Thread Rating:
  • 2 Vote(s) - 5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance একটি অবাধ্য সম্পর্কের দিনলিপি
#1
একটি অবাধ্য সম্পর্কের দিনলিপি

 অধ্যায় ১

কলেজের শেষ সেমিস্টার।
আয়ন প্রায়ই অরিন্দমের বাড়িতে পড়তে যেত—আসলে পড়ার থেকে ওদের আড্ডাটাই বেশি জমত। রুমে ফ্যান ঘুরত, জানলার ধারে ধুলো জমা আলো, আর তাদের অন্তহীন হাসির গল্প।

কিন্তু আয়নের যাওয়ার আসল কারণটা অন্য কোথাও।
অরুন্ধতী।
অরিন্দমের মা।

তার আপাত সাদামাটা জীবনে অরুন্ধতীর মধ্যে আয়ন একটা নীরব আকর্ষণ খুঁজে পেতো।অরুন্ধতী কে দেখে মনে হতো যেন বহুদিন নিজের জন্য কিছুই ভাবেননি, অথচ ভেতরে অদ্ভুত উষ্ণতা লুকিয়ে রেখেছেন।
এক ধরনের অদৃশ্য উপস্থিতি—যা না দেখলে বোঝা যায় না।

সেদিন দরজায় নক করতেই অরুন্ধতী একটু হেসে বললেন—
“এসো আয়ন, আরিন্দমের আস্তে দেরি হবে। ভেতরে বসো।”

আয়ন ঢুকতেই শাড়ির আঁচলে ভেজা চুলের গন্ধটা নাকে এল—একটা বাড়ির, এক নারীর, এক অদ্ভুত শান্তির গন্ধ।
অরুন্ধতীর চোখে ক্লান্তির তিরচাপা ছাপ, কিন্তু সেই ক্লান্তির মধ্যেই ছিল নরম আলোর মতো কিছু।

চা এনে দিয়ে তিনি বললেন—
“তোমাকে আজকাল খুব চিন্তায় মনে হয়। সব ঠিক আছে?”

আয়ন হালকা হাসল, কিন্তু চোখ সরাতে পারল না।

“চিন্তা… হ্যাঁ, আছে। নিজের কথাই ভাবছি।”

“নিজের কথা?” অরুন্ধতীর গলায় আস্ত প্রশ্ন, নরম কৌতূহল।
“এই বয়সে নিজের কথা ভাবা খুব জরুরি। কিন্তু তোমাকে কেমন যেন ছটফট করতে দেখাচ্ছে।”

আয়ন নীচু গলায় বলল—
“কিছু দৃশ্য… কিছু মানুষ… মাথা থেকে বেরোয় না।”

অরুন্ধতী কাপটা নামিয়ে রাখলেন।
“হুম। কারও কথা বলছ?”

আয়ন তাকিয়ে রইল তার মুখের দিকে।
বলার মতো সাহস জন্মালেও শব্দটা বেরোতে পারল না।
বাতাসে যেন চাপা উত্তাপ জমে উঠল।

অরুন্ধতী নিজের চুলটা কানের পেছনে সরাতেই আয়নের মন কেমন করে উঠল—
যেন একটা সামান্য নড়াচড়া তাকেও অল্প কাঁপিয়ে দিল।

“তুমি কিছু বলবে?”
অরুন্ধতীর কণ্ঠটা অদ্ভুতভাবে নরম হয়ে গেল।
“নাকি শুধু একদৃষ্টে দেখেই যাবে?”

আয়ন ফিসফিস করে বলল—
“দেখা কখনো কখনো কথা বলার থেকেও অনেক বেশি বলে দেয়।”
নিমেষেই অরুন্ধতীর নিশ্বাস আটকে গেল।
তিনি একটু মুখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকালেন—
বাইরে সন্ধ্যা নামছে, নরম একটা নীলচে আলো ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

“এভাবে কথা বলো না আয়ন,”
তার গলায় এক অদ্ভুত কম্পন,
“এটা… ঠিক না।”

আয়ন ধীরে বলল—
“ঠিক-ভুলের সংজ্ঞা তো সবার কাছে এক নয়, কাকিমা।”

“আমি তোমার কাকিমা,”
অরুন্ধতীর গলায় অনুরোধ আর সতর্কতা মিশে গেল।
“এই সীমা তুমি ভুললে চলবে না।”

আয়ন এবার প্রথমবারের মতো তার চোখে সরাসরি তাকাল—
“কিন্তু চোখ তো সীমা মানে না।
ওরা তো যা দেখে… শুধু সেটাই বলে।”

অরুন্ধতীর গলা শুকিয়ে গেল।
এক পলক সেই নীরব আলো আয়নের দিকে ছুঁড়ে দিলেন তিনি—
যেন নিজের অজান্তেই একটা দরজা সামান্য খুলে দিলেন আবার তাড়াতাড়ি বন্ধও করতে চাইলেন।

তিনি উঠে দাঁড়ালেন।
“চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে… আরেকটু দিই।”

কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি রান্নাঘরের দিকে হাঁটলেন কিন্তু যাওয়ার আগে দরজার কাছে এক মুহূর্ত থেমে আয়নের দিকে তাকালেন।অরুন্ধতী আর কিছু বললেন না, কিন্তু তার চোখের ভিতর এমন এক স্রোত বয়ে গেল যাকে ভাষায় বাঁধা যায় না।

ঠিক তখনই অরিন্দমের বাইকের শব্দ বাইরে ভাসল।
অরুন্ধতী যেন বাস্তবে ফিরে এলেন।
এক নিঃশ্বাসে নিজেকে গুছিয়ে বললেন—

“আজকের কথা বাইরে যেনো না যায়।আর তুমি যা ভাবছো কোনোদিন সেটা সম্ভব নয়।”

অরিন্দম দরজায় ঢুকতেই সবকিছু যেন স্বাভাবিক হয়ে গেল।

 অধ্যায় ২

পরদিন আয়ন কলেজে গেলেও ক্লাসে মন বসছিল না।
বই খুলেছে, কিন্তু পাতার ওপরের লেখা মাথায় কিছু ঢুকছে না।
মাঝে মাঝে ফোন বের করে আবার রেখে দিচ্ছে—
নিজেই বুঝতে পারছে, নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন ঘটছে।

অরুন্ধতীর চোখ,
সেদিনের সেই কথার স্বর,
তার নীরব দৃষ্টি—
সবকিছু মাথার মধ্যে অবিরত ঘুরছিল।

ওদিকে, অরুন্ধতীও যেন অস্বাভাবিক নীরব হয়ে পড়েছিলেন।কিন্তু স্বাভাবিক ছিল না তার নিজের মন।

—“চোখ তো সীমা মানে না।”

এই লাইনটা তাকে অস্বস্তি দিচ্ছিল,
আবার এক অদ্ভুত টানও তৈরি করছিল।
কেন যে ছেলেটার এই কথায় তার মন কেঁপে উঠছে— তিনি নিজেই বুঝতে পারছিলেন না।
অরিন্দম লক্ষ্য করেছিল—
মা হঠাৎ করে খুব চুপচাপ হয়ে গেছে।
কিন্তু সে ভাবল হয়তো বয়স, কাজের চাপ, বা শরীর ভালো নেই—
এইটুকু।

---


সন্ধ্যায় আয়নের ফোনে অরিন্দম কল করল।

“কাল আসবি তো? মা বলছিল একটা ফর্ম নিয়ে তোর সঙ্গে কথা বলবে।”

আয়ন বুঝল অরিন্দম জানে না,
কিন্তু অরুন্ধতীর মাথায় আয়নের কথাই ঘুরছে।

“আচ্ছা, যাবো,”
সে বলল,
কিন্তু গলার ভিতরের ধুকপুকানি লুকিয়ে রাখল।

ফোন কেটে যেতেই মনে হচ্ছিল
সে যেন একটা নিষিদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে—
যা খোলা উচিত নয়,
তবু হাত এগিয়ে যাচ্ছে।


---

পরের দিন — 

অরিন্দম বেরিয়ে গেছে টিউশনে।
বাড়ির দরজা খুলতেই অরুন্ধতী একটু থমকে গেলেন।
আয়নও হাতের ব্যাগটা শক্ত করে ধরল।

“এসো,”
অরুন্ধতী বললেন,
কিন্তু গলায় সেই আগের দিনের মতো দৃঢ়তা ছিল না।
নরম, সাবধান, অস্থির একটা সুর।

আয়ন ঢুকতেই টের পেল—
আজ বাড়িটা অদ্ভুতভাবে নীরব।
টিভি বন্ধ, রান্নাঘর পরিষ্কার, বসার ঘরেও কোনো আওয়াজ নেই।

অরুন্ধতী জিজ্ঞেস করলেন—
“চা খাবে?”

“হ্যাঁ,” আয়ন বলল,
কিন্তু তার চোখ অরুন্ধতীর দিকে আটকে ছিল।

অরুন্ধতী চা বানাতে গিয়ে হাত কাপে সামান্য কেঁপে গেল।
তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন—
“তুমি প্লিজ আমাকে এভাবে দেখবে না!
একবারেই অস্বস্তি লাগে।”

আয়ন খুব শান্তভাবে বলল—
“আপনাকে দেখছি বলে অস্বস্তি লাগছে,
নাকি… কারণটা অন্য কিছু?”

অরুন্ধতী তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন না।
চুলটা কানের পেছনে সরাতে সরাতে বললেন—

“আয়ন, তুমি এখন যেটা ভাবছ,
এসব কোথাও গিয়ে টেকে না।
জীবন এত সহজ না।”

“কিন্তু অনুভূতি তো এমনিই হয়,”
আয়ন বলল,
“ওটা তো কেউ পরিকল্পনা করে না।”

অরুন্ধতী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“তোমার বয়স কম।
তোমার মনে যা হচ্ছে সেটা খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু আমার পক্ষে…
এই অবস্থায়… এটা ঠিক নয়।”

আয়ন একটু এগিয়ে এসে বসল।
স্পর্শ করেনি,
কিন্তু দূরত্বটা আগের দিনের তুলনায় অনেক কম।

“আপনি কি সত্যিই শুধু ‘ঠিক নয়’ কারণেই নিজেকে থামাচ্ছেন?”
আয়ন জিজ্ঞেস করল।

অরুন্ধতী চোখ তুলে তাকালেন—
তার চোখে ক্লান্তি, লড়াই,
আর সেই লড়াইয়ের নীচে একটা নরম পরাজয়।

তিনি ধীরে বললেন—

“যা ভাবছ, তা বলার মতো বোকা আমি নই…
আর যা সত্যি… তা অস্বীকার করার মতো শক্তিও নেই।”

আয়নের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল।
সেই স্বীকারোক্তি ছিল অস্পষ্ট, কিন্তু স্পষ্টের থেকেও শক্তিশালী।

ঠিক তখনই দরজার বাইরে অরিন্দমের গলার আওয়াজ।

অরুন্ধতী ফিসফিস করে বললেন—
“আজকের মতো এখানেই শেষ।
তুমি কিছু ভুল করবে না।
আমাদের কেউই না।”

 
অধ্যায় ৩ —

পরদিন বিকেলটা অরুন্ধতীর কাছে যেন একটু অস্বাভাবিক লাগছিল।
দিনভর বাড়ির কাজ, কলেজের অনলাইন নোট তৈরি, আর মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই আয়নের কথাগুলো মনে পড়ে যাওয়া—
সব মিলিয়ে একটা অদেখা চাপ তার ভেতরে জমে ছিল।



বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় হঠাৎ দেখল আয়ন ফুটপাথের ধারে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলছে।
অরুন্ধতী পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছিল,
কিন্তু আয়ন তাকে দেখে ফোন কেটে এগিয়ে এল।

“আন্টি, আপনি ঠিক আছেন?”
মুখে খুব শান্ত স্বর,
তবু চোখে খাঁটি উদ্বেগ।

অরুন্ধতী এক মুহূর্ত থমকে গেল।
কেউ কি সত্যিই লক্ষ্য করছে সে ক্লান্ত কিনা?
অথবা তার মন ভাল নেই কিনা?

সে একটু হাসল—
“হুঁ… ভালো আছি। শুধু একটু কাজের চাপ।”

আয়ন শান্তভাবে মাথা নাড়ল।
কথা না বলেও যেন বুঝিয়ে দিল—
সে বিশ্বাস করছে না।

দু’জনে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে গলির ভেতরে ঢুকল।
হালকা বাতাস বইছে,
রোদের তাপ কমে রাতের গন্ধ আসছে।

আয়ন হঠাৎ বলল—
“গতকাল আপনাকে একটু অন্যরকম লাগছিল।
কিছু চিন্তা?”

প্রশ্নটা খুব ব্যক্তিগত নয়,
তবু অরুন্ধতীর মনে খোঁচা লাগল।

“না… তেমন কিছু না,”
সে শান্ত গলায় বলল,
কিন্তু নিজের মধ্যেই বুঝল—
এই কথাটা পুরো সত্যি নয়।



বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অরুন্ধতী ব্যাগ খুলে চাবি খুঁজছিল।
সেই সময় আয়ন এগিয়ে এসে একেবারে সহজভাবে বলল—
“ধরুন, এক হাতে ব্যাগ নিয়ে চাবি বের করা ঝামেলা। দিন, আমি ধরে দিচ্ছি।”

এই নিত্যদিনের সাহায্যেই অরুন্ধতীর বুকের ভেতরে কিছু যেন গলে গেল।
এতদিন কেউ এমন করে খেয়াল করেনি যে ব্যাগটা তার জন্য ভারী হতে পারে।

চাবি খুলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে সে অনুভব করল—
একটা বাড়তি নরম জায়গা তৈরি হচ্ছে তার মনে,
যেখানে আয়নের উপস্থিতি অদ্ভুতভাবে আরাম দেয়।

“তুমি যাও, আয়ন। সময় হবে,”
অরুন্ধতী বলল।

আয়ন সামান্য থেমে বলল—
“আন্টি… মাঝে মাঝে মনে হয় আপনি খুব একা।
হয়তো ভুল, কিন্তু… মনে হয়।”

এই বাক্যটাই অরুন্ধতীর ভেতরের কোনও পুরোনো তালা নরম করে দিল।
কেউ এভাবে তাকে দেখেছে—
এটা ভাবতেই কেমন যেন শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল।

সে খুব মৃদু স্বরে বলল—
“সবাই তো সব বোঝে না, আয়ন।”

তারপর বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিল।



ভেতরে ঢুকেই অরুন্ধতী টের পেল,
আজ সে নিজেকে একটু বেশি প্রকাশ করেছে।
কেন জানি না—
আয়নের সামনে নিজের ভেতরের ক্লান্তি লুকোতে পারল না।

দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ স্থির রইল।
মনে একটাই প্রশ্ন—
আয়ন কি সত্যিই লক্ষ্য করে, নাকি সে-ই বেশি ভাবছে?

নিজেকে ধমক লাগাতে গিয়েও পারল না।
কারণ একটা কথা হঠাৎ সত্য হয়ে উঠছিল—
যে কথাটা সে কাউকে কখনও বলতে পারেনি—
কেউ তার দিকে এমনভাবে তাকায় না।

একটা সাধারণ, মনোযোগী দৃষ্টি—
যেটা তার ভিতরের অব্যক্ত কথাগুলো খুঁজে পায়—
ওটা তার জীবনে অনেকদিন ছিল না।



আয়ন বাড়ি ফেরার পথে কয়েকবার মোবাইল বের করে আবার রেখে দিল।
লিখতে চাইছে,
তবু মনে হচ্ছে—
এটা কি বেশি হয়ে যাবে?

কিন্তু শেষমেষ এক ছোট্ট মেসেজ পাঠিয়ে দিল—

“আপনার মুখটা খুব ক্লান্ত লাগছিল আজ।
নিজের খেয়াল রাখবেন।”

পাঠিয়েই মাথার মধ্যে একটা তীক্ষ্ণ অস্বস্তি—
এইভাবে কথা বলা কি ঠিক?

তবু কোথাও স্বস্তিও ছিল।
কারণ সে জানে,
অরুন্ধতীর নীরবতা তাকে টেনে নিয়ে যায় অরুন্ধতীর কাছে।




মেসেজটা দেখে অরুন্ধতীর মনে অদ্ভুত এক অনুভূতি উঠল—
কেউ তার ক্লান্ত মুখ লক্ষ্য করেছে।
কেউ সত্যিই বলেছে—নিজের খেয়াল রাখুন।

অনেকক্ষণ ফোনটা হাতে নিয়ে বসে থাকার পর
সে একটা খুব ছোট উত্তর দিল—

“হুম। ধন্যবাদ, আয়ন।”

অতিরিক্ত কিছু বলল না।
তবু কথাটা তার বুকের ভেতরে অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে দিল।

কোনো রোম্যান্স নয় এখনো,
কোনো স্বীকারোক্তি নয়,
কোনো নিষিদ্ধ উত্তেজনাও নয়—

শুধু দু’জনার
না-বলা কথার মাঝখানে জন্ম নেওয়া
একটা নীরব, বাস্তব, মানবিক সংযোগ।

যেটা বিপজ্জনক—
কারণ সত্যিকারের সম্পর্ক সবসময়ই একটু বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।


---

অধ্যায় ৪ 

আয়ন সেদিন বাড়ি থেকে বেরোতেই আকাশ ঝিমঝিম করে নামল নিচে।
শহরের আলো গুলিয়ে উঠছে বৃষ্টির ফোঁটায়—সবকিছু যেন একটু অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ঠিক যেমন ক’দিন ধরে তার নিজের ভিতরটাও।

সে হেঁটে হেঁটে অরিন্দমদের বাড়ির গলিতে ঢোকে।
মোবাইলে অরিন্দম মেসেজ করেছে—
“আজ বাড়ি ফিরতে দেরি হবে, রাতে প্র্যাকটিস আছে।”

কিন্তু আয়নের মন জানে, সে আজ এখানে আসছে অন্য কারণে।

দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকা অরুন্ধতীকে দেখে তার হৃদপিণ্ড আবার সেই অদ্ভুত ছন্দে কেঁপে ওঠে—
দোষের, টানার, আটকাবার, আবার কাছে টানার—এক জটিল আবেগের ছন্দ।

অরুন্ধতী এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে।
তার চোখে সেই পরিচিত ক্লান্তির ছায়া, কিন্তু আজ তার মধ্যে আরেক রকম এক খোলা ভঙ্গি আছে—যেন নিজের ভেতরের একটা দরজা চুপচাপ খুলে রেখে দিয়েছে।

“এসো আয়ন… ভেতরে এসো,”
তার কণ্ঠটা আশ্চর্যভাবে নরম।

আয়নের কাঁধ ভিজে আছে, চুল থেকে বৃষ্টি পড়ছে মেঝেতে।
অরুন্ধতী তোয়ালে এগিয়ে দেয়।

“শরীর খারাপ হয়ে যাবে।”
এটা সাধারণ কথা, কিন্তু তাদের মাঝে আজকাল সাধারণ শব্দও অদ্ভুতভাবে ভারি হয়ে থাকে।

আয়ন তোয়ালেটা নিয়ে চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
অরুন্ধতী চোখ সরিয়ে নেয়, যেন বুঝতে পেরেও না-পাওয়ার ভান করছে।


---



দু’জনে সোফায় বসে চা খেতে খেতে হালকা কথা বলে, কিন্তু মাঝেমাঝে এমন নীরবতা তৈরি হয়, যা সামান্য শব্দেও ভেঙে যায়।

আয়ন প্রশ্ন করে—
“আন্টি… মানে… আপনি আজ খুব ক্লান্ত লাগছে।”

অরুন্ধতী হালকা হাসে।
“বয়স তো হয়েছে অয়ন… তুমি তো ছোট ছেলে, বোঝো না এসব।”


আয়ন মৃদু আহত গলায় বলে—
“আপনি আমাকে এভাবে বললে… ভাল লাগে না।”

অরুন্ধতী কাপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জানালার বাইরে তাকায়।
তার গলাটা একটু ভারী শোনায়—
“তোমার ভাল কি লাগে আর কি লাগে না… সেটা নিয়ে ভাবার জায়গায় নেই আমি।”

আয়ন ধীর গলায় বলে—
“কিন্তু আপনি ভাবেন।”

এই এক বাক্যেই অরুন্ধতীর শ্বাস আটকে যায়।
কিন্তু সে উঠে দাঁড়ায়।

— “তুমি যাও আজ। দেরি হয়ে গেছে।”
তার কণ্ঠ কাঁপে, কিন্তু দৃঢ়।


আয়ন ধীরে ধীরে দরজার দিকে হাঁটে।
অরুন্ধতী পেছন থেকে তাকিয়ে থাকে—
তার মুখে এমন একটা অপরাধবোধ-ভরা অনুরাগ, যা সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না।
[+] 7 users Like NILEEM's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
Darun
Like Reply
#3
Darunnnn
Like Reply
#4
গল্প টা সুন্দর এগোচ্ছে.. পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়..
চরিত্র গুলোর বয়স জানালে ভালো লাগতো
Like Reply




Users browsing this thread: 11 Guest(s)