Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
#41
(30-04-2025, 02:42 AM)Choton Wrote: হ্যাঁ ম্যাডাম। এটা 90's এর ঘটনা থেকে শুরু।  তবে শেষ হবে নতুন শতকে।  ভালো লাগছে কিনা জানাবেন প্লিজ। আমার আগের গল্পটার কয়েকজন পাঠক, যাদের উৎসাহে এটা শুরু করেছি, তাদের অনেকে এটা পড়ছেন না হয়তো। বা ভালো লাগছে না তাদের। কেন জানি না তাদের খুব মিস করছি। আবার আপনাদের মত পাঠকদের উৎসাহ ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন সবাই।

কে বলছে তোমায় যে পড়ছি না!! বা ভালো লাগছে না?
শুধু এটুকু জেনে রেখো, তোমার লেখাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার অন্তত নেই প্রিয় ছোটন'দা। 
তুমিও রিপ্লাই দিও, তাহলে পাঠক হিসাবে খুব ভালো লাগবে, গর্ববোধ হবে যে, এমন একজন লেখক আমার মত অতি তুচ্ছ একজন পাঠকের কমেন্টেও রিপ্লাই দেয়।
[+] 2 users Like Mohomoy's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
(01-05-2025, 02:11 AM)Mohomoy Wrote: কে বলছে তোমায় যে পড়ছি না!! বা ভালো লাগছে না?
শুধু এটুকু জেনে রেখো, তোমার লেখাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার অন্তত নেই প্রিয় ছোটন'দা। 
তুমিও রিপ্লাই দিও, তাহলে পাঠক হিসাবে খুব ভালো লাগবে, গর্ববোধ হবে যে, এমন একজন লেখক আমার মত অতি তুচ্ছ একজন পাঠকের কমেন্টেও রিপ্লাই দেয়।

এই যাঃ, আপনাদের মতো পাঠক কখনও তুচ্ছ হতে পারেন না। আপনারা সবাই আমার খুব কাছের জন। আমি খুব একটা সাইটে লগ ইন করি না, তাই সবসময় ঠিক মতো উত্তর ও  দিতে পারিনা। তাই বলে ভাববেন না, আমি উত্তর দিই না। সুযোগ পেলে আমি অবশ্যই উত্তর দেব। খুব ভাল থাকবেন।  Namaskar
[+] 2 users Like Choton's post
Like Reply
#43
(১০)

মুছে যাওয়া দিনগুলি

এদিকে গুঞ্জার মাধ্যমিক শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে তার আগেই একবার অফিসফেরত মিনিটখানেকের জন্য এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েই গুঞ্জার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে ওর হাতে একটা খামে বেশ কিছু টাকা দিয়ে গেছে সৌমাভ। বলেছে, ‘‘পরীক্ষার পরে ইচ্ছেমতো খরচ করিস তুই, এটা শুধুই তোর।’’ সৌমাভ চলে যাওয়ার পরে ঘরে ঢুকে বিষয়টা জানাল গুঞ্জা। ঈশিতা অবাক হল, এ বাড়িতে এল, অথচ ওর সঙ্গে কথা তো দূর, দেখাও করল না! কিন্তু স্যার এসে যাওয়ায় এ নিয়ে আর ভাবার সময় পেল না ও। সে সময় পেল না পরের অনেক দিনের মধ্যে।

মাধ্যমিক শেষের পরপরই গুঞ্জা জ্বর বাধানোয় ওকে দিদির ঘর থেকে সরিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এলেন ঈশিতার মা। মেয়ে ফিরে অবধি পেটে জোড়া সন্তান নিয়েও যে ভাবে পড়ছে, তাতে তার জন্য এমনিই বাড়ির লোক বিস্তর যত্নে রেখেছিলেন মেয়েকে। এখন গুঞ্জার জন্য মেয়েরও শরীর খারাপ হলে পড়া এবং ওর পেটের দুই সন্তানের ক্ষতি হতে পারে বলেই তাঁরা এ ব্যবস্থা করলেন। এবং সেদিন বহু বছর পরে একা বিছানায় শুয়ে কলকাতায় ফেরা অবধি প্রথম সৌমাভর জন্য মন কেমন করে উঠল ওর। পড়তে ভাল লাগল না, সটান বিছানায় শুয়ে কম্বলের মধ্যে সেঁধিয়ে গেল। মনে পড়ল, কলকাতায় ফেরার আগের দিন অবধি ও আন্দামানে রাতের দিকে গায়ে হাল্কা একটা চাদর চাপিয়ে সব খুলে পুরো উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকত, কখন সৌমাভ এসে ওর সারা শরীরের দখল নেবে আদরে ভরিয়ে দিতে দিতে, এই আশায়। কলকাতায় ফেরার পর থেকে ও নিজেই সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। আর এখন তো.....

এই বারে একটা একটা করে গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনা পরপর মনে পড়তে লাগল ওর। কলকাতায় ফেরা ইস্তক দু’জনের মধ্যে বারদুয়েক চোদাচুদি হলেও আন্দামানের সেই উদ্দামতা যে আন্দামানেই ফেলে এসেছে ও, সেটা বুঝতে পারল নিজেই। এমনকি ওর প্রথমদিন এ বাড়িতে আসার ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটির পর থেকে সৌমাভ একদিনও রাতে ওকে ঠিক মতো ছোঁয়ওনি। এমনকি ও নিজেও সৌমাভকে একবারও জড়িয়ে ধরেনি আগের মতো করে। তার মধ্যেই যে বার দুয়েক চোদাচুদি হয়েছে, তা যে কতটা দায়সারা, মেয়ে হয়ে ও জানে। আর প্রথম যে দিন সৌমাভকে নিয়ে এ বাড়িতে এসেছিল, সেদিন যে ওর শীতল নড়াচড়া, কৃত্রিম হাবভাব দেখে ও ধরে ফেলে সৌমাভ নিজের রস না খসিয়েই নেমে গিয়েছিল, সেটা ওর থেকে ভাল কেউ জানে না। সেই সঙ্গে মনে পড়ল, আগামী পাঁচ-ছয় মাস ওদের সেক্স করতে যে বাধা নেই, সেটা ডাক্তার বারবার বলার পরেও নাচতে নাচতে এ বাড়িতে চলে এসে ও কী ভাবে সৌমাভর দিকটাকে একেবারে উপেক্ষা করেছে! সৌমাভর কথাটা ও একবারও ভাবেনি? এবং তার পর থেকে গত তিন-সাড়ে তিন সপ্তাহের বেশি দু’জনের ঠিক মতো কথাও হয়নি। এমনকি কিছু দিন আগে এ বাড়িতে এলেও বারান্দা থেকেই গুঞ্জার সঙ্গে কথা বলে চলে গেছে, অথচ ওর সঙ্গে দেখাই করেনি! তখনই মনে পড়ল, গত সপ্তাদুয়েক তো সৌমাভ একটা ফোনও করেনি! নাকি ও সে সময় পড়ছিল বলে কেউ ডেকে দেয়নি? কিন্তু সৌমাভ যে ফোন করেছে, এই কথাটাও তো ওর বাড়ির লোক ওকে একবারও বলেনি! অথচ এই লোকটাই সব জানার পরেও ওকে শুধু নিজের করে বুকে টেনে নিয়ে আনন্দে ভাসিয়ে রাখেনি, ওর পরীক্ষার জন্য বাড়ির লোককে বোঝানোর ভারটাও নিজেই নিয়েছিল। শুধু তাই নয়, যেহেতু এখন ওর রেগুলার চেকআপ, ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োজন, তাই আলাদা করে ওর হাতেই প্রায় হাজার দশেক টাকাও দিয়ে দিয়েছে বেলেঘাটার বাসা থেকে বাবা-মা-গুঞ্জার সঙ্গে বেরনোর সময়। এতটাই তার দায়িত্ববোধ। পরপর সব কথা মনে করে নিজের কাছেই নিজে ছোট হয়ে গেল ঈশিতা। বুঝল, কতটা স্বার্থপরের মতো কাজ করেছে কলকাতায় ফিরে অবধি। ঠিক করে নিল, কাল সকাল হলেই একাএকা বেলেঘাটায় ফিরবে ও। ওটাই ওর নিজের সংসার। অন্তত দিন তিনেকের জন্য হলে ফিরবে সেখানে। আপাতত এ বাড়ির কাউকে কিছু বলবে না, পরে ফোন করে জানিয়ে দিলেই হবে। ওই তিনটে দিন আন্দামানের মতো করে সৌমাভর কাছে মেলে ধরবে নিজেকে। সৌমাভর সব অভিমান, বাধা সরিয়ে আবার আগের মতো করে তবেই নিজের বাড়িতে ফিরবে।

কিন্তু পরদিন সকালে সে সুযোগ ও পেল না। ওর দাদু হঠাৎই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সাতসকালেই এসে হাজির হল দিদিরা। বেলা একটু বাড়তেই লোকজন, ডাক্তারে ভরে গেল বাড়ি। এই ব্যস্ততায় ও ভুলেই গেল আগের রাতের কথা। দাদু বিকেলের পরে একটু সুস্থ হলেন। বাড়ির লোকও কিছুটা নিশ্চিন্ত হল। সন্ধ্যায় অফিস থেকে নিয়মরক্ষার ফোন করে সবটা জানতে পেরে সৌমাভ এল বটে, কিন্তু কিছুক্ষণ দাদুর কাছে বসে থেকে উঠে গিয়ে গুঞ্জার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করে শুধু এককাপ চা খেয়ে বেড়িয়ে গেল। ঈশিতা একফাঁকে ওকে টেনে বারান্দায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু সে সুযোগ পায়নি। সৌমাভও বিশেষ কথা বলেনি। তবে এর ফাঁকে একবার ওর হাতে আবার হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে পেটে খুব আলতো করে একবার হাত বুলিয়ে ‘‘এদের সাবধানে রেখো, নিজে ভাল থেকো’’ বলে চলে গেল। পরের দিন অফিসে গিয়ে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ফোন করে ফের একদফা তাগাদা দিয়ে রাখল সৌমাভ। এই অবস্থায় রাতেভিতে কিছু হলে অন্তত সঙ্গে সঙ্গে খবরটা পাবে। অফিসের লোকেদের তৎপরতায় বিস্ময়কর ভাবে দিন কয়েকের মধ্যেই সেই ফোনের কানেকশনও পেয়ে গেল। তবে এখনই সবাইকে জানাল না। ঠিক করল, ঈশিতা এ বাড়িতে ফিরলে চমক দেওয়া যাবে।

পরদিন সকাল থেকে নিজের গত কয়েক দিনের রুটিনে ফিরে গেল ঈশিতা। সৌমাভ, সংসার সব ভুলে পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা শুরু। একফাঁকে একদিন এসে ঈশিতার হাতে আরও হাজার দুয়েক টাকা ধরিয়ে দিয়ে জানিয়ে দিল, পরীক্ষা শেষের দিন এ বাড়িতে আসবে। সৌমাভর দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধের কাছে আরও একবার মাথা নিচু করল ঈশিতা।
[+] 10 users Like Choton's post
Like Reply
#44
(১১)


এই বিরহে কাঁদে আমার

লম্বা সময় ধরে চলে চলে এক সময় ঈশিতার উচ্চমাধ্যমিক শেষ হল এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে। এবং নিজেকেও অবাক করে দিয়ে ও দেখল, প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি ভাল পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার শেষ দিনে পুরনো বন্ধুদের প্রায় সবার সঙ্গেই দেখা হল ঈশিতার। ওর বিয়ে হয়ে গেছে জেনে অনেকেই প্রচন্ড অবাক হল, কয়েকজন ছাড়া। তারা কানাঘুষোয় রাহুলের বিষয়টা জেনে ফেলেছিল এবং সেটা ঈশিতাকেও জানিয়ে দিল ঠারেঠোরে। এতে ঈশিতা বেশ ভয় পেল। কারণ ওই ঘটনার কথা সৌমাভর কাছে ও গোপনই রেখেছে এতদিন। ও ঠিক করল, এই বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতেই হবে, কবে কী হয়ে যায়। ও যে তিন-চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই পরীক্ষা দিল, সেটা বন্ধুরা কেউই প্রায় বুঝতে পারল না। অনেকে বরং হাসতে হাসতে হাতের ইশারায় বলল, তুই মুটকি হয়ে গেছিস, ভুঁড়িটা কমা। না হলে বর তো বুকে উঠে আসল ফুটোটাই খুঁজে পাবে না! আর শোন, প্রথম বছরেই পেট বাধিয়ে ফেলিস না। আন্ডাবাচ্চা হয়ে গেলে পরের তিন-চার বছর আর কিছু করতে পারবি না। বিয়ের আসল আনন্দটাই মাটি। তখন সংসার টেনে আর ও সব ভাল লাগবে না। বন্ধুদের কথা শুনে লজ্জা পেলেও হেসে ম্যানেজ করল ও। ওর বর ফরেস্ট অফিসার শুনে ওদের দলের একটি মেয়ে জানাল, ওদের কলেজেরই এক সিনিয়র দিদিরও নাকি বিয়ে হয়েছে এক ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে। তবে সেটা প্রেম করে! সেই সিনিয়ার দিদি, জয়তীদিকে বিলক্ষণ চেনে ঈশিতা। কলেজে ভাল মেয়ে বলেই সবার কাছে পরিচিত ছিল জয়তীদি। তবে তার বর নাকি উড়িষ্যার লোক, টাইটেল পন্ডা। ওরা এখন উড়িষ্যাতেই থাকে। বাকিরা পড়ল ওকে নিয়ে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করল, ফরেস্ট অফিসারের বউ হয়ে ও নীচের জঙ্গল রেগুলার সাফ রাখে কি না। বন্ধুদের সঙ্গে এই ধরনের কথা আগে অবলীলায় বললেও এখন ভীষণ লজ্জা পেল ঈশিতা। ও জানে, আজ রাতে সৌমাভ আসবে, তার সঙ্গেই ও ফিরবে বেলেঘাটার বাড়িতে। সেখানে আজ চার মাস পরে নিজেকে উজার করে দেবে ও। এবং সৌমাভ যে ভাবে চাইবে, সেই ভাবেই দেবে। দরকার হলে আন্দামানের মতো করেই। ওর ভালই মনে আছে, কলকাতায় আসার পরপরই মজা করে আন্দামানের প্রসঙ্গ তোলায় ভয়ঙ্কর ভাবে রিঅ্যাক্ট করে সৌমাভকে ও নিজেই থামিয়ে দিয়েছিল। একটা সাধারণ রসিকতাকে গুরুতর আকার দিয়েছিল ও নিজেই।

শেষ দিন পরীক্ষা দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে সে দিন বাড়ি ফিরতে একটু দেরিই হল ঈশিতার। ফিরে দেখল, বসার ঘরে বাবা-মা-দাদুর সঙ্গে কথা বলছে সৌমাভ। ফাঁকে ফাঁকে গুঞ্জাকে নানা কথা বলছে। বেশ সেজেগুজে আছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এ নিয়ে পরে পিছনে লাগা যাবে মনে করে ও ইশারায় ডাকতেই সৌমাভ ওঠে এল। সৌমাভর হাত ধরে নিজের শোয়ার ঘরে ঢুকে আগে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ওকে বুকে টেনে নিল ঈশিতা। কত দিন পরে নিজের মানুষটাকে এ ভাবে বুকে টানার সুযোগ হল ওর! চোখে জল এসে গেল। ঈশিতাই একমাত্র জানে, শুধু ওর ইচ্ছে এবং চাহিদার কথা ভেবেই নিজের স্বার্থ, সুখ, সুবিধা এমনকি শারীরিক চাহিদাকেও গলা টিপে রেখেছে সৌমাভ। ও সৌমাভকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই জানাল, আজ রাতেই ও ফিরবে বেলেঘাটার বাসায়। এবং সেখানে কী কী করবে বলে প্ল্যান করেছে, সেটাও বলে দিল বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে। কিন্তু ওকে পাল্টা স্তম্ভিত করে সৌমাভ জানিয়ে দিল, আজ রাতের ফ্লাইটে ও দিল্লি চলে যাচ্ছে। দিন পনেরোর একটা ট্রেনিং আছে। এই তিন মাসে বসে না থেকে ডিপার্টমেন্টাল একটা পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে। একটা পদোন্নতিও হয়েছে ওর। তারই ট্রেনিং হবে। সেই সঙ্গেই ঠোঁটের কোণ দিয়ে মুচকি হেসে ঈশিতাকে জানিয়ে দিল, আপাতত বেলেঘাটা নয়, ওকে থাকতে হবে কাঁকুরগাছির এই বাড়িতেই। কারণ ও যতদিনে ফিরবে, ততদিনে টুইন বেবির বয়স পাঁচ মাস পেরিয়ে যাবে। তাই মুখে বড় বড় কথা বলা গেলেও বা কল্পনা করা গেলেও এখনও বেশ কয়েক মাস ও সব কিছুই করা যাবে না। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেই বিষয়টা যে জেনেছে, সেটাও জানিয়ে দিল ঈশিতাকে। বলে ফের মুচকি হাসল। সৌমাভর এই মুচকি হাসির মধ্যে অনেক কথা, অনেক ভাব, অনেক চাপা কষ্ট যে লোকানো, তা বুঝতে অসুবিধা হল না এই কয়েক মাসে বেশ কিছুটা ম্যাচিওর হয়ে ওঠা ঈশিতার। ও মাথা নিচু করে নিল। সেই ফাঁকে আস্তে আস্তে ঈশিতার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ট্রাভেল ব্যাগটা কাঁধে তুলে বড়দের প্রণাম করে গুঞ্জার মাথায় হাত বুলিয়ে একটু আদর করে নীচে নেমে গেল সৌমাভ সরকার, সিনিয়র ফরেস্ট সার্ভে অফিসার।

সম্বিত ফিরে পেতেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল ঈশিতার। এ কী করে ফেলেছে ও! এ সব কিছু তো মাথাতেই রাখেনি, শুধু নিজের কথাই ভেবে গিয়েছে এত দিন! কি ক্ষতি হত এই বছর পরীক্ষা না দিয়ে পরের বছর দিলে? মেজদি বারবার বলা সত্ত্বেও নিজের শরীরের সুখ এবং চোদার নেশায় ভেসে মিনিমাম সাবধানতাও নেয়নি ও। অথচ ও জানত, সৌমাভ, এ সবের কিছুই জানে না। যা করার ওকেই করতে বলেছিল মেজদি। এমনকি সেই মতো ওষুধও দিয়ে এসেছিল ওরই হাতে। সে সব মনে না রেখে রোজ নিজের গুদ ভরিয়েছে সৌমাভর রসে। তাই বিয়ের মাস না পুরোতেই পেটে বাচ্চা এসে গিয়েছে। মনে পড়ল কলেজের বন্ধুদের কথা, বাচ্চাকাচ্চা হলে বিয়ের পরের চোদাচুদির আনন্দটাই নাকি মাটি হয়ে যায়। ওদেরও কী তাই হবে? ওর মনে পড়ল, পেটে সন্তান আসার খবর কনফার্ম হওয়ার পরেই ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে সৌমাভ ওকে এটা নিয়ে ভাবতে অনুরোধ করেছিল। ও সেটা খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে স্রেফ উপেক্ষা করেছিল সে দিন। কি ক্ষতি হত,  ওই মানুষটার কথাগুলো শুনলে, প্রথম পাঁচটা মাস নিজের মানুষটার কাছে থাকলে, তার বুকের মধ্যে মাথা রাখলে, কখনও সখনও সঙ্গে শরীরে শরীর মেলালে? এ বছর পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে নিজের জেদ ধরে রাখতে গিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে এটা ও কী করে ফেলেছে? ওর বাড়ির লোকের না হয় বয়ে গেছে এ সব নিয়ে ভাবতে, ও কেন নিজে ভাবেনি? লোকটার কাছ থেকে দুহাত ভরে এত কিছু পাওয়ার পরেও, এমন বাড়াবাড়ি কেন করতে গেল ও?  

এই সব ভাবতে ভাবতেই টের পেল সৌমাভ তো ঘরে নেই! দ্রুত পায়ে বসার ঘরে গিয়ে দেখল সেখানেও নেই! এবার বারান্দায় এল। দেখল, গুঞ্জা বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে টাটা করছে আর ট্যাক্সির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে সৌমাভ। বারান্দার রেলিং ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল ও। বসার ঘর থেকে দৌড়ে এলেন ওর মা। মেয়ের এমন আচমকা কান্নায় প্রথমে চমকে গেলেও পরে বিষয়টা বুঝলেন তিনি। অনেক কষ্টে তাকে শান্ত করে ঘরে এনে বোঝালেন, এই সময় কান্নাকাটি বাচ্চাগুলোর ক্ষতি করবে। সে দিন রাতে ছোট মেয়ে গুঞ্জাকে নিয়ে ওর পাশেই শুলেন মা।
[+] 11 users Like Choton's post
Like Reply
#45
(30-04-2025, 11:51 AM)Priya. Wrote:
ছোটন প্রথমেই বলতে চাই যে এখন থেকে আমি আপনির বদলে তোমাকে তুমি করে ডাকব। কারণ তোমার লেখনি, তোমার চিন্তাভাবনা ও সর্বোপরি তোমার ন্যায় অন্য্যায় বোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাই তোমাকে আমার নিজের খুব চেনা মানুষ বলে মনে হয়। এতটা একাত্মতা আজ পর্যন্ত এই ফোরামের অন্য কোন লেখক বা লেখিকার গল্পের সাথে অনুভব করিনি।

এবার আসি তোমার পাঠকদের কথায়। তোমার পাঠকেরা যাদের উৎসাহে তুমি এই অনবদ্য গল্পটি শুরু করেছ তারা কেউই তোমার গল্প পড়া বন্ধ করে দেননি। তারা তোমার গল্প পড়ে তাদের কোন রকম প্রসংশা বা মতামত তারা জানাতে পারছেন না কারণ তাদের অধিকাংশের ওপরেই নানারকমের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আজ শুধু ভালো কে ভালো আর খারাপ কে খারাপ বলার কারণে তাদের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছে। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে কোন পুতিগন্ধময় লেখক ও লেখিকা তাদের মৌরিয়সিপাট্টা ভেঙে যাওয়ার ভয়ে তাদের সমাজবিরোধী চ্যালা চামুন্ডাদের দিয়ে এগুলো করিয়েছে তোমার পাঠক ও পাঠিকাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট মেরে মেরে। তাই তোমার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ যে তুমি তোমার পাঠক পাঠিকাদের ভুল বুঝো না, তারা সব সময় তোমার পাশেই আছে, তাদের ভালবাসা ও আশীর্বাদ সব সময় তোমার সাথেই আছে।    

আমি কাউকে কখনও আঘাত বা অপমান না করলেও  কোনও এক পাঁঠা আগের গল্পটায় এসে অনেক কথা বলেছিলো। তখনই বুঝেছিলাম এরা কারা। তবে পাঁঠাদের কথার উত্তর দিয়ে নিজেকে ছোট করিনি। আমার পাঠক কম হলেও তাঁরা আমারই নিজের জন বলে মনে করি।  কে কি লিখবে সেটা তার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা,  নিজের জানা বা অভিজ্ঞতার ফল। তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।  সবাই ভাল থাকুন। 

