Posts: 512
Threads: 28
Likes Received: 538 in 299 posts
Likes Given: 378
Joined: Jun 2022
Reputation:
51
পার্ট : ১৮
অনেকক্ষন ধরে রুমে বসে আছে শ্রাবন এ বাসায় আসার পর থেকে রুদ্র একবার ও শ্রাবনের রুমে আসেনি,
কিন্তু রুদ্রের সাথে কথা বলাটা দরকার শ্রাবনের, নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে নিজের হাতে শাস্থি দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে শ্রাবন।
তাই রুদ্রকে তার দরকার, কখন কিভাবে কি করবে সব প্লেন করতে হবে,
ভাবতে, ভাবতে রুম থেকে বেড় হলো শ্রাবন।
রুদ্রের রুম কোনটা শ্রাবন সঠিক জানে না তাই এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতেই যাচ্ছে শ্রাবন।
হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো, কারেন্ট চলে যাওয়াতে এবার শ্রাবন এক যায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, মোবাইলটাই রুমে রেখে এসেছে, মোবাইলটা থাকলে ফ্লাস জালিয়ে রুমে যেতে পারতো, কিন্তু তাও পারছে না, উপায় নেই তাই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,,,
ওগো তোমায় নিয়ে সখী,
যদি কোনো গল্প লেখি।
তুমি এসো চিলে কোঠায়,
শোনাই আমার বিনার বানী,
তুমি মন্ত্রতালে শোনো!
আজ আমার এ আবৃতি!!
অন্ধকার রুম থেকে কেও কবিতাটি আবৃতি করছে, অন্ধকার তবুও শ্রাবন চোখ বুজে আবৃতি শুনছে, যেন অন্তরের খুব গভীর কোথাও, ভেদ করছে আবৃতিটা।
- আরে ভাই আপনি এখানে দাঁড়িয়ে?
শ্রাবন চোখ খুলতেই দেখো কারেন্ট এসে গিয়েছে, কিন্তু তার চোখ বন্ধ থাকায় টের পায়নি, রুদ্রের কথায় চোখ খুললো শ্রাবন,
- হ্যা আসলে তোকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো,
- ওহ আচ্ছা চলেন আপনার রুমে যাই,
- আচ্ছা রুদ্র( মনে মনে ভাবছে শ্রাবন, আবৃতি কন্যার কথা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু তারপর ও কোনো এক অজানা কারনে জিজ্ঞেস করলো না)
- কি হলো ভাই কিছু বলবেন?
- নাহ কিছুনা, কথা আছে একটু চল,
তারপর শ্রাবন আর রুদ্র রুমে গেলো,
বাহিরে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে, জোছনা যেন রাতকেও রঙিন করে তুলেছে, রুমের ব্যালকনি ধরে দাঁড়িয়ে এই ফুরফুরে মেজাজে আবৃতি করছে তিতির। আবৃতি তিতির এমন একটা ভালোলাগা যাকে আবৃতি প্রেম ও বলা যায়,
চুল গুলো কাটার দিয়ে কোনো রকম বাধা চোখ বুজে আবৃতি করে যাচ্ছে তিতির, এমনটা সে প্রতিদিনই করে তবে আজ যেন আবৃতিটা নতুন করে প্রান ফিরে পেয়েছে মনে হচ্ছে তিতিরের কাছে,এমন মনে হওয়ার রহস্য তিতির নিজেও জানে না,
একলা একলা এক চঞ্চল সদ্য যৌবনে পা দেয়া একটি মেয়ের মনে অনেক ভাবনা জাগতে পারে,যে ভাবনাগুলো হয়তো কোনো ব্যাখ্যা হয়না তবে ভাবনাগুলো হয় সুন্দর, কারন সে ভাবনাগুলো আসে মনের অন্তরাল থেকে, সদ্য যৌবনে পা দেয়া মেয়েদের মন কখন কেমন থাকে কেও বলতে পারে না,এরা আচমকা কেঁদে দেয় কারনছাড়া হেসে দেয়। সহজ বিষয়কে জটিল আবার জটিল বিষয়কে সহজভাবে কল্পনা করে,
অনেকক্ষন ধরে বিছানায় বসে আছে স্নেহা, বাবা, মা,ভাই সবাইকে একসাথে পেয়ে হয়তো তার খুশিতে নাচার কথা কিন্তু সে তা পারছে না,
কারন তার মনে হচ্ছে এটা রুদ্রের আবার নতুনভাবে তার পরিবারকে ছোট করার ফন্দি, যে করেও হোক সে এবার তার পরিবারকে রক্ষা করবে,
খোট করে দরজা খুলে রুমে এসেই সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লো রুদ্র।
- জান মাথাটা টিপে দাও অনেক ব্যাথা করছে,
রুদ্রের দিকে একবার আরচোকে তাকালো স্নেহা, মনে মনে ভাবতে লাগলো মাথা বা টিপে গলাটা টিপে দিলে কেমন হয়। সব ব্যাথা একেভারে সেরে যাবে।
মুখটা উঠিয়ে কিছুক্ষন স্নেহার দিকে তাকিয়ে,
- কি হলো এতো কি ভাবছো? মনে হচ্ছে ঘরে সতীন আনার কথা বলেছি যে মুখটাকে কালো মেঘ করে রেখেছো!!
- সতীন আনলেই বা কি? আই ডোন্ট কেয়ার। আপনি একটা না ১০ সতীন আনুন কিন্তু আমাকে আমার পরিবারকে আর আমার সন্তানকে প্লিজ মুক্তি দিন।
- তুমি আবার শুরু করলে তাইনা? সারাটাদিন খাই কি খাইনা একবার ও খোজ নাও তুমি? বাসায় আসার পর ও শুরু করো কি ভাবো আমাকে আমিকি মানুষ না, আর বার বার নিজের বাচ্চা নিজের বাচ্চা করো কেনো বাচ্চা কি আকাশ থেকে পড়েছে ওর কি বাবার পরিচয় নেই, নিজের বউ আর বাচ্চাকে নিজের কাছে রাখতে চাওয়া অপরাধ হলে হ্যা আমি অপরাধী। কি করবা বলো এই অপরাধের শাস্তি আমাকে যা দিবা তাই আমি মাথা পেতে নিবো,( চিৎকার করে কথাগুলো বলেই বেড়িয়ে গেলো রুদ্র।
স্নেহা বসে রুদ্রের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,
টেবিলে খাবার দিচ্ছে আনোয়ারা বেগম, আজকে অনেক কিছু রান্না করেছে সে। অনেকদিন পর বাড়িতে আত্নীয়সজনে ভরপুর হয়ে গেছে, তাই ফুরফুরে মেজাজে আছে আনোয়ারা বেগম।
পাশেই মুখ দাঁড়িয়ে আছে তিতির,
- শোন তিতির তুই কিন্তু স্নেহার ভাইটার সাথে অনেক বেয়াদবি করেছিস, ও তোর অনেক বড় আর কোনো বেয়াদবি করবিনা,
- আমি বেয়াদবি করিনি মা, লোকটা জানেনা কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়,
- মাড়বো টেনে এক চর লোকটা কি হ্যা? ভাইয়া বলবি।( আনোয়ারা বেগম)
- একি আপা আপনি ওকে বোকাবোকি করছেন কেন? কি মিষ্টি মেয়েটা, ( সিরি থেকে নামতে নামতে বললো স্নেহার মামনি)
- আরে আপা আপনি, আর বলবেন বা আপা মেয়েটা বড় হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি সুদ্ধি হয়নি, নিজের মতো বকবক করেই যাই,( আনোয়ারা বেগম)
- থাক আপা এই বয়সে এমন একটু হয়, আমার স্নেহাও এমন ছিলো আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে,
তুমি কোন ক্লাসে পড়ো মা?
- ইন্টার 2nd ইয়ার আন্টি।
- বাহ খুব ভালো!!
- তিতির যা তো তোর ভাইয়া ভাবিকে ডেকে আন আর স্নেহাকে বল ভাই আর শ্রাবনকে নিয়ে আসতে,
- আচ্ছা মা, বলেই তিতির চলে গেলো,
- ভাবি ভাবি,
বিছানায় বসে আছে স্নেহা,
- হুম বলো?
- ভাবি মা খেতে ডাকছে, ভাইয়া কোথায়?
- জানিনা তোমার ভাইয়া কোথায় তুমি যাও আমি আসছি।
- ভাবি আংকেল কেও সাথে নিয়ে আসো আর ওই খাটাশটাকেও,
বলেই তিতির জ্বীভে কামড় দিলো,
- কি???? খাটাশ মানে??
- কিছুনা ভাবি মানে তোমার ভাইকেও,
নিচের দিকে তাকিয়ে বললো তিতির।
তিতিরের কথা শুনে স্নেহা হেসে দিলো,
মেয়ে কলেজে পড়লেও আচরণ সে বাচ্চাদের মতোই রয়ে গেছে কথা ভেবেই স্নেহা মুচকি হেসে দিলো,
তিতির কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
স্নেহা বুঝতে পারলো তিতির হয়তো ওভাবে বলে ফেলাতে একটু লজ্জা পেয়েছে,
স্নেহা তিতিরের হাত ধরে বিছানায় বসালো,
- জানো ভাইয়া ছোট বেলা থেকেই এমন, খাটাশ একটা। বাবা চকলেট আনলে আমাকে একটা দুইটা দিয়ে ও বেশি নিতো, তুমি ঠিকই বলেছো ভাইয়াটা পচা,
তিতির মাথা উচু করে এক বিজয়ের হাসি দিলো, শেষমেস তার দলে কাউকে পেয়েছে ভেবেই ভালো লাগছে তিতিরে,
তিতির আর একটু শক্ত করে বসলো,
- দেখেছো ভাবি তুমি আমাকে ঠিক বুঝেছো, আর সবাই শুধু বোকা দেয়?
আর কেও বোকা দিবেনা, আমি আছিনা আমি সবাইকে বলে দিবো।
- আমার লক্ষি ভাবি, বলেই তিতির স্নেহাকে জড়িয়ে ধরলো।
- হুম অনেক হয়েছে এখন চলো,পাপা আর ভাইয়াকে ডেকে আনি!!
- ভাবি আমি যাবো না তোমার ভাইয়া আমার দিকে কেমন রাগি লুকে তাকায় আমার ভয় লাগে!! (ভিতু হয়ে বললো তিতির)
- আরে আমি আছিনা কিছু হবে চলো,
স্নেহা বাবাকে ডেকে নিচে পাঠালো তারপর ভাইয়ের রুমের দিকে গেলো,
- ভাইয়া আসবো,
- হ্যা আয়,
স্নেহার পেছনে পেছনে তিতির ও ঢুকলো,
- ভাইয়া চলো নিচে খেতে যাই!!
- হুম যাবো ডাকতে তো একা আসলেই পারতি!!
- কেনো?? ভাইয়া তিতিরকে নিয়ে আসাতে তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে?
