Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
(14-05-2025, 03:21 AM)Choton Wrote: কম্পিউটারটা দেহ রেখেছে, একেবারে। হার্ডডিস্ক জ্বলে গেছে। ফলে বহু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের সঙ্গে গত মাস পাঁচেক ধরে যে গল্পটার খসড়া তৈরি করে লিখতে শুরু করেছিলাম, সেটা প্রায় পুরোটাই গত হয়েছে। আর এই মুহূর্তে একটা নতুন কম্পিউটার কেনা বা পার্টস কিনে অ্যাসেম্বল করার মতো ট্যাঁকের জোর নেই। প্লট-থিম যা-ই বলুন, সেই গল্পটার সবটাই মাথায় রয়েছে, কিন্তু নতুন করে হাজার তিরিশ শব্দ আবার লিখে গল্পের ধরতাইতে আসা বেশ চাপের। ভেবেছিলাম, আর লিখব না। এমনিই র’ সেক্সের বর্ণনা আমি বিশেষ দিতে পারি না। তার উপর লেখায় অনেক বেশি চারপাশের বাস্তব ঘটনাগুলো বা নিজের নানা পড়া-জানা ঘটনার প্রভাব পড়ে। ফলে আপনারা কয়েকজন আমাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেও আমি নিজে জানি, লেখাটা মোটেই জমেনি বা জমছে না। ‘ভীতুর ডিম’ অল্প লোকেরই ভাল লেগেছে। এটারও তাই। খুব বেশি লোক পছন্দও করেন না এই ধরনের ফোরামে ওই রকম লেখা। কিন্তু আপনি এবং আপনার মতো কয়েক জনের প্রশংসার পাশাপাশি ফের লেখার নির্দেশ বা আদেশ যা-ই বলুন, সেটা না মেনে চলা আমার পক্ষে কঠিন। ‘তার ছিঁড়ে গেছে কবে’ এমনিই প্রায় শেষ। একটা দুঃখ, প্রথম থেকে আমাকে প্রশংসা করা ‘প্রিয়া’দেবী নিরুদ্দেশ!!! জানি না, আপনার সঙ্গে যেমন হয়েছিল, তেমনই কিছু ঘটেছে নাকি ফোরামের কোনও নীতিতে তিনি আটকে গেছেন বা সময় করতে পারছেন না। এখন মন পড়ে হারানো লেখাটায়। আজ একটি বিশেষ ঘটনা গল্পটা শুরু করার জন্য ভিতর থেকেই তাগাদা দিয়েছে। ফলে একটু দেরি হলেও নতুন গল্পটা দিন কয়েক পর থেকে দিতে শুরু করব। এটুকু বলতে পারি, রুদ্রর ছায়া এতেও থাকবে। থাকবে আরও অনেক কিছু। যদিও সেটা কবে থেকে ফোরামে দিতে পারব, জানি না। আগাম ক্ষমাপ্রার্থী।

প্লিজ ছোটন আমাদের কথা ভেবে নতুন গল্প লেখ। তোমার হার্ড ডিস্ক থেকে কি কিছুই রিকভারি করা সম্ভব নয় ? তোমার গল্প না পড়লে আমাদের যে মন ভরে না। আমরা এই ফোরামে পাঁক, কাদা এসব পড়তে পড়তে ক্লান্ত। সেখানে তোমার গল্পগুলো পড়ে আমরা মনিমুক্তো পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করনা। 

আর লেখা জমছে না সেটা তোমাকে কে বলল ? তুমি কি গল্পের ভিউ এর সংখ্যা দেখে এসব বলছ ? ওসব নিয়ে একেবারে মাথা ঘামিয়ো না। মনে রেখো কাঞ্চনজঙ্ঘা, বাড়ি থেকে পালিয়ে, kaagaz ke phool ইত্যাদি সিনেমাগুলোও কিন্তু বক্স অফিসের হিসেব অনুযায়ী ফ্লপ কিন্তু সেখানে বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না সুপারহিট। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো যে তোমার গল্প কটা ভিউ পেল তাতে কিছু এসে যায় না। তোমার গল্পের চরিত্রদের মধ্যে সম্পর্কের যে গভীর মনস্তাত্বিক টানাপোড়েন থাকে তা বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই যারা বাঁড়া, বিচি, গুদ, মাই এর বাইরে ভাবতে পারেনা তাদের থাকবে না। তাই আবার তোমাকে রিকোয়েস্ট করবো কটা ভিউ পেল বা কোন অর্বাচীন কি বলল ওসব না ভেবে লিখে যাও, আমরা তোমার পাথক/পাঠিকারা সব সময় তোমার পাশে আছি।    
[+] 7 users Like prshma's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(৪৫)


সেদিন গভীর রাত অবধি তিনজনে অনেকক্ষণ কথা বলল। সৌমাভর ঘরের মেঝেতেই সতরঞ্জির উপরে কম্বল পেতে তিনজনে বসেছিল। বালিশ থাকলেও তাতে মাথা ছোঁয়ায়নি কেউই। বড়দি-মেজদি ও দুই জামাইবাবু অন্য একটা ঘরে শুয়েছেন। ওঁরা কেউই রাতে কিছু খাননি। বরং দুই দিদিই বারবার চোখের জল মুছেছেন। ওঁদের চোখে চোখ রাখার সাহসই পাচ্ছিল না ঈশিতা। পরে বহু রাত অবধি নানা কথা-গল্পে ঈশিতা বারবারই বুঝতে পারল, বাপের বাড়িতে বসে সৌমাভকে কাছে টানার যে স্বপ্ন ও দেখেছিল, তা নেহাতই ছেলেভোলানো অলীক কল্পনা ছিল। আন্দামান থেকে ফেরার পরে ওদের দুজনের সম্পর্কটা সেই অবস্থায় আর ছিলই না। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ওর ব্যবহারের বদলই সৌমাভকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। তাই সৌমাভর থেকে দূরে যাচ্ছে শুধু না, অনেকখানি দূরত্ব বেড়ে গেছে বুঝেও রাহুলকে যে ও ভোলেনি, তা প্রমাণ করে দিয়েছিল সেদিন ও নিজেই। এবং সেটা সেদিনের ওই চিঠিতে সৌমাভ তো বটেই, পরে মেজদি-বড়দি এবং তারও পরে জয়তী বারবার ওকে হাতেকলমে প্রমাণ করে দিয়েছে। সৌমাভকে ও আর ফিরে পায়নি। যখন পেল, তখন সে মৃত। কিন্তু ছেলেমেয়ে? ওর নিজের গর্ভজাত দু’জন? তারাও কি সৌমাভর মতো ওর থেকে বরাবরের মতো দূরে সরে গেছে? ছেলেমেয়েকে বুকে টেনে তাদের মুখ থেকে মা ডাক শোনার স্বপ্নটা অসম্ভব বলেই ধরে নিল ঈশিতা। ও বুঝে গেছে, চার মাস বয়স থেকে যার কোলে বড় হয়েছে, যাকে প্রথম মা বলে ডেকেছে, যার হাতে কয়েক ঘন্টা আগেও চড় খেয়ে একটা শব্দও করেনি, সেই সুভদ্রাকে ছেড়ে ওকে মা বলে ডাকবে দু’জনে, এটা ভাবা সৌমাভকে বুকে টানার মতো অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু সব হারানো মানুষ যেমন খড়কুটোকেই ভেসে থাকার অবলম্বন হিসেবে ধরতে চায়, ধরে, ও নিজেও তেমনই এই বারে আর কিছুই হাতছাড়া করবে না। যে খড়টা, যে কুটোটা সামনে পাবে, তাকেই আঁকড়ে ছেলেমেয়ের মনের পাহাড় ওকে টপকানোর চেষ্টা করতেই হবে। জয়তীদি সাহায্য করবে কিছুটা, এটা ঠিক। কিন্তু সুভদ্রা? ও কি এত সহজে জায়গা ছেড়ে দেবে? সুভদ্রা ওর পাশে না দাঁড়ালে, সাহায্য না করলে হাজার চেষ্টা করেও ঈশিতা যে কিছু করতে পারবে না, তা বুঝে গেছে ও। তার উপরে ছেলেমেয়ে দু’জনেই যে সৌমাভর স্বভাব পেয়েছে, সেটাও ওকে বলেছে জয়তী। তারা যে ওর কুকীর্তিও জেনে গেছে নিজেদের ১৮ বছরের জন্মদিনের দিন, সেটাও আর চাপা নেই। ফলে এই লড়াই জেতাটা কঠিন শুধু নয়, প্রায় অসম্ভব ওর পক্ষে। কিন্তু গত কাল আঙুল থেকে আঙটি খুলে গুঞ্জার কোলে ছুঁড়ে ফেলার পর থেকে নিজের প্রতিটি কাজে ও বারবার যেন একটা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিল। এই সব হাবিজাবি ভাবনার মধ্যেই ঘরের মেঝেয় সতরঞ্চিতে পিঠ এলিয়ে চোখ বুঝল ঈশিতা। সারাদিনের এত ঘটনায় ক্লান্ত লাগলেও ঘুম আজ আর আসছে না ওর। ও দেখল জয়তীদি এবং সুভদ্রাও বালিশে মাথা রেখেছে। কখন কে জানে।

একটু পরেই চটকাটা ভেঙে মনের ভিতরে কি একটা অস্বস্তি নিয়ে নিঃশব্দে উঠে বসল ঈশিতা। ঘরের ভিতরের নাইট ল্যাম্পের আলোয় দেখল, সুভদ্রা বিছানায় নেই! কী মনে করে বাইরে এল। এদিক ওদিক তাকিয়েও সুভদ্রাকে চোখে পড়ল না। কী মনে হতে দূরে নজর করার চেষ্টা করল, সেখানে আজ চিরদিনের মতো ঈশিতা নামক নিম গাছের নীচে শুয়ে রয়েছে ভষ্মীভূত সৌমাভ। ওর স্বামী! হ্যাহ্। নিজের মনেই নিজেকে বিদ্রুপ করল ঈশিতা। যাকে স্বামী হিসেবে এতটুকুও ফিরিয়ে দেয়নি কিছু, উল্টে দু’হাত ভরে নিয়েও সব রকম ভাবে ঠকিয়েছে, তাকে স্বামী বলে দাবি করাটা যে হাস্যকর, এটা বুঝতে ওর এখন আর অসুবিধা হয়না। দাওয়া থেকে নেমে পায়ে পায়ে সেই বেদিটার দিকে কিছুটা এগোতেই বিশাল নিম গাছের তলায় তারার আলোয় দেখল, সৌমাভর সমাধির উপরে মোমবাতি-ধুপগুলো কখন নিভে গেছে। তার উপরে উপুড় হয়ে অঝোরে কাঁদছে সুভদ্রা। পা টিপে টিপে পিছনে গিয়ে শোনার চেষ্টা করল সুভদ্রার কথাগুলো। অস্পষ্ট ভাবে হলেও নিঝুম রাতে সেগুলোই স্পষ্ট শুনতে পেল ঈশিতা। দেখে মনে হচ্ছে, জীবন্ত সৌমাভকে যেন আঁকড়ে ধরে আছে সুভদ্রা। কান্নামেশানো হাহাকারের গলায় সুভদ্রা বলে চলেছে আপন মনে, ‘‘তোমার শরীর চেয়েছি, পাইনি। একটা সন্তান আর তোমার স্ত্রী হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি চেয়েছি, দাওনি। উল্টে দুটো দেবশিশুকে মানুষ করার ভার দিয়ে নিজে সারাজীবন তার জন্য চোখের জল ফেললে, তার জন্য নিজেকে এভাবে শেষ করলে, যে ফিরেও তাকায়নি তোমার দিকে কোনওদিন। সে তোমাকে ঠকালেও তার শরীরটা তো কিছুদিনের জন্য পেয়েছিলে। অথচ আঠেরো বছরে আমাকে একেবারে নিজের সংসারে পেয়েও সেই শরীরটার দিকে তাকাওনি। আজ আমার জন্য কে রইল? আমায় কী দায়িত্ব দিয়ে গেলে? ওরা বড় হয়েছে, ওদের আগামী দিনে সংসার হবে, ব্যস্ততা বাড়বে। আমার আঁচলের তলা থেকে বেরিয়ে যাবে। তার উপর এখন ওদের সত্যিকারের মা এসে গেছে। সে হয়ত এবার ওদের আঁকড়ে ধরবে, বুকে টেনে নেবে। আমি কি নিয়ে থাকব, বলবে প্লিজ? বলো না? তোমার কাছে সব পেয়েও আমি আজ এত একা কেন? আজ কেন আমার সব থেকেও কিছু নেই? কিগো, বল না। আজ আঠেরো বছর ধরে....কতদিন সবখুলে তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছি রাতের বেলায়। তুমি প্রথমে বকেছো, মেরেছো। পরে বুঝিয়েছো। এমনকী আমায় বিয়ে করতেও বলেছো কতবার। আমার ভিতরটা দেখার চেষ্টা করেছো একদিনও? আমি কি পেলাম? তার থেকে আমাকে বাড়ির কাজের লোক করেই রেখে দিতে, খেতে-পরতে দিতে। কেন ওদের বড় করার ভার আমাকে দিয়েছিলে? কেন ওদের শিখিয়েছিলে আমাকে মামন বলে ডাকতে? কেন লেখাপড়া শিখিয়ে আমাকে সরকারি চাকরিতে ঢোকালে? কেন বাড়ি করে দিলে আমার থাকার জন্য? কেন আমার নামে জমি কিনে দিলে? সব তো আমার ভালর জন্য করেছো, একদিন না হয় তোমার বুকের নীচে জায়গা দিতে। একটা দিন। আমার সব পাওয়া হয়ে যেত।’’

সুভদ্রার বুকফাটা চাপা হাহাকার ঈশিতাকে বোঝাল, ও স্ত্রী হয়েও যা করেনি, মা হিসেবে যা করেনি, তার সবটুকু করেও মেয়েটা সৌমাভর আদর, সৌমাভর সঙ্গে যৌনতা, তার বুকের নিচে জায়গা— কিছুই পায়নি একদিনও। অথচ ও নিজে সব পেয়েছিল। অন্য অনেকের থেকে বেশিই পেয়েছিল। তবু ঈশিতার নিজের আজ কিচ্ছু নেই, স্বামী-সংসার-সন্তান কিচ্ছু না। আর সুভদ্রা সব পেয়েছে, সব আছে ওর, তবু নারীত্বের না পাওয়ার হাহাকার ওকে ভিতরে ভিতরে কতটা অসহায় করে ফেলেছে। কোথাও যেন আজ এই মুহূর্তে দু’জনে একই বিন্দুতে। ও চুপ করে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলতে থাকল। শুনল সুভদ্রা একই ভাবে সৌমাভর সমাধির মাটি আঁকড়ে মাথা ঠুকতে ঠুকতে বলছে, ‘‘তুমি চাইলেও আমি গাইতে পারিনি ভাল করে। তবে গান দিয়েই তুমি আমায় শিখিয়েছিলে, ‘আর কারো পানে চাহিব না আর করিব হে আমি প্রাণপণ, ওহে তুমি যদি বলো এখনি করিবো বিষয়-বাসনা বিসর্জন’। আমি তো কোনওদিন আর কারো দিকে চাইনি, কাউকে পেতে চাইনি তোমাকে ছাড়া। আমি তো তোমাকে ঠকাইনি কোনওদিন! আমার কামনা-বাসনা সব ছিল, শুধু তুমি দাওনি। তাও তোমায় ঠকাইনি, অন্য কারো কাছে এই শরীরটা বিলিয়ে দিইনি। আজ তোমায় ছুঁয়ে কথা দিলাম, তোমার বলা এই কথাগুলোই বাকি জীবনটা মেনে চলব। প্রমিস। শুধু এটুকু বললাম, জানি, শুনতে পাচ্ছ না, তাও.....তুমি না চাইলেও আমি অনেক বছর ধরে তোমাকেই স্বামী হিসেবে মেনেছি, সেটাই মেনে চলব। আর তো কিছু রইল না আমার নিজের। মনে মনে সৌমাভ সরকারের স্ত্রী সুভদ্রা সরকার হয়েই নিজেকে ভুলিয়ে রাখব। বিষয় সন্তানদের দিয়ে দেব, আর বাসনা? তোমাকে পরের জন্মে পেলে মিটিয়ে নেব প্রাণভরে।’’ কথাগুলো বলতে বলতে সৌমাভর সমাধির উপরে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ল সুভদ্রা। ওর চোখের জল যেন ভিজিয়ে দিল সৌমাভকে।

ঈশিতা বুঝল, কুট্টি-মুট্টির জন্ম না দিয়েও তাদের সত্যিকারের মা হয়ে ওঠা শুধু নয়, সৌমাভকে চেয়েও না পাওয়া এই মেয়েটা ওর থেকে সবদিক থেকেই অনেক এগিয়ে। সুভদ্রা অন্তত ভালবাসার নাটক করেনি, ভান করেনি, যেটা ও করেছে। ওর মতো নিজের ভালবাসাকে কলঙ্কিত করেনি, ওর মতো নিজের শরীরে চাহিদা মেটাতে নিজেকে অন্যের বিছানায় তুলে দেয়নি। ওর জগতে শুধুই দুই সন্তান আর না হওয়া ‘স্বামী’ সৌমাভ। এইখানে সুভদ্রা ওর থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। অনেক উঁচুতে ঠাঁই ওর। ও আর পারল না। ধীর পায়ে সুভদ্রার পাশে গিয়ে বসল। ধড়মড় করে উঠে বসল সুভদ্রা। একটু চমকেও গেলেও কিছু বলল না। ঈশিতা ওর বুকে ঝাঁপিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলল, ‘‘তুমি কেঁদো না। আমি অন্তত মন থেকে বিশ্বাস করি, তুমিই সৌমাভর প্রকৃত স্ত্রী, কুট্টি-মুট্টির সত্যিকারের মা। তুমি সৌমাভর শরীরটা পাওনি, আমি ওই একটা জিনিসই দিনকয়েক মাত্র পেয়েছি। তাও হারিয়ে ফেলেছি নিজের লোভে, নিজের চরিত্রের দোষে। এইটুকু শুধু ফারাক। বাকি সবদিক থেকে তুমিই ওর যোগ্য স্ত্রী, কুট্টিদের সত্যিকারের মা। আমি এইখানে তোমার পায়ের নখের যোগ্য নই। তবু আজ সৌমাভকে ছুঁয়ে তোমাকে দিব্যি করে বলছি, ওর সত্যিকারের স্ত্রী এবং কুট্টিদের সত্যিকারের মা হিসেবে এই দিদিটাকে তোমার সংসারে একটু জায়গা দাও, আমি সারাজীবন তোমার পায়ের নীচে থাকব। একবার ওদের মুখে মা ডাক শুনতে পেলে আমার মরতেও কষ্ট হবে না। আজ আমি তোমার কাছে ভিক্ষা চাইছি, দেবে না?’’ কথাটা বলেই কাঁদতে কাঁদতে সৌমাভর সমাধিতে মাথা ঠুকে বলল, ‘‘শোনো না, তুমি ওকে বল না, আমাকে একটু ওর পাশে জায়গা দিতে। আমি তোমায় ঠকিয়েছি, কিন্তু বিশ্বাস কর ছেলেমেয়েকে আর ঠকাব না, ওকেও না। বল না তোমার বউকে, কুট্টিদের মাকে, প্লিজ। আমার শেষ আব্দারটা অন্তত রাখো। আর ঠকাবো না তোমায় কোনওদিন, দেখো। প্লিজ বলো না।’’ সুভদ্রা ওকে মাটি থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে চোখের জলে ভিজিয়ে দিয়ে বলল, ‘‘আজ এইখানে বসে তোমাকে কথা দিলাম, তোমার কাছে, তোমার পাশে সারাজীবন থাকব। ছেলেমেয়ের মন বুঝে ওদের তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব। ওরা তোমাকেই মা বলবে, আমি তো মামন। মা তো তুমিই, সেটা আমি ওদের বোঝাব। আশা করি, ওদের বাবার শিক্ষা আর আমার বড় করে তোলায় যদি কোনও ফাঁক না থাকে, আজ না হোক কাল না হোক পাঁচ বছর পরে হলেও ওরা তোমাকে মা বলে ডাকবেই। মিলিয়ে নিও। না হলে আমি ওদের বাবার কাছে হেরে যাব। এবার চোখের জল মোছ। ওঁকে প্রণাম করে ঘরে চলো।’’ সুভদ্রা কথাটা বলার পরেও ওকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদল ঈশিতা। অনেকটা হাল্কা লাগল নিজেকে। তার পর দু’জনে অনেকক্ষণ ধরে সমাধির মাটিতে মাথা ছুঁইয়ে একসময় উঠে দাঁড়াল। হাতে হাত ধরে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।


ঘরে ঢুকে আর কেউই শুল না। এক এক করে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে বিছানায় বসল। তার পর সুভদ্রা বলল, ‘‘কাল থেকে কারও খাওয়া হয়নি। তোমার দিদি-জামাইবাবুরা চলে যাবেন বলেছেন সকালেই। আমি বুড়িকে বলে আসি বেশি করে জলখাবার বানাতে। তার আগে সবার জন্য একটু চা করা দরকার। আমি চা করতে গেলাম। ওই দুটোকেও তুলতে হবে ঘুম থেকে।’’ সুভদ্রা উঠতে যেতেই খুব কুন্ঠিত ভাবে ওর হাত ধরে ঈশিতা বলল, ‘‘আমি তুলব আজ?’’ ঈশিতার এমন আর্তি শুনে কষ্ট হল সুভদ্রার। ওকে হাত ধরে টেনে তুলে বলল, ‘‘আজ শুধু না, আজ থেকে এই কাজটা তুমিই করবে। প্রথম প্রথম বহু দিন ভাল ব্যবহার পাবে না, কিন্তু কেঁদে হেরে গেলে হেরেই যাবে। যাও, দুই ভাইবোনে দু’ঘরে আছে। আগে দামড়িটাকে তোল। পরে দামড়াটাকে তুলো। আর একটা কথা, ঘুম ভাঙলেও ওরা কোলে মাথা দিয়ে আরও কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। সমানে ডেকে ডেকে তবে তোলা যায় দুটোকেই। সেই সময় ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে যেতে হয় টানা। দেখো, আজ কতটা কি পার। তবে আজদ থেকে এটাই তোমার দিনের প্রথম কাজ হবে, এটা মাথায় রেখো।’’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
Like Reply
Very nice
Like Reply
সুভদ্রার চরিত্রের জবাব নেই।

Namaskar





গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।

[+] 1 user Likes মাগিখোর's post
Like Reply
Tulonahin!
Ae golpo ta joto ta lekha hoeche setae atleast 4 bar porechi r feel korechi.
Ashadharon r ha Ishitar eta prappo r akhn to r o beshi kore prappo jkhn 2nd time o bhul korlo, sesh Nishas obdhi ishita jeno oor kono nijer manush ke kache firee na pae. Pran tyag kore tbei hbe oor prayaschitto.
Golpo r ektu barate Parle bhalo hoto, ishitar briddho boyesh obdhi tar akkhep ta dekhae khub ecche roelo.
[+] 1 user Likes New Avatar's post
Like Reply
Continuation of my previous comment: sathe ae golper main villain er shastio dekhar khub ecche roelo, oe cheleti shasti na pele golpo ta jeno ashampurno theke jabe.
R ha apnar duto golpoe porechi, tar moddhe etae Best.
[+] 1 user Likes New Avatar's post
Like Reply
খুব... খুব... খুবই সুন্দর লেখা। শুরু থেকেই অসাধারণ... চলতে থাকুক।
Like Reply
(৪৬)


‘কাছে তার যাই যদি’

সুভদ্রা যাওয়ার আগে কুট্টি-মুট্টির ঘর দুটো দেখিয়ে দিল। কুট্টি রাতে একাই শোয়, মুট্টি শোয় সুভদ্রার কাছে। পিসি, মানে জয়তী এলে ওরা তিনজনে একসঙ্গে শোয়। গত কয়েক বছর সেই সময়গুলো জয়তীর ছেলে কুট্টির সঙ্গে ঘুমোয়। সুভদ্রা জানাল, সেই প্রথম দিন থেকে দু’জনেই ওর কাছে শুত। ও কলকাতায় চাকরি নিয়ে চলে আসার পরে দুই ভাইবোন তাদের বাবার কাছে ঘুমোত। পরে সৌমাভ কলকাতায় চলে এলে ছেলেমেয়ের ১৫ বছর বয়স অবধি ওরা সুভদ্রার কাছেই ঘুমোত। এর মধ্যে জয়তীর ডিভোর্সের পরে ও সল্টলেকের বাড়িতে ছেলে নিয়ে চলে এলে প্রায়ই নিউটাউনের বাড়িতে রাতে চলে আসে। তখনই একদিন জয়তীর কথায় কুট্টির বিছানা আলাদা করে দেওয়া হয়। ১৮ হয়ে গেলে ঘরও আলাদা করে দেওয়া হয়। তবে এখনও সকালে ঘুম থেকে টেনে তোলার সময় কুট্টি বেশ কিছুক্ষণ তার মামনের কোলে মাথা দিয়ে ঘুমের আমেজ কাটায়। মুট্টির অবশ্য এতটা আদর জোটে না। বেশির ভাগ দিন ঘুম থেকে উঠতে না চাইলে হয় মামন নয় দাদাই এসে চুলের মুঠি ধরে ওকে টেনে তোলে। পিসি অবশ্য খুব আদর করে তোলে। সে জন্য পিসিকেও কত মুখ করে সবাই, পিসি গায়েই মাখে না!

সুভদ্রার আপনমনে বলে যাওয়া কথাগুলো শুনতে শুনতে ঈশিতা বুঝতে পারছিল, ওর হারানোর পাল্লাটা কত ভারী! নিজের ছেলেমেয়েকে বুকের মধ্যে নিয়ে শোয়াটাও ওর সেভাবে প্রথম কয়েক দিনের পর থেকে আর হয়নি! খাওয়া বাদে বেশিরভাগ সময়ই কটে ঘুমোত ওরা। থাকতও অন্যদের কোলে কোলেই। আর সেদিন তো বাইরের ঘরের কটে শোয়ানো অবস্থাতেই ওর নোংরামি টের পেয়ে দু’জনকে তুলে নিয়ে চলে গিয়েছিল সৌমাভ। ছেলেমেয়েগুলোর জায়গা হয়েছিল জয়তীর বাড়িতে কোথাকার কোন অচেনা, অজানা, এক আদিবাসী মেয়ের কোলে। সেই মেয়েই আজ ওদের মা, মামন। তার কাছেই ওদের সব আব্দার, শাসন। সেটা আজও চলছে। ওর কোল সেদিনও শূন্য ছিল, আজও শূন্যই আছে! আজ এতগুলো বছর!

সুভদ্রা কথাগুলো বলে চলে গেলে দুচোখ ছাপানো জল আর বুকের মধ্যে অনন্ত ধুকপুকুনি নিয়ে কুট্টির ঘরের দরজা খুলে ঢুকল ঈশিতা। খাটের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। অবিকল যেন সৌমাভ! ওর মনে পড়ল, আন্দামানে ওরা প্রথম শরীরি মিলনের দিন থেকে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে শুত। কলকাতায় আসার প্রথম দিন থেকে সেটা সেই যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আর কোনওদিন হয়নি। আর তো হবেও না। ও বেলেঘাটার ফ্ল্যাটে প্রথম দিকের কয়েক দিন দেখেছিল, সৌমাভ একা ঘুমোলে একটা কোলবালিশকে জাপ্টে ধরে ঘুমোয়। যেন সেটাই ওর বউ! তখন শীতকাল বলে গায়ের উপর একটা কম্বল থাকত। কুট্টির শোয়ার ভঙ্গিটা সেই একই রকম। গায়ে সেই একই ভাবে একটা কম্বল চাপা দেওয়া। ও সারা শরীরে কাঁপুনি নিয়ে কুট্টির মাথার কাছে বসে কিছুক্ষণ দম নিল। তার পরে আস্তে আস্তে চুলগুলো ধরে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে খুব আলতো করে ডাকল, ‘‘সকাল হয়েছে, এবার ওঠ সোনাবাবা।’’ নিজের গলার আওয়াজে নিজেই চমকে উঠল! মাতৃত্বের এই চিরকালীন ডাক ওর মধ্যে কোথায় ছিল এতদিন? ওই অবস্থাতেই দুচোখের জল মুছে ঘুমন্ত কুট্টির কপালে একটা চুমু খেয়ে ওর মাথাটা বালিশ থেকে নিজের কোলে টেনে নিয়ে এলো। ওর দুচোখ ছাপিয়ে তখনও জল নামছে।

উফফ! মামনটা রোজ সকালে জ্বালায়! তার মধ্যে এই ঠান্ডায় লেপ ছেড়ে উঠতে ভাল লাগে? ধুর! কুট্টি ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করতে করতে কোলের মধ্যে মাথাটা গুঁজে দিল। টের পেল নরম হাতে ওর মাথার চুলগুলো ঘেঁটে মামন আদর করে দিচ্ছে। দুহাত দিয়ে কোমরটা আরও চেপে ধরে রোজকার মতো মুখটা গুঁজে দিল। এত আরামের কোল ছেড়ে, এত আদর করে চুল মালিশ ছেড়ে ওঠা যায়? ধুর। চড়থাপ্পড় মারলে তখন দেখা যাবে। ভাবতে ভাবতে চোখ বুজে আরাম খেতে খেতে হঠাৎ গালের উপরে যেন একফোটা গরম জল পড়ল! ধড়মড় করে উঠে বসে দেখল, মামন নয়, ওর মাথাটা অন্য একটা কোলে। পিসি? উঠে বসে তাকিয়েই চমকে উঠল।

কুট্টি বুঝতে পারল, ওর মাথাটা যার কোলে ছিল এতক্ষণ, যে ওর চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে আদর করছিল, সেই মহিলা ওর আর বোনের আসল মা। এই মুহূর্তে বোন বাদ দিলে যার সঙ্গে ওর সরাসরি রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। যাঁর সম্পর্কে কয়েক মাস আগে সবকথাই ওদের জন্মদিনের দিন বাবা, তার পরে পিসি এবং শেষে মামন বলেছে। এঁকে দেখার জন্য, এঁর বুকে মাথা রাখার জন্য একটা পাগলামি সেই সময় থেকে ওর আর বোনের মধ্যে কাজ করেছে পরশু বিকেল অবধি। তার পরে আর মনে হয়নি। ঝড়ের মতো সময় কেটে গেছে। কত ঘটনা! কাল বাবা চলে গেছে চিরকালের মতো। আজ ওদের দুই ভাইবোনের থাকার মধ্যে আছে শুধু মামন আর পিসি। অথচ দু’জনের কারও সঙ্গেই নাকি ওদের রক্তের সম্পর্ক নেই? মনে মনে হেসে ফেলল। রক্তের সম্পর্কের যিনি, তিনি তো ওদের কোলের মধ্যে নিয়েই শোননি কোনওদিন! আর রক্তের সম্পর্ক না থাকা মামনই আজও ওদের বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমোয়। তবে মামন আর পিসি কাল একফাঁকে ওদের মাথায় হাত দিয়ে দিব্যি করিয়ে নিয়েছে, ওনাকে যেন ম্যাডাম বলে ডেকে অপমান না করে। উনিই ওদের মা। ওদের গর্ভধারিনী। তাঁকে সেই সম্মানটা না দিলে ওদের বাবার অপমান তো বটেই পিসি-মামনের গ্রুমিংয়েরও নাকি অপমান। ওরা মেনে নিয়েছে। ও মুখটা একটু অপ্রস্তুত করে বলল, ‘‘সরি, বুঝতে পারিনি। আমি মামন মনে করেছিলাম। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।’’ বলে ঠোঁটের কোনে মুচকি হেসে গালে এসে পড়া চোখের জলের বিন্দুটা আলতো করে মুখে মেখে নিল।

ওর কোল থেকে কুট্টির ধড়মড় করে উঠে বসা আর মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থেকে ওই কথাগুলো বলা ঈশিতাকে ফের বোঝাল, বাবার মতোই অভিমানের পাহাড় জমে আছে। একই সঙ্গে খেয়াল করল, ওর মুচকি হাসিটার মধ্যে অবিকল যেন সৌমাভর ছায়া। নিজের অভিমান, কষ্ট, মানসিক যন্ত্রণা সব আড়াল করতে এক সময় সৌমাভও বহু বার, বহু দিন এই ভাবেই মুচকি হেসে অনেক কিছু না বলা কথা বুঝিযে দিত ওকে। ও বুঝেও নিজের মনে জমে থাকা অপরাধবোধের কারণেই কিছু করতে পারেনি সেই সময়। আর একটা জিনিস খেয়াল করল। ওর চোখের জলে উঠে বসে কথাগুলো বলে মুচকি হাসলেও চোখের জলটা মুছে ফেলল না কুট্টি। সেটা নিজের গালে মেখে নিয়েছে, যেন কত ভালবাসার জিনিস! আজ আর ও ১৮ বছর আগের ‘আজ করব, কাল দেখব’-র মতো ভুল করল না। নিজের অপরাধবোধ লোকানোরও চেষ্টা করল না। সোজা হয়ে বসা ছেলের চুলের মুঠি ধরে নিজের কোলে টেনে ওকে আগের মতো শুইয়ে দিয়ে ওর উপরে দুহাত মেলে ওকে জাপটে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল, ‘‘আমি তোদের খুব খারাপ আর নোংরা মা। আমি ভাল না, আমি নোংরা। তবু তো তোদের পেটে ধরেছি। বিশ্বাস কর, তখন আমি এত নোংরা ছিলাম না। তোদের বাবা জানত। আমাকে ক্ষমা করতে পারিস না সোনা? মা বলে ডাকতে পারিস না? মা বলে আমার কোলে শুতে পারিস না? আমার কাছে কিছু বলতে পারিস না? আমি খারাপ, তোরা তো নোস। তোদের বাবা, মামন, পিসি তোদের কত যত্ন করে বড় করেছে। তোরা পারবি না আমাকে তোদের কাছে টেনে নিতে? বল না সোনা?’’ ওর আকুল কান্না আর চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে ওরই কোলে মুখ গুঁজে থাকা কুট্টির পিঠ।


জয়তীর ঘুম ভেঙে গেছিল। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে কুট্টির ঘরে ঢুকতে গিয়ে ঈশিতার আকুল কান্না ওর কানে। এল। দরজার বাইরে থেকেই দৃশ্যটা দেখে ওর মনটা কেঁদে উঠল। মেয়েটা কম বয়সের একটা অন্যায়ের মাসুল আজ কতদিন ধরে দিচ্ছে! ও দেখল, কুট্টির সারা শরীরের উপর কম্বল চাপানো থাকলেও পিঠটা উদোম। বরাবরই খালি গায়ে শোয়া অভ্যাস কুট্টির। আজ সেই পিঠ মায়ের চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে ছেলেটার। কুট্টি চুপ করে শুয়ে ওর কোলে, কোনও নড়াচড়া নেই। অনেকক্ষণ কেঁদে হাঁপিয়ে গেল ঈশিতা। ওই অবস্থাতেই ছেলের পিঠের উপরে উপুড় হয়ে নীরবে কেঁদে চলল। জয়তী ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে ঈশিতার চোখের জলে ভেসে যাওয়া মুখটাকে নিজের বুকে টেনে নিল। তার পর একহাত দিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকা কুট্টির চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে একটাই কথা বলল, ‘‘মনের সব অভিমান, ক্ষোভ, রাগ উগড়ে দে। মন শান্ত হবে। ভিতরে চেপে রাখিস না, শরীর, মন দুইই খারাপ হবে। কেউ নিজের ভুল বুঝে কাছে আসতে চাইলে, তাকে বুকে টেনে নেওয়ার শিক্ষা তোর ভিতরেই আছে। একটু খোঁজ, পেয়ে যাবি।’’ তার পর ঈশিতাকে বলল, ‘‘এ বার ওঠ, ওঘরের বাঁদরিটাকে তোল।’’ বলে ওকে তুলে দিয়ে কুট্টির মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে খাটের উপরে বসল।

ঈশিতা পাশের ঘরে ঢুকে দেখল, মেয়েটা কম্বলের ভিতরে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। এই মেয়েটা ওর সঙ্গে এক বাড়িতে এক ছাদের নীচে বেশ কয়েক ঘন্টা থাকলেও ও সেদিন এই মেয়েটাকে চিনতেই পারেনি। এমনকি একটা অচেনা বাড়িতে তাকে ঘুমনোর জন্য একটা গোটা ঘর ছেড়ে দিয়েছিল, তবু নিজের কাছে নিয়ে শোয়নি! কাল সৌমাভর কথা যতবার মনে পড়েছে, ততবার নিজের করা প্রতিটা অন্যায়ের জন্য নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা বেড়েছে হুহু করে। আজ সকাল থেকে ছেলেমেয়ের ব্যাপারে প্রতি পদে নিজের মাতৃত্বের অবহেলা, শূন্যতা টের পাচ্ছে। কিন্তু ওর জেদ চেপে গেছে। যে করেই হোক, নিজের শূন্য কোল ভরাতেই হবে। ও জানে, সবটা ভরবে না। ভাগাভাগি হবে সুভদ্রার সঙ্গে। হয়তো জয়তীর সঙ্গেও। তবু তো কিছুটা পাবে। আজকের মতো নিঃস্ব হয়ে থাকতে হবে না।

কুট্টির মতোই মেয়ের ঘরে ঢুকে ওর মাথাটাও নিজের কোলে টেনে একই ভাবে ডেকে মাথাভর্তি ঘন পিঠ ছাপানো চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিতে লাগল। দাদার মতো মুট্টি কিন্তু মাথায় ওর হাত পড়তেই উঠে পড়ল কোল ছেড়ে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তার পর দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলল। ঈশিতা বুঝল, ভীষণ দ্বিধায় পড়ে গেছে। ও আর দেরি করল না। কুট্টির মতোই মেয়ের মাথাটাও জোর করে নিজের কোলের উপরে টেনে একই ভাবে কেঁদে ফেলল। মা হয়ে ছেলের মতো মেয়ের কাছেও ক্ষমা চাইতে লাগল আকুল হয়ে। একটু পরে টের পেল, ওর কোলটা ভিজে লাগছে। বুঝল মেয়ে কাঁদছে। এ কান্না অনেক অভিমানের, অনেক না পাওয়ার যন্ত্রণার, অনেক হারানোর।

নিজের মনের আগলগুলো কাল এবাড়িতে পা রাখার কয়েক ঘণ্টা পরেই  একটু একটু করে খুলে ফেলেছিল ঈশিতা। রাতে নিজের মনের অনেক কালি, অনেক যন্ত্রণা কিছুটা হলেও মুছতে পেরেছিল প্রথমে জয়তী আর পরে সুভদ্রার কাছে। তার পর সকালে ছেলেকে বুকে টেনে কেঁদে ও নিজের ভিতরেই অনেকটা হাল্কা বোধ করছিল। ভয় ছিল মেয়েকে নিয়েও। তারও যে স্বভাব বাপের মতোই, সেটা ও শুনেছে। মেয়ের কান্নায় এবারে ভেঙে পড়ল ঈশিতা নামের পুরো খোলসটাই। এই প্রথম সব ছাপিয়ে ওর ভিতরে জেগে উঠল মরে যাওয়া সেই মা, কুট্টি-মুট্টির মা। নতুন আলোর রেখা দেখার মতো করে মেয়েকে জড়িয়ে খাটে গড়িয়ে গেল। তার পরে ওই অবস্থাতেই মেয়েকে বুকের উপর টেনে নিল। তার পর একেবারে ভেউভেউ করে বাচ্চাদের মতো কেঁদে উঠে মেয়েকে এমন ভাবে আঁকড়ে ধরল যে, হাত একটু আলগা হলেই যেন মেয়ে কোথাও হারিয়ে যাবে। টের পেল ওর বুক থেকে মাথা তোলার চেষ্টা করছে না মেয়ে, বরং বুকটা ভিজে যাচ্ছে। মেয়ের চোখের এই জল ওকে যেন কোথাও অনেকটা শান্তি দিল। মেয়েকে বুকের উপরে রেখেই চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিল ওকে। একসময় মেয়েকে খাটে ফেলে ওর বুকে মাথা রেখে আদর করতে করতে অস্ফূটে অনেকবার কাঁদল, ক্ষমা চাইল, আবার আদর করল।
[+] 9 users Like Choton's post
Like Reply
(৪৭)

‘এসো গো নূতন জীবন’



পাশের ঘরটায় তখন জয়তীর কোলে মাথা রেখে নীরবে কেঁদে যাচ্ছে কুট্টি। ও জানে, ওদের আসল মা এবারে ওদের পাওয়ার জন্য সব কিছু করবে। কাল মামন এবং পিসির কাছে শুনেছে, মা কীভাবে আঙুল থেকে আসন্ন বিয়ের আঙটি খুলে নিজের ছোট বোনকে এক লহমায় অনাত্মীয় করে আপনি করে কথা বলে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু মামন? মায়ের কীর্তি দেখে বাবা ওদের নিয়ে চলে আসার পর থেকে আজ অবধি যে মামনের কোলে বুকে পিঠে ওরা এত বড় হয়েছে, তাকে ছেড়ে থাকতে পারবে ওরা? মামনই বা কি পারবে ওদের ছেড়ে থাকতে? কুট্টি জানে, ওরা নিজেরা যেমন পারবে না, মামনও না। এর মধ্যেই ঘরে ঢুকল সুভদ্রা। হাতে একটা ট্রেতে করে চায়ের ফ্লাস্ক আর বিস্কিট। সঙ্গে কয়েকটা কাপও। পাশের ঘরের বাঁদরিটাকেও তো দিতে হবে। তা ছাড়া ঈশিতাকেও দিতে হবে। ওর দিদি জামাইবাবু উঠলে তাঁদের জলখাবার দিতে হবে। সেটা অবশ্য বুড়ি বানাচ্ছে। ওদের সবার অবর্তমানে স্বামীহারা এই মেয়েটিই এই বাড়ির মালকিন শুধু না, ওদেরও গার্জিয়ান। জয়তী-সুভদ্রা প্রতিমাসে ওকে মোটা টাকা পাঠায়, ওর মেয়ের পড়াশোনার খরচ দেয়।  সৌমাভও এতদিন দিত। এই বাড়িতে বুড়ি যা ঠিক করবে, তাই হবে। এমনকি রান্নাও। বুড়িকে জলখাবার বানাতে বলে নিজে চা করেছে। সেটা নিয়েই এসেছে। তা ছাড়া এখন ওর অনেক কাজ। তার মধ্যেই ছেলের ঘরে ঢুকে দৃশ্যটা দেখে হেসে ফেলল সুভদ্রা। দামড়া ছেলে, পিসির কোলে মাথা রেখে আদর খাচ্ছে এখনও! কিন্তু ঈশিতা কোথায়? মেয়ের কাছে? জয়তীর দিকে তাকাতেই জয়তী ওকে ইশারায় ডেকে কানে কানে বলল কী হয়েছে। সুভদ্রা মুচকি হেসে ছেলেকে জয়তীর কোল থেকে টেনে নিজের কোলে নিল। তার পর বলল, ‘‘দিদিভাই, তুমি চা খাও। আমিও খাই। ও কান্না থামলে চা খাবে, না হলে জল খাবে।’’ মামনের কথা শুনে ওই অবস্থাতেও হেসে ফেলল কুট্টি। হাসল জয়তীও। তার পর মামনের কোলে মাথাটা আরও গুঁজে কোমর দুহাতে জোরে চেপে ধরে বলল, ‘‘হেসো না। তুমি সেই চার মাস বয়স থেকে আমাদের এত বড় করেছো। পিসিও করেছে। আর আজ...’’ গলাটা ধরে গেল কুট্টির। জয়তী ও সুভদ্রার চোখাচুখি হল। সুভদ্রা ছেলের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে সহজ গলায় বলল, ‘‘সাধে তোকে আমি দামড়া গাধা বলি? তোর বাপের দুটো বউ। একটা আমি ছোটবউ, অন্যটা বড়দি, বড়বউ। আমি তোদের মানুষ করেছি ঠিক, কিন্তু বড়দি তোদের জন্ম দিয়েছে, ভুলিস না সেটা। মামন এতদিন তোদের কাছে ছিল, এখন থেকে মা-ও তোদের কাছেই থাকবে। হ্যাঁ, সে ভুল-অন্যায় করেছিল একবার। কিন্তু তার জন্য কত শাস্তি একটা মানুষ পেতে পারে? এত বড় হয়েছিস, এত বুঝিস, আর এই সহজ সত্যগুলো বুঝিস না কেন সোনা? তাহলে এতদিন আমি, পিসি কি শেখালাম তোদের? তোদের বাবা কি শেখাল? বরং নিজেদের সহজ করে তুলতে শেখ, বাবার ডায়রির কথাগুলো মনে কর, পিসির কথাগুলো মনে কর। আমি কালও যে সব কথা বলেছি, ভাব। দেখবি, মনটা সাফ হয়ে গেছে। বরং এখন থেকে দুটো মা পাবি একসঙ্গে। তোর কোনও ক্ষতি হবে না, বরং আদরটা আরও বেশি পাবি, আরও বাঁদর হবি। আমার সেটাই চিন্তা। আর শোন, তোদের মামন কোথাও যাবে না তোদের ছেড়ে। মরলে মুখে আগুন..’’। কথাটা শেষ করতে পারল না। গায়ের জোরে কোমরটা দুহাতে চেপে ধরে সুভদ্রার পেটে কামড়ে দিল কুট্টি। ছোট থেকে এই ওর রোগ। রেগে গেলেই মামনকে কামড়ে দেয়! তবে কখনওই জোরে না, কিন্তু ওর রাগটা বুঝিয়ে দেয়। আর একটু বড় হয়ে থেকে দুহাতে চেপে ধরে শক্ত ভাবে। ছোটবেলায় একরকম ছিল, এখন বড় হওয়ায় ওর গায়ের জোরে চেপে ধরায় মামন, পিসির প্রাণ যায়। মুট্টিকেও অমন করে, কিন্তু সে পাল্টা কামড়ে, কেঁদে, খামচে রেহাই পায়। কিন্তু ওরা তো সেটা পারে না। বাবারে মারে করে করে উঠলে তবে ছাড়া পায়। সুভদ্রাও ‘ওরে বাবারে’ বলে ককিয়ে উঠতে ওকে ছেড়ে দিয়ে কোলে মাথা রেখেই রাগে গরগর করতে করতে কুট্টি বলল, ‘‘আর একদিন তুমি ওই কথা বোলো, দেখো কী করি!’’ বলেই পিসির দিকে তাকিয়ে একই রকম শাসানি দিয়ে বলল, ‘‘তোমাকেও ছাড়ব না। গলা টিপে মেরে জেলে চলে যাব, সেও ভাল।’’ মামনের কোলে মাথা গুঁজে থাকা কুট্টির চোখে পড়ল না সুভদ্রা আর জয়তীর জলভরা চোখে স্বস্তির হাসি।

সুভদ্রার ককিয়ে ওঠা আওয়াজে জোর না থাকলেও তা পাশের ঘরে ঈশিতার কানে গেছিল। ও কোনও বিপদ হয়েছে ভেবে উঠতে গিয়ে খেয়াল করল, মেয়ে সেই যে ওর বুকে মাথা গুঁজে নীরবে চোখের জল ফেলতে শুরু করেছে, তা তখনও থামেনি। উল্টে মেয়ের দুহাত যেন ওকে জড়িয়ে ধরেছে। আলতো করে হলেও সে ধরায় ছেড়ে না দেওয়ার একটা অনুভূতি, স্পর্শ যে আছে, সেটা টের পেল ঈশিতা। বুলি না ফোটা যে দুটো প্রাণ ওর থেকে গত ১৮ বছর হারিয়ে গিয়েছিল, আজ তাদের ছোঁয়া ওর ভিতরে হারানো মাতৃত্বকে যেন নতুন করে জাগাতে শুরু করেছে। ও মেয়েকে আরও জোরে বুকে টেনে চুমু খেতে খেতে বলল, ‘‘আজ সারাদিন আমার বুকের মধ্যে এভাবেই থাকবি, কেমন?’’

এই সময় ওকে আর মুট্টিকে চমকে দিয়ে সুভদ্রার খিলখিল হাসি ভেসে এল দরজা থেকে। ‘‘বড়দি, তুমি আর বাঁদরিটাকে মাথায় তুলো না। এটা বেশি কুঁড়ে, বেশি শয়তান। ওটাকে তুলে বাথরুমে পাঠাও আর ওঘরে চা আছে, এসো খাব। আজ অনেক কাজ। এই দুটো শয়তানকে আদর দিয়ে মাথায় তুলো না। এসো, এসো। অনেক প্ল্যান করতে হবে।’’ বলে চলে গেল।

বড়দি? আপনি নয়, একেবারে তুমি? কয়েক ঘন্টা আগে দেখা, বয়সে ওর থেকে সামান্য ছোট এই মেয়েটার কাছে এত বছর তো বটেই, কাল থেকেও প্রতি মুহূর্তে হেরে যাচ্ছে বুঝেও কষ্ট নয়, একটা স্বস্তি ঈশিতাকে ঘিরে ধরছে। বয়সে একদিনের বড় হলেও ওকে প্রণাম করত ঈশিতা। এ কে? এ তো সাক্ষাৎ দেবী! ওকে সরাসরি বড়দি বলে ডাকছে এবং তার মধ্যে কোনও কৃত্রিমতা নেই, সেটা স্পষ্ট। সুভদ্রা ঘর ছাড়ার পরে মুট্টিকে আরও একটু আদর করে, চুমু খেয়ে ফ্রেস হতে পাঠিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে ঈশিতা দেখল, খাটে ছেলে নেই। নিশ্চয়ই মামন আর পিসির তাড়া খেয়ে বাথরুমে ঢুকেছে। ও সোজা গিয়ে খাটে উঠে এবার সুভদ্রাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। একটা কথাই ওর মুখ থেকে বেরোল, ‘‘তুমি সত্যিই দেবী, আমার তোমাকে প্রণাম করা উচিত, তবু যদি একটু শুদ্ধ হতে পারি। তুমি অনেক পবিত্র, শুদ্ধ। আমার কাছে আজ থেকে তুমিই কুট্টি-মুট্টির বাবার বড়বউ। তুমিই এই সংসারের লক্ষ্মী। বিশ্বাস কর, একটা শব্দও বাড়িয়ে বলছি না। তোমার সামনে দাঁড়ালে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে কত ছোট, কত নোংরা, কত পাপী, কত হীন মনে হচ্ছে! তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ। আমি তোমার মধ্যে ওদের বাবার স্পর্শ পাব, তোমাকে ছুঁয়ে থাকাতেও পূণ্য, বিশ্বাস কর। তুমি....’’ কথাটা শেষ করতে না পেরে সুভদ্রার বুকের মধ্যে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল ঈশিতা। টের পেল সুভদ্রার নরম হাত ওর মাথায় আদরের ছোঁয়া বুলিয়ে দিচ্ছে। একটু পরে জয়তী গলা খাঁকড়ে বলল, ‘‘কাঁদবি পরে, চা খা আগে। চা জল হয়ে যাবে এর পরে।’’ ঈশিতা চোখ মুছে উঠে খাট থেকে নেমে জয়তীকে চমকে দিয়ে একটা প্রণাম করে বলল, ‘‘আজ থেকে তুমি আমার নিজের দিদিরও বেশি। সুভদ্রা যেমন ওদের মা, তুমি তেমনি ওদের পিসি। আজ থেকে তোমাকে দিদি বলো, ননদ বলো, মা বলো, সব রকম ভাবে দেখব। আমি খারাপ, কিন্তু তোমাদের দু’জনের কাছে থাকলে হয়তো একদিন ভাল হবো, কিছুটা হলেও।’’ জয়তী এমনিই এই ভাবে প্রণাম পেয়ে চমকে গেছিল। তার পরের কথাগুলো শুনে ওরও চোখে জল এল। ঈশিতাকে বুকে টেনে বলল, ‘‘সব ঠিক হবে দেখিস। নিজেকে শুদ্ধ রাখিস, আর এই মেয়েটাকে কোনওদিন কষ্ট দিস না, অপমান করিস না, দুঃখ দিস না। তা হলে কিন্তু আবার সব হারাবি।’’ জয়তীর কাঁধে মাথা রেখে ঈশিতা বোঝাল, ও সব মেনে চলবে।

চা খেতে খেতে জয়তী এবারে পরপর কয়েকটা প্রশ্ন করল। ঈশিতার চাকরির কি হবে? ঈশিতা জানাল, আজ ও শান্তিনিকেতনে ফিরে রেজিগনেশন পাঠিয়ে দেবে। লিখিত ভাবে এবং মেল করে। এখন ছুটি চলছে, ইউনিভার্সিটি খুললে সেটা অ্যাক্সেপ্ট হবে। তবে যেহেতু বেশি দিন চাকরি করেনি, মাত্র আট বছর, তাই শুধু পিএফের টাকা বাবদ সামান্য কিছু পাবে। ওই বাড়ি ও বিক্রি করে দেবে, সেটা থেকে ভালই টাকা পাবে। প্লাস নিজের কিছু সঞ্চয় আছে। কাঁকুরগাছির ফ্ল্যাটও বিক্রি করে দেবে। যেটুকু নিজের যা গয়নাগাঁটি, তা মেয়েকে আর ছেলেকে ভাগ করে দেবে। তাই আজ একবার কয়েক ঘন্টার জন্য হলেও ও শান্তিনিকেতন যাবে। টাকাপয়সাও ওদের নামে ভাগ করে দেবে। ও বাড়ি থেকে জামাকাপড় কিছু না আনলেও দরকারি সব কাগজপত্র নিয়ে আসবে। বাকি আসবাবপত্র বিক্রির ব্যবস্থা করবে। ওর প্ল্যান শুনে সুভদ্রাকে চোখ মেরে জয়তী হাসতে হাসতে বলল, ‘‘সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের নিশ্চিন্ত চাকরি ছাড়বি, বাড়ি-ফ্ল্যাট বেচে দিবি, গয়না দিয়ে দিবি, সঞ্চয় দিয়ে দিবি। তার পরে? তোকে যদি সুভদ্রা বা ছেলেমেয়ে ও বাড়িতে না রাখে?’’ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সুভদ্রা ও জয়তীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় হাসিহাসি মুখে বলল, ‘’১৯ বছর আগে একবার সব পেয়েও নিজের অসভ্যতায়, নিজের লোভে, নিজের নোংরামিতে সব হারিয়েছিলাম। ১৮ বছর পরে অল্প হলেও কিছু পাওয়ার লোভে এই সব তুচ্ছ জিনিস সব ছাড়ছি। তাতেও যদি কিছু না পাই, তা হলে এ দেশে রেললাইন তো আছে!’’ সুভদ্রা, জয়তী দু’জনেই চমকে উঠল। ঈশিতার গলার এই কাঠিন্য, এই দৃঢ়তা জয়তীর অচেনা। আর সুভদ্রা? জয়তী-সৌমাভর শিক্ষা-সহবতে বড় হয়ে আজ বড় সরকারি পদে চাকরি করলেও নিজের সহজাত সংস্কার, বিশ্বাস নিয়ে ৩৬ বছরে পৌঁছনো সুভদ্রা চায়ের কাপ ফেলে রেখে ধড়মড় করে খাট থেকে নেমে ঈশিতাকে বুকে জড়িয়ে বলল, ‘‘আমাকে যদি সত্যিই নিজের বোন বলে মনে কর, দিদিভাইকে নিজের দিদি বলে মনে কর, আর কোনওদিন একথাটা বোলো না। ছেলেমেয়েরও কতবড় অমঙ্গল হবে, বোঝো না?’’ বলে কেঁদে ফেলল। চোখে জল নিয়ে ঈশিতা প্রবল আবেগে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘‘ভয় নেই তোমাদের। এত বছর ধরে এত অপমান, এত মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করেও যখন মরিনি, তখন সহজে মরব না। তা ছাড়া, তোমরা দু’জন যার পাশে আছো, তার খারাপ হবে কি করে!’’ ওর বুকের মধ্যে চোখের জল মুছে সুভদ্রা বলল, ‘‘আজ এখন থেকে আমাকে আর তুমি বোলো না, তুই করেই বোলো। বড় দিদির কাছে তুমি শুনলে দূরের মানুষ মনে হয়।’’ ঈশিতা ওর মাথায় আর গালে চুমু খেয়ে বলল, ‘‘বলব। তোর কথা ফেলার সাহস বা ইচ্ছে কোনওটাই আমার নেই।’’
[+] 11 users Like Choton's post
Like Reply
Sotti bolte ishita ato shahoje nijer bacchader pae jabe kache seta mante jeno mon chaeche na, Shae ato bochor agee jei bhulta koreche tar khoma hoe na. Akta sundor shongshar bhashea deache. Firstly oor mukh theke ooe shei din er bhuler oor nijer akta byakkha Bola dorkar j keno Shae dinke dubeke ber kore dite pare ni, sathe nijer bacchader kache grhinar patro o hoa dorkar r o bohu bochor dhore, atleast akjon bacchar kache to botei.
R duber r gunjar o shashti dorkar nahole jeno mon shanti pacche na. Jodi shombhob hoe suggestions gulo jodi ae lekhae kono bhabe incorporate kora jae.
R ha abaro bolchi atulonio lekha, ae lekha jeno r o onek episode obdhi chole sei asha korchi.
[+] 1 user Likes New Avatar's post
Like Reply
Ei rokom lekha ekhane manay na.
Like Reply
ঈশিতার মানসিকতায় কতটা পরিবর্তন এসেছে বা আসবে সেটা পরবর্তী আপডেটগুলোতে আস্তে আস্তে স্পষ্ট হবে। তবে যার মন মানসিকতায় আমুল পরিবর্তন স্পষ্ট এবং সেই পরিবর্তনটা খারাপের দিকে সে হল গুঞ্জা। যে সৌমাভদা ওকে এত ভালোবাসতো ও তার জীবনকে নরক বানিয়ে দেওয়ার পিছনে যে পাষণ্ডটা মুল অপরাধী শেষে সব জেনেশুনে সেই পরিবারেরই একটা মদখোর, গুটখাখোর ছেলের বিছানায় আবার নিজের দিদিকে তোলার প্ল্যান করেছিল। শুধুমাত্র নিজের আখের গোছানোর লোভে she was pimping her elder sister. গুঞ্জার এই ব্যাবহার মেনে নেওয়া যায়না। ওর ঘোরতর শাস্তি প্রাপ্য। আর ছোটনকে রিকোয়েস্ট করব যে রাহুল দুবে must not be allowed to go scot free and unpunished.      
[+] 5 users Like prshma's post
Like Reply
ঈশিতা বর্ধমানের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে অল্প সময়ের জন্যে হলেও শান্তিনিকেতনে ফিরবে পাকাপাকি ভাবে নিজের চাকরি ছাড়ার জন্যে। কে জানে সেখানেই কোন টুইস্ট লুকিয়ে আছে কিনা!
যেহেতু গল্পের নাম "তার ছিঁড়ে গেছে কবে"।
[+] 2 users Like Mohomoy's post
Like Reply
Very nice
Like Reply
এটা কি চটি গল্প? নাকি ইমোশনাল লাভ স্টোরি??
কোন সেক্স নাই ধরতে গেলে।ফাও যতসব।
[+] 1 user Likes Kingbros1's post
Like Reply
দারুন সুন্দর... শব্দাতীত
[+] 1 user Likes PampaBoobs's post
Like Reply
দারুণ চলছে, চালিয়ে যাও।
[+] 1 user Likes ray.rowdy's post
Like Reply
পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় আছি।
Like Reply
(27-04-2025, 09:19 AM)Sweet angel Wrote: রবীন্দ্র সংগীত ও কবিতা থাকলে কারো আপত্তি হবে কেন? যৌন গল্প তো খারাপ কিছু নয়! বরং আমরাই যৌনতাকে খারাপ বানিয়েছি।
আপনি লিখুন, ভিআমার তো ভালোই লাগলো।

ভীষণ ভাল বলেছেন।
Like Reply
(27-04-2025, 02:21 AM)ray.rowdy Wrote:
যেমনটা আশা ছিলো, ঠিক সেরকমভাবেই শুরু হলো - অসাধারণ। খুবই সুন্দর। শুধু একটা নাম একটু কানে বাজছে; যাক, এসব ছোটো খাটো ব্যাপার মানে রাখে না। চালিয়ে যাও। আর হ্যাঁ, রবি ঠাকুর বা কোনো প্রথিতযশা লেখক-লেখিকাদের রচনা থেকে অল্প কিছুটা তুলে দেওয়াটা কোনো অন্যায় বা অপরাধ নয়। এর থেকে প্রমাণ হয় যে ওনাদের মননশীলতা বা লেখা কতোটা গভীর ছিলো, এবং আজও তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যায়নি। তাই এসব না ভেবে লিখে যাও। শুভেচ্ছা রইলো।

একদম ঠিক কথা। একমত। রবি ঠাকুরের উপস্থিতি ইরোটিক গল্পে হবে না কেন? কড়ি ও কোমল কিসের জন্যে লিখেছিলেন উনি?
Like Reply




Users browsing this thread: