Thread Rating:
  • 18 Vote(s) - 3.06 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি, শ্মশান ও পীরসাহেবের থান by Mamun Jafran
#41
This story is addictive. Need more.
Why so serious!!!! :s
[+] 1 user Likes Waiting4doom's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
this is one of the best story
please continue and hope you finished it
[+] 1 user Likes Loneliness's post
Like Reply
#43
পার্টঃঃ ১৮
হ্যাঁ।
করলে কখন।
মিত্রা আর ছোট করেছে।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা নীপার হাত ধরেছে শক্ত করে।
তুই বিশ্বাস কর....।
ঠিক আছে আমি ওদের একটু খাবার ব্যবস্থা করে আসি। তোমরা ওপরে যাও।
আচ্ছা।
দাদা গেলেন কোথায়।
ওইতো রিসেপসনে বসে আছে। মিত্রা বললো।
ওদের ডেকে নিয়ে যাও।
মল্লিকদা দাদা রিসেপসনে বসে আছেন। দাদা কার সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। আমি কাছে যেতে বললো, একটু ধর, হ্যাঁ বল।
কি খাবে।
একটু চা বিস্কুট।
বড়মা খাবার নিয়ে এসেছেন।
হ্যাঁ হ্যাঁ কালকে ওরা কিসব করছিল। তুই খাবি না।
গ্রামের ছেলে গুলো এসেছে, ওদের একটু দেখে আসি। তুমি ওপরে যাও ওরা গেছে।
যা তাহলে।
একটু মিষ্টি পাঠিয়ে দিই।
সুগার ফ্রি।
মনে হয় পাব না। তবু দেখছি।
দাদা আবার ফোনে কথা বলতে শুরু করলেন।
আমারে জিজ্ঞাসা করলি না। মল্লিকদা বললেন।
তোমারটা আমি জানি।
ঠিক আছে।
আমি বাইরে বেরিয়ে এলাম।
অনাদি সমস্ত ব্যবস্থা করেছে। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম, তিনটে গাড়ি। তার মধ্যে একটি গাড়ি আবার সরকারী তকমা মারা। মানে এখানে এসে ফোন টোন করা হয়ে গেছে। আমাকে দেখেই চিকনা এগিয়ে এলো। গুরু তোমার পায়ের ধুলো একটু দাও।
অন্যান্য যে ছেলেগুলো এসেছিল, ওরা মুখের দিকে তাকায়। ওরা সব শুনে ফেলেছে, আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, একটা সিগারেট খাওয়ানা।
চিকনা ছুটে চলে গেলো। অনাদি কাছে এলো। বাসু আমার ছায়া সঙ্গী। পচা সঞ্জয় আমার কাছ ঘেঁসে দাঁরিয়ে মিটি মিটি চোখে আমায় দেখছে।
ভানু কোথায়রে ? আমি বললাম।
অনাদি বললো আশে পাশে আছে কোথাও। চিকনা একটা প্যাকেট নিয়ে এসেছে।
এক প্যাকেট। সঞ্জয় বললো।
এই শুরু করলি। আমি বললাম।
আচ্ছা আচ্ছা পরে হবে।
হ্যাঁ ঠেকে গিয়ে।
ঠিক আছে।
একটা সিগারেট নিয়ে চিকনার হাতে প্যাকেটটা দিলাম। সঞ্জয় বললো, দে একটা।
না।
কেনো।
গুরুর প্রসাদ। এখন নয় ফেরার সময়। এখন বিড়ি খা।
অনাদিকে বললাম, তুই বাইরেটা সামাল দে। আমি ভেতরটা সামাল দিই। আর শোন দাদা আর মল্লিকদার জন্য কিছু সুগার ফ্রি মিষ্টির ব্যবস্থা কর।
অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, সুগার ফ্রি ? পাবো তো।
বাসু বললো, স্টেশনের ধারে মা লক্ষীতে পাবি।
ফান্ড আছেতো। অনাদি মাথা নাড়লো, শেষ হলে চেয়ে নিস।
আচ্ছা।
অনাদি চিকনাকে সঙ্গে নিতে চাইলো। চিকনা বললো আমি গুরুর পাশে আছি। তুই সঞ্জয়কে নিয়ে যা।
ঠিক আছে।
চিকনাকে বললাম, চল একটু চা খাই।
আমি চিকনা পাঁচু পচা বাসু সবাই এসে সামনের দোকানটায় বসলাম। বেশ চকচকে দোকানটা একটা নার্সিংহোমকে কেন্দ্রকরে জায়গাটা বেশ জমজমাট। চিকনা চায়ের কথা বললো, ভদ্রলোক বললেন, একটু অপেক্ষা করুন। বানিয়ে দিচ্ছি।
বাসু বলল, হ্যাঁরে অনি ওই ভদ্রমহিলা কাগজের মালিক!
হ্যাঁ। আর অমিতাভদাকে দেখলি, উনি এডিটর।
সত্যি কথা বলতে কি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
না হওয়ারি কথা। ওর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে, দেখন দারি নেই।
একেবারে খাঁটি কথা বলেছিস। কোটি কোটি টাকার মালিক......।
কোটি টাকা নয়, ঠিক এই মুহূর্তে ওর এ্যাসেটের ভ্যালু হাজার কোটি টাকা।
কি বলছিস।
ঠিক বলছি।
কি সাধারণ।
সবাই আমার কথা শুনছে আর চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে।
অনাদি আর সঞ্জয় এলো। পাশে বসলো।
অনাদি বললো। এটা।
দিয়ে আয়।
অনাদি সঞ্জয়ের দিকে তাকালো।
তুই যা গুরু। ওখানে সব......।
অনাদি বেরিয়ে গেলো।
দুটো করে মিষ্টি বলনা। সকলে খাই। আমার মুখ থেকে কথা সরলো না, তার আগেই চিকনা অর্ডার দিলো। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, নার্সিংহোমের গেট পেরিয়ে অনাদির সঙ্গে নীপা আর মিত্রা আসছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। বাসুও আমার দেখা দেখি উঠে দাঁড়ালো। অনাদি হাত দেখালো, বুঝলাম বিশেষ কিছু নয়। ওরা ভেতরে এলো।
কিহলো ?
মিত্রাদি বললো তোমার কাছে আসবে। নীপা বললো।
এসো।
আমার পাশ থেকে বাসু উঠে গেলো। মিত্রা আমার পাশে এসে বসলো। আর একপাশে নীপা বসলো। টেবিলের অপরজিটে বাসু অনাদি সঞ্জয়, চিকনা একটা চেয়ার টেনে এনে বসলো।
আর একটা টেবিলে ওরা সবাই বসলো।
খেয়েছো।
নীপ বললো, ছোটমা জোড় করে লুচি আলুরদম খাইয়েছে।
মিত্রাদি।
মিত্রাদিও খেয়েছে।
মিষ্টি খাবি।
নিয়ে আয়। চিকনাকে ইশারা করতে ও বলে দিলো।
সকলের টেবিলে মিষ্টি আসলো। বাসু অনাদি মিত্রাকে একাপেয় অনেক কথা বলার চেষ্টা করলো। মিত্রা কিছু উত্তর দিলো। বাকিটা আমায় দেখিয়ে দিলো। মিত্রা নীপার দিকে তাকিয়ে বললো, নীপা আমার ব্যাগটা দাওতো। নীপা মিত্রার ব্যাগটা দিল, ব্যাগ খুলে মিত্রা মোবাইল বার করলো।
এইনে তোর মোবাইল।
আমি হাতে নিলাম। দেখলাম সঞ্জয়ের চোখ জুল জুল করছে।
এত দাম দিয়ে কিনলি কেন।
তুই মোবাইল আনতে বলেছিস, দামের কথা কিছু বলিস নিতো।
তাবলে.....।
মিত্রা মাথা নীচু করে মিষ্টি ভেঙে খাচ্ছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম আমার মোবাইল নেই। আমার চোখ মুখ দেখে চিকনা বললো, মোবাইল তো।
হ্যাঁ।
আমার পকেটে।
তোর পকেটে মানে।
তুই যখন কেবিনে গেলি তখন আমার হাতে দিলি। তারপর অনেকবার ফোন বেজেছে ধরিনি। শেষবারেরটা ধরলাম। হিমাংশু না কে ফোন করেছিল। পরে ফোন করুন বলে কেটে দিয়েছি। তারপর দেখলাম অনবরতো ফোন আসছে। বন্ধ করে পকেটে রেখে দিয়েছি।
সঞ্জয় চেঁচিয়ে উঠলো গা.....বাসু ওর মুখটা চেপে ধরলো। সরি বলে সঞ্জয় হেসে ফেললো। মিত্রা নীপা মাথা নীচু করে ফিক ফিক করে হাসছে।
তোলা থাকলো। চিকনা বললো। এই অপমান আমি সইব না, মনে রাখিস।
হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমি তাকালাম। ওরা থেম গেলো।
সঞ্জয়কে বললাম ওই মোবাইল থেকে কার্ডটা এই মোবাইলে ভরে দে। পকেট থেকে আর একটা সিম বার করে বললাম, এই সিমটা এতে ভরে দিয়ে নীপাকে দে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, চার্জ দিয়ে নিয়ে এসেছিস।
হ্যাঁ।
চা খাবি।
মিত্রা হাসলো।
হাসলাম।
হাসছিস কেনো।
এমনি।
চিকনার দিকে তাকাতে, দুটো এক্সট্রা বলা হয়ে গেলো।
দাদা মল্লিকদা কি করছেন।
দাদা এখানের সকলকে ফোন করে ফেলেছেন। সব চলে এলো বলে।
মানে।
মানে আরকি তুই জিজ্ঞাসা করবি।
আমি।
হ্যাঁ।
তুই সম্পাদক, আর আমি জিজ্ঞাসা করবো।
মিত্রা আস্তে করে আমার থাইতে চিমটি কাটলো। থেমে গেলাম। কানের কাছে মুখটা নামিয়ে এনে বললো, নীপা আছে, তুই একটু বাইরে চল। কথা আছে। আমি ওর দিকে তাকালাম। মিত্রা আমার চোখের ইশারা বুঝতে পারলো।
চা খাওয়া হতে সঞ্জয়ের কাছ থেকে মোবাইলটা নিলাম।
সঞ্জয় গদ গদ হয়ে বললো, গুরু অনেকদিনের সখ ছিল একটু ঘাঁটবো, ঘাঁটা হয়ে গেলো।
কি।
ব্ল্যাক বেরি।
ও।
তুই এক কাজ কর নীপাকে একটু এই মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেমটা শিখিয়ে দে। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। নীপাকে ইশারায় বললাম তুমি বোশো।
মিত্রাকে নিয়ে বাইরে এলাম। মিত্রার গাড়ির কাছে গেলাম। ইসমাইল ছিলো গাড়ির দরজা খুলে দিলো। আমি মিত্রা গাড়ির ভেতরে বসলাম। সবাই দেখছে। দেখুক এখন আমার আর কিছু যায় আসে না।
ইসমাইল বললো কোথায় যাবেন স্যার।
কোথাও না। তুমি খেয়েছো।
হ্যাঁ স্যার। ওই বাবু খাইয়েছেন জোর করে।
আচ্ছা। তুমি একটু চা খেয়ে এসো।
আচ্ছা স্যার। ইসমাইল আমার ইশারা বুঝতে পারলো।
ইসমাইল চলে গেলো।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম, তোকে আজ খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে।
তাই। যাক তুই সুন্দর বলেছিস, আমার কপালটা সত্যি ভালো।
আমি ওর দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছি।
তাকাস না, হিমাংশু কাল ডেট ঠিক করেছে।
কি বলছিস!
আমি ওকে অনেক বার বারন করেছিলাম ও শোনে নি।
আমি চুপচাপ।
কিসব প্রবলেম আছে বললো তুই ওর সঙ্গে একবার কথা বলে নে।
তুইতো সব দেখতে পাচ্ছিস।
তোকে এই মুহূর্তে নিয় যেতে মন চাইছে না, কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম, মিত্রা মাথা নীচু করে আছে।
তুই বরং সই সাবুদ করে কাল চলে আয়।
হিমাংশুকে ফোন করলাম, প্রথমেই ও কাকার কথা জিজ্ঞাসা করলো, ওকে সব বললাম।
তুই কালকে কয়েকঘন্টার জন্য চলে আয়।
ঠিক আছে। ফোন রেখে দিলাম।
মিত্রাকে বললাম, দাদাকে সব কথা বলেছিস।
দাদা সব জানে।
মিঃ ব্যানার্জী।
ও বলেছে তুই যা করবি তাই হবে।
তোরা সব আমার ঘারে ঠেলে দিচ্ছিস কেনো, নিজেরা কিছু কর।
তুই বইতে পারিস তাই।
কথা বারালাম না। বললাম, ঠিক আছে। যাবো।
বাসু জানলায় টোকা দিলো, বললো ভেতরে ডাকছে, অপারেশন হয়ে গেছে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে নার্সিংহোমের ভেতরে এলাম।
এখনো কেবিনে দেয় নি। সবাই নিচে চলে এসেছে, মিঃ শ্রীধরণ আমাকে ডাকলেন, বললেন, সব ঠিক আছে, আমি যা করার করে দিয়েছি। তবে কাকাকে চশমা নিতে হবে। দীর্ঘদিন ক্যাটারাক থাকার ফলে, চোখটা একটু কমজোরি হয়ে গেছে। ওনিয়ে চিন্তা করতে হবে না। বাহাত্তর ঘন্টা পরে ওরা পাওয়ার এবং চশমা দেবে।
আমি বললাম, ভয়ের কিছু নেই। উনি বললেন একেবারে নয়, তবে বয়স হয়েছে, এটাতো আপনাকে মানতে হবে, আমি ওনার কথায় সম্মতি দিলাম, আর একটা কথা এই কদিন স্নান করা জল দেওয়া চলবে না, আর দুপুরের দিকে উনি ছেড়ে দেবেন।
কেবিনে এলাম, কাকাকে স্বাভাবিক দেখলাম, ছোটমা কাকাকে বললেন এই যে অনি এসেছে।
আমি কাকার কাছে গেলাম। কাকার চোখ ব্যান্ডেজ করা আছে। কালো চশমা লাগানো। আমার গায়ে মাথায় হাত বোলালেন। হাতদুটো থর থর করে কাঁপছে, ঠোঁটটা নড়ে উঠলো। কোন কথা বলতে পারলেন না। নিজের খুব খারাপ লাগছিলো, কিন্তু শক্ত হলাম। এই সময় ভেঙে পরলে চলবে না। আমার একপাশে নীপা আর একপাশে মিত্রা। কাকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। বললাম, এরা তোমায় বিকেলে ছেরে দেবে।
মল্লিকদা পাশে এসে দাঁরিয়েছেন, কি হে শক্তিমান, লুজ হয়্যা যাইতেছ মনে হইতাছে।
হাসলাম।
ব্যাশ বুইঝা ফেলাইছি, বড়মা আমার হাতদুটো ধরে বললেন, দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি বড়মার দিকে তাকালাম। আমার ভাগ্যটা সত্যি খুব ভালো। না হলে এদের মতো এতো বড়ো বড়ো লোকজন আমার পাশে থাকবে কেনো। চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা করছে।
[+] 1 user Likes sagor69's post
Like Reply
#44
পার্টঃঃ১৯
কেবিনের বাইরে এলাম। মিত্রা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। অনাদিরা সব কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। কেমন আছেন স্যার ? এখন ঠিক আছে। যা ভেতরে গিয়ে দেখে আয়। পায়ে পায়ে করিডোর দিয়ে এগিয়ে নার্সিংহোমের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। চিকনাকে বললাম একটা সিগারেট বার কর। চিকনা একটা সিগারেট দিলো। কোন কথা বললো না। অনাদিরা কাকাকে দেখে চলে এলো।
বাসু অনাদি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। মিত্রা আমার পাশেই আছে।
অনাদি।
বল।
আমর একটা উপকার করতে হবে।
কি বল।
আমায় আজ কলকাতা যেতে হবে। একটা জরুরী দরকার আছে।
এই সময়!
হ্যাঁ। মিত্রা খবরটা নিয়ে এসেছে। কিছু করার নেই।
নীপা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে জানি না।
অনাদি মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললো, ম্যাডাম অনি কয়েকদিন পরে গেলে হোত না।
মিত্রা মাথা নীচু করে দাঁরিয়ে আছে।
অনি আমাদের বল ভরসা। ও থাকলে কোন কঠিন কাজ আমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হয় না।
মিত্রা মাথা নীচু করে আছে, ওরা জানে না, মিত্রারও একি অবস্থা।
বাসু বললো, ওতো আজ গিয়ে কাল আবার ফিরে আসছে। আমরা...।
চিকনা আর সঞ্জয় বললো কয়েক ঘন্টার তো ব্যাপার আমরা পালা করে....।
সেটা নিয়ে ভাবছি না। যদি কোন প্রবলেম হয়।
গোরার গাড়িটা রেখে দে। এখানে নিয়ে চলে আসবি। আমি বললাম।
মিত্রা বললো আমার গাড়িটা রেখে যাবো।
অনাদি বলে উঠলো পাগল নাকি, আপনার গাড়ি পাহারা দেওয়ার আবার লোক ঠিক করতে হবে। গাঁইয়া ভূত সব।
ভানু বললো, ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
নীপা বললো, অনাদিদা দাদা যখন বলছে যাক না। আমি তো আছি।
হ্যাঁ, তোকেই তো সব করতে হবে। আমরা সব পাহারাদার।
ওরা সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। অনাদি বললো।
স্যারকে বলেছিস।
বলিনি। বলবো।
স্যার তোকে ছাড়া এই মুহূর্তে কারুর কথা শুনবে না।
সব বুঝলাম কিন্তু আমি না গেলে হবে না।
নীপা বললো, তুমি যাও অনিদা। আমি বলছি। সব সামলে নেবো তুমি দেখবে। নাহলে তোমার নাম করে ভয় দেখাবো, তাতেই কাজ হয়ে যাবে।
সবাই নীপার কথায় হো হো করে হসে ফেললো।
একটু বেলায় অনেকেই এসেছিলেন, এখানকার জেলাসভাধিপত এসপি ডিএম। অমিতাভদার সঙ্গে দেখা করতে। তারাও কাকাকে দেখে গেলেন। আমার সঙ্গেও পরিচয় হলো। কিন্তু আমি যে এখানকার ছেলে তারা এই প্রথম জানলেন।
ভেবেছিলাম কাকা আমাকে কিছু বলবেন। দেখলাম কাকাই আমাকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যেতে বললেন। সুরমাসি কাকীমা একটু কিন্তু কিন্তু করছিলেন। কাকা ধমকে উঠলেন। আমিতো ঠিক আছি। ওর কি কোন কাজ কর্ম নেই। খালি এখানে বসে থাকবে। কেউ আর কিছু বললো না।
বেড়তে বেড়তে বিকেল হয়ে গেলো। কাকাকে এবার কাউকে ধরতে হোলো না। কাক নিজে নিজেই এলেন। মনের দিক থেকে কাকাকে অনেক বেশি ফিট মনে হলো। ওদের ছেড়ে দিয়ে আমরা বেরোলাম। আমি মিত্রার গাড়িতে উঠলাম। অমিতাভদারা নিজেদের গাড়িতে।
কলকাতায় পৌঁছলাম সাতটা নাগাদ। দাদার বাড়িতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে মিত্রার রিকোয়েস্টে ওদের বাড়িতে এলাম। মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত কিছুই ভালো লাগছেনা। বার বার কাকার মুখটা মনে পরে যাচ্ছে। বিগত পাঁচ বছরে শয়নে স্বপনে কাকার মুখটা একবারও মনে পরে নি। তাহলে হঠাত আজ কেন বার বার মনে পরে যাচ্ছে।
তখন আমার পাঁচ বছর বয়স। আজও সেই দিনটার কথা মনে পরে যায়। বর্ষার সময় ঠান্ডা লেগে ধূম জ্বর। গ্রামে দখন অমূল্যদাদু ছিলেন একমাত্র ডাক্তার। কাকা অমূল্যদাদুকে কাকা বলে ডাকতেন। আবঝা আবঝা কাকার কথা মুখটা মনে পরে যায়। কাকা দাদুকে বলেছিলেন। ওর বাপগেছে মা গেছে যে কোন স্বর্তে ওকে তোমায় বাঁচিয়ে তুলতে হবে। আমি ওকে কিছুতেই হারাতে চাই না। অমূল্যদাদু আমাদের বাড়িতে পরপর তিনদিন ছিলেন। আমার মাথায় ধারা দেওয়া হয়েছিল জ্বর নামানর জন্য। গ্রাম শুদ্ধ উপচে পরেছিল। সেইকটা দিন। যে যেমন ভাবে পেরেছিল কাকাকে এসে সাহায্য করেছিল। আমি যেন গ্রামের সম্পদ কাকার একলার নয়।
জ্বর সেরে যাবার পর। কাক আমাকে নিয়ে পীরবাবার থানে নিয়ে গেলেন। আমাকে বললেন প্রণাম কর। তোর বাপ এখানে পীরবাবাকে দেখেছিলেন। তারপর আমাকে নিয়ে গেলেন, বীরকটার শিব মন্দিরে। গ্রামের লোকেরা বলে বুড়োশিবের থান। এর মাটি গায়ে মাখলে নাকি শরীর খারাপ হয় না। কাকা আমাকে মাটি মাখিয়ে মন্দিরের সামনে ঝিলের জলে স্নান করিয়ে পূজা দিলেন। সত্যি বলতে কি তারপর থেকে আমার সেই ভাবে কোন শরীর খারাপ করেনি।
সেই দিন প্রথম কাকার চোখে জ্বল দেখেছিলাম। আমার বাবার নাম ধরে বার বার বলেছিলেন একি গুরুদায়িত্ব তুই আমাকে দিয়ে গেলি। বাবা শিব আমি অনিকে তেমার পায়ে রাখলাম। আজ থেকে ওর বাঁচামরা তোমার ওপর নির্ভর। তুমি যা ভাল বুঝবে করবে। আমার ছোট্ট শরীরটাকে বুকে জরিয়ে ধরে কাকা হাপুস নয়নে কেঁদেছিলেন।
কিরে এখনো বসে আছিস ? বাথরুমে যাবিনা।
সম্বিত ফিরে পেলাম।
বাথরুমে গেলাম। ফ্রেস হয়ে, দুজনে রাতের খাওয়া খেয়ে নিলাম। মিত্রা আসার সময় বিরিয়ানী কিনেছিল। আমি বারন করলাম। বললো এখন গিয়ে আর করতে ভাল লাগবে না। বরং চল কিনে নিয়ে যাই খেয়ে নেবো। তাই করলাম। বিরিয়ানী আর বাটার চিকেন ফ্রাই। খাওয়ার পর দেখলাম শরীর আর বইছে না। মিত্রার ঘরে বসে নিউজ চ্যানেল দেখছিলাম। কটা বাজে বারটা হবে। এরি মধ্যে বার কয়েক নীপাকে ফোন করে খবর নিয়েছি। কাকার সঙ্গেও কথা বলেছি। নীপার একটু অভিমান হয়েছে। কি আর করা যাবে। মিত্রা এলো আরও আধঘন্টা পরে। বুঝলি সারাদিন ছিলাম না, একেবারে সব লন্ডভন্ড করে রেখেছিলো। লোক দিয়ে কাজ করানো যে কি ঝকমারি তোকে কি বলবো।
মিত্রার দিকে তাকালাম। সকালের মিত্রা আর এখনকার মিত্রার মধ্যে আকাশ পাতল পার্থক্য। ফিনফিনে একটা ব্ল্যাক কাপরের নাইট গাউন পরেছে। পরা না পরা দুই সমান। আমি ওর দিকে তাকালাম। ও আমার পাশে এসে বসলো।
কি দেখছিস।
বিবিসি সিএনএন অল্টারনেট করে দেখছি। আমার বিছানা রেডি।
তোর ! কেনো!
কোথায় শোব ?
এখানে, আপত্তি আছে।
ওর দিকে তাকালাম।
ওসব নিয়ে কিছু ভাবিস না।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রাখলো।
তোর সোফাটা বেশ আরামদায়ক। তুই সোফার ওপাশে একটু হেলান দিয়ে বোসতো।
কেনো ?
বোসনা।
মিত্রা সরে গিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। আমি ওর নরম কোলে মাথা দিয়ে শুলাম।
এই জন্য, বদমাশ।
মাথাটা একটু টেপ, ভীষণ যন্ত্রনা করছে।
পারবনা যা, আমি কি তোর বউ।
তোর সমস্ত দায়িত্ব আমাকে অর্পন করা হয়েছে।
মিত্রা একবার আমার দিকে তাকালো, পারবি আমার ভার বইতে।
দিয়েই দেখ না।
দিয়েতো দিয়েছি, তুই নিচ্ছিস কোথায় ?
নেবো নেবো, এত তাড়াহুড়ো করছিস কেনো।
আমারতো বেলা বয়ে যায়।
না না ধরে রাখার চেষ্টা কর।
একি ধরে রাখা যায়।
যাবে যাবে, সময়ে সব হয়। মিত্রা মাথায় বিলি কাটতে আরম্ভ করল, আমার চোখ বুজে আসছে।
একটা কথা বলবো।
বল।
রাগ করবি না।
না।
সারাদিন খুব স্টেইন গেলো, একটু ড্রিংক করবি।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
আমি তোকে রিকোয়েস্ট করবো। দেখবি উপকার পাবি।
আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম।
আমি জানি তুই এসব পছন্দ করিস না। তবু তোকে বলছি। আর কোনদিন বলব না।
ওর বলার মধ্যে এমন একটা জোর ছিল, আমি না বলতে পারলাম না।
ও হেসে ফললো। মুহূর্তের মধ্যে সব রেডি করে ফেললো।
বেশি দিস না।
মাত্র দু’পেগ।
তুই জানিস, আমি এর বিন্দু বিসর্গ বুঝি না।
ঠিক আছে, অসুবিধে হলে বলবি।
মুহূর্তের মধ্যে ও সব রেডি করে ফেললো, জানিস বুবুন, তুই যে দিন শেষ এসেছিলি, সেইদিন থেকে আমি আর ছুঁইনি।
তাহলে আজ খাচ্ছিস কেনো ?
ইচ্ছে করছে।
ঠিক আছে, আর নয়।
প্রমিস করছি যদি খাই কখনো একমাত্র তোর সঙ্গেই খাবো। একা কোনদিন খাব না।
ও গ্লাসে করে সাজিয়ে দিল, দুজনে গ্লাসে গ্লাস ঠেকিয়ে শিপ করলাম। কেমন যেন একটা লাগল, কোন দিন খইনি। কেমন ওষুধ ওষুধ গন্ধ। কিন্তু বেশ মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার এক পেগ শেষ হতে না হতেই, ওর দু’পেগ খাওয়া হয়ে গেলো।
কিরে এতো তাড়া তাড়ি। আর খাবি না।
আর একপেগ। প্লিজ।
মিত্রা সোফার অপজিট থেকে এসে আমার কাছ ঘেঁসে বসলো। পাখাটা একটু চালাই।
আস্তে করে।
মিত্রা ফিরে এলো। একটু টাল খেলো যেনো। আমি উঠতে যাচ্ছিলাম। ও হাত দেখিয়ে বসতে বললো। এমন ভাবে বসলো যেন আমার কোলে বসে পরবে। দুহাত দিয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরলো।
জানিস বুবুন, আমার হাজবেন্ডটা একটা বাস্টার্ড।
চমকে উঠলাম। আমি ওর চোখে চোখ রাখলাম। মিত্রার চোখ অন্য কথা বলছে। আমার কোন সেনসেসন এখনো হয় নি।
ও আর একটা মেয়েকে নিয়ে থাকে, আমি ওর কেপ্ট।
থামবি।
মিত্রা হাসছে। ভাবছিস আমি মাতাল। না। ও তোর আমার ব্যাপারে সব জানে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। সেই জন্য তোকে সেদিন অমনি ভাবে সব কথা বলেছে। তোর শেষ হয়ে গেছে। দাঁরা আর একটা পেগ তোকে দিই।
না।
প্লিজ তুই না করিস না। মাত্র একটা। তুই একটা আমি একটা। ব্যাশ।
আমি হার মনলাম। মিত্রার এরিমধ্যে তিনটে পেগ খাওয়া হয়ে গেছে।
ও কি ভাবে, ওর দয়ায় আমি বেঁচে আছি। ওর যা কিছু প্রতিপত্তি দেখছিস সব আমার বাবর জন্য। ওকে বিয়ে করে তোকে ভোলার চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি। তবু মানিয়ে চলার চেষ্টা করলাম। ছয় মাসের মধ্যে সব জানতে পারলাম। বাবাকে সব জানালাম। বাবা বললেন বল মা তুই কি করতে চাস, আমি তোর কথায় না বলবো না। সেই সময় তোকে অনেক খুঁজেছি পাই নি। আমার বাবা-মা খালি আমার কথা ভেব ভেবে মারা গেলেন। এক মাত্র মেয়ের একি হাল। তবু বাবার অনেক পয়সা ছিল তাই বেঁচে গেলাম। তারপর পরিবেশ পরিস্থিতি আমাকে তৈরি করে দিয়েছে। বাবা তোকে খুব ভালবাসতেন। মারা যাবার আগে আমায় বলেছিলেন, অনি যদি তোর কাছে কোনদিন ফিরে আসে ওকে ফিরিয়ে দিস না। বাবা তোকে চিনেছিলেন। মা নয়। মিত্রা থামলো। গ্লাসটা মুখে তুলে নিল। এক নিঃশ্বাসে জলের মতো ঢক ঢক করে বেশ কিছুটা খেলো। তারপর গ্লাসটা টেবিলে ওপর ঠক করে নামিয়ে রাখলো।
এল আর ডিসগা....।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রখলো। কাঁধটা ভিঁজে ভিঁজে ঠেকলো, মিত্রা কাঁদছে। ওর মাথাটা আমার কোলে রাখলাম, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
আমার এখন দু’চার পেগে কিছু হয় না বুঝলি বুবুন। আকন্ঠ খেলে তবে তৃপ্তি পাই।
আমার মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। আমি ওকে ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে গেলাম। বালিশটা ওর মাথায় দিয়ে শুইয়ে দিলাম। ওর পাশে বসলাম। এই মুহূর্তে মদ খাওয়ার কোন ফিলিংস আমার মধ্যে নেই। আমি মিত্রার পাশে আধ শোওয়া অবস্থায়। মিত্রা আমার আরো কাছে এগিয়ে এলো। বুকের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বললো, একটু আদর করবি।
ওর চোখ ভাসা ভাসা, আমি ওর কপালে চুমু খেলাম, ও ঠোঁট দেখিয়ে ইশারা করছে।
থাক না আজ।
বিশ্বাস কর বুবুন আমি মাতাল হই নি। তাকে দেখলেই খালি সেক্স করতে ইচ্ছে করে।
এএ নেশাটা তোকে ত্যাগ করতে হবে। মাথায় রাখবি আমিও একটা মানুষ।
জানি। মন মানে না।
মানাতে হবে। তোকে বিজনেস ম্যাগনেট হতে হবে।
ওর জন্য তুই আছিস।
আমি কতোক্ষণ।
তুই আমাকে ছেরে যাবি না। আমার হাত দুটো চেপে ধরলো।
কেনো এসব কথা চিন্তা করছিস।
অনেকদিন পর আমার ভালবাসাকে কাছে পেয়েছি।
আমিতো তোর কাছেই আছি।
আমি জানি। আমি যেমন তুইও ঠিক তেমনি।
কিরকম।
আমাদের মনের মধ্যে একটা যাযাবর লুকিয়ে আছে।
সেটাতো ভাল।
ঠিক।
তার খারাপ দিকও আছে।
শোধরাতে হবে।
তুই পাশে থাকলে হয়তো হয়ে যাবে।
সেতো আমি জানি।
ও আমার ডান হাতটা ধরে বুকে রাখলো। জানিস বিগত আট বছরে ওর সঙ্গে আট মাস ঘর করিনি। এই বাড়িটা এক সময় আমার মামার বাড়ি ছিল। মামাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে রিপেয়ার করে নিয়েছি। বাবার খুব সখ ছিলো। এই রকম একটা বাড়িতে থাকবে।
ছিলেন।
হ্যাঁ, শেষের কয়েকটা দিন।
আর ওই বাড়ি।
জ্যাঠারা নিয়েছে।
নিয়েছে না দিয়ে দিয়েছিস।
ওই হলো।
মিত্রা আমার মাথাটা টেনে নিয়ে জোর করে ওর ঠোঁটে রাখলো, উষ্ণ ঠোঁটের ছোওয়ায় আমার গাছের পাতায় বাতাস লাগলো।
তোর ঠোঁটটা ভীষণ মিষ্টি মনে হয় সর্বক্ষণ তোর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে শুয়ে থাকি।
তোর ঠোঁটটাও কম কিসে।
মিত্রা হাসলো। ছেলেদের ঠোঁট এরকম হয় আমার জানা ছিল না।
জেনে নিলি।
এটা অনেকদিন আগে জানা উচিত ছিল, সেই কলেজ লাইফে।
সেই দিন গুলোর কথা মনে পরলে হাসি পায়। একটা গ্রামের ছেলে শহুরে আধুনিকার পাশে। অনেক দিন ও সুযোগ দিয়েছে আমাকে কিন্তু আমি ওর দেহ স্পর্শ পর্যন্ত করিনি। মনের মধ্যে একটা দ্বৈত্বতা খেলা করতো সব সময়। না আমি গ্রাম থেকে এসেছি। আমায় কিছু করতে হবে। সবুজ মনে তখন অনেক সোনালি স্বপ্ন।
তুই পাঞ্জাবীটা খোল আমি নাইট গাউনটা খুলে নিই। মিত্রা উঠে বসলো। এখন ওর মধ্যে কোন সঙ্কোচ নেই যেন আমরা স্বামী-স্ত্রী।
পাখাটা বন্ধ করে দে। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।
আমি উঠে গিয়ে পাখাটা বন্ধ করে দিলাম। একটা মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ম ম করছে। বিছানায় উঠে এলাম। ওর পাশে শুলাম। মিত্রা আমার বুকে।
মিত্রা চেয়ে আছে আমার দিকে। তোর শরীরটা ভীষণ চার্মিং।
সব মেয়েরাই তাই বলে।
মিত্রা এক ঝটকায় উঠে বসলো। আর কারা কারা বলে। বল।
সে কি মনে আছে, যাদের সান্নিধ্যে আসি তারাই বলে।
নাম কি বল। তাদের ফোন করে আমি বলে দেবো, আমার জিনিষে তারা যেন ভাগ না বসায়।
হাসলাম।
ভাগ বসালে কি হয়েছে। খোয়ে যাবে, না কমে যাবে ?
ওরে শয়তান, গাছেরও খাবে আবার তলারও কুরোবে।
গাছ আর তলা যদি দুই পাওয়া যায় খতি কি।
মিত্রা হঠাত গম্ভীর হয়ে গেলো। ঠিকইতো, আমার কি আছে যা দিয়ে তোকে ধরে রাখবো। যা পাওয়া যায় তাই লাভ।
মিত্রার পুরো শরীরটা আমার শরীরের ওপর। আমার বুকটা ওর বালিশ। আমার ঘাড়ের তলা দিয়ে দুহাতে আমাকে পেঁচিয়ে ধরে আছে।
কিরে ঘুমিয়ে পরলি।
না। তোর বুকের লাব ডুব শব্দ শুনছি।
তোকে এতো দিন খুব মিস করেছি।
মিত্রা মিত্রার মতো কথা বলেযাচ্ছে। আমি ওর কিছু কথার উত্তর দিচ্ছি। বাকিটা দিচ্ছি না। মাঝে মাঝে ও বিরক্ত হচ্ছে। আমি নিশ্চুপ।
কতোক্ষণ দুজনে নিস্তব্ধ হয়ে শুয়েছিলাম জানি না। খালি দুজনে দুজনের নিশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনেছি। একে অপরের বুকের লাবডুব শব্দ শুনছি। মিত্রার নরম হাত আমার চুলে বিলি কাটছে। মাথার ঝিম ঝিমানি ভাবটা এখন সম্পূর্ণ অদৃশ্য।
কিরে এই ভাবে শুয়ে থাকবি।
আর একটু।
উঠবি না।
না।
কাল অনেক কাজ।
এই মুহূর্তটুকু আর চেষ্টা করলেও পাবো না।
তোর ভালো লাগছে।
হ্যাঁ।
ঘেমে গেছিস।
স্বাভাবিক। আমি কষ্ট করলাম। তুই এনজয় করলি।
শয়তান। মিত্রা আমার নাকটা টিপে দিলো। ওঠ।
কেনো।
ওই যে বললি কাল সকালে অনেক কাজ।
আমি উঠে পরলাম।

সকালে মিত্রার ডাকে ঘুম ভাঙলো। সেই এক চিত্র। মিত্রা ঠাকুর ঘর থেকে বেরিয়েছে। সেই লালপাড় মটকার কাপড়। মাথায় একগাদা সিঁদুর। মা মা। ঘরের নিপাট গৃহিণী। আমি উঠে রেডি হলাম। দুজনে সেই লুচি বাটিচচ্চরি খেয়ে বেরিয়ে পরলাম।
হিমাংশুর অফিসে এলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। ও বললো একবার ভালকরে সব দেখে না। ডিডটা ভালকরে পরে নিলাম। ওখান থেকে রেজিষ্ট্রি অফিস। অমিতাভদা মল্লিকদা মিত্রা আমার হয়ে সাক্ষী দিলেন। আরো অনেকে ছিল। খালি মিঃ ব্যানার্জী ছিলেন না। মিত্রাকে ওই মুহূর্তে ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে নি। ওখানে একঘন্টার কাজ ছিল। কাজ শেষে হিমাংশুকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললাম, আমাকে একটা আছোলা বাঁশ দিলি। বেশ চলছিল তুই থামিয়ে দিলি। হিমাংশু হেসে বললো, সব ভালো যার শেষ ভালো। তোকে মিত্রার সঙ্গে জুড়ে দিলাম। নাহলে মিত্রার একার পক্ষে কনট্রোল করা সম্ভব হোত না।
ওর দিকে তাকালাম। ও আমার মিত্রার সম্বন্ধে কোন আঁচ করতে পেরেছে কিনা। ওর চোখ সেই কথা বলছে না।
এরপর আমার করনীয় কি আছে।
খাতাপত্র গুলো সাজিয়ে নিই। আর একজন যে ডিরেক্টর আছে, তাকে জানাতে হবে। এখন আমার অনেক কাজ।
তোর কাজ কবে শেষ হবে।
Like Reply
#45
Nice tnx for upload plz continue
Like Reply
#46
Superb golpo ta,,,,khub valo lagche ,,,, update er wait korchi
Like Reply
#47
R koto opekkha?
