Posts: 47
Threads: 5
Likes Received: 307 in 31 posts
Likes Given: 65
Joined: Nov 2024
Reputation:
78
11-12-2025, 04:51 PM
(This post was last modified: 12-12-2025, 03:44 AM by শূন্যপুরাণ. Edited 4 times in total. Edited 4 times in total.)
(১)
'মম, হোয়াই আর ইউ এক্টিং লাইক দিস?' বেশ জোরে চিৎকার করে বললো রাহাত। 'কেন? ভুল কি বললাম?' সুলতানা মরিয়ম শান্ত গলাতে উত্তর দিলো। ঠিক যেন রাহাতের উলটো। রাহাত কোন জবাব না দিয়ে শিশুর মত পা দাপিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফার উপরে ধপাস করে বসে পড়লো। ওখান থেকে সুলতানাকে দেখতে পাচ্ছে সে। সুলতানা ব্যালকনিতে একটা ইয়োগা ম্যাটের উপরে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণ এক্সারসাইজ করার পরে মুখে হার্বাল ফেস প্যাক লাগিয়ে এভাবেই শুয়ে থাকেন সুলতানা। তারপরে ৮টা বাজলে নাস্তা করেন। রাহাত অভিমানি চোখে ওর মায়ের দিকে তাকালো কয়েকবার। কিন্তু সুলতানা নির্বিকার ভঙ্গিতে আকাশের দিকে মুখ করে শুয়ে রইলো। ছেলের চোটপাট নিয়ে তাকে তেমন চিন্তিত দেখা গেল না।
রাহাতের ফোনে মেসেঞ্জারের রিংটোন বেজে উঠলো। ওর ক্লোজ বন্ধু অন্তর মেসেজ পাঠিয়েছে মেসেঞ্জার গ্রুপে।
'কিরে মাঙ্গির পুত, যাবি না? আমার বিকাশে টাকা সেন্ড কর এখুনি। আজকেই রাঙ্গামাটির টিকেট বুক করতে হবে।'
'আরে একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।' রাহাত উত্তর দিলো।
'কী হইছে ?'
'মাই মম ওয়ান্টস টু জয়েন আস।'
অন্তর কয়েক মুহূর্ত দেরি করলো রিপ্লাই দিতে। হয়তো খবরটা ওরও হজম হচ্ছে না।
'শিট ম্যান। সিরিয়াসলি? সত্যিই আন্টি যাইবো?'
'আরে হ ব্যাটা। আজকে মম বলতেছে সে নাকি আমার জন্মের আগে একবার সাজেকে গেছে। আর যায় নাই। এইবার আমাদের সঙ্গে যাইতে চায়।'
'তোর বাপও যাইবো নাকি রে?' অন্তর জিজ্ঞেস করে।
'আরে ধুর হালা। আমার বাপ তো মিশনে গেছে। ব্যাক করতে আরো ২ বছর লাগবো।'
'ওহ। মাই ব্যাড। বাট কেমনে কি ম্যান? আন্টি থাকলে তো ঝামেলা হয়ে যাইব।'
রাহাত ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করে। ঝামেলা বলতে অন্তর কি বুঝাতে চেয়েছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি ওর। সম্প্রতি ওরা তিন বন্ধু সাজেক ভ্যালিতে ট্যুর দেওয়ার প্লান করেছে। রাহাত, অন্তর ও সালমান। মূল প্লান আসলে অন্তরের। ওরই আগ্রহ বেশি। এর পেছনে কারণও আছে। অন্তর যাবে ওর গার্লফ্রেন্ড তন্বিকে নিয়ে। ২ মাস হয়েছে ওদের রিলেশনশিপের। এখনো রুমডেট করে নাই। তাছাড়া তন্বির আবার একটু নাক উঁচু স্বভাব। একে তো সুন্দরি, তার উপর ঢাকা ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের এক প্রফেসরের মেয়ে। ওর বাপের নাম বললে অনেকেই চিনে ফেলতে পারে। যেন তেন হোটেলের রুমে শুয়ে পড়ার মত মেয়ে নয় সে। অন্তর বহু কষ্টে ওর সাথে রিলেশনশিপে যেতে পারছে। এখন প্লান হলো সাজেক ভ্যালিতে নিয়ে গিয়ে যদি কিছু করা যায়।
ওদিকে কেবল তন্বিকে নিয়ে গেলে খরচ পোষাবে না অন্তরের। যাতায়াত ভাড়া ছাড়াও সাজেকে ভালো হোটেল পাওয়ার জন্য ভালোই খরচ করতে হয়। তাছাড়া আগে থেকে বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করে যেতে হয়। এখন তন্বির হোটেল যদি পছন্দ না হয়, দেখা গেল অন্তরকে কাছেই ভিড়তে দেবে না। বেচারার সব ইনভেস্টমেন্ট তখন জলে ভেসে যাবে। ঠিক এই কারণেই অন্তর রাহাতকে সাজেক ট্যুরে যুক্ত করে।
রাহাতের বাবা বাংলাদেশ আর্মির লেফটেন্যান্ট কর্ণেল। খুব দ্রুতই হয়তো পদন্নোতি পাবেন। বর্তমানে আফ্রিকায় মিশনে আছেন। সাজেক নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ আর্মি। রাহাত ওর বাবার বন্ধুদের কানেকশন লাগিয়ে অল্প খরচে ভালো হোটেলের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। অন্তর মূলত এ কারণেই রাহাতকে সঙ্গে নিতে আগ্রহী।
বন্ধুমহলে রাহাত একটা ভ্যাঁদা প্রকৃতির মানুষ হিসেবে পরিচিত। ওর মিনমিনে স্বভাবের জন্য মেয়েরাও তেমন পাত্তা দেয় না। সুতরাং ওকে সঙ্গে নিলেও অন্তরের তেমন দুশ্চিন্তার কিছু নাই। তন্বি আর ওর রোমান্সের মাঝে রাহাত কোন কাবাব মে হাড্ডি হবে না। কাবাব মে হাড্ডি যে ব্যক্তি হতে পারে সে হলো ওদের আরেক বন্ধু সালমান।
সালমান ওদের ক্লাসের সবচেয়ে চালু মালগুলোর একটা। বেশ লম্বাচওড়া, পেটানো ফিগার। চেহারায় একটা প্লে বয় ভাইব আছে। কাজে কর্মেও প্লে বয় বটে। অনেক মেয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক রেখে চলে। কিন্তু কারো সঙ্গেই স্থায়ী সম্পর্কে যায় না। এমন চরিত্রের কাউকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য অন্তরের রাজি হওয়ার কোন কারণই নেই। কিন্তু রাহাতের চাপাচাপিতে কিভাবে কিভাবে যেন রাজি হতে হলো ওকে। রাহাত ভেবেছিলো অন্তর যখন ওর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তখন সালমানকে নিয়ে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটাতে পারবে।
ওদের সাজেক ট্যুর বলে আলাদা মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়েছিল। সেখানেই রাহাত এবং অন্তর মেসেজ আদান প্রদান করছিলো এতক্ষণ। সালমান রিপ্লাই দিলো কিছুক্ষণ পর।
'হেই ফাকারস। হোয়েন আর উই গোয়িং?'
'আরেক মাঙ্গির পুত হাজির। মেসেজ পড়ে দেখ ভালো করে।'----- অন্তর।
'আরে শিট! আন্টি যাইবো নাকি? আমি তো আরো মোজ মাস্তির ব্যবস্থা করে রাখছিলাম। ব্যাচেলর পার্টি দিমু ভাবছিলাম। লাল পানির বোতল কিনছি দুইটা। কন্ডম কিনছি এক বক্স। আন্টি গেলে তো সব বরবাদ। তুই যাইতে কইছস রাহাইত্তা?'
'আরে আমি কেন বলবো যাইতে। সে নিজেই যাইতে চাচ্ছে। আমি আরো চিল্লাচিল্লি কইরা না করলাম।' ----- রাহাত।
'তুই কন্ডম কিনছস ক্যান শালার পুত?@salman' ---- অন্তর।
'কন্ডম কিজন্য কেনে শালা? তুমি তো গার্লফ্রেন্ড চুদবা কন্ডম ছাড়া। আমরা কি ধোন হাতে নিয়ে বসে থাকবো? পাহাড়ে যাইয়া যদি পাহাড়ি মালই না চুদলাম তাইলে কিছু হইলো?' ---- সালমান
'তুই আমার তন্বিকে নিয়ে সাবধানে কথা বল। ও খুব ভালো মেয়ে।' ---- অন্তর।
'ঢং মারাইয়ো না সোনা। তোমার উদ্দেশ্য তন্বিও বুঝে। আর আমি কী তোর টাকায় যাচ্ছি? আমার যা ইচ্ছা তাই বলবো।' --- সালমান
'গাইজ, স্টপ ইট। অন্তর তোরে আমি আপডেট জানাচ্ছি। মমকে আমি বুঝিয়ে রেখে যাব। তোকে বিকাশে টাকা সেন্ড করতেছি কিছুক্ষণ পর।' মেসেজ লিখে রাহাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ওর মায়ের জেদ সম্পর্কে ওর ভালো ধারণা আছে। সুলতানা একবার যখন যাওয়ার কথা বলেছে, তখন তাকে ফেরানো খুব মুশকিল।
প্রায় দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করে সুলতানাকে ফেরাতে পারলো না সে। হতাশ হয়ে মেসেঞ্জারে ঢুকে রাহাত দেখতে পেল অন্তর ইতোমধ্যে মেসেজ দিয়েছে। 'ব্রো, লেট হার কাম। তন্বির সাথে কথা বললাম। ওয় কইলো আন্টি গেলে বরং আরো ভালো। তাইলে তন্বির বাপ মা ওরে নির্দ্বিধায় যাইতে দিতে রাজি হইবো। আন্টিরে নিয়ে চল। অসুবিধা নাই।'
রাহাতের ইচ্ছা করলো নিজের হাতে নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে।
(চলবে)
Posts: 651
Threads: 0
Likes Received: 315 in 299 posts
Likes Given: 578
Joined: Jan 2024
Reputation:
9
Posts: 47
Threads: 5
Likes Received: 307 in 31 posts
Likes Given: 65
Joined: Nov 2024
Reputation:
78
(12-12-2025, 12:49 AM)Saj890 Wrote: Nice start
ধন্যবাদ
•
Posts: 47
Threads: 5
Likes Received: 307 in 31 posts
Likes Given: 65
Joined: Nov 2024
Reputation:
78
12-12-2025, 03:27 AM
(This post was last modified: 12-12-2025, 03:45 AM by শূন্যপুরাণ. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
(২)
খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রাহাতদের বাস শ্যামলী থেকে রাত ১০টায় ছেড়ে গেল। খাগড়াছড়িতে ভোর বেলায় ওদের পৌছতে হবে। সেখানে আর্মি চেক পোস্ট থেকে অনুমতি নিয়ে তারপর রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ করতে পারবে। এটাই সাজেকে যাওয়ার নিয়ম।
বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে স্টেশনে পৌছে গিয়েছিলো সবাই। সুলতানাকে দেখে প্রথম ধাপে রাহাতের বন্ধুরা বিনয়ে বেশ গদগদ হয়ে সালাম বিনিময় করলো। বিশেষত তন্বী বারবার আন্টি আন্টি ডেকে দ্রুত সুলতানার সঙ্গে খাতির জমিয়ে ফেললো। অন্যদিকে রাহাত আঢ় চোখে অন্তর এবং সালমানের চেহারা দেখে ওদের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করছিলো। অন্তরকে একটু নার্ভাস লাগলেও সালমান বরাবরের মতই চিল মুডে কথা বলছিলো।
বাসে অন্তর ইশারায় তন্বীকে নিজের পাশে বসতে বলে। কিন্তু ওকে ফাঁকি দিয়ে সুলতানার পাশে বসে পড়ে তন্বী। ফলে বাধ্য হয়েই অন্তর এবং সালমানকে একসাথে বসতে হয় । রাহাত ওর মায়ের দিকের পেছনের সারিতে আইলের দিকের সিটে বসে। রাহাতের সামনের সিটে তন্বী, তার পাশে জানালার কাছের সিটে ওর মা সুলতানা। তন্বীর অন্য পাশের সারির আইলের দিকের সিটে অন্তর বসেছে, তার পাশে জানালার দিকের সিটে বসেছে সালমান। অর্থাৎ মাঝখানের যাওয়া আসার পথটাই অন্তর ও তন্বীর মাঝে বিভেদ তৈরি করে দিয়েছে। যেন কাছে থেকেও কত দূরে। অন্তরের করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি পেল রাহাতের।
খাগড়াছড়ি পৌছাতে ভোর হয়ে যাবে। চিটাগং হাইওয়েতে ওঠার পর বাসের ভেতরের সব লাইট বন্ধ করে দিলো যাতে সবাই ঘুমিয়ে নিতে পারে। এমনিতেই শীতকাল। তার উপরে বাসের গতির কারণে বেশ একটা আরামদায়ক ঘুম পেয়ে গেল রাহাতের।
চলন্ত বাসের ভেতরে যতই ঘুম পাক, আসলে কখনই বাড়র অতো গাঢ় ঘুম হয় না। মাঝরাতে রাহাতের ঘুম ভেঙ্গে যায়। একরকম আধো ঘুম আধো জাগরণ অবস্থায় কম্বলের নীচ থেকে মাথা তুলে চারপাশ দেখার চেষ্টা করলো সে। বাসের উইন্ডশিল্ড ভেদ করে আসা হাইওয়ের বেশ আলো অন্ধকার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কিছুটা অন্ধকার সয়ে আসলে রাহাতের মনে হলো ওর সামনের সারির সিটে হালকা নড়াচড়ার শব্দ টের পাচ্ছে। অন্তরের সিটে তাকিয়ে দেখলো ঐ বেচারা সম্পূর্ণ কম্বল মুড়িয়ে সিটের একদিকে কাত হয়ে আছে। কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হলো কম্বলের নীচে একটু নাড়াচাড়াও দেখা যাচ্ছে। তবে রাহাত এসবকে পাত্তা দিলো না। আবারো ঘুমিয়ে পড়লো সে। একবারে খাগড়াছড়ি চেক পোস্টে পৌছে ঘুম ভাঙ্গলো ওর। ফর্মালিটিস সেরে সকাল ৮টায় চান্দের গাড়িতে করে সাজেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো ওদের দলটি। চান্দের গাড়ির ড্রাইভারের পাশে বসলো রাহাত। পেছনের ছোট্ট জানালা দিয়ে দেখতে পেল ওর মা সুলতানা, তন্বী, অন্তর ও সালমান গাড়ির উপরে দাঁড়িয়ে খুব উল্লাস করছে। কেউ সিটে বসে নেই। সুলতানাও যেন ওদের সমবয়সী হয়ে উঠেছেন।
ওদের চান্দের গাড়ি সাজেকে প্রবেশ করলো বেলা ১২টায়। ব্যাগ পত্তর নিয়ে আগে থেকে বুক করে রাখা হোটেলে উঠে গেল সবাই। ওদের হোটেলটা পুরোটাই কাঠের তৈরি দোতলা একটি বাড়ি। ওপর তলায় তিনটি এবং নীচ তলায় ২টি রুম ও একটি ডাইনিং। ওপরের তিনটি ও নীচের একটি রুম বুক করা হয়েছে। প্লান ছিলো নীচ তলায় এক রুমে সুলতানা থাকবে। আর উপরের রুমে এক রুমে তন্বী, এক রুমে অন্তর ও অন্য রুমে সালমান ও রাহাত থাকবে। আসলে অন্তর তন্বীর সঙ্গে ডাবল বেডের একটি রুমই নিতে চেয়েছিলো। সুলতানা থাকায় চক্ষু লজ্জায় পড়ে সেটা আর করতে পারেনি। রাহাতকে কানেকানে বলেছিলো তন্বীর ঠিক পাশের রুমটা ওকে দিতে। যাতে সহযে যাতায়াত করতে পারে।
কিন্তু গোল বাঁধালো তন্বী নিজেই। চেক ইন করার পর সে বললো, 'আমি আর আন্টি দোতলায় এক রুমে উঠি। বাকীরা যে যার ইচ্ছেমত রুম নিয়ে নাও।' অন্তর মাথায় হাত দিয়ে বসলো। তবে সুলতানা ঠিকই দোতলায় তন্বীর রুমে উঠে গেল। রাহাত চলে গেল নীচতলায়। দোতলায় বাকী দুই রুমে একটাতে অন্তর, অন্যটাতে সালমান।
ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো ওদের হোটেলটা একেবারে পাহাড়ের কিনারায়। ব্যালকনিটা পাহাড়ের কিনারার বাইরে ঝুলন্ত। তিন রুমের জন্য কমন ব্যালকনি, অর্থাৎ চাইলে ব্যালকনি দিয়ে হেঁটে অন্য রুমের সামনে যাওয়া যায়। তিন রুমের জন্য তিনটা টয়লেট হলেও শাওয়ার মাত্র দুটো। একটা ছেলেদের একটা মেয়েদের। মাঝে কেবল একটা বাঁশের বেড়ার পার্টিশন দেওয়া।
হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওরা দুপুরের খাবারের জন্য বেরিয়ে পড়লো। একটা স্থানীয় হোটেলে সাদা ভাতের সঙ্গে দারুন সব মাছ ও সব্জির রেসিপি খেল পেট ভরে। তারপর পাঁড়ায় হাঁটতে বের হলো। সাজেকের রাস্তায় হাঁটাহাটি করাটাও একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা। হাঁটতে হাঁটতে অন্তর ও তন্বী চিরায়ত প্রেমিক প্রেমিকার মতো বাকীদের থেকে দূরে সরে গেল। সুলতানা কিছুক্ষণ একা একা হাঁটলো। এরপর সালমান এগিয়ে গেল তাকে সঙ্গ দিতে। সবার পেছনে বুকে ক্যামেরা ঝুলিয়ে হাঁটতে লাগলো রাহাত। মাঝে মাঝে হাঁটা থামিয়ে দূর দূর পাহাড়ি বনের ছবি তুলতে লাগলো সে। সাজেকের অপরূপ প্রকৃতি ওকে মুগ্ধ করলো। এই মুগ্ধতার আবেশে কতক্ষণ যে ডুবে ছিলো রাহাত জানে না। যখন সম্বিৎ ফিরলো, দেখলো তন্বী-অন্তর বা সুলতানা-সালমান কেউই ওর ধারে কাছে নেই। কোথাও ওদের দেখতে পাচ্ছে না সে। সে কি! ওরা সব গেল কোথায়। বিভ্রান্ত রাহাত সামনে হাঁটতে হাঁটতে হেলিকপ্টার প্যাড পার হয়ে আরো সামনে চলে গেল। ওদিকে কংলাক পাহাড়ের রাস্তা। ওরা এত দ্রুত পাহাড়ে চলে গেল ওকে ফেলে! রাহাত মাথা চুলকাতে লাগলো। মনে হয় না! হয়তো আশাপাশেই আছে। অগত্যা পেছনে ফিরে এলো সে। নিজের মত বাজারের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে ছবি তুলতে লাগলো দৃষ্টিনন্দন কটেজের, পাহাড়ি জনমানুষের। শীতের কুয়াশা চাঁদরের মত ঢেকে রেখেছে চারিদিকের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি বনভূমিকে। একজন ওকে বললো আকাশ পরিষ্কার থাকলে মেঘালয়ের পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়।
ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গেল। তখনো কারোর দেখা নেই। রাহাত ভাবলো ওরা হয়তো হোটেলেই ফিরে গেছে। সবাই হয়তো টায়ার্ড। সে নিজেও অনেক টায়ার্ড। হোটেলে ফিরেও কাউকে দেখতে পেলো না সে। সাজেকে কারোর মোবাইল সিম কাজ করে না। নিজের রুমে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পেল না।
(চলবে)
Posts: 792
Threads: 7
Likes Received: 872 in 481 posts
Likes Given: 4,274
Joined: Nov 2019
Reputation:
92
সুন্দর হচ্ছে, চালিয়ে যাও।
•
Posts: 3
Threads: 0
Likes Received: 1 in 1 posts
Likes Given: 1
Joined: Jul 2025
Reputation:
0
ভাই সেরা হইতেছে,রাহাতের সামনে ওর মাকে চোদাও সালমান আর অন্তর যে দিয়া
•
Posts: 778
Threads: 0
Likes Received: 413 in 330 posts
Likes Given: 2,391
Joined: Dec 2021
Reputation:
15
খুব সুন্দর একটি গল্প। ভালো লাগছে পড়তে। এরপরের পর্বগুলো পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
•
Posts: 651
Threads: 0
Likes Received: 315 in 299 posts
Likes Given: 578
Joined: Jan 2024
Reputation:
9
•
Posts: 122
Threads: 1
Likes Received: 56 in 45 posts
Likes Given: 0
Joined: May 2019
Reputation:
2
•
Posts: 12
Threads: 0
Likes Received: 15 in 10 posts
Likes Given: 30
Joined: Dec 2021
Reputation:
2
•
Posts: 651
Threads: 0
Likes Received: 315 in 299 posts
Likes Given: 578
Joined: Jan 2024
Reputation:
9
•
Posts: 47
Threads: 5
Likes Received: 307 in 31 posts
Likes Given: 65
Joined: Nov 2024
Reputation:
78
13-12-2025, 09:39 PM
(This post was last modified: 13-12-2025, 09:40 PM by শূন্যপুরাণ. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
(৩)
রাহাতের বাবা রাশেদ হাসানের সঙ্গে সুলতানার যখন বিয়ে হয়েছিল, তখন তার বয়স মাত্র ১৬ বছর। তিনি মফস্বল শহরের মেয়ে। রাহাতের বাবা প্রথম দিন কনে দেখতে এসেই বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিলেন। পাত্র ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অফিসার। তাই পরিবারও প্রবল উৎসাহে একটি আন্ডারএজড মেয়েকে তুলে দিয়েছিল স্বামীর ঘরে। তাদের যুক্তি ছিল—এমনিতেই সুলতানা সুন্দরী মেয়ে, তার ওপর দেশের অবস্থাও ভালো না; শেষে যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়। তার চেয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়াই ভালো।
বিয়ের পরের বছরই রাহাতের জন্ম। রাশেদ প্রচণ্ড এক্সট্রোভার্ট মানুষ। সারাক্ষণ হৈ-হুল্লোড়, পার্টি—এসব নিয়েই থাকতে পছন্দ করেন। সেনাবাহিনীর ভেতরে এমন এক সংস্কৃতি আছে—সারা মাস জুড়েই অমুক-তমুক পার্টি লেগেই থাকে। সেসব অনুষ্ঠানে অন্যান্য অফিসারদের স্ত্রীদের মতো সুলতানাকেও ট্রফি-বউ হয়ে উপস্থিত থাকতে হতো। শুরুতে মফস্বল থেকে এসে এই লাইফে মানিয়ে নিতে তাকে বেশ স্ট্রাগল করতে হয়েছে। নিজের পোশাক-আশাক, আচরণ—সব দিক থেকেই জড়তা ঝেড়ে ফেলতে হয়েছে। শরীরটাকেও মেইনটেইন করতে হয়েছে। এমনকি রাহাতের জন্মের পর তাকে বুকের দুধ পর্যন্ত খাওয়াতে দেয়নি রাহাতের বাবা—তার সুন্দরী স্ত্রীর ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে এই ভয়ে।
এত কিছু করে, এত বছর ধরে সংসার করার পরও সুলতানার কোথাও যেন একটা দুঃখবোধ রয়ে গেছে। রাশেদ যেন বরাবরই তার কাছে অপরিচিত ছিল। স্বামীর ব্যাপারে অনেক গুজবই তার কানে এসেছে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়া কোনো এক মেয়েকে নাকি সে ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে রেখেছে। অনেকেই নাকি তাকে মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে ট্যুরে যেতে দেখেছে। রাহাতের বাবাকে সরাসরি এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করার মতো মানসিক শক্তিও সুলতানার নেই—পাছে তার এই সাজানো সংসার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।
এই যে রাশেদ আফ্রিকায় গেছে দুই বছর—এই সময়ে একবারও দেশে আসেনি। সুলতানা গুণে গুণে বলতে পারবে, কবার তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। শারীরিক ইন্টিমেসির ব্যাপারটির অবস্থা আরও করুণ। রাশেদ একবারও তাকে জিজ্ঞেস করেনি, সুলতানা কীভাবে নিজেকে সামলে রেখেছে।
ক্যান্টনমেন্টে এরকম ঘটনা বহু আছে। সবকিছু বাইরে প্রকাশ পায় না। কিন্তু অনেক ভাবীই সুলতানাকে আকারে-ইঙ্গিতে পরামর্শ দেয়—‘আরে, ডিফেন্সে কত অবিবাহিত ইয়াং অফিসার পড়ে আছে! বিবাহিতরাও কম যায় না। তাদের মধ্য থেকে নিজের পছন্দমতো বেছে নাও। এতেও না পোষালে বাইরে তো আরও অনেকেই অপেক্ষা করে আছে। অন্য প্রফেশনের অনেক ছেলেও আছে একটু ছোঁয়ার আশায়। নিজেকে বঞ্চিত করো না।’
ডিফেন্সের অনেক ভাবীই আছে, যারা নামে মাত্র অমুকের বউ। শেষ কবে স্বামীর সঙ্গে একই বিছানায় গেছে, নিজেরাও বলতে পারবে না। অথচ তাদের বিছানাও খালি থাকছে না। সুলতানা এসব পথে কখনো পা বাড়ায়নি। কোথাও যেন একটা বাধা কাজ করে। হয়তো মফস্বলের সেই রক্ষণশীল মেয়েটি এখনো তার বুকের ভেতর লুকিয়ে আছে। কিন্তু কত দিন সেই মেয়েটি ধৈর্য ধরে রাখতে পারবে, সুলতানা নিজেও জানে না।
রাশেদ মিশনে যাওয়ার পর থেকে সুলতানা সবচেয়ে বেশি দোলাচলে আছে। নিজের মনকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য সে নিজেকে সময় দেওয়া শুরু করেছে। নিয়মিত ব্যায়াম, যোগা করে শরীরটাকে ফিট করেছে। একেবারে স্লিম ফিগারে আসেনি, কিন্তু পেট, পিঠ আর কোমর থেকে লদলদে চর্বি ঝেড়ে ফেলতে পেরেছে। বান্ধবীদের কেউ কেউ বলে, সুলতানাকে নাকি ইন্ডিয়ান নায়িকা ম্রুণাল ঠাকুরের মতো লাগে—বিশেষত পেছন দিক থেকে।
সুলতানা লাজুক হেসে হাত নেড়ে উড়িয়ে দেয় এসব স্তুতি। যখন কেউ কেউ—বেশির ভাগই পুরুষ—বলে, ‘আরে ভাবী, আপনার তো কলেজপড়ুয়া একটা ছেলে আছে—এটা বিশ্বাসই হয় না! আপনাকে এখনো ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।’ প্রকাশ্যে কপট রাগ দেখালেও মনে মনে ঠিকই খুশি হয় সে। নিজেকে গুছিয়ে রাখতে আরও উৎসাহ বোধ করে। আবার একরকম আফসোসও হয়। কোনো কোনো রাতে আয়নার সামনে নিজের নিরাভরণ শরীরটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবে—‘এত রূপ দিয়েও তো রাশেদকে বন্দী করতে পারলাম না। পুরুষ মানুষ বড়ই রহস্যময়।’
রাহাত অনেকটাই তার মায়ের স্বভাব পেয়েছে। ছেলেটা খুব অন্তর্মুখী। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তাই সুলতানার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। হঠাৎ একদিন বন্ধুদের সঙ্গে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার কথা বললে তিনি ভাবলেন—বেশ তো, নিজেও একটু ঘুরে আসা যাক। নিজেরও ঘোরা হবে, ছেলেটাকেও চোখে চোখে রাখা যাবে।
বাসস্টেশনে ছেলের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হয় সুলতানার। অন্তরকে তিনি খুব ছোটবেলায় একবার দেখেছিলেন। কিন্তু সালমান নামের ছেলেটিকে এই প্রথম দেখছেন। বেশ স্মার্ট ছেলে। দেখলে মনেই হয় না, রাহাতদের সঙ্গে সে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড বা থার্ড ইয়ারের ছাত্র বলেও চালিয়ে দেওয়া যাবে।
তন্বী নামের মেয়েটিকে দেখে সুলতানা সামান্য বিরক্তিবোধ করেছিলেন। রাহাত বলেনি যে ওদের সঙ্গে একটি মেয়েও যাচ্ছে। যদিও সামনাসামনি তন্বীর সঙ্গে খুব হেসে হেসে কথা বলেছেন। কথা বলার পর অবশ্য মেয়েটিকে আর অতটা খারাপ লাগেনি।
বাসের মধ্যে তন্বী সুলতানার পাশেই বসেছিল। যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকেই সুলতানা বুঝতে পেরেছিলেন—তন্বী আর অন্তরের মাঝে কিছু একটা চলছে। মনে মনে মুচকি হেসেছিলেন তিনি। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এসব ফিলিংস থাকতেই পারে। তার সময়ে তো কিছু অনুভব করার আগেই তিনি স্বামীর সংসারে এসে পড়েছিলেন; তারপরেই সন্তান চলে এসেছিল। বন্ধু বা এমন ট্যুর দেওয়া তার জন্য ছিল স্বপ্নেরও বাইরে। যাক, ওরা উপভোগ করুক।
সুলতানা জানালার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বাসের ভেতরের লাইট নিভে গেলে তিনি কম্বল গায়ে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলেন। পুরোপুরি ঘুমাননি যদিও।
কিছুক্ষণ পর সুলতানা শুনতে পেলেন, তন্বী আর অন্তর খুনসুটি করছে। নিচু স্বরে কথা বলছিল বলে সব কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না। শুধু এটুকুই বুঝলেন—অন্তর তন্বীকে তার কাছে আসার জন্য অনুনয় করছে। ওদের খুনসুটি শুনতে শুনতেই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।
একসময় সুলতানা অনুভব করলেন—তিনি যেন একটি শক্ত, পেশিবহুল বাহুর ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছেন। ঘুমের ঘোরে বিষয়টা ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না। তন্বীর হাত এত শক্ত হলো কী করে!
Posts: 47
Threads: 5
Likes Received: 307 in 31 posts
Likes Given: 65
Joined: Nov 2024
Reputation:
78
13-12-2025, 11:06 PM
(This post was last modified: 14-12-2025, 12:13 AM by শূন্যপুরাণ. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
সুলতানা ঘুমের ঘোরে অনুভব করলো, তার বাম পাশের স্তনটাতে আলতো করে কেউ হাত বুলাচ্ছে। প্রথমে অল্প একটু জায়গায়, এরপর পুরো স্তনের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত কয়েকটা আঙুল আলতো করে ছুঁয়ে যাচ্ছে। স্তনের গোল শেপ বরাবর উপর থেকে নিচে নামছে, আবার উপরে উঠছে, আবার নামছে। এভাবে নড়াচড়া করতে লাগলো বেশ কিছুটা সময় ধরে। সুলতানার সুড়সুড়ি লাগছিল, আবার বেশ একটা আদর আদর অনুভব হচ্ছিলো।
হাতটা এক আঙুল দিয়ে সুলতানার বাম স্তনের নিপলটা জামার ওপর থেকে নাড়াতে থাকলো। মাঝে মাঝে স্তনবৃন্তে দুই আঙুল দিয়ে আলতো টিপে দিতে লাগলো। একে তো শীতের আবহাওয়া, তার উপর এরকম আদর! অল্প কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সুলতানার নিপল শক্ত হয়ে উঠলো। টিনএজ থেকেই ওর শরীরের এই অংশটা খুব সেনসিটিভ। কিন্তু এসব কি বাস্তবে ঘটছে নাকি স্বপ্নে? সুলতানা বুঝে উঠতে পারে না। যেটাই হোক, ওর খুব ভালো লাগছিলো। রাশেদ কত দিন ওর শরীরে হাত দেয় না। রাশেদের আদরের অপেক্ষায় ওর শরীরটা কত দিন ধরে অভুক্ত হয়ে আছে!
উমমম... সুলতানা আদুরে কিশোরীর মতো মৃদু আওয়াজ করছে। 'রাশেদ, কী করছো? সুড়সুড়ি লাগছে তো। প্লিজ, স্টপ। উঁহু। প্লিজ।' ফিসফিস করে স্বামীর উদ্দেশ্যে বললো সুলতানা। কিন্তু ঐ হাতটা থামে না, আরো সাহসী হয়ে ওঠে। সুলতানার পরনের কুর্তার বুকের বোতাম খুলতে থাকে। সুলতানা মুখে নিষেধ করা সত্ত্বেও হাতে কোনো বাঁধা দেয় না। ওর শরীরটা যেন রাশেদের আদরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিনা বাঁধায় হাতটা সুলতানার বুকের কাছের কুর্তা সরিয়ে ব্রায়ের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়। শক্ত পুরুষালি হাতটি ওর স্তন দুটোকে আদর করতে থাকে। সম্পূর্ণ স্তনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিয়ে ছেড়ে দেয়। নিপলগুলোকে আলতো করে টেনে ছেড়ে দেয় কয়েকবার। সুলতানা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। 'প্লিজ, রাশেদ। মেক লাভ টু মি। রাশেদ... রাশেদ...' বাসের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙে সুলতানার। ভোরের আলো ফুটে গেছে। বাস খাগড়াছড়িতে প্রায় পৌঁছে গেছে। সুলতানা প্রথমেই নিজের বুকে হাত দেন। শার্টের বোতাম ঠিকই আছে। পাশে তাকিয়ে দেখেন তন্বি ঘুমাচ্ছে। এই শীতের মাঝেও সুলতানার মুখ ঘেমে গেছে। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। দূরে কুয়াশায় ঘেরা পাহাড় ও জঙ্গল, তার উপরে ভোরের ঈষৎ রক্তিম আকাশ। সুলতানার মনটা বিষণ্ন হয়ে ওঠে। গোপনে ছোট একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি।
তন্বির সঙ্গে রুম শেয়ার করতে সুলতানার কোনো আপত্তি ছিল না। মেয়েটা বেশ চঞ্চল। ও সাথে থাকলে বেশ ভালোই লাগবে। চাঁদের গাড়ি (ট্যুরিস্টদের সাজেকে যেই ভাড়াটে জিপ গাড়িগুলো নিয়ে যায়, ওদের স্থানীয় ভাষায় 'চাঁদের গাড়ি' বলে) করে আসার সময়ে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খুব হৈ চৈ করেছেন সুলতানা। অন্তর, সালমান, তন্বি প্রত্যেকেই খুব হাসিখুশি ও মিশুক। ওদের সঙ্গে থেকে সুলতানার বয়সটাও যেন কমে গেছে। ওদের বন্ধুর মতোই তিনিও হাসি-ঠাট্টা, হৈ-চৈ করেছেন। ফলে তন্বি যখন ওর রুমে উঠতে বলেছে, তখন সুলতানা নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে যান।
দুপুরে খেয়ে সাজেকের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ্য করলেন, অন্তর ছেলেটি বারবার তন্বিকে ইশারায় ডাকছে। তন্বিও উসখুস করছে দেখে সুলতানা বললেন, 'তোর বন্ধু অন্তর হয়তো কিছু বলতে চাইছে। যাও ওর কাছে।'
'থ্যাংকস, মাই সুইট আন্টি।' এক গাল হেসে ফড়িং-এর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে অন্তরের কাছে চলে গেল মেয়েটি। ওর অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসলেন সুলতানা। টিনএজ বয়সে সব আবেগই খুব প্রখর হয়। বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোতে ভাটা পড়তে শুরু করে।
'আন্টি, ক্যান আই জয়েন ইউ?'
সুলতানা চমকে উঠলেন। সালমান তার পাশে পাশে হাঁটতে শুরু করেছে।
'শিওর, মাই বয়।'
সুলতানা খুব মন্থর গতিতে হাঁটছেন। সাজেকের ট্যুরিস্ট হোটেলগুলো যেখানে অবস্থিত, তার নাম রুইলুই পাড়া। এটা খুব বেশি বড় নয়। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যেতে বেশি সময় লাগে না। তাই তাড়াহুড়োর কিছু নেই।
'আন্টি, এটা হচ্ছে হেলিপ্যাড, আর এই রাস্তা ধরে সামনে গেলে কংলাক পাহাড়,' সালমান বললো।
'ও আচ্ছা। তো তোমাদের প্ল্যান কী?'
"আমরা আজ বিকেলেই কংলাকে উঠে যাবো। চাঁদের গাড়ি আমাদের কংলাকের নীচে পৌঁছে দেবে। বাকিটা পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠবো।'
'বাহ, বাহ। তারপর?' সুলতানা বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলেন।
'হোটেলের লোকের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্র ব্যবস্থা করে দেবে। আজ রাতটা আমরা কংলাকের চূড়ায় ক্যাম্প করে থাকবো। ভোরের সূর্যোদয় দেখে নীচে নামবো। আগামীকালের সূর্যাস্ত দেখবো হেলিপ্যাডে। এরপরের দিন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেব। এই হচ্ছে আমাদের ট্যুর প্ল্যান।'
'এক্সেলেন্ট।' সুলতানা হাসিমুখে বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে ওকে চিহ্ন দেখালেন। সালমান হেসে ফেললো এটা দেখে।
'আন্টি, আপনাকে একটা সত্যি কথা বলি?' সালমান বললো।
'হ্যাঁ, হ্যাঁ। কী সত্যি কথা শুনি?' সুলতানা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
'আপনাকে আসায় আমাদের খুব ভালো লাগছে।'
'তাই নাকি! তোমাদের ভালো লাগছে? কিন্তু রাহাত তো প্রথমে আসতেই দিতে চায়নি। সে কী রাগারাগি!'
'ও আসলে একটু এম্বারাসড ছিলো।'
'কেন? এম্বারাসড হওয়ার মতো আমি কিছু করেছি?'
'না, না আন্টি। আপনি কিছু করেননি। আসলে... ক্যান আই স্পিক ফ্রিলি?'
'আরে অবশ্যই। শোনো, সালমান। একটা কথা বলে দিচ্ছি। আমি এখানে তোমাদের উপরে গার্ডিয়ানগিরি ফলাতে আসিনি। আমি তোমাদের সঙ্গী হিসেবে এসেছি। আমাকে তোমরা বন্ধুর মতো মনে করলেই খুশি হব। লিভ দা ফর্মালিটিজ এট হোম। ইংরেজিতে একটা কথা আছে জানো তো। হোয়াটেভার হ্যাপেনস ইন লাস ভেগাস, স্টেজ ইন লাস ভেগাস। সাজেকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। হোয়াটেভার, বলো বলো। কী যেন বলতে চাইছিলে?'
কথা বলতে বলতে সালমান ও সুলতানা হেলিপ্যাড ছাড়িয়ে আরো কিছুটা পথ সামনে চলে এসেছে। এদিক থেকে দূরের পাহাড়গুলো আরো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে পাহাড়ের নীচ দিয়ে।
বছরের এই সময়টায় ট্যুরিস্ট নেই বললেই চলে। সুলতানা রাস্তা ছেড়ে হেঁটে পাহাড়ের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালো। ওদিক থেকে পায়ে চলা সরু পথ নেমে গেছে এঁকেবেঁকে। ও পথ দিয়েই পাহাড়িরা আসা-যাওয়া করে। সুলতানার খুব শখ, এরকম এক পাড়ায় গিয়ে যদি কিছুদিন থাকতে পারতো।
সালমান ওর পাশে এসে দাঁড়ায়, বেশ অনেক কাছে। সুলতানা অবশ্য লক্ষ্য করেন না। 'আন্টি, আসলে রাহাত আমাদের কথা ভেবেই আপনাকে আসতে দিতে চায়নি। ফ্র্যাঙ্কলি, উই থট উই আর গোয়িং টু হ্যাভ সাম ফান। ইউ নো। বাড়িতে রেস্ট্রিকশনের জন্য যেগুলো আসলে করা হয় না। বাট, আপনি থাকলে আবার কী মনে করেন এসব ভেবে... '
'আরে ধুর, তোমাকে তো বলেই দিলাম। আমাকে তোমরা বন্ধুর মতো ভাবো। এনজয় ইয়োরসেল্ফ। আমি কিছু মনে করবো না। বরং আমাকেও সঙ্গে রেখো।'
'থ্যাংকস আন্টি। অবশ্যই আপনাকে সঙ্গে রাখবো,' এক গাল হেসে বললো সালমান।
'ডিল?' সুলতানা হাত বাড়িয়ে দেন হ্যান্ডশেকের জন্য।
'ডিল।' সালমান মুঠোয় নেয় হাতটি। বেশ বড়সড় পুরুষালি হাত। সুলতানার হাত ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে সালমান। শরীরে এক শিহরণ অনুভব হয় সুলতানার। সে জানে না কেন ওমন অনুভূতি হলো। সালমানের হাত থেকে নিজের হাত টেনে নিয়ে সুলতানা বললেন, 'চলো তবে, হোটেলে ফিরে যাই। তন্বিরা কোথায় গেল?'
ওরা তন্বি ও অন্তরকে খুঁজতে লাগলো। কিছুক্ষণ আগেও ওদেরকে সামনে হাঁটতে দেখেছে। খুঁজতে খুঁজতে প্রথমে সালমানই দেখতে পেল ওদের দুজনকে। পাহাড়ের নীচের দিকে যে রাস্তা নেমে গেছে, সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে সালমান। সুলতানা কাছে গিয়ে বললেন, 'কী হয়েছে? ওরা কোথা...' কথা শেষ হওয়ার আগেই সুলতানাও দেখতে পেল ওদের। তন্বিকে চুমু খাচ্ছে অন্তর। দুজন দুজনাের শরীরের সঙ্গে মিশে রয়েছে। অন্তরের এক হাত তন্বির পিঠে চাপ দিয়ে নিজের বুকে মিশিয়ে রেখেছে। অন্য হাত দিয়ে তন্বির একটা স্তনকে স্পঞ্জের বলের মতো টিপছে। তন্বিও নিজে কম যায় না। সব মন-প্রাণ দিয়ে অন্তরের গলা জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে চুমু খাচ্ছে মেয়েটি।
'আন্টি, দেখেছেন? এই জন্যই কাপলদের সঙ্গে আসতে ইচ্ছে করে না। সুযোগ পেলেই শুরু করে দেয়। আর এদিকে আমরা সিঙ্গেলরা জ্বলে-পুড়ে মরি।' সালমানের বলার ভঙ্গিতে সুলতানা হেসে ফেললেন।
'তুমিও নিয়ে আসতে একজনকে। কে মানা করেছে!' হাসি চাপতে চাপতে বললেন।
'সেই কপাল কি আছে আমার! কেউ থাকলে তো নিয়ে আসবো!'
'ঢং করো না। তোমার মতো ড্যাশিং ছেলের জিএফ নেই, এটা বিশ্বাস করবো?'
'সত্যিই আন্টি, আই ডোন্ট হ্যাভ এনিওয়ান।'
'হয়েছে হয়েছে, ওদের একটু ডাক দাও তো। ওরা যা শুরু করেছে পাবলিক প্লেসে, আমারই লজ্জা লাগছে।'
সালমান কুক্কুরুক্কু বলে মোরগের ডাক দিলো। চমকে উঠে সরে গেল অন্তর ও তন্বি। শব্দের উৎস খোঁজার জন্য এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলো, সালমান ওদের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে।
'বাঞ্চো*...' গালি শেষ করার আগেই সুলতানাকে দেখে থেমে গেল অন্তর। 'ইয়ে মানে আন্টি...'
'হয়েছে হয়েছে। কিছু বলতে হবে না। উঠে আসো তোমরা। হোটেলে ফিরে যেতে হবে।' অন্তর এবং তন্বি দুজনেই ধরা পড়া অপরাধীর মতো মাথা নীচু করে উঠে এলো। সালমানের অন্তরের কানে কানে কিছু একটা বলার পর অন্তর বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠলো আবার। যদিও তন্বি কিংবা সুলতানা কেউই ওদের কথা শুনতে পেল না।
হোটেলে ফিরে ওরা রাহাতকে ঘুম থেকে তুলে দিলো। খুব দ্রুত যার যার ব্যাগ গুছিয়ে নিলো সবাই। ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্র চাঁদের গাড়িতে তুলে নিয়ে রওনা হয়ে গেল কংলাকের উদ্দেশ্যে। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে বাকি পথটা হেঁটে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হবে।
ওদের দলটি যখন চূড়ায় পৌঁছেছে, তখন সূর্য দিগন্তের কাছে হেলে পড়েছে। আকাশ ডিমের কুসুমের মতো লাল হয়ে আছে। ওরা পাঁচজনই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সূর্যাস্ত দেখলো।
ক্যাম্পিংয়ের জন্য আগেই স্পট ঠিক করে রাখা ছিলো। কংলাকের চূড়ায়ও কিছু দোকান, ঘর-বাড়ি আছে। সেখান থেকে দূরে, নির্জন স্থানে ক্যাম্প খাটানো হয়েছে। ক্যাম্প সেট আপের জন্য স্থানীয় গাইডরাই সাহায্য করেছে। দুটো ক্যাম্প সেট করা হয়েছে— একটা মেয়েদের, একটা ছেলেদের। ক্যাম্প সেট আপের সময়ে সালমান কিছু সময়ের জন্য উধাও হয়ে গিয়েছিলো। এরপর বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে অন্তরের কানে কানে কিছু বললো। অন্তর পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে দিয়ে বললো, '১ নম্বর জিনিসটা দিতে বলিস।' সালমান ওকে বলে আবার চলে গেল।
রাতে বনফায়ার করে ওরা গোল হয়ে বসলো পাঁচজন। উপরে আকাশভরা তারা দেখা যাচ্ছে। দূরে পাহাড়ের নীচে কুয়াশা ও মেঘ। আগুনের উত্তাপে শীতের তীব্রতা অনেকটাই কমে গেছে। সুলতানা ও তন্বি ম্যারিনেট করে আনা চিকেন বারবিকিউ করতে ব্যস্ত। সালমান ওর সঙ্গে আনা উকুলেলেতে গান গেয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে গলা মেলাচ্ছে রাহাত, অন্তর, তন্বি। জেন-জি জেনারেশনের এসব গানের সঙ্গে সুলতানার পরিচয় নেই। যদিও শুনতে মন্দ লাগছে না তার।
সালমানের গানের ফাঁকে অন্তর ওয়ান টাইম গ্লাসে সবাইকে শরবত সার্ভ করলো। তন্বি গ্লাসে নাক দিয়ে শুঁকে বললো, 'কী এটা?'
'মহুয়া ফুলের মধু দিয়ে বানানো একরকম পাহাড়ি ড্রিংকস,' অন্তর বললো। 'ইজ ইট ইভেন সেফ?'
'শিওর, বেব। হান্ড্রেড পার্সেন্ট। এই দেখ, আমিও খাচ্ছি,' বলেই ঢকঢক করে পুরো গ্লাস খালি করে ফেললো অন্তর। ওকে দেখে রাহাতও খেয়ে ফেললো। সুলতানা গন্ধ শুঁকে বললো, 'বেশ মিষ্টি ঘ্রাণ। খারাপ হবে না হয়তো।' তন্বি শ্রাগ করলো। তারপর দ্বিধা কাটিয়ে নিজের গ্লাসে চুমুক দিলো। 'নাইস। টেস্ট বেশ মজার,' বললো তন্বি। অল্প সময়েই সকলে তিন দফা এই মহুয়া ফুলের রস খেয়ে ফেললো। রাত বৃদ্ধির সাথে সাথে আকাশে তারাগুলোও উজ্জ্বল হয়ে উঠতে লাগলো। নীচে আগুনের চারপাশে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠলো একদল যুবক-যুবতী। ধীরে ধীরে জেগে উঠতে লাগলো এক আদিম অনুভূতি। প্রকৃতি যেন এক নিষিদ্ধ খেলার মঞ্চ সাজাতে লাগলো নিপুণ হাতে।
(চলবে)
The following 11 users Like শূন্যপুরাণ's post:11 users Like শূন্যপুরাণ's post
• adnan.shuvo29, Atonu Barmon, Helow, pradip lahiri, ray.rowdy, Runer, Saj890, scentof2019, suktara, Supanto, thechotireader
Posts: 187
Threads: 3
Likes Received: 81 in 66 posts
Likes Given: 6
Joined: Dec 2022
Reputation:
7
•
Posts: 778
Threads: 0
Likes Received: 413 in 330 posts
Likes Given: 2,391
Joined: Dec 2021
Reputation:
15
বেশ সুন্দর আপডেট, সুন্দর গল্প। যতটুকু পড়লাম খুব ভালো লাগলো পড়ে। এরপরের পর্বগুলো পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
•
Posts: 240
Threads: 7
Likes Received: 845 in 181 posts
Likes Given: 4,150
Joined: May 2020
Reputation:
218
দারুণ প্লট ??
Give Respect
Take Respect
•
Posts: 68
Threads: 0
Likes Received: 35 in 28 posts
Likes Given: 259
Joined: Sep 2020
Reputation:
0
Wow.. nice plot.. keep going..
Posts: 99
Threads: 0
Likes Received: 45 in 34 posts
Likes Given: 76
Joined: Aug 2023
Reputation:
1
Posts: 651
Threads: 0
Likes Received: 315 in 299 posts
Likes Given: 578
Joined: Jan 2024
Reputation:
9
Posts: 1
Threads: 0
Likes Received: 0 in 0 posts
Likes Given: 20
Joined: Jul 2022
Reputation:
0
সেরা একটা প্লট, সর্বকালের সেরা পোস্ট হবে যদি গল্পটি দারুন ভানে রচিত হই
•
|