Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.42 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed
#39
পর্ব ১৪- ভৌতিক পর্বঃ

সত্যেন্দ্রের হাতে অত্যাচারিত নারীর সংখ্যা টা নেহাত কম ছিলনা। সত্যেন্দ্রের নারী দুর্বলতা ও চরিত্রহীন জীবনযাপনের ব্যাপারে মোটামুটি ভাবে সমস্ত প্রজাই অবগত ছিলেন। এই প্রজাদের মানে বিক্ষুব্ধ প্রজাদের একটা বিশাল অংশ ধীরে ধীরে যুক্ত হয় ঠাকুর ডাকাতের দলে, কেউ বা রাতের অন্ধকারে কেউ বা প্রকাশ্যে। শুরু হয় এক অসম লড়াই। এদিকে লড়াই আরও একটা চলছিল, তা হোল জমিদার বাড়ীর অন্দরে অনুরাধা ও দেবেন্দ্রের আত্মার মুক্তি পাওয়ার লড়াই। অতৃপ্ত আত্মার অভিশাপে জমিদার বাড়ী কলঙ্কিত হয়ে পড়ে। আচ্ছা সুবীর বাবু আপনি তো ইতিহাসের গবেষক। আপনি কি বলতে পারেন বাঙালি ঠিক কবে থেকে ডায়েরি লেখা শুরু করেছেন?
সুবীর বাবু এতক্ষন একমনে জমিদার বাড়ী ও ঠাকুর ডাকাতের গল্প শুনে যাচ্ছিলেন, হথাত একটা প্রশ্ন তার দিকে ধেয়ে আসায় সুবীর বাবু কিছুটা বিব্রত বোধ করেন।
সুবীর বাবুঃ না এই প্রশ্নের উত্তর তা তো আমার ঠিক জানা নেই।
সত্য বাবুঃ আপনি খালি হাতে এখান থেকে যাবেন না সুবীর বাবু। এই জমিদার বাড়ীর সাথে সিপাহী বিদ্রোহের কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে ডায়েরীর ইতিহাসের।
সুবীর বাবুঃ (কিছুটা অবাক ই হয়ে) কিরকম।
সত্য বাবুঃ ভারতবর্ষে ডায়েরি লেখার কোনও চল ই কোনও কালে ছিলনা। প্রথম ডায়েরি লেখা শুরু করেন অনুরাধা। নিজের একাকিত্ব কাটাতে উনি, প্রতিটা মুহূর্তের অনুভুতি তারিখ ও সময় উল্লেখ করে এই ডায়েরি তেই লিখে রাখতেন। অদ্ভুতভাবে এই ডায়েরি তা শুধু হাত বদলেছে। কিন্তু এর সূচনা করে গেছেন অনুরাধা।
সুবীর বাবু অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকেন।
সত্য বাবুঃ এই ডায়েরি কেন অভিশপ্ত জানেন? ঠাকুর ডাকাতের তরোয়ালের আঘাতে নিঃসৃত রক্ত সবার আগে এই ডায়েরীর ওপর পড়ে যায়। তারপর থেকে এই ডায়েরীর রঙ লাল।
সুবীর বাবুর মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করতে শুরু করে।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু, যেহেতু এতক্ষন আমি আপনার সাথে থেকেছি তাই একটা কথা আপনাকে বলা আমার কর্তব্য।
সুবীর বাবুঃ কি কথা আপনি বলছেন?
সত্য বাবুঃ আপনি আধুনিক মানুষ আমি জানি। আপনার পক্ষে এতো সহজে হয়ত আমার সব কথা বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা আপনাকে মানতেই হবে যে এই ডায়েরি তা এবার আপনার সাথে যাচ্ছে।
সুবীর বাবুঃ হ্যাঁ নিশ্চয়ই, আপনার অনুমতি নিয়ে এই ডায়েরি তা আমি নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাই। এতে যে লেখা গুলো আছে তার ফরেন্সিক পরীক্ষা করে দেখতে হবে লেখাগুলো ঠিক কোন সময়ের। যদি সত্যি ই এটা বহু পুরনো কোনও লেখা হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ ও ...
সুবীর বাবু নিজের কথা সম্পূর্ণ করার আগেই সমস্ত জমিদার বাড়ী অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল। অজস্র মানুষের হাসি ভেসে আসছে। সুবীর বাবু একবার পেছন ঘুরে দেখেন বাইরের বারান্দাটায় প্রচুর মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং প্রত্যেকেই হেসে প্রায় লুটিয়ে পড়ছেন। সুবীর বাবুর গা ছম ছম করতে শুরু করল। তাহলে কি সত্যি ই কোনও অশরীরি আত্মা রয়েছে এখানে।
সত্য বাবুঃ ডায়েরীর কোন লেখা গুলো আপনি পরীক্ষা করবেন যদি একটু আমায় দেখান?
সুবীর বাবু ডায়েরি তা হাতে নিয়ে দেখেন ডায়েরিতে কিছুই লেখা নেই। সম্পূর্ণ ফাঁকা ডায়েরিটা। সুবীর বাবু ভয়ে কাঁপতে থাকেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু এবার ওই ডায়েরিতে একটা নতুন গল্প লেখা হবে, যার নাম হবে অভিশপ্ত ডায়েরি। এই ডায়েরি তা যে অভিশপ্ত তা তো প্রমান করতে হবে আমাদের। জানেন এই গল্পের মুখ্য চরিত্র কে হবে?
সুবীর বাবুর মাথা ঝিম ঝিম অনেকক্ষণ ই করছিল, এবার বুক তাও ধড়াস ধড়াস করে কাঁপতে শুরু করে।
সত্য বাবুঃ এই গল্পের মুখ্য চরিত্র হবে মানব অর্থাৎ মানব মিত্র। এছাড়াও রয়েছে মালতী দেবী, তিলোত্তমা, রূপসা, রাজু, সাইদুল ও সুবীর বাবু অর্থাৎ আপনি। সুবীর বাবু আপনি কি জানেন গল্প টা লেখা শুরু হয়ে গেছে। আরও একবার দেখবেন নাকি ডায়েরি টা।
সুবীর বাবু ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলতে থাকেন। ওনার কণ্ঠনালী জড়িয়ে এসেছে। মুখ দিয়ে একটাও শব্দ বেরোচ্ছে না। হথাত পেছন থেকে এক কোমল নারীর হাত ওনাকে স্পর্শ করল। এক অতি মায়াবী গলায় এক মোহময়ী নারী বলে উঠলেন “পড়ুন না সুবীর বাবু এতো আপনার ই গল্প। এতো সেই রাতের গল্প। খাটিয়ায় বসে মদ্যপান। মানবের চালাকি। মালতীর উলঙ্গ দেহটা মানবের তৃপ্তি করে ভোগ করা এতো তার ই গল্প। পড়ুন না একবার” সুবীর বাবু একবার ও পেছন ফিরে তাকালেন না। যে নারীর গল্প এতক্ষন উনি শুনে এসেছেন ওনার পেছনে যে সেই দাঁড়িয়ে আছে সে ব্যাপারে ওনার মনে ধীরে ধীরে বিশ্বাস বদ্ধমুল হয়ে চলেছে। সুবীর বাবু একবার ডায়েরি টা নিয়ে উলতে পালটে দেখেন। প্রথম পাতায় খুব মার্জিত এক নাম অভিশপ্ত ডায়েরি। তারপর দুটো পাতা একদম খালি। তারপর আবার একটা মার্জিত নাম প্রথম খণ্ড। তারপর মোট ২০ টি পর্বে প্রথম পর্ব শেষ। সাইদুলের নজর থেকে পর্ব ২০ বিদায় বেলা অবধি পুরোটাই উনি একবার চোখ বুলিয়ে নেন।
সত্য বাবুঃ মোট ৩ টি খণ্ডে গল্প তা লেখা হবে। সবে প্রথম খণ্ড শেষ হয়েছে। এই জমিদার বাড়ীতে আসা, ডায়েরি পড়া আমাদের সাথে দেখা হওয়া ও আবার ফেরত যাওয়া এই নিয়ে হবে দ্বিতীয় পর্ব। আর বাড়ী ফিরে জাওয়ার পর আপনার জীবনে যে পরিবর্তন গুলো হবে তা নিয়ে হবে তৃতীয় পর্ব।
সুবীর বাবু চোখ বন্ধ করে ওখানে বসে থাকেন। মনেমনে একবার নিজেকে বলেন আমি দুই মেয়ের পিতা, আমার অনেক দায়িত্ব রয়েছে, আমায় এখান থেকে বেঁচে ফিরতেই হবে।
সত্য বাবুঃ আরে আপনি জীবিতই থাকবেন সুস্থ স্বাভাবিক ই থাকবেন। দেখো অনুরাধা সুবীর বাবু কি ভাবছেন।
“অনুরাধা” এই শব্দ তা সুবীর বাবুর কানে বিদ্যুতের ঝলকের মত মনে হয়। সুবীর বাবু চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন।
সত্য বাবুঃ অনুরাধা তুমি চলে যাও, সুবীর বাবু তোমাকে ভয় পাচ্ছেন।
একটা প্রচণ্ড জোরে অট্টহাস্য নুপুরের ঝুম ঝুম শব্দ। ধীরে ধীরে আওয়াজ তা মিলিয়ে যায়।
সত্য বাবুঃ চোখ খুলুন সুবীর বাবু। এখনো তো পুরো গল্প তা বলাই হয়নি। অনুগ্রহ করে চোখ খুলুন।
সুবীর বাবু ধীরে ধীরে আবার নিজের দুচোখ খোলেন।
সত্য বাবুঃ সুবীর বাবু, সত্য বলে আমাকে শুধু আমার মাই ডাকতেন। মায়ের মৃত্যুর পর কেউ আমায় আর সত্য বলে ডাকে নি। তারপর থেকে আমায় সবাই ছোট বাবু বলেই ডাকতে শুরু করেন। আপনি নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আমার হাত তা কেন আপনার বরফের মত ঠাণ্ডা লেগেছিল।
সুবীর বাবু টেবিলের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। ওনার শরীর ম্যালেরিয়ার রোগীর মত থর থর করে কাঁপতে শুরু করে।
সত্য বাবুঃ আমি জানি আপনি প্রচুর ভয় পেয়েছেন। আমি আর বেশি সময় আপনার নেবনা। সত্যেন্দ্রের গল্প তা সম্পূর্ণ করি আর তারপর ডায়েরি নিয়ে আপনাকে কিছু কথা বলব যা আপনার ব্যক্তিগত জীবনের সাথে জড়িত। ব্যাস আমার কাজ শেষ। আপনি অনুগ্রহ করে শান্ত হন। আমিও আমার কাজ শুরু করি। এভাবে বেশিক্ষন শরীর ধারন করে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সুবীর বাবু নিজেকে বারবার বলেন, কিছুই হবেনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। সত্য বাবু আবার নিজের গল্প শুরু করেন।
সত্য বাবুঃ অনুরাধা ও দেবেন্দ্রর মৃত্যুর পর সত্যেন্দ্রের জীবনের মোট দুটি ই কাজ অবশিষ্ট রইল। এক ঠাকুর ডাকাত ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গ কে খুঁজে বার করা ও খতম করা। দুই নিত্য নতুন কুমারী মেয়েদের সর্বনাশ করা। সত্যেন্দ্রের এই রাজকীয় শখ তখন ও পুরদমে বজায় ছিল। যে কুমারি মেয়ের সতীত্ব সত্যেন্দ্রের হাতে নষ্ট হয় তার সমস্ত পরিবারের ই সমর্থন ঠাকুর ডাকাতের দিকে চলে যায়। এইভাবে সত্যেন্দ্রের কুকর্মের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে, ঠাকুর ডাকাতের ক্ষমতাবৃদ্ধি। এমন ই একদিন সত্যেন্দ্রের নজর পড়ে গ্রামের ই এক অপরুপ সুন্দরী কন্যা উর্বশীর দিকে। এদিকে দেবেন্দ্রর পারদর্শিতার ছিটেফোঁটাও সত্যেন্দ্রের মধ্যে ছিলনা। রাজকার্য পরিচালনার জন্য কর্মচারীদের কাছে প্রচণ্ড প্রিয় হয়ে উঠতে হয়। যা কখনই সত্যেন্দ্র হতে পারেনি বা হওয়ার চেষ্টাও করেনি। এরফলে জমিদার বাড়ীর ই অন্দরে জ্বলে ওঠে সুপ্ত বিদ্রোহের আগুন। ঠাকুর ডাকাত এই বিদ্রোহের ব্যাপারে ভীষণ ভাবেই অবগত ছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই উনি জমিদার বাড়ীর ই কিছু কর্মচারীকে নিজের অনুগত করে তোলেন। এবং অনাদের ই কারুর থেকে খবর পান যে বলরামগড় গ্রামের সুন্দরী মেয়ে উর্বশীর দিকে সত্যেন্দ্রের নজর পড়েছে। প্রতিশোধের আগুনে জর্জরিত মৃত্যুঞ্জয় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান নি।
উর্বশীর বাড়ীর চারপাশে প্রায় সমস্ত গ্রামবাসীর সাথেই মৃত্যুঞ্জয় নিজে গিয়ে কথা বলেন। গ্রামের ই মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে প্রায় সবাই একযোগে ঠাকুর ডাকাত কে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ঠাকুর ডাকাত ও তার অসংখ্য সাথীরা বলরামগড় এই বিভিন্ন গ্রামে ছদ্মবেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকে। শুরু হয় কঠিন প্রতীক্ষা।
এই অপেক্ষার অবসান ঘটে ঠিক তার দুদিন বাদে। সত্যেন্দ্র হয়ত ভাবতেও পারেননি যে এই গ্রামেই লুকিয়ে রয়েছে তার চরম প্রতিদ্বন্দ্বী ঠাকুর ডাকাত ওরফে মৃত্যুঞ্জয়। মাত্র ১০ জন সৈন্য নিয়ে উনি আসেন সুন্দরী উর্বশীর শরীরের দখল নিতে। উর্বশীর বাড়ীর সামনে শুরু হয় সত্যেন্দ্রের হুঙ্কার। কিন্তু এই হুঙ্কার ই কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আকুতি মিনতি তে পরিনত হয়। ঠাকুর ডাকাত তার বিশাল দলবল নিয়ে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেন সত্যেন্দ্র কে। ঠিক হয় এই চরম অত্যাচারী রাজাকে প্রানে ঠাকুর ডাকাত মারবেন না। মারবেন তার ই অত্যাচারিত প্রজারা। এরপর ঘোড়া থেকে ফেলে দিয়ে সাধারন গ্রামবাসীরা সত্যেন্দ্র কে প্রহার করতে শুরু করেন। প্রায় আধ ঘণ্টা পর সত্যেন্দ্রের দেহ থেকে শেষ নিশ্বাস টুকুও শেষ হয়। এভাবে সমাপ্তি ঘটে এক অত্যাচারের বেইমানির ইতিহাসের।
গ্রামবাসী রা অনুরধ করেন মৃত্যুঞ্জয় কে রাজার মর্যাদা গ্রহন করতে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় সেই অনুরধ ফিরিয়ে দিয়ে ঠাকুর ডাকাত হিসেবেই থেকে যান। মৃত্যুঞ্জয়ের ইচ্ছায় ও গ্রামবাসী দের ইচ্ছায় দেবেন্দ্রর খুড়তুতো ভ্রাতা রাজেন্দ্র কে সিংহাসনে বসানো হয়।
কিন্তু এখানেই সব শেষ নয়। রাজেন্দ্রর শরীরেও জ্বলতে থাকে প্রতিশোধের আগুন। এবং তার ই ফল স্বরুপ একদিন রাজেন্দ্রর ই ছকে মৃত্যুঞ্জয় পরাস্ত হন ও মৃত্যু বরন করেন। এদিকে ঠাকুর ডাকাতের অনুগামী রা এটা মেনে নিতে পারেন না। তারাও প্রতিশোধ নেন। এভাবে জমিদার বাড়ী ও ঠাকুর ডাকাতের শত্রুতা বিদ্যমান থাকে, যদিও তা কোনওদিন ই ইতিহাসে জায়গা পায়নি।
[+] 1 user Likes manas's post
Reply


Messages In This Thread
RE: অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed - by manas - 18-01-2019, 12:02 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)