Like Reply
#48
পার্টঃঃ২০
আগামী সপ্তাহে কমপ্লিট করে ফেলবো ভাবছি।
শেষকর আমি তোর সঙ্গে বসবো। কতগুলো স্ট্রাটিজি নিয়ে।
ঠিক আছে। তুই কবে যাচ্ছিস।
তোর এখান থেকে বেরিয়ে বড়মার সঙ্গে একবার দেখা করবো। তারপর চলে যাব।
ফিরবি কবে।
দেখি। তুই অফিসের সম্বন্ধে সব জানিস তো।
হ্যাঁ। মিত্রা কিছু কিছু বলেছে। তুই ঠিক ডিসিসন নিচ্ছিস।
মিত্রা একা পরে গেছে।
বুঝতে পেরেছি। তুই ওদিকটা সামলা আমি এদিকটা সামলে দেবো।
এখন যারা আছে সব বিষ মাল।
জানি। খালি ধান্দা বাজি। তবে ঘুঘুর বাসা পরিষ্কার করতে তোকে হিমসিম খেতে হবে।
জানি। তবে ওটা সামলাতে আমার বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।
তোর সময় নষ্ট করব না। তুই যা। কলকাতায় ফিরলে আমায় একবার নক করিস।
ঠিক আছে।
হিমাংশুর ওখান থেকে বেরিয়ে এসে, বড়মার কাছে এলাম। মিত্রা আসতে চাইছিল না। আমিই ওকে জোর করে নিয়ে এলাম। বড়মা প্রথমে মিত্রাকে দেখে একটু অবাক হয়েছিলো। ছোটমা ক্যাজুয়েল। সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম। তারপর আমরা চারজনে মিলে ঠিক করলাম পরবর্তী স্ট্রাটেজি। অমিতাভদার পাকা মাথা কয়েকটা ভাল ডিসিসন নিলো। আমি মেনে নিলাম।
বুঝলাম মেন অপারেটর হবে সনাতন ঘরুই। দাদা সেরকমই ছক করলো। মিত্রা আমি মেনে নিলাম। আমি একটা প্রস্তাব রাখলাম। আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো। আমার জায়গার পরিবর্তন হবে না। মিত্রা প্রথমে মানতে চাইছিল না। ওকে ব্যাপারটা বোঝালাম। ও বুঝতে পারল। ফাইন্যাল ডিসিসন হল। আগামী সপ্তাহে শুক্রবার মিটিং কল হবে। সেখানে মিঃ সনাতনের হাত দিয়েই সকলকে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
সাইনিং অথরিটি এই মুহূর্তে মিত্রার হাতেই থাকবে। মিত্রাই সোল পাওয়ারের অধিকারী। মিত্রা মেনে নিলো। এই কদিন মিত্রা দাদার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলবে। প্রয়োজন পরলে আমায় ডাকবে। আমি চলে আসবো। আমার দেখা মিলবে সেই শুক্রবার।
মল্লিকদা ছোটমা বড়মা এতোক্ষণ নিরব দর্শক ছিল। কথা শেষ হতে ছোটমা বললেন, হ্যাঁরে অনি, তোর মা-বাবার কোন ছবি তোর কাছে নেই।
ছোটমা এ ভাবে কোনদিন কথা বলেন নি আমি স্থির দৃষ্টি নিয়ে ছোটমার দিকে তাকালাম।
আছে।
তোর মনে পরে ওনাদের।
না। আবঝা আবঝা।
আমাকে ছবিটা দিবি।
কেনো।
আমি বাঁধিয়ে ঠাকুর ঘরে রাখবো।
হাসলাম।
তোর মতো ছেলের যিনি জন্ম দেন তিনি মহাপ্রাণ।
খাওয়ার টেবিলে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
ঠিক আছে তোমায় দেবো।
তুই ওই ফ্ল্যাটটা ছেড়ে দে।
কেনো।
এখানে চলে আয়। এতো বড় বাড়ি এতোগুলো ঘর।
আবার তাকালাম ছোটমার দিকে।
তোকে নিয়ে এই কদিন আমি আর দিদি খালি ভেবেছি।
আমিও কি মহাপ্রাণ।
এমন ভাবে কথাটা বললাম, সবাই হেসে ফললো। মল্লিকদা চেঁচিয়ে উঠলেন, বলছিলাম না, অনির বিকল্প অনি নিজেই। ওর মাথার মধ্যে আরও দশটা মাথা আছে।
আবার শুরু করলে। বলবো ছোটমাকে।
আচ্ছা তোর সঙ্গে কি আমার কোন প্রাইভেট টক থাকতে পারে না।
তাহলে এখন শুধু চিংড়িমাছের কালিয়া খেয়ে যেতে হবে।
মল্লিকদা হো হো করে হেসে বলে উঠলেন ঠিক ঠিক, কিহে দাও।
ছোটমা মৃদু হেসে বললেন, তোমার ভাগেরটা শেষ হয়ে গেছে, খালি আনি আর মিত্রার ভাগেরটা আছে।
বড়মা ছোটমার দিকে তাকিয়ে বললেন, যা না ওবলার জন্য রাখতে হবে না।
ছোটমা রান্নাঘরের দিকে গেলেন, বড়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কবে আসবি।
বৃহস্পতিবার রাতে।
এতদিন কি করবি।
অনেক কাজ আছে। একেবারে শেষ করে আসবো।
বড়মা চুপ করে রইলেন। আমি উঠে গেলাম বড়মার কাছে, বড়মা মিত্রা পাশাপাশি বসে আছে। আমি বড়মার গলা জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম, কেনো মিত্রাকেতো রেখে যাচ্ছি। মিত্রা আমার কথা শুনতে পেয়েছে। আর কেউ শুনতে পায় নি। বড়মা আমার দিকে তাকালেন। চোখ দুটো জলে ভরে উঠেছে।
ছোটমার আনা চিংড়িমাছ সকলে ভাগ করে খেলাম। খাওয়া শেষ হতে বড়মার ঘরে গিয়ে বললাম। টাকা দাও। বড়মা আমার দিকে তাকালেন। এই প্রথম বড়মার কাছে টাকা চাইলাম। এতদিন বড়মা আমাকে দিয়েছেন। কখনো নিয়েছি কখনো নিইনি। বলেছি আমার কাছে আছে। লাগবে না।
বড়মা আমাকে বুকে টেনে নিলেন। আমার শান্তির নীড়। জীবনে প্রথম বড়মার কাছে মুখ ফুটে টাকার কথা বললাম। বড়মা আলমারি খুলে টাকা দিলেন। সেদিন নিয়ে গেছিলাম। তুই রাগ করবি বলে তোকে দিতে সাহস পাই নি। তাই নিয়ে তোর দাদা বাড়িতে এসে আমার ওপর কি হম্বিতম্বি। ছোটও নিয়ে গেছিলো। আমি হাসলাম। কখন যে ছোটমা পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল জানি না। আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
কি বাবুসাহেব মচকেছেন না ভেঙেছেন।
ছোটমার কাছে এগিয়ে এলাম, দুটো কাঁধে হাত রাখলাম, কোনটা হলে তোমার ভালো লাগবে।
দুটোই।
ঠিক আছে। এবার থেকে তাই হবে।
ছোটমার চোখ দুটো টল টল করছে।
তোমরা সবাই এরকম করলে আমার পক্ষে লড়াই করা মুস্কিল হয়ে পরবে।
অনি আমরা সবাই এতোদিন মাঝ সমুদ্রে ভাসছিলাম। এখন একটা নৌকায় উঠতে পেরেছি। সেটাও যদি ফুটো হয়ে যায়। সেই ভয়ে আমরা সব....।
নীচু হয়ে ছোটমার বুকে মাথা রাখলাম, অনি সেই অন্যায় কোনদিন করবে না।
জানি বলেই হারাবার ভয়টা বেশি।
কিচ্ছু হারাবে না।
ওই মেয়েটার চোখ দুটো দেখেছিস।
দেখেছি।
সব তোমায় বলবো সময় আসুক।
তুই কি বলবি আমি জানি।
ছোটমার চোখে চোখ রাখলাম।
সবাই আশ্রয় চাইবে। তুই আশ্রয় দিতে পারবি না। থাকর জায়গা দিবি এইতো।
হয়তোবা তোমার কথা ঠিক, হয়তোবা নয়। ঠিক আছে, আমায় এখন যেতে হবে। নাহলে অনেক রাত হবে পৌঁছতে।
ছোটমা বড়মাকে প্রণাম করে বাইরে এলাম, মল্লিকদা অমিতাভদা মিত্রা বসে কথা বলছে।
আমি প্রণাম করলাম। মিত্রাকে বললাম, আমাকে একটু স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দে।
ও উঠে দাঁড়ালো।
বড়মা এগিয়ে গেল মিত্রার দিকে, চিবুকে হাত দিয়ে বলল একদিন তুমি একবার করে এসো না। ভাল লাগবে।
মিত্রা আমার দিকে তাকালো। আমার চোখের ইশারা ও বুঝতে পেরেছে। ও নীচু হয়ে বড়মা ছোটমাকে প্রণাম করলো। অমিতাভদা মল্লিকদাকে প্রণাম করলো। ওরা আজ কোন বাধা দিলো না।
অমিতাভদার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম। ইসমাইল গাড়ি চালাচ্ছে।
তোর কটায় ট্রেন।
আড়াইটের পর এক ঘন্টা অন্তর।
আমায় ঘন্টাখানেক সময় দে।
মিত্রার দিকে তাকালাম, ওর চোখ কিছু বলতে চায়।
আচ্ছা।
ইসমাইল, গড়িয়াহাটমে উস দুকানসে চলিয়ে।
জি ম্যাডাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে গড়িয়াহাটের একটা জামাকাপড়ের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালাম। মিত্রা আমাকে নিয়ে নামলো। আমি ওর পেছন পেছন দোকানের মধ্যে ঢুকলাম। ও নীপার জন্য একটা লং-স্কার্ট আর খুব সুন্দর একটা গেঞ্জি কিনলো।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো, কিরে নীপা পরবেতো ?
তুই যখন দিচ্ছিস নিশ্চই পরবে।
মিত্রা ওর জন্য একটা সাদা হাতের কাজ করা সালোয়ার কিনলো। সেদিন ও যেরকম একটা পরেছিলো। কাকার জন্য ধুতি পাঞ্জাবি। আর কাকীমা আর সুরমাসির জন্য কাপড় কিনলো। আমি কোন বাধা দিলাম না।
আমায় বললো তোর জন্য একটা জিনস আর গেঞ্জি কিনবো তোর কোন আপত্তি আছে ?
কেন ?
ঠিক আছে থাক।
অমনি মুখটা ভারি হয়ে গেলো।
আমি নিয়ে যাব না, ফিরে এসে তোর বাড়িতে উঠবো। শুক্রবার ওই পেন্ট গেঞ্জি পরব।
ও আমার দিকে গভীর ভাবে তাকালো, মিটি মিটি হাসলো।
হাসছিস যে।
ঠিক আছে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোর কোন পছন্দ আছে।
না। তুই যা কিনে দিবি তাই পরবো।
ও নিজের মনের মতো করে একটা জিনসের পেন্ট গেঞ্জি কিনলো। দেখলাম বিল প্রায় বিশ হাজার টাকা হয়ে গেছে। আমি কিছু বললাম না। আমাকে বাড়ির জন্য কেনা জামা কাপড়গুলো ধরিয়ে দিলো।
এইগুলো নিয়ে যা। আমি বললাম নিয়ে আমি যাচ্ছি, তবে তুই একটা কাজ কর, কাকার নাম করে একটা চিঠি লিখে দে। ও কাউন্টার থেকে একটা প্যাডের কাগজ নিয়ে খস খস করে কাকার নাম করে একটা চিঠি লিখে দিলো। দেখতে দেখতে তিনটে বেজে গেলো। দুজনে মিলে কফি সপে বসে এককাপ করে কফি খেলাম।
এখন আমি কি করি বলতো।
কেনো! ক্লাবে যা।
দিন সাতেক হলো ক্লাবের দরজা মারাই নি।
কেনো!
ভালো লাগেনা।
বাড়ি যা। পরাশুনো কর।
কি পরবো।
বই পর।
এখন আর ভাল লাগে না।
সব কিছুতেই ভাল লাগে না ভাল লাগে না বললে চলে, ভাল লাগাতে হবে।
তুই মাস্টারি করিস না।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
তোকে ছাড়া আমি একমুহূর্ত চলতে পারছি না।
ঠিক আছে, আমায় দিন কয়েক সময় দে। ওই দিকটাওতো দেখতে হবে।
বুঝি। কিন্তু মন মানে না।
মিত্রা আমার হাতটা চেপে ধরলো। জানিস বুবুন, তুই আমাকে এই কয়দিনে একটা নতুন জীবন দিয়েছিস। আমি আর অতীতে ফিরে যেতে চাই না। গতো সাত বছর জীবনটা যন্ত্রের মতো চালিয়েছি। তুই এই কদিনে আমার জীবনটাকে একেবারে ওলোট পালট করে দিয়েছিস।
সেতো বুঝলাম। কিন্তু তোর ওপর অনেক দায়িত্ব। সেটা বুঝতে পারছিস তো।
পারছি। তুই অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস।
সেটাতো তোর স্বার্থে।
জানি।
ঠিক আছে। তুই যদি মনে করিস অফিসে যা। মনে রাখবি তোর ওপর একটা প্রেসার তৈরি করা হবে। তুই ওটা রিকভার করতে পারবি তো।
পারবো।
ঠিক আছে। কাল থেকে তুই অফিসে যা।
কিছু হলে আমাকে একবার জানাবি।
তুই মন থেকে বলছিস।
মন থেকে বলছি।
কবে আসবি।
তিনটে দিন অন্ততঃ আমায় সময় দে।
তারমানে তুই মঙ্গলবার আসবি।
হ্যাঁ।
স্টেশনে এসে মিত্রাকে ছেড়ে দিলাম। মিত্রার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। আমি একবার তাকিয়ে আর ওর দিকে ঘুরে তাকালাম না। টিকিট কাউন্টারে এসে টিকিট কাটলাম। ট্রেন মিনিট পনেরো পর। তিন প্যাকেট সিগারেট নিলাম। অনাদিকে একটা ফোন করে বলে দিলাম, আমি ট্রেনে উঠলাম। তোরা স্টেশনে কাউকে পাঠা। অনাদি ওপ্রান্ত থেকে বললো, ঠিক আছে।
ট্রেনে যেতে যেতে মিত্রা তিনবার, নীপা একবার, অনাদি দুবার, চিকনা বাসু একবার করে ফোন করেছে। লোকাল ট্রেনে খুব একটা যাওয়া অভ্যাস নেই। যাইও না তবু নিজেকে মানিয়ে নিলাম। দেখতে দেখতে দুটো ঘন্টা কেটে গেলো। স্টেশনে নামতেই দেখলাম, চিকনা আর সঞ্জীব দাঁড়িয়ে আছে। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পরেছে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
স্টেশনে নামতেই চিকনা আমার কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিলো। সঞ্জীবকে জিজ্ঞাসা করলাম, কিরে সব ঠিক আছে।
চিকনা খেঁকিয়ে উঠলো, ও শালা কি জানে, সকাল থেকে ওর দেখা পাওয়া গেছে। অনাদি ফোন করতে বাবু এলেন।
সঞ্জীব কিছু বলতে যাচ্ছিলো, আমি বললাম, ঠিক আছে ঠিক আছে আর কেউ আসে নি।
বাসু এসেছে।
কোথায়।
বাইরে আছে।
স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে এলাম। আসার সময় চিকনা টিটিকে বললো, কি বলেছিলাম না এই হচ্ছে অনি। ভদ্রলোক বুকের কাছে হাত তুলে নমস্কার করলেন। আমিও প্রীতি নমস্কার করলাম। চা খেতে খেতে বড়মাকে একবার ফোন করলাম। জানালাম আমি পৌঁছে গেছি। মিত্রাকে ফোন করলাম, বললো বাড়িতে আছে, গলাটা ভীষণ ভারী ভারী।
কি করছিস।
একটা সিনেমা দেখছি।
কি সিনেমা।
শুনবি।
মিত্রা মোবাইলটা টিভির কাছে ধরলো, এক দুজেকে লিয়ে। আমি মিত্রা দুজনে জীবনে প্রথম রূপবাণী সিনেমা হলে কলেজ কাট মেরে সিনেমাটা দেখেছিলাম, মিত্রাই দেখিয়েছিলো।
হাসলাম।
কিরে শুনলি।
হ্যাঁ।
তোর কিছু মনে পরে।
প্রথম কলেজ কাট মারার কথা মনে পরছে।
বাড়িতে এসে ভেবেছিলাম ক্লাবে যাব, টিভিটা খুলতেই দেখলাম সিনেমাটা শুরু হয়েছে বসে গেলাম।
ভাল করেছিস।
যে টাস্কগুলো দিয়ে এসেছি মন দিয়ে করিস। ফিরে গিয়ে ধরবো।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফললো।
মেঘ কাটলো।
আমি বাসুর পেছনে বসলাম, ঘন্টা খানেক লাগলো বাড়িতে পৌঁছতে। আস্তে আস্তে সবার মুখেই মিত্রার প্রশংসা ঝরে পরছে। অতো পয়সা যার তার কোন দেমাক নেই। ওরা জানতো না এই নার্সিংহোমটা মিত্রার হ্যাজবেন্ডের। দূর ছাই আমিও কি জানতাম। জানলাম সেই দিন।
চিকনাতো বলেই ফেললো, গুরু আমার জন্য তোমার ওখানে একটা কাজ দেখো না। যদি টেবিল মোছার চাকরিও থাকে তাতেও কোন আপত্তি নেই।
আমি খালি বললাম, আফটার অল তুই আমার বন্ধু, আজ নয় কাল কেউ না কেউ জানতে পারবে। তখন।
ও প্রায় আমার হাতে পায়ে ধরে, আমি বললাম একটু সবুর কর, সব ঠিক হয়ে যাবে।
চিকনা ধাতস্থ হলো।
বাড়ি পৌঁছলাম সন্ধ্যা মাথায় নিয়ে। রাস্তায় কোথাও দাঁড়াই নি। খামারে গাড়ি রেখে আমরা চারজন ঢুকলাম। বাইরের বারান্দায় টিভি চলছে। অনেক লোক বসে দেখছে। কাকাও আছে। আমি আসাতে কাকা চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুই যা বলেছিস সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। নীপা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। চেঁচিয়ে উঠলো, বলবো অনিদাকে সকালের কথা। না না বলিস না। ওইটুকুতো খালি অন্যায় করেছি।
নীপার দিকে এতোক্ষণ খেয়াল করিনি। কয়েকদিন আগে দেখা নীপার সঙ্গে আজকের দেখা নীপার অনেক পার্থক্য। বিশেষতঃ নিজেকে সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রে। শহুরে মেয়েরা বিকেল বেলা যেমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে, পরিষ্কার জামা কাপর পরে নিজেকে সাজিয়ে তোলে সেইরকম। আমার চোখের চাহুনি নীপা ধরে ফেলেছে। নীপা মুখ টিপে হাসলো।
কি করেছো।
একটু জল নিয়ে মাথায় দিয়েছি।
খুব অন্যায় করেছো। ডাক্তার তোমায় বারন করেছে। চোখে যায়নিতো।
না।
ওষুধ গুলো ঠিক ঠিক দিয়েছো।
ওইতো নীপাকে জিজ্ঞাসা কর। ওঃ যেন ডাক্তারনী।
কাকা এমন ভাবে কথা বললো সবাই হেসে ফেললো। চিকনার দিকে তাকিয়ে বললাম, ওটা নীপার হাতে দে। চিকনা নীপার হাতে ব্যাগটা দিল।
এটা আবার কি।
ভেতরে গিয়ে খুলে দেখো। কাকীমা সুরমাসির সঙ্গে কথা বলে আমি কাকাকে বললাম ও বাড়িতে যাচ্ছি। কাকা বললো আচ্ছা। নীপাকে বললাম, একটু বেশি করে চা করে নিয়ে এসো। নীপা মুখ বেঁকিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
অনাদি কই। আমি বললাম।
পচা বললো, একটু বাজারের দিকে গেছে। এখুনি এসে পরবে। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, আয়।
ওরা আমার পেছন পেছন আমার দোতলার ঘরে এলো। ঘরটা বেশ চকচকে। আগের দিনের থেকে মনে হয় কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে। খাটটা ঠিকই আছে। খালি আলমাড়িটা জায়গা বদল করেছে। তাতে ঘরের জায়গাটা অনেক বেরেগেছে। একটা বসার সোফা ঢুকেছে দেখছি। মনেমনে হাসলাম।
পচা পাঁচু ভানু আর যারা ছিল তাদের সবারই এক কথা, মিত্রার মতো মেয়ে হয় না। আমি ওদের কথায় মুচকি হাসলাম, ভানু একধাপ এগিয়ে বললো, হ্যাঁরে অনি ও কি তোর বউ।
বউ হলে ভালো হতো না। পাঁচু বললো।
ভানু হেসে ফেললো।
চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, শালা তুমি কি কালীচরণের ঝি পেয়েছো।
আবার কালীচরণের ঝির কথা আসছে কেনো। আমি বললাম।
আরে এখনও সময় পেলে এককাট লাগিয়ে চলে আসে।
আমি ভানুর দিকে তাকালাম। ভানু হাসছে।
নারে অনি, ওরা মিছে কথা বলছে।
চিকনা আরো গলা চরিয়ে বললো, ওর বাচ্চা গুলো তোর না ওর বরের বোঝা মুস্কিল।
থাম। আমি চিকনাকে বললাম।
সত্যি তোদের কোন জ্ঞান বুদ্ধি নেই। ছেলেটা অতোদূর থেকে এলো একটু বসতে দিবি। একটু থিতু হতে দিবি। না কালীচরণের ঝি....। সঞ্জয় বললো।
কেরে সতী। চিকনা বললো।
দেখলি অনি দেখলি, তুই এর বিচার কর।
আমি ওদের কীর্তি কলাপ দেখে হাসছি। বাসু স্পিকটি নট।
অনাদি এলো। কি তোরা শুরু করেছিস বলতো। নীচ থেকে শোনা যাচ্ছে। এটা কি তেঁতুলতলা।
তেঁতুলতলা আমাদের আড্ডার ঠেক। সবাই যখন এক সঙ্গে ওখানে বসতাম, আশপাশ দিয়ে বড়রা কেউ যেতো না।
অনাদি এসে আমার পাশে বসলো। কখন এলি।
এইতো আধঘন্টা হবে। কালকের এ্যারেঞ্জমেন্ট কিছু করেছিস।
হ্যাঁ গোরাকে বলে রেখেছি। একটু বেলায় বেরোবো।
কটার সময় ?
এই আটটা নাগাদ।
কটা গাড়ি বলেছিস।
একটা বলেছি, ফালতু লোকজন বেশি গিয়ে লাভ নেই। ঘন্টা খানেকের ব্যাপার।
হ্যাঁ।
Like Reply
#49
পার্টঃঃ ২১
তারপর তোর যা ফর্মা, বেশিক্ষণ বসতেও হবে না।
হাসলাম।
সত্যি অনি তুই কিছু খেল দেখাচ্ছিস।
কি বলেছিলাম, এবার বিশ্বাস হচ্ছে। চিকনা বললো।
নীপা মুখটা বারিয়ে বললো, সঞ্জুদা একটু ধরোতো।
সঞ্জু পরি কি মরি করে ছুটে গেলো।
নীপার পেছনে একটা মেয়েকে দেখলাম।
অনাদি বললো, কে এসেছে তোর সঙ্গে ?