- না রে সমস্যা হবে না, আমাকে খুনি আর চোর অলরেডি বানিয়ে ফেলেছে তো তাই আর নতুন করে কিছু হতে চাইনা তাই বললাম।
শ্রাবনের কথা তিতির কিছুটা লজ্জা পেলো কারন তিতির বুঝতে পেরেছে তাকে শোনানোর জন্যই কথাটা বলেছে শ্রাবন,
- ভাবি তোমরা আসো আমি নিচে যাচ্ছি, বলেই তিতির চলে গেলো সেখান থেকে,
- উফ ভাইয়া, এমন ভাবে না বললেও পাড়তি আসলে ওর মন একটু বেশি সরল তাই মুখে যা আসে তাই বলে দেয়, মারপেঁচ বোঝে না।
- হুম, আচ্ছা নিচে চল সবাই হয়তো ওয়েট করছে,( শ্রাবন)
- চলো,
শ্রাবন আর স্নেহা দুজনেই নিচে নামলো,
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই, রুদ্র ছাড়া সবাই আছে,
- স্নেহা না যা রুদ্রকে ডেকে আন,
স্নেহা অবাক হয়ে গেলো, কারন সে তার পাপার মুখে এমন কথা আশা করেনি। যে তাদের এতোবড় ক্ষতি করেছে যে সবার জীবনটা এভাবে ওলটপালট করে দিয়েছি, যাকে তার পাপা একদিন গুলি করে মাড়তেও চেয়েছিলো। সেই পাপার মুখেই রুদ্রজে ডাকার কথা শুনে স্নেহা যেন থমকে গেছে,
পরক্ষনেই স্নেহা ভাবলো,
হয়তো তার পাপা কোনো চাপে পড়ে এমন ভালো ভাবে রুদ্রকে ডাকার কথা বলেছে,
কারন রুদ্র এমনি এমনি তার মা বাবাকে আনার পাত্র না, কোনো না কোনো কারন তো আছে,
ভাবতে ভাবতে স্নেহা রুদ্রকে ডাকতে গেলো,
অনেকক্ষন ধরে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র, তার রাগের জন্য স্নেহাকে আর কোনো কষ্ট দিতে চায়না সে, তবে দিয়ে ফেলে আর এটাই তার বড় কষ্ট, স্নেহার মাঝে তার সন্তান আছে।
দুজনের খেয়াল রেখেই যা করার করতে হবে,
- খেতে চলুন সবাই ডাকছে,
পেছন থেকে স্নেগার কণ্ঠ শুনে রুদ্র রুদ্র স্নেহার দিকে তাকালো,
- সবাই ডাকছে বলেই ডাকতে এসেছো? নিজে মন থেকে ডাকতে আসোনি??
- না আসিনি, নিচে আসুন প্লিজ!!
রুদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্রের মাথাটা ঘুরতে লাগলো নিমিষেই চারদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলো রুদ্র, ঠাস করে ফ্লোরে পরে গেলো,,,
- ভাইয়ায়ায়ায়া( স্নেহা)
চলবে,,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 512
Threads: 28
Likes Received: 538 in 299 posts
Likes Given: 378
Joined: Jun 2022
Reputation:
51
পার্ট : ১৯
রুদ্রের শরীরটা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো,
মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে রুদ্রের,
এসব দেখে যেন স্নেহা কথা বলার শক্তিটা একদম হারিয়ে ফেলেছে,
স্নেহা চিৎকার করে শ্রাবনে ডাকলো,
প্রায় অনেকক্ষন ধরে সবাই হাসপাতালে বসে আছে,
ডাঃ গভীরভাবে রিপোর্টগুলো দেখছে!!
- ডাঃ এনি প্রবলেম?
ডাঃ স্বাভাবিক হয়ে বসলো, তারপর বলতে শুরু করলো,
- পেসেন্টের খাওয়া দাওয়ার ওপরে কি খেয়াল নেন না? কি অবস্থা তার শরীরের? পেসেন্টের খাওয়া দাওয়ায় অনেক অনিয়ম হয়েছে আর তার জন্য গ্যাস্ট্রিক বেড়ে তা আলসারে রুপ নিয়েছে,
বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা? একদিনে হয়নি এসব পেসেন্ট হয়তো অনেক দিন ধরেই এমন অনিয়ম করছিলেন!
- এখন আমাদের করনীয়?( শ্রাবন)
আসলে করণীয় বলতে তার কেয়ার করুন। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করতে বলুন।
অতিরিক্ত চিন্তার কারনে ওভাবে মাথা ঘুরব পরে গিয়েছে আর আজ ও হয়তো সে খায়নি তাই ওভাবে ব্লাডগুলো বেড়িয়েছে,
চিন্তার কিছু নেই, পেসেন্টের অনেক কেয়ার করবেন।।আমি তার রেগুলার একটা রুটিন দিয়ে দিবো। তবে মনে রাখবেন কিছুক্ষন পর পর তাকে খাওয়াবেন। পেট খালি রাখা যাবেনা।
- সমস্যা নেই ডাঃ আমরা ওর খেয়াল রাখবো, ওনাকে কি আজ নিয়ে যেতে পারি?
- না আজ পারবেন না, স্যালাইন চলছে চলুক কাল নিয়ে যাবেন।
- ওকে ডাঃ,
রুদ্রের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের পানির ফেলছে রুদ্রের মা, সন্তান যতো অপরাধ করুকনা কেন! মা কখনোই সন্তানের কষ্টে সময় স্বাভাবিক থাকতে পারেনা, রুদ্রের মায়ের ও একি অবস্থা, এতোদিন সন্তানের ওপরে রাগ করে কথা বলেনি, খেয়েছে কি না খেয়েছে তাও জানতে চায়নি। তাই হয়তো আজ ছেলেটার এ অবস্থা, এসব ভাবছে আর চোখের পানি ফেলছে মনোয়ারা বেগম।
স্নেহা শ্রাবনের ঘাড়ে মাথা দিয়ে বসে আছে, এই সময় তার হাসিখুশি থাকা উচিৎ কিন্তু এমন সব ঘটনা ঘটছে হাসিখুশি থাকা তো দূর স্বাভাবিক থাকাই কষ্টের হয়ে যাচ্ছে।
- ভাবি, হাসপাতালে ক্যান্টিন আছে চলো তুমি কিছু খেয়ে নিবে,
- এখন খাবোনা তিতির, বাড়ি গিয়েই খেয়ে নেবো।
- ভাইয়াকে না দেখে বাড়ি যাবেনা, আর বাড়ি যেতে দেড়ি হবে। এই অবস্থায় না খেয়ে থাকা ঠিক হবেনা ভাবি চলো কিছু খেয়ে নিবে,
- ও ঠিক বলছে যা খেয়ে নে কিছু,( শ্রাবন)
তিতির স্নেহাকে নিয়ে ক্যান্টিনে চলে গেলো,
স্নেহার সামনে খাবার কিন্তু একটুও খেতে ইচ্ছা করছেনা,
-ভাবি খাবারের দিকে তাকিয়ে না থেকে খাইয়া শুরু করো।
- ইচ্ছা করছেনা গো!!
- ইচ্ছা করছেনা মানে খেতে হবে, আমাদের গুবলু সোনা মনে হয় খিদে জ্বালায় কান্না করছে,
স্নেহা তিতিরের কথায় হেসে দিলো,
- তুমি কি করে জানলে গুবলু কাঁদছে??
- আরে!!
স্নেহা কিছু বলার আগেই পেছন থেকে শ্রাবন বলে উঠলো,
- ও জানবেনা আবার, ওর তো ১২ হালি বাচ্চাকাচ্চা আছে,
তিতির পেছনে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে আর কথা বলছে,
- শয়তান একটা সব জায়গায় চলে আসে আমাকে লজ্জা দিতে ইচ্ছা করে চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলি আর গাল খামছে লাল করে দি।( মনে মনে শ্রাবনকে গালাগালি করছ্র তিতির,
হাসতে হাসতে তিতির আর স্নেহার পাশে চেয়ার নিয়ে বসলো শ্রাবন
- আসলে মাথাটা খুব ব্যাথা করছিলো রে, তাই একটু কফি খেতে এলাম।
- ভাবি তুমি খেয়ে নাও আমি একটু ওদিকে যাই,,
বলেই তিতির ওখান থেকে উঠে এলো।
আসার সময় শ্রাবনকে এতোগুকা গালাগালি করতে করতে এলো।
তিতির চলে আসতেই,
- ভাইয়া এটা তুই কি বললি, মেয়েটা কতো লজ্জা পেলো।
- আরে তুই জানিস না ও কি কান্ড করেছে, তারপর শ্রাবন সব খুলে বললো স্নেহা তো শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
এর মাঝেই স্নেহার মা এলো,
- এই স্নেহা ওদিকে চল!!
- কেন মামনি?
- আরে রুদ্রের জ্ঞান ফিরেছে, ওর সাথে দেখা করবিনা?
শ্রাবনের সাথে কথা বলতে বলতে স্নেহা কিছুক্ষনের জন্য ভুলেই গিয়েছিলো যে তারা হাসপাতালে আর রুদ্র অসুস্থ,
স্নেহার মুখের হাসি মলিনয়ায় পরিণত হলো,
- আচ্ছা মামনি আসছি!!
প্রায় ১৫ মিনিট হলো জ্ঞান ফিরেছে রুদ্রের, রুদ্রের মা ছেলের হাত ধরে কেঁদে যাচ্ছে কান্নার জন্য ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেনা,
- মা এবার তো থামো আমি ঠিক আছি,,
- বাবা আমি রাগে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আর তাই আজ তোর এই অবস্থা এই কয়েকটা দিন আমি তোর একদম খেয়াল রাখিনি,
এর ভেতরেই ঢুকলো স্নেহার মা, তিতির আর স্নেহা,
- আপা আর কতো কাঁদবেন আপনি কাঁদলে আপনার ছেলেরই কি ভালো লাগবে বলুন? বাবা জানো তুমি অজ্ঞান হওয়ার পর থেকে তোমার মা কেঁদে যাচ্ছে এতো থামানোর চেষ্টা করছি কথা শুনছেই না।
- হুম আন্টি আসলে মা, এমনি,
কথাটা বলেই রুদ্র স্নেহার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো,
রুদ্রের মা বুঝতে পারলো যে রুদ্র হয়তো স্নেহাকে ডাকতে চাচ্ছে কিন্তু তারা সামনে থাকায় পারছেনা, আসলে মা তো এমনি মুখে না বললেও যে সন্তানের চাওয়া বুঝে যায়।
- আপা চলেন আমরা বাহিরে যাই ছেলেটার এখন বিশ্রাম দরকার বিশ্রাম করুক, রুদ্রের মা কথাটা বলেই বেড়িয়ে গেলো সাথে তিতির আর স্নেহার মা ও।
স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে,
- কাছে এসো,
রুদ্রের কথা স্নেহা কাছে আসলো, কারন অসুস্থ মানুষের ওপর রাগ দেখানোর মেয়ে স্নেহা নয় আর যেখানে রুদ্রকে সে ভালোবাসতো।
- খেয়েছো? ঠিকমতো না খেলে কিন্তু আমার বেবির প্রবলেম হবে,
- হুম খেয়েছি, তিতির খাইয়ে দিয়েছি!!
- তাই নাকি বোনটা তো দায়িত্বশীল হয়ে গেছে দেখছি।
- হুম,,,,
- স্নেহা, একটা অনুরোধ করবো?
- হুম করুণ,
- আমার পাশে একটু বসবে শুধু তোমার দুটো হাত আমার বুকের ওপরে রাখবো।
স্নেহা কিছু না বলেই রুদ্রের পাশে বসলো,,,
রুদ্র স্নেহার দুটো হাত টেনে নিয়ে বুকের ওপরে রাখলো,
আজ যেন অসুস্থতায় ও প্রশান্তি লাগছে রুদ্রের যে প্রশান্তি সুস্থ অবস্থায় ও পায়নি সে,
এমন প্রশান্তির জন্য রুদ্র সারাজীবন অসুস্থ থাকতে রাজি। যদি স্নেহার হাত তার বুকে থাকে,
তিতির ফিল্টার থেকে পানি খাচ্ছে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
শ্রাবন পানি খাওয়ার জন্য ফিল্টারের সামনে এসে দাড়াতেই মুখ ভর্তি পানি নিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তিতির।
মনে মনে ভাবছে এই লোকটা আবার আমার সামনে নিশ্চই আবার কোনো লজ্জা দিবে,
হঠাৎ তিতির ফুস করে তার মুখের পানি ফেলেদিলো।
- ও সিট এটা কি করলে???( রেগে বললো শ্রাবন কারন তিতিরের মুখের পানি পাশে সোজাসুজি দাঁড়িয়ে থাকা শ্রাবনে শার্টটা অলরেডি ভিজিয়ে দিয়েছে,
- আমি ইচ্ছে করে করিনি( ভয়ে কাছুমাছু হয়ে বললো তিতির)
- রাবিশ, ( বলেই হনহনিয়ে চলে গেলো শ্রাবন)
-ভাবি, ভাবি
- হুট করেই কেবিনি ঢুকে পড়লো তিতির,
রুদ্র স্নেহার হাত বুকের ওপরে রেখে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে,
তিতির কেবিনে আসতেই হাত ধড়ফড়িয়ে হাত সরিয়ে নিলো স্নেহা,
- ওহ সরি সরি ভুল টাইমে চলে আসলাম, ( চোখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলছে তিতির)
- তুই তো ভুল টাইমেই আসবি, বলদি একটা,
- ভাইয়া তুমি এভাবে বলতে পারোনা? চোখের থেকে হাত সরিয়েই ঝাজালো কন্ঠে বললো তিতির।
- ওরে বাবা বোনটা দেখি আবার রাগ ও করে,
- তো কি রাগ করবনা হ্যা? আমি এখন বড় হয়ে গেছি কলেজে পড়ি আর তুমি আমাকে সবসময় অসম্মান করো এটা আমাকে মেনে নিতে বলছো? আমি কিন্তু,
- বাবা রে ভয় পেয়েছি, তুই কিন্তু কি রে,
- মাকে বলে দিবো তুমি আমার সাথে এমন করো,, ( ভিতু হয়ে যেয়ে)
- হাহাহা, হাসিতে যেন রুদ্রের পেট ফেটে যাচ্ছে, তুই এই মাত্র যে রুপ নিয়েছিলি মনে হচ্ছিলো আমার সামনে কোনো বাঘিনী দাঁড়িয়ে আছে, বাট এখন আমাদের সেই বিড়ালটার কথা মনে পড়ে গেলো,
- ভাবি কিছু বলো( নেকা কান্না করে)
- আপনি চুপ করবেন, মেয়েটার পেছনে সবসময় লেগে থাকে।
তুমি আমার সাথে এসো, আর কিছু বললে আমি দেখে নেবো।
- হ্যা ভাইয়া একদম কান মুলে দিবা,
- আমাকে ভালো হতে দে,কে কার কান মোলে দেখা যাবে তখন!!
রুমে রুদ্রের মা আর শ্রাবন এলো,
রুদ্রের কাছে রাতে থাকবে শ্রাবন এই অবস্থা স্নেহার রেস্ট দরকার। আর হাসপাতালে১ জন থাকতে হবে, তাই রুদ্রের সাথে শ্রাবন থাকবে, একরকম জোর করে থাকছে শ্রাবন,
সবাই যাওয়ার জন্য রওনা হয়ে গেছে একে একে রুম থেকে সবাই বেড়িয়ে গেলো,
যাওয়ার সময় স্নেহা রুদ্রকে একটা কথা বলে গেলো,
- আপনি আমার সাথে অনেক অপরাধ করেছেন আপনাকে আমি সত্যি ঘৃনা করি। তবে আমার মাঝে মানবিকতা আছে আমি চাইনা আপনার কোনো ক্ষতি হোক। চাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুন।
বলেই চলে গেলো স্নেহা,
স্নেহার এতোটুকু কথা যেন রুদ্রের খুন গভীর ক্ষত রেখা একে দিলো,
হ্যা সে তো অনেক অন্যায় করে! তবে আজ স্নেহার বলা এই সত্যি কথায় তার বুক কেন ফেটে যাচ্ছে,
হয়তো ভালোবাসার মানুষটার একটু ক্ষত ও অনেক বড় ভাবে আঘাত করে,,
পরেরদিন সকালে,,,
- রুদ্রের কেবিনের ভেতরে সোফার ওপরে গুটিসুটি ভাবে শুয়ে আছে শ্রাবন সারা রাত ঘুমায়ই কারন সে ঘুমিয়ে গেলে রুদ্রের কোনো প্রয়োজন হলে যদি টের না পায় তাই,ভোরের দিকে সোফার ওপরে হেলান দিয়ে শুয়ে চোখ লেগে গেছে শ্রাবনের,
আজ ৮ টা থেকে এক্সেম শুরু তিতিরের কাল রাতে কিছু পড়া হয়নি, সবসময় এক্সেম এর আগে ভাইকে জড়িয়ে ধরে আর রুদ্র ও পকেট থেকে টাকা দিয়ে বলে, এক্সেম ভালো না হলে টাকা ফেরত দিবি আর ভালো হলে যা চাইবি তাই দিবো,
কিন্তু তিতির কিছুই চায়না, প্রতিবারই তিতিরের এক্সেম ভালো হয় কিন্তু তিতির কিছুই চায়না শুধু বলে ভাইয়া সময় হলে চেয়ে নেবো।
আজও নিজের ভাইয়ের কাছেই বলে যাবে তাই তাড়াতাড়ি রওনা দিয়েছে তিতির, হাসপাতাল হয়ে এক্সেম হলে যাবে।
হাসপাতালে এসেই রুদ্রের কেবিনে ঢুকলো তিতির,
শ্রাবন সোফায় কোনোরকম শুয়ে আছে, মাথাটা বেকে আছে। এমন ভাবে থাকলে হয়তো ঘাড়ে ব্যাথা হবে পড়ে,
তাই তিতির শ্রাবনের মাথা ঠিক করে দিলো, যেই হাত সরিয়ে নিতে যাবে ঠিক তখনি শ্রাবন তিতিরের হাত চেপে বলতে লাগলো,
- উম্মম্ম অধরা আর একটু ঘুমাই প্লিজ, তুমি একটি বসো আর আমার ঘুম মাখা মুখটা দেখো,
শ্রাবনের কথা শুনে তিতির অবাক, কি করবে বুঝতে পারছে না, হাত সরিয়ে নিলে শ্রাবনের ঘুম ভেঙে যাবে, তারপর তিতিরকেই লজ্জায় পড়তে হবে, ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ,
চলবে,,,,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 512
Threads: 28
Likes Received: 538 in 299 posts
Likes Given: 378
Joined: Jun 2022
Reputation:
51
23-08-2025, 10:35 PM
(This post was last modified: 23-08-2025, 10:35 PM by Bangla Golpo. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পার্ট : ২০
হঠাৎ ঘুমের মাঝে শ্রাবন অনুভব করলো, তার অধরা তো বেচে নেই তবে কার হাত জড়িয়ে ধরে আছে সে, ভাবতে সাথে সাথে চোখ মেললো শ্রাবন,
শ্রাবনের সামনে তিতিরকে দেখতে পেয়ে ধরফড়িয়ে উঠলো শ্রাবন,
- তুমি, তুমি এখানে আর আমাকে টাচ কেনো করেছিলে?
- আসলে আপনি বাকা ভাবে শুয়ে ছিলেন ওভাবে থাকলে পরে ঘাড় আর মাথা দুটোই ব্যাথা হয়ে যেতত তাই আরকি আমি ঠিক করে দিচ্ছিলাম ( ভয়ে কাছুমাছু হয়ে দাঁড়িয়ে বললো তিতির।
- হুম বুঝতে পেরেছি,
বাথরুম থেকে বের হলো রুদ্র,
- কিরে এতো সকালে তুই?
- ভাইয়া আজ আমার এক্সেম সব বারই তো তোমাকে বলে যাই তাই এইবার ও বলতে এসেছি,
- ওহ আচ্ছা কিন্তু আমার মানিব্যাগ টা যে কই!!
- থাক ভাইয়া পরে দিও, আমি আসি দোয়া করো,
- না, না প্রতিবার এক্সেম এর আগে তোকে টাকা দেই, দাড়া।
ভাই আপনার কাছে কি কিছু টাকা ধার হবে?
শ্রাবনকে উদ্দেশ্য করে বললো রুদ্র,
- হ্যা হবে!!
- তিতিরকে দিকে দিন, ওর আজ এক্সেম আছে, আর এই শোন!!
- জানি কি বলবা এক্সেম ভালো হলে যা চাইবো তাই দিবা,আর খারাপ হলে!!
তিতির কিছু বলার আগেই রুদ্র বললো,
- আর খারাপ হলে এইবার বিয়ে দিয়ে দিবো। সংসার করবি।
- উফফ ভাইয়া তুমিও না!! আমি কখনো বিয়ে করবোনা।
এখন আমাকে যেতে হবে এমনি লেট হয়ে গেছে, রুমি সাবধানে বাসায় যেও। আমি গেলাম।
- এই তুই তো মস্ত বেয়াদব হয়েছিস?
- কেনো ভাইয়া আবার কি করলাম( রেগে প্রশ্নটা করলো তিতির রুদ্রকে)
- ফাজিল।মেয়ে। এক্সেম দিতে যাচ্ছিস আমাকে বললি কিন্তু সামনে শ্রাবন ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে তাকে বললি না কেন? সে তোর বড় না??
- তিতির অনেকটা কাছুমাছু ভাবে নিচের দিকে দাকিয়ে রইলো, ( সরি ভাইয়া খেয়াল ছিলোনা আমার।
বলেই শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো। - ভাইয়া আজ আমার এক্সেম আমার জন্য দোয়া করবেন।
- এতোদিন শ্রাবন তিতিরের চঞ্চল রূপটাই দেখেছে কিন্তু আজ প্রথম তার রূপটা দেখেছে শ্রাবনের মনে হচ্ছে তিতিরের চঞ্চল রূপটাই বেশি সুন্দর আর উপভোগীয়।
অনেকক্ষন ধরে রুমে বসে আছে স্নেহা, আজ রুদ্র বাড়ি ফিরবে। ভাবছে ও কি করবে। একটা অসুস্থ মানুষের সাথে খারাপ।আচরন করতে স্নেহার বিবেকে বাধে আর রুদ্রের সাথে ভালো আচরন করাও যে তার পক্ষে সম্ভব না, কারন রুদ্র যা করেছে তার ক্ষমা হয়না।
রিসেপসনে অনেকক্ষন ধরে বসে আছে শ্রাবন। ডাঃ এলেই সাইন নিয়ে রুদ্রকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে,
সকাল থেকে রুদ্রের রুম ভালো করে পরিস্কার করা হচ্ছে রুদ্র কি কি খাবে সব কিছু রেডি করা হচ্ছে কারন ছেলের শরীর নিয়ে আর কোনো রিক্স নিতে চায়না আনোয়ারা বেগম তাই এতো প্রস্তুতি।
শ্রাবণ রুদ্রকে নিয়ে বেড়িয়ে গেছে, শ্রাবনের পাশে রুদ্র আর শ্রাবন ড্রাইভ করছে,
- ভাই একটা কথা বলবো!!
- হুল বল,
- আমি আপনার বোনের সাথে অনেক অন্যায় করেছি, যার কোনো ক্ষমা হয়না, ও আমাকে মেনে নিতে পারছেনা,
- তোর মতো একি ভুল আমিও করেছি রুদ্র, আমার অধরা পবিত্র ছিলো কিন্তু আমি আমার ভালোবাসাকে বিশ্বাস না করে অন্য কারো কথা বিশ্বাস করেছি যা আমার জীবনের চরম ভুল ছিল!! আমি আমার অধরা আমার ভালোবাসাকে এতোটাই ভুল বুঝেছিলাম যে পেছন ফিরে সেদিন ওর লাশ টাও দেখিনি। কথাগুলো বলতে বলতেই যেন শ্রাবনের চোখ নোনা জলে ভিজে উঠছে,
চোখের পানি মুছতে,মুছতে শ্রাবন আবার বলে উঠলো,
আমার বোনকে যা কষ্ট দিয়েছিস দিয়েছিস, কিন্তু সামনে এমন কিছু করবিনা যাতে ও কষ্ট পায়, মনে রাখিস আমার বোন কষ্ট পেলে আমি তোকে ছেড়ে কথা বলবো না, সবার আগে আমার বোন।
- ভাই নিজে কষ্টে শেষ হয়ে যাবো কিন্তু আর কোনোদিন ওকে কষ্ট দেয়ার কথা চিন্তাও করবো না,
- হুম গুড, এসব চিন্তা বাদ দে। নিজে সুস্থ হো আমাদের অনেক কাজ করা বাকি এখনো,
- হ্যা ভাই,কাউকে ছাড়া যাবেনা,
দুজন কথা বলতে বলতে বাসায় পৌছালো,
রুদ্রকে দেখে রুদ্রের মা অনেক খুশি, শ্রাবন ধরে রুদ্রকে তার রুমে দিয়ে আসলো, আর পেছনে পেছনে স্নেহাও,
রুদ্রকে দেখে সবাই চলে গেলো, স্নেহা রুদ্রের পাশে এসে বসলো,
- কেমন আছেন?
- ভালো ছিলাম না, তোমাকে দেখার পর অনেক ভালো আছি।
তুমি কেমন আছো আর আমার বেবি?
স্নেহার এই কথার উত্তর দিতে একদম ইচ্ছানেই কারন রুদ্রের মুখে যতোবার
আমার বাবু কথাটা শোনে স্নেহার ততোবার রাগ উঠে যায়, আর সেই দিনের কথা মনে পড়ে যেদিন রুদ্র চিৎকার করে সবার সামনে নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেছিলো,
- হুম ভালো ( কোনোরকম উত্তর দিলো স্নেহা) আপনি শুয়ে থাকুন আমি আপনার খাবার দিতে বলছি
রুদ্রের পাশ থেকে স্নেহা উঠতে যাবে ঠিক তখনি, রুদ্র স্নেহার হাত ধরলো,
- আমার থেকে সবসময় পালাতে চাও কেন?
- আপনি আমাকে বেধে রেখেছেন নাকি যে আমি সে বাধন ছেড়ে পালাবো!!
- না তা রাখিনি তবে তুমি যে মন থেকে থাকছোনা তাও জানি,ভাবছো আমি আবার কোনো প্লেন করছি তাই নিজের বাবা মা ভাইকে বাচানোর জন্য বাদ্ধ্য হয়ে থাকছো।
- এসব কথা এখন বাদ দিন,
- হুম, স্নেহা তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো,
আসলে কথাগুলো তোমাকে বলা দরকার।
- হ্যা বলুন? শুনছি,,
রুদ্র কিছু বলার আগে ঠাসস করে দরজা খুললো একটা ছোট্ট বাচ্চা।
রুদ্র আর স্নেহা দুজনেই বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছে,
-মমো তুমি???( পাপা বলে বাচ্চা মেয়েটি দৌড়ে এসে রুদ্রকে জাপটে ধরলো, স্নেহা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা। স্নেহার মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাচ্চাটা কে? কি তার পরিচয় আর সে রুদ্রকেই বা কেনো পাপা বলে ডাকছে!!
আর ও এখানে এলোই বা কিভাবে??
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্নেহা ভাবছে এসব!!
কিন্তু স্নেহার কেমন জানি সব গুলিয়ে যাচ্ছে,
তিতির এক্সেম শেষ করে মাত্রই বেড়িয়েছে। বাহিরে প্রচুর রোধ আর ধুলাবালি তো ফ্রিতেই পাওয়া যায়!!
মুখে ওড়না দিয়ে গাড়ির জন্য ওয়েট করছে, কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলো যে আজ তাকে নিতে গাড়ি আসবে না ড্রাইভার ছুটিতে আশিস কিছু কাজে ঢাকার বাহিরে,
তাই আজ রিক্সায়ই যেতে হবে, ভাবতেই তিতির আমার পা বাড়ালো রিক্সার জন্য।
আধ মুখ ঢাকা তিতিরের রোদে কাজল আকা চোখ গুলো যেন ঝিলঝিল করছে, কড়া রোদে সবচেয়ে বেশি মেয়েদের যা সুন্দর লাগে তা হলো চুল আর চোখ কারন কিছু মেয়েদের চুল লালচে হয় আর রোদের আলো পড়তেই তা সোনালি আভায় পরিনত হয়, মনে হয় রোদের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের সুন্দরতা দিতে রোদের প্রকোপ অনেকটা কমিয়ে ফেলতে পারে একটা মেয়ে। আর চোখে গাড় কালো কাজল যেন কালো মাঝে চোখকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তোলে,
এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে তিতির,
সেই রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছে তাওয়াফ,
হঠাৎ তাওয়াফের চোখ পড়লো এক রৌদ্রকন্যার ওপরে ওড়না দিয়ে আধ মুখ ঢাকা মাথায় কাপড় চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, মাঝে মাঝে বেশ বিরক্তি নিয়ে চুলগুলোকে সামনে থেকে সরাচ্ছে মেয়েটি।
এটা যেন তাওয়াফের দেখা জীবনের সেরা চিত্র। এমন চিত্র হয়তো তাওয়াফ একটা সময় স্বপ্নে দেখতো।
মেয়েটিকে অনেকটা পাস করে চলে গিয়েও আবার গাড়ি নিয়ে বেক করল তাওয়াফ,
মেয়েটির সামনে গাড়ি থামিয়েই প্রশ্ন করলো মেয়েটিকে,
- আপনার কি কোনো হেল্প দরকার?
- না একটা রিক্সা দরকার বাসায় ফেরার জন্য,,,
- ওহ আচ্ছা ঠিক আছে, এখন এ সময়ে রিক্সা পাওয়া মুশকিল আপনি একটা কাজ করুন আমার থেকে লিফট নিন সামনে কোনো রিক্সা পেলে নেমে যাবেন।
,- আমি আপনাকে চিনি? আপনি আমার বন্ধু? বাকি শত্রু?( ঝাঁজালো কন্ঠে বললো তিতির)
- আরে এসব কি বলছেন? শত্রু হবো কেন? বন্ধু হতে পারি, যদি আপনি চান।
- আপনি আমার ভাইয়ার বয়সি হবেন আমার বন্ধু কিভাবে হোন? আর চিনিনা জানিনা আপনার গাড়িতে আমি উঠবো কেন?
- হুম তাও কথা উঠবেন কেন!! তাহলে কি করা যায় ? বলুন( তাওয়াফ)
- কিছু করার দরকার নেই, আপনি আপনার রাস্তায় যান আমি রিক্সা করে চলে যাবো।
- নাহ যেহেতু ভাইয়ের বয়সি বলেছেন তাহলে তো আমারো কিছু দায়িত্ব আছে তাইনা, একটা কাজ করি আমি এখানে আপনার সাথে রিক্সার জন্য ওয়েট করি। রিক্সা পেলে আপনি আপনার মতো চলে যাবেন আমি আমার মতো আশা করি এতে আপনার কোনো সমস্যা নেই তাইনা?
- অনেক সমস্যা আছে, প্লিজ আপনি যান!!
কিন্তু তাওয়াফ তিতিরের কথায় কান দিলো না, তিতিরের পাশেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাওয়াফ।
-তিতিরের বিরক্তি লাগছে এভাবে কেও সারাক্ষন তাকিয়ে থাকলে যেকোনো কারোর বিরক্তি লাগবে, এতোক্ষন মুখ ঢাকা অবস্থায় কথা বলছিলো তিতির এবার মুখের ওড়না ফেলে তাওয়াফের দিকে তাকিয়ে বেশ ঝাঁজালো কন্ঠে বলতে লাগলো তিতির।
- কি সমস্যা আপনার? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? এভাবে কারো দিকে তাকিয়ে থাকাটা অভদ্রতা!!
প্রথমে দুটো চোখ তাওয়াফের গাড়ি থামিকে দিয়েছলো, এখন যেন তাওয়াফের হার্টবিট থেকে যাচ্ছে,
কারন রৌদ্রকন্যা যে রূপ যে এই কড়া রোদের থেকেও বেশি প্রখর!!
গোলাপি ঠোট তার ওপরে গারো কালো তিল, গাল দুটো বাচ্চাদের মতো লাল টকটকে,
রেগে কথা বলাও মনে হচ্ছে যেন রূপ দিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে!!
- অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে তাওয়াফ জিজ্ঞেস করলো, তাহলে আমার কি করা উচিৎ।
- আপনার চোখ বুজে থাকা উচিৎ,
রৌদ্রকন্যার এ আদেশ যেন পালন করতে ইচ্ছা করছে তাওয়াফের, এ আদেশ না পালন করলে হয়তো সে মহামূল্যবান কিছু হারাবে বলে মনে হচ্ছে তাওয়াফের,
তাই সে আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ফেললো,
তিতির আরো রেগে নিজের যায়গায় গিয়ে দাড়ালো,
দূরে একটা রিক্সা দেখতেই তিতির চলে গেলো রিক্সার দিকে।রিক্সায় উঠেই বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
তাওয়াফ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে,
- এই রৌদ্রকন্যা এবার তাকাই? কি হলো বলো। রৌদ্রকন্যা,
কয়েকবার তিতিরকে ডাকলো তারপর কোনো সাড়া না পেতে তাকালো তাওয়াফ,
তাকিয়েই দেখকো তিতির নেই,
পাশে থাকা এ লোককে জিজ্ঞেস করলো
- চাচা এখানে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো মেয়েটা কোথায়??
- গে তো হেই কখন চইলা গেছে বাবা!!
এই কথা শুনে যেন তাওয়াফের মাথায় বাজ পড়লো,
- উফ সিট, এটা আমি কি করলাম!! পাগলামি করতে যেয়ে মেয়েটার নামই জানা হলোনা নাম্বারটাও নেয়া হলোনা নিজের মাথা নিজেরি ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে তাওয়াফের,
স্নেহা অনেকক্ষন ধরে সোফায় বসে আছে, রুদ্র বাচ্চাটির সাথে খেলায় মেতে উঠেছে,,,
মনে হচ্ছে অনেকদিন পর মন খুলে হাসছে রুদ্র,
কিন্তু স্নেহার ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে,
হাজার হলেও তার সামনে তার স্বামীকে তার সন্তানের বাবাকে কেও পাপা বলে ডাকলে তো তার খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক!!
চলবে,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
|