Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic আমার পছন্দের ছোট গল্প গুলো ( অনেক আছে)
#1
গল্প নম্বর -০১
(গল্প :ধোঁকা)



মাঝরাতে ইভার মোবাইলে মেসেজ আসলো-
'জানু, তোমার জামাই ঘরে আছে, না আমি আসব?' আতিক মোবাইলটা খুব স্বাভাবিক ভ*ঙ্গি*তেই হাতে নিয়ে বসে আছে। 
যথেষ্ট ঠান্ডা গলায় ইভাকে ডাকলো। 
ইভা ঘুমের ঘোরে কী হয়েছে? : তোমার রোমিও মেসেজ পাঠিয়েছে। ও আসতে চায়..

- কই আসতে চায়?

: কই আবার? তোমার কাছে! আরেকটু সুন্দর করে বললে বলতে হয় তোমার বি*ছানায়।

ইভার ঘুম কে>টে গেল ম্যাজিকের মতো। সোজা হয়ে বসে টেবিল লাইটটা জ্বালিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে আতিকের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ।

আতিক কিছু না বলে মোবাইলটা ইভার হাতে দিয়ে বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। এমন ঘটনা আজ প্রথম না। প্রায় রাতেই ইভার মোবাইলে কল আসে। আতিক হ্যালো বলা মাত্রই লাইন কে*টে যায়। গত সপ্তাহে একবার ঝামেলা হয়েছিল এটা নিয়ে। রাত তখন তিনটা। ইভা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ফোনে। আতিক পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই ইভা লাইন কে*টে দেয়। চার বছরের সংসারে একটা মানুষকে যথেষ্ট ভালোভাবে চেনা যায়। আতিক স্পষ্ট দেখলো ইভার চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। আতিক শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছিল, কার সাথে কথা বলছিলে?

: তুমি কি আমাকে স'ন্দেহ করো?

- আমি জিজ্ঞেস করছি কার সাথে কথা বলছিলে?

: একটা নাম্বার থেকে প্রায়ই অদ্ভুত সব মেসেজ আসে। আমি কথা বলে জানতে চাচ্ছিলাম ইনি কে?

- ইভা, তুমি কি না*টক সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছ?

: কী বলতে চাও তুমি?

- বলতে চাই তোমার কী মনে হয় আমি ফি'ডার খাই?

: আতিক, তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু নয়।

- আমি যা ভাবছি তেমন নয়। যা দেখছি তেমনও নয়?

: কী দেখছ?

- আজ রাতে আমি অফিস থেকে ফেরার সময় কার গাড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল গেটের সামনে থেকে? কে এসেছিল?

: অদ্ভুত প্রশ্ন! এই বাড়িতে কী আমরা একাই থাকি না কি! কে কার কাছে কখন এসেছে, কার গাড়ি কখন বের হয়ে গেছে সেটা আমি কী জানি!

- আমার আসার সময়ই কেন গাড়িটাকে দেখি বারবার? একদিন নয়, বরং বলতে গেলে প্রত্যেক দিন।

এ পর্যায়ে ইভা প্রচণ্ড রে'গে গিয়ে রুমে এসে জিনসপত্র ভা*ঙচুর শুরু করে। চোর ধরা খাওয়ার পর বৃথা যে চেষ্টা চালায় নিজেকে ছাড়ানোর জন্য, ইভার অক্ষম রাগের আস্ফালনও ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছিল। 

বিয়েটা ওদের প্রেমেরই ছিল। কিন্তু মাত্র চারটা বছরে একটা মানুষ কতটা বদলে যায়! আতিক না হয় অফিস নিয়ে ব্যস্তই থাকে একটু। হ্যাঁ, মাঝেমাঝেই অফিসের কাজে কয়েকদিনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। আর এই সুযোগে! ছিঃ!

শেষ পর্যন্ত আর টেকা গেলো না। আজ ওদের চার বছরের সংসারের সমাপ্তি। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। ইভা নিজের সব জিনিসপত্র নিয়ে বাসা ছেড়ে যাচ্ছে। অনেকদিন সহ্য করেছে আতিক। কিন্তু সেদিন অফিস থেকে ফিরে বেড*রুমে সিগা*রেটের ফিল্টার পাওয়ার পর ঘটনা আর কথা কা>টাকা>টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আতিক সি*গারেট খায় না। বেড*রুমে কে এসেছিল জিজ্ঞেস করতেই ইভা স্বভাবতই অস্বীকার করে। রা*গারাগির এক পর্যায়ে গা*য়ে হাতও উঠে যায় এবং তখনি ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত। এত তাড়াতাড়ি সবকিছু হয়ে গেল যা বলার মতো না!

ইভা সবকিছু নিয়ে গাড়িতে উঠে যাবার পরে আতিক ধীর পায়ে সোফাতে এসে বসলো। অফিসের সুন্দরী পিএ চৈতিকে ফোন দিয়ে বলল, সব ঠিকঠাক। এবার তুমি চলে আসতে পারো পার্মানেন্ট ভাবে।

: হা হা হা, প্ল্যানটা কিন্তু আমারই ছিল। ক্রেডিট দিবে না?

- আরে, হ্যাঁ! মাঝ*রাতে যদি তুমি ওইসব মেসেজ না পাঠাতে, ওভাবে ফোন না করতে আর সি*গারেট ফিল্টারের ইস্যু তুলে ওর গায়ে হাত না তোলাতে তাহলে বাপু কিছুতেই এত সহজে ছাড়তো না আমায়। বুদ্ধি আছে তোমার মাথায়। হা হা হা!



(সমাপ্তি)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
গল্প নম্বর -০২

 গল্পঃমন_চুরি




টুং করে একটা ম্যাসেজ ঢুকলো আদৃতার ফোনে। "উই আর ফ্রেন্ডস ফর এভার "সেখানে যোগ করেছে আদৃতাকে। হোয়াটসঅ্যাপে একটা গ্রুপের মেসেজ। ক্লাস ফাইভ থেকে টেন পর্যন্ত একটা গার্লস কলেজে আর তারপর উচ্চমাধ্যমিকে কোএডে পড়তো আদৃতা। টিউশন পড়তে গিয়েও বন্ধুত্ব হয়েছে অনেকের সঙ্গে। গ্রুপে বন্ধুদের নাম দেখতে দেখতে অতীতে ফিরে যায় আদৃতা । কতোদিন পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আদৃতা মেসেজ করে তোরা তোদের সবার ফটো পোস্ট কর্ । কতোদিন দেখিনি তোদের ! বন্ধুরা যে যে মেসেজটা দেখেছে তারা সবাই ফটো পোস্ট করেছে । আদৃতা নিজেরও একটা ফটো পোস্ট করেছে। এখন বড্ড কর্মব্যস্ত সবাই। আদৃতার বান্ধবীদের প্রায় প্রত্যেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে । বন্ধুদের মধ্যেও ফটোতে দেখছে অনেক জনের ফ্যামিলি সহ ছবি পোস্ট করেছে। বেশ অবাক হয়ে যায়। তা কলেজ, ইউনিভার্সিটি, পি এইচ ডি,নেট দিয়ে ' এখন কলেজে জয়েন করেছে। এসব করতে করতে বয়স এখন প্রায় বত্রিশ প্লাস। বান্ধবীদের মধ্যে শুধু নীতার সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ আছে। গতমাসে উলুবেড়িয়া যাবার পথে ট্রেনে দেখা হয়েছিল সোমার সঙ্গে। এতো গল্প হয়েছিল সেদিন। সোমা তখন বলেছিল আমার কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে আবার তাদের সঙ্গে কয়েকজনের যোগাযোগ থাকবে । একটা হোয়াটস্অ্যাপে গ্ৰুপ খুললে সবার খোঁজ খবর পাওয়া যাবে।

 
 
আদৃতা বলেছিল গুড আইডিয়া ।আমাকে অ্যাড করিস । আজকে দেখে সেটা করেছে ওরা। " উই আর ফ্রেন্ডস ফর এভার" গ্ৰুপের নামটাও বেশ সুন্দর।

সোমার কাছেই আদৃতা খবর পেয়েছিলো অনির্বাণ, সৈকত টিচার। সুফল ইঞ্জিনীয়ারিং করে বিদেশে চাকরি করছে । সুজাতা হেল্থ ডিপার্টমেন্টে আছে।

  সোমা বলে এই দেখ্ ! চিনতে পারছিস? আমরা ওকে "হেবলি" বলতাম , কেমন দেখতে হয়েছে দেখ্।
  একটা ফটো দেখায় সোমা 
  
 আরেব্বাস!! এতো হেবলি অদিতি ! বাপরে, কি দেখতে হয়েছে রে ! 

  হ্যাঁ । দারুন সুন্দরী । অপ্সরা নামে একটা বিউটি পার্লার আছে অদিতির।

 বাহ। শুনে কি ভালো লাগলো। 
সোমার সঙ্গে গল্প করে সেদিন মনটা ভালো হয়ে গেছিল আদৃতার। জীবনের অনেকগুলো বছর দিতে হয়েছে তার এই লক্ষ্য পূরণের জন্য। এই সময়টুকুতে অনেক বন্ধু বান্ধবী এসেছে কিন্তু কলেজের জীবনের মতো এতো হৃদ্যতা তৈরি হয়নি কারো সঙ্গে । কলেজ জীবনের বন্ধুদের মধ্যে যে নিবিড়বন্ধন ,আবেগ, একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছিল এটা কিন্তু কলেজ ইউনিভার্সিটি'তে দেখতে পায়নি আদৃতা।

হঠাৎ ফোনে মেসেজ ঢুকলো একটা আদৃতার, আননোন নম্বর থেকে একটা মেসেজ, ডিপিতে গিয়ে দেখে অনিরুদ্ধ । বাবা ,কত স্মার্ট হয়ে গেছে , কে বলবে কতো মোটু, আর হাঁদারাম ছিলো। ওকে সবাই মোটু বলেই ডাকতো। 

খুব মনে পড়েছে সরস্বতী পুজোতে একটা হলুদ শাড়িতে কলেজ গেলে অনিরুদ্ধ এমন হাঁ করে ওরদিকে দেখছিল যে, ওর মুখের মধ্যে সৈকত একটা মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়ে বলেছিল মোটু তাকিয়ে থেকে লাভ নেই, এমন চেহারা হলে কেউ প্রেমে পড়বে না।

কথাটা মনে পড়তেই হেসে ফেলে আদৃতা। আর এখন কি হ্যান্ডসাম দেখতে হয়ে গেছে। অনিরুদ্ধ লিখেছে "কিরে চিনতে পারছিস ? আমি কলেজের মোটু, হাঁদারাম, তুই দিয়েছিলে নামটা মনে আছে? "

আদৃতা লেখে হ্যাঁরে, অনিরুদ্ধ প্লিজ ! লজ্জা দিস না। অনেক দিনের কথা। তখন তো তুই ঐরকমই ছিলিস।

  কবে কলেজে জয়েন করেছিস?

 কি করে জানলি ? আমার সঙ্গে তো কারো যোগাযোগ নেই তেমন! 

 আমি তোর খবরাখবর রাখি একটু । নীতার সঙ্গে ফেসবুকে তোর যোগাযোগ আছে ,ওই খবর দেয় আমাকে । আমি মাঝে মাঝে ফেসবুকে তোর প্রোফাইলে গিয়ে তোর খবর পেয়ে যায়।

  কেনরে ? হঠাৎ আমার খবর নিয়ে তোর কি লাভ? 

  বন্ধুদের খোঁজ নেওয়াটা সামাজিকতা বলে । এতে কেউ লাভ-ক্ষতি দেখেনা ।তোর মতো শুধু পড়াশোনা নিয়ে থাকি না । "বইপোকা" কোথাকার!!

 বাজে বকবি না তুই ! তোর মতো একবারেই বুঝতে পারতাম না তখন। কি করবো বল্। জেদ,আর অধ্যাবসায়ে এতোটা পথ আসতে হয়েছে।  
কোথায় থাকিস এখন ?

 যাদবপুরে একটা ফ্ল্যাট কিনেছি। কাছাকাছি আমার চেম্বার। তুই তো কলকাতায় আছিস । সানডে আয়, একটু বসে কফি খাওয়া যাবে আর গল্প করা যাবে। কতোদিন সামনাসামনি দেখিনি।

 গ্রুপে তোর ফ্যামিলির ফটো দিলিনা তো! দেখতাম।

 আচ্ছা দিচ্ছি।
অনিরুদ্ধ রিসেন্ট বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা ছবি পোস্ট করেছে গ্ৰুপে।

 
আদৃতাকেও দুটো ছবি পোস্ট করেছে অনিরুদ্ধ। অবাক হয়ে যাচ্ছে আদৃতা। সেই মোটুরাম, হাঁদারাম এখন হট, হ্যান্ডসাম।
 
 ফেসবুকে তোর কয়েকটা ফটো দেখেছি। আগের থেকে অনেক সুন্দরী হয়েছিস ।

 থ্যাঙ্ক ইউ । থ্যাঙ্ক ইউ। কেউ সুন্দরী বললে মন ভরে যায়। কিন্তু তুই কি আমার সাথে ফ্লার্ট করছিস ?

  সে তুই যা মনে করিস ! ভালো লাগে দেখতে তাই বললাম । পরের সানডে আসবি তো?

 আজ তো বৃহস্পতিবার। আপাতত কোনো কাজ নেই রবিবার, যাওয়া যেতে পারে । যদি কোন কাজ এসে যায় মাঝে তবে তোকে জানিয়ে দেবো। আচ্ছা এবার অফলাইন হতে হবে ট্রেন ঢুকছে হাওড়ায়।

 ওকে বাই।
রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প
  হাতে দুদিন সময় আছে । অনিরুদ্ধ কি এখনো ওর প্রতি দুর্বল? কি জানি না হতেও পারে ! কলেজ জীবনের কথা মনে পড়ে হাসি পেয়ে যায় আদৃতার। অনেক বছর পর সাক্ষাৎ হবে। দুজনে সাইন্স পড়েছে। মেডিকেলে চান্স পেয়ে অনিরুদ্ধ পড়তে চলে যায়। আর আদৃতা ফিজিক্স অনার্সে ভর্তি হয়। তারপর অনেক পথ পেরিয়ে আজ একটি কলেজের অধ্যাপিকা। অনিরুদ্ধর বাবা-মা শিক্ষকতা করতেন। বোন অন্তরা ওদের দুই বছরের জুনিয়র ছিল।

 

আদৃতার বাবা সরকারি অফিসে চাকরি করতেন রিটায়ার করেছেন । কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট কিনেছেন ।সেখানেই থাকে বাবা-মা আর মেয়ে।
মাঝেমধ্যে উলুবেরিয়া ঘুরে আসে আদৃতা। ওখানে কাকু ,কাকিমা , ও কাকুর ছেলে রজত থাকে। মাঝে মাঝে রজতও এখানে এসে থাকে। উলুবেরিয়া থেকে ফিরছিল কলকাতা তখনই হোয়াটস্অ্যাপে চ্যাট করতে থাকে অনিরুদ্ধর সাথে।
ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে নির্মলবাবু চাকরিতে অবসরকালীন প্রাপ্ত টাকা ,ও জমানো টাকা দিয়ে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলেন। খুব কাজে লেগে গেছে আদৃতা ও রজতের । পড়াশোনা করতে রজতকেও মাঝে মাঝে কলকাতাতেও আসতে হয়।

মাঝে দুদিন খুব ব্যস্ততায় কাটে। আজ রবিবার।
হলুদ একটা মটকা শাড়ি, কালো বোট নেক ব্লাউজ, চুল খোলা, ছোট্ট একটা কালো টিপ, লিপস্টিক, অক্সিডাইসের ঝোলা কানের দুল।
মা অর্পিতাদেবী মেয়ের সাজ অনেকক্ষণ দেখছিলেন এরপর কমেন্ট করেন।

 কিরে ! কতোদিন পর শাড়ি পরলি। খুব সুন্দর লাগছে । মাঝে মধ্যে শাড়ি পরতে পারিস তো ! কিন্তু কোথায় যাবি? আজ তো মনে হচ্ছে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে মিট করতে যাচ্ছিস ! তা কে সেই অভাগা ? যাকে ভবিষ্যতে কষ্ট পেতে হবে!

 মা তুমি কি ঘুরে ফিরে এক টপিকে আটকে যাও ! সে সব কিছু না । কলেজের বন্ধু অনিরুদ্ধর সঙ্গে কফির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে । কতোদিন পর দেখা হবে তাই একটু চমকে দিতে সাজলাম।
 
 চমকে দিতে ইচ্ছা হল কেন? ভালোবাসা আছে বলেই তো। ঐদিন আমরাও পেরিয়ে এসেছি । তাইনা বলো! বলেই নির্মল বাবুর দিকে তাকান।

 বাপি দেখ, মা কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে জ্বালাচ্ছে । অনিরুদ্ধর অন্য কোনো গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে বুঝেছো? তাই আমি ওইসব কিছু ভাবি নি। ছোটবেলার মোটু, হাঁদারাম এখন হ্যান্ডসাম ডঃ অনিরুদ্ধ সামন্ত।

 বাহ! বাহ! ডাক্তার আর অধ্যাপিকা জুটিটা ভালোই হবে তাইনা বলো।

 মা তুমি আবার শুরু করলে ।

  আচ্ছা , শোন্ অনিরুদ্ধ সঙ্গে একটা সেলফি অন্তত তুলিস। দেখবো কেমন মানিয়েছে দুজনকে।

 উফফ্! তুমি চুপ করো তো!একবার শুরু করলে হলো। ওর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা আর তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে দিলে! তুমি পারোও বটে!!

একটা উবের বুক করেছে । নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে মিনিট পঁচিশ সময় লাগলো। আদৃতা পৌঁছে দেখে ওর জন্য ওয়েট করছে অনিরুদ্ধ।
অনেক বছর পর আদৃতা অনিরুদ্ধ সামনাসামনি। দুজন দুজনকে দেখছে মুগ্ধ হয়ে। অনিরুদ্ধের পোশাক,অ্যাপিয়ারেন্স, স্মার্টনেস সবকিছু দারুণ।
অনিরুদ্ধ আদৃতার হাতটা ধরে নিয়ে যায় ওর বুক করা টেবিলে। দুটো কোল্ড কফির অর্ডার দিয়েছে অনিরুদ্ধ।
কেমন যেন একটা অস্বস্তি হয় আদৃতার । কি বলবে বুঝতে পারে না । দুজন দুজনকে দেখছে।
হঠাৎই অনিরুদ্ধ বলে তোকে এতো সুন্দর লাগছে, একটা ফটো তুলব? 
ভালোবাসার লাভ স্টোরি
আমার একার না, আয় দুজনেই তুলি বলে আদৃতা।
আচ্ছা বলে উঠে গিয়ে আদৃতার একেবারে ক্লোজ দাঁড়িয়েছে অনিরুদ্ধ। অদ্ভুত একটা অনুভূতি বুকের মধ্যে আদৃতার। অনিরুদ্ধের শ্বাস ওর কাঁধে পড়ছে।
আচমকা অনিরুদ্ধ ওর মাথা ঠেকায় আদৃতার মাথায়, বাঁ হাত রাখে কোমরে। আদৃতার শরীরে কেমন কাঁপন ধরে সেটা চোখে মুখে প্রকাশ পেয়ে যায়। রাঙা হয়ে গেছে মুখ। আদৃতা যে কারো এতো কাছে আসে নি। অনিরুদ্ধ কেমন একটা অধিকারবোধে ওকে ধরে রেখেছে। ভালো লাগছে আদৃতারও।কয়েকটা ফটো তোলে অনিরুদ্ধ।

এবার আমার কোমর ছাড়। সবাই দেখছে । তুই কি মেয়েদের সঙ্গে ফটো তুললে এই ভাবে তাদের কোমর ধরিস? 

 পারমিশন নেওয়া উচিত ছিল। তবে
ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন একেবারেই না। এই প্রথমবার আমি কারো কোমর ধরলাম ,খুব ইচ্ছা করলো তাই । যে ছোটবেলায় আমাকে পাত্তা দেয়নি তার।

 আচ্ছা ! প্রতিশোধ।

 না, ডিয়ার । ভালোবাসা । বন্ধুত্বের ভালোবাসা । বন্ধুত্বের দাবিতে ধরলাম তোর কোমর। তুই ভুলে গেলেও আমি তোকে ভুলিনি । তোর মুখে মোটু, হাঁদারাম বলা শব্দ দুটো আজও আমার কানে বাজে।

 সেদিনই তো সরি বললাম। প্লিজ আর লজ্জা দিস না।

তুইও লজ্জা পাস ? সেই ডাকাবুকো মেয়েটার এমন মিষ্টি লাজুক মুখ দেখলে প্রেমে পড়ে যাবো তো! 

 তুই না ! আচ্ছা এবার উঠবো।

এতো তাড়াতাড়ি কেন?

 কফি খাওয়ার অফার দিয়েছিলে ওটা তো হয়ে গেছে আবার কি? 

 এই তো সবে শুরু । আজ সন্ধ্যে সাতটা অব্দি আমার সঙ্গে থাকতে হবে যে!

 কেন রে ! কি করব এতোক্ষণ? মা-বাবা চিন্তা করবে।

 ফোন করে দে না প্লিজ । কতোদিন পর একসাথে হলাম । এতো তাড়াতাড়ি চলে যাস না।
আচ্ছা চল আমার গাড়িতে একটু প্রিন্সেপ ঘাট ঘুরে আসি।
গাড়িতে সুন্দর গান চালিয়েছে অনিরুদ্ধ। প্রেমের গান।
 দুজনে পৌঁছে পাশাপাশি বসেছে।
 
 তোর কি বয়-ফ্রেন্ড আছে আদৃতা?

  হ্যাঁ, আছে ।
 চমকে ওঠে অনিরুদ্ধ
কতদিনের সম্পর্ক?

 বছর চারেক হবে।

 কখনো ফেসবুকে একসঙ্গে দেখিনিতো!

প্রেম করি সেটা ঢাকঢোল পিটিয়ে দেখাতে হবে নাকি !

অনিরুদ্ধর মুখটা দেখে আদৃতার মনে মনে খুব হাসি পেয়েছে । কেমন যেন এক লহমায় মুখটা চুপসে গেছে । পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরিয়ে জলের দিকে তাকিয়ে আছে।

 কি করে তোর বয়ফ্রেন্ড?

  অধ্যাপক।
 
 কোন কলেজের? 

সব তোকে জানতে হবে কেন ? তোর গার্লফ্রেন্ড এর কথা আমি কি জানতে চাইছি !

 আমার সবাই এমনি ফ্রেন্ড। স্পেশাল কেউ নেই।

 সেকি ! এতো বছরেও কাউকে ভালোবাসিসনি?

  না । কেউ ছিল একজন। এখন নেই।

ওহঃ, সরি রে। এই দেখ্ দেখ্।কেমন জলের উপরটা। অস্তগামী সূর্যের আলো পড়েছে। কি সুন্দর! 

  বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আসিস নি আগে? কোথাও যাসনি ঘুরতে?

 না। তার সময় হয় না।
অনিরুদ্ধ ফোন বেজে ওঠে । মায়ের সঙ্গে কথা বলে অনিরুদ্ধ।
 চল্ আমাদের ফ্ল্যাটে।

   কেন ? এখন এইভাবে ?

 মা বললো তোর বন্ধুকে নিয়ে আয়। মাকে বলেছিলাম কলেজের বন্ধুর সঙ্গে মিট করতে যাচ্ছি তাই। চল্ চল্।

অনিরুদ্ধ আবার একটা সিগারেট ধরায়।
  তুই এতো সিগারেট কেন খাস অনিরুদ্ধ! নিজে ডাক্তার হয়েও।

 আমি বেশি খাই না । তবে যখন ডিপ্রেসড আর টেনশড থাকি তখন একটু বেশি খেয়ে ফেলি।

 এখন কোন্ চিন্তা মাথায়! 

 ও কিছু না চল্।
আদৃতা গাড়িতে বসে। অনিরুদ্ধ একমনে গাড়ি চালাচ্ছে।

 অন্তরা কেমন আছে রে ! 

  ভালো আছে। আমার একটা ভাগ্নাও হয়েছে । গোগোল দু বছরের এখন। ওরা এসেছে। 

আদৃতা কথা বলছে অনিরুদ্ধ শুনছে মাঝেমধ্যে কমেন্ট করছে।
অনিরুদ্ধ ওকে নিয়ে পৌঁছালে মাসীমা বলে ওঠেন "আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। এতোদিন পর বাবুর ইচ্ছা পূরণ হলো । তুমি এলে বাড়িতে।"

মা। তুমি না!! বলে অনিরুদ্ধ।

অন্তরা আদৃতাদি বলে জড়িয়ে ধরে । 
 কত সুন্দর হয়েছে তুমি। আগের থেকেও সুন্দর।
 
 তোর গোগোল কোথায় ? দেখছি নাতো!
 
ওর বাবার সঙ্গে খেলতে গেছে । এক্ষুনি এসে যাবে। ফোন করে দিচ্ছি।
একটু পরেই গোগল,দীপ চলে আসে।
সোফাতে বসে আছে অন্তরা, আদৃতা , দীপ, গোগোল , মেসোমশাই । গল্প করছে সবাই।

মাসীমা ঘরে বানানো মিষ্টি, স্ন্যাক্স, টেবিলে দিয়েছেন। 
খাবার দেখে গোগোল স্ন‍্যাক্স খেতে দৌড়ালে অন্তরা ওকে ধরে রেখেছে। এক্ষুনি সব ফেলে দেবে। বড্ড দামাল হয়েছে ।
দাদাকে ডেকে আন । ঠান্ডা হয়ে যাবে। বলেন অসীমা দেবী।
মা আমি গোগোলকে খাওয়াচ্ছি । আদৃতাদি তুমি একটু যাবে গো!

আদৃতা গিয়ে অনিরুদ্ধর ঘরের দরজা কয়েকবার নক করলে অনিরুদ্ধ দরজা খোলে। চোখে মুখে জলের ছিটে ।
চোখটা একটু লাল হয়ে আছে।

 তোকে ডাকছিলাম। মাসীমা কফি দিয়েছেন ঠান্ডা হয়ে যাবে।
 
ওহ। আচ্ছা। চল্ ।
তোর রুম দেখাবি না?
 ভীষনভাবে অগোছালো কিন্তু।
আদৃতা দেখে বেশ বড় বেডরুম । একটা ডিভান। পাশে একটা ছোট বেড টেবিল । একটা বড় আলমারী। একটা কম্পিউটার টেবিল। উপরে ল্যাপটপ রাখা। বুকস্লেফে কয়েকটা মোটা মোটা বই। এটাচ্ড বাথরুম । মেঝেতে পাতা কার্পেট। দুটো ইনডোর প্ল্যান্ট । একটা লাকি বাম্বু ।অন্যটা আদৃতা চেনে না।
বেশ গোছানো। একটুও অগোছালো নয় , বলে আদৃতা।

 
সবাই মিলে কফি খাচ্ছে আদৃতার ফোন বেজে ওঠে।
হ্যাঁ মা । বলো।

কোথায় ? কখন ফিরবি?
 
এইতো অনিরুদ্ধদের ফ্ল্যাটে । মিনিট দশেকের মধ্যে বেরুচ্ছি।

একেবারে বাড়িতে ! কি ব্যাপার?ইসিলিয়ে মাম্মি নে তুঝে চায়ে পে বুলায়া হ্যায়।

উফ্। মা। উঠে দূরে যায় আদৃতা। পাশে সবাই আছে শুনতে পাবে যে। মা তুমি না বড্ড জ্বালাও।

মাসীমা বলেন আদৃতা , মা কি বলছেন?

কখন ফিরবো জানতে চাইছে। 

দে না। একবার‌ দেখি বেয়ানের সঙ্গে কথা বলি।

মা তুমি বাড়াবাড়ি করবে না কিন্তু। তবে দেব।

আরে বাবা তুই দেনা। 

মাসীমা, মা কথা বলবে।

   কেমন আছেন?আমার আদৃতা জ্বালাইনি তো আপনাদের? 
 
 কি যে বলেন! কি মিষ্টি মেয়ে আপনার! 

 না না । একেবারে মিষ্টি নয় কিন্তু। আগেই বলে রাখলাম । খুব বিচ্ছু।

 আচ্ছা। সে বুঝে নেব।

  একটা ভিডিও কল করতে বলুন তো আদৃতাকে । আপনাদের দেখি।

  ভিডিও কল করো তো আদৃতা। মা দেখবেন আমাদের।

মা ওইরকমই । কিছু মনে করবেন না মাসীমা। 

  আমিও ওইরকমই। মায়েরা তাই হয়।

ভিডিও কলে সবার সঙ্গে কথা হয় অর্পিতাদেবীর।

সোমবার থেকে কলেজ । সেদিন সকালে মেসেজ পাইনি অনিরুদ্ধর। বেশ অনেক পরে মেসেজ আসে আদৃতার ফোনে। আদৃতা লেখে..

 কি ব্যাপার? এত লেট কেন?
 
অপেক্ষায় আছিস বুঝলে আগে দিতাম।

আসলে সকালেই পেয়ে যায় তো ! তাই।আচ্ছা রাখি রে। কলেজে বেরুতে হবে রেডি হচ্ছি।

দুদিন প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস, সেমিস্টারের চাপে গ্রুপটা খোলা হয়নি আদৃতার। আজ খুলেছে। কতো মেসেজ। গরম কফি নিয়ে বসেছে। কফিশপে ওর একার একটা ফটো দিয়েছে গ্রুপে অনিরুদ্ধ।
 বান্ধবীদের কমেন্ট এই হট এন্ড হ্যান্ডসাম ! কবে বিয়ে করছিস ? ইত্যাদি ইত্যাদি।
অনিরুদ্ধ ওর সঙ্গে তোলা ছবিগুলো আলাদা করে পাঠিয়েছে আদৃতাকে। দুজনকে বেশ লাগছে।

অর্পিতাদেবী নিজের কফি নিয়ে এসে বেশ গম্ভীর মুখে আদৃতার সামনে বসেন।

কি ব্যাপার ! গম্ভীর কেন? এনি প্রবলেম?

না । ভাবছি আর তো কোন অজুহাত নেই । এবার বিয়েটা দিয়ে দেব। 

কার বিয়ে?  

কার মানে কি? তোর। বুড়ি হয়ে গেলি তো! কবে করবি বিয়ে! 

করবো তো মা। আরো কিছুদিন পরে।

না । আর পরে না।অনিরুদ্ধের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

 শুনে গলায় কফি আটকে যায় আদৃতার। কাশতে থাকে।  
 অর্পিতাদেবী উঠে গিয়ে আস্তে আস্তে পিঠ চাপতে থাকলে ঠিক হয় আদৃতা।মুখে বলেন সাবধানে খাবি তো!
 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#3
গল্পঃমন_চুরি
পর্ব শেষ 
------------------------------
কে বলল তোমাকে? 

অসীমাদি ফোন করেছিলেন আজ।অসীমাদির বান্ধবীর মেয়ে । কলকাতায় থাকে । অনিরুদ্ধ ঠিক রাজি হয়নি । তবে আপত্তিও করেনি । দুই সপ্তাহ পর এনগেজমেন্ট ।ঐদিন রবিবার নেমন্তন্ন করেছেন আমাদের।

তুমি যেও । আমি যাব না।

মানে ? তোর বন্ধুর এনগেজমেন্ট তুই না গেলে হয় ! এতো অসামাজিক কেন তুই ? সেদিন তো দিব্যি খেয়ে এলি। যেতেই হবে তোকে ।আমি শুনবো না।

আদৃতা উঠে নিজের ঘরে গিয়ে কেঁদে ফেলে। এই কদিন ধরে কত স্বপ্ন দেখেছে অনিরুদ্ধকে নিয়ে। কতো আনন্দ পেয়েছে। কেন হলো এমন, ওর সঙ্গে।
কেন এমন করলো অনিরুদ্ধ!

সেদিন আর রাতে খেতে ওঠে না । মাথা ধরেছে বলে মাকে।
এই কদিন অনিরুদ্ধের মর্নিং মেসেজ ছাড়া আর কিছু মেসেজ আসে না ।

একদিন আদৃতা লেখে তোর গার্লফ্রেন্ড ছিল বলিস নি তো সেদিন। 

উত্তরে অনিরুদ্ধ "আমার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না, এখনও নেই । মা ঠিক করেছে আমার বিয়ে। আমাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হবে। বিয়ের আগে আমার হবু বউয়ের সঙ্গে মিটও করবো না ।একেবারে এনগেজমেন্ট , তারপর বিয়ে। ফটোতে দেখেছি।"

আমাকে পাঠাবি তোর হবু বউয়ের ফটো?

মায়ের কাছে আছে । মাকে বলবো পাঠিয়ে দিতে।

নারে থাক।

সেই। একেবারে এনগেজমেন্টের দিন দেখবি। বেশি দেরি তো নেই। আমাদের গ্রুপের সবাইকে ইনভাইট করবো । সবাই আসবে ।আনন্দ হবে বেশ।

লেখাটা পড়ে আদৃতার চোখের জল বাধ মানে না । ওর ভালোবাসার মানুষের আশীর্বাদ হবে আর সেখানে আনন্দ করতে হবে ভেবে আবার কেঁদে ফেলে।ওর মনে হয় সময় যেন থমকে যায়। ঐ দিন না আসে। কিছু ভালো লাগে না আর । এতো কষ্ট কেন হচ্ছে ওর ? অনিরুদ্ধের সাথে আগে যোগাযোগ ছিল না। তাহলে এই কদিনে এতো ভালোবাসলো কেন? নিজের মনকে শক্ত করতে চাইলেও পারছে না। সেই নোনা জলের ধারা গড়িয়ে যাচ্ছে।

রাতে অর্পিতাদেবী, নির্মলবাবু ,আদৃতা খেতে বসেছে।
নির্মলবাবু বলেন কি রে মা ! খুব চাপ যাচ্ছে এখন? চোখমুখ বসে গেছে আর খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে কদিন ধরেই দেখছি।

 হ্যাঁ বাবা। সেমিস্টার চলছে। 

  হ্যাঁরে! মনে হচ্ছে রাতে যেন ঘুমাচ্ছিস না । চোখ মুখ বসে গেছে ।এতো চাপ নিস না ।

 আচ্ছা মা ।তারপর খেয়ে উঠে যায়।
অর্পিতাদেবী নির্মলবাবু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে ফেলেন।

পনেরো তারিখ সকাল থেকেই বাড়িতে যেন ব্যস্ততা। তাড়াতাড়ি জলখাবার খেয়ে নিতে বলেন অর্পিতাদেবী। পার্লারের মেয়েটা আসবে। মা ডেকেছে । চুল বেঁধে দেবে আর হালকা মেকআপ হবে মায়ের।

 অর্পিতাদেবী পার্লারের মেয়েটাকে বলেন আদৃতাকে একটু ঠিক করে দাও তো। আমার মেয়েকে অনিরুদ্ধের হবু বৌয়ের থেকে যেন সুন্দরী লাগে, সেটা আমি দেখাতে চাই। নতুন কিনে আনা একটা সুন্দর শাড়ি , ব্লাউজ দেন ।
 
গাড়ি ভাড়া করে বেলা বারোটা নাগাদ পৌঁছে যায় ওরা। গাড়িতে যেতে যেতে সমানে আদৃতা চোখ মোছে মা বাবার চোখ এড়িয়ে। একটা লজের সামনে দাঁড়িয়েছে গাড়ি। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। গেটটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো আশীর্বাদ লেখা আছে। ভিতরে ঢুকে একটা রুম। দুটো সিংহাসনের রাখা। দেওয়ালে ফুল দিয়ে সাজিয়ে নাম দুটোর ওপর সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। আশীর্বাদের মুহূর্তে খুলবে ঢাকাটা।

 গাড়ি থেকে নামতেই দেখে মাসীমা, মেসোমশাই ,অন্তরা ,অনিরুদ্ধ।
 
অনিরুদ্ধ আদৃতার কানের কাছে গিয়ে বলে দারুন লাগছে তোকে। ভয় হচ্ছে। তোকে না মালা দিয়ে ফেলি।
আদৃতার বুকটা হু হু করে ওঠে । মনে হচ্ছে মুখে বলে দেয় কেন এমন করলি অনিরুদ্ধ ? আমি কোথায় কম ছিলাম তোর কাছে? কিন্তু বলতে পারেনা। গলায় কষ্টটা দলা পাকিয়ে আছে।

চল্ আমাদের গ্রুপের সবাই এবার আসবে। দুপুরে একসঙ্গে খাবো সবাই।

তোর হবু বৌ কখন আসবে?

এসে যাবে। তোর চোখটা লাল কেন রে?

কাজল পড়াতে গিয়ে চোখে লেগেছিল তাই।

দুপুরে হইহই করে সকলে খেতে খেতে।
শুধু আদৃতা চুপচাপ থাকে। আদৃতা দেখছে ওর মা-বাবা অনিরুদ্ধর বাবা-মার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে আর ওর রাগে গা জ্বালা করছে।

অনিরুদ্ধ ঠিক আদৃতার কাছে বসেছে। বন্ধুরা ফটো তুললে অনিরুদ্ধ আরো আদৃতার কাছে সরে আসছে। মনের আরো কষ্ট বাড়ছে আদৃতার।

আদৃতা উঠে পড়েছে। না আর সহ্য হচ্ছে না।
হলের মধ্যে এখন জনা পনেরো আছে। কয়েকজন বন্ধু বান্ধবী । আর আছে দুজনের বাড়ির লোকজন। বাকিরা অনেকে রুমের বাইরের দিকে।

আদৃতা অনিরুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বলে,
আমি কি খুব খারাপ ? তোর যে অপছন্দ তা তো মনে হয়না । তোর এনগেজমেন্টের আগেও আমার সঙ্গে এমন করে মিশছিস যেন আমি তোর প্রেমিকা। তাহলে কেন তুই আমাকে বিয়ে করবি না?
 ও মাসীমা আমার মধ্যে কি ছিল না, যে আপনি বান্ধবীর মেয়েকে বৌমা করবেন?
 বলেই আর সামলাতে পারে না নিজেকে, কেঁদে ফেলে আদৃতা।

অর্পিতাদেবী বলেন কি বলেছিলাম দিদি!
দেখুন ভেবে এখনো, সামলাতে পারবেন তো! স্পষ্ট কথা স্পষ্ট করে বলে দেবে কিন্তু।
সবাই হাততালি দিয়ে হেসে ওঠে।

অনিরুদ্ধ আদৃতাকে আনন্দে কোলে তুলে নিয়েছে। 

অন্তরা বলে দাদাভাই আমরা বাইরে চলে যাই।দাঁড়া একটু।
ফাঁকা রুমে অনিরুদ্ধ আদৃতাকে কোলে নিয়ে গিয়ে সাজানো চেয়ারে বসায় । সাদা কাপড়ে মোড়া নামদুটো সরিয়ে দেয়।
এনগেজমেন্টের দুটো নাম জ্বলজ্বল করছে অনিরুদ্ধ আদৃতা।
আবার কাঁদতে কাঁদতে কিল চড় ঘুষি মারতে থাকে অনিরুদ্ধকে।
আদৃতার দুটো হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে অনিরুদ্ধ। গভীর চুম্বনে দুজন। বাইরে থেকে হইহই করে ছুটে এসেছে বন্ধুরা। সাদা পাঞ্জাবিতে লিপস্টিকের দাগ অনিরুদ্ধর। আদৃতার ঠোঁট একটু ফুলে উঠেছে। বন্ধুরা বলে সবে তো আশীর্বাদ । এখনই এমন ‌ । ফুলশয্যার রাতে আদৃতার ঠোঁট থেকে রক্ত বেরোবে রে অনিরুদ্ধ। লজ্জা পেয়ে গেছে দু'জন।

 
 আমাকে এমন সারপ্রাইজ দেবার মানে কি ?কতো কেঁদেছি জানিস তুই!
 
সব জানি। আর তুমিও যে সোনা আমাকে কাঁদিয়েছিলে। এটা আন্টি আর মায়ের প্ল্যান।
তোর বয়ফ্রেন্ড আছে মাকে বললে , অর্পিতাআন্টিকে ফোন করে জানে এসব কিছু না । তুই আমাকে জ্বালানোর জন্য মিথ্যা বলেছিস। আমার প্রতি তোর একটা টান আছে ‌ , তুই যে আমাকে ভালোবাসিস আর সেটা সত্যি কিনা দেখার জন্যএই প্ল্যান করা হয়। তারপর তোকে খুব পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায় আমার বিয়ের কথা শুনে তোর পাগলপ্রায় অবস্থা।
আমার খুব কষ্ট হতো রে, মনে হতো তোকে বলে দিই। কিন্তু অন্তরা আর মা বলতে দেয়নি। তোর এই বিস্ফোরণটা দেখতে চেয়েছিলাম সবাই।
অর্পিতাআন্টি বলেছিলেন ওর নিজের মুখে স্বীকার করবে । যদি ভালোবাসে আর সেটাই দেখতে চেয়েছিলাম আমরা।
আই লাভ ইউ টু সোনা । সেই উচ্চমাধ্যমিক থেকে। যখন সৈকত বলেছিল তাকিয়ে লাভ নেই , এমন মোটু হলে মেয়েরা কেউ পাত্তা দেবে না । তখন থেকেই ভালোবেসেছি । তোর খোঁজখবর রেখেছি। বাড়িতে বলেছি বিয়ে করবো তো তোকেই।

সেই মুহূর্তে আদৃতার কাকু কাকিমা রজত এসে পৌঁছায় । সবাই জানতো। শুধু আমি জানতাম না।
নিজেকে খুব হাঁদা মনে হয় আদৃতার‌ । মনে হয় ওই সবথেকে বোকা‌ । ওর বোঝা উচিত ছিল ব্যাপারটা। 
মাকে তো চেনে নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান করেছে এটা আগে ভাবা উচিত ছিল।

অনিরুদ্ধ বলে সৈকতের আসার অপেক্ষায় আছি। ওর জন্য এটা সারপ্রাইজ।
একটু পরে বউ মেয়ে নিয়ে সৈকত আসে।
আদৃতা অনিরুদ্ধ কে একসাথে দেখে সৈকত বলে শালা সেই আদৃতাকেই। ধন্য তুই অনিরুদ্ধ।
তারপর সৈকতের হাঁ হয়ে যাওয়া মুখে একটা রসগোল্লা দিয়ে অনিরুদ্ধ বলে শোধ বোধ।
বন্ধুরা সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।

___________________সমাপ্ত_গল্প_________________

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#4
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

আমি একজন বিধবা মহিলা। আমার বয়স এখন ৬৬ বছর। দীর্ঘদিন কলেজে শিক্ষিকতা করার পর এখন অবসর জীবন যাপন করছি। আমার একটাই ছেলে, নাম রাজু। ওর বয়স ৪২, থাকে ইংল্যান্ডে। আমার স্বামী যখন মারা যান, তখন আমার বয়স ছিল ৩৬ বছর আর আমার ছেলের ১২। ছেলের কথা ভেবে আমি আর বিয়ে করিনি।
.
রাজুকে আমি একাই বড় করেছি। কখনো কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দিইনি ওকে। সবসময় চেয়েছি ওর সব আবদার মেটাতে। ও যেন না ভাবে আমার বাবা থাকলে এই ইচ্ছাটা অপূর্ণ থাকত না। ছেলেকে দেশের সবচাইতে ভালো কলেজ, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়িয়েছি। তারপর ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে ইংল্যান্ডে চলে গেল। সব খরচ একা হাতে সামলেছি, কারো কাছে হাত পাতিনি আমি। এতকিছুর মাঝে নিজের দিকে একদম খেয়াল করার সুযোগ হয়নি! সবসময় সন্তানের সাফল্য দেখতে চেয়েছি। তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করাই ছিল আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আমাকে সবাই সফল মা বলে। এই নিয়ে আমারও একধরনের চাপা গর্বও আছে। 
.
গত সপ্তাহে লাবণী নামে আমার এক পুরোনো বান্ধবীর সাথে দেখা হলো। ওর ছেলে আকাশ আমার ছেলের সাথে একই কলেজে পড়ত। আকাশের সাথে রাজুর খুব একটা মিল ছিল না।
.
এর কারণ অবশ্য আমি। আমি সারাক্ষণ চাইতাম রাজু শুধুমাত্র যারা ভালো স্টুডেন্ট আর সবসময় পড়ালেখা নিয়ে কম্পিটিশন করে, তাদের সাথে মিশুক। তাতে করে ও পড়াশোনার প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হয়ে উঠবে। 
.
মাঝে মাঝেই লাবণী বলত, "দেখ, আমরা দুজন কত ভালো বন্ধু। আর আমাদের ছেলেরাও একই কলেজে পড়ে, তার পরেও ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব হলো না।"
লাবণীর ছেলে আকাশ প্রত্যেক ক্লাসে এ্যাভারেজ পাশ করত। খেলাধুলায় খুব আগ্রহ ছিল আকাশের। সে কলেজের সমস্ত এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজে অংশগ্রহণ করত। কলেজের ওয়াল ম্যাগাজিনে ওর লেখা থাকত, ছবি আঁকত, এগুলো নিয়েই লাবণী খুশি ছিল। আমি মনে মনে হাসতাম, এগুলো দিয়ে হবে কি?
.
লাবণীর কথা, আমার ছেলে তো আর ফেল করে না! সবাই তো আর ফার্স্ট হয় না। আমার ছেলেটা পড়ালেখায় তেমন ভালো না, কিন্তু ওর অন্য কাজগুলো কত সুন্দর!

আমার কাছে লাবণীর এই কথাগুলো আদিখ্যেতা মনে হতো। ছেলের মাথায় তো গোবর আছেই, তার চাইতে বেশি গোবর মায়ের মাথায়! তা না হলে যে ছেলে পড়ালেখায় এত পিছিয়ে, তাকে কোনো মা কলেজের এক্সটা কারিকুলার এক্টিভিটিজ নিয়ে সময় নষ্ট করতে দেয়!

রাজু কলেজ পার করে নামী একটি কলেজে ভর্তি হলো আর আকাশ খুব সাধারণ এক কলেজে। তারপর যেমনটা হয়, ওদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেল।
.
গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই শপিং মলে ওদের সাথে দেখা। প্রথমে আমি ওদের দেখিনি। আকাশ আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে বলল, "আন্টি, আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি আকাশ।"

আমি আকাশকে আসলেই চিনতে পারছিলাম না। শেষবার ওকে যখন দেখি তখন মাত্র কলেজ ছেড়ে কলেজে যাবে। ছেলেমানুষি তখনো চোখেমুখে। আর এখন রীতিমতো ভদ্রলোক। তারপর আকাশ আমাকে লাবণীর কাছে নিয়ে যায়।

লাবণী একটা দোকানে বসা ছিল। ওর ছেলে ওকে নিয়ে শপিংয়ে এসেছে। ছেলে তার মায়ের জন্য কি সব রংচঙে থ্রিপিচ দেখছে! আমি আর লাবণী সবসময় শাড়ি পড়তাম, তাই আমি একটু অবাকই হলাম। লাবণী আমার কাছে বার বার জানতে চাইছিল, "তুই বল, আমি কোনটা কিনব, আমাকে কোনটায় মানাবে?" ওদিক থেকে আকাশ বলে বসে, "আন্টি আপনি যেটা পছন্দ করবেন, মা সেটাই কিনবে।" আমি একটা থ্রিপিচ পছন্দ করে দিলাম। আকাশ কখন সেই একই থ্রিপিচ দুইটা কিনেছে আমি খেয়ালই করিনি। আমি আর লাবণী গল্প করছিলাম কেনাকাটার ফাঁকে ফাঁকে।

এরপর আরো কিছু টুকিটাকি কেনাকাটা করে ওরা। ওদের দেখে মনে হচ্ছিল ওরা কোথাও বেড়াতে যাবে। আমি চোখের কোণ দিয়ে আকাশকে খেয়াল করছিলাম, ও ওর মায়ের সাথে কত সহজ স্বাভাবিকভাবে কথা বলে! যেন মনে হয় আকাশ ওর মাকে নয়, মেয়েকে নিয়ে বের হয়েছে শপিং করতে।

কেনাকাটা শেষে আকাশ আমাদের নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায়। মেনু দেখে পছন্দের খাবার অর্ডার দিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে, "মা খাওয়ার পরে কফি খাবে, নাকি আইসক্রিম?" লাবণী হেসে বলে, "আগে কফি খাব, তারপর আইসক্রিম খেতে খেতে বাসায় যাব।"
আমি বললাম, "আমার জন্য স্রেফ কফি।"
লাবণী সঙ্গে সঙ্গে বলল, "তাহলে আইসক্রিম বাদ।"
খেতে খেতে শুনলাম, আকাশ বেড়াতে যাচ্ছে কক্সবাজার, সেখান থেকে সেন্টমার্টিন। সাথে লাবণীকেও নিয়ে যাবে, যদিও সেটা একটা অফিসিয়াল ট্যুর।

আকাশের একটা বায়িং হাউস আছে। হাবভাবে বুঝতে পারলাম অনেক টাকা ইনকাম করে। আমাদের সাথে বসা অবস্থায় কতবার যে হোয়াটসঅ্যাপ চেক করল! মাঝে মাঝে টুকটাক অফিসিয়াল কল আসছিল। তার মানে শত ব্যস্ততার মধ্যেও মাকে নিয়ে শপিংয়ে এসেছে।

গল্পে গল্পে জানা হয়ে গেল আকাশের বউয়ের কথা। মেয়েটা একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছে। তাদের এক ছেলে, সে এখন কলেজে। ছেলেটা নাকি লাবণের ভিশন ন্যাওটা। লাবণী ওর ছেলে বৌয়ের সাথেই থাকে‌।
.
আমি একটা বিছানার চাদর আর কিছু দৈনন্দিন এটাসেটা বাজার করতে এসেছিলাম। যদিও কিছুই কেনা হয়ে ওঠেনি সেদিন। কেন জানি কিনতে ইচ্ছে হচ্ছে না আর। আমি শুধু আকাশকে দেখছিলাম। ও কত যত্নে আগলে রেখেছে ওর মাকে! স্যান্ডেলের দোকানে নিজে হাতে মায়ের পায়ে স্যান্ডেল পরিয়ে দিল। লাবণী অত দাম দিয়ে স্যান্ডেল কিনবে না। আকাশ তখন বলল, "মা, তুমি দাম দেখো কেন? তুমি শুধু দেখবে আরাম পাও কিনা?"

আকাশের কত খেয়াল তার মায়ের জন্য। সবশেষে ও সানগ্লাস কিনল মায়ের জন্য। লাবণী সানগ্লাস কিনবে না কিছুতেই। তখন আকাশ বলল, "মা, সানগ্লাস কিনতে হবে। কারণ তুমি যখন সমুদ্রের ধারে হাঁটবে, তোমার চোখে রোদ লাগবে।"

ওদের মা-ছেলেকে দেখে আমার এমন লাগছে কেন? ভেতরে ভেতরে এতটা ছোট হয়ে যাচ্ছি কেন? বারবার মনে হচ্ছে, আমি হেরে গেছি জীবনের কাছে। আমি একজন ব্যর্থ মা, যে তার ছেলেকে সবচাইতে সফল আর বড় বানাতে গিয়ে এত বড় বানিয়ে ফেলেছে যে, সেই ছেলের নাগাল আর কখনো পাবে না! 
.
এর মধ্যে কয়েকবার আকাশ রাজুর কথা জানতে চেয়েছে। রাজুর নম্বর চেয়েছে, আমি দিইনি। বলেছি বাসায় আছে, ডায়েরিতে লেখা। আসলে রাজুর অনুমতি না নিয়ে ওর নম্বর কাউকে দিলে ও রাগ করে। আমাকে বলে, "মা, আমি অনেক বিজি থাকি, যখন তখন কল দেবে না। এতে আমার ডিসটার্ব হয়। তুমি এখনো ইংল্যান্ড আর বাংলাদেশের সময় এ্যাডজাস্ট করতে পারো না কেন?"

আকাশ আমাকে আমার বাসায় নামিয়ে দিল। বিদায় নেবার সময় আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বলল, "আন্টি, এটা আপনার জন্য।" আমি দেখলাম ঠিক লাবণীর মতো আমার জন্যও একটা থ্রিপিচ কিনেছে ও। আকাশ বলল, "আপনারা দুই বান্ধবী একসময় একই রকম থ্রিপিচ পরে বেড়াতে বের হবেন।"
আমি অনেক কষ্টে অশ্রু গোপন করলাম। আকাশ আরো বলল, "আন্টি, আমার মোবাইল নম্বরটা রাখুন, আপনার যখন খুশি কল দেবেন, আমি এসে আপনাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব।"
আমি তখন বললাম, "তুমি তো বিজি থাকো।" আকাশ সাথে সাথে জবাব দিল, "আন্টি, আপনার জন্য আমি সব সময় ফ্রি আছি।"
তারপর আরো বলল, "আপনি তো একা থাকেন, আপনিও চলেন না আমাদের সাথে কক্সবাজার। আমার মায়ের একজন সঙ্গী হবে।"

আমি মনে মনে কতক্ষণ থেকে বলছি, "লাবণী, আমাকে নিবি তোদের সাথে কক্সবাজার? আমি সমুদ্র দেখব না। আমি শুধু দেখব একজন ছেলে তার মাকে কত আদর যত্ন করে তা!"
.
আমি আকাশকে বললাম, "লাবণীর সাথে কতদিন পরে দেখা আমার। আমারও ভালো লাগবে তোমাদের সাথে বেড়াতে গেলে। কিন্তু রাজুকে তো বলতে হবে। আমি আজ রাজুর সাথে কথা বলে কাল তোমাকে জানাব।"

লাবণী মনে হয় আমার কথায় অবাক হলো। আমি এত সহজে ওদের সাথে যেতে রাজি হবো এটা ও ভাবতেই পারেনি। লাবণী আমার হাত জড়িয়ে ধরে বলল, "শিলা, প্লিজ চল, আমার অনেক ভালো লাগবে।"

তারপর ওরা চলে গেল। আমি আমার আলোহীন ঘরে ঢুকে আজ আরো বেশি অন্ধকার দেখতে পেলাম। গতকাল রাতের বেলা রাজুর সাথে হওয়া কথাগুলো ভাবতে লাগলাম। বিয়েটা ও একা একা করল ইংল্যান্ডে, নিজের পছন্দের মেয়েকে। ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আসা নাকি অনেক ঝক্কি। তাই দেশে এসে বিয়ের করার প্রশ্নই আসে না। আমি টেলিফোনে ওদের কনগ্রাচুলেশন জানালাম। ওদের একটা মেয়ে হলো। এখন অনেক ছোট, বাংলাদেশের আবহাওয়া নাকি ওর সহ্য হবে না, তাই আসা যাবে না। এবছর আমার ইংল্যান্ডে যাওয়ার কাগজপত্র ঠিক করার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল ও ফোন দিয়ে বলল, এবার ছুটিতে ও ওর শ্বশুর শাশুড়ি সহ আমেরিকা যাবে বেড়াতে।

ও আরো বলল, "মা আমরা সবাই চেষ্টা করবো আগামী বছর দেশে আসার। তুমি মন খারাপ করো না।"
.
না, আমি মন খারাপ করিনি। আমি আজ আকাশকে দেখে বুঝতে পেরেছি, শুধু ভালো ছাত্র আর ফার্স্ট হওয়া ছেলেরাই সেরা সন্তান হয় না। আমি শুধু আমার ছেলেকে শিখিয়েছি ফার্স্ট হতে হবে পরীক্ষার খাতায় আর চাকরির বাজারে। সেরা মানুষ হতে হবে এটা আমি কখনো শেখাইনি। আমি ওকে কখনো বলিনি, বিপদে তোমার বন্ধুদের পাশে দাঁড়াবে। আমি ওকে কখনো বলিনি, দেশকে ভালোবাসবে, দেশের সেবা করবে। আমি শুধু শিখিয়েছি প্রতিযোগিতা।

ওর কিসে উন্নতি হবে সেটা ওকে শিখিয়েছি, কিন্তু সবাইকে নিয়ে ভালো থাকাটা শেখাতে পারিনি। আমি সবসময় রাজুকে ভালো জিনিস কিনে দিয়েছি, ওর চাহিদা পূরণ করেছি। কিন্তু আমার নিজেরও ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে বা থাকতে পারে তা ওকে শিখাইনি।

আমি রাজুকে কল দিব না কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে। এটা আকাশকে বলার জন্য বলা। আজ লাবণীর সাথে দেখা হওয়ায় ভালো হলো। এখন থেকে আমি আমার ভালো লাগা মন্দ লাগা নিয়ে ভাবব। ছেলেকে নিয়ে আমার ভাবনা শেষ।
ছেলেকে তার ভালো থাকার জন্য আমার সবকিছু দিয়েছি। ওর আর আমার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার নেই।

আশায় ছিলাম ছেলে আমাকে তার কাছে ইংল্যান্ডে বেড়াতে নিয়ে যাবে। গত দুই বছর ধরে আমার চলার টাকা থেকে একটু একটু করে জমিয়েছি ওদের জন্য কত কিছু কিনব বলে!
.
এবার থেকে আমি আমার জীবনের ছোট ছোট চাওয়াগুলো পূরণ করব। বাঁচব আর ক'টা দিন। খুব শখ ছিল হিমালয় আর মিশরের পিরামিড দেখব! একা একা কি এগুলো দেখা যাবে? তার চাইতে আগে লাবণীদের সাথে কক্সবাজার আর সেন্ট মার্টিন ঘুরে আসি, তারপরেরটা তারপর।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#5
গল্পঃ- সারপ্রাইজ। 

লেখাঃ- সাইফুল ইসলাম সজীব


আমার ছাত্রী ক্লাস নাইনে পড়ে। আজকে সে হঠাৎ করে বললো, " স্যার আপনি কি আমাদের বাসায় আসার আগে কান্না করছেন? চোখ দেখে মনে হয় যেন অনেক কান্না করেছেন। " 

আমি লজ্জিত হলাম, নিজেকে সামলে নিয়ে খুব আস্তে করে বললাম " আজকে আমি আসি, কাল বেশি সময় নিয়ে পড়াবো, কিছু মনে করো না। " 

- একটা কথা বলবো স্যার? 

- বলো। 

- আপুকে কি এখনো বলতে পারেননি যে আপনি তাকে ভালোবাসেন? 

- আমি তোমাকে অনেকবার বলেছি যে আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলবে না। শিক্ষক হিসেবে যদি অপছন্দ হয় তাহলে বলে দিবে কিন্তু অসম্মান করবে না। 

- আপনি শুধু শুধু রাগ করেন, আপনি নিজেই কিন্তু তার কথা বলেছেন আমাকে। তাছাড়া মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে সে কি আপনাকে শুধু বন্ধু মনে করে নাকি অন্যকিছু? 

কথা না বাড়িয়ে রূপাদের বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম, আজকে কোনকিছুই ভালো লাগবে না। তাড়াতাড়ি মেসে গিয়ে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে তাছাড়া উপায় নেই। চারদিন ধরে আফরিনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, নাম্বার বন্ধ, ফেসবুকে আসে না, বাসার সামনে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রই আবার ফিরে আসি কিন্তু দেখা হচ্ছে না। হঠাৎ করে এভাবে কোনদিন সে হারিয়ে যায় নাই বলে বেশি টেনশন হচ্ছে। 

- মেসে ফিরতেই আমার রুমমেট বললো, কিরে তুই কোথায় রে? আফরিন এসেছিল, তোর জন্য অপেক্ষা করছিল তারপর একটা গিফটের প্যাকেট রেখে চলে গেছে। 

আমি তাড়াতাড়ি করে বিছানায় বসে আফরিনের দেওয়া গিফট বের করলাম। প্যাকিং খুলে দেখি সেখানে একটা টকটকে লাল পাঞ্জাবি আর একটা সাদা পাজামা রয়েছে। কিছুক্ষণ পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে রইলাম, ভাবলাম " আমার জন্য অপেক্ষা করছিল কিন্তু কল করেনি কেন? আবার নতুন পাজামা পাঞ্জাবি দিয়ে যাবার রহস্য কি? " 

প্যাকেটের নিচে একটা লাল চিরকুট। আফরিনের হাতের লেখা সেটা বুঝতে অসুবিধা হলো না, কিন্তু কিসের জন্য এটা? কিছু না ভেবেই পড়তে শুরু করলাম, 

" হুট করেই বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে তাই যোগাযোগ রাখতে পারি নাই। বিয়ের শপিং করতে করতে আর বাসার সবকিছু গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছি। যেটুকু সময় পাওয়া যায় সেটুকু সময় আবার হবুবরের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তুমি তো আমার খুব ভালো বন্ধু তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও তোমাকে ভুলতে পারবো না। গতকাল শপিং করতে গিয়ে তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনলাম, এটা পরে তুমি আমার বিয়েতে আসবে। তোমার তো একটা পাঞ্জাবি আছে, কিন্তু সেটা পরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবার দরকার নেই। আগামীকাল দুপুর বেলা "আপ্যায়ন কমিউনিটি সেন্টারে" আমার বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। তুমি কিন্তু সেখানে অবশ্যই যাবে, বিষয় কার্ড দেইনি কারণ কিছু কিছু স্পেশাল মানুষ থাকে যাদেরকে নিমন্ত্রণপত্র দিয়ে আসতে বলতে হয় না। আসবে কিন্তু। "

" আফরিন। " 

চিরকুট পড়ে সমস্ত শরীর স্তব্ধ হয়ে গেল, এতদিন ধরে যাকে ভালোবাসলাম সে কালকে অন্যের হয়ে যাবে? কিন্তু তার দোষ কোথায়, আমি তো তাকে কোনদিন ভালোবাসি বলিনি। অনেকবার বলবো বলেও বলা হয়নি, ভেবেছিলাম সেও আমাকে ভালোবাসে কারণ আফরিনের কোন বয়ফ্রেন্ড ছিল না। 

পরিচয় হয়েছিল বিকাশের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে, সেই থেকে শুরু। সেদিন দুজনেই যখন সিরিয়াল ধরে অপেক্ষা করছিলাম তখন বারবার আমি তার দিকে তাকিয়েছি। মিনিট পাঁচেক পরে সেও বুঝতে পেরেছে, তবুও আমি তাকাতাম আর তার চোখে চোখ পড়তো। এভাবেই প্রায় আধা ঘণ্টা পরে সে সিরিয়াল পেল, নিজের কাজ শেষ করে বের হয়ে গেল আমি তখনও সিরিয়াল ধরে অপেক্ষা করছি, সে চলে যাবার পরে আফসোস করলাম ইস যদি পিছনে পিছনে যেতাম? পরক্ষণে চিন্তা করলাম " পিছনে গিয়ে কি হতো? " 

আমার বের হতে আরও কুড়ি মিনিট লাগলো, কিন্তু আশ্চর্য হলাম কারণ নিচে নেমেই দেখি সে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই সে আমার সামনে এসে বললো, 

- কেমন আছেন? 

আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম, তারপর আস্তে করে বললাম, 

- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন? 

- ভালো, ভিতরে বসে তখন আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছিলেন? 

- কিছু না। 

- তাহলে শুধু শুধু কেউ কারো দিকে তাকিয়ে রয় নাকি? 

- হ্যাঁ আমি তাকিয়ে থাকি। 

- কেন? 

- জানি না। 

- তারমানে মেয়ে দেখলেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে তাই না? 

- না তাই না, আপনার সামনের চুলগুলো দেখে ভালো লেগেছে। 

- হাহাহা, যাবেন কোথায়? 

- খালিশপুর, পৌরসভার মোড়। 

- বাহহ, আমিও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পর্যন্ত যাবো তাহলে চলেন একসঙ্গে যাওয়া যাক। 

এটাই সেই পরিচয়, তারপর থেকে পরিচিত হতে হতে বন্ধু আর আপনি থেকে তুমি। আমার মেসের এক বড়ভাই সবসময় বলতেন " ভালো একটা মেয়ে বন্ধু থাকলে নাকি গার্লফ্রেন্ডের দরকার হয় না। কিন্তু ভয়ের বিষয় হচ্ছে, বন্ধু থেকে একসময় প্রেম হয়ে যাবে, তখন যদি সেই প্রেম পূর্নতা না পায় তাহলে তার বেদনা ভয়ঙ্কর। " 

হুমায়ুন আহমেদ বলে গেছেন " একটা ছেলে আর একটা মেয়ে অবশ্যই বন্ধু হতে পারে কিন্তু তারা একসময় প্রেমে পড়বেই। হয়তো সারাজীবনের জন্য নয়তো ক্ষনিকের জন্য, হয়তো দুজনেই বা যেকোনো একজন। কিন্তু প্রেমে তারা পড়বেই। " 

(২)

রাত আটটা বেজে গেছে, আমি আফরিনদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। নাম্বার বন্ধ না হলে কল দিয়ে বের হতে বলতাম কিন্তু তাকে কিছু বলার উপায় নেই। বাড়িটা মরিচ বাতি জ্বালিয়ে সাজানো হয়েছে, সকাল বেলা যখন আসলাম তখন তো ছিল না। মনে হয় তার পরেই সবকিছু লাগানো হয়েছে, রাস্তা দিয়ে যে যাচ্ছে সেই বুঝতে পারছে এটা একটা বিয়ে বাড়ি। রাস্তার পাশে ছোট একটা দোকান আছে, সেখানে একটি মহিলা শুধু চা সিগারেট বিক্রি করে। আশেপাশে আর কোন দোকান নেই, তবে এখানে কাস্টমার ও কম। আমি সেখানে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম 

- আন্টি এ বাড়িতে কারো বিয়ে হচ্ছে নাকি? " 

- হ বাজান, আফরিনের বিয়ে। 

- আমি চুপ করে রইলাম। 

আধা ঘণ্টা পরে হঠাৎ মোবাইলে কল এলো, বের করে দেখি আফরিন কল করেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে বললাম, 

- কেমন আছো? 

- ভালো আছি, কিন্তু তুমি আমাদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমার রুমমেট তোমাকে কিছু দেয় নাই? 

- হ্যাঁ দিয়েছে আর সেজন্যই তোমার কাছে ছুটে এসেছি, তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। 

- কি কথা? আর যদি কিছু বলার থাকে তাহলে সেটা পরে বলিও, কারণ বাড়ি ভর্তি মেহমান আছে আর তারা সবাই কি ভাববে? 

- পরে বলতে পারবো না, আজকেই বলতে হবে নাহলে আর কোনদিন বলা হবে না। 

- বাড়ি ভর্তি মেহমান সজীব, আমি এখন কীভাবে তোমার সঙ্গে কথা বলবো। আচ্ছা ঠিক আছে, যা বলার তাড়াতাড়ি বলো আমি শুনছি। 

- মোবাইলে না, তুমি কি একটু আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে? সামনাসামনি বলতে চাই। 

- পাগল হয়ে গেছ? অসুস্থ তুমি? 

- প্লিজ আফরিন প্লিজ প্লিজ প্লিজ। 

- আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি বাসার মধ্যে ঢুকে সোজা ছাদে উঠে যাবে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তুমি আমার বন্ধু সেটা বলবে। আমি ছাদে যাচ্ছি। 

ডিসেম্বর মাসের কনকনে ঠান্ডা, বাসা থেকে বের হবার সময় শীতের কোন কাপড় আনিনি। পরনে যে গেঞ্জি ছিল সেটা পরেই এসেছি কিন্তু ছাদে দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপুনি উঠে গেছে। এদিকে মনের মধ্যে ভয়ও লাগছে কারণ এভাবে কারো সঙ্গে কথা বা দেখা করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। 

- শীতের কাপড় কোই? 

চমকে উঠলাম, হঠাৎ করে আফরিন কথা বলাতে ধাক্কা খেয়ে পিছনে ফিরে তাকালাম। 

- কি বলছি তোমাকে? শীতের কাপড় কোই? 

- মনে ছিল না, তাড়াহুড়ো করে বের হলাম নাহলে তো নিয়ে আসতাম। 

আফরিন তার গায়ের চাদরটা খুলে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, 

- ধরো। 

- কিন্তু তুমি? 

- আমার সুয়েটার আছে গায়ে, আর তাড়াতাড়ি বলো কি বলবে তুমি? 

আমি চাদর জড়িয়ে আবছা আলোয় চকচকে আফরিনের চোখে তাকিয়ে রইলাম। 

- কি হয়েছে বলো না কেন? 

- তোমার কি সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে যাবে? 

- আজব মানুষ তুমি, বাড়ির পরিবেশ দেখে কি বুঝতে পারো না এটা বিয়ে বাড়ি? 

- বুঝতে পারছি কিন্তু মনকে বোঝাতে পারি না। 

- মানে? 

- আমি তোমাকে ভালোবাসি আফরিন, বিশ্বাস করো প্রচন্ড ভালোবাসি। কিন্তু কোনদিন বলিনি কারণ আমাদের সম্পর্কটা শুধু বন্ধুর মতো ছিল না তাই এটাকে অনেক কিছু ভাবতাম। 

- সজীব...! আগামীকাল আমার বিয়ে আর তুমি এখন আমাকে ভালোবাসার কথা বল? তোমার কি সামান্য জ্ঞান নেই? 

- বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ছাড়া হয়তো বাঁচতে পারবো ঠিকই কিন্তু ভালো থাকতে পারবো না কোনদিন। আমার জীবনের দৈনিক প্রতিটি কাজে তুমি মিশে গেছ, সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তুমি মিশে আছ। 

- একজন ভালো বন্ধু হিসেবে আমার যতটা করা দরকার আমি করেছি সজীব, কিন্তু সেটা তোমার কাছে অন্যরকম অনুভূতি কেন? তুমি একজন অগোছালো মানুষ ছিলে তোমাকে সেই জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছি। তোমার জীবন এমন করে সাজিয়ে দিয়েছি যাতে অন্য দশটা ছেলে তোমাকে দেখে তোমার মতো চলতে চায়। 

- তুমি চলে গেলে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে, আফরিন প্লিজ তুমি আমার জীবনে চলে আসো। তুমি ছাড়া আমাকে কেউ এমন করে বুঝবে না, তুমি তো সবকিছু বুঝো। 

- সজীব, বিয়ের সবকিছুই ঠিক আর মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনের এখানে সম্মান জড়িত। তোমার হাত ধরে এই নিস্তব্ধ রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে পারি কিন্তু সেটা হবে স্বার্থপরতা। 

- আমি চুপচাপ। 

- তুমি আমাকে ভালোবাসো তাহলে আগে বলনি কেন? আমি তোমাকে নিয়ে নতুন করে চিন্তা করে দেখতাম, বাবার কাছে বলতাম। 

- আমি চুপচাপ। 

- এখন এসব পাগলের মতো কথা বন্ধ করে তুমি চুপচাপ মেসে গিয়ে ঘুমাও। দুপুর বেলা পাঞ্জাবি পাজামা পরে বিয়ের অনুষ্ঠানে এসো, আমার সঙ্গে তখন দেখা হবে। 

- আমি চুপচাপ কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পরছে। 

- আমি তাহলে গেলাম, প্রচুর লোকজন বাড়িতে, কে কখন ছাদে আসবে তখন আবার আরেকটা কেলেঙ্কারি। 

আফরিন হাঁটা শুরু করেছে আর আমি তাকে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর তাকে ঘুরিয়ে সামনে থেকে বুকের সঙ্গে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম, 

- তুমি একটা বার ভেবে দেখ। 

মিনিট পাঁচেক সেভাবেই জড়িয়ে ধরে ছিলাম, তারপর আফরিন আস্তে আস্তে আমাকে ছাড়িয়ে দিয়ে বললো, 

- নিজেকে শক্ত করো আর আমার দিকটা একটু ভেবে দেখো, জড়িয়ে ধরছো তাতে কিছু মনে করি নাই। এবার ভদ্র ছেলের মতো মেসে গিয়ে খেয়ে তারপর ঘুমাও, মেসে কি রান্না হয়েছে? 
নাকি আমি খাবার দিয়ে দেবো? 

- থাক দরকার নেই। 

- বাড়িতে মেহমান তাই গরুর মাংস আছে, তুমি বরং অপেক্ষা করো আমি একটা বাটিতে করে নিয়ে আসি। বিয়ের পরে তো আর কোনদিন এই আফরিনের খাবার খেতে পারবা না। আজকেই শেষ খাবার নিয়ে যাও, কেমন? 

আমি চোখ মুছে দাঁড়িয়ে রইলাম, আফরিন নিচে চলে গেছে। কিছুক্ষণ পরই ছাদে এসে আমার হাতে বাটি ধরিয়ে দিয়ে বললো, 

- এই নিয়ে কতটা বাটি তোমার কাছে গেল তার হিসাব নেই। তুমি কোনদিনই বাটি ফেরত দাও না তাই সবসময় আমাকে বাটি কিনতে হয়। 

- কিন্তু খালি বাটি ফেরত দিতে লজ্জা করে তাই দেওয়া হয় আফরিন। 

- সমস্যা নেই, এখন তুমি যাও তাহলে আর চাদর ভালো করে জড়িয়ে নাও নাহলে ঠান্ডা লাগবে। 

(৩) 

কিছুতেই ঘুম পাচ্ছে না। 
রাত পোহালে প্রিয় মানুষটা অন্য কারো সঙ্গে নতুন করে জীবন শুরু করবে। খুব সকালে উঠে কেউ কল দিয়ে ফজরের নামাজ পড়তে বলবে না, কেউ আর বলবে না যে নামাজ পড়ে পাঞ্জাবি টুপি পড়া অবস্থায় আমার বাসার সামনে আসো, সকাল বেলা হাঁটা খুব ভালো। মেসের মধ্যে খাবার রান্না না হলে কেউ আর বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসে আমাকে দেবে না। শপিংয়ে গেলে আর সে হয়তো আমাকে সঙ্গে নেবার জন্য খুঁজবে না। তার মন খারাপ হলে কোনদিন বলবে না " চলো আজকে রূপসা সেতু থেকে ঘুরে আসি "। 

আমি গ্রামের বাড়িতে গেলে বারবার কল দিয়ে কেউ কবে ফিরবো সেটা জিজ্ঞেস করবে না। সে বলবে না তোমাকে বড্ড মিস করি তুমি তাড়াতাড়ি শহরে আসো। নাকি গ্রামে গিয়ে চাচাতো মামাতো বোনের প্রেমে পড়ছো? খবরদার খবরদার তাহলে কিন্তু একদম ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো বলে দিলাম। 

কখনো ভাবিনি প্রতিদিন নিয়ম করে এসব যত্ন একদিন বদলে যাবে। কিন্তু গত চারদিন ধরে যখন সে যোগাযোগ করে নাই তখনই বুঝতে পেরেছি যে আমার ভাবনার মধ্যে কোথাও একটা বিশাল ভুল হয়ে গেছে। নাহলে যিনি চারদিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সে আগামী চার মাস, চার বছর কিংবা চার যুগ অনায়সে পার করবে। 

জীবন নিয়ে আমি গভীর ভাবনার মধ্যে পরলাম কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে। বহুদূর এসে যখন নিজের গন্তব্য ভিন্ন জানতে পারি তখন এতটা পথ হতাশায় ডোবাচ্ছে। তবুও মনের মধ্যে একটাই প্রশান্তি আসে কারণ তাকে বিয়ের আগেই বলতে পেরেছি। কিছু কিছু মানুষ জীবনে চাইলে তাকে পাওয়া যায় না, পাওয়ার জন্য ভাগ্য দরকার।

বেশি কিছু দরকার নেই, জীবনে একটা গোছানো মানুষ দরকার, যার সঙ্গে মন খারাপের গল্প মুখ দিয়ে বলতে হবে না। অভিনয় করে গাধার মত
হাসতে থাকলেও যে ঠিকই বুঝে ফেলবে হাসিটা মিথ্যা। আমার সবার স্বপ্ন ও ইচ্ছে গুলো বড্ড বেশি অবাধ্য, ঘুম এলেও মাঝে মাঝে ঘুমাতে ইচ্ছে করে না, ভাবতে ভালো লাগে। 

এমন একটা জীবন সঙ্গী দরকার, যার একটু শীতল কণ্ঠ শোনার জন্য তোমার হৃদয়ে বারবার সেতার বাজায়। তার স্পর্শে তোমার শরীরে নাড়া দেয় কোন এক ফাগুনের প্রথম ছোঁয়া। 

প্রিয় সেই মানুষের অপেক্ষায় হয়তো আমি মন খারাপ করে অপেক্ষা করছি পৃথিবীর কোন এক নির্জন প্রান্তে। 
নিষ্ঠুর পৃথিবী কারো "দরকার" বুঝে না, মনের আবেগ বুঝতে চায় না। যদি বুঝত তাহলে সত্যি যারা ভালোবাসে তারা কখনো হতাশ হয়ে চোখের পানি মুছে রাত্রি কাটাতো না। 

(৪) 

মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল, ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি আফরিন কল করেছে। রিসিভ করার আগে সময় দেখে অবাক হলাম কারণ দুপুর সাড়ে বারোটা পেরিয়ে গেছে। 

- কোথায় তুমি? 

- ঘুমাচ্ছি। 

- কিহহহ? মেহমানরা সবাই আসতে শুরু করেছে আর তুমি এখনো ঘুমে? তাড়াতাড়ি উঠে গোসল করে পাজামা পাঞ্জাবি পরে কুড়ি মিনিটের মধ্যে কমিউনিটি সেন্টারে আসবা। নাহলে কিন্তু জীবনে আর কোনদিন এই আফরিনের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না তুমি। 

কল কেটে গেল, গতকাল রাতে সারারাত ঘুমাতে পারি নাই তাই সকাল বেলা ফজরের অনেক পরে ঘুমিয়েছি। বিছানা থেকে উঠে গোসল করতে গেলাম, কিছুক্ষণ কাঁদলাম। তারপর গোসল করে এসে রুমে প্রবেশ করে তৈরি হলাম। মেসের সবাই প্রেমিকার বিয়ে খেতে যাচ্ছি বলে ঠাট্টা করতে লাগলো, জীবন বড়ো রহস্যময়। 

কুড়ি মিনিটের পরিবর্তে বত্রিশ মিনিটে কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হলাম। আমার সঙ্গে কার্ড নেই, কেউ জিজ্ঞেস করলে আফরিনের বন্ধু বলে যদি পরিচয় দেই তাতেই হবে। কিছুক্ষণ চারিদিকে ঘুরলাম, বরকনে বসার যায়গা এখনো ফাঁকা হয়ে আছে। সেখানে বড় বড় করে লেখা আছে শুভ বিবাহ " আফরিন তামান্না + জুনায়েদ ফয়সাল "

হঠাৎ করে পিছন থেকে আফরিন বলে উঠলো, 

- বাহহ অসাধারণ লাগছে। 

আমি পিছনে ফিরে তাকালাম, আফরিনকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। তার পরনে লাল একটা শাড়ি এবং সেটা আমার পাঞ্জাবির সঙ্গে ম্যাচিং করা কালার। সাধারণত কাপল ড্রেস এভাবে দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা কি কাপল? 

- অবাক হচ্ছ? 

- হ্যাঁ। 

- ভাবছো আমার বিয়ে আর আমি তোমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলি তাও আবার কনের সাজে সজ্জিত না হয়ে। 

- হ্যাঁ। 

- তোমার কি মনে আছে, আমাদের বাসার যিনি বাড়িওয়ালা তার মেয়ের নামও আফরিন? 

- চমকে গেলাম, তবুও বললাম হ্যাঁ। 

- আজকে সেই আফরিন আপুর বিয়ে, আর তুমি আমি সবাই এখানকার মেহমান। 

- মানে? 

- খুবই সহজ, তোমার কাছ থেকে ভালোবাসার কথা শোনার জন্য সপ্তাহ খানিক ধরে আমার দীর্ঘ পরিকল্পনা। ক্ষমা করে দাও প্লিজ, গতকাল রাতে তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি। আমি কিন্তু সত্যি সত্যি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নাই কিন্তু আজকের এই মুহুর্ত দেখার বড্ড লোভ ছিল। 

- তাহলে আমি তোমাকে পাচ্ছি? 

- পাচ্ছি মানে? একটা বছর ধরে যে মানুষটাকে একটু একটু করে পুরোটাই নিজের মতো সাজিয়ে নিলাম সেই মানুষটাকে আরেকজনের জন্য রেখে আমি কোথায় যাবো? 

- জানি না। 

- তুমি বড্ড বোকা গো সজীব মিয়া, তোমার প্রতি আমার অনেক অভিমান গো। আচ্ছা বাদ দাও তো এখন চলো তোমার সঙ্গে সবকিছু ঘুরে দেখবো। 

- চলো। 

- চারিদিকে অনেক ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তুমি আমার হাত ধরবে নাকি আমি তোমার হাত ধরবো, বলে দাও। তাহলে সবাই বুঝতে পেরে যাবে যে আমার সিট ফাঁকা নেই হিহিহিহি। 

- তোমার আত্মীয় স্বজনরা আছে তারপর নিশ্চয়ই বাসার অনেকেই আছে, যদি কেউ দেখে? 

- আমি কি তোমার মতো নাকি?

- মানে? 

- এই অনুষ্ঠানে আমার যত পরিচিত মানুষ আছে তারা সবাই জানে যে " আফরিনের একটা ভিতু ও বোকাসোকা বয়ফ্রেন্ড আছে, সেই মানুষটার নাম সজীব। বোকাসোকা হলেও সে অনেক ভালো, যার সঙ্গে চোখ বন্ধ করে আফরিন বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবে। " 

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম, আফরিনের চোখের মধ্যে নিজের চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চারিদিকে কত মানুষ কিন্তু তবুও কোন খেয়াল নেই আমার, সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে সারারাত ঘুমাতে পারি নাই বলে দিনের বেলা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি। 

কিন্তু না, এটা বাস্তব। আফরিন আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো, একটু পরে একটা লোকের সমানে গিয়ে বললো, 

- বাবা ওর নাম সজীব, যে লোকটা তোমার এই পাগলি মেয়েকে মনে মনে অনেক ভালোবাসে সেই সজীব। 

আমি আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম, আঙ্কেল আমার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে আবার গল্প করতে লাগলো। আফরিন তখন ও থামছে না, ঘুরে ঘুরে পরিচিত অনেকের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। 

- হঠাৎ করে বললাম, আমাকে গতকাল রাতে যদি বলতে তাহলে কি হতো? 

- হিহিহি, তাহলে যে তুমি সারারাত জেগে ছিলে সেই জেগে থাকা হতো না। আমি তো তোমার সঙ্গে খেতে বসবো তারপর তুমি খাবার সময় ঘুমে যবুথবু হবে আর আমি তোমার প্লেট থেকে মাংস চুরি করবো। 

বরের গাড়ি প্রবেশ করলো, সবাই সেদিকে চলে গেল, আফরিন তখন আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো, 

" শুনছো, আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে এমনি করে তুমি একদিন আমাকে নিতে আসবে। তারপর আমিও তিনবার কবুল বলে তোমার সঙ্গে চলে যাবো, আর পাশে রবো জীবনের শেষ সূর্যাস্ত দেখার জন্য। " 

- আমি বললাম, তোমার কাছ থেকে পাওয়া অনেক কিছুর মধ্যে তুমি আজ যেটা দিলে সেটা তোমার তরফ থেকে " সারপ্রাইজ "। 

সমাপ্ত। 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)