03-12-2025, 09:45 AM
আজ কতদিন পরে যে নানু বাড়ি যাচ্ছি, প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময়। একটা সময় ছিল কলেজের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েই নানু বাড়িতে ছুট দিতাম। সেখানে সারাদিন কাটতো, খালাত ভাই আর বন্ধুদের সাথে দস্যিপনা করে। ধানের ক্ষেতের মাঝে পিচ বানিয়ে ক্রিকেট, সন্ধ্যা হলে ফুল টোককা, রাতে লুকোচুরি, এর ওর গাছের ডাব চুরি, কি কি করিনি। আমার দস্যিপনায় সর্বক্ষনের সঙ্গী ছিল আমার খালাত ভাই শোভন, জাহিদ, রাজীব আরো অনেকে।শোভন আমার থেকে বয়সে আট মাসের বড়, খাটো-গোলগাল চেহারা, দেখতে খুবই ভোলাভালা, মনে হবে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারে না, কিন্তু বাস্তবে অসম্ভব কুটবুদ্ধির অধিকারী।রাজীবও শোভনের সমবয়সী, শুকনো, টিপিক্যাল ক্ষেতে-খামারে কাজ করার বডি-ফিগার, হাবা, কথা বললে তোতলে যায়। জাহিদ আমার থেকে দুই বছরের বড়, আমাদের মাঝে সবচেয়ে তাগরাই, একেবারে পেটানো শরীর। ক্রিকেট মাঠে বড় বড় ছক্কার কারণে আমরা আদর করে ডাকতাম কায়রন পোলার্ড। জাহিদের আরেকটা পরিচয় হল ওর পরিবার বংশানুক্রমে আমাদের নানা বাড়ির পরিবারের অধীনে কাজ করে গেছে। ওর বাবা ছিল নানার সর্বক্ষনের সঙ্গী, নানা বাহিরে গেলে ছাতা এগিয়ে দেওয়া, ফাইফরমাশ খাতা, ধান-চালের হিসাব রাখা।আর ওর মা ছিল নানুর সর্বক্ষণের সঙ্গী, রান্নায় সাহায্য করা, ঘর গুছিয়ে রাখা।
জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের নানা বাড়িতে যে পরিমাণ সম্পত্তি তা কোনদিক থেকেই একজন জমিদারের থেকে কম নয়। সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা গ্রামের মাঝের একটা বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স দালান। এই দালানের ছাদে উঠে যতদূর চোখ যায়, আশেপাশের তিন গ্রাম পর্যন্ত যত জমি, যত পুকুর,যত নদী (ইজারা বা লিজ) সবই আমার নানাভাই এর সম্পত্তি।নানাভাই এর বয়স হওয়ার পর থেকে আমার মাই এই সম্পত্তির দেখা-শুনো করে আসছে। চার বোন আর এক ভাই এর মধ্যে মা সেজো। কিন্ত সবার মাঝে মায়ের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি ছিল। মামা ঢাকায় চাকুরী করে,মা প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন দিনের জন্য এসে জমিদারী দেখে যায়। কখনো মা আসতে না পারলে, সেই সপ্তাহে মেজ খালা এসে মায়ের প্রক্সি দিয়ে যায়। মা একদম বলিউডের জিরো ফিগারের মহিলা, পেটে বয়সের কারণে খুবই হালকা মেদ, ভরাট বক্ষ, লম্বা উচ্চতা। এত বড় জমিদারী দেখাশুনার কারণে মায়ের রাগটাও এত বেশি। বাড়ির চাকর-বাকর তো বটেই আমাদের সকল আত্মীয়-স্বজনও মায়ের ভয়ে সদা ততস্ত্র হয়ে থাকে। আর বংশানুক্রমে মায়ের সর্বক্ষণিক সঙ্গী এখন জাহিদ।
মা-বাবার বিয়ে হয়েছিল প্রেমের বিয়ে। ওই যুগে খুব কম মানুষই প্রেম করে বিয়ে করেছে। কিন্তু মা তো মাই-সব সময় নিজের মর্জিমত চলেছে। আমার ফুপুর বিয়ে হয়েছিল আমাদের গ্রামেই, সেই বিয়েতে গেট ধরা নিয়ে বেয়াই-বেয়াইনের দুষ্টুমি, এরপর পরিণতি। প্রেমের বিয়ে হওয়াতে মা-বাবার মধ্যে ঠোকা-ঠুকিও ছিল অনেক বেশি। তাছাড়া মায়ের রাগ যদি উত্তপ্ত কয়লা হয়, বাবার রাগ হল মধ্যগগনের সূর্যের উত্তাপ। এই দুই রাগী মানুষের ঠোকা-ঠুকিতে প্রায়ই মা দুই-তিন সপ্তাহের জন্য নানা বাড়িতে থেকে যেত। কিন্তু দুই বছর আমাদের পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। মা যে সেই গেল আর কখনোই ফিরে এল না। দুই মাসেও মাকে আসতে না দেখে, বাবা গেলে মাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু বাবা ফেরত এল একা, এসে দুইদিন গুম হয়ে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ঘরে বসে ছিল।দুইদিন পর ঘর থেকে বের হয়ে আমাকে আর আমার বোনকে ডেকে বললো, আজ থেকে তোদের নানা বাড়ি যাওয়া বন্ধ, এই গরীব বাবার সংসারেই তোদের থাকতে হবে।বাবার অসহায় চেহারা দেখে আমি বা আমার বোন কেউই না করতে পারলাম না। কিন্ত নানা বাড়িতে বাবা-মায়ের মধ্যে কি হয়েছিল তা আজও আমরা জানি না, শুধু এইটুকু জানি ছয় মাসের মধ্যেই বাবা-মায়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স হয়ে যায়। আজ এস.এস.সি পরীক্ষা শেষে যে নানাবাড়ি যাচ্ছি, তাও বাবাকে না জানিয়েই। পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সাথে ট্যুর দেওয়ার নাম করে রওনা দিলাম নানাবাড়ি, সাথে শোভনকেও ফোন করে বললাম চলে আসতে। যতটা না কলেজ জীবনের নস্টালজিয়া, তার থেকে বেশি মায়ের সাথে দেখা হওয়ার আনন্দ। মা নিশ্চয়ই অনেক সারপ্রাইজড হবে, খুশিতে চোখে জল চলে আসবে। আহ! কতদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে মা চুলে বিলি কেটে দেয় না! আবার সাথে সাথেই মনের মধ্যে একরাশ অভিমান ভর করল। আমি না হয় বাবার জন্য মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি না, মায়ের কি এই দুই বছরের একবারও আমার কথা মনে পড়ল না?
হাড়িভাঙ্গা নদীর পরে ট্রলার যখন ভিড়ল তখন ভোড় হয় হয়। চারদিকে গ্রীষ্মের গুমট গরম। শোভন আসতে আরো ঘন্টা দেড়েক। ও আসলে দুইজন একসাথে ভ্যানে করে সোজা নানা বাড়ি। গ্রামে সকাল শুরু হয় ফজরের পর থেকেই। নদীর পারে একটা চায়ের দোকান মাত্র খুলেছে, তাতেও ভীড়ে গম গম করছে। দোকানে এক কাপ চা আর দুইটা বিস্কুট অর্ডার করে বসতেই একজন বলে উঠল, "তুমি ইভার ছেলে না?" আমি হ্যাঁ বলতেই উনি আবার বলে উঠলো,"এতদিন পরে মায়ের সংসার দেখতে আসার সময় হলো?" আর সঙ্গে সঙ্গেই দোকানের বাকিরা হো হো করে হেসে উঠল। কথাটার মানে তখন বুঝতে পারি নি, যখন বুঝলাম তখন এই ভোরবেলায় আমার জীবনে কালবৈশাখী নেমে এল। আধো আলো আধো অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ভ্যান ছুটে চলেছে, দুই পাশে ঘন জঙ্গল। হঠাৎ শোভন বলে উঠল, "আন্টি যে আবার বিয়ে করেছে জানিস?"। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললাম,"আন্টি মানে??"
-তোর মা।
আমি এতক্ষণে চায়ের দোকানে মায়ের সংসার দেখতে আসা নিয়ে হাসি ঠাট্টার কারণ বুঝতে পারলাম। জিজ্ঞেস করলাম - কবে?
ভ্যানওয়ালা পিছনে ফিরে বললেন, সে কি বাবু। আপনি জানেন না? তা তো প্রায় একবছর হয়ে গেছে। সে কি অনুষ্ঠান, এত জাঁক-জমক আমার বাবার জন্মে দেখি নি। হলুদে ঢাকা থেকে অর্ণব না কোন শিল্পী এসে গান করল, সে কি গান বাবু এখনো কানে লেগে আছে। আর বিয়ের খাবারের মেন্যু.............
নাহ! আর কিছু কান দিয়ে ঢুকছে না। এ আমি কি শুনলাম।
শোভন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কিরে ফেরত যাবি? তাহলে ভ্যান ঘুরে বলি।"
আমি চোখ মুখ শক্ত করে বললাম-না।
সূর্যের আলো ফুটতে শুরু করেছে। পাখির কিচির মিচির, বনমোরগের ডাক, এরমধ্যে শোভন সুর দিয়ে শিষ দেওয়া শুরু করলো। উফ! ওর শিষ আমার কানে বিষের মত লাগছে। এত সুখ কেন ওর মনে!
জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের নানা বাড়িতে যে পরিমাণ সম্পত্তি তা কোনদিক থেকেই একজন জমিদারের থেকে কম নয়। সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা গ্রামের মাঝের একটা বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স দালান। এই দালানের ছাদে উঠে যতদূর চোখ যায়, আশেপাশের তিন গ্রাম পর্যন্ত যত জমি, যত পুকুর,যত নদী (ইজারা বা লিজ) সবই আমার নানাভাই এর সম্পত্তি।নানাভাই এর বয়স হওয়ার পর থেকে আমার মাই এই সম্পত্তির দেখা-শুনো করে আসছে। চার বোন আর এক ভাই এর মধ্যে মা সেজো। কিন্ত সবার মাঝে মায়ের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি ছিল। মামা ঢাকায় চাকুরী করে,মা প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন দিনের জন্য এসে জমিদারী দেখে যায়। কখনো মা আসতে না পারলে, সেই সপ্তাহে মেজ খালা এসে মায়ের প্রক্সি দিয়ে যায়। মা একদম বলিউডের জিরো ফিগারের মহিলা, পেটে বয়সের কারণে খুবই হালকা মেদ, ভরাট বক্ষ, লম্বা উচ্চতা। এত বড় জমিদারী দেখাশুনার কারণে মায়ের রাগটাও এত বেশি। বাড়ির চাকর-বাকর তো বটেই আমাদের সকল আত্মীয়-স্বজনও মায়ের ভয়ে সদা ততস্ত্র হয়ে থাকে। আর বংশানুক্রমে মায়ের সর্বক্ষণিক সঙ্গী এখন জাহিদ।
মা-বাবার বিয়ে হয়েছিল প্রেমের বিয়ে। ওই যুগে খুব কম মানুষই প্রেম করে বিয়ে করেছে। কিন্তু মা তো মাই-সব সময় নিজের মর্জিমত চলেছে। আমার ফুপুর বিয়ে হয়েছিল আমাদের গ্রামেই, সেই বিয়েতে গেট ধরা নিয়ে বেয়াই-বেয়াইনের দুষ্টুমি, এরপর পরিণতি। প্রেমের বিয়ে হওয়াতে মা-বাবার মধ্যে ঠোকা-ঠুকিও ছিল অনেক বেশি। তাছাড়া মায়ের রাগ যদি উত্তপ্ত কয়লা হয়, বাবার রাগ হল মধ্যগগনের সূর্যের উত্তাপ। এই দুই রাগী মানুষের ঠোকা-ঠুকিতে প্রায়ই মা দুই-তিন সপ্তাহের জন্য নানা বাড়িতে থেকে যেত। কিন্তু দুই বছর আমাদের পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। মা যে সেই গেল আর কখনোই ফিরে এল না। দুই মাসেও মাকে আসতে না দেখে, বাবা গেলে মাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু বাবা ফেরত এল একা, এসে দুইদিন গুম হয়ে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ঘরে বসে ছিল।দুইদিন পর ঘর থেকে বের হয়ে আমাকে আর আমার বোনকে ডেকে বললো, আজ থেকে তোদের নানা বাড়ি যাওয়া বন্ধ, এই গরীব বাবার সংসারেই তোদের থাকতে হবে।বাবার অসহায় চেহারা দেখে আমি বা আমার বোন কেউই না করতে পারলাম না। কিন্ত নানা বাড়িতে বাবা-মায়ের মধ্যে কি হয়েছিল তা আজও আমরা জানি না, শুধু এইটুকু জানি ছয় মাসের মধ্যেই বাবা-মায়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স হয়ে যায়। আজ এস.এস.সি পরীক্ষা শেষে যে নানাবাড়ি যাচ্ছি, তাও বাবাকে না জানিয়েই। পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সাথে ট্যুর দেওয়ার নাম করে রওনা দিলাম নানাবাড়ি, সাথে শোভনকেও ফোন করে বললাম চলে আসতে। যতটা না কলেজ জীবনের নস্টালজিয়া, তার থেকে বেশি মায়ের সাথে দেখা হওয়ার আনন্দ। মা নিশ্চয়ই অনেক সারপ্রাইজড হবে, খুশিতে চোখে জল চলে আসবে। আহ! কতদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে মা চুলে বিলি কেটে দেয় না! আবার সাথে সাথেই মনের মধ্যে একরাশ অভিমান ভর করল। আমি না হয় বাবার জন্য মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি না, মায়ের কি এই দুই বছরের একবারও আমার কথা মনে পড়ল না?
হাড়িভাঙ্গা নদীর পরে ট্রলার যখন ভিড়ল তখন ভোড় হয় হয়। চারদিকে গ্রীষ্মের গুমট গরম। শোভন আসতে আরো ঘন্টা দেড়েক। ও আসলে দুইজন একসাথে ভ্যানে করে সোজা নানা বাড়ি। গ্রামে সকাল শুরু হয় ফজরের পর থেকেই। নদীর পারে একটা চায়ের দোকান মাত্র খুলেছে, তাতেও ভীড়ে গম গম করছে। দোকানে এক কাপ চা আর দুইটা বিস্কুট অর্ডার করে বসতেই একজন বলে উঠল, "তুমি ইভার ছেলে না?" আমি হ্যাঁ বলতেই উনি আবার বলে উঠলো,"এতদিন পরে মায়ের সংসার দেখতে আসার সময় হলো?" আর সঙ্গে সঙ্গেই দোকানের বাকিরা হো হো করে হেসে উঠল। কথাটার মানে তখন বুঝতে পারি নি, যখন বুঝলাম তখন এই ভোরবেলায় আমার জীবনে কালবৈশাখী নেমে এল। আধো আলো আধো অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ভ্যান ছুটে চলেছে, দুই পাশে ঘন জঙ্গল। হঠাৎ শোভন বলে উঠল, "আন্টি যে আবার বিয়ে করেছে জানিস?"। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললাম,"আন্টি মানে??"
-তোর মা।
আমি এতক্ষণে চায়ের দোকানে মায়ের সংসার দেখতে আসা নিয়ে হাসি ঠাট্টার কারণ বুঝতে পারলাম। জিজ্ঞেস করলাম - কবে?
ভ্যানওয়ালা পিছনে ফিরে বললেন, সে কি বাবু। আপনি জানেন না? তা তো প্রায় একবছর হয়ে গেছে। সে কি অনুষ্ঠান, এত জাঁক-জমক আমার বাবার জন্মে দেখি নি। হলুদে ঢাকা থেকে অর্ণব না কোন শিল্পী এসে গান করল, সে কি গান বাবু এখনো কানে লেগে আছে। আর বিয়ের খাবারের মেন্যু.............
নাহ! আর কিছু কান দিয়ে ঢুকছে না। এ আমি কি শুনলাম।
শোভন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কিরে ফেরত যাবি? তাহলে ভ্যান ঘুরে বলি।"
আমি চোখ মুখ শক্ত করে বললাম-না।
সূর্যের আলো ফুটতে শুরু করেছে। পাখির কিচির মিচির, বনমোরগের ডাক, এরমধ্যে শোভন সুর দিয়ে শিষ দেওয়া শুরু করলো। উফ! ওর শিষ আমার কানে বিষের মত লাগছে। এত সুখ কেন ওর মনে!


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)
:
