Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 2.6 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic শ্বশুরনামা
#1
টুকরো টুকরোকিছু ঘটনা পোস্ট করা হবে ,জামাই শ্বশুর সম্পর্ক নিয়ে । হালকা ফুলকা ঘটনা nothing serious ।


১/শ্বশুরবাড়িতে বউয়ের প্রথম রান্না ও তার রিএকশন

২/ বাসরের আগে হাজত
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
শ্বশুর বাড়িতে বউয়ের প্রথম রান্না ও তার রিএকশন

 
 
 
রফিক বিয়ে করেছে আজকে চতুর্থ দিন । প্রায় তিন বছরের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত পরিণতি পেয়েছে , তাই রফিক বেশ খুশি । তবে কাঠ খড় কম পোড়াতে হয়নি । বেশি ঝামেলা করেছে ওর শ্বশুর । নানা রকম উঠভট সব ঝামেলা পাকিয়েছে লোকটা । রফিক প্রথম প্রথম খুব রাগ করতো । কিন্তু ধিরে ধিরে মানিয়ে নিয়েছে । শ্বশুর বলে কথা।
 
বিছানায় শুয়ে শুয়ে রফিক আড়মোড়া ভাঙ্গে । গতরাতের দুজনে পাগলের মত ভালোবাসাবাসি করেছে , তার রেষ এখন  বিছানা , শরীর আর মনে রয়ে গেছে । রফিকের শরীর হালকা ম্যাজম্যাজ করছে । পাশে রাখা মোবাইল থেকে টাইম দেখে রফিক, সকাল সোয়া দশটা ।  বিছানার অপর পাশটা খালি , রফিকের একটু মনক্ষুণ্ণ  হয় , এই মুহূর্তে পাশে পিয়ালি থাকলে ভালোই হতো । জড়িয়ে ধরে আরো কিছুক্ষন শুয়ে থাকা যেতো । কিন্তু কি আর করা, ভারি ভর্তি এখনো লোকজন , তাই পিয়ালি আগেই উঠে যায় ।  
 
রফিক বিছানা থেকে উঠে গোসল করে বাইরে বের হয় । বের হতেই রান্না ঘর থেকে দারুন সুবাস এসে নাকে লাগে। রফিক মনে মনে ভাবে এই কয়দিন টানা রিচ খাবার খাওয়া হয়েছে , আজকে আবার এসব কেনো? তবে রিফিক একটু পেটুক আছে রিচ খাবারে ওর আপত্তি নেই ।
 
রফিক রান্না ঘরের সামনে এসে দাড়ায় । ভেতরের দৃশ্য দেখে বেশ অবাক হয় , আবার দারুন খুশি ও হয় । রান্না ঘরে পিয়ালি সম্পূর্ণ গৃহিণী সেজে  রান্না করছে । ওর পরনে একটা সবুজ রঙের সুতি কাপড় , যার আঁচল কোমরে গোঁজা। চুল এলো খোপা করে বাধা , খুন্তি ধরা হাতে কপালের ঘাম মুছছে বার বার , আগুনের আঁচে ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে  । দারুন দেখতে লাগছে পিয়ালি কে , একদম পাকা গৃহিণী । রফিকের মন ভরে ওঠে , এই রুপে পিয়ালিকে আগে কখনো কল্পনা করেনি , কিন্তু আজ দেখে মনে হচ্চে , পিয়ালির এই রুপ দেখার জন্য ওর মন নিজের অজ্ঞাতেই আকুল ছিলো ।  
 
 মা , আমার বউ কে দু দিনেই রান্না ঘরে ঢুকিয়ে দিলেরফিক কপট রাগের স্বরে বলে ।
 
রফিকের কথা শুনে , রান্না ঘরে উপস্থিত বড় ফুপু আর মেজ মামি মুখ ঝামটা দেয় , মেঝ মামি বলে দেখেন আপা বউয়ের জন্য কি দরদ , আপনাকে দুদিনেই ভুলে গেছে
 
বড় ফুপু তাল মেলায় বলে একদম বাপের মত হইসে , একদম বউ পাগলবড় ফুপু যে সুযোগ পেয়ে ওর মা কে একটা ঠ্যাস দিয়ে দিলো , সেটা বুঝতে পেরে রফিক হা হা করে হেসে উঠলো ।
 
এদিকে পিয়ালি চোখ গরম করে রফিক কে ইশারা করছে সেখান থেকে চলে যেতে ।
 
রফিকের মা সুরাইয়া হাসতে হাসতে বলে আরে বোকা এটা বউয়ের প্রথম রান্না , এটা করতে হয় এটাই নিয়ম
 
রফিক পুরোটা সময় বউয়ের রান্না দেখে , সেই সাথে মা কিভাবে সাহায্য করছে সেটাও দেখে । পিয়ালি বার বার ভুল করে , একবার আঙুলে কিছুটা ছ্যাকা ও খায় । জীবনে কোনদিন রান্না করেনি , দেখেই বোঝা যায় । কিন্তু পিয়ালি কে মানিয়েছে ভালো । আর সব থেকে যে জিনিসটা রফিকের ভালো লাগে সেটা হচ্ছে মা আর পিয়ালির বন্ডিং , একজন পুরুষের সব চেয়ে বড় স্বপ্ন , মা আর বউয়ের বন্ডিং। রফিকের মন ভরে যায় ।
 
 
মাহাবুব সাহেব দুপুরের খাবার খেতে বসেছে , বেশ সুস্বাদু সব খাবার । কি ব্যাপার রাবেয়া , এতো এতো ভালো খাবার”  মাহাবুব খুব মজা করে খাচ্ছে । খাবার হয়েছে খুব সুস্বাদু ।
 
পিয়ালির শ্বশুর বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে , মেয়ের প্রথম রান্না আজরাবেয়া হাসি মুখে বলে ।
 
কিন্তু খাবার আর মাহাবুব সাহেবের গলা দিয়ে নামে না । মুখটা কালো হয়ে যায় । নাম মাত্র খেয়ে উঠে জান মাহাবুব সাহেব । রাবেয়া অবেক হয়ে জিজ্ঞাস করে , কম খাওয়ার কারন । কিন্তু মাহাবুব সাহেব উত্তর দেয় না।
 
সারাদিন বিকেল সন্ধ্যা আর রাতের একটা অংশ মাহাবুব নিজের স্টাডিতে একা বসে কাটিয়ে দেন। মেয়ে ফোন দিয়ে যখন জিজ্ঞাস করে খাবার কেমন হয়েছে , তখনো তেমন কিছু বলেন না । তারপর রাত প্রায় দশটার দিকে কল করেন রাফিক কে ।  এমনিতে মাহাবুব সাহেব যতটা সম্ভব রফিক কে এড়িয়ে চলেন ।
 
রফিক শ্বশুরের কল দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় । এটাই ওর মোবাইলে শ্বশুরের প্রথম কল । একটু নার্ভাস ও হয়ে যায় রফিক । সালাম দেয়ার সময় তোতলায় একটু ।  
 
ওর শ্বশুর বেশ ভালো ভাবে সালামের উত্তর দেয় । রফিক বেশ অবাক হয় । কপাল কুঁচকে ছাড়া রফিক এর শ্বশুর ওর সাথে কথাই বলে না প্রায় । সেই শ্বশুর এমন ভাবে সালাম এর উত্তর দিচ্ছে ।
 
বাবা কাল সকালে একটু আসতে পারবে ? পিয়ালিকে সাথে আনার দরকার নেই বুঝেছো , জরুরি কাজ আছে
শ্বশুরের মুখে বাবা ডাক শুনে রফিকের চোখে প্রায় পানি এসে যায় । শ্বশুর হুকুম করেছে , আর রফিক রাখবে না , সেটা হতে পারে না । জিজ্ঞাস করে কখন আসবো
 
ভোঁর পাঁচটায়”  
 
শ্বশুরের কথা শুনে রফিকের বারোটা বেজে যায় । এতো সকালে কোনদিন উঠেছে বলে মনে পরে না । ওখানে যদি পাঁচটায় থাকতে হয় তাহলে ঘুম থেকে উঠতে হবে মিনিমাম চারটায় ।  
 
সারারাত ঘুম হয় না রফিকের । যদি উঠতে না পারে এই ভয়ে । পিয়ালি প্রেমভরে কাছে টানে , কিন্তু রফিক সযত্নে এড়িয়ে যায় । এক পর্যায়ে পিয়ালি একটু রাগ করেই ওপাশ ঘুরে শুয়ে পরে । নতুন বিয়ে হয়েছে বলে বেঁচে গেলো রফিক , নইলে খবর ছিলো ।
 
রফিক চারটার সময় বিছানা ছারে । কি পরে যাবে সেই নিয়ে দোমনায় ভোগে । ফর্মাল পোশাকে যাওয়া উচিৎ কিনা বুঝতে পারে না । শেষ পর্যন্ত একটা পাঞ্জাবি পাজামা পরে নেয় । ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য ।
 
ঠিক পৌনে পাচটার সময় শ্বশুরবাড়ির সামনে হাজির হয় রফিক । পনেরো মিনিট নিচে দাড়িয়ে থাকে । তারপর ঠিক পাঁচটায় কল করে আব্বা আমি এসেছি , নিচে আছি
 
দু মিনিট পর দারোয়ান গেট খোলে চোখ মুছতে মুছতে, এতো সকালে ওঠার অভ্যাস মনে হয় দারোয়ানের ও নেই  । রফিক সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখে শ্বশুর দরজায় দাড়িয়ে , হাতে একটা চটের ব্যাগ । শ্বশুর রফিককে ভেতরেও আসতে বলে না । হাতে চটের ব্যাগ আর টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে , বাজারে জাও , রুই মাছ ইলিশ মাচ , গরুর মাংস , খাসির মাংস , মুরগী , ঘি , চাল , আর মশলা নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব চলে আসবে , নইলে দেরি হয়ে যাবে ।
 
রফিক বোকার মত দাড়িয়ে থাকে , কি বলবে বুঝতে পারে না । জীবনে কোনদিন বাজার করেনি , এখনো ওর আব্বুই বাজার করে ।   
 
যাও , দেরি হয়ে যাবেতাড়া দেয় মাহাবুব ।
 
শ্বশুরের তাড়া খেয়ে , ধিরে ধিরে সিঁড়ি বেয়ে নামে রফিক , মাথার ভেতর সব প্যাচ লেগে যাচ্ছে ।
 
 
রফিক বাজার থেকে ফেরে সকাল দশটায় । শাশুড়ি জামাইয়ের এই হাল দেখে , হায় হায় করে ওঠে , পাঞ্জাবি পাজামা কাদায় মাখামাখি , কিছু কাঁদা কপালেও লেগেছে ।
 
আরে বাবা , এই বাজার তোমাকে কে আনতে বলেছেঅবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে রাবেয়া । শাশুড়ির কাছ থেকে এমন সহানুভুতি পেয়ে প্রায় কেঁদে ফেলে রফিক ,কিন্তু  সবে মাত্র শ্বশুরের নামে নালিশ করতে যাবে , এমন সময় মাহাবুব সাহেব বেড়িয়ে আসেন , দেখেই বোঝা যাচ্ছে আরো একবার ঘুম দিয়ে উঠেছেন । রফিক সেটা দেখে প্রচণ্ড রেগে যায় আবার কান্নাও পায় । মনে মনে ভাবে ব্যাটা শ্বশুর আমাকে বাজারে পাঠিয়ে নিজে ঘুম দিয়েছে ।
 
 
আরে তুমি তো অনেক দেরি করে ফেলেছোবিরক্ত হয়ে বলে মাহাবুব , তারপর আবার  হুকুমের স্বরে বলে যাও যাও রান্না ঘরে যাও , এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে , দুপুরের লাঞ্চ একটার মাঝে হবে কিনা সন্দেহ
 
অবাক রাবেয়া কিছু বলতে যাবে , কিন্তু মাহাবুব সাহেব ওকে চুপ করিয়ে দেয় , বলে আজকে সারাদিন যেন তোমাকে বেড রুমের বাইরে না দেখি
 
রাবেয়া আবার কিছু বলতে চায় , কিন্তু মাহাবুব বলতে দেয় না , এক পর্যায়ে প্রায় ঠেলে ঠেলে বউ কে বেড রুমে দিয়ে আসে । তারপর ফিরে এসে রফিকের হাতে কি কি রান্না করতে হবে সেই লিস্ট দিয়ে দেয় । রফিক কে রান্না ঘরে পৌঁছে দিয়ে নিজে একটা চেয়ার নিয়ে রান্না ঘরের সামনে বসে থাকে । এটা ওটা বুঝিয়ে দিতে থাকে । মাছ কিভাবে ধুতে হবে , মাংস কিভাবে মেরিনেট করতে হবে , এসব সাজেশন দিতে থাকে , মাহাবুব সাহেব পাকা রাধুনি। কিন্তু জামাইকে কোন মশলা কত টুকু দিতে হবে এই সাজেশন দেয় না ।
 
রাবেয়া যত বার আসে ততবার দূর করে দেয় । এমন কি রাবেয়ার মোবাইল সিজ করা হয় । এক পর্যায়ে রাবেয়া রেগে গিয়ে নিজের ঘরে বসে থাকে । মাহাবুবের এসব পাগলামি আর সহ্য করতে পারে না ।
 
এদিকে রফিক মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে , ওর কাছে মনে হচ্ছে ওর শ্বশুর দুস্টুমি করছে , একটু পর বলবে , আরে তোমার সাথে প্রাঙ্ক  করলাম । কিন্তু তেমন কিছুই ঘটলো না , উল্টো হাল চাষের বলদ দের যেভাবে তাড়া দেয়া হয় সেভাবে তাড়া দিতে লাগলো ।
 
কিছুক্ষন পর গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত উদয় হলো , শালী প্রিয়তির । অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো কি হচ্ছে বাবা
 
মাহাবুব সাহেব সব খুলে বললে , খুশিতে লাফাতে লাগলো শালী , এমনকি মোবাইল বের করে vlog  বানাতে শুরু করলো । হাই গাইজ , আমার দুলাভাই , আজকে শ্বশুর বাড়িতে প্রথম রান্না করবে , আসুন সবাই মিলে দুলাভাইয়ের রান্না উপভোগ করি , আর হ্যা রান্নার টেস্ট কেমন হলো সেটা নিয়ে আলাদা ভিডিও হবে
 
 
দুপুরের খাবারর তৈরি করতে করতে রফিকের বিকেল পাঁচটা বেজে গেলো , এর মাঝে আবার শ্বশুরের জন্য দুবার চা বানাতে হয়েছে , হাতে চার জায়গায় ছ্যাকা খেয়েছে । এর মাঝে পিয়ালি কল করেছিলো , কিন্তু শ্বশুর সেটা ধরতে দেয় নি , টেক্সট করতে বাধ্য করেছে ।
 
বিকেল পাঁচটায় খেতে বসলো সবাই , রফিকের খাওয়ার কোন ইচ্ছা ছিলো না , তাও খেতে বাধ্য হলো , মুরগির রোস্ট মুখে দিতেই বুঝতে পারলো , আজকে আর খাওয়া হবে না । কিন্তু শ্বশুর মাহাবুব বেশ মজা করে খাচ্ছে । শাশুড়ি খাচ্ছে না । আর শালী বার বার নাক সিটকাচ্ছে আর নাকি স্বরে বলেচ্ছে ছি ভাইয়া আপনি মাছ ও ঠিক মত ভাজতে পারেন না
 
 
খাওয়া যখন প্রায় শেষ দিকে তখন শ্বশুরের মোবাইলে কল আসে , রফিক লক্ষ্য করে মোবাইল স্ক্রিনে নামটা দেখেই শ্বশুরের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । মুখে খাবার নিয়ে কল রিসভ করে , উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে আরে বেয়াই সাহেব , খেয়েছেন?”
 
ওই পাশ থেকে কি উত্তর আসে কেউ শুনতে পায় না , মাহাবুব সাহেব আবার বলে আরে ঠিক মত খান , আপনার ছেলের প্রথম রান্না
 
 
রফিক বাসায় ফেরে রাত নয়টার দিকে , বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে । ঘরে ঢুকেই দেখে ওর মা , চাচি , বড় ফুপু , বড় মামি , মেজ মামি , ছোট ফুপু সবাই বসে আছে । রফিক ওর মায়ের দিকে তাকায় । মায়ের এক্সপ্রেশন দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না । রফিক করুন দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকায় , যেন বলতে চায় খাও আরো বউয়ের হাতে প্রথম রান্না, এই দেখো প্রথম রান্নার রিএকশন”  
 
এদিকে সব ফুপু চাচি মামিদের অবস্থা এমন জেন সবাই এক্ষুনি ঢাল তোলয়ার নিয়ে পিয়ালির বাবার উপর ঝাপিয়ে পরবে ।
 
 
নিজের রুমে ঢুকে দেখে পিয়ালি বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় বিছানায় । রফিক কে দেখেই উঠে আসে , জিজ্ঞাস করে সব একা রান্না করেছো!!!” রফিক মাথা দোলায় , “যাও গোসল করে আসো , শরীর থেকে মাছ মাংস আর মশলার গন্ধ আসছে, কালকে আমি আর তুমি ওই বাড়ি যাবো , দেখো আমি  বাবার কি অবস্থা করি, আমার জামাই রে কি পাইসেরাগে গজ গজ করে পিয়ালি ।
 
রফিক কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে না থাক , কোন সমস্যা নাইতারপর জিজ্ঞাস করে তোমাকে কে কি কেউ  এই নিয়ে  কিছু বলেছে?”
 
পিয়ালি মুখ গোমড়া করে ফেলে , কিন্তু কিছু বলে না । রফিকের বুঝতে বাকি থাকে না , পিয়ালি কি গোপন করতে চাইছে ।
 
 
রাবেয়া আর মাহাবুব বিছানায় শুয়ে আছে , মাহাবুবের মুখে তৃপ্তির হাসি । রাবেয়াও হাসছে মিটি মিটি । মাহাবুব নিজের মোবাইল ওঠায় , পিয়ালি প্রায় ১২ বার কল করেছে , সাতটা টেক্সট করেছে । মাহাবুব টেক্সট খুলে দেখে না, কল ও ব্যাক করে না । কাল যে মেয়ে আসবে সেটা ও জানে ।
 
কি খুশি হয়েছোরাবেয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞাস করে ,
 
অবশ্যই , কোন মন্ত্রি যেন রাজাকে বলেছিলো , মল ত্যাগে সবচেয়ে বেশি সুখ , ওই ব্যাটাকে পেলে , রাজার জায়গায় আমিই ওর গর্দান নিয়ে নিতাম , আজকে যা হলো এর চেয়ে বড় সুখ আর দুনিয়ায় কিছুই নেই হা হা হামাহাবুব বাচ্চা ছেলেদের মত হাত তালি দিয়ে হাসে ।
 
তোমাকে যদি আমার বাবা এমন করতো?” রাবেয়া জিজ্ঞাস করে শান্ত ভাবে 

" করালে করতে হতো " মাহাবুব কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে । তারপর আবার বউয়ের দিকে তাকায় , বলে 
 
" আমি তোমার প্রতি যত্ন নিতে পারিনি তাই সারাজীবন তোমার কাছে ক্ষমা চাইতেও আমার লজ্জা নেই রাবেয়া
 
না , তুমি সুধু প্রথম দুই বছর যত্ন নেও নাই , তারপর যখন নিজের মেয়ে হলো , তখন আমার এতো যত্ন নেয়া শুরু করলে , যে মাঝে মাঝে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো যত্নের ভারেরাবেয়া হাসে
 
তারপর আবার বলে মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমার বাবাও যদি তোমার মত হতো, ছেল ছেলে করে একে একে সাত মেয়ে হয়েছিলো , তাদের খাওয়া পড়ার কষ্ট কোনদিন দেয় নি , কিন্তু এমন ভাবে লালন পালন করেছে যেন আমরা একেকজন একেকটা বোঝা , কোনরকম বড় করে বিয়ে দিতে পারলেই হয় । পড়ালেখা ততদিন করতে দিয়েছে যতদিন কোন ভালো সমন্ধ আসেনি  , তুমি জানো কেউ দেখতে আসলে কি বলতো? বলতো আপনারা যেভাবে রাখবেন সে ভাবেই থকবে , জানো এতো কান্না পেতো , মনে হতো আমি কোন মানুষ না , একটা জড় বস্তুরাবেয়ার গলা ধরে আসে ।
 
মাহাবুব পরম মমতায় স্ত্রী কে জড়িয়ে ধরে । বলে তোমাকে তোমার বাবা মা খুব ভালো মানুষ হিসেবে বড় করেছে রাবেয়া , তোমাকে যত ধন্যবাদ দেবো , ততই কম হবে , আমার জীবনটা তুমি খুব সহজ করে তুলেছিলে , আমাকে দুটো হীরের টুকরো মেয়ে উপহার দিয়েছো , নিজে বুটিক চালিয়ে সংসারে হেল্প করেছো , মাঝে মাঝে মনেহয় তুমি না থাকলে আমার যে কি হতো
 
রাবেয়া হাসে , তারপর বলে তবে আজকে একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো না , ওরা যা করেছে সেটা একটা সামাজিক রিতি , আর এই রিতিতে বউ কে অসম্মান করার মত আমার মনে হয় কিছু নেই , এর মাধ্যমে নতুন একটি পরিবারের সাথে বউয়ের সম্পর্ক স্থাপন হয়
 
কিছুক্ষন চুপ করে থাকে মাহাবুব , তারপর বলে হ্যা তোমার কথা ঠিক আছে , কিন্তু সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সুধু রান্না কেনো? আরো অনেক ধরনের কাজ করা যায়। যেমন সবাই নতুন বউ কে কিছু না কিছু গিফট কিনে দিলো , আর যদি রান্নাই করতে হয় , তাহলে তো এমন হতে পারে যে শ্বশুর বাড়ির সবাই নতুন বউয়ের জন্য কিছু না কিছু রান্না করলো , শোন রাবেয়া এসব অনেক পুরোন রিতি নীতি, তখন শ্বশুর বাড়িতে বউদের কাজ ই হতো রান্না করা। কিন্তু আমার মেয়ে কে আমি রান্না করার জন্য বড় করিনি , হ্যা যদি ওর ইচ্ছে হয় কোনদিন শ্বশুর শাশুড়িকে রান্না করে কিছু খাওয়াবে সেটা একান্ত ওর ইচ্ছে , রান্না করতেই হবে , এই ধরনের কিছু আমি আমার মেয়ের উপর চাপাতে দেবো না , অন্তত যতদিন আমি বেঁচে আছি  , আজকাল দুনিয়ায় এসব আর চলে না , আর যে বললে আজ বেশি বেশি করে ফেলেছি , মনে কর আজকে থেকে আমি একটা নতুন রীতির চলন শুরু করলাম হা হা হা
 
 
সমাপ্ত ।
 
 
[b]গুগোল করে এ ব্যাপারে যা জানতে পারলাম ঃ [/b]
 
শ্বশুরবাড়িতে প্রথম রান্না করাকে সাধারণত বিশেষ কোনো নামে ডাকা হয় না, তবে নতুন বউ বা জামাইয়ের জন্য এটি একটি সামাজিক ও পারিবারিক রীতি যেখানে তারা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করার বা পরিবারের সদস্যদের মন জয় করার সুযোগ পায় এটি 'শ্বশুরবাড়ির প্রথম রান্না' বা 'বউয়ের প্রথম রান্না' হিসেবে পরিচিত হতে পারে এবং এর ওপর ভিত্তি করে নতুন সদস্যের প্রতি পরিবারের প্রত্যাশা ও ভালোবাসা নির্ধারিত হতে পারে ( এখানে একটা ব্যাপার ভুল লিখেছে , আমি কোনদিন কোন জামাই কে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে প্রথম রান্নার আচার পালন করতে দেখিনি , কেউ দেখে থাকলে জানাবেন)  
 
এই রীতির উদ্দেশ্য:
 
[b]দক্ষতা প্রদর্শন[/b][b]:[/b] নতুন সদস্যের রান্নার দক্ষতা দেখানো এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনে তার সক্ষমতা প্রমাণ করা 
 
[b]সম্পর্ক স্থাপন[/b][b]:[/b] পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি নতুন সম্পর্ক তৈরি করা এবং তাদের মন জয় করার একটি প্রচেষ্টা 
 
[b]পারিবারিক রীতির অংশ[/b][b]:[/b] অনেক পরিবারে এটি একটি প্রথা, যা নতুন সদস্যের পরিবারে অন্তর্ভুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ 
 
[b]দক্ষতা পরীক্ষা[/b][b]:[/b] পরিবারের সদস্যরা নতুন সদস্যের রান্নার দক্ষতা যাচাই করে 
 
এই রান্নাটি একটি সামাজিক আচারের অংশ এবং এর মাধ্যমে নতুন সদস্যের প্রতি পরিবারের ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ পায়( আমার বোধগম্য হচ্ছে না এই পয়েন্ট , রান্না করিয়ে কিভাবে সম্মান প্রকাশ পায় কেউ বুঝতে পারলে কমেন্টস করবেন ) 
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
#3
একজন সম্মানিত  পাঠক আমাকে ১ তারকা রেটিং দিয়েছেন । তার রেটিং আমি মাথা পেতে নিচ্ছি , কিন্তু তার এই রেটিংযদি আমার দেরি করে লেখা পোস্ট করার কারনে হয়ে থাকে । তাহলে আমার পক্ষ থেকে তাকে এক্সপ্লেনেশন দিচ্ছি; ভাই এটা আমার দোষ না , আমি থ্রেড খোলার অনেক পর সেটা এপ্রুভড হয়েছে , তখন হয়তো আমি ঘুমিয়ে ছিলাম । আমার এই  বেয়াদপ ঘুমের পক্ষ হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনার কাছে । 

" মহামান্য পাঠক , রাত্রিকালীন অযথা ঘুমের জন্য আপনি আমাকে ক্ষমা করে বাধিত করিবেন" 
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
#4
সম্মানিত পাঠক sadhasidhe কে আমার "শ্বশুরবাড়িতে বউয়ের প্রথম রান্না ও তার রিয়েকশন" লেখাটা খুব জোড়ালো ভাবে অফেন্ড করেছে । তাই উনি আমাকে দুটো নেগেটিভ   পয়েন্ট দিয়েছেন । 

খুব ভালো হতো যদি উনি ওনার অফেন্ড হওয়ার কারন সদাসিধে ভাবেএখানে বলে জেতেন , তাহলে ভবিষ্যতে খেয়াল রাখতে পারতাম । 

তবুও দুঃখিত সাদাসিধে ভাই । আশা করবো ভবিষ্যতে আপনাকে আর অফেন্ড করবো না ।
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
#5
(22-09-2025, 02:59 PM)gungchill Wrote: শ্বশুর বাড়িতে বউয়ের প্রথম রান্না ও তার রিএকশন

 
 
 
রফিক বিয়ে করেছে আজকে চতুর্থ দিন । প্রায় তিন বছরের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত পরিণতি পেয়েছে , তাই রফিক বেশ খুশি । তবে কাঠ খড় কম পোড়াতে হয়নি । বেশি ঝামেলা করেছে ওর শ্বশুর । নানা রকম উঠভট সব ঝামেলা পাকিয়েছে লোকটা । রফিক প্রথম প্রথম খুব রাগ করতো । কিন্তু ধিরে ধিরে মানিয়ে নিয়েছে । শ্বশুর বলে কথা।
 
বিছানায় শুয়ে শুয়ে রফিক আড়মোড়া ভাঙ্গে । গতরাতের দুজনে পাগলের মত ভালোবাসাবাসি করেছে , তার রেষ এখন  বিছানা , শরীর আর মনে রয়ে গেছে । রফিকের শরীর হালকা ম্যাজম্যাজ করছে । পাশে রাখা মোবাইল থেকে টাইম দেখে রফিক, সকাল সোয়া দশটা ।  বিছানার অপর পাশটা খালি , রফিকের একটু মনক্ষুণ্ণ  হয় , এই মুহূর্তে পাশে পিয়ালি থাকলে ভালোই হতো । জড়িয়ে ধরে আরো কিছুক্ষন শুয়ে থাকা যেতো । কিন্তু কি আর করা, ভারি ভর্তি এখনো লোকজন , তাই পিয়ালি আগেই উঠে যায় ।  
 
রফিক বিছানা থেকে উঠে গোসল করে বাইরে বের হয় । বের হতেই রান্না ঘর থেকে দারুন সুবাস এসে নাকে লাগে। রফিক মনে মনে ভাবে এই কয়দিন টানা রিচ খাবার খাওয়া হয়েছে , আজকে আবার এসব কেনো? তবে রিফিক একটু পেটুক আছে রিচ খাবারে ওর আপত্তি নেই ।
 
রফিক রান্না ঘরের সামনে এসে দাড়ায় । ভেতরের দৃশ্য দেখে বেশ অবাক হয় , আবার দারুন খুশি ও হয় । রান্না ঘরে পিয়ালি সম্পূর্ণ গৃহিণী সেজে  রান্না করছে । ওর পরনে একটা সবুজ রঙের সুতি কাপড় , যার আঁচল কোমরে গোঁজা। চুল এলো খোপা করে বাধা , খুন্তি ধরা হাতে কপালের ঘাম মুছছে বার বার , আগুনের আঁচে ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে  । দারুন দেখতে লাগছে পিয়ালি কে , একদম পাকা গৃহিণী । রফিকের মন ভরে ওঠে , এই রুপে পিয়ালিকে আগে কখনো কল্পনা করেনি , কিন্তু আজ দেখে মনে হচ্চে , পিয়ালির এই রুপ দেখার জন্য ওর মন নিজের অজ্ঞাতেই আকুল ছিলো ।  
 
 মা , আমার বউ কে দু দিনেই রান্না ঘরে ঢুকিয়ে দিলেরফিক কপট রাগের স্বরে বলে ।
 
রফিকের কথা শুনে , রান্না ঘরে উপস্থিত বড় ফুপু আর মেজ মামি মুখ ঝামটা দেয় , মেঝ মামি বলে দেখেন আপা বউয়ের জন্য কি দরদ , আপনাকে দুদিনেই ভুলে গেছে
 
বড় ফুপু তাল মেলায় বলে একদম বাপের মত হইসে , একদম বউ পাগলবড় ফুপু যে সুযোগ পেয়ে ওর মা কে একটা ঠ্যাস দিয়ে দিলো , সেটা বুঝতে পেরে রফিক হা হা করে হেসে উঠলো ।
 
এদিকে পিয়ালি চোখ গরম করে রফিক কে ইশারা করছে সেখান থেকে চলে যেতে ।
 
রফিকের মা সুরাইয়া হাসতে হাসতে বলে আরে বোকা এটা বউয়ের প্রথম রান্না , এটা করতে হয় এটাই নিয়ম
 
রফিক পুরোটা সময় বউয়ের রান্না দেখে , সেই সাথে মা কিভাবে সাহায্য করছে সেটাও দেখে । পিয়ালি বার বার ভুল করে , একবার আঙুলে কিছুটা ছ্যাকা ও খায় । জীবনে কোনদিন রান্না করেনি , দেখেই বোঝা যায় । কিন্তু পিয়ালি কে মানিয়েছে ভালো । আর সব থেকে যে জিনিসটা রফিকের ভালো লাগে সেটা হচ্ছে মা আর পিয়ালির বন্ডিং , একজন পুরুষের সব চেয়ে বড় স্বপ্ন , মা আর বউয়ের বন্ডিং। রফিকের মন ভরে যায় ।
 
 
মাহাবুব সাহেব দুপুরের খাবার খেতে বসেছে , বেশ সুস্বাদু সব খাবার । কি ব্যাপার রাবেয়া , এতো এতো ভালো খাবার”  মাহাবুব খুব মজা করে খাচ্ছে । খাবার হয়েছে খুব সুস্বাদু ।
 
পিয়ালির শ্বশুর বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে , মেয়ের প্রথম রান্না আজরাবেয়া হাসি মুখে বলে ।
 
কিন্তু খাবার আর মাহাবুব সাহেবের গলা দিয়ে নামে না । মুখটা কালো হয়ে যায় । নাম মাত্র খেয়ে উঠে জান মাহাবুব সাহেব । রাবেয়া অবেক হয়ে জিজ্ঞাস করে , কম খাওয়ার কারন । কিন্তু মাহাবুব সাহেব উত্তর দেয় না।
 
সারাদিন বিকেল সন্ধ্যা আর রাতের একটা অংশ মাহাবুব নিজের স্টাডিতে একা বসে কাটিয়ে দেন। মেয়ে ফোন দিয়ে যখন জিজ্ঞাস করে খাবার কেমন হয়েছে , তখনো তেমন কিছু বলেন না । তারপর রাত প্রায় দশটার দিকে কল করেন রাফিক কে ।  এমনিতে মাহাবুব সাহেব যতটা সম্ভব রফিক কে এড়িয়ে চলেন ।
 
রফিক শ্বশুরের কল দেখে বেশ অবাক হয়ে যায় । এটাই ওর মোবাইলে শ্বশুরের প্রথম কল । একটু নার্ভাস ও হয়ে যায় রফিক । সালাম দেয়ার সময় তোতলায় একটু ।  
 
ওর শ্বশুর বেশ ভালো ভাবে সালামের উত্তর দেয় । রফিক বেশ অবাক হয় । কপাল কুঁচকে ছাড়া রফিক এর শ্বশুর ওর সাথে কথাই বলে না প্রায় । সেই শ্বশুর এমন ভাবে সালাম এর উত্তর দিচ্ছে ।
 
বাবা কাল সকালে একটু আসতে পারবে ? পিয়ালিকে সাথে আনার দরকার নেই বুঝেছো , জরুরি কাজ আছে
শ্বশুরের মুখে বাবা ডাক শুনে রফিকের চোখে প্রায় পানি এসে যায় । শ্বশুর হুকুম করেছে , আর রফিক রাখবে না , সেটা হতে পারে না । জিজ্ঞাস করে কখন আসবো
 
ভোঁর পাঁচটায়”  
 
শ্বশুরের কথা শুনে রফিকের বারোটা বেজে যায় । এতো সকালে কোনদিন উঠেছে বলে মনে পরে না । ওখানে যদি পাঁচটায় থাকতে হয় তাহলে ঘুম থেকে উঠতে হবে মিনিমাম চারটায় ।  
 
সারারাত ঘুম হয় না রফিকের । যদি উঠতে না পারে এই ভয়ে । পিয়ালি প্রেমভরে কাছে টানে , কিন্তু রফিক সযত্নে এড়িয়ে যায় । এক পর্যায়ে পিয়ালি একটু রাগ করেই ওপাশ ঘুরে শুয়ে পরে । নতুন বিয়ে হয়েছে বলে বেঁচে গেলো রফিক , নইলে খবর ছিলো ।
 
রফিক চারটার সময় বিছানা ছারে । কি পরে যাবে সেই নিয়ে দোমনায় ভোগে । ফর্মাল পোশাকে যাওয়া উচিৎ কিনা বুঝতে পারে না । শেষ পর্যন্ত একটা পাঞ্জাবি পাজামা পরে নেয় । ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য ।
 
ঠিক পৌনে পাচটার সময় শ্বশুরবাড়ির সামনে হাজির হয় রফিক । পনেরো মিনিট নিচে দাড়িয়ে থাকে । তারপর ঠিক পাঁচটায় কল করে আব্বা আমি এসেছি , নিচে আছি
 
দু মিনিট পর দারোয়ান গেট খোলে চোখ মুছতে মুছতে, এতো সকালে ওঠার অভ্যাস মনে হয় দারোয়ানের ও নেই  । রফিক সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখে শ্বশুর দরজায় দাড়িয়ে , হাতে একটা চটের ব্যাগ । শ্বশুর রফিককে ভেতরেও আসতে বলে না । হাতে চটের ব্যাগ আর টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে , বাজারে জাও , রুই মাছ ইলিশ মাচ , গরুর মাংস , খাসির মাংস , মুরগী , ঘি , চাল , আর মশলা নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব চলে আসবে , নইলে দেরি হয়ে যাবে ।
 
রফিক বোকার মত দাড়িয়ে থাকে , কি বলবে বুঝতে পারে না । জীবনে কোনদিন বাজার করেনি , এখনো ওর আব্বুই বাজার করে ।   
 
যাও , দেরি হয়ে যাবেতাড়া দেয় মাহাবুব ।
 
শ্বশুরের তাড়া খেয়ে , ধিরে ধিরে সিঁড়ি বেয়ে নামে রফিক , মাথার ভেতর সব প্যাচ লেগে যাচ্ছে ।
 
 
রফিক বাজার থেকে ফেরে সকাল দশটায় । শাশুড়ি জামাইয়ের এই হাল দেখে , হায় হায় করে ওঠে , পাঞ্জাবি পাজামা কাদায় মাখামাখি , কিছু কাঁদা কপালেও লেগেছে ।
 
আরে বাবা , এই বাজার তোমাকে কে আনতে বলেছেঅবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে রাবেয়া । শাশুড়ির কাছ থেকে এমন সহানুভুতি পেয়ে প্রায় কেঁদে ফেলে রফিক ,কিন্তু  সবে মাত্র শ্বশুরের নামে নালিশ করতে যাবে , এমন সময় মাহাবুব সাহেব বেড়িয়ে আসেন , দেখেই বোঝা যাচ্ছে আরো একবার ঘুম দিয়ে উঠেছেন । রফিক সেটা দেখে প্রচণ্ড রেগে যায় আবার কান্নাও পায় । মনে মনে ভাবে ব্যাটা শ্বশুর আমাকে বাজারে পাঠিয়ে নিজে ঘুম দিয়েছে ।
 
 
আরে তুমি তো অনেক দেরি করে ফেলেছোবিরক্ত হয়ে বলে মাহাবুব , তারপর আবার  হুকুমের স্বরে বলে যাও যাও রান্না ঘরে যাও , এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে , দুপুরের লাঞ্চ একটার মাঝে হবে কিনা সন্দেহ
 
অবাক রাবেয়া কিছু বলতে যাবে , কিন্তু মাহাবুব সাহেব ওকে চুপ করিয়ে দেয় , বলে আজকে সারাদিন যেন তোমাকে বেড রুমের বাইরে না দেখি
 
রাবেয়া আবার কিছু বলতে চায় , কিন্তু মাহাবুব বলতে দেয় না , এক পর্যায়ে প্রায় ঠেলে ঠেলে বউ কে বেড রুমে দিয়ে আসে । তারপর ফিরে এসে রফিকের হাতে কি কি রান্না করতে হবে সেই লিস্ট দিয়ে দেয় । রফিক কে রান্না ঘরে পৌঁছে দিয়ে নিজে একটা চেয়ার নিয়ে রান্না ঘরের সামনে বসে থাকে । এটা ওটা বুঝিয়ে দিতে থাকে । মাছ কিভাবে ধুতে হবে , মাংস কিভাবে মেরিনেট করতে হবে , এসব সাজেশন দিতে থাকে , মাহাবুব সাহেব পাকা রাধুনি। কিন্তু জামাইকে কোন মশলা কত টুকু দিতে হবে এই সাজেশন দেয় না ।
 
রাবেয়া যত বার আসে ততবার দূর করে দেয় । এমন কি রাবেয়ার মোবাইল সিজ করা হয় । এক পর্যায়ে রাবেয়া রেগে গিয়ে নিজের ঘরে বসে থাকে । মাহাবুবের এসব পাগলামি আর সহ্য করতে পারে না ।
 
এদিকে রফিক মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে , ওর কাছে মনে হচ্ছে ওর শ্বশুর দুস্টুমি করছে , একটু পর বলবে , আরে তোমার সাথে প্রাঙ্ক  করলাম । কিন্তু তেমন কিছুই ঘটলো না , উল্টো হাল চাষের বলদ দের যেভাবে তাড়া দেয়া হয় সেভাবে তাড়া দিতে লাগলো ।
 
কিছুক্ষন পর গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত উদয় হলো , শালী প্রিয়তির । অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো কি হচ্ছে বাবা
 
মাহাবুব সাহেব সব খুলে বললে , খুশিতে লাফাতে লাগলো শালী , এমনকি মোবাইল বের করে vlog  বানাতে শুরু করলো । হাই গাইজ , আমার দুলাভাই , আজকে শ্বশুর বাড়িতে প্রথম রান্না করবে , আসুন সবাই মিলে দুলাভাইয়ের রান্না উপভোগ করি , আর হ্যা রান্নার টেস্ট কেমন হলো সেটা নিয়ে আলাদা ভিডিও হবে
 
 
দুপুরের খাবারর তৈরি করতে করতে রফিকের বিকেল পাঁচটা বেজে গেলো , এর মাঝে আবার শ্বশুরের জন্য দুবার চা বানাতে হয়েছে , হাতে চার জায়গায় ছ্যাকা খেয়েছে । এর মাঝে পিয়ালি কল করেছিলো , কিন্তু শ্বশুর সেটা ধরতে দেয় নি , টেক্সট করতে বাধ্য করেছে ।
 
বিকেল পাঁচটায় খেতে বসলো সবাই , রফিকের খাওয়ার কোন ইচ্ছা ছিলো না , তাও খেতে বাধ্য হলো , মুরগির রোস্ট মুখে দিতেই বুঝতে পারলো , আজকে আর খাওয়া হবে না । কিন্তু শ্বশুর মাহাবুব বেশ মজা করে খাচ্ছে । শাশুড়ি খাচ্ছে না । আর শালী বার বার নাক সিটকাচ্ছে আর নাকি স্বরে বলেচ্ছে ছি ভাইয়া আপনি মাছ ও ঠিক মত ভাজতে পারেন না
 
 
খাওয়া যখন প্রায় শেষ দিকে তখন শ্বশুরের মোবাইলে কল আসে , রফিক লক্ষ্য করে মোবাইল স্ক্রিনে নামটা দেখেই শ্বশুরের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । মুখে খাবার নিয়ে কল রিসভ করে , উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে আরে বেয়াই সাহেব , খেয়েছেন?”
 
ওই পাশ থেকে কি উত্তর আসে কেউ শুনতে পায় না , মাহাবুব সাহেব আবার বলে আরে ঠিক মত খান , আপনার ছেলের প্রথম রান্না
 
 
রফিক বাসায় ফেরে রাত নয়টার দিকে , বিধ্বস্ত শরীর নিয়ে । ঘরে ঢুকেই দেখে ওর মা , চাচি , বড় ফুপু , বড় মামি , মেজ মামি , ছোট ফুপু সবাই বসে আছে । রফিক ওর মায়ের দিকে তাকায় । মায়ের এক্সপ্রেশন দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না । রফিক করুন দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকায় , যেন বলতে চায় খাও আরো বউয়ের হাতে প্রথম রান্না, এই দেখো প্রথম রান্নার রিএকশন”  
 
এদিকে সব ফুপু চাচি মামিদের অবস্থা এমন জেন সবাই এক্ষুনি ঢাল তোলয়ার নিয়ে পিয়ালির বাবার উপর ঝাপিয়ে পরবে ।
 
 
নিজের রুমে ঢুকে দেখে পিয়ালি বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় বিছানায় । রফিক কে দেখেই উঠে আসে , জিজ্ঞাস করে সব একা রান্না করেছো!!!” রফিক মাথা দোলায় , “যাও গোসল করে আসো , শরীর থেকে মাছ মাংস আর মশলার গন্ধ আসছে, কালকে আমি আর তুমি ওই বাড়ি যাবো , দেখো আমি  বাবার কি অবস্থা করি, আমার জামাই রে কি পাইসেরাগে গজ গজ করে পিয়ালি ।
 
রফিক কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে না থাক , কোন সমস্যা নাইতারপর জিজ্ঞাস করে তোমাকে কে কি কেউ  এই নিয়ে  কিছু বলেছে?”
 
পিয়ালি মুখ গোমড়া করে ফেলে , কিন্তু কিছু বলে না । রফিকের বুঝতে বাকি থাকে না , পিয়ালি কি গোপন করতে চাইছে ।
 
 
রাবেয়া আর মাহাবুব বিছানায় শুয়ে আছে , মাহাবুবের মুখে তৃপ্তির হাসি । রাবেয়াও হাসছে মিটি মিটি । মাহাবুব নিজের মোবাইল ওঠায় , পিয়ালি প্রায় ১২ বার কল করেছে , সাতটা টেক্সট করেছে । মাহাবুব টেক্সট খুলে দেখে না, কল ও ব্যাক করে না । কাল যে মেয়ে আসবে সেটা ও জানে ।
 
কি খুশি হয়েছোরাবেয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞাস করে ,
 
অবশ্যই , কোন মন্ত্রি যেন রাজাকে বলেছিলো , মল ত্যাগে সবচেয়ে বেশি সুখ , ওই ব্যাটাকে পেলে , রাজার জায়গায় আমিই ওর গর্দান নিয়ে নিতাম , আজকে যা হলো এর চেয়ে বড় সুখ আর দুনিয়ায় কিছুই নেই হা হা হামাহাবুব বাচ্চা ছেলেদের মত হাত তালি দিয়ে হাসে ।
 
