Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.42 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed
#50
পর্ব ৮- হৃদয়ের যন্ত্রণাঃ

ঠিক কলেজ গেট এর কাছে এসে সাইদুল সাইকেলের স্পিডটা একটু স্লো করে দেয়। কি যেন হয় ওর মনের মধ্যে। নিজেকে ভীষণ পাপী মনে হয়, মনে হয় বিশাল একটা অন্যায় করে ফেলেছে। রাজু ওর বন্ধু, হয়ত মালতী দেবীদের বাড়ীতে দুধ দিতে যাওয়ার পর থেকেই ওদের বন্ধুত্ব শুরু হয়। তা হলেও এই বন্ধুত্বে কখনো কোনও ভেজাল দেখেনি সাইদুল। আম্মির যখন প্রচণ্ড শরীর খারাপ হয়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ও সেই রাজুই ওর ভরসা ছিল। রাজু আর রাজুর বন্ধুরাই তো সাইদুলের আম্মিকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সাইদুল সাইকেলটা থামিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। ও জানে রাজুও ওখান দিয়েই বস্তিতে ফেরত যাবে। সাইদুল ওখানেই দাঁড়িয়ে ওয়েট করতে থাকে। এতক্ষনে সাইদুলের নিজের ওপর ই রাগ হয়। ও রাজুর গায়ে হাত তুলেছে। রাজু বরাবর ই একটু রগচটা ছেলে। একটুতেই রেগে যায়। আর কি আর এমন ও বলেছে। রূপসার সাথে আলাপ হওয়ার আগে অবধি তো ওদের মধ্যে এইধরনের কতই কথা হত। হয়ত রাজু ঠিক বুঝতেই পারেনি যে সাইদুল সত্যি ই রূপসার প্রেমে পড়ে গেছে। হয়ত সাইদুল আর রূপসাকে দেখে কিছুটা ঈর্ষা বোধ করে ফেলেছে। সাইদুলের মনটা খুব ভারী হয়ে যায়। এদিকে প্রায় ১০ মিনিট হয়ে যায়, কিন্তু রাজু ফিরে আসেনা।
সাইদুল আর ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আবার কলেজ গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকে। সোজা মাঠের দিকে যেতে শুরু করে। বেশকিছুটা যাওয়ার পর ও রাজুকে লক্ষ্য করে। রাজু একি ভঙ্গিমায় মাঠের মধ্যে বসে আছে। রাজু হয়ত মুখটা অন্যদিকে করেছিল তাই সাইদুল কে খেয়াল করেনি। সাইদুল সাইকেল টা রাস্তার একপাশে রেখে আসতে আসতে মাঠের মধ্যে নেমে রাজুর পাশে গিয়ে বসে। এতক্ষনে রাজু খেয়াল করে যে সাইদুল এসে ওর পাশে বসেছে। রাজু কোনও উত্তর দেয়না। এভাবে সাইদুল ও প্রায় ১-২ মিনিট চুপ করে বসে থাকে। যে দুই বন্ধু আর ৬ ঘণ্টা আগেও একে ওপরের সাথে আঠার মত চিটে থাকতো হথাত ই তাদের মধ্যে এতো উচু এক প্রাচীর তৈরি হয়ে যায়। সাইদুল জানে ও নিজেই অপরাধ করেছে। আর রাজু যে ধরনের অভিমানী ছেলে ও কিছুতেই মুখ ফুটে সাইদুলকে কিছু বলবে না। সাইদুল আলতো করে নিজের হাত টা রাজুর হাতের ওপর রাখে। রাজু তাও কোনও উত্তর দেয়না। একদৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাইদুলঃ কি রে আমার ওপর রাগ করেছিস। আমি ভুল করে ফেলেছি রে রাজু। আর কখনো এরকম হবেনা।
রাজু কোনও উত্তর দেয়না। সাইদুল রাজুর আরও কিছুটা কাছ ঘেঁষে বসে। নিজের ডান হাত টা রাজুর কাঁধে রাখে।
সাইদুলঃ আমি এরকম করতে চাইনি। কোথা থেকে যে কি হয়ে গেলো, তা সত্যি আমিও কিছুই বুঝতে পারলাম না। এতো ভালো বাড়ীর একটা মেয়ে যে এভাবে আমাকে ভালোবেসে ফেলবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। আমি তো অভিনয় করছিলাম রে। কি করে যে অভিনয় থেকে বাস্তবে পৌঁছে গেলাম কিছুই বুঝলাম না।
রাজু কোনও উত্তর দেয়না। চুপ করে একদৃষ্টিতে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাইদুলঃ তোকে হয়ত বললে তুই আর আমাকে বিশ্বাস করবিনা। জানিস এখনো আমার কাছে রাজু নিজের ই ভাই এর মত। তুই যদি চাস, আমি তাহলে সরে আসব নিজের জায়গা থেকে। রূপসাকে বলে দেবো যে আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
এতক্ষনে রাজু উত্তর দেয়
রাজুঃ আমি তোকে কখনো বলিনি, আমিও তিলোত্তমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। ছোটবেলায় একটা মেয়েকে ভালবাসতাম তোকে বলেছিলাম না। ওটাও ছিল বড়লোকের মেয়ে। তবে আমার ভালোবাসা তা নিখাত ছিল। যতদিন ওর ভালো লেগেছে ততদিন সাথে ঘুরল। তারপর বাড়ীতে জানাজানি হোল। সবাই বোঝাল যে এইরকম ছেলেকে তো আর বিয়ে করা যায়না।
রাজু হথাত করেই চুপ হয়ে গেলো। সাইদুল জানে এটা রাজুর জীবনের সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা। এখানে একবার টান ধরলে রাজুর মত পাষণ্ডের ও চোখ দিয়ে এক দু ফোঁটা জল পড়েই যাবে।
সাইদুলঃ আরে পাগল, তোর জন্য মেয়ে আমি দেখব রে...
রাজুঃ (কিছুটা অবজ্ঞার স্বরে) না থাক ছেড়ে দে। আমি ই দেখে নেবো। তোর রূপসাকে ভালো লাগেছে খুব ভালো কথা। চুটিয়ে প্রেম কর। কিন্তু ভাই একটা কথা মাথায় রাখিস, বিশাল একটা ধাক্কা তুই খাবি। গরীব বড়লোকে ভালোবাসা হয়েই থাকে কিন্তু আমাদের মত অশিক্ষিত ও অসামাজিক জীবদের সাথে একটা নিষ্পাপ মেয়ের ভালোবাসা কখনোই মানায় না।
সাইদুলঃ ভাই আমি তোকে সব সত্যি বলছি। একটু ভেবে দেখ আমরা দুজনেই রূপসাকে ঠিক কি পরিমান অহংকারী ও নাকউঁচু মেয়ে ভাবতাম। কিন্তু রূপসা ওরকম নয়। ও খুব খুব ভালো মনের মেয়ে রে।
রাজুঃ ওটা আজ মনে হচ্ছে রে। কিছুদিন পর মনে হবেনা। মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে ভালোবাসা কখনোই টিকে থাকেনা।
রাজুর মত একটা অসামাজিক ছেলের থেকে যে এতোবড় একটা নৈতিক মূল্যবোধের কথা শুনতে হবে তা হয়ত সাইদুল একবার ও আশা করেনি। সাইদুল জানে রাজু জন্ম থেকেই এরকম ছিলনা। ক্লাস ১০ অবধি স্কুলে পড়েছিল। অভাবের তাড়না ছিল কিন্তু পড়াশুনাটা ঠিক করেই করত। বস্তিতে ওকে সবাই ভালো ছেলে নামেই জানত। তিথি বলে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল রাজুর। দুজনেই দুজনকে প্রচুর ভালবাসত। একদিন তিথির বাড়ীতে সব কিছু জানাজানি হয়ে যায়। ব্যাস শুরু হয়ে যায় মগজ ধোলাই। সাইদুল সেইসময় রাজুর বিশাল একটা ভালো বন্ধু ছিলনা। তবে বস্তির অন্য ছেলেদের থেকে শুনেছে যে রাজু প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিল। বহুবার তিথির বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কান্নাকাটি করেছে, চেঁচামিচি করেছে। তিথির মা, বাবা, দাদাদের হাতে পায়ে ধরেছে। কিন্তু গরিবের কাকুতি মিনুতি কেই বা শোনে। এরপর একদিন তিথির বিয়েও হয়ে যায়। তারপর থেকেই ছেলেটা কেমন যেন পাষণ্ড হয়ে যায়। মানুষ বড়ই জটিল তার একটাই কারন মানুষের হ্রদয় বড়ই ঠুনকো, যেকোনো সময় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে। এতক্ষন সাইদুল চুপ করে শুধুই সব ভেবে যাচ্ছিল হথাত ই রাজুর কথায় ওর হুঁশ ফেরে
রাজুঃ তুই কি রূপসাকে সব কথা বলেছিস না লুকিয়ে রেখেছিস? তিলোত্তমা ওর নিজের বোন হয় রে। ওকি মানতে পারবে তোকে সব জানার পর?
সাইদুল কোনও উত্তর দেয়না, শুধুই নিচের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। সত্যি ই তো রাজু কোনও মিছে কথা বলেনি। সত্যি ই রাজু তিলোত্তমার সাথে যা করেছে, তারপর তো কোনমতেই রূপসা ওকে মানতে পারবে না। এতো সহজে রূপসাকে নিজের মন টা দিয়ে দেওয়া হয়ত সাইদুলের সত্যি ই উচিত হয়নি। রাজুর পাপের সমান ভাগীদার সাইদুল ও।
রাজুঃ তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? তোর কি মনে হয় আমি তোর সম্পর্ক ভাঙিয়ে দেবো? আরে পাগল রাজু অতটাও খারাপ নয় রে। আমি তো তোকে শুধুই সাবধান করে দিলাম। আমি তোকে চিনি সাইদুল। রূপসার আগে তুই কাউকে ভালবাসিস নি। মেয়েসঙ্গ কি হয় তাও জানিস না। প্রথম ভালবাসাকে হারানোর কষ্ট তুই বুঝিস না রে আমি বুঝি। হয়ত এই রাজু আজ সকলের সামনে ভালো ছেলে হিসেবেই থাকতো। ছার এসব চল ওঠা যাক...
সাইদুলঃ ওঠার আগে আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই রাজু। আমি রূপসাকে সব সত্যি কথা বলে দেবো। সত্যি ই মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে ভালোবাসা সম্ভব হয়না। তাতে যা হওয়ার তাই হবে।
রাজুঃ যাই হোক তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকিস। জীবন বড়ই জটিল রে সাইদুল। যাই হয়ে যাক মেনে নিস।
রাজু ও সাইদুল দুজনেই উঠে দাঁড়ায়। প্রায় ৮ টা ৪৫ হয়ে গেছে। এতক্ষনে বাড়ীতেও চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছে। কাল সকালে সাইদুলের আম্মি একবার বাপের বাড়ী যাবে। ঘর ফাঁকাই থাকবে, এদিকে রুপ্সাকেও ডেকে নিয়েছে কাল ও। এখনো রূপসার ম্যাসেজ বা ফোন কিছুই আসেনি। যেকোনো সময় চলে আসতে পারে। রাজু ও সাইদুল দুজনেই খুব জোরে জোরে সাইকেল চালাতে শুরু করে। ফাঁকা রাস্তা, তাই ১০ মিনিটের মধ্যেই বস্তিতে পৌঁছে যায় ওরা। সাইদুল বাড়ীতে ঢোকার মুখেই সাইদুলের মোবাইলে ম্যাসেজ। সাইদুল জানে এটা রূপসার ই ম্যাসেজ। ভেতরে ঢুকে আম্মির সাথে কথা বলে নিয়ে সাইদুল ম্যাসেজ টা পড়ে।
“কি গো এখনো পৌছাওনি তুমি? আর কতক্ষন লাগবে তোমার? আমি এখনো বসে আছি তোমার জন্য। হোস্টেলে ৯টার মধ্যেই খেয়ে নিতে হয়। প্লিজ তাড়াতাড়ি জানাও, কোথায় আছো। আমি তারপর খেতে যাবো”
সাইদুল ঠিক করে রূপসাকে ফোন করবে। রাজু সাইদুলকে অন্তর থেকে চাগিয়ে দিয়ে গেছে। সাইদুল বদ্ধপরিকর যে আজ ই ও রূপসাকে সবকথা জানাবে। সত্যি এতোবড় একটা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে কিছুতেই ওর পক্ষে রূপসাকে ভালোবেসে যাওয়া সম্ভব নয়। সাইদুল সঙ্গে সঙ্গে রূপসাকে ফোনটা করেও ফেলে।
সাইদুলঃ রূপসা, এই বাড়ী পৌছালাম, বাজারে কিছু কাজ ছিল তাই একটু দেরি হয়ে গেলো। আমার কিছু কথা ছিল রূপসা, তুমি শুনবে?
রূপসাঃ সব শুনবো কিন্তু আগে বল, এতটা পথ ২-৩ বার যাতায়াত করলে শরীরটা ভালো আছে তো? তুমি যে কেন এরকম পাগলামি কর সত্যি আমি বুঝতে পারিনা।
সাইদুলঃ আমি একদম ঠিক আছি রূপসা। আমার কিছু কথা ছিল...
রূপসাঃ ওহ আমি কি মরে যাচ্ছি নাকি। কাল তো আসছি শ্বশুরবাড়িতে ওখানেই না হয় সব বলবে। আচ্ছা সাইদুল আম্মি আমাকে দেখে আবার কিছু বলবে না তো? আমায় পছন্দ করবে তো আম্মি?
সাইদুলঃ এ আবার কি কথা, আম্মি কেন পছন্দ করবেনা শুনি। তোমার চেয়ে ভালো বউ কি আম্মি আমার জন্যে খুঁজে আনতে পারবে নাকি। তুমি এসব ভেবনা একদম। আর হ্যাঁ তোমায় তাহলে কাল ই কথাগুলো বলব। আমি জানি যে কথাগুলো আমি তোমায় বলব, তুমি কিছুতেই তা মানতে পারবেনা। আমায় ভুল বুঝবে ভীষণভাবে। কিন্তু আমি মন থেকে এটাই বিশ্বাস করি যে একদিন সব ভুল বোঝাবুঝি সরিয়ে তুমি ঠিক ই ফিরে আসবে আমার কাছে। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবো।
কথাগুলো বলার সময় সাইদুল সত্যি ই প্রচণ্ড আনমনা হয়ে গেছিল। শব্দগুলো যেন মুখ থেকে নয় সাইদুলের হৃদয় থেকে বেড়িয়ে এসে রূপসার কানে গিয়ে পৌছাচ্ছিল। কথায় আছে না, নারীমন ভীষণ সংবেদনশীল। হৃদয়ের প্রতিধ্বনি নারীর কোমল হৃদয়ে খুব সহজেই ধরা পড়ে যায়। রূপসার আর বুঝতে কোনও অসুবিধাই রইলনা যে সাইদুল নিজের জীবনের কোনও অসহায়তার কথা কিছু মানসিক যন্ত্রণার কথা বলছে। কাছের মানুষের এই হাহাকার কিকরে রূপসা অবজ্ঞা করে, যতই হোক ও তো নারী।
রূপসাঃ আরে পাগল, আমি খুব খুব লাকি তোমায় পেয়ে, তুমি এভাবে কষ্ট পেয়না। তোমার ভালো মন্দ সব ই আমি গ্রহন করে নিয়েছি। ভালো সাইদুল ও মন্দ সাইদুল দুজনেই আমার, শুধুই আমার। শোন না আমি এবার খেতে যাচ্ছি। আজ আবার রাতে সিনিয়র দিদিরা রুমে আসবে। ভুল করেও কোনও ম্যাসেজ পাঠিওনা। বোঝোই তো, প্রেম করছি জানলে র*্যাগিং আরও বেড়ে যাবে।
সাইদুলঃ (কিছুটা উদাসীনভাবে) ঠিক আছে যাও তুমি খেয়ে নাও। আমি কাল সকালেই ফোন করব।
রূপসার সাথে কথা বলা হয়ে গেলেও, সাইদুলের মনের দ্বিধাদ্বন্দ্বগুলো স্বস্থানেই বহাল থাকল। না চাইলেও প্রচণ্ডরকম ভাবে রাজু ও তিলোত্তমার এই ৩ মাসে ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো। সাইদুলের মনে শুধু একটা কথাই ঘুরঘুর করতে লাগলো, যদি সত্যি ও চাইত তাহলে এতোবড় অনাচার হয়ত হতনা।
[+] 2 users Like manas's post
Reply


Messages In This Thread
RE: অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed - by manas - 19-01-2019, 09:24 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)