19-01-2019, 09:29 AM
পর্ব ১২- রাজনীতির পাশাখেলাঃ
অন্দরমহলে প্রবেশ করেই রোজ সুপ্রতীক সোজা বাগানের দিকে তাকাতেন, আর মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে সুপ্রতীকের সাধের বাগান থেকে বেড়িয়ে আসতেন মালা। এই মিষ্টি হাসিটা দেখার জন্য লাল ওই দুই ওষ্ঠকে একবার স্পর্শ করার জন্য সুপ্রতীক ও পাগলের মত মালার কাছে ছুটে আসতেন। রোজকার এই ঘটনায় কোনও ক্লান্তি ছিলনা, একঘেয়ে ছিলনা। আজ মালাকে বাগানের মধ্যে দেখতে না পেয়ে সুপ্রতীকের মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবেন মালার শরীর ভালো আছে তো। হন্তদন্ত করে উনি অন্দরমহলের ভেতরে প্রবেশ করেন। ওনাকে ওইভাবে আসতে দেখে মালাও ছুটতে গিয়ে পর্দার আড়ালে নিজের শরীরটা লুকিয়ে দেন। ভেতরে প্রবেশ করেই সুপ্রতীক “মালা মালা” বলে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে ডাকতে থাকেন। পর্দার ভেতর থেকেই মালা উত্তর দেয়
মালাঃ আমার আপনার ওপর অভিমান হয়েছে। আমি আপনার সামনে আসতে চাইনা।
সদ্য অষ্টাদশী মালার এই বাৎসল্যে সুপ্রতীকের মনে আবার ভালোবাসার আগুন জ্বলে ওঠে, মুখে সেই স্নিগ্ধ সতেজ হাসিটা ফিরে আসে। সুপ্রতীক ধীরে ধীরে পর্দার দিকে এগিয়ে যান। পর্দা সুদ্ধু পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন লুকিয়ে থাকা মালাকে।
সুপ্রতীকঃ আমি জানি কেন আমার প্রিয়তমার অভিমান হয়েছে। তুমি মিছিমিছি আমায় নিয়ে চিন্তা কর মালা। আমি যে চাইনা একমুহূর্তের ও জন্য তোমার মুখের ওই মিষ্টি হাসিটা মিলিয়ে যাক। (পর্দার ওপর থেকেই উনি নিজের চিবুকটা মালার নরম কাঁধের ওপর রাখেন, হাতদুটো আরও শক্ত করে মালার পাতলা কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে) তুমি যে আমার ভালোবাসা মালা। আমি চাইনা তুমি দুশ্চিন্তা কর। জানো মালা আমি সেই বাল্যকাল থেকে জমিদারীর কাজ করে আসছি। অনেক কঠিন পরিস্থিতি এসেছে কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। তুমি কি মনে কর আমি এই জমিদারির চাপ সামলাতে পারবোনা। আমি কি এই কাজের অযোগ্য।
সুপ্রতীক জানেন উনি একদম সঠিক স্থানে আঘাত করে ফেলেছেন। পর্দার মধ্যে থেকে ছিটকে বেরোয় মালা, সম্পূর্ণভাবে সুপ্রতীকের দিকে ঘুরে নিজের ডান হাতটা দিয়ে সুপ্রতীকের মুখ চাপা দেয়।
মালাঃ অনুগ্রহ করে একথা মুখেও আনবেন না। আপনি কি বোঝেন না আমি আপনাকে ঠিক কতটা সম্মান করি। আপনি কি করে এরকম ভেবে নিলেন। আমি কি সত্যি এরকম ভাবতে পারি।
এতক্ষনে সুপ্রতীক সম্পূর্ণভাবে মালাকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে ফেলেন। একহাত দিয়ে মালার কোমরটাকে জোরে নিজের শরীরের দিকে টেনে নেন আরেকহাতে মালার হাতটা আলতো করে ধরে নিজের দুই ঠোঁট দিয়ে ওটাকে চুম্বন করতে থাকেন। নিজের প্রানের পুরুষের স্পর্শে আসতে আসতে মালার কাজলহরিন দুই চোখ বুজে আসে। ঠোঁটদুটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। সুপ্রতীকের ও নজর সুন্দর পুরু ওই দুটি ঠোঁটের দিকে। ঠোঁটের এই কম্পন যেন সুপ্রতীকের পৌরুষ আরও বাড়িয়ে দেয়। মালা হারিয়ে যায় প্রিয়তমর বাহুতে। সুপ্রতীক নিজের দুই ওষ্ঠ মালার দুই ওষ্ঠের নিকটে নিয়ে যান। মালার নাসারন্ধ্রের গরম বায়ু ধীরে ধীরে সুপ্রতীকের সমগ্র শরীরকে উত্তপ্ত করে তুলতে শুরু করে। হয়ত দুজনের ওষ্ঠ একে অপরকে আলিঙ্গন করার জন্য আর প্রহর গুনতে পারছেনা, ঠিক এরকম সময় ই মালা বলে ওঠে
মালাঃ আপনি যদি আমায় সত্যি ই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আজ এইমুহূর্তে আমায় একটা কথা দিতে হবে আপনাকে। নয়ত আমি নিজেই নিজেকে কষ্ট দেবো, কাউকে কিছু বুঝতেও দেবনা।
সুপ্রতীক প্রায় নিজের সুন্দরী বউএর প্রেমসাগরে ডুব দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজেকে সংবরন করে নেন। মালাকে নিজের বুকে টেনে নেন। নিজের দুহাত মালার মাথায় রেখে সুন্দরভাবে মালার মাথায় স্নেহের স্পর্শ রাখতে শুরু করেন।
সুপ্রতীকঃ মালা আমি তোমার জন্য সব করতে পারি। আমি তোমার জন্য নিজের প্রান ও দিতে...
মালা প্রচণ্ড জোরে সুপ্রতীকের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে, দুহাত দিয়ে সুপ্রতীকের বুকের পোশাক কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে
মালাঃ আপনি কেন এরকম অমঙ্গলের কথা বলে আমায় আহত করেন। আপনার চিঠি পড়ে আমি অভিমান করিনি। আমি শতাধিকবার আপনার চিঠি পড়েছি। আপনি দাসীদের আমাকে উদ্বিগ্ন করতে বারন করেছেন তাতেও আমি অভিমানী হইনি।
সুপ্রতীকঃ তাহলে কি হয়েছে প্রিয়তমা। আমার কি কোনও ভুলত্রুটি হয়েছে পতিধর্ম পালনে। তুমি আমায় নিঃসঙ্কোচে বল, আমি সব মেনে নেবো।
সুপ্রতীক নিজের দুই হাত দিয়ে মালার দুই গালকে শক্ত করে ধরেন, মালার মুখ ওপর দিকে তুলে ধরেন। মালার দুই কাজলহরিন চোখ সোজা সুপ্রতীকের চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করে। সুপ্রতীক লক্ষ্য করেন, মালার দুই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সুপ্রতীক নিজের দুই হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করেন
সুপ্রতীকঃ কি হয়েছে মালা, বলই না আমায়।
মালাঃ ছোটবেলায় বাবার থেকে শুনেছি ইংরেজরা প্রবল শক্তিশালী। ওরা সমগ্র দেশকে পরাজিত করে আমাদের এই বঙ্গদেশে এসেছে। আমি জানতে পেরেছি আপনি ওই ফিরিঙ্গীদের সাথে যুদ্ধ করতে চলেছেন। আমার মাথার দিব্যি রইল আপনি এরকম করবেন না। আর যদি হয় তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন।
কথা শেষ করেই মালা ডুকরে একটু কেঁদে উঠে নিজের মাথাটা সুপ্রতীকের বুকে সম্পূর্ণভাবে লুকিয়ে দেয়। সুপ্রতীক ও ওর মাথাটা শক্ত করে নিজের বুকে ধরে থাকে। এতক্ষন যে ভয় ও সঙ্কোচ সুপ্রতীকের হৃদয়কে তোলপাড় করে দিচ্ছিল তা যেন অজান্তেই মিলিয়ে গেলো। আর তার বদলে এসে গেলো এক অষ্টাদশীর নিষ্পাপ চিন্তায় তৈরি নির্ভেজাল ভালোবাসা। সুপ্রতীক আবার মালার মুখটা ওপরের দিকে তুলে কপালে একটা স্নেহে ভরা চুম্বন উপহার দিয়ে বলে উঠলেন
সুপ্রতীকঃ জানো মালা, আজ আমার মন একদম ঠিক ছিলনা। শুধু এটাই ভাবছিলাম যদি ইংরেজদের সাথে সত্যি ই যুদ্ধ লেগে যায় আমি আমার স্তিমিত ক্ষমতা দিয়ে কিকরে ওদের সাথে লড়বো। আজ মনে হচ্ছে ইংরেজ কেন যতবড় দস্যুর সাথেই লড়াই হোক, আমি ই জিতব। কেন জানে? কারন আমার কাছে মালার ভালোবাসা আছে, যা ওদের কাছে নেই।
মালা আবার শীতল কণ্ঠে বলে ওঠে
মালাঃ আপনি লড়বেন না তো ফিরিঙ্গীদের সাথে? আপনি কিন্তু আমায় স্পর্শ করে কথা দিয়েছেন।
সুপ্রতীক শুধুই চোখের ইশারায় মালাকে বুঝিয়ে দেয় যে উনি যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন ওদের সাথে লড়াই না করার। এতক্ষনে মালার বুকের মধ্যে বয়ে চলা তুফান শান্ত হয়, সেই পুরনো রৌদ্র ঝলমলে হাসিটা ফিরে আসে। মালা দুচোখ বন্ধ করে নিজের মাথাটা আরও উঁচু করে দেয়। মালার হৃদয়ের প্রতিটি ভাষাই সুপ্রতীক বোঝে। এই মুহূর্তে মালার হৃদয় বলে উঠল “নাও প্রিয়তম নিজের পুরস্কার গ্রহন কর” সুপ্রতীক ও নিজের পুরস্কার গ্রহন করতে কোনও দ্বিধা রাখেনা। নিজের দুই পুরু ওষ্ঠের মাঝে মালার নীচের আদ্র কোমল ঠোঁটকে সম্পূর্ণভাবে জাপটে ধরে। মালা নিজের কামনার আগুনকে নেভাতে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুপ্রতীককে। কালো মেঘ সরে গিয়ে ঝিকমিকে রোদ্দুর স্নান করিয়ে দেয় দুই কপোত কপোতীকে। মালাই নিজেকে সুকৌশলে সুপ্রতীকের বাহুডোর থেকে মুক্ত করে। “চলুন আহার গ্রহন করবেন” বলে ভেতরের ঘরে প্রবেশ করে মালা।
প্রায় ২-৩ দিন ধরে সমগ্র পরিস্থিতির ওপর সুচাগ্র নজর রেখে চলেছে বংশী। এরমধ্যে ২-৩ বার রাতের অন্ধকারে ও সিলিং সাহেবের সাথে দেখাও করে এসেছে। শুধু একদিন সিলিং সাহেবের সাথে কথা বলতে হবে এইভেবে পাশের গ্রামের এক পণ্ডিত ব্যাক্তির থেকে ইংরিজি ভাষাটা ও প্রায় ১ বছর আগে থেকেই আয়ত্ত করতে শুরু করে দিয়েছিল। যদিও সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করে দেখে যে সিলিং সাহেব বেশ ভালোই ভাঙা ভাঙা বাংলা বলেন। বেশ ভালোই লাগে সিলিং সাহেবের মুখের ওই বাংলা উচ্চারন। সিলিং সাহেব যে বংশীকে বেশ বিশ্বাস করেছেন তা বংশী ভালোই আন্দাজ করতে পেরেছে। সিলিং সাহেবের কাছে যে উদ্দেশ্য নিয়ে বংশী গিয়েছিল তা হোল ইংরেজদের চোখে জমিদার সুপ্রতীককে যথাসম্ভব শত্রু প্রমান করা। সুপ্রতীক যে নিজের চরদের সাহায্যে লক্ষ্মীকান্তপুরের বিদ্রোহীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে ও তাদেরকেই নিজের আপনজন মনে করে এটা বোঝাতে বংশী খুব ভালোভাবেই সক্ষম হয়েছে। আজ সকাল থেকে যে বিদ্রোহী চাষিরা জমিদারের কাছে নিজেদের নালিশ জানাতে এসেছে তাও বংশী নিজের এক বিশ্বস্ত অনুচরের মাধ্যমে সিলিং সাহেবের কাছে খবর পাঠিয়ে দিয়েছে। শেষ যেবার ও সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করেছিল সেবার সিলিং সাহেব ওকে একটি আর্জি জানিয়েছিলেন। সিলিং সাহেব চান বংশী রাতের অন্ধকারে সুপ্রতীক কে হত্যা করুক এবং তার প্রতিদানে সুপ্রতীকের স্থলে বংশীকেই উনি জমিদার হিসেবে নিযুক্ত করে দেবেন।
বংশী ডাকাত হওয়ার জন্য ডাকাত হয়নি, ছোট থেকেই ওর ক্ষমতার লোভ। ও জানে এই সুতানুটি অঞ্চলে ক্ষমতার উৎস মোট দুই জায়গায়ঃ এক জমিদারবাড়ি ও দুই ঠাকুর ডাকাতের দল। অত্যন্ত বুদ্ধি খাটিয়েই বংশীর ডাকাত সর্দারে পরিনত হওয়া। এবং তারপর ওর ই ব্যাক্তিগত দক্ষতায় ডাকাতের দল পরিনত হয় জমিদার বাড়ীর লাঠিয়ালে। ক্ষমতা বংশীর চোখের সামনে ভেসে উঠেছে কিন্তু তাতেও বংশী ক্ষান্ত হয়নি। মালার ওপর বংশীর বহুদিনের লোভ। বংশী অন্দরমহল ও বাহিরমহলের মাঝে দায়িত্বে থাকে। তাই প্রায় ই ওর চোখে ভেসে ওঠে মালা আর সুপ্রতীকের শরীর মন দুইএর মিলে যাওয়ার রুপকথা। ও কিছুতেই মানতে পারেনা সুপ্রতীকের এই মালাকে ভোগ করা। মালাকে নগ্ন একা সুপ্রতীক ও দেখেনি, মিলনরত অবস্থায় বহুবার বংশীও দেখেছে। আজ ও যখন ওরা নিজেদের হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করছিল তখন বংশী বারান্দা থেকে একদৃষ্টিতে সব ই লক্ষ্য করছিল। বংশী সিলিং সাহেবের কথায় হয়ত রাজি হয়ে যেতে পারতো কিন্তু ও মীরজাফরের কাহিনী শুনেছে। বেইমান মীরজাফরকে কিন্তু ইংরেজরা ছারেনি। তাই ও শুধুই সময়ের অপেক্ষায় থাকে। ও জানে এই ফিরিঙ্গীদের বিশ্বাস করে কিছু করলে ওর পতন অবশ্যম্ভাবী।
বংশীর কাছে কয়েকটি অঙ্ক রয়েছে। সেই অঙ্কগুলো যদি ও কোনোদিন সমাধান করে দিতে পারে তো কেল্লাফতে। বিদ্রোহীরা কেউ ই জমিদার বা রাজবংশের নয়, ওরা সবাই গরীব কৃষক ও সাধারন বাড়ীর ই সন্তান। সাধারনত এদের মধ্যে বাংলার জমিদার ও মহাজনদের নিয়ে খুব একটা সন্তোষভাব নেই। সুপ্রতীক নিজে প্রজাদের কল্যান করলেও তার পূর্বপুরুষরা কম অত্যাচার করেনি সাধারন প্রজাদের ওপর। সেই অত্যাচারের কাহিনী আজও ঘরে ঘরে লোকমুখে ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ সিপাহী ও বিদ্রোহীরা শুধুই জমিদারকে ব্যাবহার করছে, কখনোই সুপ্রতীককে নিজেদের মানুষ বলে গন্য করছেনা। সুতানুটি ও তার আশপাশের গ্রামে ইংরেজদের সৈন্য মোতায়েন আছে তাই বিদ্রোহীরা এই অঞ্চলটায় ঘাঁটি গেড়ে উঠতে পারেনি। একসময় অবধি সুপ্রতীক, সিলিং সাহেবকে যথেষ্ট তোয়াজ করে চলতেন। এটা প্রায় সমস্ত গ্রামবাসীর ই জানা। অনেকে এখনো এটাই বিশ্বাস করেন এতো জায়গা থাকতে এই সুতানুটিতে ইংরেজদের ঘাঁটি গাড়ার পেছনে আসলে রয়েছেন সুপ্রতীক। জমিদার ই ইংরেজদের সাথে সদ্ভাব রাখতে ওদের এই অঞ্চলে আশ্রয় দিয়েছে। অর্থাৎ গরীব কৃষকের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে তার মুলে ওই জমিদার সুপ্রতীক। অপরদিকে সিলিং সাহেবের একটা সময় অবধি জমিদারের ওপর যথেষ্ট আস্থা থাকলেও কিছুটা বংশীর কূটনীতি ও কিছুটা গ্রামবাসীদের আশ্রয় দেওয়া এই দুই সিলিং সাহেবের মনে সুপ্রতীকের প্রতি বিষবৃক্ষ রোপণ করে দিয়েছে। এদিকে সুপ্রতীকের কাছে ইংরেজ ও সিপাহী উভয় ই শত্রু। সুপ্রতীক মনপ্রানে বিশ্বাস করে যে বিদ্রোহীরা মুঘলদের ই ফিরিয়ে আনতে চায় আর তাতে জমিদার ও মহাজনদের এক বিশাল ক্ষতি। ইংরেজরা সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতায় এলেও জমিদারদের এক বিশাল ক্ষতি। সুপ্রতীকের প্রধান দুর্বলতা মালা, গার্গী ও প্রিয়া। গ্রামবাসীদের দুর্বলতা তাদের অজ্ঞতা ও দ্রুত কাউকে অবিশ্বাস করার প্রবনতা। সিপাহিদের দুর্বলতা তাদের বিপ্লবী মনোভাব। সিলিং সাহেবের দুর্বলতা নারী আশক্তি। আর বংশীর দুর্বলতা বংশী রাজনীতির এই চক্রব্যূহের মধ্যে নেই। বংশী শুধুই বাইরে থেকে সব লক্ষ্য করে নিজেকে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করাতে চায়। এখন দেখার রাজনীতির এই পাশাখেলায় কেই বা জেতে আর কেই বা হারে।
অন্দরমহলে প্রবেশ করেই রোজ সুপ্রতীক সোজা বাগানের দিকে তাকাতেন, আর মুখে একটা স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে সুপ্রতীকের সাধের বাগান থেকে বেড়িয়ে আসতেন মালা। এই মিষ্টি হাসিটা দেখার জন্য লাল ওই দুই ওষ্ঠকে একবার স্পর্শ করার জন্য সুপ্রতীক ও পাগলের মত মালার কাছে ছুটে আসতেন। রোজকার এই ঘটনায় কোনও ক্লান্তি ছিলনা, একঘেয়ে ছিলনা। আজ মালাকে বাগানের মধ্যে দেখতে না পেয়ে সুপ্রতীকের মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবেন মালার শরীর ভালো আছে তো। হন্তদন্ত করে উনি অন্দরমহলের ভেতরে প্রবেশ করেন। ওনাকে ওইভাবে আসতে দেখে মালাও ছুটতে গিয়ে পর্দার আড়ালে নিজের শরীরটা লুকিয়ে দেন। ভেতরে প্রবেশ করেই সুপ্রতীক “মালা মালা” বলে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে ডাকতে থাকেন। পর্দার ভেতর থেকেই মালা উত্তর দেয়
মালাঃ আমার আপনার ওপর অভিমান হয়েছে। আমি আপনার সামনে আসতে চাইনা।
সদ্য অষ্টাদশী মালার এই বাৎসল্যে সুপ্রতীকের মনে আবার ভালোবাসার আগুন জ্বলে ওঠে, মুখে সেই স্নিগ্ধ সতেজ হাসিটা ফিরে আসে। সুপ্রতীক ধীরে ধীরে পর্দার দিকে এগিয়ে যান। পর্দা সুদ্ধু পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন লুকিয়ে থাকা মালাকে।
সুপ্রতীকঃ আমি জানি কেন আমার প্রিয়তমার অভিমান হয়েছে। তুমি মিছিমিছি আমায় নিয়ে চিন্তা কর মালা। আমি যে চাইনা একমুহূর্তের ও জন্য তোমার মুখের ওই মিষ্টি হাসিটা মিলিয়ে যাক। (পর্দার ওপর থেকেই উনি নিজের চিবুকটা মালার নরম কাঁধের ওপর রাখেন, হাতদুটো আরও শক্ত করে মালার পাতলা কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে) তুমি যে আমার ভালোবাসা মালা। আমি চাইনা তুমি দুশ্চিন্তা কর। জানো মালা আমি সেই বাল্যকাল থেকে জমিদারীর কাজ করে আসছি। অনেক কঠিন পরিস্থিতি এসেছে কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। তুমি কি মনে কর আমি এই জমিদারির চাপ সামলাতে পারবোনা। আমি কি এই কাজের অযোগ্য।
সুপ্রতীক জানেন উনি একদম সঠিক স্থানে আঘাত করে ফেলেছেন। পর্দার মধ্যে থেকে ছিটকে বেরোয় মালা, সম্পূর্ণভাবে সুপ্রতীকের দিকে ঘুরে নিজের ডান হাতটা দিয়ে সুপ্রতীকের মুখ চাপা দেয়।
মালাঃ অনুগ্রহ করে একথা মুখেও আনবেন না। আপনি কি বোঝেন না আমি আপনাকে ঠিক কতটা সম্মান করি। আপনি কি করে এরকম ভেবে নিলেন। আমি কি সত্যি এরকম ভাবতে পারি।
এতক্ষনে সুপ্রতীক সম্পূর্ণভাবে মালাকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে ফেলেন। একহাত দিয়ে মালার কোমরটাকে জোরে নিজের শরীরের দিকে টেনে নেন আরেকহাতে মালার হাতটা আলতো করে ধরে নিজের দুই ঠোঁট দিয়ে ওটাকে চুম্বন করতে থাকেন। নিজের প্রানের পুরুষের স্পর্শে আসতে আসতে মালার কাজলহরিন দুই চোখ বুজে আসে। ঠোঁটদুটি থরথর করে কাঁপতে থাকে। সুপ্রতীকের ও নজর সুন্দর পুরু ওই দুটি ঠোঁটের দিকে। ঠোঁটের এই কম্পন যেন সুপ্রতীকের পৌরুষ আরও বাড়িয়ে দেয়। মালা হারিয়ে যায় প্রিয়তমর বাহুতে। সুপ্রতীক নিজের দুই ওষ্ঠ মালার দুই ওষ্ঠের নিকটে নিয়ে যান। মালার নাসারন্ধ্রের গরম বায়ু ধীরে ধীরে সুপ্রতীকের সমগ্র শরীরকে উত্তপ্ত করে তুলতে শুরু করে। হয়ত দুজনের ওষ্ঠ একে অপরকে আলিঙ্গন করার জন্য আর প্রহর গুনতে পারছেনা, ঠিক এরকম সময় ই মালা বলে ওঠে
মালাঃ আপনি যদি আমায় সত্যি ই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আজ এইমুহূর্তে আমায় একটা কথা দিতে হবে আপনাকে। নয়ত আমি নিজেই নিজেকে কষ্ট দেবো, কাউকে কিছু বুঝতেও দেবনা।
সুপ্রতীক প্রায় নিজের সুন্দরী বউএর প্রেমসাগরে ডুব দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজেকে সংবরন করে নেন। মালাকে নিজের বুকে টেনে নেন। নিজের দুহাত মালার মাথায় রেখে সুন্দরভাবে মালার মাথায় স্নেহের স্পর্শ রাখতে শুরু করেন।
সুপ্রতীকঃ মালা আমি তোমার জন্য সব করতে পারি। আমি তোমার জন্য নিজের প্রান ও দিতে...
মালা প্রচণ্ড জোরে সুপ্রতীকের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে, দুহাত দিয়ে সুপ্রতীকের বুকের পোশাক কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে
মালাঃ আপনি কেন এরকম অমঙ্গলের কথা বলে আমায় আহত করেন। আপনার চিঠি পড়ে আমি অভিমান করিনি। আমি শতাধিকবার আপনার চিঠি পড়েছি। আপনি দাসীদের আমাকে উদ্বিগ্ন করতে বারন করেছেন তাতেও আমি অভিমানী হইনি।
সুপ্রতীকঃ তাহলে কি হয়েছে প্রিয়তমা। আমার কি কোনও ভুলত্রুটি হয়েছে পতিধর্ম পালনে। তুমি আমায় নিঃসঙ্কোচে বল, আমি সব মেনে নেবো।
সুপ্রতীক নিজের দুই হাত দিয়ে মালার দুই গালকে শক্ত করে ধরেন, মালার মুখ ওপর দিকে তুলে ধরেন। মালার দুই কাজলহরিন চোখ সোজা সুপ্রতীকের চোখের দিকে দৃষ্টিপাত করে। সুপ্রতীক লক্ষ্য করেন, মালার দুই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সুপ্রতীক নিজের দুই হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করেন
সুপ্রতীকঃ কি হয়েছে মালা, বলই না আমায়।
মালাঃ ছোটবেলায় বাবার থেকে শুনেছি ইংরেজরা প্রবল শক্তিশালী। ওরা সমগ্র দেশকে পরাজিত করে আমাদের এই বঙ্গদেশে এসেছে। আমি জানতে পেরেছি আপনি ওই ফিরিঙ্গীদের সাথে যুদ্ধ করতে চলেছেন। আমার মাথার দিব্যি রইল আপনি এরকম করবেন না। আর যদি হয় তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন।
কথা শেষ করেই মালা ডুকরে একটু কেঁদে উঠে নিজের মাথাটা সুপ্রতীকের বুকে সম্পূর্ণভাবে লুকিয়ে দেয়। সুপ্রতীক ও ওর মাথাটা শক্ত করে নিজের বুকে ধরে থাকে। এতক্ষন যে ভয় ও সঙ্কোচ সুপ্রতীকের হৃদয়কে তোলপাড় করে দিচ্ছিল তা যেন অজান্তেই মিলিয়ে গেলো। আর তার বদলে এসে গেলো এক অষ্টাদশীর নিষ্পাপ চিন্তায় তৈরি নির্ভেজাল ভালোবাসা। সুপ্রতীক আবার মালার মুখটা ওপরের দিকে তুলে কপালে একটা স্নেহে ভরা চুম্বন উপহার দিয়ে বলে উঠলেন
সুপ্রতীকঃ জানো মালা, আজ আমার মন একদম ঠিক ছিলনা। শুধু এটাই ভাবছিলাম যদি ইংরেজদের সাথে সত্যি ই যুদ্ধ লেগে যায় আমি আমার স্তিমিত ক্ষমতা দিয়ে কিকরে ওদের সাথে লড়বো। আজ মনে হচ্ছে ইংরেজ কেন যতবড় দস্যুর সাথেই লড়াই হোক, আমি ই জিতব। কেন জানে? কারন আমার কাছে মালার ভালোবাসা আছে, যা ওদের কাছে নেই।
মালা আবার শীতল কণ্ঠে বলে ওঠে
মালাঃ আপনি লড়বেন না তো ফিরিঙ্গীদের সাথে? আপনি কিন্তু আমায় স্পর্শ করে কথা দিয়েছেন।
সুপ্রতীক শুধুই চোখের ইশারায় মালাকে বুঝিয়ে দেয় যে উনি যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন ওদের সাথে লড়াই না করার। এতক্ষনে মালার বুকের মধ্যে বয়ে চলা তুফান শান্ত হয়, সেই পুরনো রৌদ্র ঝলমলে হাসিটা ফিরে আসে। মালা দুচোখ বন্ধ করে নিজের মাথাটা আরও উঁচু করে দেয়। মালার হৃদয়ের প্রতিটি ভাষাই সুপ্রতীক বোঝে। এই মুহূর্তে মালার হৃদয় বলে উঠল “নাও প্রিয়তম নিজের পুরস্কার গ্রহন কর” সুপ্রতীক ও নিজের পুরস্কার গ্রহন করতে কোনও দ্বিধা রাখেনা। নিজের দুই পুরু ওষ্ঠের মাঝে মালার নীচের আদ্র কোমল ঠোঁটকে সম্পূর্ণভাবে জাপটে ধরে। মালা নিজের কামনার আগুনকে নেভাতে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সুপ্রতীককে। কালো মেঘ সরে গিয়ে ঝিকমিকে রোদ্দুর স্নান করিয়ে দেয় দুই কপোত কপোতীকে। মালাই নিজেকে সুকৌশলে সুপ্রতীকের বাহুডোর থেকে মুক্ত করে। “চলুন আহার গ্রহন করবেন” বলে ভেতরের ঘরে প্রবেশ করে মালা।
প্রায় ২-৩ দিন ধরে সমগ্র পরিস্থিতির ওপর সুচাগ্র নজর রেখে চলেছে বংশী। এরমধ্যে ২-৩ বার রাতের অন্ধকারে ও সিলিং সাহেবের সাথে দেখাও করে এসেছে। শুধু একদিন সিলিং সাহেবের সাথে কথা বলতে হবে এইভেবে পাশের গ্রামের এক পণ্ডিত ব্যাক্তির থেকে ইংরিজি ভাষাটা ও প্রায় ১ বছর আগে থেকেই আয়ত্ত করতে শুরু করে দিয়েছিল। যদিও সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করে দেখে যে সিলিং সাহেব বেশ ভালোই ভাঙা ভাঙা বাংলা বলেন। বেশ ভালোই লাগে সিলিং সাহেবের মুখের ওই বাংলা উচ্চারন। সিলিং সাহেব যে বংশীকে বেশ বিশ্বাস করেছেন তা বংশী ভালোই আন্দাজ করতে পেরেছে। সিলিং সাহেবের কাছে যে উদ্দেশ্য নিয়ে বংশী গিয়েছিল তা হোল ইংরেজদের চোখে জমিদার সুপ্রতীককে যথাসম্ভব শত্রু প্রমান করা। সুপ্রতীক যে নিজের চরদের সাহায্যে লক্ষ্মীকান্তপুরের বিদ্রোহীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে ও তাদেরকেই নিজের আপনজন মনে করে এটা বোঝাতে বংশী খুব ভালোভাবেই সক্ষম হয়েছে। আজ সকাল থেকে যে বিদ্রোহী চাষিরা জমিদারের কাছে নিজেদের নালিশ জানাতে এসেছে তাও বংশী নিজের এক বিশ্বস্ত অনুচরের মাধ্যমে সিলিং সাহেবের কাছে খবর পাঠিয়ে দিয়েছে। শেষ যেবার ও সিলিং সাহেবের সাথে দেখা করেছিল সেবার সিলিং সাহেব ওকে একটি আর্জি জানিয়েছিলেন। সিলিং সাহেব চান বংশী রাতের অন্ধকারে সুপ্রতীক কে হত্যা করুক এবং তার প্রতিদানে সুপ্রতীকের স্থলে বংশীকেই উনি জমিদার হিসেবে নিযুক্ত করে দেবেন।
বংশী ডাকাত হওয়ার জন্য ডাকাত হয়নি, ছোট থেকেই ওর ক্ষমতার লোভ। ও জানে এই সুতানুটি অঞ্চলে ক্ষমতার উৎস মোট দুই জায়গায়ঃ এক জমিদারবাড়ি ও দুই ঠাকুর ডাকাতের দল। অত্যন্ত বুদ্ধি খাটিয়েই বংশীর ডাকাত সর্দারে পরিনত হওয়া। এবং তারপর ওর ই ব্যাক্তিগত দক্ষতায় ডাকাতের দল পরিনত হয় জমিদার বাড়ীর লাঠিয়ালে। ক্ষমতা বংশীর চোখের সামনে ভেসে উঠেছে কিন্তু তাতেও বংশী ক্ষান্ত হয়নি। মালার ওপর বংশীর বহুদিনের লোভ। বংশী অন্দরমহল ও বাহিরমহলের মাঝে দায়িত্বে থাকে। তাই প্রায় ই ওর চোখে ভেসে ওঠে মালা আর সুপ্রতীকের শরীর মন দুইএর মিলে যাওয়ার রুপকথা। ও কিছুতেই মানতে পারেনা সুপ্রতীকের এই মালাকে ভোগ করা। মালাকে নগ্ন একা সুপ্রতীক ও দেখেনি, মিলনরত অবস্থায় বহুবার বংশীও দেখেছে। আজ ও যখন ওরা নিজেদের হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করছিল তখন বংশী বারান্দা থেকে একদৃষ্টিতে সব ই লক্ষ্য করছিল। বংশী সিলিং সাহেবের কথায় হয়ত রাজি হয়ে যেতে পারতো কিন্তু ও মীরজাফরের কাহিনী শুনেছে। বেইমান মীরজাফরকে কিন্তু ইংরেজরা ছারেনি। তাই ও শুধুই সময়ের অপেক্ষায় থাকে। ও জানে এই ফিরিঙ্গীদের বিশ্বাস করে কিছু করলে ওর পতন অবশ্যম্ভাবী।
বংশীর কাছে কয়েকটি অঙ্ক রয়েছে। সেই অঙ্কগুলো যদি ও কোনোদিন সমাধান করে দিতে পারে তো কেল্লাফতে। বিদ্রোহীরা কেউ ই জমিদার বা রাজবংশের নয়, ওরা সবাই গরীব কৃষক ও সাধারন বাড়ীর ই সন্তান। সাধারনত এদের মধ্যে বাংলার জমিদার ও মহাজনদের নিয়ে খুব একটা সন্তোষভাব নেই। সুপ্রতীক নিজে প্রজাদের কল্যান করলেও তার পূর্বপুরুষরা কম অত্যাচার করেনি সাধারন প্রজাদের ওপর। সেই অত্যাচারের কাহিনী আজও ঘরে ঘরে লোকমুখে ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ সিপাহী ও বিদ্রোহীরা শুধুই জমিদারকে ব্যাবহার করছে, কখনোই সুপ্রতীককে নিজেদের মানুষ বলে গন্য করছেনা। সুতানুটি ও তার আশপাশের গ্রামে ইংরেজদের সৈন্য মোতায়েন আছে তাই বিদ্রোহীরা এই অঞ্চলটায় ঘাঁটি গেড়ে উঠতে পারেনি। একসময় অবধি সুপ্রতীক, সিলিং সাহেবকে যথেষ্ট তোয়াজ করে চলতেন। এটা প্রায় সমস্ত গ্রামবাসীর ই জানা। অনেকে এখনো এটাই বিশ্বাস করেন এতো জায়গা থাকতে এই সুতানুটিতে ইংরেজদের ঘাঁটি গাড়ার পেছনে আসলে রয়েছেন সুপ্রতীক। জমিদার ই ইংরেজদের সাথে সদ্ভাব রাখতে ওদের এই অঞ্চলে আশ্রয় দিয়েছে। অর্থাৎ গরীব কৃষকের ওপর যে অত্যাচার হচ্ছে তার মুলে ওই জমিদার সুপ্রতীক। অপরদিকে সিলিং সাহেবের একটা সময় অবধি জমিদারের ওপর যথেষ্ট আস্থা থাকলেও কিছুটা বংশীর কূটনীতি ও কিছুটা গ্রামবাসীদের আশ্রয় দেওয়া এই দুই সিলিং সাহেবের মনে সুপ্রতীকের প্রতি বিষবৃক্ষ রোপণ করে দিয়েছে। এদিকে সুপ্রতীকের কাছে ইংরেজ ও সিপাহী উভয় ই শত্রু। সুপ্রতীক মনপ্রানে বিশ্বাস করে যে বিদ্রোহীরা মুঘলদের ই ফিরিয়ে আনতে চায় আর তাতে জমিদার ও মহাজনদের এক বিশাল ক্ষতি। ইংরেজরা সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতায় এলেও জমিদারদের এক বিশাল ক্ষতি। সুপ্রতীকের প্রধান দুর্বলতা মালা, গার্গী ও প্রিয়া। গ্রামবাসীদের দুর্বলতা তাদের অজ্ঞতা ও দ্রুত কাউকে অবিশ্বাস করার প্রবনতা। সিপাহিদের দুর্বলতা তাদের বিপ্লবী মনোভাব। সিলিং সাহেবের দুর্বলতা নারী আশক্তি। আর বংশীর দুর্বলতা বংশী রাজনীতির এই চক্রব্যূহের মধ্যে নেই। বংশী শুধুই বাইরে থেকে সব লক্ষ্য করে নিজেকে ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করাতে চায়। এখন দেখার রাজনীতির এই পাশাখেলায় কেই বা জেতে আর কেই বা হারে।