Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
(৫০)


কলকাতায় ফেরার জন্য সেদিন ভোরেই উঠে পড়েছিল সবাই। ঈশিতা এমনিও বিশেষ ঘুমোয়নি। একটু তন্দ্রা মতো এসেছিল। পরপর প্রায় তিন রাত জাগার ক্লান্তি ওকে ঘিরে ধরছিল। এই সময় ঈশিতা ঘরে ঢুকে ওকে তখনও শুয়ে থাকতে দেখে কপালে হাত ছুঁইয়ে দেখল গা গরম। ও কিছু বলার আগেই ঈশিতা ওর হাত ধরে মিনতি করল, ‘‘কিছু হয়নি, প্লিজ কাউকে বলে আর বিরক্ত কোরো না। আমি ঠিক হয়ে যাব।’’ জয়তীর ভিতরে খুঁতখুঁতুনিটা বাড়লেও কিছু বলল না। ভারী জলখাবার খেয়ে সবাই সকাল সকালই গাড়িতে উঠল। ওঠার একটু আগে ঈশিতা গিয়ে নিজের গায়ের চাদরটা বিছিয়ে দিল সৌমাভর সমাধির উপরে। তার পরে চার কোণে চারটে ইঁট চাপা দিল, যেন উড়ে না যায়। তার পর অনেকক্ষণ সমাধিতে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে বিড়বিড় করে কিছু কথা বলে চুপ করে এসে গাড়িতে উঠে বসল। ও এসে বসার পরে জয়তী গাড়ি থেকে নেমে বুড়িকে কয়েকটা কথা বলার জন্য গেল। তখন বুড়ি ওকে পরপর দু’দিনের ঘটনাটা বলল। জয়তী বুঝল, দ্রুত কিছু না করলে ঈশিতার সমস্যা বাড়বে। কলকাতায় ফিরেই বিষয়টা নিয়ে ঈশিতার আড়ালে সুভদ্রা এবং ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

কলকাতায় ফিরে সুভদ্রার বাড়িতে ঢোকার মুখে নামফলকে চোখ পড়তেই চমকে গেল ঈশিতা। ছোট্ট শ্বেতপাথরের টুকরোয় বাংলায় লেখা নাম ‘দেবী’। আন্দামানে থাকতে ওর নামের মানে বলতে গিয়ে সৌমাভ ওকে বুঝিয়েছিল, ঈশিতা নামের বহু অর্থের একটা হচ্ছে দেবী। তা হলে কি ওর নামেই নাম বাড়ির? অবশ্য সুভদ্রাও তো একজন দেবীরই নাম। আর এমনিতেও সুভদ্রার আচার-আচরণও দেবীর মতোই। ও প্রশ্নটা করতে গিয়েও থমকে গেল। জয়তী এবেলা এ বাড়িতেই খাবে। বিকেলে নিজের বাড়িতে ফিরবে।

দোতলা বাড়িটার দোতলাতেই উঠল সবাই। ঈশিতা দেখল, চারটে বড় শোয়ার ঘর। সুভদ্রা ওকে বলল, একটা ঘরে সৌমাভ শুত, অন্যটায় ও মেয়েকে নিয়ে শুত। বাকি দুটোর একটা কুট্টির অন্যটা জয়তী এলে থাকে ছেলেকে নিয়ে। ঈশিতা সুভদ্রার হাত ধরে অনুরোধ করল, ও সৌমাভর ঘরেই রাতে শোবে। মেয়েকে নিয়ে সুভদ্রা আগের ঘরটাতেই ঘুমোক। একটু দ্বিধা থাকলেও জয়তীর ইশারায় সুভদ্রা রাজি হল এতে। ঈশিতার সৌমাভর খাটে সেই পাতলা তোষক আর চাদরটা বিছিয়ে নিয়েছে। সেখানেই রাতে ঘুমোয়।

সেদিন থেকে ঈশিতার রুটিন হল, সকালে প্রথমে মেয়েকে তার পরে ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে চা করে সবাইকে দিয়ে সবার জন্য জলখাবার বানানো। সুভদ্রার অফিস এবং ছেলেমেয়ের কলেজ খুলে গেলে সকালের রান্না থেকে ওদের টিফিন— সবই নিজের হাতে করে দিত। ছুটির দিনে খাইয়েও দিত পাশে বসিয়ে। বাকি সারা দিন ঘরের টুকটাক কাজ করত আর আপন মনে কী সব ভাবত। মাঝে একবার ফোন করেছিল মেজদিকে। শুনল, গুঞ্জার বর সেদিন ওবাড়ি থেকে ফেরার পরে কোনও কথা বলেনি। চুপচাপই ছিল। পরের দিনই ট্রান্সফারের আবেদন করে দিয়ে এসেছিল। যে কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে ওর ট্রান্সফার হয়। নেতাদের ধরাকরা করে জানুয়ারির মাঝামাঝি ও চলে যায় নর্থইস্টের একটা ইউনিভার্সিটিতে। যাওয়ার আগের দিন দুই দিদি জামাইবাবুকে ফোন করে খবরটা দেয়। তার পরে ঘরে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে গুঞ্জাকে জানায়। অত কম সময়ের মধ্যে শান্তিনিকেতনের চাকরি, ছেলের কলেজ ছেড়ে গুঞ্জার পক্ষে সেখানে যাওয়া কঠিন। তা ছাড়া সেদিনের পর থেকে ওদের মধ্যে প্রচন্ড দূরত্ব বেড়ে যায়। ফলে গুঞ্জাও এ নিয়ে নিজের বরকে বেশি কিছু বলার সাহস পায়নি। ওর বর একাই চলে গিয়েছে। মেজদি শুধু একটা কথাই বলল, ‘‘গুঞ্জাও নিজের লোভের ফাঁদে পড়ে নিজের সুখের সংসার নষ্ট করল। ওই ছেলে আর ফিরবে কি না, জানি না। মনে হয়, সেদিন গুঞ্জার কীর্তি শুনে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়েই সব করেছে। আমি আর এই বয়সে কাউকে কিছু বলব না। আর ওর তো বয়সটা ১৮ নয়, ছত্রিশ। ফলে এমন নয় আবেগে করে ফেলেছে। যা বুঝেছে, হিসেব করেই করেছে। আমি আর বড়দি ওর খেলাটা ধরে ফেলব এবং সেটা ওই রকম ভরা হাটে বলে দেব, সেটা ভাবতে পারেনি। তাই আমাদের সঙ্গে আর কথা বলে না, ফোনও করে না। বোন বলতে তুইই রইলি, ফোন করিস। আসিস। আমরাও যাব সময় পেলে।’’ ও শুনে গেছে, কিছু বলেনি। শুধু বুঝেছে, গুঞ্জার বরের মধ্যেও কোথাও যেন একটা সৌমাভর ছায়া। অন্যায় সহ্য না করা। এ বাড়িতে আসার দিন কয়েক পর থেকে ও নিজেও কিছুটা চুপচাপ হয়ে গেছে। যন্ত্রের মতো কাজ করে, নিজের দায়িত্ব পালন করে। ছেলেমেয়ে একই রকম। এমনিও তারা ব্যস্ত নিজেদের পড়াশোনা, কলেজ নিয়ে। বাড়ি ফিরে বেশির ভাগ কথাই বলে মামনের সঙ্গে। ঈশিতার সঙ্গে টুকটাক কথা বললেও তেমন ঘনিষ্ঠতা হয়নি। ঈশিতা রোজ সন্ধ্যেবেলায় নিজের ঘরে সৌমাভর একটা বড় ছবির সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে, ধূপ দিয়ে কী যে বলে বিড়বিড় করে, কেউ বোঝে না। এ বাড়িতে আসার পরে প্রথম দিকে কয়েকদিন শোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখেছে, সুভদ্রার সঙ্গে ছেলেমেয়ে ফিসফিস করে কিছু বলতে বলতে ওকে দেখে চুপ করে গেছে। ও জানে, ছেলেমেয়ের দ্বিধা কাটতে সময় লাগবে। ও পরের দিকে বসার ঘরে বা সুভদ্রা-মুট্টির শোওয়ার ঘরে ঢোকার আগে গলা খাঁকাড়ি দিয়ে ঢুকত। এর পর থেকে সংসারের প্রায় সব কাজ নিজেই ঘাড়ে তুলে নিয়েছে, যাতে সুভদ্রার উপরে কোনও চাপ না পড়ে। রান্নার পাশাপাশি সুভদ্রা ও ছেলেমেয়ের জামাকাপড় কাচা বা ইস্ত্রি করার কাজ নিজেই করে। ঘরমোছা, বাসন মাজার ভারটাও নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে। সুভদ্রা বহু বকাবকি করেও ওকে থামাতে পারেনি। ঈশিতা শুধু একটাই কথা বলেছে, ‘‘এত বছর পরে সুযোগ পেয়েছি চুটিয়ে সংসার করার। করতে দে প্লিজ। তোর সংসার তোরই থাকবে, দেখিস। আমি তো অতিথি রে!’’ কথাগুলো কানে লাগল সুভদ্রার। কিন্তু কিছু বলল না।

জানুয়ারির শেষে সবাই পাঁচ দিনের জন্য গেছিল সৌমাভর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে নতুন কেনা চাদর দিয়ে সমাধি ঢেকে তার চারপাশে লোহার রেলিং বসিয়েছিল ঈশিতা। পুকুর সংস্কারও করিয়েছিল। বাড়ির টুকটাক মেরামতির কাজও একার দায়িত্বে করিয়ে নিয়েছিল। ওর আচরণে অবাক হলেও কেউ কিছু বলেনি। শুধু বুড়ি দেখেছিল, জানুয়ারির ঠান্ডাতেও এবারেও পাঁচ দিনই রাতে সৌমাভর সমাধির পাশে প্রায় সারা রাত শুয়ে থাকে গায়ে একটা চাদর দিয়ে। এবারও ফেরার পথে বিষয়টা ও জয়তীকে বলেছিল। কলকাতায় ফেরার পরে একদিন জয়তী এ নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলতে গেলে ঈশিতা ওর কোলে মাথা রেখে শুধু বলেছিল, ‘‘মানুষটাকে চিরদিনের জন্য হারিয়েছি নিজের পাপে। এখন প্রায়শ্চিত্তের চেষ্টা করছি গো। দেখো, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

ফেব্রুয়ারিতে দু’দিনের জন্য শান্তিনিকেতনে গিয়ে পিএফ এর টাকা তুলে নিল। ওখানকার বাড়ি-আসবাব বিক্রির টাকা নিয়ে কলকাতায় ফিরে কাঁকুরগাছির একটা ফ্ল্যাটও বিক্রি করে দিল। সব মিলিয়ে অনেক টাকা। ও ভাগ করে ফেলল সেগুলো। ৮০ ভাগ টাকা ছেলেমেয়ের নামে ফিক্সড করে দিল। কিছুটা রাখল সুভদ্রার নামে। একদিন জয়তীর সল্টলেকের বাড়িতে গিয়ে ওর ছেলেকে অনেকক্ষণ আদর করে তার নামেও বেশ কিছু টাকা একই ভাবে রাখল। তার পর একদিন দুপুরে নিজের সব গয়না নিয়ে বসে হিসেব করে মেয়ের জন্য এবং ছেলের বউয়ের জন্য আলাদা করে দুটো ছোট বাক্সে করে রাতে সুভদ্রার হাতে তুলে দিল।

এই বারে সুভদ্রা একটু রেগে গেল। সোজা জয়তীকে ফোন করে সব বলল। জয়তী সেদিন রাতে ওদের বাড়িতে এসে রইল। রাতে ঈশিতার ঘরে বসে সুভদ্রার নালিশ শুনল। সুভদ্রার একটাই কথা, ‘‘বড়দি এ রকম তাড়াহুড়ো করছে কেন? ছেলেমেয়ের বিয়ের দেরি আছে। তা ছাড়া এই ভাবে টাকাপয়সা সব দিয়ে দিল, নিজের কিছু খরচ তো লাগে। এসে অবধি খরচ করেই গেছে, একটা টাকাও নেয়নি আজ অবধি।’’ ঈশিতা বলল, ‘‘ওরে আমি অনেক বছর চাকরি করেছি। এখনও দশ বছর নিজের খরচ চালাতে পারব। তা ছাড়া তোর বাড়িতে থেকে চারবেলা খাচ্ছিও তো তোরই পয়সায়। ইলেকট্রিকের বিলও তুই দিস। আমার খরচ কী? পিরিয়ডের প্যাড? সেটুকু কেনার মতো টাকা আছে রে। তুই ভাবিস না। আর এগুলো ব্যবস্থা করে ফেললাম, কারণ আমার কিছু হয়ে গেলে, তখন সমস্যা হবে।’’ জয়তী গোটা সময়টা চুপ করে সব শুনল। শেষের কথাটায় চমকে গেল। মানে কী? ঈশিতার কিছু হয়েছে? কিন্তু দেখে তো বোঝা যাচ্ছে না। তার পরে ঈশিতাকে চমকে দিয়ে বলল, ‘‘ওখানে থাকার সময় তিনদিন এবং গত বারে পাঁচ দিন— টানা তুই রাতে সৌমদার সমাধির পাশে শুয়েবসে কাটিয়েছিস। একটা দিনও ঘুমোসনি রাতে। তুই যেটুকু খাস, সেটা একটা পাঁচ বছরের বাচ্চার থেকেও কম। ওখানে থাকার ক’দিন তোর মধ্যেকার সেই প্রাণটা কোথায় হারাল? এত চুপচাপ থাকিস, একমনে যন্ত্রের মত কাজ করিস, কোথাও যাস না। কী হয়েছে তোর?’’ এটা জানত না সুভদ্রা। ও চমকে গেল। ঈশিতার হাত ধরে বলল, ‘‘তুমি রুটিন মেনে ছেলেমেয়েকে ঘুম থেকে তুলে দাও, আদর করো, ওদের সব কাজ করে দাও, আমারও। কিন্তু কোথাও যেন একটা শূন্যতা বুঝতে পারি। জানি, ওরা এখনও তোমায় মা বলে ডাকে না, এটা নিয়ে তোমার মনের মধ্যে প্রচন্ড কষ্ট আছে। কিন্তু একটু তো সময় দেবে, বলো?’’ ঈশিতা প্রাণখুলে হেসে বলল, ‘‘ধুর, ওটা নিয়ে আর ভাবিই না। তুই আর দিদি অকারণ চিন্তা করছিস। দেখিস, ওরা ঠিক একদিন মা বলে ডাকবে, সেটা আমিও জানি।’’ বলে মুচকি হেসে একটা যেন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শব্দটা জয়তীর কানে গেল। কিন্তু কিছু বলল না। উঠে গিয়ে কুট্টিমুট্টির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের ঘরে ঢুকে গেল।

মার্চের গোড়ার দিকে ঈশিতা একদিন সুভদ্রাকে বলল, ‘‘আমার একগাদা কাজ আছে। আমি কয়েকদিন দুপুরে সব কাজ সেরে বেরোব। অনেক কাজ সারতে হবে। ফিরতে রাত হতে পারে। তবে সব গুছিয়ে রেখে যাব, শুধু খাবারটা গরম করে নিতে হবে আর সন্ধ্যাবেলা চা তোকে করে নিতে হবে ওই কটা দিন। প্লিজ, কিছু মনে করিস না। রাতের খাবার আমি করেই বেরোব, ফিরে গরম করে সবাইকে খেতে দেব।’’ সেদিন রাতে যথারীতি ছেলেমেয়েকে খাইয়ে নিজে খেয়ে ঘরে ঢুকল। সুভদ্রার কেমন যেন লাগল ওর আচরণ। ঠিক করল, পরের দিন আবার জয়তীর সঙ্গে কথা বলবে। দরকারে এ বারে ছেলেমেয়েকে একটু বকবেও। ও বুঝতে পারছে, ছেলেমেয়ের কাছে মা ডাক না শোনা, ওকে যেভাবে ছেলেমেয়ে গলা জড়িয়ে কথা বলে, সেগুলো না করা একটা প্রভাব ফেলেছে ঈশিতার উপরে।

পরের বেশ কয়েক দিন শনি-রবি বাদে ঈশিতা রোজই বেলার দিকে ঘরে তালা দিয়ে বেরোত। তার আগে সব কাজ সেরে রাখত। কুট্টি বা মুট্টি আগে ফিরলে তো বটেই, এমনকি সুভদ্রাও বহু দিন তাড়াতাড়ি ফিরে দেখেছে, ঈশিতা তখনও আসেনি। আবার কয়েকদিন এসে দেখেছে, ঈশিতা ঘরেই রয়েছে, কাজ করছে একমনে। সুভদ্রা জানে, ঈশিতা ভাল গান করে। কিন্তু আজ অবধি ওর গান শোনা হয়নি। এমনকি গুনগুনিয়ে গানও করে না। সুভদ্রা রান্নাঘরে ঢুকে ওকে একা পেয়ে একদিন প্রশ্নটা করেই ফেলল। চুপচাপ কথাটা শুনল। তার পরে দুচোখ ভরা জল নিয়ে বলল, ‘‘রবীন্দ্রনাথের গানের মানে বুঝতাম না আগে। ও একা একা অনেকবার অনেক গান গেয়েছে, সেগুলোর মানে ভাল করে বুঝিনি তখন। তাই আজও মূল্য দিচ্ছি। তখন গাইতাম না বুঝে, খেয়ালখুশিতে। আজ অনেক কিছু বুঝি রে, তাই আর গাইতে পারি না।’’ বলে দুহাতে মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে উঠল।

এ বারে দোল পড়েছে মার্চের শেষ দিকে। তার দু’তিন দিন আগে ঈশিতা বাড়ি ফিরল সুভদ্রার পরপরই। সুভদ্রা দেখল, ঈশিতার চোখমুখ অনেক খুশিখুশি। উজ্জ্বল। তার পরেই ওকে চমকে দিয়ে বলল, ‘‘অনেকগুলো কাজ বাকি ছিল, সব সেরে ফেললাম, জানিস।’’ তার পরে নিজের ঘরে ঢুকে স্নান করে একটা নতুন শাড়ি পরে ব্যাগ থেকে একটা বড় মালা বের করে বাইরের ঘরে টাঙানো সৌমাভর ছবিতে খুব যত্ন করে পরিয়ে দিল। তার পর নিজের ঘরে ঢুকে আর একটা মালা সেই ঘরে রাখা ছবিটায় পরাল। তার পর প্রদীপ জ্বেলে ছবিটার সামনে অনেকক্ষণ ধরে বিড়বিড় করে কী বলল। সুভদ্রা একবার উঁকি মেরে দেখল, ঈশিতার চোখ দিয়ে অঝোরে জল পরছে, কিন্তু তার মধ্যেও যেন একটা খুশির ছাপ। সেদিন দুই ছেলেমেয়েকে অনেকক্ষণ ধরে আদর করে খাইয়ে সেই সৌমাভর গ্রামের বাড়ির মতো যত্ন করে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তার পর শুতে গেল।

পরদিন ভোরে একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে সুভদ্রাকে বলল, ‘‘কাল দোল। আমি দিন সাতেকের জন্য পুরী যাচ্ছি। ফোন বন্ধ থাকলে চিন্তা করিস না। ঠিক সময়মত খবর পাবি।’’ বলে মুচকি হেসে একটা ছোট ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘুমন্ত ছেলেমেয়েকে অনেকক্ষণ আদর করে সুভদ্রাকেও বুকে টেনে আদর করে ঘর ছাড়ল। সুভদ্রার আবারও কেমন যেন লাগল। ও দেখল, একবার শুধু পিছন ফিরে বাড়িটা দেখে সামনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে ঈশিতা। মাঝে একবার শুধু চোখে হাত দিল, হয়তো কিছু পড়েছে।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(৫১)

ঈশিতা চলে যাওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই সমুদ্রকে নিয়ে জয়তী এ বাড়িতে এসে খবরটা শুনল। আপাতত কয়েক দিন ও এবাড়িতেই থাকবে। সল্টলেকের বাড়ি বিক্রি না করে মোটা টাকায় একটা ব্যাঙ্ককে ভাড়া দেবে বলে ঠিক করেছে। আর কয়েক দিন পরে বৈশাখ মাস পড়লে এ নিয়ে কথা ফাইনাল হবে। এ সব নিয়ে আজ কথা বলবে সবাই মিলে বলে ঠিক করেই এসেছিল, কিন্তু ঈশিতা নেই দেখে খারাপ লাগল জয়তীর। তার উপর যাওয়ার আগে ওকেও তো কিছু বলেনি! ও কিছু না বলে চুপ করে রইল। একফাঁকে চোখ পড়ল, সৌমাভর ছবিতে মালা দেওয়া। কী মনে হতে সৌমাভর শোয়ার ঘরে গিয়ে দেখল, সেখানেও সৌমাভর ছবিতে মালা দেওয়া। খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল, সৌমাভর বিছানার চাদরটা শুধু যত্ন করে খাটের মাথার দিকে রাখা। ওর মনে পড়ল, ঈশিতা আসার পর থেকে যখনই এসেছে, দেখেছে, একটা চাদর বিছানায় পাতা, অন্যটা পাশে ভাঁজ করে রাখা। যাতে রাতে গায়ে দিয়ে শুতে পারে। আজ একটা চাদর পরিপাটি করে রাখা, অন্যটা কোথায়? দেখেই বোঝা যাচ্ছে, রীতিমতো ডেটল দিয়ে কেচে ইস্ত্রি করে রাখা চাদরটা। মনের ভিতরটা কী একটা কারণে যেন খচখচ করল জয়তীর। ফোন করে দেখল, ঈশিতার ফোন বন্ধ। ওদিকে সমুদ্র দুই দাদাদিদির সঙ্গে মেতে গেছে। ঈশিতা না থাকায় রান্না করা থেকে শুরু করে সব কাজ পড়েছে সুভদ্রার ঘাড়ে। সেটা দেখে জয়তীও ওর সঙ্গে হাত মেলাল। পরের দিন দোল আনন্দেই কেটে গেল সবার। তার পরের দিনও। সেদিন আবার খবরের কাগজ বন্ধ। কাগজ না পড়লে বাঙালির দিন ভাল করে শুরু হয় না। ওরা কেউই টিভি দেখতে পছন্দ করে না। তাই হাবিজাবি গল্প করে কাটাল সারাদিন। রান্নাও করল দু’জনে মিলে। অনেক কথা হল সৌমাভকে নিয়ে, এমনকি ঈশিতাকে নিয়েও। জয়তী দেখল, ঈশিতাকে নিয়ে আলোচনার সময় ছেলেমেয়ে চুপ করে আছে। এবার ওর একটু রাগই হল। তিন মাস হয়ে গেছে। সৌমাভর মৃত্যুর দিন থেকে ঈশিতার ছেলেমেয়েকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা ও দেখেছে। ছেলেমেয়ের কাছেও রাখঢাক না করে নিজেকে নোংরা মেয়ে বলে ওর বারবার ক্ষমা চাওয়া, কান্না— সব ওর চোখের সামনেই হয়েছে। তার পরেও একছাদের নীচে এতদিন থেকে কুট্টিমুট্টি একবারও মা বলে ডাকেনি! সে দিন রাতে ও শুতে গেল, মনের মধ্যে একটা অশান্তি আর খারাপ লাগা নিয়েই।

পরের দিন সকালে কাগজ আসার পরেই ও হুমড়ি খেয়ে পড়ল। চা খেতে খেতে কাগজ পড়তে পড়তে একটা ছোট্ট খবরে চোখ আটকে গেল, ‘দোলের আগের দিন সন্ধ্যায় কলকাতা চক্ররেলের লাইনে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তির দেহ মিলেছে। ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে, প্রচুর মদ্যপান করে ছিলেন ওই ব্যক্তি। মৃতের নাম রাহুল দুবে, বাড়ি কলকাতায়। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, তিনি কি কারণে চক্ররেলে চড়েছিলেন, তা তাঁদের অজানা। মৃতের স্ত্রী ও দু’টি সন্তান রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, প্রচুর মদ খেয়ে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বাইরে ঝুঁকতে গিয়েই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান তিনি। রেল পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে।’

খবরটা পড়ে স্নায়ু টানটান হয়ে উঠল জয়তীর। এ কি সেই রাহুল দুবে? ও কাগজটা ভাঁজ করে রেখে চুপ করে ভাবতে বসল। কাউকে কিছু বলল না, শুধু ঈশিতার নম্বরে একটা ফোন করল এবং অবাক হয়ে দেখল, ফোনটা এখনও বন্ধ! ওর এবার অস্থির লাগল। সুভদ্রাকে ডেকে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘‘ঈশিতা পুরীতে গেছে ক’দিনের জন্য? তোকে ফোন করেছিল এর মধ্যে?’’ সুভদ্রা মাথা নেড়ে জানাল, কয়েকদিনের জন্য পুরী যাচ্ছি বলে বেরিয়েছিল, কবে ফিরবে বলেনি। সেদিনটা প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়েই কাটাল জয়তী। কারও সঙ্গে বেশি কথা বলল না। নিজের মতো চুপ করে আকাশপাতাল ভাবতে লাগল।

পরদিন সকালে ওর কয়েকটা কাজ ছিল। সুভদ্রারও। সকাল সকাল দু’জনেই বেরিয়ে গেল। ছেলেমেয়েরা বাড়িতেই রইল। রাতে ফিরে বিশেষ কথা হল না।  বারান্দায় বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সে দিনের কাগজটা চোখ বোলাতে লাগল। লাগল। অন্য একটা পাতায় গিয়ে একটা খবর চোখে পড়তেই মাথা ঘুরে জ্ঞান হারাল জয়তী। ওর পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে সুভদ্রা, কুট্টিমুট্টি, সমুদ্র সবাই মিলে চোখেমুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরাল। ওর উঠে বসে মুখচোখ মুছে সুভদ্রাকে খবরটা পড়াল, ‘‘দোলের দিন রাতে শান্তিনিকেতনের একটা হোটেল থেকে ঈশিতা নামে এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। মহিলার বয়স আনুমানিক ৩৬-৩৭। পরণে লাল রঙের একটা পুরনো বেনারসী শাড়ি ছিল। হোটেলে নাম লেখানোর সময় তিনি কোনও পদবী ব্যবহার করেননি। ফলে মহিলার পুরো পরিচয় পেতে পুলিশের সমস্যা হচ্ছে। হোটেলে তাঁর যে ফোন নম্বর দেওয়া ছিল, সেটা তাঁর ঘরে বা ব্যাগে মেলেনি। নম্বরটিও বন্ধ। বিকেলে হোটেল ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যে পর্যন্ত না বেরনোয় হোটেল থেকে খবর দেওয়া হয় থানায়। তারাই দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করে। প্রচুর পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, এটি আত্মহত্যা। মহিলার মাথার কাছ থেকে দুটি চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি সুইসাইড নোট। মহিলা জানিয়েছেন, একাকীত্বের অবসাদ থেকেই এই পথ নিয়েছেন তিনি। চিঠিতে কারও নামে কোনও অভিযোগ করেননি। আর একটি নোট স্থানীয় পুলিশকে লেখা। চিঠিতে তিনি জানিয়ে গেছেন, তাঁর কোনও আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। ফলে দেহটি যেন পুলিশই দাহ করে। দাহ বাবদ বেশ কিছু টাকাও চিঠির সঙ্গে ক্লিপ দিয়ে আটকানো ছিল। একই সঙ্গে পুলিশকে অনুরোধ করা ছিল, তাঁর খোঁজে আসা কাউকে যেন হেনস্থা না করা হয়। পরের দিন ভোরে  দেহটি দাহ করা হয়েছে। পুলিশ তাঁর পরিচিত বা আত্মীয়দের খোজ পেতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ শুরু করেছে।’’

খবরটা পড়ে সুভদ্রা হাইমাউ করে কেঁদে উঠতে যেতেই জয়তী ওর মুখ চেপে ধরল। তার পরে মাথা চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘‘সৌমদার বাড়ি থেকে ফেরার কয়েক দিন পর থেকে ওর হাবভাব ভাল লাগেনি। যত দিন যাচ্ছিল, নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল। কেন নিচ্ছিল, তুইও জানিস। যাক, এখন আর ও সব ভেবে লাভ নেই। তবে ও যে এটা করবে, ভাবিনি। অনেক অভিমান নিয়ে চলে গেল মেয়েটা। সেদিন সৌমদার দুটো ছবিতে মালা আর বিছানার চাদর ওই ভাবে দেখে সন্দেহ হলেও বলতে পারছিলাম না। কিন্তু ক্রমাগত মনটা কুডাক গাইছিল রে।’’ তার পরেই নিজেকে সামলে সুভদ্রাকে বলল, ‘‘সমুদ্রকে ওর এক বন্ধুর বাড়িতে দিন কয়েকের জন্য রেখে চল আমরা একটু পরেই বেরিয়ে যাই। ছেলেমেয়েকে এখনই কিছু বলিস না। ওখানে সব দেখে সিদ্ধান্ত নেব। তুই চেনাশোনা একটা এজেন্সি থেকে গাড়ি বুক কর। দরদাম বেশি করিস না। আর টাকাপয়সা যা আছে, সঙ্গে নিয়ে নে।’’ বলে ঘরে ঢুকে সমুদ্রকে বলল, ‘‘তুই কটা দিন জিশানদের বাড়ি থাক। আমি আন্টির সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি।’’ বেস্ট ফ্রেন্ডের বাড়িতে থাকবে শুনেই সমুদ্র নেচে উঠল। জয়তী ওকে রাখতে গেল। সুভদ্রা হতভম্বের মতো বসে রইল বারান্দায়। পিসির ওই ভাবে চলে যাওয়া আর মামনের থমথমে মুখচোখ দেখে কুট্টিমুট্টি ঘাবড়ে গেলেও কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পেল না।
Like Reply
(৫২)

শেষ কথা

ছেলেকে রেখে ফেরার সময় জয়তী দেখল, দরজার বাইরে পোস্টঅফিসের লোক। ‘গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখা দু’টি খাম নিয়ে দাঁড়িয়ে। সরকারি খামের চিঠি, তাই সই করে নিতে হবে। একটি ওর নামে, অন্যটি সুভদ্রার নামে। ও নিজেই সই করে চিটি দুটো নিয়ে ইশারায় সুভদ্রাকে নিয়ে সৌমাভর শোয়ার ঘরে ঢুকল। তার পর দরজা আটকে সুভদ্রাকে ইঙ্গিতে চিঠি খুলতে বলল। ‘সুভদ্রা সরকার’ নাম লেখা খামের মুখ কেটে সুভদ্রা একটা চিঠি বের করল। একপাতার মাত্র চিঠি। তাতে কয়েকটা লাইন লেখা, ‘‘স্নেহের সুভদ্রা, ভেদিয়ার বাড়িতে তোকে জড়িয়ে ধরে দেওয়া কথা রাখতে পারলাম না। বলা ভাল, রাখলাম না। অবশ্য রেখেও খুব লাভ হত না। যাক, তোর সংসার তোর হাতেই ছেড়ে গেলাম। সবকিছু। তোকে একদিন বলেছিলাম না, আমি অতিথি। অতিথিদের বেশিদিন এক জায়গায় থাকতে নেই রে। তাই চলে যাচ্ছি। তার উপর নোংরা চরিত্রের অতিথি তো, তোর কোনওদিন দুর্নাম হলে সেটা তোর পরিবারের সকলের পক্ষেই খারাপ হত। খুব ভাল থাকিস সবাই মিলে। আমি তো বেশ্যা বলে সবার কাছে পরিচিত, তাই তোর ছেলেমেয়েকে আশীর্বাদ করে যেতে পারলাম না। প্রার্থনা করি, তোরা সবাই ভাল থাকিস। ইতি ঈশিতা (বেশ্যাদের পদবী থাকে না, তাই লিখলাম না)।’’

চিঠিটা পড়ে সুভদ্রা স্তম্ভিত হয়ে গেল! ওর মনে পড়ল, ঈশিতা এ বাড়িতে এসে সব কাজ নিজে হাতে করা শুরু করার পরে ও একদিন তা নিয়ে বকাবকি করায় ঈশিতা বলেছিল, ‘‘তোর সংসার তোরই থাকবে, দেখিস। আমি তো অতিথি রে!’’ সেদিনই ওর খটকা লেগেছিল। কিন্তু বলি বলি করেও জয়তীকে বলা হয়নি। ও কেঁদে ফেলল। জয়তী ওর হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে কিছু না বলে ওর নাম লেখা খামটা খুলল,

‘‘জয়তীদি (আজ আর দিদি লিখলাম না, অনেক কারণে), প্রথম অনুরোধ এই চিঠি পুড়িয়ে দিও। কারও হাতে পড়লে বিপদ হবে, অকারণ থানা-পুলিশ। তার উপর তোমাদের সরকারি চাকরি, ছেলেমেয়ে তিনটের ভবিষ্যৎ, সব মিলিয়েই বললাম।
চল্লাম গো। ভাল থেকো। দেখি, ওপারে গিয়ে দেখা পাই কি না। তোমাকে একটা ঘটনা বলি। দিন কয়েক আগে সুভদ্রা আমাকে প্রশ্ন করেছিল, আমি কেন আর গুনগুন করে হলেও গান গাই না। ওকে বলেছিলাম, রবীন্দ্রনাথের গানের মানে না বুঝে গাইতাম আগে। এখন বুঝি বলে আর গাইতে পারি না। জানো, আন্দামানে বিয়ের পরে যখন সবাই আমাকে ১২ বছরের বড় ওই লোকটার কাছে রেখে চলে গেছিল, খুব কেঁদেছিলাম দু’দিন। খাইনি, ঘুমোইওনি। তিন দিনের দিন আমাকে নিয়ে সমুদ্রের বিচে বসে ‘ভুবনজোড়া আসনখানি’ গানটার ইতিহাস বলে গেয়ে উঠেছিল নিজের মনেই। ওই মুহূর্তে লোকটার প্রেমে পড়িনি শুধু, তার হাতে নিজের সর্বস্ব তুলে দিয়েছিলাম। বিনা বাধায়। তার পরে অনেকগুলো দিন তার কাছে নিলাজের মতো নিজেকে মেলে ধরেছিলাম। আমাকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করবে বলে স্বপ্ন দেখিয়েছিল সে। তার পর কলকাতায় এসে জানো, প্রথম ক’দিন ঘর গোছাতেই কেটে গেল। এত ক্লান্ত লাগত, কী বলব। আমি তো আগে তখন এসব করিনি। মাত্র ১৮ বছর হয়েছে। হাঁপিয়ে যেতাম গো। শরীর যেন ভেঙে আসত। রাতে ওর কাছে শুলেও ক্লান্তি আর নতুন জায়গার লজ্জায় নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারতাম না। তার কয়েকদিন পরে কাঁকুরগাছির বাড়িতে গিয়ে নিজের বইখাতা নিয়ে ফেরার পথে পিরিয়ডের ডেট চলে গেছে দেখে কি মনে করে ইউরিন টেস্টের জন্য টাকা দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ও বাড়ি ফিরে আমি কেন বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা করিনি, তাই নিয়ে বিস্তর বকাবকি করল। আমার খারাপ লাগলেও কিছু বলিনি। আহারে, সারাজীবন একা থেকেছে লোকটা, সত্যিই তো ওরও ইচ্ছে করে আত্মীয় পেতে। কিন্তু তার পরেই আমাকে আন্দামানের মতো করে থাকতে বলায় খুব রাগ হয়েছিল। যা নয় তাই বলেছিলাম। কেমন গুম খেয়ে গেছিল। রাতে আদরও করেনি। আমারও রাগ হয়ে গেল শুয়ে পড়লাম। পরদিন ইউরিন রিপোর্ট পেয়ে দেখলাম, পজিটিভ। বিশ্বাস করো জয়তীদি, তখনও পর্যন্ত আমার গর্ভ অপবিত্র হয়নি। ওরা অপবিত্র গর্ভের সন্তান নয় গো। পরের দিন ডাক্তার দেখিয়ে রাতে কাঁকুরগাছির বাড়িতে গেলাম ওকে নিয়ে। ভেবেছিলাম, যে আমাকে এত দিয়েছে, তাকে আজ আন্দামানের রাত ফিরিয়ে দেব। কিন্তু নিজের আগের ঘরটায় শুতে গিয়ে কেন যেন হঠাৎ কলেজের ক্রাশের কথা মনে করে বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলাম। রাতে শুয়ে ওকে বুকে টেনে নিলেও আমার বিক্ষিপ্ত মনটা ও বুঝে ফেলেছিল। আচমকাই নেমে গিয়েছিল উপর থেকে। কিছু বলার সাহসই পায়নি। বয়সে বড় লোকটাকে সত্যি ভয়ও পেতাম তখন। রাতে শুনাম গাইছে,

‘‘নিবিড় সুখে মধুর দুখে
জড়িত ছিল সেই দিন
দুই তারে জীবনের
বাঁধা ছিল বীন,
তার ছিঁড়ে গেছে কবে......’’ কেঁদে ফেলেছিলাম। ভেবেছিলাম, অভিভাবক হিসেবে, স্বামী হিসেবে না হোক প্রিয়তম বন্ধু হিসেবে আমাকে বলবে কিছু, বোঝাবে। জিজ্ঞাসা করবে, ভুল শুধরে দেবে। হাজার হোক, আমার সব কিছু তো ওরই হাতে, ওরই কাঁধে। আন্দামানে থাকার সময় কোনও ভুল করলে কত বোঝাত। সেই আশাতেই ছিলাম জানো। কি বোকা আমি! বুঝিনি, ও নিজেই বীনার তার কেটে দিয়েছে! তার পর থেকে আমি ভুলের পর ভুল করে গেছি, কিন্তু একটা দিনও আমাকে আর আগের মতো করে জড়িয়ে ধরে বকে, বুঝিয়ে সামলায়নি। উল্টে আমার থেকে ক্রমশ দূরে সরে গেছে, আমার দু’বছরের ছোট বোনকে বরং অনেক কথা বলেছে। কিন্তু ১২ বছরের ছোট আমাকে একটা কথাও বলেনি! আমি অন্যায়, ভুল কোনওটাই অস্বীকার সেদিনও করিনি, আজও করব না। আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে বিয়ে দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলেছিল। যার হাতে তুলে দিয়েছিল, তাকে আমি নিজের সর্বস্ব দিয়েছিলাম। কিন্তু একটা অষ্টাদশীর মনের ভাব লোকটা বোঝেইনি। তাই দূরত্ব বাড়ছিল। আমি বহু দিন হাউমাউ করে কেঁদেছি। কখনও ওর কাছে, কখনও মায়ের কাছে। নভেম্বরে বেলেঘাটার বাসায় ফেরার পরেও কলেজের ব্যস্ততায় ওকে সময় না দিয়ে অন্যায় করেছি ঠিক, কিন্তু ও তো একদিনও আমাকে জোর করে চেপে ধরে বলেনি, তুমি এটা কোরো না, ওটা কোরো না? উল্টে আমি জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে বারবার ওকে পুরনো সময় ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিতে গেলে একটু হেসে সরিয়ে দিত নিজের থেকে। আজ এসব কথা অবান্তর, কিন্তু বিশ্বাস কর, কলকাতায় ফিরে থেকে আমার সব ভুল ওর চোখে পড়লেও একদিনও আমাকে আগের মতো করে বোঝানো তো দূর, কাছেও আসত না। দূরত্ব বাড়াচ্ছিল রোজ। তার পরে তো একদিনে মাত্র কয়েক ঘন্টায় আমি চিরকালের জন্য বেশ্যা হয়ে গেলাম! আজও তুমি বিশ্বাস করবে না, সেদিন একটা সময় রাহুল আমায় রেপ পর্যন্ত করেছিল, হুমকি দিয়েছিল বাড়িতে, কলেজে, পাড়ায় কলঙ্ক রটাবে। সে কাজে ওর ‘সুনাম’ ছিল। শরীরর খিদের সঙ্গে ভয়— আমাকে গুলিয়ে দিয়েছিল। যন্ত্রের মতো সব সহ্য করেছিলাম। এবং বুঝেছিলাম, আমি প্রতারক, আমি বেশ্যা। পরে ওর চিঠি পড়ে দিদিরাও সেটা বুঝিয়েছিল, এমনকি চার মাস পরে তোমার কাছে যে দু’দিন গেছিলাম, সে দু’দিনও তুমি ঘুরিয়ে সেটাই বুঝিয়েছিলে। আমি জানতাম, একটা বেশ্যার কথা কেউ বিশ্বাস করবে না, তাই কথাগুলো সেদিন বলতে পারিনি। আজ আমার কোনও লাজভয় নেই। চিরদিনের মতো চলে যাচ্ছি। তাই একটা প্রশ্ন করছি, বিয়ের সময় বয়স ১৮ বছর, তোমার কাছে যে দু’দিন গেছিলাম, তখন আমি সদ্য ১৯। টিনএজ একটা মেয়ে ভুল, অন্যায় করলে তাকে সবাই বোঝায়। জানো, আমাকে কেউ বোঝায়নি। উল্টে পিঠে বেশ্যা ছাপ মেরে দিয়েছে অবলীলায়! কতবার আত্মহত্যা করতে গিয়েও করিনি একটাই কারণে। ওকে সামনে পেলে এই প্রশ্নটাই করতাম, কেন সেদিন আমাকে বোঝাওনি আগের মতো করে? তুমি তো জানতে আমি টিন এজের একটা মেয়ে। যার অনেক বিষয়ে বোধবুদ্ধি নেই। সে ভুল করলে বোঝাবে না? ১২ বছরের বড় হয়েও? এ কি রকম অভিভাবক, স্বামী, বন্ধু তুমি। জয়তীদি, আজ বুঝি, বীনার দুটো তারই ও নিজে হাতে ছিঁড়ে দিয়েছিল কাঁকুরগাছির বাড়িতে প্রথম রাতেই। বা হয়তো তারও আগে, আমি রেগে গিয়ে চারটে উল্টোপাল্টা মুখ করেছিলাম বলেছিলাম যেদিন! কে জানে! আজ আর জেনে লাভও নেই। একটা কষ্ট কি জানো, তুমি নিজেও জানতে, আমি তখন কী রকম পাগলের মতো ওর পায়ে পড়তেও রাজি, আমার বয়স, সব তুমি জানতে। তবু তুমি আমার জন্য সে ভাবে কিছু করোনি। ওর বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে। আমার সর্বস্ব হারালেও তোমার কিছু এসে যায়নি! হয়তো খারাপ লাগবে শুনতে, আমার দুই দিদির সঙ্গে যে তোমার যোগাযোগ ছিল, সেটা বুঝেছিলাম ওর মৃত্যুর দিন। তার আট-নয় বছর আগে ও কলকাতায় ফিরে এসেছে। ততদিনে হয়তো আমার উপরে ঘৃণাটা অনেক কমে গিয়েছিল। তবু দিদিদের থেকে খোঁজ নিয়ে আমাকে একবারও লোকটার সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাওনি। কেন গো? আমার দিদিরা তো জানত, আমি বিশ্বভারতীতে পড়াই। খবরটা তুমি জানতে না, তা তো নয়। তখন আমি চাকরি করছি, কারও গলগ্রহ হব না বলে। কারণ আমার পরিবারে আমার বেশ্যা পরিচয়টাই সবথেকে বড় হয়ে উঠেছিল। তাই একাকীত্বে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু চাকরি নয়, আমি সংসার করতে চেয়েছিলাম গো, বিশ্বাস কর। ছেলেমেয়ে, স্বামী সবাইকে নিয়ে জমাট সংসারের স্বপ্ন দেখতাম রোজ। ওর বুকে মাথা রেখে গান শুনব, শোনাব, ছেলেমেয়েকে বড় করব, লেখাপড়া করাব। আমি পুরোদস্তুর সংসারী হতে চেয়েছিলাম। তোমাকে একবার এসব বলেওছিলাম কলকাতায় থাকতে থাকতে। কিন্তু তুমি সব জেনেও না লোকটাকে আমার কাছে এনে দিয়েছো, না আমাকে লোকটার কাছে নিয়ে গেছো। আমি এই ক’দিনে বিস্তর খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তুমি সেই সময় কয়েকবার কর্নাটকের ভদ্রা বলে একটা জায়গায় যেতে, পরে বম্বেতে যেতে। জেনেছিলাম, ওই দুই জায়গাতেই ও থাকত তখন। তখনও মাঝেমধ্যে তোমার সঙ্গে আমার কথা হয়, আমি খোঁজ নিই পাগলের মতো, কাঁদি ছেলেমেয়ের জন্য। কিন্তু লাভ হয়নি। এমনকি লোকটা চাকরি ছেড়ে শান্তিনিকেতন থেকে আধঘন্টার দূরত্বে আছে জেনেও দিদিদের বলেকয়ে ঠিকানা নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগও করোনি! আমি ভেসে গেছি গত ১৮ বছর ধরে। একটা কথা বিশ্বাস করতে পারো, আমি ওই একদিনই বেশ্যা হয়েছিলাম, তার পর থেকে আমার শরীর কেউ স্পর্শও করতে পারেনি। তবু তোমাদের সবার চোখে আমি বেশ্যা! শরীরের খিদেয় যারতার সঙ্গে শুতেও পারি! কয়েক মাস আগে ১৮-য় পা দেওয়া যমজ ভাইবোনের কাছেও সেই ইমেজ । কি কপাল ভাবো তো? সেদিন মুকুট্টির অনুষ্ঠানের গান-কবিতা শুনতে শুনতে ভিতরে একটা উথালপাথাল হচ্ছিল। পরের দিন যখন বোনকে নিয়ে দাদা বাইকে চড়ে আমার দিকে তাকাল, তখন এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে গুঞ্জার বরের বাইকে ওদের ধাওয়া করেছিলাম। তাই শেষ ছোঁয়াটা ছুঁতে পেরেছিলাম, কেউ না চাইলেও। তার পরেও ওদের আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। ওদের কাছে নিজেকে নোংরা মেয়ে বলে তুলে ধরতেও মুখে বাধেনি, ক্ষমা চেয়েছি, কেঁদেছি, বুকে টেনেছি। কিন্তু আমি তো শেষপর্যন্ত একটা বেশ্যাই, তাই না? তাই প্রথমদিন আমার হাতে খাওয়ার সময় থেকে ওদের জড়তাটা টের পেয়েছি। ভেবেছিলাম, কলকাতায় ফিরে হয়তো কেটে যাবে। যায়নি। বরং আমার হাতে খেতে ওদের অস্বস্তি বাড়ত। তাই আমি আর পরের দিকে ওদের কাছে মা ডাকটা শুনতে চাওয়ার জন্য আকুল হতাম না। সুভদ্রা বলেছিল, সময় দিতে। আজ দিয়ে গেলাম। অনন্ত সময়।

ওদের ১৮ পার হয়েছে কয়েক মাস আগে। আর কয়েক মাস পরে ওরা ১৯এ পড়বে। ওরা ভুল করলে তোমরা সবাই মিলে ঠিক করে দেবে, বকবে, জানবে কি হয়েছে, সেটার সমাধান বলবে, বুকে টেনে নেবে। এটাই স্বাভাবিক। এবং এটা আরও অন্তত পাঁচ-সাত বছর পর্যন্ত ওরা পাবে। আর দশটা ছেলেমেয়ের মতো ওরা এই জায়গায় ভাগ্যবান। যে ভাগ্য আমার হয়নি। আমি ১৮য় মা হয়েছিলাম, ১৯এ সব হারিয়ে বেশ্যা পরিচয় পেয়েছিলাম। আমার কপালে এসব জোটেনি গো। সব কিছু যার হাতে দিয়েছিলাম, সে ক্রমশ দূরেই ঠেলে দিয়েছে, আমিও শ্যাওলার মতো দূরে ভেসে গেছি।

যাক অনেক কথা লিখলাম। যার সঙ্গে জীবন জুড়ে ছিল, সে দুটো তার একসঙ্গে ছিঁড়ে দিয়েছিল বহু বহু আগে। তখনও আমি কুড়িতে বুড়ির দলে ঢুকিনি। অনেক ছোট ছিলাম। তার পর থেকে জীবনটা টেনে নিয়ে গিয়েছি। রোজ কত আশা, কত স্বপ্ন নিয়ে শুতাম, উঠতাম। আর নয় গো। সুভদ্রাকে বোলো, ওর সংসার বা ওর ছেলেমেয়েকে নিয়ে বিড়ম্বনা আর রইল না। আর কাউকে মা ডাকার জন্য ওদের না কারও কাছে ছোট হতে হবে, না কারও বকুনি শুনতে হবে। তা ছাড়া একটা বেশ্যাকে কি মা ডাকা যায় জয়তীদি? বেশ্যাদের তো ছেলেমেয়ে থাকতে নেই। তাই সব দুর্ভাবনা, চিন্তার জাল কেটে দিলাম। বীনার তার ছিঁড়ে গেছে ১৯ বছর হওয়ার আগেই, তারহীন বীনাটা এখন কাঁধে বোঝার মতো লাগছে। এবার সেটার বিসর্জন। বিয়ের শাড়িটা পড়ে চল্লাম জানো, যদি চিনতে পারে! জানি না, এখনও আমাকে ঘৃণা করে কি না, তবু আশা তো...

অরণ্য, মৃত্তিকা আর সমুদ্রের জন্য যেটুকু রেখেছি, সেটা আমার পড়ানোর টাকা, পৈত্রিক বাড়ি বিক্রির টাকা। বিশ্বাস করে, শরীর বিক্রির টাকা দিয়ে ওদের অমঙ্গল করিনি। তবু যদি তোমাদের দ্বিধা থাকে, তোমরা ওই টাকা কোনও অনাথ আশ্রমে বা ঘরহারানো মেয়েদের নিয়ে কাজ করে এমন কাউকে দিয়ে দিও।

ওহ একটা কথা। যার হাতে আমার বাকি সবটুকু শেষ হয়েছিল, সে তার প্রাপ্য পেয়েছে। ভেবেছিল, আমি সেই বেশ্যাই আছি। বোঝেনি, যাকে সে বেশ্যা উপাধি পাইয়ে দিয়েছিল, তার হাতেই মরতে হবে। তিন ঘন্টার বিনিময়ে একটা ছোট্ট ধাক্কা।  

ভাল থেকো। ওদের ভাল রেখো, ভাল থাকতে বোলো। আর শেষ কথা, গুঞ্জাকে জানিয়ো, ওর ট্রান্সফার হয়ে গেছে। এপ্রিলে ছেলেকে নিয়ে ওর বরের কাজের জায়গাতেই যেতে পারবে। আমার সঙ্গে ওর বরের কথা হয়েছে। তাকে অনুরোধ করেছি, সংসার ভাঙা সহজ, গড়া কঠিন। একটা ঘটনায় কাউকে বিচার করতে নেই। জানো, কী আশ্চর্য, ছেলেটা বুঝেছে। ও ভাল থাক। তোমরাও। দিদিদের পরে খবর দিও।

ইতি ঈশিতা

(এমনিও চাকরি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সরকার টাইটেলটাই ব্যবহার করেছি। পরে বুঝেছি, বেশ্যাদের তো টাইটেল থাকে না! তা ছাড়া গত ১৮ বছর বেশ্যা পরিচয়টাই সেঁটে গেছে পিঠে, তাই শুধু নামটাই লিখলাম) কোনও কথায় খারাপ লাগলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ভাল থেকো।’’

চিঠিটা পড়া শেষ করে জয়তী যখন মুখ তুলল, ওর চোখ লাল। চোখের জল নেমে ভিজে গেছে শাড়ি-ব্লাউজের অনেকটা। একটা কথাও না বলে চিঠিটা সুভদ্রার হাতে দিয়ে বলল, পড়ে পুড়িয়ে দিস। ও সবার কথা ভাবত, কেউ ওর কথা ভাবেনি। আজ চোখে আঙুল দিয়ে সব দেখিয়ে গেল।

সুভদ্রা চিঠিটা হাতে নিতে নিতে দেখল, ঘরে ঢুকছে অরণ্য আর মৃত্তিকা। কী করবে এ বার? ওরা কি কিছু বুঝেছে? ওর মাথা কাজ করছে না। তাকিয়ে দেখল, চোখ মুছতে মুছতে জয়তী ঘর ছাড়ছে।

(শেষ)
Like Reply
(20-05-2025, 02:19 AM)prataphali Wrote:  
হুমম, চমৎকার লেখনী।
তবে ঈশিতা মনে হয় আউটলাইয়ার। নাহলে মাত্র ১৮ বছরের বাচ্চা মেয়েকে অতখানি কামার্তা কখনও দেখিনি যে স্বামীকে ভুলে যায় চট করে। সাধারণতঃ ১৮ বছরের বাচ্চা মেয়েরা বয়স্ক পুরুষদের মোহ ত্যাগ করতে পারে না। আমার বউ আমার থেকে ১২ বছরের ছোট। তার কাছে তার সহপাঠীরা ছেলেমানুষ লাগত। উদয়শঙ্করের সঙ্গে অমলা শঙ্কর ১৫ বছরেই প্রেমে পড়েছিলেন। এটি অবশ্য পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিশোর বয়সে মাসি পিসিদের প্রতি আকর্ষণ সবাই অনুভব করে। কেন? কারণ নারী দেখতে পায়। সমবয়স্কদের বাচ্চা মেয়ে বলে মনে হয়।
 
দ্বিতীয়তঃ আপনার নারী চরিত্রের একটি প্রবণতা দেখেছি। তাদের স্নায়ু খুব দুর্বল। প্রায় শরৎচন্দ্রের কালের নারীদের মত। তারা কথায় কথায় জ্ঞান হারায়। এ যুগে অত জ্ঞান হারান নারী আমি অন্ততঃ একটাও দেখিনি। কম নারী দেখিনি। আমার বয়স কিন্তু ৫২ বছর। জেন এক্স।

সবার nurve কি সমান হয়? হয় না। আপনি আমার চেয়ে কিছুটা ছোটো, এমনি বললাম। জগত টা একটু বেশি দেখেছি কাজের সূত্রে।
[+] 2 users Like Choton's post
Like Reply
(20-05-2025, 01:05 PM)prshma Wrote:
সবই তো বুঝলাম মোহময় কিন্তু আমরা 'তাঁর ছিঁড়ে গেছে' এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা খালি নিজেদের মধ্যে কোন মডেলের এয়ারক্র্যাফট, জেটলাইনার না প্রপেলার, কত সালে এই এয়ারক্র্যাফট মডেল চালু হয়েছিল এসব নিয়ে তর্কবিতর্ক করতে গিয়ে খেয়ালই রাখিনি যে অনেকদিন ধরে এই প্লেনের পাইলটেরই দেখা নেই।  

সরি সরি সরি।  বহুরূপীবাবু, আপনার আর মোহময়বাবুর মত কয়েক জনের ভয়ে দেরীতে উত্তর দিলাম  Big Grin আসলে শরীর খারাপ ছিল বলে কদিন ফোন সেভাবে নাড়া চাড়া করিনি । তাই এত দেরি। তবে এই ধরণের লেখা ঠিক এই ফোরামে যায় না। অনেকেই হয়তো বিরক্ত। তাদের কাছেও সরি।   Namaskar
[+] 2 users Like Choton's post
Like Reply
Perfect ending.
Like Reply
(21-05-2025, 04:03 AM)Choton Wrote: সরি সরি সরি।  বহুরূপীবাবু, আপনার আর মোহময়বাবুর মত কয়েক জনের ভয়ে দেরীতে উত্তর দিলাম  Big Grin  আসলে শরীর খারাপ ছিল বলে কদিন ফোন সেভাবে নাড়া চাড়া করিনি । তাই এত দেরি। তবে এই ধরণের লেখা ঠিক এই ফোরামে যায় না। অনেকেই হয়তো বিরক্ত। তাদের কাছেও সরি।   Namaskar

চটি গল্পের সাইটে এই রকম একটা গল্প পড়বো; ভাবতে পারিনি। অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার লেখনী থেকে যেন বঞ্চিত না হই, সেই আশায় রইলাম। 

Namaskar





গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।

Like Reply
(19-05-2025, 08:00 AM)বহুরূপী Wrote: না, এই কথা সম্পূর্ণ সত্য নয়।

আসলে আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজি নব্বইয়ের দশকে নতুন ছিল না। আল্ট্রাসাউন্ড (ultrasound) বা সনোগ্রাফি (sonography) চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯৫০–৬০ এর দশক থেকেই। যদিও প্রাথমিকভাবে এটি সীমিত কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো, সময়ের সাথে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে।

ঐতিহাসিক পটভূমিতে বলতে গেলে বলতে হয়;-

  • ১৯৫৮: ডোনাল্ড ও ব্রাউন নামক দুই ব্রিটিশ গবেষক প্রথমবারের মতো গর্ভাবস্থার পর্যবেক্ষণের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করেন।
  • ১৯৭০-এর দশকে: আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি অনেক দেশে আরও উন্নত হয় এবং গর্ভকালীন শিশু পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত ব্যবহার শুরু হয়।
  • ১৯৮০-এর দশকে: উন্নত দেশগুলোতে এটি স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি হয়ে ওঠে।
  • ১৯৯০-এর দশকে: ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শহরাঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। যদিও গ্রামীণ এলাকায় তখনও কিছুটা সীমাবদ্ধতা ছিল।
  • নব্বইয়ের দশকে আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি ছিল এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছিল।
  • তবে গ্রামাঞ্চলে বা অনুন্নত এলাকায় তখনও এটি সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি।

dada/bhai, apnar bayos kato. 1990 e amar bayosh chilo 25. Hospitale konodin ultrasound dekhini 2000 obdhi.
Like Reply
(21-05-2025, 04:03 AM)Choton Wrote: সরি সরি সরি।  বহুরূপীবাবু, আপনার আর মোহময়বাবুর মত কয়েক জনের ভয়ে দেরীতে উত্তর দিলাম  Big Grin  আসলে শরীর খারাপ ছিল বলে কদিন ফোন সেভাবে নাড়া চাড়া করিনি । তাই এত দেরি। তবে এই ধরণের লেখা ঠিক এই ফোরামে যায় না। অনেকেই হয়তো বিরক্ত। তাদের কাছেও সরি।   Namaskar

durdanto likhechen. chomotokar lekhar hat.
Like Reply
(20-05-2025, 02:19 AM)prataphali Wrote:  
হুমম, চমৎকার লেখনী।
তবে ঈশিতা মনে হয় আউটলাইয়ার। নাহলে মাত্র ১৮ বছরের বাচ্চা মেয়েকে অতখানি কামার্তা কখনও দেখিনি যে স্বামীকে ভুলে যায় চট করে। সাধারণতঃ ১৮ বছরের বাচ্চা মেয়েরা বয়স্ক পুরুষদের মোহ ত্যাগ করতে পারে না। আমার বউ আমার থেকে ১২ বছরের ছোট। তার কাছে তার সহপাঠীরা ছেলেমানুষ লাগত। উদয়শঙ্করের সঙ্গে অমলা শঙ্কর ১৫ বছরেই প্রেমে পড়েছিলেন। এটি অবশ্য পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিশোর বয়সে মাসি পিসিদের প্রতি আকর্ষণ সবাই অনুভব করে। কেন? কারণ নারী দেখতে পায়। সমবয়স্কদের বাচ্চা মেয়ে বলে মনে হয়।
 
দ্বিতীয়তঃ আপনার নারী চরিত্রের একটি প্রবণতা দেখেছি। তাদের স্নায়ু খুব দুর্বল। প্রায় শরৎচন্দ্রের কালের নারীদের মত। তারা কথায় কথায় জ্ঞান হারায়। এ যুগে অত জ্ঞান হারান নারী আমি অন্ততঃ একটাও দেখিনি। কম নারী দেখিনি। আমার বয়স কিন্তু ৫২ বছর। জেন এক্স।

কথাটা ঠিক। নারী সাধারণতঃ কামার্তা হয় ৩০ এর পর। 

এই গল্পে যেমন, ছোটনবাবুর অন্য গল্পটাতেও ekta nymphomaniac, masochist রমণী বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল।
[+] 2 users Like gluteous's post
Like Reply
(21-05-2025, 03:50 AM)Choton Wrote: (৫২)

শেষ কথা

ছেলেকে রেখে ফেরার সময় জয়তী দেখল, দরজার বাইরে পোস্টঅফিসের লোক। ‘গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখা দু’টি খাম নিয়ে দাঁড়িয়ে। সরকারি খামের চিঠি, তাই সই করে নিতে হবে। একটি ওর নামে, অন্যটি সুভদ্রার নামে। ও নিজেই সই করে চিটি দুটো নিয়ে ইশারায় সুভদ্রাকে নিয়ে সৌমাভর শোয়ার ঘরে ঢুকল। তার পর দরজা আটকে সুভদ্রাকে ইঙ্গিতে চিঠি খুলতে বলল। ‘সুভদ্রা সরকার’ নাম লেখা খামের মুখ কেটে সুভদ্রা একটা চিঠি বের করল। একপাতার মাত্র চিঠি। তাতে কয়েকটা লাইন লেখা, ‘‘স্নেহের সুভদ্রা, ভেদিয়ার বাড়িতে তোকে জড়িয়ে ধরে দেওয়া কথা রাখতে পারলাম না। বলা ভাল, রাখলাম না। অবশ্য রেখেও খুব লাভ হত না। যাক, তোর সংসার তোর হাতেই ছেড়ে গেলাম। সবকিছু। তোকে একদিন বলেছিলাম না, আমি অতিথি। অতিথিদের বেশিদিন এক জায়গায় থাকতে নেই রে। তাই চলে যাচ্ছি। তার উপর নোংরা চরিত্রের অতিথি তো, তোর কোনওদিন দুর্নাম হলে সেটা তোর পরিবারের সকলের পক্ষেই খারাপ হত। খুব ভাল থাকিস সবাই মিলে। আমি তো বেশ্যা বলে সবার কাছে পরিচিত, তাই তোর ছেলেমেয়েকে আশীর্বাদ করে যেতে পারলাম না। প্রার্থনা করি, তোরা সবাই ভাল থাকিস। ইতি ঈশিতা (বেশ্যাদের পদবী থাকে না, তাই লিখলাম না)।’’

চিঠিটা পড়ে সুভদ্রা স্তম্ভিত হয়ে গেল! ওর মনে পড়ল, ঈশিতা এ বাড়িতে এসে সব কাজ নিজে হাতে করা শুরু করার পরে ও একদিন তা নিয়ে বকাবকি করায় ঈশিতা বলেছিল, ‘‘তোর সংসার তোরই থাকবে, দেখিস। আমি তো অতিথি রে!’’ সেদিনই ওর খটকা লেগেছিল। কিন্তু বলি বলি করেও জয়তীকে বলা হয়নি। ও কেঁদে ফেলল। জয়তী ওর হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে কিছু না বলে ওর নাম লেখা খামটা খুলল,

(শেষ)

ekdom thik. 18 bochorer meye ekta baccha meye. galpe khatire jodi tar nymphomaniac byaparta (jodio ajgubi) hoy o, she hasn't seen anything in life.

take sabai mile etota nipiron korlo - ekdom barabari. tar swami r bayosh takhon 30. ekta chance o dilo sudhrote - barabari.

sabcheye barabari - 18 bochorer meye kame unmad. they don't know their body at this age. does not happen in reality, unless there is a medical/ deep problem in upbringing.
Like Reply
এই গল্পের মূল চরিত্রই ঈশিতা।
সে নায়িকা এই গল্পের।
বাকী কোন নায়ক নেই। সৌমাভ তো নয়ই। বরং ও হচ্ছে মেইন ভিলেন। সাথে জয়তী, সুভদ্রা।
আসলে ধোঁকার এই জগতে সবাই স্বার্থপর,
ইগো এমনি এক জিনিস যেটার কারনে হয় নিজে ধ্বংস হয় নয়তো কাছের কেউ।
সৌমাভর অতিরিক্ত দেমাগ, অহংবোধ, নিজেকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেয়া, নিজেকে মহা মূল্যবান হিসাবে জাহির করার প্রবনতা ওকে অন্ধ করে দিয়েছিলো।
নি:সন্দেহে সৌমাভ স্বার্থপর।
ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসতে জানতে হয়।
সৌমাভ তো ভালোবাসতেই জানতো না।
সৌমাভ, সুভদ্রা, জয়তী, গুঞ্জা ওরা সবাই একই গোয়ালের গরু।
আর কুট্টি মুট্টি.... ওদের আসলে দোষ দেয়া যায়না। বুঝতে শেখার পর থেকে ওরা দুই হতভাগ্য একদল চূড়ান্ত পর্যায়ের স্বার্থপর মানুষের মাঝে থেকে বড় হয়েছে। তাই ওরা প্রেম শেখেনি, ভালোবাসতে জানেনা।
মানুষ মাত্রেই ভুলের উর্ধ্বে নয়। একজন নৃশংস অপরাধীকেও যাবজ্জীবন সাজার পর ছেড়ে দেয়া হয়, কখনও সখনও খুনীও ক্ষমা পায়।
কিন্তু ঈশিতা পায়নি। কারন ওর ভাগ্য জুড়ে গিয়েছিলো সৌমাভ সরকার নামক একজন অতি নিচ আর ক্ষুদ্র মানসিকতা সম্পন্ন লোকের সাথে, যে কিনা ক্ষমা করতে জানে না। আর যে ক্ষমা করতে জানে না সে আর যাই হোক মানুষ নয় অন্তত।
[+] 7 users Like Mohomoy's post
Like Reply
(21-05-2025, 03:50 AM) pid=\5951340' Wrote:yr): yr): yr): yr): yr): yr): yr):
Like Reply
(21-05-2025, 11:12 AM)Mohomoy Wrote: এই গল্পের মূল চরিত্রই ঈশিতা।
সে নায়িকা এই গল্পের।
বাকী কোন নায়ক নেই। সৌমাভ তো নয়ই। বরং ও হচ্ছে মেইন ভিলেন। সাথে জয়তী, সুভদ্রা।
আসলে ধোঁকার এই জগতে সবাই স্বার্থপর,
ইগো এমনি এক জিনিস যেটার কারনে হয় নিজে ধ্বংস হয় নয়তো কাছের কেউ।
সৌমাভর অতিরিক্ত দেমাগ, অহংবোধ, নিজেকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেয়া, নিজেকে মহা মূল্যবান হিসাবে জাহির করার প্রবনতা ওকে অন্ধ করে দিয়েছিলো।
নি:সন্দেহে সৌমাভ স্বার্থপর।
ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসতে জানতে হয়।
সৌমাভ তো ভালোবাসতেই জানতো না।
সৌমাভ, সুভদ্রা, জয়তী, গুঞ্জা ওরা সবাই একই গোয়ালের গরু।
আর কুট্টি মুট্টি.... ওদের আসলে দোষ দেয়া যায়না। বুঝতে শেখার পর থেকে ওরা দুই হতভাগ্য একদল চূড়ান্ত পর্যায়ের স্বার্থপর মানুষের মাঝে থেকে বড় হয়েছে। তাই ওরা প্রেম শেখেনি, ভালোবাসতে জানেনা।
মানুষ মাত্রেই ভুলের উর্ধ্বে নয়। একজন নৃশংস অপরাধীকেও যাবজ্জীবন সাজার পর ছেড়ে দেয়া হয়, কখনও সখনও খুনীও ক্ষমা পায়।
কিন্তু ঈশিতা পায়নি। কারন ওর ভাগ্য জুড়ে গিয়েছিলো সৌমাভ সরকার নামক একজন অতি নিচ আর ক্ষুদ্র মানসিকতা সম্পন্ন লোকের সাথে, যে কিনা ক্ষমা করতে জানে না। আর যে ক্ষমা করতে জানে না সে আর যাই হোক মানুষ নয় অন্তত।

ভাল বলেছেন। আপনার কথা কিছুটা গ্রহণীয়। বাকিটা বোধহয় নয়।

ভালবাসা কেউ জানেনা। ভালবাসা শেখে। গন্ধর্ব সৌরসেন তার প্রেয়সী মধুশ্রী কে ভালবাসত। তাই তার মন আনমনা ছিল বিরহে। শাপভ্রষ্ট হয়ে মর্তে জন্ম নিয়ে দুঃখ পেয়ে, পরস্পরকে দুঃখ দিয়ে তারা একটু শিখল। তাতেই শাপমোচন।

সৌমাভ নিজেকে ভালবাসল। তার নাম অহংকার। আমি আমি - অহং - করা। নিজেকে ভালবাসার গন্ডী থেকে বেরতে পারল না। তাই দেবদাস হয়ে গেল। কেন। তার অহং আহত হয়েছিল। আমাকে অপমান করা? নিজেকেই শাস্তি দিল। সেই শাস্তি দেওয়া নিজেকে ভালবাসাকে একটা ঠকানো নাম দিল। আমি ঈশিতাকে ভালবাসি। বুঝতেই পারল না অভাগা, ঈশিতাকে ভালবাসা একটা মুখোশ। আসলে অপমানকে ভুলতে পারেনি। তাই ঈশিতাকে শাস্তি দিতে চাইল সে। এটাকে ইমোশন্যাল ব্ল্যাকমেইল বলা যায়। 

ভালবাসা কেউ জানেনা। ভালবাসা শেখে। শেখায় নিচু হতে হয়। বিনয়ী হতে হয়। শ্রদ্ধাবান হতে হয়। নিচু হয়ে ভালবাসা শিখতেই পারল না সে।

সে যে বারো বছরের বড় ঈশিতার থেকে - কখনও চিন্তা করেছে সে? বারো বছর আগে তার সমস্ত কর্মের জন্যে সে কি গর্বিত?

ভালবাসা মানে ক্ষমা, ভালবাসা মানে একটি নির্মাণ। তার জন্যে ধৈর্য লাগে, সহানুভূতি লাগে। সারাক্ষণ অপরের বিচার করলে ভালবাসা শেখা যায় না। ভালবাসা একটি চারাগাছ। তাকে যত্ন করতে হয়, জল, সার, রৌদ্র দিতে হয়। আগাছার উৎপাত হয়ে তা উৎপাটন করতে হয়। কীটদ্রংষ্ট হলে কীটনাশক দিতে হয়। 
ভালবাসা দোকানে ক্রয়যোগ্য খেলনা নয়, যে ভাল না লাগলে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন খেলনা কেনা যায়।
[+] 3 users Like prataphali's post
Like Reply
(19-05-2025, 08:00 AM)বহুরূপী Wrote: না, এই কথা সম্পূর্ণ সত্য নয়।

আসলে আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজি নব্বইয়ের দশকে নতুন ছিল না। আল্ট্রাসাউন্ড (ultrasound) বা সনোগ্রাফি (sonography) চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯৫০–৬০ এর দশক থেকেই। যদিও প্রাথমিকভাবে এটি সীমিত কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো, সময়ের সাথে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে।

ঐতিহাসিক পটভূমিতে বলতে গেলে বলতে হয়;-

  • ১৯৫৮: ডোনাল্ড ও ব্রাউন নামক দুই ব্রিটিশ গবেষক প্রথমবারের মতো গর্ভাবস্থার পর্যবেক্ষণের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করেন।
  • ১৯৭০-এর দশকে: আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি অনেক দেশে আরও উন্নত হয় এবং গর্ভকালীন শিশু পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত ব্যবহার শুরু হয়।
  • ১৯৮০-এর দশকে: উন্নত দেশগুলোতে এটি স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি হয়ে ওঠে।
  • ১৯৯০-এর দশকে: ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শহরাঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। যদিও গ্রামীণ এলাকায় তখনও কিছুটা সীমাবদ্ধতা ছিল।
  • নব্বইয়ের দশকে আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি ছিল এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছিল।
  • তবে গ্রামাঞ্চলে বা অনুন্নত এলাকায় তখনও এটি সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি।

ভাইটি তোমার জন্ম মনে হয় নব্বই এর পর। ইন্টারনেট ঘেঁটে অনেক তথ্য খুঁজে বের করেছ, তোমার প্রশংসা করি। তবে নব্বই এর দশকের বাস্তব পরিস্থিতি তোমার না জানারই কথা কথা। বাস্তবের সঙ্গে তোমার পুঁথিগত বিদ্যের বহু যোজন ফারাক ভাই।
[+] 2 users Like prataphali's post
Like Reply
(21-05-2025, 03:40 AM)Choton Wrote: (৫১)

পরদিন সকালে ওর কয়েকটা কাজ ছিল। সুভদ্রারও। সকাল সকাল দু’জনেই বেরিয়ে গেল। ছেলেমেয়েরা বাড়িতেই রইল। রাতে ফিরে বিশেষ কথা হল না।  বারান্দায় বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সে দিনের কাগজটা চোখ বোলাতে লাগল। লাগল। অন্য একটা পাতায় গিয়ে একটা খবর চোখে পড়তেই মাথা ঘুরে জ্ঞান হারাল জয়তী। ওর পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে সুভদ্রা, কুট্টিমুট্টি, সমুদ্র সবাই মিলে চোখেমুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরাল। ওর উঠে বসে মুখচোখ মুছে সুভদ্রাকে খবরটা পড়াল, ‘‘দোলের দিন রাতে শান্তিনিকেতনের একটা হোটেল থেকে ঈশিতা নামে এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। মহিলার বয়স আনুমানিক ৩৬-৩৭। পরণে লাল রঙের একটা পুরনো বেনারসী শাড়ি ছিল।

একি! জয়তীও স্নায়ু দৌর্বল্যে ভুগছে?   :)
দাদা, আপনি আমার থেকে বয়েসে বড়। আমার কৌতুকে কিছু মনে করবেন না যেন। নিখাদ কৌতুকই। আর কিছু নয়।
[+] 2 users Like prataphali's post
Like Reply
(21-05-2025, 03:54 AM)Choton Wrote: সবার nurve কি সমান হয়? হয় না। আপনি আমার চেয়ে কিছুটা ছোটো, এমনি বললাম। জগত টা একটু বেশি দেখেছি কাজের সূত্রে।

জগত আমিও দেখেছি প্রচুর। তাহলে আমরা একই পথের পথিক। যাই হোক না কেন, এত ঘন ঘন জ্ঞান হারান নারী আজ পর্যন্ত একটিও দেখিনি।   :shy: হয়ত আমার সৌভাগ্য। নাহলে বিপাকে পড়তাম।  বিপাক কারণ কেউ বিপদে পড়লেই আমি সাহায্য করব না এমন হবে না। আলফা মেইল হবার প্রচুর জ্বালা আছে। :)
[+] 3 users Like prataphali's post
Like Reply
(26-04-2025, 09:41 PM)Choton Wrote: শুরুর শুরু


‘‘তোমায় একটা মজার গল্প বলি, শোনো। সেটা ১৯১৬ সাল। নোবেল পুরস্কারের দৌলতে রবীন্দ্রনাথ ততদিনে বিদেশেও বেশ বিখ্যাত লোক। তো সে বার ‘তোসামারু’ নামে একটা জাহাজে চেপে চীন সাগরের উপর দিয়ে জাপান হয়ে আমেরিকা যাচ্ছেন তিনি। সঙ্গী বলতে পিয়ারসন সাহেব এবং মুকুল দত্ত। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বেশ কয়েক জায়গায় লিখেছেন, তিনি জাহাজের কেবিনে ঘুমোতে পারতেন না, তাই ডেকেই বিছানা নিয়ে ঘুমোতেন। হঠাৎ একদিন মধ্যরাতে ঝড় উঠলো। উথাল-পাথাল সাগরে ওই প্রবল ঝড়! সবাই আতঙ্কে চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। চারদিকে হৈচৈ, কান্নাকাটি। কিন্তু তাঁর যেন কোনও হুঁশ নেই। জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে ওই প্রবল ঝড় আর বৃষ্টির মধ্যে নিজেরই লেখা গোটাকতক গানও গেয়ে ফেললেন। কিন্তু তাণ্ডব আর থামে না। বাধ্য হয়ে ঢুকে গেলেন কেবিনে। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে কাগজ-কলম টেনে নিখে ফেললেন একটা গোটা গান।’’
বড় সুন্দর লেখা। একটু করুণ নাটকীয়তার আতিশয্য। তবে সেই আতিশয্য বাদ দিলে এই সাইটে এমন সুচারু লেখার ক্ষমতা খুব বেশি লেখকের দেখিনি।
[+] 3 users Like raikamol's post
Like Reply
(21-05-2025, 07:25 PM)prataphali Wrote: ভাল বলেছেন। আপনার কথা কিছুটা গ্রহণীয়। বাকিটা বোধহয় নয়।

ভালবাসা কেউ জানেনা। ভালবাসা শেখে। গন্ধর্ব সৌরসেন তার প্রেয়সী মধুশ্রী কে ভালবাসত। তাই তার মন আনমনা ছিল বিরহে। শাপভ্রষ্ট হয়ে মর্তে জন্ম নিয়ে দুঃখ পেয়ে, পরস্পরকে দুঃখ দিয়ে তারা একটু শিখল। তাতেই শাপমোচন।

সৌমাভ নিজেকে ভালবাসল। তার নাম অহংকার। আমি আমি - অহং - করা। নিজেকে ভালবাসার গন্ডী থেকে বেরতে পারল না। তাই দেবদাস হয়ে গেল। কেন। তার অহং আহত হয়েছিল। আমাকে অপমান করা? নিজেকেই শাস্তি দিল। সেই শাস্তি দেওয়া নিজেকে ভালবাসাকে একটা ঠকানো নাম দিল। আমি ঈশিতাকে ভালবাসি। বুঝতেই পারল না অভাগা, ঈশিতাকে ভালবাসা একটা মুখোশ। আসলে অপমানকে ভুলতে পারেনি। তাই ঈশিতাকে শাস্তি দিতে চাইল সে। এটাকে ইমোশন্যাল ব্ল্যাকমেইল বলা যায়। 

ভালবাসা কেউ জানেনা। ভালবাসা শেখে। শেখায় নিচু হতে হয়। বিনয়ী হতে হয়। শ্রদ্ধাবান হতে হয়। নিচু হয়ে ভালবাসা শিখতেই পারল না সে।

সে যে বারো বছরের বড় ঈশিতার থেকে - কখনও চিন্তা করেছে সে? বারো বছর আগে তার সমস্ত কর্মের জন্যে সে কি গর্বিত?

ভালবাসা মানে ক্ষমা, ভালবাসা মানে একটি নির্মাণ। তার জন্যে ধৈর্য লাগে, সহানুভূতি লাগে। সারাক্ষণ অপরের বিচার করলে ভালবাসা শেখা যায় না। ভালবাসা একটি চারাগাছ। তাকে যত্ন করতে হয়, জল, সার, রৌদ্র দিতে হয়। আগাছার উৎপাত হয়ে তা উৎপাটন করতে হয়। কীটদ্রংষ্ট হলে কীটনাশক দিতে হয়।   
ভালবাসা দোকানে ক্রয়যোগ্য খেলনা নয়, যে ভাল না লাগলে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন খেলনা কেনা যায়।

অপূর্ব লিখেছেন তো! আপনার লেখার হাত খুব সুন্দর। লিখতে শুরু করুন।
Like Reply
(21-05-2025, 11:12 AM)Mohomoy Wrote: এই গল্পের মূল চরিত্রই ঈশিতা।
সে নায়িকা এই গল্পের।
বাকী কোন নায়ক নেই। সৌমাভ তো নয়ই। বরং ও হচ্ছে মেইন ভিলেন। সাথে জয়তী, সুভদ্রা।
আসলে ধোঁকার এই জগতে সবাই স্বার্থপর,
ইগো এমনি এক জিনিস যেটার কারনে হয় নিজে ধ্বংস হয় নয়তো কাছের কেউ।
সৌমাভর অতিরিক্ত দেমাগ, অহংবোধ, নিজেকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেয়া, নিজেকে মহা মূল্যবান হিসাবে জাহির করার প্রবনতা ওকে অন্ধ করে দিয়েছিলো।
নি:সন্দেহে সৌমাভ স্বার্থপর।
ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসতে জানতে হয়।
সৌমাভ তো ভালোবাসতেই জানতো না।
সৌমাভ, সুভদ্রা, জয়তী, গুঞ্জা ওরা সবাই একই গোয়ালের গরু।
আর কুট্টি মুট্টি.... ওদের আসলে দোষ দেয়া যায়না। বুঝতে শেখার পর থেকে ওরা দুই হতভাগ্য একদল চূড়ান্ত পর্যায়ের স্বার্থপর মানুষের মাঝে থেকে বড় হয়েছে। তাই ওরা প্রেম শেখেনি, ভালোবাসতে জানেনা।
মানুষ মাত্রেই ভুলের উর্ধ্বে নয়। একজন নৃশংস অপরাধীকেও যাবজ্জীবন সাজার পর ছেড়ে দেয়া হয়, কখনও সখনও খুনীও ক্ষমা পায়।
কিন্তু ঈশিতা পায়নি। কারন ওর ভাগ্য জুড়ে গিয়েছিলো সৌমাভ সরকার নামক একজন অতি নিচ আর ক্ষুদ্র মানসিকতা সম্পন্ন লোকের সাথে, যে কিনা ক্ষমা করতে জানে না। আর যে ক্ষমা করতে জানে না সে আর যাই হোক মানুষ নয় অন্তত।

বেশ লিখেছেন।
[+] 2 users Like raikamol's post
Like Reply




Users browsing this thread: