19-01-2019, 09:24 AM
পর্ব ৭- রাজু বনাম সাইদুলঃ
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনি দয়া করে শান্ত হন, আমি আপনাকে আবার আশ্বস্ত করছি যে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কোনও অনিষ্ট করার অভিপ্রায় আমার নেই। সুবীর বাবু আপনিও জানেন যে ডায়েরিটা অভিশপ্ত। যে অভিশাপ আপনার সংসারে নেমে এসেছে সে অভিশাপ আপনার সংসার থেকে একদিন নিজের অজান্তেই বিলীন হয়ে যাবে। সুবীর বাবু মানুষ সময়ের দাস। আপনি বিজ্ঞ মানুষ, অপেক্ষা করুন নিজেকে সময় দিন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুবীর বাবু কোনও উত্তর ই দিলেন না, শুধু প্রচণ্ড ভারাক্রান্ত মনে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনিও জানেন যে আমি এই ডায়েরিটার দাস। আমার একটাই কাজ তা হোল এই ডায়েরিটা আপনাকে পড়ে শোনানো। জানেন তো অন্যের সর্বনাশের ইতিহাস পড়া সহজ, কিন্তু নিজের সর্বনাশের ইতিহাস পড়া খুব কঠিন। ইতিহাস বিষয় তাই তো এরকম।
সত্য বাবু আবার একবার সুবীর বাবুর দিকে তাকালেন। সুবীর বাবু কোনরকমে উঠে বসেছেন।
সত্য বাবুঃ আমি আপনার সাহায্যার্থে একটাই কথা শুধু বলতে চাই। আপনি ধাঁধা বোঝেন। এক কঠিন ধাঁধার মধ্যে আপনি জড়িয়ে পড়েছেন। যখন এই ধাঁধার উত্তর আপনি পাবেন দেখবেন সব শুভ হয়েছে, মঙ্গলময় হয়েছে। সুবীর বাবু যা ঘটে তা ভালোর জন্য ঘটে। আপনাকে এর চেয়েও কঠিন অপ্রিয় কিছু কথা শুনতে হবে যা এই ডায়েরি তে লেখা আছে। যা না পড়ে আপনার নিস্তার নেই। অনুগ্রহ করে আমায় গল্পটা বলার অনুমতি দিন।
সুবীর বাবু এতক্ষনে শান্ত হয়েছেন। হয়ত উনিও নিজের মনে মনে এটাই বলে চলেছেন যে যা ঘটে তা মঙ্গলের ই জন্য ঘটে, একসময় সব ই ঠিক হয়ে যাবে। সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করে দিলেন।
সত্য বাবুঃ প্রায় ৫-১০ মিনিট পর রূপসা ও সাইদুল একে ওপরের উষ্ণ আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয়। সাইদুল একদৃষ্টিতে রূপসার দিকে তাকিয়ে থাকে। রূপসার মিষ্টি হাসি যেন সাইদুলের কানে কানে একটাই কথা বলছিল “কি গো এবার তো আমায় বিশ্বাস হোল, বুঝলে তো আমি কত ভালো। মিলিয়ে গেলো তো সব যন্ত্রণা” সাইদুল এর নজরে ভালোবাসা, কাম, উত্তেজনার চেয়ে অনেক বেশি যা ছিল তা হোল আনুগত্য। সাইদুল বদসঙ্গে পড়ে যতই খারাপ হয়ে যাক না কেন একসময় সাইদুল ও স্বপ্ন দেখত- ভালবাসার স্বপ্ন, ঘর বাঁধার স্বপ্ন। রূপসা যেন এক ডানা কাটা পরী, দুহাতে ওই স্বপ্নগুলো উজাড় করে দিচ্ছে ওকে।
রূপসাঃ কি পাগল এইভাবে কেন তাকিয়ে আছো? আমি তো অতটাও সুন্দরী নই। আজ থেকে এই ডানপিটে, বদমাশ মেয়েটা শুধুই তোমার। আমায় তুমি বকো, আমার ওপর রাগ কর, অভিমান কর যা ইচ্ছে তাই কর কিন্তু আমায় এমনভাবে ভালবাসতে হবে যেন আমি পাগল হয়ে যাই। নয়ত তোমায় রূপসার অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
কথা শেষ করেই খিল খিল করে রূপসা হেঁসে ওঠে। সাইদুল জানে এবার আর কথা বলার আগে ওকে কোনও চিন্তা করতে হবেনা, যা মনে আসবে তাই ও বলতে পারে। সেই অনুমতি রূপসা ওকে দিয়ে দিয়েছে।
সাইদুলঃ আমার একটা ইছে আছে। ইচ্ছে মানে তোমাকে নিয়ে একটা ইচ্ছে। বলব তোমায়?
রূপসাঃ (আবার মিষ্টি করে একটা হেঁসে) উলি বাবা কি চুন্দর কথা, বলব তোমায়। আরে পাগল আমি তো তোমার ই। এতো কিন্তু কিন্তু কেন করছ বলতো। যা মনে আসে, যা বলতে ইচ্ছে হয় তাই বলে ফেল। বল, প্লিজ বল কি বলতে চাও।
সাইদুলঃ রূপসা, আজ যখন সাইকেলে করে আসছিলাম তখন বাজারে একটা সাড়ি দেখছিলাম। খুব পছন্দ হয়েছে আমার। তুমি ওটা পড়ে সোজা কাল আমার বাড়ীতে আসবে। তুমি জাননা রূপসা, সাড়ী পড়লে তোমায় কেমন লাগবে। জানো তোমার মুখশ্রীটা খানিকটা মনীষা কইরালার মত।
রূপসাঃ সাইদুল, এই শেষবারের মত বললাম, আমার সামনে অন্য কোনও মেয়ের নাম ও ওঠাবে না তুমি। তুমি কেন বোঝো না বলতো আমি এটা কিছুতেই মানতে পারবনা যে তোমার অন্য কোনও মেয়েকে ভালো লাগে। তা সে যত বড় অভিনেত্রী ই হোক না কেন।
সাইদুলঃ ঠিক আছে এই কান মুললাম আর কখনো বলব না। কিন্তু একটা অনুরোধ তো রাখো। তুমি বাড়ীতে বলনা যে কাল বাড়ী আসছ বলে। আমি তোমায় আনতে আসব এখানে। তোমায় সাড়ীটা দেবো। তুমি ভেতরে গিয়ে পড়ে আসবে তারপর আমার সাইকেলে করে আমার বাড়ী যাবে। আমি তোমায় নিজে বাড়ী পৌঁছে দেবো।
রূপসাঃ এই না, এরকম বলনা প্লিজ, বাবা জানতে পারলে না আমায় জ্যান্ত রাখবেনা। প্লিজ এই অনুরোধটা করোনা।
সাইদুলঃ ওহ তুমি এতো কেন চিন্তা করছ। আমি তোমায় ভেতরের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবো, চেনাশোনা কেউ ই দেখতে পাবেনা। আমার ওপর বিশ্বাস রাখো।
রূপসাঃ বিশ্বাস আছে বলেই তো রাজী হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সাইদুল, খুব সাবধান দেখো যেন আমার বাড়ীর চেনাশোনা কেউ দেখতে না পায়। এই সন্ধে ৮ টা হয়ে গেলো। কাল তুমি কখন আসবে তা আমি তোমায় ফোন এ জানিয়ে দেবো। আজ আমায় উঠতে হবে নয়ত হোস্টেল এ ঢুকতে অসুবিধা হবে।
রূপসা দ্রুত ওখান থেকে উঠতে যায়, সাইদুল রূপসার হাত টা চেপে ধরে। রূপসা একটা দুষ্টু হাসি ভরা নজরে সাইদুলের দিকে তাকায়।
রূপসাঃ মন ভরেনি বুঝি। আর মন ভরানোর দরকার ও নেই। পরবর্তী অংশ বিবাহের পর। কেমন।
রূপসার মুখে আকস্মিক এই কথা শুনে সাইদুল কিছুটা লজ্জায় ই পড়ে যায়।
সাইদুলঃ আমি এটাই বলছিলাম যে কাল সত্যি এই গরীবের বাড়ী যাবে তো?
রূপসাঃ (আবার খিলখিল করে হেঁসে) ওহে মিস্টার, রূপসার কথার দাম আছে। রূপসা যখন আপনাকে কথা একবার দিয়ে দিয়েছে তখন রূপসা কথা রাখবেই।
সাইদুল খুব সুন্দর ভাবে হেঁসে রূপসার হাতটা ছেড়ে দেয়। রূপসা উঠে দাঁড়ায়। পেছনে সাইদুল ও উঠে দাঁড়ায়। রূপসার প্রচুর দেরি হয়ে গেছিল। রূপসা হনহন করে হোস্টেলের দিকে চলতে শুরু করে, সাইদুল ও পেছন পেছন যায়। রাস্তায় আর ওদের মধ্যে সেরকম কোনও কথা হয়না। ঠিক হোস্টেলের সামনে পৌঁছে রূপসা সেই মোহময়ী দৃষ্টিতে একবার সাইদুলের দিকে তাকায়। মুখে একটা মিষ্টি হাসির সাথে বলে ওঠে
রূপসাঃ সাইদুল, আই লাভ ইউ, আমি তোমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি। তোমায় জিজ্ঞেস করলাম না। কারন এতো সুন্দরী একটা মেয়ে যখন কাউকে ভালোবাসার কথা জানায় তখন ভালো না বাসার কোনও কারন ই থাকেনা।
রূপসার এই কথাটা শুনে সাইদুল ও খুব জোরে জোরে হেঁসে দেয়। রূপসাও সুন্দর ভাবে হেঁসে প্রত্তুত্তর করে।
রূপসাঃ ওকে বাই। তুমি সাবধানে বাড়ী যাও। আমি কল করছি তোমায়। সাবধানে জেও কিন্তু।
কথাটা বলতে বলতেই আর হাত নাড়াতে নারাতেই রূপসা হোস্টেলের দিকে চলতে শুরু করে। সাইদুল ঠিক ততক্ষন ই হাত নাড়ায় যতক্ষণ ও রূপসাকে দেখতে পায়। রূপসা হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে যায় তাও সাইদুল ওইদিকেই তাকিয়ে থাকে। সাইদুলের মুখের ওই নিষ্পাপ হাসিটা বেশিক্ষন স্থায়ী হলনা। পেছন থেকে একটা বেশ শক্ত হাত এসে ওর কাঁধে থাবা মারল আর সাথে সেই পরিচিত কণ্ঠ
“কি ভাই প্রেম করছ, হাত নাড়ছ, কিস ও করলে অথচ বন্ধুকে একবার ও বললে না”
সাইদুল প্রচণ্ড চমকে গিয়ে পেছন ঘুরে দেখে। ঠিক ওর ই পেছনে রাজু দাঁড়িয়ে আছে।
সাইদুলঃ একি রাজু তুই এখানে। তুই আমাকে ফলো করেছিস। (সাইদুল বেশ কিছুটা গলার জোরেই কথাটা বলল)
রাজু একবার বড় বড় চোখে সাইদুলের দিকে তাকাল
রাজুঃ গলার জোর কাকে দেখাচ্ছিস বে? বেইমানি করলি বন্ধুর সাথে। (রাজু আরও দুগুন চেঁচিয়ে কথাটা বলল)
এবার সাইদুল সত্যি ই ভয় পেয়ে গেছে। ওদের কথাবার্তা চেঁচামিচি শুনে যদি রূপসা বাইরে বেড়িয়ে আসে আর যদি রাজুকে এখানে দেখে ফেলে তাহলে রূপসা ভীষণভাবে ভুল বুঝবে সাইদুলকে। সাইদুল কিছুটা কাতর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল
সাইদুলঃ রাজু ভাই আমার, এখানে প্লিজ ঝগড়া করিস না। আমি ভয়ে তোকে কিছু বলতে পারিনি। একটু আগে চল আমি তোকে সব খুলে বলছি।
রাজু ওর কথা শুনল, দুজনেই সাইকেল নিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো। ঠিক যে মাঠটায় বসে এতক্ষন ওরা কথা বলছিল, সেই জায়গাটায় গিয়ে ওরা বসলো।
রাজুঃ (প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে) কেনরে আমি কি তিলোত্তমাকে ভালোবেসে ফেলিনি। আমিও ভালবেসে ছিলাম। কিন্তু কি হোল। বড়লোকের মেয়ে ঠিক মা বাবার কথা শুনে আমায় অপমান করে দিল। আমি তিলোত্তমার কোনও ক্ষতি করতে চাইনি সাইদুল।
সাইদুল প্রচণ্ড অনুতাপের সাথে মাথা নিচু করে সব শুনছিল। সাইদুল নিজের ডান হাতটা রাজুর কাঁধে রাখে।
সাইদুলঃ তুই আমায় ভুল বুঝিস না রাজু। আমি তোকে ঠকাতাম না রে রাজু। কেন যে এরকম হোল রাজু আমি জানিনা। আমি রূপসাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। আমার তো অনেক কষ্ট তুই জানিস, ছোটবেলায় আব্বাকে...
রাজুঃ (প্রচণ্ড জোরে হাত টা কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে) আর কষ্ট চোঁদাস না শালা। আমি কোটিপতির ছেলে নয়, কষ্ট অভাব আমার ও আছে।
সাইদুল মাথাটা নিচু করে চুপ করে থাকে।
রাজুঃ আজ যখন দেখছিলাম তুই আর রূপসা চুম্মাচাটি করছিস, আমার চোখে জল এসে গেছিল। বারবার তিলোত্তমার কথা মনে এসে যাচ্ছিল। শালা এতো ভালো একটা মেয়ে, সত্যি আজকের দিনে আর একটাও হয়না। আমি শালা জানোয়ারের বাচ্চা একটা।
কথা গুলো বলতে বলতে রাজু প্রচণ্ড উদাসীন হয়ে যায় আর আকাশের দিকে তাকায়। সাইদুল আবার ওর কাঁধে হাত রাখে। রাজুও কিছু উত্তর দেয়না। সমবেদনার সুরে সাইদুল বলে ওঠে
সাইদুলঃ তুই একাই এর জন্য দায়ী নয়। আমি সব জেনেও তোকে আটকাইনি। আমি তোকে হ্যাঁ হ্যাঁ বলেই গেছি শুধু। কিন্তু ভাই একি ভুল কেন আমরা দুবার করব বল।
রাজুঃ (প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সাইদুলের কলার টা ধরে) শুয়োরের বাচ্চা, আমি হব জানোয়ার আর তুই হবি মানুষ, ভদ্রলোক। ভুলে গেলি তিলোত্তমার ফটোগুলো তুই তুলেছিস। আমি নয়। কিরে শালা মনে পড়ছে সব। মন আমার ও দুর্বল ছিলরে। তুই আমায় কথা দিয়েছিলি আমায় রূপসার ভাগ দিবি...
সাইদুল প্রচণ্ড রেগে গিয়ে রাজুর গালে সপাটে একটা চড় মারে।
সাইদুলঃ আমি বেঁচে থাকতে তা হবেনা। আমার দরকার নেই ভালোবাসার। রূপসার ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হবে। আমি থাকতে কিছুই হবেনা রে।
সাইদুল প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সাইকেল নিয়ে উঠে পড়ে, রাজু ওখানেই বসে থাকে। সাইদুল সাইকেল টা খুব জোরে চালিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনি দয়া করে শান্ত হন, আমি আপনাকে আবার আশ্বস্ত করছি যে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কোনও অনিষ্ট করার অভিপ্রায় আমার নেই। সুবীর বাবু আপনিও জানেন যে ডায়েরিটা অভিশপ্ত। যে অভিশাপ আপনার সংসারে নেমে এসেছে সে অভিশাপ আপনার সংসার থেকে একদিন নিজের অজান্তেই বিলীন হয়ে যাবে। সুবীর বাবু মানুষ সময়ের দাস। আপনি বিজ্ঞ মানুষ, অপেক্ষা করুন নিজেকে সময় দিন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
সুবীর বাবু কোনও উত্তর ই দিলেন না, শুধু প্রচণ্ড ভারাক্রান্ত মনে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু আপনিও জানেন যে আমি এই ডায়েরিটার দাস। আমার একটাই কাজ তা হোল এই ডায়েরিটা আপনাকে পড়ে শোনানো। জানেন তো অন্যের সর্বনাশের ইতিহাস পড়া সহজ, কিন্তু নিজের সর্বনাশের ইতিহাস পড়া খুব কঠিন। ইতিহাস বিষয় তাই তো এরকম।
সত্য বাবু আবার একবার সুবীর বাবুর দিকে তাকালেন। সুবীর বাবু কোনরকমে উঠে বসেছেন।
সত্য বাবুঃ আমি আপনার সাহায্যার্থে একটাই কথা শুধু বলতে চাই। আপনি ধাঁধা বোঝেন। এক কঠিন ধাঁধার মধ্যে আপনি জড়িয়ে পড়েছেন। যখন এই ধাঁধার উত্তর আপনি পাবেন দেখবেন সব শুভ হয়েছে, মঙ্গলময় হয়েছে। সুবীর বাবু যা ঘটে তা ভালোর জন্য ঘটে। আপনাকে এর চেয়েও কঠিন অপ্রিয় কিছু কথা শুনতে হবে যা এই ডায়েরি তে লেখা আছে। যা না পড়ে আপনার নিস্তার নেই। অনুগ্রহ করে আমায় গল্পটা বলার অনুমতি দিন।
সুবীর বাবু এতক্ষনে শান্ত হয়েছেন। হয়ত উনিও নিজের মনে মনে এটাই বলে চলেছেন যে যা ঘটে তা মঙ্গলের ই জন্য ঘটে, একসময় সব ই ঠিক হয়ে যাবে। সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করে দিলেন।
সত্য বাবুঃ প্রায় ৫-১০ মিনিট পর রূপসা ও সাইদুল একে ওপরের উষ্ণ আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হয়। সাইদুল একদৃষ্টিতে রূপসার দিকে তাকিয়ে থাকে। রূপসার মিষ্টি হাসি যেন সাইদুলের কানে কানে একটাই কথা বলছিল “কি গো এবার তো আমায় বিশ্বাস হোল, বুঝলে তো আমি কত ভালো। মিলিয়ে গেলো তো সব যন্ত্রণা” সাইদুল এর নজরে ভালোবাসা, কাম, উত্তেজনার চেয়ে অনেক বেশি যা ছিল তা হোল আনুগত্য। সাইদুল বদসঙ্গে পড়ে যতই খারাপ হয়ে যাক না কেন একসময় সাইদুল ও স্বপ্ন দেখত- ভালবাসার স্বপ্ন, ঘর বাঁধার স্বপ্ন। রূপসা যেন এক ডানা কাটা পরী, দুহাতে ওই স্বপ্নগুলো উজাড় করে দিচ্ছে ওকে।
রূপসাঃ কি পাগল এইভাবে কেন তাকিয়ে আছো? আমি তো অতটাও সুন্দরী নই। আজ থেকে এই ডানপিটে, বদমাশ মেয়েটা শুধুই তোমার। আমায় তুমি বকো, আমার ওপর রাগ কর, অভিমান কর যা ইচ্ছে তাই কর কিন্তু আমায় এমনভাবে ভালবাসতে হবে যেন আমি পাগল হয়ে যাই। নয়ত তোমায় রূপসার অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
কথা শেষ করেই খিল খিল করে রূপসা হেঁসে ওঠে। সাইদুল জানে এবার আর কথা বলার আগে ওকে কোনও চিন্তা করতে হবেনা, যা মনে আসবে তাই ও বলতে পারে। সেই অনুমতি রূপসা ওকে দিয়ে দিয়েছে।
সাইদুলঃ আমার একটা ইছে আছে। ইচ্ছে মানে তোমাকে নিয়ে একটা ইচ্ছে। বলব তোমায়?
রূপসাঃ (আবার মিষ্টি করে একটা হেঁসে) উলি বাবা কি চুন্দর কথা, বলব তোমায়। আরে পাগল আমি তো তোমার ই। এতো কিন্তু কিন্তু কেন করছ বলতো। যা মনে আসে, যা বলতে ইচ্ছে হয় তাই বলে ফেল। বল, প্লিজ বল কি বলতে চাও।
সাইদুলঃ রূপসা, আজ যখন সাইকেলে করে আসছিলাম তখন বাজারে একটা সাড়ি দেখছিলাম। খুব পছন্দ হয়েছে আমার। তুমি ওটা পড়ে সোজা কাল আমার বাড়ীতে আসবে। তুমি জাননা রূপসা, সাড়ী পড়লে তোমায় কেমন লাগবে। জানো তোমার মুখশ্রীটা খানিকটা মনীষা কইরালার মত।
রূপসাঃ সাইদুল, এই শেষবারের মত বললাম, আমার সামনে অন্য কোনও মেয়ের নাম ও ওঠাবে না তুমি। তুমি কেন বোঝো না বলতো আমি এটা কিছুতেই মানতে পারবনা যে তোমার অন্য কোনও মেয়েকে ভালো লাগে। তা সে যত বড় অভিনেত্রী ই হোক না কেন।
সাইদুলঃ ঠিক আছে এই কান মুললাম আর কখনো বলব না। কিন্তু একটা অনুরোধ তো রাখো। তুমি বাড়ীতে বলনা যে কাল বাড়ী আসছ বলে। আমি তোমায় আনতে আসব এখানে। তোমায় সাড়ীটা দেবো। তুমি ভেতরে গিয়ে পড়ে আসবে তারপর আমার সাইকেলে করে আমার বাড়ী যাবে। আমি তোমায় নিজে বাড়ী পৌঁছে দেবো।
রূপসাঃ এই না, এরকম বলনা প্লিজ, বাবা জানতে পারলে না আমায় জ্যান্ত রাখবেনা। প্লিজ এই অনুরোধটা করোনা।
সাইদুলঃ ওহ তুমি এতো কেন চিন্তা করছ। আমি তোমায় ভেতরের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবো, চেনাশোনা কেউ ই দেখতে পাবেনা। আমার ওপর বিশ্বাস রাখো।
রূপসাঃ বিশ্বাস আছে বলেই তো রাজী হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সাইদুল, খুব সাবধান দেখো যেন আমার বাড়ীর চেনাশোনা কেউ দেখতে না পায়। এই সন্ধে ৮ টা হয়ে গেলো। কাল তুমি কখন আসবে তা আমি তোমায় ফোন এ জানিয়ে দেবো। আজ আমায় উঠতে হবে নয়ত হোস্টেল এ ঢুকতে অসুবিধা হবে।
রূপসা দ্রুত ওখান থেকে উঠতে যায়, সাইদুল রূপসার হাত টা চেপে ধরে। রূপসা একটা দুষ্টু হাসি ভরা নজরে সাইদুলের দিকে তাকায়।
রূপসাঃ মন ভরেনি বুঝি। আর মন ভরানোর দরকার ও নেই। পরবর্তী অংশ বিবাহের পর। কেমন।
রূপসার মুখে আকস্মিক এই কথা শুনে সাইদুল কিছুটা লজ্জায় ই পড়ে যায়।
সাইদুলঃ আমি এটাই বলছিলাম যে কাল সত্যি এই গরীবের বাড়ী যাবে তো?
রূপসাঃ (আবার খিলখিল করে হেঁসে) ওহে মিস্টার, রূপসার কথার দাম আছে। রূপসা যখন আপনাকে কথা একবার দিয়ে দিয়েছে তখন রূপসা কথা রাখবেই।
সাইদুল খুব সুন্দর ভাবে হেঁসে রূপসার হাতটা ছেড়ে দেয়। রূপসা উঠে দাঁড়ায়। পেছনে সাইদুল ও উঠে দাঁড়ায়। রূপসার প্রচুর দেরি হয়ে গেছিল। রূপসা হনহন করে হোস্টেলের দিকে চলতে শুরু করে, সাইদুল ও পেছন পেছন যায়। রাস্তায় আর ওদের মধ্যে সেরকম কোনও কথা হয়না। ঠিক হোস্টেলের সামনে পৌঁছে রূপসা সেই মোহময়ী দৃষ্টিতে একবার সাইদুলের দিকে তাকায়। মুখে একটা মিষ্টি হাসির সাথে বলে ওঠে
রূপসাঃ সাইদুল, আই লাভ ইউ, আমি তোমাকে খুব খুব খুব ভালোবাসি। তোমায় জিজ্ঞেস করলাম না। কারন এতো সুন্দরী একটা মেয়ে যখন কাউকে ভালোবাসার কথা জানায় তখন ভালো না বাসার কোনও কারন ই থাকেনা।
রূপসার এই কথাটা শুনে সাইদুল ও খুব জোরে জোরে হেঁসে দেয়। রূপসাও সুন্দর ভাবে হেঁসে প্রত্তুত্তর করে।
রূপসাঃ ওকে বাই। তুমি সাবধানে বাড়ী যাও। আমি কল করছি তোমায়। সাবধানে জেও কিন্তু।
কথাটা বলতে বলতেই আর হাত নাড়াতে নারাতেই রূপসা হোস্টেলের দিকে চলতে শুরু করে। সাইদুল ঠিক ততক্ষন ই হাত নাড়ায় যতক্ষণ ও রূপসাকে দেখতে পায়। রূপসা হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে যায় তাও সাইদুল ওইদিকেই তাকিয়ে থাকে। সাইদুলের মুখের ওই নিষ্পাপ হাসিটা বেশিক্ষন স্থায়ী হলনা। পেছন থেকে একটা বেশ শক্ত হাত এসে ওর কাঁধে থাবা মারল আর সাথে সেই পরিচিত কণ্ঠ
“কি ভাই প্রেম করছ, হাত নাড়ছ, কিস ও করলে অথচ বন্ধুকে একবার ও বললে না”
সাইদুল প্রচণ্ড চমকে গিয়ে পেছন ঘুরে দেখে। ঠিক ওর ই পেছনে রাজু দাঁড়িয়ে আছে।
সাইদুলঃ একি রাজু তুই এখানে। তুই আমাকে ফলো করেছিস। (সাইদুল বেশ কিছুটা গলার জোরেই কথাটা বলল)
রাজু একবার বড় বড় চোখে সাইদুলের দিকে তাকাল
রাজুঃ গলার জোর কাকে দেখাচ্ছিস বে? বেইমানি করলি বন্ধুর সাথে। (রাজু আরও দুগুন চেঁচিয়ে কথাটা বলল)
এবার সাইদুল সত্যি ই ভয় পেয়ে গেছে। ওদের কথাবার্তা চেঁচামিচি শুনে যদি রূপসা বাইরে বেড়িয়ে আসে আর যদি রাজুকে এখানে দেখে ফেলে তাহলে রূপসা ভীষণভাবে ভুল বুঝবে সাইদুলকে। সাইদুল কিছুটা কাতর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল
সাইদুলঃ রাজু ভাই আমার, এখানে প্লিজ ঝগড়া করিস না। আমি ভয়ে তোকে কিছু বলতে পারিনি। একটু আগে চল আমি তোকে সব খুলে বলছি।
রাজু ওর কথা শুনল, দুজনেই সাইকেল নিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো। ঠিক যে মাঠটায় বসে এতক্ষন ওরা কথা বলছিল, সেই জায়গাটায় গিয়ে ওরা বসলো।
রাজুঃ (প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে) কেনরে আমি কি তিলোত্তমাকে ভালোবেসে ফেলিনি। আমিও ভালবেসে ছিলাম। কিন্তু কি হোল। বড়লোকের মেয়ে ঠিক মা বাবার কথা শুনে আমায় অপমান করে দিল। আমি তিলোত্তমার কোনও ক্ষতি করতে চাইনি সাইদুল।
সাইদুল প্রচণ্ড অনুতাপের সাথে মাথা নিচু করে সব শুনছিল। সাইদুল নিজের ডান হাতটা রাজুর কাঁধে রাখে।
সাইদুলঃ তুই আমায় ভুল বুঝিস না রাজু। আমি তোকে ঠকাতাম না রে রাজু। কেন যে এরকম হোল রাজু আমি জানিনা। আমি রূপসাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছি। আমার তো অনেক কষ্ট তুই জানিস, ছোটবেলায় আব্বাকে...
রাজুঃ (প্রচণ্ড জোরে হাত টা কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে) আর কষ্ট চোঁদাস না শালা। আমি কোটিপতির ছেলে নয়, কষ্ট অভাব আমার ও আছে।
সাইদুল মাথাটা নিচু করে চুপ করে থাকে।
রাজুঃ আজ যখন দেখছিলাম তুই আর রূপসা চুম্মাচাটি করছিস, আমার চোখে জল এসে গেছিল। বারবার তিলোত্তমার কথা মনে এসে যাচ্ছিল। শালা এতো ভালো একটা মেয়ে, সত্যি আজকের দিনে আর একটাও হয়না। আমি শালা জানোয়ারের বাচ্চা একটা।
কথা গুলো বলতে বলতে রাজু প্রচণ্ড উদাসীন হয়ে যায় আর আকাশের দিকে তাকায়। সাইদুল আবার ওর কাঁধে হাত রাখে। রাজুও কিছু উত্তর দেয়না। সমবেদনার সুরে সাইদুল বলে ওঠে
সাইদুলঃ তুই একাই এর জন্য দায়ী নয়। আমি সব জেনেও তোকে আটকাইনি। আমি তোকে হ্যাঁ হ্যাঁ বলেই গেছি শুধু। কিন্তু ভাই একি ভুল কেন আমরা দুবার করব বল।
রাজুঃ (প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সাইদুলের কলার টা ধরে) শুয়োরের বাচ্চা, আমি হব জানোয়ার আর তুই হবি মানুষ, ভদ্রলোক। ভুলে গেলি তিলোত্তমার ফটোগুলো তুই তুলেছিস। আমি নয়। কিরে শালা মনে পড়ছে সব। মন আমার ও দুর্বল ছিলরে। তুই আমায় কথা দিয়েছিলি আমায় রূপসার ভাগ দিবি...
সাইদুল প্রচণ্ড রেগে গিয়ে রাজুর গালে সপাটে একটা চড় মারে।
সাইদুলঃ আমি বেঁচে থাকতে তা হবেনা। আমার দরকার নেই ভালোবাসার। রূপসার ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হবে। আমি থাকতে কিছুই হবেনা রে।
সাইদুল প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সাইকেল নিয়ে উঠে পড়ে, রাজু ওখানেই বসে থাকে। সাইদুল সাইকেল টা খুব জোরে চালিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়।