে ওঠে না... তাই না? ঠিক আমাদের ছোট্ট রাইয়ের মত...’
‘ভালো হবে না কিন্তু... এই ভাবে যদি আমার লেগ পুল করো তাহলে আমি তোমার সাথে যাবো না বলে দিচ্ছি...’ অভিমানী গলায় বলে ওঠে পৃথা...
‘আচ্ছা বাবা, আচ্ছা... আমারই বোঝা ভুল হয়ে গেছে... বউটা আমার একদম অভিমানী নয়... একটু যা বেশিই আদুরে... তাই তো? এবার ঠিক বললাম তো?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব...
চোখের কোলে ভালোবাসা চিকচিক করে পৃথার... ‘বেশ করি আদর খাই... আরো... আরো... আরো বেশি বেশি করে আদর খাবো আমি... দেখি আমায় আদর না করে বাবু কেমন থাকতে পারে...’ গোলা পায়রার মত ঘাড় বেঁকিয়ে বলে ওঠে সে...
আর কথা বাড়ায় না অর্নব, একবার চোখ ফিরিয়ে আপাদমস্তক দেখে নেয় পাশে বসা নিজের স্ত্রীকে... লাল শাড়ীটায় অপূর্ব লাগছে পৃথাকে... গায়ে ম্যাচিং ব্লাউজ... চুলগুলো ঝাকড়া বলে সেগুলো বেশ সাজিয়ে একটা খোঁপা করেছে মাথার ওপরে... কি ভাবে ম্যানেজ করেছে কে জানে... অবস্য সেটা জানার বিশয়ও নয় অর্নবের... ও ব্যাপারে সে একটু অজ্ঞই বলা যেতে পারে... চুলের সিঁথিতে ছোট্ট করে টানা দেওয়া সিঁদুরের দাগটা পৃথার মুখের ঔজ্জল্য যেন শতগুন বাড়িয়ে দিয়েছে... পাতলা ঠোঁট দুটো বেশ গাঢ় রঙের লিপস্টিকে রাঙানো... দুই হাতে বেশ অনেকগুলো সোনার চুড়ি পরেছে আজ... অন্য সময় এতটা সাজে না ও... কিন্তু আজ খুব মন দিয়ে সেজেছে... একেবারেই অন্য রকম লাগছে আর পাঁচটা দিনের থেকে... সেই আট বছর আগের বিয়ের দিনের পৃথা হয়ে গিয়েছে যেন... একেবারে নববধূর মত বসে রয়েছে তার পাশটিতে... বাড়িতে এখন শ্বশুর শাশুড়ি এসে রয়েছে বলে বেরুবার সময় কিছু বদমাইশি করার চেষ্টা করে নি অর্নব, যদি ওনারা না থাকতো... ভাবতেই মনে মনে হেসে ওঠে সে...
‘এই, গাড়ি চালাতে চালাতে ওই রকম হাসছ কেন গো?’ অর্নবকে মিচকি হাসতে দেখে প্রশ্ন করে পৃথা...
‘না... কিছু না...’ বলে ওঠে অর্নব...
‘উহু... নিশ্চয়ই কিছু... আমায় বলছ না... বলো না কেন হাসলে...’ এর জিজ্ঞাস করে পৃথা...
‘না... ভাবছিলাম আজ বাড়িতে তোমার বাপি, মা না থাকলে আমাদের বেরুতে অনেক দেরী হয়ে যেত... তোমাকে আবার নতুন করে সাজতে হতো...’ গলার স্বরে যতটা সম্ভব গাম্ভীর্য ফিটিয়ে তোলার চেষ্টা করে অর্নব...
‘আমাকে আবার সাজতে হতো? কেন?’ অবাক গলায় প্রশ্ন করে পৃথা...
‘বাহ!... নতুন করে সাজতে হতো না? আমার বউটাকে এত সুন্দরী লাগছে, সেখানে আমি তাকে বিছানায় তুলে না নিয়ে গিয়ে কি ছাড়তাম নাকি?’ ফের আড় চোখে একবার তাকিয়ে নিয়ে উত্তর দেয় অর্নব...
‘ওরে বুড়ো... মাথায় খালি ওই জিনিসটা ঘুরে বেড়ায়, না?’ চোখ পাকায় পৃথা...
‘ও... আমি এখন বুড়ো হলাম? কই... অন্য সময় তো বুড়ো বলো না? তখন তো আর পারছি না... আর পারছি না করে ছটফট করো...’ হাসে অর্নব...
‘যাহ!... তুমি না...’ লাল হয়ে ওঠে পৃথার ফর্সা গাল... হাত বাড়িয়ে স্টিয়ারিং ধরা অর্নবের হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, ‘তবে সত্যিই অর্নব... তোমার যা দম... না পেলে বুঝতাম না... আচ্ছা আচ্ছা যোয়ানকেও হার মানিয়ে দেবে...’ বলে খিলখিল করে হেসে ওঠে সে... ‘নাও... মনে হচ্ছে এসে গেছি... ওই বাড়িটাই না?’
আজ পৃথা আর অর্নব এসেছে সুশান্তর পঞ্চম বিবাহবার্ষিকির নিমন্ত্রন রক্ষার্থে... তারা আজ সুখি দম্পতি... বিয়ে করে নিয়েছে প্রায় বছর আষ্টেক হয়ে গেল... একটি রাজকন্যার জন্ম দিয়েছে পৃথা... ফ্ল্যাটে আর থাকে না... ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাটটা ভাড়ায় দিয়ে উঠে এসেছে একটা বাড়ি কিনে নিয়ে, যেখানে তাদের সংসার আনন্দে সুখে ভরে থাকে সবসময়... প্রণবকে অনুরোধ করেছিল স্ত্রী পুত্র নিয়ে তাদের কাছেই চলে আসতে, কিন্তু প্রণব তাতে রাজি হয় নি, হেসে বলেছে, সে নাকি কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না... আর জোরও করে নি তারা... মাঝে মধ্যে শিলিগুড়ি থেকে পৃথার বাপী আর মা এসে থাকেন... তাদের ছোট্ট রাই সঙ্গ পায় নিজের দাদান দিম্মার... একটু একটু করে বড়ো হয়ে উঠছে সেও... দেখতে নাকি একেবারে পৃথার মত হয়েছে...
‘এই... কি দেখছ ওই ভাবে?’ ভুরু তুলে প্রশ্ন করে পৃথা... সুশান্তের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে... ওই তিক্ষ্ণ চোখ জোড়াকে তার শাড়ির আঁচলের ফাঁকে ঘুরে বেড়াতে বুঝে... এখন অর্নব যেন ওই ছবির থেকেও আরো অনেক বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে... চেহারের মধ্যে একটা বেশ ভারিক্কি ভাব এসেছে... সুঠাম জিম করা চেহারায় আরো বেশি করে সেক্সি মনে হয় দেখলেই... এই এত বছর ধরে ওর সাথে ঘর করলেও, আজও যেন ওর দিকে তাকালে সিরসির করে ওঠে শরীরটা পৃথার... বুকের মধ্যে ঝড় ওঠে... কি অদ্ভুত আমেজ ছড়িয়ে পড়ে দেহে অর্নবের চোখে চোখ রাখলেই... ভুরুর কাটা দাগটা যেন আরো বেশি করে টানে ওকে, যত দিন যাচ্ছে ততই...
‘তোমায়...’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় অর্নব...
‘ধ্যাৎ... আমাকে আবার নতুন করে কি দেখবে?’ মুখে বলে ঠিকই, কিন্তু স্বামীর কথায় যেন ভালো লাগায় গলে যায় সে...
‘তোমার শরীরটা কিন্তু আগের থেকে আরো ভরাট হয়ে উঠেছে...’ গাঢ় গলায় বলে অর্নব...
‘তাই বুঝি?’ গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা...
‘হুম... আগের থেকেও বেশ ভরাট হয়ে উঠেছে বুকগুলো... এখন শাড়ীর আঁচলও পুরো ঢেকে রাখতে পারে না... দেখলেই কেমন মুখ ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছা করে দুটো বুকের খাঁজে...’ চাপা স্বরে বলে অর্নব...
‘যাহ! অসভ্য বুড়ো... শখ কত... এখন রাস্তাঘাটেও আমাকে ওই ভাবে দেখে... ইশশশ... লজ্জা করে না আমার?’ লাল হয়ে ওঠে কান দুটো অর্নবের কথা শুনে... বুকের মধ্যে রিনরিনে সুখ ঘোরে...
‘আমার কি দোষ? তোমায় দেখলেই যদি আদর করতে ইচ্ছা করে আমার...’ বলে ওঠে অর্নব...
‘যাহ!... দুষ্টূ... বেলটা টিপবে? নাকি দরজার এপারে দাঁড়িয়ে শুধু বউকেই দেখে যাবে? হুম? রাতে যা অসভ্যতামী করার কোরো... বুঝেছ? এখন বেলটা টেপো...’ বলে ওঠে পৃথা... কানের লতী গরম ঠেকে... গালদুটো কি লাল হয়ে উঠেছে?
গল্পটার থীমটা নিয়ে একটা পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে গিয়েছিলাম... চেষ্টা করেছি গল্পের ছন্দ বজায় রেখে গল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার... বাকিটা পাঠকদের মতামতের ওপর... হয়তো অনেক প্রশ্ন থেকে গিয়েছে... অনেক অবাস্তবতা রাখতে হয়েছে গল্পের খাতিরে... কিন্তু গল্পটাকে গল্পের মত করেই লিখতে চেয়েছি... আশা রাখবো পাঠকরা এই ছোট খাটো ত্রুটিগুলির জন্য আমাকে ক্ষমা করে দেবে...
ধন্যবাদান্তে...
‘নাহ!... এবার ঘরে চলো... আজ অনেক ভিজেছি বৃষ্টিতে...’ অর্নবের বুক থেকে মুখ তুলে বলে ওঠে পৃথা... অদৃশ্য হাতটাকে ধরে টান দেয় সাথে করে নিয়ে যাবার তাগিদে... অন্য হাতে ধরে রাখে খানিক আগে শরীর থেকে খুলে ফেলা লেগিংস আর দেহের রস মেখে থাকা প্যান্টিটা... ফিরিয়ে আর পরতে ইচ্ছা করে না তার... আর তাছাড়া এই ভেজা লেগিংস পরাও সম্ভব নয় এখন... তাই হাতে করে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করে...
আজ অর্নবের ভিষন ভালো লাগছে বৃষ্টির জলে এই ভাবে ভিজতে... কত দিন... না, না... কত বছর যে সে এই ভাবে খোলা আকাশের নীচে ভেজেনি... বৃষ্টি নামলেই তার মনে পড়ে যেতো সেই সেদিনের ঘটনাটা... বাজের আওয়াজে চমকে চমকে উঠত ফ্ল্যাটের নিভৃত কোনায়... কিন্তু আজ পৃথাকে পাশে পেয়ে তার মনে হচ্ছে সে মুছে দিতে পেরেছে তার সেই অনর্থক ভীতিটাকে... আরো, আরো ভিজতে ইচ্ছা করে তার এই তুমুল বৃষ্টির ধারার নীচে দাঁড়িয়ে... গাঢ় কন্ঠে সে বলে, ‘তুমি যাও... আমি আসছি... আর একটু থাকি...’
‘না সোনা... তোমায় একা ছেড়ে যাবো না আমি... তাহলে আমিও থাকি তোমার সাথে...’ আদুরে গলায় বলে ওঠে পৃথা... আসলে অর্নবকে একা এই ভাবে ছাদে ছেড়ে যেতে মন চায় না তার কিছুতেই...
‘দূর বোকা মেয়ে... আমি কি বাচ্ছা ছেলে? যে আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব...
‘কেন? বাচ্ছা ছেলেদেরই কি শুধু শাসন দরকার? এই ধাড়ী খোকাটার দরকার নেই?’ চোখ পাকায় পৃথা...
‘আমি ধাড়ী খোকা?’ হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে অর্নব...
‘হুউউউ... ধাড়ী খোকাই তো... একটা ভিষণ মিষ্টি দুষ্টু বদমাইশ ছেলে...’ বলতে বলতে এগিয়ে এসে অর্নবের ভেজা দাড়িতে হাত রাখে... লেগে থাকা বৃষ্টির জলগুলো মুছে দেবার চেষ্টা করে দাড়ির ওপর থেকে... ‘দেখো তো... কি রকম ভিজে গেছো তুমি... আরো বৃষ্টিতে থাকলে এবার ঠান্ডা লেগে যাবে যে সোনা...’ গলার স্বরে অর্নবের প্রতি উৎকন্ঠার আভাশ মিশে যায়...
পৃথার কোমরটা ধরে টেনে নেয় নিজের পানে অর্নব, ‘আমায় এত কেন ভালোবাসো তিতির?’
অর্নবের হাতের ছোঁয়া যেন গলে যায় পৃথা... ঢুকে যায় অর্নবের বুকের মধ্যে সে... বুকের লোমের মধ্যে মুখ গুঁজে গুনগুনায়, ‘ইশশশ... বয়েই গেছে ভালোবাসতে... একটা বিচ্ছিরি অসভ্য লোক...’
‘কিন্তু এই বিচ্ছিরি অসভ্য লোকটার জন্য যে মেয়েটা পাগল... সেটা কি মুখে বললে তবে বুঝবো?’ গাঢ় স্বরে বলে অর্নব...
‘কে বলেছে সব বুঝতে? আমি কি বলেছি নাকি?’ বলতে বলতে হাত তুলে আঁচড় কাটে ছাতির ওপরে...
‘সব কি বলে দিতে হয়?’ মাথা নামায় পৃথার ভেজা চুলের ওপরে... চুমু খায় সেখানে...
আকাশ ডেকে ওঠে গুড়গুড় করে...
‘না গো... বড্ডো চিন্তা হয় তোমায় নিয়ে... তোমার যদি শরীর খারাপ হয়, আমি কি করবো বলো তো? আর পাঁচটা লোকের মত যদি তোমায় দেখতে পেতাম, আমার হয়তো এতটা চিন্তা থাকতো না, কিন্তু...’ বলতে বলতে বুকের থেকে মুখ থেলে থাকায় আবছায়া অবয়বটার পানে... হাত তুলে ফের রাখে অর্নবের গালের ওপরে... ‘তুমি যে আমার কাছে কি, তুমি জানো না...’ বলতে বলতে গলার স্বর বুজে আসে আবেগে...
‘আমার কিচ্ছু হবে না... তুমি আছো না!’ আস্বস্থ করার চেষ্টা করে অর্নব...
‘হ্যা... লোকটা সব জেনে বসে আছে... কতদিন পর বৃষ্টিতে ভিজলে বলো তো... এখন যদি ঠান্ডা লেগে যায়?’ ফের গলার স্বরে উৎকন্ঠা ফিরে আসে পৃথার...
‘ও আচ্ছা... আমি ভিজলাম... আমি তো বৃষ্টি আসতেই বলেছিলাম নীচে যেতে... তখন কে আটকেছিল শুনি... কে আদর খাবার জন্য আমার বুকের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব...
শুনে কান লাল হয়ে ওঠে পৃথার... তাড়াতাড়ি অর্নবের বুকের মধ্যে মুখ লোকায় সে... ‘বেশ করেছি আদর খেয়েছি...’ গুনগুনিয়ে বলে ওঠে অর্নবের বুকের মধ্যে থেকে... ছোট ছোট চুমু খায় বুকের লোমে... একটা হাতের বেড়ে জড়িয়ে ধরে অর্নবের দেহটাকে... চেপে ধরে পায়রার মত নরম বুকটাকে অর্নবের ছাতির সাথে... শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা ভেজা কুর্তির কাপড়টা বিশেষ আড়াল সৃষ্টি করতে পারে না... অর্নব নিরাকার দেহের ওপরে স্পর্শ পায় শক্ত নুড়ির মত স্তনের বোঁটার...
শক্তিশালী হাতের আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে পৃথার নরম দেহটাকে নিজের বুকের মধ্যে... হাত রাখে পৃথার ভেজা পীঠে... অন্য হাতটা দিয়ে পৃথার চিবুকটা ধরে তুলে ধরে তার মুখটাকে ওপর পানে... তারপর মুখ নামিয়ে ছুয়ে দেয় নিজের ওষ্ঠ প্রিয়ার ওষ্ঠে... ‘উমমম...’ গুঙিয়ে ওঠে পৃথা... হাত তুলে খামচে ধরে বৃষ্টির জলে ভিজে ওঠা অর্নবের বড় বড় চুলটাকে হাতের মুঠোয়... টেনে ধরে রাখে তার মুখটাকে নিজের মুখের ওপরে... গুঁজে দেয় জিভটাকে অর্নবের মুখের মধ্যে... আরো মিশে যাওয়ার চেষ্টা করে অর্নবের বুকের মধ্যে সে...
দুটো জিভ মুখের মধ্যে খেলা করে বেড়ায়... ঘুরে বেড়ায় একে অপরকে সাথে নিয়ে... কারুর মুখে কোন কথা থাকে না... শুধু নিঃশ্বাস ঝরে পড়ে অপরের ভেজা মুখের চামড়ার ওপরে... পৃথার পীঠের ওপরে থাকা অর্নবের হাতটা নেমে যায় নীচের পানে... হাতের তালুর মধ্যে চেপে ধরে পৃথার সুগোল নিতম্বের নরম দাবনা একটা... চটকায় সেটাকে হাতের মধ্যে নিয়ে মুখের মধ্যে পুরে রাখা জিভটাকে চুষতে চুষতে... মনে পড়ে যায় সে দুটির সৌন্দর্যের কথা, কিছুক্ষন আগেই যেটা সে মন ভরে নিরিক্ষণ করেছিল... গুঁজে দিয়েছিল মুখ এই হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা নরম নিতম্বের অববাহিকায়... জিভের সাহায্যে কামনার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল পৃথার শরীরে ওর এই নরম নিতম্বের ফাঁকে থাকা পায়ুছিদ্র লেহনে...
‘উমমম...’ অর্নবের মুখের মধ্যেই ফের গুঙিয়ে ওঠে পৃথা... আপন জঙ্ঘাটাকে ঠেলে দেয় সামনের পানে... ভেজা কুর্তির আড়ালে থাকা লোমে আবৃত যোনিবেদীটা ঠেঁকে অর্নবের জানুর সাথে... ‘উমমম...’ জানুর স্পর্শে গোঙায় সে... কোমরটাকে ডাইনে বাঁয়ে করে ঘসে ঠেসে ধরে যোনিটাকে অর্নবের জানুর সাথে... একটু একটু করে ফের তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে দুটো শরীর... হাত থেকে খসে পড়ে ধরে রাখা ভেজা লেগিংস আর প্যান্টি... অর্নবের আদুল পীঠের মাংসে পৃথার আঙুলের নখের আঁচড় পড়ে... কোন রকমে মুখ তুলে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে সে... ‘আদর করো আমায়... লাভ মী ওয়ান্স মোর...’ যেন স্থান কাল পাত্র পরিবেশ পরিস্থিতি... সব... সব কিছু বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে তাদের কাছে... যেন এই পৃথিবীতে শুধুই তারা... দুটো মাত্র প্রাণ... মিশে যেতে থাকা দুটো ভালোবাসা ভরা শরীর... আর কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই কোথাও...
পৃথার কথায় স্ফিত হয়ে উঠতে থাকে অর্নবের পুরুষাঙ্গটা ফের... মাথা তুলে দাঁড়াতে থাকে পৃথার কোলের মধ্যে... হাতের পেষণ বাড়ে তার... নির্মম শক্তিতে আরো জোরে চেপে ধরে পৃথার নরম তুলতুলে নিতম্বটাকে... একটা হাত তুলে রাখে পৃথার বুকের ওপরে... চেপে ধরে মুঠিভর স্তন... মুখ নামিয়ে ফের চেপে ধরে নিজের ঠোঁট পৃথার ঠোঁটের ওপরে...
কড়...কড়...কড়াৎ...
কাছেই কোথাও একটা বাজ পড়ে সম্ভবতঃ... আঁধার আকাশটা চিরে আলোকিত করে বিদ্যুতের লকলকে রেখা ছুটে যায় এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে... দুজনেই কেমন অজানা আতঙ্কে কেঁপে ওঠে...
তাড়াতাড়ি অর্নবকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় পৃথা... ‘এই... আর না... চলো... নীচে যাই...’ গলার স্বরে উদ্বেগ ফুটে ওঠে... ‘আর থাকা উচিত হবে না এখানে...’ মেঝেতে পড়ে থাকা কাপড়গুলো তুলে নেয় ফের হাতের মধ্যে...
এবার অর্নবও আর বারণ করে না... বাজ পড়তেই কেমন যেন গুটিয়ে যায় সে... যেন পুরানো আতঙ্কটা ফের ফিরে আসে তার বুকের মধ্যে... পৃথার হাতটাকে চেপে ধরে মুঠোয়... ভীত গলায় বলে ওঠে, ‘হ্যা... সেই ভালো... চলো নীচেই যাই...’
দ্রুত হেঁটে পার হয়ে যায় ছাদটাকে... ছাদের দরজা ঘুরে সবে একটা পা দিয়েছে সিড়িতে, হটাৎ করে পৃথার মনে পড়ে ফ্ল্যাটের চাবিটা তার কাছে নেই... সেটা সে পাঁচিলের ওপরে রেখেছিল তখন... সেটা খেয়াল হতেই সে বলে ওঠে, ‘আরে! চাবিটা ফেলে চলে যাচ্ছি... দাঁড়াও... নিয়ে আসি...’ বলে ফিরে যাবার জন্য উদ্যত হয় পৃথা...
বাধা দেয় অর্নব... তার কাঁধে হাত রেখে বলে... ‘তুমি থাকো... আমি নিয়ে আসছি...’
অর্নবের বাজ পড়ার প্রতি ভয়ের কথা পৃথার অজানা নয়... তাই সে বাধা দিতে যায়... বলে ওঠে... ‘কিন্তু...’ কিন্তু তার মুখের কথা শেষ হয় না... তার আগেই বোঝে অর্নব তার পাশে নেই... দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছে খোলা ছাদে, ঘরের চাবি আনতে... একরাশ উৎকন্ঠায় তাকিয়ে থাকে পৃথা শূণ্য অন্ধকার ছাদের পানে... বৃষ্টির ঝাপটায় দৃষ্টি আড়াল করা ছাদের দিকে দরজার এপার থেকে... ভেজা কুর্তি থেকে জল চুঁইয়ে পড়ে ভিজে ওঠে শুকনো মেঝে...
কড়...কড়...কড়াৎ...
পৃথার চোখ দুটো ঝলসে যায় একটা প্রচন্ড সাদা আলোর ঝলকানিতে... আর সেই সাথে কান ফাঁটা আওয়াজে... সাথে সাথেই নিকশ কালো অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো ফ্ল্যাট বাড়িটাই... ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে...
হটাৎ কেঁপে ওঠে পৃথার শরীরটা... অর্নব?... তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তাকায় সামনের পানে... প্রথমটায় সব ঝাপসা ঠেকে... চকিত আলোর ঝলকানি মনে হয় যেন অন্ধ করে দিয়েছে তাকে... তারপর একটু একটু করে সয়ে আসে অন্ধকারটা... ভালো করে তাকায় সে... অর্নব?... বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে পৃথার... বুঝতে অসুবিধা হয় না বাজটা তাদের বাড়িতেই পড়েছে... দৌড়ে ছাদের মধ্যে বেরিয়ে আসে... অস্ফুট গলায় ডাক দেয়... ‘অর্নব!’ কোন সাড়া পায় না... ফের ডাকে... ‘অর্নব!’ এবারেও কোন সাড়া আসে না তার ডাকে... বুকের ভেতরটা শুকিয়ে যায় পৃথার... শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হীমশীতল অনুভুতি নেমে যায় যেন... মুচড়ে ওঠে বুকটা... ‘অর্নব!’ ফের ডাক দেয় সে... এবার আর একটু জোরে... পাগলের মত ইতি উতি তাকায়... কেউ নেই... থাকবেই বা কি করে? তাকে তো দেখতে পাবে না খালি চোখে এই ভাবে... তবে কি? না, না... তা কি করে হবে? অর্নবের কিচ্ছু হয় নি... হতে পারে না... সে যে বলেছিল আমি সাথে আছি, ওর কিচ্ছু হবে না... তবে সাড়া দিচ্ছে না কেন? ‘অর্নব কোথায়? সাড়া দাও না অর্নব... প্লিজ...’ গলার মধ্যেটায় পাকিয়ে ওঠে কান্নাটা... ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায় সেটা... ‘ওহ! ফর গডস্ সেক... সাড়া দাও না... প্লিজ অ্যান্সার মীইইইইইই... অর্নঅঅঅঅঅব!’ আরো গলা চড়ে... চিৎকারের সাথে কান্না মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকে... পাগলের মত ছুটে যায় ছাদের পাঁচিলটার দিকে... যেখানটায় চাবিটা রাখা ছিল... বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যায় চোখের কান্না... ‘অর্নওওওওওব!’ চিৎকার করে ডাক দেয় ছুটে যেতে যেতে...
কিছুতে হোঁচট খেয়ে ছিটকে পড়ে পৃথা ছাদের বৃষ্টিতে ভেজা কর্কশ কঠিন মেঝেতে... ছেঁচে যায় হাঁটু আর কুনুইটা... ‘মাগো...’ কোঁকিয়ে ওঠে যন্ত্রনায়... হাতের মধ্যে ধরা পরনের প্যান্টি আর লেগিংসটা ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে...
কোন রকমে হামাগুড়ি দিয়ে উঠে বসে সে... হাত বোলায় হাঁটুর ওপরে... এই ভাবে ছেঁচড়ে পড়ে কেটে গিয়েছে বেশ খানিকটা... তার ওপরে বৃষ্টির জলে জ্বালা করে কাটা জায়গা... ফের মনে পড়ে যায় অর্নবের কথা... ভুলে যায় নিজের শরীরের যন্ত্রনা... তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়াতে যায় সে... আর তখনই নজর পড়ে তার পায়ের কাছেই পড়ে থাকা দেহটার দিকে...
‘কেহহহ...’ ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করে পৃথা... হাতে পায়ের ভরে হামা দিয়ে এগিয়ে যায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকা দেহটার দিকে... বুকের মধ্যেটায় একটা অনাহুত ভয় দামামা পেটায় যেন... ‘কেহহহহ...’ ফের প্রশ্ন করে অস্ফুট স্বরে... জোরে কথা বলতেও যেন ভয় হয় তার... কান্না ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করে উপুড় হয়ে থাকা নগ্ন দেহটাকে... তাড়াতাড়ি মুখের ওপরে এসে পড়া বৃষ্টি জল মুছে নেয়... চোখদুটোয় হাত বুলিয়ে পরিষ্কার করে কান্নার জলের রেশ... আরো খানিকটা কাছে এগিয়ে যায়... বড় বড় চুলগুলো লেপটে রয়েছে সারা মাথার থেকে নেমে ঘাড়ের ওপরে... পেশল পীঠটা তার দিকেই ফেরানো... হাতটাকে বাড়াতে যায় পড়ে থাকা শরীরটার দিকে... পরক্ষনেই টেনে পিছিয়ে নেয়... ইতস্থত করে... তারপর ফের হাত বাড়ায়... আলতো করে হাত রাখে নগ্ন পীঠের ওপরে... স্পর্শ করে দেহটাকে... সারা শরীরটায় একটা শিহরণ খেলে যায় দেহটাকে স্পর্শ করা মাত্রই... হুমড়ি খেয়ে পড়ে পৃথা... চিৎকার করে ডাক দিয়ে ওঠে... ‘অর্নওওওওব!’
দেহটাকে ধরে চিৎ করে দেয় সে... আধো অন্ধকারের মধ্যেই ঝুঁকে পড়ে শরীরটার মুখের ওপরে... এক মুখ দাড়ি ভরা গালের ওপরে হাত রাখে... ‘সোনা... অর্নব... শুনতে পাচ্ছ... দেখো না সোনা... এই দেখো... তোমার তিতির... চোখ খোলো না সোনা... প্লিজ... প্লিজ... একবার তাকাও... দেখো... তোমার তিতির তোমার কাছে... বলো না সোনা... তাকাও না তোমার তিতিরের দিকে...’ পাগলের মত হাত বোলায় দাড়ি ভরা গালে, মাথায়, কপালে... ঝুঁকে পড়ে চুমু খায় মুখটায় একের পর এক... ক্রমাগত ডেকে চলে সে... ‘অর্নব সোনা... এই যে আমি... তাকাও... প্লিজ...’
কেমন ভয় হয় তার... তারপরই অমূলক ভয়টাকে সরিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে... ‘না, না... আমার অর্নবের কিচ্ছু হবে না... আমি জানি... ও বলেছিল তিতির ওর সাথে থাকলে ওর কিছু হবে না...’ উপঝরন্তে পড়া বৃষ্টি নীচে বসে পাগলের মত প্রলাপ বকে চলে সে... তাড়াতাড়ি করে ঝুকে পড়ে দেহটার বুকের ওপরে... কান পাতে সেখানে... কানে আসে ক্ষীণ হৃদস্পন্দন... উঠে বসে ঝাঁকাতে থাকে দেহটাকে ধরে... যত গায়ের শক্তি অবশিষ্ট আছে, তাই দিয়েই... এক নাগাড়ে ডাক দিয়ে যেতে থাকে... ‘অর্নব... ওঠো... অর্নব... প্লিজ কথা বলো... প্লিজ... আমি জানি তোমার কিছু হবে না... তুমি শুধু একবার তোমার তিতিরকে ডাকো... অর্নব...’
হটাৎ চুপ করে যায় পৃথা... কেমন যেন মনে হয় তার একটা অস্ফুট গোঙানীর আওয়াজ শোনে সে... তাড়াতাড়ি করে দেহটার বুকের ওপর থেকে মাথা তুলে ঝুঁকে পড়ে মুখের ওপরে... কান খাড়া করে শোনা চেষ্টা করে... ‘ওওওফফফফ...’ হ্যা... এই তো... অর্নব সাড়া দিয়েছে... হাত তুলে গলার কাছটায় ছোয়ায় সে... অনুভব করার চেষ্টা করে দেহটার প্রাণস্পন্দন... ‘উমমমফফফ...’ একটা অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে আসে দেহটার মুখ থেকে... ফের ঝুঁকে পড়ে পৃথা... চাপা স্বরে ডাক দেয়... ‘অর্নব... শুনতে পাচ্ছ?’
নিজের মুখের ওপরে উপলব্ধি করে এসে পড়া নিঃশ্বাসের স্পর্শ... ঝুঁকে গালটা চেপে ধরে দেহটার গালের সাথে... কানে আসে অস্ফুট স্বরের ডাক... ‘তিতির...’
গাল ছেড়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসে পৃথা... দুহাত দিয়ে দেহটাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে... ‘হ্যা সোনা... এই তো আমি... কষ্ট হচ্ছে সোনা?’ বলে ঠিকই কিন্তু অর্ধেক কথা মিশে হারিয়ে যায় কান্নার সাথে...
খুব ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় অর্নব... পরক্ষনেই বন্ধ করে নেয়... তারপর আবার তাকায়... হাত তোলে... রাখে বুকের ওপরে থাকা পৃথার পীঠের ওপরে... অনেক কষ্টে টেনে টেনে বলে ওঠে... ‘আমি ঠিক আছি... তুমি ভেবো না...’
হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে পৃথা... দুহাত দিয়ে মাটির ওপরে পড়ে থাকা অর্নবের শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে... ‘ওহ! সোনা... আমি জানতাম তোমার কিচ্ছু হবে না... এই দেখো তোমায় দেখতে পাচ্ছি আমি... তোমায় দেখতে পাচ্ছি... ওহ! সোনা... আমার...’ বলতে বলতে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে অর্নবের সারা মুখমন্ডল...
খুব আস্তে আস্তে উঠে বসার চেষ্টা করে অর্নব... পৃথা পেছন থেকে ঠেকনা দিয়ে সাহায্য করে তাকে... উঠে বসলে পাশে এসে বসে... প্রবল বৃষ্টির ধারা দুজনকেই যেন ধুইয়ে দিতে থাকে... যেন দুজনেরই নবজন্ম হয় তখনই...
বেশ খানিকক্ষন অপেক্ষা করে কোনরকমে টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায় অর্নব... পৃথার কাঁধে হাতের ভর রেখে বলে, ‘কি হয়েছিলো বলো তো?’
‘জানি না... মনে হয় বাজটা ওই ট্রান্সফর্মারেই পড়েছিল, আর তাতেই...’ আর বলতে পারে না সে... যদি ট্রান্সফর্মারে না পড়ে... ভাবতেই কেঁপে ওঠে ভয়ে সারা শরীরটা তার... ‘ছাড়ো ওসব কথা... নীচে চলো...’ বলে ছাদের পাঁচিল থেকে হাতে তুলে নেয় চাবির গোছাটাকে... নিজের ওড়নাটা গায়ের থেকে খুলে জড়িয়ে দেয় অর্নবের নগ্ন কোমর পেঁচিয়ে... তারপর তাকে ধরে ধীরে ধীরে নেবে যায় নিজের ফ্ল্যাটের দিকে...
অতঃকিম্
‘এই, জানো... রাই না, ভিষন অভিমানী হয়ে উঠেছে দেখছি... ভাবতে পারো? ও কাজলর সাথে কথাই বলছিল না... ওই টুকু একটা মেয়ে... কি? না কাজল একটু জোর গলায় রাইকে বলেছিল দুধটা তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নিতে... বলো... এখন থেকেই ওই রকম অভিমানী হয়ে উঠেছে মেয়ে তোমার... বকা ঝকা তো দূর, এতটুকুও জোরে কথা বলা যায় না ওর সাথে...’ অর্নবের সাথে গাড়িতে যেতে যেতে বলে পৃথা...
‘হুম... এ আর আশ্চর্যের কি? মেয়ের মা কে দেখতে হবে তো... তাই না?’ স্টিয়ারিংএ হাত রেখে সামনের পানে তাকিয়ে ছুঁড়ে দেয় কথাটা অর্নব পৃথার দিকে...
পাশের সিটে বসা পৃথা সাথে সাথে ঘাড় ফেরায় লক্কা পায়রার মত... চোখ পাকিয়ে বলে ওঠে... ‘কি? আমার মেয়ে বলে এমন হয়েছে? মেয়ের মত আমিও অভিমানী?’
আড় চোখে একবার নিজের সুন্দরী স্ত্রীর পানে তাকিয়ে মিচকি হেসে, ফের সামনের দিকে তাকিয়ে বলে অর্নব... ‘না, না... ভুল বললাম, আমার বউটা একটুও অভিমানী নয়... শুধু যা মাঝে মধ্যেই গালটা ভারী হয়ে যায়... তখন না আদর করলে এই মিষ্টি মেয়েটার গালটা কিছুতেই আগের মত হয়ে ওঠে না... তাই না? ঠিক আমাদের ছোট্ট রাইয়ের মত...’
‘ভালো হবে না কিন্তু... এই ভাবে যদি আমার লেগ পুল করো তাহলে আমি তোমার সাথে যাবো না বলে দিচ্ছি...’ অভিমানী গলায় বলে ওঠে পৃথা...
‘আচ্ছা বাবা, আচ্ছা... আমারই বোঝা ভুল হয়ে গেছে... বউটা আমার একদম অভিমানী নয়... একটু যা বেশিই আদুরে... তাই তো? এবার ঠিক বললাম তো?’ হাসতে হাসতে বলে অর্নব...
চোখের কোলে ভালোবাসা চিকচিক করে পৃথার... ‘বেশ করি আদর খাই... আরো... আরো... আরো বেশি বেশি করে আদর খাবো আমি... দেখি আমায় আদর না করে বাবু কেমন থাকতে পারে...’ গোলা পায়রার মত ঘাড় বেঁকিয়ে বলে ওঠে সে...
আর কথা বাড়ায় না অর্নব, একবার চোখ ফিরিয়ে আপাদমস্তক দেখে নেয় পাশে বসা নিজের স্ত্রীকে... লাল শাড়ীটায় অপূর্ব লাগছে পৃথাকে... গায়ে ম্যাচিং ব্লাউজ... চুলগুলো ঝাকড়া বলে সেগুলো বেশ সাজিয়ে একটা খোঁপা করেছে মাথার ওপরে... কি ভাবে ম্যানেজ করেছে কে জানে... অবস্য সেটা জানার বিশয়ও নয় অর্নবের... ও ব্যাপারে সে একটু অজ্ঞই বলা যেতে পারে... চুলের সিঁথিতে ছোট্ট করে টানা দেওয়া সিঁদুরের দাগটা পৃথার মুখের ঔজ্জল্য যেন শতগুন বাড়িয়ে দিয়েছে... পাতলা ঠোঁট দুটো বেশ গাঢ় রঙের লিপস্টিকে রাঙানো... দুই হাতে বেশ অনেকগুলো সোনার চুড়ি পরেছে আজ... অন্য সময় এতটা সাজে না ও... কিন্তু আজ খুব মন দিয়ে সেজেছে... একেবারেই অন্য রকম লাগছে আর পাঁচটা দিনের থেকে... সেই আট বছর আগের বিয়ের দিনের পৃথা হয়ে গিয়েছে যেন... একেবারে নববধূর মত বসে রয়েছে তার পাশটিতে... বাড়িতে এখন শ্বশুর শাশুড়ি এসে রয়েছে বলে বেরুবার সময় কিছু বদমাইশি করার চেষ্টা করে নি অর্নব, যদি ওনারা না থাকতো... ভাবতেই মনে মনে হেসে ওঠে সে...
‘এই, গাড়ি চালাতে চালাতে ওই রকম হাসছ কেন গো?’ অর্নবকে মিচকি হাসতে দেখে প্রশ্ন করে পৃথা...
‘না... কিছু না...’ বলে ওঠে অর্নব...
‘উহু... নিশ্চয়ই কিছু... আমায় বলছ না... বলো না কেন হাসলে...’ এর জিজ্ঞাস করে পৃথা...
‘না... ভাবছিলাম আজ বাড়িতে তোমার বাপি, মা না থাকলে আমাদের বেরুতে অনেক দেরী হয়ে যেত... তোমাকে আবার নতুন করে সাজতে হতো...’ গলার স্বরে যতটা সম্ভব গাম্ভীর্য ফিটিয়ে তোলার চেষ্টা করে অর্নব...
‘আমাকে আবার সাজতে হতো? কেন?’ অবাক গলায় প্রশ্ন করে পৃথা...
‘বাহ!... নতুন করে সাজতে হতো না? আমার বউটাকে এত সুন্দরী লাগছে, সেখানে আমি তাকে বিছানায় তুলে না নিয়ে গিয়ে কি ছাড়তাম নাকি?’ ফের আড় চোখে একবার তাকিয়ে নিয়ে উত্তর দেয় অর্নব...
‘ওরে বুড়ো... মাথায় খালি ওই জিনিসটা ঘুরে বেড়ায়, না?’ চোখ পাকায় পৃথা...
‘ও... আমি এখন বুড়ো হলাম? কই... অন্য সময় তো বুড়ো বলো না? তখন তো আর পারছি না... আর পারছি না করে ছটফট করো...’ হাসে অর্নব...
‘যাহ!... তুমি না...’ লাল হয়ে ওঠে পৃথার ফর্সা গাল... হাত বাড়িয়ে স্টিয়ারিং ধরা অর্নবের হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, ‘তবে সত্যিই অর্নব... তোমার যা দম... না পেলে বুঝতাম না... আচ্ছা আচ্ছা যোয়ানকেও হার মানিয়ে দেবে...’ বলে খিলখিল করে হেসে ওঠে সে... ‘নাও... মনে হচ্ছে এসে গেছি... ওই বাড়িটাই না?’
আজ পৃথা আর অর্নব এসেছে সুশান্তর পঞ্চম বিবাহবার্ষিকির নিমন্ত্রন রক্ষার্থে... তারা আজ সুখি দম্পতি... বিয়ে করে নিয়েছে প্রায় বছর আষ্টেক হয়ে গেল... একটি রাজকন্যার জন্ম দিয়েছে পৃথা... ফ্ল্যাটে আর থাকে না... ছোট্ট এক কামরার ফ্ল্যাটটা ভাড়ায় দিয়ে উঠে এসেছে একটা বাড়ি কিনে নিয়ে, যেখানে তাদের সংসার আনন্দে সুখে ভরে থাকে সবসময়... প্রণবকে অনুরোধ করেছিল স্ত্রী পুত্র নিয়ে তাদের কাছেই চলে আসতে, কিন্তু প্রণব তাতে রাজি হয় নি, হেসে বলেছে, সে নাকি কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না... আর জোরও করে নি তারা... মাঝে মধ্যে শিলিগুড়ি থেকে পৃথার বাপী আর মা এসে থাকেন... তাদের ছোট্ট রাই সঙ্গ পায় নিজের দাদান দিম্মার... একটু একটু করে বড়ো হয়ে উঠছে সেও... দেখতে নাকি একেবারে পৃথার মত হয়েছে...
‘এই... কি দেখছ ওই ভাবে?’ ভুরু তুলে প্রশ্ন করে পৃথা... সুশান্তের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে... ওই তিক্ষ্ণ চোখ জোড়াকে তার শাড়ির আঁচলের ফাঁকে ঘুরে বেড়াতে বুঝে... এখন অর্নব যেন ওই ছবির থেকেও আরো অনেক বেশি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে... চেহারের মধ্যে একটা বেশ ভারিক্কি ভাব এসেছে... সুঠাম জিম করা চেহারায় আরো বেশি করে সেক্সি মনে হয় দেখলেই... এই এত বছর ধরে ওর সাথে ঘর করলেও, আজও যেন ওর দিকে তাকালে সিরসির করে ওঠে শরীরটা পৃথার... বুকের মধ্যে ঝড় ওঠে... কি অদ্ভুত আমেজ ছড়িয়ে পড়ে দেহে অর্নবের চোখে চোখ রাখলেই... ভুরুর কাটা দাগটা যেন আরো বেশি করে টানে ওকে, যত দিন যাচ্ছে ততই...
‘তোমায়...’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় অর্নব...
‘ধ্যাৎ... আমাকে আবার নতুন করে কি দেখবে?’ মুখে বলে ঠিকই, কিন্তু স্বামীর কথায় যেন ভালো লাগায় গলে যায় সে...
‘তোমার শরীরটা কিন্তু আগের থেকে আরো ভরাট হয়ে উঠেছে...’ গাঢ় গলায় বলে অর্নব...
‘তাই বুঝি?’ গুনগুনিয়ে ওঠে পৃথা...
‘হুম... আগের থেকেও বেশ ভরাট হয়ে উঠেছে বুকগুলো... এখন শাড়ীর আঁচলও পুরো ঢেকে রাখতে পারে না... দেখলেই কেমন মুখ ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছা করে দুটো বুকের খাঁজে...’ চাপা স্বরে বলে অর্নব...
‘যাহ! অসভ্য বুড়ো... শখ কত... এখন রাস্তাঘাটেও আমাকে ওই ভাবে দেখে... ইশশশ... লজ্জা করে না আমার?’ লাল হয়ে ওঠে কান দুটো অর্নবের কথা শুনে... বুকের মধ্যে রিনরিনে সুখ ঘোরে...
‘আমার কি দোষ? তোমায় দেখলেই যদি আদর করতে ইচ্ছা করে আমার...’ বলে ওঠে অর্নব...
‘যাহ!... দুষ্টূ... বেলটা টিপবে? নাকি দরজার এপারে দাঁড়িয়ে শুধু বউকেই দেখে যাবে? হুম? রাতে যা অসভ্যতামী করার কোরো... বুঝেছ? এখন বেলটা টেপো...’ বলে ওঠে পৃথা... কানের লতী গরম ঠেকে... গালদুটো কি লাল হয়ে উঠেছে?
সমাপ্ত
উপসংহার
গল্পটার থীমটা নিয়ে একটা পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে গিয়েছিলাম... চেষ্টা করেছি গল্পের ছন্দ বজায় রেখে গল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার... বাকিটা পাঠকদের মতামতের ওপর... হয়তো অনেক প্রশ্ন থেকে গিয়েছে... অনেক অবাস্তবতা রাখতে হয়েছে গল্পের খাতিরে... কিন্তু গল্পটাকে গল্পের মত করেই লিখতে চেয়েছি... আশা রাখবো পাঠকরা এই ছোট খাটো ত্রুটিগুলির জন্য আমাকে ক্ষমা করে দেবে...
ধন্যবাদান্তে...