Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
- একটা মেয়ের লাশ বস্তাবন্দি করে বাথরুমে রাখা আছে। এখনই সেই লাশ নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে, মেয়েটা বিয়ের পাত্রী ছিল।
- কার বউ বাবা?
- আমিও জানি না, কাজের বিনিময়ে টাকা পাবো। কার লাশ সেটা জেনে আমাদের কোনো লাভ আছে নাকি?
- আমার আর এসব করতে ভালো লাগে না বাবা, খুব খারাপ কাজ করি আমরা।
- আর ছ'মাস পর এসব ছেড়ে দেবো। তারপর তোকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে আমি গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো।
- তুমি বছর খানিক ধরে বলছো এসব ছেড়ে দিবে কিন্তু এখনো সেই সম্ভাবনা নেই।
- এবার আর কথার নড়চড় হবে না।
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল সাব্বির। কিছুক্ষণ আগে তার বাবা কল দিয়ে তাকে এই বাড়ির ঠিকানা দেয়। তারপর এখানে তাকে আসতে বলে দ্রুত। সাব্বির এখানে আসার আগেই বুঝতে পেরেছে তাকে ডাকার কারণ। তার বাবা প্রায়ই এসব লাশ গুম করার কাজ করেন। সেই লাশ দাফন করা কিংবা বেশিরভাগ সময় নদীতে ফেলে দেওয়ার কাজটা করে সাব্বির।
কিন্তু আজকে তার আসতে মোটেও ইচ্ছে ছিল না। তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বে আসতে হয়েছে, আর এখন দ্রুত লাশটা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে চায় সে। কেবল সন্ধ্যা হয়েছে, লাশ নিয়ে পদ্মা নদীতে যেতে যেতে অনেক রাত হবে। আর সেই রাতের নিস্তব্ধতায় চুপিসারে কাজটা শেষ করে সে ফিরে আসবে ঢাকায়।
--------
এক দিন আগে।
পাত্রীকে কবুল বলাতে এসেই কাজি সাহেব অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা গেলেন। পাত্রীর আর কবুল বলা হলো না। বিয়ে বাড়িতে তখন হৈচৈ পড়ে গেছে, সবাই যে যার মতো ছোটাছুটি করতে লাগলো।
কিন্তু মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে গেল। কারণ পাত্রীকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কাজি সাহেবের ব্যাপার নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিল। পাত্রীর সঙ্গে যে মেয়েটা ছিল তাকেও অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিন্তু তার মাথা থেকে রক্ত বের হচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে তাকে শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
বিয়ে বাড়িতে কাজি সাহেবের মৃত্যুর সঙ্গে তখন পাত্রীর পালিয়ে যাওয়ার যোগসূত্র আছে বলে সবাই আলোচনা করতে লাগলো। যে যেমন ইচ্ছে তেমন করে মতামত দিতে শুরু করেছে।
কেউ বলছে, পাত্রী নিজেই হয়তো মেয়েটাকে আঘাত করে পালিয়ে গেছে। মনে হয় বিয়ে করতে রাজি ছিল না তাই পরিকল্পনা করে সবকিছু করা হয়েছে। আর কাজি সাহেবকে এ বাড়িতে আসার পরে হয়তো বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছে।
একজন বললো, বাহিরের কেউ অবশ্যই জড়িত ছিল কারণ কাজি সাহেবকে তো পাত্রী নিজের হাতে খাওয়াতে পারে নাই। আর এমনও হতে পারে যে শত্রুদের মধ্যে কেউ করেছে, যারা আগেই প্ল্যান করেছে সবকিছু।
কাজি সাহেবকে বিষক্রিয়া করে মারবে তারপর হৈচৈ পড়ে গেলে তারা পাত্রীকে নিয়ে যাবে। মনে হয় নিজেদের মধ্যে কেউ হতে পারে, নাহলে এমন কাজ অপরিচিত কেউ কীভাবে করে?
বিয়ে বাড়িতে এখন ভিন্ন ভিন্ন আলোচনাসভা শুরু করেছে। কাজি সাহেবের লাশটা রাখা হয়েছে বাহিরে, পুলিশ এসে যা করার করবেন। অনেকে বলছেন তখন যদি পাত্রীর রুম থেকে ধরাধরি করে লাশ বের না করত। তাহলে পাত্রী পালাতে পারতো না। থানায় খবর দেওয়া হয়েছে, একটু পরে হয়তো পুলিশ এসে যাবে।
-----
সন্ধ্যা থেকেই অনবরত কান্না করছিল মাহিশা। ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হচ্ছে তাই কষ্টের শেষ ছিল না। তবুও মা-বাবার কথা ভেবে আর ভাগ্যের উপর বিশ্বাস রেখে সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিল আল্লাহর হাতে।
কিন্তু কাজি সাহেবের এমন আকস্মিক মৃত্যু তার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলো। মুহূর্তের মধ্যেই তার সন্দেহ চলে যায় নিজের বয়ফ্রেন্ড মাহিনের প্রতি। কারণ মাহিন তাকে বলেছিল, " যেভাবেই হোক আমি এই বিয়ে হতে দেবো না, এতে করে আমাকে যতটা নিচে নামতে হয় ততটাই নামবো। "
বুকটা কেঁপে ওঠে মাহিশার। মাহিন নিশ্চয়ই কিছু একটা করেছে, নাহলে এভাবে হঠাৎ করে কাজি সাহেবের মৃত্যু হবে কেন? সত্যি সত্যি মাহিনের হাত থেকে থাকে তাহলে তাকে কোনদিনই ক্ষমা করবে না মাহিশা। মনে মনে যখন বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো ঠিক তখনই তার রুমে প্রবেশ করে একটা অপরিচিত মানুষ। মাহিশার সঙ্গে থাকা মেয়েটা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তাকে এক আঘাতে অজ্ঞান করে।
এরপর মাহিশার মুখে রুমাল চেপে ধরতেই সেও অজ্ঞান হয়ে গেল। কিন্তু ওই মেয়েকে রুমাল না দিয়ে আঘাত কেন করলো?
----
শান্তিতে গাঁজা খাওয়ার জন্য এলাকার পুরনো বাগানের মধ্যে এসেছে হাসান। গ্রামের বাড়িতে এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে যেকোন স্থানে বসে আর খেতে পারে না। গাঁজা টেনে কিছুক্ষণ বসে আছে হাসান, ঠিক তখন তিনজন লোককে এদিক আসতে দেখলো সে।
মাঝের লোকটার কাঁধে অজ্ঞান অবস্থায় মাহিশা ছিল, তাকেও দেখতে পাচ্ছে। চাঁদের আলোয় যতটুকু দেখা যায় তাতে কাউকে চিনতে পারা সম্ভব না। এমন সময় হাসানের মোবাইল বেজে ওঠে, শব্দ করে রিংটোন বাজতেই চমকে ওঠে হাসান। হাসান রিসিভ না করে তাড়াতাড়ি কলটা কেটে দেয় কারণ মোবাইলের শব্দ পৌঁছে গেছে ঐ অপরিচিত মানুষের কানে।
তিনজনই থমকে দাঁড়ালো। এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে শব্দটা কীভাবে এসেছে। হাসান একটা গাছের সঙ্গে মিশে দাড়িয়ে আছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আবারও কল এসেছে। হাসান এবার কল কেটে দেয়, তারপর তাকিয়ে দেখে সামনে তিনটা মানুষ থেকে একটা মানুষ নেই। যার কাঁধে অজ্ঞান অবস্থায় কেউ আছে, সে এবং আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তিনজন থেকে আরেকজন গেল কোথাও সেটাই বুঝতে পারছে না হাসান।
এমন সময় তার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। গ্রামেরই ছেলে মহসিন তাকে মেসেজে দিয়েছে, মহসিন পরপর দুবার কল দিয়েছিল। এখন সে মেসেজ দিয়ে লিখেছে,
" মাহিশার বিয়ে আটকে গেছে, কাজি সাহেবকে বিষ দিয়ে মারা হয়েছে। মাহিশা পালিয়ে গেছে, তুই কোথায়? "
মেসেজ পড়ে হাসান বুঝতে পেরেছে তার সামনে যারা দাঁড়িয়ে আছে তাঁরাই মাহিশাকে কিডন্যাপ করেছে। হাসান সামনে তাকালো, কেউ নেই।
পরক্ষনেই নিজের মাথায় ভারি কিছুর আঘাত পেয়ে ঘুরতে থাকে হাসান। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সে দেখতে পায় চাঁদটা ঘুরছে আকাশে।
হাসান যখন চোখ মেলে তাকায় তখন চারিদিকে সূর্যের আলো ভরপুর। সে উঠে দাঁড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে রইল, তারপর রাতের ঘটনা মনে পড়তেই সে দ্রুত বের হয়ে যায়।
রাস্তায় নেমেই গতকাল রাতে কল দেওয়া মহসিন এর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। মহসিন তার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইল।
- হাসান বললো, এভাবে তাকিয়ে কি দেখিস?
- তোর মাথা ফাটলো কীভাবে? রক্ত মনে হচ্ছে শুকিয়ে গেছে, তোকে আবার মারলো কারা?
- মাহিশাকে কি পাওয়া গেছে?
- না, রাত থেকে খোঁজা হচ্ছে কিন্তু কোথাও তার কোনো অস্তিত্ব নেই।
- আমি গতকাল রাতে তাকে নিয়ে যেতে দেখেছি।
- কোথায়?
- বাগানবাড়িতে।
- তারপর?
- সেই সময় দুবার তোর কল আসে, ভেবেছিলাম মোবাইল বন্ধ করবো। কিন্তু তার আগেই ওরা আমাকে দেখে ফেলে আর আঘাত করে পিছন থেকে।
- কতজন ছিল?
- তিনজন।
- বলিস কি?
- মাহিশা যে ছেলের সঙ্গে প্রেম করতো সেই ছেলে ঢাকা শহরে থাকে তাই না?
- হ্যাঁ, কিন্তু সবাই সন্দেহ করছে এটা পাত্রের বড় দুলাভাইয়ের কাজ। কারণ গতকাল রাতে পুলিশ এসে তার অনেক কিছু সন্দেহ করে।
- কিরকম?
- সামনে চল, হাঁটতে হাঁটতে বলি।
-----
লাশ নিয়ে সাব্বির বাসা থেকে বের হতে পারছে না। লিফটে করে নিচে নামতে গিয়ে দেখে বস্তা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সে আবারও সেই লাশটা বস্তা থেকে বাহির করে রক্ত যেন বাহিরে না যায় সেই ব্যবস্থা করতে লাগলো। সাব্বিরের বাবা চলে গেছেন, সাব্বির একাই এখন লাশটা নিয়ে বের হয়ে যাবে।
নিচে গাড়ি পার্কিং করা আছে, তার গাড়ির ড্রাইভারের সাহায্যে সে কাজটা করবে। তারপর দ্রুত ত্যাগ করবে ঢাকা শহর, বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে পদ্মার তীরে গিয়ে।
বস্তা থেকে লাশ বাহির করে আঁতকে উঠল সাব্বির কারণ মেয়েটা বেঁচে আছে। সে কিছুক্ষণ সময় নিল ভাবার জন্য, জীবিত একটা মেয়েকে কী করে নদীতে ফেলে দেবে?
চলবে...?
গল্পঃ-
এক কাপ ঠান্ডা কফি।
[ সাজু ভাই সিরিজ নম্বর -০৬]
পর্বঃ- ০১
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্বঃ-০২
সাজু ভাই সিরিজ
- সাব্বির তার বাবাকে কল দিয়ে বললো, মেয়েটা তো বেঁচে আছে বাবা। জীবন্ত মেয়েকে এভাবে নদীতে ফেলে দেওয়া কি ঠিক হবে?
সাব্বিরের কথা শুনে চমকে ওঠে তার বাবা। তিনি বললেন,
- তুই অপেক্ষা কর আমি একটু স্যারের সঙ্গে কথা বলে দেখি কি করতে বলে।
- তাড়াতাড়ি করো বাবা, আমার হাতপা কাঁপছে, আজকে মনে হচ্ছে কোনো বিপদে পড়বো।
- সাহস নিয়ে অপেক্ষা কর।
কল কেটে দিয়ে সাব্বির সেই মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বস্তা থেকে সম্পর্ক দেহটা সে বের করেছে, কোথাও ছুরি বা গুলির আঘাত নেই। তবে মাথা আর হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে অনেক।
- পানি, পানি।
মেয়েটা পানি খেতে চাচ্ছে। নিস্তব্ধ এই ফাঁকা ফ্ল্যাটের মধ্যে অনেকটা ভয় পেয়ে গেল সাব্বির। সে জানে মেয়েটি মরেনি, আর সেজন্য তার ভয় হচ্ছে বেশি। মানুষ মৃত ব্যক্তির চেয়ে জীবিত ব্যক্তি বেশি ভয় করে কেন?
সাব্বির সত্যি সত্যি পানি এনে মেয়েটার মুখের মধ্যে ঢেলে দিল। বউয়ের সাজে সজ্জিত মেয়েটা বেশ সুন্দর লাগছে সাব্বিরের কাছে।
সাব্বিরের মোবাইল বেজে ওঠে। সাব্বির রিসিভ করে অন্য রুমে চলে গেল, তার বাবা কল দিয়েছে।
- হ্যাঁ বাবা বলো।
- সাব্বির শোন, আমি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। স্যার বলেছেন যে মেয়েটাকে পুরোপুরি মেরে ফেলতে হবে।
- কি বলছো বাবা? লাশ গুম করার কাজ করি তাই বলে খুন করতে হবে?
- আরে তার বিনিময়ে অনেক টাকা পাবো। তুই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন। মেয়েটাকে মেরে ফেল, তারপর তাড়াতাড়ি কাজটা কর তাহলে হয়তো এটাই আমাদের শেষ কাজ। কারণ খুন করার বিনিময়ে অনেক টাকা পাবো তাহলে আমাদের আর কাজ করতে হবে না।
- ঠিক আছে বাবা, তাহলে আমি তাই করবো।
বাবার সঙ্গে কথা শেষ করে আবারও মেয়েটার কাছে এলো সাব্বির। আর সাব্বিরের চোখ তখন কপালে উঠে গেছে, কারণ মেয়েটা এখন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে।
সাব্বিরকে দেখেই মেয়েটা বললো,
- আমি কোথায় ভাইয়া? এটা কোন যায়গা?
- এটা উত্তর বাড্ডা, ঢাকা।
- আমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে? আর সেই লোকগুলো কোথায় যারা আমাকে বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে এনেছে।
সাব্বির ভাবনার মধ্যে পড়ে গেল। সে ভেবেছিল ক্লান্ত মেয়েটাকে সে খুব সহজেই মেরে ফেলবে। কিন্তু এখন তো মেয়েটা সুস্থ মানুষের মতো বসে আছে তাহলে কীভাবে মারবে? যদিও মেয়েটার মাথা আর হাত দিয়ে এখনো রক্ত বের হচ্ছে।
- কি হলো, বলেন না কেন? আপনি কে?
- "আমি সানি।"
ইচ্ছে করে নিজের আসল নামটা গোপন করলো সাব্বির। এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে এটা তার কল্পনার মধ্যে ছিল না। একবার ভাবলো যে বাবার কাছে কল দিয়ে তাকে এখানে আসতে বলবে।
- আমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে?
- জানি না।
- জানি না মানে? আপনিও কি ওদের সাথে মিলে আমাকে খুন করতে চান?
খুনের কথা শুনে ঘাবড়ে গেল সাব্বির। সামান্য কাশি দিয়ে বললো,
- আমি কেন আপনাকে খুন করবো? আপনাকে তো আমি চিনিই না, এখানে আমার একটা বন্ধু থাকতো। আমি কিছুক্ষণ আগে তার কাছে এসে দেখি সে বাসায় নেই। আর আপনি এভাবে বস্তার মধ্যে পড়ে আছেন।
- আপনার বন্ধু বাসায় নেই তাহলে আপনি ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলেন কীভাবে? কথাটা শেষ করেই মেয়ে টা মাথা ঘুরে পড়ে গেল আবারও।
- সাব্বির বললো, আপনি চাইলে আমি আপনার জন্য ডাক্তার নিয়ে আসতে পারি। আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি আমার সঙ্গে হাসপাতালে যেতে পারেন।
মেয়েটা কোনো জবাব দিল না। মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে গেছে, সাব্বির পাঁচ মিনিটের মতো সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে এখন হিমসিম খাচ্ছে সে, মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তাকে আর খুন করতে ইচ্ছে করছে না। এতো সুন্দর পৃথিবী, আর এই পৃথিবী থেকে এমন একটা সুন্দরী মেয়েকে সে বিদায় করবে এটা ভাবতে পারে না।
কিন্তু সাব্বির জানতেই পারলো না যে এই ফ্ল্যাটে এখন সে আর ওই মেয়েটা ছাড়া অন্য আরেকজন উপস্থিত আছে। যে মানুষটা তাদের কার্যক্রম সব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। আর লোকটা লুকিয়ে আছে রান্না ঘরের পাশেই বাথরুমের উপরে যে ছোট্ট ফলছাদ থাকে সেখানে।
সাব্বির ও মেয়েটার কথা শুনে লোকটা তার স্থানে খানিকটা ঢুকে গেল। তারপর মোবাইল বের করে একটা মেসেজ টাইপ করে সেন্ট করে দিল।
মিনিট খানিক পরেই সাব্বিরের মোবাইলে তার বাবার নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। সাব্বির মোবাইল নিয়ে আবারও বেলকনিতে চলে গেল।
- কিরে তুই নাকি মেয়েটাকে এখনো খুন করিস নাই?
- খুন করেছি বাবা।
- মিথ্যা কথা বলিস না সাব্বির। মেয়েটা তোর সঙ্গে কথাও বলেছে আর তুইও কথা বলেছিস।
- তুমি জানলে কীভাবে?
- চুপ কর! সাব্বির শোন, তুই এখনই ওই বাসা থেকে বের হয়ে যাবি। মেয়েটাকে খুন করার কাজ অন্য কেউ করবে, তাই নিজেকে বাঁচাতে তুই তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে আয়৷
- বাবা মেয়েটা খুব ভালো মনে হয়, আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তোমার দিকে যদি তাকাতো তাহলে তুমিও মায়ায় পড়তে, এমন এক মেয়েকে মারা যায় না।
- নিজের বিপদ ডেকে আনিস না সাব্বির, ওরা যদি জানতে পারে তাহলে তোকেও মেরে ফেলবে।
- আমরা দুজন মিলে তো অনেক খারাপ কাজ করলাম বাবা। আজকে নাহয় মেয়েটাকে বাঁচিয়ে একটা ভালো কাজ করবো, তুমি চলে আসো বাবা। তারপর দুজন মিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাবো, সে বেঁচে গেলে তার পরিবারের সবাই খুব আনন্দ পাবে।
- এক চড় মেরে তোর ভালো হবার স্বপ্ন বের করে দেবো হারমজাদা, তুই জানিস ওই বাসার মধ্যে আরেকটা লোক আছে। আর সে তোর সবকিছু নজর রাখছে।
সাব্বির অবাক হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে কলটাও কেটে গেছে, হয়তো তার বাবার মোবাইলে ব্যালেন্স ফুরিয়ে গেছে। সাব্বির কলব্যাক করার প্রয়োজন দেখলো না, সে তাড়াতাড়ি মেয়েটা যেখানে ছিল সেখানে গেল।
আর সেখানে গিয়েই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা পেল।
------
একদিন আগে বিয়ে বাড়িতে কাজি সাহেবের মৃত্যুর পরে যখন পুলিশ এসেছিল তখনকার কিছু ঘটনা।
মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত দারোগা সাহেব এসে সবার কাছে প্রথমে পুরো ঘটনা শুনলেন। তারপর তিনি সবার আগে মাহিশার বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে সামনে ডাকলেন।
আকস্মিকভাবে এই অপ্রত্যাশিত ঘটানোর জন্য তিনি খুবই মানসিক কষ্ট পেয়েছেন। এতকিছুর আয়োজন করে নিজের দ্বিতীয় মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন। আর বিয়ে না হতে এমন গজব এসে পড়েছে তাই খুবই মর্মাহত।
- দারোগা বললো, আপনার মেয়ের কারো সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল? মানে বিয়ের আগে সচারাচর প্রেম ভালোবাসা যা হয় আরকি।
- আমি জানতাম না। আমাকে কখনো বলেনি, আমি বিয়ে ঠিক করে তাকে যখন বললাম তখন সে কোনো কথা বলে নাই। তার ব্যবহারে বোঝা গেছে সে বিয়েতে রাজি আছে।
- কাজি সাহেব আসার পরে তাকে নাস্তা শরবত খেতে দিয়েছে কে? যেহেতু বিয়ের পরে খাবারের কথা ছিল তাই নিশ্চয়ই কাজি সাহেব একা একা আগে খান নাই।
- সবাইকেই একসঙ্গে নাস্তা করতে দেওয়া হয়েছে তাই কে কাকে দিয়েছে তা তো জানি না।
- আপনার কাউকে সন্দেহ হচ্ছে? কেউ কি এমন ছিল যে আপনার মেয়ের বিয়ে না হোক এমন প্রত্যাশা করে।
- তেমন কেউ তো নাই।
- মেহমানদের জন্য যাবতীয় নাস্তা পরিবেশন করেছে কে কে এবং সেগুলো তৈরি করেছে কারা সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করুন।
মাহিশার বাবা চলে গেলেন ভিতরে, দারোগা তখন পাত্রের বাবাকে ডাকলেন। লোকটা এতক্ষণে মনে হয় চলে যেত কিন্তু সে যেতে পারছে না। ছেলের বিয়ে তাই সেখানে এরকম দুর্ঘটনা কোনদিনই কাম্য ছিল না তার।
- দারোগা বললো, মেয়েটা পালিয়ে গেছে কিংবা কিডন্যাপ হয়েছে। এখন যদি মেয়েটা ফিরে আসে বা তাকে উদ্ধার করা হয় তাহলে আপনি আপনার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেবেন।
- চুপচাপ।
- আপনার পরিবারের সবাই রাজি ছিল তো? মানে কেউ কি ছিল যে বিয়েতে অমত।
- দুলাভাই।
পিছন থেকে বলে উঠে পাত্র হামিদুর রহমান, সে একটু বেশিই কষ্ট পাচ্ছে। ঝামেলা সৃষ্টি না হলে এতক্ষণে বিয়ে শেষ করে তারা খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে পারতো। আর সেখানে গিয়ে স্বামী স্ত্রী প্রবেশ করতো ফুলে ফুলে সজ্জিত ঘরে।
- কার দুলাভাই? আপনার? দারোগা বললো
- জ্বি আমার দুলাভাই এই বিয়েতে রাজি ছিল না। এমনকি তিনি এখানেও আসেননি, কারণ তার অপছন্দের মেয়েকে আমি বিয়ে করতে এসেছি।
- চুপ করো তুমি! পারিবারিক বিষয় নিয়ে এসব কেন বলছো? ধমকের গলায় বললো পাত্রের বাবা।
- ছেলেটা বললো, যেহেতু আমার শশুর বাড়ির বিষয় সেহেতু এটাও পারিবারিক বাবা।
- এহহহ, মেয়ে খুন করে নাগরের সঙ্গে পালিয়ে গেছে আর বোকা ছেলে এখনো শশুর বাড়ি বলে দাবি করে।
দারোগা বললো,
- আপনারা কথা বন্ধ করুন, যতটুকু জিজ্ঞেস করি ঠিক ততটুকু জবাব দিবেন।
তারপর পাত্রের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার দুলাভাই কোথায় থাকে?
- খুলনাতে।
- আপনাদের বাসাও তো খুলনা শহরে তাই না?
- জ্বি।
কাজি সাহেবের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেবার আগে আশেপাশের বেশ কিছু ছবি তুলে নিলেন দারোগা সাহেব। যারা যারা নাস্তা দেবার দায়িত্বে ছিল তাদের সবার কাছে জিজ্ঞেস করেও তেমন কিছু বের করা গেল না। বিয়ে বাড়ির সকল মানুষের নাম লিস্ট সংগ্রহ করার হুকুম দিয়ে তিনি থানায় চলে গেলেন।
-------
সাব্বির অবাক হয়ে দেখলো সেই অজ্ঞান মেয়েটা কে কেউ একজন গলা কেটে দিয়েছে। তার গলা দিয়ে দরদর করে রক্ত বের হচ্ছে, হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সাব্বির।
সাব্বিরের মোবাইলে কল এলো, তার বাবা কল দিয়েছে আবারও। সাব্বির রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,
- মেয়েটা মারা গেছে তো তাই না?
- হ্যাঁ বাবা, কিন্তু?
- কোনো কিন্তু নেই। তুই এখন তাড়াতাড়ি লাশটা ওখান থেকে সরানোর ব্যবস্থা করো। আর রক্তের দাগ এসবের কথা চিন্তা করতে হবে না, তুই লাশ নিয়ে বের হলেই অন্য কেউ গিয়ে সব পরিষ্কার করবে।
সাব্বির আর কথা বাড়াতে পারলো না, এতক্ষণে সে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। কারণ সে বুঝতে পেরেছে সত্যি সত্যি এখানে কেউ আছে। আর সে যদি তার নিজের কাজ না করে তাহলে নিজেই হয়তো মারা যাবে। মৃত্যুর কথা স্মরণ করে সাব্বির দ্রুত লাশটা কীভাবে নিয়ে বের হবে সেটা ভাবতে লাগলো।
-----
উক্ত ঘটনার দুই দিন পর৷
শহীদ হাদিস পার্ক, খুলনা।
এখনো সূর্য ওঠেনি, সারারাত ঘুমাতে পারেনি বলে ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে গেছিল সাজু ভাই। নামাজ পড়েই সোজা চলে এসেছে এই পার্কে, হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস থাকলেও আজকে এসেছে এমনিতেই।
প্রিয় বন্ধু সজীবের মৃত্যুর পর থেকে সবচেয়ে বড় আঘাত পেয়েছে সাজু। সজীবের মৃত্যু মাস খানিক পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বাভাবিক হতে পারে নাই সে। সপ্তাহ খানিক আগে রকি চলে গেছে জাপানে, সেখানেই জব করবে। সজীবের মৃত্যুর আগ থেকে সবকিছু ঠিক ছিল, তাই বন্ধুর মৃত্যুর পরপরই চলে গেছে সূর্য উদয়ের দেশ জাপান।
বাবা ও ছোটমা, বোন চলে গেছে লন্ডনে। সাজুকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সে যায়নি। মা-বাবার ইচ্ছে ছিল সাজুকে একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে দিবেন। কিন্তু হলো না। বেশ কিছুদিন গ্রামের বাড়ি থেকে চারদিন আগে এসেছে খুলনায়। পুরনো সেই খালিশপুরে স্মৃতি, আর চার বন্ধু মিলে আড্ডা দেবার প্রতিটি স্থানে ঘুরে বেড়ায় সারাদিন।
সাজু হয়তো কোনদিনই কল্পনা করেনি একটা সময় তাকে খুব একা হতে হবে। হ্যাঁ ভেবেছিল ঠিকই কিন্তু সেটা মৃত্যুর পর, বেঁচে থাকতে এভাবে একাকী হবে সেটা জানা ছিল না তার।
লন্ডন থেকে আসার পরে রামিশার সঙ্গে তার কথা হয়েছে মাত্র দুবার। একবার গতকাল রাতে আর আরেকবার মাস খানিক আগে। রামিশার বান্ধবী কাজলের মাধ্যমে রামিশার নতুন নাম্বার সংগ্রহ করে গতকাল রাতে কল করেছিল সাজু ভাই। তারপর আর ঘুমাতে পারেনি সারারাত।
রাত দশটার দিকে কাজল কল দিয়ে রামিশার নতুন নাম্বার দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সাজু ভাই কল দিয়েছিল।
- হ্যালো, কে বলছেন?
- আমি সাজু৷
- ওহ্ আচ্ছা, কেমন আছেন? আর আমার নতুন নাম্বার কোথায় পেয়েছেন?
- যোগাড় করলাম, তোমার কি অবস্থা? আমার সঙ্গে কথা বলো না কেন?
- একটু ব্যস্ততা আর পারিবারিক সমস্যার মধ্যে আছি তাই কারো সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই।
- কিন্তু তাই বলে নাম্বার পরিবর্তন করে ফেলেছ অথচ একটু জানালে না। কেন?
- বললাম তো, সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে একটু একা থাকতে চাই।
- আমার সঙ্গে ও?
- হ্যাঁ।
- এভাবে কথা বলো কেন?
- আমি এমনই, কেন সমস্যা হচ্ছে?
- না সমস্যা হবে কেন। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি আমার প্রতি খুব বিরক্ত। তোমাকে কল দিয়ে মনে হয় অনেক বিরক্ত করে ফেলেছি।
- হ্যাঁ করেছেন, তো কি করবেন? দেখুন সাজু ভাই মানুষের দিন সবসময় সমান যায় না। সময়ের সঙ্গে মানুষ পরিবর্তন হয়ে যায়, সময় বদলে যায়, মানুষ বদলে যায়, পরিস্থিতি বদলে যায়।
- বুঝতে পেরেছি।
- মেলা মেলা ধন্যবাদ, আপনার কথা আপনাকে ফিরিয়ে দিলাম।
- আমি যদি মাঝে মাঝে কল করি তাহলে?
- দিয়েন সমস্যা নেই, সময় পেলে অবশ্যই কথা বলতে চেষ্টা করবো।
- তোমার কি হয়েছে জানতে পারি?
- কিছু না।
- সত্যি বলো।
- বললাম তো কিছু নেই, আর হলেও সেটা আমি বলতে চাই না।
- কিন্তু আমি শুনতে চাই, বলো বলছি।
- আমি কি বাধ্য? আপনার কি মনে হয় আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য?
বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ রইল সাজু ভাই। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
- না বাধ্য নয়।
- সেটাই, যেহেতু আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই সুতরাং আমি যেটা বলবো না বলেছি সেটা আর জিজ্ঞেস করবেন না।
- ঠিক আছে।
- অনেক রাত হয়ে গেছে, ঘুমাবো শুভরাত্রি।
সাজু ভাই নিজেও শুভরাত্রি বলে কল কেটেছিল কিন্তু রাতটা শুভ হয়নি। সারারাত তার চোখে ঘুম ছিল না, কেন এমন হলো সেই উত্তর তার নেই।
" কিছু মনে করবেন না, আপনার নামটা জানতে পারি আমি? "
ভাবনা বন্ধ করে সামনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখভর্তি হাসি, সাজুর দিকে তাকিয়ে আছে।
- রিহানুল ইসলাম।
- আর কোনো নাম নেই?
- কেন?
- আপনাকে দেখে আমার খুব পরিচিত একটা মানুষের কথা মনে পড়ছে। যদিও আমি তাকে কোনদিনই দেখিনি কিন্তু আমি কল্পনার মাঝে তার একটা ছবি এঁকেছি। সেটা আপনার মতো? আর সে হচ্ছে সাজু ভাই, গোয়েন্দা একজন।
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সাজু। মেয়েটার কথার মধ্যে রহস্য আছে, একটা মানুষ তাকে নাকি কল্পনা করে দেখেছে। এমনিতেই সাজু জানে তার পিছনে শত্রু আছে, তাকে খুন করার জন্য কোনো এক অজ্ঞাত দল চেষ্টা করছে। মেয়েটা তাদের দলের কেউ নয় তো?
