20-10-2019, 08:34 PM
তনু জিজ্ঞেস করলো, ‘কিন্তু তোর নিশ্চয়ই খিদে লেগেছে। আমি একটু টিফিন বানাই।‘ আমি ওকে বারন করে বললাম, ‘কিছু বানাতে হবে না। আমি বাথরুম থেকে ঘুরে এসে বাইরে থেকে টিফিন নিয়ে আসবো। তুই আরাম কর।‘ আমি বাথরুমে যাবার জন্য তৈরি হলাম। একটা সময় আমি তনুকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে কেমন ফিল করছিস এখন?’ তনু জবাব দিল, ‘ওষুধটা খাবার পর মনে হচ্ছে যেন ব্যথাটা অনেক কম। হয়তো আরও পরে আরও কমে যাবে।‘ আমি বললাম, ‘রাতে একটা খেয়ে নিস। তাহলে কাল দেখবি আরামসে পায়খানা করতে পারছিস। আজ কি বেরবি?’ তনু বলল, ‘নারে বেরবো না। ব্যাথাটা কমুক। এক কাজ কর। তুই যে এসেছিস স্নেহা জানে। ওর সাথে এখনও তুই দেখা করিস নি। ওকে ফোন করে ডেকে নিচ্ছি। তুই ওর সাথে কোথাও ঘুরে আয়। ওর ভালো লাগবে। নাহলে পরে আমাকে ছিঁড়ে খাবে তোকে দেখা করতে দিই নি বলে।‘ আমি দেখলাম মন্দ না। বাড়ীতে চুপচাপ বসে থাকার চাইতে স্নেহাকে নিয়ে ঘোরা অনেক ভালো। তাছাড়া তনুর ঘুম দরকার। ঘুমলে অনেক ভালো থাকবে। শরীরের কষ্ট, ক্লান্তি সব কেটে যাবে। যা অত্যাচার হয়েছে ওর উপর। আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, সেটাই ভালো। তুই ডেকে দে ওকে। আর দুপুরে আমি থাকলে তুই ঘুমবি না। তোর ঘুম দরকার খুব। অনেকটা হালকা হয়ে যাবি পরে।‘ তনু জবাব দিল, ‘এক্সাক্টলি। তাই তোকে বলছিলাম।‘ স্নেহাকে ফোন করলো তনু। কিছুক্ষণ কথা বলে আমাকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই নে তোর সাথে কথা বলবে স্নেহা।‘ আমি ফোন ধরতেই ওদিক দিয়ে স্নেহার মিষ্টি গলা ভেসে এলো, ‘কিগো, ভুলেই গেলে? এতক্ষণ পর মনে পড়লো তোমার ভাইজিকে? বাহ বাহ। ঠিক আছে, আমারও সময় আসবে।‘ আমি বললাম, ‘আর পাকামো করতে হবে না তোকে। আমি রেডি আছি, কখন আসবি বল?’ স্নেহা জানি না মজা করলো কিনা, বলল, ‘দু ঘণ্টা পর।‘ আমি গম্ভির হয়ে বললাম, ‘ওকে, তোকে আসতে হবে না। আমি এখন বেড়িয়ে যাচ্ছি। ট্রেন ধরে চলে যাবো টাটা।‘ স্নেহার টনক নড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, ‘আরে একি, আমি মজা করছিলাম। তোমার সাথে বেরবো না? তুমি তো একটা হিরো গো। তোমাকে নিয়ে বেরবো না। বাব্বা, কি মেজাজ। দাঁড়াও, দাঁড়াও, আমি এখুনি আসছি। কোথায় থাকবে? মায়ের বাড়ীতে আমি যাবো না, তাহলে আটকে দেবে আমায় দাদু।