Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.42 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed
#70
পর্ব ২৮- মানব জনমঃ



চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ সম্পন্ন হয়না। সেই কোন আদিমকাল থেকে এই কথাটা চলে আসছে। হয়ত বংশীর মনে এই মুহূর্তে এই কথাটাই বারবার করে ঘোরাফেরা করছে। মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান জীব, কিন্তু অধিকাংশ সময়ে মানুষের এই বুদ্ধিমত্তাই মানুষের বিনাশের কারন হয়ে দাঁড়ায়। কম বুদ্ধিমান বংশীও নয়। জীবনে বহু প্রতিকুল অবস্থায় নিজের তাৎক্ষনিক বুদ্ধিমত্তার জোরে বংশী রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে বংশী সম্পূর্ণ দিশাহারা। ওর কি করা উচিত, যেভাবে হোক জমিদারবাড়ির সেই গুপ্তস্থানের সন্ধান করে নায়েবমশাই এর হাতে সব তুলে দেওয়া নাকি নায়েবমশাই এর বিরুদ্ধে গিয়ে হয় সুপ্রতীক বা সিলিং সাহেব কারুর একপক্ষের কাছাকাছি আসা। কিন্তু ওকে সমর্থন কেনই বা সুপ্রতীক বা সিলিং সাহেব করবেন। সিলিং সাহেব যথেষ্ট বিচক্ষন। উনি জানেন সুপ্রতীকের মত বুদ্ধিমান মানুষ শুধুমাত্র প্রতিহিংসার বসে টমাসকে হত্যা করে নিজের বিপদ ডেকে আনবে না। সেক্ষেত্রে সিলিং সাহেবের সন্দেহের তীর অবশ্যই সুপ্রতীকের কোনও শত্রুর দিকে। সিলিং সাহেবের চোখে নায়েবমশাই নয়, বংশী ই সুপ্রতীকের সবচেয়ে বড় শত্রু। সুপ্রতীকের মনে পড়ে যায়, সিলিং সাহেবের সেই বাঁকা হাসির কথা। অপর দিকে সুপ্রতীক তো একদম প্রথম থেকেই ওকে সন্দেহের চোখে দেখে। সুপ্রতীকের ও সন্দেহের তালিকায় সবার ওপরে বংশী। তাহলে ও কি করবে। নায়েব কে কি ও বিশ্বাস করবে? যে লোক নিজের পুরো জীবনটা আনুগত্যের অভিনয় করে গেছে সে কি কখনো বিশ্বাসযোগ্য? বংশীর হুঁশ ফেরে প্রচণ্ড জোরে ওর কাঁধে একটা হাত এসে পড়ায়।
নায়েবমশাইঃ এই দেখো, তুমি এতো চিন্তা কেন করছ? তোমায় তো আমায় বিশ্বাস করতেই হবে বংশী। তুমি যে নিরুপায়। (আবার সেই বিখ্যাত গা জ্বালানো হাসি) শোন বংশী, অনেক ধকল গেছে। আজ সবার আগে তোমার নারীর সেবা প্রয়োজন। আমি ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি।
নারীসেবা ও ব্যাবস্থা এইদুই শব্দের মধ্যে যে কি বিশাল পরিমান ব্যাঙ্গ লুকিয়ে রয়েছে তা বংশী খুব ভালো করেই বোঝে। বংশী নিরুপায়, কিছুই করার নেই ওর। বংশীর সবচেয়ে বড় ভুল কোনটা? টমাসকে হত্যা করা? বাকিরা কি ভাবে বা ইতিহাস কি ভাবে তা জানা নেই, তবে অবশ্যই বংশীর এই মুহূর্তে নিজের একটাই ভুল বারেবারে চোখে ধরা পড়ছে। মালা, জমিদারের কামনাময়ী সুন্দরী স্ত্রী মালা। এই মালার লোভে বংশী যদি না পড়ত তাহলে হয়ত সম্পূর্ণ খেলাটাই অন্যকিছু হত। বংশী জানে আজ রাতের জন্য সত্যি ই নায়েবমশাই মালাকে ওর ই হাতে তুলে দেবে। কিন্তু নারীদেহ ভোগ করার যে মানসিক প্রসন্নতা দরকার এই মুহূর্তে বংশীর তার সিকিভাগ ও নেই। হাঁটতে হাঁটতে ওরা যে কখন সুরঙ্গর সামনে চলে এসেছে তা বংশী খেয়াল করেনি। নায়েবমশাই সুরঙ্গর মুখের কাছে গিয়ে কিছুটা গলা ভারী করেই বলে উঠলেন
নায়েবমশাইঃ রানীমা, রানীমা। বাইরে আসুন, আমি নায়েবমশাই। আর কোনও ভয় নেই আপনার। ফিরিঙ্গীদের সৈন্যরা চলে গেছে। বংশীও ফিরে এসেছে।
নায়েবমশাই এর কথা শুনে বংশী প্রায় চমকে ওঠে, মনে মনে বলে “নায়েব তুমি আমার চেয়েও বড় শয়তান। আমায় তো খলনায়ক দারিদ্র আর মানসিক যন্ত্রণা বানিয়েছে, কিন্তু তুমি জানোয়ার হয়েই জন্মেছ” কিছুটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে গুহার ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে মালা। গায়ের কাপড় জবুথবু, ব্লাউজটা এখনো শরীরে নেই, শাড়ির ওপর দিয়ে কোমল স্তনের আভা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মনে মনে প্রচণ্ড রাগ হয় বংশীর। মালার ওপর ওর যতই কুনজর থাক না কেন, কোথাও একটা এই নিষ্পাপ মেয়েটার প্রতি মায়া জন্মে গেছে। হয়ত এই দুর্বলতাই ওর সর্বনাশ করে ছাড়ল। মালার দু চোখে তখন ও জল রয়েছে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে মালা ওদের সামনে আসে। নায়েবমশাই এর দিকে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে বলে ওঠে
মালাঃ কি খবর নায়েবমশাই, উনি কেমন আছেন? সব খবর ভালো তো?
বংশী, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নায়েবমশাই এর দিকে। সত্যি লোকটা কি কঠোর আর নিষ্ঠুর। একটা নিষ্পাপ মেয়ের আবেগ জড়ানো আকুতির সামনেও কি করে একটা মানুষ এতো ছল চাতুরি করতে পারে। কিছুটা গম্ভীর হয়ে নায়েবমশাই উত্তর দেন
নায়েবমশাইঃ আমি বুড়ো মানুষ রানীমা। আমি জমিদারবাবুর অবর্তমানে বড়জোর জমিদারী চালাতে পারি। কিন্তু নীলকুঠি থেকে ওনাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা এতো আমার কাছে স্বপ্নাতীত। এই দায়িত্ব বংশী নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। ওই আপনাকে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে। আপনি জমিদারবাড়িতে নিরাপদ নয়, আজ ও কষ্ট করে আপনাকে এখানেই কাটাতে হবে। বংশী কথা দিয়েছে ও জমিদারবাবুকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবে। এবার আপনি আমাদের যেতে আজ্ঞা করুন।
নায়েবমশাই এর মুখ থেকে নিরাশার উত্তর পেয়ে মালা, ভাষাহীন হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। বংশীর দিকে জিভ উলটে আবার একটা অশ্লীল ইঙ্গিত করে নায়েবমশাই নিজের সমস্ত সৈন্য নিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকেন। সুরঙ্গের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে শুধুই মালা আর বংশী। মাটির দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে মালা। বংশীর গালে এখনো মালার হাতের দাগ দৃশ্যমান। না দাগটা চোখে দেখা যাচ্ছেনা, কিন্তু অপমানটা সমস্ত শরীরে আঠার মত চেপ্টে বসে আছে। এতক্ষনে বংশীর দিকে তাকায় মালা
মালাঃ বংশী তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে কোনও সুখবর না নিয়ে আমার কাছে আসবেনা। কি ব্যাপার বংশী চুপ করে আছো কেন? তুমি আমায় ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলে কোনও সুখবর না নিয়ে এখানে আসবেনা।
শেষ কথাটা মালা এতটাই জোরে বলল যে বংশী প্রায় চমকে গিয়ে মালার মুখের দিকে তাকাল। অন্য সময় হলে এই এতো অপমানের প্রতিশোধ স্বরূপ বংশী আরও একটা অপরাধ হয়ত করে ফেলত। হয়ত মালার নরম পবিত্র দেহটা মাটিতে ফেলে চটকে চটকে দলা পাকিয়ে দিত। কিন্তু বংশীও জানেনা কেন ওর মধ্যে এক অন্য মানুষের আবির্ভাব ঘটছে। হথাত করেই ওর মালাকে দেখে প্রচণ্ড স্নেহ হচ্ছে। বারবার এটাই মনে হচ্ছে কেন এতো দুর্নাম আমার? কেন আমি ডাকাত হলাম? জীবনে ভালোবাসা কখনো পাইনি আমি সেইজন্য। একবার যদি পেতাম হয়ত আমিও ভালো ভদ্র মানুষ হতাম। এই জটিল পাশাখেলার ময়দানে সবাই তো জানোয়ার একমাত্র মানুষ তো একজন সে হোল মালা। ওর সাথে সবাই ছলনা করেছে, কিন্তু ও কারুর সাথেই ছলনা করেনি। বংশীর দুচোখ ছলছল করে ওঠে। সত্যি মায়া কি অদ্ভুত জিনিষ। বংশীর মত একটা জানোয়ারকেও কাঁদিয়ে দেয়। বংশীর দুচোখের দিকে তাকিয়ে মালা প্রায় ফুঁপিয়ে ওঠে
মালাঃ তুমি কাঁদছ বংশী? কি হয়েছে বংশী, কোনও বাজে খবর আছে কি? উনি ভাল আছেন তো?
বংশী আর এই নিষ্পাপ শরীরটাকে কষ্ট দিতে পারেনা। মালার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, খবর মোটামুটি ভালোই। আমি নিজে সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করেছি, কথা বলেছি। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি যে উনি কাল সকালে ফিরে আসবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে এই স্থানটা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। আগে আপনি আমার সাথে কুটিরে চলুন তারপর সব কিছু আমি আপনাকে বলব।
ছলছল চোখে মালা তাকায় বংশীর দিকে। এতক্ষনে পূর্ণিমার চাঁদের মত সুন্দর ওই মুখটায় একটা মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে। মালার মুখ দিয়ে শুধু একটাই কথা বোঝা যায় “তুমি সত্যি বলছ বংশী?” বংশী শুধু মাথা নেড়ে ওকে আশ্বস্ত করে। বংশীর কাঁধে নিজের হাতটা রেখে কোনরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে মালা। মালার এই স্পর্শ আর বংশীর কামরিপুকে উত্তেজিত করেনা। মাঝেমধ্যেই বংশী পাশফিরে মালার দিকে তাকায়, শান্ত স্নিগ্ধ ওই মুখে বংশী পরের জন্মের প্রিয়তমাকে খুঁজে পায়। কারন বংশী জানে যতই আশাবাদী ও হোক না কেন, বাস্তব এটাই যে ও সম্পূর্ণভাবে শেষ। এই মুহূর্তে ও বিভিন্ন খেলোয়াড়ের গুটিতে পরিনত হয়েছে।
অত্যন্ত ধীর গতিতে ওরা দুজনে সামনের দিকে এগোতে থাকে। এ কোন বংশী? যে ঠিক একটা দিন আগে ফুলের মত নিষ্পাপ একটা তরুণকে হত্যা করেছে সেই বংশী? একি সেই পুরনো বংশী, যে সামান্য কিছু গয়নার লোভে এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে হত্যা করেছিল। একি সেই বংশী পেছনে যাকে নিজের দলের লোকেরাই জানোয়ার বলে ডাকত? কেন বংশীর এই পরিবর্তন? হয়ত বংশী চোখের সামনে নিজের মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছে। বংশী জানে নায়েবের কথা শোনা বা না শোনা দুটোই অনুরুপ। মৃত্যু ওর হবেই, সারা জীবনের এই কলঙ্কের একটা হিসেব তো হবেই। আবার একবার মালার দিকে তাকায় বংশী। ওর ওই নিষ্পাপ দুই চোখ বংশীকে একটাই কথা বারবার করে বুঝিয়ে দিচ্ছে- বংশী ভালোমানুষীর দাম চিরকাল থাকবে। দেখ মালাকে মেয়েটা একটা মৃত্যুশয্যার বৃদ্ধকে বিবাহ করেছিল, মরার খাট থেকে উঠে এসেছিল তাও প্রকৃত ভালোবাসা ও পেয়েছে। জমিদারবাড়িতে রানীমার মর্যাদা ও পেয়েছে। সুপ্রতীক যতই বিচক্ষন হোক চতুর হোক ও মানুষ হিসেবে বিশাল মাপের। বংশী আজ ই ঠিক কর, সত্য না মিথ্যে কার সাথে থাকবি তুই। যদি এরপর ও সেই পুরনো বংশী ফিরে আসে তুই নরকেও গিয়ে শান্তি পাবিনা। মালাকে নিজের স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দে, ওর মুখের সেই পুরনো হাসিটা আবার ফিরিয়ে দে, দেখবি মরেও শান্তি পাবি। বিবেকের তাড়না বড় অদ্ভুত এক জিনিষ। মানুষকে অন্তর থেকে নাড়িয়ে দেয়। হয়ত বংশীর ও নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। কখন যে ওরা ধীরে ধীরে কুটিরের সামনে পৌঁছে গেছে তা দুজনের ই খেয়াল নেই। মালা বিভোর হয়ে আছে এক নতুন ভোরের অপেক্ষায়, নতুন সূর্যোদয়, সমস্ত চিন্তা ও মানসিক কষ্টের অবসান। বংশী বিভোর হয়ে আছে নতুন এক সূর্যস্নানের, সমস্ত পাপ ধুয়ে যাওয়ার। মৃত্যু, মৃত্যুই এইমুহূর্তে সবচেয়ে সহজ রাস্তা বংশীর কাছে। বংশী খেয়াল করেনি মালা ওর কাঁধের ওপর থেকে হাত সরিয়ে কুটিরের ভেতর প্রবেশ করেছে। বংশী এতক্ষনে মালার দিকে তাকায়, সেই পুরনো মিষ্টি হাসিটা মালার মুখে ফিরে এসেছে
মালাঃ বংশী, তুমি কিছু খেয়েছ? আমার জন্য তো নায়েবমশাই খাবার এনেছিলেন আমি কিন্তু খেয়েছি।
কোনও উত্তর দেয়না বংশী, শুধু মালার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বংশীর দুগাল বেয়ে জল ভেসে আসতে থাকে। অবাক হয়ে মালা তাকায় বংশীর দিকে। হয়ত আরও বেশি অবাক বংশী নিজেই হয়েছে, এ কোন বংশী, নিজের মনেই একবার বলে ওঠে ও “আমি কি মানুষ হয়ে গেলাম মা” হাঁ মা। ও খেয়েছে কিনা, শরীর ঠিক আছে কিনা একথা তো সেই কোন ছোটবেলায় ওর মা ওকে বলত। চোখের সামনে যেন ওর মা দাঁড়িয়ে। এ ওর কি হচ্ছে? যার শরীরকে একবার স্পর্শ করার জন্য ও পাগল হয়ে যেত আজ তার ই মধ্যে মাতৃস্নেহের পরশ খুঁজতে চলেছে। নিজের মনেই বলে বংশী “আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?” অত্যন্ত করুনভাবে ওর দিকে তাকায় মালা। সামনের দিকে এগিয়ে এসে বংশীর দুহাত চেপে ধরে বলে ওঠে
মালাঃ আমায় ক্ষমা কর বংশী। তোমার সাথে আমি অনাচার করেছি। এর শাস্তি ভগবান আমায় ঠিক দেবেন। তুমি কখনো বুঝবে না মনের মানুষের এরকম দুঃসময়ে মেয়েদের মনের কি অবস্থা হয়। আমি পাপ করেছি বংশী।
মালা জানেনা ওর এই কথাগুলো একটা জানোয়ারকে আরও বেশি দুর্বল করে তুলছে, বারবার নিজেকে একবার মানুষের রুপে দেখার ইচ্ছে প্রবলভাবে জাগিয়ে দিচ্ছে। বংশীর মন চাইছে ওর হৃদয়টা যেমন টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেছে সেটা একবার অন্তত একবার মালার সামনে প্রকাশ করতে। লজ্জায় মাথা নিচু করে দেয় বংশী। মালার এই সরলতা ওর শরীরে তীরের মত বিদ্ধ হতে থাকে। মালা আবার ওর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
মালাঃ আমি তোমায় কাপুরুষ বলেছিলাম বংশী। কিন্তু বিশ্বাস কর ওটা আমার মনের কথা ছিলনা। পুরুষ মানুষের সবচেয়ে বাজে গুন কোনটা জানো। সে নিজেকে পুরুষ মনে করে, শক্তিশালী মনে করে কিন্তু মানুষ মনে করতে পারেনা, চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল বার করতে পারেনা। তুমি মানুষ বংশী।
একবার মুখতুলে মালার দিকে তাকায় বংশী। আর পারেনা বংশী। এতদিন ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা হিংসা, আক্রোশ রাগ সব যেন মুহূর্তের মধ্যে কোথায় হারিয়ে যায়। অন্তর থেকে পাপবোধের তীব্র দংশন ওকে যন্ত্রণায় বিদ্ধ করে তুলতে লাগে। মালার সামনেই হথাত ই ও নিজের হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে বসে পড়ে। দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে দেয়। মালার বুঝতে অসুবিধা থাকেনা বংশী কাঁদছে একটা মানুষ কাঁদছে। ধীরে ধীরে ওর সামনে এগিয়ে যায় মালা। দুহাত দিয়ে বংশীর মাথায় হাত রাখে মালা। বংশীর হৃদয়ে সমুদ্রের এক বিশাল ঢেউ এসে সব বাঁধ ভেঙে দেয়। দুহাত দিয়ে মালার শরীরটা জড়িয়ে ধরে বংশী। নিজের মাথাটা মালার পেটের কাছে রেখে প্রচণ্ড জোরে ফুঁপিয়ে ওঠে। প্রচণ্ড তীব্রতায় অন্তরের সমস্ত বিষ উদ্রেক করে দেয়। মালা মুখ দিয়ে একটাও শব্দ বার করেনা, শুধু দুহাত দিয়ে ওর চুলে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। একবারও ওর কঠিন আলীঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেনা, কারন মালা জানে এই আলিঙ্গনে সামান্য কোনও পাপ নেই, যৌনতার আস্ফালন নেই, আছে শুধু স্নেহ, মায়া মমতা। বহুক্ষন বাদে শান্ত হয় বংশী। আসতে আসতে নিজের মাথাটা ওপরের দিকে তুলে ধরে থাকা গলায় বলে ওঠে
বংশীঃ রানিমা, আমার যখন ১০ বছর বয়স, আমার মা মারা যায়। বাবা আবার একটা বিয়ে করে। নতুন মাএর কাছে আমি দুচোখের বিষ ছিলাম। কেন জানিনা আজ এতো বছর পর আপনাকে দেখে মায়ের মুখটা ভেসে উঠল। আপনি হয়ত বুঝবেন না, আমার আয়ু আর বেশিদিন নয়, মনে হয়না কাল এরকম সময়ে আমি এই জগতে থাকবো। এটা সত্যি রানিমা।
মালার ও গলা জড়িয়ে এসেছে। শুধু একটাই কথা ওর মুখ দিয়ে বেরোল “এরকম বলেনা বংশী”
বংশীঃ নতুন মা আসার পর ও আমি ঠিক ছিলাম। কিন্তু একদিন খাজনা দিতে না পারার জন্য জমিদারের পেয়াদা এসে আমার বাপটাকে ধরে নিয়ে গেলো। আমি তখন খুব ছোট। বাবা ফিরে আসলো কিন্তু মাটিতে শরীর ঘষতে ঘষতে। ওরা বাবাকে একদম পঙ্গু করে দিয়েছিল। আমি গুরুকুলে পড়তে যেতাম। সব বন্ধ হয়ে গেলো, সব শেষ হয়ে গেলো। সেদিন ই জমিদার এক ডাকাতের জন্ম দিয়ে দিয়েছিল, বংশী ডাকাত। যে স্বামীর জন্য আপনি আমায় কাপুরুষ বা জানোয়ার বললেন সে মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছে। আমি কিছুই পাইনি। জানোয়ার আমিও ছিলাম না। আমিও মানুষ ছিলাম।
দুহাত দিয়ে শক্ত করে বংশীর মাথাটা নিজের শরীরে বেঁধে নেয় মালা। কথাবলার শক্তি তো মালাও খুইয়ে ফেলেছিল।
একি সুবীর বাবু আপনার ও চোখে জল। আরে মশাই একি প্রেমের গল্প নাকি। এখনো অনেক নাটক বাকি। আরে মশাই আপনিও তো দেখছি বংশীর মত নিজের পুরুষসত্বাটা বেমালুম ভুলে ফিচফিচ করে মেয়েলি কান্না কাঁদতে শুরু করলেন। আরে মশাই গল্প এখনো অনেক বাকি। পাটিগণিতের নিয়মে চললে আর অভিশাপ, ষড়যন্ত্র এগুলো কোথায় যাবে। তবে এটা সত্যি বংশী কাল বাঁচবে না বাচবেনা জানিনা, তবে বংশীর মানব জনম যে হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। হয়ত মানব বাবুর বা রাজুর বা সাইদুলের ঠিক এরকম ই একটা মানব জনম দরকার ছিল। আপনারা তো ভদ্রলোক, উচ্চশ্রেনীর উচ্চশিক্ষিত লোক। মালা কি আপনাদের চেয়েও শিক্ষিত? ভেবে দেখুন সুবীরবাবু। সুবীর বাবু মানুষ কখনো জানোয়ার হয়ে জন্মায়না, সমাজ ই বঞ্চনা আর বিভেদের মাধ্যমে মানুষকে জানোয়ার বানায়। ছাড়ুন, আপনার গল্প তো চতুর্থ খণ্ডে আসবে। আপাতত আমরা এরপর কি হয় সেদিকে দেখি।
[+] 1 user Likes manas's post
Reply


Messages In This Thread
RE: অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed - by manas - 19-01-2019, 09:47 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)