Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.42 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed
#73
পর্ব ৩১- যুদ্ধক্ষেত্রঃ



বংশীর মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মালা। বংশীর দুই চোখ মালার ই দিকে তাকিয়ে আছে। যেন মরে গিয়ে বংশী প্রমান করে দিল ও নায়ক। এই গল্পের নায়ক শুধু ওই। মানুষের জীবন অনেক চড়াই উতরাই এর মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। আর জীবনের এই উত্থান পতনের ব্যর্থ ইতিহাসে প্রকৃত নায়ক তারাই যারা অন্যের জন্য কিছু করে যায়। প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠা এক চক্রান্ত বংশী নিজের হাতে শেষ করে মালার সম্মান রক্ষা করতে চেয়েছিল। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মালা। বহুবার, সহস্রবার ও জমিদারবাড়ির অন্দরমহলে বংশীকে লক্ষ্য করেছে। আড় চোখে বংশীর কুনজর ও অনুভব করেছে। কখনো ওর কাছে গিয়ে বুঝিয়ে বলেনি বংশী তুমি অপরাধ করছ। এতো কথা বলার অধিকার কি সমাজ নারীকে দেয় নাকি। মালার দুই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। “বংশী তুমি কাপুরুষ, তাই এভাবে নিজের কর্তব্য পালন না করে এখানে এসে গেছো” নিজের ই করা এই উক্তিটা বারবার ওর কানের সামনে ভনভন করতে থাকে। মনে পড়ে যায় বংশীর গালে সজোরে একটা চড় মারার ঘটনা। হয়ত এই চড়টাই ওর প্রাপ্য ছিল। কেন কেউ ওকে এভাবে একটা চড় মারেনি। অনেক আগেই ওর গালে সজোরে একটা চড় দরকার ছিল। দরকার ছিল একজন অভিভাবকের। মাথার ওপর সেই আশ্রয়টা কোনোদিন বংশী পায়নি। তাই হয়ত সমাজের চোখে বংশী ই খলনায়ক। কেউ কোনোদিন এগিয়ে আসেনি বংশীকে সমাজের মুলস্রোতে ফিরিয়ে নিতে। বংশী শুধুই অন্যের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। না একজন ছিল যে বংশীর জন্য ভেবেছিল, সত্যি ই অন্তর থেকে বংশীর জন্য ভেবেছিল।
সে আর কেউ নয়, সে হোল মালা। বংশীর গালে সজোরে চড়টা মারার পর বংশীর মধ্যে ও এক মানুষকে খুঁজে পেয়েছিল। যে এক নারীর শরীর স্পর্শ করে প্রতিজ্ঞা করেছিল তার স্বামীকে সযত্নে তার কাছে ফিরিয়ে দেবে। বংশী নিজের কথা রেখেছিল। মালার হৃদয় ও এটাই বিশ্বাস করেছিল কোনও সুখবর নিয়েই বংশী ফিরবে। তারপর বিবেকের চরম যন্ত্রণায় ওর ভেঙে পড়া, এ মালাকেও আঁটকে রাখেনি। মালা ওকে জড়িয়ে ধরেছিল। সমাজ, ধর্ম, রক্ষনশীলতা সমস্ত কিছুকে প্রায় দূরে ঠেলে দিয়ে একটা মানুষকে প্রকাণ্ড বটগাছের মত আশ্রয় দিয়েছিল। মালা দেখেছিল কিভাবে একজন মানুষ নিজের দুই চোখে নিজের মৃত্যুকে দেখতে পায়। এক রমনীকে তার পুরনো সুখি জীবন ফিরিয়ে দিতে নিজের প্রান বিসর্জন দেওয়া এতো একজন মহাপুরুষ ই পারে। নিজের সমস্ত পাপ স্বীকার করে বংশী পবিত্র হয়েছিল। “বংশী তুমি তো সম্রাট অশোক, কলিঙ্গের ভয়াবহ যুদ্ধ এক মানুষের জন্ম দিয়েছিল, তুমি সেই মানুষ বংশী” মালার মুখ দিয়ে এই কথাগুলো বাইরে বেরিয়ে আসেনি, কারন ওর গলা দিয়ে একটাও শব্দ বেরোনোর অবস্থা ছিলনা।
সত্যি ই কি কোনোদিন কেউ বংশীর জন্য ভাবেনি। বংশীর একার ই কি অভিমান ছিল। না অভিমান আরও একজনের আছে, সে আর কেউ নয় মালা। বংশী তো পুরুষ, নিজের হৃদয়কে উজাড় করে সব কথা অন্যের সামনে বলে ফেলতে পারে। কিন্তু মালা তো বেচারা নারী, মালা অসহায় এক নারী। নিজের মনের একটা কথাও বংশীকে বলতে পারেনি মালা। সেই সুযোগটুকু ওকে বংশী দিলনা। মরার আগে মালার দিকে তাকিয়ে বংশী কি ভাবল কিজানি। হয়ত মনে মনে বলল মালা তুমি স্বার্থপর, মালা তুমি শুধুই নিজেকে আর সুপ্রতীককে নিয়ে ভাবলে। একবারও ভাবলে না আমিও বাঁচতে চেয়েছিলাম। কি দরকার ছিল তোমাদের জন্য নিজের প্রাণটা এভাবে সঁপে দেওয়ার। তোমরা আমার কে? কতদিন আর আমি তোমাদের চিনি? না মালাও ভেবেছিল বংশীর জন্য। সেদিন রাতে বংশী তো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছিল কিন্তু মালা সারারাত ঘুমায়নি। শুধু ভেবে গেছে যে মানুষটা ওদের জন্য নিজের প্রাণটাও দিতে প্রস্তুত সে এতো সহজে মরতে পারেনা। সারারাত ও ভেবেছে কি করে বংশীকে বাঁচানো যায়। ভেবেছিল জমিদারবাড়িতে ফিরে গিয়ে জমিদারবাবুর কাছে অনুরোধ জানাবে বংশীর জীবন রক্ষা করতে। মালা বংশীর মধ্যে নিজের দাদাকে খুঁজে পেয়েছিল, একজন মানুষকে খুঁজে পেয়েছিল। ভাগ্য ওকে সেই সুযোগ দিলনা। কি বিশাল অভিমান ওর বংশীর ওপর রয়েছে হয়ত সেই কথাও ও কোনোদিন আর বংশীকে বলতে পারবে না। এতক্ষনে মালার ভেতর থেকে কয়েকটা শব্দ বাইরে বেরিয়ে এলো “না বংশী না” বংশীর বুকের ওপরের কাপড়টা প্রায় জড়িয়ে ধরে মালা ওর বুকে লুটিয়ে পড়ল। অবাক হয়ে সুপ্রতীক ও সিলিং সাহেব দুজনেই তাকিয়ে থাকে মালার দিকে। সুপ্রতীকের হয়ত হৃদয়টা খানখান হয়ে যাচ্ছে। এক পরপুরুষের বুকের ওপর ওর স্ত্রী ওর প্রিয়তমা লুটিয়ে পড়েছে। সুপ্রতীক জানেনা এমন অনেক সম্পর্কই হয় যার কোনও নাম নেই। কখন যে প্রিয়া ও গার্গী ছাদের ওপর এসে গেছে তা সুপ্রতীক ও খেয়াল করেনি। ওরা যে প্রচণ্ড ভাবে স্তম্ভিত হয়ে গেছে তা ওদের মুখ দেখলেই বোঝা যায়। এতক্ষনে সিলিং সাহেব মুখ খুললেন। কয়েকটা মুহূর্তের এই আবেগঘন পরিস্থিতিতে সিলিং সাহেব ও চুপ করেছিলেন।
সিলিং সাহেবঃ এবার কি হবে জমিদার। আমার হাতে বন্দুক। বংশী মৃত। আমার ভাই টমাসকে কে হত্যা করেছে তা তুমি কি করে প্রমান করবে?
সুপ্রতীক বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সত্যি ই তো ও প্রচণ্ড অসহায় হয়ে গেছে, কি করবে এই মুহূর্তে ও নিজেও জানেনা। শোকাতুর মালার কানে একটাও শব্দ প্রবেশ করছে না। ওর শরীরটা প্রচণ্ড কম্পনে কেঁপে উঠছে, অন্তরের যত ক্ষোভ, অভিমান সব বাইরে বেরিয়ে আসছে। হথাত ই সিলিং সাহেব একবার ওপরের দিকে তাকান। নিজের কামাতুর জিভটা ঠোঁটের ওপর ঘষে একবার প্রিয়া ও গার্গীকে দেখে নেন।
সিলিং সাহেবঃ দেখো সুপ্রতীক, তোমার দুই বোনকে এমনকি তোমার এই সুন্দরী বউকেও আমার খুব পছন্দ। তুমি তো জানো মেয়েদের ওপর আমার একটু বেশি ই...
প্রায় দৌড়ে আসে সুপ্রতীক। কিন্তু সিলিং সাহেব নিজের হাতের বন্দুকটা সোজা করে ওর দিকে তুলে ধরে। দাঁড়িয়ে যায় সুপ্রতীক। আবার নতুন করে শুরু হওয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মালা কিছুটা সজাগ হয়ে পড়ে। নিজেকে কোনরকমে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে।
সুপ্রতীকঃ আমি বেঁচে থাকতে তুমি কিছুই করতে পারবে না সিলিং। মনে রেখো আমিও এই অঞ্চলের জমিদার। ক্ষমতা আমারও আছে। সৈন্য আমারও আছে। সাবধান সিলিং।
সুপ্রতীকের এই স্পর্ধা কোনমতেই মেনে নেওয়া সিলিং সাহেবের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। সিলিং সাহেবের চোখদুটো আবার লাল হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড জোরে গর্জন করে বলে ওঠেন সিলিং সাহেব
সিলিং সাহেবঃ তুমি জমিদার? জমিদার তুই? তুই বেঁচে থাকলে আমি কিছুই করতে পারব না তাইতো। ঠিক আছে তোকে আমি বাঁচিয়ে রাখবো ও না।
সিলিং সাহেবের বন্দুক আবার ওপরের দিকে ওঠে। আবার কয়েকটা গুলি চালানোর প্রচেষ্টা। কিন্তু গুলি একটাই ছিল এবং সেটাই বেরিয়ে আসে বন্দুকের নল থেকে। সিলিং সাহেব, প্রিয়া, গার্গী এমনকি সুপ্রতীক ও বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।
যুদ্ধ কি ভয়ঙ্কর। আবার একটা নিষ্পাপ প্রান ঝড়ে গেলো। কিছুক্ষন আগের এইসব উত্তেজনার আঁচ মালাও পেয়েছিল। হয়ত সেই কারনেই নিজেকে ও নিজের আবেগকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। না মালা বংশীর মত নিজের মৃত্যু দেখতে পায়নি। পেলেও হয়ত উঠে দাঁড়াত। সুপ্রতীক মাটির দিকে চেয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষন ছটপট করে ওর শরীরটা। গুলিবিদ্ধ শরীরটা মৃত্যুর আগে ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছিল তা জানিনা, কিন্তু নিজের চোখের সামনে নিজের প্রিয়তমার শরীরটা এরকমভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখে সুপ্রতীকের হৃদয়টা যে আরও অনেক বেশি কষ্টে বিদ্ধ হয়েছিল তা হলফ করে বলতে পারি। সুপ্রতীক স্তব্ধ হয়ে যায়, চিতার আগুন থেকে ওকে বাঁচিয়ে এনেছিল সুপ্রতীক, কিন্তু ভাবেনি ওর চোখের ই সামনে আরও একবার ওকে মরতে হবে। বংশীকে হারাতে, বংশীকে শেষ করতে সুপ্রতীকের সবচেয়ে মোক্ষম চাল ছিল মালা। আজ অবধি নিজের স্ত্রীকে, নিজের প্রিয়তমাকে এভাবে ব্যাবহার করার জন্য ওর হৃদয় একবার ও কেঁপে ওঠেনি। কিন্তু এই প্রথমবার হয়ত ওর ও মনে হয়, অনেক অনেক অভিমান বুকে নিয়ে মালা ওকে ছেড়ে চলে গেলো।
ওপর থেকে জোরে একটা আওয়াজ আসে “দাদা বন্দুক” সুপ্রতীক ভেজা চোখে ওপরের দিকে চায়। প্রিয়া একটা বন্দুক ওপর থেকে ওর দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে। সুপ্রতীক নিজের মনটা শক্ত করে। প্রতিশোধ ওর চাই। দুহাতে বন্দুকটা ধরে সিলিং সাহেবের দিকে তাক করে। সিলিং সাহেব নিজের প্রানভিক্ষা চাওয়ার ও সুযোগটুকু পেলেন না। আরও একটা মৃতদেহ। সত্যি ই যুদ্ধ কি ভয়ঙ্কর। সামনের দিকে তাকায় সুপ্রতীক ততক্ষনে ব্রিটিশ সৈন্য জমিদারবাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে গেছে সাথে বেইমান লাঠিয়াল বাহিনী। সুপ্রতীক জানে মৃত্যু ওর দোরগোড়ায়। তবুও শেষ মুহূর্ত অবধি ও লড়ে যাবে। রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে সুপ্রতীক ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতর থেকে ফটক বন্ধ করে দেয়। ততক্ষনে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। আবার একটা আর্তনাদ সুপ্রতীকের কানে ভেসে আসে। ও জানে এই যুদ্ধে এক এক করে সমস্ত স্বজনকেই ও হারিয়ে ফেলবে। দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যায় সুপ্রতীক।
সিঁড়ির কিছুটা ওপরেই ওর দুই বোন প্রিয়া ও গার্গীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। দুই বোনের নিথর দেহর সামনে সুপ্রতীক নিজেও নিথর হয়ে পড়ে। ও জানে ও বাঁচবে না। কিন্তু যতটুকু সময় আর বাঁচবে, সেই সময়টার জন্য ও পৃথিবীতে একা। ভীষণ একা। আপন আর কেউ ওর নেই।
সুপ্রতীক ধীরে ধীরে ভেতরের ঘরের দিকে চলতে শুরু করে। এই মুহূর্তে একটাই কর্তব্য ওর রয়েছে তা হোল জমিদারবাড়ির গুপ্তধনের সন্ধান গোপন করে রাখা। এমন জায়গায় এই সন্ধান রেখে যাওয়া যাতে কখনো কোনও ভালো মানুষের হাতে এই গুপ্তধন আসে। জমিদারবাড়ির সমস্ত সম্পত্তিতে গরীব মানুষের রক্ত লেগে আছে। কত অত্যাচার কত নিপীড়নের ফসল এই গুপ্তধন। এই গুপ্তধন কোনও বাজে মানুষের হাতে পড়লে কি আর জমিদারবাড়ির অভিশাপ দূর হবে।
সুপ্রতীক হয়ত প্রচণ্ড আধুনিকমনস্ক মানুষ ছিলেন। কিন্তু রাজপুরোহিতের করা সেই ভবিষ্যৎবানী সুপ্রতীক ও জানত। জমিদার বংশ যে ওর ই সময় ধ্বংস হবে তা ওর আগে থেকেই জানা ছিল। তবুও সুপ্রতীক শেষ অবধি একটা চেষ্টা করে গিয়েছিল।
সুবীরবাবু যে টেবিল চেয়ারের ওপর বসে আপনি ডায়েরিটা পড়া শুরু করেছিলেন সেখানেই সুপ্রতীক কিছু কথা লিখে গিয়েছিল। এই কথাগুলো যে আপনার ই জন্য লেখা। কারন আপনি ই তো এই বংশের উত্তরাধিকারী। জমিদার বংশের পাপ ধুয়ে ফেলার কাজ তো আপনার ই।
সুবীর বাবু এতক্ষন জমিদারবাড়ির গল্প আর যুদ্ধের রোমহর্ষক বর্ণনায় প্রায় হারিয়ে গেছিলেন। নিজের মনে সমস্ত জোর সঞ্চার করে উনি বলে ওঠেন
সুবীর বাবুঃ হাঁ আমি আপনার সবকথাই শুনলাম। প্রথমে মৃত্যুঞ্জয়, অনুরাধা, দেবেন্দ্র, সত্যেন্দ্র এবং তারপর মালা, সুপ্রতীক, বংশী, সিলিং এদের গল্প আমি মন দিয়ে শুনলাম। কিন্তু সত্য বাবু এদের সাথে আমার কি সম্পর্ক। কস্মিনকালেও আমি কোনও মানুষের কোনও ক্ষতি করিনি...
সুবীর বাবুকে নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে দেয়না সত্য বাবু। সেকি সুবীর বাবু আপনি কোনোদিন কোনও মানুষের ক্ষতি করেন নি। হাঁ তা করেন নি, নারীরা কি আর মানুষ নাকি? বর্ণালীর সাথে কি আপনি সুবিচার করেছিলেন সুবীর বাবু?
প্রায় চমকে ওঠেন সুবীর বাবু। ওনার মুখ দিয়ে একটাই অস্ফুট স্বর বাইরে আসে “বর্ণালী!”
সুবীর বাবুঃ মানব কি সেই কারনেই আমার ক্ষতি করতে চায়। মানবের কি ঠিক সেই কারনেই দুটো আলাদা মুখ। একটা বন্ধুর আরেকটা...
সত্য বাবুঃ থাক সুবীর বাবু এই মুহূর্তে আর বর্ণালী নামক নতুন চরিত্রটা টেনে এনে আমি এই ডায়েরীর গল্পটাকে জটিল করে তুলতে চাইনা। বর্ণালী তো আছেই এই গল্পে, ঠিক যেমন ভাবে সুপ্রতীকের কাছে মালা, মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে অনুরাধা ঠিক সেরকম ই আপনার কাছে বর্ণালী। সুবীর বাবু কখনো ভেবে দেখেছেন তরোয়ালের আঘাতে অনুরাধাকে মৃত্যুর কোলে পাঠিয়ে দেওয়ার আগে মৃত্যুঞ্জয়ের মনে একবারও কি কোনও প্রশ্ন জেগেছিল, অনুরাধা কি সত্যি ই পাপ করেছিল? বংশীর সাথে মালাকে জঙ্গলে পাঠিয়ে কি সুপ্রতীক মহান কোনও কাজ করেছিল? বীরত্ব এটা নয় সুবীর বাবু। একিরকম আপনি তো মেধাবী মানুষ, কিন্তু সাধারন থেকে মেধাবী হওয়ার লড়াইতে আপনিও তো একিভাবে কাউকে ব্যাবহার করেছেন। হয়ত কেউ বংশী হতে চেয়েছিল আপনি ই তাকে মানুষ হতে দেননি।
ডায়েরীর অভিশাপটা কি? কেন ওনার ই জীবনে এটা নেমে এলো, তা সত্য বাবুর সামান্য কিছু ইঙ্গিত ই সুবীর বাবুকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আমি চাইলে সুপ্রতীকের গল্পটা আপনাকে নাও বলতে পারতাম। কিন্তু আসল নায়ক কে? সুপ্রতীক না বংশী? এই প্রশ্নটা আপনার হৃদয়ে জাগিয়ে তোলা প্রচণ্ড দরকার ছিল। এই প্রশ্নটা ছাড়া তো বিবেকের দংশন আপনি উপলব্ধি করতে পারতেন না। আপনার মুখের অভিব্যাক্তি বলছে বর্ণালীর নামটা আপনার মধ্যে সেই বিবেক দংশন শুরু করে দিয়েছে। কি সুবীর বাবু বুঝলেন তো ডায়েরীর আসল রহস্য জমিদারবাড়িতে নয় আপনার ই জীবনে লুকিয়ে আছে। সুবীরবাবু বংশীর নিথর দেহটা সবাই ঘৃণাভরে সৎকারের উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সুপ্রতীক পেয়েছিল চন্দন কাঠ। কেন এতো বৈষম্য সুবীর বাবু? আপনারা অভিজাত বা উচ্চশিক্ষিত বা মেধাবী তাই? বংশীরা কি নায়ক হয়েও খলনায়ক হয়ে থাকবে চিরকাল।
সুবীরবাবু যে ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছেন তা সত্যবাবু বেশ ভালোই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। প্রায় চিৎকার করে বলে ওঠেন সুবীরবাবু
সুবীরবাবুঃ আমি কোনও অন্যায় করিনি, ওই সিদ্ধান্তটা নিতে আমি বাধ্য হয়েছিলাম। মেনে নিলাম এটা অপরাধ, কিন্তু তার ফল কেন আমার স্ত্রী ও কন্যাদের ভোগ করতে হবে?
সত্য বাবুঃ কারন সেই অভিশাপ, জমিদার বাড়ির রক্ত যে আপনার শরীরে। কে যে নায়ক আর কে যে খলনায়ক এই তো বিশ্বসংসারের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন সুবীরবাবু। যা আপনার চোখে সামান্য এক ভুল তাই হয়ত কারুর চোখে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বর্ণালী কি খুব একটা অপরাধ করেছিল, আর মানববাবু? সেই সময় তো ওটা অন্য মানব ছিল।
মাথা নিচু করে থাকেন সুবীর বাবু।
সত্য বাবুঃ না সুবীর বাবু গল্পে আর নতুন কোনও মোড় দিতে চাইনা। বর্ণালীর প্রসঙ্গ একদম শেষে আসবে। আপাতত আমরা চলে যাই সেই অশরীরী ও মালতী দেবীর কাছে। কে সেই অশরীরী? কেন মালতী দেবী ওর মধ্যে মানব বাবুকে দেখতে পান। সুবীর বাবু মানসিকভাবে প্রস্তুত হন। আপনাকে প্রস্তুত হতেই হবে।
মাথা নিচু করে থাকে সুবীর বাবু।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আমরা ডায়েরীর চতুর্থ খণ্ডে এসে উপস্থিত। দয়া করে আমাকে আর বাধা দেবেন না। কারন আপনি তো জানেন শরীর ধারন করে সত্যি ই বেশিক্ষন থাকা সম্ভব নয়।



(তৃতীয় খণ্ড শেষ)
[+] 1 user Likes manas's post
Reply


Messages In This Thread
RE: অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed - by manas - 19-01-2019, 09:51 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)