শেলিদি।
আমি অনাদির মুখের দিকে চাইলাম।
চিনতে পারলি না। অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
শেলি ভেতরে এসো।
মেয়েটি ভেতরে এলো। চোখমুখ বেশ টানা টানা। চকচকে। ফর্সা মুখটা লজ্জায় বুকের কাছে নেমে এসেছে।
তুমি অনিকে আগে দেখেছো।
শেলি মাথা দুলিয়ে বললো হ্যাঁ।
কোথায় দেখলে।
সেদিন বাজারে। নীপা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
আমি খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো দেখেরাখ পরে সমস্ত ডিটিলসে তোকে বলবো। মেয়েটি ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
তোমরা সত্যি না এক এক পিস। নীপা বললো।
দিদিমনি এই ভাবে বলবি না।
তুমি আগে এটা খেয়ে নাও।
কি।
নুন চিনির জল।
কেনো।
জানিনা, মাকে গিয়ে বলো।
যা বলছে করনা বাবা। অনাদি বললো।
আমি নিঃশব্দে জলটা খেয়ে নিলাম। বেশ ভাল লাগলো।
মুরি বেশি খাবে না।
তুই বললে, ওকে এক মুঠাও দেবো না। চিকনা বললো।
গেলোনা প্রাণ ভরে কে বারন করেছে।
চিকনাটা বর বাড়াবাড়ি করছে নারে নীপা।
হ্যাঁরে সে....।
বলোনা বলো, অনিদার মুখ থেকে ওই রকম ভাষা শুনেছো কোনদিন।
তোর পায়ে পরছি, এই কান মুলছি, আর হবে না।
নীপা হো হো করে হেসে ফেললো। এই নিয়ে কবার হলো।
নিরানব্বই বার, একশো হলেই তুই গলাটা ঘেঁচ করে দিস। চা ঢাল।
তুমি ঢেলে নাও।
নীপা ওকে ঢালতে দিওনা, তাহলে আমরা কেউ পাবোনা। বাসু বললো।
নীপা একবার কট কট করে চিকনার দিকে তাকালো।
ঠিক আছে ঠিক আছে বাসু যা বললো তাই হবে।
নীপা চা ঢাললো, চিকনা সকলকে এগিয়ে দিলো।
অনিদাকে আমাদের ব্যাপারটা বলেছো ?
অনাদি নীপার দিকে তাকিয়ে বললো না। কালকের দিনটা যাক বলবো।
কাজের মানুষ বলে কথা। আবার কালকেই বলে বসবে বুঝলি তোরা একটু সামলা আমার কাজ পরে গেছে। নীপা বললো।
আমি মুচকি হাসলাম।
তুই সব কথায় গেরো দিস কেনো।
নীপা এলো চুল দুলিয়ে চলে গেলো।
আমরা চা খেলাম। কালকে কারা কারা যাব ঠিক হলো। চিকনা আমি বাসু অনাদি যাবো। কোন বাইক নিয়ে যাব না। আর সবাইকে অনাদি বললো তোরা ওই দিকটা সামলে নে। তারপর আমরা ফিরে আসছি। ওরা বললো ঠিক আছে।
আমি অনাদিকে বললাম, তোদের কি আছে ?
আরে রাস আছে।
রথ শহরের মাঠে!
হ্যাঁ।
যাক প্রাণভরে জিলিপি খাওয়া যাবে।
আচ্ছা কলকাতায় গিয়ে কি তোর কোন উন্নতি হয়নি!
কেনো।
তুই কি সেই অনি, যে মেলায় ঘুরে ঘুরে জিলিপি ছোলাসেদ্ধ খাবি।
হ্যাঁ। আমি সেই অনি, ঠিকআছে তোদের জন্য একটা সারপ্রাইজ তোলা রইলো।
কি বলনা।
সেদিন বলবো।
ঠিক আছে।
সবাই চলে গেলো। আমি পুকুর ঘাটে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে কাপর জামা ছাড়লাম। আমার পেটেন্ট ড্রেস পরে খেতে বসলাম। কাকাকে জিজ্ঞাসা করলাম চোখের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা। কাকা বললেন আগের থেকে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছেন। মিত্রার চিঠিটা উনি নিজে পরেছেন। ওনার মুখ থেকেও মিত্রার স্তুতি শুনলাম। কাকীমা সুরমাসিও মিত্রার সম্বন্ধে একেবারে গদ গদ। সত্যি মেয়েটার কি ভাগ্য। সব থেকেও কিছু নেই।
আমি বেশি কথা বারালাম না। তাড়াতারি খেয়ে নিলাম। কালকের যাওয়ার ব্যপারটা কাকাকে বললাম। কখন যাব, তাও বললাম। কাকা আমার প্রত্যেকটা কথায় খালি মাথা নেড়ে গেলেন। কিছু বললেন না।
আমি মুখ ধুয়ে ঘরে চলে গেলাম।
অন্ধকার দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। জানলার পাল্লাটা খুলে ঘরটা অন্ধকার করে দিলাম। বাইরের রং আরো পরিষ্কার হলো। সত্যি দু’দিন পর পূর্ণিমা। চাঁদের রূপ তাই বলছে। গাছের পাতা গলানো রূপোর অলংকারে সজ্জিত। সেই ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঝিঁ ঝিঁ। জোনাকীর আলো। যত দেখছি তত যেন আমার কাছে নতুন। কিছুতেই পুরনো হতে চায় না। প্রত্যেকটা রাতের একটা আলাদা আলাদা রূপ আছে। আমি যেন সেই রূপ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি। একটা সিগারেট ধরালাম দূরে কেউ যেন হেঁটে যাচ্ছে। বাঁশঝারের ভেতর দিয়ে। হাতের টর্চলাইটটা একবার জলছে। একবার নিভছে। মাঝে মাঝে গাছের পাতা গুলো নড়ে চড়ে উঠছে। বুঝতে পারছি। রাত পাখিরা শিকারের লোভে হানা দিচ্ছে এডালে ওডালে। এই আলো আঁধারিতে তাদের দেখা যায় না। চেনা যায় না। বোঝা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়। ভাবতে ভাবতে নিজে কোথায় হারিয়ে গেলাম। নীপা কখন এসেছে জানি না। পাশ ফিরতে গিয়ে ওর শরীর স্পর্শ করলাম। সংকোচে উঠে বসলাম। নীপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কখন এসেছি জানো।
না।
আমার সব কাজ শেষ।
তাই।
হ্যাঁ।
তাহলে আধঘন্টার ওপর হয়ে গেছে।
তুমি কি ভাবছিলে বললে নাতো।
কিচ্ছু না।
ভাবছো এই আপদগুলো আমার সব কিছু নষ্ট করে দিতে বসেছে।
ওকথা বলতেনেই।
তাহলে বলো।
কি বলবো।
কি ভাবছিলে।
সত্যি বলবো।
হুঁ।
আমি অন্ধকার দেখতে খুব ভালবাসি। কতরাত আমি একা একা রাতের অন্ধকারে এদিক সেদিক ঘুরে বেরিয়েছি।
তোমার ভূতের ভয় করে না।
না। তবে মানুষকে ভয় পাই। আর সাপ।
মিত্রাদি সত্যি খুব বড়মনের মানুষ।
নীপার দিকে তাকালাম। নীপা মাথা নীচু করে রয়েছে।
আমি নতুন করে কি বলবো। তুমিতো সব শুনেছো। কালকে থেকে খালি মিত্রাদিকে নিয়েই আধবেলা কেটে গেছে।
তোমার ব্যক্তিগত ভাবে কি মনেহলো বললে না।
বললে তুমি বিশ্বাস করবে।
হুঁ।
মিত্রাদি তোমায় ভীষণ ভালবাসে। তুমি মিত্রাদির প্রথম প্রেমিক। তাই তুমি আমার কোন খতি করতে চাও নি।
কে বললো তোমায়।
মিত্রাদি নিজে।
মিত্রাদির কথায় তোমার কিছু মনে হয়নি।
প্রথমে ভীষণ মন খারাপ হয়েগেছিলো। তারপর ভাবলাম, ওই জায়গায় আমি থাকলেও ওই একি অবস্থা হতো।
তোমার হিংসে হয় না।
কিবলছো অনিদা! মিত্রাদিকে আমি হিংসে করবো।
কেনো নয়।
আমি যদি মসাই-এর কাছে না আসতাম তাহলে কোনদিন চেষ্টা করলেও তোমার আর মিত্রাদির কাছে পৌঁছতে পারতাম! এইযে তোমার পাশে বসে আছি এই গ্রামের কতো মেয়ে স্বপ্নে দেখে তা তুমি জানো!
হাসলাম।
জানো অনিদা তোমরা দুজন আমার কাছে আদর্শ। আর শরীরের কথা বলছো, আমি তোমার কাছে ধরা দিয়েছিলাম। তোমার আদর খাব বলে। তোমার অনেক কথা শুনেছিলাম। তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে। সব যেনো আমার কাছে মিথ মনে হতো। যখন তোমায় দেখলাম, মনেহলো আমার সেই স্বপ্নের রাজপুত্রকে দেখছি। আমি লোভ সামলাতে পারিনি। বিশ্বাস করো। এই গ্রামের অনেকে আমাকে চেয়েছে। কেউ সহসা হাত বারাতে পারে নি। কিন্তু সেখানেও তোমাকে দেখলাম। তুমি মনের দিক থেকে কতো পবিত্র। তুমি মিত্রাদিকে ভালবাস। তোমার ভালবাসা নিখাদ সোনা। কত ভাগ্য করে জন্মালে একটা মেয়ে এইরকম মনের সংস্পর্শে আসে তা তুমি জানোনা। আমি জানি সেখানে তুমি কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।
যদি আমি না আসতাম।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো তুমি আসবে। তোমাকে আসতে হবেই।
তুমি এতটা মনের জোড় পেলে কোথা থেকে।
মসাই-এর কাছ থেকে। তোমার কথা শুনে শুনে।
আমি নীপার দিকে তাকিয়ে আছি।
মিত্রাদি আজ যে কাপড় জামা পাঠিয়েছে তা দেখে মসাই কেঁদে ফেলেছিলেন। আমি বললাম তুমি একি করছো। তারপর আমি অকপটে মিত্রাদির সমস্ত কথা মসাইকে বলেছি।
কাকা শুনে কি বললো।
মসাই বললো ও দাতাকর্ণ।
হাসলাম।
তোমার বাবাকে মনে পরে না ।
না। আবঝা আবঝা।
মসাই-এর কাছে থেকে ওনার অনেক কথা শুনেছি।
ভাল না খারাপ।
ভাল না হলে তোমার মতো সন্তান পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় কি করে। আমায় একটা কথা দেবে।
বলো।
জানি আমি তোমাকে কোনদিন পাব না। তবে আমায় একটা সন্তান উপহার দেবে। আমি তাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। তাকে নিয়ে আমি আমার স্বপ্নের তরী রচনা করবো।
কি পাগলামো করছো।
নাগো সত্যি বলছি। তোমাকে পাবো না ঠিক। কিন্তু তোমার সন্তান আমার কাছে গচ্ছিত থাকবে।
আমার সন্তানের প্রতি আমার কোন দায়িত্ব থাকবে না।
তোমার দ্বারা তা হবে না, তুমি যাযাবর।
হাসলাম। লোকে আমাকে চরিত্রহীন বলবে।
তুমি চরিত্রহীন নও। মেয়েরা তোমার চরিত্র হনন করবে। তুমি নিজে থেকে তো চাওনা।
অন্ধকারেও নীপার মুখটা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।


পরদিন ঠিক সময়ে আমরা বেরিয়ে গেলাম। আজ নীপা মিত্রার দেওয়া লংস্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে। সামনে একটা ওর্না জড়িয়ে নিয়েছে। নীপাকে আজ একেবারে অন্যরকম লাগছে। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো, হ্যাঁরে দিদিমনি, তুই করেছিস কি। আলো ঝড়ে পরেছে। আজ তুই অবশ্যই আওয়াজ খাবি।
নীপা চিকনার দিকে কট কট করে তাকিয়ে বললো, তুমি বউনি করলে। কালকে এটাই তুমি বয়ে এনেছিলে।
সরি ম্যাডাম, অন্যায় হয়েছে। আর একখানা বাকি আছে। কাল রাসপূর্ণিমার মেলা আপনার মনস্কামনা পূর্ণ হবে।
সকলে হো হো করে হেসে ফেললো। সত্যি চিকনা তুইও পারিস। আমি বললাম।
এই অজ গাঁয়ে কি নিয়ে থাকি বলতো অনি এই ভাবেই কেটে যাচ্ছে।
নার্সিংহোমে পৌঁছলাম সাড়েনটা নাগাদ। রিসেপসন কাউন্টারের ভদ্রমহিলা আমাকে চিনতে পেরেছেন। আমাকে দেখেই বললেন, বসুন স্যার। আমরা সবাই বসলাম। উনি ইন্টারকমে কার সঙ্গে কথা বললেন। একজন ভদ্রলোক ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। পরিচয় দিলেন ডঃ দেবাশীষ বসু। এও জানালেন মিঃ শ্রীধরণ থাকতে না পারার জন্য উনি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে মিঃ শ্রীধরণ ওনাকে সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। আমার কি কি করণীয় ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম। উনি বললেন সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা কাকাকে ভেতরে নিয়ে গেলো। আমি নীপাকে সঙ্গে যেতে বললাম। নীপা প্রথমে যেতে চাইছিলোনা। আমি অনাদি আর বাসুকে পাঠালাম। নীপার সঙ্গে মিনিট পনেরো পর ওরা বেরিয়ে এলো। কাকার চোখে একটা চশমা দেখলাম। চোখটা একটু লাল লাল।
কি হলো।
ঠিক হয়ে গেছে। কাকা বললেন।
তুমি দেখতে পাচ্ছ।
হ্যাঁরে তোকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। কাল আর একটা চশমা দেবে বলেছে।
ঠিক আছে তুমি বোসো।
ওরা সবাই বসলো।
অনাদি বাসুর সঙ্গে কথা বললাম। ওরা বললো একটা চোখের রেটিনাটা একটু কমজোরি হয়ে পরেছে। বছর তিনেক পরে অকেজো হতেপারে। তবে কাকা চোখে বেশি স্টেইন দিতে পারবে না।
আচ্ছা।
আমি রিসেপসনে গেলাম। ভদ্রমহিলাকে বললাম, ডঃ বাসুর সঙ্গে একটু কথা বলবো। উনি কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে, আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। ডঃ বাসু আমাকে বসতে বললেন, তারপর কাকার বিষয়ে সব জানালেন। অনাদি যা বললো, তাইই। চশমাটা কালকে একটা সময় এসে নিয়ে যেতে হবে। আমি বললাম, দুপুরের দিকে যদি আসি আপত্তি আছে কিনা। উনি বললেন না। আমি রেডি করে রেখে দেবো। কাকাকে সঙ্গে আনতে হবে কিনা। উনি বললেন না আনতে হবে না। যাকে হোক একজনকে পাঠিয়ে দিন দিয়ে দেবো। আমি এবার পয়সার কথায় এলাম। টোটাল ব্যালেন্স কতো বাকি আছে। আমায় কতো দিতে হবে।
উনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন, কেনো মিঃ শ্রীধরণ আপনাকে কিছু বলেননি।
না।
আপনার কোন ডিউ নেই, বরং আপনি যে টাকাটা জমা দিয়েছেন, সেটা রিফান্ড হবে।
কেনো ?
সেতো জানি না স্যার, ওটা মিঃ ব্যানার্জী জানেন।
উনি টেবিলে রাখা বেলটা বাজালেন। একজন বেয়ারা এলো। তাকে উনি আমার ব্যাপরটা বলতেই উনি বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর একজন ভদ্রলোক এসে একটা খাম দিয়ে গেলেন। উনি খামটা আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, মনে কিছু করবেন না, এটা আমার ডিউটি। ওনাকে বললাম, কাল আমি আসবো। আপনি থাকবেন ? উনি বললেন অবশ্যই।
ওখানে কিছু মিষ্টি চা খেয়ে আমরা সকলে ফিরে এলাম। ফিরতে ফিরতে বেলা গড়িয়ে গেলো।
বাসুকে বললাম, তুই দোকানে থাকছিস ?
হ্যাঁ।
তুই থাকবি কি করে ? অনাদি বললো। ওদিককার কাজ কে সামলাবে ?
ঠিক বলেছিস। মনেই ছিলো না।
তুই ওখানে চলে আয়।
না। একেবারে কাল যাব।
তুই তাহলে একটু রাতের দিকে আয়। এই সাতটা।
ঠিক আছে তোকে যেতে হবে না, আমরাই আসবো। অনাদি বললো।
ঘরে ফিরে এলাম। নীপা ওবাড়িতে গেছে। কিছুক্ষণ পর এসে বললো, ভাত খাবে না।
না। এখন খেতে ভাল লাগছে না। তুমি আমাকে একটু চা দাও।
আমি কিন্তু এখন তোমাকে সময় দিতে পারবোনা বাপু। আমার নাচের রিহার্শাল আছে।
তাই।
হ্যাঁ।
কি নাচ করবে।
চিত্রাঙ্গদা।
ওরে বাপরে। সেতো বিরাট ব্যাপার। চাত্রাঙ্গদা কে হয়েছে ?
আমি মশাই আমি। তারপর আমার কাছে ছুটে এসে জাপ্টে ধরে বললো, তুমি কাল যাবেতো ?
নিশ্চই যাবো।
আবার জরুরি কাজ পরে যাবেনা।
হাসলাম।
কখন শুরু তোমাদের অনুষ্ঠান ?
এখন তাড়াতাড়ি রাত হয়ে যায়। এই ছটা ধরো।
তার মানে কাল তোমার নাগাল পাওয়া যাবে না।
ঠিক তা নয়, একটার পর থেকে মাঠে চলে যাবো। একটু স্টেজ রিহার্শাল করতে হবেনা।
ঠিক ঠিক।
নীপা এক দৌড়ে চলে গেলো।
চা খেয়ে এই বাড়িতে কাকার কাছে এলাম। বললাম আমি একটু আসছি।
কাকা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সন্ধ্যে হয়ে আসছে। এই সময় কোথায় যাবি।
দেখি।
টর্চটা নিয়ে যা।
দাও।
কাকা কাকীমাকে ডাকলেন। কাকীমা টর্চটা দিয়ে গেলেন। বললেন তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
আচ্ছা। নীপাকে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলাম না।
আমি বেরিয়ে এলাম। আমাদের পুকুর পারের পেছনের রাস্তা ধরে বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে একবারে খাল পারে চলে এলাম। নিঃঝুম রাস্তাটা পাগল অনির সঙ্গে কথা বলার জন্য যেনো ওঁত পেতে বসে আছে। চারিদিকে শুকনো গাছের পাতায় ঢাকা পঢ়ে গেছে। মাঝখানদিয়ে শরু দড়ির মত রাস্তাটা এঁকে বেঁকে সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। আমি একটু নদীর পারে বসলাম। বর্ষাকালে গ্রামের মানুষ একে নদী বলে। তখন নদীর দু’কুল ছাপিয়ে জল গ্রামের মধ্যে ঢোকে। বাঁধ বাঁচাবার জন্য তখন গ্রামের সবাই হামলে পরে বাঁধের ওপর। বর্ষা চলে গেলেই গ্রামের লোকেরা বলে খাল। তখন তার রূপ শীর্ণকায়। এই খালে কতো নৌকা চালিয়েছি আমি আর ভানু। সামন্তদের নৌকা। বিমল সামন্ত। গ্রামের লোকেরা অপভ্রংশ করে বলতো বিমল সাঁতের লৌকো। সেইদিন গুলোর কথা মনে পরে গেলো। অনাদিরা তখনো এতো ক্লোজ হয় নি। টেনে পরার সময় আমরা সবাই দলবদ্ধ হলাম। ভানু ভানুর জায়গায় রইলো। ও আমাদের থেকে বয়সে বরো। কিন্তু ওই যে সিং ভেঙে বাছুরের দলে ঢুকলো আর বেরোতে পারলো না।
গোধুলি শেষে। ঘন কুয়াশার মতো সন্ধ্যা নেমে আসছে একটু একটু করে। আকাশের দিকে তাকাতে তারা গুলো মিট মিট করে জলছে। আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো, কি অনিবাবু অনেকদিন পর এই রাস্তায়। কেমন আছ। নিজে নিজেই হেসেফেললাম।
পায়ে পায়ে হারু জানার কালায় এসে পরলাম। এই কালাটা এই গ্রামের বিখ্যাত জায়গা। কালা বলতে একটা ছোট পুকুর তার চারধারে ঘন জঙ্গল। দিনের বেলা এখানে সাধারণ গৃহস্থ কেউ আসে না। রাতের বেলা একবারেই না। নিষিদ্ধ জায়গা। ছোটো থেকেই নিষিদ্ধ জায়গার প্রতি আমার টান বেশি। ক্লাস টেন থেকে আমি উড়চন্ডী। ছোট সময় জানতাম। হারু জানার কালায় ভূত আছে। ওকানে গেলে কেউ জীবন্ত ফিরে আসে না।
একদিন পায়ে পায়ে রাতের অন্ধকারে চলে এসেছিলাম। লুকিয়ে দেখলাম। সেখানে যেন মোচ্ছব বসেছে। কতমেয়ে পুরুষ গায়া গা লাগিয়ে বসে আছে। ঠিক যেন ভানু-কালুচরণের ঝি। সবাই যে এই গ্রামের তা নয় আশেপাশের গ্রামেরও বেশ কয়েকজনকে দেখলাম। গ্রামের ঘরে বলে ভাকু। একচুয়েলি দেশি মদের কারখানা। খোলা আকাশের নিচে গরম গরম ভাকু খেয়ে ফুর্তির জায়গা। হাঁড়িপাড়া ডোমপাড় তাঁতীপাড় কামারপাড়ার অনেক মেয়ে পুরুষকে দেখলাম। সে কি ঢলানি। অনেকক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম। কলকাতা এসে আবিষ্কার করলাম আমাদের গ্রামের হারু জানার কালা একটা বার।
Like Reply
#50
Wow,,,,superb update,,,khub valo hoyeche
Like Reply
#51
Waiting for the rest
Why so serious!!!! :s
Like Reply
#52
Dada,eta to likhe likhe post korte hochhena j setar jonyo onek somoy dorkar..apni apnar songroho amader sathe share korchen,tar jonyo osonkhyo dhonyobad.baki jotota ache apnar kache aksathe ba jotota besi kore paren die din na,pdf share korte bolchina karon tahole post count barbena..abaro dhonyobad ei osadharon srishti ta jara age porenni tader porar sujog kore deoar jonyo..
Like Reply
#53
আমি চেস্টা করবো যতটা পারি আপডেট দেয়ার জন্য। সবাইকে ধন্যবাদ।
Like Reply
#54
Waiting
Like Reply
#55
পার্টঃঃ২২
পায়ে পায়ে শ্মশানে চলে এলাম। শ্মশানের পুকুর পারটায় বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। নিঝুম কেউ কোথাও নেই। জোনাকি গুলো আলো ছড়িয়ে উড়ে উড়ে মাথার ওপর দিয়ে চলেযাচ্ছে। দু’একটাকে ধরার চেষ্টা করলাম পারলাম না। দু’একটা আমার গায়ে উড়ে উড়ে এসে বসছে। বেশ দেখতে লাগছে। পোকাগুলোর পেছন দিকটা জলছে নিবছে। মাথার ওপর বড় বড় শাল কদম মহানিম শিরিষ বাবলা জাম। গাছে বসে থাকা ক্লান্ত পাখিরা কিচির মিচির শব্দে জায়গাটাকে মাতিয়ে তুলেছে। একটু এদিক ওদিক তাকালাম। দূরে কোথাও শেয়াল হুক্কাহুয়া হুয়া-কা-কা-কা-হুয়া করে ডেকে উঠলো। মিত্রাকে সকাল থেকে ফোন করা হয় নি। অফিসার কি হালচাল কিছুই জানা হয় নি। সন্দীপকে বলেছিলাম, গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেলেই জানাবি। মোবাইলটা পকেট থেকে বার করলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। এখানে দেখছি টাওয়ারটা ফুল। মিত্রাকে ডায়াল করলাম।
হ্যালো।
তুই কোথায়।
তোর ঘরে। ছোটমার সঙ্গে বসে গল্প করছি। আর তোর আদরে ভাগ বসাচ্ছি।
হাসলাম।
হাসছিস। তোর হিংসে করছে না।
এককেবারে না।
জানিস এসে চিংড়িমাছের কালিয়া শুক্তো দিয়ে ভাত খেলাম।
বাঃ বাঃ।
তোর লোভ হচ্ছে না।
চিংড়িমাছটা শুনে একটু লোভ হচ্ছে। তবে ঠিক আছে বড়মা আমার জন্য নিশ্চই তুলে রাখবেন।
না মশাই যেটুকু আনা হয়েছিল সব শেষ করে দিয়েছি।
অফিসে গেছিলি।
না।
এখানে কখন এসেছিস।
সেই সকালে।
দাদা বাড়িতে আছেন।
না।
মল্লিকদা।
দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়েছে।
ও।
বড়মা কোথায়।
নিচে কারা এসেছেন কথা বলছেন।
তুইতো এখানে আসতে চাইছিলি কাল আসবি।
হ্যাঁ। মিত্রার কথায় উচ্ছলতা। আমি ওর চোখমুখ দেখতে পাচ্ছি।
কি করে আসবি।
তুই এসে নিয়ে যাবি।
হবে না। তোকে একলা আসতে হবে।
যাব।
এখানে আসার কত গুলো শর্ত আছে।
বল।
এখানে কাপড় ছাড়া কিছু পরা যাবে না।
তাই পোরবো।
খোলা আকাশের নীচে বাথরুম করতে হবে। তোর টাইলস বসান এক্সিকিউটিভ বাথরুম পাবিনা।
সেকিরে!
হ্যাঁ।
ঠিক আছে তাই করবো। কিন্তু কেউ যদি দেখেফেলে ?
দেখলে দেখবে।
তারমানে!
হ্যাঁ।
তুই এই ব্যাপারটা একটু দেখ।
হবে না।
অগত্যা।
টেবিল চেয়ার পাবি না। মাটিতে বাবু হয়ে বসে খেতে হবে।
এটা পারব।
গাড়ি নিয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। মাঠে মাঠে হেঁটে হেঁটে ঘুরতে হবে।
হ্যাঁ হ্যাঁ পারব।
বড়মা-ছোটমার সঙ্গে কথা বল। ছোটমাকে দে।
ছোটমা তোর সব কথা শুনেছে।
এইতো বুদ্ধি খুলে গেছে। রেকর্ডিং করেছিস নাকি ?
না না।
ছোটমা হো হো করে হাসছে, সত্যি অনি তুইনা একটা....।
কি বলো....।
না। ফিরে আয় বলবো।
কে এসেছে নিচে।
দাদার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়র মেয়ে।
বয়েস কতো।
সে জেনে তোর লাভ।
একটু....।
বুবুন খারাপ হয়ে যাবে বলছি। মিত্রার গলা, ছোটমা হাসছেন।
সত্যিতো। বেল পাকলে কাকের কি।
দাঁড়া তোর হচ্ছে। মিত্রার গলা।
তুই এখন কোথায় পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনছি।
সেই জায়গায়। মিত্রার গলা।
না।
তাহলে।
শ্মশানে বসে আছি।
ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলেন, তুই এই ভর সন্ধ্যেবেলা শ্মশানে বসেআছিস, তোর কি একটুও ভয়ডর নেই।
জায়গাটা দারুন।
তুই আগে ওখান থেকে চলে আসবি, আমি দিদিকে বলে দিচ্ছি।
উঃ তোমাদের নিয়ে আর পারা যাবে না। ঠিক আছে চলে যাচ্ছি। মিত্রাকে বলো কিছুক্ষণ পর ফোন করতে।
তুই চলেযা ওখান থেকে। মিত্রা বললো।
যাচ্ছিরে যাচ্ছি।
চারিদিকে ঘন অন্ধকার। পাখির কিচির মিচির শব্দটা কিছুটা ম্লান হয়ে এসেছে। মাঝে মাঝে পাখির ডানার ঝটপট শব্দ। দাঁড়কাকের কা কা ডাক। আকাশের তারাগুলোকে এখন বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। চাঁদ উঠেছে। তার স্নিগ্ধ আলোর পরশে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। আমাদের হাই কলেজের টালির চালটা আবছা দেখা যায়। দূরে ওই অশ্বত্থ গাছের তলাটা পীর সাহেবের থান। আমি প্রত্যেক দিন কলেজে যাওয়া আসার পথে ওখানে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতাম। ওর ঠিক পাশেই প্রচুর কুলের গাছ। কুল পাকার আগেই গাছ পরিষ্কার হয়ে যেতো। কুল খাওয়ার যোম ছিল পুনি আর সৌমি। ওরা এখন কোথায় হারিয়ে গেছে জানি না। অনাদিকে একবার জিজ্ঞাসা করতে হবে। ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রার ফোন।
হ্যালো।
অনুমতি পেয়ে গেছি। তুই বড়মার সঙ্গে কথা বল। বলো, বলোনা ও ঠিক শুনতে পাবে।
বুঝলাম মিত্রা ভয়েস মুডে দিয়ে রেখেছে।
হ্যাঁরে তুই নাকি শ্মশানে বসে আছিস।
হ্যাঁ।
এখনো!
হ্যাঁ। ওখান থেকেই তোমার সঙ্গে কথা বলছি।
তোরকি কোন ভয় ডর নেই।
গ্রামের ছেলের ভয় থাকতে নেই।
পাকামো করতে হবে না। এখুনি বাড়ি যা।
যাবো। মিত্রার সঙ্গে কথা হয়েছে।
ও একটা মেয়ে কি করে যাবে।
আফটার অল ও একটা কোম্পানীর মালিক এটা ভুলেযাচ্ছ কেনো। সব সময় লেংবোট নিয়ে ঘুরলে চলবে।
ঠিক আছে ঠিক আছে। আমি যেতে পারবো। তুই নার্সিংহোমের কাছে চলে আসবি আমি ওই রাস্তাটা পর্যন্ত চিনে চলে যেতে পারবো।
আচ্ছা।
কখন যাব বল।
একটা ফোন এসেছে। পরে বলছি।
মিত্রাকে ছারতেই সন্দীপের গলা ভেসে এলো।
কি হয়েছে।
কখন থেকে তোকে ট্রাই করছি কিছুতেই পাচ্ছিনা।
কেনো।
এখানে সব গজব হয়ে গেছে।
তোদের মালকিন কোথায়।
সে নাকি তোর সঙ্গে ভেগেছে।
আমার সঙ্গে।
হ্যাঁ। সেরকমি শুনছি।
এই খবর কোথা থেকে পেলি।
কাল সব পাকা খবর পাবো। তোকে বিকেলের দিকে ফোন করব। আমারতো সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
কেনো।
সুনিত যা বারাবারি আরম্ভ করেছে না, কি বলবো। সব নয়া নয়া মাল এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছে।
খাতা কলমে না মৌখিক।
মৌখিক। ম্যাডাম নাকি ওকে সমস্ত পাওয়ার দিয়ে তোর সঙ্গে লন্ডন ভেগে গেছে।
তোর কি মনে হয়।
সেতো আমি বুঝতে পারছি। মন মানে না।
বাড়িতে গিয়ে মাথায় সিঁদুর আর হাতে চুরি পরে বসে থাক।
দূর তোকে মন খুলে দুটো কথাও বলতে পারবো না।
বলবিনা।
অন্য কি খবর আছে বল।
সুনিত অফিসের মধ্যে হল্লা লাগিয়ে দিয়েছে। পদে পদে ঘরুই-এর সঙ্গে ঝামেলা করছে। চম্পকদা ওর সঙ্গে আছে। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কিছু কিছু মাথা রয়েছে।
আমার সঙ্গে মালকিন ভেগেছে এই খবরটা কে দিল।
জানিনা। তবে অনেকেই জানে দেখছি।
কাল লেটেস্ট নিউজ চাই।
আচ্ছা।
সন্দীপের ফোনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সুনিতের নতুন চাল। নাঃ একটা কিছু করতে হবে। কাল সন্দীপের কাছ থেকে নিউজটা নিই আগে। তারপর। কে রটালো। মিত্রাকে না বলে দিই আসার জন্য। তারপর ভাবলাম ওর মনটা খারাপ হয়ে যাবে। তার থেকে যেমন আছে থাক। দেখা যাবে।
পায়ে পায়ে শ্মশানের একেবারে ভেতরে চলে এলাম। কয়েকদিন আগে কাউকে হয়তো দাহ করা হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পোড়া কাঠের টুকরো। ছেঁড়া কাপর। মাটির হাঁড়ি। শহুরে শ্মশানের মতো নয়। চারিদিকে শ্মশানের সেই ঘন জঙ্গল আর নেই। অনেক পরিষ্কার হয়েছে। কাকার মুখ থেকে এই শ্মশান সম্বন্ধে অনেক গল্প শুনেছি। অনেক মিথ এই শ্মশানকে নিয়ে তৈরি হয়ে আছে। সেই মিথের খোঁজেই আমি প্রথমে শ্মশানে আসি। তখন আমি টেনে পরি। আমার মা-বাবাকে এই শ্মশানে একই সঙ্গে দাহ করা হয়েছিল পাশাপাশি চিতায়। সেই জায়গাটা খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছি। কাকা কখনো বলতেন পূবপারে যে অশ্বত্থ তলা আছে। তার কোলে পোরানো হয়েছিল। আমি সেই অশ্বত্থ গাছ খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু তার কোল খুঁজে পাই নি। এখনো সেই গাছটা মাথা উঁচু করে দাঁরিয়ে আছে। আমি পায়ে পায়ে সেখানে গেলাম। মা বেঁচে থাকলে তার ছেলের কীর্তি হয়তো দেখে যেতে পারতেন। মনটা ভারি হয়ে গেলো। পারদপক্ষে এই সব চিন্তা করতে ভাল লাগে না। তবু মনে এসে যায়। পরিবেশ পরিস্থিতি মেনে।
একটা সিগারেট ধরালাম। মিত্রাকে ফোন করতে ইচ্ছে করছে। পকেট থেকে ফোনটা বার করে, ডায়াল করলাম।
হ্যাঁ বল।
কোথায় ?
ফিরছি।
তুই এখনো ফিরিস নি!
কি করে বুঝলি।
ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শুনতে পাচ্ছি।
হাসলাম।
কেন এরকম করছিস বুবুন ফিরে যানা। রাতবিরেতে কোথায় কি হবে।
নারে আমার কিছু হবেনা দেখবি। বড়মা কি বললো।
বললো সাবধানে যাস। ও একটা পাগল তুই ওর পাল্লায় পরে পাগল হোস না।
কালকে তুই বড় গাড়িটা নিয়ে আসিস না।
কেনো।
এখানে রাখার জায়গা হবে না।
তাহলে।
ছোট গাড়িটা নিয়ে আসিস। তোর সঙ্গে কে আসবে।
আমি একা ড্রাইভ করে যাব।
না। বাইরুটে একলা আসিস না। ইসমাইলকে নিয়ে আসিস।
আচ্ছা।
দাদার সঙ্গে দেখা হলো।
হ্যাঁ। আমি যখন বেরোচ্ছি তখন দেখা হলো। দাদা ঢুকছেন।
বলেছিস।
না। বড়মা বলেছেন।
ঠিক আছে।
আসার সময় তুই একটা কাজ করবি।
বল।
কিছু বাজি কিনে আনবি।
কোথায় পাবো ?
ক্যানিং স্ট্রীটে।
এখনতো অনেক রাত হলো। দোকান সব বন্ধ হয়ে যাবে।
কটা বাজে।
আটটা। ঠিক আছে দেখছি।
কাল এখানে একটার মধ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করিস।
ঠিক আছে।
ফোন কাটতে না কাটতেই অনাদির ফোন।
তুই কোথায়।
হাসলাম। কেনো।
আমরা কখন থেকে এসে বসে আছি।
আমি শ্মশানে।
একা।
দোকা পাবো কোথায় ?
সত্যি তোর মাথায় কি ছারপোকা আছে।
তা আছে বইকি।
ঠিক আছে তুই বোস।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই দেখি বাইকের আওয়াজ। হেডলাইটটা প্রথমে ক্ষীণ তারপর উজ্জ্বল হলো। আমি অশ্বত্থ তলায় বসে আছি। বাইকে দুজন আরোহী। চাঁদের আলোয় যেটুকু দেখতে পাচ্ছি চিকনা আর সঞ্জীব বলে মনে হচ্ছে। ওরা আমায় দেখতে পাচ্ছে না। তারপর অনি অনি বলে চিতকার করলো। আমি সাড়া দিলাম।
তাড়াতাড়ি আয় ভাই। জীবনে এখনো অনেক কিছু পাওয়ার আছে। মরতে চাই না।
ওদের গলার স্বরে যে কাকুতি মিনতি ছিল তা শুনে আমি হেসে ফেললাম।
আমি ধীর পায়ে ওদের কাছে এলাম। আমি খালি বসার অপেক্ষা। চিকনা বাইক ছোটালো রুদ্ধশ্বাসে আমি মাঝখানে সঞ্জীব আমার পেছনে। গুম হয়ে আছে।
মিনিট তিনেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। দেখলাম খামারে একটা জটলা। আমি গাড়ি থেকে নামতে চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো। খিস্তি বাদে যা যা বিশ্লেষণে আমাকে আবাহন করার দরকার তাই করল। সঞ্জীবও বাদ গেল না। নীপা আরও গলা চড়িয়ে যা নয় তাই বলল। আমি মাথা নীচু করে শুনে গেলাম। কোন উত্তর দিলাম না। অনাদি খালি কাছে এসে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, চল ঘরে চল।
আমি ঘরে এলাম। আমার পেছন পেছন ওরা সবাই এলো।
সবাই কেমন গুম হয়ে আছে। চিকনা ঘরের সোফায় মাথা নীচু করে বসে আছে। আমি নিস্তব্ধতা ভেঙে চিকনার কাছে একটা সিগারেট চাইলাম। চিকনা উঠে এসে আমার পা ধরে ফেললো। একি করছিস তুই। অনি সত্যি বলছি আমি ভুল করে ফেলেছি।
আমি ওর হাত ধরে দাঁড় করালাম। তুই ভুল করিস নি। ঠিক করেছিস।
আমি তোকে অনেক বাজে বাজে কথা বলেছি।
তুই একটুও বাজে কথা বলিস নি। তোর জায়গায় আমি থাকলেও তোর মতো ব্যবহার করতাম।
চিকনা চোখ মুছছে।
তোরা আমাকে ভীষণ ভালবাসিস তাই তো। তোদের আমাকে হারাবার ভয়। তাইতো।
চিকনা মাথা দোলাচ্ছে। সঞ্জীব অপরাধীর মতো আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
ওরে শ্মশানটা পবিত্র জায়গা। ওখানে ভয়ের কিছু নেই। ভয় করলেই ভয়।
শালা অনাদিটার জন্য। তখন বাসুর দোকানে যাওয়ার ব্যাপারটা ফাইন্যাল করলেই সব লেটা চুকে যেতো। তুই ওখানে কি ছিঁরলি এতোক্ষণ, বল। কয়েকটা পার্টির লোকের সঙ্গে কপচালি। লোকের পেছন মেরে চা খেলি....।
আমি হেসে ফেললাম।
অনাদি মুখ নীচু করে হাসছে। দোষ করলি তুই, ঝাড় খাচ্ছি আমি, দেখছিসতো।
চিকনা কাঁচা কাঁচা খিস্তি করলো, পার্টি করছে। তোর জন্য অনিকে আমি...।
নীপা চায়ের মগ নিয়ে ঘরে ঢুকলো। গম্ভীর কোন কথা না বলে ট্রেটা রেখে চলে গেলো। বুঝলাম, চিকনার মতো ওরও চোখ ছল ছল করছে।
অনাদি সবাইকে চা ঢেলে দিলো। চা খাওয়া হলো। আমি মেলার খবর নিলাম। শুনে মনে হচ্ছে বেশ বড়ো ফাংশন হবে। অনাদি মেলা কমিটির সেক্রেটারি। সঞ্জয় অনাদির অধস্তন। বাসু প্রসিডেন্ট। আমি অনাদিকে বললাম, হ্যাঁরে প্রসিডেন্টেরতো কোন কাজ কর্ম নেই তোদের প্রোগ্রামে।
আছে। তবে হাল্কা।
ওই জন্যই বাসু ওই পোস্টটা নিয়েছে। চিকনা বললো।
বাসু হাসছে। আমিও হাসছি।
তোকে কি পোস্ট দিয়েছে।
ফাংশন।
আরি বাবা এতো গুরু দায়িত্ব।
আমি সঞ্জয়কে দিয়ে দিয়েছি। বলেছি এই দায়িত্ব তুই নে আমি মাঠের দায়িত্বে থাকবো।
মাঠের আবার কি দায়িত্ব।
দেখবি কাল, ডাবুর বোর্ড বসবে।
সেতো জুয়া।
হ্যাঁ।
তোরা এলাও করবি।
অনাদিকে বল।
আনাদির দিকে তাকালাম।
হ্যাঁরে অনি। ওরাইতো মেলার সিংহভাগ খরচ দেয়।
আরো আছে শুনবি। চিকনা বললো।
আমি চিকনার দিকে তাকালাম।
ভাকুর ঠেক বসবে আরো কতো কি হবে। হাতের সুখ করতে হবে কাল।
যে রকম আমায় করে ফেলছিলি আর একটু হলে।
চিকনা অপরাধীর মতো চোখ করে বললো, তুই আর ওই কথা মনে করাস না।
হ্যাঁরে দিবাকর কোথায় ?
ও শালা কলকাতায় গেছে। কি ইন্টারভিউ দিতে। চিকনা বললো।
ও থাকবে না কালকে।
হ্যাঁ। একটু হামবরাক্কি ভাব করতে হবে না। দেখবি কাল খালি স্টেজের পাশে। মেয়েদের পেছন পেছন ঘুর ঘুর করছে।
ও এখনো বিয়ে করে নি।
সকালে যে মেয়েটা এসেছিল ওটাকে পটিয়েছে। ভানুকে জিজ্ঞাসা করবি ডিটেলস পাবি। তোকেতো ও দু’চোখে দেখতে পারে না। সেদিন তুইতো বাজার থেকে চলে এলি। আমায় বলল, অনিকে দেখে অতো আদিখ্যাতার কি আছে। দিলাম শালা বাপ তুলে। শুর শুর করে কেটে পরলো। ও তোকে একদম সহ্য করতে পারে না।
Like Reply
#56
পার্টঃঃ২৩
ওর একটা জেলাস কাজ করে সব সময়। বাসু বললো।
সব সময় খিস্তি দিস না। বয়স হয়েছে তো।
দেখ অনি খিস্তির কি মহিমা কাল বুঝতে পারবি।
হাসলাম। অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কাল বাসুকে আমার সঙ্গে একটু ছারবি।
তুই ওকে নিয়ে স্যারের চশমা আনতে যাবি ?
হ্যাঁ।
ও থাকা যা না থাকাও তা। সঞ্জয় বললো।
তাড়াতাড়ি চলে আসিস। আজকে যে খেল দেখালি তুই।
হাসলাম।
হাসিস না। জানিস গত সপ্তাহে হাঁড়ি পারার একটা মেয়ে ঘাস কাটতে গেছিলো ওখানে। ওকে ভূতে ধরেছিলো। গুনিনকাকার কাল ঘাম ছুটে গেছে ভূত তাড়াতে।
দূর। যত সব আজগুবি। কই আমাকেতো ভূতে ধরলো না।
জানিনা। তোর সঙ্গে তর্ক করে পারব না।
নারে অনি আমিও শুনেছি ব্যাপারটা। বিশ্বাস হয়না তবু বিশ্বাস করি। বাসু বললো।
আমি মিটসেফের কাছে উঠে গেলাম। মানিপার্টস থেকে কুড়ি হাজার টাকা বার করলাম। সঞ্জয় আর বাসুকে ভাগ করে দিয়ে বললাম, ব্যালেন্সটা আমায় বলিস কাল দিয়ে দেবো।
ওরা না গুনেই টাকাটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।
আমি বললাম, গুনেনে।
সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, তুই কি কম দিবি।
না। তবু টাকা পয়সার ব্যাপার গুনেনে।
না থাক, বাড়িতে গিয়ে গুনব।
ওরা চলে গেলো।

আমার শ্মশানে যাওয়াটা যে খুব অন্যায় হয়েছে। রাতে খেতে বসে তা বুঝলাম। কাকীমা স্নেহের বকাবকি করলো। সুরমাসি মুখে কিছু না বললেও, ভূতের গুনাগুণ বিচার করলো। নীপা বার কয়েক সুরমাসির দিকে বিরক্তি পূর্ণ ভাবে চাইলো। কাকাও অনেক কথা বললো। বোঝালো। আমি বোবার শত্রু নেই এই ভাবে গোগ্রাসে গিলে চলে এলাম। বসা মানে কথা বাড়বে। সোজা নিজের ঘরে এসে খাটের পাশে গোছানো আমার কাপর গেঞ্জি পরে টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম।
আমি ঘুমোই নি। ঘুমোনোর ভান করে পরেছিলাম। নীপা ঘরে এলো। তার কাজ সারছে। আর খালি ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। আমি কোন কথা বললাম না। তারপর নীপা দরজাটা ভেজিয়ে বাইরে চলেগেলো। আমি বুঝলাম আজ বহুত গজব হয়ে গেছে। এ ভুলের সংশোধন আমাকেই করতে হবে। শ্মশান নিয়ে এতো কুসংস্কার এই গ্রামের মানুষের মধ্যে আছে তা কল্পনার অতীত। বেশ মনে পরে একবার কাকার কাছে বেধড়ক মারও খেয়েছিলাম। কি করবো ?
বিছানা ছেড়ে উঠলাম। দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম নীপা ওর বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে ফুলে ফুলে কাঁদছে। আমার ভীষণ হাসিও পাচ্ছে। আবার করুণাও হচ্ছে। একটা ছোট্ট ব্যাপার নিয়ে এতোবড় একটা ঘটনা ঘটতে পারে আমার জানা ছিল না। অনাদি যদি ফোনটা না করতো তাহলে কিছুই হতোনা।
আমি দরজাটা আস্তে করে খুলে নীপার পাশে গিয়ে বসলাম। ওর পিঠে হাত রাখলাম। ফোঁপানিটা আরো বেরেগেলো। আমি জোরকরে ওকে বুকে টেনে নিলাম। ও আমার বুকে মুখ ঢাকলো। আমি ওকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরে উঠে বসলাম, তারপর পাঁজা কোলা করে তুলে ঘরে খাটের ওপর শোয়ালাম।
কি ভারিরে বাবা। এইটুকু একটা মেয়ে এতো ভারি হতে পারে আমার জানা ছিল না। যাক ফাঁকতালে কোলে চরা হয়ে গেলো।
আমি কথাটা এমন ভাবে বললাম, নীপা ফিক করে হেসে ফেললো। তরাক করে উঠে বসে আমার বুকে দু’চারটে ঘুসি মারলো।
আমি ওর হাত দুটো ধরে হাসতে হাসতে বললাম, বুকটা ভেঙেগেলে নীপার জন্য যে জায়গাটুকু আছে সেটুকুও চলে যাবে।
যাও আমার দরকার নেই।
জিভ দিয়ে চু চু চু করে বললাম ও কথা বলতে নেই। দেখো অতো সুন্দর মুখটা কেমন ভাতের হাঁড়ির পেছনের মতো লাগছে।
নীপা আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। দাঁত বসালো। আমি উঃ করে উঠলাম। নীপা আমার গেঞ্জিটা তুলে দাঁত বসানো জায়গাটায় হাত বোলাচ্ছে।
জুতে মেরে গরু দান।
নীপা আমার দিকে তাকালো। তুমি ভীষণ স্বার্থপর। নিজেরটা ছাড়া কারুর কথা ভাবো না।
আরি বাবা আমি ভগবান নই। আমিও অন্যায় করতে পারি.....।
তুমি কেনো ওখানে গেছিলে।
ভালোলাগে বলে।
তোমার ভালো লাগার আর কোন জায়গা নেই।
না।
দিনের বেলা মানুষ যেতে ওখানে ভয় পায় আর তুমি রাতে.....।
আচ্ছা বাবা আর হবে না। এবার গেলে তোমরা জানতেও পারবে না।
আমার গা ছুঁয়ে কথা দাও তুমি আর যাবে না। গেলে আমি মিত্রাদিকে বলে দেবো।
শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল।
কি বললে।
না কিছুনা।
নীপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তোমার গা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করার পর যদি যাই তাহলে কি হবে।
আমি মরে যাবো।
আর আমি ঢোল বাজিয়ে লোককে বলে বেরাবো নীপা মরিয়া গিয়া প্রমান করিলো সে মরে নাই।
উঃ তোমাকে নিয়ে পারা যাবে না।
মেঘ কাটলো। নীপাকে বললাম জলের জগটা নিয়ে এসো আকন্ঠ জল খাই।
আমি ওর দিকে তাকালাম। নীপা কোমর দুলিয়ে চলেগেলো মিটসেফের কাছে, জলের জগটা নিয়ে এলো, জল খেলাম, নীপা জলের জগটা নিচে নামিয়ে রেখে আমার পাশে বসলো।
জানো নীপা খুব ছোটবেলার একটা কথা মনে পরে যাচ্ছে।
কি।
তোমার মেঘনাদ পন্ডিতকে মনে পরে।
হ্যাঁ।
আমরা শেষের একবছর পন্ডিতমশাই-এর কাছে পরেছিলাম।
আমাদের খুব মারতো। একদিন সন্ধ্যে বেলা কাকার সঙ্গে দেখা করতে এলো, আমি তখন ঐ বাড়ির বারান্দায় বসে পরছিলাম, খুব জোড় পেচ্ছাপ পেয়েছে, কিন্তু নিচে নামা যাবে না, কাকাতো আছেই তারওপর পন্ডিত মশাই, কি করা যায়, পা টিপি টিপে, বারান্দার কোনায় গেলাম, দেখলাম মেঘনাদ পন্ডিত ঠিক চালের তলায় দাঁড়িয়ে, দিলাম মুতে, চাল থেকে জল গড়িয়ে মেঘনাদ পন্ডিতের গায়ে, মেঘনাদ পন্ডিত হঁ হঁ কের উঠলো দেখলে আমার সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিলে, কাকা অবাক হয়ে বললেন, কে। কে আবার এত গুলো বেড়াল পোষো কেনো বলতো, ওদের খাওয়ার খরচতো আছে।
নীপা হেসে কুটি কুটি খাচ্ছে, একবার আমার গায়ে ঢলে পরে একবার বিছানায় শুয়ে পরে।
তুমি এতো দুষ্টু ছিলে।
দুষ্টু বললে ভুল হবে, সেই মুহূর্তে আমার কিছু করার ছিল না।
অনিদা তুমি তখন খুব রাগ করেছিলে তাই না।
একদম নয়।
আমি তোমার সমস্ত কথা বাইরে দাঁড়িয়ে শুনেছি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তো......।
আমি নীপার দিকে তাকালাম, যাও এবার শুয়ে পরো।
না আর একটু গল্প করি।
কাল তোমার প্রোগ্রাম আছে, রাত জেগে বেশি গল্প করলে, কালকে চোখের তলায় কালো দাগ পরে যাবে।
ঠিক আছে। গুড নাইট।
গুড নাইট।

পরদিন সকালে নীপা এসে যখন ডাকলো, তখন সাড়ে নটা বেজে গেছে, আমি হুড় মুড় করে উঠে বসলাম, নীপা মিত্রার দেওয়া সেই লং-স্কার্ট আর গেঞ্জিটা পরেছে, গোল গলার গেঞ্জিটা নীপাকে দারুন
কি দেখছো।
তোমাকে । দারুন মানিয়েছে।
মিত্রাদির চয়েস আছে, কি মোলায়েম।
আমি খাটে বসে আছি, নীপার স্নান হয়ে গেছে, মাথায় শেম্পু করেছে, চুলটা কালো মেঘের মতো ফুলে আছে।
মিত্রাদি ফোন করেছিলো।
তোমায়।
হ্যাঁ।
কি বললো।
তোমার কথা জিজ্ঞাসা করলো, আর বললো ওকে গুঁতিয়ে তোল, না হলে ওর ঘুম ভাঙবে না।
হাসলাম।
হাসলে যে।
শেষের কথাটা বারিয়ে বললে।
ঠিক আছে, তুমি ফোন করে জেনে নাও।
ঠিক আছে।
ওঠো বিছানাটা গুছিয়ে দিই, তুমি দাঁত মেজে নাও।
ঘুটের ছাই আছে।
কেনো।
অনেক দিন ঘুটের ছাইএ দাঁত মাজিনি।
তুমি সত্যিই গাঁইয়া।
আমি শাঁইয়া কে বলেছে।
কি বললে।
শাঁইয়া। গ্রামের লোকেরা যদি গাঁইয়া হয়, শহরের লোকেরা শাঁইয়া।
সত্যি তোমার মাথা বটে।
হাসলাম।
তুমি কেবলার মতো হেসোনাত।
আমি কেবলা।
তা নয়তো কি।
তোমার সারপ্রাইজের কথা বললে নাতো।
কিকরে জানলে।
কাল রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তোমাদের সমস্ত কথা শুনেছি।
আমি মাথা নীচু করলাম।
দিবাকরদা তোমায় একেবারে সহ্য করতে পারে না।
এটা ওর স্বভাব। সেই ছোট থেকে।
কেনো।
ও কলেজে ফাস্ট হতো আর আমি সেকেন্ড, কিন্তু ফাইন্যালে গিয়ে ওকে বিট করলাম।
মসাই বলেছে, তুমি স্টার পেয়েছিলে। সাতটা বিষয় লেটার। আচ্ছা অনিদা তুমি বাংলায় লেটার পেলে কিকরে।
কিকরে জানবো, হয়তো ভালো লিখেছিলাম।
তোমার পর এই গ্রামে কেউ এখনো পর্যন্ত বাংলায় লেটার পায় নি। উনামাস্টার পদে পদে সবাইকে শোনায়।
স্যার আমাকে খুব ভালবাসতেন।
তোমার মাথাটা আমার ফাঁক করে দেখতে ইচ্ছে করে।
ঠিক আছে একদিন দেখাবো।
আমি বিছানা থেকে উঠে, নীপার কোমরে একটা খোঁচা মারলাম।
আ।
কিহলো।
আমার হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বললো যাও মুখ ধুয়ে এসো।
আমি বেরিয়ে এলাম।
পুকুর ধারে একটা কচি বাঁশের ডগা নিয়ে দাঁতন বানালাম। বেশ কিছুক্ষণ ভাল করে রগড়ে পুকুরে মুখ ধুয়ে চলে এলাম।
নীপা চা বিস্কুট নিয়ে হাজির।
চা খেতে খেতে নীপাকে বললাম তুমি কখন বেরোবে।
একটা নাগাদ।
তাহলে তোমার সঙ্গে আমার সেই বিকেলে দেখা হবে।
আজকে না গিয়ে যদি কালকে যাও।
কেনো।
তাহলে তুমি আমার সঙ্গে যেতে।
তাহলে কি হতো।
আমার বুকটা ফুলে যেতো।
তোমার বুকটাতো এমনি ফোলা ফোলা দেখছি। আর ফুলিয়ো না খারাপ দেখাবে।
নীপা ছুটে এসে আমার মাথাটা ধরে বললে, একেবারে মাথাটা ভেঙে দেবো। খালি মাথায় কু-বুদ্ধি। দাঁড়াও মিত্রাদিকে ফোন করছি।
সকাল বেলা চিকনাদা এসে একবার তোমার খোঁজ করে গেছে। আমাকে বললো এককাপ চা দে, চা খেয়ে চলে গেলো। তুমি আজ না গেলে নয়।
আরে বাবা যেতে আস্তে যতটুকু টাইম লাগে।
ঠিক আছে, যাও।
নীপা মিটসেফের কাছে চলে গেলো, কি যেনো খোঁজা খুঁছি করছে মিটসেফের ওপরে।
আমি ডাকলাম, নীপা।
নীপা ফিরে তাকালো।
আমার মানিপার্সটা নিয়ে এসো।
নীপা আমার মানিপার্সটা হাতে করে নিয়ে এলো। আমি ওখান থেকে তিনটে একশো টাকার নোট বার করে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। রাখো।
কিহবে।
রাখোনা।
না।
আমি একদিন মেলায় গিয়ে কষ্ট পেয়েছি এটার জন্য, আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও।
নীপার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।
নাও।
নীপা টাকাটা হাতে নিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। তুমি এতো ভাব।
ভাবিনা ফিল করি।
কাঁদেনা। কান্না দুর্বলের প্রতীক। দাঁতে দাঁত চেপে লড়বে সব সময়, কাউকে এক তিলার্ধ জমি বিনাযুদ্ধে ছেড়ে দেবে না।
নীপা আমার দিকে তাকালো, আমার চোখের আগুনে ও পরিশুদ্ধ হলো।
আমি পারবো অনিদা!
নিশ্চই পারবে, আমিতো আছি।
নীচ থেকে কাকার গলা পেলাম, আমার নাম ধরে ডাকছে, আমি জানলা দিয়ে মুখ বারকরে বললাম, কি হয়েছে।
তোর কাকীমা জিজ্ঞাসা করলো কখন বেরোবি।
এইতো স্নান করেই বেরিয়ে যাব।
খাবি না।
না। এসে খাবো।
সেকি হয় নাকি।
ঠিক আছে তুমি যাও আমি যাচ্ছি।
নীপা আমার দিকে তাকালো। কাছে এসে আমায় প্রণাম করলো।
এটা কিসের জন্য।
তোমার সম্মানটা যেন আজ রাখতে পারি।
নিশ্চই পারবে। যাও।


আমি উঠে পড়ে স্নান করে রেডি হলাম, কাকীমা খাওয়ার কথা বললো, আমি বললাম, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো, তুমি চিন্তা করো না, পারলে একটু মুড়ি আর চা দাও।
সুরমাসি মুড়ি আর চা নিয়ে এলো, আমি সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করলাম, হ্যাঁগো চিংড়িমাছের টক আছে।
সুরমাসি হাসলো। কেনো।
এসে চিংড়িমাছের টক দিয়ে পান্তা খাবো।
আছে।
বাসু ঠিক সময় এলো। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম। সাড়ে এগারোটা বাজে। বাসুকে বললাম, চা খাবি।
বানাতে হবে নাকি।
তাতো বলতে পারবো না। ঠিক আছে সুরমাসিকে জিজ্ঞাসা করি দাঁড়া। সুরমাসিকে ডাকলাম।
সুরমাসি বললো, আছে। নিয়ে আসছি।
বাসু আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে বললো, অতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছিলি কেনো।
তোকে আবার কে বললো ?
চিকনা।
নীপা বলছিলো, চিকনা আমায় খোঁজ করতে এসেছিলো। কেনো বলতো।
একটা চিঠি লিখে দিতে হবে।
কিসের জন্য।
কোথায় একটা ইন্টারভিউ দিতে যাবে।
তার মানে বায়োডাটা।
হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পরেছে।
ওর কি চাকরির খুব দরকার।
মাঠে খেটে আর কত দিন চালাবে বলতো। অত গুলো পেট। কতই বা ধান হয়।
ঠিক আছে। তোর কাছে গেছিলো নাকি ?
হ্যাঁ। আমি বললাম অনাদির কাছ থেকে লিখে নে। দিল গালাগালি, তোকে আমাকে দুজনকে। তোকে একটু কম আমাকে বেশি।
হাসলাম।
বাসু বললো, চল এবার বেরোন যাক।
আমি বললাম হ্যাঁ চল।
নীপাকে দেখছি না।
বাবাঃ সেতো আজ পৃথিবীর ব্যস্ততম মানুষ।
বাসু হাসলো। আমি ভেতরের ঘরে গিয়ে কাকাকে বলে বেরিয়ে এলাম।
মোরাম রাস্তায় উঠতেই পচার সঙ্গে দেখা। মাঠে কাজ করছে। দেখা হতে, মাঠ থেকে উঠে এলো, বললো, আর ঘন্টাখানেক কাজ করে চলে যাবে। আমায় জিজ্ঞাসা করলো, নার্সিংহোমে যাচ্ছি কিনা। আমি বললাম, হ্যাঁ।
বেরিয়ে এলাম, আসার সময় বাসুকে সমস্ত ব্যাপারটা বললাম।
সর্বনাশ। তুই ম্যাডামকে কোথায় রাখবি।
আমার ঘরে।
ওরে থাকবেতো, না পালিয়ে যাবে।
আমি দশ বছর ধরে ওর সঙ্গে মিশছি। মনে হয়না ওর কোন অসুবিধে হবে। তোকে একটা কাজ করতে হবে।
কি ?
