4 hours ago
(This post was last modified: 4 hours ago by Coolraj1000. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
কলকাতার এক পুরোনো পাড়ার ঘিঞ্জি রাস্তা পেরিয়ে যখন নিবেদিতা সেন হেঁটে আসত, তখন আশেপাশে একটা চাপা গুঞ্জন উঠত। প্রকৃতি যেন অত্যন্ত যত্নে তাকে গড়ে তুলেছিল—তাকে দেখলেই বোঝা যেত, সে সাধারণের ভিড়ে থাকার জন্য নয়, বরং রূপালী পর্দার আলো ঝলমলে মঞ্চের জন্যই জন্মেছে।
নিবেদিতার উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, বয়স ২৩,যা তাকে ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে দিত। তার গায়ের রঙ যেন চাঁদের আলোয় মোড়ানো, এক ঝলমকে যে কাউকেই মুগ্ধ করে দেওয়ার মতো উজ্জ্বল গৌরবর্ণ। তার মুখাবয়ব ছিল নিখুঁত, যেন কোনো বিখ্যাত ভাস্কর যত্ন নিয়ে তৈরি করেছেন—তীক্ষ্ণ নাক, ধনুকের মতো টানা ভুরু, আর গভীর, কাজলকালো চোখ। সেই চোখে স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাসের এক অদ্ভুত মিশ্রণ খেলা করত।
শারীরিক গঠনেও সে ছিল যেন এক গ্রীক দেবী। প্রতিটি ভাঁজ, প্রতিটি রেখা ছিল সুষম এবং আকর্ষণীয়। সামান্য ঢেউ খেলানো কোমর, টানটান পেট, আর তার চলাফেরায় এমন এক ছন্দ ছিল যা সব সময় এক রাজকীয় আকর্ষণ তৈরি করত। টাইট জিনস আর সাধারণ টপসেও তার এই নিখুঁত নায়িকাসুলভ ফিগার স্পষ্ট ফুটে উঠত। চললে মনে হতো যেন মঞ্চে আলো ফেলে কেউ হাঁটছে। তার লম্বা, ঘন কালো চুলগুলো পিঠের ওপর মুক্তোর মালার মতো ছড়িয়ে থাকত। এক কথায়, তাকে দেখলে মনে হতো, যেকোনো মুহূর্তে সে সিনেমার পোস্টারে জায়গা করে নিতে পারে।
নিবেদিতা সবেমাত্র তার প্রথম বড় অডিশন দিতে এসেছে। তার বুক ধুকপুক করছে, কারণ এটাই তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ। স্টুডিওর বাইরে দাঁড়িয়ে সে শেষবারের মতো নিজেকে আয়নায় দেখে নিল। সে জানে, এই চেহারা তাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।
নিবেদিতার গ্ল্যামারাস চেহারার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক ভাঙাচোরা বাস্তবতা। কলকাতার একটি পুরনো বাড়ির দু’কামরার ফ্ল্যাটে তাদের পরিবার কোনোমতে দিন গুজরান করত। বাবা একটি ছোট ছাপাখানায় কাজ করতেন, মাইনে যৎসামান্য। মা সেলাইয়ের কাজ করে সংসারকে কিছুটা সাহায্য করতেন। অভাবের তাড়নায় তাদের বাড়িতে বিলাসিতা ছিল এক দূর আকাশের তারা। নিবেদিতার প্রতিটি পোশাকই ছিল যত্ন করে সেলাই করা বা কম দামে কেনা, কিন্তু তার আকর্ষণীয় ফিগারের জন্য তাতেই তাকে লাস্যময়ী দেখাত।
পড়াশোনায় নিবেদিতার মন ছিল না বললেই চলে। কোনোমতে কলেজের গণ্ডি পার করা তার লক্ষ্য ছিল। কারণ সে জানত, ডিগ্রি দিয়ে নয়, বরং তার অসাধারণ রূপ দিয়েই তাকে নিজের ভাগ্য গড়তে হবে। ছোটবেলা থেকেই সে সিনেমা দেখত আর ভাবত, “আমি তো ওদের থেকেও অনেক সুন্দর, তবে কেন আমি পর্দায় থাকব না?” তার এই আত্মবিশ্বাসই ছিল তার একমাত্র পুঁজি।
সন্ধ্যার পর কলেজ থেকে ফিরে নিবেদিতা তার প্রিয় বান্ধবী মোনালিসা-এর সাথে বাড়ির ছাদে বসেছিল। মোনালিসা ছিল তার সম্পূর্ণ বিপরীত—সাধারণ চেহারার কিন্তু পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী এবং বাস্তববাদী।
নিবেদিতা: “আর বলিস না, আজ কী অপমানটাই না হলো! ওই ম্যডামটা অডিশনে এমনভাবে নাক সিটকালেন, যেন আমি কোনো আবর্জনা। বললেন, ‘শুধু চেহারা থাকলে হয় না, অ্যাক্টিং জানতে হয়!’”
মোনালিসা: (বই থেকে মুখ তুলে) “অ্যাক্টিং তো জানতেই হবে, এটা তো আর বিউটি কনটেস্ট নয়। তুই সারাদিন শুধু ম্যাগাজিন আর সিনেমা দেখে কাটাস। একটা ওয়ার্কশপে ভর্তি হলে পারিস।“
নিবেদিতা: “ওয়ার্কশপ! তার জন্য টাকা লাগবে। আর তুই তো জানিস, আমাদের বাড়ির কী অবস্থা। বাবার আজকাল শরীরও ভালো যাচ্ছে না। আর কতদিন এই টানাটানির সংসার চলবে, বল তো? আমার এই রূপটাই তো একমাত্র সম্পদ, এটা কাজে লাগাতে পারছি না কেন?”
মোনালিসা: (গভীর নিশ্বাস ফেলে) “রূপ সম্পদ, মানছি। কিন্তু এই লাইনে রূপ নিয়ে কী করতে হয়, সেটাও তো জানিস। চারিদিকে সবাই কেমন সুযোগের সন্ধানে থাকে। জানিস তো, ওই প্রোডিউসার মি. চ্যাটার্জি-এর নাকি একটা নতুন বড় প্রজেক্ট আসছে। শুনেছি উনি নতুন মুখ খুঁজছেন। তবে লোকটা বড্ড...”
নিবেদিতা: (উৎসুক হয়ে) “কে? বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি? আরে বাবা, উনি তো বিশাল লোক! ওঁর কাছে কি যাওয়া যায়?”
মোনালিসা: “যাওয়া তো যায়, কিন্তু... শুনেছি ওঁর কাছে সুযোগ পেতে গেলে শুধু অডিশন দিলে হয় না। অন্যরকম ‘ডিল’ করতে হয়। সবাই বলাবলি করে, উনি একটু ‘ওল্ড-কলেজ’, অর্থাৎ... বুঝতেই পারছিস।“
নিবেদিতা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইল। তার চোখ দুটি চিকচিক করে উঠল। তার মনে হলো, এক ঝলকে তার সমস্ত সমস্যা সমাধানের পথ খুলে গেল।
নিবেদিতা: (ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে) “কেমন ‘ডিল’ করতে হয়? একটু খুলে বল তো। আর কী এমন করতে হয় যা একজন ট্যালেন্টেড অভিনেত্রী করতে পারে না?”
মোনালিসার কথা শুনে নিবেদিতা যেন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তার চোখেমুখে তখন তীব্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার তাড়না, আর খানিকটা অজানা ভয়ের মিশ্রণ। সে মোনালিসার দিকে আরও ঝুঁকে এল, যাতে তাদের ফিসফিসানিটুকু অন্য কেউ শুনতে না পায়।
নিবেদিতা: (আস্তে করে) “কী ধরনের ‘ডিল’, মোনালিসা? স্পষ্ট করে বল। আমার সময় নেই আর ছোটখাটো রোল বা ওয়ার্কশপ নিয়ে নষ্ট করার। আমি জানি, আমি এই সুযোগ পেলে রাতারাতি সব পাল্টে দিতে পারি।“
মোনালিসা: (চুপিসারে চারপাশে একবার তাকিয়ে) “দীতা, তুই তো বাইরের জগতটা জানিস। এই গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ পাওয়া সহজ নয়।
বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি, যিনি এত বড় প্রোডিউসার, তিনি নাকি শুধু কাজের বিনিময়ে... তোকে তোর নিজের শরীর বা ঘনিষ্ঠতা দিতে বলতে পারেন।“
নিবেদিতার সুন্দর মুখটা এক লহমায় কঠিন হয়ে গেল। সে কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে থাকল। তার মনের ভেতর তখন দ্বন্দ্বে তোলপাড়।
নিবেদিতা: “মানে... বিছানায় যেতে হবে? শুধু একটা কাজের জন্য?”
মোনালিসা: “এই ইন্ডাস্ট্রিতে এটাই রূঢ় বাস্তবতা, দীতা। লোকে বলে, যারা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এই পথ পেরিয়ে আসে। চ্যাটার্জি সাহেবকে নিয়ে অনেক খারাপ কথা শোনা যায়—তিনি নাকি নতুন, সুন্দরী মেয়েদের এইভাবেই ব্যবহার করেন। একটা সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে তিনি যা চান, তা আদায় করে নেন। হয়তো এটাই তাদের কাছে একরকমের ‘ইনভেস্টমেন্ট’।“
নিবেদিতা: (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) “কিন্তু আমার তো আর কোনো উপায় নেই! তুই তো জানিস, বাবার শরীর খারাপ হচ্ছে, বাড়িতে জমানো টাকা প্রায় শেষ। এই একটা কাজ পেলে হয়তো আমি পুরো পরিবারকে বাঁচাতে পারি। একটা বিলাসবহুল জীবন দিতে পারি।“
মোনালিসা: “কিন্তু তোর কি মনে হয়, শুধু একটা রাতের বিনিময়ে উনি তোকে নায়িকা বানিয়ে দেবেন? একবার পা বাড়ালে, এই পথ থেকে ফেরা কঠিন হয়ে যাবে, নিবেদীতা। এটা তো তোর স্বপ্ন ছিল না—আশা-আকাঙ্ক্ষার বিনিময়ে নিজের সম্মান বিক্রি করা।“
নিবেদিতা: (দৃঢ় কণ্ঠে) “সম্মান! অভাবের সংসারে সম্মানের দাম কতটুকু, মোনা? আজ আমাকে সবাই রূপসী বলে, কিন্তু কেউ তো খোঁজ নেয় না, কাল কী খাব! আমার মনে হয়, আমি যদি এই একটা ‘কষ্ট’ মেনে নিই, বিনিময়ে হয়তো আমি অনেক বড় কিছু অর্জন করতে পারব। উনি তো আর সারাজীবন আমার ওপর কর্তৃত্ব করবেন না। একটা বড় ব্রেক পেলে আমি নিজের ক্ষমতা প্রমাণ করে দেখাবো।“
মোনালিসা কিছু বলার আগেই নিবেদিতা দ্রুত উঠে দাঁড়াল। তার চোখে তখন আর দ্বিধা নেই, আছে এক ঠান্ডা সংকল্প।
নিবেদিতা: “আমি কালই মি. চ্যাটার্জি-এর সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্টের চেষ্টা করব। অডিশন দিতে গিয়ে ফেল হয়েছি, কিন্তু এই ‘ডিল’-এর জন্য আমি প্রস্তুত। এই একবারের জন্য আমাকে সুযোগ পেতেই হবে।“
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিবেদিতা স্থির করল, আজ আর দেরি নয়। কলেজে না গিয়ে সে দ্রুত মোনালিসার কাছ থেকে কোনোমতে সংগ্রহ করা বিশাল প্রযোজক বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জি-এর প্রোডাকশন হাউসের ল্যান্ডলাইন নম্বরটি ডায়াল করল। হাত কাঁপছিল, কারণ সে জানত এই ফোন কলটি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে—হয় স্বপ্নের দিকে, না হয় এক অন্ধকার পথের দিকে।
ফোনটি ধরলেন প্রোডাকশন হাউসের প্রধান সহকারী, সম্ভবত একজন মহিলা, যার কণ্ঠস্বর ছিল বেশ রাশভারী।
নিবেদিতা: “নমস্কার। আমি নিবেদিতা সেন বলছি। আমি গতকাল একটি অডিশনে এসেছিলাম, কিন্তু... আমার মনে হয় আমি একটু ভুল করে ফেলেছি। আমি বিশ্বজিৎ স্যারের সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে চাই।“
সহকারী: (শুকনো গলায়) “ব্যক্তিগতভাবে? কিসের জন্য? স্যার তো শুধু পরিচালক আর কাস্টিং ডিরেক্টরের মাধ্যমেই নতুন মুখের সাথে কথা বলেন।“
নিবেদিতা কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করল। সে মোনালিসার ইঙ্গিত মনে করে নিলো—এই লাইনে কথা বলার ভঙ্গিও আলাদা হয়।
