18-01-2019, 11:48 AM
পর্ব ২-সুতানুটি জমিদারবাড়িঃ
রামকিঙ্কর বাবুঃ সুবীর তুমি এসেছ খুব ভাল হয়েছে। আর একটা দিন দেরি হয়ে গেলেই আমায় প্রোজেক্ট টা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে হত। কিন্তু তুমিও জানো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি তোমার চেয়ে বেশি অন্য কাউকে ভরসা করিনা।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার, আমি জানি সেটা তাই তো এত তাড়াহুড়ো করে আমিও চলে এলাম। কাল থেকেই আমি কাজে নেমে যাবো। আমাকে ভাল করে বুঝিয়ে বলুন কি করতে হবে।
রামকিঙ্কর বাবুঃ তুমি নিশ্চয় শোভা বাজার রাজবাড়ীর নাম শুনেছ, তোমার হয়ত কিছু পরাশুনাও আছে এব্যাপারে। কিন্তু সুবীর একটা কথা কখনও ভেবে দেখেছ, যেসময় আমাদের এই কলকাতা কলকাতা হয়ে ওঠেনি, ইংরেজ রা সবে সবে আসা শুরু করেছে সেই সময় তো আমাদের এখানে রাজতন্ত্র ছিলনা।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার একদম ঠিক। সেইসময় জমিদারী প্রথা ও মহাজন দের ই রমরমা ছিল।
রামকিঙ্কর বাবুঃ এক্স্যাক্টলি আমি এটাই বলতে চাইছি। শোভা বাজার রাজবাড়ীর তথাকথিত রাজারা কেউ ই জমিদার গোছের নয়। সিপাহি বিদ্রোহ বা সমসাময়িক সমস্ত আন্দলনে এদের ভুমিকা ইতিহাসে রয়েছে। কিন্তু সেই সময়কার কলকাতার জমিদার দের ব্যাপারে ইতিহাসে কতটুকু উল্লেখ রয়েছে।
সুবীর বাবুঃ স্যার সেই অর্থে কোনও উল্লেখ ই নেই। তবে হাঁ সুতানুটি জমিদারির নাম শোনা গেছে কিছু লেখকের গ্রন্থে।
রামকিঙ্কর বাবুঃ ব্যস এটাই। সুতানুটি। তুমি কি বুঝতে পারছ এই একটা শব্দই ইতিহাসের পাতার ঠিক কত বড় মিসিং লিঙ্ক। তোমাকে এই কাজটাই করতে হবে। শ্যামবাজার অঞ্চলে একটা পোড়ো বাড়ী রয়েছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওটাই জমিদার বাড়ী। ওখানে কাল ভোর বেলায় তোমায় যেতে হবে।
সুবীর বাবুঃ ঠিক আছে স্যার। কিন্তু আমার টিমে কে কে থাকছে?
রামকিঙ্কর বাবুঃ কেউ নয়, তুমি একা। এত সিক্রেট একটা প্রোজেক্ট এর সাফল্য কেন আমরা অন্যের সাথে ভাগ করে নেব। তুমি একাই যাবে। আমি এই শরীরে আর অ্যাডভেঞ্চার এ জাচ্ছিনা। আর হাঁ সুবীর তোমার ভুতে বিশ্বাস নেই তো?
সুবীর বাবুঃ আপনি কি যে বলেন আমি ওসব মানিনা।
রামকিঙ্কর বাবুঃ গুড। তবে যতটুকু আমি জানি, ওই বাড়ী টায় কেউ যায়না। সবাই বলে ওতে নাকি ভুত আছে। বহু সাহসী মানুষ অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে ওখানে অকালে প্রান দিয়েছে। যদি তুমি চাও আমি তোমার সিকিউরিটি এর ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
সুবীর বাবুঃ না স্যার, আমি একাই যাবো। আর যাচ্ছি তো সকালে। যতদূর জানি ভুতের দেখা রাতেই মেলে।
এরপর বহুক্ষন রামকিঙ্কর বাবু ও সুবীর বাবু নিজেদের আগত গবেষণা নিয়ে আলোচনা করেন। সুবীর বাবু যখন ওখান থেকে বেরন তখন প্রায় সন্ধে ৭ টা বেজে গেছে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সুবীর বাবু ভাবতে থাকেন এই প্রোজেক্ট টা ওনার সমস্ত হতাশা ও অনুশোচনা কে দূর করে দেবে। সেই মুহূর্তেই ওনার মনে পরে মালতী দেবীর সেই উদাশ হয়ে বসে থাকার দৃশ্য টা। রূপসা ও তিলোত্তমা তো নিজেদের পড়াশুনা ও নতুন জীবনের হাতছানিতে সব ই ধীরে ধীরে ভুলে যাবে। কিন্তু সত্যি ই মালতী দেবীর কাছে আঁকড়ে ধরে বাঁচার মত হয়ত কিছুই নেই। সুবীর বাবু মনে মনে ভাবতে থাকেন সত্যি ই উনি নিজের স্ত্রী এর সাথে অনেক অবিচার করে ফেলেছেন। নিজের কাজ, গবেষণা এগুলো ওনার সাথে মালতী দেবীর অনেক অনেক দুরত্ব তৈরি করে দিয়েছে। আর উনি কখনও চেষ্টাও করেন নি এই দুরত্ব কে ঘুচিয়ে ফেলতে। যদিও সুবীরবাবু প্রচণ্ড অপটিমিষ্টিক। মনে মনে ভাবেন, বিশাল একটা দেরি ও হয়ে জায়নি হয়ত। ভালবাসার কি বয়স আছে নাকি। মেয়েরা তো বাইরে চলে যাচ্ছে, তারপর তো ওনারা দুজনে বাড়ীতে একাই। নিজেদের ইচ্ছে মত মন ও শরীর দুটো নিয়েই আনন্দ করা যাবে। শরীর এই কথা টা মনে পরতেই সুবীর বাবুর শরীরে একটা শিহরন ওঠে। কাল থেকে তো আবার একটা নতুন কাজ, কবে ফ্রি হবেন তা উনিও জানেন না। ক্ষতি কি আজ রাতে যদি উনি একবার মালতী দেবীর সাথে না পাওয়া ভালবাসা তা মিটিয়ে নেন। সুবীর বাবুর প্রচণ্ড ইচ্ছে হচ্ছে আজ একটু ভালবাসতে। কিন্তু কি যেন একটা জিনিষ ওনাকে ভেতর থেকে আটকে দিচ্ছে। কি একটা ভয়। সুবীর বাবু একবার ভাবেন, একটু উত্তেজনা দরকার। রাস্তায় তখন বেশ ভালই ভিড়, আশেপাশে প্রচুর লোক আর জায়গা টাও ওনার কাছে খুব অচেনা। হথাত রাস্তার পাশে একটা দোকান দেখে উনি দাঁড়িয়ে যান। কেন জানিনা ওনার মন একবার বলে ওঠে এর চেয়ে বেশি উত্তেজনা বোধ হয় আর অন্য কোনও কিছুই দিতে পারেনা। সুবীর বাবু চারপাশ তা একবার দেখে নিয়ে বারে ঢুকে পরেন। দু পেগ রামের অর্ডার করেন। রাম হাঁ ঠিক সেই ব্র্যান্ডের ই রাম তা যেটা সেই রাতে উনি মানব বাবুর সাথে খেয়েছিলেন। ওয়েটার ড্রিংক সার্ফ করে দিয়ে যায়।
এর আগে সুবীর বাবু একা কখনই ড্রিংক করেন নি। এক একটা চুমুকের সাথে ওনার শরীরে নতুন নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মনে পরে যায় সেই রাতের প্রতিটি ঘটনা। মানব বাবুর সেই গল্প তা যে আসলে ওনাকে ফাঁদে ফেলার একটা রাস্তা ছিল এই মুহূর্তে তা বুঝতে আর কোনও অসুবিধাই ওনার হয়না। প্রতিটি ঘটনা ওনার মনে পড়তে থাকে আর তার সাথে সাথে শরীরের পঞ্চম রিপু ও ক্রমশ সতেজ হতে থাকে। এই ভাবে প্রায় ৬ পেগ কখন যে শেষ হয়ে গেছে ওনার নিজের ও কোনও খেয়াল নেই। কেবিনে বিল মিটিয়ে আসতে আসতে বাড়ীর দিকে রওনা দেন। চোখে তখন মালতী দেবীর নগ্ন দেহটা ভেসে উঠছে। একবার ভেবে নেন, হাঁ কনডম রয়েছে বাড়ীতে। মনে মনে বলেন আজ যাই হয়ে যাক মালতীকে আমি নিজের সব ভালবাসা উজাড় করে দেব।
সুবীর বাবু যখন বাড়ী পৌঁছান তখন রূপসা ও তিলোত্তমা ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। সুবীর বাবু একবার ভেতরের দিকে উকি মেরে সোজা শোয়ার ঘরটায় ঢুকে গেলেন। রূপসা ও তিলোত্তমার ব্যাপার তা খুব অদ্ভুত লাগলেও মালতী দেবীর কাছে ব্যাপার তা খুব চেনা। সুবীর বাবুর চোখ ও হাটার ভঙ্গি দেখেই উনি বুঝেছেন যে সুবীর বাবু ড্রিংক করে এসেছেন, কিন্তু উনি ওখান থেকে উথলেন না। রূপসা ও তিলোত্তমার খাওয়া হয়ে গেলে ওরা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। এরপর মালতী দেবী আসতে আসতে শোয়ার ঘরটায় ঢোকেন ও দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন যাতে মেয়েরা কিছু শুনতে না পায়।
মালতী দেবীঃ (কিছুটা রাগ প্রকাশের ভঙ্গিতে) আজ কেন ড্রিংক করেছ? তুমি তো এর আগে এরকম ছিলেনা। আমায় বলছ স্বাভাবিক হতে, মেয়েদের বলছ সব ভুলে যেতে, অথচ নিজে পুরনো কথা গুলো ভুলতে পারছনা।
মালতী দেবী হয়ত আরও কিছু বলতে জাচ্ছিলেন কিন্তু সুবীর বাবু ওনাকে সেই সুযোগ দিলেন না। প্রায় দৌড়ে এসেই উনি মালতী দেবীর মুখটাকে দুহাত দিয়ে জাপটে ধরে প্রচণ্ড উদ্দিপনা নিয়ে ওনাকে কিস করতে শুরু করলেন। মালতী দেবী কিছুটা হতবাক ই হয়ে গেলেন। পাগলের মত মালতী দেবীর ঠোঁট দুটোকে জিভ আর নিজের ঠোঁট দিয়ে ওলট পালট করতে করতে উনি একদম দেওয়ালে গিয়ে মালতী দেবীর শরীর টাকে ব্যাল্যান্স করলেন। এদিকে মুহূর্তের মধ্যে মালতী দেবীর মাথাটা ঘুরে গেলো। সেই একি মুখের গন্ধ, একি স্টাইল ওনাকে সেই রাতের বিভীষিকা তা বার বার করে মনে করাতে লাগলো। কিছুটা মনের ভুলেই মনে হোল এটা সুবীর নয় মানব। খুব জোরে একটা ঠেলা দিয়ে উনি সুবীর বাবুকে সরিয়ে দিলেন। তারপর অনেকক্ষণ সুবীর বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন না এ আমার স্বামী আমি কোনও অন্যায় করছি না। কোনরকমে নিজেকে সামলে বলে উথলেন
মালতী দেবীঃ না এখন নয়। প্লিজ কিছু মনে করোনা। মেয়েরা এখনো ঘুমায়নি। আর তোমার আজ প্রচুর কষ্ট হয়েছে, আজ তুমি রেস্ট নাও, অন্য কোনদিন।
সুবীর বাবু প্রচণ্ড আহত হয়েছেন তারপর শরীরে মদের নেশা।
সুবীর বাবুঃ কি হয়েছে মালতী। তুমি আমার ওপর রাগ করে আছো না এখনো? প্লিজ আমায় ক্ষমা কর। আমি হয়ত কোনদিন তোমায় বোঝাতে পারব না, সেদিন আমি কিছুই এরকম চাইনি। আমি মানবকে তোমার বা মেয়েদের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম। আমার ও প্রচুর কষ্ট হয়েছে।
মালতী দেবীঃ আরে প্লিজ এসব ভেবনা। আমি তো তোমার কথা ভেবেই না বললাম। আজ অবধি কখনও কি আমি তোমায় ঠকিয়েছি।
সুবীর বাবুঃ আমি সেটা বলিনি মালতী। কিন্তু বিশ্বাস কর যে মানব কে আমি বিশ্বাস করেছি, আর ভুল শুধু এটাই।
সুবীর বাবুর চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। এবার আর মালতী দেবীর পক্ষে নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব ছিলনা। মালতী দেবি আসতে আসতে এগিয়ে গেলেন।
মালতী দেবীঃ এই কি হয়েছে? প্লিজ আমায় বল। আমি তো আছি। কেন মন খারাপ করছ বল।
সুবীর বাবু মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। মালতী দেবীর প্রচণ্ড মায়া হোল। যে মানুষ টাকে এত বেশি শ্রদ্ধা করেন উনি তার এই অসহায়তা কিছুতেই ওনার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ওনার বারবার মনে হোল স্বামির ভালবাসা ভগবানের ডান, একে উপেক্ষা করে উনি বিশাল ভুল করেছেন। নিজের থেকেই মুখটা উঁচু করে সুবীর বাবুর মুখের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু মুখের সেই গন্ধ তা কেন জানিনা ওনার মনটাকে একটা চরম ঘৃণায় ভরিয়ে দিল। হয়ত মালতী দেবি বহু চেষ্টা করেও মানব বাবু ও সেই রাতের স্মৃতি তা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। বহু চেষ্টা করলেন একবার স্বামীর দুটো ঠোঁট কে স্পর্শ করতে কিন্তু পারলেন না। নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে
মালতী দেবীঃ প্লিজ আগে খেয়ে নাও, আমিও বাসন গুলো ধুয়ে নি। তারপর সব হবে। প্লিজ আর মন খারাপ করোনা।
সুবীর বাবু ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খেতে শুরু করলেন। মালতী দেবীর খাওয়া আগেই হয়ে গেছে। উনি বাসন মাজতে শুরু করলেন। মালতী দেবীর মন পরে রইল কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায়। কেন উনি চেষ্টা করেও সুবীর বাবুকে কিস করতে পারলেন না, কেন ওনার মনে এই অবান্তর কথা গুলো এসে যাচ্ছে। উনি এসব ই ভাবতে লাগ্লেন।
রামকিঙ্কর বাবুঃ সুবীর তুমি এসেছ খুব ভাল হয়েছে। আর একটা দিন দেরি হয়ে গেলেই আমায় প্রোজেক্ট টা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে হত। কিন্তু তুমিও জানো এত গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমি তোমার চেয়ে বেশি অন্য কাউকে ভরসা করিনা।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার, আমি জানি সেটা তাই তো এত তাড়াহুড়ো করে আমিও চলে এলাম। কাল থেকেই আমি কাজে নেমে যাবো। আমাকে ভাল করে বুঝিয়ে বলুন কি করতে হবে।
রামকিঙ্কর বাবুঃ তুমি নিশ্চয় শোভা বাজার রাজবাড়ীর নাম শুনেছ, তোমার হয়ত কিছু পরাশুনাও আছে এব্যাপারে। কিন্তু সুবীর একটা কথা কখনও ভেবে দেখেছ, যেসময় আমাদের এই কলকাতা কলকাতা হয়ে ওঠেনি, ইংরেজ রা সবে সবে আসা শুরু করেছে সেই সময় তো আমাদের এখানে রাজতন্ত্র ছিলনা।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার একদম ঠিক। সেইসময় জমিদারী প্রথা ও মহাজন দের ই রমরমা ছিল।
রামকিঙ্কর বাবুঃ এক্স্যাক্টলি আমি এটাই বলতে চাইছি। শোভা বাজার রাজবাড়ীর তথাকথিত রাজারা কেউ ই জমিদার গোছের নয়। সিপাহি বিদ্রোহ বা সমসাময়িক সমস্ত আন্দলনে এদের ভুমিকা ইতিহাসে রয়েছে। কিন্তু সেই সময়কার কলকাতার জমিদার দের ব্যাপারে ইতিহাসে কতটুকু উল্লেখ রয়েছে।
সুবীর বাবুঃ স্যার সেই অর্থে কোনও উল্লেখ ই নেই। তবে হাঁ সুতানুটি জমিদারির নাম শোনা গেছে কিছু লেখকের গ্রন্থে।
রামকিঙ্কর বাবুঃ ব্যস এটাই। সুতানুটি। তুমি কি বুঝতে পারছ এই একটা শব্দই ইতিহাসের পাতার ঠিক কত বড় মিসিং লিঙ্ক। তোমাকে এই কাজটাই করতে হবে। শ্যামবাজার অঞ্চলে একটা পোড়ো বাড়ী রয়েছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওটাই জমিদার বাড়ী। ওখানে কাল ভোর বেলায় তোমায় যেতে হবে।
সুবীর বাবুঃ ঠিক আছে স্যার। কিন্তু আমার টিমে কে কে থাকছে?
রামকিঙ্কর বাবুঃ কেউ নয়, তুমি একা। এত সিক্রেট একটা প্রোজেক্ট এর সাফল্য কেন আমরা অন্যের সাথে ভাগ করে নেব। তুমি একাই যাবে। আমি এই শরীরে আর অ্যাডভেঞ্চার এ জাচ্ছিনা। আর হাঁ সুবীর তোমার ভুতে বিশ্বাস নেই তো?
সুবীর বাবুঃ আপনি কি যে বলেন আমি ওসব মানিনা।
রামকিঙ্কর বাবুঃ গুড। তবে যতটুকু আমি জানি, ওই বাড়ী টায় কেউ যায়না। সবাই বলে ওতে নাকি ভুত আছে। বহু সাহসী মানুষ অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে ওখানে অকালে প্রান দিয়েছে। যদি তুমি চাও আমি তোমার সিকিউরিটি এর ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
সুবীর বাবুঃ না স্যার, আমি একাই যাবো। আর যাচ্ছি তো সকালে। যতদূর জানি ভুতের দেখা রাতেই মেলে।
এরপর বহুক্ষন রামকিঙ্কর বাবু ও সুবীর বাবু নিজেদের আগত গবেষণা নিয়ে আলোচনা করেন। সুবীর বাবু যখন ওখান থেকে বেরন তখন প্রায় সন্ধে ৭ টা বেজে গেছে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সুবীর বাবু ভাবতে থাকেন এই প্রোজেক্ট টা ওনার সমস্ত হতাশা ও অনুশোচনা কে দূর করে দেবে। সেই মুহূর্তেই ওনার মনে পরে মালতী দেবীর সেই উদাশ হয়ে বসে থাকার দৃশ্য টা। রূপসা ও তিলোত্তমা তো নিজেদের পড়াশুনা ও নতুন জীবনের হাতছানিতে সব ই ধীরে ধীরে ভুলে যাবে। কিন্তু সত্যি ই মালতী দেবীর কাছে আঁকড়ে ধরে বাঁচার মত হয়ত কিছুই নেই। সুবীর বাবু মনে মনে ভাবতে থাকেন সত্যি ই উনি নিজের স্ত্রী এর সাথে অনেক অবিচার করে ফেলেছেন। নিজের কাজ, গবেষণা এগুলো ওনার সাথে মালতী দেবীর অনেক অনেক দুরত্ব তৈরি করে দিয়েছে। আর উনি কখনও চেষ্টাও করেন নি এই দুরত্ব কে ঘুচিয়ে ফেলতে। যদিও সুবীরবাবু প্রচণ্ড অপটিমিষ্টিক। মনে মনে ভাবেন, বিশাল একটা দেরি ও হয়ে জায়নি হয়ত। ভালবাসার কি বয়স আছে নাকি। মেয়েরা তো বাইরে চলে যাচ্ছে, তারপর তো ওনারা দুজনে বাড়ীতে একাই। নিজেদের ইচ্ছে মত মন ও শরীর দুটো নিয়েই আনন্দ করা যাবে। শরীর এই কথা টা মনে পরতেই সুবীর বাবুর শরীরে একটা শিহরন ওঠে। কাল থেকে তো আবার একটা নতুন কাজ, কবে ফ্রি হবেন তা উনিও জানেন না। ক্ষতি কি আজ রাতে যদি উনি একবার মালতী দেবীর সাথে না পাওয়া ভালবাসা তা মিটিয়ে নেন। সুবীর বাবুর প্রচণ্ড ইচ্ছে হচ্ছে আজ একটু ভালবাসতে। কিন্তু কি যেন একটা জিনিষ ওনাকে ভেতর থেকে আটকে দিচ্ছে। কি একটা ভয়। সুবীর বাবু একবার ভাবেন, একটু উত্তেজনা দরকার। রাস্তায় তখন বেশ ভালই ভিড়, আশেপাশে প্রচুর লোক আর জায়গা টাও ওনার কাছে খুব অচেনা। হথাত রাস্তার পাশে একটা দোকান দেখে উনি দাঁড়িয়ে যান। কেন জানিনা ওনার মন একবার বলে ওঠে এর চেয়ে বেশি উত্তেজনা বোধ হয় আর অন্য কোনও কিছুই দিতে পারেনা। সুবীর বাবু চারপাশ তা একবার দেখে নিয়ে বারে ঢুকে পরেন। দু পেগ রামের অর্ডার করেন। রাম হাঁ ঠিক সেই ব্র্যান্ডের ই রাম তা যেটা সেই রাতে উনি মানব বাবুর সাথে খেয়েছিলেন। ওয়েটার ড্রিংক সার্ফ করে দিয়ে যায়।
এর আগে সুবীর বাবু একা কখনই ড্রিংক করেন নি। এক একটা চুমুকের সাথে ওনার শরীরে নতুন নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মনে পরে যায় সেই রাতের প্রতিটি ঘটনা। মানব বাবুর সেই গল্প তা যে আসলে ওনাকে ফাঁদে ফেলার একটা রাস্তা ছিল এই মুহূর্তে তা বুঝতে আর কোনও অসুবিধাই ওনার হয়না। প্রতিটি ঘটনা ওনার মনে পড়তে থাকে আর তার সাথে সাথে শরীরের পঞ্চম রিপু ও ক্রমশ সতেজ হতে থাকে। এই ভাবে প্রায় ৬ পেগ কখন যে শেষ হয়ে গেছে ওনার নিজের ও কোনও খেয়াল নেই। কেবিনে বিল মিটিয়ে আসতে আসতে বাড়ীর দিকে রওনা দেন। চোখে তখন মালতী দেবীর নগ্ন দেহটা ভেসে উঠছে। একবার ভেবে নেন, হাঁ কনডম রয়েছে বাড়ীতে। মনে মনে বলেন আজ যাই হয়ে যাক মালতীকে আমি নিজের সব ভালবাসা উজাড় করে দেব।
সুবীর বাবু যখন বাড়ী পৌঁছান তখন রূপসা ও তিলোত্তমা ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে। সুবীর বাবু একবার ভেতরের দিকে উকি মেরে সোজা শোয়ার ঘরটায় ঢুকে গেলেন। রূপসা ও তিলোত্তমার ব্যাপার তা খুব অদ্ভুত লাগলেও মালতী দেবীর কাছে ব্যাপার তা খুব চেনা। সুবীর বাবুর চোখ ও হাটার ভঙ্গি দেখেই উনি বুঝেছেন যে সুবীর বাবু ড্রিংক করে এসেছেন, কিন্তু উনি ওখান থেকে উথলেন না। রূপসা ও তিলোত্তমার খাওয়া হয়ে গেলে ওরা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। এরপর মালতী দেবী আসতে আসতে শোয়ার ঘরটায় ঢোকেন ও দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন যাতে মেয়েরা কিছু শুনতে না পায়।
মালতী দেবীঃ (কিছুটা রাগ প্রকাশের ভঙ্গিতে) আজ কেন ড্রিংক করেছ? তুমি তো এর আগে এরকম ছিলেনা। আমায় বলছ স্বাভাবিক হতে, মেয়েদের বলছ সব ভুলে যেতে, অথচ নিজে পুরনো কথা গুলো ভুলতে পারছনা।
মালতী দেবী হয়ত আরও কিছু বলতে জাচ্ছিলেন কিন্তু সুবীর বাবু ওনাকে সেই সুযোগ দিলেন না। প্রায় দৌড়ে এসেই উনি মালতী দেবীর মুখটাকে দুহাত দিয়ে জাপটে ধরে প্রচণ্ড উদ্দিপনা নিয়ে ওনাকে কিস করতে শুরু করলেন। মালতী দেবী কিছুটা হতবাক ই হয়ে গেলেন। পাগলের মত মালতী দেবীর ঠোঁট দুটোকে জিভ আর নিজের ঠোঁট দিয়ে ওলট পালট করতে করতে উনি একদম দেওয়ালে গিয়ে মালতী দেবীর শরীর টাকে ব্যাল্যান্স করলেন। এদিকে মুহূর্তের মধ্যে মালতী দেবীর মাথাটা ঘুরে গেলো। সেই একি মুখের গন্ধ, একি স্টাইল ওনাকে সেই রাতের বিভীষিকা তা বার বার করে মনে করাতে লাগলো। কিছুটা মনের ভুলেই মনে হোল এটা সুবীর নয় মানব। খুব জোরে একটা ঠেলা দিয়ে উনি সুবীর বাবুকে সরিয়ে দিলেন। তারপর অনেকক্ষণ সুবীর বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন না এ আমার স্বামী আমি কোনও অন্যায় করছি না। কোনরকমে নিজেকে সামলে বলে উথলেন
মালতী দেবীঃ না এখন নয়। প্লিজ কিছু মনে করোনা। মেয়েরা এখনো ঘুমায়নি। আর তোমার আজ প্রচুর কষ্ট হয়েছে, আজ তুমি রেস্ট নাও, অন্য কোনদিন।
সুবীর বাবু প্রচণ্ড আহত হয়েছেন তারপর শরীরে মদের নেশা।
সুবীর বাবুঃ কি হয়েছে মালতী। তুমি আমার ওপর রাগ করে আছো না এখনো? প্লিজ আমায় ক্ষমা কর। আমি হয়ত কোনদিন তোমায় বোঝাতে পারব না, সেদিন আমি কিছুই এরকম চাইনি। আমি মানবকে তোমার বা মেয়েদের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম। আমার ও প্রচুর কষ্ট হয়েছে।
মালতী দেবীঃ আরে প্লিজ এসব ভেবনা। আমি তো তোমার কথা ভেবেই না বললাম। আজ অবধি কখনও কি আমি তোমায় ঠকিয়েছি।
সুবীর বাবুঃ আমি সেটা বলিনি মালতী। কিন্তু বিশ্বাস কর যে মানব কে আমি বিশ্বাস করেছি, আর ভুল শুধু এটাই।
সুবীর বাবুর চোখ দুটো ছলছল করে উঠল। এবার আর মালতী দেবীর পক্ষে নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব ছিলনা। মালতী দেবি আসতে আসতে এগিয়ে গেলেন।
মালতী দেবীঃ এই কি হয়েছে? প্লিজ আমায় বল। আমি তো আছি। কেন মন খারাপ করছ বল।
সুবীর বাবু মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। মালতী দেবীর প্রচণ্ড মায়া হোল। যে মানুষ টাকে এত বেশি শ্রদ্ধা করেন উনি তার এই অসহায়তা কিছুতেই ওনার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ওনার বারবার মনে হোল স্বামির ভালবাসা ভগবানের ডান, একে উপেক্ষা করে উনি বিশাল ভুল করেছেন। নিজের থেকেই মুখটা উঁচু করে সুবীর বাবুর মুখের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু মুখের সেই গন্ধ তা কেন জানিনা ওনার মনটাকে একটা চরম ঘৃণায় ভরিয়ে দিল। হয়ত মালতী দেবি বহু চেষ্টা করেও মানব বাবু ও সেই রাতের স্মৃতি তা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। বহু চেষ্টা করলেন একবার স্বামীর দুটো ঠোঁট কে স্পর্শ করতে কিন্তু পারলেন না। নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে
মালতী দেবীঃ প্লিজ আগে খেয়ে নাও, আমিও বাসন গুলো ধুয়ে নি। তারপর সব হবে। প্লিজ আর মন খারাপ করোনা।
সুবীর বাবু ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খেতে শুরু করলেন। মালতী দেবীর খাওয়া আগেই হয়ে গেছে। উনি বাসন মাজতে শুরু করলেন। মালতী দেবীর মন পরে রইল কিছুক্ষন আগে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায়। কেন উনি চেষ্টা করেও সুবীর বাবুকে কিস করতে পারলেন না, কেন ওনার মনে এই অবান্তর কথা গুলো এসে যাচ্ছে। উনি এসব ই ভাবতে লাগ্লেন।