04-03-2025, 09:50 AM
অন্ধকারের অভিশাপ
প্রথম অধ্যায়: নতুন বাড়ি, পুরনো আতঙ্ক
১৯৯৬ সালের এক শীতের সকাল। শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পুরনো জমিদারবাড়ির সামনে গাড়ি থামল। চারপাশে কুয়াশার আস্তরণ, শুকনো গাছপালার সঙ্গেই যেন বাড়ির পুরনো দেওয়ালগুলো মিলেমিশে গেছে। বিশাল লোহার গেট, উপরে জং ধরা শিকল। গেটের ওপাশে দোতলা বিশাল বাড়ি, স্থাপত্য দেখে বোঝা যায়, এককালে রাজকীয় ছিল, কিন্তু এখন তা ধ্বংসস্তূপের কাছাকাছি।
রঞ্জিত সরকার গাড়ি থেকে নামলেন। সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর কেটে গেছে, বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই, তবে শরীরে এখনো বল আছে। মাসিক ২২,০০০ টাকা বেতনে সংসার চলে ভালোই, কিন্তু শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে নিজের বাড়ির স্বপ্ন ছিল অনেকদিনের। তাই এই পুরনো জমিদারবাড়ি কম দামে পেয়ে একপ্রকার লোভ সামলাতে পারেননি।
তার স্ত্রী, মীনা, ৩৯ বছরের গৃহবধূ। দেখতে অপূর্ব সুন্দরী—গায়ের রঙ উজ্জ্বল ফর্সা, সরু কোমর, বড় বড় চোখ, আর শরীরের গঠন এমন যে যেকোনো পুরুষ তাকিয়ে থাকতে বাধ্য। শুভ, তাদের ১৫ বছরের ছেলে, নবম শ্রেণিতে পড়ে।
গাড়ি থেকে নামতেই শুভ কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল। বাড়িটার দিকে তাকিয়েই তার গা ছমছম করে উঠল। মনে হলো, কোথাও একটা কিছু ভুল আছে।
বাড়ির বর্ণনা
বাড়ির সামনে বড় বারান্দা, কাঠের বিশাল দরজা, যা খুলতেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল। ভিতরে ঢুকতেই পুরনো ধুলোমাখা আসবাবপত্র, বিশাল ঝাড়বাতি, আর মাটিতে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা কাঁচ শুভর মনে এক অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি করল।
নীচতলায় তিনটি বড় ঘর। রঞ্জিত আর মীনার থাকার জন্য সবচেয়ে বড় ঘরটি বেছে নেওয়া হলো। ঘরের একপাশে পুরনো কাঠের খাট, তার ওপরে ধুলোর স্তর জমে আছে। দেয়ালে ফ্রেমবন্দী কিছু পুরনো ছবি—তবে ছবিগুলোর মুখগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে গেছে, যেন কেউ ইচ্ছে করে মুছে দিয়েছে।
দোতলায় চারটি ঘর। শুভর জন্য বরাদ্দ হলো করিডোরের এক কোণের ঘরটা। জানালার পাশের ঘর, বাতাস এলেই জানালার শার্সিগুলো খটখট করে নড়ে ওঠে। ঘরটা তুলনামূলক ছোট, কিন্তু জানালা দিয়ে পুরো বাড়ির সামনের অংশ দেখা যায়। বিছানা, একটা কাঠের আলমারি, আর একটা পুরনো আয়না—এই নিয়ে তার ঘর।
সবার জন্য নতুন বাড়ির অভিজ্ঞতা ছিল রোমাঞ্চকর, কিন্তু শুভ প্রথম রাত থেকেই টের পেল, এই বাড়ির বাতাস ভারী। যেন কিছু একটা ওদের উপর নজর রাখছে।
রাতের বিভীষিকা
প্রথম রাতেই ঘটল অদ্ভুত এক ঘটনা।
শুভর ঘুম ভেঙে গেল গভীর রাতে। বাইরে থেকে আসছে কার যেন ফিসফিসানি। মনে হচ্ছে, করিডোরের বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
সে আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিল।
কেউ নেই। কিন্তু অনুভব করল, ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে একটা ছায়া যেন দ্রুত সরে গেল।
তখনই পাশের ঘর থেকে শব্দ এলো—তার মা যেন কারও সাথে কথা বলছে!
(চলবে…)
অন্ধকারের অভিশাপ
দ্বিতীয় অধ্যায়: রাতের বিভীষিকা
বাড়িতে আসার তিনদিন কেটে গেছে। এই সময়ের মধ্যে রঞ্জিত বেশ খুশি, মীনা নতুন সংসার গোছানোর কাজে ব্যস্ত, কিন্তু শুভর মন থেকে প্রথম রাতের অনুভূতি একটুও কমেনি।
এই বাড়িটা কিছু লুকিয়ে রেখেছে। শুভ তা বুঝতে পারছে, কিন্তু কাউকে বলার সাহস পাচ্ছে না।
পুরনো দেয়ালের ফিসফিসানি
রাতে শুভর ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎই।
ঘড়ির কাঁটা রাত ২টো ছুঁই ছুঁই করছে। ঘরের জানালা হালকা খোলা, বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। শুভ ধীরে ধীরে উঠে বসল। কিন্তু তার দৃষ্টি আটকে গেল ঘরের দরজার দিকে।
দরজাটা আধখোলা, আর করিডোরের অন্ধকারে কিছু একটা নড়ছে।
সে শ্বাস আটকে চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
আলোর অভাবে ভালো বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে, করিডোরের দেয়ালের কাছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। শুভর বুক ধকধক করতে লাগল।
তখনই হালকা ফিসফিসানি শোনা গেল।
“ওরা আবার এসেছে…”
শুভর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। এই কণ্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত বিষাদ ছিল, ছিল ভয় আর… রাগ।
সে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোতেই শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। মুহূর্তের জন্য সবকিছু নিস্তব্ধ।
হঠাৎই দরজার ওপাশে ছায়াটা অদৃশ্য হয়ে গেল! যেন মুহূর্তের মধ্যে গলে গেল বাতাসে!
শুভ দরজা খুলে করিডোরে উঁকি দিল। কেউ নেই। শুধু অন্ধকার আর পুরনো কাঠের মেঝের গন্ধ।
তার মনে হলো, সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু তখনই একটা ধাক্কা লাগার শব্দ এলো নিচতলা থেকে। যেন কেউ জোরে দরজা বন্ধ করল!
রঞ্জিত আর মীনার কক্ষ
শুভ ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামল। নিচতলায় তার বাবা-মার ঘর। দরজাটা আধখোলা ছিল।
ভেতরে তাকিয়েই শুভ থমকে গেল।
মা বিছানায় ঘুমাচ্ছে, কিন্তু বাবা নেই! ঘরে অদ্ভুত ছায়াময় পরিবেশ। জানালা দিয়ে চাঁদের মলিন আলো পড়েছে, কিন্তু ঘরের পরিবেশ অস্বাভাবিক ঠান্ডা। শুভ একটু এগিয়ে গেল।
তখনই খাটের পাশে রাখা আয়নাটায় কিছু একটা নড়তে দেখা গেল!
শুভ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল আয়নার দিকে। সেখানে কিছু একটা যেন দাঁড়িয়ে আছে…
একটা দীর্ঘ ছায়া, তার মুখ নেই, শুধু দুটি গহ্বরের মতো অন্ধকার চোখ!
শুভ আতঙ্কে এক পা পিছিয়ে যেতেই মুহূর্তের মধ্যে ছায়াটা মিলিয়ে গেল!
সে চোখ কচলিয়ে আবার আয়নার দিকে তাকাল। এখন কিছু নেই, শুধু তার নিজের প্রতিচ্ছবি।
শুভ দরজার বাইরে বেরিয়ে এল দ্রুত। তার পুরো শরীর কাঁপছে। এই বাড়িতে কিছু একটা আছে… কিন্তু সেটা কী?
বাড়ির চাকর
অন্ধকারের অভিশাপ
তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)
সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।
কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?
শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।
সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।
চাকরের আগমন
দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।
রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।
সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”
রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!
“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”
আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।
“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”
রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।
তিনি সায় দিলেন।
“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”
আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।
শুভর অস্বস্তি
শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।
এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।
কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”
শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”
আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”
শুভ চমকে উঠল।
সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!
রাতের রহস্য
সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।
সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।
এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!
কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।
শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!
অন্ধকারের অভিশাপ
তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)
সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।
কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?
শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।
সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।
চাকরের আগমন
দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।
রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।
সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”
রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!
“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”
আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।
“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”
রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।
তিনি সায় দিলেন।
“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”
আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।
শুভর অস্বস্তি
শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।
এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।
কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”
শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”
আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”
শুভ চমকে উঠল।
সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!
রাতের রহস্য
সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।
সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।
এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!
কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।
শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!
অন্ধকারের অভিশাপ
তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)
সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।
কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?
শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।
সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।
চাকরের আগমন
দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।
রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।
সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”
রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!
“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”
আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।
“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”
রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।
তিনি সায় দিলেন।
“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”
আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।
শুভর অস্বস্তি
শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।
এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।
কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”
শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”
আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”
শুভ চমকে উঠল।
সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!
রাতের রহস্য
সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।
সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।
এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!
কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।
শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!
