20-10-2019, 08:34 PM
আমার হাতে হাত দিয়ে স্নেহা বসে আছে। নরম হাতের স্পর্শ খুব ভালো লাগছে। ইচ্ছে করছে গা ঘেঁসে বসতে। কিন্তু ড্রাইভারের সামনে সে সাহস পাচ্ছি না। একে তো তনুর ওই কেস হয়ে গেছে। সেটা ট্যাক্সিতে। আবার এখানে কিছু হলে একদম মুশকিলে পরে যাবো। ওইভাবে বসে স্নেহাকে সব দেখাতে দেখাতে ইডেনের সামনে চলে এলাম। ট্যাক্সি ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেলাম যেখান দিয়ে লোক ঢোকে ইডেন ঘুরতে সেই গেটের দিকে। ঢুকে গেলাম ইডেনের ভিতর। সবুজ ঘাস, গাছগাছালি, কেমন একটা ঠাণ্ডা পরিবেশ। ইতিউতি লোকেরা ঘোরাফেরা করছে। আমরা অনেকটা ভিতরে ঢুকে এলাম। স্নেহা চারিপাশ দেখে বলল, ‘খুব ভালো জায়গা। তুমি দেখ, কাছাকাছি থাকি অথচ দেখতে পারি নি। তুমি নিয়ে এলে বলে দেখতে পেলাম।‘ আমি হেসে বললাম, ‘মনে রাখিস কথাটা। আমি তোকে ঘুরিয়ে দিলাম। একটা থ্যাঙ্ক ইউ দে।‘ স্নেহা আমার হাত জড়িয়ে নিজেকে আমার সাথে লাগিয়ে বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ।‘ প্যাগোডা দেখিয়ে বললাম, ‘এই দেখ, এমন সুন্দর জিনিস কোনদিন কোলকাতাতে দেখতে পাবি না।‘ ও অবাক হয়ে ওই দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, ‘তোমার মোবাইলটা দাও। একটা ছবি তুলি।‘ মোবাইল নিয়ে ও অনেক কায়দা করে প্যাগোডার ছবি তুলল কতগুলো। তারপর আবার মোবাইলটা ফেরত দিয়ে দিল। আমরা একটা বিরাট গাছের তলায় এসে বসলাম। আমি জানি এখানে অনেক কিছু দুষ্টুমি হয়, মেয়ে আর ছেলে মিলে করে। আজ যেন সেরকম কিছু না ঘটে। কলেজে থাকতে এইগুলো দেখার জন্য আসতাম। কেউ জড়িয়ে রয়েছে, কেউ হয়তো চুমু খাচ্ছে। কত কাণ্ডকারখানা। সেইগুলো আমরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতাম।একটা গাছের সাথে পিঠ লাগিয়ে আমি বসলাম আর আমার সামনে স্নেহা। বসতেই একটা ফেরিওয়ালা এলো, বাদাম নিয়ে। আমি একটা প্যাকেট কিনলাম, পয়সা দিয়ে দিলাম। দুজনে মিলে ভেঙ্গে খেতে থাকলাম। অনেকক্ষণ কথা বলিনি, বললাম, ‘কিরে এই রকম চুপচাপ থাকতে এতো দূরে এলাম নাকি? কিছু তো বল।‘ স্নেহা বলল, ‘কি বলব বোলো?’ আমি বললাম, ‘কি বলবি? ঠিক আছে এটা বল, আমাকে তোর কেমন লাগে?’ স্নেহা বাদাম চিবিয়ে বলল, ‘তোমাকে? তোমাকে খুব কাছের মনে হয়। একটা কথা বলব বিশ্বাস করবে? আমার তোমাকে বাবার থেকে খুব কাছের মনে হয়।‘ আমি দেখলাম এটাই সুযোগ। জিজ্ঞেস করি ওকে। বললাম, ‘আমি যতদিন তোকে তোর বাবার সাথে দেখেছি ততদিন মনে হয়েছে তুই তোর বাবার সাথে ঠিক কমফোর্টেবল থাকিস না। কারনটা কি?’ স্নেহা প্রথমে কিছু বলল না, বাদাম খেয়ে গেল। তারপর বলল, ‘না বাবাকে ঠিক ভালো লাগেনা। ছোটবেলায় বাবা আমার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতো না। কথায় কথায় ধমকাতো।‘ আমি বললাম, ‘তো কি হয়েছে? বাবা হয়ে তো ধমকাতেই পারে।‘ স্নেহা মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘কে বলল পারে না, পারে তো বটেই। কিন্তু তাকে তো বাবা হতে হবে।‘ আমি চমকে উঠলাম, মেয়েটা বলে কি। বললাম, ‘বাবা হতে হবে মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?’ স্নেহা আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘বাবার মত বিহেভই করে না। যখন তখন বকা, বাজে বাজে কথা বলা। ছোট বেলায় সহ্য করে নিতাম। বড় হয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। নিতান্তই জরুরি না হলে নয়। মাঝে মাঝে কি মনে হতো জানো, বোধহয় আমি ওর মেয়ে নই।‘ বাপরে, এতো ঘৃণা পার্থর প্রতি। তাহলে দাদা যেটা বলেছে তাই ঠিক। স্নেহা ওর মেয়ে হতে পারে না, পারে না, পারে না। আমি লাইট করার জন্য বললাম, ‘তো বল, এখানে এসে তোর কিরকম লাগছে?’ স্নেহা বলল, ‘বললাম তো ভালোই। তুমি বলেই আসতে পারলাম।‘ আমি বললাম, ‘তোর বয় ফ্রেন্ডের কথা বল।‘ স্নেহা বলল, ‘কোন বয়ফ্রেন্ড?’ আমি অবাক হবার ভান করে বললাম, ‘কোন মানে? কতজন আছে তোর?’ স্নেহা ঠোঁটের কোনে হাসি এনে বলল, ‘হু হু বাবা, অনেক আছে।‘ আমি বললাম, ‘তাহলে কাউকে স্পেসিফিক বলতে হয় তাইতো?’ স্নেহা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঠিক তাই।‘ আমি মনে করার ভান করে বললাম, ‘হুমম, কাকে বলি? কাকে বলি? হ্যাঁ, ওই যে তোর সাথে যে চান করতো?’ স্নেহা কপালে থাপ্পর মেরে বলল, ‘হায় কপাল, কেন তোমাকে বলতে বললাম? আর চান করতো মানে, ওহাট ডু ইউ মিন? একবারই চান করেছি।‘ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে, তাই। আসে ঘরে?’ স্নেহা মাথা দুলিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ আসে। এখন আসে না। অ্যাকচুয়ালি ও এখানে থাকে না। পড়াশুনার জন্য এসেছিল। কিন্তু কে জানে ওর বাবা মা নিয়ে গেল কেন আবার ওদের দেশে। ছেলেটা ভালোই ছিল। আমার মনের মত।‘