আগে থেকে চিনেন হয়ত কিন্তু বানিয়ে বানিয়ে একটা ইমোশনাল কথা বলে চমকে দিতে চাইছে।
- আপনার ধারণা ঠিক, আমার পুরো নাম হচ্ছে রিহানুল ইসলাম সাজু। সাজু ভাই হিসেবে কিছু কিছু মানুষ আমাকে চিনেন।
- সত্যি বলছেন? আপনিই সাজু ভাই?
- জ্বি। আপনার নাম?
- মিথিলা ইসলাম পুতুল। সবাই আমাকে পুতুল বলে ডাকে, আপনিও পুতুল বলে ডাকবেন।
- আচ্ছা।
- আমি না বিশ্বাসই করতে পারছি না সাজু ভাই আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন এখনই অজ্ঞান হয়ে যাবো।
সাজু কিছু বলার আগেই চুপ করলো। অপরিচিত আরেকটা লোক এসে তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে। লোকটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেখে সাজু ভাই বললেন,
- কিছু বলবেন?
- আপনি গোয়েন্দা সাজু ভাই?
- জ্বি, কিন্তু আপনি?
- আমার নাম বদিউল আলম রিংকু। আপনার কথা আমি গতকাল রাতে আমার এক বন্ধুর কাছে শুনেছি।
- আপনার বন্ধুর নাম?
- শরিফুল ইসলাম, তার সঙ্গে মনে হয় আপনার চট্টগ্রাম পতেঙ্গা থানায় পরিচয় হয়েছে।
চট্ করে মনে পড়লো সাজু। সেবার ওই মামলায় তার বন্ধু সজীবকে জেলে যেতে হয়েছে। অথচ আজ সজীব কবরে, সাজুর মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল।
- সাজু বললো, জ্বি চিনতে পেরেছি তাকে।
- আমি একটা মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে যাচ্ছি সাজু ভাই। আমি সেজন্যই কিছু পরামর্শের জন্য গতকাল আমার বন্ধুকে কল করেছিলাম। সে বললো আমাদের বাগেরহাটেই একজন মানুষ আছে সে সত্যটা বের করতে পারবে। আমি ভেবেছিলাম আজকে আপনাদের বাগেরহাট যাবো।
- আপনার মামলাটা কেমন?
- আমার স্ত্রীর ছোটভাই বিয়ে করবে। তার জন্য মেয়ে পছন্দ করা হয়েছে, কিন্তু সবার কাছে ভালো লাগলেও আমার কাছে ভালো লাগে নাই। আমি সেটা শুধু প্রকাশ করেছিলাম, তারপর আমি হলাম সবার চোখে ভিলেন। জিদ করে বিয়ে বাড়িতেও গেলাম না, আর সেই বিয়ে বাড়িতে ঘটেছে একটা নতুন ইতিহাস।
- কিরকম?
বিয়ে বাড়ির সেই পাত্র আনিসুলের দুলাভাই বদিউল আলম রিংকু তখন বিয়ে বাড়ির যতটুকু জানেন সবটা বললেন। যদিও এসব তিনি অন্যের কাছে শুনেছেন, তবুও সবটা বললো।
ঘুমের যন্ত্রণায় মাথাব্যথা শুরু করেছে আগেই বুঝতে পেরেছে সাজু ভাই। তাই রিংকু সাহেবের কথা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল বের করে রেকর্ড চালু করে রেখেছেন। মনোযোগ হারিয়ে গেলে পরে যেন শুনতে পারেন তাই এই ব্যবস্থা।
- সাজু বললো, আমি সামান্য অসুস্থ তাই এখন আমি বাসায় যাবো। আপনি আমার ফোন নাম্বার রাখুন, বিকেল বেলা আবার এখানে এসে কল দিবেন।
বদিউল আলম মাথা নেড়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন। তার মুখে তৃপ্তির হাসি, মনে হচ্ছে তিনি যেন অনেকটা সস্তি পাচ্ছেন।
হঠাৎ করে সাজু দেখতে পেল, লাল টিশার্ট পরা একটা লোক পার্কের বাহির থেকে সরে যাচ্ছে। লোকটা এতক্ষণ তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল। সাজু ভাই পার্ক থেকে দ্রুত বের হয়ে গেলেন।
বাহিরে আসতেই হঠাৎ করে নিজের সঙ্গে পুতুল নামের মেয়েটাকে হাঁটতে দেখলো। এতক্ষণ ধরে মেয়েটির কথা স্মরণ ছিল না, মেয়েটার সকল কিছু সন্দেহের মনে হচ্ছে।
- পুতুল বললো, আপনি কোথায় যাবেন?
- রয়েলের মোড়, আপনি?
- আমার বাসা সোনাডাঙা। চলুন তাহলে আপনার সঙ্গে রয়েলের মোড় গিয়ে সেখান থেকে অটোতে করে চলে যাবো।
ভ্রু কুঁচকে গেল সাজুর,
- আমার সঙ্গে যেতে হবে কেন?
- গেলে কি এমন ক্ষতি হবে? আচ্ছা ঠিক আছে যাবো না, কিন্তু বিকেলে আপনার সঙ্গে দেখা করতে ঠিকই চলে আসবো। একটা কথা বলবো?
- কি কথা?
- ওই লোকটার কথা রেকর্ড করলেন কেন?
- মানে আপনি দেখে ফেলেছেন?
- জ্বি। তবে কৌতূহল নিয়ে জানতে চাই।
কিছু না বলে চুপচাপ রিক্সাতে উঠে গেল সাজু। মোবাইল বের করে রিংকু সাহেবের রেকর্ডটা সে পাঠিয়ে দিল ঢাকায় সাইফুল 'র কাছে। রেকর্ডটা পাঠিয়ে আরেকটা মেসেজ দিলেন,
" অনেকদিন ধরে নাকি সাজু ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না? এই নিন নতুন মামলার রহস্য পাওয়া গেছে, আপাতত এতটুকু লিখে রাখুন। যদি মামলা হাতে নেই তাহলে বাকিটা আপনাকে জানাবো, আপনি লিখে ফেলবেন। "
------
বাসায় ফিরে সাজু ভাই অনেকক্ষণ ধরে গোসল করলেন। তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সাইফুল ইসলাম দুবার কল দিয়েছিল। সাজু ভাই কলব্যাক করলেন,
- কেমন আছেন সাজু ভাই?
- ভালো, আপনি কেমন আছেন?
- জ্বি ভাই অনেক ভালো আছি, আপনার দেয়া রেকর্ড শুনলাম। বিয়ে বাড়িতে নিশ্চয়ই বিশাল কোনো ঝামেলা হয়েছে, তবে আমার মনে হয় সবার আগে মাহিশা মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে।
- আমি এখনো ভাবিনি, বিকেলে ভালো করে কথা বলে যদি ভালো লাগে তাহলে মংলা যাবো।
- ঠিক আছে জানাবেন কিন্তু।
- হ্যাঁ অব....
কথাটা শেষ করতে পারলো না সাজু ভাই। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে চোখ আটকে গেল তার। পার্কের বাহিরে লাল টিশার্ট পরা লোকটা দাঁড়িয়ে আছে এখানে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকটা এই বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
এমন সময় তার মোবাইলে ওয়েটিং এ আরেকটা কল আসলো। সাইফুল সাহেবের কল কেটে দিয়ে ওই কলটি রিসিভ করলো সাজু।
- কে বলছেন?
- সাজু ভাই আমি পুতুল, সকালে পার্কে দেখা হয়েছে মনে আছে?
- আপনি আমার নাম্বার পেলেন কীভাবে?
- রিংকু সাহেবকে যখন নাম্বার দিয়েছেন তখনই তুলে রেখেছি।
সাজু ভাই মোবাইলে কথা বলছে আর বাহিরের সেই লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। পুতুল আর ওই লোকটার মধ্যে কোনো কানেকশন নেই তো?
-------
কেমন হয়েছে অবশ্যই গঠনমূলক আলোচনা করে জানাবেন। খুশি হবো।
[ কমবেশি অনেকেই জানেন যে আমার লেখা একটা গল্প দিয়ে নাটক তৈরি হয়েছে। ছোটপর্দার অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব ও তাসনিয়া ফারিন অভিনয় করেছেন সেই নাটকে।
নাটকের নাম " তৃপ্তি তোমার জন্য " প্রচারিত হবে আগামী ২১ তারিখে বাংলাভিশন চ্যানেলে রাত নয়টায়। ]
চলবে...
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্বঃ-০৩
সাজু ভাই সিরিজ
সাব্বির এক দৃষ্টিতে লাল শাড়ি পরা গলাকাটা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু আগেই সে নিজের হাতে তাকে পানি খাইয়েছে, তাকে এখান থেকে হাসপাতালে নেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অথচ তার অগোচরে কেউ একজন মেয়েটাকে খুন করে ফেলেছে।
সাব্বিরের ভাবনা ঘুরে গেল, সে কৌতূহল নিয়ে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো। তার সামনে মৃত্যু এই মেয়েটার নাম সে জানে না, মুখটা দেখে কেমন অদ্ভুত লাগছে। সাব্বির এক এক করে সবগুলো রুমের মধ্যে অনুসন্ধান করতে লাগলো।
প্রায় ২০ মিনিট পেরিয়ে গেল। তারপরই সাব্বির একটা গম্ভীর কণ্ঠ শুনতে পেল। কেউ একজন খুবই বিরক্ত গলায় বললো,
- এতো সময় নিচ্ছ কেন? তোমাকে যা বলা হয়েছে সেটা করো তাড়াতাড়ি।
চমকে গেল সাব্বির। সে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে বললো,
- কে আপনি?
আর কোনো শব্দ পাওয়া গেল না। মিনিট খানিক পরে একটা শব্দ হলো তবে সেটা তার মোবাইলের রিংটোন।
- হ্যাঁ বাবা বলো।
- কিরে তুই এখনো ওখানে কেন? নিজের জীবন টা এখন শেষ করতে চাস নাকি?
- আমার খুব ভয় করছে বাবা। আমি এটা করতে পারবো না মনে হয়, আমি এখনই এখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছি।
- পাগল নাকি তুই? নিচে গাড়ি পার্কিং করা আছে, লাশটা নিয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠলেই সমস্যার সমাপ্তি।
- আমি পারবো না বাবা।
এতটুকু বলেই সাব্বির সেই রাতে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে, নিজের বাবার সঙ্গে দেখা না করে সে তার এক বন্ধুর কাছে গিয়ে ওঠে। সেই বাড়িতে তারপর কি হয়েছে সাব্বির কিছু জানে না।
★★
জানালা দিয়ে লাল টিশার্ট পরা লোকটার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছে সাজু ভাই। লোকটা দুবার সে দেখতে পাচ্ছে, আগেরবার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পায়নি কিন্তু এখন বেশ ভালো করে দেখা যাচ্ছে।
- হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন?
পুতুল নামের মেয়েটা এতক্ষণ ধরে কলে আছে সেটা মনেই ছিল না সাজুর।
- আমি আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো।
এ কথা বলেই কলটা কেটে দিয়ে সাজু ভাই তার মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে জুম করে লোকটার ছবি তুলে নিলো। স্পষ্ট করেই কিছু ছবি তুলে নিয়ে সেটাই বারবার দেখছিল। এমন সময় রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো তার আন্টি, মানে সাজু এখন যাদের বাসায় আছে।
- এই নে সাজু।
- কি আন্টি?
- তোর পছন্দের " এক কাপ ঠান্ডা কফি "।
- আমি কিন্তু আগে কফি খেতাম না আন্টি, কিন্তু অপারেশন হবার পরে কেমন রুচি পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেক কিছু ভালো লাগে না।
- তোর বাবা কল করেছিল, তারপর গ্রামের বাড়ি থেকে তোর দাদি কল দিলো।
- বাহহ সবার কতো চিন্তা তাই না?
- তোর দাদি বলছিল, কবে গ্রামের বাড়িতে যাবি সেটা তাকে জানাতে। তবে আমি বলেছি সাজু আরো কিছুদিন থাকুক, এখানে তো তার কোনো সমস্যা নেই।
- আর মনে থাকতে পারবো না আন্টি, মংলায় একটা বিয়ে বাড়িতে কাজি সাহেব খুন হয়েছে। হয়তো সেখানে চলে যাবো।
- বলিস কি, বিয়ে বাড়িতে খুন?
- পাত্রীকে ও কিডন্যাপ করা হয়েছে। সবাই ধারণা করছে মেয়ের আগের বয়ফ্রেন্ড এসব করেছে। আবার পুলিশের ধারণা, পাত্রের বড় দুলাভাই সবকিছুর জন্য দায়ী।
- তারপর?
- আমি বেশি কিছু জানি না, সারারাত ঘুমাতে পারিনি এখন ঘুমাবো। বিকেলে সবটা জেনে তারপর জানাবো আপনাকে। আমার ঘুম ভাঙ্গার আগ পর্যন্ত কেউ দরজা ধাক্কা দিবেন না।
- ঠিক আছে ঘুমা তাহলে।
মহিলা চলে গেল। সাজু চুপচাপ বসে রইল তার বিছানায়। এই মহিলা সাজুে মায়ের চাচাতো বোন, সাজুর মা ও ইনি এরা একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছেন। একসঙ্গে বড় হয়েছেন ছোটবেলা থেকে। অথচ সাজুর মা বাইশ বছর আগে কবরে ঠাঁই করে নিয়েছেন আর ইনি এখনো দিব্যি।
জীবন আসলেই কিছু না, কে কখন পৃথিবী থেকে চলে যায় কেউ জানে না।
বয়সের হিসেবে সজীব সাজুর চেয়ে আট মাসের ছোট ছিল। কত ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অথচ সেই বন্ধু কদিন আগে চলে গেছে না ফেরার দেশে। এ জীবনে আর কখনো দেখা হবে না, এতদিনে শরীরের মাংস হয়তো পঁচে গিয়ে মাটিতে মিশে গেছে।
একসঙ্গে দুটো ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিলো সাজু ভাই, কারণ তাকে ঘুমাতে হবে। মৃত ব্যক্তিদের কথা ভাবতে গেলেই পরিচিত মুখগুলো সবসময় সামনে ভাসতে থাকে। এইতো দুদিন আগে যে কাজি সাহেবের মৃত্যু হয়েছে সে হয়তো জানতো না এটাই তার জীবনের শেষ বিয়ে বাড়ির যাত্রা। জানলে হয়তো তিনি বাড়ি থেকে বের হতেন না, আগামী মুহূর্তে আমাদের কি হবে আমরা কেউ জানি না।
★★★
ডাকবাংলো মোড়ের কাছে একটা রেস্টুরেন্টের কর্নারে বসে আছে সাজু ভাই ও বদিউল আলম রিংকু।
- রিংকু সাহেব বললেন, যার সঙ্গে আমার শালার বিয়ে হবার কথা ছিল সেই মেয়েকে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই বলাবলি করছে মেয়েটা তো বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে পালিয়ে গেছে।
- মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড ছিল?
- লোকমুখে শুনেছি, যেহেতু আমার উপর একটা সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তাই খোঁজ নিতে হচ্ছে ভাই।
সাজু বুঝতে পেরেছে লোকটা নিজেকে বাঁচাতে এসব তথ্য যোগাড় করে। হয়তো অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করাতে পারলে সে রেহাই পাবে।
- আপনি কি কাজ করেন?
- বেসরকারি একটা ব্যাংকে চাকরি করি। একবার ভেবে দেখুন, যদি মামলা খাই তাহলে বেসরকারি চাকরি নিয়ে কতো ঝামেলা হবে।
- আমি ওই গ্রামের মধ্যে যাবো। তবে তার আগে আপনার স্ত্রীর ছোটভাইয়ের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। সে কি খুলনায়?
- হ্যাঁ আমার শালা এখন খুলনায়।
- প্লিজ বারবার শালা শালা করবেন না, আমার কাছে কেমন গালি গালি মনে হয়। এবার বলুন সে কোথায় আছে? তার নাম আনিসুল ইসলাম তাই না?
- জ্বি, সে এখন বাসাতেই আছে আপনি চাইলে আমি তাকে এখানে আসতে বলবো।
- দরকার নেই, আমার বাইক আছে আপনি আর আমি দুজন মিলে চলে যাবো।
- ঠিক আছে চলুন।
বিয়ের সেই পাত্র আনিসুল ইসলামকে পাওয়া গেল না, তার মোবাইল বন্ধ। বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যেন চলে গেছে। তার নাম্বার নিজের মোবাইলে সেভ করে সাজু ভাই বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
বাসা থেকে বের হয়েই নিজের বাইক নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে গেল। খুলনার পর্ব শেষ, এখন তাকে যেতে হবে মংলা। অবশ্য সেখানে গিয়ে প্রথমে দারোগা সাহেবের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে।
★★
দারোগা সাহেবের মুখ হাসিখুশি। খুলনা থেকে আসার আগেই সাজুর আগমনের কথা তিনি জানতে পেরেছেন। সাজুর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
- কেমন আছেন ভাই?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আপনাকে অনেক রাত পর্যন্ত আটকে রাখলাম। বাইক নিয়ে আসতেও এতটা দেরি হবে বুঝতে পারিনি।
- সমস্যা নেই, তাছাড়া বিয়ে বাড়িতে ওই ঘটনার পর থেকে থানায় থাকি বেশিরভাগ। আমার বাসা এখান থেকে কাছেই।
- কাজি সাহেবের লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসতে কতদিন লাগবে?
- বেশিদিন লাগবে না।
- আমি যদি এখন গ্রামের বাড়িতে যেতে চাই তাহলে কি আপনি আমার সঙ্গে যেতে পারবেন?
- আসলে গ্রামের রাস্তা খুব খারাপ, তাছাড়া এমন রাতের আঁধারে না যাওয়া ভালো হবে। কালকে সকালে উঠে আমরা গেলে ভালো হবে।
- গ্রামের নাম কি?
- কুসুমপুর।
সাজুর মোবাইল বেজে উঠলো। দারোগার সামনে বসে মোবাইল বের করে দেখে ঢাকা থেকে সাইফুল ইসলাম কল দিয়েছে। মোবাইল রিসিভ করে সে দারোগার সামনে থেকে উঠে গেল। দারোগা একটা মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বললো, " প্রেমে মরা জলে ডুবে না "
থানার বাইরে বেরিয়ে সাজু ভাই অবাক হয়ে গেল, সকালে আর দুপুরে খুলনা শহরে দেখা সেই লাল টিশার্ট পরা লোকটা দাঁড়িয়ে ছিল। তবে সে এখন সাদা একটা শার্ট পরিধান করে আছে, হয়তো ভাবেনি সাজু ভাই এতো তাড়াতাড়ি বের হবে। সাজুকে দেখেই লোকটা দ্রুত হাঁটা শুরু করে।
- কেমন আছেন সাইফুল ভাই?
- জ্বি ভাই ভালো তবে বেশ চিন্তিত।
- কি হয়েছে? আর আপনার কণ্ঠ এমন অদ্ভুত লাগছে কেন?
- আমার মামার বাসা উত্তর বাড্ডা জানেন তো?
- হ্যাঁ জানি।
- এখানে একটা এপার্টমেন্টে ফাঁকা ফ্ল্যাটের মধ্যে এক মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। সেই মেয়ে বিয়ের সাজগোছ অবস্থায় ছিল৷
- তারপর কি হলো?
- ড্রইং রুমের ফ্লোরে মেয়েটার লাশ পড়ে ছিল। উপর তলার এক ভাড়াটিয়া হঠাৎ করে এই ফ্ল্যাট থেকে একটা ছেলেকে দ্রুত বেড়িয়ে যেতে দেখে। তারপর কৌতূহল নিয়ে খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে তাকিয়ে লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়।
- সবকিছু পুলিশের দখলে?
- জ্বি ভাই। তবে আসল ঘটনা অন্য কোথায়। আর সেটা নাহলে আমি আপনাকে কল দিতাম না।
- কিরকম?
- পুলিশ ওই বাসায় সবকিছু চেক করেছে। আমি আমার এক সাংবাদিক বন্ধুর সাথে সেই থানায় গিয়ে দেখা করেছিলাম। পুলিশ যা কিছু উদ্ধার করেছে তারমধ্যে একটা ছেলের ছবি আছে।
- সেই ভাড়াটিয়াকে ওই ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করুক যে এটাই সেই ছেলে নাকি।
- এটা সেই ছেলে না।
- ওহ্ আচ্ছা।
- সাজু ভাই..?
- বলেন।
- ছবিটা আপনার, যে ছবিটা পাওয়া গেছে সেটা আপনার ছবি। আমি নিজের হাতে ভালো করে দেখেছি ওটা আপনার ছবি ছিল। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার ছবি কেন এই ফ্ল্যাটের মধ্যে পাওয়া যাবে?
চলবে... [ কেমন লেগেছে জানাবেন। ]
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্বঃ-০৪
সাজু ভাই সিরিজ
- সাজু বললো, কিন্তু আমার ছবি সেখানে কি করে পাওয়া যাবে। আর মৃত মেয়েটা কে?
- সেটা আমারও প্রশ্ন। আমি ওসি সাহেবকে সব বলেছি। তাকে বলেছি যে ছবিটি আমার গোয়েন্দা বন্ধু সাজুর, কিন্তু তার ছবি এখানে কেন সেটা জানি না।
- তারপর ওসি সাহেব কি বললো?
- আমার ফোন নাম্বার রেখে দিয়েছে আর খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে ঢাকায় আসতে বলছে।
- আপনি সেই ওসি সাহেবের নাম্বারটা আমাকে যোগাড় করে দেন। আর আমি তো মংলার সেই বিয়ে বাড়িতে কাজি সাহেবের মৃত্যুর রহস্যের মধ্যে এসেছি। এখনো পর্যন্ত কারো সঙ্গে কোনো কথা বলতে পারিনি, সবটাই পাত্রের বড় দুলাভাইয়ের কাছে শুনেছি।
- সাজু ভাই।
- বলেন।
- আপনি খুব শীঘ্রই বড় কোনো ঝামেলায় পড়ে যাচ্ছেন এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। একদম সতর্ক হয়ে তারপর সবকিছু করবেন।
- ঠিক আছে ভাই।
কলটা কেটে দিল সাজু ভাই। সকাল থেকে দেখা সন্দেহের সেই লোকটার কথা কাউকে বললেন না।
তার মনে হচ্ছে এখনই সেই বিয়ে বাড়িতে গিয়ে একটু কথা বলা দরকার। কিন্তু দারোগা সাহেবের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তিনি এখন সেখানে কিছুতেই যেতে চান না।
এমন সময় দারোগা সাহেবকে চিৎকার করতে শোনা গেল। তিনি দ্রুত কনস্টেবলকে বাইক বের করতে হুকুম দিচ্ছেন। সাজু একটু এগিয়ে যেতেই দারোগা বললো,
- সাজু সাহেব, কোই আপনি?
- জ্বি স্যার বলেন।
- আমরা এখনই কুসুমপুর গ্রামে যাবো, আপনি যাবেন নাকি?
- কুসুমপুর মানে সেই ঘটনাস্থলে?
- জ্বি ভাই, ওখান থেকে কল এসেছে, একটা পুরনো বাগানবাড়িতে মানুষের লাশ পাওয়া গেছে। তবে লাশ পঁচে গন্ধ বের হয়ে গেছে, একটু আগে নাকি দুজন ব্যক্তি বাগানবাড়ির ভিতরে গিয়ে গন্ধ পেয়ে সেটা দেখতে পেয়েছে।
- বলেন কি? চলুন তাহলে।
----------
কিছু বিষয় ক্লিয়ার করা উচিৎ।
বিয়ে বাড়িতে কাজি সাহেবের মৃত্যু যেদিন হয়েছে তার ঠিক পরদিন ঢাকা শহরে সাব্বির ও তার বাবা একটা মেয়ের লাশ গুম করার কাজ পায়। আবার সেই ঘটনার দুদিন পর মানে বিয়ে বাড়িতে তিন দিন পর জানতে পারে সাজু ভাই। সেই হিসেবে সাজু ভাই এখন যে রাতে দারোগার সঙ্গে আছে সেটা হচ্ছে বিয়ের রাতের পরে চতুর্থ রাত।
তবে সেদিন রাতে সাব্বির যখন দরজা খুলে খুব তাড়াতাড়ি করে বের হচ্ছিল তখন একটা লোক যে সিঁড়ি চৌকিতে দাঁড়ানো ছিল সেটা সে বুঝতে পারে নাই। লোকটা কৌতূহল নিয়ে খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে তাকায়, আর ড্রইং রুমের মধ্যে সেই মেয়েটাকে পড়ে থাকতে দেখে।
এরপর তিনি দৌড়ে নিজের রুমে চলে গিয়ে থানায় খবর দিলেন। পুলিশ আসতে প্রায় ঘন্টা খানিক লেগেছিল, ততক্ষণে তিনি নিচে গিয়ে গেইটে অপেক্ষা করছিলেন।
ওসি সাহেব সরাসরি দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে,
- আমাদের কল করেছিল কে?
- লোকটা এগিয়ে গিয়ে বললো, স্যার আমি কল করেছিলাম আপনাদের।
- ঘটনা কয় তলায়?
- তিনতলায় স্যার।
সবাই মিলে সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে গেল। লিফ্ট আছে ঠিকই কিন্তু দুদিন ধরে লিফ্টে একটা সমস্যার জন্য সেটা বন্ধ রয়েছে। আজও দিনের বেলা লিফটের লোকজন এসে কিছুক্ষণ মেরামত করে চলে গেছে। আগামীকাল ঠিক হবে বলে চলে গেছে তারা।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সবকিছু বলছিলেন সেই চতুর্থ তলার লোকটা।
ওসি সাহেব প্রথমেই পুরো ফ্ল্যাটের ছবি তুলতে নির্দেশ দিলেন। বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে কোনকিছু যেন বাদ না পড়ে এবং ডাবল ডাবল করে ছবি তোলা হয়। এমনই বললেন তিনি।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিয়ের পাত্রী। গলায় ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে যার ফলে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। পাশেই একটা বস্তা দেখতে পেলেন ওসি সাহেব। ছবি তোলা হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে তিনি বস্তাটা হাতে নিলেন। তারপর মৃত মেয়েটার দিকে কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল। বাথরুমে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে অথচ সেখানে রক্ত থাকার কথা নয়।
ওসি সাহেব ভালো করে লক্ষ্য করেছেন বাথরুমে যে রক্ত সেটা অনেকটা জমাট বেঁধে গেছে। মনে হচ্ছে এটা আগের রক্ত, কিন্তু এই মেয়েটার নাকি অন্য কেউ ছিল সেটা বোঝার চেষ্টা করলেন।
ওসি সাহেব দ্রুত ফরেনসিক তদন্তের টিমকে খবর দিলেন, তারা এসে সকল আলামত সংগ্রহ করবে।
দুটো বেডরুম, দুটো বেলকনি, একটা ড্রইং রুম আর তার পাশেই একটা বাথরুম। দুটো বেডরুম এর মধ্যে একটাতে এডজাস্ট বাথরুম।
সবকিছু দেখার পরে যখন ফরেনসিক তদন্তের লোক এলো তখন তাদেরকে সবকিছু সংগ্রহ করার কথা বলে ওসি সাহেব নিচে নেমে আসে।
নিচে এসে দারোয়ানের কাছে বললেন,
- আজকে সারাদিন এই বাড়িতে কে কে প্রবেশ করেছে আর কে কে বের হয়েছে?
- স্যার সবার কথা তো মুখস্থ নেই তবে গেইটে সিসি ক্যামেরা আছে আপনি চেক করতে পারেন।
ওসি সাহেব আস্বস্ত হলেন। তারপর বললেন,
- বাহিরের অপরিচিত কেউ নিশ্চই এসেছে?
- জ্বি স্যার। লিফ্ট ঠিক করার জন্য লোক এসেছে আর সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে একটা গাড়ি নিয়ে ড্রাইভারসহ আরেকটা ছেলে ছিল।
- তারা কত তলার গেস্ট?
- তৃতীয় তলার।
- ওই বাসায় কে কে থাকতো?
- বেশিরভাগ সময় ফাঁকা থাকতো, ওই ফ্ল্যাটের মালিকের বাসা গুলশানে। তিনি ভালো দেখে ভাড়াটিয়া খুঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না। মাঝে মাঝে তার মেনেজার এসে থাকতো, কখনো কখনো ম্যানেজার কল দিয়ে আমাকে বলতেন তার সিগনেচার নিয়ে একজন লোক আসবে বা দুজন লোক আসবে। এরাই থাকতো আবার চলে যেত।
- আজকে তেমন কোনো গেস্ট এসেছে?
- বিকেলের দিকে ম্যানেজার নিজে এসেছেন তার সঙ্গে একটা মেয়ে আর একজন তার সমবয়সী মানুষ ছিল।
- " একটা মেয়ে? " চমকে গেল ওসি সাহেব। " সে কি বিয়ের পোশাক পরে ছিল? "
- হ্যাঁ স্যার। তবে মাগরিবের কিছুক্ষণ পরপরই ম্যানেজার বেড়িয়ে গেল। আমাকে বললো একটা ছেলে আসবে তাকে যেন বাড়িতে প্রবেশ করতে দেই। আর ছেলেটা নাকি বাসার কিছু পুরনো জিনিসপত্র নিয়ে যাবে। তার কতক্ষণ পরে ওই ছেলেটা এলো, বিশ মিনিট পরে ম্যানেজারের সঙ্গে আসা সেই লোকটা একা বেড়িয়ে গেল।
- তারমানে তখন বাসায় ছিল ওই ছেলেটা আর আর ড্রাইভার?
- ড্রাইভার গাড়িতেই ছিল স্যার, পার্কিং করে।
- ছেলেটা কখন বেরিয়ে গেছে?
- এক দেড় ঘন্টা পরে।
- ওই ম্যানেজারকে কল দিয়ে এখনই আসতে বলো, বলো যে ওসি সাহেব ডেকেছে।
লাশ নামিয়ে আনা হয়েছে। যতকিছু আলামত দরকার মোটামুটি সবকিছুই নেওয়া হয়েছে। একজন কনস্টেবল এসে একটা ছেলের ছবি দিয়ে গেল। ছবিটি ড্রইং রুমে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের মধ্যে পাওয়া গেছে।
সুদর্শন যুবক, এলোমেলো চুল, মুখে সামান্য দাঁড়ি, কালো শার্ট, চোখে চশমা। ছবিটা পেট থেকে উপরের দিকটা দেখা যাচ্ছে, তাই উচ্চতা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যতটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে করে ছেলেটাকে সবদিক থেকে পারফেক্ট একটা মানুষ মনে হচ্ছে। কিন্তু চেহারা রোগাভাব স্পষ্ট।
- স্যার ম্যানেজার সাহেবের মোবাইল বন্ধ।
দারোয়ানের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ওসি সাহেব। তারপর নিজের পুলিশের মধ্যে একজনকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থানায় নিয়ে যাবার হুকুম দিলেন। দারোয়ানকে আপাতত আর ডিউটি করতে হবে না, দুজন পুলিশ সেখানে দাঁড় করানো হয়েছে।
ফ্ল্যাটের মালিকের নাম্বার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল ওসি সাহেব। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চারিদিক বোঝার চেষ্টা করছেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেক কিছু পাওয়া যাবে এমন আশাবাদী তিনি। তবে যা কিছু ঘটেছে সেটা যে পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরোপুরি হয়নি সেটা সে নিশ্চিত। এতটা কাঁচা কাজ কেউ খুনের সময় করতে পারে বলে তার ধারণা ছিল না।
|
সাব্বির যদি নার্ভাস হয়ে মেয়েটার লাশ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতো তাহলে এমন ঝামেলা সৃষ্টি হতো না। চুপচাপ মেয়েটাকে নিয়ে সে যদি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত তাহলে ঘটনা এভাবে পুলিশ জানতে পারতো।
কিন্তু সাব্বির যখন তার বাবার কাছে কল দিয়ে পালিয়ে গেল। তখন সেই বাথরুমের ছাঁদে বসে থাকা লোকটা দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিলেন। লাশটা নিয়ে চিন্তা না করে তিনি দ্রুত নিজের পকেট থেকে একটা ছবি বের করে সেটা ড্রইং রুমের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেন। তারপর দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে ফাঁকা সিঁড়ি দিয়ে বের হয়ে যায়। নিচে নেমে সিড়ির পিছনে বিদ্যুৎ এর মেইন সুইচ বন্ধ করেন। দারোয়ান তখন জেনারেটর চালু করতে গেলে লোকটা দ্রুত বেরিয়ে যায়।
কিছুদিন আগে একসঙ্গে দুটো কাজ হাতে পায় ওই লোকটা। সাজু নামের এক গোয়েন্দাকে খুন করতে হবে, আরেকটা প্রস্তাব আসে বাগেরহাটের মংলায় এক মেয়েকে খুন করতে হবে।
খবর নিয়ে জেনেছিল সাজু ভাই নামের সেই ছেলে তখন খুলনায়। আবার মেয়েটার বাসাও মংলা, তাই দুটো কাজ একসঙ্গে করার পরিকল্পনা করে এই লোক।
মেয়েটাকে খুন করে সেখান থেকে খুলনা যাবে। তারপর সাজুকে খুন করে ফিরে আসবে ঢাকায়। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে যেতেই ঢাকা থেকে কল গেল মেয়েটাকে জীবিত নিয়ে আসতে হবে। টাকার প্রস্তাব দিগুণ করা হয়েছে তাই সে বাগানবাড়ি থেকে মাহিশাকে নিয়ে চলে এসেছে ঢাকায়।
সাজুর বিষয়টা নিয়ে পরে চিন্তা করবে বলে আগে এটা নিয়ে কাজ করে। মাহিশাকে এই বাসায় নিয়ে আসার সময় সেই গাড়িতে এই ভাড়াটে খুনিও ছিল। ম্যানেজার গাড়ি থেকে নেমে দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর তখনই মাহিশাকে নিয়ে উপরে উঠে যায় সাব্বিরের বাবা। কৌশলে পেটে পিস্তল ধরে তাকে কোনরকম শব্দ করতে নিষেধ করার কারণে দারোয়ান কিছু বুঝতে পারে নাই। কথার শেষের দিকে দারোয়ান এর পকেটে একটা হাজার টাকার নোট দিয়ে ম্যানেজার উপরে চলে যায়।
ভাড়াটে খুনি ভেবেছিল মেয়েটাকে খুন করার পিছনে ম্যানেজার আছে। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছে এটা ম্যানেজার নিজেও অন্য কারো হুকুমে করছে।
মেয়েটার ঝামেলা শেষ। এখন যা হবে সবকিছু ওই ম্যানেজার বুঝবে, তবে সুযোগ পেলে সাব্বিরের উপর খানিকটা প্রতিশোধ নেবার প্রতিজ্ঞা করে রাখলো ভাড়াটে খুনি। খুলনাতে সাজুর পিছনে দুটো লোককে সবসময় নজর রাখতে বলা হয়েছে। আপাতত সে তার দ্বিতীয় কাজের প্রতি মনোযোগী হতে চায়।
ইচ্ছে করেই সাজু ভাইয়ের ছবিটি সে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে এসেছে। লোকটা যদি এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকায় আসে তাহলে তার জন্য কাজটা সহজ হবে। পুলিশও ওই ছবিটি নিয়ে একটা চক্করের মধ্যে পড়বে। আইনি লোকদের এভাবে বোকা বানাতে তার অনেক ভালো লাগে।
★★
দারোগার সঙ্গে সঙ্গে নিজের বাইক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সাজু ভাই। বাগানবাড়ির সামনে এসে তারা দেখতে পায় গ্রামের অনেক মানুষ সেখানে জমা হয়ে গেছে। এতো রাতে গ্রামের মানুষ বাড়ি থেকে বের হবার নয়, কিন্তু লাশের কথা শুনে সবাই যেন আতঙ্কিত। সকলের ধারণা হচ্ছে এটাই হয়তো মাহিশার লাশ, আর সেজন্যই কৌতূহল বেশি।
পকেট থেকে মোবাইল বের করলো সাজু ভাই। ঢাকা থেকে সাইফুল 'র তিনটা মিসকল ও একটা মেসেজ।
" আপনার যে ছবিটি ওই বাড়িতে পাওয়া গেছে সেটা আপনার হোয়াটসঅ্যাপ এ দিলাম! "
সাজু সেখানে দাঁড়িয়েই ডাটা চালু করলো, যদিও সামান্য নেটওয়ার্ক সমস্যা তবুও একটু পরেই সে কানেক্ট পেল। হোয়াটসঅ্যাপ এ ছবিটা দেখা আকাশ থেকে পড়ার মতো অবাক হয়ে গেল সাজু ভাই।
ছবিটি চট্টগ্রামে তোলা। রামিশার সঙ্গে ঘুরতে যাবার পরে রামিশা নিজেই এই ছবিটি তুলেছিল। বহুবার সে রামিশার মোবাইলের ওয়ালপেপারে এই ছবিটি দেখেছে। রামিশা তাকে বলেছিল এটাই নাকি তার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।
কিন্তু সেই ছবি ঢাকায় ওই ফ্ল্যাটে কীভাবে গেল বুঝতে পারছে না সাজু ভাই। এই ছবিটি তার নিজের কাছেও নেই, শুধুমাত্র রামিশার কাছে এই ছবিটা আছে।
এতক্ষণে চমকে গেল সাজু। দারোগা সাহেব ও গ্রামের সবাই চলে গেছে বাগানবাড়িতে। ছবির দিকে তাকিয়ে সে অনেকটা পিছনে পড়ে গেল। নিস্তব্ধ রাতের আঁধারে সে কার যেন কথা শুনতে পাচ্ছে। কেউ একজন মোবাইলে বলছে,
" এখনো আমি তার কাছাকাছি আছি, আপনি তো বলেছিলেন নিজের হাতে কাজটা করবেন। আর নাহলে তো থানার সামনেই তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারতাম। আপনি যদি হুকুম করেন তাহলে আমি এই রাতের মধ্যেই তাকে লাশ বানিয়ে ঢাকায় রওনা দিতে পারি। "
আচমকা বন্ধ হয়ে গেল কথাটা। সাজু অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে, সামনের দিকে অগ্রসর হতে পা বাড়াতে পারলো না। লোকটা কি এখনই তাকে গুলি করবে নাকি, কার সঙ্গে কথা বললো সে?
এতটুকু ভাবতেই অন্ধকার থেকে একটা কণ্ঠ শুনে চুপসে গেল সাজু। লোকটা বলছে,
- দুহাত উপরে তুলে সোজা দাড়িয়ে থাকো নাহলে কিন্তু এখনই গুলি করে দেবো। কোনরকমে কথা বলার চেষ্টা করবে না।
চলবে...
লেখাঃ- সাইফুল ইসলাম সজীব।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:-০৫
সাজু ভাই সিরিজ
সাজু প্রথমে হাত উপরে তুলে নিল কিন্তু মনে মনে দ্রুত কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু রাতের আঁধার তাই পালানো বা লুকাতে বেশি সমস্যা হবে না। সে হাত উঁচিয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছে, সামনে দারোগাসহ বাকি সবাই বাগানবাড়িতে প্রবেশ করে ফেলেছে। চাঁদের হালকা আলোতে সে সামনেই একটা বড় গাছ দেখতে পেলো।
উপায় একটাই, গাছের আড়ালে যেতে হবে। আর তারপরই সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে দারোগা সাহেব কে ডাকতে হবে, নিজের কাছে কোনো পিস্তল নেই নাহলে কিছু একটা করতে পারতো।
" যেভাবে বলছি সেভাবেই করো নাহলে কিন্তু এখানেই লাশ বানিয়ে দেবো। " বললো সে অদৃশ্য লোকটা।
সাজু আর দেরি না করে এক লাফ দিয়ে গাছের আড়ালে গোড়ায় পড়ে গেল। তারপর একটু গড়িয়ে সে আড়ালে চলে গেল। সাজুর বিশ্বাস ছিল লোকটা গুলি করবে না, কারণ তাহলে যদি গুলির শব্দ শুনে বাগানবাড়ি থেকে সবাই দৌড়ে আসে তবে এদের বিপদ বাড়বে। তবে যদি পিস্তলে সাইলেন্সর লাগানো থাকে তাহলে গুলি করতে ও পারে।
সাজুর ধারণা সত্যি হলো, লোকটা গুলি না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। সাজু কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে তারপর আস্তে করে মাথা বের করলো। শত্রুরা দলে কতজন সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে, দারোগা সাহেবের নাম্বার থাকলে কল করে ডাকা যেতো৷
পাতার খসখস আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, লোকটা নিশ্চয়ই হাঁটছে। সাজুর ধারণা লোকটা একাই এসেছে কারণ আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। সে নিজেও নড়তে পারছে না কারণ তাহলে শব্দ হবে, আর শব্দ হলে লোকটা কি করবে সাজু বুঝতে পারছে না।
এমন সময় একটা ভালো ঘটনা ঘটলো। গ্রামের দুজন ব্যক্তি বড় টর্চ হাতে নিয়ে রাস্তা দিয়ে বাগান বাড়ির দিকে আসছে। যেহেতু এটা বাগানের মধ্যে ছোট্ট আলের মতো রাস্তা তাই তাদের টর্চে এবার সবটা দেখা যাচ্ছে। সাজু দেখতে পাচ্ছে সেই লোকটা হাত নামিয়ে পিস্তল লুকিয়ে ফেলেছে। সাজু তখন সেই সুযোগটা নিলো, গাছের আড়াল হতে বেড়িয়ে ঝাপিয়ে পড়ে লোকটার দিকে।
লোকটা কেবলই প্রস্থান করার জন্য পা বাড়াতে শুরু করেছে তখনই এমন আক্রমণে ভড়কে গেল সে। আগত দুই গ্রামের মানুষ ধস্তাধস্তি জাবরদস্তি শুনে টর্চ নিয়ে দৌড়ে এলো। লোকটা ততক্ষণে সাজুকে দুটো আঘাত করে ফেলেছে। লোকগুলো কাছে আসতেই সাজু বললো,
- ভাই সাবধানে একে ধরুন তার সঙ্গে কিন্তু পিস্তল আছে, খুব সাবধানে ধরেন।
অস্ত্রধারী লোকটা এবার নিজের ভুল বুঝতে পারলো, তার উচিৎ ছিল এখানে কিছু না করা কারণ চারিদিকে অনেক মানুষ। তাছাড়া তাকে খুন করার হুকুম ও দেওয়া হয়নি, আগ বাড়িয়ে কিছু করতে গিয়ে নিজে বিপদে পড়ে গেল।
গ্রামের দুজন মিলে লোকটাকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নিল, সাজু ভাই তার পিস্তল কেড়ে নিলো। তারপর সেভাবেই তাকে সহ রওনা দিল বাগানের মধ্যে।
লাশের পঁচা গন্ধে কাছাকাছি থাকার কোনো পরিবেশ নেই। তবুও নাকমুখ চেপে পুলিশের দল সেখানে উপস্থিত হয়েছে। মাহিশার বাবা কাকা সবাই আছে, এতক্ষণ কেউ কাছ থেকে দেখে নাই পুলিশ আসার পরে সবাই এসেছে। রাতের টর্চের আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এটা একটা পুরুষ মানুষের লাশ। মাহিশার বাবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন, অন্তত নিজের মেয়ে বেঁচে আছে হয়তো এরকম ধারণা করলেন।
দারোগা সবকিছু শুনে বিস্মিত হয়ে গেল, তিনি টর্চ দিয়ে লোকটার চেহারা ভালো করে দেখলেন। তারপর একটা চড় মেরে বললো,
- চারিদিকে এতো খুনাখুনি আর এতো মানুষের মধ্যে হারামজাদা চলে এসেছে। নিশ্চয়ই কাজি সাহেবের মৃত্যু আর ওই পাত্রী কিডন্যাপের সঙ্গে এই লোক জড়িত। ওই হারমজাদা তোর নাম কি?
- চুপচাপ।
- থানায় নিয়ে বাঁশডলা দিলে সবকিছু সুড়সুড় করে বের হবে। এখন মুখ বন্ধ করে থাক।
লাশ পোস্টমর্টেম আর অপরাধী লোকটাকে থানায় নেবাে হুকুম দিয়ে সাজুকে নিয়ে বেরিয়ে গেল দারোগা সাহেব।
|
|
মাহিশাদের বাড়ির উঠনে বসে আছে সাজু ভাই ও দারোগা সাহেব। আশেপাশে আরও মানুষ আছে তবে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাহিশার বাবা।
- সাজু বললো, আপনি কি জানতেন আপনার মেয়ে কাউকে পছন্দ করে কি না। বা তার এই বিয়ে করার সম্পুর্ণ মতামত আছে কিনা জিজ্ঞেস করে নিয়েছেন?
- মিথ্যা বলবো না। শহরে একটা ছেলেকে পছন্দ করতো আমার মেয়ে, কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে তার অমত ছিল না।
- সেই ছেলের নাম কি?
- মাহিন।
- তার সঙ্গে আপনার মেয়ের পরিচয় হয়েছে কীভাবে, মানে ছেলের বাসা কোথায়?
- ছেলের বাসা ঢাকায়, আমার মেয়ে ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।
- আপনি সেই ছেলেকে দেখেছেন?
- না।
- আপনি যখন আপনার মেয়েকে বিয়ের কথা বললেন সে কিছু বলে নাই? মানে বিয়ে করবে না বা তার পছন্দের মানুষকে বিয়ে করতে চায়।
- আমি আগে থেকেই শুনেছিলাম ও কাউকে পছন্দ করে কিন্তু মেয়ের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি বলে আমি ওটা গুরুত্ব মনে করিনি। তারপর যখন ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে তখন শুধু জিজ্ঞেস করলাম। সে বললো তার আপত্তি নেই।
- তারমানে সে জানতো আপনাকে বললেও লাভ হবে না সেজন্য গোপনে পরিকল্পনা করেছে।
- কিসের পরিকল্পনা স্যার?
একটা ছেলে দুকাপ চা নিয়ে এলো। সাজু ভাই বললেন,
- আমি চা খাই না, আমার জন্য কি এক কাপ ঠান্ডা কফি দিতে পারবেন?
- আমাদের বাসায় তো কফি নেই।
- তাহলে আপনিই চা খেয়ে নিন।
- আমার মেয়ে কিসের পরিকল্পনা করেছে সেটা বললেন না তো।
- সবকিছুতেই কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার। একটা বাড়িতে দুটো মেয়ে আছে, বড় মেয়ে একটা ছেলেকে পছন্দ করে। কিন্তু বাড়ির কেউ সেটা মানবে না, আর সেজন্য সেই মেয়ে প্রচুর পাগলামি, চেচামেচি, ভাঙচুর করতো, কান্না করতো। তারপর পরিবার থেকে তাকে বিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো৷ বিয়ের আগ পর্যন্ত তাকে কড়া নজরে পাহারা দিয়ে রাখা হয়েছে যেন পালাতে না পারে। তারপর নির্দিষ্ট দিনে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু...
- কিন্তু কি? " কৌতূহল নিয়ে বললো দারোগা। "
- কিন্তু দ্বিতীয় মেয়েটাও একজনকে পছন্দ করত তবে সেটা ছিল নরমাল। কারণ তাকে যখন বলা হয়েছে সে যে কারো সঙ্গে কথা না বলে তখন সে মেনে নিয়েছে। কোনো ধরনের পাগলামি করে নাই, সবকিছু নিজের মনের মধ্যে রেখেছে। আর যখন তার বিয়ে ঠিক হয়ছে তখনও কারো সঙ্গে কোনো কিছু বলে নাই। গায়ে হলুদের দিন দুপুরে সে পালিয়ে গেল, কেউ কিছু বুঝতে পারে নাই যে মেয়েটা পালাতে পারে। আর সে যেহেতু ঠান্ডা মাথায় বিয়েতে রাজি ছিল তাই তাকে কেউ পাহারা দিতো না।
- আমার মেয়ে এমনটা করতে পারে না স্যার, ওকে নিশ্চয়ই কিডন্যাপ করা হয়েছে।
- সেটা তো আমরা অবশ্যই খুঁজে বের করবো। আপনার মেয়ের মোবাইল কোথায়?
- মোবাইল তো পাওয়া যায়নি, মনে হচ্ছে মোবাইল সঙ্গে নিয়ে গেছে।
- অদ্ভুত না? কিডন্যাপকারীরা আপনার মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মোবাইলও কিডন্যাপ করেছে।
- বিয়ে বাড়িতে একটা হৈচৈ ছিল, এমনও হতে পারে কেউ হয়তো সরিয়ে ফেলেছে।
- সমস্যা নেই কিন্তু আপনার মেয়ে যে সিম ইউজ করতো সেই নাম্বারটা দেন।
★★
সিসি ক্যামেরার সবগুলো ফুটেজ রেকর্ড দেখা হয়ে গেছে। সাব্বির আর তার বাবার ছবি আলাদা করে বের করার হুকুম দেয়া হয়েছে। লাশের কোন পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না এটাই বড় সমস্যা হয়ে গেছে। তিনি মেয়েটার একটা ছবি তুলে সেটা ঢাকা শহরের বিভিন্ন থানায় পাঠিয়ে দিলেন৷ যদি পুলিশ রেকর্ডে কোনো মিসিং রিপোর্ট থাকে তাহলে সহজ হবে পরিচয় বের করতে। সঙ্গে সঙ্গে সাব্বির ও তার বাবার পরিচয় ও বের করার জন্য বললেন। যেহেতু সাব্বির বের হবার সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে তাকিয়ে লাশ পাওয়া গেছে। সেহেতু সাব্বিরই খুন করেছে এটা ওসি সাহেবের কাছে পরিষ্কার।
খুনি কে সেটা তো বোঝা যাচ্ছে কিন্তু এখন শুধু তাকে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তার আগে দরকার লাশের পরিবার খুঁজে বের করা, কারণ মামলা নিতে হবে। তাছাড়া লাশ দাফন করতে হবে নাহলে হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে।
সাব্বির পালিয়ে আছে টঙ্গী রেলস্টেশনের কাছে একটা কলোনির মধ্যে। সেদিন পালিয়ে আসার পর থেকে সে বুঝতে পেরেছে বিশাল একটা বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে। মেয়েটা সে খুন করে নাই অথচ কে করেছে সেটাও জানে না। এদিকে তার বাবা কল দিয়ে বলেছে পুলিশ তাকে নাকি সন্দেহ করেছে।
সাব্বির তার মোবাইল নাম্বার চালু রেখেছে কারণ এই নাম্বার পুলিশের কাছে যাবার সম্ভবনা নেই। মোবাইলে কল এসেছে দেখে চমকে গেল সাব্বির। রিসিভ করে কানের কাছে ধরে চুপচাপ রইল,
- সাব্বির বলছো?
- হ্যাঁ, কে আপনি?
- মেয়েটাকে রেখে পালিয়ে না এসে যদি ভেবে তারপর লাশটা গায়েব করতে তাহলে কি আজকে এমন বিপদ হতো?
- কে আপনি?
- খুন করতে তোমার হাত কাঁপছিল ভালো কথা কিন্তু আমি তো তাকে গলা কেটে দিয়েছিলাম। তারপরও কেন চলে এলে আর এখন সবাই শুধু বিপদের মধ্যে আছে।
- আপনি খুন করেছিলেন? মানে সেদিন আপনি ওই বাসার মধ্যে ছিলেন।
- হ্যাঁ, তবে তোমার কাজের গাফলতির জন্য শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। তোমার হিসাবটা পরে করবো কিন্তু আগে সাজু ভাইয়ের মার্ডার করতে হবে। সাজুকে মারাটা হচ্ছে কন্ট্রাক্ট আর তোমাকে সারা হচ্ছে নিজের আক্রোশ।
- সাজু ভাই আবার কে?
- ওই মেয়ের মতো একজন যাত্রী। যাদে যাত্রার শুরু আছে কিন্তু সেখান থেকে ফেরার যাত্রা নেই।
- আপনি কি সবসময় খুন করেন?
- না যখন কাজ পাই তখনই করি। কখনো কখনো মাসে ৪/৫ টা। আবার কোনো মাসে একটাও না।
- পুলিশ তোমাকে খুঁজবে, সুতরাং সাবধান। তবে পুলিশ থেকে বেঁচে লাভ নেই কারণ আমি নিজেই তোমাকে মারবো।
সাব্বির কলটি কেটে দিয়ে নাম্বারটা সেভ করে রেখে দিলো৷ তার সমস্ত শরীর কেমন লাগছে।
★★
একটা মেসেজের শব্দে মোবাইল বের করলো সাজু ভাই। মেসেজটা রামিশা দিয়েছে, সাজু ভাই খানিকটা অবাক হয়ে বের করলো মেসেজ,
“ স্যরি সাজু ভাই, খুব খারাপ ব্যবহার করার জন্য আমাকে মাফ করে দিবেন৷ ”
পরপর তিনবার পড়লো মেসেজটা, তারপর সে কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেল। গতকাল রাতে সে অদ্ভুত ব্যবহার করেছে কিন্তু এখন আবার নতুন করে আচরণ করে কেন? এদিকে রামিশার কাছে থাকা ছবি পাওয়া গেছে উত্তর বাড্ডায় একটা বাড়িতে যেখানে কিনা একটা মেয়ে খুন হয়েছে।
রামিশার হিসাবটা মাথার মধ্যে এলোমেলো লাগা শুরু করেছে।
বাগানবাড়িতে গ্রেফতার হওয়া লোকটার মোবাইল দারোগা সাহেবের কাছে ছিল। সেই মোবাইলে কল এসেছে, সাজু বললো রিসিভ করে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলতে। দারোগা সাহেব রিসিভ করে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল , অপরপ্রান্ত থেকে তখন একটা হাসি শোনা গেল।
- হাহাহা, কংগ্রাচুলেশনস সাজু। তুমি তাহলে আমার লোকটাকে ঘায়েল করে দিয়েছ? কোনো ব্যাপার না, এবার তাহলে গাছে গাছে লড়াই হবে।
- সাজু বললো, কে আপনি?
- পরিচয় পাবে সমস্যা নেই, এতো তাড়াহুড়ো করার কোনো দরকার নেই। আমি তো তোমাকে চুপচাপ থাকতেই বুঝতে পেরেছি মোবাইল অন্য কেউ রিসিভ করেছে।
- তারমানে এটা আপনার লোক?
- হ্যাঁ, তোমাকে একটা খবর দিচ্ছি সাজু ভাই। যে মেয়েটাকে তোমরা খুঁজছো তার লাশ এখন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আছে। তার পরিবারকে বলে লাশ নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করতে বলো। এমনিতে সে অনেক কষ্ট পেয়ে মারা গেছে।
মাহিশার বাবা তখনই চিৎকার দিয়ে উঠলো, দারোগা তাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বললো।
- লোকটা বললো, গ্রামের মাঠে খেলার তেমন ইচ্ছে আমার নেই। তুমি বরং ঢাকায় আসো, আমি তো ঢাকায়। উত্তর বাড্ডার এক বাড়িতে মেয়েটা খুন করা হয়েছে, সেখানে আবার তোমার ছবি পাওয়া গেছে। অদ্ভুত না?
এবার সাজু ভাই অবাক হয়ে গেল। সে জানে উত্তর বাড্ডা লাশ পাওয়া গেছে এবং তার ছবি, কিন্তু তার সঙ্গে মাহিশার কোনো সংযোগ থাকবে এটা সে ভাবেনি।
- লোকটা বললো, ঢাকায় এসে বরং খুঁজে বের করো কে আমি আর কার কথায় খুন করেছি মেয়েটাকে।
- যেহেতু গোয়েন্দা নামটা হয়েছে তাই খুঁজে তো বের করবোই। কারণ এটা আমার কাজ।
- আর আমার কাজ খুন করা, মেয়েটাকে খুন করা হয়ে গেছে এখন দ্বিতীয় টার্গেট করতে হবে। ঢাকা আসো সাজু ভাই, তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
সাজুর কাছে মনে হচ্ছে কণ্ঠটা খুব পরিচিত।
.
চলবে...
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
[পর্ব:-০৬ ]
- দারোগা বললো, আপনি কি ঢাকায় যাবেন?
- আম এক বন্ধু বলেছিল উত্তর বাড্ডায় একটা বাড়িতে একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে সেখানে আমার এক কপি ছবি পাওয়া গেছে।
- মাই গড, তারপর?
- আমি ভুলেও কল্পনা করিনি ওটা এই বিয়ের পাত্রী হতে পারে। কারণ মংলা থেকে মেয়েটাকে ঢাকা নিয়ে খুন করার কারণ কি হতে পারে?
- আপনি তো গোয়েন্দা সাজু ভাই, আপনি এখন চাইলেই সকালে উঠে ঢাকা চলে যাবেন। কিন্তু আমার তো এই থানাতেই ডিউটি করতে হবে সাজু ভাই।
- আমি ঢাকা গেলেও আপনার কাছ থেকে প্রচুর সাহায্যের দরকার হবে। তবে ঢাকা যাবার আগে কাল সকালে কাজি সাহেবের বাসায় যাবো। আজ রাতেই আমি ওই বাগানবাড়িতে গ্রেফতার হওয়া লোকটাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে চাই।
- ঠিক আছে করবেন কারণ সকালে উঠেই তো তাকে আমাদের জেলা কারাগারে পাঠানো হবে। আপনি চাইলে আজকে রাতের মধ্যে তার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।
- বুঝতে পেরেছি।
- সাজু সাহেব, আপনাকে কিন্তু অনেক সাবধানে থাকতে হবে। কারণ খুনি যদি সত্যি সত্যি এবার আপনাকে হত্যা করতে চায় তাহলে কিন্তু বিপদের গন্ধ আছে।
- এমনিতেই আমাদের কার কখন মৃত্যু হবে কেউ জানি না দারোগা সাহেব। আর এমনও হতে পারে যে আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে যাতে আমি এই মামলা থেকে পিছিয়ে যাই।
- কিন্তু ওই হামলা করতে চাওয়া?
- ভয় দেখানোর নিদর্শন।
- তবুও সাবধানে থাকবেন সবসময়। আপনি খুব বিচিত্র একটা মানুষ সাজু সাহেব, আপনাকে বেশ ভালো লেগেছে আমার।
- ঠিক আছে চলুন তাহলে।
মাহিশার বাড়িতে এখন নতুন করে কান্নার একটা আর্তনাদ শুরু হয়েছে। সবার মতো হয়তো তাদের মনেও ধারণা ছিল মাহিশা তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। কিন্তু একটু আগে খুনি ফোন করে সাজু ভাইয়ের সঙ্গে বলা কথা শুনে তারা নিশ্চিত হয়ে গেল মাহিশা বেঁচে নেই।
সাজু বললো,
- আঙ্কেল নিজেকে শক্ত করুন এছাড়া আপনাকে বলার মতো কোনো কথা নেই। আপনি মাহিশার কিছু ছবি নিয়ে ঢাকা উত্তর বাড্ডা গিয়ে স্থানীয় থানায় খবর নিবেন। আমি একটা লোকের নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি তিনি আপনাকে সাহায্য করবে৷
- আমার মেয়েকে তারা কেন খুন করেছে?
- তা তো জানি না আঙ্কেল, তবে ওই লোকটার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তো তাকে দিয়ে কেউ আপনার মেয়েকে খুন করিয়াছে। এখন আমাদের খুঁজে বের করতে হবে কয়েকটা বিষয়। প্রথমত, আপনার মেয়েকে খুন করে কার কি লাভ? দ্বিতীয়ত, ভাড়াটে খুনি দিয়ে কাজটা করানো হয়েছে তারমানে বেশ কিছু টাকা খরচ করেছে।
★★★
গ্রেফতার হওয়া লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে সাজু ভাই, সকাল থেকে এই লোকটা তার দিকে ফলো করছে। এখানে আসার পরেও সে লোকটা দেখতে পেয়েছিল কিন্তু ধারণা ছিল না এটার সঙ্গে মাহিশার হত্যা জড়িত।
দারোগা সাহেব ও সাজু ভাই বসে আছে পাশাপাশি আর লোকটা তাদের বিপরীতে। সাজু ভাই প্রথমে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
- ভালো আছেন আপনি?
অবাক হয়ে গেল লোকটা, সাজু ভাই মানুষটার সম্পর্কে সে যতটুকু জানে তাতে করে সাজু হচ্ছে একজন গোয়েন্দা। কিন্তু গোয়েন্দারা কীভাবে প্রশ্ন করে সেটা তার জানা নেই, সাজুর এই কেমন আছেন শুনে তাকিয়ে রইল সে।
- আপনার নামটা জানতে পারি?
- আব্দুল কাদের।
- বাসা কোথায়?
- পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা।
- সত্যি বলছেন নাকি মনগড়া?
- আপনি এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন?
- একটা মানুষের সঙ্গে কথা বলবো আর তার সম্পর্কে কিছু জানবো না বলেন?
- জ্বি আমার বাসা পাবনায়।
- স্ত্রী সন্তান সবাই কেমন আছে? তাদের সঙ্গে কি রেগুলার কথা হয়।
- চুপচাপ।
- আপনি এখন অপরাধ করে ধরা পড়েছেন, এই মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি বের হতে পারবেন না। এতদিনে আপনার পরিবারের কেমন অবস্থা হতে পারে ধারণা আছে?
লোকটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। বোঝা যাচ্ছে সে সাজুর ইমোশনাল কথার মধ্যে জড়িয়ে যাচ্ছে। সাজু চায় এভাবেই কিছু একটা যদি বের করা যায় ক্ষতি কি?
- পাবনা থেকে এখানে কবে এসেছেন?
- চুপচাপ।
- দারোগা বললো, মুখে তালা মেরে বসে রইলে হবে না হারাম.... যা জিজ্ঞেস করে জবাব দে। কার কথায় আক্রমণ করতে এসেছিস? কে তোকে এখানে পাঠিয়েছে?
- আমি তাকে চিনি না।
- সাজু ভাই বললেন, তাহলে তার সঙ্গে পরিচয়?
- বলা নিষেধ আছে?
- দারোগা বললো, আদালত থেকে রিমান্ড মঞ্জুর করে যখন ধোলাই দেওয়া হবে তখন তোর বাপের নিষেধ মনে থাকবে তো?
লোকটা শুধু তাকিয়ে রইল, সাজু ভাই আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে বললো,
- আপনি যদি সবকিছু সহজেই স্বীকার করে এই মামলায় আমাদের সাহায্য করেন তাহলে আমরা আপনার শাস্তির বিষয় বিবেচনা করবো।
- চুপ।
- আপনার নাম্বারে শহর থেকে এক ব্যক্তি কল করেছিল, তিনিই মনে হয় আপনাদের দলের নেতা। তবে তিনিও যে ভাড়াটে লোক সেটা তার কথা শুনে আন্দাজ করতে পারছি।
- শুধু তাকিয়ে আছে সে।
- মাহিশাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে গেছে কে?
- আমরা চারজন ছিলাম।
- বাগানবাড়িতে যার লাশ পাওয়া গেছে সেই লাশ কার ছিল? ছেলেটা কে?
- আমাদের মধ্যে একজন, ওর বাসা রংপুর।
- কেন খুন করা হয়েছে তাকে?
- রাব্বি ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক হয়েছিল, চুক্তি ছিল মেয়েটাকে গ্রামের মধ্যে হত্যা করা হবে। কিন্তু ভাই যখন বললেন যে তাকে শহরে নিয়ে যেতে হবে তখন লোকটা বেশি টাকা দাবি করে।
- তাই তাকে খুন করা হয়েছে?
- হ্যাঁ, একটু বেয়াদবি করেছিল।
- রাব্বি কি আপনাদের সবার লিডার?
লোকটা চুপ করে রইলো, সে কথার মধ্যে খুনির নাম বলে ফেলেছে। মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে।
- আমার উপর নজর রাখছিলেন কতদিন ধরে?
- আটদিন ধরে আপনার পিছনে আমি।
সাজু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আটদিন ধরে যদি থাকে তার মানে সে তখন তার গ্রামের বাড়িতে ছিল। এই লোকটা নিশ্চয়ই তার গ্রামের বাড়ি ও চেনে, আর সেটা মাহিশার বিয়ের ঘটনার আর চারদিন আগে থেকে।
- আমাকে খুন করার হুকুম ছিল নাকি শুধু নজর রাখা হয়েছে।
- নজর রাখার হুকুম ছিল। আমরা কখনো খুনের কারবার করি না, এগুলো রাব্বি ভাই করে।
- রাব্বিকে কোথায় পাওয়া যাবে?
- আমি জানি না।
- কেন বাচ্চাদের মতো কথা বলছেন? আমি খুব স্বাভাবিক কথা বলি তাই ফাজলামো করেন?
- আমি সত্যিই জানি না, যে মানুষ খুনাখুনি করে বেড়ায় সে কোনদিন নিজের ঠিকানা সবার কাছে বলে না। আর নিজের ঠিকানায় কোনদিন থাকে না।
- আপনারা কীভাবে দেখা করতেন?
- আমাদের দেখা হতো না, আমরা বেশিরভাগ সময় ফোনে কথা বলতাম। তবে রাব্বি ভাই এক সিম দিয়ে বারবার কল করে না।
- আপনার ছোট বাচ্চাটার জন্য মায়া লাগে না?
- চুপচাপ।
- নিষ্পাপ একটা বাচ্চা সে কি জানে তার বাবা এমন কাজ করে বেড়ায়?
- আপনি কীভাবে জানেন আমার ছোট বাচ্চা আছে?
- সেটা জেনে আপনার বিন্দু পরিমাণ লাভ হবে না আব্দুল কাদের সাহেব। আপনার নামটা কত সুন্দর একটা নাম, অথচ জীবনের সবগুলো কাজ করে যাচ্ছেন খারাপ।
- চুপচাপ।
- মাহিশাকে নিয়ে আপনি কি শহরে গিয়েছেন? নাকি আমার পিছনে আপনাকে রেখে তারা শহরে চলে গেছে।
- হুম।
- একটা কথা বলি আব্দুল কাদের সাহেব?
- বলেন।
- মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার শিক্ষা আমি পাইনি, কারো সঙ্গে কঠিন করে কথা বলার অভ্যাস ও কোনদিন হয়নি। আপনার সঙ্গে খুব স্বাভাবিক ভাবে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু আপনি বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাবে চুপচাপ ছিলেন। নিজের ভালো চাইলে আপনি সহজ করে উত্তর দিতে পারতেন কিন্তু যেহেতু সেই কাজটা করেননি। সেহেতু কালকে সকালে উঠে আপনাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হবে তারপর হয়তো স্বীকারোক্তির জন্য রিমান্ড। সেখানে পুলিশ কেমন ব্যবহার করবে নিশ্চয়ই জানেন। মামলার রহস্য আমি ইন শা আল্লাহ বের করতে পারবো, তবে মাঝখান থেকে আপনি শুধু শুধু কষ্ট পাবেন।
- আমি নিরুপায়।
- ভালো থাকবেন আব্দুল কাদের সাহেব, আমি আগামীকাল সকালে ঢাকায় যাচ্ছি। তবে আমার বিশ্বাস আপনি পুলিশের জিজ্ঞাসার জবাব ঠিক করে দিবেন। আপনার সঙ্গে আবারও দেখা হবে।
- আপনাকে একটা কথা বলি?
- জ্বি বলেন।
- নিজের জীবন বাঁচাতে চাইলে মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন। আপনার তো পরিবার আছে লন্ডনে, সেখানে চলে যান। পৃথিবীতে নিজের জীবনের চেয়ে প্রিয় কিছু নেই, রাব্বি ভাই আপনাকে বাঁচতে দেবে না। আপনাকে মারার চুক্তি যখন করেছে তখন সে আপনাকে যেভাবেই হোক মারবে। এতক্ষণ ধরে আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য এটা আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটা পরামর্শ রইল।
সাজু ভাই বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে আস্তে আস্তে উঠে গেল। লকাব থেকে বেরিয়ে মোবাইল বের করে দেখে রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে। রামিশার নাম্বার থেকে ছোট্ট একটা মেসেজ,
" সাজু ভাই, Miss You "
★★★
পারাবত- ১০
[ ঢাকা বরিশাল ঢাকা ]
লঞ্চের ছাঁদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরপর তিনটা সিগারেট ধরিয়াছে রাব্বি। মাথা ভর্তি প্রচুর চিন্তা ভর করছে এখন, সবকিছু নতুন করে একটু সাজিয়ে নিতে হবে। কাদের ধরা পড়েছে, তাকে নিয়ে যত ভয় ছিল রাব্বির আর সেই ভয়টা এখন সত্যি হলো।
লোকটা সামান্য ভিতু টাইপের তাই সেদিন মাহিশা কে নিয়ে আসার সময় তাকে আনা হয়নি। বরং সহজ একটা কাজ, সাজু ভাই নামের ওই অদ্ভুত লোকটার দিকে নজর রাখা। সাজু ভাইকে অদ্ভুত মনে করার একটা কারণ রয়েছে। রাব্বি নিজে সাজুর সঙ্গে দেখা করেছিল, প্রায় ঘন্টা খানিক তাদের মধ্যে কথোপকথন হয়েছে।
হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করার সময় সে সাজুর হাত ধরে অনুভব করেছিল লোকটার হাত বেশ গরম। ভেবেছিল জ্বরে আক্রান্ত, কিন্তু সাজু যখন বললো তার শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা এমনই তখন বেশ অবাক হয়েছে রাব্বি। একটা মানুষের শরীর সবসময় ১০২°/১০৩° তাপমাত্রায় কীভাবে গরম থাকে।
সাজুর সঙ্গে কথা হবার পরে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চুক্তি বাতিল করবে। এই সাজুকে খুন করার প্ল্যান সে বাদ দিতে চেয়েছিল কিন্তু তার সঙ্গে যার চুক্তি হয়েছে সে কথাটা শুনে একটু তিরস্কার করেছিল।
তাই রাগের বশেই রাব্বি কাজটা করতে চেয়েছে।
লঞ্চ নদীর বুক চিরে ছুটে চলছে, ছাদের প্রচুর বাতাসে বেশ উদাসীন মন। সিগারেটে দুটো টান দিতেই সেটা বাতাসের কারণে শেষ হয়ে যায়। কেবিনে গিয়ে বসে ইচ্ছে করছে না তার, যখনই নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তখনই সে চলে আসে লঞ্চে। সম্পুর্ণ একটা রাত ধরে সে ভাবতে থাকে তার নতুন পরিকল্পনা।
নিজের পারসোনাল নাম্বারে একটা মেসেজের শব্দ পেল রাব্বি। তার একান্ত পারসোনাল নাম্বার সবাই জানে না, খুব কম সংখ্যক মানুষের কাছে এই নাম্বার আছে। বাকি যতগুলো নাম্বার আছে সবগুলো ভিন্ন উপায়ে সংগ্রহ করে রাব্বি। তার কাছে অনেক গুলো বাটন মোবাইল আছে আর ঢাকা শহরে তার আয়ত্তে রয়েছে ৮ টা পকেটমার।
তারা সবসময় ঢাকা শহরে বিভিন্ন মানুষের পকেট থেকে মোবাইল চুরি করে। সেই সকল মোবাইলের সিম নিয়ে আসে রাব্বি, তারপর যখনই দরকার হয় তখন ব্যবহার করে। মাঝে মাঝে দেখা যায় সিম বন্ধ হয়ে গেছে, তারমানে মোবাইলের মালিক সিম তুলে নিয়েছে। রাব্বি তখন মনে মনে একটা গালি দেয়, " শালা ফকিন্নির বাচ্চা "।
পারসোনাল নাম্বারের মেসেজটা তার কাছে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে বুঝতে পারছে না। মেসেজ টা ছিল এরকম,
" রামিশা নামের মেয়েটা আগামীকাল সকালে বাগেরহাটে যাবে। তুমি চাইলে তাকে বন্দী করে সাজুকে নিজের কব্জায় নিতে পারবে। তারপর খুব সহজেই কাজটা করতে পারবে। "
রাব্বি দ্রুত ছাদ থেকে নেমে গেল। তাকে এখনই ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিতে হবে কারণ সামনেই লঞ্চ চাঁদপুরে ভিরবে। আগামীকাল সকালের আগে তাকে পৌঁছাতে হবে চট্টগ্রামে। আর সেজন্য সে চাঁদপুরে নামলে তাঁর বেশ সুবিধা হবে।
মনে মনে হাসলো রাব্বি, মেয়েটাকে বন্দী করলে সাজুকে সত্যি বিপদে ফেলা যাবে। তাই যেভাবেই হোক সকালে মেয়েটার সঙ্গে একই বাসে উঠতে হবে।
[ কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু। ]
চলবে....
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:- ০৭
সাজুর চেয়ে দেখতে কোনো অংশেই কম নয় রাব্বি নামের এই খুনি। বরং শারীরিক শক্তিতে সে অনেকটা এগিয়ে আছে, যদিও সাজুর সঙ্গে হাতাহাতি করার কোনো পরিকল্পনা নেই রাব্বির।
লঞ্চ চাঁদপুর ঘাটে পৌঁছাতে এখনো কিছুটা সময় বাকি আছে। রাব্বি কেবিনে বসে নিজের হাতে কফি বানাতে লাগলো। কফি বানাতে গিয়ে তার মুখে সামান্য হাসি পেল, ঠান্ডা কফি। সাজু নামের ওই লোকটাও তার মতো ঠান্ডা কফি খেতে খুব পছন্দ করে।
কফি তৈরি করে কাপ হাতে নিয়ে সে আবারও বের হয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মৃদু ঢেউয়ের নদী আর অদুরে নদীর তীরে সবুজ প্রকৃতিকে রাতের আঁধারে কালো অন্ধকার দেখা যাচ্ছে। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়লো রাব্বির, মা-বাবার সঙ্গে জীবনের শেষ ভ্রমণ করেছিলো লঞ্চে।
পটুয়াখালী জেলায় বসবাস করা রাব্বি তার মা-বাবার সঙ্গে লঞ্চে করে গিয়েছিল ঢাকায়। আর ঢাকায় যাবার কয়েকমাস পরে তার মা-বাবাকে নিজেদের বাসায় খুন করে সন্ত্রাসীরা।
ছোট্ট একটা পিছনে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে চাঁদপুরে নেমে গেল রাব্বি। ঘাট জুড়ে প্রচুর মানুষের বিশাল আনাগোনা। সেই ভিড়ের মধ্যেই রাব্বি চলে গেল স্টেশনে। সকাল ছাড়া ট্রেন পাওয়া যাবে না কিন্তু সকাল পর্যন্ত অপেক্ষাও করা অসম্ভব। রাব্বি তাই বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করতে লাগলো।
রাব্বির পরিকল্পনা হচ্ছে যেভাবেই হোক যদি সে এখান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে যেতে পারে। তাহলে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে উঠে সে খুব সহজে পৌঁছাতে পারবে। আরেকটা পথ হচ্ছে এখান থেকে চাঁদপুরের মধ্যে একটা ফেরিঘাট আছে। ঘাটের নাম " হরিণটানা " ফেরিঘাট। হরিণটানা ঘাট দিয়ে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের পরিবহন বাস পার হয়। তাই এখান থেকে যদি সে হরিণটানা যেতে পারে তাহলে সেখান থেকে সে চট্টগ্রামের বাসে উঠে যাবে।
দুটো পথেই যাবার সম্ভাবনা আছে কারণ এই সময় অনেক ট্রাক ফেরিঘাটে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ ঢাকা চট্টগ্রামের রোডেও যাবে তাই ভরসা নিয়ে সে দাঁড়িয়ে রইল।
কিছুক্ষণ পর সে একটা মাঝারি সাইজের কাভার ভ্যান দেখে সিগনাল দিল। ড্রাইভার সামান্য দুরে গিয়ে ব্রেক করলো, রাব্বি দৌড়ে তাদের কাছে চলে গেল৷
- কি চাই?
- ভাই আমি চট্টগ্রাম যাবো কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করতে পারছি না। আপনারা কি আমাকে একটু সাহায্য করবেন?
- আমরা তো ঢাকা যাবো।
- কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম হয়ে যাবেন না?
- হ্যাঁ।
- তাহলে আমাকে সেখানে নামিয়ে দিলেই হবে আমি ওখান থেকে চট্টগ্রামের বাস পাবো। ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে সবসময় বাস পাওয়া যায়। আমি আপনাদের একহাজার টাকা দেবো তবুও প্লিজ হেল্প করুন।
ড্রাইভার রাজি হয়ে গেল, রাব্বি দ্রুত কভারভ্যানে উঠে গেল। গাড়ি রাতের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে চলতে আরম্ভ করলো, রাব্বি চোখ বন্ধ করে আগামীকাল কি কি করবে সেটা ভাবতে লাগলো।
কাভারভ্যানে উঠে রাব্বি জানতে পারলো দুদিন ধরে চাঁদপুরে বাস মালিক সমিতির অবরোধ চলছে। আর সে যেটাকে হরিণটানা ঘাট জানে সেটার নাম আসলে হরিয়ানা ঘাট।
★★★
সাজুর ভেবে দেখল কাজি সাহেবের বাড়িতে গিয়ে আপাতত তেমন কিছু জানার নেই। যা কিছু আছে সবটা ঢাকার সেই বাড়িতে, ওখান থেকে খুনির সূত্র বের করতে হবে। এরমধ্যে যদি বন্দী আব্দুল কাদের কিছু স্বীকার করে তাহলে আরও সহজ হবে। কিন্তু আসল খুনিকে পেতে হলে তাকে ঢাকা যেতে হবে এটা সে পুরোপুরি নিশ্চিত। তবে খুনির পিছনে কালপিট লুকিয়ে আছে সেটাও তার জানা রয়েছে।
দারোগা সাহেব কে বললো,
- স্যার আমি বাগেরহাট চলে যাচ্ছি। সেখান থেকে কাল সকালে উঠে ঢাকা চলে যাবো, আপনি বরং এদিকটা সুন্দর করে দেখবেন।
দারোগা যেন আকাশ থেকে পড়লো।
- একটু আগে আপনার উপর ওই লোকটা পিস্তল নিয়ে হামলা করেছে। এদের দলে আর কে কে কোথায় ওঁৎ পেতে আছে বলা যায় নাকি? এমন রাতের আঁধারে আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। ভোরবেলা উঠে বাইক নিয়ে চলে যাবেন তাহলে সমস্যা হবে না।
- না স্যার, বাইক নিয়ে তো ঢাকায় যাওয়া যাবে না তাই না? বাগেরহাট এক আঙ্কেল আছেন তাদের বাসায় বাইক রেখে ভোরবেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে রওনা দেবো।
- আপনি নিজের নিরাপত্তার কথা বুঝতে পারছেন না কেন সাজু সাহেব?
- বুঝতে পারছি, দোয়া করবেন আমার কিছু হবে না ইন শা আল্লাহ।
সাজু বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল। তার ধারণা আর কেউ আপাতত রাতের মধ্যে তাকে আক্রমণ করবে না। আব্দুল কাদেরের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে বাগেরহাটে তাদের দলের কেউ নেই।
সুতরাং সাজু এখন সহজেই বাগেরহাট সদরে গিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারবে৷
রাত প্রায় দুইটা। বারাকপুর পার হবার একটু পরে সাজুর মোবাইলে কল এলো। রাস্তার পাশে বাইক দাঁড় করিয়ে সাজু মোবাইল বের করে দেখে সকাল বেলা পুতুল নামের যে মেয়েটার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল সেই মেয়ে কল দিয়েছে। এতো রাতেও মেয়েটা জেগে আছে, সাজু খানিকটা অবাক হয়ে কলটা রিসিভ করলো।
- বিরক্ত করলাম সাজু ভাই?
- এতো রাতে কল দিলে বিরক্ত হওয়া মোটামুটি স্বাভাবিক ব্যাপার। আবার জিজ্ঞেস করছেন যে বিরক্ত কি না।
- স্যরি সাজু ভাই। মাত্র পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় শুইলাম তাই আপনাকে কল করতে ইচ্ছে হলো।
এমন সময় পরপর তিনটা ট্রাক ও বিপরীত হতে একটা বাস চলে গেল। সবগুলো গাড়ি থেকেই হর্ন দেবার কারণে পুতুল সেই শব্দ শুনে বললো,
- আপনি কি রাস্তায় নাকি?
- হ্যাঁ। আর কিছু বলবেন?
- এতো রাতে আপনি রাস্তায় কেন?
- সেটা জানা কি খুব জরুরি?
- আপনার ক্ষেত্রে রাগ জিনিসটা মানায় না সাজু ভাই, আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে কল দিয়েছি।
- আমি ফ্রী হয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলি?
- ঠিক আছে।
এমন সময় সাজুর চোখ গেল বাইকের লুকিং গ্লাস এর মধ্যে। তার পিছনে একটা বাইকে কেউ একজন হাতে একটা ধারালো কিছু না এগিয়ে আসছে। মাত্র ৫/৭ সেকেন্ডের ব্যাপার। সাজু তার বাইকসহ রাস্তার পাশে কাত হয়ে পড়ে গেল, পিছন থেকে আসা বাইকটা ব্যর্থ হয়ে তাকে পেরিয়ে সামনে চলে গেল।
বাইক নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সাজু সেখানেই কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। রাস্তার দিকে তাকিয়ে শত্রুর আক্রমণের বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করলো। হঠাৎ করে মোবাইলে কল দেওয়া পুতুল নামের মেয়েটার কথা মনে পড়লো। কে এই মেয়ে? তাহলে কি মেয়েটাও খুনির সঙ্গে জড়িত আছে? নাহলে সে এমন সময় কল দিল কীভাবে।
মেয়েটার সঙ্গে কথা না বললে সাজু এতক্ষণে বহুদূর চলে যেতে পারতো। বাইক নিয়ে সাজু কাছেই একটা গলির মধ্যে ঢুকে গেল, আপাতত আশেপাশে কারো বাড়িতে আশ্রয় নিতে হবে। এখন মনে হচ্ছে দারোগা সাহেবের অনুরোধে মংলা থাকলেই ভালো হতো। সকাল বেলা পুতুল নামের মেয়েটার সঙ্গে দেখা হবার সময়ই তার নজরে পড়েছিল আব্দুল কাদের সাহেব। তারপর সে যখন মাহিশার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হওয়া পাত্র আনিসুল 'র বাসায় যায় সেখানে গিয়ে ও ওই মেয়ে হাজির। এটা কাকতালীয় কোনো বিষয় বলে মনে হচ্ছে না, নিশ্চয়ই একটা যোগসূত্র আছে যেটা সে গুরুত্ব দেয়নি।
একটা বাড়ির সামনে বাতি জ্বলছে। সাজু সেখানে গিয়ে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো, ভাগ্য ভালো তাই সহজেই ভিতর থেকে সাড়া পাওয়া গেল।
কিছুক্ষণ পর চল্লিশের উপরে বয়স হবে এমন এক লোক বেরিয়ে এলো।
- কে আপনি?
- আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল আমার নাম সাজু। একটা বিপদে পড়ে আপনাদেরকে বিরক্ত করতে হচ্ছে।
- বলেন কি বিপদ?
সাজু সংক্ষিপ্ত করে সবটা বলে গেল। মিথ্যা কিছু বলার চেয়ে সত্যিটা বলাই তার কাছে উৎকৃষ্ট মনে হয়েছে। একটা মিথ্যা বলতে গেলে অনেকটা মিথ্যা কথা বলতে হয়। মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বিনা প্রয়োজনে মিথ্যা কথা বেশি বলে। সাজু সেরকম কিছু করলো না।
ভদ্রলোক প্রথম তাকিয়ে রইল। তারপর একটা হাসি দিয়ে বললো,
- আপনিই সাজু সাহেব? আমাদের জেলার কচুয়া উপজেলায় আপনার বাসা তাই না?
- জ্বি।
- ভিতরে আসুন, আমি আপনার বিষয়ে পত্রিকায় পড়েছিলাম তবে সেটা বেশ কয়েকমাস আগে খুলনার একটা মামলার বিষয়। ওইযে এক মহিলা খুন হয় কিন্তু বাসার সবাই জানে সে আত্মহত্যা করেছে। তারপর অনেক বছর পরে তার ছেলে বাবার প্রতি আক্রমণ করতে চায়। এরপর আপনি একটা খুঁজতে গিয়ে আরেকটা বেরিয়ে আসে।
- জ্বি, ছেলেটার নাম নয়ন।
- আমি তখন ভেবেছিলাম আমাদের বাগেরহাটে এমন একটা অল্পবয়সী গোয়েন্দা আছে। তারপর কিছুদিন পরে জানতে পারি আপনি অসুস্থ, সম্ভবত আপনার এক বন্ধুর মাধ্যমে জেনেছিলাম।
- কিন্তু আমার অসুস্থতার কথা কীভাবে?
- ওই সময় পিরোজপুরে একটা ছেলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি তাদের পরামর্শ দিলাম সাজু নামের লোকটার সঙ্গে দেখা করতে। তারা অনেক চেষ্টা করে আপনার ঠিকানা বের করে ঠিকই কিন্তু জানতে পারে আপনি দেশের বাইরে।
সাজু আর কথা বাড়ালো না। ভদ্রলোক তাকে রাতে থাকার জন্য মুহূর্তের মধ্যে ভালো একটা বিছানা ব্যবস্থা করে দিলেন। ৮/১০ বছর বয়সী একটা ছেলে সেখানে ঘুমিয়ে ছিল তাকে নিয়ে যাওয়া হলো অন্য ঘরে।
মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো সাজু। এরপর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ঘুমের চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু মাথায় তখন পুতুল।
কে এই মেয়ে? সকাল বেলা মেয়েটার নাম্বার দিয়ে কিছু তথ্য বের করতে হবে।
চোখে ঘুম টলমল করছে। সাজু মোবাইল হাতে নিয়ে রামিশার কাছে একটা মেসেজ দিল।
" আমি সকালে ঢাকা রওনা দেবো, তুমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে নামবে। Miss you to "
সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই ললো,
- ঠিক আছে কিন্তু, আমি ঢাকায় কোন যায়গা যাবো?
- সাজু লিখলো, ঘুমাওনি?
- না, জেগে ছিলাম।
- আমি তোমাকে কল দিয়ে জানাবো কোথায় নামতে হবে।
- সাজু ভাই...
- শুনছি বলো।
- কালকে দুপুরের আগেই আপনার সঙ্গে দেখা হবে, এটা ভাবতে গেলে আমার লজ্জা করছে।
- কেন?
- খারাপ ব্যবহার করার জন্য।
- একটা কথা বলি রামু?
- বলেন।
- এসব নিয়ে কথা বলার আর দরকার নেই, যা হয়ে গেছে বাদ দাও। এখন ঘুমিয়ে পড়ো নাহলে সকালে উঠতে কষ্ট হবে।
★★★
গ্রীনলাইন পরিবহন, দামপাড়া, চট্টগ্রাম।
বাসের ভিতরে বসে আছে রামিশা। গতকাল রাতে সে খুলনার টিকিট কেটে রেখেছিল এখান থেকে কিন্তু সকালে উঠে সেটা পরিবর্তন করেছে। তার এক পরিচিত আঙ্কেলের মাধ্যমে খুলনা বদলে ঢাকার টিকিট নিতে হয়েছে।
গতকাল সিটটা ঠিক ছিল, এসি বাসে বামদিকে সিঙ্গেল সিট থাকে। রামিশা সেখানেই সিট বুকিং করেছিল কিন্তু এখন সকালে এসেই বামদিকে কোনো সিট ফাঁকা পেল না। ডানদিকে তা ও বেশ পিছনে সিট পাওয়া গেল। তার পাশের সিটে এক যুবক বসে আছে, চেহারা দেখে খারাপ মনে হচ্ছে না। কিন্তু কার মনের মধ্যে কি আছে সেটা তো কেউ বলতে পারে না।
বাসের ভিতরে ঘুমিয়ে গেলে যদি ভুল করে এই অপরিচিত লোকটার শরীরে স্পর্শ লেগে যায়? সেই ভয়ে সে সিঙ্গেল সিট নিতে চেয়েছে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সারা পথ জেগে থাকতে হবে।
রাতে এমনিতেই দেরি করে ঘুমিয়েছে কারণ এসির ভেতরে আরামসে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারবে।
তা আর হলো কোই?
লোকটার ভাবভঙ্গি বোঝার জন্য রামিশা নিজে তাকে বললো,
- আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
- ঢাকায়, আপনি?
- আমিও ঢাকায় যাবো। অনেকটা পথ একসঙ্গে যেতে হবে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে তাই না?
- কিন্তু আমি তো বাসের মধ্যে উঠলেই ঘুমিয়ে পড়ি, একটু পরে দেখবেন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছি।
রামিশা মনে মনে বললো, " জনমের মতো ঘুমিয়ে থাকিস ব্যাটা। " তারপর মুখে বললো,
- আমার নাম রামিশা রামু।
- আমার নাম রবিউল ইসলাম।
ইচ্ছে করেই নিজের পুরো নামটা বললো না রাব্বি, তার পুরো নাম রবিউল ইসলাম রাব্বি। রামিশা বুঝতেই পারলো না তার সঙ্গে বসে থাকা রবিউল নামের এই লোকটাই তার পছন্দের সাজু ভাইকে খুন করার জন্য টাকা নিয়েছে। রামিশা বুঝতেই পারলো না লোকটার সঙ্গে রয়েছে একটা পিস্তল। আর ব্যাগের ভেতর বেহুশ করার ক্লোরোফোম, আর মনের মধ্যে রয়েছে তাকে কিডন্যাপ করে নিজের কাছে নেওয়া।
রবিউল নামে নিজেকে পরিচয় দিয়ে মনে মনে হাসতে লাগলো রাব্বি। আজকের মধ্যে হয়তো তার দ্বিতীয় কাজটা হয়ে যাবে চোখ বন্ধ করে রামিশাকে কীভাবে বাস থেকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায় সেটা আবারও ভাবতে লাগলো।
(লেখকের কথা)
[ শুধু মনে রাখবেন, আপনাদের মন্তব্য আমার লেখার শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই যারা যারা গল্পটা পড়বেন সবাই মন্তব্য করতে চেষ্টা করবেন। ]
চলবে...
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:- ০৮
সাজুর ছবিটি যিনি দিয়েছিল সে বলেছিল রামিশা নামের এক মেয়ের সঙ্গে সাজুর বেশ ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক আছে। এ কথা শুনেই রাব্বি রামিশার সব বিস্তারিত জেনে নেয়। বাসার ঠিকানা, কোথায় পড়াশোনা করে, কার সঙ্গে বেশি চলাফেরা সকল তথ্য যোগাড় করে।
রামিশা বাসা থেকে বের হবার পরই সে পিছনে পিছনে অনুসরণ করে। দামপাড়া কাউন্টারে এসে রামিশা তার টিকিট কনফার্ম করে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু রামিশা কাউন্টারে কথা বলার সময় যা যা বলে সবকিছু শুনে নেয় রাব্বি।
- রামিশা বলছিল, ভাইয়া পিছনে হলেও সমস্যা নেই কিন্তু একটা সিঙ্গেল সিট দিতে পারেন কিনা দেখুন না।
- আমি পারলে তো আপনার জন্য ব্যবস্থা করতাম আপু, আপনার আঙ্কেল যখন বলেছিল তখনই আমি চেষ্টা করছি। আপনি যদি খুলনার টিকিট পরিবর্তন না করতেন তাহলে তো সেটাই ভালো হতো। একই বাসে করে আপনি ঢাকায় নেমে যেতে পারতেন, সিটও সিঙ্গেল ছিল।
- সেটাই ভুল হয়ে গেছে, আসলে আমি যার কাছে যাবো সে হঠাৎ করে আজকে সকালে ঢাকায় আসবে। তাই আমিও ঢাকা যাবো।
- ওহ্ আচ্ছা বুঝতে পারছি। তবে আপনার পাশের সিটটা এখনো ফাঁকা আছে, আর দশ মিনিট পরে গাড়ি ছাড়বে। এরমধ্যে যদি কেউ না আসে তবে আপনি একাই ডাবল সিটে যেতে পারবেন।
রামিশা আর কাউন্টারের লোকটার কথা শুনে মুচকি হাসলো রাব্বি। তারমানে সাজু সাহেব ঢাকা আজকেই আসবে, আর তাই স্থান পরিবর্তন করতে বলে দিয়েছে।
রাব্বির মনে পড়ে গেল রামিশার পাশের সিট এখনো ফাঁকা। সে তখনই তাড়াতাড়ি করে ওই ফাঁকা সিটটা বুকিং দিল। তারপর টিকিট নিয়ে সেও রামিশার মতো অপেক্ষা করতে লাগলো।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা নাম্বারে ছোট্ট একটা মেসেজ লিখলো,
" সাজু আজকে সকালে ঢাকায় যাচ্ছে! "
রাব্বি বসার সঙ্গে সঙ্গে রামিশা আবারও গিয়ে কাউন্টারে কথা বলে।
- আপু কিছু বলবেন?
- ভাইয়া আমি আমার পাশের সিটটাও বুকিং করতে চাই। ডাবল সিট নিয়ে যাবো, কারণ যদি কেউ উঠে যায়।
- আপু এইমাত্র তো ওই লোকটা আপনার পামের সিটটা বুকিং করে গেল।
রামিশা তখন হতাশ হয়ে রাব্বির দিকে বারবার আড় চোখে তাকিয়ে ছিল। বিশাল মাস্ক আর কালো চশমা দিয়ে আবৃত তার চেহারা রামিশা বুঝতে পারে নাই। রাব্বি চশমার আড়ালে চোখ দিয়ে রামিশার মুখ দেখে মুচকি হাসলো। কিন্তু তার সেই হাসিটা ও বাইরে থেকে দেখা গেল না।
বাস এখন এঁকে খান মোড় থেকে বিদায় নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। ছোট্ট বক্সে ড্রাইভার ও সুপারভাইজারের নাম ঘোষণা করা হলো।
রামিশা তার মোবাইল বের করে অস্থিরতা দুর করার জন্য সাজুর নাম্বারে কল দিল। ঘড়িতে পৌনে নয়টা বেজে গেছে, সাজু এখন কি করছে সেটা জেনে নেওয়া যাক।
- সাজু ভাই।
- বলো।
- কি করছেন?
- তৈরি হচ্ছি, এখনই বের হবো। তুমি কি গাড়িতে উঠে গেছ?
- হ্যাঁ, সিটি গেট পার হলাম। কিন্তু আপনার এতো দেরি হচ্ছে কেন? আপনি নাকি ভোরবেলা রওনা দিয়ে বারোটার মধ্যে ঢাকা থাকবেন।
- অনেক ঝামেলা হয়েছে রামু। রাতে আমার উপর হামলা হয়েছিল, ভাগ্যের ছোঁয়ায় বেঁচে গেছি। তারপর রাতে এক অপরিচিত মানুষের বাড়িতে ছিলাম, সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
- এখন আপনি কোন যায়গা?
- ঢাকা গিয়ে তোমাকে সবকিছু বলবো। আমি এখন এখান থেকে খুলনা শহরে যাবো তারপর সেখান থেকে টিকিট কেটে যশোর মাগুরার উপর দিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট পার হয়ে ঢাকা যাবো।
- খুলনা থেকে কেন? আপনাদের বাগেরহাট থেকে ঢাকার বাস পাওয়া যায় না?
- যায়, কিন্তু একটু সমস্যার জন্য এভাবে যেতে হবে। তোমাকে সব সামনাসামনি বলবো৷
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- সিঙ্গেল সিট নাকি ডাবল?
- সকাল বেলা হঠাৎ করে টিকিট পরিবর্তন করে সিঙ্গেল সিট পাইনি। তাই ডাবল সিট নিতে হচ্ছে, পাশে একটা ছেলে ঠিক আপনার মতোই। তবে কানে হেডফোন লাগিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
- ঠিক আছে তুমি সাবধানে আসো তাহলে।
- ওকে, বায়।
রাব্বি এখনো হাসছে, তার কানে হেডফোন গুঁজে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেখানে কিছু বাজছে না। রামিশা যেন মনে করে লোকটা তার নিজের মতো ব্যস্ত তাই এই বুদ্ধি করেছে সে৷ কিন্তু সাজুর কথা তাকে ভাবাচ্ছে। রামিশা বলছিল খুলনা থেকে কেন যেতে হবে? তারমানে কি সাজু ভাই খুলনা থেকে বাসে উঠবে? বাহহ চমৎকার।
মোবাইল বের করে আরেকটা মেসেজ লিখলো রাব্বি।
★★★
সাজু ভাই সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে গতকাল রাতের সেই লোকটা তাকে বললো,
- আপনার মনে হয় বাগেরহাট থেকে ঢাকার বাসে ওঠা ঠিক হবে না। আপনি বরং আরেকটা কাজ করতে পারেন।
- কি কাজ?
অবাক হয়ে তাকালো সাজু ভাই।
- আমার ছেলে আপনাকে তার বাইকে করে খুলনা শহরে পৌঁছে দেবে। আপনি সেখান থেকে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারবেন। আমাদের বাড়ির পিছনে বাগানের মধ্য থেকে বের হয়ে মাঠ পেরিয়ে একটা রাস্তা আছে। সেই রাস্তা দিয়ে ভিতরে ভিতরে গিয়ে কাটাখালি থেকে বের হবেন। যদি আমার বাড়ির সামনে গতকাল রাতে আক্রমণ করা লোকগুলো থাকে তাহলে তারা বুঝতেই পারবে না আপনি চলে গেছেন।
সাজু রাজি হয়ে গেল। বিদায় নেবার সময় সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে লাগলো। বড় বাগান তারপর পানের বাগান পেরিয়ে সে পৌঁছে গেল রাস্তায়।
খুলনা এসে এসে সে টিকিট নিলো। বাস এখনো আধা ঘণ্টা পরে ছাড়বে, তাই কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে গেল। মাথা ঠান্ডা করার জন্য সেখানে বসে " এক কাপ ঠান্ডা কফি " পান করলো।
পুরো মামলা নিয়ে আবারও নতুন করে ভাবতে হবে তাকে। গতকাল রাতের আক্রমণ বিষয়টা নিয়ে সে বেশ চিন্তিত, রাব্বি নামের একটা ছেলে তার সঙ্গে কথা বলেছে। আব্দুল কাদের নামের লোকটার মোবাইলে কল না দিলে তাকে হয়তো পাওয়া যেত না। কিন্তু কে এই রাব্বি? তাকে দিয়ে কে করাচ্ছে এসব হত্যা, সেই ষড়যন্ত্রের শিকার সাজু নিজেও হতে যাচ্ছে। আশ্চর্য। কে?
সাজু দ্রুত বাসের দিকে এগিয়ে গেল। ভাবনার মধ্যে ডুবে গিয়ে সময় কখন পেরিয়ে গেছে তার মনেই ছিল না। রাস্তার পাশে হানিফ পরিবহনের ননএসি বাস দাঁড়িয়ে আছে। সাজু ভাই দ্রুত বাসে উঠে গেল, বাস ছেড়ে দিল।
সাজু পিছনে যাচ্ছিল হঠাৎ একটা মেয়ে কণ্ঠ শুনে চমকে গেল।
- সাজু ভাই আপনি?
কফি খেতে বসে মাস্ক খোলার পড়ে আর মুখে লাগানো হয়নি। বাড়ির ওই লোকটা পই পই করে বলে দিয়েছে মাস্ক পরে থাকবেন। কিন্তু সাজু এই মুহূর্তে অবাক হচ্ছে কারণ তাকে যে ডাক দিয়েছে সে হচ্ছে পুতুল। গতকালই যার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছে, আর কালকে রাতে আক্রমণে পড়ার সময় ঠিক যার সঙ্গে কথা হচ্ছিল।
- কোথায় যাচ্ছেন সাজু ভাই? ঢাকায়?
- হ্যাঁ আপনি?
- আমিও, মেডিকেল স্টুডেন্ট তো ঢাকায় একটা ভাইভা আছে আমার। কিন্তু আপনি...
- আমারও জরুরি কাজ আছে।
সাজু পিছনে চলে গেল। এখন সম্পুর্ন জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে তার মগজে। এই মেয়েটাকে কাল থেকে সে সন্দেহ করছে, আর আজকে সকালে সে এই পথে ঢাকা যাচ্ছে। সেটাও কি মেয়েটা জেনে তারপর তার পিছনে লেগেছে? কিন্তু কেন?
রাব্বির দলের কেউ?
কিন্তু সে যে এই পথে যাচ্ছে সেটা তো ওই বাড়ির মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না। তবে রামিশার সঙ্গে বলেছিল খুলনা থেকে যাচ্ছে, তারমানে কি রামিশা সবকিছু বলে দিচ্ছে? কিন্তু কেন?
সাজুর হঠাৎ মনে পড়ে গেল, ঢাকার উত্তর বাড্ডা লাশ পাওয়া গেছে সেখানে সাজুর একটা ছবি ও পাওয়া গেছে। আর সেই ছবিটি রামিশার কাছে ছাড়া আর কারো কাছে নেই। তারপর গতকাল ও তার দুদিন আগে থেকে রামিশা অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। কিন্তু আব্দুল কাদের গ্রেফতার হওয়ার পরই রামিশা স্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে। তারমানে কি রামিশা সবকিছু করেছে, তাকে নতুন করে বোকা বানাতে। কি.....
না না।
এমনও হতে পারে তারা দুজনেই চক্রান্তের মধ্যে পড়ে গেছে। কোনো একটা নিখুঁত মাথার বুদ্ধি হয়তো এর পিছনে কাজ করে যাচ্ছে। আর তাই যদি হয় তাহলে তো রামিশার পিছনেও এমন কিছু হবার কথা। সাজু যেমন অস্বাভাবিক বিষয় নিয়ে ভাবতে পারে রামিশা তো সেটা নাও করতে পারে।
ঘড়ি দেখলো সাজু ভাই।
রামিশার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রায় দুই ঘন্টা আগে। তারমানে বাস কুমিল্লা রেস্টুরেন্টে যাত্রাবিরতি করার সময় হয়ে গেছে। সাজু সেই বাড়িতে বসে রামিশার সঙ্গে কথা বলেছিল, তারপর বাড়ি থেকে বের হয়েছে। খুলনা এসে আরও আধা ঘণ্টা ধরে বসে ছিল তাই দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেল।
সাজু রামিশার নাম্বারে কল দিল।
★★★
সাজুর কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে কলটা গেল। রামিশা কলব্যাক করতে গিয়েও করলো না কারণ সাজু ভাই আবার হয়তো কল দেবে। কিন্তু কল নয় মেসেজ এসেছে।
- মেসেজে কথা বলো! তুমি এখন কোন যায়গা?
- রামিশা রিপ্লাই করলো, কুমিল্লার ভিতরে।
- যাত্রাবিরতি শেষ?
- না এখনো হোটেলে আসেনি।
অনেকক্ষণ ধরে মেসেজ আসছে না। রামিশা তখন বারবার স্ক্রিনে তাকাচ্ছে। অবশেষে লম্বা একটা মেসেজ এসেছে।
- মনোযোগ দিয়ে শোনো। তুমি রেস্টুরেন্টে নামার পরে আর ওই বাসে উঠবে না। ওয়াশরুমে গিয়ে নিজেকে সম্পুর্ন পরিবর্তন করে ফেলবে। যেহেতু আমার কাছে আসবে তাই ব্যাগের ভেতর নিশ্চয়ই জামাকাপড় আছে। * খুলে ব্যাগে রাখবে আর সুন্দর করে * বাঁধবে। আসল কথা হচ্ছে এমনভাবে পোশাক পরিবর্তন করবে যেন বাসের মধ্যে যারা আছে তারা দেখেও চিনতে না পারে।
- কিন্তু কেন সাজু ভাই?
- সবকিছু এখন বলবো না, তুমি নিজেকে পাল্টে * দিয়ে মাথা ঢেকে রাখবে। তারপর মাস্ক পরে বের হবে, আর ওই বাসে না উঠে লোকাল কোন সিএনজি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্বরোড আসবে। তারপর সেখান থেকে তিশা পরিবহনের গাড়িতে উঠবে।
রামিশা একটু ঘাবড়ে গেল। বাস এতক্ষণে হোটেলে পার্কিং করেছে। সবাই এক এক নেমে যাচ্ছে, তার পাশের লোকটাও নেমে সামনে চলে গেছে। রামিশা নিজের কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে নেমে গেল।
ওয়াশরুমে গিয়ে * খুলে ব্যাগে ঢোকালো। পরনের থ্রি-পিছ থাকলেই যথেষ্ট কিন্তু ওড়নাটা পরিবর্তন করতে হবে। হাতের মোবাইলের ব্যাক কভার খুলে ব্যাগে ভরে নিলো। ঠিক তখনই তার মনে হলো যে ব্যাগটা দেখে যদি কেউ চিনতে পারে তাহলে কি হবে?
রামিশা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখতে পেল এক মহিলা ফ্লোর ক্লিন করছে। রামিশা তার ব্যাগ একটা সাইডে রেখে দ্রুত বেরিয়ে গেল। নিজেকে এখন অন্যরকম লাগছে, কেউ বুঝতেই পারবে না এই মেয়ে একটু আগে গ্রীণলাইন বাসের মধ্যে ছিল। রেস্টুরেন্টের বাইরে সাইডে একটা কাপড়ের দোকান পাওয়া গেল। সেখানে এখ কর্নারে দুটো ব্যাগ দেখে সে হাফ ছাড়লো। দ্রুত একটা ব্যাগ কিনে সেটা নিয়ে ভিতরে গেল। তারপর পুরাতন ব্যাগটা থেকে সবকিছু বের করে নতুন ব্যাগে ভরে নিলো।
অবশেষে নতুন এক মেয়ে হয়ে বেরিয়ে এলো। ব্যাগ পরিবর্তন করার বুদ্ধি তার নিজের, সাজু ভাই এটা তাকে বলে নাই। কিন্তু সে নিজের বুদ্ধিতে এমন একটা কাজ করেছে। সাজু ভাইয়ের সঙ্গে এই কথাটা সে ঠিকই বলবে।
বাস থেকে নেমেই রাব্বির মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার দলের একজন জানিয়েছে আব্দুল কাদেরকে নাকি খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সকাল দশটার দিকে তাকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে গাড়ি হালকা স্লো করতেই কারা যেন বাইকে বসে গাড়ির মধ্যে গুলি করে। আব্দুল কাদের এখনো বেঁচে আছে কিন্তু তার অবস্থা বেশি ভালো নয়। আপাতত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
যিনি গতকাল রাতে রামিশার খুলনা যাবার মেসেজ দিয়েছিল সেই একই ব্যাক্তি আব্দুল কাদেরের আহতের ঘটনা জানিয়েছেন। রাব্বির সঙ্গে তার বেশ কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেল,
- আমি জানি এটাও আপনি করিয়াছেন কারণ আপনি চান পুলিশের রিমান্ডে আব্দুল কাদের কারো কথা না বলুক। সেজন্য তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন।
- সেই লোকটা বললো, তুমি আপাতত রামিশাকে নিজের হাতে নেবার কাজটা করো। এদিকে কি হচ্ছে সেটা আমি সামলে নেবো।
রামিশা। হঠাৎ করে রাব্বির মনে পড়ে গেল যে বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে অনেক আগেই। সে মোবাইল রেখে দৌড়ে বাসের কাছে গেল, সবাই অপেক্ষা করছে।
সুপারভাইজার বললো,
- আরেকজন কোথায়?
- রাব্বি বললো, কার কথা বলছেন?
- আরে আপনার পাশের সিটের মেয়েটা।
- সে আসেনি?
- না, আপনার কাছে তার মোবাইল নাম্বার আছে?
- আমার কাছে কেন থাকবে। আমি তাকে চিনি না তাই না? তাছাড়া আপনার কাছে তার টিকিটের কপি আছে তো, নাম্বারে কল দেন৷
- রিসিভ করছে না ভাই।
- দেখি নাম্বারটা আমাকে দেন তো।
লোকটা নাম্বার দিল। বিরক্ত হয়ে তারা আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। রেস্টুরেন্টের মধ্যে বক্সে গাড়ির নাম ও সবকিছু বলে বারবার ডাকা হলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না, অবশেষে রামিশাকে ছাড়াই রওনা দেবার প্রস্তুতি নিল।
- রাব্বি বললো, নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে। আপনারা চলে যান আমি একটু খোঁজ করে দেখি পাওয়া যায় কিনা।
২০ মিনিটের পরিবর্তে ৫৫ মিনিট পরে গ্রীণলাইন পরিবহন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল।
রাব্বির চট্ করে মাথার মধ্যে এলো যে রামিশা বাস থেকে নামার কিছুক্ষণ আগে মোবাইল রিসিভ করেছিল।
রিসিভ করে সে বলেছিল " হ্যালো সাজু ভাই? "
তারপর মোবাইল কান থেকে নামিয়ে কার সঙ্গে যেন মেসেজ করছিল।
রাব্বি বিস্মিত হলো। তারমানে কি সাজু ভাই বুঝে গেছে রাব্বি বাসের মধ্যে আছে। কিন্তু সেটা বা কীভাবে সম্ভব? একমাত্র সে যার হয়ে কাজটা করে সে ছাড়া কেউ জানে না। তাহলে সাজু ভাই কীভাবে জানবে বাসের রাব্বি আছে। রাব্বি দুটো বাসের চিপায় চলে গেল, দ্রুত নিজের পোশাক পরিবর্তন করে ফেললো।
সত্যি সত্যি যদি সাজু ভাই রামিশাকে সাবধান করে থাকে তাহলে রামিশা এখানেই আছে। কিন্তু তাকে দেখতে পেলে মেয়েটা সন্দেহ করতে পারে তাই হালকা পরিবর্তন করতে চায়।
নিজেকে কিছুটা পরিবর্তন করে রাব্বি হাঁটতে লাগলো চারিদিকে। সবদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে রামিশাকে।
অনেকক্ষণ খুঁজে তারপর আফসোস করতে শুরু করে। সাজু ভাই দুরে থেকেও তার হাত থেকে ঠিকই রামিশাকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেল।
থমকে দাঁড়ালো রাব্বি। জুতা। তার সামনে থেকে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে তার পায়ের জুতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিল রাব্বি।
ওয়াও, এই ব্যাপার।
রামিশা তার সবকিছু পরিবর্তন করতে পারলেও জুতা পরিবর্তন করতে পারে নাই। হয়তো তার স্মরণ ছিল না, বা ওদিকে তাকিয়ে কেউ তাকে চিনতে পারবে সে ভাবেনি।
রাব্বি মনে মনে বললো, " এতো চেষ্টা করেও তোমার জানেমানকে রক্ষা করতে পারলে না সাজু ভাই। রাব্বির চোখে ফাঁকি দেওয়া এতটা সহজ নয় সাজু ভাই। "
রাব্বি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল রামিশার দিকে। কি করতে হবে সেটা দ্রুত ভেবে নিলো৷ এবার আর বেশ দেরি ঠিক হবে না।
[ কেমন হয়েছে নিশ্চয়ই জানাবেন। ]
চলবে....
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:- ০৯
রামিশা যখন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তখনই রাব্বি তার কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। ডানে বামে তাকিয়ে হঠাৎ করেই একটা বাস হোটেলের পার্কিং এ ঢুকতে দেখে। বাসটা সাইড দেবার জন্য তাদের দুজনকেই একটু সরতে হয়েছে। রাব্বি সেই সুযোগটাই গ্রহণ করেছে। ক্লোরোফর্ম মাখানো রুমালটা পকেট থেকে বের করে হাতে নিয়ে সাইড দেবার অভিনয় করে ধাক্কা মানে রামিশাকে।
রাস্তার পাশে পড়ে গেল রামিশা, তাকে তুলতে যাবার ভান করে এক হাত দিয়ে রামিশার মুখের মাস্কটা খুলে অন্য হাত দিয়ে রুমালটা চেপে ধরে তার নাকমুখে। আশেপাশের মানুষেরা ছুটে আসার আগেই ক্লোরোফর্মের কাজ শুরু হয়ে গেছে। মাত্র ১০/১৫ সেকেন্ডের ব্যাপার, রামিশা স্পষ্ট করে কিছুই দেখতে পেল না। অজ্ঞান হবার আগে অস্ফুটে কিছু বললো, কিন্তু রাস্তার প্রচুর গাড়ির শব্দে সেটা বোঝা গেল না।
হোটেলের দুজন সিকিউরিটির সাহায্য নিয়ে একটা মাইক্রো ভাড়া করতে পারলো রাব্বি। সেই মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞান রামিশাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা দিল সে। যদিও সবাই বলেছিল কাছেই একটা ক্লিনিকে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু রাব্বি বললো যে " সে আমার স্ত্রী, আর এমনিতেই ও একটু ভয় পেলেই অজ্ঞান হয়ে যায়। যেহেতু তেমন কোনো আঘাত লাগেনি তাই কোনো সমস্যা হবে না। ঢাকায় যেতে যেতে জ্ঞান ফিরে আসবে। "
মাইক্রোতে বসে বসে রাব্বি প্রথমে ভাবলো যে সাজু ভাইকে কল দিয়ে জানিয়ে দেবে রামিশা তার হাতে বন্দী। কিন্তু একটু ভেবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেললো, আগে ঢাকার যেতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট একটা স্থানে একে রেখে ঠাণ্ডা মাথায় সাজু কে মারার প্ল্যান করবে।
অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা রামিশার দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসলো রাব্বি।
★ ★ ★
ঝিনাইদহ পার হবার পরে রামিশার নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল দিল সাজু। কিন্তু বারবার রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে কেউ রিসিভ করছে না।
এমন সময় দারোগা সাহেব কল দিয়ে জানালো যে আব্দুল কাদেরকে বাগেরহাট থেকে কেউ গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছে। গুরতর অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে।
খবরটা শুনে সাজু আরও টেনশনে পড়ে গেল। এই মামলার সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেছে, একেক স্থানে একেক ধরনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু রামিশা কেমন আছে এটা বুঝতে পারছে না। রামিশাকে সতর্ক হবার কথা সে বলেছিল শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে। যেহেতু পুতুল মেয়েটা বারবার তাকে অনুসরণ করছে তাই রামিশার উপর কোনো আক্রমণ হতে পারে বলেই সাজু ভেবেছিল। কিন্তু এখন মনে হয় কাজটা বেশি বোকামি হয়ে গেছে। রামিশা হয়তো তার কথা শুনে ঘাবড়ে গেছে, তারপর কি থেকে কি করতে গেছে আল্লাহ ভালো জানে।
দারোগা সাহেবের কাছ থেকে খুলনা মেডিকেলে আব্দুল কাদেরের সঙ্গে থাকা ইন্সপেক্টরের নাম্বার নিল সাজু ভাই। তারপর তার কাছে কল দিয়ে জানতে পারলো প্রচুর রক্তের দরকার। গুলির কারণে শরীরের রক্ত একদম শেষ, কিন্তু এতো দ্রুত রক্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে কমপক্ষে ৪/৫ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে রাখতে বলা হয়েছে।
সাজু দ্রুত কল দিল তার পুরনো ক্যাম্পাসে। তাদের একটা খুব পুরনো গ্রুপ আছে রক্ত সংগ্রহ করার। একটা সময় রকি শফিক সজীবকে নিয়ে সাজু যখন খুলনায় থাকতো তখন থেকেই এটা তারা পরিচালনা করতো। সেখানে একটা ছেলেকে রক্তের কথা বলে দিল, ছেলেটা খুব দ্রুত জানাবে বলে কল কেটে দিল।
|
সাজুর বাস এখন মাগুরা জেলা পার হয়ে গেছে। খুলনা থেকে একটু আগে খবর এসেছে রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে। বিএল কলেজের এক ছাত্র এসে এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে গেছে।
কিন্তু রামিশার সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করতে পারছে না। ৩০০ বারের বেশি কল করা হয়েছে কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি। সাজুর মনের মধ্যে অজানা আশঙ্কায় মনটা খারাপ করে দিল, তাহলে কি রামিশার সত্যিই কিছু হয়ে গেল?
পুতুল মেয়েটা একটু আগে তার পাশে এসে বসেছে এটা আরেকটা অস্বস্তিকর বিষয়। হুট করে সে এসে সাজুর পাশের লোকটাকে সামনে গিয়ে বসার জন্য বলে দিল।
- আপনার কি মন খারাপ সাজু ভাই?
- কেন?
- বাস ছাড়ার পর থেকে আমি বারবার পিছনে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছি আপনি অস্থির হয়ে কেমন যেন করছেন।
- সত্যি করে বলেন তো আপনি কে?
- গতকাল কিন্তু আপনার কাছে আমি আমার নাম বলেছিলাম, মিথিলা ইসলাম পুতুল।
- আমার কাছে কি চান?
- এটা কিন্তু একজন গোয়েন্দা মানুষের প্রশ্ন হতে পারে না সাজু ভাই।
- দেখুন আপনার সবকিছু আমার কাছে একটা রহস্যময় মনে হচ্ছে। আমি বেশ কিছু বিপদের মধ্যে পড়েছি তার সবগুলোর মধ্যে আপনার একটা যোগসূত্র আছে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল পুতুল। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেল সে, বিশ্বাস করতে পারছে না সাজু ভাই কি বলছে তাকে।
- সাজু ভাই...?
- বলেন।
- আপনার কি ধারণা যে আমি আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করছি?
- দেখুন আমি আমার সবকিছু ভেবেই আপনাকে বলছি, আপনার আগমন ও আচরণ কোনটাই স্বাভাবিক নয়।
- আমি আপনাকে সম্মান করি, এটা ঠিক যে আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছে কাকতালীয়। কিন্তু তাই বলে আমি আপনার ক্ষতি করবো এমনটা আপনি কেন ভাবছেন?
- যথেষ্ট কারণ আছে তাই ভেবেছি, তবে একটা কথা বলি মিস পুতুল। আমাকে বিপদে ফেলতে গিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন কিনা সেটা একটু বিবেচনায় রাখবেন।
সাজুর কথা শুনে পুতুলের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। এই প্রথম সাজু ভাই পুতুলের দিকে ভালো করে তাকালো। সুন্দরী, বেশ মুগ্ধকর তার চেহারার তরুণী, চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে। চোখের মনি জোড়া সবার মতো কালো নয়, হালকা সাদা। চোখের কারণে তার সৌন্দর্য অনেকগুণ বেশী বেড়ে গেছে।
- কাঁদছেন কেন?
- আপনি আমাকে কেন সন্দেহ করছেন? আমি গতকাল শুধু আপনার সঙ্গে একটু দেখা করলাম। আর দুবার কল করেছিলাম কিন্তু তাই বলে আমি কেন আপনাকে কেন বিপদে ফেলবো?
অনেকটা কান্নার সুরে কথাগুলো বলে দিল পুতুল নামের মেয়েটা। বাসের দু একজন যাত্রীর কানে সেই কান্না পৌঁছে গেল। কৌতূহল কিছু চোখ দিয়ে কেউ কেউ তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। সাজুর মনে ভাবনা চলতেই লাগলো। মেয়েটা যদি সত্যি সত্যি তেমন কেউ নাহয় তাহলে এতকিছুর সঙ্গে সে জড়িয়ে যাচ্ছে কেন। না না, তাকে মোটেই ছোট করে দেখা যাবে না কারণ মাহিশার যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেই ছেলের এবং তার পুরো পরিবারের বসবাস হচ্ছে খুলনায়। আর যেহেতু এই মেয়ের বাসাও খুলনাতে তাই নিশ্চয়ই কিছুটা কানেকশন অবশ্যই আছে।
হয়তো পাত্রের পরিচিতদের মধ্যে কেউ এমনটা করছে তাই সে চাইছে না সাজু ভাই মামলার মধ্যে যাক।
কিন্তু আব্দুল কাদেরের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তার পিছনেও শত্রু আছে। সাজু ভালো করে বুঝতে পারছে এই মামলায় তাকে প্রচুর ভুগতে হবে। মাস খানিক আগে মারা যাওয়া বন্ধু সজীব আর বিদেশে চলে যাওয়া রকির কথা বারবার মনে পড়তে লাগলো। এমন পরিস্থিতিতে তাদের কোনো একজনকে খুব দরকার ছিল।
সাজু ভাই চলন্ত বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইল। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো " এভাবে এক এক করে সবাই আমাকে রেখে চলে গেলি তোরা। আমার যে একা একা খুব খারাপ লাগে বন্ধু, ফিরে আসবি প্লিজ? আবার একসঙ্গে গভীর রাতে বসে বসে গল্প করতাম। "
সারারাত ঘুম হয়নি, প্রচুর মানসিক চাপ আর বাসের ঝাঁকুনিতে মাথা ব্যথা শুরু করেছে। একটু পড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘুমিয়ে গেল সাজু ভাই। চোখ মেলে যখন তাকালো বাস তখন দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে এসে ফেরিতে উঠে গেছে। হঠাৎ করে তার খেয়াল হলো পুতুল নামের মেয়েটাও তার কাঁধে মাথা রেখে গভীর ঘুমে নিমগ্ন।
★ ★ ★
রামিশাকে নিয়ে রাব্বি এখন নারায়ণগঞ্জের এক বাসাতে আছে। তারই পরিচিত এক ভাইয়ের বাসা এটা, আপাতত এখানে থাকাটাই নিজের কাছে নিরাপদ মনে হয়েছে। যদিও সে চেয়েছিল পুরান ঢাকার এক গোপন বাসায় নিয়ে যেতে কিন্তু একটু আগে পাওয়া একটা কলের কারণে তার সবটা এলোমেলো হয়ে গেছে।
যে অজ্ঞাত মানুষটার কথাতে সে সাজুকে খুন করতে চায় সেই লোকটা কল করেছিল। রাব্বি রিসিভ করে বলেছিল,
- মেয়েটা আমার হাতে এসে গেছে।
- লোকটা বললো, যেভাবেই হোক আজকের মধ্যে সাজুকে খুন করতে হবে। তুমি সাজুর সঙ্গে কথা বলে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করো।
- এতো তাড়াহুড়ো কেন?
- আব্দুল কাদের মরেনি এখনো। তাকে খুলনা মেডিকেল ভর্তি করা হয়েছে, আর সে যদি এখন বেঁচে থাকে তাহলে অনেক বিপদ। তার মাধ্যমে সাজু এবং পুলিশ প্রশাসন তোমাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। তুমি তখন বিপদে পড়বে তাই আমি চাই না তোমার বিপদ হোক।
- আপনি কি সত্যিই আমার বিপদের কথা ভাবেন নাকি আপনার নিজের বিপদের কথা?
- মানে?
- মানে সাজু বেঁচে থাকলে আমার চেয়ে আপনার বিপদ বেশি হবে তাই না? কিন্তু আমার কথা হচ্ছে আপনি আমার লোককে কেন খুন করার চেষ্টা করছেন?
- তুমি বুঝতে পারছো না রাব্বি, আব্দুল কাদের বেঁচে থাকলে সবাই ফেঁসে যাবো।
- সেটা নাহয় আমি বুঝতাম। কিন্তু তাই বলে আপনি কেন আমার লোককে মারবেন? তাকে মারতে হলে আমি ব্যবস্থা করতাম, যেমনটা করেছিলাম ওই মেয়েটাকে আনার সময় বাগান বাড়ির মধ্যে। নিজের সেই সহচরকে খুন করতে হয়েছে কারণ তাকে বিপদ মনে হয়েছিল।
- এটাও একটা বিপদ, শোনো তুমি দ্রুত সাজুকে শেষ করার ব্যবস্থা করো। তারপর তোমার বাকি টাকা আমি তোমাকে দিয়ে দেবো।
- আব্দুল কাদেরকে আমার চাই।
- ওই সাজু যদি রক্তের ব্যবস্থা না করতো তাহলে এতক্ষণে রক্তের অভাবে মনে হয় মৃত্যু হতো। শালার নিজের মরনের সময় ঘনিয়ে আসছে আর সে অন্যকে বাঁচানোর জন্য রক্ত সংগ্রহ করে।
- আব্দুল কাদেরের জন্য রক্তের ব্যবস্থা কে করে দিয়েছে?
- ওই সাজু হারাম...দা, ওর জন্য আমার সকল পরিকল্পনা নষ্ট হচ্ছে।
- একটা কথা বলি ভাই সাহেব?
- হুম বলো।
- সাজুকে মারার জন্য আপনার সঙ্গে আমার কত টাকা চুক্তি হয়েছে ?
- পাঁচ লাখ।
- আমি আপনার কাজটা করবো না, আপনার সঙ্গে আমার চুক্তি বাতিল করলাম।
- মানে কি রাব্বি? তুমি কিন্তু এমনটা করতে পারো না আমার সঙ্গে।
- আমি সবকিছুই করতে পারি। ভালো থাকবেন আপনি।
- আচ্ছা ঠিক আছে, একটু মাস্তান হলেই কিন্তু নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবা ঠিক না। তোমাদের মতো পোলাপান আমরা তৈরী করি, আর সবসময় একটা করে ব্যাকআপ রাখি।
- মানে?
- মানে তুমি ছাড়াও আরো তিনজনের সঙ্গে আমার একই চুক্তি হয়েছে। তাদের সঙ্গেও সাজুকে খুন করার জন্য কন্ট্রাক্ট আমার। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না। সাজু যেখানে আছে সেখানে তার সঙ্গেই আমার দ্বিতীয় ভাড়া করা লোক আছে। সাজুকে তোমার মারতে হবে না, মাহিশাকে মারার টাকা তুমি পেয়ে যাবে।
- মাহিশা? কিন্তু সেটা তো আরেকজনের সঙ্গে চুক্তি ছিল আমার।
- হাহাহা হাহাহা, বললাম তো তোমার মতো পোলাপান আমরা তৈরী করি। দুটো কাজই আমি করাচ্ছি তবে ভিন্ন ভাবে তোমার সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। যাইহোক, ভালো থেকো। আর আব্দুল কাদেরকে বাঁচানোর কথা ভুলে গিয়ে নিজের মতো থাকো।
কলটা কেটে গেল। রাব্বি কিছুক্ষণ ভেবে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পকেট থেকে পুরনো একটি সিম বের করে সেটা মোবাইলে সেট করে নিল। তারপর ডায়াল করলো সাজুর নাম্বারে,
রিং হতেই রিসিভ করলো সাজু ভাই।
- হ্যালো কে বলছেন?
- সাজু সাহেব, আমি রাব্বি।
- সারপ্রাইজ?
- জ্বি অনেকটাই। আপনার রামিশাকে আমি চাইলে এতক্ষণে না ফেরার দেশে পাঠিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি কারো কাছে কখনো ঋণী হয়ে থাকতে চাই না। যে আমার উপকার করে আমি তার উপকার করে সেটা শোধ করে দেই।
- মানে?
- আব্দুল কাদেরকে রক্ত সংগ্রহ করে দিয়ে তার জীবন বাঁচানোর সাহায্য করেছেন। আমিও তাই আপনার রামিশার রক্তটা আর ঝড়ালাম না। রক্তের বদলে রক্ত দিয়ে পরিশোধ।
- রামিশা এখন কোথায়?
- সে একটা অপরিচিত ছেলের হেফাজতে আছে, ছেলেটা সম্ভবত খুব ভালো। অজ্ঞান রামিশাকে নিজ দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় নিয়ে গেছে।
- আমি আপনাকে ছাড়বো না।
- আমি আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু যে আমার সঙ্গে চুক্তি করেছে সে ছাড়বে না। আপনার কাছে মানে আশেপাশে তার লোক আছে। যেকোনো সময় আক্রমণ করতে পারে, সাবধানে থাকবেন।
★★★
ফেরির দ্বিতীয় তলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাজুর দিকে নজর দিচ্ছে একটা লোক। তার কাছে মাত্র দুই মিনিট আগে মেসেজ এসেছে সাজুকে মেরে দিতে হবে। যেকোন সময়, যেকোনো মুহূর্তে।
সাজু ভাই দাঁড়িয়ে আছে ফেরির সামনের দিকে একটা উঁচু স্থানে। পুতুল দাঁড়িয়ে আছে নিচে, তার হাতে ঝালমুড়ি। হঠাৎ করে একটা সাজুর ছোট্ট একটা চিৎকার শুনতে পেলো পুতুল। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে রক্তাক্ত অবস্থায় বসে পড়েছে সাজু ভাই।
সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটা কোমড়ে গুঁজেই দোতলা থেকে দ্রুত নিচে নেমে গেল খুনি।
চলবে...
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:- ১০ (ভয়ঙ্কর পর্ব)
গুলির শব্দ হয়নি বলেই লোকজন তেমন কোনো ছুটোছুটি করে নাই। পুতুল তাড়াতাড়ি সাজুকে ধরে ফেললো, রক্ত দেখে সে ঘাবড়ে গেছে। দুজন যুবক পুতুলকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেল, তারা সবাই মিলে সাজুকে ধরাধরি করে বসালো।
খুনির নিশানা সঠিক ছিল তবে সাজু নিচু হয়ে প্যান্টের ময়লা ঝাড়ার জন্য হালকা নড়েচড়ে যায়। আর তাই তার বাম হাতে বাহুতে কিছুটা মাংস ছিড়ে গুলি বেরিয়ে গেল। কিন্তু আশেপাশে কেউ বুঝতে পারলো না এটা গুলির আঘাত।
প্রথমত কেউ কোনো শব্দ শুনতে পায়নি। আর৷ দ্বিতীয়ত গুলিটা মাংস ছিড়ে বেরিয়ে গেছে তাই সেটা কেউ আন্দাজ করতে পারে নাই। তবে সাজু ভাই ঠিকই বুঝতে পেরেছে, কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখার জন্য চুপচাপ বসে রইল। আশেপাশে তার চোখ ঘুরতে লাগলো, রাব্বি যেহেতু একটু আগে তাকে বলেছিল সে বিপদে পড়বে। এখন তার মনে হচ্ছে ওই ছেলেটা ঠিকই বলেছে, ছেলেটার কথা সামান্য গুরুত্ব দিলে ভালো হতো। অন্তত বাসের মধ্যে বসে থাকতে পারতো, সেখানে যদি আক্রমণ করতো তাহলে নিশ্চয়ই খুনিকে বাসের ভিতরে যেতে হতো।
ফেরি ঘাটে এসে ভিড়েছে। পুতুল সুপারভাইজার কে অনুরোধ করলো ঘাটের একটা ফার্মেসির কাছে গাড়িটা একটু রাখার জন্য। ঘাট পেরিয়ে অনেকটা সামনে এসে রাস্তার পাশে একটা ওষুধের দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড় করানো হয়েছে। পুতুল দ্রুত সেখান থেকে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা নেবার মতো ওষুধ সেভলন আরো কিছু জিনিস কিনে গাড়িতে উঠলো।
পুতুল খুলনা মেডিকেলের স্টুডেন্ট। যদিও তার পড়াশোনা এখনো শেষ হয়নি কিন্তু এতটুকু আঘাতের সেবা সে ঠিকই করতে পারবে। আর বাস মোটামুটি দুই ঘন্টার মধ্যে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর পৌঁছে যাবে। তার টার্গেট হচ্ছে সেখান থেকে হাউজবিল্ডিং গিয়ে সরাসরি উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাবে।
পুতুল তার ছোট মামাকে কল দিয়ে বললো যে আধুনিক হাসপাতালে যেতে হবে। তাই সে যেন আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করে।
আঘাতের ব্যথা আস্তে আস্তে সমস্ত শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে লাগলো। ব্যথার সঙ্গে লড়াই করতে করতে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তারা উত্তরা পৌঁছে গেল।
★★★
পুলিশের সাহায্য নিয়ে দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে মাহিশার লাশ নিতে চলে গেল তার বাবা, দুলাভাই ও খালু। মেয়ের লাশ দেখে সেখানেই চিৎকার দিয়ে ভেঙ্গে পড়লেন মাহিশার বাবা। ওসি সাহেব যাবতীয় ফর্মালিটি মাহিশার দুলাভাইয়ের মাধ্যমে সেরে ফেললেন। তারপর কখন কীভাবে লাশ পাওয়া গেছে সবটাই তাদের কাছে বললেন।
মাহিশার লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেখানে সাজু ভাইয়ের ছবি পাওয়া গেছে এই কথাটা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো মাহিশার বাবা।
ওসি সাহেব যখন বললেন,
- লাশের ঘটনাস্থল থেকে যা কিছু পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটা বিষয় হচ্ছে এক যুবকের ছবি। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি তার বাসাও নাকি আপনাদের জেলার মধ্যে। সাজু ভাই নামেই নাকি পরিচিত সেই যুবক টুকটাক গোয়েন্দার কাজ করে।
- কি বললেন ওসি সাহেব? সাজু...?
- আপনি চিনেন তাকে?
- আমাদের বাড়িতে ওই ছেলে গতকাল রাতে গিয়েছিল। সেই তো আমাদের জানালো মাহিশা এখন আপনাদের কাছে আছে। নাহলে আমরা জানতেই পারতাম না ওসি সাহেব।
- অদ্ভুত তো। আপনাদের মেয়ের বিয়ের কথা ছিল পাঁচ দিন আগে। কিন্তু তাকে সেখান থেকে তুলে এনে তার পরদিন রাতে খুন করা হয়েছে ঢাকা শহরের মধ্যে। সেই বাসায় একটা যুবকের ছবি পাওয়া গেছে অথচ ওই যুবকই আবার আপনার মেয়ের লাশের সন্ধান দিতে আপনাদের বাড়িতে গেল?
- গতকাল রাতে উনি যখন আমাদের বাড়িতে ছিলেন তখন কে যেন কল করেছিল। তারপর সেই কলের অপরপ্রান্ত থেকেই কেউ একজন বলেছে যে মাহিশার লাশ আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যাবে।
- নাটক নাটক।
- মানে?
- মানে হচ্ছে নিজেকে সুরক্ষিত করার জন্য অন্য কাউকে দিয়ে কল করিয়ে সাজু নামের লোকটা পার পেতে চায়। আমার কাছে পরিষ্কার মনে হচ্ছে তিনিই খুনটা করেছেন।
- বলেন কি ওসি সাহেব?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো মাহিশার খালু।
- দেখুন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা সাব্বির নামের একটা ছেলেকে প্রথমে সন্দেহ করি। সব প্রমাণ সেই ছেলের বিরুদ্ধে ছিল তাই তাকে সন্দেহ করা স্বাভাবিক। আজকে ভোরবেলা সেই ছেলেকে টঙ্গী রেলস্টেশনের কাছ থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদ করার সময় সে বলেছে,
তার কাজ লাশ দাফন করা বা গুম করে দেওয়া। কিন্তু সে খুন করে নাই। তবে সে যখন প্রথম মেয়েটাকে দেখে তখন নাকি জীবিত ছিল। তারপর সে তার বাবার সঙ্গে বারবার কথা বলে মেয়েটা বেঁচে আছে তাই। সে ছাড়া তখন সেই ফ্ল্যাটে অন্য কেউ ছিল এবং খুনটা নাকি সেই অজ্ঞাত লোকটা করেছে। কিন্তু আমরা তার কথা বিশ্বাস করিনি তবে ধারণা করেছিলাম ছবির এই লোকটা হতে পারে। তবে এখন আপনাদের কথা শুনে অবাক হচ্ছি কারণ সে নাকি আপনাদের বাড়িতে গিয়েছে। আবার লাশের সন্ধান দিয়েছে।
- মাহিশার বাবা বললো, আমি তো এভাবে ভেবে দেখিনি ওসি সাহেব। তারমানে ওই ছেলে আমার মেয়েকে খুন করে আবার গ্রামের বাড়িতে নিজেকে বাঁচাতে খুন তদন্তের নাটক করছে?
- অনেকটা তাই।
- হায় আল্লাহ।
- চিন্তা করবেন না, আপনার মেয়ে মারা গেছে তাই তাকে তো ফিরিয়ে দিতে পারবো না। কিন্তু সেই খুনিকে গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা তো ঠিকই করতে পারবো।
- আমরা এখন কি করবো স্যার?
- আপাতত মামলা করে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যান। সাজুকে প্রধান আসামি এবং সাব্বির, তার বাবা, ও সেই পলাতক ম্যানেজারকে আসামি করে মামলা করবেন। লাশ দাফন করে ঢাকায় এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা যেন দ্রুত সবকিছু শেষ করতে পারি তাই বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আমাদের সাহায্য করবেন।
ওসি সাহেব মোবাইল বের করে মোংলা থানায় কল দিলেন।
★★★
রামিশাকে জ্ঞান ফিরিয়ে স্বাভাবিক করার জন্য যা যা করা দরকার সবটাই তাড়াতাড়ি করে ফেললো রাব্বি। মেয়েটার বুদ্ধি দেখে সে অবাক হয়েছে। তার চোখে ঠিকই ফাঁকি দিতে পেরেছিল কিন্তু শেষ মুহূর্তে জুতোর জন্য আর পারেনি।
রাব্বি এখন তাড়াতাড়ি রামিশাকে তার বাসায় পৌঁছে দেবে। তারপর তাকে যেতে হবে খুলনায়। আব্দুল কাদেরকে যেভাবেই হোক পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। নাহলে তার উপর আবারও আক্রমণ হবে, আর হাসপাতাল থেকে যদি তাকে কারাগারে নেওয়া হয় তাহলে রাব্বি তাকে আর সহজে বাঁচাতে পারবে না।
কিছুক্ষণ আগে রামিশা মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে বসেছে। তার সামনে এখন রাব্বি ও তার পরিচিত ভাবি বসে আছে। রামিশা প্রথমে সবকিছু মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো। তারপর পিছনের কথা মনে পড়তেই সে অনুভব করলো নিজে সুস্থ আছে। কিন্তু তার সামনে দুটো অপরিচিত মানুষ বসে আছে, এরা শত্রু নাকি বন্ধু বোঝা যাচ্ছে না।
রামিশা আস্তে করে বললো,
- আমার হাতে একটা ব্যাগ ছিল সেটা কোথায়?
সেখানে আমার মোবাইল ছিল।
- রাব্বি বললো, আপনার সঙ্গে যা কিছু ছিল সবটাই সুরক্ষিত আছে। আপনি কি এখনই কারো কাছে কল দিবেন?
- আপনাকে পরিচিত মনে হচ্ছে।
- না পরিচিত হবার মতো কেউ নয়, তবে বাসের মধ্যে সামান্য কথা হয়েছিল আমাদের। আমার নাম রবিউল ইসলাম।
- আমি একজনকে কল করতে চাই।
- সাজু ভাইকে?
চমকে গেল রামিশা। মনে মনে বললো, এই লোক কীভাবে বুঝতে পেরেছে সে সাজু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে চায়। যাদু যানে নাকি? অদ্ভুত।
কিন্তু তাকে চুপ থাকতে দেখে রাব্বি বললো,
- আপনি যখন রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে ভয়ের কারণে জ্ঞান হারালেন তারপর থেকে আপনার ব্যাগপত্র আমার কাছে ছিল। আপনার ফোনে সাজু ভাই নামে সেভ করা একটা নাম্বার দিয়ে অসংখ্য কল এসেছে। আমি একটাও রিসিভ করিনি।
- ওহ্ আচ্ছা।
- তাই ভাবলাম, যে লোকটা আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য এতবার কল দিচ্ছে তিনি হয়তো খুব কাছের কেউ হবে। বিকেলের মধ্যে আপনার জ্ঞান না ফিরলে আমি পুলিশের কাছে সাহায্য নিতাম।
- আমার ফোনটা একটু দেন।
রাব্বি মোবাইলটা এনে দিল। রামিশা সাজু ভাইর নাম্বারে কল দিতে লাগলো কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না।
রামিশা চেক করে দেখলো যে সর্বশেষ তাকে কল করা হয়েছে দেড় ঘন্টা আগে। তারমানে দেড় ঘন্টা ধরে আর একবারও কল করেনি সাজু ভাই।
কিন্তু কেন? রাগ করেছে?
এতবার কল দিয়ে তাকে পায়নি বলে মনে মনে খুব বিরক্ত হয়েছে নাকি?
- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
মুখ তুলে জিজ্ঞেসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রামু।
রাব্বি তখন মনে মনে সাজানো কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
- সাজু ভাই নামের একটা লোককে আমিও চিনি কিন্তু তার বাসা বাগেরহাট। আমি তার সঙ্গে দেখা করেছিলাম একবার, খুব চমৎকার মানুষ। এখন আমার কৌতূহল হচ্ছে আপনি কি সেই সাজু ভাইয়ের পরিচিত কেউ?
রামিশার সঙ্গে যে সাজু ভাইয়ের কিসের সম্পর্ক সেটা তো রাব্বি ভালো করেই জানে। কিন্তু তবুও এমন ভাবে প্রশ্ন করলো যেন রামিশা বুঝতে পারে রাব্বি কিছু জানে না।
- জ্বি ভাই, আমি বাগেরহাটের সাজু ভাইয়ের পরিচিত, আমি তার খুব কাছের কেউ। আপনি যেহেতু তার সঙ্গে দেখা করেছেনে তাই নিশ্চয়ই জানেন উনি একজন গোয়েন্দা।
- হ্যাঁ জানি। সেজন্যই তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিল। আমার এক বন্ধুর বাসা বাগেরহাট, তাদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে কিছুদিন আগে সাজু ভাইর সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
- আমাকে এভাবে বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
- সত্যি বলতে আপনার মোবাইলে কল আসতে দেখার পর থেকে আমি একটু বেশি সচেতন ছিলাম। আপনি যেহেতু সাজু ভাইয়ের পরিচিত কেউ তাই বাড়তি যত্ন।
বিকেল পাঁচটার দিকে সাজুর মোবাইল রিসিভ হয়েছে। রামিশা বললো,
- সাজু ভাই আপনি কোথায়?
- কে আপনি?
একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনে চুপ হয়ে যায় রামিশা।
- কথা বলছেন না কেন? কে আপনি?
- এটা সাজু ভাইয়ের মোবাইল না?
- হ্যাঁ কিন্তু কে আপনি?
- উনি কোথায়? তাকে বলেন রামিশা কল দিয়েছে তার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
- উনি ঘুমাচ্ছেন, এখন ডাকা যাবে না।
- উনি? সাজু ভাই আপনার কে হয়?
- যেই হোক না কেন কিন্তু খুব কাছের কেউ যদি নাহয় তাহলে তো কল রিসিভ করি না তাই না।
- তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক?
- মনে করুন স্বামী স্ত্রী।
- কি বললেন?
কলটা কেটে গেল। কোনকিছুরই বুঝতে না পেরে দুচোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো তার। রাব্বি কিছুটা অবাক হয়ে তাকালো কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেল না।
যদিও সে এখন আছে নতুন টেনশনে। একটু আগে সে জানতে পেরেছে সাব্বির ছেলেটা ধরা পড়েছে।
★★★
দুপুরের দিকে দারোগা সাহেবের কাছ থেকে সাজুর নাম্বার নিয়ে তার অবস্থান জানার চেষ্টা করতে লাগলো ওসি সাহেব। অবশেষে যখন তিনি জানতে পারলেন সাজু ভাই উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি। তখন বেলা পাঁচটা। নিজের ফোর্স নিয়ে তিনি রওনা দিলেন উত্তরা। মোংলা থানার দারোগার কথা শুনে কিছুটা অবাক হলেও সেটাকে সাজানো বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। আব্দুল কাদের নামে কে যেন অন্য কারো নাম প্রকাশ করেছে। কিন্তু সে নাকি খুনিকে দেখে নাই তাই ওসি সাহেবের ধারণা ওই অজ্ঞাত লোকটা সাজু সাহেব।
হাসপাতালে পৌঁছে পুলিশ সরাসরি সাজু ভাইকে খুঁজে বের করলো। তারপর বললো,
- ভালো আছেন সাজু সাহেব?
- জ্বি, আপনারা?
- মাহিশার বাবার করা মামলার উপর ভিত্তি করে তার মেয়ে মাহিশাকে কিডন্যাপ করে ঢাকায় এনে হত্যা করার প্রধান আসামি হিসাবে আপনাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে সাজু সাহেব। ওরফে সাজু ভাই।
- মানে কি এসবের?
- অবাক হবার অভিনয় করতে হবে না, থানায় গিয়ে আপনার সঙ্গে বিস্তারিত বলা হবে। দাবার গুটির চালটা খুব ভালো করে দিয়েছেন সাজু সাহেব। কিন্তু ঘোড়ার আড়াই চালের দিকে একটু নজর রাখা দরকার ছিল।
আপনি থানায় চলুন।
[ সাব্বিরকে গ্রেফতার, আব্দুল কাদেরের স্বীকার করা কথা এবং বাকি বিষয় গুলো আগামী পর্বে ভালো করে বোঝানো হবে। ]
চলবে....
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:- ১১
ওসির কথা শুনে পুতুল ঘাবড়ে গেলেও সাজু ভাই একটুও বিচলিত হলেন না। গতকাল রাতে যখন জানতে পেরেছেন ও বাসায় তার ছবি পাওয়া গেছে তখন থেকে এটা ধারণা ছিল। পুলিশের সঙ্গে সামান্য ঝামেলা হতে পারে এটা আগেই সে আন্দাজ করে রেখেছে।
এমন সময় সেখানে প্রবেশ করলো পুতুলের মামা, তার হাতে একটা কাপ। সেই কাপের মধ্যে রয়েছে কফি " এক কাপ ঠান্ডা কফি। "
★★ ★
আজকে সকালে নাস্তা করার জন্য সাব্বির যখন হোটেলে এসেছিল তখনই তাকে চিনতে পারে সেখানকার এক কাস্টমার। তিনি পত্রিকা পড়েন নিয়মিত, পত্রিকায় উত্তর বাড্ডা লাশ পাওয়ার ঘটনা ও সেখানে সাব্বিরের ও তার বাবার ছবি ছাপা হয়েছে।
লোকটা তখনই আশেপাশে দুজনের সাহায্য নিয়ে সাব্বিরকে ধরে ফেলে। সাব্বির কোনো পেশাদার খুনি নয়, সে কোনো উপায়ে পালিয়ে যেতে পারে নাই। স্থানীয় থানায় খবর দেবার পরে তারা এসে সাব্বিরকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তাকে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই ওসি সাহেবের কাছে।
সকাল সাড়ে দশটার দিকে ওসি সাহেবের সামনে সাব্বিরকে হাজির করা হয়। ওসি সাহেব তাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করে,
- তোমার নাম কি?
- সাব্বির।
- ওই মেয়েটাকে খুন করলে কেন?
- আমি খুন করিনি।
- এতকিছুর পরও অস্বীকার করো?
তারপর সাব্বির সেই রাতের ঘটনা সবকিছুই ওসি সাহেবকে বলে। সবটা শুনে ওসি সাহেব সাব্বিরের বেশিরভাগ কথা বিশ্বাস করে নাই। খুনিরা ধরা পড়ার পরে এমন অসংখ্য গল্প বলে আর সেসব গল্প শোনার অভ্যাস তার আছে।
ওসি সাহেব সাজুর সেই ছবিটি সাব্বিরের সামনে দিয়ে বললো,
- তুমি যাকে ফ্ল্যাটের মধ্যে দেখেছ এটাই কি সেই লোক?
সাব্বির ভালো করে তাকালো। সাজুকে তার চেনার কথা নয়, তাছাড়া সেই রাতে সাব্বির রাব্বি কে নিজের চোখে দেখেনি। তাই বললো,
- স্যার আমি এই ছবির মানুষটাকে চিনি না। আর সেই রাতে তো আমি ওই অজ্ঞাত লোকটার মুখ দেখতে পারিনি। শুধু কণ্ঠ শুনেছিলাম।
- তোমার বাবা এখন কোথায়?
- আমি জানি না। বাবা আমার উপর প্রচন্ড রেগে গেছে তাই তার সামনে দাঁড়ানোর সাহস নেই।
- লাশ গুম করতে পারো নাই তাই রেগে আছে?
- জ্বি।
- তুমি আমার সঙ্গে কত% সত্যি বলছো।
- যা বলেছি সবটাই সত্যি বলছি।
- কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না কারণ ছবির ছেলেটা একজন গোয়েন্দা।
- ওহ্।
- তুমি বরং সিদ্ধান্ত নাও, তোমরা কার হুকুমে লাশ গুম করো, তারপর সেদিন রাতে ওই মেয়ের সঙ্গে কি কি হয়েছে। কেন খুন করেছ আর কার কথাতে খুন করেছ সবকিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নাও। পরে যখন তোমার সঙ্গে দেখা করবো তখন আমার এই ভদ্র ব্যবহার পাওয়া যাবে না।
ওসি সাহেব উঠে গেলন। তারপরেই মাহিশার বাবা ও খালু আর দুলাভাই আসেন। তাদের নিয়ে তিনি চলে যান ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। সেখানে গিয়ে তিনি সাজুর বিষয় বেশ সন্দেহের আলামত লক্ষ্য করেন।
★★★
রাব্বির দিকে তাকিয়ে রামিশা বললো,
- আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন, এখন শেষ একটা কাজ করে দিবেন?
- বলেন।
- আমাকে একটু মিরপুরে পৌঁছে দিতে পারবেন? সেখানে আমার বোনের বাসা।
- সাজু ভাইয়ের কাছে যাবেন না?
- না। তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছেটা মরে গেছে। আপনি যদি এই উপকারটা করেন আমি তাহলে নিশ্চিন্তে আপুর বাসায় যেতে পারবো।
- ঠিক আছে আপনি তৈরি হয়ে নেন আমি ফ্রেশ হয়ে আপনাকে ডাক দেবো।
রামিশার রুম থেকে বের হতেই রাব্বির মোবাইল বেজে উঠলো। স্ক্রিনে খুব পরিচিত একটা নাম্বার দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রাব্বি। তারপর অস্ফুটে মুখ থেকে বের হয়ে গেল " দাদাজান "।
- হ্যালো রাব্বি?
- জ্বি দাদাজান।
- তোমাকে আমি বলেছিলাম না যেকোনো কাজ করার আগে বিশেষ করে খুনের আগে আমার সঙ্গে একটু কথা বলে নিবা।
- কিন্তু সবকিছু তো ঠিকই চলছে। আর আমি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি আপনি দেশে ছিলেন না।
- তাই বলে অপেক্ষা করা যেত না?
- মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলে তার সঙ্গে আরেকটা পরিবার জড়িয়ে যেত। বিয়ের আগেই কাজটা করতে হতো তাই বেশি ঝামেলা করিনি।
- চরম ভুল করেছ। আর সাজু ছেলেটাকে এর মধ্যে ফাঁসাতে গেলে কেন? যাকে তাকে খুন করার জন্য কিন্তু আমি তোমাকে সুরক্ষিত রাখি না। তুমি বলেছিলে যে খারাপ কাজে জড়িত এমন কাউকে মারার কন্ট্রাক্ট পেলে তুমি করবে। কখনো ভালো কাউকে তুমি টাকার বিনিময়ে হলেও মারবে না।
- হ্যাঁ মনে আছে।
- তাহলে এখানে সাজুর দোষ কি? আর যে মেয়ে কে খুন করছো তার দোষ কি?
- ওই গোয়েন্দা সাজু ভাই একটা নিরপরাধ ব্যক্তি কে আসামি বানিয়ে দিয়েছে। কৌশলে এমন কাজ করেছে যে লোকটা আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারে নাই। আর যে মেয়েকে খুন করেছি সে কয়েকটা ছেলের সঙ্গে বেঈমানী করেছে। আপনি তো জানেন দাদাজান, মেয়ে মানুষের বেঈমানী আমি সহ্য করতে পারি না।
- মেয়েটার সম্পর্কে আমি বেশি কিছু জানি না তবে সাজুর সম্পর্কে যেটা বলছো সেটা একদমই ভুল কথা। ওই ছেলে কোনো নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসাবে না, সে সখের জন্য গোয়েন্দার কাজ করে। পেশা হিসেবে নয়।
- রাব্বি চুপচাপ।
- তুমি কি জানো যে সাজু ছেলেটাকে গুলি করা হয়েছে? আর সে হাসপাতালে ভর্তি, এবং তাকে সেই অবস্থায় আবার ওসি সাহেব গেছে গ্রেফতার করার জন্য।
চমকে গেল রাব্বি। সাজু ভাইয়ের প্রতি হামলা হবে এটা তার আশঙ্কা ছিল কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সেটা হবে তার ধারণা ছিল না।
- আপনি কীভাবে জানেন?
- আমি অনেক কিছুই জানি। যে লোকটার সঙ্গে তোমার চুক্তি হয়েছে আমি তার সম্বন্ধে খোঁজখবর নিয়েছি।
- কীভাবে?
- তুমি কার কার সঙ্গে কথা বলো সেই কল করার সব লিস্ট করা হয়। সেখান থেকেই আমি দুটো নাম্বার আলাদা করেছি, কারণ তুমি তো তোমার পারসোনাল নাম্বার দিয়ে খুব বেশি মানুষের সঙ্গে কথা বলো না।
- এটা আপনার ঠিক হয়নি।
- অবশ্যই ঠিক আছে। তুমি না জেনে বিপদের মধ্যে জড়াবে এটা তো হবে না। সাভারের সন্ত্রাসী আলাউদ্দীনকে তো চেনো তুমি, তাই না?
- হ্যাঁ।
- সাজুকে খুন করার বর্তমান দায়িত্ব এখন তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তোমাকেও।
- মানে?
- ওরা তোমাকেও সরিয়ে ফেলার প্ল্যান করেছে, কারণ তারা জানে তুমি আমার ডানহাত।
- আপনি কার কথা বলছেন?
- তুমি আগে আলাউদ্দীনকে থামাও, তাকে শেষ করো তারপর আসল লোকের ঠিকানা দিচ্ছি।
- ঠিক আছে হয়ে যাবে।
- আমি চাই সাজুকে মারার আগে তুমি কাজটা করে ফেলো। কারণ সাজু বেঁচে থাকলো তোমার খুব একটা সমস্যা হবে না।
- আমি চেষ্টা করবো।
- আরেকটা কথা।
- বলেন।
- যার সঙ্গে তোমার চুক্তি হয়েছে তার প্রধান লক্ষ্য ছিল সেই মেয়েটা। কিন্তু কেন তাকে মেরে ফেলা হয়েছে সেই তথ্য পুলিশ বের করুক। তবে তারা জানতো যে মেয়েটাকে মারার জন্য তোমাকে চুক্তি করা হলেও কিছুটা ঝামেলা হতে পারে। তাই ওই এলাকার একজনকে তারা টাকা দিয়ে কিনতে চায়। কিন্তু সেই লোকটা কাজটা করতে রাজি হয় ঠিকই তবে সেটা টাকার বিনিময়ে নয়।
- তাহলে?
- সাজুর জীবনের বিনিময়।
- বুঝতে পারলাম না।
- সেই লোকটা বলেছিল, ওই একই ব্যক্তিকে দিয়ে যদি সাজুকে খুন করাতে পারে তাহলে সে সকল ঝামেলা নিজে টেক্কা দেবে।
- এবার বুঝতে পারছি। তাই তারা আগে সাজুকে মারার কন্ট্রাক্ট করে আমার সঙ্গে। তার একদিন পরে বলে আরেকটা মেয়ে খুন করতে হবে।
- হ্যাঁ সেটাই। মেয়েটা তাদের টার্গেট হলেও সাজু হচ্ছে যিনি সবকিছু ধামাচাপা দেবেন সেই লোকটার টার্গেট।
- দাদাজান।
- হুম।
- আমি জানি আমার মতো অনেক রাব্বি আছে আপনার আয়ত্তে। তাই তাদের মাধ্যমে এসব বের করা আপনার কাছে কোনো ব্যাপার না। তবে সত্যি বলতে আজকে আপনি অনেক কিছু বের করে দিলেন যেটা খুব জরুরি ছিল।
- আমি স্বার্থ ছাড়া কিছু করি না রাব্বি। সামনে আবার নির্বাচন, তাই সেই পর্যন্ত তোমাকে নিজের কাছে সাবধানে রাখা আমার একান্ত জরুরি।
- আপনি একটা উপকার করবেন?
- কি?
- ওসি সাহেবকে কল দিয়ে বলবেন সাজু ভাইকে ছেড়ে দিতে। আমি জানি সাজু নিজেই এটা থেকে বের হতে পারবে, কিন্তু সময় লাগবে। আমি চাই না সে জেলে যাক বা তার সম্মানে আঘাত লাগুক।
- ওকে আমি দেখছি বিষয়টা। তুমি আজকে রাতের মধ্যে আলাউদ্দীনকে শেষ করার ব্যবস্থা করো।
নিজের পিস্তলটা সঙ্গে নিয়ে রামিশার কাছে চলে গেল রাব্বি। রামিশাকে মিরপুর পৌঁছে দিয়ে তাকে যেতে হবে সাভারে। আলাউদ্দীনের খোঁজ বের করতে হলে তাকে সেখানে যেতেই হবে।
★★★
কোনো ধরনের কথাবার্তা না বলে চুপচাপ ঠান্ডা কফি শেষ করলেন সাজু ভাই। তারপর ওসি সাহেবকে বললো,
- আমি জানি আমার ছবি উত্তর বাড্ডা ওই বাড়ির মধ্যে পাওয়া গেছে। আমার এক বন্ধু আরেকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আপনার সঙ্গে দেখা করতে গেছিলো। তিনি হয়তো আপনাকে বলেছিল ওই ছেলেটা আমি।
- হ্যাঁ বলেছিল। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি সব তুমি প্ল্যান করে করেছো।
- একজন ওসি হয়ে বাচ্চাদের মতো কথা বলেন বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। মাহিশা যে রাতে খুন হয়েছে তখন আমি খুলনা ছিলাম, আর আমার ওই ছবির বিষয় নিয়ে আমিও কৌতূহলে আছি।
- আপনি বললেই তো বিশ্বাস করবো না আপনি সেদিন কোথায় ছিলেন বা কি করেছেন।
- আপনারা আমার মোবাইল নাম্বার চেক করুন। বিগত মাস খানিকের মধ্যে আমার মোবাইল ট্রাক্ট করুন।
- কি কি করবো সেটা তো আপনার কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে না। গোয়েন্দা হয়েছেন বলে সবসময় জ্ঞান দিবেন নাকি?
সাজু খেয়াল করলো ওসি সাহেব তাকে একবার আপনি আরেকবার তুমি করে সম্বোধন করছে। এরমানে লোকটা একটু নার্ভাস হয়ে গেছে, কিন্তু সাজু বরাবরের মতোই শান্ত হয়ে বসে আছে।
এমন সময় ওসি সাহেবের ফোনে কল এলো। তিনি বিরক্তি নিয়ে কলটা রিসিভ করলেন। অপর প্রান্ত থেকে কিছু একটা শুনে নড়েচড়ে বসেছেন।
কল করেছে একটু আগে রাব্বির সঙ্গে যে লোকটা কথা বলছিল সেই লোক।
- জ্বি স্যার।
- সাজু সাহেব কি আপনার সামনে?
- হ্যাঁ স্যার।
- তাকে গ্রেফতার করবেন না, উনি এই মামলায় ঘটনাচক্রে জড়িয়ে যাচ্ছেন। আমি তার হয়ে কথা দিচ্ছি আপনি আসল খুনিকে ঠিকই পাবেন। আর সেজন্য আপনার দরকার কিছু শক্ত প্রমাণ, আর সেটা আপনাকে এই সাজু সাহেব বের করে দেবে।
- কিন্তু স্যার।
- সে পালাবে না ওসি সাহেব। আপনি একটু সময় দেন সে সবটা বের করতে পারবে, তাকে জেলের মধ্যে আটকে রাখলে সেটা সম্ভব না।
- ঠিক আছে স্যার।
- এখন সাজু সাহেবের হাতে মোবাইলটা দিয়ে আপনারা রুম থেকে বের হয়ে যান। আমি একটু তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
সাজুর হাতে মোবাইল দিয়ে সবাই রুম থেকে বের গেল। সাজু প্রথমে সালাম দিল,
- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়া আলাইকুম আসসালাম, ভালো আছেন সাজু সাহেব?
- জ্বি। আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।
- আমি আমার পরিচয় ওসি সাহেবের কাছে প্রকাশ করেছি। আপনার সঙ্গে প্রকাশ না করলে চলবে, তবে আমি সরকারি দলের কেউ।
- এতবড় কেউ আমার সঙ্গে কথা বলছে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
- আপনার উপর এই হামলা কে করেছে এবং কে আপনাকে খুন করতে চায় আমি জানি। একটা রাজনৈতিক চক্র মোংলার ওই মেয়েকে খুন করে এবং সেখানে নিরাপত্তার আশায় আরেকটা লোকের কথায় আপনাকেও খুন করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে।
- আমি বুঝতে পারছি।
- কে আপনাকে খুন করাতে চায় সেটা আপনি নিজেই বের করতে পারবেন আশা করি। তারপর ওই মেয়ের খুনের অপরাধীকেও আপনি বের করবেন আশা রাখি।
- আমি আমার শত্রুকে বুঝতে পারছি।
- কে বলেন তো?
- মোংলা থানার দারোগা সাহেব। ওই দারোগা সাহেবের নির্দেশে আমার উপর হামলা হচ্ছে। তিনিই আমাকে খুন করাতে চায় সেটা আমি কিছুক্ষণ আগে নিশ্চিত হয়েছি।
[ মন্তব্য করার জন্য কি প্রতিদিন অনুরোধ করতে হবে? ?]
চলবে--------------।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:- ১২
গতকাল রাতে মংলা থেকে ফেরার পথে সাজুর উপর যখন হামলা হয়েছে তখন থেকেই সাজু বেশ চিন্তা করতে লাগলো। আব্দুল কাদেরের কথা অনুযায়ী মংলায় তখন তাদের দলীয় আর কেউ ছিল না। কিন্তু সাজু সেই সময় মংলা ত্যাগ করে আসার পরে বেশ কয়েকবার পিছনে একটা বাইক দেখতে পেয়েছে। সাজু মনে মনে ভাবলো যে তার বাগেরহাট যাবার কথা দারোগা ছাড়া আর কেউ জানে না। তখন ছোট্ট একটা সন্দেহ মনের মধ্যে উঁকি মারে।
দ্বিতীয় সন্দেহ আসে সাজুর এই খুলনা থেকে ঢাকা যাবার কথা দারোগা সাহেবের কাছে সে কল দিয়ে বলেছে। এমনকি কোন গাড়িতে করে যাচ্ছে সেটাও জিজ্ঞেস করেছিল ভদ্রলোক। মিথ্যা বলা সাজুর স্বভাব নয়, আর যদি না বলে তবে দারোগা হয়তো বুঝতে পারবে সাজু সন্দেহ করে। তাই সাজু বলে দেয় তার বাসের নাম, আর ঠিক সেই তথ্য ধরেই দারোগা হয়তো খুনির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছে।
তৃতীয় সন্দেহ আসে সন্দেহের মাধ্যমে। রামিশার বাগেরহাট যাবার কথা গতকাল রাতে সাজুর ফোনে মেসেজ এসেছিল তখনই সাজু দারোগার কাছে বলেছিল। সে বলেছিল, " চট্টগ্রাম থেকে আমার এক বন্ধু আসবে তাকে নিরাপদে রাখার জন্য মংলাতে ভালো কোনো হোটেল আছে? "
দারোগা সেটা কারো কাছে বলেছে কিনা সেটা সাজু জানে না। রাব্বির কাছে তার চুক্তিকারী মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে সেটা সাজুর জানার কথা নয়। কিন্তু সাজু যখন আন্দাজ করতে পারে যে রামিশার উপর বিপদ হতে পারে। তারপর রামু আর কল রিসিভ করে নাই। তখন থেকেই সাজুর সন্দেহ আরো বাড়তে থাকে।
এরপরই সাজু ভাই ওই দারোগা সাহেবের আত্মীয় স্বজনের খোঁজ নেবার জন্য একজনের সঙ্গে কথা বলে। সেই লোক মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে যতটুকু তথ্য বের করতে পেরেছে তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিল।
সাজু ভাই অসুস্থ হয়ে লন্ডনে যাবার আগে নয়নের মায়ের সেই নয় বছর আগের খুন হবার রহস্য বের করেছিল। সেই মামলায় আসামি ছিল মিনহাজ নামে নয়নের মামাতো ভাই। আর এই দারোগা হচ্ছে সেই মিনহাজের মামা, সম্ভবত নিজের ভাগ্নে দোষী হবার জন্য সাজুকে দায়ী করেছে।
[ নয়নের মায়ের মৃত্যুর রহস্যের গল্প সাজু ভাই সিরিজের গল্প "সরি আব্বাজান-২" এর মধ্যে জানানো হয়েছে। যারা ওই রহস্যটা জানেন না তারা পড়ে নিতে পারেন। ]
|
|
ওসি সাহেবের নাম্বারে কল করা সেই ক্ষমতাসীন লোকটা সাজুর কথা শুনে খানিকটা চুপ থেকে আবার বললেন,
- আপনার সন্দেহ পুরোপুরি সত্যি। যারা ওই মেয়ে খুন করেছে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দারোগা আপনাকে শেষ করতে চাইছে।
- সাজু বললো, কিন্তু আপনি এতকিছু জানলেন কীভাবে? আর এসবের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কি সেটা বুঝতে পারছি না।
- আলাউদ্দীন নামের এক সন্ত্রাসী দিয়ে আপনার উপর আক্রমণ করা হয়েছে। আপনি আজকের রাতটা একটু সাবধানে থাকবেন, তাছাড়া আহত শরীর নিয়ে রাতে বের হবার দরকার নেই।
- কিন্তু আমাকে বের হতে হবে।
- কেন?
- চট্টগ্রাম থেকে আমার এক বন্ধু আসার কথা ঢাকায়, সে কুমিল্লা আসার পরে তার উপর হয়তো কোনো আক্রমণ হয়েছে। আমি সেই থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু আমি ব্যর্থ।
রামিশা যে রাব্বির কাছে রয়েছে সে কথা লোকটা জানে না। যদি জানতো তাহলে হয়তো কিছু একটা বলতে পারতো৷
সাজু অনেক কথাই এই অপরিচিত লোকটার সঙ্গে বলতে চাচ্ছে না। কিন্তু যতটুকু বলছে সেটা ওই ওসি সাহেব তাকে স্যার বলেছিল সেজন্যই বলা।
- সাজু সাহেব?
- বলেন।
- আমি আগামীকাল দিনের মধ্যে আপনার জন্য একটা লাইসেন্স করা পিস্তলের ব্যবস্থা করে দেবো। আর যেকোন একটা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আপনাকে যোগ দিতে হবে। কারণ আপনি এখন যে মামলার মধ্যে আছেন সেটা খুব বিপদের একটা কাজ।
- একদিনের মধ্যে কি সেটা সম্ভব?
- সেই দায়িত্ব আমার, আমি আগামীকাল সকালে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবো। আপনি আজ রাতটা সাবধানে থাকবেন।
- একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।
- বলেন সাজু সাহেব।
- আপনি বলেছিলেন আলাউদ্দীন নামের একজন আমার উপর হামলা করেছে। কিন্তু ঘটনা সেরকম নয়, আমার ধারণা আমাকে গুলি করেছে রাব্বি নামে এক সন্ত্রাসী।
মোবাইলের অপর প্রান্তে নীরবতা। সে হয়তো ধারণা করেনি সাজু সরাসরি রাব্বিকে সন্দেহ করবে। কিন্তু আব্দুল কাদের যে সবটা স্বীকার করেছে তাতে সন্দেহ করাই স্বাভাবিক। সেজন্য সেও চায় আব্দুল কাদের মারা যাক, কিন্তু লোকটা যখন জানতে পেরেছে আব্দুল কাদেরকে মারার কথা নিয়ে রাব্বির সঙ্গে মতবিরোধ আছে। তাই নিজে থেকে রাব্বিকে কিছু বলে নাই।
- রাব্বি বা যে কেউ হোক সেটা আপনি ঠিকই বের করবেন। আপনাকে সবদিক থেকে সহোযোগিতা করবো আমি, আপনি চিন্তা করবেন না।
- এতে আপনার লাভ?
- লাভের হিসাব সবসময় চলে না সাজু সাহেব। আমি আগামীকাল আপনাকে কল দেবো তবে সেটা আপনার ব্যক্তিগত নাম্বারে।
কলটা কেটে গেল। সাজু কাউকে না ডেকে চুপ করে বেডে বসে আছে। দারোগা সাহেবের বিষয়টা তাকে বেশ ভাবাচ্ছে, তার সামান্য সন্দেহ ছিল। মিনহাজের মামা তাই নিজের ভাগ্নের জন্য হয়তো প্রতিশোধ নিতে পারে।
কিন্তু এই আগন্তুক লোকটা কে হতে পারে সেটা তার মনের মধ্যে জট পাকিয়ে দিচ্ছে।
ওসি সাহেবের সঙ্গেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেল সাজু ভাই। পুতুল তার মামার সঙ্গে বাসায় চলে গেছে, কালকে তার পরীক্ষা আছে। সাজুর মোবাইল সাজুর হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললো,
- আমার সঙ্গে গেলেই পারতেন। শুধু শুধু নিজের বিপদ কেন ডেকে আনছেন?
- আমি জানি না রামিশা এখন কেমন আছে, তাই তাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
- একটা কথা বলি?
- হ্যাঁ।
- রামিশা কল দিয়েছিল, তখন আপনার কাছে ডাক্তার ছিল। আমি রামিশা আপুর সঙ্গে কথা বলেছিলাম।
- কি বলেছে? আর আপনি এতক্ষণ সেটা বলেন নাই কেন?
সাজু বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে গেল।
- সরি সাজু ভাই। আমি ভুলে গেছিলাম, আর এরপরই পুলিশ এসে গেছে।
- ঠিক আছে আমি দেখছি, তোমার সঙ্গে পরে দেখা হবে।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিল সাজু ভাই। ওসি সাহেব বলেছিল তাদের সঙ্গে কুড়িল বা বাড্ডা পর্যন্ত যাবার জন্য। সাজু তাদের সঙ্গে না গিয়ে আলাদা হয়ে গেল এবং আগামীকাল সকাল বেলা তাদের থানায় যাবে সেই আশ্বাস দিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং মাহিশার লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেটা ভালো করে দেখা দরকার।
সাজু ভাই রামিশার নাম্বারে পরপর তিনবার কল দিল কিন্তু রিসিভ করেনি সে। চতুর্থ কল দিতে গিয়ে নাম্বার ওয়েটিং পেল।
" কারো সঙ্গে কথা বলছে নিশ্চয়ই। " মনে মনে বললো সাজু ভাই।
সাজুর মোবাইল থেকে রামিশার নাম্বার নিয়ে রেখেছিল পুতুল। খুব কৌশলে মোবাইলের ফিঙ্গার লক সাজুর আঙ্গুলের ছাপ দিয়েই খুলে ফেলে। সাজু তখন অচেতন ছিল। তারপর রামিশার নাম্বার নিজের মোবাইলে সেভ করে রাখো।
সাজুর কাছ থেকে বেরিয়ে রামিশার নাম্বারে কল দেয় পুতুল।
পরপর তিনবার কল দেবার জন্য রামিশা ধারণা করেছিল এটাও সাজু ভাই দিয়েছে। কিন্তু নতুন অপরিচিত নাম্বার দেখে একটু ভাবতে লাগলো। সাজু ভাই কি অন্য নাম্বার দিয়ে কল দিচ্ছে?
এমনটা চিন্তা করে সে কলটা রিসিভ করে চুপ করে থাকে। তারপর মেয়ে কণ্ঠ শুনতে পেয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো,
- কে আপনি?
- আমার নাম পুতুল, সাজু ভাইয়ের মোবাইল দিয়ে আপনার সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম।
- ওহ্।
সামান্য ভাবলো রামিশা। সাজু ভাই তাহলে এখনো মেয়েটার সঙ্গে আছে নিশ্চয়ই। কল রিসিভ হচ্ছে না তাই একে দিয়ে ওকালতি করাচ্ছে।
- আপু..?
- বলেন।
- আমি তখন মিথ্যা বলেছিলাম। আসলে সাজু ভাইয়ের সঙ্গে আমার মাত্রই গতকাল পরিচয় হয়েছে। যদিও অনেক আগেই তাকে চিনতাম কিন্তু দেখা হয়েছে গতকাল।
- আশ্চর্য। গতকাল দেখা হয়েছে আর তাতেই আপনি নিজেকে তার স্ত্রী বলে পরিচয় দিচ্ছেন।
অবশ্য সত্যি সত্যি যদি গতকালই বিয়ে হয়ে থাকে সেটা ভিন্ন কথা। তো আমাকে কল দিয়েছেন কেন?
- সরি বলতে।
- কেন?
- সাজু ভাই অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন আপনাকে খুঁজতে বের হয়েছে। আমি জানি সে খুঁজে বের করতে পারবে।
- অসুস্থ মানে? কি হয়েছে তার?
- পাটুরিয়া ফেরির মধ্যে তাকে কারা যেন গুলি করেছিল। কাঁধে লেগেছে গুলি।
- বলেন কি?
রামিশার কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ।
- তারপর আমিই তাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি ঢাকায় আর তখন থেকে মোবাইল আমার কাছে ছিল। আপনার সঙ্গে এভাবে কথা বলার জন্য আমি লজ্জিত।
- সাজু ভাই এখন কোথায়?
- উত্তরা থেকে সে একা বের হয়ে গেছে। তার উপর আবারও কেউ আক্রমণ করতে পারে কিন্তু সে আপনাকে খুঁজতে চলে গেছে।
- ঠিক আছে আপনি কলটা কাটেন আমি এখনই সাজু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছি।
- একটা কথা ছিল।
- তাড়াতাড়ি বলেন।
- আমি যে তখন আপনাকে ওসব বলেছিলাম সেটা তাকে বলবেন না। সাজু ভাই তাহলে হয়তো আমার সঙ্গে আর কথা বলবে না।
- ঠিক আছে বলবো না। আপনি ওকে আহত অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে এসেছেন সেজন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। মেলা মেলা ধন্যবাদ।
কল কেটে দিয়েছে রামিশা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাস্তায় দিকে তাকিয়ে রইল পুতুল। রামিশা তাকে বলে গেল মেলা মেলা ধন্যবাদ, এটা নিশ্চয়ই সাজু ভাইয়ের বলা কথা। কারণ একমাত্র সাজু ভাই শুধু ধন্যবাদ না দিয়ে মেলা মেলা ধন্যবাদ বলে।
সাজুর মোবাইল বেজে উঠলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে রামিশার নাম্বার দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলো সাজু ভাই। রামিশা বললো,
" সাজু ভাই আপনি কোথায়? "
★★★
একটু আগে মিরপুর ১০ নাম্বারে রামিশাকে বাইকে করে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে রাব্বি। তাকে এখন দ্রুত কিছু কাজ করতে হবে, গাবতলি থেকে ভালো একটা পিস্তল নেবে। তারপর সাভারে গিয়ে আলাউদ্দীনের সাঙ্গপাঙ্গ ধরে তাদের থেকে বের করতে হবে আলাউদ্দীনের অবস্থান।
কিন্তু রাব্বি জানে না যে সাজু ভাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আছে আলাউদ্দীন নামের সেই সন্ত্রাসী। সাজুকে সমান তালে এখনো অনুসরণ করে যাচ্ছে ওই খুনি আলাউদ্দীন।
রাত আটটা।
মাহিশার লাশ কিছুক্ষণ আগে নিয়ে আসা হয়েছে বাড়িতে। একটু পরেই দাফন করা হবে। যেহেতু মৃত্যুর কয়েকদিন পার হয়ে গেছে তাই লাশ আর বেশিক্ষণ রাখা যাবে না। আগেই কবর খুড়ে রাখা হয়েছে, মসজিদের ইমাম সাহেব এলেই জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
মংলা থানার দারোগা সাহেবও উপস্থিত হয়েছেন। মাহিশার বাবার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। সাজুর নামে মামলার কথা শুনে ভদ্রলোক একটু চমকে যাবার অভিনয় করলেন। একটু পরে তার মোবাইলে একটা কল এলেই তিনি মোবাইল নিয়ে খানিকটা দুরে চলে যায়।
- দারোগা বললো, হ্যা বলেন।
- আমাদের দ্বিতীয় ভাড়াটে খুনি এখন সাজুর প্রায় কাছাকাছি বসে আছে। তারা নাকি এখন একটা রেস্টুরেন্টে আছে।
- সেখানে গুলি করা কি ঠিক হবে?
- ঠিক বেঠিক আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। সাজুর সঙ্গে একটা মেয়ে আছে, সেই মেয়েটা সহ যদি খুন করা হয় তাহলে কি সমস্যা হবে?
- কোন মেয়ে? বিকেলে যে মেয়েটা ছিল?
- না এটা অন্য কেউ। একটু আগেই নাকি তাদের দেখা হয়েছে, আর তারপর তারা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসেছে।
- ঝামেলা না হলে কাজটা করে ফেলুক।
- সাজু আপনার পরিকল্পনা জেনে গেছে।
- মানে?
- সাজু বুঝতে পেরেছে তাকে আপনি খুন করতে চান, আপনি নাকি আপনার ভাগ্নের জন্য এমন করছেন।
- দারোগা বললো, ওহ্ শিট, এক্ষুনি ওদেরকে মেরে ফেলতে বলুন। সাজু যদি বেঁচে থাকে তাহলে আমি শেষ হয়ে যাবো। আর আমি শেষ মানে আপনিও শেষ, বুঝতে পারছেন। সামনে কিন্তু আপনার নির্বাচন, আর এবার কিন্তু আপনাকে জিততেই হবে। আর এই সাজুকে বাঁচিয়ে রাখলো আপনি আমি দুজনেই খুব বিপদে পড়বো।
- ঠিক আছে, বিকেলে বেঁচে গেলেও এবার আর বাঁচতে পারবে না। খুব কাছ থেকে গুলি করার কথা বলে দিচ্ছি। রেস্টুরেন্টের পাশেই কাপড়ের কাপড়ের মার্কেট, আমার লোক খুন করে ওখান অনায়সে পালিয়ে যাবে।
চলবে -----------।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:- ১৩
ইমাম সাহেব চলে এসেছে। রাতের আঁধারে লাশ দাফন করা হবে তবুও প্রচুর মানুষ উপস্থিত হয়েছে মাহিশার বাড়িতে। বিয়ে করে শশুর বাড়িতে যার যাবার কথা ছিল সে আজ কদিন পরে চিরস্থায়ী মাটির ঘরের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে।
যে ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার বাবাও সন্ধ্যা বেলা এসেছেন। সেদিনের পর থেকে তারা আর কেউ আসেননি কিন্তু আজ যেহেতু মাহিশার লাশ নিয়ে আসা হয় তাই আসতে হয়েছে।
দাফন শেষে সবাই আস্তে আস্তে চলে গেছে। যে কজন বাকি আছে তারা বেশিরভাগ আত্মীয় বা প্রতিবেশী। দারোগা সাহেব মাহিশার বাবার কাছে গিয়ে বললো,
- সাজু ছেলেটাই কি সত্যি সত্যি আপনার মেয়ে খুন করেছে?
- সবকিছু শুনে আমারও তাই মনে হচ্ছে স্যার। কারণ এছাড়া আর কেউ নেই যার কারণে আমার মেয়ে খুন হতে পারে।
- ভালো করে মামলা করেছেন? মানে কতদিনের মধ্যে ধরা পড়তে পারে।
- জানি না, তবে ছেলেটা যেহেতু ভালো সাজার চেষ্টা করছে তাই পালাবে না। মনে হয় আজকের মধ্যে ধরা পড়তে পারে।
- আপনি আমাদের মংলা থানায় গিয়ে আরেকটা মামলা করে আসবেন আগামীকাল। তারপর আমরা এখান থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য চাপ দেবো।
- দারোগা সাহেব?
- বলেন।
- আমার মেয়ে ওই ছেলেটার কি ক্ষতি করেছে যে তাকে খুন করতে হলো।
- একবার ধরা পড়ুক তারপর সবকিছু জানতে পারবেন আপনারা। আমি এখন চলে যাচ্ছি, কাল সকালে গিয়ে মামলা করে আসবেন।
- ঠিক আছে স্যার।
★★★
রাব্বি সবসময় যার কাছ থেকে অস্ত্র নেয় তার আস্তানা গাবতলী। রাব্বি প্রথমে সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে। লোকটার বয়স ৬০ বছরের মতো হবে, রাব্বির সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে ওই মন্ত্রীর কারণে।
মন্ত্রী...
হ্যাঁ মন্ত্রী।
রাব্বি সবসময় যার কথা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় সে একজন মন্ত্রী। সরকারি দলের কিছু কাজ থাকে যেগুলো তারা আইনের মাধ্যমে করতে পারে না। তখন তারা রাব্বির মতো কাউকে ঠিকই কাজ করার জন্য ব্যবহার করে। রাজনৈতিক নেতাদের কাজকর্ম বড়ই অদ্ভুত, এখানে টিকতে হলে কতো কাজ অগোচরে করতে হয়।
রাব্বির আসল নাম কেউ জানে না। অস্ত্র বিক্রি করা এই লোকটার ধারণা ওই মন্ত্রী সাহেব নিজেও হয়তো জানে না রাব্বির আসল নাম কি। নামের সঙ্গে তার কোনো কাজ নেই, তার যেটা কাজ সেটা হলেই হয়। তবে রাব্বি ছেলেটা অনার্স পাশ করে কেন এমন পেশাদার খুনির কাজ করে তার জানা নেই।
আজ পর্যন্ত রাব্বি কখনো জেলে যায়নি। না না, ভুল কথা। রাব্বি জেলে গিয়েছিল, কিন্তু সেটা লঞ্চ ডাকাতি করার জন্য। কোনো এক রাতের আঁধারে তারা লঞ্চ ডাকাতি করতে চায়। সেখানে একটা মেয়ের সঙ্গে রাব্বির যখন পরিচয় হয় নাকি আগে থেকে পরিচিত ছিল জানে না। সেই মেয়ের জন্য নাকি রাব্বি তার দলের সঙ্গে বেঈমানী করে এবং পরবর্তীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে।
কিন্তু সেখানে তার নাম ছিল " সজীব। "
রাব্বির এসব খবর সে এই লাইনের আরেক ছোট মাস্তানের কাছ থেকে জেনেছে। কিন্তু আসল কাহিনি কেউ বলতে পারে না।
অদ্ভুত চরিত্রের এই রাব্বি তাকে একটু আগে কল দিয়ে আস্তানায় থাকতে বলেছে। আজ কালের মধ্যে আরো একজনকে মরতে হবে, আফসোস করার ভঙ্গি করলেন তিনি।
রাব্বি এসে গেছে। কোনো প্রকার কথা না বলে চুপচাপ একটা পিস্তল ফুল লোড মুহূর্তের মধ্যে চলে গেল।
গাবতলি থেকে সরাসরি সাভার চলে গেল। সে জানে এখানকার একটা ছোট্ট কাঁচা বাজারের পাশেই একটা লন্ড্রী দোকান। সেখানে গেলে আলাউদ্দীন কিংবা তার সঙ্গী কারো খোঁজ পাওয়া যাবে নিশ্চিত।
লাল একটা পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করছিল ছেলেটা। রাব্বি তার সামনে যেতেই বললো,
- কেমন আছেন ভাইজান?
- তোর এ মাসের ঘরভাড়া বাকি নাকি?
- বুঝতে পারছি, কি জানতে চান বলেন।
- আলাউদ্দীনকে কোথায় পাবো?
- তা তো জানি না, গতকাল রাতে বাজারের মধ্যে দেখছিলাম। আজকে সারাদিন দেখি নাই।
- কার কাছে গেলে তার খবর পাবো?
- আলিফ হোটেলের মালিক বলতে পারবে তার ঠিকানা। তার সঙ্গে বেশ ভাব জমে উঠেছে ইদানীং, লোকটা নাকি কাউন্সিল নির্বাচন করবে।
দুটো টাকা হতে পারে নাই তাতেই শুরু করেছে, মনে হয় গোপন ব্যাবসা আছে।
- ঠিক আছে আমি আসি।
পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে রাব্বি হাঁটা শুরু করেছে।
- রাব্বি ভাই?
- বলো।
- আলাউদ্দীন ইদানীং খুনখারাবি শুরু করেছে, তার সঙ্গে লড়তে গেলে একটু সাবধানে থাকবেন।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
আলিফ হোটেলে মানুষ গিজগিজ করছে। রাব্বি চারিদিকে তাকিয়ে আগে কোথায় কি রয়েছে সব দেখে নিলো। তারপর মুখে মাস্ক লাগিয়ে এগিয়ে গেল মালিকের দিকে। লোকটা তাকে নিজেই ক্যাশে বসে আছে, চারিদিকে তাকিয়ে কোথায় কি দরকার নজর রাখছে।
রাব্বি ঘুরে একদম তার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। নিচ থেকে পিস্তলটা পেটে ঠেকিয়ে দিতেই লোকটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল।
- কে আপনি? কি চান?
- আপনার সঙ্গে গোপনে কিছু কথা বলতে চাই।
- বলেন।
- এখানে নিশ্চয়ই আপনার বিশ্রাম করার আলাদা রুম আছে তাই না?
- হ্যাঁ হ্যাঁ।
- চলেন সেখানে গিয়ে কথা বলবো।
লোকটা দাঁড়াতেই রাব্বি তাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর শরীরে পিস্তল ধরে তার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল একটা সাইডে। রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেই রাব্বি দরজা বন্ধ করে দিল। ভয়ে যবুথবু হয়ে বসে আছে তার সামনের লোকটা, রাব্বি আস্তে করে বললো,
- আলাউদ্দীন কোথায়?
- কোন আলাউদ্দীন?
- খুনি আলাউদ্দীন।
- আপনি কি পুলিশের লোক?
- আলাউদ্দীন এখন কোথায় আছে?
- আমি জানি না, আজকে সারাদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি আমার।
- কাউন্সিল নির্বাচন করতে চান?
- জ্বি।
- এসব ছোটখাট কাউকে ধরে লাভ নেই, আপনি আমার কথা শুনলে আমি আপনাকে কাউন্সিলর বানিয়ে দেবো।
- কে আপনি?
- রাব্বি।
- আ্যা...
- আলাউদ্দীনের নাম্বারে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেন সে এখন কোথায় আছে।
লোকটা পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল দিল, কিন্তু রিসিভ হলো না। পরপর অনেকবার কল দিয়ে রিসিভ করাতে পারলো না।
- রিসিভ করে না।
- ওর সঙ্গে যারা আছে তাদের কাউকে কল দেন।
- কারো নাম্বার নেই আমার কাছে।
- ভালো করে কথা বল নাহলে কিন্তু এখানেই লাশ বানিয়ে দেবো৷ কাউন্সিলর হওয়া তো দুরের কথা তখন কোই যাবি বুঝতে পারছিস?
লোকটা আরেকটা নাম্বারে কল দিল। কল দেবার সময় বললো,
- এর সঙ্গে আলাউদ্দীন চলে না, তবে মাঝে মাঝে সঙ্গে রাখে। তার কাছে কারো নাম্বার আছে নাকি জিজ্ঞেস করে দেখি।
কল রিসিভ করছে।
- হ্যালো ফারুক? আচ্ছা শোন, আলাউদ্দীনের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
- এখন তো সম্ভব না, ভাই একটা কাজের মধ্যে আছে।
রাব্বির ইশারায় লোকটা জিজ্ঞেস করলো,
- কিসের কাজ?
- একটা ছেলেকে খুন করতে হবে। ছেলেটাকে সেই দুপুর থেকে চেষ্টা করছি মারার জন্য। একবার তারে আলাউদ্দীন ভাই গুলি করছে কিন্তু হালায় বাঁইচা গেছে।
- কোন ছেলে?
- তুমি চিনবা না ভাই, নদীর ওপাড়ের মানুষ। খুলনার ওদিকে বাড়ি মনে হয়। সাজু নাম।
- ওহ্, কাম শেষ করে আলাউদ্দীনকে বলবা আমার সঙ্গে দেখা করতে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
লোকটা মোবাইল কাটতেই রাব্বি তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে গেল। পকেট থেকে একটা স্প্রে বের করে সেটা লোকটার মুখের দিকে তাক করে মেরে দিল।
- রাব্বি বললো, একটু পরে তুই ঘুমিয়ে যাবি কিন্তু তার আগে দরজা বন্ধ করবি। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো, যদি দরজা খুলে বের হবার চেষ্টা করো তাহলে শেষ।
লোকটা ততক্ষণে টলতে লাগলো। রাব্বি আরও একটু সময় দাঁড়িয়ে থেকে যখন বুঝতে পারলো সঠিক সময় হয়ে গেছে। তখনই রুম থেকে বের হয়ে গেল, কিন্তু পিস্তল এমন করে হাতে রাখলো যেন হোটেলের কেউ বুঝতে না পারে।
লোকটা সত্যি সত্যি দরজা বন্ধ করে দিল।
এটা করার কোনো দরকার ছিল না, কিন্তু লোকটা যদি আলাউদ্দীনকে সতর্ক করে দেয় তাহলে তাকে রাতের মধ্যে শেষ করা যাবে না।
হোটেলে দাঁড়িয়েই রাব্বি তার দাদাজানের কাছে কল দিল, একজন মন্ত্রী সে।
- হ্যাঁ বলো।
- সাজু ভাইকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব না।
- কি বলো এসব?
- আলাউদ্দীন অলরেডি সাজু ভাইয়ের কাছেই আছে কিন্তু সঠিক লোকেশন আমি জানি না। আর জানলেও কিছু করতে পারবো না সেটা আপনি ভালো করে জানেন। তাছাড়া তাকে যে আমার বাঁচাতেই হবে এমনটা তো নয়।
- হুম বুঝলাম। কিন্তু তুমি কি করবে এখন?
- এখানেই অপেক্ষা করবো। আমার বিশ্বাস ওই আলাউদ্দীন যত রাতই হোক এখানে আসবে। তারপর ওর হিসাবটা মিটিয়ে এখান থেকে বের হবো।
- তোমাকে আগামীকাল আরেকটা কাজ করতে হবে তোমাকে।
- কি কাজ?
- আমার পিএস তোমার পরবর্তী টার্গেট। সে আমার সঙ্গে বেঈমানী করেছে। আমার অনেক কথা সে ওই বিরোধী পক্ষের কাছে বলে দিয়েছে।
- সবাই কেন যে বেঈমানী করে।
- মানে?
- আপনি যেমন আপনার বিরোধী পক্ষের পিএস কে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন। তারপর এই-যে মেয়েটা খুন তারপর সাজু ভাইয়ের খুনের কথা সবকিছু তার কাছে জানলেন। ঠিক সেভাবে সেও হয়তো আপনার লোককে কিনে নিয়েছে।
- ওর এক এক সবগুলো আমি কিনে নেবো।
- আপনার কাছে সাজু ভাইয়ের নাম্বার আছে?
- হ্যাঁ।
- একবার কল দিয়ে দেখেন তো, বেঁচে আছে কিনা।
- সেটা জেনে কি হবে?
- যদি সাজু মারা যায় তাহলে আলাউদ্দীনের কাজ তো শেষ হয়ে যাবে। তাহলে তাড়াতাড়ি এখানে আসবে আর আমি আমার কাজটা শেষ করবো।
চলবে----------।
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
27-04-2025, 10:02 PM
পর্ব:- ১৪
সাজু আর রামিশা যে টেবিলে বসে আছে। তাদের ঠিক তিনটা টেবিল পরে গুটিশুটি মেরে বসে আছে আলাউদ্দীন। তার চোখে রাগের আগুন ঝড়ে পড়ছে, কারণ এইমাত্র রেস্টুরেন্টের মধ্যে অনেক যুবক প্রবেশ করেছে। সম্পুর্ণ রেস্টুরেন্ট এখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ, এই মুহূর্তে গুলি করার রিস্ক নেওয়া বোকামি।
কাজের জন্য নিজেকে বিপদে ফেলার কোনো ইচ্ছে আলাউদ্দীনের নেই। দরকার হলে অপেক্ষা করবে সে, রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে বাহিরে গিয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো। কারণ এখন যদি গুলি করতে যায় তবে এই যুবকদের হাতে ধরা পড়তে হবে।
একপ্রকার বাধ্য হয়ে বেরিয়ে গেল আলাউদ্দিন।
সাজুর আঘাতপ্রাপ্ত হাতের দিকে তাকিয়ে রামিশা চুপ করে রইল। ক্ষনিকের জন্য সে সাজুর প্রতি রাগ করে ছিল, পুতুল ওভাবে কথা না বললে হয়তো এমনটা হতো না।
- সাজু ভাই, যখন গুলি লেগেছিল তখন আপনি অজ্ঞান হয়ে গেছেন নাকি শ
- না, তবে তীব্র ব্যথা ছিল। গুলি লাগার পরে আমি অনেকক্ষণ স্বাভাবিক ছিলাম। পরে অবশ্য আর কিছু মনে নেই।
- আপনি কীভাবে বুঝতে পেরেছেন আমার উপর কেউ আক্রমণ করতে পারে?
- সন্দেহ হচ্ছিল। তবে তোমার উপর আক্রমণ হবার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু সে তোমাকে হাতের কাছে পেয়েও হত্যা করেনি।
- কেন?
- ওদের দলের একটা লোক পুলিশের হাতে বন্দী। তাকে খুন করার চেষ্টা করছে তাদের কন্ট্রাক্টকারী, কিন্তু সে চায় লোকটা বেঁচে থাকুক। আমি সেই লোকটার জন্য সামান্য রক্তের ব্যবস্থা করেছি তাতেই নাকি সে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে।
- এসব আপনি কীভাবে জানেন?
- রাব্বি কল করেছিল আমাকে।
- রাব্বি কি সেই খুনি?
- হ্যাঁ।
- আমাকে যে ছেলেটা সাহায্য করেছে তার নাম রবিউল ইসলাম। সত্যি বলতে তিনি যদি আমাকে না নিয়ে আসতেন তাহলে জানি না কি হতো।
- রাব্বি বলেছিল যে তুমি নাকি একটা ভালো ছেলের হেফাজতে আছো। তবে তিনি এতটা বেশি উপকার করবে ভাবিনি।
- আপনার উপর এমন একটার পর একটা হামলা হচ্ছে এখন কি করবেন?
সাজু এবার ছবির প্রসঙ্গে গেল। রামিশার মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো ওয়ালপেপারে সেই ছবিটি এখনো আছে।
- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
- করেন।
- এই ছবিটি কি তুমি কাউকে দিয়েছ? শুধুমাত্র তোমার কাছেই কিন্তু এই ছবিটি আছে, তাছাড়া আর কারো কাছে নেই।
- কেন বলেন তো?
- মাহিশা নামের মেয়েটার লাশ যে ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে সেখানে এই ছবিটি ছিল। সেম ছবিটি কেউ একজন কম্পিউটার প্রিন্ট করে সেখানে রেখে দিয়েছে।
- বলেন কি? আপনার ছবি সেখানে।
- তুমি ভালো করে মনে করে দেখো তো।
- ছবিটি আমার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা আছে সাজু ভাই।
- কিহহ?
- আপনি যখন অসুস্থ ছিলেন তখন আমি এটা পোস্ট করেছিলাম। তাই হয়তো আপনি দেখতে পাননি বা জানেন না।
সাজু মনে মনে ভাবলো এটা তার আগেই খুঁজে দেখা দরকার ছিল। রামিশার ফেসবুক আইডি খুঁজলেই সে জানতে পারতো।
- তারমানে খুনি তোমার আইডি থেকে ছবিটি ডাউনলোড করে নিয়েছে।
- কিন্তু কেন সাজু ভাই?
- আমাকে বিপদে ফেলতে।
- মাইগড।
- আমি তোমাকে এখান থেকে বেরিয়ে তোমার বোনের বাসায় নিয়ে যাবো। তুমি সেখানে থাকবে, দিনে বা রাতে কখনো বাসা থেকে বের হবে না।
- আমি আপুর বাসায় যাবো না।
- তাহলে?
- আপনি অসুস্থ, যেকোনো সময় বিপদে পড়তে পারেন তাই আমি আপনাকে একা এভাবে বের হতে দেবো না। আমি আপনার সঙ্গে থাকবো, যদি বিপদ হয় দুজনেই একসঙ্গে বিপদে পরবো।
সাজুর মোবাইলে একটা মেসেজ এলো। নাম্বারটা অপরিচিত কিন্তু খবরটা গুরুত্বপূর্ণ।
" রেস্টুরেন্টে আপনার শত্রু আছে, সাবধান। "
সাজু চারিদিকে তাকাতে লাগলো। দ্রুত খাবার শেষ করালো তারা, চারিদিকে অনেক যুবকদের সে দেখতে পাচ্ছে। এদের মধ্যে কে সেই খুনি তা জানা অসম্ভব। রামিশাকে নিয়ে সাজু ভাই আস্তে করে বেড়িয়ে গেল।
লিফট ব্যবহার না করে তারা সিঁড়ি দিয়ে নামলো। মেইন গেট দিয়ে বের না হয়ে পিছনের একটা ছোট্ট গেট দিয়ে বের হয়ে গেল।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আলাউদ্দীন যখন আবারও উপরে গেল তখন দেখে সেখানে কেউ নেই।
★★
সকাল বেলা সাজুর ঘুম ভাঙলো মোবাইলে কল আসার কারণে। গতকালের সেই ওসি সাহেব কল দিয়েছে, সাজু ঘুম ঘুম চোখে রিসিভ করলো।
- ওসি সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন, সাজু সাহেব আপনি কোথায়?
- আমি আমার এক বড়ভাইয়ের বাসায়।
- মেয়েটার খুনিকে পাওয়া গেছে। সে গতকাল রাতে আমাদের একটা স্বীকারোক্তির ভিডিও দিয়ে নিজে আত্মহত্যা করেছে।
সাজুর চোখের ঘুম পুরোপুরি উধাও হয়ে গেল।
- কি বলছেন? রাব্বি আত্মহত্যা করেছে?
- ওর নাম তো রাব্বি না, সেই খুনিটার নাম হচ্ছে আলাউদ্দীন। খুব খারাপ মানুষ, বেশ কিছু মামলা আছে তার নামে। সে নিজের মুখে বলেছে ওই মেয়েকে সেই হত্যা করেছে। তারপর আপনার উপর আক্রমণ করা, আপনার ছবি সেই বাসায় রেখে যাওয়া সবকিছু স্বীকার করেছে।
- অসম্ভব।
- আপনি থানায় আসুন আমি আপনাকে সেই ভিডিও দেখাচ্ছি। আর সিসিটিভি ফুটেজ দেখবেন বলেছিলেন, সেটাও দেখে যাবেন।
- ঠিক আছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সাজু। তার সামনে লিয়াকত আলী হাসান ও তার স্ত্রী এবং রামিশা।
এই সেই লিয়াকত আলী, যার সঙ্গে সাজুর প্রথম এই রহস্য বের করার কাজে পদচারণ। লিয়াকত সাহেব ডিবিতে চাকরি করে, ঢাকাতেই থাকে।
- সাজু বললো, আমাকে আপনার অনেক সাহায্য করতে হবে ভাই। বেশ কিছু মোবাইল নাম্বারের তথ্য বের করে দিতে হবে। কাকে কল করা হয়েছে কার কাছ থেকে কল এসেছে, সবকিছু আমার জানতে হবে।
- তোমার কাছ থেকে যতটুকু জানলাম তাতে করে মামলা বেশ জটিল। কিন্তু এটাকে ডিবির দায়িত্বে দিলে মনে হয় বেশি ভালো হতো। আচ্ছা ঠিক আছে তোমার নাম্বার দিও আমি অফিসে গিয়ে বের করে দেবো।
- নাম্বার কিন্তু অনেক গুলো ভাই।
- মানে?
- ৭/৮ টা নাম্বার চেক করতে হবে। পরবর্তীতে সেই সংখ্যা বাড়তে পারে।
- ঠিক আছে হয়ে যাবে। একটু সাবধানে থেকো আর ঢাকার মধ্যে যেকোনো বিপদ হলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবে।
- আচ্ছা।
- আমি জানি তুমি আমাকে জানাবে না, কারণ তুমি নিজের বিপদের কথা কাউকে বলো না।
- এবার বলবো সমস্যা নেই।
★★
পরপর তিনবার ভিডিওটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলেন সাজু। রক্তাক্ত আলাউদ্দীন নিজের হাতে মোবাইল নিয়ে রেকর্ড করেছেন।
সে বলছে,
" বাগেরহাট থেকে ওই মেয়েকে আমিই তুলে নিয়ে এসেছি। তারপর ওই বাসায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেলেছি কিন্তু লাশ গুম করতে পারিনি। যার সঙ্গে লাশের বিষয় কথা হয়েছে সে লাশ গুম না করে পালিয়ে গেছে। আমার ভুল হয়ে গেছে, আমার এমন মারাত্মক ভুলের জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি আমার দোষ স্বীকার করছি, আমি জানি আমার বিচার হবে। আদালত হয়তো আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেবে, আর সেজন্য বারবার উকিলদের কষ্ট করতে হবে। তাই আমি নিজেই আত্মহত্যা করতে চাই, আমাকে ক্ষমা করবেন। "
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে সাজু।
- ওসি সাহেব বললো, আমরা শুধু শুধু আপনাকে সন্দেহ করেছি অথচ আসামি নিজের মুখে সব স্বীকার করে নিলো।
- একটা কথা বলি স্যার।
- বলেন।
- খুনটা আলাউদ্দীন করে নাই।
- মানে?
- এটা একটা বাচ্চা ছেলেও বুঝতে পারবে যে এই রেকর্ড তাকে দিয়ে জোর করে করানো হয়েছে। আপনি ভালো করে দেখুন আলাউদ্দীন রক্তাক্ত অবস্থায় আছে। তাকে নিশ্চয়ই কেউ প্রচুর মারধর করে এমন স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
- তাহলে খুনি?
- আমার বিশ্বাস আপনি নিজেও জানেন সেই খুনির নাম। কিন্তু আপনিও এই মামলা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করতে চান না তাই ভিডিওটা বিশ্বাস করে এই মামলা ক্লোজ করতে চান।
- আমি জানবো কীভাবে? যদি সত্যি সত্যি জানি তাহলে তো গ্রেফতার করতাম।
- গতকাল হাসপাতালে আপনি আমার সঙ্গে কার কথা বলিয়ে দিয়েছেন? সত্যি সত্যি কি সে কোনো রাজনৈতিক নেতা, নাকি অন্য কেউ।
- আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।
- আপনি ঠিকই বুঝতে পারছেন স্যার। আপনার মুখ দেখে গতকাল বেশ ভয়ে যবুথবু হয়ে গেছেন সেটা মনে হচ্ছিল। সত্যি সত্যি যদি রাজনৈতিক কোনো নেতা হতো তাহলে আপনার আরও খুশি হতেন। নেতাদের আদেশে কাজ করতে পারার আনন্দ আপনার চোখেমুখে ভাসতো।
- তেমন কিছু নয়।
- এই মামলার ঘটনায় আপনিও আমার কাছে অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন স্যার। মংলা থানার সেই দারোগা সাহেব যেমন আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করেছে। আপনি তেমন করে আসল লোকটাকে আড়ালে রাখতে চাইছেন।
- দেখুন আমরা আইনের মানুষ। সাক্ষী প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সবকিছু করে থাকি। আলাউদ্দীন নিজের মুখে সব স্বীকার করেছে তাই এটাকে অবিশ্বাস করে নতুন করে তদন্তে নামা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তবে সাব্বিরের বাবাকে গ্রেফতার করার কাজ চলছে।
- উত্তর বাড্ডার যেই ফ্ল্যাটে লাশ পাওয়া গেছে সেই ফ্ল্যাটের মালিকের বাসা গুলশানে তাই না?
- হ্যাঁ।
- সেই লোকটা গতকাল কল করেছিল তাই না?
- মানে?
- আমি আপনার ফাইল দেখে জানলাম আপনি সেখানে ওই মালিকের বিষয় কোনো তথ্য লেখেন নাই। ম্যানেজারের কথা উল্লেখ আছে কিন্তু সেই বাসার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো চিন্হ নেই। হয়তো আপনাদের মধ্যে গোপনে কথা হয়েছে কিন্তু আপনি সেটা গোপনেই রাখতে চান।
- চুপচাপ।
- আপনার থেকে এমনটা আশা করিনি স্যার।
- ওই লোকটা খুবই ভয়ঙ্কর সাজু সাহেব। আমি চাইনা এটা নিয়ে আমার নিজের কোনো ক্ষতি হোক। আপনার ও উচিৎ নিজেকে বাঁচাতে এই মামলা থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
- ভয়ে?
- আপনি কিন্তু প্রায় ফেঁসে যাচ্ছিলেন, তিনি যদি এই কাজটা না করতেন তাহলে আপনার এখন স্থান হতো জেল হাজতে।
- খুনটা রাব্বি করেছে এটা শিওর, তাই না?
- হ্যাঁ। কিন্তু আপনি আমি চাইলে কিছুই প্রমাণ করতে পারবো না। আপনার ভাগ্য ভালো যে তিনি আপনাকে বাঁচাতে চেয়েছেন। নাহলে শুধু রাব্বিকে রক্ষা করতেন।
- মানুষকে বিপদআপদ থেকে রক্ষা করার মালিক আল্লাহ, আমি সেই বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবো। আমি আশা করবো আপনি তার সঙ্গে আমাকে একটু দেখা করার ব্যবস্থা করে দিবেন।
- কোনো লাভ হবে না।
- লোকসান নাহয় আমারই হোক।
সাজুর মোবাইলে কল এসেছে। ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করলো সাজু।
- কে বলছেন?
- আপনার বুদ্ধি সত্যি প্রশংসনীয়। আপনি সত্যি সত্যি আমার সঙ্গে দেখা করতে চান?
- হ্যাঁ চাই। আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে আপনি কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়।
- ঠিকই বলেছেন, আমি সেরকম কেউ নয় তবে সবাই ওটাই জানে। কারণ ক্ষমতা দিয়ে আমি তারচেয়ে বেশি কিছু করতে পারি।
- আপনি ঠিক এই মুহূর্তে কীভাবে কল দিলেন?
- ওইযে বললাম, ক্ষমতা দিয়ে।
- সম্ভবত ওসি সাহেব আপনাকে কনফারেন্সে রেখে আমার সঙ্গে কথা বলছে।
- হতেই পারে। কারণ সে যদি না করে তাহলে দুদিন পরে তার কোনো আত্মীয় থাকবে না।
- আমার পরবর্তী টার্গেট আপনি।
- আমি তোমাকে সত্যিই বাঁচাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো আমার উপকারের কথা স্বীকার করো নাই। বরং আমার পিছনে লাগার চেষ্টা শুরু করে দেবে তাই না?
- আমি সবার উপকার গ্রহণ করি না।
- রাব্বির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাও?
- হ্যাঁ চাই।
- সদরঘাট চলে যাও। রাব্বি সেখানেই আছে, তুমি !
চলবে...
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 406
Threads: 25
Likes Received: 368 in 220 posts
Likes Given: 340
Joined: Jun 2022
Reputation:
47
পর্ব:- ১৫
আমার নাম মাহিন, বিয়ের আসর থেকে যে মেয়ে কিডন্যাপ করে হত্যা করা হয়েছে। সেই মাহিশা আর আমি আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসতাম অনেক। আপনি হয়তো আমাকে চিনবেন না, তবে আমি আপনার কথা শুনেছি।
রেস্টুরেন্টের এসির ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও যেন গরমে ঘামছে মাহিন। নিজের খানিকটা পরিচয় দিয়ে সে পরবর্তী কিছু বলার জন্য একটু চুপ করে রইল। সাজু ভাই বুঝতে পারছে মাহিন হয়তো তার কথাগুলো মনে মনে সাজিয়ে নিচ্ছে। সাজু বেশ আয়েশ করে বসলো, তার কোনো তাড়া নেই এমন একটা হাবভাব।
মাহিশার বাড়িতে গিয়েই মাহিনের কথা জানতে পেরেছিল সাজু। তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিলেও সেই সময় হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া এদিকের ঝামেলা একটার পর একটা এমনভাবে পেঁচিয়ে গেছে সেই সুযোগ হয়নি। কিন্তু একটু আগে থানা থেকে বের হয়ে একটু সামনে আসতেই সাজুকে অবাক করে দেয় সে। তারপর নিজের নাম বলে কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে যাবার অনুরোধ করে।
থানা থেকে বের হবার আগে সাজু ভাই সাব্বিরের সঙ্গে কথা বলেছিল। সাব্বির অসহায়ের মতো বারবার শুধু বলছে সে কিছু করেনি। মেয়েটাকে বস্তা খুলে বের করা আর একটু পানি খাওয়ানো ছাড়া আর কিছু করেনি সে।
সাজু বলেছিল,
- তোমার বাবা কাদের হয়ে কাজ করতেন তাদের সন্ধান দিতে পারবে? নাকি শপথ করা আছে।
- আমি তাদের চিনি না, এসব কাজ বাবা নিজে করতেন।
- কত বছর ধরে তোমরা এ কাজের সঙ্গে জড়িত?
- বেশ ক'বছর হয়ে গেছে।
- তোমার বর্ননা অনুযায়ী সেদিন রাতে তুমি বেশ কয়েকবার তোমার বাবার কাছে কল করেছ। আর তোমার বাবা নিজের মনিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপডেট জানিয়েছে।
- জ্বি।
- তোমার বাবার সেই নাম্বারটা দাও আমি সেটা চেক করে দেখতে চাই সেদিন রাতে তোমার বাবা কাদের সঙ্গে কথা বলেছে।
- বাবার সেই নাম্বার আমার মুখস্থ নেই।
- সেও কি নতুন নতুন সিম ব্যবহার করতেন?
- না।
- তাহলে বাবার নাম্বার ছেলের মুখস্থ থাকবে না?
- আমার মোবাইলে সেভ করা আছে, মোবাইলটা পুলিশের কাছে জমা। আপনি যদি সেটা আমার হাতে এনে দিতে পারেন তাহলে আমি বের করে দিতে পারবো৷
- ঠিক আছে আমি কথা বলে দেখবো।
- মেয়েটাকে খুন করতে চাইনি। আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলছিলাম একটু পরে রুমে ফিরে দেখি খুন হয়ে গেছে।
- তুমি কি সত্যিই সম্পুর্ণ ফ্ল্যাট চেক করেছিলে? সেখানে কাউকে পাওনি?
- ভালো করে দেখেছিলাম, কাউকে দেখিনি তবে শুধু একবার তার গম্ভীর কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। তারপর আর কোনো কথা বলে নাই আর আমিও একটু পরে বের হয়ে যাই।
- ঠিক আছে তোমার সঙ্গে আবার কথা হবে।
|
- সাজু ভাই?
মাহিনের ডাকে তাকিয়ে রইল সাজু। রামিশা তার বামদিকে বসে আছে, তার একটা হাত সাজুর ঘাড়ের ওপর রাখা।
- জ্বি বলেন মাহিন সাহেব।
- মাহিশা আর আমি দুজনেই পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু ওর বাবার জন্য সেটা সম্ভব হয়নি। অবশেষে নিজের বাবার ভয়ে আর আমাকে বাঁচানোর জন্য সে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।
- কিন্তু তার বাবা আমাকে বলেছিলেন যে তিনি সরাসরি কিছু জানতেন না। মাহিশা নাকি বিয়ে করতে রাজি ছিল, সে নাকি ভালো করে তোমাকে চিনেই না।
- ডাহা মিথ্যা কথা ভাই, ওই লোকটা কতটা খারাপ আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সামনে মনে হয় চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে চায়, গ্রামের মানুষ তাকে ভালো বলেই জানে। অথচ সে কত ভয়ঙ্কর সেটা আমি পুরোপুরি না জানলেও অনেক কিছু জানি।
- যতটুকু জানেন সেটাই বলেন।
- দক্ষিণ বঙ্গের অনেক বড় একটা চক্র আছে সাজু ভাই। এরা প্রধানত চারটা কাজ করে টাকা ইনকাম করে, তবে সবগুলোই বেআইনি।
- কি কি?
- সুন্দরবন ও সাতক্ষীরার বর্ডার থেকে মাদকদ্রব্য পাচার করা, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার বিভিন্ন ট্রলার বা জাহাজ থেকে লোক কিডন্যাপ করে মুক্তিপণ দাবি করা, জাল টাকা ছাপিয়ে সারাদেশে পৌঁছে দেওয়া, আর ঢাকা ও খুলনা শহরের বড় বড় ব্যাবসায়ীদের থেকে চাঁদা দাবি করা।
- সবকিছুর সঙ্গে মাহিশার বাবা জড়িত?
- জ্বি, তবে এসব কথা খুব কাছের কেউ ছাড়া জানে না।
- আপনি কীভাবে জানেন?
- একটা সময় আমি তাদের দলের সদস্য ছিলাম, নকল টাকার ব্যবসা আর মাদকদ্রব্য পাচার করার কাজে আমি বেশ দক্ষ ছিলাম।
- আপনি হঠাৎ শত্রু হলেন কীভাবে?
- আমি বহুবার ওই বাড়িতে আঙ্কেলের সঙ্গে গিয়ে কথা বলতাম। এভাবে যাতায়াত করতে করতে একদিন মাহিশার সঙ্গে পরিচয়। আমি জানতাম সে আঙ্কেলের মেয়ে, তবে মাহিশার চোখে এতটা মায়া ছিল যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। প্রথম প্রথম কাজের জন্য ওই বাড়িতে গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন বাহানা খুঁজতাম যেন তাদের বাড়িতে যেতে পারি। কাজ না থাকলেও আমি কাজ একটা খুঁজে বের করতাম।
- কে আগে প্রেমে পড়েছিল?
- হয়তো আমি, তবে আমি যখন ঘনঘন তাদের বাড়িতে আনাগোনা করতে লাগলাম তখন সে বুঝতে পারে।
- আচ্ছা।
- একবার আমি সাতক্ষীরা থেকে মাল নিয়ে ঢাকা এসেছি, প্রায় দুমাস ছিলাম। এরপর হঠাৎ করে একদিন একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে।
- কলটা নিশ্চয়ই মাহিশা দিয়েছিল?
- হ্যাঁ। অনেকদিন ধরে তাদের বাড়িতে কেন যাচ্ছি না সেটা জানার জন্য কল দিয়েছিল। আমি ঠিক তার পরদিনই মাহিশাদের বাড়িতে গেছিলাম।
- মাহিশার বাবার এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মাহিশা জানতো?
- না, পরিবারের কেউ জানতো না। এখনো কেউ জানে না হয়তো, তবে আমি মাহিশাকে সবকিছু বলেছিলাম।
- প্রেমে অন্ধ হয়ে দলের সঙ্গে বেঈমানী?
- না, মাহিশা অনার্সে ভর্তি হয়েছিল খুলনাতে। তারপর থেকে আমাদের খুলনা শহরে দেখা হতো আর সবসময় ঘোরাঘুরি।
- তারমানে তখন থেকে বিভিন্ন বাহানা দিয়ে আর ওদের বাড়িতে যাবার দরকার হতো না।
- না। কিন্তু আমার এভাবে ভবঘুরে হয়ে সবসময় ঘুরে বেড়ানো, তারপর সবসময় এতো টাকা আর হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাওয়া। এসব কিছু মাহিশা সন্দেহ করতে থাকে, বারবার জিজ্ঞেস করতে শুরু করে। তার বাবার সঙ্গে আমি ব্যবসার কাজ করি কিন্তু সেই কাজটা কি সেটা জানতে চায়।
- আপনি তাকে বলে দিলেন?
- না, আমাদের দলের আরেকজন জেনে যায় যে আমি মাহিশার সঙ্গে প্রেম করি। সেই খবর সঠিক স্থানে পৌঁছে যেতে মোটেই বিলম্ব হয়নি। আঙ্কেল একদিন আমাকে ডেকে ঠান্ডা মাথায় অনেক কিছু বলেন।
- মাহিশাকে ভুলে যেতে হবে?
- হুম। আর আমাকে পদ্মা নদীর ওপাড়ে যেতে নিষেধ করা হয়।
- আপনি কি করলেন?
- বাধ্য হয়ে আমাকে ঢাকায় এসে এখানকার দলে কাজ শুরু করতে হয়। তবে মাহিশার সঙ্গে নতুন সিম দিয়ে যোগাযোগ করতে থাকি। আমি সপ্তাহে একবার করে খুলনা যেতাম সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে। কিন্তু দুমাস পরে আবারও ধরা পরলাম।
- তারপর?
- এরপর মাস খানিক পরে যখন আমাদের দেখা হয় সেদিন মাহিশা তার হাতে হাত রেখে সবকিছু জানতে চায়। আমি সেদিনই আমার পেশা এবং আঙ্কেলের বিষয় সবকিছু তাকে বলে ফেলি।
- সে বিশ্বাস করেছিল?
- হ্যাঁ করেছিল।
- নিজের বাবাকে এতো সহজেই অবিশ্বাস করে ফেললো?
- আঙ্কেলের লোকদেখানো ব্যবসা ছিল চিংড়ি মাছ৷
- সবকিছু জানার পরে মাহিশা কি করলো?
- ওকে আমি বলেছিলাম যে আমরা দেশে থাকতে পারবো না কারণ তাহলে বিপদ নিশ্চিত। আমরা দুজন মিলে ভারতে পালিয়ে যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। আর গোপনে গোপনে সবকিছু পরিকল্পনা করতে লাগলাম। কিন্তু আসল সমস্যা বাঁধলো যেদিন মাহিশার বাবা তার মাকে প্রচুর মারধর করলেন।
- কিরকম?
- মাহিশা সেদিন তার বাবাকে প্রচুর বকাবকি করে আর সেই বকাবকির মধ্যে সে তার বাবার এসব অপরাধমূলক কাজের কথা বলে ফেলে।
- আচ্ছা।
- আঙ্কেল কিছু না বলে চুপচাপ থাকেন। তবে মাহিশার ওই ভুলের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে আমাকে।
- মানে?
- আমি তো তখন জানতাম না এসব ঘটনা খুলনা শহরে ঘটছে। আঙ্কেল ঢাকায় কল দিয়ে আমাকে বন্দী করার হুকুম করে। এরা আমাকে আটকে ফেলে আর প্রচুর নির্যাতন শুরু করে তবে প্রাণে মারে না।
- কারণ কি?
মাহিন কিছু বলার আগেই সাজুর মোবাইল বেজে উঠলো, ওসি সাহেব কল করেছে। সাজু রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন,
" আপনি কি উত্তর বাড্ডার সেই বাসায় একটু আসতে পারবেন? একটা খুব রহস্যময় বিষয় পেয়েছি, আপনিও আসতে পারেন। "
- ঠিক আছে এখনই আসছি।
- আচ্ছা, আমি এখানেই আছি।
সাজু ভাই মাহিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
- আপনার বাকি ঘটনা আমি কিছুক্ষণ পর শুনবো মাহিন। আমাকে এখনই যেতে হবে মাহিশা যেই বাড়িতে খুন হয়েছে সেখানে। আপনিও আমার সঙ্গে যেতে পারেন।
- না পারি না।
- কেন?
- আমাদের দলের প্রত্যেকের কাছে আমার ছবি পৌঁছে দিয়েছে মাহিশার বাবা। যেখানে যেই অবস্থায় পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করার হুকুম রয়েছে। আমি সবসময় পালিয়ে থাকি।
সাজু অবাক হলেও সেটা প্রকাশ না করে বললো,
- ঠিক আছে তাহলে আপনার অপেক্ষা করুন।
- আমাকে আপনার খুঁজতে হবে না আমিই আপনাকে খুঁজে বের করবো।
সাজু ভাই ও রামিশা টেবিল থেকে উঠে গেল।
এমন সময় মাহিনের মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো। মাহিন সেই মেসেজ বের করে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল,
" সাজু এখন উত্তর বাড্ডা সেই বাড়িতে যাচ্ছে, যেভাবে বলেছিলাম সেভাবেই করো। ভিতু ওসিকে ভুলভাল বুঝিয়ে তাকে দিয়ে কল করানো হয়েছে। তুমি তো জানো সাজুকে না মারলে ও দারোগা বিপদে পরবে। তাই কাজটা করতেই হবে আর সেটা আজই। নাহলে কিন্তু বারবার তাকে মারার ব্যবস্থা করতে পারবো না। "
চলবে ----------------।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
|