19-01-2019, 09:43 AM
পর্ব ২৪- উল্টোপুরাণঃ
মহুয়া পানের অভ্যাস যে বহুদিন চলে গেছে তা বংশী প্রতি পদে পদে অনুভব করতে থাকে। বংশী নিজেও বোঝে যে ওর চলন মোটেও সরলরেখায় হচ্ছেনা। কোনরকমে ৩ টে গ্রাম এঁকে বেঁকে পার করে বংশী জঙ্গলে প্রবেশ করে। এই জঙ্গল ওর, ও এখানের একচ্ছত্র রাজা। চারপাশে একটা খসখস করে শব্দ ভেসে আসছে। বংশী জানে ওর ভয়াল রূপটা এই জঙ্গলের প্রতিটি হিংস্র জানোয়ার ই চেনে। এই জঙ্গলের সবচেয়ে হিংস্র জানোয়ার ও নিজেই, এবং এই মুহূর্তে ও নিজের শিকারের খোঁজে চলেছে। চোখের সামনে একটাই লক্ষ্য, একটাই ছবি নীল ব্লাউজ আর হলুদ সাড়ি পরিহিত মালা। কিছুক্ষন আগেই ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে সাদা নিটোল স্তনজোড়া ও লক্ষ্য করেছিল, ওর শরীরে যে আগুন জ্বলেনি তা নয়, দাউদাউ করে আগুন জ্বলেছিল। কিন্তু সেই আগুনে ও নিজেই জল ঢেলে দিয়েছে। আসলে মালাকে ও গায়ের জোরে পেতে চায়না। একটা বারের জন্য মালার শরীরটা ভোগ করা ওর উদ্যেশ্য নয়। ও চায় রাজা হতে আর মালা হবে ওর রানী। রাজকাজ সম্পন্ন করে যখন বংশী রাজপ্রাসাদে ফিরে যাবে তখন মালা ছোট একটা কাপড় দিয়ে নিজের শরীরটা কোনরকমে জড়িয়ে ওর জন্য বাগানের সামনে অপেক্ষা করে থাকবে। স্বল্পবসনা মালাকে দেখতে পেয়েই বংশী ছুটে যাবে, এক টানে ওর শরীর থেকে কাপড়টা খুলে বাগানের ভেতর ছুঁড়ে ফেলে দেবে। লজ্জায় মালার দুই কান লাল হয়ে যাবে, কোনরকমে দুই হাত দিয়ে নিজের লজ্জা নিবারন করে মালা ছুটে যাবে বাড়ীর ভেতরে। মালাকে স্পর্শ করার জন্য বংশীও ওর পেছনে ছুটতে শুরু করবে। এই সমস্ত রাজকীয় চিন্তা মাথায় ঘুরতে ঘুরতে কখন যে ওর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে, নাক দিয়ে গরম লার্ভার মত উত্তপ্ত নিশ্বাস বাইরে বেরিয়ে বনে দাবানল লাগিয়ে দিচ্ছে তা বংশী ভাবতেও পারেনি। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বংশী নিজের রাজপ্রাসাদের সামনে পৌঁছে যায়। বাঁদিকের চন্দ্রচুড়া গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষন জিরিয়ে নেয়। ও জানে এখন ওর একটাই কাজ নিজের শরীরের সমস্ত উত্তাপ দিয়ে মালার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া। আর মালা সেই আগুনে ঝাঁপ দিলেই ওর মুক্তি।
বংশী নিজেকে শান্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। বাঁশের বেড়ার দরজাটা টেনে খুলে সামনে ঢুকতেই ও অবাক। যে কুটীরে ও মালাকে থাকতে বলে এসেছিল তার দরজা সম্পূর্ণ খোলা। বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে ভেতরটা সম্পূর্ণ ফাঁকা। বংশীর মনের চঞ্চলতা বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে মালার কোনও বিপদ হয়নি তো। মালা কৌতূহলের বশে এসে জঙ্গলে বেরিয়ে যায়নি তো। এই জঙ্গলে তো বহু হিংস্র জানোয়ার রয়েছে। সত্যি ই যদি মালার কোনও বিপদ হয়ে যায় তাহলে ও কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। হথাত ই একটা টুং টুং করে শব্দ ভেসে আসে। এই শব্দ ওর অতি পরিচিত, মালার দুই হাতের চুড়ি ও শাখাপলাগুলো ধাক্কা খেলে এরকম শব্দ হয়। প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে দিয়ে বংশী ওখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। মালা কুটিরের পেছন থেকে বেরিয়ে এসে দীঘির দিকে যেতে শুরু করে। মালার শরীরের আলগা শাড়ির বাঁধন দেখে বংশীর বুঝতে কোনও অসুবিধা রইলনা যে মালা এই মুহূর্তে স্নান করতে যাচ্ছে। লুকিয়ে মালার শরীরটা উপভোগ করার যে অভ্যাস বংশীর মধ্যে রয়েছে তাকে বংশী কিছুতেই ছাড়তে পারেনি। অতি সন্তর্পণে ভেতরে প্রবেশ করে, একপাশ দিয়ে বংশী হেঁটে হেঁটে সোজা দীঘির কাছে পৌছায়। সামনেই একটা মোটা গাছে ছিল, ওর পেছনে নিজেকে লুকিয়ে শুধু মুখটা বাড়িয়ে মালাকে দেখতে থাকে।
প্রায় বংশীর ই সাথে সাথে মালাও ওইখানে গিয়ে পৌছায়। বংশীও লক্ষ্য করেছে মালা আজ একটু অতিরিক্তই উদাসীন। বংশী এটা চায়না, বংশী চায় ওর কাছে সেই হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মালা ধরা দিক। মালার ব্যাপারে সামান্য কোনও সমঝোতা ও করতে চায়না। আসলে শুধুই তো শরীরের খিদে নয় একটা সুপ্ত ভালোবাসাও রয়েছে বংশীর মালার প্রতি। আর সেই ভালোবাসা না থাকলে এতক্ষনে যে কতবার ও মালার এই সুস্বাদু শরীরটা হিংস্র সিংহের মত করে খেয়ে নিত তার কোনও ইয়ত্তা নেই। মালা একবার পেছন ঘুরে দরজার দিকে তাকায়। বংশী মুখটা লুকিয়ে নেয়। মনে মনে বংশী ভাবে, মেয়েদের এই লজ্জাশীলতা বড়ই অদ্ভুত, মালা জানে এই নির্জন স্থানে ওর শরীরটা দেখার মত কেউ ই নেই তাও শুধুই নিজের মনকে সন্তুষ্ট করতে পেছন ফিরে দেখা। বংশী সন্তর্পণে আবার নিজের মাথাটা বাইরে বার করে ও সামনের দিকে তাকায়। ততক্ষনে মালার দুই হাত শাড়ির মধ্যে ঢুকে বুকের দুপাশে চলে গেছে। বংশীর শরীর থেকে আগুনের ছলকা চারপাশে ছিটকে ছিটকে পড়তে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে হাতের দুই পাশ দিয়ে টেনে মালা নিজের ব্লাউজটা খুলে ফেলে। হয়ত নির্জন স্থানের ওপর অতিরিক্ত ভরসা থাকার জন্যই মালার শাড়িটা অতিরিক্ত ঢিলে হয়ে থাকে। হাত ও পেটের ফাঁক দিয়ে বিশাল তরমুজের মত গোল শুভ্র স্তনযুগল ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে চলে আসে। দীঘির জলে পা ডুবিয়ে মালা নিজের পা দুটোকে নাড়াতে থাকে। দুই হাত মুঠো করে আঁচলা করে জল নিয়ে নিজের গায়ে ছিটোতে থাকে। ধীরে ধীরে মালার বসনের সাড়ী সিক্ত হয়ে ওঠে, বুকের হলুদ কাপড়ের ওপর দিয়ে সুচাগ্র স্তনের বোঁটা দ্রিশ্যমান হয়। প্রায় ভিজে শালিকের মত কাঁপতে কাঁপতে বংশী মালার সৌন্দর্য ভোগ করতে থাকে। হথাত “আ আ ওমা বাঁচাও” বলে মালা প্রচণ্ড জোরে একটা আর্তনাদ করে ওঠে।
মালার এই আর্তনাদে বংশীর ও সম্বিত ফিরে আসে। বংশী গাছের অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসে। মালা প্রায় দিঘীর জল থেকে পা উঠিয়ে নিয়ে লাফ দিয়ে পাড়ের ওপর পড়ে। বংশী কিছুই বুঝতে পারেনা, মালার সাড়িটা বুক থেকে সরে গিয়ে কোমরের কাছে গিয়ে পড়ে। বংশী আর ওখানে থাকতে পারেনা। দৌড়ে দীঘির দিকে যেতে শুরু করে। মালা ওখানে মাটিতে পড়েই যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করে। দ্রুত বংশী মালার কাছে গিয়ে পৌছায়। বংশীকে দেখতে পেয়ে যন্ত্রণাক্লিষ্ট অবস্থাতেই মালা কোনরকমে নিজের সাড়িটা বুকে জড়িয়ে নেয়। বংশীর নজরে পড়ে মালার ডান পায়ের পাতা থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে। বংশীর আর বুঝতে কোনও অসুবিধা থাকেনা যে মালাকে সাপে কামড়েছে। যদিও জলের সাপ বিষাক্ত হয়না, তাও বংশী নিজেকে সংবরন করতে পারেনা। মালার পায়ের কাছে বসে মালার পাটা নিজের মুখের কাছে নিয়ে যায়। ভিজে কাপড়টা পা থেকে থাইএর কাছে পৌঁছে যায়। একনজর সেই শুভ্র মাংসল শরীরটার দিকে তাকিয়ে বংশী ক্ষত হওয়া অংশটায় নিজের মুখটা রাখে। প্রচণ্ড জোরে চুষে কিছুটা বদ রক্ত নিজের মুখে টেনে নেয় ও বাইরে ফেলে দেয়। বংশীর এই প্রচণ্ড জোরে চোষার কষ্টে মালা দুহাত দিয়ে বংশীর কোমরটা শক্ত করে ধরে, বংশী একবার মুখটা উঠিয়ে মালার দিকে তাকায়, যন্ত্রণায় মালা দুচোখ বন্ধ করে নিয়েছে। বংশী মালার থেকে নিজের নজরটা সরিয়ে ওর পা থেকে বদ রক্ত চুষে চুষে বাইরে ফেলতে থাকে। এরকম বেশ কিছুক্ষন চলার পর বংশীও শান্ত হয়। বংশী জানে মালা এখন নিরাপদ। বংশী আবার তাকায় মালার দিকে, মালা নিজের দুই চোখ বুজে দিয়েছে, প্রচণ্ড ক্লান্তিতে মালার শরীরটা অবশ হয়ে গেছে। শরীরের ভিজে স্বল্পবসন ওই অবস্থায় যেকোনো পুরুষের ই শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বংশী যে নিজের লক্ষ্যে অবিচল। মালাকে ও একটা ভোগ্যসামগ্রী হিসেবে নয় নিজের প্রিয়তমা হিসেবে চায়। মালার শরীরের এই কষ্ট বংশীর ও পক্ষে সহ্য করা সম্ভবপর ছিলনা। বংশী একটা হাত মালার দুই নিতম্বের কাছে রেখে আরেকটা হাত কাঁধের নিচে রেখে ওকে নিজের কোলে উঠিয়ে নেয়। মালাকে নিজের শরীরে তুলে ও চলতে থাকে কুটিরের দিকে। মালা একবার চোখ খুলে দেখে বংশীর দিকে, কিন্তু সত্যি ই তো ওর কিছুই বলার ছিলনা। এই জীর্ণ শরীর নিয়ে ওর পক্ষেও কুটির অবধি যাওয়া সম্ভবপর ছিলনা। বংশী খুব সন্তর্পণে কুটিরের মধ্যে ঢুকে আগে মালার শরীরটা মাটিতে রাখে তারপর নিজে বসে ওর মাথাটা নিজের কোলের ওপর রাখে। মালা কোনও প্রতিবাদ করেনা। হয়ত ওর প্রতিবাদ করার মত শারীরিক অবস্থাও ছিলনা। বংশী নিজের হাতটা দিয়ে মালার কপালে হাত বোলাতে শুরু করে। পুরুষ হাতের উষ্ণ স্পর্শে মালার ও সমস্ত জন্ত্রনা ধীরে ধীরে অবসান হতে শুরু করে। কোনরকমে চোখ হুলে বংশীর দিকে তাকিয়ে মালা বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, তুমি তো জমিদারবাড়ি থেকে ঘুরে এলে, উনি কেমন আছেন? উনি নিরাপদ আছেন তো?
বংশীঃ আপনি এখন বিশ্রাম করুন রানিমা, আপনার শরীর ভালো নেই।
গায়ের জোরে মালা, বংশীর কোল থেকে মাথাটা তোলে, বংশীর দিকে তাকিয়ে প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, আমি তোমার রানীমা। আমার কথার উত্তর দাও। উনি কোথায় আছেন? কেমন আছেন?
বেশ কিছুক্ষন বংশী নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, সর্বনাশ হয়ে গেছে। সিলিং সাহেব জমিদারবাবুকে তুলে নিয়ে গেছেন। টমাসকে হত্যার দায়ে ওনার বিচার হবে। হয়ত ওনার ফাঁসি হয়ে যেতে পারে।
মালার চোখদুটো বাইরে ঠিকরে বেরিয়ে আসে। বংশী হয়ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই নিজের কোমল হাতটা উঠিয়ে মালা সপাটে একটা চড় মারে বংশীর গালে। বংশী হতবম্ব হয়ে যায়। বংশীর দিকে তাকিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে মালা বলে ওঠে
মালাঃ তোমরা সবাই একেকটা কাপুরুষ। ওনাকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দিয়ে তুমি এখানে পালিয়ে এলে। এই বীরত্বের বড়াই তুমি করতে বংশী। তোমাকে দেখে আমার লজ্জা হয় বংশী, তুমি কাপুরুষ।
কাপুরুষ শব্দটা যে একজন বীরের কাছে ঠিক কতটা অপমানজনক হয় তা এর আগে সত্যি ই বংশী কখনোই বোঝেনি। রাগে ঘৃণায় বংশীর সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলতে শুরু করে। অপমান আর প্রতিশোধের আগুনে বংশীর শরীরের হৃৎস্পন্দন প্রচণ্ড জোরে হতে শুরু করে। বংশীর এই রাগ হয়ত মালা বুঝতেও পারেনি। মালা সেই আগুনে ঘি ঢালার জন্য বলে ওঠে
মালাঃ তোমাদের কিছুই করতে হবেনা। আমি নিজে যাচ্ছি। জমিদারির দায়িত্ব আমি সামলাবো। ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করে নিজের স্বামীকে আমি মুক্ত করব।
রাগের বশে মালা প্রচণ্ড জোরে ওখান থেকে উঠে চলে যেতে উদ্যত হয়, কিন্তু মালা পারেনা। মালা খেয়াল করে ওর একটা হাত প্রচণ্ড জোরে বংশী ধরে আছে। মালা এতক্ষনে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। মালা সোজা বংশীর দিকে তাকায়। বংশীর দুই চোখ দিয়ে তখন আগুন ঝরে পড়ছে। অত্যন্ত গম্ভীরভাবে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ আপনি কোথাও যাবেন না রানীমা। আপনি এখানেই থাকবেন। আমি আপনাকে স্পর্শ করে আছি। আপনাকে স্পর্শ করে আমি কথা দিলাম, যেকোনো মুল্যে আমি একটা সুখবর নিয়েই ফিরব। আর যদি আমি আপনাকে আশ্বস্ত না করতে পারি তাহলে নিজের মুণ্ডুটা কেটে আপনার পায়ের সামনে রাখবো। কিন্তু আপনি এই কুটিরের বাইরে পা রাখবেন না। কারন একমাত্র এই কুটীরেই আপনি নিরাপদ।
বংশীর চোখে পৌরুষের যে আগুন মালা পেয়েছিল তাকে অস্বীকার করার সাধ্য সামান্য এক নারীর মধ্যে ছিলনা। মালা ওখানেই বসে থাকে, বংশী উঠে দাঁড়ায়, মালার দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে পন করে- “আমি যদি সুপ্রতীককে মুক্ত করার ব্যাবস্থা না করে তোমায় স্পর্শ করি তাহলে আমি পুরুষ নই। আর এটাও আমার প্রতিজ্ঞা রইল, একবার আমি যদি ওকে ছাড়ানোর কোনও ব্যাবস্থা করতে পারি তাহলে তুমি চিরকালের জন্য আমার দাসী হয়ে যাবে। জীবনে কখনো কোনও পুরুষকে দেখলেই তুমি শুধু আমায় ই কল্পনা করবে” মালাও একদৃষ্টিতে ওই দুচোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বংশী আর ওখানে দাঁড়ায় না। সোজা হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ির দিকে চলতে শুরু করে।
জঙ্গল থেকে জমিদারবাড়ি অবধি এই লম্বা রাস্তায় ওর মাথায় শুধুই একটা কথা বারবার ঘুরছিল, যেভাবে হোক একটা ফন্দি এঁটে প্রিয়া ও গার্গীকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দেওয়া আর তার বদলে সুপ্রতীককে মুক্ত করা। তারপর হবে মালার সাথে ওর ফুলসজ্জা। আধ ঘণ্টার মধ্যে বংশী জমিদারবাড়িতে পৌঁছে যায়। জমিদারবাড়ির বাহিরমহলে তখন অজস্র লোকের ভিড়। প্রত্যেকেই যে সৈন্য তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সবারমাঝে দাঁড়িয়ে আছেন নায়েবমশাই। বংশীকে দেখামাত্র নায়েবমশাই বলে ওঠেন
নায়েবমশাইঃ এই তো বংশী এখানে। আরে বংশী, চল ভেতরে চল অনেক কথা আছে।
এই দীর্ঘ পথের ধকলে বংশী যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তাই কথা বলার মত অবস্থায় ও ছিলনা। নায়েবমশাইকে অনুসরন করে বংশী অন্দরমহলে প্রবেশ করে।
নায়েবমশাইঃ বংশী, আজি আমরা নীলকুঠি আক্রমন করব। জমিদারবাবুকে যেভাবে হোক আমাদের মুক্ত করতে হবে। অনেক কষ্টে আমি সিপাহীদের মন জয় করতে পেরেছি। ওরা আমাদের সৈন্য জোগান দিয়েছে, ওদের কাছে রাইফেল আছে, পিস্তল আছে। আর কোনও চিন্তা নেই বংশী। আমরা যুদ্ধে জিতবই। আর জানো এই যুদ্ধের সেনাপতি কে হবে? তুমি। জমিদারবাবু জঙ্গলের মধ্যে থেকে এনে তোমাদের সম্মান দিয়েছেন, আজ সব ফিরিয়ে দেওয়ার সময় বংশী।
বংশীর সম্বিত ফিরে আসে। নায়েবমশাই এর দিকে তাকিয়ে বলে
বংশীঃ প্রিয়া দিদি, গার্গী দিদি নিরাপদে আছেন তো?
কথাটা শুনে নায়েবমশাই কিছুটা গম্ভীর হয়ে যান। বংশীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে ওঠেন
নায়েবমশাইঃ বংশী, প্রিয়া গার্গীমা আমার বাড়িতে নেই। জমিদারবাবু ওদের কোনও গুপ্তস্থানে লুকিয়েছেন। ১০ জন পুরনো পেয়াদা ওদের দায়িত্বে আছে। ওরা কোথায় আছে তা কেউ জানেনা, আমিও না।
বংশীর মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে। শুধু মালাকে পাওয়ার জন্য নয়, জমিদারিকে পেতে গেলেও ওকে প্রিয়া আর গার্গীকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দিতে হত। চেঁচিয়ে বলে ওঠে বংশী “জমিদারবাবু কি আমাদের অবিশ্বাস করেন?” ওপাশ থেকে একটা বুদ্ধিমান হাসির সাথে উত্তর আসে “হয়ত করেন” আগামিকাল সিলিং সাহেবের মুখের ওই সন্দেহের হাসি আর নায়েবমশাই এর হাসি কেমন যেন অনুরুপ লাগে বংশীর। মানুষের ৫ টা ইন্দ্রিয় বাদ দিয়ে আরেকটা ইন্দ্রিয় থাকে তা হোল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়, সে যেন বলে ওঠে “সাবধান বংশী, খেলা ঘুরছে, যা দেখছিস যা ভাবছিস হয়ত সেটা একটা অলীক কল্পনা। পাশা খেলায় সেই যেতে যে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়। আর বুদ্ধিমান কখনো আত্মবিশ্বাসী হয়না।” বংশীর মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে। সমস্ত হিসেবনিকেশ ওলটপালট হয়ে যেতে থাকে।
মহুয়া পানের অভ্যাস যে বহুদিন চলে গেছে তা বংশী প্রতি পদে পদে অনুভব করতে থাকে। বংশী নিজেও বোঝে যে ওর চলন মোটেও সরলরেখায় হচ্ছেনা। কোনরকমে ৩ টে গ্রাম এঁকে বেঁকে পার করে বংশী জঙ্গলে প্রবেশ করে। এই জঙ্গল ওর, ও এখানের একচ্ছত্র রাজা। চারপাশে একটা খসখস করে শব্দ ভেসে আসছে। বংশী জানে ওর ভয়াল রূপটা এই জঙ্গলের প্রতিটি হিংস্র জানোয়ার ই চেনে। এই জঙ্গলের সবচেয়ে হিংস্র জানোয়ার ও নিজেই, এবং এই মুহূর্তে ও নিজের শিকারের খোঁজে চলেছে। চোখের সামনে একটাই লক্ষ্য, একটাই ছবি নীল ব্লাউজ আর হলুদ সাড়ি পরিহিত মালা। কিছুক্ষন আগেই ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে সাদা নিটোল স্তনজোড়া ও লক্ষ্য করেছিল, ওর শরীরে যে আগুন জ্বলেনি তা নয়, দাউদাউ করে আগুন জ্বলেছিল। কিন্তু সেই আগুনে ও নিজেই জল ঢেলে দিয়েছে। আসলে মালাকে ও গায়ের জোরে পেতে চায়না। একটা বারের জন্য মালার শরীরটা ভোগ করা ওর উদ্যেশ্য নয়। ও চায় রাজা হতে আর মালা হবে ওর রানী। রাজকাজ সম্পন্ন করে যখন বংশী রাজপ্রাসাদে ফিরে যাবে তখন মালা ছোট একটা কাপড় দিয়ে নিজের শরীরটা কোনরকমে জড়িয়ে ওর জন্য বাগানের সামনে অপেক্ষা করে থাকবে। স্বল্পবসনা মালাকে দেখতে পেয়েই বংশী ছুটে যাবে, এক টানে ওর শরীর থেকে কাপড়টা খুলে বাগানের ভেতর ছুঁড়ে ফেলে দেবে। লজ্জায় মালার দুই কান লাল হয়ে যাবে, কোনরকমে দুই হাত দিয়ে নিজের লজ্জা নিবারন করে মালা ছুটে যাবে বাড়ীর ভেতরে। মালাকে স্পর্শ করার জন্য বংশীও ওর পেছনে ছুটতে শুরু করবে। এই সমস্ত রাজকীয় চিন্তা মাথায় ঘুরতে ঘুরতে কখন যে ওর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে, নাক দিয়ে গরম লার্ভার মত উত্তপ্ত নিশ্বাস বাইরে বেরিয়ে বনে দাবানল লাগিয়ে দিচ্ছে তা বংশী ভাবতেও পারেনি। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বংশী নিজের রাজপ্রাসাদের সামনে পৌঁছে যায়। বাঁদিকের চন্দ্রচুড়া গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষন জিরিয়ে নেয়। ও জানে এখন ওর একটাই কাজ নিজের শরীরের সমস্ত উত্তাপ দিয়ে মালার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া। আর মালা সেই আগুনে ঝাঁপ দিলেই ওর মুক্তি।
বংশী নিজেকে শান্ত করে সামনে এগিয়ে যায়। বাঁশের বেড়ার দরজাটা টেনে খুলে সামনে ঢুকতেই ও অবাক। যে কুটীরে ও মালাকে থাকতে বলে এসেছিল তার দরজা সম্পূর্ণ খোলা। বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে ভেতরটা সম্পূর্ণ ফাঁকা। বংশীর মনের চঞ্চলতা বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে মালার কোনও বিপদ হয়নি তো। মালা কৌতূহলের বশে এসে জঙ্গলে বেরিয়ে যায়নি তো। এই জঙ্গলে তো বহু হিংস্র জানোয়ার রয়েছে। সত্যি ই যদি মালার কোনও বিপদ হয়ে যায় তাহলে ও কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। হথাত ই একটা টুং টুং করে শব্দ ভেসে আসে। এই শব্দ ওর অতি পরিচিত, মালার দুই হাতের চুড়ি ও শাখাপলাগুলো ধাক্কা খেলে এরকম শব্দ হয়। প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে দিয়ে বংশী ওখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। মালা কুটিরের পেছন থেকে বেরিয়ে এসে দীঘির দিকে যেতে শুরু করে। মালার শরীরের আলগা শাড়ির বাঁধন দেখে বংশীর বুঝতে কোনও অসুবিধা রইলনা যে মালা এই মুহূর্তে স্নান করতে যাচ্ছে। লুকিয়ে মালার শরীরটা উপভোগ করার যে অভ্যাস বংশীর মধ্যে রয়েছে তাকে বংশী কিছুতেই ছাড়তে পারেনি। অতি সন্তর্পণে ভেতরে প্রবেশ করে, একপাশ দিয়ে বংশী হেঁটে হেঁটে সোজা দীঘির কাছে পৌছায়। সামনেই একটা মোটা গাছে ছিল, ওর পেছনে নিজেকে লুকিয়ে শুধু মুখটা বাড়িয়ে মালাকে দেখতে থাকে।
প্রায় বংশীর ই সাথে সাথে মালাও ওইখানে গিয়ে পৌছায়। বংশীও লক্ষ্য করেছে মালা আজ একটু অতিরিক্তই উদাসীন। বংশী এটা চায়না, বংশী চায় ওর কাছে সেই হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল মালা ধরা দিক। মালার ব্যাপারে সামান্য কোনও সমঝোতা ও করতে চায়না। আসলে শুধুই তো শরীরের খিদে নয় একটা সুপ্ত ভালোবাসাও রয়েছে বংশীর মালার প্রতি। আর সেই ভালোবাসা না থাকলে এতক্ষনে যে কতবার ও মালার এই সুস্বাদু শরীরটা হিংস্র সিংহের মত করে খেয়ে নিত তার কোনও ইয়ত্তা নেই। মালা একবার পেছন ঘুরে দরজার দিকে তাকায়। বংশী মুখটা লুকিয়ে নেয়। মনে মনে বংশী ভাবে, মেয়েদের এই লজ্জাশীলতা বড়ই অদ্ভুত, মালা জানে এই নির্জন স্থানে ওর শরীরটা দেখার মত কেউ ই নেই তাও শুধুই নিজের মনকে সন্তুষ্ট করতে পেছন ফিরে দেখা। বংশী সন্তর্পণে আবার নিজের মাথাটা বাইরে বার করে ও সামনের দিকে তাকায়। ততক্ষনে মালার দুই হাত শাড়ির মধ্যে ঢুকে বুকের দুপাশে চলে গেছে। বংশীর শরীর থেকে আগুনের ছলকা চারপাশে ছিটকে ছিটকে পড়তে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে হাতের দুই পাশ দিয়ে টেনে মালা নিজের ব্লাউজটা খুলে ফেলে। হয়ত নির্জন স্থানের ওপর অতিরিক্ত ভরসা থাকার জন্যই মালার শাড়িটা অতিরিক্ত ঢিলে হয়ে থাকে। হাত ও পেটের ফাঁক দিয়ে বিশাল তরমুজের মত গোল শুভ্র স্তনযুগল ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে চলে আসে। দীঘির জলে পা ডুবিয়ে মালা নিজের পা দুটোকে নাড়াতে থাকে। দুই হাত মুঠো করে আঁচলা করে জল নিয়ে নিজের গায়ে ছিটোতে থাকে। ধীরে ধীরে মালার বসনের সাড়ী সিক্ত হয়ে ওঠে, বুকের হলুদ কাপড়ের ওপর দিয়ে সুচাগ্র স্তনের বোঁটা দ্রিশ্যমান হয়। প্রায় ভিজে শালিকের মত কাঁপতে কাঁপতে বংশী মালার সৌন্দর্য ভোগ করতে থাকে। হথাত “আ আ ওমা বাঁচাও” বলে মালা প্রচণ্ড জোরে একটা আর্তনাদ করে ওঠে।
মালার এই আর্তনাদে বংশীর ও সম্বিত ফিরে আসে। বংশী গাছের অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসে। মালা প্রায় দিঘীর জল থেকে পা উঠিয়ে নিয়ে লাফ দিয়ে পাড়ের ওপর পড়ে। বংশী কিছুই বুঝতে পারেনা, মালার সাড়িটা বুক থেকে সরে গিয়ে কোমরের কাছে গিয়ে পড়ে। বংশী আর ওখানে থাকতে পারেনা। দৌড়ে দীঘির দিকে যেতে শুরু করে। মালা ওখানে মাটিতে পড়েই যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করে। দ্রুত বংশী মালার কাছে গিয়ে পৌছায়। বংশীকে দেখতে পেয়ে যন্ত্রণাক্লিষ্ট অবস্থাতেই মালা কোনরকমে নিজের সাড়িটা বুকে জড়িয়ে নেয়। বংশীর নজরে পড়ে মালার ডান পায়ের পাতা থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে। বংশীর আর বুঝতে কোনও অসুবিধা থাকেনা যে মালাকে সাপে কামড়েছে। যদিও জলের সাপ বিষাক্ত হয়না, তাও বংশী নিজেকে সংবরন করতে পারেনা। মালার পায়ের কাছে বসে মালার পাটা নিজের মুখের কাছে নিয়ে যায়। ভিজে কাপড়টা পা থেকে থাইএর কাছে পৌঁছে যায়। একনজর সেই শুভ্র মাংসল শরীরটার দিকে তাকিয়ে বংশী ক্ষত হওয়া অংশটায় নিজের মুখটা রাখে। প্রচণ্ড জোরে চুষে কিছুটা বদ রক্ত নিজের মুখে টেনে নেয় ও বাইরে ফেলে দেয়। বংশীর এই প্রচণ্ড জোরে চোষার কষ্টে মালা দুহাত দিয়ে বংশীর কোমরটা শক্ত করে ধরে, বংশী একবার মুখটা উঠিয়ে মালার দিকে তাকায়, যন্ত্রণায় মালা দুচোখ বন্ধ করে নিয়েছে। বংশী মালার থেকে নিজের নজরটা সরিয়ে ওর পা থেকে বদ রক্ত চুষে চুষে বাইরে ফেলতে থাকে। এরকম বেশ কিছুক্ষন চলার পর বংশীও শান্ত হয়। বংশী জানে মালা এখন নিরাপদ। বংশী আবার তাকায় মালার দিকে, মালা নিজের দুই চোখ বুজে দিয়েছে, প্রচণ্ড ক্লান্তিতে মালার শরীরটা অবশ হয়ে গেছে। শরীরের ভিজে স্বল্পবসন ওই অবস্থায় যেকোনো পুরুষের ই শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বংশী যে নিজের লক্ষ্যে অবিচল। মালাকে ও একটা ভোগ্যসামগ্রী হিসেবে নয় নিজের প্রিয়তমা হিসেবে চায়। মালার শরীরের এই কষ্ট বংশীর ও পক্ষে সহ্য করা সম্ভবপর ছিলনা। বংশী একটা হাত মালার দুই নিতম্বের কাছে রেখে আরেকটা হাত কাঁধের নিচে রেখে ওকে নিজের কোলে উঠিয়ে নেয়। মালাকে নিজের শরীরে তুলে ও চলতে থাকে কুটিরের দিকে। মালা একবার চোখ খুলে দেখে বংশীর দিকে, কিন্তু সত্যি ই তো ওর কিছুই বলার ছিলনা। এই জীর্ণ শরীর নিয়ে ওর পক্ষেও কুটির অবধি যাওয়া সম্ভবপর ছিলনা। বংশী খুব সন্তর্পণে কুটিরের মধ্যে ঢুকে আগে মালার শরীরটা মাটিতে রাখে তারপর নিজে বসে ওর মাথাটা নিজের কোলের ওপর রাখে। মালা কোনও প্রতিবাদ করেনা। হয়ত ওর প্রতিবাদ করার মত শারীরিক অবস্থাও ছিলনা। বংশী নিজের হাতটা দিয়ে মালার কপালে হাত বোলাতে শুরু করে। পুরুষ হাতের উষ্ণ স্পর্শে মালার ও সমস্ত জন্ত্রনা ধীরে ধীরে অবসান হতে শুরু করে। কোনরকমে চোখ হুলে বংশীর দিকে তাকিয়ে মালা বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, তুমি তো জমিদারবাড়ি থেকে ঘুরে এলে, উনি কেমন আছেন? উনি নিরাপদ আছেন তো?
বংশীঃ আপনি এখন বিশ্রাম করুন রানিমা, আপনার শরীর ভালো নেই।
গায়ের জোরে মালা, বংশীর কোল থেকে মাথাটা তোলে, বংশীর দিকে তাকিয়ে প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে ওঠে
মালাঃ বংশী, আমি তোমার রানীমা। আমার কথার উত্তর দাও। উনি কোথায় আছেন? কেমন আছেন?
বেশ কিছুক্ষন বংশী নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, সর্বনাশ হয়ে গেছে। সিলিং সাহেব জমিদারবাবুকে তুলে নিয়ে গেছেন। টমাসকে হত্যার দায়ে ওনার বিচার হবে। হয়ত ওনার ফাঁসি হয়ে যেতে পারে।
মালার চোখদুটো বাইরে ঠিকরে বেরিয়ে আসে। বংশী হয়ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই নিজের কোমল হাতটা উঠিয়ে মালা সপাটে একটা চড় মারে বংশীর গালে। বংশী হতবম্ব হয়ে যায়। বংশীর দিকে তাকিয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে মালা বলে ওঠে
মালাঃ তোমরা সবাই একেকটা কাপুরুষ। ওনাকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দিয়ে তুমি এখানে পালিয়ে এলে। এই বীরত্বের বড়াই তুমি করতে বংশী। তোমাকে দেখে আমার লজ্জা হয় বংশী, তুমি কাপুরুষ।
কাপুরুষ শব্দটা যে একজন বীরের কাছে ঠিক কতটা অপমানজনক হয় তা এর আগে সত্যি ই বংশী কখনোই বোঝেনি। রাগে ঘৃণায় বংশীর সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলতে শুরু করে। অপমান আর প্রতিশোধের আগুনে বংশীর শরীরের হৃৎস্পন্দন প্রচণ্ড জোরে হতে শুরু করে। বংশীর এই রাগ হয়ত মালা বুঝতেও পারেনি। মালা সেই আগুনে ঘি ঢালার জন্য বলে ওঠে
মালাঃ তোমাদের কিছুই করতে হবেনা। আমি নিজে যাচ্ছি। জমিদারির দায়িত্ব আমি সামলাবো। ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করে নিজের স্বামীকে আমি মুক্ত করব।
রাগের বশে মালা প্রচণ্ড জোরে ওখান থেকে উঠে চলে যেতে উদ্যত হয়, কিন্তু মালা পারেনা। মালা খেয়াল করে ওর একটা হাত প্রচণ্ড জোরে বংশী ধরে আছে। মালা এতক্ষনে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। মালা সোজা বংশীর দিকে তাকায়। বংশীর দুই চোখ দিয়ে তখন আগুন ঝরে পড়ছে। অত্যন্ত গম্ভীরভাবে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ আপনি কোথাও যাবেন না রানীমা। আপনি এখানেই থাকবেন। আমি আপনাকে স্পর্শ করে আছি। আপনাকে স্পর্শ করে আমি কথা দিলাম, যেকোনো মুল্যে আমি একটা সুখবর নিয়েই ফিরব। আর যদি আমি আপনাকে আশ্বস্ত না করতে পারি তাহলে নিজের মুণ্ডুটা কেটে আপনার পায়ের সামনে রাখবো। কিন্তু আপনি এই কুটিরের বাইরে পা রাখবেন না। কারন একমাত্র এই কুটীরেই আপনি নিরাপদ।
বংশীর চোখে পৌরুষের যে আগুন মালা পেয়েছিল তাকে অস্বীকার করার সাধ্য সামান্য এক নারীর মধ্যে ছিলনা। মালা ওখানেই বসে থাকে, বংশী উঠে দাঁড়ায়, মালার দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে পন করে- “আমি যদি সুপ্রতীককে মুক্ত করার ব্যাবস্থা না করে তোমায় স্পর্শ করি তাহলে আমি পুরুষ নই। আর এটাও আমার প্রতিজ্ঞা রইল, একবার আমি যদি ওকে ছাড়ানোর কোনও ব্যাবস্থা করতে পারি তাহলে তুমি চিরকালের জন্য আমার দাসী হয়ে যাবে। জীবনে কখনো কোনও পুরুষকে দেখলেই তুমি শুধু আমায় ই কল্পনা করবে” মালাও একদৃষ্টিতে ওই দুচোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বংশী আর ওখানে দাঁড়ায় না। সোজা হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে জমিদার বাড়ির দিকে চলতে শুরু করে।
জঙ্গল থেকে জমিদারবাড়ি অবধি এই লম্বা রাস্তায় ওর মাথায় শুধুই একটা কথা বারবার ঘুরছিল, যেভাবে হোক একটা ফন্দি এঁটে প্রিয়া ও গার্গীকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দেওয়া আর তার বদলে সুপ্রতীককে মুক্ত করা। তারপর হবে মালার সাথে ওর ফুলসজ্জা। আধ ঘণ্টার মধ্যে বংশী জমিদারবাড়িতে পৌঁছে যায়। জমিদারবাড়ির বাহিরমহলে তখন অজস্র লোকের ভিড়। প্রত্যেকেই যে সৈন্য তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সবারমাঝে দাঁড়িয়ে আছেন নায়েবমশাই। বংশীকে দেখামাত্র নায়েবমশাই বলে ওঠেন
নায়েবমশাইঃ এই তো বংশী এখানে। আরে বংশী, চল ভেতরে চল অনেক কথা আছে।
এই দীর্ঘ পথের ধকলে বংশী যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তাই কথা বলার মত অবস্থায় ও ছিলনা। নায়েবমশাইকে অনুসরন করে বংশী অন্দরমহলে প্রবেশ করে।
নায়েবমশাইঃ বংশী, আজি আমরা নীলকুঠি আক্রমন করব। জমিদারবাবুকে যেভাবে হোক আমাদের মুক্ত করতে হবে। অনেক কষ্টে আমি সিপাহীদের মন জয় করতে পেরেছি। ওরা আমাদের সৈন্য জোগান দিয়েছে, ওদের কাছে রাইফেল আছে, পিস্তল আছে। আর কোনও চিন্তা নেই বংশী। আমরা যুদ্ধে জিতবই। আর জানো এই যুদ্ধের সেনাপতি কে হবে? তুমি। জমিদারবাবু জঙ্গলের মধ্যে থেকে এনে তোমাদের সম্মান দিয়েছেন, আজ সব ফিরিয়ে দেওয়ার সময় বংশী।
বংশীর সম্বিত ফিরে আসে। নায়েবমশাই এর দিকে তাকিয়ে বলে
বংশীঃ প্রিয়া দিদি, গার্গী দিদি নিরাপদে আছেন তো?
কথাটা শুনে নায়েবমশাই কিছুটা গম্ভীর হয়ে যান। বংশীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে ওঠেন
নায়েবমশাইঃ বংশী, প্রিয়া গার্গীমা আমার বাড়িতে নেই। জমিদারবাবু ওদের কোনও গুপ্তস্থানে লুকিয়েছেন। ১০ জন পুরনো পেয়াদা ওদের দায়িত্বে আছে। ওরা কোথায় আছে তা কেউ জানেনা, আমিও না।
বংশীর মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে। শুধু মালাকে পাওয়ার জন্য নয়, জমিদারিকে পেতে গেলেও ওকে প্রিয়া আর গার্গীকে সিলিং সাহেবের হাতে তুলে দিতে হত। চেঁচিয়ে বলে ওঠে বংশী “জমিদারবাবু কি আমাদের অবিশ্বাস করেন?” ওপাশ থেকে একটা বুদ্ধিমান হাসির সাথে উত্তর আসে “হয়ত করেন” আগামিকাল সিলিং সাহেবের মুখের ওই সন্দেহের হাসি আর নায়েবমশাই এর হাসি কেমন যেন অনুরুপ লাগে বংশীর। মানুষের ৫ টা ইন্দ্রিয় বাদ দিয়ে আরেকটা ইন্দ্রিয় থাকে তা হোল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়, সে যেন বলে ওঠে “সাবধান বংশী, খেলা ঘুরছে, যা দেখছিস যা ভাবছিস হয়ত সেটা একটা অলীক কল্পনা। পাশা খেলায় সেই যেতে যে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হয়। আর বুদ্ধিমান কখনো আত্মবিশ্বাসী হয়না।” বংশীর মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে। সমস্ত হিসেবনিকেশ ওলটপালট হয়ে যেতে থাকে।