আর আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন বলায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত।  খুব ভালো থাকুন।
[+] 5 users Like Choton's post
Like Reply
#46
খুব ভালো লাগলো এই পর্যন্ত পড়ে, অসম্ভব ভালো লাগলো। এর পরের অংশ পড়ার জন্যে মুখিয়ে রইলাম।
Like Reply
#47
বাহ বেশ ভালোই লিখছো ছোটন।তোমার লেখা পরে নিজের পুরানো লেখগুলোর কত মনে পড়ছে ১০-১২ বছর কিছুই লিখিনা আর।গো এহেড।
Like Reply
#48
(01-05-2025, 10:04 AM)Choton Wrote: আমি কাউকে কখনও আঘাত বা অপমান না করলেও  কোনও এক পাঁঠা আগের গল্পটায় এসে অনেক কথা বলেছিলো। তখনই বুঝেছিলাম এরা কারা। তবে পাঁঠাদের কথার উত্তর দিয়ে নিজেকে ছোট করিনি। আমার পাঠক কম হলেও তাঁরা আমারই নিজের জন বলে মনে করি।  কে কি লিখবে সেটা তার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা,  নিজের জানা বা অভিজ্ঞতার ফল। তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।  সবাই ভাল থাকুন। 

আর আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন বলায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত।  খুব ভালো থাকুন।

আমিও ভাই আপনাকে গালমন্দ করিনি,তবে আপনি করলেন।
যাই হোক,আমি ওসব কথা আপনাকে বা আপনার লেখার জন্যে বলিনি। বলেছি কিছু পাঠকদের উদ্দেশ্য করে।
যারা জীবনে কখনো রোমান্টিক গল্প পড়েনি তারাই ভাই সব লেখকদের এক কাতারে ফেলে ধুয়ে দিচ্ছে। এটাকি আশ্চর্য নয়?
আর আপনি ভাই যেই ফাঁদে আমায় ফেলার চেষ্টা করছেন তা কাজে দেবে না। জুপিটার ১০ আমার পুরোনো আইডি খুব ভালো ভাবে চেনে,তাকে বা তার পাঠককুলকে নিয়ে আমার অন্ততঃ কোন সমস্যা হবে না।
আর যদি বলেন পাঠক কমের কথা,ওটা ধীরে ধীরে ওঠে। লিখতে থাকুন পাঠক এমনি আসবে।
____________________________
  •°৹৴°【সামিউল】°°
_____________ °°°°°°°°°°°°°°_____________
Like Reply
#49
(01-05-2025, 10:04 AM)Choton Wrote: আমি কাউকে কখনও আঘাত বা অপমান না করলেও  কোনও এক পাঁঠা আগের গল্পটায় এসে অনেক কথা বলেছিলো। তখনই বুঝেছিলাম এরা কারা। তবে পাঁঠাদের কথার উত্তর দিয়ে নিজেকে ছোট করিনি। আমার পাঠক কম হলেও তাঁরা আমারই নিজের জন বলে মনে করি।  কে কি লিখবে সেটা তার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা,  নিজের জানা বা অভিজ্ঞতার ফল। তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই।  সবাই ভাল থাকুন। 

আর আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন বলায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত।  খুব ভালো থাকুন।
(01-05-2025, 12:46 PM)•°৹৴°【সামিউল】°৲৹°• Wrote: আমিও ভাই আপনাকে গালমন্দ করিনি,তবে আপনি করলেন।
যাই হোক,আমি ওসব কথা আপনাকে বা আপনার লেখার জন্যে বলিনি। বলেছি কিছু পাঠকদের উদ্দেশ্য করে।
যারা জীবনে কখনো রোমান্টিক গল্প পড়েনি তারাই ভাই সব লেখকদের এক কাতারে ফেলে ধুয়ে দিচ্ছে। এটাকি আশ্চর্য নয়?
আর আপনি ভাই যেই ফাঁদে আমায় ফেলার চেষ্টা করছেন তা কাজে দেবে না। জুপিটার ১০ আমার পুরোনো আইডি খুব ভালো ভাবে চেনে,তাকে বা তার পাঠককুলকে নিয়ে আমার অন্ততঃ কোন সমস্যা হবে না।
আর যদি বলেন পাঠক কমের কথা,ওটা ধীরে ধীরে ওঠে। লিখতে থাকুন পাঠক এমনি আসবে।

আমার মনে হয় এই ব্যাপারটা ভুলে যাওয়াই ভালো।
[+] 2 users Like Sweet angel's post
Like Reply
#50
(১২)


সৌমাভ ফিরল ১৫ দিন নয়, পাক্কা তিন সপ্তাহ পরে। ওকে একটা ফিল্ড ট্রেনিংয়েও যেতে হয়েছিল। আর একটা অসাধারণ ব্যাপার হয়েছে ওর সঙ্গে। দিল্লিতে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে সৌমাভর জয়েনিংয়ের সময় যিনি ওর বস ছিলেন, সেই প্রমোদ মাথুর প্রমোশন পেয়ে পেয়ে এখন দিল্লিতে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের অনেক উঁচু পদে রয়েছেন। কয়েক মাস পরে ফরেস্টের ডেপুটি চিফ সেক্রেটারিও হয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা বেশি দিনের জন্য নয়। ডিসেম্বরের শেষে তাঁর রিটায়ারমেন্ট। বরাবরই এই মানুষটার খুব প্রিয়পাত্র ছিল সৌমাভ। আরও একটা খবর পেল, ওর আর এক বস, জয়রাজনও এখন দিল্লিতেই। প্রমোদের পরে তিনিই ওই পোস্টে পদে বসবেন। তবে তাঁর মেয়াদ থাকবে তিন বছর। দু’জনেই সৌমাভকে আলাদা করে ডেকে অনেক কথা বললেন। এমনকী জানালেন, কোনও অসুবিধা হলেই যেন সরাসরি তাঁদের জানায়। ওকে সব রকম ভাবে হেল্প করবেন তাঁরা। ও বিয়ে করছে শুনে খুব খুশি দুই প্রৌঢ় জোর করে কিছু উপহারও দিলেন।

এই গোটা সময়টায় চূড়ান্ত ব্যস্ত থাকলেও নিয়ম করে প্রতিদিনই রাতের দিকে ফোন করে কথা বলেছে ঈশিতা এবং ওর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে। দিল্লি থেকে ঈশিতা এবং শ্বশুরবাড়ির সকলের জন্যই বিস্তর কেনাকাটা করেছিল ও। গুঞ্জার জন্যও আলাদা করে অনেক কিছু কিনেছিল। আর নিজের জন্য কিনেছিল একটা দামী টেপ রেকর্ডার। ওর ইচ্ছে, খুব ছোটবেলায় সন্তানরা কী রকম আদোআদো করে কথা বলে, সেগুলো রেকর্ড করে রাখবে। পরে অবসর সময়ে শুনবে। বড় হলে ওদেরও শোনাবে। তা ছাড়া সময় সুযোগ পেলে খালি গলায় নিজের গাওয়া কিছু গানও রেকর্ড করবে। এ সব ভেবেই একটু বেশি দাম দিয়ে জিনিসটা কিনেছিল। টাকা-পয়সা নিয়ে সে রকম ভাবনা ওর চাকরি পাওয়ার পর থেকেই ছিল না। ছ’বছরের বেশি সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরিতে বেশির ভাগ সময়টাই মেসে অথবা অফিসের কোয়ার্টারে কাটিয়েছে। খাবারও খেত প্রায় দিনই অফিস ক্যান্টিনে। জামাকাপড় ইত্যাদির শখ-শৌখিনতাও বিশেষ ছিল না কোনও দিনই। ফলে মাইনের টাকার বড় অংশই জমা করত নানা স্কিমে। বিয়ের পরেও সেটা বিশেষ বদলায়নি। পাশাপাশি কয়েক মাস আগের পে কমিশনের বাড়তি টাকা এবং নতুন প্রোমোশনের দরুন মাইনে বাড়ায় সৌমাভর টাকার অভাব অন্তত ছিল না। ফলে ওই কটা টাকা গায়ে লাগেনি।

কলকাতায় ফিরে আগে নিজের বাসায় ঢুকল। নিজের মালপত্র, নিজের জন্য কেনা রেকর্ডার-সহ বেশ কিছু জিনিস গুছিয়ে রেখে ২১ দিনের ধুলো সাফ করে ঘরদোর একটু গুছিয়ে রান্না করে খেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়িতে গেল। এই তিন সপ্তাহে ঈশিতার অনেক বদল হয়েছে। পেট অনেকটাই উঁচু হয়েছে। এখন বোঝা যাচ্ছে, সে মা হতে চলেছে। এখন হাঁটতে গেলে একটু অসুবিধা হচ্ছে। সৌমাভ দেখল, বাড়িতে শাড়ির বদলে এখন বিশাল ঢোলা জোব্বার মতো ম্যাক্সি পরিয়ে রাখা হচ্ছে তাকে। সবাইকে উপহার দিয়ে, গুঞ্জার জন্য আনা স্পেশ্যাল গিফ্টটা হাতে দিনে কানে কানে কী সব বলল, গুঞ্জা খিলখিল করে হেসে উঠল। তার পর চা-জলখাবার খেয়ে একবার ঈশিতার সঙ্গে ওর ঘরে গেল সৌমাভ। বহু মাস পরে বউয়ের পেটে আলতো করে হাত রেখে, তার পর ম্যাক্সির উপর দিয়েই পেটে কান পেতে শোনার চেষ্টা করল কিছু। তার পর দু’জনে মিলে কিছুক্ষণ গল্প করল। ইশিতা লক্ষ্য করল, সৌমাভর চোখেমুখে একটা প্রচন্ড ক্লান্তি, বিষন্নতা, চাপা কষ্ট যেন ছাপ ফেলেছে। দৃষ্টিতে যেন একটা শূন্যতা। আন্দামানের সেই ঝকঝকে ভাবটা একদম উধাও। শুধু তাই নয়, ওর সঙ্গে কথাও বলছে অনেক কম এবং সেটাও খুব মেপে মেপে। প্রশ্নগুলো মুখে এলেও করতে পারল না ঈশিতা, কারণ ও জানে, এ সবের জন্য ও নিজেই নব্বই ভাগ দায়ী। এই মানুষটাকে ফের একাকীত্বে ডুবিয়ে দিয়েছে ও নিজেই।

এর কয়েক দিন পরে ছিল ঈশিতার জন্মদিন। বিয়ের পরে প্রথম জন্মদিন, কিন্তু ওর শরীরের কথা ভেবে কতটা কী করা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন সকলে। কিন্তু সবাইকে এমনকি ঈশিতাকেও চমকে দিয়ে ওর জন্মদিনের দিন ভোরবেলা এসে ওকে ঘুম থেকে তুলে প্রথম উইশটা করল সৌমাভই। তার পরে হাতে হাজার তিনেক টাকা দিল। গুঞ্জাকেও অনেক আদর করল। তাকেও খামে করে বেশ কিছু টাকা দিল। এ নিয়ে সবাই আপত্তি করলেও সৌমাভ তাতে কানই দিল না। তার পরে বাড়িতে সবার সঙ্গে কথা বলে একটু জল-মিস্টি খেয়ে অফিসে চলে গেল। রাতে খাবার জন্য বাড়ির সকলে ওকে আসতে বললেও ও মুচকি হেসে জানাল, কাজের চাপ আছে, তাই আসতে পারবে না। ঈশিতা ফের বুঝল, নিজেকে অনেক গুটিয়ে নিয়েছে সৌমাভ। এ সেই আগের চেনা লোকটা নয়।

এর দিন কয়েক বাদে গুঞ্জার মাধ্যমিকে রেজাল্ট বেরোল। স্টার পেয়েছে শুধু না, কলেজেও ফার্স্ট হয়েছে! যে মেয়ে বরাবর সায়েন্স গ্রুপে দারুণ নম্বর পেত, এত ভাল রেজাল্টের পরেও সে বাড়ির লোকেদের অবাক করে দিয়ে জানাল, ও জিয়োগ্রাফি নিয়ে পড়বে এবং নিজের কলেজেই পড়বে। ও নিজের কলেজেই অ্যাডমিশন নিল। এরই মধ্যে আবার অসুস্থ হলেন ওদের দাদু। যমেমানুষে দিন কয়েক টানাটানি করে তিনি গত হলেন। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঈশিতার উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোল। ভাল ভাবেই পাশ করেছে ও। শোকের বাড়িতেও ওর রেজাল্টে বেশ আনন্দের হাওয়া বইল। শ্রাদ্ধশান্তি মেটার পরে ওর কলেজে ভর্তির বিষয়টা নিয়ে কথা হল। সেই সঙ্গে ঠিক হল, ঈশিতার ডেলিভারির পরে ওদের রেজিস্ট্রিটা সেরে ফেলা হবে। পরের কয়েক দিন ধরে ওর দিদিরা নানা কলেজ থেকে ফর্ম তুলে আনল। সে সব ফিলাপ করে জমাও দেওয়া হল। সৌমাভ এর মধ্যে ফোন না করায় ওকে কেউ এ সব জানালই না। এমনকি ঈশিতাও না। যদিও ঈশিতার কাছে সৌমাভর অফিসের নম্বর দেওয়া ছিল প্রথম থেকেই। সেখান থেকেই নম্বর নিয়ে ঈশিতার মেজদি টুইন বেবির বিষয়টা সৌমাভকে জানিয়েছিল। কিন্তু ঈশিতা ওই নম্বরে আজ অবধি ফোন করেনি কখনও। লিস্ট বেরোলে দেখা গেল, নিজের পছন্দের কলেজেই বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে ও। একদিন দুই দিদিকে সঙ্গে নিয়ে ট্যাক্সি করে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে ভর্তিও হয়ে এল। সব কাজ সেরে বাড়ি ফিরল। সে দিন রাতে সৌমাভ ফোন করলে ওকে জানাল কথাটা। একটু অবাক হলেও সৌমাভ মুখে শুধু বলল, ‘‘বাহ, খুব ভাল খবর। ভাল করে পড়াশোনা করো, কেমন’’ বলেই ফোনটা রেখে দিল। ঈশিতা বুঝল, সৌমাভকে আগে থেকে এ নিয়ে কিছু না জানানোটা ওরই অন্যায় হয়েছে। যার ফলে মেঘ জমেছে ঈশান কোণে।

জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহেই আচমকা জল ভাঙায় ঈশিতাকে ভর্তি করতে হল চেনা ডাক্তারের নার্সিংহোমে। সেখানেই সিজার করা হল। প্রথমে ছেলে, তার পরে বিস্তর ঝামেলা পুইয়ে বের করা হল মেয়েকে। দু’জনের বয়সের ফারাক হয়ে গেল আড়াই মিনিটের। মেয়েকে বের করতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে গিয়েছিলেন সার্জন। কাগজে-কলমে তখন ঈশিতার বয়স ১৮ বছর আট মাস কয়েক দিন। মা এবং দুই সন্তানের কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় দুই শিশু-সহ ঈশিতাকে আরও কয়েক দিন থাকতে হল নার্সিংহোমেই। বাড়ি ফিরলেও হাঁটাচলা, সিঁড়িভাঙা-সহ একগুচ্ছ নিষেধ চেপে গেল ওর উপরে। ঈশিতার কাজ হল, শুধু সময় করে দুটো বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো, নিজে খাওয়া এবং ঘুমনো।
[+] 9 users Like Choton's post
Like Reply
#51
ধেয়ানে আলোকরেখা


এই সময়টায় সৌমাভর আরও একটা রূপ দেখল সকলে। ঈশিতা ভর্তির দিন থেকে প্রতিদিন সকালে স্নান করে একেবারে রেডি হয়ে নার্সিংহোমে ঢুঁ মেরেই অফিস চলে যেত। সেখানেই লাঞ্চ সারত। সন্ধ্যায় নার্সিংহোমে ঢুকে সব খবর নিয়ে বাসায় ফিরে কিছু খেয়ে ফের নার্সিংহোমে চলে আসত। সারা রাত থেকে ভোরের দিকে ফিরে একটু রেস্ট নিয়ে আবার অফিস। ডেলিভারির আগে-পরে মিলিয়ে টানা পাঁচ দিন ছুটি নিয়েছিল ও। সেই ক’দিনও নানা ছুতোয় বাইরে গিয়ে খেয়ে আসত দুপুরে এবং রাতে। দুই ছেলেমেয়েকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল ৩০ বছরের তরুণ। এতদিন ওর নিজের বলতে কেউ ছিল না। আজ ওর নিজের রক্তের সম্পর্কের এক নয়, দু’দুজন মানুষ এসেছে পৃথিবীতে। নিজের ছেলেমেয়ের প্রথম নামকরণ ও নিজেই করল— ছেলের নাম কুট্টি, আর মেয়ের নাম দিল মুট্টি। ঈশিতার দুই দিদি এবং গুঞ্জা নাম দিল তুতান-পাতান। ছেলে তুতান, মেয়ে পাতান। ঈশিতার মা-বাবা এবং দুই দিদি বাবা-মায়ের সঙ্গে মিলিয়ে ভাল নাম রাখার সিদ্ধান্ত কার্যত একতরফা ভাবেই নিল— ছেলের সৌমদীপ এবং মেয়ের ঈশিকা। একটা জিনিস সবাই দেখল— দুই ভাইবোনেরই পিঠে একই আকারের দুটো ছোট্ট জরুল এবং একই জায়গায়। মেরুদণ্ডের মাঝামাঝি। ডাক্তার বললেন, যেহেতু যমজ, তাই একজনের থাকলে অন্য জনেরও থাকবে, এটা প্রায় স্বাভাবিক। যদিও বহু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও দেখা গেছে।

ঈশিতা নার্সিংহোম থেকে ফিরলে সৌমাভর রুটিনে একটাই বদল হল। নিজের বাসা ছেড়ে টানা দু’মাস রাতে শ্বশুরবাড়িতেই থেকে গেল ও। অফিস থেকেই ডিনার করে আসত আগের মতো। আর ঈশিতার সঙ্গে একই ঘরে থাকলেও ওর বিছানা ছুঁতও না। আলাদা করে সোফায় শুত। ঈশিতা বিষয়টা প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে খেয়াল করে একদিন ওকে খাটে শুতে বলায় সৌমাভ মুচকি হেসে বলেছিল, ‘‘তোমার বিছানায় তুমি আরাম করে শোও। আমার অসুবিধা হবে না।’’ ওর বলার ভঙ্গি দেখে আর এ নিয়ে কথা বাড়ানোর সাহস হয়নি ঈশিতার। ও জানত, সৌমাভ ওই মুচকি হাসি দিয়েই অনেক কথা বলে দিয়েছে। বিশেষ করে ওর এ বাড়িতে প্রথম আসার দিনে ওই বিছানার তিক্ত অভিজ্ঞতা ও যে ভোলেনি, সেটা স্পষ্ট। তাই ‘‘তোমার বিছানায় তুমি আরাম করে শোও’’ কথাটা ওকে মনে করিয়ে দিল। ঈশিতা মাথা নামিয়ে নিল। সৌমাভর চোখে চোখ রাখার সাহসও হল না। কারণ ও জানে, সে রাতে ও সৌমাভকে ঠকিয়েছিল রাহুলের কথা ভাবতে গিয়ে।

হাসপাতাল থেকে ফেরা অবধি ওর দিদিদের কথায় বাচ্চা দুটোকে রাখা হত বিছানার পাশেই একটা বড় মাপের কটে। রাতে বাচ্চাদুটো একসঙ্গে বা আলাদা করে কেঁদে উঠলে ঈশিতা ওঠার আগেই তাদের দু’জনকে একসঙ্গে কোলে তুলে দোল দিয়ে থামানোর চেষ্টা করত সৌমাভ। কোনও কারণে বেশির ভাগ সময় ওর এই কৌশল কাজেও দিত। ঈশিতা প্রায় দিনই ঘুমোত নিশ্চিন্তে। এমনকি পাশের ঘরে থাকা ঈশিতার মা-ও বেশির ভাগ দিন টেরই পেতেন না। একদিন এ সব নিয়ে সবাই মিলে সৌমাভর পিছনে লাগছিল। তার মধ্যেই হঠাৎ ঈশিতার বড়দি প্রশ্নটা করে ফেললেন— সৌমাভ কেন রোজই দুপুরে ও রাতে বাইরে থেকে খেয়ে আসে? আচমকা এমন প্রশ্নে বাড়িতে একটু অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি হলেও সৌমাভ চুপ করেই রইল। কিছুই বলল না। রাতে ঘরে ঢুকে ঈশিতাও ওকে এ নিয়ে বেশ কড়া করেই কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিল। সৌমাভ চুপ করেই রইল। সে দিনও রুটিন মেনেই দুটো ছানাকে কোলে নিয়ে দোল খাওয়াতে খাওয়াতে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজে সোফায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল। সে দিন হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল ঈশিতার। উঠে বসে দেখে, পাশের কটে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে দুটো। কিন্তু সৌমাভ তো ঘরে নেই! বাথরুম থেকে ঘুরে ঘরে ঢুকে বোতল থেকে জল খেতে গিয়ে বহু দিন পরে আবার কানে এল সৌমাভর গলা।

‘‘...যে পথে যেতে হবে
সে পথে তুমি একা,
নয়নে আঁধার রবে,
ধেয়ানে আলোকরেখা....’’

আবার সেই ভরাট গলায় কোথায় যেন মিশে একটা করুণ সুর! ঈশিতার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেই সঙ্গেই মনে পড়ল, সৌমাভ আর ওর সামনে বা ওকে পাশে নিয়ে গান গায় না। আন্দামান থেকে ফেরার পরে এই নিয়ে দু’দিন ও সৌমাভর গান শুনল। দু’বারই রাতের বেলায়, এবং দু’বারই ছাদে একা একা গাইছে সে গান! দুচোখে জল নিয়েই সোফার দিকে পাশ ফিরে বালিশে মাথা রাখল ঈশিতা। ওই অবস্থাতেই টের পেল, একটু পরে নিঃশব্দ পায়ে ঘরে ঢুকে সোফায় এসে শুল সৌমাভ। ঈশিতার চোখে পড়ল, কপালের উপরে হাত রেখে চুপ করে শুয়ে আছে সৌমাভ। রাস্তা থেকে চুঁইয়ে আসা আলোয় ওর যেন একবার মনে হল, সৌমাভর চোখের কোল থেকে জল গড়িয়ে আসছে! সে দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ঘুমিয়ে পড়ল ঈশিতা।


এর মধ্যে দুর্গাপুজো এসে গেল। ঈশিতা এখন অনেক সুস্থ। কলেজেও যেতে শুরু করেছে। গোবলুগাবলু দুটো জ্যান্ত পুতুল নিয়ে বাড়িতে সারাদিন হইহই লেগেই আছে। গুঞ্জা তো সময় পেলেই চটকে দেয় দুটোকে। মা হলেও ঈশিতার একটু যেন বেশি টান ছেলে অর্থাৎ কুট্টির উপরে। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আগে কুট্টিকে কোলে নেয় ও। যদিও ছেলেমেয়েকে বুকে জড়িয়ে ঘুমনোর অভ্যাসটা ওর তৈরিই হয়নি। তবে এখন দু’জনকে কখনও সখনও একসঙ্গে কোলে নিয়ে হাঁটতে ওর বিশেষ অসুবিধা হয় না। সৌমাভর তো কোনও দিনই হয়নি, সেটা ও দেখেছে খেয়াল করে। ওর সেলাই কাটা হয়েছে অগস্টের প্রথম সপ্তাহেই। তার পর থেকে টানা একাধিক মলম এবং ঘরোয়া টোটকায় পেটের দাগ অনেকটাই হাল্কা হয়েছে। এর দিন সাতেক পর থেকে ডাক্তারের পরামর্শে টানা হাল্কা ব্যায়াম আর নিয়মিত হাঁটার ফলে ডেলিভারির সময়কার বাড়তি মেদ প্রায় সবটাই ঝরে গেল। পাশাপাশি প্রথম কয়েক সপ্তাহ কামাই হলেও ও এখন কলেজেও প্রায় নিয়মিত যায়। নতুন ক্লাস, কলেজের কয়েক জন পুরনো বন্ধুর সঙ্গে যোগ হল নতুন বন্ধুবান্ধবও। সব মিলিয়ে ও যেন পুরনো জীবন ফিরে পেল। অল্প দিনের মধ্যেই ওর কথা বলার ভঙ্গি, সুন্দর গানের গলা, ভাল রেজাল্ট এবং নিজের ব্যবহারের গুনে ক্লাসেও বেশ জনপ্রিয়তা পেল। এখনও নিয়ম মতোই রোজ রাতে সৌমাভ অফিস থেকে চলে আসত ওদের বাড়িতে। একটা জিনিস ঈশিতা এবং ওর বাড়ির লোকেরা লক্ষ্য করল। এমনিতে সারাদিন যতই কান্নাকাটি করুক, বাবাকে দেখলে বা বাবার কোলে উঠলে একদম শান্ত হয়ে যায় দুই ভাইবোনে। কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েও পড়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে। ঈশিতার মা বুঝলেন, রাতের পর রাত একসঙ্গে দু’জনকে কোলে নিয়ে বা কাঁধে নিয়ে সৌমাভ যে ঘুরত, আদর করত, ঘুম পাড়াত, এ তারই ফল। মায়ের থেকেও বাবাকে বেশি চিনে গেছে শিশুদুটো। তিনি মেয়েকেও বললেন সে কথা। সব শুনে দিদিরা বলল, নিজের ছেলেমেয়েকে অন্তত কোলে নিয়ে শোয়ার অভ্যাসটা এ বার তৈরি কর আস্তে আস্তে। ওই রকম শান্তি খুব কম মেলে রে, এ সুযোগ হারাস না।

পুজো এল চলেও গেল। পুজোয় শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য কী কিনবে ভেবে না পেয়ে ঈশিতার হাতে একগোছা টাকা ধরিয়ে বলল, প্লিজ তুমি সবার পছন্দমতো কিনে দিও, আমি এ সব তো বুঝি না। তবু ঈশিতা জোর করায় একদিন গিয়ে ওর জন্য দু’টো ম্যাক্সি কিনল একগাদা টাকা দিয়ে! ওর কেনাকাটার বহর দেখে সবাই খুব হাসাহাসি করল। পুজোয় ঘোরার জন্য ঈশিতা আর গুঞ্জার হাতে আলাদা করে টাকাও দিল। পুজোয় দু’দিন ও বাড়িতে গিয়ে ঈশিতা, দুটো বাচ্চা এবং গুঞ্জাকে নিয়ে বেশ কয়েকটা প্যান্ডেলে ঘুরল। টুকটাক খেলও সবাই মিলে। বাড়ির লোকেদের জন্যও খাবার কিনে আনল ওই দু’দিন। কলকাতার পুজো সেই অর্থে ওর এবারই প্রথম দেখা। তার পর পুজো মিটতেই সৌমাভ ফিরল পুরনো রুটিনে। অনেক দিন অফিসের কাজে ফাঁকি পড়েছে, এ বারে সব সেরে ফেলতে হবে। না হলে কপালে দুর্ভোগ আছে। ছেলেমেয়ের বয়স এখন তিন মাস প্রায়। ঠিক করল আর মাসখানেক বাদে ওদের নিয়ে বেলেঘাটার বাড়িতে ফিরবে। এই সময়টুকু বাপের বাড়ি থেকে কলেজ করলে ঈশিতা আরও একটু সুস্থ হয়ে উঠবে। তা ছাড়া কুট্টি-মুট্টিও একটু বড় হবে। পুজোর সময় থেকে দুই ভাইবোনের প্রচুর ছবি তুলতে শুরু করেছিল সৌমাভ। ঈশিতারও বেশ কিছু মুহূর্তের ছবি তুলে রেখেছিল। বেলেঘাটার বাসায় ফিরে সব গোছগাছ করে নিজের কাজের মধ্যে ডুবে গেল। অফিসের বকেয়া প্রায় সব কাজই সেরে ফেলল হপ্তাখানেকের মধ্যে। প্রচন্ড ঠান্ডা মাথা, দ্রুত চিন্তা করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং একাগ্রতা— এই তিনটে গুণই ওকে এত অল্প বয়সে অন্যদের তুলনায় উঁচু পদে বসিয়েছে। সেটা ও নষ্ট হতে দেবে না কোনও ভাবেই। এই সময়ে ওর পাঠানো দুটো প্রোজেক্ট রিপোর্ট দিল্লিতেও প্রশংসা পেল। প্রমোদ স্যার এবং জয়রাজন স্যার, দু’জনেই আলাদা করে ফোন করে বিস্তর প্রশংসা করলেন। মাথুর স্যার বললেন, ‘‘ডিসেম্বরের শেষে আমার রিটায়ারমেন্ট। এটা দেখে শান্তি পাচ্ছি, তুই অনেক দূর যাবি।’’ ফোন রাখার আগে আবারও পইপই করে যে কোনও দরকারে ফোন করার হুকুম অবধি জারি করলেন প্রৌঢ় আমলা। বললেন, ‘‘মনে রাখিস এটা আমার অর্ডার। তোর রিকোয়েস্ট প্রসেস করতে আমার বড়জোড় একঘণ্টা লাগবে, এটা তোকে বলে দিলাম। ভুলিস না।’’
[+] 11 users Like Choton's post
Like Reply
#52
খুব সুন্দর হচ্ছে, চালিয়ে যাও।
Like Reply
#53
দারুণ হচ্ছে
Like Reply
#54
বাঃ খুব সুন্দর আপডেট, পড়ে খুব ভালো লাগলো। এর পরের আপডেটের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
Like Reply
#55
খুব সুন্দর আপডেট। এই গল্পটা xossipy তে বাংলা গল্পের ইতিহাসে একটা চিরকালীন ক্লাসিক হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। 

আরেকটা বিষয় যা এই গল্পটাকে এই ফোরামের আর পাঁচটা গল্পের থেকে আলাদা করে তুলেছে সেটা হল স্বামী স্ত্রীয়ের মধ্যের সম্পর্কের টানাপোড়েনের অনবদ্য বিবরণ। স্বামী মনে মনে তার স্ত্রীয়ের প্রতি অভিমান নিয়েও তার সমস্ত দ্বায়িত্ব কর্তব্য পালন করে চলেছে আর স্ত্রীও সেটা বুঝতে পেরে নিজেকে দোষী মনে করে চোখের জল ফেলছে। এই ফোরামের ধারা অনুযায়ী স্বামীর সাথে সামান্য দূরত্ব তৈরি হতেই উলঙ্গ হয়ে পরপুরুষের বিছানায় উঠে পড়ছে না। এই জন্য ছোটনকে কুর্নিশ জানানো যেতেই পারে। 

চালিয়ে যাও ছোটন দুর্দান্ত হচ্ছে। পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে বসে আছি।   
[+] 5 users Like Priya.'s post
Like Reply
#56
(১৪)


জন্মদিনের মুখর তিথি


অক্টোবরের শেষ দিকে কালীপুজোর দিনই প্রবল জ্বরে পড়ল সৌমাভ। ঘটনাচক্রে সে দিনটাই ওর জন্মদিন। যদিও জন্মদিন পালন কাকে বলে, ছোটবেলায় মা হারানো সৌমাভ তা জানত না। তবে আন্দামানে থাকাকালীন ঈশিতার চাপাচাপিতে ওকে কথাটা বলেছিল একবার। ওই অবধিই। গুঞ্জাও একবার জেদাজেদি করে ওর জন্মদিনটা জেনেছিল। তবে গুঞ্জাকে ও মানা করেছিল, কাউকে দিনটার কথা না বলতে। গুঞ্জা সে কথা রেখেছিল। তাই এবারও ওর জন্মদিনটা কেটে গেল বহু বছরের মতোই, নীরবে, নিভৃতে। দু’দিন প্রায় জ্ঞান রইল না জ্বরের তাড়সে। টানা পরিশ্রম এবং রাতের পর রাত জাগা ওকে ভিতরে ভিতরে কাহিল করে দিয়েছিল অনেক দিন ধরে। একটা মানসিক যন্ত্রণাও ওকে ভিতরে ভিতরে অনেকটা ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু কাউকেই কিচ্ছু বুঝতে দেয়নি ও। কেউ বোঝেওনি, এমনকি ঈশিতাও না। আসলে বহু বছর ধরে একা থাকার জীবন ওকে নিজেকে আড়াল করতে শিখিয়েছিল। নিজের কষ্টের জন্য কাউকে বিব্রত করতে বা অসুবিধায় ফেলতে বা কারও সহানুভূতি পেতে মন চাইত না ওর। বিয়ের পরে একমাসের জন্য ঈশিতাকে কাছে পেলেও কলকাতা আসা ইস্তক সেই পুরনো একাকীত্বের জীবনেই ফিরতে হয়েছে ওকে। খারাপ লাগলেও সেটা নীরবে মেনে নিয়েছিল। পাশাপাশি ঈশিতার ব্যবহারে প্রবল বদলটাও ওকে কোথাও ধাক্কা দিয়েছিল। তাই বাপের বাড়ি যাওয়ার পর থেকে যে ক’বার ঈশিতার সঙ্গে সৌমাভর কথা হয়েছে, ও পুরনো ঈশি ডাক ছেড়ে ঈশিতাই বলা শুরু করেছে। সকলের সামনে তো বটেই, আলাদা করে কথা বলার সময়েও। কিন্তু সৌমাভর ডাকের এই বদল ঈশিতা খেয়ালই করেনি! সব দেখেশুনে আবার নিজের পুরনো জীবনেই ফিরে গিয়েছিল মানসিক ভাবে। এই গুরুতর অসুস্থতার কথাও যথারীতি কাউকেই জানাল না। কিন্তু পরপর চার দিন না ওর কোনও ফোন বা ও নিজে না আসায় ঈশিতার বাড়ির লোক কিছুটা উদ্বেগে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত ঈশিতার বড় জামাইবাবু ওর অফিসে ফোন করে জানলেন, তিন দিন ধরে সৌমাভ অফিসে যায়নি। তিনি কথাটা কাউকে বললেন না, শুধু নিজের ভায়রাকে ছাড়া। চার দিনের দিন দুপুরে ঈশিতার দুই জামাইবাবু বেলেঘাটার ফ্ল্যাটে গিয়ে বিস্তর দরজা ধাক্কিয়ে ওকে যখন তুললেন, দেখে চমকে গেলেন। তাঁদের দেখা এক বছর আগের সেই ঝকঝকে, চনমনে ভাব চলে গিয়েছিল আগেই। সেটা ঈশিতা সামান্য খেয়াল করলেও এ নিয়ে কথা বাড়ায়নি। বলা যায় সাহস পায়নি নিজে ধরা পড়ে যাবে, এই ভয়ে। কারণ একমাত্র ও নিজেই সত্যিটা জানে আর এটাও জানে, সৌমাভও সেটা ধরে ফেলেছে বহু আগেই। আর ওর বাড়ির লোকেরা কেউ খেয়ালই করেনি। এ বারে তাঁরা দেখলেন দুর্বল, শীর্ণ একটা লোক! চমকে উঠলেন দু’জনেই। ওঁরা দু’জনেই বিস্তর জোরাজুরি করে ও বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে জোর গলায় আপত্তি জানাল সৌমাভ। স্পষ্ট জানিয়ে দিল, এই অবস্থায় ও বাড়িতে গিয়ে ঈশিকাকে, বাচ্চাদুটোকে বা ঈশিতার বাবা-মাকে সমস্যায় ফেলবে না। আগামী সপ্তাহ থেকে আবার যাবে, আগের মতো। একই সঙ্গে দু’জনকে অনুরোধ করল, ওর শরীর খারাপের কথা যেন আপাতত কেউ জানতে না পারে। ওর কথার মধ্যেকার দৃঢ়তা দেখে থমকে গেলেও কথা রাখবেন বলে জানালেন দুই জামাইবাবুই। একই সঙ্গে বুঝলেন, প্রায় একবছর আগে তাঁদের দেখা ঝকঝকে তরুণ ফরেস্ট অফিসারটি অনেক বদলে গেছে। শরীরের দিক থেকে তো বটেই, মনের দিক থেকেও। সেই চনমনে, ঝকঝকে, রসিক ছেলেটা কোথাও যেন হারিয়ে গেছে।
[+] 7 users Like Choton's post
Like Reply
#57
(১৫)


নতুন করে পাব বলে

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিক থেকে আবার কাঁকুরগাছির বাড়িতে যেতে শুরু করল সৌমাভ। এই ক’দিনে চেহারা বিশেষ না ফিরলেও সেই রুগ্ন দশাটা কেটেছে। তাই ঈশিতা তো বটেই, বাড়ির অন্য কেউও অনেকেই বুঝতে পারল না কী হয়েছিল। একফাঁকে গুঞ্জা ওকে ফাঁকা পেয়ে কানে কানে ‘বিলেটেড হ্যাপি বার্থডে’ বলে একগাদা চকোলেট গুঁজে দিল পকেটে। ও পাল্টা গুঞ্জার হাতে আবার বেশ কিছু টাকা দিয়ে বলল, ‘‘তোর বন্ধুদের নিয়ে একদিন কোথাও খেয়ে আসিস বা তোর কোনও দরকারি জিনিস মনে হলে, কিনে নিস।’’ এই ক’দিনে বাবাকে না দেখে প্রায় সারাক্ষণ কেঁদে যাওয়া কুট্টি-মুট্টি আবার আগের ফর্মে ফিরল। বাবার কোলে উঠলেই কান্না বন্ধ, দুর্বোধ্য ভাষায় বকবক এবং কিছুক্ষণ পরে ঘুম। ঈশিতার মুখ থেকেই সৌমাভ জানতে পারল, ইদানিং ঈশিতার বুকে দুধ একটু কম আসছে। তাই ডাক্তারের পরামর্শে প্রায় চার মাস হতে চলা কুট্টি-মুট্টিকে গত এক সপ্তাহ ধরে সকালে ও রাতে কৌটোর দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। দুপুরে এবং সন্ধ্যায় বুকের দুধ দেওয়া হচ্ছে। একবার দুই ভাইবোনে টেনে খালি করে দিলে দুধ জমতে সময় লাগছে। সৌমাভ কিছু বলল না, একটু মুচকি হাসল মাত্র। ঈশিতা বুঝল, কিছু একটা বলতে গিয়েও চেপে গেল সৌমাভ। এও বুঝল, গত এগারো মাসে বিপুল বদলে গেছে তার প্রথম দেখা সেই পুরনো, রসিক, উচ্ছল, ঝকঝকে, চনমনে মানুষটা। কথায় কথায় গান গেয়ে ওঠা লোকটা এই ক’মাসে একদিনও ওর সামনে গুনগুনও করেনি! শুধু তাই না, লোকটার চোখ-মুখ-শরীর কত খারাপ হয়েছে, বদলে গেছে। রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। নিজেকে ফের প্রচন্ড অপরাধী মনে হল ওর। এই এত কিছুর জন্য যে ও নিজেই পুরোটা দায়ী, সেটা মনে করে সে দিন সৌমাভ ফিরে গেলে রাতে মায়ের কাছে এ সব কথা বলতে বলতে অনেকক্ষণ কাঁদল ও। তার পরেই মাকে বলল, ও বাড়িতে ফিরে যে করেই হোক আর যত কষ্টই হোক, এই লোকটাকে আবার আগের মতো করে তুলবেই ও। তার জন্য দরকারে কলেজে যাওয়া বন্ধ রাখবে কয়েক মাস। এই সব কথা বলার ফাঁকে একবার ওর মনে হল, গুঞ্জার মুখে কেমন যেন একটা ব্যঙ্গের হাসি। কারণটা তখনই জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা হলেও ঠিক করল, পরে জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু কলেজ নিয়ে নানা ব্যস্ততায় ভুলে গেল সে কথা।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে অবশেষে কাঁকুরগাছির পাট চুকিয়ে দুই সন্তান নিয়ে বেলেঘাটার ফ্ল্যাটে ফিরল ঈশিতা। যে দিন এল, তার দু’দিন পরেই ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী থাকলেও ঈশিতা কলেজের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সেটা আর এ বার পালন হল না। ওর বাড়ির লোকেরও মনে পড়ল না এই ক’দিনের মধ্যে! ঈশিতা ও বাড়ি থেকেই বলতে বলতে এসেছে, কলেজের এই অনুষ্ঠানটা ওর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার একটা বড় ভার ঈশিতার উপরেই। দু’দিন গান তো গাইতেই হবে, সেই সঙ্গে কবিতাও পড়তে হবে। কোনও রকমে রাতে খেয়ে সে সব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত ও। প্রথম দু’দিন খাওয়াদাওয়ার পরে সৌমাভ শোয়ার ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও ‘এখন না প্লিজ, কয়েকটা জিনিস দেখার আছে’ বলার পরে সৌমাভ আর রাতে খাওয়ার পরে ওই ঘরে ঢুকত না। সোজা স্টাডিতে চলে যেত। ঈশিতাকে এ বাড়িতে ফিরেও এত ব্যস্ত দেখে সৌমাভ ওর সঙঅগে বেশি কথাও বলত না। বেশির ভাগ দিনই দুই শিশুকে কৌটোর দুধ গরম করে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে কটে শুইয়ে কিছুক্ষণ ওদের উপর নজর রাখত। তার পরে স্টাডিতে চলে যেত। একটু পরে এসে ঘুমিয়েও পড়ত সারা দিনের ক্লান্তিতে। দেখত ঈশিতা ঘুমিয়ে আছে। হয়তো ও স্টাডিতে যাওয়ার পরপরই শুতে চলে আসত। সৌমাভ কিছু না বলে অন্য পাশএ শুয়ে পড়ত নিঃশব্দে।

অনুষ্ঠানের দিন ভোরে ঘুম ভাঙল ঈশিতার। এমনিই আজ থেকে কলেজে অনুষ্ঠান, তাই অ্যালার্ম দিয়েই রেখেছিল। টের পেল টয়লেটের চাপ, সঙ্গে তলপেটে একটা অস্বস্তি। উঠে বসে দেখল, দুই ছানা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। তাদের বাপও। বাথরুমে গিয়ে কমোডে বসে টয়লেট করতে করতেই বুঝল, ওর পেটটা খারাপ হয়েছে। কলেজে রোজ বাইরের হাবিজাবি খাওয়া থেকেই হয়ত। ও তাড়াতাড়ি বাইরে এসে একটা ওষুধ খেয়ে নিল। ইস, আজ থেকেই কলেজে অত বড় অনুষ্ঠান, অত চাপ, আর আজই পেটটা ভোগাতে শুরু করল? ও মন খারাপ করে বাইরে সোফায় গিয়ে বসে রইল।

সকালে ছেলেমেয়ের কান্নায় সৌমাভর ঘুম ভাঙল। ওদের তুলে ঈশিতাকে ডাকতে গিয়ে দেখল, চুপচাপ বাইরের ঘরের সোফায় বসে আছে ও। তিনজনকে দেখে একটু চমকে উঠে তাড়াতাড়ি ম্যাক্সির বোতাম খুলে এক এক করে দু’জনের মুখে নিপল গুঁজে সৌমাভর দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে বলল, ‘‘আমার না আজ পেটটা একটু গোলমাল করছে, তবে ওষুধ খেয়েছি। এ দিকে কলেজেও যেতেই হবে। টানা অনুষ্ঠান আছে, অনেক দায়িত্ব জানো? তবে তার পরে দিন কয়েক ছুটি নেব।’’ সৌমাভ কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে স্টাডির বাথরুমে ঢুকে গেল ফ্রেস হতে। সেই মুচকি হাসি দেখে ফের নিজের কাছেই নিজে ছোট হয়ে গেল ঈশিতা। সৌমাভর সেই হাসির মধ্যেই অনেক না বলা কথা যে লুকিয়ে আছে, তা ভালই বুঝতে পারল ও। মাথাটা নামিয়ে নিল। ওর কানে এল আশপাশের কোনও বাড়িতে বা দোকানে কোথায় যেন রেডিও বা টেপ রেকর্ডারে বাজছে,

‘‘যে পথ দিয়ে চলে এলি,
সে পথ এখন ভুলে গেলি রে,
কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে
মন, মন রে আমার।’’

লাইনগুলো কানে আসতেই ঈশিতা যেন চমকে উঠল! ও তো এটাই করেছে! কোন পথে আবার ফিরবে সৌমাভর মনের বদ্ধ দ্বারে? ওর ভিতরটা যেন কীসের একটা অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠল।

ওর মনে পড়ে গেল, পাঁচ-ছয় দিন আগে এই বাড়িতে নিজের সংসারে ফিরেছে ও। প্রায় এগারো মাস পরে। অথচ এই ক’দিনে একবারও সৌমাভর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া বা চোদাচুদি করা তো দূর, তাকে একবার জড়িয়ে পর্যন্ত ধরেনি! কলেজ নিয়েই মেতে থেকেছে। বাড়ি ফিরে যে একটু ফ্রি মাইন্ডে সৌমাভকে কাছে টেনে নেবে, সে উপায়ও রাখেনি নিজেই। এখনও অন্তত তিন-চার দিন ওর এই চাপ যাবে। সারাদিনের ওই ঝামেলার পরে আর সৌমাভর সঙ্গে জড়াজড়ি করার ইচ্ছেটাও থাকে না ওর। বাপের বাড়িতে থাকার সময় এ বাড়িতে ফিরে ও কী কী করবে, সেটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল দু’জনের শারীরিক ঘনিষ্ঠতা ফিরিয়ে আনাকে। যদিও এই জাতীয় ভাবনার কথা আগেও বহুবার নিজেকেই নিজে দিয়েছিল কিন্তু কোনওবারই নিজেই মনে রাখেনি, সেটাও ওর মনে পড়ে গেল। ওর মনে পড়ল, সৌমাভ আন্দামানে থাকাকালীন একবার ওকে সি-বিচে নিয়ে হাঁটতে বেড়িয়ে একথা সেকথার ফাঁকে বলেছিল, ‘‘জানো ঈশি, ছোট থেকে হোস্টেলে থেকে একটা সমস্যা আমার হয়ে গেছে। জোর করে বা কেড়ে কারও জিনিস আমি নিতে পারি না। কেউ স্বেচ্ছায় না দিলে আমি না খেয়ে থাকব, তবু চাইব না বা কেড়ে নেব না।’’

ঈশিতার বারবার নিজের প্রতিটা কাজ বিশ্লেষন করে বুঝতে পারল, ও কলকাতায় ফিরে অবধি সৌমাভকে এতদিন নানা ভাবে একরকম ঠকিয়েছে, এখনও ঠকাচ্ছে। বঞ্চিত করছে তার প্রাপ্য থেকে। এবং সবটাই ওর নিজের ভুলে, নিজের দোষে, নিজের জেদে। নিজের দিকটা দেখতে গিয়েই এ সব ও করে চলেছে এই প্রায় এক বছর ধরে। বাইরের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ আন্দামানের কথা মনে পড়ল ওর। সেখানে কত দিন এই রকম সকালবেলায় উদ্দাম চুদত ওরা। মনে মনে নিজের গালেই একটা থাপ্পড় কষাতে ইচ্ছে হল ঈশিতার। কেন যে আন্দামান থেকে চলে এল? তার থেকেও বড় কথা কেন তখন মেজদির দেওয়া ওষুধগুলো খায়নি? কেন এখানে এসে প্রথম পাঁচ মাস সুযোগ থাকলেও সৌমাভর কাছে থাকার বদলে বাপের বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? কবে যে আবার ওই দিনগুলো ফিরবে ওদের? আদৌ ফিরবে? মনটা কেমন যেন করে উঠল ওর।

কিন্তু কিছু করারও নেই এখন। তাই সকালেই স্নান করে সেজেগুজে সৌমাভর তৈরি করা ভারী জলখাবার খেয়ে কলেজে চলে গেল। আগে থেকে বলা থাকায় ওর মা একটু বেলার দিকে নাতিনাতনিকে সামলাতে এলে সৌমাভ অফিসে গেল। এই ক’দিনই ঈশিতা ফিরল সন্ধ্যা পার করে।  শেষ দিন ও আনন্দে নাচতে নাচতে ঘরে ঢুকে মাকে দেখাল, ওর এই ক’দিনের পারফরমেন্সে খুশি হয়ে ওর দুই যমজ ছানার জন্য দুটো প্রমাণ সাইজের মানুষ পুতুল উপহার দিয়েছে বন্ধুরা। ল্যাংটোপুটু দুটো পুতুল, যেমন খুশি কাপড় পরাও। মাথাভর্তি চুল। একঝলকে দেখলে মানুষের বাচ্চাই মনে হয়। শুধু একটু মাপে ছোট এই যা। সব মিলিয়ে ঈশিতা একেবারে আল্হাদে আটখানা। জানাল, কাল-পরশুও ওকে কলেজে যেতেই হবে। একগাদা ক্লাস আছে, যেগুলো অ্যাটেন্ড না করলেই নয়।
[+] 9 users Like Choton's post
Like Reply
#58
(১৬)

পরান লয়ে কী খেলা

সেদিন সৌমাভ অফিস থেকে ফেরার পরেই নিজের অনুষ্ঠান নিয়ে বকবক করে সবার কান ঝালাপালা করে দিল ও। সেই দুটো পুতুলও দেখাল। রীতিমতো চমকে গেল সৌমাভও। অবিকল মানুষের বাচ্চার মতো সাইজ পুতুল দুটোর। নিশ্চয়ই বিদেশি। ঠিক করল, ও নিজে পরে একদিন নিউমার্কেট থেকে চুপিচুপি এই রকম আরও দুটো পুতুল এবং খেলনা কিনবে কুট্টি-মুট্টিদের জন্য। এদিকে ঈশিতার হল্লার চোটে ভ্যাঁ ভ্যা করে কেঁদে উঠল বাচ্চাদুটো। অবস্থা দেখে কোনও রকমে অফিসের জামাকাপড় ছেড়ে হাতমুখ ধুয়েই ছেলেমেয়েকে কোলে নিয়ে চুপ করাল সৌমাভ। এমনকি ঈশিতা কলেজের কাপড়জামা না ছেড়েই কলেজের অনুষ্ঠান নিয়ে মায়ের সঙ্গে বকবক করে যাচ্ছে দেখে, রোজকার মতোই কৌটোর দুধ গরম করে খাইয়েও দিল দুটোকেই। এই ক’দিন শাশুড়ি আসবেন এবং ঈশিতার পক্ষে সারাদিনের পরিশ্রমের পরে রান্না করা কঠিন বুঝে আগে থেকেই বাইরের খাবার কিনে আনত ও। আগে হলে নিজেই রান্না করে নিত, কিন্তু জ্বরের পর থেকে শরীরটা বেশ কাহিল হয়েছে। তাই এখন কিনেই আনে। সেটা খেয়ে শ্বাশুড়ি চলে যেতেন। শেষ দিন মা চলে যাওয়ার পরে আরও কিছুক্ষণ বকবক করে ঈশিতা জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেস হতে বাথরুমে ঢুকল। আর বাচ্চাদুটো ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে সৌমাভ ঢুকে গেল স্টাডিতে।

বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে সৌমাভরই কেনা একটা নতুন ম্যাক্সি পরে শোয়ার ঘরে ঢুকে থমকে গেল ঈশিতা। কখন যে দুটো বাচ্চা বোতলের দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, ও সেটা খেয়ালই করেনি? মনে পড়ল, আজও সারাদিন ও বাচ্চাদুটোকে বুকের দুধ খাওয়ায়নি! এমনকি বাড়িতে ঢুকেও বাচ্চাদের কথা না ভেবে নিজের গল্প করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল! সৌমাভ বাড়ি ঢোকার পরেও সেই গল্পই করেছে সারাক্ষণ। কিন্তু সৌমাভ গেল কোথায়? দ্রুত বসার ঘর পেরিয়ে স্টাডিতে ঢুকে দেখল, নিবিষ্ট মনে কোনও একটা ফাইলে চোখ বোলাচ্ছে সৌমাভ। কিন্তু আগের মতো কাজের ফাঁকে ফাঁকে গুনগুনিয়ে উঠছে না! এই লোকটা ওর একদম অচেনা। অথচ এই লোকটাকে আবার আগের মতো করে তুলবে, দিন কয়েক আগেই নিজের মায়ের কাছে এবং নিজের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিল। আর ঠিক তখনই বাড়ির ল্যান্ডফোনটা করকর করে বেজে উঠল। চমকে গেল ঈশিতা। এ বাড়িতে ফোন, আর ও জানে না?

এ বাড়িতে আসার পরপরই ফোন নেওয়ার কথা এবং তার অ্যাপ্লাই করার কথা ঈশিতা জানত। ইনফ্যাক্ট ফোনের অ্যাপ্লিকেশনটা ওকেই সৌমাভ দিয়েছিল ফিলাপ করতে, যাতে ও শিখতে পারে এগুলো। কিন্তু গত কয়েক মাসে সেই ফোনের ব্যাপারে ও একবারও সৌমাভর কাছে কিছুই জানতে চায়নি। এমনকি ও কী খায়, রান্না করে কি না, জাতীয় সাধারণ সাংসারিক কথাও জানতে চায়নি একদিনও। তাই জুন মাসে এই বাড়িতে ফোন এলেও এতদিন ও ঈশিতাকে বা তার বাড়ির লোকেদের সে কথা জানায়ওনি। শুধু গুঞ্জা জেনেছিল। কিন্তু ও গুঞ্জাকে প্রমিস করিয়েছিল যে, সে যেন কাউকে না বলে। গুঞ্জা সে কথা রেখেছে। সচরাচর ওর অফিসের ফোন বাড়িতে আসে না। গত কয়েক মাস ধরে এই ফোন তেমন ব্যবহারও হয়নি। তবে অফিসের কয়েকজন সিনিয়ারকে এর নম্বরটা দেওয়া ছিল। তাঁদেরই একজন ফোন করেছেন। কয়েকটা দরকারি কথা বলে তিনি ফোন রাখতেই এবারে ঝামটে উঠে পাল্টা আক্রমণের পথে গেল ঈশিতা। সরাসরি সৌমাভর চোখে চোখ রেখে কিছুটা ঝাঁঝালো গলায় বলল, ‘‘বাড়িতে ফোন এসেছে, এ কথাটা আমাকে একবার জানানোরও প্রয়োজন মনে করলে না?’’ সৌমাভ ততধিক শান্ত গলায় বলল, ‘‘কলকাতায় আসার পরে এই ফোনটার ফর্ম তুমিই ও ঘরে বসে ফিলাপ করেছিলে, মনে আছে ঈশিতা? গত এগারো মাসে একবারও জানতে চেয়েছো, ফোনটার কানেকশন দিয়েছে কি না?’’ এই বারে নিজের গত এগারো মাসের ভুলগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে গেল ঈশিতার কাছে। সেই সঙ্গে বুঝল, নিজের ভুলেই সৌমাভর মনে ও অভিমানের পাহাড় তৈরি করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, ওদের মধ্যে আন্দামানের সেই নিবিড় ব্যাপারটাই আর নেই। এবং এর জন্য অন্য কেউ নয়, একমাত্র ও নিজেই দায়ী। এটাও খেয়াল করল, সৌমাভ আগের সেই ঈশি ডাক ছেড়ে ওকে প্রথম পরিচয়ের সময়কার ঈশিতা বলেই ডাকছে। তখনই চমকে উঠল আর একবার। সত্যিই তো, গত এগারো মাসে একবারও তো সৌমাভ ওকে ঈশি বলে ডাকেনি! মাথা নিচু করে স্টাডি থেকে বেরিয়ে বেডরুমে ঢুকে বিছানায় পড়ে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল ও। সেই কান্নার আওয়াজে কুট্টি-মুট্টি জেগে উঠতেই ও কান্না থামিয়ে কুট্টিকে কোলে নিতেই দু’জনের জোড়া চিৎকার শুরু হল। এ বারে স্টাডি থেকে এসে প্রথমে কট থেকে মুট্টিকে এবং তার পরে ঈশিতার কোল থেকে কুট্টিকে নিল সৌমাভ। দু’জনের মাথা নিজের দুই কাঁধে রেখে হাল্কা দোলা দিতেই ঈশিতাকে আবারও অবাক করে দিয়ে দু’জনেই থেমে গেল প্রায় একসঙ্গে। ওই অবস্থাতেই সৌমাভকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল ঈশিতা। ‘‘প্লিজ, প্লিজ, তুমি আমাকে ক’টা দিন সময় দাও, আমি কথা দিচ্ছি...’’ কাঁদতে কাঁদতে বলা ঈশিতার কথা মাঝখানে থামিয়ে সৌমাভ খুব নরম গলায় বলল, ‘‘ঈশিতা, আজ তুমি ক্লান্ত। এখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। কাল কথা হবে, কেমন?’’ বলে কুট্টি-মুট্টিকে ফের কটে সাবধানে শুইয়ে ঘর ছাড়তেই ওর উপরে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল ঈশিতা। টেনেহিঁচড়ে সৌমাভকে সোফায় ফেলে ওর বুকের উপর শুয়ে বারবার বলতে লাগল, ‘‘আমি জানি আমি ভুল করেছি। তুমি তাই বলে এত দূরে সরিয়ে দেবে? তুমি কেন আমাকে ঈশি বলে ডাকো না আর? কেন আমাকে আগের মতো জড়িয়ে ধরো না? কেন আমাকে আন্দামানের মতো আদর করো না?’’ ওর পরপর প্রশ্নগুলো শুনে সৌমাভ বরাবরের শান্ত গলাতেই বলল, ‘‘আজ তো নয়, এগারো মাস ধরেই তোমাকে পুরনো নামে ডাকি না। তুমি আজ খেয়াল করলে? বাহ! আর হ্যাঁ, আন্দামানের কথা কী যেন বলছিলে? এই সোফায় বসে আন্দামানের কথা বলায় আমাকে তুমি যেটা বলেছিলে, সেটা আমি মনে রেখেছি ঈশিতা। আর আদর করা? ডাক্তার পাঁচ মাস অবধি সেক্স করা যেতে পারে বলে দিয়েছিলেন তোমার সামনেই। তোমার শরীরের লোভে নয়, তোমার এই অবস্থায় পরীক্ষা দেওয়ার মতো চাপের কথা ভেবেই আমি আগামী বছর পরীক্ষাটা দেওয়ার কথা ফের ভাবার জন্য বলেছিলাম। তোমার উত্তর এবং তার পরের কাজগুলো নিশ্চয়ই মনে আছে ঈশিতা?’’ কান্নায় ভেঙে পড়া ঈশিতার মুখটা বুক থেকে তুলে ফের ওকে খেয়ে নিতে বলে উঠে দাঁড়াল সৌমাভ। এই বার ঈশিতারও মনে পড়ে গেল, প্রথম দিন সৌমাভকে নিয়ে বাপের বাড়িতে যাওয়ার রাতটার কথা। সেদিন এমনিতেই নতুন জায়গায় এসে আড়ষ্ট হয়েছিল সৌমাভ। আর ও? ঈশিতার মনে পড়ল, সে রাতে রাহুলের কথা ভাবতে গিয়ে সৌমাভর সঙ্গে চোদাচুদি করলেও সেটা ও কতটা জড়তা নিয়ে করেছিল, যার জন্য সৌমাভ নিজেকে শান্ত না করেই ওর উপর থেকে নিঃশব্দে উঠে গিয়েছিল সে দিন। গত এগারো মাসেরও বেশি সময়ে সেটাই ওদের শেষ বার শারিরীক সম্পর্ক হয়েছিল এবং সেটাও ওর নিজের জন্যই অত্যন্ত খারাপ ভাবে শেষ হয়েছিল। ওর ভালই বোঝে, সেদিনের পর থেকে সৌমাভ ওকে সেই ভাবে ছোঁয়ও না। মাঝে একবার পেটে আতলতো করে হাত বুলিয়ে দেওয়া আর একবার পেটে কান রাখা ছাড়া সৌমাভ ওকে যে আর সেই ভাবে স্পর্শও করে না সেদিনের পর থেকে, সেটা ও বহুবার টের পেয়েছে। কিন্তু একবারও নিজে সেই পাঁচিলটা ভাঙার চেষ্টা করেনি। এমনকি সেদিনের পরেও বেশ কয়েক বার দু’জনের একসঙ্গে থাকা, পাশাপাশি শোয়া এমনকি শারিরীক সম্পর্কের সুযোগ তৈরি হলেও সেটা আর হয়নি। ও-ই এগোয়নি। অথচ নিজেই বুঝত, ওর আচরণ এবং উপেক্ষা ও শীতলতায় ওদের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারে বারবার বুকে টেনে নিতে পারলে। তবু ও এগোয়নি। এমনকী এ বাড়িতে আসার পরেও। তা ছাড়া ও নিজে তো বটেই, সৌমাভও আর ওকে জড়িয়ে পর্যন্ত ধরে না। সেই সব কথাই কি আজ মনে করিয়ে দিল সৌমাভ?

এই সব ভাবতে ভাবতেই ফের ফোন এল। সৌমাভ দ্রুত ফোনটা ধরে কিছুক্ষণ কথা বলে বাইরের ঘরে এসে ঈশিতাকে ডেকে বলল, গুঞ্জা ফোন করেছে, কথা বলো।

গুঞ্জা? গুঞ্জা এই ফোনের নম্বরটা জানে অথচ ও জানে না? এ নিয়ে পরে হিসেব করা যাবে ভাবতে ভাবতে তড়িঘড়ি ফোনটা ধরে আরও একটা বড় ধাক্কা খেল ঈশিতা। কালীপুজোর দিন সৌমাভর যে জন্মদিন ছিল, সেটা আন্দামানে থাকাকালীন ওরই জোরাজুরিতে সৌমাভ ওকে বলেছিল। আর ও সেটা মনেই রাখেইনি! ওর বাড়িতেও কেউ জানে বলে ও জানত না। সৌমাভর প্রতি বাড়ির লোকের অন্য রকম আচরণটা ও অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করলেও এ নিয়ে কোনও দিনই কিছু বলেনি। অথচ ওর দু’বছরের ছোট বোন গুঞ্জা সব জানে? দিন-তারিখ সব? ওদের বাড়ির একমাত্র সদস্য হিসেবে গুঞ্জাই কালীপুজোর পরে যেদিন সৌমাভ ওদের বাড়িতে গেছিল, সেদিন ওকে উইশ করে চকোলেট গিফ্ট করেছিল। আজ একথা-সেকথায় গুঞ্জা বলল, শুক্রবার ও আসবে এ বাড়িতে, সৌমদার জন্মদিনের খাওয়া খেতে। ওটা নিয়ে নাকি দু’জনের কথাও হয়ে গেছে দিন কয়েক আগে ফোনেফোনে! ঈশিতার মনে পড়ল, ওর নিজের জন্মদিনের দিন ভোরবেলায় ওর বাড়িতে গিয়ে ওকে প্রথম উইশ করেছিল এই সৌমাভই। নিজেকেই নিজে আবার ধিক্কার দিল। তবে মুখে কিছু প্রকাশ করল না। তার পরেই গুঞ্জার আর একটা কথায় আরও চমকে গেল ও। পাঁচ দিন আগে ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিল? ওর মনে পড়ল, সে দিনও ও সারাদিন কলেজের অনুষ্ঠান নিয়েই মেতে ছিল। অথচ গুঞ্জাই নাকি সেদিন সৌমাভকে ফোন করে উইশ করেছে? গুঞ্জাই জানাল, ও সৌমদাকে বলেছে, একসঙ্গে জন্মদিন ও বিবাহবার্ষিকীর খাওয়া এই শুক্রবারেই খাওয়াতে হবে। গুঞ্জা সব জানে শুধু না, দু’টো ক্ষেত্রেই একমাত্র সেই সৌমাভকে উইশ করেছে। জন্মদিনে গিফ্টও দিয়েছে? অথচ ও নিজে স্ত্রী হয়েও কিছুই মনে রাখেনি, দিনগুলো পালন করা তো দূর, উইশ পর্যন্ত করেনি।

বাইরের ঘরে এসে সৌমাভকে কথাটা বলতে সে একটু অবাক হয়ে বলল, ‘‘ওহ, হ্যাঁ, গুঞ্জাটা আব্দার করেছে। কিন্তু এই ক’টা দিন তো আমার অফিস আছে। যেতেই হবে, প্রচন্ড চাপ। তবে শুক্রবারটা দেখি। সেদিনও অফিস যেতে হবে, তবে মনে হয় পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফিরতে পারব। ঠিক আছে, সেটা আমি গুঞ্জাকে বলে দেব। ও না হয় সে দিন সন্ধ্যাবেলাতেই আসবে, কেমন? আর তোমরা এত সব প্রোগ্রাম করতে গেলে কেন? বিবাহবার্ষিকী তো দিন কয়েক আগে চলে গেছে। জন্মদিনও তো প্রায় একমাস আগে চলে গেছে ঈশিতা? এখন এসব কেন?’’

ঈশিতা এই বারে ঠিক করল, শুক্রবার বাড়িতে শুধু গুঞ্জা নয়, ওর বাপের বাড়ির সবাইকে ডেকে একটা ছোট হলেও অনুষ্ঠান করবে। সৌমাভর জন্মদিন এবং ওদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীকে একসঙ্গে করে একটা অনুষ্ঠান হবে। ওর মাকে ফোন করায় তিনিও আকাশ থেকে পড়লেন। এই জামাইয়ের জন্মদিনটা তো তিনিও জানেন না। অথচ তাঁর ছোট মেয়ে নাকি সব জানে? আর মেয়ের বিবাহবার্ষিকীও এর মধ্যে চলে গেছে? এত হাঙ্গামা করে দেওয়া বিয়ের তারিখটা কেউ মনেই রাখেনি, তিনিও না! তা ছাড়া তাঁর নিজের মেয়ে, যার বিবাহবার্ষিকী বা বরের জন্মদিন, সে নিজেও তো কিছু বলেনি! অস্বস্তি এড়াতে তিনি কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে বললেন, তিনি শুক্রবার দুপুরে পায়েস এবং আরও কয়েক পদ রান্না করে এ বাড়িতে আসবেন। দিদিরাও দুপুরেই আসবে। সন্ধ্যায় দুই জামাই এলে বাইরে থেকে খাবার এনে সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া করা হবে। সব প্ল্যান করে একটু যেন হাল্কা লাগল ওর।

কিন্তু ক্রমাগত মনের মধ্যে একটা খচখচানি ঈশিতাকে বিঁধে গেল। সৌমাভকে আবার আগের মতো সব ফিরিয়ে দেবে, গত কয়েক মাসে হাজার বার এই প্রতিজ্ঞা করলেও সে সব তো কিছুই করেনি, এমনকি তার জন্মদিনটাও মনে রাখেনি স্ত্রী হয়ে! তা ছাড়া নিজেদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর দিনটা ও কাটিয়েছিল সারাদিন কলেজের অনুষ্ঠান নিয়ে মেতে! এমনকি সেদিন ফিরেওছিল রাত করে। আজও ওর মাথাতেই ছিল না ওর এবং সৌমাভর জীবনের বিশেষ দিনটার কথা! সেই জন্যই কি গুঞ্জা সেদিন ও রকম ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিল? এ সব মনে করে কেঁদে ফেলল ঈশিতা। সেই আওয়াজে স্টাডিতে বসে থাকা সৌমাভ ফাইল থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে একটু অবাক হল প্রথমে। চেয়ার ছেড়ে উঠতেই ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এতদিনের কান্না যেন বাঁধ ভাঙল ঈশিতার। বারবার গত এগারো মাস ধরে করা নিজের জেদ-ভুলের কথা, সৌমাভকে অবহেলার কথা বলতে শুরু করল নিজেই। এমনকি বিবাহবার্ষিকী ভুলে যাওয়ার কথাটাও তুলল নিজেই। সৌমাভ একটা কথাও বলল না। একসময় একটু শান্ত হয়ে সৌমাভর বুকে মুখ গুঁজে ঈশিতা বলল, ‘‘আমি প্রমিস করছি, যে করেই হোক তোমাকে আন্দামানের সময় আমি ফিরিয়ে দেবই। আজ থেকেই দেব। তুমি একবার আমাকে ভরসা করে দেখ!’’ এই বারে সৌমাভ মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে খুব আস্তে করে বলল, ‘‘ঈশিতা, আজ তুমি ক্লান্ত। এখন বিশ্রাম নাও। কাল কথা হবে। যাও, খেয়ে নাও।’’
Like Reply
#59
খুব ভালো হচ্ছে। এগিয়ে চলুন।

 congrats
yr):





গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।

Like Reply
#60
বাঃ, খুব ভালো লাগলো পড়ে, খুব সুন্দর আপডেট। এর পরের অংশ পড়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
Like Reply




Users browsing this thread: