19-01-2019, 09:39 AM
পর্ব ২২- সুরঙ্গের অন্তরালেঃ
বংশীঃ আমি একবার এই সুরঙ্গের ব্যাপারে শুনেছিলাম, কিন্তু এটা যে একদম জমিদারবাড়ির ভেতরেই রয়েছে তা আমার জানা ছিলনা। যাই হোক, এই মুহূর্তে আমাদের লোকবলের বিশাল প্রয়োজন। এবং তারসাথে সিপাহীদের সাহায্যর ও খুব দরকার। সিলিং সাহেব আপনাকে আক্রমন করলে সিপাহীরা নিজের থেকেই এগিয়ে আসবে। ওরাও তো একটা যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করে আছে। আপনি কোনও চিন্তা করবেন না, আমি আমার তরফ থেকে সেরা প্রচেষ্টাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
সুপ্রতীকঃ মুশকিল একটাই জায়গায় তা হোল লোকবল। এই এতো কমসময়ে আমরা কি করে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় লোক জোগাড় করব।
বংশীঃ জমিদারবাবু এই দায়িত্বটাও আপনি আমায় দিতে পারেন। একসময় আমি জঙ্গলের একচ্ছত্র সম্রাট ছিলাম। সেই দরুন আমার দলে এমন অনেক যোদ্ধাই ছিল যারা লড়াই করতে পিছপা হবেনা। আমায় আপনি একটা ঘণ্টা সময় দিন, আমি আবার নিজের সেই পুরনো দলটা ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আপনি অনুমতি দিলে আমি এখনি বেরিয়ে যাবো।
সুপ্রতীক মাথা নেড়ে নিজের সম্মতি ব্যাক্ত করে। বংশীও আর দেরি না করে বেরিয়ে যায়। বংশী বুঝে গেছে আগুন জ্বলার সমস্ত উপকরন ই মজুদ রয়েছে। শুধু একটা মাচিসের খস করে শব্দ হওয়া বাকি আছে। আর বংশী সেই মাচিসের কাঠিটা নীলকুঠিতেই ফেলতে চায়, আগুনটা ওখানেই আগে জ্বলুক আর তারপর সেই আগুনের রোষে সুপ্রতীক জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। বংশী প্রচণ্ড জোরে হাঁটতে হাঁটতে নীলকুঠীর দিকেই এগিয়ে যায়। নীলকুঠিতে তখন টমাসের শবকে সমাধিস্থ করার বন্দবস্ত করা হচ্ছে। সবাই থাকলেও ওই স্থানে সিলিং সাহেব উপস্থিত ছিলনা। বংশী ভেতরে প্রবেশ করে সোজা ঘরের দিকে চলে যায়। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল টেবিলের ওপর মাথা রেখে সিলিং সাহেব বসে আছেন। হয়ত উনি কাঁদছেন। বংশীর কিছুটা ভয় ই করছিল, তবুও সাহস করে বংশী দরজার বাইরে থেকে মৃদুগলায় বলে ওঠে “সিলিং সাহেব আমি বংশী” টেবিল থেকে মাথাটা উঠিয়ে সিলিং সাহেব বংশীর দিকে তাকান। সিলিং সাহেব যে ওকে দেখে এরকম রুদ্রমূর্তি ধারন করবে তা ও বুঝতেও পারেনি। প্রায় ঝড়ের বেগে ছুটে এসে সিলিং সাহেব বংশীর জামাটা ধরে একটানে ওকে নিচে ফেলে দেয়। বংশী কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সেই সুযোগ ও পায়না, বংশীর টুঁটিটা প্রচণ্ড জোরে টিপে ধরে সিলিং সাহেব বলে ওঠেন
সিলিং সাহেবঃ বল শুয়ারের বাচ্চা, কে মেরেছে আমার ভাইকে। বল নয়ত তোকে এখানেই মেরে ফেলব।
কোনওরকমে বংশী নিজেকে সিলিং সাহেবের কবল থেকে মুক্ত করে বলে ওঠে
বংশীঃ আপনি আমায় সন্দেহ করছেন সাহেব, এতদিন ধরে আমি আপনাকে কত ভেতরের কথা জানিয়ে এলাম। আজ ও তো আমি আপনাকে সবকথা খুলে বলতেই এখানে এসেছি। আমার হাতে বেশি সময় নেই। কেউ যদি জানতে পারে আমি নীলকুঠিতে এসেছি তাহলে আর আমার শরীরে প্রান থাকবে না। আপনি আমায় ছারলে আমি সব খুলে বলব আপনাকে।
বংশীর কথায় সিলিং সাহেবের মেজাজ একটু পরিবর্তন হয়। ওকে ছেড়ে দিয়ে উনি আবার চেয়ারের ওপর গিয়ে বসেন।
বংশীঃ জমিদারবাড়ির ই একদাসি টমাসকে একটা সোনার মুদ্রা দেখিয়ে বলেছিল এটা গুপ্তধন। সেই গুপ্তধনের লোভেই টমাস কাল রাতে ওখানে গেছিল। জমিদারবাড়ির ই কোনও এক লাঠিয়াল এরপর এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। সমস্ত পরিকল্পনাই সুপ্রতীকের। এইভাবে ও প্রজাদের কাছে নিজের সম্মানটা আবার ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছে। আমি কিছুই জানতাম না, আমি তো কাল গ্রামে ছিলাম। আমি জানলে কি আর এতো বড় সর্বনাশ হতে দিতাম। (দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে একটা মেকি কান্নার চেষ্টা করে বংশী)
সিলিং সাহেবঃ (প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে) আমি জমিদারের মাথা শরীর থেকে আলাদা করে দেবো। ওই জানোয়ারটাকে আমি সবার সামনে হত্যা করব।
বংশীঃ সাহেব, আপনার সামনে একটা সামান্য জমিদার কি আর জিনিস। ওকে হত্যা করলেই কি আপনার সব শোধ মিটে যাবে। আপনার জন্য দারুন একটা খাবার আছে। আজ্ঞা করলে বলব আপনাকে। (চোখের ইশারায় কিছুটা অশ্লীলতা প্রকাশ করে)
সিলিং সাহেব নিজেকে শান্ত করে বংশীর দিকে তাকায়।
বংশীঃ কাল বিকেলে জমিদারের দুই বোন এখানে এসেছে। প্রিয়া ও গার্গী, যমজ দুই বোন। ওদের দেখলে আপনি বলতেই পারবেন না যে ওরা এদেশের মেয়ে। মনে হবে আপনাদের ই জাতের কোনও মেম সাহেব বুঝি। আপনি কি চান তা তো আমি বুঝি, তাই বলছিলাম নীলকুঠিতে ওই দুই অপ্সরাকে নিয়ে আসুন। সমস্ত রাগ জ্বালা জুড়িয়ে যাবে। পরিবারের সম্মানে জমিদার ও কখনো প্রকাশ্যে বলতে পারবেনা যে ওর দুই বোন আপনার কব্জায় রয়েছে।
সিলিং সাহেবের মুখে কামুক শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। বংশীর ও এটা বুঝতে আর কোনও অসুবিধা থাকেনা যে ওর শেষ পরিকল্পনাটা ১০০ শতাংশ সফল। বংশীও কিছুটা বাঁকা হাসি হেঁসে বলে ওঠে
বংশীঃ আমি ও আমার লাঠিয়ালরা শুধুই একটা লড়াই করার অভিনয় করব। আপনি জমিদারবাড়ি আক্রমন করুন, এবং দুই অপ্সরাকে নীলকুঠিতে এনে ভোগ করুন। আমার তাতে কোনও মাথাব্যাথা নেই। এবার আমায় যেতে আজ্ঞা করুন।
সিলিং সাহেবের মাথা নাড়ার ভঙ্গী দেখে বংশী উঠে পড়ে ও প্রস্থান করার জন্য দরজার দিকে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে সিলিং সাহেব বলে ওঠে
সিলিং সাহেবঃ বংশী, টমাসকে খুনটা কে করেছে?
সিলিং সাহেবের কথা শুনে বংশী কিছুটা চমকেই যায়। বংশী পেছন ঘুরে দেখে একবার। সিলিং সাহেব ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সিলিং সাহেবঃ তুমি যে এতকিছু করছ, মানে জমিদারের সাথে বেইমানি করে আমার অনুগত হচ্ছ, এতে তোমার কি লাভ?
সিলিং সাহেবের প্রশ্নগুলো বংশীকে একদম ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। কোনরকমে নিজেকে শান্ত করে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ আজ্ঞে, আমি তো আপনাকে বহুবার বলেছি যে জমিদারির অত্যাচার আমরা অনেকেই ভুলতে পারিনি। তাইতো ডাকাত হওয়া, তারপর আপনার সাথে সাক্ষাত হওয়া। আপনার ই আদেশে তো আমি নিজেকে জমিদারবাড়ির অনুগত প্রমান করেছি।
সিলিং সাহেব প্রচণ্ড জোরে হা হা করে হেঁসে ওঠেন আর ইশারা করে বংশীকে চলে যেতে নির্দেশ দেন। বংশীর সেই আত্মবিশ্বাস কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বারবার করে ভাবতে থাকে ওর পরিকল্পনায় কোনও ত্রুটি রয়ে গেছে কিনা। টমাসকে যে বংশী নিজের হাতে হত্যা করেছে এব্যাপারে তো কেউ কিছুই জানেনা। সিলিং সাহেবের সন্দেহের তীর যে বংশীর ও দিকে রয়েছে তা বংশীও খুব ভালো করে বুঝেছে। বহুকষ্টে বংশী সব ভুলে গ্রামের দিকে এগিয়ে যায়। ওর ডাকাত দলের বহু সাথী রয়েছে যারা বংশীর এক কথায় লড়াই করতে রাজি হয়ে যাবে। তাদের প্রায় সকলেই এখন ডাকাত দল ছেড়ে সুখি সংসার জীবন পালন করছে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে বংশী নিজের সমস্ত পুরনো সাথীকে একত্রিত করে তোলে। ওদের নিজের পরিকল্পনা ও জমিদারের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিশোধ নিতে হবে সব বুঝিয়ে বলে। বংশী সবাইকে নিয়ে আবার জমিদারবাড়ির দিকে চলতে শুরু করে।
অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই বংশী নিজের সাথীদের নিয়ে জমিদারবাড়িতে প্রবেশ করে। বাইরে তখন সার দিয়ে লাঠিয়ালরা দাঁড়িয়ে ছিল। সবাইকে ওখানে রেখেই বংশী অন্দরমহলে প্রবেশ করে। অন্দরমহলে সুপ্রতীক, নায়েবমশাই ও মালা কোনও ব্যাপারে গভীরভাবে আলোচনা করে যাচ্ছিল। দূর থেকে বংশীর মনে হয় সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই মালাকে কিছু বোঝানোর জন্য আকুতি মিনতি করে চলেছেন। মালা ছলছল চোখে মাথা নাড়িয়ে না বলে চলেছে। বংশী ধীরে ধীরে ওদের কাছে এগিয়ে যায়।
সুপ্রতীকঃ এই তো বংশী এসে গেছে। বংশী, কতজন লোক জোগাড় করতে পারলে?
বংশীঃ আজ্ঞে, জমিদারবাবু তা শ দেড়েক লোক হবে। ওরা একসময় আমার সাথী ছিল, ওদের আপনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারেন।
সুপ্রতীকঃ (বংশীর দিকে চোখ টিপে, মিথ্যে বলার অভিনয় করে) দেখো বংশী, যুদ্ধ কোনমতেই হবেনা। যতই হোক দেশে একটা আইন কানুন রয়েছে। এইসময় সিপাহীদের বিদ্রোহে ইংরেজরা যথেষ্ট বিপদে পড়েছে। তাই ওরা কোনমতেই যুদ্ধ করতে চাইবেনা। তবুও আমি চাইনা, এই বিপদের মধ্যে বাড়ির মেয়েদের রাখতে। গার্গী আর প্রিয়াকে আমি নায়েবমশাই এর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আচ্ছা বংশী, তুমি আমায় একবার বলেছিলে না যে জঙ্গলের মধ্যে তোমার কিছু কুঠির রয়েছে। আমি সেখানেই সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে মালাকে রাখতে চাই। এদিকটা একটু শান্ত হয়ে গেলে আবার ওকে নিয়ে আসব। তুমি সাথে আরও ২-৩ জনকে নিয়ে ওর দেখভাল করবে। দেখো মালার সামান্য কোনও অসুবিধা হলে আমি কিন্তু তোমার গর্দান কেটে নেবো।
সুপ্রতীকের কথার জবাবে বংশী কিছু হয়ত বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মালা বাধা দেয়। মালা বলে ওঠে
মালাঃ আমি আপনাকে বিপদে ফেলে কোথাও যাবনা। আপনি আমার প্রান নিয়ে নিন, তাও আমি যাবনা।
সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই এর মুখের হতাশা দেখে বংশী বুঝতে পারে মালাকে বোঝানোর কাজটা অনেকক্ষণ ধরেই চলে আসছে। মালার দিকে তাকিয়ে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ রানিমা, আপনি এখানে থাকুন। কিন্তু যদি যুদ্ধ শুরু হয় তখন সত্যি ই আপনার জমিদারবাড়ি ত্যাগ করা উচিত। আপনি একটু বুঝে দেখুন, আমরা জমিদারবাবুর সাথে সাথে যদি আপনাকে নিয়েও চিন্তা করি তাহলে কাজটা আমাদের জন্য প্রচণ্ড কঠিন হয়ে যাবে। আপনি এখন থাকুন আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। দয়া করে আমার কথাগুলো একটু বুঝুন। আপনি কি মনে করেন আমরা জমিদারবাবুকে যুদ্ধ করতে দেবো। যদি বুঝি আমরা কোনমতেই পেরে উঠছি না তাহলে আপনার মত জমিদারবাবুকেও সুরঙ্গপথ দিয়ে জঙ্গলে পাঠিয়ে দেবো। আমাদের শরীরে প্রান থাকতে উনি নিরাপদ থাকবেন। আমি আপনাকে কথা দিলাম রানিমা।
সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই দুজনেই অবাক হয়ে গেলেন, কারন এতক্ষন ধরে যে অসাধ্যসাধনের চেষ্টা ওনারা অক্রে চলেছেন, বংশী সে ব্যাপারে অনেকটাই সফল। বংশীর কথা শুনে মালা একটু শান্ত হয় এবং ভেতরে প্রবেশ করে। মালাকে ভেতরে যেতে দেখে সুপ্রতীক একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে।
সুপ্রতীকঃ চল বংশী, বৈঠকখানায় বসা যাক। আমাদের তৈরি হতে হবে।
বংশী, নায়েবমশাই ও সুপ্রতীক প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বৈঠকখানায় বসে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করার ও সিপাহিদের মনোযোগ আকর্ষণ করার পরিকল্পনা করেন। হথাত করে বাইরে থেকে গুলি চলার একটা আওয়াজ ভেসে আসে। ওনারা ৩ জন ই সজাগ হয়ে বৈঠকখানা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। বাইরে ততক্ষনে মালাও বেরিয়ে চলে এসেছে। সুপ্রতীক মালাকে দেখে বলে ওঠে
সুপ্রতীকঃ মালা তুমি দয়া করে বংশীর সাথে যাও। আমার কোনও বিপদ হবেনা। সেরকম কোনও বিপদের আঁচ পেলে আমিও সুরঙ্গ পথে তোমার কাছে চলে আসব। তুমি এখানে থাকলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
মালা কিছু না বুঝে চুপ করে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। বংশী সামনে এগিয়ে আসে, মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, আমাদের বিশ্বাস করুন, জমিদার বাবুর কোনও বিপদ হবেনা। সামান্য কোনও বিপদের আঁচ পেলে আমি নিজে সুরঙ্গ পথে জমিদার বাবুকে আপনার কাছে নিয়ে আসব। কিন্তু আপনি থাকলে আমাদের ওনাকে রক্ষা করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
সুপ্রতীক ও বংশীকে সমর্থন করে বলে ওঠে “আমার হুকুম মালা তুমি এখান থেকে চলে যাবে” কিছুটা অসহায়ভাবে মালা একবার সুপ্রতীকের দিকে তাকায়। মালার হৃদয়ের এই যন্ত্রণা, সুপ্রতীকের ও নজর এড়িয়ে যায়নি। স্বামীর আদেশ মত মালা বংশীকে অনুসরন করে। সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই পাথরগুলো সরিয়ে দিয়ে ওদের ভেতরে যেতে সাহায্য করে। ওরা ভেতরে প্রবেশ করলে পাথরগুলো আবার সস্থানে রেখে দেওয়া হয়। শেষবারের মত মালা তাকায় নিজের প্রিয়তমর দিকে। সুপ্রতীক ও করুনদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মালার দিকে। সুরঙ্গের অন্ধকারে হারিয়ে যায় মালা। সুপ্রতীকের হৃদয় কেঁদে ওঠে। ও জানেনা সত্যি ও আর নিজের মনের সখাকে কোনোদিন দেখতে পাবে কিনা।
বংশীঃ আমি একবার এই সুরঙ্গের ব্যাপারে শুনেছিলাম, কিন্তু এটা যে একদম জমিদারবাড়ির ভেতরেই রয়েছে তা আমার জানা ছিলনা। যাই হোক, এই মুহূর্তে আমাদের লোকবলের বিশাল প্রয়োজন। এবং তারসাথে সিপাহীদের সাহায্যর ও খুব দরকার। সিলিং সাহেব আপনাকে আক্রমন করলে সিপাহীরা নিজের থেকেই এগিয়ে আসবে। ওরাও তো একটা যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করে আছে। আপনি কোনও চিন্তা করবেন না, আমি আমার তরফ থেকে সেরা প্রচেষ্টাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
সুপ্রতীকঃ মুশকিল একটাই জায়গায় তা হোল লোকবল। এই এতো কমসময়ে আমরা কি করে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় লোক জোগাড় করব।
বংশীঃ জমিদারবাবু এই দায়িত্বটাও আপনি আমায় দিতে পারেন। একসময় আমি জঙ্গলের একচ্ছত্র সম্রাট ছিলাম। সেই দরুন আমার দলে এমন অনেক যোদ্ধাই ছিল যারা লড়াই করতে পিছপা হবেনা। আমায় আপনি একটা ঘণ্টা সময় দিন, আমি আবার নিজের সেই পুরনো দলটা ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আপনি অনুমতি দিলে আমি এখনি বেরিয়ে যাবো।
সুপ্রতীক মাথা নেড়ে নিজের সম্মতি ব্যাক্ত করে। বংশীও আর দেরি না করে বেরিয়ে যায়। বংশী বুঝে গেছে আগুন জ্বলার সমস্ত উপকরন ই মজুদ রয়েছে। শুধু একটা মাচিসের খস করে শব্দ হওয়া বাকি আছে। আর বংশী সেই মাচিসের কাঠিটা নীলকুঠিতেই ফেলতে চায়, আগুনটা ওখানেই আগে জ্বলুক আর তারপর সেই আগুনের রোষে সুপ্রতীক জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। বংশী প্রচণ্ড জোরে হাঁটতে হাঁটতে নীলকুঠীর দিকেই এগিয়ে যায়। নীলকুঠিতে তখন টমাসের শবকে সমাধিস্থ করার বন্দবস্ত করা হচ্ছে। সবাই থাকলেও ওই স্থানে সিলিং সাহেব উপস্থিত ছিলনা। বংশী ভেতরে প্রবেশ করে সোজা ঘরের দিকে চলে যায়। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল টেবিলের ওপর মাথা রেখে সিলিং সাহেব বসে আছেন। হয়ত উনি কাঁদছেন। বংশীর কিছুটা ভয় ই করছিল, তবুও সাহস করে বংশী দরজার বাইরে থেকে মৃদুগলায় বলে ওঠে “সিলিং সাহেব আমি বংশী” টেবিল থেকে মাথাটা উঠিয়ে সিলিং সাহেব বংশীর দিকে তাকান। সিলিং সাহেব যে ওকে দেখে এরকম রুদ্রমূর্তি ধারন করবে তা ও বুঝতেও পারেনি। প্রায় ঝড়ের বেগে ছুটে এসে সিলিং সাহেব বংশীর জামাটা ধরে একটানে ওকে নিচে ফেলে দেয়। বংশী কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু সেই সুযোগ ও পায়না, বংশীর টুঁটিটা প্রচণ্ড জোরে টিপে ধরে সিলিং সাহেব বলে ওঠেন
সিলিং সাহেবঃ বল শুয়ারের বাচ্চা, কে মেরেছে আমার ভাইকে। বল নয়ত তোকে এখানেই মেরে ফেলব।
কোনওরকমে বংশী নিজেকে সিলিং সাহেবের কবল থেকে মুক্ত করে বলে ওঠে
বংশীঃ আপনি আমায় সন্দেহ করছেন সাহেব, এতদিন ধরে আমি আপনাকে কত ভেতরের কথা জানিয়ে এলাম। আজ ও তো আমি আপনাকে সবকথা খুলে বলতেই এখানে এসেছি। আমার হাতে বেশি সময় নেই। কেউ যদি জানতে পারে আমি নীলকুঠিতে এসেছি তাহলে আর আমার শরীরে প্রান থাকবে না। আপনি আমায় ছারলে আমি সব খুলে বলব আপনাকে।
বংশীর কথায় সিলিং সাহেবের মেজাজ একটু পরিবর্তন হয়। ওকে ছেড়ে দিয়ে উনি আবার চেয়ারের ওপর গিয়ে বসেন।
বংশীঃ জমিদারবাড়ির ই একদাসি টমাসকে একটা সোনার মুদ্রা দেখিয়ে বলেছিল এটা গুপ্তধন। সেই গুপ্তধনের লোভেই টমাস কাল রাতে ওখানে গেছিল। জমিদারবাড়ির ই কোনও এক লাঠিয়াল এরপর এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। সমস্ত পরিকল্পনাই সুপ্রতীকের। এইভাবে ও প্রজাদের কাছে নিজের সম্মানটা আবার ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছে। আমি কিছুই জানতাম না, আমি তো কাল গ্রামে ছিলাম। আমি জানলে কি আর এতো বড় সর্বনাশ হতে দিতাম। (দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে একটা মেকি কান্নার চেষ্টা করে বংশী)
সিলিং সাহেবঃ (প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে) আমি জমিদারের মাথা শরীর থেকে আলাদা করে দেবো। ওই জানোয়ারটাকে আমি সবার সামনে হত্যা করব।
বংশীঃ সাহেব, আপনার সামনে একটা সামান্য জমিদার কি আর জিনিস। ওকে হত্যা করলেই কি আপনার সব শোধ মিটে যাবে। আপনার জন্য দারুন একটা খাবার আছে। আজ্ঞা করলে বলব আপনাকে। (চোখের ইশারায় কিছুটা অশ্লীলতা প্রকাশ করে)
সিলিং সাহেব নিজেকে শান্ত করে বংশীর দিকে তাকায়।
বংশীঃ কাল বিকেলে জমিদারের দুই বোন এখানে এসেছে। প্রিয়া ও গার্গী, যমজ দুই বোন। ওদের দেখলে আপনি বলতেই পারবেন না যে ওরা এদেশের মেয়ে। মনে হবে আপনাদের ই জাতের কোনও মেম সাহেব বুঝি। আপনি কি চান তা তো আমি বুঝি, তাই বলছিলাম নীলকুঠিতে ওই দুই অপ্সরাকে নিয়ে আসুন। সমস্ত রাগ জ্বালা জুড়িয়ে যাবে। পরিবারের সম্মানে জমিদার ও কখনো প্রকাশ্যে বলতে পারবেনা যে ওর দুই বোন আপনার কব্জায় রয়েছে।
সিলিং সাহেবের মুখে কামুক শয়তানি হাসি ফুটে ওঠে। বংশীর ও এটা বুঝতে আর কোনও অসুবিধা থাকেনা যে ওর শেষ পরিকল্পনাটা ১০০ শতাংশ সফল। বংশীও কিছুটা বাঁকা হাসি হেঁসে বলে ওঠে
বংশীঃ আমি ও আমার লাঠিয়ালরা শুধুই একটা লড়াই করার অভিনয় করব। আপনি জমিদারবাড়ি আক্রমন করুন, এবং দুই অপ্সরাকে নীলকুঠিতে এনে ভোগ করুন। আমার তাতে কোনও মাথাব্যাথা নেই। এবার আমায় যেতে আজ্ঞা করুন।
সিলিং সাহেবের মাথা নাড়ার ভঙ্গী দেখে বংশী উঠে পড়ে ও প্রস্থান করার জন্য দরজার দিকে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে সিলিং সাহেব বলে ওঠে
সিলিং সাহেবঃ বংশী, টমাসকে খুনটা কে করেছে?
সিলিং সাহেবের কথা শুনে বংশী কিছুটা চমকেই যায়। বংশী পেছন ঘুরে দেখে একবার। সিলিং সাহেব ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সিলিং সাহেবঃ তুমি যে এতকিছু করছ, মানে জমিদারের সাথে বেইমানি করে আমার অনুগত হচ্ছ, এতে তোমার কি লাভ?
সিলিং সাহেবের প্রশ্নগুলো বংশীকে একদম ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। কোনরকমে নিজেকে শান্ত করে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ আজ্ঞে, আমি তো আপনাকে বহুবার বলেছি যে জমিদারির অত্যাচার আমরা অনেকেই ভুলতে পারিনি। তাইতো ডাকাত হওয়া, তারপর আপনার সাথে সাক্ষাত হওয়া। আপনার ই আদেশে তো আমি নিজেকে জমিদারবাড়ির অনুগত প্রমান করেছি।
সিলিং সাহেব প্রচণ্ড জোরে হা হা করে হেঁসে ওঠেন আর ইশারা করে বংশীকে চলে যেতে নির্দেশ দেন। বংশীর সেই আত্মবিশ্বাস কোথায় যেন হারিয়ে যায়। বারবার করে ভাবতে থাকে ওর পরিকল্পনায় কোনও ত্রুটি রয়ে গেছে কিনা। টমাসকে যে বংশী নিজের হাতে হত্যা করেছে এব্যাপারে তো কেউ কিছুই জানেনা। সিলিং সাহেবের সন্দেহের তীর যে বংশীর ও দিকে রয়েছে তা বংশীও খুব ভালো করে বুঝেছে। বহুকষ্টে বংশী সব ভুলে গ্রামের দিকে এগিয়ে যায়। ওর ডাকাত দলের বহু সাথী রয়েছে যারা বংশীর এক কথায় লড়াই করতে রাজি হয়ে যাবে। তাদের প্রায় সকলেই এখন ডাকাত দল ছেড়ে সুখি সংসার জীবন পালন করছে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে বংশী নিজের সমস্ত পুরনো সাথীকে একত্রিত করে তোলে। ওদের নিজের পরিকল্পনা ও জমিদারের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিশোধ নিতে হবে সব বুঝিয়ে বলে। বংশী সবাইকে নিয়ে আবার জমিদারবাড়ির দিকে চলতে শুরু করে।
অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই বংশী নিজের সাথীদের নিয়ে জমিদারবাড়িতে প্রবেশ করে। বাইরে তখন সার দিয়ে লাঠিয়ালরা দাঁড়িয়ে ছিল। সবাইকে ওখানে রেখেই বংশী অন্দরমহলে প্রবেশ করে। অন্দরমহলে সুপ্রতীক, নায়েবমশাই ও মালা কোনও ব্যাপারে গভীরভাবে আলোচনা করে যাচ্ছিল। দূর থেকে বংশীর মনে হয় সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই মালাকে কিছু বোঝানোর জন্য আকুতি মিনতি করে চলেছেন। মালা ছলছল চোখে মাথা নাড়িয়ে না বলে চলেছে। বংশী ধীরে ধীরে ওদের কাছে এগিয়ে যায়।
সুপ্রতীকঃ এই তো বংশী এসে গেছে। বংশী, কতজন লোক জোগাড় করতে পারলে?
বংশীঃ আজ্ঞে, জমিদারবাবু তা শ দেড়েক লোক হবে। ওরা একসময় আমার সাথী ছিল, ওদের আপনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারেন।
সুপ্রতীকঃ (বংশীর দিকে চোখ টিপে, মিথ্যে বলার অভিনয় করে) দেখো বংশী, যুদ্ধ কোনমতেই হবেনা। যতই হোক দেশে একটা আইন কানুন রয়েছে। এইসময় সিপাহীদের বিদ্রোহে ইংরেজরা যথেষ্ট বিপদে পড়েছে। তাই ওরা কোনমতেই যুদ্ধ করতে চাইবেনা। তবুও আমি চাইনা, এই বিপদের মধ্যে বাড়ির মেয়েদের রাখতে। গার্গী আর প্রিয়াকে আমি নায়েবমশাই এর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। আচ্ছা বংশী, তুমি আমায় একবার বলেছিলে না যে জঙ্গলের মধ্যে তোমার কিছু কুঠির রয়েছে। আমি সেখানেই সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে মালাকে রাখতে চাই। এদিকটা একটু শান্ত হয়ে গেলে আবার ওকে নিয়ে আসব। তুমি সাথে আরও ২-৩ জনকে নিয়ে ওর দেখভাল করবে। দেখো মালার সামান্য কোনও অসুবিধা হলে আমি কিন্তু তোমার গর্দান কেটে নেবো।
সুপ্রতীকের কথার জবাবে বংশী কিছু হয়ত বলতে যাচ্ছিল কিন্তু মালা বাধা দেয়। মালা বলে ওঠে
মালাঃ আমি আপনাকে বিপদে ফেলে কোথাও যাবনা। আপনি আমার প্রান নিয়ে নিন, তাও আমি যাবনা।
সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই এর মুখের হতাশা দেখে বংশী বুঝতে পারে মালাকে বোঝানোর কাজটা অনেকক্ষণ ধরেই চলে আসছে। মালার দিকে তাকিয়ে বংশী বলে ওঠে
বংশীঃ রানিমা, আপনি এখানে থাকুন। কিন্তু যদি যুদ্ধ শুরু হয় তখন সত্যি ই আপনার জমিদারবাড়ি ত্যাগ করা উচিত। আপনি একটু বুঝে দেখুন, আমরা জমিদারবাবুর সাথে সাথে যদি আপনাকে নিয়েও চিন্তা করি তাহলে কাজটা আমাদের জন্য প্রচণ্ড কঠিন হয়ে যাবে। আপনি এখন থাকুন আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। দয়া করে আমার কথাগুলো একটু বুঝুন। আপনি কি মনে করেন আমরা জমিদারবাবুকে যুদ্ধ করতে দেবো। যদি বুঝি আমরা কোনমতেই পেরে উঠছি না তাহলে আপনার মত জমিদারবাবুকেও সুরঙ্গপথ দিয়ে জঙ্গলে পাঠিয়ে দেবো। আমাদের শরীরে প্রান থাকতে উনি নিরাপদ থাকবেন। আমি আপনাকে কথা দিলাম রানিমা।
সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই দুজনেই অবাক হয়ে গেলেন, কারন এতক্ষন ধরে যে অসাধ্যসাধনের চেষ্টা ওনারা অক্রে চলেছেন, বংশী সে ব্যাপারে অনেকটাই সফল। বংশীর কথা শুনে মালা একটু শান্ত হয় এবং ভেতরে প্রবেশ করে। মালাকে ভেতরে যেতে দেখে সুপ্রতীক একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে।
সুপ্রতীকঃ চল বংশী, বৈঠকখানায় বসা যাক। আমাদের তৈরি হতে হবে।
বংশী, নায়েবমশাই ও সুপ্রতীক প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বৈঠকখানায় বসে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ করার ও সিপাহিদের মনোযোগ আকর্ষণ করার পরিকল্পনা করেন। হথাত করে বাইরে থেকে গুলি চলার একটা আওয়াজ ভেসে আসে। ওনারা ৩ জন ই সজাগ হয়ে বৈঠকখানা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। বাইরে ততক্ষনে মালাও বেরিয়ে চলে এসেছে। সুপ্রতীক মালাকে দেখে বলে ওঠে
সুপ্রতীকঃ মালা তুমি দয়া করে বংশীর সাথে যাও। আমার কোনও বিপদ হবেনা। সেরকম কোনও বিপদের আঁচ পেলে আমিও সুরঙ্গ পথে তোমার কাছে চলে আসব। তুমি এখানে থাকলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
মালা কিছু না বুঝে চুপ করে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। বংশী সামনে এগিয়ে আসে, মালার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
বংশীঃ রানীমা, আমাদের বিশ্বাস করুন, জমিদার বাবুর কোনও বিপদ হবেনা। সামান্য কোনও বিপদের আঁচ পেলে আমি নিজে সুরঙ্গ পথে জমিদার বাবুকে আপনার কাছে নিয়ে আসব। কিন্তু আপনি থাকলে আমাদের ওনাকে রক্ষা করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
সুপ্রতীক ও বংশীকে সমর্থন করে বলে ওঠে “আমার হুকুম মালা তুমি এখান থেকে চলে যাবে” কিছুটা অসহায়ভাবে মালা একবার সুপ্রতীকের দিকে তাকায়। মালার হৃদয়ের এই যন্ত্রণা, সুপ্রতীকের ও নজর এড়িয়ে যায়নি। স্বামীর আদেশ মত মালা বংশীকে অনুসরন করে। সুপ্রতীক ও নায়েবমশাই পাথরগুলো সরিয়ে দিয়ে ওদের ভেতরে যেতে সাহায্য করে। ওরা ভেতরে প্রবেশ করলে পাথরগুলো আবার সস্থানে রেখে দেওয়া হয়। শেষবারের মত মালা তাকায় নিজের প্রিয়তমর দিকে। সুপ্রতীক ও করুনদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মালার দিকে। সুরঙ্গের অন্ধকারে হারিয়ে যায় মালা। সুপ্রতীকের হৃদয় কেঁদে ওঠে। ও জানেনা সত্যি ও আর নিজের মনের সখাকে কোনোদিন দেখতে পাবে কিনা।