নিবেদিতা: (কণ্ঠস্বর যথাসম্ভব আত্মবিশ্বাসী করে) “দেখুন, আমার মনে হয় না আমি কাস্টিং ডিরেক্টরকে বোঝাতে পেরেছি। আমার মনে হয়, আমি স্যারের প্রজেক্টের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। আমি শুধু পাঁচ মিনিট সময় চাই, যেখানে আমি সরাসরি আমার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে পারি। আপনি স্যারকে বলবেন, একজন অত্যন্ত আবেদনময়ী নতুন মুখ দেখা করতে চাইছে।“
সহকারী মহিলাটি ফোনের অন্য প্রান্তে এক মুহূর্তের জন্য চুপ হয়ে গেলেন। নিবেদিতা বুঝতে পারল, তার বলা ‘আবেদনময়ী’ শব্দটি সঠিক জায়গায় আঘাত করেছে। এই লাইনে এর মানে কী, তা তিনি ভালোভাবেই জানেন।
সহকারী: (আওয়াজে সামান্য পরিবর্তন এনে) “ঠিক আছে। আপনি অপেক্ষা করুন। আমি স্যারকে জিজ্ঞেস করছি।“
কয়েক মিনিট পর সহকারী ফিরে এলেন।
সহকারী: “স্যার এখন একটু ব্যস্ত আছেন। তবে কাল সন্ধ্যায় তিনি আপনাকে সাতটায় তাঁর ব্যক্তিগত অফিসে দেখা করতে বলেছেন। মনে রাখবেন, এটি কোনো সাধারণ ইন্টারভিউ বা অডিশন নয়। আপনি কি বুঝতে পারছেন?”
নিবেদিতা: (দীর্ঘশ্বাস গোপন করে) “হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ। আমি ঠিক সাতটায় পৌঁছে যাব।“
অ্যাপয়েন্টমেন্ট চূড়ান্ত হলো। নিবেদিতার হৃৎপিণ্ড দ্রুত তালে ধুকপুক করছে। সে জানে, এই সাতটা সন্ধ্যা তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সময়।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক হওয়ার পর নিবেদিতার মন এক কঠিন দ্বন্দ্বে ভুগতে শুরু করল। এক দিকে তার আত্মসম্মান আর ভয়; অন্য দিকে পরিবারের আর্থিক মুক্তির স্বপ্ন।
রাতে বিছানায় শুয়ে সে বারবার নিজের কাছেই কৈফিয়ত দিচ্ছিল, “এটা তো আমার দোষ নয়। সমাজ আমাকে এই পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। যদি আমি সাধারণ মেয়ে হতাম, তাহলে হয়তো টিউশনি করে বা কেরানির কাজ করে সংসার চালাতাম। কিন্তু ভগবান যখন আমাকে এই রূপ দিয়েছেন, তখন কেন আমি তা কাজে লাগাব না? এই কাজটা হয়তো আমার জন্য একটা ‘শর্টকাট’। হাজার চেষ্টা করেও যা পেতাম না, তা এই এক রাতের বিনিময়ে আসতে পারে। এটা তো ব্যবসার মতো—আমি আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা দিচ্ছি, বিনিময়ে নিচ্ছি আমার স্বপ্নের কাজ।“ নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সে বারবার মনে মনে আবৃত্তি করতে থাকল যে, এই কাজটা করতে হচ্ছে কেবল একটা বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটা ছোট্ট আপস।
রাতের খাবারের পর নিবেদিতা তার মায়ের কাছে গেল। তার এই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতের কথা লুকিয়ে রাখতে হবে। যদি তারা জানতে পারে, তবে তারা হয়তো এই কাজ করতে দেবে না, হয়তো সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না।
নিবেদিতা: “মা, কাল আমার একটা খুব দরকারি মিটিং আছে। আমার এক বন্ধুর কাকা একটা বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে আছেন। তিনি আমাকে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ দিতে পারেন। কাজটা অনেক রাতের দিকে, প্রায় ৯টা-১০টা বেজে যাবে ফিরতে।“
মা: (চিন্তিত হয়ে) “এত রাতে? একা যাবি?”
নিবেদিতা: “হ্যাঁ মা। কিন্তু এটা খুব জরুরি। কাজটা পেলে আমাদের অনেক সুবিধা হবে। আমি মোনালিসাকে বলে রাখব, দরকার হলে সে ফোন করবে। তুমি চিন্তা করো না।“
মা কিছুটা দ্বিধা করলেও মেয়ের চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন আর দৃঢ়তা দেখে আর কিছু বললেন না। নিবেদিতা জানে, তার এই মিথ্যা হয়তো তাদের সাময়িক কষ্ট থেকে মুক্তি দেবে।
পরের দিন নিবেদিতা নিজেকে প্রস্তুত করল। সে আয়নার সামনে দাঁড়াল, তার চোখে এখন আর ভয় নেই, আছে এক ঠান্ডা, হিসেবি সাহস। সে জানত, মি. চ্যাটার্জি কী দেখতে চাইবেন। তাই সে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, অথচ পেশাদার একটি পোশাক বেছে নিল, যা তার প্রতিটি লাস্যময়ী ভাঁজকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরবে। সে নিজেকে প্রস্তুত করল সেই দৃশ্যের জন্য, যেখানে তাকে তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন ‘অডিশন’ দিতে হবে।
পরের দিন সন্ধ্যার সময় ঘনিয়ে আসছে। ঘড়ির কাঁটা ছয়টা পেরোতেই নিবেদিতা তার ঘরের বন্ধ দরজার আড়ালে শুরু করল চূড়ান্ত প্রস্তুতি। সে জানে, আজ শুধু তার রূপ নয়, তার সাহস এবং আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করতে হবে।
নিবেদিতা বেছে নিল তার সবচেয়ে সাহসী এবং উত্তেজক পোশাকটি—একটি গভীর লাল রঙের ককটেল ড্রেস। পোশাকটি ছিল রেশম এবং সাটিন মিশ্রিত, যা তার শরীরের প্রতিটি রেখাকে নিপুণভাবে অনুসরণ করে ফুটিয়ে তুলছিল। ড্রেসটির গলা ছিল সামান্য ঝোলানো (plunging neckline), যা তার সুডৌল বক্ষদেশের আভাস দিচ্ছিল। অন্যদিকে, পোশাকটি ছিল হাঁটু পর্যন্ত, কিন্তু নিচে ছিল একটি গভীর কাট, যা চলতে গেলে তার আকর্ষণীয় পা-জোড়ার অনেকটা অংশ উন্মুক্ত করছিল। এই লাল রঙটি যেন নিবেদিতার ভিতরের লুকানো আগুন এবং চরম উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক।
সে তার দীর্ঘ, ঘন কালো চুলগুলোকে একপাশে কাঁধের উপর এনে ফেলল, যা তার ঘাড়ের নিচু অংশটিকে আরও বেশি আবেদনময়ী করে তুলল। তার কাজলকালো চোখে সে মোটা করে লাইনার টেনে দিল, ঠোঁটে লাগাল ড্রেসের রঙের সঙ্গে মানানসই গভীর লাল লিপস্টিক। হালকা ফাউন্ডেশনের ওপর চিকবোন হাইলাইট করায় তার তীক্ষ্ণ মুখাবয়ব আরও উজ্জ্বল ও ধারালো দেখাল। সুগন্ধি স্প্রে করল, যার মিষ্টি গন্ধ এক ধরনের রহস্যময়তা তৈরি করল। পায়ে পরল স্টিলেটো হিল, যা তার উচ্চতা আরও বাড়িয়ে দিল এবং হাঁটার সময় এক বিশেষ ছন্দ তৈরি করল।