গাড়িটা রাখার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
সেতো বাজারেই রাখা যাবে আমার দোকানের সামনে।
বাজার পর্যন্ত রাস্তা হয়ে গেছে।
হ্যাঁ।
তাহলেতো কোনো চিন্তা নেই। তুই কি যেখানে থাকতিস সেখানেই আছিস।
হ্যাঁ। তবে বাজারের শেষ প্রান্তে একটা ঘর করেছি। বাড়িতে সমস্যা। তাই বউ ছেলে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।
বাবা-মা।
বাড়িতেই আছেন। প্রত্যেক দিন সকাল বিকেল যাই।
বাড়িতে বাবা-মা ছাড়া কে আছেন।
মেজভাই ছোটভাই আর ওদের বউ। মেজভাই-এর বউটা শুবিধার নয়।
কি করে।
জমি জমা সব ভাগ হয়ে গেছে। চাষ করছে খাচ্ছে।
তোর কি খালি দোকান।
হ্যাঁ। শ্বশুরের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিলাম। আর জমি বেচেছি। তাই দিয়ে দোকান। কিছুটা জমি চিকনা চাষ করে।
ব্যবসা কেমন চলছে।
চলে যায় আর কি। এখানকার পরিস্থিতিতো জানিষ। সব ধারে বিজনেস। মাসে মাসে টাকা।
আমার ব্যালেন্সটা তোর বলার কথা ছিলো।
তোর কাছ থেকে আর কিছু পাবো না।
Like Reply
#57
পার্টঃঃ২৪
সে কি করে হয়। কাকার পাওনা, আমার পাওনা। সব মিলিয়ে......।
আর দু’একশো টাকা হয়তো পাবো।
সেটাওতো টাকা, নাকি টাকা নয়।
তুই এতো হিসেব করিস না।
ঠিক আছে।
ফোনটা বেজে উঠলো।
বাসু বাইক থামালো। পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রার ফোন।
কোথায় এখন।
আমি পৌঁছেগেছি।
এতো তাড়াতাড়ি।
তুই আয় বলবো। তুই কোথায়।
আমার যেতে আরো মিনিট পনেরো লাগবে।
ঠিক আছে।
কি ম্যাডাম পৌঁছে গেছেন। বাসু বললো।
আর বলিস না, আমার অনেক জ্বালা, সংসারনেই তবু ভরাসংসার।
সত্যি তুই ছিলি, না হলে স্যারের যে কি হতো।
দুর ওই সব নিয়ে ভাবি না।
নারে অনি, ললিতাকে তোর কথা বলতেই, ও বিস্ময়ে আমার দিকে তাকায়।
তোর বউকে এর মধ্যে একদিন দেখতে যাব।
কবে যাবি।
কথা দেবোনা। হুট করে চলে যাবো।
তুই বাইক চালাতে জানিস না।
না।
সাইকেল চালাতে পারিসতো।
পারতাম। এখন পারবনা। অভ্যাস নেই।
দাঁড়া তোকে বাইকটা শিখিয়ে দেবো।
না। তার দরকার পরবে না।
কেনো।
কলকাতায় অফিসের গাড়ি চড়ি, কোথাও গেলে প্লেন কিংবা ট্রেন। বাইক চালাব কখন।
তাও ঠিক।
কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম। নার্সিংহোমের দোরগোড়ায় মিত্রার গাড়িটা রাখা আছে। বাসু বাইকটা একটা সাইড করে রাখল। আমরা দুজনে ভেতরে এলাম, সেই রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা ছিলেন, আমাদের দেখে বললেন, দাঁড়ান ম্যাডামকে খবর দিই।
আমার চশমা।
ওটা রেডি আছে। ম্যাডাম বলেছেন, আপনি এলেই খবর দিতে।
মেয়েটি ভেতরে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বললো, আপনাকে একবার ভেতরে ডাকছেন।
আমি ভেতরে গেলাম, বাসুও আমার সঙ্গে এলো। বুঝলাম এটা মালিকের বসার ঘর। আরও দুতিনজন বসে আছেন, আমি কাউকে চিন্তে পারলাম না, তবে ডঃ বাসুকে চিন্তে পারলাম। আমাকে দেখে মুচকি হেসে মিত্রা বললো, বোস।
আমরা বাইরে আছি। মনে হচ্ছে মিটিং চলছে।
তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না। মিটিং নয় একটু কথা বলছি।
ঠিক আছে তুই বল না, আমি থাকলে এনাদেরও কিছু সমস্যা থাকতে পারে।
তোর সঙ্গে আলাপ করাবার জন্য ওনাদের ডেকেছি।
বাধ্য হয়ে বসলাম।
মিত্রা একে একে সবার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিলো। বুঝলাম এরা সবাই ডাক্তার। এও জানাতে ভুললো না আমি কোম্পানীর ওয়ান অফ দেম মালিক। বাসু আমার দিকে একবার তাকাল। বিস্ময় ওর চোখে ঝোরে পরছে। সত্যিতো আমি এই কথাটা ওদের গোপন করেছি। বাসুই প্রথম জানলো। বাসুর চোখে যেমন বিস্ময়, ঠিক তেমনি যারা এখানে বসে আছেন তাদের চোখেও বিস্ময়। ওরা যেনো ভুত দেখছে। এরা নিশ্চই ভেবেছিলো, আমি মিত্রার খুব পরিচিত তাই সব ফ্রি করে দিয়েছে। ডাক্তাররা সবাই এবার আমাকে চেপে ধরলেন। আমি খালি একটা কথাই বললাম, মিত্রা আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাই এই কথা বলছে। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো, বুবুন তুই এতবড় মিথ্যে কথাটা বলতে পারলি। আমি ওকে ফোন করবো।
না এই উপকার তোকে করতে হবে না। ফেরার দিন সময় নিয়ে আসবো, জমিয়ে গল্প করা যাবে।
একটু কফি খা।
এখানে এসে এই ঘরে বসে কফি খেতে ভালো লাগবে না। তার থেকে বরং বাইরে কোথাও বাঁশের বেঞ্চিতে বসে চা খাবো।
আসর ভাঙলো। আমি সবার আগে বেরোলাম, কাউন্টারে এসে চশমাটা চাইতেই মেয়েটি দিয়ে দিলো। আমি ডঃ বাসুর চেম্বারে একবার গেলাম, উনি বসেছিলেন। আমি দরজাটা ফাঁক করে বললাম, আসতে পারি। দেখলাম ডঃ বাসু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, একি বলছেন স্যার। ভাবটা এরকম পারলে আমার চেয়ারে আপনি বসুন। আমি চশমার ব্যাপারে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনি সব বলে দিলেন, বললেন কোন অসুবিধে হবে না। দিন সাতেক রেসট্রিকসন-এ থাকতে বলুন, আর ওষুধ গুলো পনেরোদিন কনটিনিউ চলবে। পনেরো দিন পর একবার দেখাতে হবে।
ঠিক আছে।
উনি একবার দেঁতো হাসি হাসলেন। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি, মিত্রা কাউন্টারের কাছে দাঁরিয়ে। আমি বললাম চল।
দাঁড়া রবিন একটু বাইরে গেছে।
ইসমাইল আসে নি।
ওর বাচ্চাটার একটু শরীর খারাপ। রবিন এই এলাকার ছেলে, বললো সব চিনি।
কিছুক্ষণ পর রবিন এলো, ধোপদুরস্ত পোষাক, অফিসের ড্রেস কোড, মাথায় টুপি কোমরে বেল্ট আমায় দেখে হেসে ফেললো, স্যার।
ও তুমি।
হ্যাঁ স্যার।
তুই চিনিস।
চিনবোনা মানে, ওকে সারাজীবন মনে রাখবো।
কেনো।
তোর বাড়িতে প্রথম দিন ওই ঢুকতে দেয়নি।
রবীন মাথা চুলকোচ্ছে।
না স্যার মানে তখন......।
চিনতে না। এখন চিনে ফেলেছো।
হ্যাঁ স্যার।
বাসু আমার কীর্তিকলাপ দেখে হাসছে, মিত্রা হাসতে গিয়েও গম্ভীর হতে চাইছে, ওর মুখটা অদ্ভূত লাগছে।
চল তাহলে।
তুই ওকে বলে দে।
গাড়িতে উঠি আগে।
আমরা বেরিয়ে এলাম, দুচারজন ডাক্তার পেছন পেছন এসেছিলো গাড়ির কাছ পর্যন্ত, আফটার অল মালকিন বলে কথা।
মিত্রাকে বললাম, তুইতো গাড়ি চালাতে পারিস, এই টুকু রাস্তা তুই চালিয়ে নিয়ে চল।
মিত্রা আমার দিকে একবার কট কট করে তাকালো।
পেছন দিকে বসার জায়গা রেখেছিস।
মিত্রা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।
রবীন বাসুর বাইকে বসুক। আমি সামনের সিটে বসি। তুই ড্রাইভ কর।
মিত্রার চোখে দুষ্টুমির হাসি খেলে গেলো। বাসু আমার দিকে একবার চাইল।
আর একটা কথা বাসু, আনাড়ি ড্রাইভার, সামনে তুই থাকবি একটু আস্তে চালাস।
বাসু হাসলো।
মিত্রা গাড়ি স্টার্ট দিলো। বাসু সামনে সামনে যাচ্ছে। আমরা পেছনে।
মিত্রা আজ একটা ঢাকাই জামদানী পরেছে, লাইট তুঁতে কালারের। তারসঙ্গে ম্যাচিং করে তুঁতে কালারের ব্লাউজ ওকে দারুন লাগছে। অনেক দিন পর ওকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলাম, মিত্রার চোখ সামনের দিকে। সব জানলার কাঁচ বন্ধ, ভেতরটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা।
এসিটা চালাবো।
চালা।
মিত্রা সুইচ অন করলো।
টেঙ্কি ভরে এনেছিস।
কেনো।
এখানে ২৫ কিমির আগে কোন পেট্রল পাম্প পাবি না।
সেকিরে।
সেকিরে না। গ্রাম দেখার সখ এবার মিটে যাবে। আর আসতে চাইবি না।
তোকে বলেছে। রবীন আছে, ঠিক ব্যবস্থা করবে।
পেছনে এত কি নিয়ে এসেছিস।
একটা আমার জামা কাপড়ের ব্যাগ, আর একটায় ক্যামেরা, আর তোর বাজি।
এতো কি বাজি নিয়ে এসেছিস। বাজার শুদ্ধু তুলে এনেছিস নাকি।
আমি জানি না যা, ইসমাইলকে বললাম, ওর কোন পরিচিত দোকান থেকে নিয়ে এসেছে।
কত টাকার নিয়ে এসেছিস।
পয়সাই দিই নি।
তার মানে।
ইসমাইল বললো, ম্যাডাম ফিরে এসে দেবেন। ওরা এখন দোকান বন্ধ করছে।
আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। গাড়িটা যে চলছে বুঝতেই পারছিনা। কোন জার্কিং নেই, খুব স্মুথ চলছে, মিত্রার হাতটাও ভালো। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। বাইরে রোদ ঝলমল করছে। কটা বাজে ? রোদ দেখে মনে হচ্ছে দুটো কিংবা আড়াইটের মাঝা মাঝি।
কিরে বললিনাতো আমায় কেমন লাগছে ?
মিত্রার দিকে তাকালাম, ফিচলেমি করার খুব ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু ও গাড়ি চালাচ্ছে, ওর তলপেটের অনেকটা অংশ নিরাভরণ আমার চোখ ওদিকে চলে গেলো। সুপার্ব, কামরে খেতে ইচ্ছে করছে।
ধ্যাত।
মিত্রা ব্রেক কষলো। যেখানে ব্রেক কষলো গাড়ি সেখানেই থামলো। আমার কপাল সামনের বোনেটে ধাক্কা খেলো। চেখে জল এসে গেলো। মাথায় হাত দিয়ে মুখ তুললাম। মিত্রা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। আমার হাতটা চেপে ধরেছে। দেখলাম বাসু বাইক থামিয়ে নেমে আসছে। রবীন ওর পেছন পেছন। মিত্রা আমার দিকে কাঁচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে। কানে এলো।
কিহলো।
ওই ছাগলের বাচ্চাটা।
ম্যাডাম খুব সাবধানে, এখানে মানুষ চাপা দিলে কেশ খাবেন না। তবে ছাগল চাপা দিলে আপনার জরিমানা হবে। তোর আবার কিহলো।
আর বলিশ না প্রাণ হাতে নিয়ে এই সিটে বসেছি।
আমি এমন ভাবে বললাম, সবাই হেসে ফেললো, চল। পরেছি যবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে।
কি বললি।
না কিছু নয়।
খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
ওরা বাইক স্টার্ট দিলো। মিত্রা গাড়ি চালাচ্ছে।
খুব লেগেছে।
একটুও না। বোনেটটা আমার কপালে চুমু দিলো।
ঠিক আছে চল গিয়ে বরফ লাগিয়ে দেবো।
বরফ ! কোথায় পাবি।
কেনো ফ্রিজ নেই।
ফ্রিজ। এমন ভাবে বললাম মিত্রা হেসে ফললো।
সত্যি বলনা।
এখানে ফ্রিজ বলতে পানাপুকুরের পচা পাঁক।
তুই সত্যি.....।
নিজের চোখে দেখবি চল না। অনি সত্যি না মিথ্যে।
কি করবো বল ছাগল বাচ্চাটা লাফাতে লাফাতে.....।
দেখ এখনো আমি বিয়ে করি নি, বাপ হই নি.....।
বিয়ে করার অত শখ কিসের, পরের বউকে নিয়ে রয়েছো তাতেও শখ মিটছে না।
যতই হোক পরের বউতো।
মিত্রার গলাটা গম্ভীর হয়ে গেলো, নিজের বউ করেনে।
চুপ চাপ থাকলাম, মিত্রার চোখ সামনের দিকে। চোখে জল টলটল করছে। আমি ওর সিটে হাত রাখলাম। এরকম করলে এনজয়টাই নষ্ট হয়ে যাবে।
মিত্রার হাত স্টিয়ারিংয়ে একবার ডান দিক একবার বাঁদিক করছে।
তুই ওরকম বললি কেনো।
আচ্ছা বাবা আর বলবো না।
চকে এসে বাসু দাঁড়ালো, আমরাও দাঁড়ালাম। চা খাওয়া হলো, মিত্রা তাকিয়ে তাকিয়ে চারিদিক দেখছে, বিস্ময়ে ওর চোখের পাতা পরে না। বাঁশের তৈরি বেঞ্চে বসে চা খেলাম। মিত্রা এক চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকালো। সত্যি অনি তোর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। আমি ওর দিকে চেয়ে হাসলাম। রবীন একটু দূরে দূরে।
বাসু বললো, ম্যাডাম এবার রবিন চালাক, আর মিনিট পনেরোর পথ।
মিত্রা বললো, কেনো আমি পারবো না।
পারবেন। তবে রবিন চালাক।
তাই হোক। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুই কোথায় বসবি।
আমি বাসুর পেছনে বসছি।
ওর মনপসন্দ হলো না। মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। কিন্তু মুখে কিছু বললো না। রবিন স্টিয়ারিংয়ে বসলো। আমরা আধাঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম। বাসু মনে হয় ফোন করে সব ঠিক করে রেখেছিলো। গাড়ি থামতেই সবাই ঘিরে ধরলো। আমি বললাম বাসু ব্যাগগুলো পৌঁছবার ব্যবস্থা করতে হবে।
তোকে ভাবতে হবে না। বরং চল তোদের পৌঁছে দিয়ে আসি।
তোর বাইকে তিনজন। মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা ঘার নাড়ছে। যাবেনা। রবীন বললো ম্যাডাম আমাকে যদি ছুটি দেন কালকেই চলে আসবো।
মিত্রা বললো, ছুটি মানে! তুমি কোথায় যাবে ?
রবীন বললো, পাশের গ্রামেই আমার আত্মীয়ের বাড়ি। তাছাড়া এখান থেকে গাড়ি আর কোথাও নিয়ে যাওয়া যাবে না। আপনাকে পায়ে হেঁটেই....।
আমি হাসলাম, ঠিক আছে যাও। কালকে সকালে চলে আসবে কিন্তু। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
এখান থেকে মিনিট কুড়ি হাঁটতে হবে।
তাই চল।
রাসপূর্নিমার মেলা বলে আজ এই জায়গাটা ফাঁকা ফাঁকা। নাহলে এতোক্ষণ ভির হয়ে যেতো।
আমরা হাঁটতে আরম্ভ করলাম, সত্যি মিনিট কুড়ি লাগলো। বাসু তার আগেই বাড়িতে সব পৌঁছে দিয়েছে, কাকা ওকে জিজ্ঞাসা করেছে, এত ব্যাগ বাগিচা কার। বাসু কোন জবাব দেয় নি, চলে এসেছে। রাস্তায় আমার সাথে দেখা হতে খালি বললো, সারা পারা মনে হয় রাষ্ট্র হয়ে গেছে। তোর সারপ্রাইজ রসাতালে যাবে।
তুই তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে আয়।
ঠিক আছে।
দুজনে মিলে খামারে এসে দাঁড়াতেই কাকা কাকীমা সুরমাসি ছুটে এলেন। সবাই অবাক মিত্রাকে দেখে, মিত্রা সবাইকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। কাকা চেঁচামিচি আরম্ভ করে দিয়েছে।
আমি বললাম, তুমি থামো, ওরজন্য তোমায় ব্যস্ত হতে হবে না।
কাকীমা ছুটে গিয়ে সরবত নিয়ে এলেন। এক হুলুস্থূলুস ব্যাপার। মিত্রা আরাম করে বেঞ্চিতে বসেছে। পায়ে ধুলো জড়িয়ে আছে। আমি বললাম, দেরি করিস না। বেলা গড়িয়ে গেছে। হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিই। মেলায় যেতে হবে। মিত্রা চোখের ইশারায় বাথরুমের খোঁজ করছে, বাধ্য হয়ে বললাম, চল আমার ঘরে।
আমি ওর ক্যামেরার ব্যাগ আর জামাকাপরের ব্যাগ হাতে নিয়ে ওবাড়িতে গেলাম। মিত্রা আমার পেছন পেছন। আমি ওপরের ঘরে এলাম। লাইট জালালাম। মিত্রা ঘরে ঢুকেই বললো আগে বাথরুম কোথায় বল।
বাথরুম!
ন্যাকা আমার তলপেট ফেটে যাচ্ছে।
এই গ্রামের গোটাটাই বাথরুম। তুই যেখানে খুশি বসে ব্যবহার করতে পারিস।
সত্যি বুবুন বলনা।
সত্যি বলছি।
আমি কষ্ট পাচ্ছি। তুই মজা করছিস।
আচ্ছা আয় আমার সঙ্গে। নিচে নেমে এসে পেছনের খিড়কি দিয়ে পুকুর ধারে এলাম। এখানে কর।
ধ্যাত।
তোকে কালকে বলেছিলাম।
তুই মিথ্যে বলেছিলি। ওদিক দিয়ে যদি কেউ দেখে ফেলে।
ওদিকটা জনমানব শূন্য, পুকুরের ধারেই খাল, যার পাশ দিয়ে বাঁধে বাঁধে এতোক্ষণ এলি।
আচ্ছা তুই ভেতরে যা।
কেনো।
যা না।
মিত্রা আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো। খিড়কি দরজা ভেজিয়ে দিল। আমি ওপরে চলে এলাম। ব্যাগ গুলো ঠিক ঠাক ভাবে গুছিয়ে রাখলাম।
বুবুন। মিত্রা তারস্বরে চিৎকার করে ডাকলো।
কিহলো।
কোথায় তুই।
এইতো ওপরে।
তুই শিগগির নীচে আয়।
দৌড়ে নীচে এলাম। মিত্রা খিড়কি দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে কাঠ।
কি হয়েছে।
ওই দেখ। আঙুল দিয়ে নিচটা দেখাল। দেখলাম একটা গিরগিটি ওর দিকে জুল জুল করে তাকিয়ে আছে। আমি হেট করতেই গিরগিটিটা দৌড় লাগালো, মিত্রা পরি কি মরি করে আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পরলো। থর থর কাঁপছে। আমি হাসছি।
তুই হাসছিস!
কি করবো কাঁদবো।
ধ্যাত।
সিনেমায় গ্রাম দেখো, এবার অরিজিন্যাল গ্রাম দেখো।
অনি ও অনি। কাকীমার গলা।
চল কাকীমা ডাকছেন। হ্যাঁ যাই কাকীমা।
সাবানটা নিয়েনে, হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে নিই।
কি খাওয়াবি।
পান্তা আর চিংড়িমাছের টক। খাবিতো।
হ্যাঁ। কোন দিন খাই নি।
খাসনি। খাবি।
কেমন খেতে।
খলেই জানতে পারবি।
ওপরে এলাম, ও ব্যাগ খুলে ওর লিকুইড সোপ বার করলো। কাপর খুলবো না।
এখন নয় খাওয়া দাওয়ার পর।
পেন্টিটা ভিজে গেছে।
উঃ তোকে নিয়ে আর পারা যাবে না।
তুই আসতে বললি কেনো।
আমি বললাম কোথায়, তুইতো নাচলি।
খুলে ফেলি।
খোল।
তুই ওদিকে তাকা।
কেনো দেখে ফেলবো।
উঃ তাকা না।
আমি পেছন ফিরলাম, মিত্রা কাপর তুলে পেন্টি খুললো, রাখবো কোথায় ?
ওইতো আলনাটায়।
কেউ দেখেফেলে যদি।
দেখলে কিহবে।
তুইনা কিছু বুঝিস না।
বোঝার দরকার নেই। চল।
মিত্রা কাপরটা একবার ঠিক ঠাক করে নিলো। ওকে নিয়ে এবাড়িতে এলাম। কারা যেনো এসেছে, আমাদের দেখলো, কাকা চেয়ারে বসে আছেন। আমরা ভেতরবাইর (বাড়ির ভেতরের উঠান) দিয়ে পুকুর ঘাটে এলাম। সুরমাসি কাকীমা পেছন পেছন এলেন।
পুকুরে নামবি না বালতি করে জল এনে দেবো ?
পুকুরে নামব।
Like Reply
#58
পার্টঃঃ২৫
সুরমাসি বললেন, ওকে বালতিকরে জল এনে দে অনি, হরকা আছে কোথায় পরেযাবে। লাগবে এখন।
লাগুক।
তুই রাগ করছিস কেনো। মিত্রা বললো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
সুরমাসি হাসছেন।
সখ হয়েছে যখন নামুক। কিরে নামবি ?
হ্যাঁ। তুই হাতটা ধর।
ওই নিচের ধাপিটায় উবু হয়ে বসতে পারবিতো।
পারবো।
দেখ ওইটুকু জায়গা। খুব স্লিপারি।
আমি সাঁতার জানি।
আমি মিত্রার হাত ধোরলাম, মিত্রা আস্তে আস্তে নামছে।
জুতোটা খুলিস নি।
কেনো।
ওটা কি জলে ভেঁজাবি।
খুলে আসি তাহলে।
যা।
তুই আয়।
আমি কি তোর সঙ্গে ওপর-নিচ করবো।
আয় না।
চল।
আমি কাছে আসার আগেই ওপরে উঠতে গিয়ে মিত্রা পা হরকালো, কাকীমা ওপর থেকে ধর ধর ধর করে চেঁচিয়ে উঠলেন, আমি কোন প্রকারে ওকে জাপ্টে ধরে টাল খেয়ে পুকুরে পরলাম। আমার হাঁটু পর্যন্ত জলে ভিজলো। ও চোখে হাত ঢেকে আছে। ভেতর থেকে সুরমাসি ছুটে এলো।
নীপা ওপর থেকে তার স্বরে চেঁচাচ্ছে, বুদ্ধি দেখো, নিজে পুকুরে ঠিক মতো নামতে পারে না, মিত্রাদিকে সঙ্গে করে নেমেছে।
সম্বিত ফিরতে পুকুর পারে তাকিয়ে দেখলাম, অনাদি বাসু চিকনা পচা পাঁচু সঞ্জয়। নিপা ঘাটে নেমে এসেছে। ওপরে দাঁড়িয়ে ওরা সবাই হো হো করে হাসছে। নীপা প্রথমে একচোট আমায় নিলো। তারপর মিত্রাকে আমার কাছ থেক ছিনিয়ে নিয়ে বললো, সত্যি অনিদা তোমার কোন বুদ্ধি নেই। মিত্রাদিকে নিয়ে কখনো এই পিছল ঘাটে নামে। আমি চুপচাপ। মিত্রার দিকে তাকালাম, ও চোখ মেরে হাসছে। মাথা নীচু করে, মুখ-হাত-পা ধুয়ে ঘাট থেকে উঠে এলাম।
অনাদির দিকে তাকিয়ে বললাম, কখন এলি।
অনাদি হাসছে।
চিকনা বললো, তোর সারপ্রাইজটা জব্বর দিয়েছিস। বলে চোখ মারল।
ঘাটের দিকে তাকালাম। নীপা মিত্রাকে নিয়ে শেষ ধাপিতে দাঁড়িয়ে। আমি বাড়ির ভেতরে এলাম। আমার পেছন পেছন ওরাও চলে এলো।
বাইরের বারান্দায় এসে সবাই বসলাম। অনাদি বললো, তোর পেটেপেটে এতো কিছু ছিলো আগে জানাস নি কেনো।
জানালে মজাটাই নষ্ট হয়ে যেতো।
তা যা বলেছিস। তুই ম্যাডামকে পুকুরে নামাতে গেলি কেনো।
আমি নামাতে গেছি, কাকীমা বারন কোরলো, আমি বারন কোরলাম, বোললাম বালতি করে জল তুলে দিচ্ছি, না আমি নামবো, নাম। মাঝখান থেকে.......।
চিকনা চোখ মেরে হো হো করে হেসে ফেলল।
তোরা সবাই চলেএলি ওখানটা সামলাচ্ছে কে ?
লোক আছে।
তোরা খবর পেলি কি করে বলতো ?
চিকনা প্রথমে খবর পেয়েছে।
চিকনা!
হ্যাঁ।
বাসুর দোকানের ছেলেটা ফোন করেছিলো চিকনাকে।
বুঝেছি। তোরা।
চিকনা নীপাকে নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে মেলাথেকে বাইক নিয়ে বেরোল। বাসুকে ফোন করলাম কি হয়েছেরে। ও সব বললো। সবাই চলে এলাম।
ডি এইচ এ এম এন এ বাসুর দিকে তাকিয়ে বললাম। বাসু হাসছে।
অনাদি বললো, কি বললি।
আমি বানান করে বললাম তুই উচ্চারণ কর।
চিকনা ঢক করে আমার পায়ে হাত দিলো। গুরু একি শেখালে।
হাসলাম।
চিকনা আমার পা ধরেই বললো, গুরু আর একবার বলো।
কি।
ওইযে যেটা বললে।
কি বলবিতো।
ওই যে বাসুকে বললে না।
ধ্যাত।
আর একটা এখনো বলি নি। বাসু বললো।
বাসুর দিকে কট কট করে তাকালাম। বাসু হাসছে।
অনাদি বললো, কিরে বাসু।
ওটা এখন বলা যাবে না।
বলতেই হবে।
না।
চিকনা বাসুকে দুহাতে জাপ্টে ধরলো। পাঁচু পচা ওর পেন্টের বোতাম খুলতে আরম্ভ করেছে। সঞ্জয় বাসুকে কাতাকুতু দিচ্ছে। বাসু মাটিতে পরে গিয়ে ছটফট করছে। ওর প্রাণ যায় যায়। বুঝলাম বাসু আটকে রাখতে পারবে না। সে এক হুলুস্থূলুস কান্ড। বাধ্য হয়ে বাসু অনাদিকে কানে কানে বলে দিলো। অনি ওই কোম্পানীর একজন মালিক। অনাদি ছুটে এসে আমাকে কোলে তুলে নাচতে শুরু করেছে। ওদের পাগল প্রায় অবস্থা দেখে কাকা ওদিক থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন, ওরে তোরা করছিসটা কি বলতো। তোদের বয়স দিনে দিনে বারছে না কমছে।
অনাদি আমাকে মাটিতে নামিয়ে রেখে, কাকার কাছে ছুটে গেলো। কানে কানে কাকাকে বলতেই, কাকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, আবার বসে পরলেন। নীপা ভেতর থেকে ছুটে এসেছে। কি হয়েছে গো চিকনাদা ? মিত্রাও নীপার পেছন পেছন এসেছে। তার পেছনে কাকীমা সুরমাসি। চিকনা নীপার কানে কানে বললো খবরটা। নীপা ছুটে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো। কানে কানে বললো তোলা থাকলো। আমি হাসলাম, তারপর ছুটে গিয়ে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেতে আরম্ভ করলো। কাকা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ওরে ও হচ্ছে নীলকন্ঠ।
আমি কাকার কাছে গিয়ে প্রণাম করলাম, তোমার অপারেশনের দিন হয়েছে।
আমি জানিরে জানি। নাহলে তুই ওই সময় আমাকে ছেরে যেতিস না।
মিত্রা এবার ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে, ওর চোখে খুশির হাওয়া। ও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো, কাকাকে প্রণাম করলো। কাকা আমাদের দুজনকে বুকে জরিয়ে ধরলেন।
কাকীমা সুরমাসি ব্যাপারটা ধরতে পারেন নি। তবে কিছু একটা ঘটেছে, সেটা জানতে পারলেন।
অনাদি মিত্রার কাছে গিয়ে বললো, এর জন্য আমরা কালকে একটা পার্টি দেবো।
মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে।
পান্তা খাওয়া নিয়ে নীপার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বাক বিতন্ডার পর মিত্রা হাসতে হাসতে বললো, নীপা আমি বুবুনকে বলেছিলাম, খাবো। নীপা মিত্রার কথা শুনে ব্যাপরটায় ইতি টানলো, তবু বলতে ছারলনা, তুমি আমাদের বাড়িতে প্রথম এলে, তোমায় গরমভাত না খাইয়ে পান্তা খাওয়াবো। মিত্রা হাসলো, আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি। এখনতো থাকবো কয়েক দিন।
তাই।
হ্যাঁ। এসেছি ওর ইচ্ছেয়, যাবো আমার ইচ্ছেয়।
পান্তা খেতে বসলাম। মিত্রা বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেলো, তারপর সুরমাসির দিকে তাকিয়ে বললো, আর নেই। সুরমাসি লজ্জা পেয়ে গেলো। অভ্যাস নেই মা, বেশি খেলে শরীর খারপ করবে। মিত্রা হেসে ফেললো।

খাওয়া শেষে আমি উঠে বাইরের বারান্দায় চলে এলাম, অনাদিরা বসে চা খাচ্ছে, কোন ফাঁকে নীপা এদের চা করে দিয়ে গেছে, বারান্দার ঘরিতে দেখলাম চারটে দশ। আনাদির পাশে বসে বললাম, মিত্রা এক পেটি বাজি নিয়ে এসেছে।
তুই সব ষঢ়যন্ত্র করেই ব্যাপারটা ঘটিয়েছিস।
বিশ্বাস কর, কাল শ্মশানে বসে মিত্রার সঙ্গে কথা হলো। ও আসতে চাইলো। বললাম আমিতো চশমা আনতে যাবই, তুই চলে আয়। বাজির ব্যাপারটা আমি আনতে বলেছি।
কেনো ?
ছোট বেলায় এই মেলাতেই বাজি ফাটানোর জন্য কত কথা শুনেছি, তাই মিত্রাকে আনতে বলেছিলাম। এখানকার জন্য কিছু রেখেদে, বাকিটা মেলায় নিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে ফাটা।
সকলে চুপ করে গেলো।
অনাদি চুপ করে আছে। না জেনে তোকে হার্ট করে ফেলেছি।
দূর পাগল। আমি এত সহজে হার্ট হই না। হলে বাঁচতে পারতাম না।
ঠিক আছে ঠিক আছে, তুই যা বলবি তাই হবে। চিকনা।
চিকনা কাছে এলো। অনাদি ওকে সব বুঝিয়ে দিলো।
হ্যাঁরে যেতে হবেতো।
মিত্রা নীপা গেলো কোথায়।
ওবাড়িতে। পচা বললো।
কোনদিক দিয়ে গেলো।
পেছন দিক দিয়ে।
নীপা নাচছে না কি করছে যেন।
চিকনা বললো হ্যাঁ।
কটায় আরম্ভ।
বাঙালীর কথা ছটা বলেছে, সাতটায় শুরু হবে।
শেষ হবে কখন।
রাত একটা ধরে রাখ।
শোব কখন।
শুতেই হবে তোকে।
আমি চিকনার কথা শুনে হেসে ফেললাম। নীপা বারান্দা থেকে আমার নাম ধরে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। আমি পচার দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখতো কেনো চেঁচাচ্ছে। পচা গুম হয়ে ফিরে এলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, কি হলো।
তোর জন্য ঝার খেলুম।
আচ্ছা তোরা কিছু বলতে পারিস না।
আমরা।
কেনো।
চিকনা হাসছে।
হাসছিস কেনো।
এখানে যে কটাকে দেখছিস, সেগুলো ছাড়া, সবাই কম বেশি ওর কাছে ঝাড় খায়, দিবাকরকে একদিন ত্থাপরই কষিয়েছিলো।
কেনো।
সে অনেক ব্যাপর।
অনাদি গ্রামসভা ডেকে মিটমাট করে। নাহলে তো দিবাকরকে ও গ্রামছাড়া করে দিতো।
আনাদি চিকনার দিকে তাকিয়ে বললো, এখনি এই সব কথা আলোচনা করতে হবে। থাক না।
আচ্ছা দাঁড়া আমি ঘুরে আসছি।

আমি ওপরে গেলাম। নীপা মিত্রা দুজনে শাড়ি পরেছে। দুজনকে এত সুন্দর লাগছে চোখ ফেরাতে পারছি না। আমাকে দেখেই নীপা বললো, এই পেন্ট-জামাটা পরে ফেলো। আমি একটু আসছি। নীপা বেরিয়ে গেলো। আমি আজ কোন কথা বললাম না। মিত্রার দিকে তাকালাম, দারুন মাঞ্জা দিয়েছিস আজ রাতে তোকে চটকাবো।
এখন চটকাস না, প্লিজ সাজগোজ নষ্ট হয়ে যাবে।
দে কোনটা পরতে হবে।
খাটের ওপর আছে।
হঠাত হৈ হৈ শব্দ।
কি হলো বলতো।
ও তুই বুঝবি না।
আমি কোন কথা না বলে পেন্টটা খুললাম, মিত্রা এগিয়ে এলো।
একদম না। নীপা এখুনি চলে আসবে।
আসুক আমার জিনিসে আমি হাত দেবো।
খাটে বসে জিনসের পেন্টটা পরলাম, সেদিন মিত্রা গড়িয়াহাট থেকে যেটা কিনেছিলো, গেঞ্জিটাও লাগালাম। খারাপ লাগছে না, আসতে পারি। নীপার গলা।
আসুন।
ঢুকেই ফস করে আমার গায়ে কি ছিটিয়ে দিলো।
ইস এটাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিস। কে দেখবে বলতো।
দেখার অনেক লোক আছে। চলোনা মেলায়। নীপা বললো।
তাড়াতাড়ি করো। ওরা বেচারা আমাদের জন্য বসে আছে। মেলায় ওদের অনেক কাজ।
তুইযা পাঁচ মিনিটের মধ্যে যাচ্ছি।
মিত্রা ভুরুতে শেষ টান দিচ্ছে।
আমি নিচে চলে এলাম। চারিদিকে সেন্টের গন্ধ ম ম করছে। ওই জন্য তোরা তখন চেঁচাচ্ছিলি।
তুই জানিস অনি, মেয়েটা আজ আমাদের মারবে। একটু ভালো করে কান পাত, শুনতে পাবি, নাম ধরে ধরে কেমন ডাকছে।
কে আছে ওখানে।
তুই চিনতে পারবি না, শান্তনু বলে একটা ছেলে আছে। পলাকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছি।
রথ কখন বেরোবে।
এই সাতটা নাগাদ।
অনেক দিন রথের দড়িতে হাত দিই নি, চিকনা ঠাকুরকে একটু মিষ্টি কিনে দিস।
কেনো তুই যাবি না।
আমি হেসে ফেললাম।
মিত্রা নীপা নীচে নেমে এলো। ওদের চোখের পাতা আর নড়ছে না। সবাই অবাক হয়ে ওদের দেখছে। চিকনা আমার হাত ধরে দাঁতে দাঁত চিপে বললো, অনি আমি ম্যাডামের বডি গার্ড হবো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, আমি কোথায় থাকবো।
নীপা দেখে ফেলেছে।
চিকনাদা কি বলছেগো অনিদা।
তোমরা দারুন মাঞ্জা দিয়েছো তাই।
নীপা একবার কট কট করে চিকনার দিকে তাকালো। চিকনা ইশারা করে দেখালো, মেলায় গিয়ে গলাটা কাট। নীপা হেসে ফললো।
মিত্রা আমার পাসে এসে দাঁড়াল, বল ঠিক আছেতো।
আমি হাসলাম।
চল। আমরা রেডি। আমার ব্যাগ দুটো নিয়ে যেতে হবে।
কিসের ব্যাগ!
ক্যামেরা আর, সাজগোজের।
কেনো ?
আমি সিডি বানাবো।
ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে ?
কেনো কারেন্ট নেই!
মেলায় হ্যাচাক পাবি। কারেন্ট পাবি না।
ও অনি থাক না। অনাদি বললো।
দেখেছো অনাদি ও আমাকে কেমন করে।
ঠিক আছে চলুন ম্যাডাম আপনার কোন অসুবিধে হবে না, সব ব্যবস্থা করে দেবো।
চিকনা, মিত্রা আর নীপাকে নিয়ে তুই যা।
আমি! চিকনা বললো।
হ্যাঁ।
না।
তুই যা। আমি বরং ব্যাগ বই।
ওরা আবার গেলো কোথায়।
ভেতরে গেলো।
সত্যি অনি তোর ধৈর্য আছে। বাসু বললো।
আরও নিদর্শন পাবি, চল একবার মেলায়, দেখতে পাবি।
অনিদা কি বলছে গো আনাদিদা। নীপা বললো।
কিচ্ছু না।
আমি মিত্রাকে বললাম, তুই অনাদির বাইকের পেছনে নীপাকে সঙ্গে করে চলে যা।
মিত্রা কিছুতেই বাইকে উঠবে না।
অগত্যা অনাদিকে বললাম, তোরা এগিয়ে যা।
হ্যাঁরে ট্রলি পাঠাবো।
যাবে।
আমার বাড়ির সামনে থেকে যাবে।
না থাক। তোরা যা। আমি হেঁটে যাচ্ছি।
অগত্যা ওরা বেরিয়ে গেলো।
আমি বাসু আর মিত্রা হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
বাসুর বাইক পাঁচু চালিয়ে নিয়ে গেছে।
সন্ধ্যে হয় নি। তবে বেশি দেরি নেই। ঘরির দিকে তাকালাম। পাঁচটা পাঁচ। প্রায় আধ ঘন্টার পথ। তারমানে মেলায় পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে। মিত্রাকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছি। এইটা বড়মতলা, ওইযে সেই পেয়ারা গাছ। ওটা তাঁতীপারা ওটা চন্দ্রেপারা ওই দিকটা হাঁড়িপারা। ওই যে দূরে বোনটা দেখছিস, ওইটা দীঘাআড়ি। মিত্রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো।
কাল আমায় নিয়ে আসবি।
আসবো।
তোর মুখ থেকে গল্প শুনেছি এতদিন, এবার চাক্ষুষ দেখবো। হ্যাঁরে কতোক্ষণ লাগবে যেতে।
বাসুর দিকে তাকালাম, হ্যাঁরে বাসু, এভাবে হাঁটলে কতোক্ষণ লাগবে।
আধঘন্টা।
আমি বললে বিশ্বাস করতিস না।
তুই সব সময় হেঁয়ালি করিস তাই বিশ্বাস করতাম না।
বাসু হাসলো।
হ্যাঁগো বাসু জানোনা তোমার বন্ধুটিকে। আমি দশ বছর ওর সঙ্গে মিশছি আমি জানি।
দীঘা আড়ির কাছে আসতে একটা হৈ হল্লা শুনতে পেলাম, মিত্রাকে বললাম, ওই দূরে আলোর রোশনাই দেখতে পাচ্ছিস।
হ্যাঁ।
ওইটা মেলা।
এতোটা যেতে হবে এখনো।
হ্যাঁ।
মেলায় গিয়ে একটা ঠান্ডা খাওয়াস।
ঠান্ডা!
বল সেটাও পাওয়া যাবে না। কঁত কঁত করে খালি জল গিলতে হবে।
ঠিক আছে আপনি চলুন ব্যবস্থা করে দেবো। বাসু বললো।
দেখ তোর মতো ঢেপস নয়।
বাসু হাসলো।
আমি ওর হাতটা একটু চিপে দিলাম।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো।
মেলার কাছাকাছি এসে সন্ধ্যে হয়ে গেলো। আমি টর্চ জাললাম, মিত্রা আমার হাত শক্ত করে ধরলো।
উঃ।
কি হলো।
পায়ে কি জড়িয়ে গেছে।
মিত্রা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে আমাকে জরিয়ে ধরে। আমি ওর পায়ে টর্চের আলো ফেললাম, দেখি একটা খরের টুকরো। নীচু হয়ে জুতোর ফাঁক দিয়ে খড়ের টুকরো বার করলাম। বাসু হাসছে।
তোকে নিয়ে আমর বড় জ্বালা।
কি করবো। আমি ইচ্ছে করে জড়িয়েছি। খর না হয়ে যদি সাপ হতো।
আমি ওর দিকে কট কট করে তাকালাম।
ঠিক আছে চল। মিত্রা আমার বাম হাতটা চেপে ধরে আছে। ওর সুডৌল বুকের স্পর্শ পাচ্ছি। আস্তে করে বললাম, সামনে বাসু আছে।
থাক।
কি ভাবছে।
ভাবুক। এরকম অন্ধকার রাস্তায় এলি কেনো।
Like Reply
#59
good going... samne aro chai
Like Reply
#60
Abar kotodin bade update deben Dada?
Like Reply




Users browsing this thread: