Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.42 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed
#26
দ্বিতীয় খণ্ডঃ

পর্ব ১

নতুন ফ্ল্যাট নতুন পরিবেশ এর চেয়েও বোধ হয় কঠিন যা তা হোল পুরনো স্মৃতি গুলো ভুলে যাওয়া। আজ ই সকালে সুবীর বাবু ও ওনার পরিবার কলকাতায় ফিরে এসেছেন। বালিগঞ্জের এই ফ্ল্যাট টা খুব এলাহি একটা জায়গায়। কিন্তু সেই আনন্দ টা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। হয়ত সুবীর বাবু জীবনে এত কঠিন কোনও পদক্ষেপ এর আগে কখনই নেন নি। মনের দিক থেকে উনিও প্রচণ্ড ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন কিন্তু কাউকেই তা বুঝতে দিচ্ছেন না। মালতী দেবী হয়ত একটু শান্তি পেয়েছেন তার স্বামী মানব বাবুর সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়ায়, কিন্তু কোথাও যেন একটা স্বজনকে হারানোর একটা দুঃখ থেকেই গেছে। মনে মনে হয়ত উনি অনেকবার ই বলেছেন “কেন মানব দা কেন এরকম করলে তুমি?” ৪ জন মানুষ আপ্রান চেষ্টা করছে স্বাভাবিক হতে। বাড়ীর অভিভাবক হিসেবে সুবীর বাবু সেটা বোঝেন এবং উনি নিজেও চান যে ওনার বাড়ী তে একটা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক, আগের মতই সবাই আনন্দে মেতে উঠুক। আর এর উপায় একটাই, নিজের নিজের কাজে প্রচণ্ড ব্যাস্ত হয়ে যাওয়া।
এখন বাজে বিকেল ৪ তে। সারাদিন বাড়ীটায় খুব আনুষ্ঠানিক কিছু কথাবার্তা ছাড়া আর সেরকম কোনও কথাই হয়নি। তিলোত্তমার মেডিক্যাল কলেজ এ হয়ে গেছে, মুল বিষয় বস্তু ছিল এটাই। সুবীর বাবু ভীষণ ভাবে চাইছেন এই জায়গা তা থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন কিছু একটা করতে। উনি ভেতরে ঢুকলেন। ভেতরের ঘর টায় রুপ্সা ও তিলত্তমা চুপ করে বসেছিল। রুপ্সার হাতে মোবাইল, আর তিলোত্তমার হাতে নিউস পেপার। সুবীর বাবু বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন ওদের দিকে।
সুবীর বাবুঃ শোন তিলোত্তমা, পিএমটি এক মাস পিছিয়ে গেছে, মানে তুই হাতে আরও একটা মাস পাচ্ছিস। এইসময় তা তুই যদি একটু ঠিক করে ইউটিলাইজ করতে পারিস তাহলে হয়ত হয়েও যেতে পারে।
তিলত্তমাঃ না বাবা আমার আর ভাল লাগছে না। থাক না আমার তো একটা মেডিকেল কলেজ এ হয়ে গেছে, আর অন্য কোথাও কেন ট্রাই করব।
সুবীর বাবুঃ শোন মা, এরকম ভাবিস না। স্টেট এর কলেজ আর অল ইন্ডিয়া এর কলেজ এর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ আছে। তুই এত কষ্ট করলি দুটো বছর, আরও একটু কর না, যদি হয়ে যায়, কোথায় যাবি নিজেও জানিস না। কত সম্মান হবে। আর আমি জানি তদের দুজনের ই মন খারাপ এই নতুন বাড়ী তা নিয়ে। কি করবি বল মা, আমাদের ও কি ভাল লাগছে। ওটা আমার নিজের বাড়ী ছিলনা। কেন আমরা অন্যের দয়ায় থাকতে যাবো।
এতক্ষনে তিলোত্তমা ও রূপসার একটু মন টা চেঞ্জ হোল। ওরা সুবীর বাবুর কথা টা খুব মন দিয়ে শুনল।
তিলত্তমাঃ হাঁ বাবা তুমি ঠিক ই বলেছ। আমিও ভাবছিলাম পিএমটি টা সিরিয়াসলি দি। আর রূপসাও তো আইআইটির জন্য প্রায় দেড় মাস সময় পাচ্ছে। ভাল হবে দুজনে মিলে পড়ব।
বাড়ী টা চেঞ্জ করার ফলে রূপসার ও মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। তিলোত্তমার এই কথাটা ওর খুব ভাল লাগলো। ও এক কথায় রাজি হয়ে গেলো।
সুবীর বাবুঃ আজ তোরা রেস্ট নিয়ে নে। আমি আজ সুব্রত কে ফোন করব। ওর সাথে কথা বলি। কাল থেকে তোরা সিরিয়াসলি পড়াশুনা শুরু করে দিস।
সুবীর বাবু জানেন ওনার কথাটা ওনার দুই মেয়ে খুব ভাল ভাবেই নিয়েছে, এবার ওনার একমাত্র কাজ মালতী দেবী ও অবশ্যই নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। প্রথমেই নিজের কথা। এই মুহূর্তে ওনার দরকার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ যেটা নিয়ে উনি ব্যস্ত থাকতে পারবেন। তিলোত্তমা কে নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগে উনি যখন ওনার এইচওডি কে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তখন ওনার এইচওডি অনাকে কিছু একটা গবেষণা মুলক কাজের কথা বলছিলেন, উনি অতটা সিরিয়াসলি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবেননি। এক মুহূর্তের মধ্যেই সুবীর বাবুর মনে এটা ঢুকে গেলো যে এই প্রোজেক্ট তাই ওনাকে সমস্ত বাজে ঘটনা গুলোকে ভুলিয়ে দিতে পারে।
সুবীর বাবুর কলেজ এর এইচওডি রামকিঙ্কর বাবু খুব ভাল মানুষ এবং উনি সুবীর বাবুকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করেন। সুবীর বাবু ঠিক করেন রামকিঙ্কর বাবুকে একটা ফোন করবেন।
সুবীর বাবুঃ স্যার কেমন আছেন? কলেজ কেমন চলছে?
রামকিঙ্কর বাবুঃ আরে সুবীর তোমার ই ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। বল মেয়ের অ্যাডমিসন হোল?
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার, তিলোত্তমার অ্যাডমিসন হয়ে গেছে। স্যার আপনি আমাকে একটা কোনও প্রোজেক্ট এর ব্যাপারে বলছিলেন ১২ তারিখ। আমি ঠিক করে শুনতে পারিনি।
রামকিঙ্কর বাবুঃ হাঁ সুবীর একটা প্রোজেক্ট আছে। বিশাল মাপের প্রোজেক্ট। আর তুমি জানই যে এত বড় একটা প্রোজেক্ট আমি তোমায় ছাড়া অন্য কাউকেই দিতে পারিনা। আগে তুমি বল ফ্রি কবে থেকে হচ্ছ?
সুবীর বাবুঃ স্যার আমি আজ সকালে ফিরেছি। কাল থেকে একদম ফ্রি। কাল ই কলেজ জয়েন করছি।
রামকিঙ্কর বাবুঃ মানে তুমি কি কাল থেকে ২-৩ দিন টানা সময় দিতে পারবে? মাঝে কোনও কাজ থাকবে না তো? ২-৩ দিন ও হয়ত লাগবে না।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার আমি একদম ফ্রি।
রামকিঙ্কর বাবুঃ বাহ তাহলে তো দারুন ব্যাপার। সুবীর তোমায় কাল কলেজ এ জয়েন করতে হবে না। আমি তোমায় রিসার্চ লিভ দিচ্ছি। তুমি কাল থেকেই প্রোজেক্ট টায় লেগে যাও। সেন্ট্রাল গভরমেনট এর প্রোজেক্ট বুঝতেই তো পারছ।
সুবীর বাবুঃ হাঁ স্যার বুঝলাম। কিন্তু আউট অফ স্টেট কি? তাহলে একটু প্রবলেম হবে। কারন এই সবে ঘরটা চেঞ্জ করলাম তো।
রামকিঙ্কর বাবুঃ আরে না না অত চিন্তা করোনা। স্টেট তো ছেরেই দাও, একদম এই কলকাতা শহরের ওপর কাজ। শোন সুবীর তোমায় ফোন এ সব বলা সম্ভব নয়, আমিও তো বালিগঞ্জ এই থাকি, যদি পার তো সন্ধে বেলা একবার আসনা আমার বাড়ী তে ওখানেই সব কিছু তোমায় বুঝিয়ে বলছি।
সুবীর বাবুঃ ঠিক আছে স্যার আমি আর কিছুক্ষন পরেই আসছি আপনার ফ্ল্যাটে।
সুবীর বাবু ভীষণ খুশি হলেন। তার অনেক গুলো কারন আছে। এক, উনি একটা প্রোজেক্ট পাচ্ছেন। দুই প্রোজেক্ট টা কলকাতা তেই। তিন প্রোজেক্ট টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাই হোক ওনাকে কিছুক্ষনের মধ্যেই বেরতে হবে। তাই ভাবলেন একবার মালতী দেবী কে সব বুঝিয়ে বলবেন। একবার ভেতরের ঘরটায় উকি মারলেন, রূপসা ও তিলোত্তমা মন দিয়ে পরাশুনা করতে শুরু করে দিয়েছে। সুবীর বাবু খুব খুশি হলেন। মনে মনে ভাবলেন যাক গে তাহলে মেয়ে গুলোকে নিয়ে আর চিন্তা থাকল না। এখন একজন কে নিয়েই চিন্তা তিনি হলেন মালতী দেবী।
সুবীর বাবু জানেন মালতী দেবী ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। সুবীর বাবু আসতে আসতে ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। মালতী দেবী আনমনে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন। সুবীর বাবুর ও খুব খারাপ লাগলো। ওনার চেয়ে বেশি হয়ত কেউ ই জানে না মালতী দেবী এই সংসার টাকে তৈরি করতে ঠিক কি পরিমান কষ্ট করেছেন। সত্যি ই মালতী দেবী কে ওই অবস্থায় দেখে সুবীর বাবুর মন প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেলো। সুবীর বাবু পেছন থেকে ওনার কাঁধে একটা হাত রাখলেন।
মালতী দেবীঃ কি গো চা খাবে? চা বানিয়ে দেব?
সুবীর বাবুঃ না তোমায় এখন রান্নাঘরে যেতে হবেনা। মালতী আমি জানি তুমি আমার ওপর একটু হলেও অসন্তুষ্ট। আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি মালতী, তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
মালতী দেবীঃ আরে এ তুমি কি বলছ? সব ভুলে যাও। আসলে এতদিন ওই বাড়ী টায় আমরা ছিলাম তো। আমি তো বিয়ে হয়ে ওখানেই উথেছিলাম। সেই ভাবে ভাবলে ওটাই আমার শশুর বাড়ী, তাই একটু মন খারাপ হচ্ছে।
সুবীর বাবুঃ আমি সব ই বুঝি। কিন্তু জানো তো মালতী, তোমার কথা মত অনেক আগেই আমার ওখান থেকে চলে আসা উচিত ছিল। সম্মান সবার আগে।
মালতী দেবীঃ আমি খুব খুশি হয়েছি গো। যতই হোক এটাই আমাদের নিজেদের বাড়ী। আমি সত্যি ই খুশি।
সুবীর বাবুঃ মালতী আমরা দুজনেই মেয়েদের জন্য অনেক কিছু ছেড়েছি। আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা।
মালতী দেবীঃ কি কথা বলই না আমায় প্লিজ।
সুবীর বাবুঃ আমি জানি তুমি আমার ওপর রাগ করেছ। মানবের সাথে যে ব্যবহার আমি করেছি, তা তুমি কিছুতেই মানতে পারছ না। আর এটাই তোমার মন খারাপ করার কারন।
মালতী দেবীঃ তুমি ভুল বুঝেছ আমায়। আমি এরকম কিছুই ভাবিনি। সত্যি ই এরকম কিছু ভাবিনি।
সুবীর বাবুঃ না মালতি, তোমায় কতগুলো কথা না বললে নয়। মানব ভাল লোক নয়। ওর উপকারের জন্য আমার চোখ দুটো বন্ধ ছিল। সেদিন রাতে এমন কিছু কথা ও বলেছে যা আমি কখনও তোমায় বলতে পারব না।
মালতী দেবীঃ থাক না। তুমি ই তো আমার সব। কি দরকার এইসব নিয়ে ভাবার। যা হয়েছে সব ভুলে যাও। আমরা এখন অনেক দূরে। সব ভুলে যাও।
সুবীর বাবুঃ মালতী, মানব কেন এরকম করল। আমি তো ওকে নিজের ভাইয়ের মত ভাবতাম।
মালতী দেবীঃ তুমি প্রচণ্ড সরল, তাই তোমায় সবাই ঠকায়। প্লিজ ভুলে যাও সব। এই শোন না আজ মাটন করব। রূপসা অনেকদিন বলছিল মাটন খাবে।
সুবীর বাবুঃ হাঁ হাঁ তাই কর। আমি ফেরার সময় মাটন নিয়ে আসব। ও তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি, রামকিঙ্কর বাবু ফোন করেছিলেন আমায় এই মুহূর্তেই একবার যেতে হবে ওনার বাড়ী। একটা প্রোজেক্ট এর কাজ উনি আমায় দেবেন। তবে চিন্তার কিছু নেই। কলকাতা তেই।
এরপর সুবীর বাবু আসতে আসতে রেডি হয়ে রামকিঙ্কর বাবুর বাড়ীতে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে শুরু করলেন।
[+] 1 user Likes manas's post
Reply


Messages In This Thread
RE: অভিশপ্ত ডায়েরী by subha chatterje completed - by manas - 18-01-2019, 11:46 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)