তোমাকে যদি আমার বাবা এমন করতো?” রাবেয়া জিজ্ঞাস করে শান্ত ভাবে 

" করালে করতে হতো " মাহাবুব কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে । তারপর আবার বউয়ের দিকে তাকায় , বলে 
 
" আমি তোমার প্রতি যত্ন নিতে পারিনি তাই সারাজীবন তোমার কাছে ক্ষমা চাইতেও আমার লজ্জা নেই রাবেয়া
 
না , তুমি সুধু প্রথম দুই বছর যত্ন নেও নাই , তারপর যখন নিজের মেয়ে হলো , তখন আমার এতো যত্ন নেয়া শুরু করলে , যে মাঝে মাঝে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো যত্নের ভারেরাবেয়া হাসে
 
তারপর আবার বলে মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমার বাবাও যদি তোমার মত হতো, ছেল ছেলে করে একে একে সাত মেয়ে হয়েছিলো , তাদের খাওয়া পড়ার কষ্ট কোনদিন দেয় নি , কিন্তু এমন ভাবে লালন পালন করেছে যেন আমরা একেকজন একেকটা বোঝা , কোনরকম বড় করে বিয়ে দিতে পারলেই হয় । পড়ালেখা ততদিন করতে দিয়েছে যতদিন কোন ভালো সমন্ধ আসেনি  , তুমি জানো কেউ দেখতে আসলে কি বলতো? বলতো আপনারা যেভাবে রাখবেন সে ভাবেই থকবে , জানো এতো কান্না পেতো , মনে হতো আমি কোন মানুষ না , একটা জড় বস্তুরাবেয়ার গলা ধরে আসে ।
 
মাহাবুব পরম মমতায় স্ত্রী কে জড়িয়ে ধরে । বলে তোমাকে তোমার বাবা মা খুব ভালো মানুষ হিসেবে বড় করেছে রাবেয়া , তোমাকে যত ধন্যবাদ দেবো , ততই কম হবে , আমার জীবনটা তুমি খুব সহজ করে তুলেছিলে , আমাকে দুটো হীরের টুকরো মেয়ে উপহার দিয়েছো , নিজে বুটিক চালিয়ে সংসারে হেল্প করেছো , মাঝে মাঝে মনেহয় তুমি না থাকলে আমার যে কি হতো
 
রাবেয়া হাসে , তারপর বলে তবে আজকে একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো না , ওরা যা করেছে সেটা একটা সামাজিক রিতি , আর এই রিতিতে বউ কে অসম্মান করার মত আমার মনে হয় কিছু নেই , এর মাধ্যমে নতুন একটি পরিবারের সাথে বউয়ের সম্পর্ক স্থাপন হয়
 
কিছুক্ষন চুপ করে থাকে মাহাবুব , তারপর বলে হ্যা তোমার কথা ঠিক আছে , কিন্তু সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সুধু রান্না কেনো? আরো অনেক ধরনের কাজ করা যায়। যেমন সবাই নতুন বউ কে কিছু না কিছু গিফট কিনে দিলো , আর যদি রান্নাই করতে হয় , তাহলে তো এমন হতে পারে যে শ্বশুর বাড়ির সবাই নতুন বউয়ের জন্য কিছু না কিছু রান্না করলো , শোন রাবেয়া এসব অনেক পুরোন রিতি নীতি, তখন শ্বশুর বাড়িতে বউদের কাজ ই হতো রান্না করা। কিন্তু আমার মেয়ে কে আমি রান্না করার জন্য বড় করিনি , হ্যা যদি ওর ইচ্ছে হয় কোনদিন শ্বশুর শাশুড়িকে রান্না করে কিছু খাওয়াবে সেটা একান্ত ওর ইচ্ছে , রান্না করতেই হবে , এই ধরনের কিছু আমি আমার মেয়ের উপর চাপাতে দেবো না , অন্তত যতদিন আমি বেঁচে আছি  , আজকাল দুনিয়ায় এসব আর চলে না , আর যে বললে আজ বেশি বেশি করে ফেলেছি , মনে কর আজকে থেকে আমি একটা নতুন রীতির চলন শুরু করলাম হা হা হা
 
 
সমাপ্ত ।
 
 
[b]গুগোল করে এ ব্যাপারে যা জানতে পারলাম ঃ [/b]
 
শ্বশুরবাড়িতে প্রথম রান্না করাকে সাধারণত বিশেষ কোনো নামে ডাকা হয় না, তবে নতুন বউ বা জামাইয়ের জন্য এটি একটি সামাজিক ও পারিবারিক রীতি যেখানে তারা নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করার বা পরিবারের সদস্যদের মন জয় করার সুযোগ পায় এটি 'শ্বশুরবাড়ির প্রথম রান্না' বা 'বউয়ের প্রথম রান্না' হিসেবে পরিচিত হতে পারে এবং এর ওপর ভিত্তি করে নতুন সদস্যের প্রতি পরিবারের প্রত্যাশা ও ভালোবাসা নির্ধারিত হতে পারে ( এখানে একটা ব্যাপার ভুল লিখেছে , আমি কোনদিন কোন জামাই কে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে প্রথম রান্নার আচার পালন করতে দেখিনি , কেউ দেখে থাকলে জানাবেন)  
 
এই রীতির উদ্দেশ্য:
 
[b]দক্ষতা প্রদর্শন[/b][b]:[/b] নতুন সদস্যের রান্নার দক্ষতা দেখানো এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনে তার সক্ষমতা প্রমাণ করা 
 
[b]সম্পর্ক স্থাপন[/b][b]:[/b] পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি নতুন সম্পর্ক তৈরি করা এবং তাদের মন জয় করার একটি প্রচেষ্টা 
 
[b]পারিবারিক রীতির অংশ[/b][b]:[/b] অনেক পরিবারে এটি একটি প্রথা, যা নতুন সদস্যের পরিবারে অন্তর্ভুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ 
 
[b]দক্ষতা পরীক্ষা[/b][b]:[/b] পরিবারের সদস্যরা নতুন সদস্যের রান্নার দক্ষতা যাচাই করে 
 
এই রান্নাটি একটি সামাজিক আচারের অংশ এবং এর মাধ্যমে নতুন সদস্যের প্রতি পরিবারের ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ পায়( আমার বোধগম্য হচ্ছে না এই পয়েন্ট , রান্না করিয়ে কিভাবে সম্মান প্রকাশ পায় কেউ বুঝতে পারলে কমেন্টস করবেন ) 

Heart
--------------------
XOSSIP exclusive desi photos and adda here 
https://photos.app.goo.gl/Zekd8hGfAU2thXcp8


[+] 1 user Likes 212121's post
Like Reply
#6
(23-09-2025, 01:48 AM)212121 Wrote: Heart

ভালোবাসার বিনিময়ে ভালাবাসা নেবেন । Heart
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
#7
বাসরের  আগে হাজত

 
 
 
আবিদ সাহেবের দুই মেয়ে , বড় মেয়ের বিয়ে আগামিকাল । আজ গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে । আবিদ সাহেব মেয়েদের অসম্ভব ভালোবাসেন । মেয়েরাই তার দুনিয়া , দুই চোখের মনি দুই কন্যা । আগামিকাল দুজনের একজন চলে যাবে । তাই আবিদ সাহেবের মন বড় চঞ্চল । আজকে রাত আবিদ সাহেবের জন্য খুশির নয় । তবুও আবিদ সাহেব বিশাল আয়োজন করেছেন । সুধু মাত্র মেয়েদের কারনে । আবিদ সাহেবের মেয়েরা ফিল্মি টাইপ। তাই ফিল্মে দেখা বিয়ের আদলে বিয়ে করতে চায় । তাই এই বিশাল আয়োজন , অঢেল টাকা খরচ হয়েছে , বিশাল স্টেজ , গানের দল এসেছে , নাচের দল এসেছে । টুটা ফুটা স্থানীয় শিল্পী নয় , বেশ নাম করা শিল্পীরা এসেছে । শত হলেও পুলিশের এ আই জির মেয়ের বিয়ে ।
 
 
আবিদ সাহেব এক কোনায় বসে এই নাচ গান দেখছে , অস্ত্রু সিক্ত চোখে নিজের মেয়েদের আনন্দ দেখে কখনো আনন্দ হচ্ছে আবার কখনো বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে । ঠিক এমন সময় কল এলো আবিদ সাহেবের ফোনে , কল রিসিভ করলেন উনি , কারন বিশাল যে মাঠে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেই মাঠের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য যাকে নিয়গ করা হয়েছে তাদের মাঝে একজন কল করেছে ।
 
কোন মিলনায়তন ভাড়া করতে চেয়েছিলেন আবিদ , কিন্তু মেয়ে যে ধরনের থিম চায় সে ধরনের থিম সুধু খোলা মাঠেই সম্ভব । কিন্তু খোলা মাঠে নানা ধরনের ঝামেলা থাকে , বাইরের ছেলে পেলে ঢুকে পরে । তাই আবিদ সাহেব নিজের পুলিস বাহিনির সাহায্য নিয়েছেন ।
 
“ হ্যা বলো জহির?” আবিদ সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে কান্নার ভাব টুকু কণ্ঠ থেকে ঝেড়ে ফেলে তারপর বলেন ।
 
“ স্যার একদল ইয়ং ছেলে পেলে ধরেছি , এরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলো , এদের মাঝে একজন আবার বো*র*খা পরে এসেছে”
 
এমনিতেই আবিদ সাহেবের মন খারাপ , তার উপর এমন ঘটনা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো । সাত পাঁচ না ভেবেই বললেন “ লকআপে নিয়ে হেভি ডলা দাও”
 
“ কিন্তু স্যার এরা বলছে…”
 
“ সাট আপ জহির যা বলছি তা করো” গর্জে উঠলেন আবিদ সাহেব । প্যাটি অফিসার জহিরের প্যান্টে মুতে দেয়ার অবস্থা , তাই আর কথা বাড়ায় না । সাত আটজনের সেই দলটাকে কোন কথা না বলতে দিয়ে , মোটা লাঠির আঘাত করতে করতে গাড়িতে তোলা হয় । সবচেয়ে বেশি আঘাত পরে বো*র*খা পরা ছেলের উপর । পুলিশের সেপাইরা ভাবে নিশ্চয়ই কোন বদ মতলব ছিলো এর ।
 
 
ঘড়িতে বাজে রাত সোয়া দুটো , হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে আবিদ সাহেব দুই মেয়ে আর স্ত্রী কে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন সবে । সেই গ্রেপ্তার কান্ড ভুলেই গেছেন । ঘটনা আরো প্রায় দুই ঘণ্টা আগে ঘটেছে । মেয়েকে নিয়ে ইমোশনাল সময় পার করছেন , বাড়িতে ফেরার পুরো রাস্তা মেয়ে ওনার পাশে বসে বুকে মাথা দিয়ে রেখেছিলো । এমন ইমোশনাল সময়ে ওই সব ছোটো খাটো ঘটনা মনে থাকার কথা না ।
 
এমন সময় আবার কল আসে , এবার *** থানার ওসি । স্যালুট করার পর মিনমিন করে বলে “ স্যার একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে”
 
“ দেখো আমার এসব শোনার এখন সময় নেই , তুমি অন্য কাউকে কল করো” আবিদ সাহেব বিরক্ত হয়ে বলে। ভাবেন একটু যে শান্তিতে মেয়েটার সাথে সময় কাটাবো সেই সুযোগ ও নেই ।
 
“ স্যার ঘটনা গুরুতর” অফিসার ভয়ে ভয়ে বলে ।
 
“ ঠিক আছে সংখেপে বলো”
 
“ স্যার যাকে ধরে আনা হয়েছে , সে আপনার হবু জামাই” ওসির গলা ভয়ে কাঁপছে , এই ধরনের অফিসাররা জানে , শেষ পর্যন্ত দোষ এদের ঘাড়েই পরে । যদিও হুকুম এ আই জি স্যার নিজে দিয়েছে , কিন্তু শেষে বলবে , তোমারা আমাকে ঠিক ইনফরমেশন দাও নাই ।
 
 
ব্যাপারটা  বুঝতে আবিদ সাহেবের সময় লাগে একটু , উনি জিজ্ঞাস করেন “ কি বললে?” মনে মনে দোয়া করছেন যা সুনেছেন তা যেন ভুল হয় , না হয় ওনার মেয়ে ওনার খবর খরে ছাড়বে ।
 
“ জি স্যার , উনি নাকি বো*র*খা পরে , মামুনিকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো”
 
“ ডলা দিয়েছো?” আবিদ সাহেবের গলা শুকিয়ে আসে , মাথার টাকে ঘাম জমতে থাকে  , মেয়েকে কি জবাব দিবে এই চিন্তায় ।
 
“ জি স্যার” অফিসার মিনমিন করে বলে
 
“ কেমন দিয়েছো?”
 
“ স্যার উপর দিয়ে বোঝা যাবে না , তবে বসতে অসুবিধা হবে কয়েক দিন” অফিসার না চাইতেও নিজের হাতের কারুকাজের জন্য গর্ব ফুটে ওঠে ওর কণ্ঠে ।
 
“ জামাইয়ের কি অবস্থা?” আবিদ সাহেব ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাস করে ।
 
“ স্যার উনি বো*র*খা পরা ছিলেন বলে , ওনার উপর সন্দেহ বেশি ছিলো…”
 
“থাক হয়েছে , আর বলতে হবে না, কে এসেছে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে?”
 
“ স্যার জামাই বাবাজির বাবা আর মামা”
 
“ দাও ফোন দাও” এই বলে আবিদ সাহেব নিজের গলা ঠিক করে নেয় ।
 
“ বেয়াই সাহেব” জামাইয়ের বাবার গলা উঁচু হয়ে ওঠে , কিন্তু আবিদ সাহেব সেই সুযোগ দেয় না গর্জে ওঠেন । এবং আজকালের ছেলে পেলের জ্ঞান বুদ্ধির যে অভাব আছে সেই নিয়ে বড়সড় একটা বক্তৃতা দেন । এতে করে জামাইয়ের বাব একটু দমে যায় । তারপর আবিদ সাহেব এই বলেও হম্বি তম্বি করেন যে , যেই অফিসার জামাইয়ের এই অবস্থার জন্য দায়ি তাকে দেখে নেবেন । এবং যত দ্রুত সম্ভব ছেড়ে দেবেন । এর পর অফিসার কে ফোন দিতে বলেন
 
“ শোন , নিয়ম কানুনের টাল বাহানা করে আরো ঘণ্টা দুই আটকে রেখে , তারপর ছেড়ে দাও, আর বেয়াইয়ের জন্য নাস্তার ব্যাবস্থা করো”
 
আবিদ সাহেব এটা কেনো করলেন তিনি নিজেও জানেন না , তবে একটা প্রশান্তি অনুভব করলেন সমস্ত শরীরে।
 
আবার মেয়ের কাছে ফিরে গেলেন , চালাকি করে মেয়ের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিলেন । আজ রাতে আর কোন ড্রামা চান না উনি , কাল কি হবে কাল দেখা যাবে ।
 
 
 
পরদিন যথা সময়ে জামাই এসেছে , এবং জামাইয়ের জন্য বিশেষ চেয়ারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে ।
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)