Thread Rating:
  • 98 Vote(s) - 3.11 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Horror অভিশপ্ত সেই বাড়িটা - বাবান
6
পরের দিন সকালে সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে শুরু হলেও সকলের আড়ালে কিছু অস্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়ে গেছিলো. কিছু পরিবর্তনের সূচনা হয়ে গেছিলো. অনিমেষ বাবু সকালে উঠে দেখেন স্নিগ্ধা তখনো ঘুমাচ্ছে. এটা একটু অন্যরকম লাগলো তার. কারণ এতো বছরের বিবাহিত জীবনে তার স্ত্রীই আগে উঠে তাকে আর তাদের সন্তানকে ঘুম থেকে তুলেছে. খুব কম সময়ই আছে যখন এই নিয়মের অন্যথা হয়েছে. তবু এটা কোনো বড়ো ব্যাপার নয় মনে করে অনিমেষ বাবুই স্ত্রীকে ডেকে তোলেন. স্নিগ্ধা যেন জাগতেই চাইছিলনা এতটাই গাঢ় ঘুম. স্নিগ্ধা উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো. এতো দেরি? 


স্নিগ্ধা : এ বাবা এতো দেরি হয়ে গেলো ! চলো চলো তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি তোমার টিফিন বানিয়ে দিচ্ছি. ওদিকে ছেলেটাকেও তুলতে হবে. 

অনিমেষ বাবু হেসে বললেন : আরে... ঠিক আছে. ওতো তাড়াহুড়ো করোনাতো, মাঝে মাঝে এটা হতেই পারে. আচ্ছা....কাল রাতে কি তুমি আমায় ডাকছিলে? 

স্নিগ্ধা : আমি?  কৈ নাতো. 

অনিমেষ : ওহ.... তাহলে মনে হয় ঘুমের ঘোরে ভুল শুনেছি. কিন্তু মনে হলো কেউ.......... যাকগে যাই স্নান করেনিই  আমি .

স্নিগ্ধা উঠে ছেলেকে গিয়ে তুললো. বুবাই উঠেই মাকে জড়িয়ে ধরে. স্নিগ্ধা বুবাইয়ের কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় এটা তার প্রত্যেকদিনের অভ্যেস.  বুবাইকে উঠিয়ে স্নিগ্ধা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে মালতি আলু কাটছে. স্নিগ্ধাকে দেখে মালতি বলে : দিদি.... আজ দেরি হলো যে?  স্নিগ্ধা মালতির পাশে রাখা একটা টেবিলে বসে বলে : আর বলোনা.... রাতে ঠিক ঘুম হয়নি তাই সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেলো. স্নিগ্ধাও মালতির সাথে মিলে রান্না করতে লাগলো. এমনিতে তার রান্নাঘরে যাবার দরকার পড়েনা সব কাজ মালতিই করে কিন্তু সকালে স্বামীর টিফিন আর চা সে নিজেই করতে পছন্দ করে. আগে বুবাই যখন ছোট ছিল তার সব রান্না স্নিগ্ধা নিজেই করতো তবে এখানে এসে বুঝেছে মালতির হাতের রান্নাও দারুন. অনিমেষ বাবু প্রাতকির্ত ও স্নান সেরে তৈরী হয়ে নিলেন আর টিফিন খেয়ে দুই সন্তানের মাথায় চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলেন. ওদিকে বুবাইয়ের জন্য মালতি সকালের খাবার দিয়ে গেছে, সে সেটাই খাচ্ছে আর ভাইয়ের সঙ্গে বসে টিভি দেখছে. বুবাই মাত্র আট বছরের তাই সে কার্টুন ছাড়া কিছুই পছন্দ করেনা. স্নিগ্ধা ছেলেকে খেতে বলে কল ঘরে গেলো তার সব কাজ বাকি. 

বাড়ি থেকে হাসপাতাল মাত্র 10 মিনিটের রাস্তা তাই তিনি হেঁটেই যান. অনিমেষ বাবু হাসপাতালে পৌঁছে দেখলেন জগবন্ধু বাবু বসে আছেন. অনিমেষ বাবুকে আসতে দেখেই হেসে উঠলেন উনি. জগবন্ধু বাবু বললেন : কি?  সব ঠিক থাক চলছে তো? কোনো অসুবিধ হচ্ছে নাতো? অনিমেষ বাবু হেসে বললেন : না.... না.... কোনো অসুবিধা নেই. আপনার জন্যই আমার কাজ করতে কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা. আপনি যদি এখানকার কয়েকজন কে আমার এই হাসপাতালের হেল্পার হিসাবে না নিয়ে আসতেন তাহলে অবশ্য বিপদে পড়তাম হা... হা... হা. জগবন্ধু বাবু হেসে বললেন : আপনি আমাদের কথা কথা ভেবে শহর ছেড়ে এখানে আমাদের মাঝে এসেছেন, আর আমরা আপনার জন্য এইটুকু করবোনা? আপনার যা দরকার পড়বে আমাকে বলবেন. অনিমেষ বাবু হেসে বললেন : থ্যাংক ইউ স্যার, এবার শুধু ওষুধের সাপ্লাইটা ঠিকঠাক হলেই আর কোনো অসুবিধা হবেনা. কাল আমি এই ব্যাপারে একবার কলকাতায় যাবো. আমার কয়েকটা কাজ আছে, কয়েকটা মিটিং করতে হবে, আবার অঞ্জন বাবুর সাথে ফোনে কথা হলো, ওনাকে বললাম এই হাসপাতাল এর পরিস্থিতি আর উন্নতির ব্যাপারে কিছু ডিটেলে কথা বলার আছে. উনি বললেন সামনাসামনি কথা বলাই ভালো টাকা পয়সার ব্যাপার. তাই ওনার সাথেও দেখা করতে হবে এসবেই হয়তো সন্ধে হয়ে যাবে. তাছাড়া আমার বাবা মা আমার ভাইয়ের কাছে হুগলী চলে গেছে. বাড়িটাও ফাঁকা, তাই ভাবছি যাচ্ছি যখন একবার বাড়িটা দেখে আসবো. হয়তো কাল আর ফেরা হবেনা. পরেরদিন ফিরবো. 
 কথাটা শুনে জগবন্ধু বাবু একটু চিন্তিত হয়ে পড়লেন. সেটা অবশ্য অনিমেষ বাবুর চোখ এড়ালোনা. তিনি জগবন্ধু বাবুকে জিজ্ঞেস করলেন : কি হলো জগবন্ধু বাবু?  আপনি হটাৎ কোনো দুশ্চিন্তায় পড়লেন মনে হচ্ছে. জগবন্ধু বাবু একটু মুচকি হেসে বললেন : চিন্তা করছি বটে তবে সেটা আপনাকে নিয়ে, আপনি আমাদের কথা ভেবে এই গাঁয়ের সেবা করতে এসেছেন, তাই আমাদেরও উচিত আপনার খেয়াল রাখা, তাই ভাবছিলাম আপনি থাকবেননা, এদিকে আপনার স্ত্রী সন্তান ওই বাড়িতে একা থাকবেন, আসলে বাড়িটার অতীতটাতো ঠিক ভালো নয় তাই........ অনিমেষ বাবু হো হো করে হেসে উঠে বললেন : ওহ বুঝেছি... আবার সেই ভুত?  মশাই আপনি একজন শিক্ষক হয়ে এসবে বিশ্বাস করেন?  ঐসব গুলো গল্প আমি কোনোদিন মানিনি আর মানবোও না. হটাৎ পেছন থেকে একটা গলা ভেসে এলো : ভুত আছে অনিমেষ. সবাই পেছন ফিরে দেখলো অচিন্ত বাবু আসছেন. অচিন্ত বাবু এসে অনিমেষের কাঁধে হাত রেখে বললেন : এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তা তোমাদের দেখেই এলাম. তুমি বলছো ভুত নেই? ভুত আছে অনিমেষ, তাদের অস্তিত্ব আছে. অনিমেষ বাবু হেসে বললেন : হা... ভুত আছে তো, তাদের অস্তিত্ব আছে...... তবে সেটা ছোটদের গল্পের বইতে. আপনি কোনোদিন ভুত দেখেছেন জগবন্ধু বাবু ?  জগবন্ধু বাবু হেসে বললেন : না তা দেখিনি. তবে অচিন্ত বাবু নাকি দেখেছেন. অনিমেষ বাবু অচিন্ত বাবুকে নিয়ে আর জগবন্ধু বাবুকে নিয়ে ভেতরে গিয়ে বসলেন. তারপর তার সহকারীকে তিন কাপ চা আনতে পাঠিয়ে বললেন : বলুন স্যার..... আপনি কি দেখেছিলেন?  অচিন্ত বাবু হেসে জবাব দিলেন : তোমরা আজকালকার দিনের ছেলে তাই ভুত টুট মানোনা. আমার নাতিও এসব মানেনা. কিন্তু আমি বিশ্বাস করি. তাহলে বলি শোনো........... এই বলে তিনি তার কলেজ বয়সের একটা ঘটনা বলতে লাগলেন. তাদের কলেজের আসার পথে একটা শশান ছিল, একবার সেখান দিয়ে ফেরার পথে নাকি কেউ তার পিছু নেয় আর অনেকদূর পর্যন্ত পেছনে আসে, শেষে প্রাণ বাঁচাতে তিনি দৌড় লাগান. অনিমেষ বাবু এটা শুনে হেসে বললেন : স্যার, কিছু মনে করবেননা.... এইরকম ঘটনা আমি অন্তত দশটা গল্পে শুনেছি আর ওটা যে ভুত ছিল তার কি প্রমান?  হতে পারে ওটা কোনো বাজে লোক ছিল, আপনাকে বাচ্চা পেয়ে কিডন্যাপ করার তালে ছিল বা লুঠ করার তালে ছিল. এই কথাটা শুনে অচিন্ত বাবু বললেন : তোমার কথাটা আমার মনেও পরে এসেছিলো. তখন হয়তো আমি ভয়ের চোটে তাকে ভুত ভেবেছিলাম, হয়তো সেটা চোর ছিল কিন্তু আমার দ্বিতীয় ঘটনাটা যখন ঘটে তখন আমি বুঝেছিলাম ভুত সত্যি আছে. ততক্ষনে চা এসে গেছিলো. সবাই চা খেতে লাগলো. অনিমেষ বাবু চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন : বেশতো... তাহলে ওটাও হয়ে যাক. শুনি কি ঘটেছিলো?  অচিন্ত বাবু প্রৌঢ় মানুষ, তিনি বুঝে গেলেন অনিমেষ ব্যাপারটাকে এখনো মজার চোখে দেখছে তাও তিনি হেসে বললেন : বেশ..... শোনো তাহলে ...... আমি তখন সবে চাকরি পেয়েছি. আমার ফিরতে প্রতিদিনই বেশ রাত হতো. তখন তো এখনকার মতো যান বাহনের এতো সুবিধা ছিল না, তাই কখনো ঠিক সময় ফিরতাম আবার কখনো দেরি হয়ে যেত. কিন্তু সেদিন একটু বেশিই রাত হয়ে গেছিলো কারণ সেদিন খুব গাড়ি ঘোড়ার অসুবিধা ছিল. তাই ফিরতে ফিরতে রাত দশটা হয়ে যায়. ওই সময় গ্রামের দশটা.... বুঝতেই পারছো....চারিদিক নিস্তব্ধ,  ঘুটঘুটে অন্ধকার কারণ তখনো আলো আসেনি সেই ভাবে. খুব ভালো করে পা ফেলে এগিয়ে চলেছি... এমন সময় শুরু হলো বৃষ্টি. আকাশটা অনেক্ষন ধরেই গুড়ুম গুড়ুম করছিলো তার ফলাফল এবার আমি পেলাম. শুরু হলো ভয়ানক বৃষ্টি. তার সাথে বজ্রপাত. ছাতাও আনিনি সঙ্গে তাই  নিজেকে বাঁচাতে আমি ছুট লাগলাম. কোথায় যাচ্ছি খেয়াল নেই শুধুই ছুটছি. এতো জোরে বৃষ্টি হচ্ছে যে সামনে কি আছে পরিষ্কার বুঝতেও পারছিনা.  একসময় কিসের সাথে আমি ধাক্কা খেলাম. একটু চোট লাগলো. উঠে হাত বাড়িয়ে দেখি একটা বাড়ির দেয়াল. একটা আস্তানা খুঁজে পেয়ে মনে একটু শান্তি পেলাম. আমি বাড়ির বাইরে ছাওয়াতে দাঁড়িয়ে রইলাম. আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পাশেই একটা জানলা. দেখলাম জানলার পাল্লাটা খোলা. একটু কৌতূহল হতে আমি ওই জানলায় চোখ রাখলাম. ভেতরটাও অন্ধকার. শুধু বিদ্যুতের চমকে ভেতরটা দেখা যাচ্ছে.  আমি দেখলাম ভেতরে একটা দালান. হটাৎ বিদ্যুতের চমকে দেখলাম একটা বাচ্চা ওই দালানে দাঁড়িয়ে আছে. আমি ভাবলাম এই বাড়ির ছেলে হয়তো. তারপর দেখলাম কৈ.... কেউ নেইতো. তাহলে কি আমার চোখের ভুল?  তারপর আবার যেই বিজলি চমকালো  তখনি দেখি ওই বাচ্চাটা একদম ওই জানালাটার সামনে !! আমি অবাক হয়ে গেলাম. দালান থেকে এতো তাড়াতাড়ি এই জানলার সামনে এলো কিকরে?  তবুও তখন আমার কম বয়স. বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করলাম : তোমার নাম কি?  দেখি কিছুই বলেনা শুধু চেয়ে থাকে. আমি আবার হেসে জিজ্ঞেস করলাম : কি বলবেনা? আসলে খুব বৃষ্টি হচ্ছেতো তাই......... আমার কথা শেষ করতে না  দিয়েই বাচ্চাটা বলে উঠলো : চলে যাও..... এখন থেকে যত তাড়াতাড়ি পারো চলে যাও, নইলে ও তোমায় দেখে ফেলবে. পালাও. আমি ভাবলাম বাচ্চা মানুষ তাই ভুলভাল বলছে. আমি ওকে বললাম : কে দেখে ফেলবে আমায়?  তখনি শুনতে পেলাম ভেতর থেকে বীভৎস গলায় হাসির শব্দ. শুধু হাসি নয় তার সঙ্গে কিসব বলে চলেছে !!! বাচ্চাটা বললো : পালাও..... ও আসছে আমিও যাই. ওমা !!!দেখি বাচ্চাটা আর নেই. আমার কি সন্দেহ হতে আমি একটু দূরে গিয়ে বাড়িটার দিকে চাইলাম. তখনি বিদ্যুতের আলো চমকালো আর আমিও বুঝতে পারলাম কোথায় এসে পড়েছি. বৃষ্টি, বিদ্যুৎ উপেক্ষা করে ছুট লাগালাম . কোনোরকমে বাড়ি এসে পৌঁছেছিলাম সেদিন. এবার? এটার কি ব্যাখ্যা দেবে অনিমেষ? অনিমেষ বাবুর হাসি পাচ্ছিলো. কিন্তু তার সামনে বয়স্ক মানুষ বসে আছে তাই তার সম্মান রাখতে হাসি চেপে বললেন : হা.... বুঝলাম. তা বাচ্চাটা যে তার কোনো পরিবারের লোকের সাথে মিলে মজা করেনি সেটা কিকরে বুজছেন?  হয়তো আপনাকে দেখতে পেয়ে তারা একটু মজা করেছে. আপনাকে ভয় দেখিয়েছে?  অচিন্ত বাবু অনিমেষকে একবার ভালো করে দেখে নিয়ে বললো : ও..... তার মানে এটাও তোমার তুচ্ছ একটা গল্প মনে হলো?  অনিমেষ অচিন্ত বাবুর হাতে হাত দিয়ে বললো : এমা.... ছি ছি.. কি বলছেন?  আমি বলছি আপনার সাথে যেটা হয়েছে সেটা একদম পরিষ্কার কিন্তু ওটা যে ভুতই ছিল সেটা কিকরে মেনে নি? যাকগে..... ছাড়ুন ঐসব কথা. আমরা বরং অন্যরকম কিছু আলোচনা করি. আসলে এই ভুত ব্যাপারটা আমার ঠিক হজম হয়না হি... হি. কিছুক্ষন গল্প করার পর অচিন্ত বাবু আর জগবন্ধু বাবু উঠে পড়লেন. ততক্ষনে রুগী আসতে শুরু করে দিয়েছে. জগবন্ধু বাবু আর অচিন্ত বাবু বেরিয়ে একি দিকে যেতে লাগলেন. অচিন্ত বাবু বললেন : অনিমেষ আমার একটা কোথাও বিশ্বাস করেনি. ওকে দোষ দিইনা আসলে আজকালকার ছেলে ছোকরারা ওসব এড়িয়ে চলতে চায়. জগবন্ধু বাবু বললেন : যা বলেছেন.... আমার ছেলেটাও শহুরে হাওয়া খেয়ে ওসব মানতেই চায়না. বলে যতসব পুরানো কুসংস্কার. কিন্তু স্যার, এই ঘটনাটা আমাদের বলেননি তো আপনি. অচিন্ত বাবু জগবন্ধু বাবুকে বললেন : জগৎ..... এইসব নিয়ে বেশি আলোচনা করতে চাইনা আমি. এই কথা গুলো মনে পড়লেই কেমন যেন গায়ে কাঁটা দেয়. তাছাড়া....... এই বলে উনি হাঁটা থামিয়ে জগবন্ধু বাবুর দিকে চাইলেন এবং তারপর বললেন : একটা কথা ওখানে বলিনি. বলাটা উচিত মনে হয়নি. তুমি জানো আমি কোন বাড়ির কথা বলেছিলাম? জগবন্ধু বাবু তার দিকে চেয়ে আছেন দেখে উনি হেসে বললেন : হা.... ঠিকই ভাবছো, অঞ্জনদের পৈতৃক বাড়ির কোথাই বলছি. যেখানে অনিমেষ তার পরিবার নিয়ে উঠেছে. এই কথাটা ওখানে বলা ঠিক মনে করলাম না. যে বাড়িতে ওরা থাকছে সেই বাড়ির সম্পর্কে এইসব শুনতে কার ভালো লাগবে বলো, তাছাড়া যদি ও আমায় ভুল বোঝে তাই আর বললাম না. তারপর উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন : আশা করি সব ঠিকই হবে. কোনো ঝামেলা না হলেই ভালো. এই বলে অচিন্ত বাবু এগিয়ে গেলেন. আর জগবন্ধু বাবু একটা ঢোক গিলে দুই হাত মাথায় ঠেকালো তারপর ঠাকুরের নাম নিতে নিতে এগিয়ে চললেন. 

দুপুর 1টা বাজে. বুবাই স্নান সেরে নিজের ঘরে গল্পের বই পড়ছে. পাশের ঘরে ওর মা খাটে বসে ছোট ভাইকে দুধ খাওয়াচ্ছে আর টিভি দেখছে. বাচ্চাটা মায়ের ম্যাক্সির কাপড়টা ধরে আছে আর দুধ খাচ্ছে. স্নিগ্ধা হাসলো একটু. বুবাইটাও ছোটবেলায় এইভাবেই তার শাড়ীর আঁচল ধরে থাকতো, ছাড়তেই চাইতো না. দুধ খেতে খেতে ঘুমিয়ে পরলো বাচ্চাটা. স্নিগ্ধা খুব সাবধানে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেকে ঠিক করে নিলো. তারপর দেয়ালের ঘড়ির দিকে দেখলো. একটা বেজে দশ. বুবাই গল্পের শেষ পাতাটা পড়ে উঠে পরলো. অনেক্ষন এক নাগাড়ে বসে গল্প পড়ছে. ও বাইরে বারান্দায় এলো. বুবাই দেখলো ওরা মা বাইরে ওর বাবার সাথে ফোনে কথা বলছে. বুবাই মায়ের ঘরে গেলো ভাইকে দেখতে. ছোট্ট ভাইটা জিভ বার করে ঘুমোচ্ছে. কি সুন্দর লাগচ্ছে. বুবাই ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলো মায়ের কথা বলা হয়ে গেছে. এখন সে বারান্দার থামে হেলান দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে. বুবাই মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন বাইরেটা দেখলো. ঐদিকটাতে আমগাছটা দেখা যায়. বুবাই মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের পেটে মুখ লোকালো. মাকে এইভাবেই জড়িয়ে ধরতে সন্তানের কোনো কারণের দরকার হয়না.  মাকে সে প্রায় এইভাবে জড়িয়ে ধরে. ওর মাও ওর গালে চুমু খায়. মায়ের আদর পাওয়ার জন্য সে এটা প্রায়ই করে থাকে. বুবাইয়ের মাথায় স্নিগ্ধা হাত বুলিয়ে বললো : সোনার খিদে পেয়েছে? একটু পরেই মালতি মাসি খেতে ডাকবে. এই বলে সে বুবাইয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বাইরে দেখতে লাগলো. কি সুন্দর না জায়গাটা?  ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো স্নিগ্ধা. বুবাই মাথা নাড়িয়ে হা বললো. বুবাই মুখ তুলে দেখলো মা বাইরে চেয়ে আছে আর ওই লকেটটা হাতে নিয়ে ওই নীল মনিটাতে হাত বোলাচ্ছে. বুবাইয়ের খুব হিসু পেয়েছিলো তাই সে মাকে ছেড়ে নীচে নামতে লাগলো. সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে সে কল ঘরে ঢুকে গেলো. বাথরুম করে বেরিয়ে আসতেই মালতির সাথে দেখা হলো তার. মালতি মাসিকে তার বেশ ভালো লাগে. মালতি বুবাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো : যাও... মাকে গিয়ে বলো আমি খাবার নিয়ে ওপরে যাচ্ছি. বুবাই ছুট্টে উপরে ঘরে উঠে গেলো. বুবাই দেখলো মা ঘরে নেই. সে জানলা দিয়ে দেখলো মা বারান্দার  দক্ষিণ দিকটায় দাঁড়িয়ে আছে. সে ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের কাছে গেলো আর বললো : মা.... মালতি মাসি খাবার নিয়ে আসছে. কিন্তু একি? কথাটা কি মায়ের কানে গেলোনা?  মা?  মাসি খাবার নিয়ে আসছে. বুবাই দেখলো ওর মা বাইরে তাকিয়ে আছে. কি যেন ভাবছে আর মায়ের মুখে একটা হালকা হাসি. সে সেই একি ভাবে গলার লকেটটায় হাত বোলাচ্ছে. বুবাই আরো একবার মাকে ডেকে অসফল হলো, তখন সে গিয়ে মায়ের হাত ধরে মা মা করে ডাকতে লাগলো. ছেলের হাত ধরে মা মা ডাকতেই স্নিগ্ধা যেন সম্বিৎ ফিরে পেলো. 

স্নিগ্ধা : হা? কি.... কি হয়েছে বুবাই?  ডাকছিস কেন? 

বুবাই : মা.... মাসি বললো তোমায় বলতে যে সে এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসছে. 

স্নিগ্ধা : ওহ.... আচ্ছা  আচ্ছা.... 

বুবাই : কি ভাবছিলে মা? 

স্নিগ্ধা :আমি?  কৈ কিছুনাতো  সোনা. 

বুবাই : তোমায় কতবার ডাকলাম তুমি কিছু বলছিলেই না. 

স্নিগ্ধা : ওহ.... তাই?  ছাড় ওসব.... ঐতো মালতি এসে গেছে. 

মালতি খাবার নিয়ে ওপরে এসে ওদের ঘরে ঢুকে টেবিলে খাবার রেখে চলে গেলো. মাছের ঝোল আর ভাত সাথে স্যালাড. বুবাই ছোট, এখনও কাঁটা বাছতে পারেনা তাই ওর মা ওকে খাইয়ে দিচ্ছে. খাওয়া হয়ে গেলে স্নিগ্ধা বাসন গুলো নিয়ে নীচে গেলো সাথে বুবাইও গেলো. সে কল তলায় হাত ধুয়ে আবার ওপরে চলে এলো. ওপরে এসে বুবাই শুনতে পেলো তিনতলা থেকে একটা দরজা খোলা বা বন্ধ হবার আওয়াজ এলো . তারমানে তিনতলায় কেউ আছে. কৌতূহল বশত বুবাই ওপরে উঠতে লাগলো. সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় দেখলো তপন নীচে নামছে.   দুজনের দেখা হতেই তপন হেসে বললো : কি অর্ণব বাবু.... তুমি কি আঁকলে সেটা তো দেখলেই না. বুবাই হেসে বললো : এখনও পুরো শেষ হয়নি. আজ শেষ করে তোমাকে দেখাবো. তপন হেসে বললো : আচ্ছা... দেখিও কিন্তু. একদিন তোমার সাথে বসে খুব গল্প করবো. আমি ভালো ভালো গল্প জানি তোমাকে বলবো. এখন যাই. বুবাই বললো : আচ্ছা..... ঠিক আছে. তপন বুবাইয়ের গাল টিপে বললো : সোনা ছেলে. এখন আসি পরে আবার কথা হবে. আর হ্যা.... তিনতলায় তোমাকে যেতে হবেনা. বুবাই বললো : কেন? তপন মুখ কুঁচকে বললো : খুব নোংরা, ধুলো তাছাড়া বড়ো বড়ো মাকড়শা ইঁদুর তোমায় যদি কামড়ে দেয়?  তাই বলছিলাম. ছাদে যাও কিন্তু ওখানে যাবার দরকার নেই. বুবাই ঘাড় নেড়ে বললো : আচ্ছা যাবোনা. তপন হেসে নীচে নামতে লাগলো. হটাৎ তার সাথে স্নিগ্ধার সামনাসামনি দেখা হয়ে গেলো. বুবাই দেখলো ওর মা তপনের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ওর পাশ দিয়ে ওপরে উঠতে লাগলো . বুবাই দেখলো ওর মা ওপরে উঠতে উঠতে পেছন ফিরে তপনকে দেখতে লাগলো. তপনও ওর মায়ের দিকে চেয়ে. তারপর একটা হাসি দিয়ে সে নেমে গেলো. স্নিগ্ধাও ছেলেকে নিয়ে ঘরে চলে এলো. ঘরে এসে স্নিগ্ধা তার শশুরমশাইকে ফোন করলো এবং তার সঙ্গে কথা বললো একটু পরে শাশুড়িমাও স্নিগ্ধার সঙ্গে কথা বললো. শেষে বড়ো নাতির সঙ্গেও তারা কথা বললো. এরপর ফোন রেখে স্নিগ্ধা টিভি দেখতে লাগলো. বুবাই ভাবলো এই ফাঁকে তার আঁকাটা শেষ করে ফেলা  যাক. পাশের ঘর থেকে তার আঁকার খাতা, রং পেন্সিল নিয়ে মায়ের ঘরে এসে মাকে বললো সে ছাদে যাচ্ছে. স্নিগ্ধা বললো : ঠিকাছে.... যা কিন্তু ছাদের ধারে যাবিনা. পুরোনো বাড়ি কোনো বিশ্বাস নেই. বুবাই মাকে আচ্ছা বলে ছাদে চলে গেলো. ছাদে ওঠার সময় সে একবার তিনতলার বারান্দাটা একবার ঘুরে নিলো. বুবাই দেখলো সবকটা ঘরে তালা দেওয়া, একটা ঘর খোলা. সেটায় সব পুরোনো জিনিস, ভাঙা টেবিল চেয়ার ইত্যাদি রাখা. তবে বাকি সবকটা ঘরের তালা জং ধরা কিন্তু একটা বন্ধ ঘরের  তালা অতটা পুরোনো নয়. অন্যগুলোর তুলনায় বেশ নতুন. বুবাই সেই ঘরটার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সেটা একবার দেখেই আবার ছাদের উদ্দেশে পা বাড়ালো. ছাদের দরজা খোলাই থাকে. ছাদে উঠে সে আঁকার খাতা আর পেন্সিল মাটিতে রেখে ঘুরে ঘুরে ছাদটা দেখতে লাগলো. আসে পাশে সবুজ আর সবুজ. তিনটে নারকোল গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে পুকুরটার ধারে. সে ভাবলো মায়ের সাথে একবার ওই পুকুরপারটা ঘুরে আসবে একদিন. বুবাই ফিরে এসে ওই আম গাছের ছায়ায় বসে আঁকার খাতা খুলে রং পেন্সিল দিয়ে নিজের আঁকার অবশিষ্ট অংশ পূরণ করতে লাগলো. আজকে সে আঁকাটা শেষ করেই কালকে ওই পুকুর পরের ছবি আঁকা শুরু করবে. বুবাই নীল রং দিয়ে খাতায় আকাশের জায়গাটা পূরণ করতে ব্যাস্ত হটাৎ পেছন থেকে একটা আওয়াজে সে চমকে উঠলো 

 কি আঁকছো বন্ধু? 

বুবাই :কে! বলে চমকে পেছন ফিরে দেখলো তার কালকের পরিচিত বন্ধু রাজু কখন জানি পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে. বুবাই বললো : ওহ..... তুমি. কিন্তু তুমি কখন এলে? আমিতো তোমায় আসতে দেখিনি. রাজু হেসে বললো : হি...হি. . তোমার সামনে দিয়েই তো এলাম তুমি আমায় দেখতে পাওনি কারণ তুমি আঁকতে ব্যাস্ত ছিলে. বুবাই একটু অবাক হলো. তার সামনেই খোলা দরজা. কেউ ঢুকলে তার চোখে পড়তেই হবে. সে কি এতোই আঁকায় ডুবে ছিল যে কখন রাজু এলো সেটা দেখতেও পায়নি?  হবে হয়তো. 
 রাজু ওর পাশে বসে পরলো. তারপর বুবাইয়ের আঁকা দেখে বললো : বাহ্.... তুমি তো খুব সুন্দর আঁকো. আমিও আঁকতাম. বুবাই ওর দিকে চেয়ে বললো : আঁকতে?  এখন আঁকোনা?  রাজু মুচকি হেসে বললো : না.... এখন আর আঁকিনা. এখন আর পারিনা. বুবাই আকাশের রংটা পূর্ণ করে রাজুকে দেখালো. রাজু ওর হাত থেকেই আঁকাটা দেখলো. নিজের হাতে নিলোনা. তারপর বললো : বা..... খুব সুন্দর হয়েছে. আচ্ছা... তুমি আমার একটা ছবি আঁকবে? বুবাই বললো কেন আঁকবো না, নিশ্চই আঁকবো. তুমি তো আমার বন্ধু. কিন্তু আজ নয় কাল. আজ তোমার গল্পটা শুনি. তুমি কালকে বলেছিলে আজকে আমায় বাকিটা বলবে. বলো এবার. রাজু হেসে বুবাইকে বললো : বেশ.... তবে বলছি শোনো. তবে একটা কথা বন্ধু, আমার গল্প শুনে তোমার একটু রকম লাগতে পারে. আমি এমন কিছু বলবো যেটা শুনতে তোমার অদ্ভুত লাগবে, কারণ যা ঘটেছিলো সেটা আমার কাছেও অদ্ভুত ছিল যদিও এখন আমি সব বুঝেছি তাই বলছিলাম আরকি?  বুবাই হেসে চোখ বড়ো বড়ো করে বললো : বলো বলো.... আমি শুনতে চাই. আমি নতুন কিছু জানতে চাই. কি হয়েছিল তোমাদের সাথে যে তোমরা এই বাড়ি ছেড়ে দিলে. এখন অন্য জায়গায় থাকো? রাজু আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো : আমিও মায়ের সাথে রোজ এই ছাদে আসতাম. সন্ধে বেলায় আমি আর মা ছাদে হাটতাম. মা কাপড় তুলতে আসতো আর আমি আর ভাই ছাদে খেলা করতাম. ছোট ভাইটাকেও নিয়ে আসতাম মাঝে মাঝে. সব ঠিক চলছিল কিন্তু আমি জানতাম না এইসবার মাঝেই কখন যেন সব বদলাতে শুরু করেছিল. বুবাই বললো : উমমম... এই ভাবে নয়..... শুরু থেকে বলো, কাল যেখানে শেষ করলে ওখান থেকে বলো. রাজু বললো : আচ্ছা আচ্ছা বলছি. শোনো তাহলে. মা পরেরদিন থেকেই শুধু দাদুর নয়, পুরো বাড়ির রান্নার দায়িত্ব নিয়ে নিলো. লাবনী ভালো রাঁধতো কিন্তু মায়ের মতো নয়. আমার মনে আছে.... মায়ের হাতের রান্না খেয়ে দাদুর চোখের জল এসে গেছিলো যেন অনেকদিন পর সুস্বাদু খাবার এর স্বাদ তিনি পেলেন. মা লাবনীর পরিবর্তে নিজেই দাদুর সেবার দায়িত্ব নিলেন. তবে লাবনীকে দেখে আমার মনে হয়েছিল এই ব্যাপারটা তার যেন পছন্দ হয়নি. বাবা কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন. একদিকে পারিবারিক ব্যাবসা আরেকদিকে সম্পত্তি নিয়ে আইনি আলোচনা আর উকিলের সঙ্গে কথাবার্তা. সব মিলিয়ে বাবা আসার দুদিনের মধ্যেই কাজে ডুবে গেছিলেন. আমার আর ভাইয়ের তখন গরমের  ছুটি. তাই আমরা এদিক ওদিক খেলা করে বেড়াই. মা ভাইয়ের আর দাদুর খেয়াল রাখে আর রান্না করে. মা যেন এই বাড়িরও গৃহিনী হয়ে উঠলো. তবে সব কিছু পাল্টে গেছিলো পরে. সব কিছু ওলোট পালট হয়ে গেছিলো. আর এর শুরু হয়েছিল সেদিন যেদিন মায়ের হাতে ওইটা এলো. আমি কোনোদিন ভুলবোনা ওই দিনটা. সেদিন ছিল বুধবার. আমি ভাই দাদুর সঙ্গে বসে গল্প করছি. একটু পরে মা দাদুর সকালের খাবার নিয়ে এল. দাদুকে তুলে বসিয়ে মা নিজের হাতে তাকে খাইয়ে দিতে লাগলো. দাদু মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন : মা, তোমার হাতের রান্না খুব খেতে ইচ্ছে করতো কিন্তু তখনতো ডাকতে পারিনি. এই যাবার সময় তোমার হাতের খাবার খেতে পাচ্ছি এটাই আমার কাছে বড়ো  প্রাপ্তি. মা বললো : ছি বাবা.... ঐসব কথা একদম বলবেন না. আপনার কিচ্ছু হবেনা. আমরা সবাই আছি আপনার সাথে. আপনি শুধু বিশ্রাম করুন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে. মা দাদুকে খাইয়ে দিতে লাগলো. বাবা সেদিন সকাল সকাল বেরিয়ে গেছেন. এমন সময় পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকলো জেঠু. তিনি এসে দাদুর দিকে তাকিয়ে একটু চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আবার মুখে হাসি এনে বললেন : বাবা আপনি খাচ্ছেন.... বাহ্ দেখেও ভালো লাগছে. এই বলে তিনি দাদুর কাছে বিছানায় গিয়ে দাঁড়ালেন. দাদু বললেন : সুজিত..... বৌমার জন্যই সব কিছু হলো. আমি তোকে বলেছিলাম না..... আমার কোনো ভুল হয়নি বৌমা বাছতে. সত্যি মা তোমার হাতে জাদু আছে. জেঠু বললেন : ঠিক বলেছেন বাবা.... রঞ্জনের বৌ বাছতে তুমি কোনো ভুল করোনি. সব দিক থেকে যোগ্য তোমার বৌমা. আমি দেখলাম এই কথা গুলো বলার সময় জেঠু একদৃষ্টিতে মায়ের দিকে চেয়ে আছেন. মা হেসে জেঠুকে বললো : দাদা আমি আপনার খাবার নিয়ে এক্ষুনি আসছি. আপনি ঘরে গিয়ে বসুন. জেঠু হেসে বেরিয়ে গেলেন. দাদুর খাওয়া হয়ে গেলে মা তাকে শুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে. দাদু আমাদের সঙ্গে গল্প করতে লাগলেন. কিছুক্ষন পরে আমি ছোট ভাইকে দেখতে ঘরে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম মা খাবার নিয়ে তিনতলায় উঠে গেলো. মানে জেঠুকে খাবার দিতে গেলো. আমি ঘরে এসে দেখলাম ভাই ঘুমোচ্ছে. আমি ঘর থেকে বেরিয়ে উপরে ছাদে আসছিলাম তখনি তিনতলায় মায়ের আর জেঠুর গলা পেলাম. আমি জেঠুর ঘরের জানলার সামনে এসে দেখি জেঠু আর মা কথা বলছে. সঙ্গে লাবনী মাসিও দাঁড়িয়ে. উনি জেঠুরও খেয়াল রাখেন . জেঠু লাবনী মাসির কাছে মায়ের প্রশংসা করছেন. মাকে দেখলাম লজ্জা পেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে. জেঠু হটাত মাকে বললেন : অনুপমা তুমি এই বাড়ির বৌমা. তোমার সঙ্গে তো এতদিন পর সাক্ষাৎ হলো তাই তোমায় কিছু দিতে পারিনি কিন্তু আমার ভাইয়ের বৌ হিসেবে তোমায় কিছু দেওয়া উচিত আমার. মা বললেন : না না দাদা আমার কিছু চায়না............ মায়ের কথা শেষ হতে না দিয়ে জেঠু  আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন : না অনুপমা....এটা আমার অনেকদিনের ইচ্ছা তোমায় কিছু দেওয়া. আমায় এইটুকু করতে দাও তুমি. মা আর কিছু বললো না. জেঠু আলমারি থেকে একটা লাল কাপড় বার করলেন. সেটা নিয়ে মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার ভেতর থেকে একটা লকেট বার করে সেটা মায়ের হাতে দিয়ে বললেন : এটা আমি বেশ কয়েক বছর আগে তোমার জন্য কিনিয়ে রেখে ছিলাম এই ভেবে যে যেদিন তোমার সাথে দেখা হবে তোমায় উপহার দেবো. বিয়েতেতো আর কিছু দিতে পারিনি তাই এটা দিয়েই তোমায় আশীর্বাদ করবো. কিন্তু আমার কেন জানি মনে হলো ওই লাল কাপড়টাই আমি কালকে কল্যাণকে দিতে দেখেছিলাম জেঠুকে. মা ওই লকেটটা নিয়ে জেঠুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো. জেঠু মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন : ভালো থাকো অনুপমা... আশা করি এইভাবেই তুমি আমার আর বাবার খেয়াল রাখবে. মা হেসে বললো : আপনি কোনো চিন্তা করবেননা দাদা....এটা আমার কর্তব্য. এবার আসি দাদা. মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো. মা যখন পেছন ফিরে ঘর থেকে বেরোচ্ছিল তখন দেখলাম জেঠু আর লাবনীর মধ্যে চোখাচুখি হলো আর দুজনেই মুচকি হাসলো. তখন কি আর বুঝেছিলাম কি বিপদ আসতে চলেছে. 

চলবে...... 
[Image: 20190929-153425.png]
[Image: 20240716-212831.jpg]
[+] 7 users Like Baban's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অভিশপ্ত সেই বাড়িটা ! - by Baban - 24-10-2019, 06:03 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)