‘ আমি উত্তর দিলাম, ‘আমি নিচে দাঁড়াচ্ছি। দশ মিনিটের মধ্যে চলে আয়।‘ স্নেহা ফোন রাখতে গিয়ে বলল, ‘এই শোন, বাইরে খাব তো আমরা?’ আমি বললাম, ‘অফ কোর্স। চলে আয়।‘ তনু হা করে আমাদের কথা শুনছিল। ফোনটা বন্ধ করতে তনু বলল, ‘আসছে ও? কি বলল?’ আমি বললাম, ‘আসছে দশ মিনিটে। মজা করছিল, বলছিল দু ঘণ্টা পরে আসবে। জিজ্ঞেস করলো বাইরে খাওয়াবো কিনা।‘ ও বলল, ‘তোর একদম গলার বন্ধু হয়ে গেছে। যা ঘুরে আয়, ওর মনটা ভালো লাগবে।‘ আমি একটু ঢঙ করে বললাম, ‘কিন্তু তুই যে একা থাকবি?’ তনু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আরে তুই তো বললি দুপুরে ঘুমাতে। তুই থাকলে পারবো নাকি সেটা? যা যা, বেড়িয়ে পর। নাহলে ও আবার এসে দাঁড়িয়ে থাকবে।‘ আমি ড্রেস করে বেড়িয়ে পড়লাম। কাল রাতের ঘটনায় একটু ক্লান্তি লাগছিল আর মনটাও ভালো ছিল না, তবু মনে হয় স্নেহার সাথে ঘুরলে সব ঠিক হয়ে যাবে। একটা লাল টি শার্ট আর একটা ক্যাজুয়াল পরে নিচে নেমে একটা সিগারেট ধরিয়েছি, দূর থেকে দেখলাম স্নেহা আসছে। একটা জিন্স মনে হচ্ছে পরেছে, উপরে একটা সাদা টি শার্ট। দূর থেকে আমাকে দেখতে পেয়ে হাত তুলে দেখালো। আমিও দেখালাম। কাছে আসতে বলল, ‘আই লা, কি দারুন লাগছে দেখতে গো তোমাকে। মেয়েরা তো স্যাট করে প্রেমে পরে যাবে।‘ আমি বললাম, ‘মেয়েরা কেন? তুই পরিস নি প্রেমে?’ স্নেহা হেসে বলল, ‘আমি তো আগে থেকেই পরে আছি। নতুন করে আর কি বলবে। সত্যি বলছি কাকু ইউ লুক গরজিয়াস।‘ আমি জবাব দিলাম, ‘থাঙ্কস ফর দা কমপ্লিমেন্ট। বাট ইউ লুক অলসো টু ড্যাসি। আই মিন ইট।‘ স্নেহা আমার গায়ে গা লাগিয়ে বলল, ‘থাঙ্কস মাই অনলি ফ্রেন্ড।‘ দেখলাম রাস্তার লোকগুলো কেমন ভাবে আমাদের দুজনকে দেখছে। তাড়াতাড়ি কাটতে হবে এখান থেকে। স্নেহাকে বললাম, ‘কোথায় যাবি বল?’ স্নেহা বলল, ‘তুমি যেখানে নিয়ে যাবে?’ ঘড়িতে দেখলাম প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। ইডেনে ঘুরে এলে কেমন হয়? বললাম, ‘ইডেনে গেছিস কখনো?’ স্নেহা বলল, ‘না, কে নিয়ে যাবে?’ আমি বললাম, ‘যাবি?’ স্নেহা বলল, ‘চলো। কিন্তু কি দেখার আছে ওখানে?’ আমি বললাম, ‘দেখবি আর কি। ঘুরতে যাচ্ছি। গল্প করবো, একটু বসবো।‘ স্নেহা বলল, ‘চলো সেই ভালো।‘ একটা ট্যাক্সি ডেকে উঠে বসলাম, ড্রাইভারকে বললাম, ‘ইডেন চলো।‘ ড্রাইভার গাড়ী ছোটাল সাই সাই করে। প্রায় ফাঁকা রাস্তা। হু হু করে গাড়ী যাচ্ছে।