অন্ধকারের অভিশাপ
চতুর্থ অধ্যায়: আকরামের ছায়া
বাড়িতে আসার পর আজ প্রথম শুভ কলেজে যাবে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ—কিন্তু তার মন কোথাও স্থির হচ্ছে না। সারারাত ঘুম হয়নি, আকরামের রহস্যময় উপস্থিতি আর করিডোরের ছায়াগুলো তার মাথার ভেতর গেঁথে আছে।
নতুন কলেজ, পুরনো ভয়
সকালে রঞ্জিত তাকে সাইকেল কিনে দিলেন, যাতে সে কলেজে যেতে পারে। কলেজটা খুব বেশি দূরে নয়, গ্রামের মধ্যেই, তবে বেশ পুরনো।
শুভ কলেজে গেলেও তার মন পুরোপুরি অন্য কোথাও ছিল।
ক্লাসে বসে থাকতে থাকতে সে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল। আর ঠিক তখনই তার গা ছমছম করে উঠল!
কলেজের মাঠের পাশে, একটা গাছের ছায়ায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
একটা লম্বা আকৃতি, পরনে সাদা কাপড়… দাঁড়িয়ে থেকে শুধু শুভর দিকেই তাকিয়ে আছে।
শুভ চোখ কচলিয়ে আবার তাকাল। কেউ নেই!
তার শ্বাস ধড়ফড় করতে লাগল। কী হচ্ছে এটা?
আকরামের রহস্য
কলেজ থেকে ফিরে শুভ দেখে, আকরাম উঠোনে বসে কিছু পরিষ্কার করছে।
তাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলেও, শুভর ভেতরে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করছিল।
শুভ ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে গেল।
“আকরাম কাকু, তুমি আগে কোথায় কাজ করতে?”
আকরাম এক মুহূর্ত শুভর দিকে তাকিয়ে থাকল। তার চোখের দৃষ্টি ঠান্ডা, গভীর, আর যেন একধরনের পুরনো দুঃখ লুকিয়ে আছে।
তারপর সে আস্তে হেসে বলল, “বহু জায়গায়… অনেক বছর ধরে ঘুরে বেড়াই। তবে এই জায়গাটা… খুব পুরনো মনে হয়।”
শুভর ভেতরটা কেঁপে উঠল।
আকরাম কি বুঝতে পারছে কিছু? নাকি সে ইচ্ছা করেই এমন কিছু বলছে?
রাতের বিভীষিকা
সেদিন রাতে শুভর চোখে ঘুম আসছিল না।
সে বিছানায় শুয়ে ছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল কেউ তার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
একসময় সে উঠে দরজার দিকে তাকাল।
করিডোরে অন্ধকারের মধ্যে একটা ছায়া নড়ছে!
শুভ ধীরে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল।
আকরাম ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে… কিন্তু তার চলার ধরন স্বাভাবিক নয়।
তার শরীর কেমন যেন কঠিন হয়ে আছে, আর সে যেন কারও নির্দেশে নিচে যাচ্ছে!
শুভ নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে রইল।
আকরাম নিচে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
কিন্তু শুভ ঠিক তখনই শুনতে পেল, নিচ থেকে একটা গলায় গম্ভীর ফিসফিসানি…
“তুই ফিরে এসেছিস…? অনেক বছর পর…!”
শুভর গা কেঁপে উঠল।
এই আওয়াজটা… এটা আকরামের নয়!
(চলবে…)
পঞ্চম অধ্যায়: কুয়োর অভিশাপ
শুভর বুক ধড়ফড় করছে।
নিচের রান্নাঘর থেকে আসা সেই অদ্ভুত ফিসফিসানি তাকে তাড়া করে ফিরছে। “তুই ফিরে এসেছিস…? অনেক বছর পর…!”
কিন্তু কাকে বলা হলো এটা? আকরামকে? নাকি… অন্য কাউকে?
শুভ আর থাকতে পারল না। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে দরজার ফাঁক দিয়ে করিডোরে উঁকি দিল। পুরো বাড়িটা নিস্তব্ধ, কেবল বাতাসে এক চাপা গন্ধ—পুরনো, স্যাঁতসেঁতে, আর কেমন যেন পচা গন্ধ ছড়িয়ে আছে।
অন্ধকারে অনুসরণ
সে পা টিপে টিপে করিডোর দিয়ে এগোতে লাগল।
রান্নাঘরের দরজা আধখোলা, ভিতরে মৃদু আলো জ্বলছে। শুভ আস্তে করে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল।
আকরাম দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরের এক কোণায়, কিন্তু সে একদম স্থির।
তার সামনে মাটিতে কিছু একটা আঁকা… যেন কোনো পুরনো চিহ্ন, ধুলোমাখা কিন্তু স্পষ্ট।
শুভর শ্বাস আটকে গেল। আকরামের ঠোঁট নাড়ছে, কিন্তু কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না! সে যেন নিজের অজান্তে ফিসফিস করে কিছু বলছে, অথচ মুখে কোনো আওয়াজ নেই।
হঠাৎ, আকরাম থেমে গেল।
সে ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে শুভর দিকে তাকাল।
তার চোখ… স্বাভাবিক নয়!
একটা গা-ছমছমে অন্ধকার তার চোখের গভীরে খেলা করছে, যেন সেখানে কিছু একটা লুকিয়ে আছে!
শুভ দৌড়ে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
কুয়োর ইতিহাস
পরদিন সকালে শুভ রঞ্জিতকে জিজ্ঞেস করল, “এই বাড়ির পেছনে কি কোনো কুয়ো ছিল?”
রঞ্জিত চমকে উঠল।
“কে বলল তোকে?”
“আমি… মানে, জানি না, এমনিই জিজ্ঞেস করলাম…”
রঞ্জিত এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন, তারপর ধীরে বললেন, “হ্যাঁ, ছিল। অনেক বছর আগে… ওটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
“কেন?”
রঞ্জিত একদৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকালেন। তার কণ্ঠ ভারী হয়ে গেল।
“সে এক ভয়ংকর গল্প… এখানে একসময় এক সিরিয়াল রেপিস্ট থাকত, নাম ছিল জাহাঙ্গীর। সে ১০-১২ জন গৃহবধূকে তুলে এনে এই বাড়ির নিচে… নির্যাতন করত। একদিন গ্রামবাসীরা তাকে খুঁজে পায়, তারপর তাকে মেরে ওই কুয়োর মধ্যেই ফেলে দেয়। তখন থেকে বলা হয়, এখানে কিছু একটা আছে… কিছু একটা যা এখনও ঘুরে বেড়ায়।”
শুভর শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।
এই বাড়ি… এই কুয়ো… এই ভূত… সবকিছু কি সত্যিই বাস্তব?
আকরামের পরিবর্তন
সেদিন রাতেই আবার কিছু একটা ঘটল।
শুভ দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিল, কিন্তু বাইরে একটা চাপা শব্দ শুনতে পেল—জলের ছিটে পড়ার মতো আওয়াজ!
সে আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিল।
আকরাম পেছনের উঠোনের দিকে হাঁটছে।
শুভ আস্তে আস্তে অনুসরণ করল।
পেছনে এক জায়গায় একটু ফাঁকা জমি, আর তার মাঝখানে… একটা পাথরের ঢাকনা দেওয়া কুয়ো!
শুভর বুক ধক করে উঠল।
আকরাম কুয়োর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তার শরীর কেমন যেন অস্বাভাবিক শক্ত হয়ে আছে, হাত দুটো অদ্ভুতভাবে মোচড়ানো।
তারপর সে ধীরে ধীরে কুয়োর পাথরটা সরানোর চেষ্টা করল!
ঠিক তখনই, শুভ একটা গা-ছমছমে শব্দ শুনতে পেল।
কুয়োর গভীর থেকে যেন একটা শ্বাস নেওয়ার আওয়াজ…
কেউ বা কিছু যেন বহু বছর পর আবার জেগে উঠছে!
(চলবে…)
প্রথম অধ্যায়: নতুন বাড়ি, পুরনো আতঙ্ক
১৯৯৬ সালের এক শীতের সকাল। শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পুরনো জমিদারবাড়ির সামনে গাড়ি থামল। চারপাশে কুয়াশার আস্তরণ, শুকনো গাছপালার সঙ্গেই যেন বাড়ির পুরনো দেওয়ালগুলো মিলেমিশে গেছে। বিশাল লোহার গেট, উপরে জং ধরা শিকল। গেটের ওপাশে দোতলা বিশাল বাড়ি, স্থাপত্য দেখে বোঝা যায়, এককালে রাজকীয় ছিল, কিন্তু এখন তা ধ্বংসস্তূপের কাছাকাছি।
রঞ্জিত সরকার গাড়ি থেকে নামলেন। সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর কেটে গেছে, বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই, তবে শরীরে এখনো বল আছে। মাসিক ২২,০০০ টাকা বেতনে সংসার চলে ভালোই, কিন্তু শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে নিজের বাড়ির স্বপ্ন ছিল অনেকদিনের। তাই এই পুরনো জমিদারবাড়ি কম দামে পেয়ে একপ্রকার লোভ সামলাতে পারেননি।
তার স্ত্রী, মীনা, ৩৯ বছরের গৃহবধূ। দেখতে অপূর্ব সুন্দরী—গায়ের রঙ উজ্জ্বল ফর্সা, সরু কোমর, বড় বড় চোখ, আর শরীরের গঠন এমন যে যেকোনো পুরুষ তাকিয়ে থাকতে বাধ্য। শুভ, তাদের ১৫ বছরের ছেলে, নবম শ্রেণিতে পড়ে।
গাড়ি থেকে নামতেই শুভ কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল। বাড়িটার দিকে তাকিয়েই তার গা ছমছম করে উঠল। মনে হলো, কোথাও একটা কিছু ভুল আছে।
বাড়ির বর্ণনা
বাড়ির সামনে বড় বারান্দা, কাঠের বিশাল দরজা, যা খুলতেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল। ভিতরে ঢুকতেই পুরনো ধুলোমাখা আসবাবপত্র, বিশাল ঝাড়বাতি, আর মাটিতে ছড়িয়ে থাকা ভাঙা কাঁচ শুভর মনে এক অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি করল।
নীচতলায় তিনটি বড় ঘর। রঞ্জিত আর মীনার থাকার জন্য সবচেয়ে বড় ঘরটি বেছে নেওয়া হলো। ঘরের একপাশে পুরনো কাঠের খাট, তার ওপরে ধুলোর স্তর জমে আছে। দেয়ালে ফ্রেমবন্দী কিছু পুরনো ছবি—তবে ছবিগুলোর মুখগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে গেছে, যেন কেউ ইচ্ছে করে মুছে দিয়েছে।
দোতলায় চারটি ঘর। শুভর জন্য বরাদ্দ হলো করিডোরের এক কোণের ঘরটা। জানালার পাশের ঘর, বাতাস এলেই জানালার শার্সিগুলো খটখট করে নড়ে ওঠে। ঘরটা তুলনামূলক ছোট, কিন্তু জানালা দিয়ে পুরো বাড়ির সামনের অংশ দেখা যায়। বিছানা, একটা কাঠের আলমারি, আর একটা পুরনো আয়না—এই নিয়ে তার ঘর।
সবার জন্য নতুন বাড়ির অভিজ্ঞতা ছিল রোমাঞ্চকর, কিন্তু শুভ প্রথম রাত থেকেই টের পেল, এই বাড়ির বাতাস ভারী। যেন কিছু একটা ওদের উপর নজর রাখছে।
রাতের বিভীষিকা
প্রথম রাতেই ঘটল অদ্ভুত এক ঘটনা।
শুভর ঘুম ভেঙে গেল গভীর রাতে। বাইরে থেকে আসছে কার যেন ফিসফিসানি। মনে হচ্ছে, করিডোরের বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
সে আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিল।
কেউ নেই। কিন্তু অনুভব করল, ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গে একটা ছায়া যেন দ্রুত সরে গেল।
তখনই পাশের ঘর থেকে শব্দ এলো—তার মা যেন কারও সাথে কথা বলছে!
(চলবে…)
অন্ধকারের অভিশাপ
দ্বিতীয় অধ্যায়: রাতের বিভীষিকা
বাড়িতে আসার তিনদিন কেটে গেছে। এই সময়ের মধ্যে রঞ্জিত বেশ খুশি, মীনা নতুন সংসার গোছানোর কাজে ব্যস্ত, কিন্তু শুভর মন থেকে প্রথম রাতের অনুভূতি একটুও কমেনি।
এই বাড়িটা কিছু লুকিয়ে রেখেছে। শুভ তা বুঝতে পারছে, কিন্তু কাউকে বলার সাহস পাচ্ছে না।
পুরনো দেয়ালের ফিসফিসানি
রাতে শুভর ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎই।
ঘড়ির কাঁটা রাত ২টো ছুঁই ছুঁই করছে। ঘরের জানালা হালকা খোলা, বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। শুভ ধীরে ধীরে উঠে বসল। কিন্তু তার দৃষ্টি আটকে গেল ঘরের দরজার দিকে।
দরজাটা আধখোলা, আর করিডোরের অন্ধকারে কিছু একটা নড়ছে।
সে শ্বাস আটকে চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
আলোর অভাবে ভালো বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে, করিডোরের দেয়ালের কাছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। শুভর বুক ধকধক করতে লাগল।
তখনই হালকা ফিসফিসানি শোনা গেল।
“ওরা আবার এসেছে…”
শুভর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। এই কণ্ঠস্বরে একটা অদ্ভুত বিষাদ ছিল, ছিল ভয় আর… রাগ।
সে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোতেই শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। মুহূর্তের জন্য সবকিছু নিস্তব্ধ।
হঠাৎই দরজার ওপাশে ছায়াটা অদৃশ্য হয়ে গেল! যেন মুহূর্তের মধ্যে গলে গেল বাতাসে!
শুভ দরজা খুলে করিডোরে উঁকি দিল। কেউ নেই। শুধু অন্ধকার আর পুরনো কাঠের মেঝের গন্ধ।
তার মনে হলো, সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু তখনই একটা ধাক্কা লাগার শব্দ এলো নিচতলা থেকে। যেন কেউ জোরে দরজা বন্ধ করল!
রঞ্জিত আর মীনার কক্ষ
শুভ ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামল। নিচতলায় তার বাবা-মার ঘর। দরজাটা আধখোলা ছিল।
ভেতরে তাকিয়েই শুভ থমকে গেল।
মা বিছানায় ঘুমাচ্ছে, কিন্তু বাবা নেই! ঘরে অদ্ভুত ছায়াময় পরিবেশ। জানালা দিয়ে চাঁদের মলিন আলো পড়েছে, কিন্তু ঘরের পরিবেশ অস্বাভাবিক ঠান্ডা। শুভ একটু এগিয়ে গেল।
তখনই খাটের পাশে রাখা আয়নাটায় কিছু একটা নড়তে দেখা গেল!
শুভ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল আয়নার দিকে। সেখানে কিছু একটা যেন দাঁড়িয়ে আছে…
একটা দীর্ঘ ছায়া, তার মুখ নেই, শুধু দুটি গহ্বরের মতো অন্ধকার চোখ!
শুভ আতঙ্কে এক পা পিছিয়ে যেতেই মুহূর্তের মধ্যে ছায়াটা মিলিয়ে গেল!
সে চোখ কচলিয়ে আবার আয়নার দিকে তাকাল। এখন কিছু নেই, শুধু তার নিজের প্রতিচ্ছবি।
শুভ দরজার বাইরে বেরিয়ে এল দ্রুত। তার পুরো শরীর কাঁপছে। এই বাড়িতে কিছু একটা আছে… কিন্তু সেটা কী?
বাড়ির চাকর
অন্ধকারের অভিশাপ
তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)
সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।
কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?
শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।
সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।
চাকরের আগমন
দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।
রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।
সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”
রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!
“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”
আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।
“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”
রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।
তিনি সায় দিলেন।
“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”
আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।
শুভর অস্বস্তি
শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।
এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।
কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”
শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”
আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”
শুভ চমকে উঠল।
সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!
রাতের রহস্য
সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।
সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।
এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!
কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।
শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!
অন্ধকারের অভিশাপ
তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)
সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।
কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?
শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।
সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।
চাকরের আগমন
দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।
রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।
সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”
রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!
“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”
আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।
“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”
রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।
তিনি সায় দিলেন।
“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”
আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।
শুভর অস্বস্তি
শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।
এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।
কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”
শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”
আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”
শুভ চমকে উঠল।
সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!
রাতের রহস্য
সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।
সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।
এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!
কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।
শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!
অন্ধকারের অভিশাপ
তৃতীয় অধ্যায়: আক্রমের আগমন (বাড়ির চাকর)
সকালবেলা সূর্যের আলো জানালা দিয়ে এসে পড়েছে, কিন্তু শুভর মনে কাল রাতের ঘটনা এখনো তাজা। আয়নার সেই ছায়া, করিডোরের ফিসফিসানি, আর নিচতলায় দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ—সবকিছুই যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো লেগেছে।
কিন্তু এটা কি সত্যি দুঃস্বপ্ন ছিল?
শুভর কাছে সেটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে।
সে কিছুটা ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হলো।
চাকরের আগমন
দুপুরের দিকে বাড়ির প্রধান দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো।
রঞ্জিত দরজা খুলতেই দেখা গেল, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স ৬৫-এর কাছাকাছি। গায়ের রং কালচে, চেহারায় অদ্ভুত কাঠিন্য, চোখদুটো গভীর আর কেমন যেন ফাঁকা। পরনে মলিন পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি, মাথায় সাদা টুপি।
সে ধীর গলায় বলল, “আমার নাম আক্রম… চাকরের দরকার বলেছিলেন শুনলাম।”
রঞ্জিত একটু অবাক হলেন। তিনি তো চাকরের জন্য কোথাও কোনো লোক পাঠাননি!
“তুমি কোথা থেকে শুনলে?”
আক্রম হাসল। সেই হাসিতে কেমন যেন এক ধরনের চাপা রহস্য লুকিয়ে ছিল।
“বাজারে একজন বলল, নতুন সাহেব এসেছেন… বড়বাড়ি নিয়েছেন, একা সামলানো যাবে না। তাই ভাবলাম, একবার এসে দেখা করে যাই। আমি অনেক বাড়িতে কাজ করেছি। ভালো মতো সামলে নিতে পারব।”
রঞ্জিত একটু ভাবলেন। সত্যি বলতে, বাড়ি সামলানোর জন্য একজন লোক দরকার ছিলই। তাছাড়া এই বৃদ্ধ দেখে নিরীহ মনে হচ্ছে।
তিনি সায় দিলেন।
“ঠিক আছে, তুমি থাকতে পারো।”
আক্রম ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল।
শুভর অস্বস্তি
শুভ দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে আকরমের চোখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তি অনুভব করল।
এই লোকটায় কিছু একটা আছে… শুভ নিশ্চিত।
কিন্তু ঠিক কী আছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
আকরম শুভর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবুজি, তোমার নাম কী?”
শুভ আস্তে বলল, “শুভ…”
আকরম মাথা নাড়ল, তারপর তার গলায় এক অদ্ভুত স্বর শোনা গেল, যেন ফিসফিস করে বলছে, “এখানে রাতগুলো খুব নীরব হয়, না?”
শুভ চমকে উঠল।
সে কীভাবে জানল? শুভ তো কাউকে কিছু বলেনি!
রাতের রহস্য
সেই রাতে শুভ আরেকবার অনুভব করল যে এই বাড়ির পরিবেশ বদলে যাচ্ছে।
সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, হালকা বাতাস বইছে। কিন্তু হঠাৎ করেই চারপাশের শব্দ থেমে গেল। যেন পুরো বাড়িটা এক মুহূর্তের জন্য সময়ের বাইরে চলে গেল।
এমন সময়, নিচতলার রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই শুভ দেখল, আকরম দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে!
কিন্তু সে কিছু করছে না… শুধু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন কোনো কিছুর অপেক্ষায়।
শুভর শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
তার মনে হলো, আকরম এই বাড়িতে নিজে আসেনি… কেউ বা কিছু তাকে এখানে এনেছে!
অন্ধকারের অভিশাপ
চতুর্থ অধ্যায়: আকরামের ছায়া
বাড়িতে আসার পর আজ প্রথম শুভ কলেজে যাবে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ—কিন্তু তার মন কোথাও স্থির হচ্ছে না। সারারাত ঘুম হয়নি, আকরামের রহস্যময় উপস্থিতি আর করিডোরের ছায়াগুলো তার মাথার ভেতর গেঁথে আছে।
নতুন কলেজ, পুরনো ভয়
সকালে রঞ্জিত তাকে সাইকেল কিনে দিলেন, যাতে সে কলেজে যেতে পারে। কলেজটা খুব বেশি দূরে নয়, গ্রামের মধ্যেই, তবে বেশ পুরনো।
শুভ কলেজে গেলেও তার মন পুরোপুরি অন্য কোথাও ছিল।
ক্লাসে বসে থাকতে থাকতে সে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল। আর ঠিক তখনই তার গা ছমছম করে উঠল!
কলেজের মাঠের পাশে, একটা গাছের ছায়ায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
একটা লম্বা আকৃতি, পরনে সাদা কাপড়… দাঁড়িয়ে থেকে শুধু শুভর দিকেই তাকিয়ে আছে।
শুভ চোখ কচলিয়ে আবার তাকাল। কেউ নেই!
তার শ্বাস ধড়ফড় করতে লাগল। কী হচ্ছে এটা?
আকরামের রহস্য
কলেজ থেকে ফিরে শুভ দেখে, আকরাম উঠোনে বসে কিছু পরিষ্কার করছে।
তাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হলেও, শুভর ভেতরে এক অজানা আতঙ্ক কাজ করছিল।
শুভ ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে গেল।
“আকরাম কাকু, তুমি আগে কোথায় কাজ করতে?”
আকরাম এক মুহূর্ত শুভর দিকে তাকিয়ে থাকল। তার চোখের দৃষ্টি ঠান্ডা, গভীর, আর যেন একধরনের পুরনো দুঃখ লুকিয়ে আছে।
তারপর সে আস্তে হেসে বলল, “বহু জায়গায়… অনেক বছর ধরে ঘুরে বেড়াই। তবে এই জায়গাটা… খুব পুরনো মনে হয়।”
শুভর ভেতরটা কেঁপে উঠল।
আকরাম কি বুঝতে পারছে কিছু? নাকি সে ইচ্ছা করেই এমন কিছু বলছে?
রাতের বিভীষিকা
সেদিন রাতে শুভর চোখে ঘুম আসছিল না।
সে বিছানায় শুয়ে ছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল কেউ তার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
একসময় সে উঠে দরজার দিকে তাকাল।
করিডোরে অন্ধকারের মধ্যে একটা ছায়া নড়ছে!
শুভ ধীরে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল।
আকরাম ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে… কিন্তু তার চলার ধরন স্বাভাবিক নয়।
তার শরীর কেমন যেন কঠিন হয়ে আছে, আর সে যেন কারও নির্দেশে নিচে যাচ্ছে!
শুভ নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে রইল।
আকরাম নিচে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
কিন্তু শুভ ঠিক তখনই শুনতে পেল, নিচ থেকে একটা গলায় গম্ভীর ফিসফিসানি…
“তুই ফিরে এসেছিস…? অনেক বছর পর…!”
শুভর গা কেঁপে উঠল।
এই আওয়াজটা… এটা আকরামের নয়!
(চলবে…)
পঞ্চম অধ্যায়: কুয়োর অভিশাপ
শুভর বুক ধড়ফড় করছে।
নিচের রান্নাঘর থেকে আসা সেই অদ্ভুত ফিসফিসানি তাকে তাড়া করে ফিরছে। “তুই ফিরে এসেছিস…? অনেক বছর পর…!”
কিন্তু কাকে বলা হলো এটা? আকরামকে? নাকি… অন্য কাউকে?
শুভ আর থাকতে পারল না। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে দরজার ফাঁক দিয়ে করিডোরে উঁকি দিল। পুরো বাড়িটা নিস্তব্ধ, কেবল বাতাসে এক চাপা গন্ধ—পুরনো, স্যাঁতসেঁতে, আর কেমন যেন পচা গন্ধ ছড়িয়ে আছে।
অন্ধকারে অনুসরণ
সে পা টিপে টিপে করিডোর দিয়ে এগোতে লাগল।
রান্নাঘরের দরজা আধখোলা, ভিতরে মৃদু আলো জ্বলছে। শুভ আস্তে করে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল।
আকরাম দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরের এক কোণায়, কিন্তু সে একদম স্থির।
তার সামনে মাটিতে কিছু একটা আঁকা… যেন কোনো পুরনো চিহ্ন, ধুলোমাখা কিন্তু স্পষ্ট।
শুভর শ্বাস আটকে গেল। আকরামের ঠোঁট নাড়ছে, কিন্তু কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না! সে যেন নিজের অজান্তে ফিসফিস করে কিছু বলছে, অথচ মুখে কোনো আওয়াজ নেই।
হঠাৎ, আকরাম থেমে গেল।
সে ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে শুভর দিকে তাকাল।
তার চোখ… স্বাভাবিক নয়!
একটা গা-ছমছমে অন্ধকার তার চোখের গভীরে খেলা করছে, যেন সেখানে কিছু একটা লুকিয়ে আছে!
শুভ দৌড়ে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
কুয়োর ইতিহাস
পরদিন সকালে শুভ রঞ্জিতকে জিজ্ঞেস করল, “এই বাড়ির পেছনে কি কোনো কুয়ো ছিল?”
রঞ্জিত চমকে উঠল।
“কে বলল তোকে?”
“আমি… মানে, জানি না, এমনিই জিজ্ঞেস করলাম…”
রঞ্জিত এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন, তারপর ধীরে বললেন, “হ্যাঁ, ছিল। অনেক বছর আগে… ওটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
“কেন?”
রঞ্জিত একদৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকালেন। তার কণ্ঠ ভারী হয়ে গেল।
“সে এক ভয়ংকর গল্প… এখানে একসময় এক সিরিয়াল রেপিস্ট থাকত, নাম ছিল জাহাঙ্গীর। সে ১০-১২ জন গৃহবধূকে তুলে এনে এই বাড়ির নিচে… নির্যাতন করত। একদিন গ্রামবাসীরা তাকে খুঁজে পায়, তারপর তাকে মেরে ওই কুয়োর মধ্যেই ফেলে দেয়। তখন থেকে বলা হয়, এখানে কিছু একটা আছে… কিছু একটা যা এখনও ঘুরে বেড়ায়।”
শুভর শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।
এই বাড়ি… এই কুয়ো… এই ভূত… সবকিছু কি সত্যিই বাস্তব?
আকরামের পরিবর্তন
সেদিন রাতেই আবার কিছু একটা ঘটল।
শুভ দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিল, কিন্তু বাইরে একটা চাপা শব্দ শুনতে পেল—জলের ছিটে পড়ার মতো আওয়াজ!
সে আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিল।
আকরাম পেছনের উঠোনের দিকে হাঁটছে।
শুভ আস্তে আস্তে অনুসরণ করল।
পেছনে এক জায়গায় একটু ফাঁকা জমি, আর তার মাঝখানে… একটা পাথরের ঢাকনা দেওয়া কুয়ো!
শুভর বুক ধক করে উঠল।
আকরাম কুয়োর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তার শরীর কেমন যেন অস্বাভাবিক শক্ত হয়ে আছে, হাত দুটো অদ্ভুতভাবে মোচড়ানো।
তারপর সে ধীরে ধীরে কুয়োর পাথরটা সরানোর চেষ্টা করল!
ঠিক তখনই, শুভ একটা গা-ছমছমে শব্দ শুনতে পেল।
কুয়োর গভীর থেকে যেন একটা শ্বাস নেওয়ার আওয়াজ…
কেউ বা কিছু যেন বহু বছর পর আবার জেগে উঠছে!
(চলবে…)