Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.57 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed
#72
পর্ব ৩০- বীরের মৃত্যুঃ


বন্দুকের নলের মুখে কি সত্যি মানুষ এতো নির্বিকার হতে পারে। অবাক হয়ে যায় সিলিং সাহেব, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নায়েব মশাই। একটা বেলা আগেই এই মানুষটাকে পাশা খেলার হিসেব ওলট পালট করে দেওয়ার জন্যে ছটপট করতে দেখেছে নায়েবমশাই। বংশীর মুখের স্ফীত হাঁসি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ভাবিয়ে তোলে নায়েবমশাইকে। গম্ভীর বদনে সামনে এগিয়ে আসেন নায়েবমশাই।
নায়েবমশাইঃ শোন বংশী, তুমি যদি এটা ভেবে থাকো আবার কোনও চালাকি করবে তাহলে তুমি বিশাল ভুল করে ফেলছ।
নায়েবমশাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে বংশী প্রায় ওনার ই অনুরুপ একটা হাঁসি ফেরত দেয়। গা রিরি করে ওঠে নায়েবমশাই এর। ওনার দুই চোখ অপমান ও অবজ্ঞায় লাল হয়ে ওঠে। বংশী তাকিয়ে থাকে সেই দুই বিস্ফোরিত চোখের দিকে। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে বলে ওঠেন নায়েবমশাই
নায়েবমশাইঃ বংশী, তুমি কি ভাবলে রানীমাকে লুকিয়ে দিলে তুমি প্রানে বেঁচে যাবে...
নায়েবমশাইকে কথা শেষ করতে দেয়না সিলিং সাহেব। সামনে এগিয়ে এসে প্রায় ধমকের সুরে নায়েবমশাইকে বলে ওঠেন
সিলিং সাহেবঃ লুকিয়ে দিয়েছে মানে? আপনি কিন্তু আমায় কথা দিয়েছেন জমিদারের দুই বোন আর বউকে আমার হাতে তুলে দেবেন। একবার কোনও মেয়ের দিকে আমার নজর পড়লে...
সিলিং সাহেবকে নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে দেন না নায়েবমশাই, প্রচণ্ড হতাশার সুরে চেঁচিয়ে ওঠেন
নায়েবমশাইঃ বল বংশী, মালা কই? রানীমাকে তুই কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস?
রাগে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে নায়েবমশাই। সিলিং সাহেব প্রচণ্ড হতাশায় পায়চারি করতে শুরু করে দেন।
নায়েবমশাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার একটা স্ফীত হাঁসি হেঁসে বলে ওঠে বংশী
বংশীঃ নায়েবমশাই আপনি তো গুপ্তধন খুঁজতে বলেছিলেন। গুপ্তধনের সন্ধান দিতে বলেছিলেন। আমি তো সেইকাজ ই করেছি। রানীমার থেকে গুপ্তধনের সন্ধান নিয়েছি।
চোখদুটো চিকচিক করে ওঠে নায়েবমশাই এর। মুখে সেই পুরনো হাসিটা আবার ফিরে আসে
নায়েবমশাইঃ বংশী তুমি সত্যি কথা বলছ, সত্যি তুমি জানো কোথায় আছে সেই গুপ্তধন! আমায় বল বংশী, তার বদলে আমি তোমায় প্রানে বাঁচাবো। তোমায় কেউ কিছু করবেনা বংশী।
সিলিং সাহেব সমস্ত কিছু ওখানে দাঁড়িয়েই শুনছিলেন। নায়েবের কথা শুনে প্রায় উন্মাদের মত ওখানে দৌড়ে আসেন সিলিং সাহেব। প্রচণ্ড জোরে নায়েবের কাঁধটা ধরে ওকে মাটিতে ফেলে দেয় সিলিং সাহেব। বয়স কম হয়নি নায়েবমশাইএর। আচমকা সিলিং সাহেবের এই আক্রমনে নায়েবমশাই ভ্যাবাচাকা খেয়ে যায়। সিলিং সাহেব তাকান বংশীর দিকে। সিলিং সাহেবের চোখের ওই আগুন বংশীকে বারবার করে এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে উনি টমাসের হত্যার ব্যাপারে সমস্তকিছুই জেনে গেছেন। নির্বিকার হয়ে চেয়ে থাকে বংশী। মৃত্যুভয় যে ওর শরীর থেকে বহু আগেই চলে গেছে।
সিলিং সাহেব নিজের হাতের বন্দুকটা সোজা বংশীর বুকে তাক করে থাকেন। সিলিং সাহেবের অগ্নিসম চাহুনি সোজা বংশীর দিকে। একবার নিজের দুচোখ বন্ধ করে বংশী ঈশ্বরকে বলে ভগবান আমায় মাফ কর। বংশী জানে ওর মৃত্যু আসন্ন।
সিলিং সাহেবঃ তুই যে একটা গদ্দার সে তো আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। তাই বলে তুই এক ব্রিটিশকেও হত্যা করতে পারিস তা আমার জানা ছিলনা।
সিলিং সাহেবের নাক থেকে ঘন নিঃশ্বাস বংশীর মুখে এসে পড়ে। বংশী জানে হয়ত কিছুক্ষনের মধ্যেই বন্দুকের নল থেকে কয়েকটা গুলি বেরিয়ে এসে ওর পাঁজরকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। সে দিক, মরতে আর ওর কোনও ভয় ও নেই, আফসোস ও নেই।
সিলিং সাহেবঃ বল কি দোষ করেছিল ওই বাচ্চা ছেলেটা। বল শুয়োরের বাচ্চা।
শেষ কথাটা ঠিক এতটাই জোরে সিলিং সাহেব বললেন যে বংশী বুঝে যায় এই জীবনে ওর শোনা শেষ শব্দ এই দুটোই “শুয়োরের বাচ্চা”। জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্তে দুচোখ বন্ধ করে নেয় বংশী। মুহূর্তের মধ্যে জঙ্গল কাপিয়ে দিয়ে গুলির দু থেকে তিনবার কর্কশ শব্দ। যেখানেই লুকিয়ে থাক মালা, বুকটা ওর ও কেঁপে উঠেছিল। ও যে এক প্রকৃত মানুষ বংশীকে দেখেছিল। আর হয়ত সেই মানুষটাই আজ ওকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণটা হারিয়ে দিল।
গুলির শব্দে বংশীর শরীরটা কেঁপে উথলেও দুচোখ খুলে সামনের দিকে দেখে বংশী। নায়েবমশাই কখন যে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সিলিং সাহেবের দুহাত শক্ত করে জাপটে ধরেছেন তা বংশী ও সিলিং সাহেব দুজনেই বুঝতে পারেনি। সিলিং সাহেবের পশুসুলভ শক্তির সাথে যে নায়েবমশাই পেরে উঠবেন না তা বংশীর জানা। সমস্ত গায়ের জোরে বন্দুকটা চেপে ধরে আছে নায়েবমশাই। মুচড়ে যাওয়া শরীরটা থেকে শুধু একটাই কথা বের হচ্ছে “না সিলিং সাহেব না, আমার গুপ্তধন না পেলে ও মরতে পারেনা”
বংশী মরতে ভয় পায়না। কিন্তু দুটো পশুর হাতে মরার চেয়ে বেশি যন্ত্রণার বোধ হয় আর কিছুই নেই। যে বিশেষ ক্ষমতার জন্য বংশীর এতো নাম সেই তাৎক্ষনিক বুদ্ধি প্রয়োগ করে বংশী। হয়ত নায়েবমশাই বা সিলিং সাহেব কেউ ই এটা আশা করতে পারেননি। প্রথমে নায়েবমশাই এর কাঁধে প্রচণ্ড জোরে একটা থাবা আর ঠিক তার ই সাথে সিলিং সাহেবের পেটে সজোরে একটা ঘুসি। মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দুই শরীর। বংশীর হাতে বন্দুক।
ভয়ার্ত চোখে বংশীর দিকে তাকায় নায়েবমশাই ও সিলিং সাহেব দুজনেই। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সৈন্যর দল বংশীর দিকে তাকিয়ে বন্দুক তাক করে। ওদের দিকে তাকিয়েই বংশী নিজের বন্দুকটা সিলিং সাহেবের বুকে চেপে ধরে। রনাঙ্গনের এই পট পরিবর্তনের নাটক হয়ত তখনও সবাই ঠিক করে মেনে নিতে পারেনি। বিস্ফারিত চোখে বংশীর দিকে তাকিয়ে থাকে সিলিং সাহেব। বংশীও যে কাপুরুষ নয় তা ওর শান্ত শীতল চাহুনি দিয়ে সিলিং সাহেবকে বুঝিয়ে দেয়। শ্মশানের এই নীরবতা প্রথম ভঙ্গ করে নায়েবমশাই। নায়েবমশাই প্রায় ডিগবাজি খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। প্রচণ্ড হাসিখুশি মুখে বংশীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
নায়েবমশাইঃ সাবাশ বংশী, তোমায় তো আমি প্রথমদিন ই চিনে গেছিলাম। তুমি বীর বংশী।
নায়েবমশাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে শুধুই একটা মিষ্টি হাঁসি ফিরিয়ে দেয় বংশী। নায়েবমশাই জানেন এই হাসির মধ্যে চরম অবজ্ঞা আছে।
বংশীঃ যে বংশীকে আপনি চিনতেন সে মারা গেছে এ অন্য বংশী। এই বংশী জানোয়ার নয়, আপনাদের মত জানোয়ার নয়।
নায়েবমশাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বংশীর দিকে।
বংশীঃ আমি বেঁচে থাকতে রানীমার কিছুই হবেনা। জমিদারবাবুর সাথে হয়ত অনেক বেইমানি ই আমি করে ফেলেছি। কিন্তু আর নয়। আমি রানীমাকে জমিদারবাবুর কাছে ফিরিয়ে দেবো। আমি সর্বসমক্ষে স্বীকার করবো আমি ই টমাসকে হত্যা করেছি। এবং তা করেছি শুধুই জমিদারবাবুকে বিপদে ফেলার জন্য। দেশে এখনো আইন বলে একটা জিনিষ রয়েছে। জমিদারবাবুর কিছুই হবেনা। ব্রিটিশ আমায় শাস্তি দিক, আমি মাথা পেতে নেবো।
বংশীর কথাগুলো নায়েবমশাই এর বিশ্বাস হয়না। নায়েবমশাই এর মনে হয় উনি যেন স্বপ্ন দেখছেন।
নায়েবমশাইঃ (বংশীর কাঁধে হাত রেখে) আরে বংশী তুমি কি পাগল হলে নাকি? এ তুমি কি বলছ? আমাদের দুজনের এতদিনের সব পরিকল্পনাই জলে মিশে যাবে। বংশী, আমার জমিদারী চাইনা। তুমি জমিদার হও, আমি তোমায় তোমার সম্পত্তি ফিরিয়ে দেবো এমনকি গুপ্তধনের ও অর্ধেক দিয়ে দেবো। তুমি চাইলে...
নায়েবমশাই নিজের কথা শেষ করতে পারেনা। নায়েবমশাই এর গালে প্রচণ্ড জোরে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দেয় বংশী। ক্ষনিকের মধ্যে যে বংশী ওকে এভাবে একটা চড় মারবে তা নায়েবমশাই ভ্রুনাক্ষরেও ভাবতে পারেন নি। নায়েবমশাই এর মনে পড়ে যায় ঠিক, ঠিক এই জায়গায় কয়েকঘণ্টা আগে উনি বংশীকে এইভাবেই চড় মেরেছিলেন। মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে নায়েবমশাই।
বংশীঃ কি নায়েব মনে পড়ে, ঠিক এখানেই তুই আমার গালে সবার সামনে চড় মেরেছিলি। আর কি বলেছিলি মনে পড়ে। বেইমান। কে বেইমান নায়েব? আমি না তুই? আমার পেটে ক্ষিদে ছিল, মনে হতাশা ছিল তাই আমি ডাকাত তাই আমি বেইমান। তোর কিসের অভাব ছিল? হাঁ অভাব ছিল তা হোল মানবিকতার।
নায়েবমশাই মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকে। বংশী একবার সিলিং সাহেব ও একবার নায়েবের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসতে থাকে। সিলিং সাহেব বংশীর এই রনমূর্তি কখনো কল্পনাও করতে পারেননি। বংশী নিজের এক পা সিলিং সাহেবের বুকের ওপর রাখে, প্রায় লজ্জায় মরে যাওয়ার অবস্থা হয় সিলিং সাহেবের। এক ব্রিটিশের বুকের ওপর সামান্য ভারতীয়র পা, এতো কল্পনাতীত। আজ বংশী বিদ্রোহী, আজ বংশী মানুষ। সিলিং সাহেব সত্যি ই বুঝতে পারেনি বংশী কেন ওনার বুকের ওপর পা টা রাখল। হাতের বন্দুকটা সিলিং সাহেবের দিক থেকে আসতে আসতে নায়েবমশাই এর দিকে নিয়ে যায় বংশী। ভিজে পায়রার মত থরথর করে কাঁপতে থাকে নায়েবমশাই। নিজের দুহাত বংশীর সামনে এনে হাত জড় করে প্রানভিক্ষা চাইতে শুরু করে নায়েবমশাই। যদিও ওর মুখ থেকে সামান্য একটা শব্দ ও বাইরে আসেনা। বংশীর এই রনমূর্তি ওকে বারবার করে বুঝিয়ে দিচ্ছিল, প্রানভিক্ষা ও পাবেনা। প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে ওঠে বংশী
বংশীঃ নায়েব, তুই মানুষ নয়, তুই মানুষ হবিও না। রানীমা আর জমিদারবাবুর ভালোর জন্য তোর মৃত্যু দরকার।
প্রচণ্ড জোরে দুটো গুলির শব্দ। সাথে নায়েবের জড়িয়ে আসা গলার আর্তনাদ।
নায়েবের শরীরটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এর সাথেই ভেসে আসে এক রমনীর চাপা আর্তনাদ। বংশী বন্দুকটা আবার সিলিং সাহেবের দিকে তাক করে, চিৎকার করে ওঠে, “রানীমা আপনার কোনও চিন্তা নেই, আপনি বাইরে বেরিয়ে আসুন, আমি আপনাকে নিরাপদে জমিদারবাড়িতে পৌঁছে দেবো”
কিছুটা দূরে একটা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে মালা। সিলিং সাহেব একবার তাকায় মালার দিকে। কিন্তু তাকিয়ে থাকতে পারেনা কারন ওর বুকে বন্দুক ঠেকানো রয়েছে। বংশী তুমি বীর, আমি নারী, আমি তোমায় আজ বীরের মর্যাদা দিলাম। হয়ত এই কথাই বলতে চেয়েছিল মালা। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় মালা প্রায় বাকরুদ্ধ। বংশীও চায়না ওর দেবীকে এরকমভাবে এক রক্তাক্ত পরিস্থিতির সাক্ষী করতে। সিলিং সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে বংশী
বংশীঃ ভয় নেই আমি আপনার কোনও ক্ষতি করবো না। আপনাকে চাইলে আমি এখানেই মেরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু ওই আমায় যে জমিদারবাবুকে নিরপরাধ প্রমান করতে হবে। সবার সামনে স্বীকার করতে হবে আমি ই আসল অপরাধী, আমি ই টমাসকে হত্যা করেছি। সিলিং সাহেব আমরা এবার জমিদারবাড়ির দিকে যাবো, আপনি উঠে দাঁড়ান আর দয়া করে আপনার সৈন্যদের বলুন নিরাপদ দুরত্বে সরে দাঁড়াতে, নয়ত আপনি তো দেখলেন আমি কি করতে পারি
কয়েক মুহূর্ত আগের ভয়াবহতায় সৈন্যরাও হয়ত বিশ্বাস করে নিয়েছিল এই মানুষটা সব ই পারে। সিলিং সাহেবের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলে বংশী। ওর পাশে স্থির হয়ে মালা ওর সাথেই চলতে শুরু করে। মালা মাঝেমধ্যেই বংশীর দিকে তাকায় ও মনে মনে বলে ওঠে তুমি কে বংশী? তুমি তো অর্জুন নয় তুমি রাম ও নয়। ওরা তো নারীর কষ্ট এভাবে বোঝেনি। তুমি কে? কিকরে তুমি একজন নারীর জন্য নিজের সব ত্যাগ করতে পারলে। তুমি কে বংশী? বংশী নির্বাক, ওর মুখ ফুটে একটাও কথা বাইরে আসেনা। কখন যে ওরা ঠিক সুরঙ্গের কাছে এসে পৌছায় তা ওরাও খেয়াল করেনি। সজাগ হয়ে যায় বংশী। পেছন ঘুরে একবার ইশারা করে। ওর ইশারাই যথেষ্ট ছিল। ব্রিটিশ সৈন্য অনেকটা দুরেই দাঁড়িয়ে যায়। প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বংশী সিলিং সাহেবকে সুরঙ্গের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। বংশীর সাথে সাথে মালাও নেমে আসে। প্রায় ১ টা দিন পর মালা ফিরে আসে জমিদারবাড়িতে। এই একটা দিনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট হতাশা সব যেন কোথায় হারিয়ে যায়।
ওরা তিনজনেই জমিদারবাড়িতে প্রবেশ করে। ভেতরে প্রবেশ করেই প্রায় বিজয় উল্লাসের ঢঙে চিৎকার করে ওঠে বংশী “জমিদারবাবু আমরা ফিরে এসেছি” মুহূর্তের মধ্যে হুড়মুড় করে সুপ্রতীক ওদের সামনে এসে উপস্থিত হয়। সুপ্রতীককে দেখে মালা প্রায় দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ায়। মালার এই তীব্র ব্যাকুলতা সুপ্রতীকের ও নজরে আসে। কিন্তু বন্দুক হাতে বংশী ও সিলিং সাহেবের উপস্থিতি ওকে সজাগ করে দেয়। কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায় মালা। বংশী সুপ্রতীকের দিকে তাকিয়ে বিনীতভাবে বলে ওঠে
বংশীঃ জমিদারবাবু আমি ই সেই ঘরশত্রু বিভীষণ যে টমাসকে হত্যা করেছে। নায়েবমশাই আপনাকে হয়ত এতক্ষনে সব ই বলে দিয়েছে। কিন্তু জমিদারবাবু নায়েবমশাইকে চিনতে আপনি ভুল করেছেন...
নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে পারেনা বংশী। কখন যে সিলিং সাহেব উঠে দাঁড়িয়েছেন তা কেউ ই খেয়াল করেনি। সামনেই একটা লাঠি পড়েছিল, তা দিয়ে বংশীর মাথায় সজোরে একটা আঘাত আর বংশীর হাত থেকে বন্দুক পড়ে যাওয়া দুটো ঘটনাই এতো দ্রুত ঘটে যায় যে কারুর ই কিছু বোঝার অবস্থা থাকেনা। দ্রুত বন্দুক নিজের হাতে উঠিয়ে নেন সিলিং সাহেব। একহাত মাথার পেছনে দিয়ে সিলিং সাহেবের দিকে ঘুরে দাঁড়ায় বংশী।
সিলিং সাহেবঃ জমিদার, বংশী নায়ক হতে চেয়েছিল। বংশী সব স্বীকার করে তোমায় বাঁচাতে চেয়েছিল। কিন্তু...
আবার একটা গুলি, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বংশী। নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা মালা। দৌড়ে যায় বংশীর দিকে। বংশীর দুই চোখ মালার দিকে, ধীরে ধীরে শরীরের ভেতর থেকে প্রানটা বেরিয়ে যাচ্ছে। মালার বুকটা খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যেতে থাকে। অবশেষে বংশীর শরীরটা পাথরে পরিনত হয়। মালার বুকের ভেতর থেকে একটা আওয়াজ বাইরে আসে “বংশী” মালা আরও কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু ওর কথা শোনার ক্ষমতা আর বংশীর শরীরে ছিলনা। একটা মানুষ বীরের মৃত্যুবরন করল। একদৃষ্টিতে বংশীর নিথর শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকে মালা।
[+] 2 users Like manas's post
Reply


Messages In This Thread
RE: অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed - by manas - 19-01-2019, 09:49 AM



Users browsing this thread: