Thread Rating:
  • 2 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller (সিরিজ সাজু ভাই নম্বর -০৪)গল্প- সরি আম্মাজান (সমাপ্ত)
#1
মায়ের সঙ্গে ট্রেনে চড়ে নানাবাড়ি যাচ্ছি। সামনের সিটে এক মেয়ে ও তার মা বসে আছে। মেয়েটার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলাম। হঠাৎ মা ফিসফিসিয়ে বললো , 
“ মেয়েটার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? পছন্দ হয়েছে? দাঁতগুলো একটু এলোমেলো , নাহলে বাকিসব ঠিক আছে। বিয়ে হয়েছে নাকি জিজ্ঞেস করবো খোকা? ”

আমার অস্বস্তির সীমা রইল না। আমার মায়ের সঙ্গে সবসময়ই বন্ধুর মতো সম্পর্ক। সামনের সিটের মেয়েটাও চোখ নামিয়ে নিয়েছে। মেয়েটা মায়াবী চেহারার। আহামরি সুন্দরী নয় কিন্তু চেহারায় আকর্ষণ আছে। তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, চাইলে অবশ্য কথাবার্তা বলা যায়। কারণ কিছুক্ষণ আগে স্টেশনে তাদের সঙ্গে সামান্য কথা হয়েছে। 

আমি মাকে বললাম , 
“ এভাবে কথা বলছো কেন? ওরা শুনতে পেলে কি ভাববে বলো তো? ”

বা বললো , 
“ কিছু ভাববে না। তোর দিকে কীভাবে বারবার তাকাচ্ছে দেখেছিস? আমার তো মনে হয় তোর জন্য আর পাত্রী খুঁজতে হবে না। ”

“ চুপ করো না। এখন ফাজলামো করার সময়? তুমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকো৷ প্রকৃতি কতো সুন্দর দেখেছো? ”
“ মেয়েটা তারচেয়ে বেশী সুন্দর তাই না? ”
“ কে বলছে তোমাকে? ”
“ সুন্দর নাহলে তুই প্রকৃতি না দেখে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছিস কেন? ”

আমি হেসে দিলাম। আমার আটান্ন বছর বয়সী মা-ও হাসতে লাগলো। বেশিরভাগ সময় আমরা এভাবেই কথা বলি৷ বাবা মারা গেছে চার বছরের একটু বেশি। তারপর থেকে আমি আর মা দু'জন মিলে দেশের কতো যায়গায় ঘুরলাম। সাজেক, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, সিলেট, বান্দরবান মোটামুটি সবখানেই আমি আর আমার মা দুজন মিলে ভ্রমণ করেছি৷ 
আমাদের চার ভাইবোনের মধ্যে আমার সঙ্গেই মায়ের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। সবার বড় আপু কিন্তু তার বিয়ে হয়ে গেছে সে স্বামীর সাথে বাস করে অস্ট্রেলিয়া। আপুর পরে দুই ভাই, দু'জনই বিয়ে করেছেন। শুধু আমার বিয়েটাই এখনো বাকি আছে। 

মেয়েটা আবার তাকাচ্ছে। আমি আড়চোখে মা'র দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি বাহিরে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মা চোখ বন্ধ করেছেন। ঘুমিয়ে নাকি জেগে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসলাম। 

কিছুক্ষণ আগে স্টেশনে তাদের সঙ্গে পরিচয়। ট্রেনে ওঠার আগে আমি মায়ের ছবি তুলছি। বিভিন্ন এঙ্গেলে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা শেষ করতেই হঠাৎ এই মেয়েটা এসে বললো , 

“ যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমার মায়ের সঙ্গে আমার একটা ছবি তুলে দিবেন? ”

দেখলাম পাশেই এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। সময় লাল রঙের স্যুটকেস। আমি কিছু বলার আগেই মা বললো ,

“ অবশ্যই দেবে। খোকা তাড়াতাড়ি তাদের ছবি তুলে দে। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। ”

আমি কতগুলো ছবি তুলে দিলাম। মেয়েটার মা সম্ভবত একটু লাজুক ধরনের মানুষ। তিনি মনে হয় অস্বস্তি ফিল করছিলেন। তবুও প্রতিটি ফ্রেমে খুব ভালো ভালো ছবি উঠলো৷ 
মেয়েটা ছবিগুলো চেক করে আমার দিকে তাকিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে সামান্য হাসলো৷ আমি আর মা আমাদের ব্যাগপত্র নিয়ে আমাদের বগির দিকে এগিয়ে গেলাম। 
নানাবাড়ি যাচ্ছি বলে মায়ের আজকের দিনটা সবচেয়ে আনন্দের দিন। এর আগে অনেকবার আমরা ভ্রমণ করেছি৷ কিন্তু আজকের মতো এত হাসিখুশি কোনদিন মা'কে দেখিনি। 
চল্লিশ বছর পরে মা তার বাবার বাড়িতে যাচ্ছে। 
আনন্দ তো হবেই তাই না? 

বাবা মারা গেছে বছর চারেক আগে। তারপর থেকে মা মাঝে মাঝে নানাবাড়ির গল্প করতেন। 
গত সপ্তাহে হঠাৎ মা বললো , 
“ চল্লিশ বছর ধরে বাবার বাড়ি যাই না। একবার নিয়ে যাবি খোকা? মৃত্যুর আগে একবার বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করছে। জীবনের সতেরোটা বছর আমি ওই গ্রামে ছিলাম। আজ চল্লিশ বছরে না জানি কতো পরিবর্তন হয়ে গেছে। ”

বলতে বলতে মা কেঁদে উঠলেন। মা'কে সচারাচর কাঁদতে দেখিনি। আমার দেখা হাসিখুশি মানুষের মধ্যে মা সবার উপরে। কষ্ট সবার থাকে। কিন্তু মা একটু আলাদা, প্রচুর কষ্টের মধ্যে মা চুপচাপ শুয়ে থাকেন। কারো সঙ্গে কথা বলেন না। কান্না করে কষ্ট প্রকাশ করেন না৷ 
আমাদের সঙ্গে সর্বদা হাসিখুশি থাকতে মা খুব পছন্দ করেন। ভাবিরা সবসময় বলেন, এরকম শাশুড়ী সবার ঘরে ঘরে দরকার। 

মায়ের কথা শুনে আমি বললাম , 
“ তুমি তো জানো সেখানে গেলে কেউ তোমাকে আশ্রয় দিবে না। মামারা কেউ তোমাকে পছন্দ করে না। গিয়ে কী করবে মা? ” 

মা বলেন , 
“ আশ্রয়ের দরকার নেই। তুই আর আমি দুজন মিলে যাবো। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে আমার মা-বাবা দাদা-দাদীর কবরস্থান আর আমাদের পুরনো বাড়িঘর দেখে চলে আসবো৷ ”

আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে বাড়ির টিউশন মাস্টারের হাত ধরে রাতের আঁধারে ঢাকা শহরে পালিয়ে এসেছিল মা৷ বাবা ছিল সেই টিউশন মাস্টার। সেই চল্লিশ বছর আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসা তরুণী মেয়েটা আজ আটান্ন বছরে জীবন পার করছে কিন্তু আর নিজের বাড়িতে যেতে পারেনি। 

মায়ের আগ্রহ দেখে আমি বললাম , 
“ ঠিক আছে, অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তোমাকে নানাবাড়ি ঘুরিয়ে আনবো৷ কিন্তু শর্ত হচ্ছে তুমি ভাইয়া বা আপু কাউকে বলতে পারবে না। ”

মা আমার দুই গালে কপালে চুমু দিয়ে বললো , 
“ লক্ষি বাপ আমার, আমি কাউকে বলবো না। তুই ছুটি ম্যানেজ কর। ” 

তারপর আর কি, ছুটি নিয়ে আমরা রওনা দিলাম কুষ্টিয়ায়। মা বলতেন কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্রনাথের যে কুঠিবাড়ি সেটা নাকি তাদের বাড়ি থেকে খুব কাছেই। ভাবলাম একই সময়ে লালনের আস্তানা আর রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িও দেখা হয়ে যাবে। 

ছবি তুলে ট্রেনে উঠে যখন সিটে বসলাম তখন দেখি সেই মা মেয়ে দুজনেই আমাদের সামনে মুখোমুখি বসেছেন। ট্রেনের মাঝখানে যে চারটা সিট মুখোমুখি থাকে সেখানেই সিট পড়েছে। 

সামান্য কিছু ছবি তুলে দিলেই তাদের সঙ্গে গায়ে পড়ে বারবার কথা বলা যায় না। সিটে বসার পরে সামান্য পরিচয় হয়েছে। সেটাও কেবলমাত্র আমি আর মা নানাবাড়ি যাচ্ছি এটুকু বলার মাধ্যমে আর মেয়েটা বললো , 
“ আমি আর মা-ও মামাবাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলাম। এখন যাচ্ছি নিজেদের বাড়িতে। ”

মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে সুন্দর সম্পর্ক করার জ্ঞান আমার ছিল না। এজন্যই জীবনে তেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রেমের সূচনা হয়নি। তবে আমাদের ভার্সিটির এক মেয়ের সঙ্গে মাস ছয়েক কথা বলেছিলাম প্রেম করবো বলে। কিন্তু সেখানে বিরাট ছেঁকা খেয়েছিলাম পরে, কারণ সেই মেয়ে একসঙ্গে তিন চারটা বয়ফ্রেন্ড সামলাত।
তারপর থেকেই আমার যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে৷ 

____________________

কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে নামলাম। মেয়েটা ও তার মা এখানেই নেমেছে। আমি ঢাকা থেকেই আসার আগে কীভাবে কোথায় যাতায়াত করতে হবে সেই বিষয় হালকা ধারণা নিয়ে এসেছি৷ তবুও কথা বলার বাহানায় মেয়েটার কাছে বললাম , 

“ আমরা আসলে অনেক বছর পরে কুষ্টিয়ায় এসেছি। এখান থেকে শিলাইদহ কীভাবে যাবো বলতে পারবেন? ”

মেয়েটা উত্তর দেবার আগেই তার মা বললো , 
“ আমরাও শিলাইদহে যাবো৷ শিলাইদহের কোন গ্রামে যাবেন? ”

মা কাছেই ছিলেন। তিনি বললেন , 
“ দড়ীগ্রাম, আমার বাবার নাম ছিল মাহবুবুর রহমান মুন্সি। আমার বড়ভাইয়ের নাম আব্দুল মালেক মুন্সি। আর ছোটভাই আব্দুস সালেক মুন্সি। আমাদের কুটিবাড়ি যাবার উপায় বললে হবে। তারপর যেতে পারবো৷ ”

মহিলা ও মেয়েটা একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। মহিলা বললেন , 
“ আপা আপনার নাম কী? ”
“ আমার নাম মরিয়ম। ” জবাব দিল মা। 

মহিলা এবার বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি বুঝতে পারলাম নিশ্চয়ই কোনো একটা গন্ডগোল আছে। কিন্তু সেটা কি তা জিজ্ঞেস করার আগেই মহিলা বললেন , 
“ আপা আমি আপনার ছোটভাই আব্দুস সালেক মুন্সির স্ত্রী। ”

মা এবং আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি। মহিলা, মানে ছোট মামি তখন মাকে হাতটা জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। এভাবে এতটা পথ আমরা একসাথে এসেছি কিন্তু পরিচয় জানা ছিল না। আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম, 
“ তোমার নাম কি? ”

মা আর মামি আলাদা কিসব বাড়ির কথা বলতে লাগলো। আমার প্রশ্ন শুনে মেয়েটা বললো , 

“ কল্পনা। আপনি? ”

“ মোহসীন, মোহাম্মদ মোহসীন। ”

পরিচয় পেয়ে ভালো লাগলো। স্টেশনের কাছেই রেন্ট এ কারের প্রাইভেট কার ভাড়া পাইলাম। যেহেতু আমরা চারজন তাই একটা কার ভাড়া করে নিলাম। সিএনজি নিয়েও যাবার নাকি ব্যবস্থা আছে। খরচ তুলনায় কম হবে। কিন্তু তবুও কারে জার্নিটাই বেছে নিলাম। 

মা মামি আর কল্পনা পিছনের তিন সিটে৷ আমার স্থান হলো ড্রাইভারের পাশে৷ সামনের গ্লাসে আমি বারবার কল্পনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মাঝে মাঝে দুজনের চোখাচোখি হলো গ্লাসেই৷ আমি মুচকি হাসতাম, কিন্তু সে হাসতো কিনা বোঝা যেত না। 

একসময় মা বললো ,
“ আপনার ছেলেমেয়ে ক'জন ভাবি? ”

মামি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ,
“ আমার একটাই ছেলে ছিল আপা৷ কিন্তু আল্লাহ তাকে একবছর আগে পৃথিবী থেকে নিয়ে গেছে।”

একটাই ছেলে মানে? তাহলে কল্পনা কে? 
মনে মনে এটাই ভাবছি। আমার ভাবনার প্রশ্নটা মা করে দিল। মা বললো , 
“ তাহলে ও কে? ”

এবার মামি যেটা বললো তা শোনার মোটেই ইচ্ছে আমার নাই। কিন্তু সত্যি তো সবসময় সত্যিই থাকে। মামি বললো , 
“ ছেলের মৃত্যুর ছ'মাস আগে তাকে বিয়ে দিছিলাম। কল্পনা আমার ছেলের বউ৷ আপনার ভাইপোর বউ আপা। ”

আমি এটা আশা করি নাই৷ স্টেশন ও ট্রেনের মধ্যে সারাক্ষণ তাদের কথোপকথনে এটা মনে হয় নাই যে এরা শাশুড়ী বউমা। 
মামির পরিচয় পেয়ে ভেবেছিলাম মামাতো বোন পাইছি। কিন্তু এখন মামাতো ভাইয়ের বউ শুনে মনটাই ভেঙ্গে গেল। 

এরপর তারা সারাক্ষণ বকবক করতে করতে এলো ঠিকই কিন্তু আমার মন খারাপের মুহূর্তে আর কিছুই মাথায় ধরেনি। গাড়ি মামা বাড়ির সামনে যখন পৌছালো তখন বেলা তিনটা। 

_______________

ছোটমামা ছোট মামি দুজনেই খুব খুশি হলেও বড় মামা আর বড় মামি খুব বাজে ব্যবহার শুরু করলেন। তাদের বকাবকি শুনে আমি নিজেও বাধ্য হয়ে বলেছিলাম , 
“ আপনাদের বাড়িতে খেতে আসিনি। কিছুক্ষণ থাকবো তারপর সন্ধ্যা হলেই আবার শহরে চলে যাবো। রাতের রিটার্ন টিকেট করা আছে, ট্রেনে আবার ঢাকায় ফিরবো। ”

ছোট মামা বললেন , কোনোভাবে আজকে যাওয়া হবে না। বড় মামা না মানলে কিছু না। তিনি আমাদের রাখবেন। মামিও মায়ের হাত ধরে বললেন , আসছেন যখন দুটো দিন থেকে যান আপা৷ আমি বিয়ের পর থেকে আপনার কথা শুনছি। কিন্তু কোনদিন দেখিনি। আপনি যাবেন না। আমাদের সঙ্গে থাকবেন। 

বড় মামা থাকে নিচতলায় আর ছোটমামা দোতলায় থাকে। অনেক পুরনো বাড়ি। আমরা দুপুরের খাওয়া করলাম। ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বসতে না বসতেই কল্পনা মেয়েটা কল্পনার মতো খাবার হাজির করলো। 

খাওয়া দাওয়া শেষ করে মা'কে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম। তারপর মামার সঙ্গে চলে গেলাম বাজারের দিকে। বাজারের মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। নামাজের পড়ে একটা হোটেলে আমি আর মামা গেলাম হালকা নাস্তা করতে। নাস্তাটা মজার ছিল। মায়ের জন্য পার্সেল নিতে ইচ্ছে করছিল। অর্ডার দিলাম। পার্সেল রেডি হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে মামার নাম্বারে কল আসে৷ 
মামা কথা বলতে বলতে কেমন উন্মাদ হয়ে গেলেন। তারপর পাগলের মতো আমার দিকে তাকিয়ে বললেন , 
“ তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলো খোকা। ”

আমার বুকটা ধুকধুক করে উঠলো। মায়ের জন্য পার্সেলটা হাতে নিয়ে দ্রুত দৌড়াতে লাগলাম। একটা ভ্যান নিয়ে মামার বাড়িতে গেলাম। এবং সেখানে গিয়ে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধুর সমাপ্তি পেলাম। 

মামাবাড়ির চিলেকোঠার ঘরে মায়ের মৃতদেহটা পরে আছে। জানা গেল সন্ধ্যা বেলা সে ছাদে উঠেছিল। নামাজের পরে মামি মা'কে খুজে না পেয়ে ছাদে গিয়ে খোঁজাখুজি করেন। আর কিছুক্ষণের মধ্যে চিলেকোঠার ঘরে মায়ের মৃতদেহ তারা দেখতে পায়। 

আমি চোখের সামনে মায়ের চিরনিদ্রায় শায়িত দেহটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মায়ের গলায় তার শাড়ির আঁচল পেঁচানো। যে বা যারা মা'কে খুন করেছে তারা আমার মায়ের শাড়ির আঁচল দিয়েই তাকে ফাঁস দিয়েছে। 

↓ 
↓ 
চলবে… 
 

গল্প- সরি আম্মাজান। 
পর্ব- এক (০১) 
লেখা-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
পর্ব- দুই 


এসআই শাহরিয়ার ও সাজু ভাই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে মোহসীন। কাঁদতে কাঁদতে মোহসীন পাগলের মতো হয়ে গেছে। দু-হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো ,
“ আমি এখন ভাইয়া আর আপুদের কাছে কী জবাব দেবো? আমার মাকে এভাবে কেন হত্যা করলো? মা তো কারো ক্ষতি করতে আসেনি। আমরা তো আজই চলে যেতে চাইছিলাম। ”

সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। কিছু প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে সামনে আসে ঠিকই কিন্তু সেগুলো জবাব পাওয়া যায় না। জবাব অদৃশ্য। সুপ্ত। 

সাজু কুষ্টিয়া এসেছে আজকে সকালে। নিজেরা চার বন্ধু মিলে ঘুরতে আসা। 
সাজু, নোমান, সাগর আর বখতিয়ার। নোমানের ফুফাতো ভাই এসআই শাহরিয়ার এখানেই পোস্টিংয়ে আছেন। তাই এসেই একদিনে চলে যাবার তাড়া ছিল না। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে রাতে এসআই শাহরিয়ারের বাসায় থাকার কথা ছিল তাদের। ছিলও তাই। 

বাড়িতে মেহমান ছিল বলে থানা থেকে ছুটি নিয়ে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরেন৷ সন্ধ্যার পরে সবাই একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে তখন শাহরিয়ারের মোবাইলে কল আসে। জানা যায় কুঠিবাড়ির কাছেই কোন বাড়িতে নাকি এক মহিলা খুন হয়েছে। এখনই যেতে হবে তাকে। 

কথাটা বলতেই সাজু বলেছিল, চলেন আমরাও সঙ্গে যাই। আপনি থানায় গিয়ে টিম নিয়ে আসেন আমরা একসাথেই যাবো৷ 

মুন্সি বাড়িতে আসার পরে দেখা যায় ইতিমধ্যে গ্রামের মানুষের ভিড় জমে একাকার। প্রাথমিক জিজ্ঞেসায় মোহসীনের ছোটমামা বললেন , 

“ উনি আমার বোন। চল্লিশ বছর পরে আজকে গ্রামে ফিরেছেন। হঠাৎই কাউকে কিছু না বলে চলে এসেছেন। ”

রাত নেমেছে চিলেকোঠার এই ঘরে। কালো রাত নেমেছে চারিদিকে। কিন্তু আলো যেন হারিয়ে যায় অন্ধকারের ভেতর। আকাশের শেষ রক্তিম আভা মুছে গিয়ে রাত তার ছায়া বিস্তার করেছে। ভেজা বাতাসে ঘোরলাগা গন্ধ। যেন কেমন শীতল, অথচ ভারী।

চিলেকোঠার দরজার সামনে মানুষের ভিড় জমে আছে। প্রত্যেকের চোখে অজানা এক ভয়। কেউ মুখে হাত চাপা দিয়ে ফিসফিস করে কথা বলছে, কেউ আবার স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু তাদের সকলের দৃষ্টি সেই দরজার দিকে, যার ভেতরে মেঝেতে পড়ে আছেন এক মহিলা—মোহসীনের মা। 

মোহসীন তখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে। মুখে কোনো শব্দ নেই। তার হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ, চোখ ফাটা বৃষ্টির মতো ঝরছে অশ্রু। চারপাশের শব্দ যেন তার কানে পৌঁছাচ্ছে না। তার শুধু মনে হচ্ছে, মায়ের নিথর দেহের পাশে গিয়ে হাতটা ধরতে পারলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে।

পুলিশ জায়গাটা ঘিরে রেখেছে। তাদের পদচারণায় ছাদ কেঁপে উঠছে। ছাদের বাতাস ভারী হয়ে আছে, যেন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। 
মোহসীনের কণ্ঠে আর্তনাদের সুর যেন শব্দের চেয়েও তীব্র হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

সাজু কপালে ভাঁজ ফেলে ছেলেটির দিকে তাকাল। এক মুহূর্তের জন্য তিনি স্তব্ধ হয়ে গেলেন। মায়ের শোকে কতটা কাতর হয়ে বসে আছে মোহসীন। এসআই শাহরিয়ার সাজুর কাছেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছেন। 

ঘরের ভেতরে নিস্তব্ধতা। জানালার পর্দা উড়ছে হালকা বাতাসে। মেঝেতে পড়ে থাকা শাড়ির ভাঁজে দলা পাকানো। 
একটি চেয়ার উল্টে আছে, যেন সেখানে কোনো সংগ্রাম হয়েছে। পাশের দেয়ালে অর্ধেক ঝুলে থাকা ঘড়ির কাঁটা থেমে গেছে, ঠিক সন্ধ্যা ছ'টা বেজে চৌত্রিশ মিনিটে। নিশ্চয়ই ধস্তাধস্তি করার সময় ঘড়িটা আঘাত লেগেছে। 

সাজু নিঃশব্দে হাঁটছে। জানালার বাইরে ছড়িয়ে থাকা ছোটো ছোটো কাঁচের টুকরো এবং ঘরের প্রতিটি কোণে তাকিয়ে দেখছে। একটা নিঃশব্দ চিৎকার যেন গোটা জায়গাটিকে গ্রাস করেছে।

মোহসীন সেখানেই দাঁড়িয়ে। তার চোখের জল থেমে গেছে, কিন্তু তার ঠোঁট ফিসফিস করছে। 
“ মা আমাকে ক্ষমা করে দিও। ”

এই চিলেকোঠার ঘর শুধু একটি হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী নয়। এটি মোহসীনের জীবনের সবচেয়ে কালো অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
সাজু জানেন, এই অন্ধকারে এমন কিছু লুকিয়ে আছে, যা বের করতে হবে। কিন্তু মোহসীনের চোখের সেই যন্ত্রণা—তাকে আজ রাতে এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি দেবে না।

চিলেকোঠার ঘরটা পুলিশ ক্লিয়ার করে। সেখানে গিয়ে দাঁড়ায় শাহরিয়ার ও সাজু ভাই। তাদের পিছনে সালেক মুন্সি, সামনেই মায়ের লাশের পাশে বসে কান্না করছিল মোহসীন। 
সাজু এক দৃষ্টিতে লাশের দিকে তাকিয়ে রইল। শাহরিয়ার বললো , 
“ কেমন নিষ্ঠুর জগতের মানুষ তাই না? ”
“ হ্যাঁ। এমন বয়সী মহিলাকেও গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করলো ভাই। ”
“ মনে হয় জায়গাজমি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। ”
“ কিন্তু হুট আসতেই মেরে ফেলবে? ”
“ এই বাড়ির কারো সঙ্গে কথা বলে সত্যিটা জানা যাবে না। আগে ওনার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করি। আসল কাহিনি কি বোঝার চেষ্টা করে দেখা যাক। ”

সাজু বললো “ সদ্যই যার মা মারা গেছে তার কাছে এতকিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে ভাই? ”

“ জিজ্ঞেস করে দেখি, ওনারা আসার পরে কারা কেমন ব্যবহার করেছে সবকিছু জানা দরকার তাই না? তাহলে তো বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলতে সুবিধা হবে। ”

মোহসীনকে জিজ্ঞেস করতেই সে কথা বলতে রাজি হলো৷ কিন্তু শুরু করার আগে একবার এদিক সেদিক তাকাতেই শাহরিয়ার মনের ভাব বুঝতে পারে। 
ঘরের সবকিছু ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর মোহসীনের মায়ের লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য সেখান থেকে বের করা হয়। 

শাহরিয়ার বললো, “ লাশ পোস্টমর্টেম শেষে সবকিছু জানতে পারবো আশা করছি। খুনিকে ধরতে বেশি কষ্ট হবে না মোহসীন সাহেব। ”

মোহসীন দাঁড়িয়ে ছিল। 
সাজু বললো , আমরা কি জানতে পারি আজ কি কি ঘটেছে আপনাদের সঙ্গে? ”

সাজু ভেবেছিল মোহসীন স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবে না। কিন্তু দেখা গেল মোহসীন সেই সকালে রওনা দেবার পর থেকে সম্পুর্ণ ঘটনা বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। নিজের মায়ের কিছু অতীত ইতিহাসও তুলে ধরেছে। 

সবটা বলে মোহসীন দাঁড়িয়ে আছে একধরনের অদ্ভুত নিস্তব্ধতায়। তার ২৯ বছরের শক্ত চেহারা এই মুহূর্তে যেন ভেঙে পড়েছে। চোখ দুটি লাল, ঠোঁট কাঁপছে। তার বুকের ভেতর যন্ত্রণার ঝড় উঠলেও মুখে কোনো শব্দ নেই। শুধু ফিকে আলোয় তার হাতের চেইনের লকেটটায় ভেসে উঠছে তার মায়ের মুখ।
সাজু তার পাশে এসে দাঁড়ালেন। তার চোখে মোহসীনের জন্য গভীর মমতা, কিন্তু মুখে সেই দৃঢ়তা যা একজন অভিজ্ঞ গোয়েন্দার প্রয়োজন। ধীরে ধীরে তিনি হাত রাখলেন মোহসীনের কাঁধে।

“ মোহসীন! " 
সাজুর কণ্ঠ গভীর, কিন্তু নরম। “ আমি জানি, এমন সময় কোনো কথাই যথেষ্ট নয়। মায়ের মতো মানুষ হারানোর যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু মনে রেখবেন, তিনি আপনার কাছে সবসময় বেঁচে থাকবেন। আপনার স্মৃতিতে, আপনার জীবনের প্রতিটি কাজের মধ্যে। ”

মোহসীন তার মুষ্টিবদ্ধ হাত খুলে ফেলল, কিন্তু মুখ তুলে তাকাল না। 
সে নিচু গলায় বলল, “ কেন? কেন এমন হলো? মা আমার কাছে সব ছিলেন। কেন তাকে কেউ এভাবে কষ্ট দিল? ”

তার কণ্ঠে এক অদ্ভুত অসহায়ত্ব ঝরে পড়ল।
সাজু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। 
“ জানি, উত্তরগুলো খুঁজে পাওয়া আপনার জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই উত্তর বের করাই আমাদের কাজ। আমরা আপনার মায়ের খুনিকে বের করবো ইন শা আল্লাহ। ”

মোহসীন চোখ মুছে নিল। তার মুখের অভিব্যক্তিতে একটি ছায়া দেখা গেল—অসহায়ত্ব আর ক্রোধের মিশ্রণ। 
“ তোমার কথা ঠিক হতে পারে। কিন্তু আমার মাকে আমি সুবিচার দিতে চাই। যেই এটা করেছে তাকে শাস্তি পেতে হবে। ”

সাজু তার কাঁধে চাপ দিয়ে বললেন, 
“ আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনার মা যে সুবিচার পাওয়ার যোগ্য, সেটি তাকে অবশ্যই দেওয়া হবে। কিন্তু সেই সুবিচার পেতে হলে আপনাকেও আমাদের পাশে থাকতে হবে। সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে এই ঘর আর এই রাতের গল্পে। আমরা সবাই মিলে সেটি বের করব। ”

মোহসীন মাথা নাড়ল। তার চোখে ধীরে ধীরে ফিরে এলো দৃঢ়তা। মায়ের প্রতি ভালোবাসা আর সুবিচারের সংকল্প যেন তার ভেঙে পড়া সত্তায় নতুন করে শক্তি জাগিয়ে তুলল।

সাজু আবার ঘরের দিকে তাকালেন। চারপাশের নিস্তব্ধতার ভেতর যেন তাদের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। এই ঘর কেবল একটি অপরাধের দৃশ্য নয়; এটি এখন মোহসীনের মায়ের স্মৃতির শেষ ছোঁয়া আর তার সুবিচারের শপথের সাক্ষী।

সামনেই মোহসীনের দুই মামা দাঁড়িয়ে আছে। এসআই শাহরিয়ার মালেক মুন্সি ও সালেক মুন্সির দিকে তাকিয়ে বললেন ,

“ সবার আগে সন্দেহের তালিকায় আপনারই থাকবেন। ”

সাজু এগিয়ে যায় কল্পনার সামনে। সালেক মুন্সির বউ ও পুত্রবধূ কল্পনা দুজনেই নিচে বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে গিয়ে সাজু তাদের উদ্দেশ্যে বললো , 
“ সন্ধ্যার একটু আগে ছাদে ওঠার সময় দোতলায় দাঁড়িয়ে আপনাদের সঙ্গে মোহসীনের মায়ের কথা-কাটাকাটি হয় এটা কি সত্যি? ”

কল্পনা ও সালেক মুন্সির স্ত্রী একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারা এরকম প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না। কল্পনা বললো , 
“ হ্যাঁ সত্যি। ”

সাজু বললো “ আপনার স্বামীর মৃত্যুর জন্য আপনি এবং আপনার শশুর শাশুড়ী সবাই মোহসীনের মা'কে দায়ী করতেন এটাও কি সত্যি? ”

কল্পনা ও সালেক মুন্সির স্ত্রী আবারও অবাক হলো। এই অচেনা মানুষটা এতকিছু কীভাবে জানে? সাজু তাদের নীরবতা দেখে বলে ,

“ চল্লিশ বছর ধরে যার কোনো খোঁজ জানেন না। কিন্তু নিজের সন্তানের মৃত্যুর জন্য তাকেই কেন দায়ী ভাবতেন বুঝতে পারছি না। আমাকে একটু খুলে বলবেন? ”

চলবে… 

 
 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#3
 পর্ব- তিন



চারপাশে মানুষের গুঞ্জন। হালকা কোলাহলের মাঝে দাঁড়িয়ে কল্পনা ও তার শাশুড়ি চাপা উত্তেজনায় কথা বলছেন গোয়েন্দা সাজুর সঙ্গে। কিন্তু তাদের চেহারার ভীত সন্ত্রস্ত অভিব্যক্তি অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সাজুর উপস্থিতি যেন এক অদ্ভুত চাপ সৃষ্টি করেছে। কীভাবে তিনি তাদের গোপন কথা জানতে পারলেন, সেটাই এখন তাদের কাছে সবচেয়ে বড় রহস্য।

কল্পনা আর তার শাশুড়ি, দুজনের কেউই ঠিক করতে পারছেন না, কে আগে কথা বলবে। সত্য বলার সাহস কার মধ্যে আছে, তা যেন সময়ই বলে দেবে।

সাজু ধীর কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, 
“ যত তাড়াতাড়ি উত্তর দেবেন, ততই সবার জন্য ভালো। তবে উত্তর অবশ্যই সত্য হতে হবে। মিথ্যার আশ্রয় নিলে, সেই মিথ্যাকে ঢাকতে আরও অনেক মিথ্যার ভার আপনাদের নিতে হবে। মনে রাখবেন, সত্যটা যত সহজ, মিথ্যাটা ততই জটিল। ”

সাজুর চোখে ছিল অনড় দৃষ্টি। কল্পনা ও তার শাশুড়ি চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন। উত্তরের অপেক্ষায় যেন সময় থেমে গেল। 

সাজু আন্দাজে কোনো প্রশ্ন করেনি। অভিজ্ঞতায় জানে, একটি বাড়ির ভেতরের গোপন সত্যের সূত্রধর হতে পারে সেই বাড়ির কাজের মানুষ। তাই প্রথমেই কথা বলে হনুফার সঙ্গে, হনুফা মালেক মুন্সির ঘরের কাজের মহিলা। 

সন্ধ্যাবেলা উঠোনে দাঁড়িয়ে কাপড় তুলছিল হনুফা। তখনই দোতলার বারান্দা থেকে চিৎকারের শব্দ কানে আসে। কৌতূহল চেপে রাখতে পারেনি সে। ভেতরের কোনো টানেই হয়তো কৌশলে আড়ি পাততে শুরু করে। শুনতে পায় সদ্য বাড়িতে আসা মরিয়ম আর কল্পনার শাশুড়ী শাহানার তপ্ত বাক্যালাপ।

হনুফা যা বলছে সেগুলো ছিল এমন,

“ ওনারা কী যে বলছিল! আমি ঠিকঠাক শুনেছি। মোহসীনের মা মরিয়ম বলছিলেন, ‘তোমার ছেলে আমার সঙ্গে দেখা করেছে, এটা সত্যি। কিন্তু তার মৃত্যুর জন্য আমি কেন দায়ী হবো? ’’

আর তখনই কল্পনার শাশুড়ি শাহানা বলেন , সরাসরি আপনাকে দায়ী করছি না। কিন্তু সত্যি বলতে আপনি চাইলে ওকে সেদিন মানসিক ভাবে সাপোর্ট করতে পারতেন। 

হনুফা সাজুকে বলেছিল , 
“ এই কথা শুনে আমি ভয়ে পিছিয়ে যাই। কারণ তখন মুন্সি কাকা ঘর থেকে বের হচ্ছিল। ”

সাজু এগুলো শুনে নিয়েছে। নিজে নিজের সিদ্ধান্ত নিল যেহেতু মরিয়ম মারা গেছে তাই ওনার কাছ থেকে উত্তর পাওয়া তো সম্ভব না। কিন্তু কল্পনার শাশুড়ী নিশ্চয়ই সব জানেন। তাই এখন সুযোগ বুঝে সাজু প্রশ্ন করছে। 

কল্পনা বললো , 
“ বাজারে অনেক বড় একটা জমি আছে আমার দাদা শশুরের৷ সেই জমিটা তিনি মরিয়ম ফুফুর নামে লিখে দিয়ে গেছেন৷ ”

বাজারের পাশের জামি৷ বিড়বিড় করে উচ্চারণ করে সাজু৷ কিন্তু এই জমির সঙ্গে মোহসীনের মা জড়িত কীভাবে? কিংবা সালেক মুন্সির ছেলে কীভাবে জড়ালো সেখানে? 

শাহানা বললো , 
“ সুজনের ইচ্ছে ছিল বাজারের ওই জমিতে ভালো একটা দোকান করবে৷ বাহির থেকে মাঠের কিছু জমি বিক্রি করে বাজারের ওই জমিতে দোকান তুলে ব্যবসা করার প্ল্যান ছিল। কিন্তু জমির কাছে গেলে তখন সুজনের বড়কাকা মানে আমার ভাসুর বাঁধা দেয়। ”

সাজুর দৃষ্টি স্থির। বললো , 
“ কাকার কাছে বাঁধা পেয়ে আপনার ছেলে সুজন তার ফুফুর কাছে মানে মোহসীনের মায়ের কাছে দেখা করতে যায় তাই না? ”

কল্পনা বললো , 
“ হ্যাঁ সেটাই। কীভাবে যেন তাদের ঠিকানা খুঁজে বের করে ফেলে৷ তারপর শহরে চলে যায় তাদের সঙ্গে দেখা করতে। ”

সাজু কিছুটা বুঝতে পারলো কাহিনি। শাহানার দিকে তাকিয়ে সাজু বললো , 
“ আপনার ছেলে কীভাবে মারা যায়? ” 

“ অসুস্থ হয়ে। ঢাকা থেকে প্রচুর জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সারাক্ষণ শুধু বলতো তার ফুফু এমনটা করবে সে ভাবতেই পারে নাই। কিন্তু কত জিজ্ঞেস করছি কোনো উত্তর নাই। ”

আপাতত বেশি প্রশ্ন করার নাই। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে না। কিন্তু রাত গভীর হচ্ছে খুব। সাজু তখন বলে , 
“ ঝগড়া মিটমাট হইছিল কখন? মরিয়ম বেগম যখন ছাদে গেলেন তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? ” 

“ ওনাদের বাকবিতন্ডা দেখে আমার খারাপ লাগছিল। তাই আমি ফুফুকে নিয়ে ছাদে গেছি। আম্মাকে বলেছিলাম যা হবার হয়ে গেছে কিন্তু এখন যেন সম্মান বজায় রাখে৷ ”

“ আপনি ছাদ থেকে কখন নামলেন? ”

“ সঙ্গে সঙ্গেই। বাড়িতে মেহমান তাই ভালোমন্দ রান্না করছিলাম। সেজন্য বেশিক্ষণ ছাদে না দাঁড়িয়ে নিচে চলে আসি৷ এটাই ফুফুর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। ”

সাজু কিছুক্ষণ চুপচাপ মাথা দোলাতে থাকে। চারপাশের পরিবেশটাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিজের মনের ভেতর যেন একটা ছবি আঁকে। প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ছায়া, প্রতিটি অনুরণন সব কিছু মাথার ভেতর ঢুকিয়ে নিল। এরপর সেগুলোকে গুছিয়ে নিতে শুরু করল। প্রশ্ন আর উত্তরের টুকরো টুকরো অংশগুলো একত্রে জুড়ে একে একে সাজিয়ে তুলল নিজের চিন্তার ক্যানভাসে।

মনে হচ্ছিল, সমস্ত রহস্য যেন তার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আবার সেইসঙ্গে অনুভব করল, এই রহস্যের চারপাশে এক বিশাল জালের অস্তিত্ব। এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে এই জালের মধ্যে আটকে রেখেছে। সত্যিটা ঠিক হাতের নাগালে, অথচ ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। 

শাহরিয়ার তখনও মালেক মুন্সির সঙ্গে কথা বলছে। তার মুখে একরকম অদ্ভুত হাসি, যেন পরিস্থিতির সঙ্গে একেবারেই বেমানান। এই হাসি কেন, তা কেউ বুঝতে পারছে না। তবে সাজু তার দিকে খুব একটা মনোযোগ না দিয়ে এগিয়ে গেল মোহসীনের ছোটমামা সালেক মুন্সির কাছে।

সালেক মুন্সিকে একটু সাইডে নিয়ে গলায় চাপা স্বরে বলল,
“সন্ধ্যার আগে মোহসীনকে নিয়ে আপনিই তো বাজারে গিয়েছিলেন, তাই না?”

“হ্যাঁ,” মলিন মুখে জবাব দেন সালেক মুন্সি।

সাজু গভীরভাবে তার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল,
“মোহসীন কি কারো সঙ্গে গোপনে কোনো কথা বলেছিল? মানে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বাজারে গিয়ে মৃত্যুর সংবাদ শোনার আগ পর্যন্ত—এমন কোনো ফোন কল বা কথোপকথন, যেটা সন্দেহজনক মনে হতে পারে?”

সালেক মুন্সি কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইলেন। তার চোখে মিশ্রিত বিস্ময়। এই যুবক, যে পুলিশের সঙ্গে এসেছে, মোহসীনকে সন্দেহ করছে কেন? মোহসীন কার সঙ্গে কথা বলেছে, সেটা তিনি কেন খেয়াল করবেন?

অবশেষে তিনি সংক্ষিপ্ত উত্তর দেন,
“না, সেরকম কিছু দেখিনি।”

সাজু তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করে চুপ করে রইল। তার চোখে তখন একধরনের তীক্ষ্ণতা, যেন প্রতিটি কথা ও আচরণ বিশ্লেষণ করে। 

“ আপনার বাবা মোহসীনের মায়ের নামে মোট কতটুকু সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন? ”

সালেক মুন্সি আবারও অবাক হলেন। তিনি কোনো লুকোচুরি না করে বললেন। 
“ অনেক। ”

“ কিন্তু কেন? যে মেয়ে চল্লিশ বছর ধরে বাড়িতে আসেনি। সেই মেয়ের নামে এতো সম্পত্তি কেন লিখে দিয়ে গেলেন? ”

চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সালেক মুন্সি। তার মুখে কথা নেই। সাজু আবার তাড়া দিল। তখন তিনি বললেন , 
“ আমার জুয়ার নেশা ছিল। আর বড়ভাই বাবার সঙ্গে জমিজমা নিয়ে ঝামেলা করছিল। তখন বাবা রাগ করে সব সম্পত্তির বেশিরভাগই তিনি মরিয়ম আপার নামে লিখে দিয়েছেন। ” 

সাজু এবার মোহসীনের দিকে তাকিয়ে রইল। মোহসীন ও এসআই শাহরিয়ার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলছিল৷ 
সেখান গিয়ে সাজু বললো , 

“ গল্প আর বাস্তবতা এক না৷ আপনাকে যখন প্রথমেই আপনার আর আপনার মায়ের এখানে আসার কথা জিজ্ঞেস করলাম তখন চমৎকার গল্প সাজিয়েছেন। ”

“ মানে? ” চমকে উঠে প্রশ্ন করে মোহসীন। 

সাজু নিশ্বাস ছেড়ে বলে , 
“ চমকাবেন না। খানিকক্ষণ আগেই যার মা খুন হয়েছে। সেই ছেলেটা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে যখন ট্রেন স্টেশনে দেখা হওয়া মেয়ে আর তাকে নিয়ে কথোপকথন আমাদের কাছে প্রকাশ করে তখনই কিছু একটা বোঝা যাচ্ছিল। ”

“ কী বোঝা যাচ্ছিল? ”

সাজু পকেট থেকে হাত বের করে মোহসীনের কাঁধে হাত রেখে বললো , 
“ মায়ের নামে নানাবাড়ি বিশাল সম্পত্তি। মায়ের মৃত্যু হলেই সব সম্পত্তি নিজেদের। এরকম কিছু কি ইঙ্গিত করা অপরাধ মোহসীন ভাই? ”

মোহসীন স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে। 
সাজু বললো , “ কল্পনা আর শাহানার সঙ্গে দেখা কাকতালীয় নয় তাই না? আপনি ঠিকই জানতেন এবং তাদের চিনতেন। শুধু শুধু একটা কাহিনি সাজিয়ে আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন। ”

এসআই শাহরিয়ার নিজেও অবাক হয়ে গেছে। সাজু আবার বললো , 
“ আমি যখন কল্পনা আর শাহানার সঙ্গে কথা বলছিলাম তখন বারবার আপনি ঘুরেফিরে সেদিকেই তাকাচ্ছেন। কেন? পরিকল্পনা সব সামনে আসার ভয়ে? ”

মোহসীন বিড়বিড় করছে। স্পষ্ট করে তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অদুরে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে কল্পনা। কারণ কী? 

চলবে.. 

 

রিয়্যাক্ট ও মন্তব্য করতে ভুলবেন না। 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#4
সাজু ভাই সিরিজের সব গুলোর লিংক এক সাথে।

===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#5
Sorry 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#6
পর্ব- চার

এসআই শাহরিয়ার গভীর কৌতূহল নিয়ে মোহসীনের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার ঠোঁটের কোণে এখনো হাসির রেখা লেগে আছে। তবে তিনি মোহসীনকে কোনো প্রশ্ন না করে আচমকা সাজুকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন,

" এসব কি বলছো তুমি? ওনার মা কিছুক্ষণ আগেই মারা গেছেন। এমন অবস্থায় তাকে সন্দেহ করে মানসিক কষ্ট দেওয়া কি ঠিক হবে?"

সাজু কোনো কথা না বলে নীরবে একবার মোহসীনের দিকে তাকায়, আবার কল্পনার দিকে। কল্পনার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মেয়েটি দ্রুত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়ে।

শাহরিয়ার আবার বললেন,
" ধরো খুনটা করেছে অন্য কেউ। তদন্ত শেষে যদি সত্যি তাই প্রমাণিত হয়, তখন আমাদের অনুশোচনা হবে। কারণ এমন মর্মান্তিক মুহূর্তে আমরা তাকে তার মায়ের খুনের সন্দেহ করেছি। এটা নিতান্তই অন্যায়। "

সাজু চাইলেই এর জবাব দিতে পারত। কিন্তু শাহরিয়ার তার পরিচিত কেউ নয়। সে তার বন্ধু নোমানের ফুফাতো ভাই। শাহরিয়ারের প্রকৃত স্বভাব সম্পর্কে সাজুর কোনো ধারণা নেই। এ পরিস্থিতিতে তর্ক-বিতর্কে সময় নষ্ট করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছু হবে না।
রাত ক্রমশ গভীর হচ্ছে। আশেপাশের মানুষজনও কমতে শুরু করেছে। চারপাশে নীরবতার চাদর যেন ধীরে ধীরে ঢেকে দিচ্ছে সবকিছু।

সাজু ধীর কণ্ঠে বলল,
" মোহসীনের সঙ্গে আপনি এবং আমি আলাদা আলাদা কথা বলেছি, তাই না? "

" হ্যাঁ, তো? তাতে কি হয়েছে? "

শাহরিয়ারের কণ্ঠে বিস্ময়। সাজু তখনো গভীর মনোযোগে চারপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তার চোখে এক অদ্ভুত শান্ত অথচ দৃঢ়তার ছাপ স্পষ্ট।

সাজু বললো , 
“ মোহসীনের ছোটমামি আর ওই কল্পনা মেয়ের কাছে আমরা ঘটনা জিজ্ঞেস করি। সবার বক্তব্য এক হলে বোঝা যাবে কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা। তাই না? ”

“ বোকার মতো কথা বলো কেন? মানলাম তারা প্ল্যান করে কাজটা করেছে। যদি সত্যি সত্যি এরা প্ল্যান করে তাহলে তো মোহসীনের বক্তব্যটাও প্ল্যানের মধ্যে থাকবে তাই না? ”

তর্ক করতে একদমই ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সাজু সংক্ষেপে বললো , 
“ প্ল্যান করে এতবড় গল্প সাজানো যায় না। যদি এটাও সাজানো হয় তাহলে এরা দুজন একই গল্প বলতে গেলে তখন কিছু একটা ভুল করবে। ”

“ শোনো সাজু, আজকে আমরা আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করবো না। এরা কেউ পালিয়ে যাচ্ছে না। ”

সাজু থমকে গেল। মুখে কিছু না বললেও তার চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। শাহরিয়ার পা বাড়াতেই শান্ত গলায় বলল,
“আমি অন্তত কল্পনা আর তার শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে চাই, তারপর এখান থেকে যাব। আমাকে এইটুকু সুযোগ দিন। নাহলে রাতে একটুও ঘুমাতে পারব না।”

শাহরিয়ার কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিলেন। আজ এই বাড়িতে একটি খুন হয়েছে। চারপাশে তাই এক অদ্ভুত থমথমে পরিবেশ। শেষে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে মালেক মুন্সির দিকে এগিয়ে গেলেন।

সাজু সুযোগ পেয়েই কল্পনা ও তার শাশুড়ির দিকে এগিয়ে গেল। তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একই প্রশ্ন করল,
“সকালে ঢাকা স্টেশনে আপনাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, তাই না?”

কল্পনার শাশুড়ি কিছু বলার আগেই কল্পনা জবাব দিল,
“হ্যাঁ, স্টেশনে। ছবি তোলার সময়।”

কল্পনার কণ্ঠের দৃঢ়তা দেখে সাজু একটু থামল। এরপর বলে উঠল,
“পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর আপনিই দেবেন।”
সে কল্পনার শাশুড়ির দিকে ইঙ্গিত করল।

কল্পনা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
“মা মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছেন। ওনাকে হয়রানি করবেন না, প্লিজ। আমরা দুজন তো সবসময় একসঙ্গে ছিলাম। আপনি যা জানতে চান, আমাকে জিজ্ঞেস করুন। আমি সব উত্তর দেব।”

সাজু শান্ত অথচ দৃঢ় স্বরে বলল,
“এত কথা বলার দরকার নেই। ওভারস্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন না, কল্পনা বেগম। পরিস্থিতি বুঝে সাবধানে কথা বলাই উচিত।”

কল্পনা একটু অপ্রস্তুত হয়ে নীরব হয়ে গেল। তার শাশুড়ি মাথা নিচু করে বললেন,
“কিছু মনে করবেন না। আপনি যা জানতে চান, বলুন।”

সাজু তার স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“মোহসিন আর তার মা আপনাদের সেই পুরনো আত্মীয়—এটা আপনারা কখন বুঝতে পেরেছিলেন? ঢাকা স্টেশনে, নাকি ট্রেনে ওঠার পর?”

কল্পনার শাশুড়ি ভয়ার্ত চোখে কল্পনার দিকে তাকালেন। কল্পনা কিছু বলার চেষ্টা করছিল। সাজু তার মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, যেন সব উত্তর কল্পনার ঠোঁট থেকে বেরিয়ে আসার অপেক্ষায়। সাজু জানে এরকম গুরুত্বপূর্ণ উত্তরটাও কল্পনা দিবে। কারণ যদি তার শাশুড়ী দেয় তাহলে গোলমাল হয়ে যাবে। 

সত্যি হলোও তাই। কল্পনা বললো ,
“ আমরা কুষ্টিয়া স্টেশনে নেমে তারপর জানতে পারি ওনারা আমাদের আত্মীয়। তার আগে তো আমরা একসাথে ছিলাম ঠিকই কিন্তু কেউ কারো পরিচয় জানতাম না। ”

সাজুর বিরক্তির সীমা রইল না। সব ঝামেলা এই মোহসীন আর কল্পনার মধ্যে সেটা এখন জলের মতো পরিষ্কার। কিন্তু জলটা নিজের আয়ত্তে নিতে হবে। এদিকে শাহরিয়ার আর অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন না। 

সাজু কল্পনার দিকে তাকিয়ে বললো , 
“ রাত গভীর হচ্ছে। যতটা ভয়ংকর মনে হচ্ছে ততটা ভয়ংকর কিন্তু নয়। ভাবতে পারেন আজ এই রাতটাই বুঝি শেষ। ”

কল্পনা বললো , আপনি শুধু শুধু আমাদের কেন সন্দেহ করছেন সেটাই বুঝতে পারছি না। 

সাজু বললো , রাত পেরিয়ে সকাল হবে। রাতের আঁধারে যা কিছু দেখা যায় না, সেটা দিনের বেলা জ্বলজ্বল করবে৷ সত্য গোপন করা সহজ নয়। অন্তত প্রফেশনাল পর্যায়ের হলে কিছুদিন ঘুরাতে পারবেন কিন্তু লুকাতে পারবেন না। 

কল্পনা কোনো জবাব দিল না। কল্পনার শাশুড়ী ঠোঁট নেড়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন৷ সাজু বললো , 
“ আপনার মোবাইলটা একটু দেখতে পারি? ” কল্পনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সাজু। 

“ কেন? ” ভ্রু কুঁচকে জবাব দেয় কল্পনা। 

“ আপনার হাতেই রাখুন। আপনার ফোন নাম্বারটা দিন শুধু। ”

কল্পনা তার নাম্বার দিল। সাজু নিজের মোবাইলে নাম্বারটা তুলে নিয়ে মোহসীন ও শাহরিয়ার যেখানে সবার সঙ্গে দাঁড়ানো সেখানে এগিয়ে গেল। সাজু গিয়ে শুনছে শাহরিয়ার বলছেন , 

“ চিন্তা করবেন না মোহসীন ভাই। আপনার দুই ভাইকে আসতে বলেন। আমরা আগামীকাল এসে আবার কথা বলবো। আপনারা থানায় গিয়ে মামলা করবেন। বাকিটা আমরা দেখবো। ”

মালেক মুন্সি কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন৷ তিনি সাজুর দিকে তাকিয়ে বললেন , 
“ আপনার সঙ্গে একটু কথা ছিল। ”

“ জ্বি অবশ্যই। ”

সামান্য দুরত্বে গিয়ে মালেক মুন্সি বললো , 
“ পুলিশের চেয়ে আপনাকেই বেশি কৌতূহলী মনে হচ্ছে। তাই আপনার কাছেই দাবিটা করছি। আপনারা আমার বোনের খুনিদের যেভাবেই হোক খুঁজে বের করুন। ”

“ আপনার বোন যখন বাড়িতে আসে তখন আপনি ও আপনার স্ত্রী তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন? ”

সাজুর প্রশ্ন শুনে মালেক মুন্সি খানিকটা লজ্জা পেলেন৷ তারপর মাথা নিচু করেই বললেন , 
“ মনের মধ্যে রাগ ছিল। বাবা তার মৃত্যুর কদিন আগে বারবার ওকে দেখতে চাইতেন। কিন্তু ওর কোনো খবর জানতাম না। ”

একটু থেমে আবার বললেন , “ বাবার জন্যই ওর প্রতি রাগ ছিল। তাই বলেছিলাম এত বছর পরে কেন এসেছে। সম্পত্তির লোভে নাকি? ”

তারা কথা বলছিল আর সেখানেই এসে দাঁড়ায় মালেক মুন্সির বাড়ির কাজের ছেলে আকবর। আকবর এসে বলে , 
“ কাকা ওনাদের নাস্তার ব্যবস্থা করছি। ”

“ আপনাদের জন্য সামান্য চা করতে বলছি। চলুন একটু চা পান করবেন। ” সাজুদের আহ্বান জানান মালেক মুন্সি। এতগুলো পুলিশ ও সাজুর বন্ধুদের জন্য সামান্য ব্যবস্থা। 

থমথমে পরিবেশ তবুও কিছু থেমে থাকে না। 
সাজুর পাশেই বসেছে মোহসীন। কিছু খাওয়ানো যাবে না এটাই স্বাভাবিক। সাজু অনুরোধ করে কফি চাইল৷ বাসায় কফি ছিল। সাজুর জন্য আলাদা করে কফি দেয়া হয়েছে। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে মোহসীনকে সাজু বললো , 

“ আপনার মোবাইলটা একটু বের করেন। যদি আপনার আপত্তি না থাকে। ”

মোহসীন মোবাইল বের করে। সাজু মোবাইলে একটা নাম্বার তুলতে বলে৷ একটু আগে কল্পনা যে নাম্বার দিয়েছে সেই নাম্বারটাই তুলতে বলে। নাম্বার তুলে ডায়েল করে কিন্তু নাম্বার সেভ করা নেই। সাজু প্রথমে ভেবেছিল হয়তো নাম্বারটা সেভ করা থাকতে পারে। কিন্তু পরে আবার ভাবে যে পরিকল্পনা করে যেটা করা হয় সেখানে সতর্কতা থাকতেই পারে। 

এরপর সাজু নিজের হাতেই মোবাইলটা নিল। তারপর মোহসীনের মোবাইলের মেসেঞ্জারে গিয়ে সেখান থেকে সার্চ করতে গিয়েই প্রথমে নজরে আসে নামটা। রিসেন্টলি সার্চ করা নামগুলো যেখানে দেখা যায় সেখানে সবার উপরে নামটাই পাওয়া গেল “ Othoy Kolpona ”। 
মোহসীন বেশ অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে রইল। 
সাজু আইডির ভিতরে গিয়ে দেখল সেখানে সব মেসেজ রিমুভ করা হয়েছে। 
‘সম্ভবত পুলিশের উপস্থিতি আর সন্দেহের কারণে দ্রুত সব রিমুভ করেছে।’ মনে মনে ভাবলো সাজু৷ 
তারপর আইডির ভেতর প্রবেশ করে সেখানে কল্পনার ছবি দেখে পুরোপুরি নিশ্চিত হলো এটা কল্পনারই আইডি। 

সাজু বিড়বিড় করে বললো,
 “ ফেসবুকেও এড আছে দেখছি। তারমানে আপনারা আগে থেকেই পরিচিত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ”

মোহসীন কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইল। সাজু আর কোনো প্রশ্ন না করে কফির কাপে সম্পুর্ন মনোযোগ দিয়ে কি যেন ভাবতে থাকে। 
সবকিছু শেষ করে রাতের মতো বিদায় নেয়ার সময় সাজু মোহসীনের কানের কাছে মুখটা নিয়ে বলে , 
“ সকালে দশটার দিকে আমি দেখা করতে আসবো৷ আমার বিশ্বাস আপনি সব সত্যিটা আমার কাছে বলবেন। ”

সাজুরা সবাই চলে গেল ঠিকই কিন্তু পরদিন সকাল বেলা সাজুর সঙ্গে মোহসীনের আর দেখা হলো না। কারণ সকালে এসআই শাহরিয়ারের কাছে খবর আসে রাতের আঁধারে মোহসীন তার মামা বাড়ির সামনে একটা কাঁঠাল গাছের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। 

↓ 
চলবে…

   
 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#7
 পর্ব- (০৫)



রাতের আরো কিছু ঘটনা। 
চারপাশ নিস্তব্ধ, শুধু দূরে কোথাও শিয়ালের হালকা ডাক শোনা যায়। সাজু কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে মোহসীনের দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারা চারিদিক থেকে আটকে যাচ্ছে। কল্পনার সঙ্গে সাজানো ষড়যন্ত্রের নক্সা অবশ্যই তাকে অসহায় করে দিয়েছে। 
সাজু তখন মালেক মুন্সির কাজের ছেলে আকবরকে ইশারায় কাছে ডেকে নিলেন। আকবর এসে সামনে দাঁড়ায়। 

“ আকবর ভাই, একটা কাগজ আর কলম এনে দেবেন? ” মৃদু হেসে বললেন সাজু।

আকবর ভেতরের ঘর থেকে দ্রুত একটা কলম আর খাতা এনে সাজুর হাতে দিল। 
সাজু খাতাটা টেবিলের ওপর রেখে মোহসীনের দিকে তাকালেন। চোখেমুখে দৃঢ়তা।

“ ঢাকায় আপনাদের বাসার পূর্ণ ঠিকানাটা এখানে লিখুন। সঙ্গে আপনার পাঁচজন পরিচিত মানুষের নাম আর মোবাইল নাম্বারও চাই। ” 

সাজুর কণ্ঠস্বর ছিল দৃঢ় এবং নির্দেশমূলক। তাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা মোহসীনের নেই। 
মোহসীন কিছুটা কাঁপা কাঁপা চোখে সাজুর দিকে তাকিয়ে রইল। কথাটা তার গলায় যেন আটকে গেল। কিছু বলতে গিয়েও সে বলতে পারল না। সাজু সময় দিচ্ছে। 

এই সময় আকবর কিছুটা সংকোচ নিয়ে সাজুর দিকে তাকিয়ে বলল, “ আর কফি খাইবেন স্যার? ”

সাজু তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, “ না, ধন্যবাদ, আকবর ভাই। আপনাকে মেলা মেলা ধন্যবাদ। কফির এত সুন্দর ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। ”

ধন্যবাদ শুনে আকবর খুশিতে যেন আকাশে উড়ল। পুলিশের একজন কাছের মানুষ তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে—এটা তার কাছে অনেক বড় ব্যাপার।
কিন্তু সাজু ততক্ষণে আবার মোহসীনের দিকে ফিরে গেলেন। এসআই শাহরিয়ার চা পর্ব শেষ করে বিদায় নেবার চেষ্টা করছেন। 
সাজু আবার বললো , 
“ আপনার অফিসের ঘনিষ্ঠ তিনজন সহকর্মীর নাম ও মোবাইল নম্বরও দিন। সঙ্গে দু’জন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নাম হলে চলবে। সময় নষ্ট করবেন না। তাড়াতাড়ি লিখুন। ”

মোহসীন অনিচ্ছাসত্ত্বেও খাতাটা হাতে নিল। এক এক করে লিখতে শুরু করল—প্রথমে নিজের বাসার ঠিকানা, তারপর পাঁচজন পরিচিত মানুষের নাম আর মোবাইল নম্বর।

সব লেখা শেষ হতেই সাজু কাগজটা ছিড়ে নিজের পকেটে রেখে দিলেন। দৃঢ় চোখে একবার চারপাশটা দেখে নিলেন। আপ্যায়ন পর্ব শেষ।
ঘরের পরিবেশে যেন আবার সেই চাপা টান টান উত্তেজনা ফিরে এলো। 
সবকিছু শেষ করে রাতের মতো বিদায় নেয়ার সময় সাজু মোহসীনের কানের কাছে মুখটা নিয়ে অভয় দিয়ে বলে , 
“ আপনি খুব ভয় পাচ্ছেন। আপনার চেহারায় এখন মায়ের মৃত্যুর বেদনার চেয়ে অন্যরকম আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে। এখনো সময় আছে মোহসীন ভাই, মিথ্যা না পেঁচিয়ে সব সত্যি তুলে ধরুন। ”

একটু থেমে আবার সাজু বললো, 
“ সকালে দশটার দিকে আমি আবার আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসবো৷ আপনি সারারাত বসে চিন্তা করুন। আমার বিশ্বাস আপনি সব সত্যিটা আমার কাছে বলবেন। ” 

মালেক মুন্সি ও সালেক মুন্সি দুজনেই সাজুদের এগিয়ে দিতে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে আসেন। মালেক মুন্সি আবারও শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে বলেন , 
“ চল্লিশ বছর পর বোনটা এলো। আমরা ওকে পোস্টমর্টেম শেষে কখন পেতে পারি? আমি আমার মা-বাবার কাছে পারিবারিক কবরস্থানে ওকে দাফন করতে চাই। ”

“ ওনার সন্তানেরা যদি রাজি হয় তাহলে করবেন সমস্যা নেই। আগামীকালই আপনারা লাশ পেয়ে যাবেন। ”

_________________

রাতের খাবারের সময়, ঘরে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। মোহসীনের বড় মামা মালেক মুন্সি মাটির থালায় ভাত মেখে খানিকটা মুখে তোলার পর হঠাৎ তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“ পুলিশের সঙ্গে যে ছেলেটা এসেছে, তাকে দেখে আমার গোয়েন্দা ধরনের কেউ মনে হচ্ছে। ”

মালেক মুন্সির স্ত্রী থেমে গেলেন। তার চোখেমুখে স্পষ্ট অস্বস্তি। পুলিশ তাকে কোনো প্রশ্ন করেনি বলে আপাতত রেহাই মিলেছে, কিন্তু কাল আবার যদি কিছু জিজ্ঞেস করে? এমনিতেই তিনি ভীতু প্রকৃতির মানুষ।

এই সময় মালেক মুন্সি আকবরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“ তোরে দেখলাম খাতা-কলম নিয়ে তার হাতে দিতে। মোহসীন সেখানে কী লিখল রে? ”

আকবর কিছুটা ইতস্তত করে বলল, 
“ আপনার ভাগ্নের ঢাকার বাসার ঠিকানা আর পরিচিত পাঁচজন মানুষের নাম-নম্বর লিখতে বলছিল। ”

মালেক মুন্সির ভ্রু কুঁচকে গেল। কৌতূহলী গলায় জিজ্ঞেস করলেন, 
“ কেন? সেগুলো দিয়ে পুলিশ কী করবে? ”

আকবর কাঁধ ঝাঁকিয়ে নির্লিপ্তভাবে উত্তর দিল। যা সত্যি তাই , 
“ আমি কী করে জানি কাকা? তবে আমার মনে হয় পুলিশ আপনার ভাগ্নেকে সন্দেহ করছে। শুনেছি, ছোট কাকার ছেলের বউয়ের সঙ্গে আপনার ভাগ্নের আগে থেকেই নাকি পরিচয় ছিল। ”

মালেক মুন্সি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। এ কথা তার একেবারেই জানা ছিল না। যদি আগে জানতেন, তবে হয়তো আরও কিছু যোগ করে বিষয়টা পরিষ্কার করতে পারতেন। 
মালেক মুন্সির বাড়িতে আগে থেকেই এক ধরনের নিঃস্তব্ধতা। ছেলেমেয়ে কেউ এখানে থাকে না। বাড়িতে আছেন শুধু তিনি এবং তার অসুস্থ স্ত্রী। বাড়ির বাইরে জমিজমা, মাঠ ও দোকানপাট দেখাশোনা এবং খবরা-খবরের জন্য রয়েছে আকবর। আর ভেতরের যাবতীয় কাজ, রান্নাবান্না সব সামলায় হনুফা।

মালেক মুন্সি রাজনৈতিক নেতা, কাজের চাপের কারণে পরিবার সামলানোর সময় তার নেই। তার স্ত্রীও প্রায় সবসময় অসুস্থ। এই অবস্থায় কাজের লোক ছাড়া গতি নেই।

মালেক মুন্সি আকবরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ হনুফা কোথায়? চলে গেছে? ”

আকবর মাথা নেড়ে বলল,
 “ না কাকা, যায়নি এখনো। আপনাদের খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেলে আমি গিয়ে দিয়ে আসব। একা একা যেতে ভয় পাচ্ছে। ”

মালেক মুন্সি সামান্য বিরক্ত হয়ে বললেন, 
“ ওরে এখানে ডাক। ”

আকবর হনুফাকে ডেকে আনল। হনুফা এসে মালেক মুন্সির সামনে দাঁড়াল। মাথা নিচু করে অপেক্ষা করছে।
মালেক মুন্সি চারপাশটা একবার দেখে নিলেন। গলা নিচু করে, যেন কেউ শুনতে না পারে এমনভাবে বললেন, 
“ মরিয়মকে আমি যে থাপ্পড় মেরেছিলাম, সেটা কাউকে বলবি না কিন্তু। ”

হনুফা মাথা নাড়িয়ে আশ্বাস দিল।

আকবর সন্দেহ মনে নিয়ে এসব ঘটনা দেখছে। তার চোখে কৌতূহল। তার মনে সন্দেহের দোলা, হয়তো মালেক মুন্সি তার বোন মরিয়মের সঙ্গে কিছু খারাপ ব্যবহার করেছেন। হতে পারে তিনি নিজেই তাকে আঘাত করেছেন। তবে সত্যি কি এমন কিছু ঘটেছে?

আকবর মনে মনে বিশ্লেষণ করতে থাকে। জমিজমা আর সম্পত্তির প্রতি লোভ মালেক মুন্সির নেই, এটা জানে সে। 
তাছাড়া কোনো কারণে বোনকে খুন করার মতো মানুষ মালেক মুন্সি নয়। কারণ দলগতভাবে সে খুন করে বোনের খুনি হয়ে নিজের জীবন কেন বিপন্ন করবেন। 
এর চেয়ে বড় সন্দেহের জায়গা হলো তার ছোট ভাই সালেক মুন্সি। কারণ সালেকের সম্পত্তির প্রতি লোভ সবসময়ই বেশি। সালেক সবসময় জুয়া খেলতে খেলতে নিজের সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছেন। এখনো সবসময়ই জুয়ার নেশা তাকে ঘিরে রেখেছে। 

“ তুমি তোমার বোনকে থাপ্পড় দিছিলা? ” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মালেকের স্ত্রী। 

“ আরে আস্তে কথা বলো৷ ” বিরক্ত হয়ে ধমক দেন মালেক মুন্সি। তারপর বলেন “ এমনভাবে বলছো যেন গ্রামসুদ্ধ সবাই জেনে যাবে। ”

সবাই চুপ করে যায়। বাহিরে তখন হনুফার স্বামীর কণ্ঠ শোনা যায়। হনুফা গিয়ে দরজা খুলে দিলে নিজের স্বামীকে দেখেন৷ বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে বলে তিনি নিজেই নিতে আসছেন। তিনি ছিলেন কুষ্টিয়ায়। মাত্রই বাড়িতে এসে এ বাড়ির ঘটনা শুনে ছুটে এসেছেন। 

হনুফা তার স্বামীর সাথে বাড়িতে চলে যায়। মালেক মুন্সির স্ত্রী আড়চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কিছু বলার সাহস হয় না। 

___________________

রাত গভীর। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুইটা। 
বাইরে শীতল বাতাস বইছে, যেন শূন্যতার শব্দ নিয়ে পৃথিবী নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মোহসীন জানালার সামনে দাঁড়িয়ে, নিঃসীম অন্ধকারে চোখ রাখছে। ঝিঁঝিঁ পোকাদের একঘেয়ে ডাক আর দূরে কোথাও ভেসে আসা কুকুরের কণ্ঠস্বর রাতের নিরবতাকে ভেঙে দিচ্ছে। কিন্তু মোহসীনের মনে চলছে এক অশান্ত ঝড়। মায়ের মৃত্যু তাকে যেন পঙ্গু করে দিয়েছে। বিবেকের চক্ষু এখন বারবার তাকে তাড়া করছে৷ 

সে জানালার শীতল গ্লাসে হাত রেখে নিজের অচেনা এই নানাবাড়ির ভয়ংকর অন্ধকার দেখছে। নিজের চোখে নিজেকে অপরিচিত মনে হয়। তার মাথায় মায়ের সেই হাসিমাখা মুখটা ভেসে ওঠে, আর সাথে সাথেই হৃদয়ের গভীরে কেমন যেন একটা ধারালো শূন্যতা ফুটে ওঠে। 
কল্পনায় ভেসে ওঠে সেই মুহূর্তটা, যখন তার মায়ের শেষ নিশ্বাস চলছে। নিশ্চয়ই মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মা তার নাম ধরে ডাকছিল। 

তার ভেতরে যেন শিকড় গেঁড়ে বসেছে এক প্রশ্ন—তাহলে কি মায়ের মৃত্যুর জন্য সে-ই দায়ী? একের পর এক স্মৃতি যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। মা বলেছিলেন, "তুই আমার গর্ব।" কিন্তু সেই গর্ব তো এখন তার কাছে বোঝার মতো ভারী মনে হচ্ছে।

মোহসীনের বুকের ভেতরটা ছটফট করতে থাকে। তার মনে হয় যেন মায়ের মুখটা বারবার তার দিকে ঘুরে তাকাচ্ছে, কিন্তু সেই চোখের গভীর ভালোবাসায়ও এখন কোথাও যেন চাপা অভিযোগ লুকিয়ে আছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, তার শীতল নিঃশ্বাস কুয়াশার মতো জানালার কাচে ঘনীভূত হয়। সে কাচের ওপাশে আঁধারের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, "মা, তুমি কি সত্যিই আমায় ক্ষমা করেছ?"

ঠিক তখনই দরজায় কড়া নড়ে। রাতের নীরবতা চূর্ণ হয়ে যায় সেই শব্দে। মোহসীনের দেহটা এক মুহূর্তে জমে যায়, যেন সেই কড়া নাড়ার শব্দটা তার ভেতরের অপরাধবোধকে সামনে নিয়ে আসতে চায়। সে পেছন ফিরে দরজার দিকে তাকায়। মনে হয়, এই অন্ধকার রাতের কোনো এক অদৃশ্য বিচারক তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কল্পনা। মোহসীন মাথা নিচু করে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কল্পনা ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চেয়ে বলল,

“একটু ভেতরে আসি?”
“হ্যাঁ, আসো।”

দরজা ছেড়ে ভেতরে আসে মোহসীন। কল্পনাও ভেতরে এসে খাটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। কেটে যায় বেশ কিছু সময়। গভীর রাতের নিস্তব্ধতায় নিশ্বাসের শব্দও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

নীরবতা ভেঙে কল্পনা বলল,
“এমনটা হবে, আমি সত্যিই ভাবিনি। আমাকে দোষ দেবেন না। হয়তো এটাই আমাদের ভাগ্যে লেখা ছিল।”

মোহসীন এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ মনে হচ্ছে। আমি আমার মাকে সবকিছু জানালেই পারতাম। কীসের বিবেকে এমন জঘন্য কাজটা করতে গেলাম?”

কল্পনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“কিন্তু ফুফুকে খুন করল কে? আমার মাথায় কিছুই কাজ করছে না।”

মোহসীন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে গভীর সন্দেহ, যা পরিষ্কারভাবে কল্পনার চোখ এড়িয়ে যায় না। তার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে কল্পনা বলল,
“আমাকে সন্দেহ করবেন না। আমি তাকে কিছু বলিনি। সত্যিই সেরকম কিছু আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি এতটা সাহসী নই।”

মোহসীন কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। নীরবতা আরও ভারী হয়ে ওঠে। নিশ্বাসের শব্দ যেন আরও জোরালো শোনা যায়। তারপর হঠাৎ শরীর টানটান করে সে বলে উঠল,
“কাল সকালে আমি সাজু ভাইকে সব সত্যিটা বলে দেব। তিনি সকাল দশটার দিকে আসার কথা বলেছেন। আমার যা হবার হবে, কিন্তু আমি আর কিছু লুকাব না।”

কল্পনা আৎকে ওঠে। মোহসীন সত্যি বলতে চাইছে কেন? যদি সত্যিটা বলে দেয়, তবে তো বিপদ আরও বাড়বে। এমনিতেই সাজু ভাই নামের অদ্ভুত মানুষটা তাদের সন্দেহ করছে। আর যদি তারা নিজেদের গোপন প্ল্যান ফাঁস করে দেয়, তবে তো সন্দেহ আরও গভীর হবে।

মোহসীন বলে,
“আমি মায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছি, এটা তো সত্যি। কিন্তু সবাই আমাকে খুনি ভাবুক, এটা চাই না। আমি সত্যিটা বললে আর নিজেকে অপরাধী মনে হবে না। তারপর তারা নিশ্চয়ই আমাকে সন্দেহ করা বাদ দিয়ে আসল খুনিদের খুঁজে বের করবে।”

মোহসীনের কথায় একমত হতে পারে না কল্পনা। সে মনে মনে বিরক্ত হয়, কিন্তু নিজের বিরক্তি মুখে প্রকাশ করে না। বলে,
“যদি সেটাই ভালো মনে করেন, তাহলে বলে দিন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এতে বিপদ বাড়বে।”

“বাড়ুক সমস্যা নেই। সকালে ভাই, ভাবি—সবাই আসবেন। তাদের সামনেই সব স্বীকার করব। তারপর যা হবার হবে।”

মোহসীন দরজার দিকে পা বাড়ায়। কল্পনা পিছন থেকে বলে,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
“বাইরে যাব। বাড়িতে দমবন্ধ লাগছে। এই বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে মা খুন হয়েছেন। কেন জানি খুব দমবন্ধ লাগছে আমার। আমি বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটব।”

মোহসীন বের হয়ে যায়। একা রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে কল্পনা। বিড়বিড় করে বলে,
“না, এটা সম্ভব নয়। এমন কিছু জানাজানি হয়ে গেলে গ্রামের মানুষ সবার আগে ছি ছি করবে। কেউ বিচার করবে না। সত্যি-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করেই মানুষের অপবাদ শুরু হয়ে যাবে।”

রুম থেকে বের হতে হতে সে বলে,
“যেভাবেই হোক, ওকে নিষেধ করতে হবে।”

ভাবতে ভাবতে কল্পনা দোতলা থেকে নিচে নেমে যায়। আর তখনই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সালেক মুন্সির স্ত্রী।

সালেক মুন্সি ঘুমাচ্ছিলেন। বউয়ের ডাকে ধড়ফড় করে উঠে বসলেন। বোনের শোকে কান্নাকাটি করে সবেমাত্র চোখ বন্ধ হয়েছিল। 

“ কি হয়েছে? ” চোখ লাল টকটকে অবস্থায় জিজ্ঞেস করে সালেক মুন্সি। 

“ আমার মনে হয় কল্পনা আর তোমার ভাগ্নের মধ্যে কিছু একটা সমস্যা চলছে। ওরা দুজনই এইমাত্র রুমের মধ্যে কথা বলছিল। তারপর আবার বাইরে চলে গেল। ”

“ কি বলো তুমি? বাইরে কেন যাবে? ”

“ আমি কি জানি। তুমি একটু যাও তো। বাড়িতে একটা খুন হয়েছে, আমার তো গা ছমছম করে। দেখো ওরা কোথায় গিয়ে কি করছে। ”

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সালেক মুন্সি বিছানা থেকে নামেন। তারপর একটা টিশার্ট টেনে গায়ে জড়িয়ে নেন। জুতা পায়ে দিয়ে দরজা খুলে বাহির হয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখেন কল্পনা নিচ থেকে উঠে আসছে। কল্পনা শশুরকে দেখে থমকে যায়। 

“ কোথায় গেছিলে বউমা? ”

“ নিচে। ”

“ মোহসীন কোথায়? ”

“ জানি না বাবা, তাকে খুঁজতেই গেছিলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেছে খুঁজে পাচ্ছি না। একা ভয় লাগছে তাই চলে আসছি। ”

আর কোনো কথা না বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেল কল্পনা। সালেক মুন্সি ও তার স্ত্রী দুজনেই কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। 
সারারাত অপেক্ষা করেও মোহসীনকে আর ঘরে ফিরতে দেখলো না কেউ। কল্পনা নিজের ঘরের মধ্যে ফজরের আগ পর্যন্ত জেগে ছিল। সে-ও ঘুমিয়ে যায় নিজের অজান্তেই। 

_____________________

সকাল বেলা সবার আগে মোহসীনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় হনুফা। মালেক মুন্সির ঘরের কাজের মেয়ে হনুফা ভোরবেলায় কাজ করতে আসে। সকালের নাস্তা বানানো লাগে। বাড়ির দক্ষিণ দিকের বাগান থেকে শটকার্টে প্রবেশ করা যায় বলে বাগানের ভেতর থেকে আসার সময় সে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত মোহসীনের দেহটা দেখে চিৎকার দিয়ে বাড়ির সবাইকে ডাকে। 

বাড়ি ভর্তি আবারও মানুষজনের গিজগিজ। আবার সাজু ভাই ও তার বন্ধুরা সবাই এবং এসআই শাহরিয়ার তার টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত। চারিদিকে তন্নতন্ন করে সবকিছু খোঁজা হয়। বাড়ির কেউ কিছু জানে না। সকালের আগ পর্যন্ত যা যা হয়েছে সবাই সেটাই বলে। 
শুধু এড়িয়ে যায় কল্পনা। এড়িয়ে যায় সালেক মুন্সি ও তার স্ত্রী দুজনেই। 

সাজু চারিদিকে হাঁটছিল। কাঁঠাল গাছের একটু দুরে সে গিয়ে খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর নিচু হয়ে সবকিছু লক্ষ্য করেন৷ সাজুর ঠোটের কোনায় রহস্য সমাধানের অদ্ভুত হাসি দেখতে পাওয়া যায়। 
সাজুকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভিড়ের ভেতর থেকে দ্রুত সাজুর কাছে এগিয়ে আসে কল্পনা। কাছাকাছি এসেই কল্পনা বলে , 

“ আপনার সঙ্গে একটু জরুরি কথা বলতে চাই। আপনি একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন সাজু ভাই? প্লিজ সাইডে চলুন। ”

সাজু কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে। সেখানেই এগিয়ে আসে এসআই শাহরিয়ার। সাজুর দিকে তাকিয়ে বলে , 
“ কিছু পেলে নাকি? ”

সাজু কল্পনার চোখে চোখ রেখে বললো , 
“ কিছু নয়, সবকিছুই পেয়েছি। ”

তারপর সেভাবেই কল্পনার দিকে তাকিয়েই সাজু পরবর্তী কথাটা কল্পনাকে উদ্দেশ্য করে বলে , 
“ আপনি ঘাবড়াচ্ছেন কেন? মোহসীনকে মারার পর তার এতবড় দেহটা আপনি মেয়ে মানুষ হয়ে একা তো আর গাছে ঝুলাতে পারবেন না। নিশ্চয়ই এখানে পুরুষ মানুষের দরকার হয়েছে। আপনার শশুর কোথায়? চলুন আপনার শশুরের সঙ্গে কথা বলা যাক। ”
 
↓ 
↓ 
চলবে… 

 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#8
Lightbulb 
পর্ব- ০৬ (শেষ পর্ব) 



সাজু তাকিয়ে আছে। কল্পনা নিজেকে প্রস্তুত করে আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করে। বিভিন্ন প্রশ্ন আর নিজ থেকে আগ্রহে সবটা সাজিয়ে লিখলে যা হয় সেটা একসঙ্গে তুলে দিলাম। 

কল্পনা বললো , 
আড়াই মাস আগে মোহসীন ভাইয়ের সঙ্গে আমি ও আমার শশুর শাশুড়ীর প্রথম পরিচয় হয়। তিনি নিজেই এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। যদিও পরিচয় হবার পরে জানতে পারি যে তিনি তার মায়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়েই নিজের নানাবাড়িতে এসেছেন। এখানে আসার কারণ হচ্ছে তার মায়ের নামে কোনো সম্পত্তি আছে কিনা সেই বিষয় খোঁজখবর করা। কারণ ওনার স্বপ্ন ছিল উনি আমেরিকায় যাবেন। কিন্তু সেখানে যেতে হলে প্রচুর টাকাপয়সার দরকার। নিজের ভাইয়েরা যে যর মতো প্রতিষ্ঠিত হলেও এতো টাকা তাকে কেউ দিবে না। কিন্তু মোহসীন ভাই তো যেভাবেই হোক আমেরিকায় যাবেন কারণ ওনার ভালোবাসার মানুষ সেখানে। 

মোহসীন ভাইয়ের কোনো এক বন্ধু তাকে হঠাৎ বুদ্ধি দেয় নিজের নানাবাড়িতে মায়ের নামে কোনো সম্পত্তি আছে কি-না। মোহসীন ভাই তো জানেন না। তাই তিনি কৌশলে তার মায়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন। আড়াই মাস আগে মোহসীন ভাই যখন আসেন সেদিন বড় কাকারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। সুতরাং তারা এসবের কিছুই জানেন না৷ 
নিজের মায়ের নামে এতো জমিজমার কথা শুনে মোহসীন ভাই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তারপর তার নিজের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। 

শুনতে খারাপ লাগলেও আমার শশুর জমিজমা এসবের প্রতি বেশ লোভী মানুষ। তাছাড়া ওনার জুয়ার নেশার কারণে নিজের জমিজমা সবকিছু তিনি বিক্রি করেছেন। সুতরাং মোহসীন যখন নিজের টাকার কথা প্রকাশ করে তখন আমার শশুর তাকে শর্ত দিয়ে বলে তাকেও কিছু জমির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মোহসীন ভাই রাজি হন৷ 

মোহসীন ভাইর সঙ্গে তখনই আমার ফেসবুকে এড হওয়া এবং মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান করা হয়। এরপর তিনি চলে গেলেন। যেহেতু সব সম্পত্তি তার মায়ের নামে সুতরাং তাকেই তো দরকার আগে। জমি বিক্রি করে টাকা নিতে হলে জমি রেজিস্ট্রির সময় তো তার মা'কে দরকার হবে। তাই নিজের মা'কে রাজি করানোর জন্য তিনি সময় নিলেন। 

কিন্তু এখান থেকে যাবার পরপরই তার মা অসুস্থ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন। তাই সহজেই নিজের মনের কথা মায়ের কাছে প্রকাশ করতে পারছিলেন না। 
যেহেতু মায়ের নামে জমি তাই সেই জমিতে তাদের সব ভাইবোনের অংশ আছে স্বাভাবিক। 
কিন্তু জমিজমা বিক্রি করে আনুমানিক যে টাকা পাওয়া যাবে তার পুরোটাই মোহসীন ভাইয়ের দরকার হবে। সুতরাং নিজের ভাইবোনদের কাছে তিনি সবকিছু গোপন করার প্ল্যান করেন। 

সপ্তাহ খানিক আগে আমি আর আমার শাশুড়ী মা ঢাকায় বেড়াতে গেলাম। আমার শাশুড়ীর ভাইয়ের বাসায় ছিলাম। মোহসীন ভাইকে যখন জানালাম তখন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেন। পরপর দুদিন আমাদের দেখা হয়। 
আর তার একদিন পরই মোহসীন ভাই বলেন তার মা নিজেই নাকি গ্রামে যেতে চাচ্ছেন। এমন খবর শুনে তিনি আনন্দে বিমোহিত হয়ে যান। তিনি আমাকে বলেন, আপাতত মা'কে কিছু জানাবেন না৷ যেহেতু মা নিজেই যেতে চাচ্ছেন তাই সেখানে গিয়েই সবকিছু বলার নতুন করে পরিকল্পনা সাজায় মোহসীন ভাই। 
এরপর চারটা ট্রেনের টিকিট কাছাকাছি করা হয়। আমি আমার শাশুড়ি আর মোহসীন ভাই সবকিছু জানলেও তার মা কিছু জানতেন না। সেজন্যই পরিকল্পনা করে অচেনা সেজে স্টেশনে আমরা ছবি তুলে প্রথমে পরিচিত হবার নাটক করি। তারপর সিটের সামনে গিয়ে সবকিছু কাকতালীয় সেরকম অভিনয় করে বসি। কিন্তু পাছে আবার তার মা সন্দেহ করে সেজন্য তেমন কথাবার্তা বলি না। আমাদের সবকিছুই প্ল্যান করে করা হচ্ছিল। ট্রেনে মুখোমুখি বসার পরও আমরা দুজন মেসেঞ্জারে কথা বলছিলাম। 
স্টেশনে নেমে সেখানে দাঁড়িয়ে ঠাকুরবাড়িতে যাবার উপায় জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে প্রথম নিজেদের আসল পরিচয় প্রকাশ হবে এটাও তখন মোহসীন ভাইই বলেছিল মেসেঞ্জারে। 

তারপর সেটাই করা হয়। আমরা স্টেশনে নেমে তারপর নিজেরা পরিচিত হচ্ছি সেরকম ভাব করে পুরনো আত্মীয়তার সূত্রটা বের করি। আর তখন একসঙ্গে বাড়িতে আসি। 

মোহসীন ভাই বলেছিলেন যেহেতু তার মা নিজ হতে এসেছেন তাই সবকিছু নতুন করে প্ল্যান করা হবে। সুতরাং আমরা চুপচাপ ছিলাম। বাড়ি এসে আমার শশুরের বড়ভাই মানে বড়কাকা রাগারাগি করেন। ফুফু তখন চলে যেতে চান কিন্তু আমি আমার শশুর শাশুড়ী সবাই তাদের রাখার জন্য জোরাজুরি করি। কারণ আমরা তো জানি আসল কাজ তখনও বাকি। 
মোহসীন ভাই ঢাকা থেকে আসার সময়ই তার ভাইদের কাছে মিথ্যা বলে আসেন৷ কারণ তারা যদি জানেন তাহলে কোনো সমস্যা হতে পারে। 

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা পারিবারিক কবরস্থানে গেলাম। সেখানে গিয়ে কথাবার্তা বলতে বলতে প্রথম মোহসীন ভাই তার মনের কথা জানান। প্রথমে জমিজমার কথা শুনে তারপর সেগুলো বিক্রি করে নিজের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেন৷ 
কিন্তু তার প্রস্তাবে রাজি হয়নি তার মা। তিনি খুব রাগারাগি করেন৷ কারণ জমিজমার প্রতি তার আকর্ষণ নাই। তাছাড়া নিজের সব সন্তানের প্রতি তিনি সমানভাবে সবকিছু করবেন। 
মোহসীন ভাই বলেছিলেন যে তার ভাই দুজনেই তো ভালো আছে। তিনি আমেরিকায় গিয়ে টাকা ইনকাম করে আস্তে আস্তে ভাইদের ও বোনের সব ভাগের টাকা ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু যেভাবেই হোক এখন অন্তত তাকে সবগুলো টাকা যেন দেয়া হয়। 
মরিয়ম ফুফু রাজি হচ্ছিল না। তারপর মোহসীন ভাই ও আমার শশুর বাজারে চলে গেলেন। সন্ধ্যা হবার কিছুক্ষণ আগে আমার শাশুড়ির সঙ্গে মরিয়ম ফুফু রাগারাগি করেন। তিনি সবকিছু জানতে পেরে খুব বিরক্ত হয়ে যান৷ তার ধারণা আমার স্বামী যখন তার কাছে বাজারের পাশের জমিটার জন্য গিয়ে পায়নি তখন থেকেই মনে হয় আমরা এসব প্ল্যান করেছি। 
এসব নিয়ে তিনি আমার শাশুড়ির সঙ্গে একটু রাগারাগি করেন। সেখানেই আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী বা দায়ী নয় এসব প্রসঙ্গ আসে। এবং সেটাই বড়কাকার বাসার কাজের মহিলা হনুফা কাকি শুনতে পায়। 
আমি হনুফা কাকিকে দেখে ফুফুকে নিয়ে ছাদে চলে যাই। সেখানে গিয়ে তাকে শান্ত হতে বলি। তিনি আমার কথায় একটু নরম হন। ঢাকায় নিজের বড় ছেলেদের সাথে কথা বলতে চান। আমি মাগরিবের পরে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবার আশ্বাস দিলাম। তারপর রান্নার জন্য আমি নিচে নেমে আসি। ফুফু বলেন তিনি নাকি আরো কিছুক্ষণ থাকবেন। কারণ ছাদে থাকতে তার ভালো লাগছিলো। 
আমিও আর জোরাজোরি না করে তাকে রেখেই নিচে নেমে আসি। নিচে এসে রান্না করতে করতে মোহসীন ভাইকে কল দিয়ে বলি যে তার মা তার ভাইদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তিনি আমাকে বলেন যে তিনি আসার আগ পর্যন্ত আমি যেন কথা না বলাই। 

মাগরিবের আজান হলে আমি অজু করে নামাজ পড়ি। ভেবেছিলাম ফুফু নিশ্চয়ই এসেছে। কিন্তু নামাজের পড়ে আমার শাশুড়ী এসে জানান যে ফুফু ঘরে নাই। আমরা চারিদিকে খুঁজে তারপর আমি ছাদে গিয়ে কোথাও তাকে দেখতে পেলাম না। নিচে এসে শাশুড়ির কাছে বলি। আবারও দুজন মিলে ছাদে গিয়ে ভালো করে খুঁজি। তারপর কি মনে করে যেন চিলেকোঠার ঘরে হঠাৎ উঁকি দিয়ে আমরা ফুফুর মরদেহ দেখতে পেলাম। তারপর কল দিয়ে আমার শশুরকে জানাই। তারা দুজন ছুটে আসেন। সবকিছুই দেখেন। 
এতকিছুর মধ্যেও মোহসীন ভাইর ব্রেইন ভালো কাজ করে। তিনি আমাকে বলেন আমাদের পূর্ব পরিচয় এবং জমিজমার পরিকল্পনা কেউ যেন জানতে না পারে। কারণ সেরকম কিছু জানলে সবাই আমাদের সন্দের করবে। সুতরাং আমি ও আমার শশুর শাশুড়ী সাবধান হয়ে গেলাম। 

তারপর থেকে তো আপনারা সবকিছু জানেন। আপনারা আসেন, জিজ্ঞেসাবাদ করেন। যা যা জিজ্ঞেস করেন সবকিছুই বলেছি। হ্যাঁ এটা সত্যি যে আমরা কথা লুকিয়েছি কিন্তু বিশ্বাস করেন আমরা কেউ খুনের সঙ্গে জড়িত নয়। নিজেরা ভয় পেয়ে এসব গোপন করেছি৷ 

কল্পনার এসব বক্তব্য শেষ হতেই সাজু চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। তার দৃষ্টি তখন বাড়ির উঠোনে মোহসীনের লাশের দিকে। 
কল্পনা বললো , 
মোহসীন ভাই এগুলো সবকিছুই আজকে আপনার সঙ্গে স্বীকার করতে চেয়েছিলেন। কাল গভীর রাতে তার সাথে আমার কথা হয়। তিনি নিজেকে অপরাধী ভাবেন। মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী ভাবেন নিজেকে। অবশ্য মাঝখানে তিনি আমাকেও সন্দেহ করেন রাতে। তার হয়তো ধারণা হয় যে আমি সন্ধ্যা বেলা ছাদে গিয়ে নিজের স্বামীর সেই মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারি। কিন্তু বিশ্বাস করেন সেরকম কিছু ঘটেনি। আমি ততটা সাহসী নয়। তাছাড়া আমার স্বামীকে আল্লাহ নিয়ে গেছেন। যতই যা করি তাকে তো আর ফেরত পাবো না। 

এরপর মোহসীন ভাই রাতে বাসা থেকে বের হয়ে যান। তার দমবন্ধ লাগছিল৷ তিনি বারবার বলেন সকালে তিনি আপনার কাছে সবকিছু বলবে। এটা বলে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। আমি পিছনে পিছনে নেমেছিলাম কিন্তু পাইনি তাকে৷ 

কাছাকাছি অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। এসআই শাহরিয়ার বললো , 
“ তাহলে মোহসীনকে সকালের আগে আপনারা আর দেখেন নাই? ”
“ নাহ। ” জবাব দেয় কল্পনা। 

শাহরিয়ার বললো, “ মোহসীন কেন সুইসাইড করলো বুঝতে পারছি না। সে যদি তার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী না হয় তাহলে তো নিজেকে নিজে শেষ করবে না। মায়ের হত্যাকারী হলে নাহয় অপরাধবোধ অনুভব করে বা ডিপ্রেশনে কাজটা করতে পারতো। ” 

তার প্রশ্নের জবাবে সবাই তাকিয়ে রইল। মালেক মুন্সি ও সালেক মুন্সি তারাও দাঁড়িয়ে আছে। সাজু বললো , 
“ মোহসীন আত্মহত্যা করেনি ভাইয়া। ”

মোহসীনের বিষয় এরকম কথা শুনে সবাই সাজুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। 

“ কি বলছো সাজু? এটা কি তাহলে মার্ডার? ”

“ হ্যাঁ ভাই। ”

“ কিন্তু কীভাবে? ”

সাজু তার পকেট থেকে একটা ব্রেসলেট বের করে সেটা চোখের সামনে তুলে ধরেন। কিছুক্ষণ আগে কাঁঠাল গাছের একটু সামনের স্থানেই এটা সাজু ভাই পেয়েছে। যেখানের পরিবেশ দেখে আরো বোঝা যাচ্ছিল যে নিশ্চয়ই সেখানে কোনো ধস্তাধস্তি হয়েছে। আর তার সাইডেই পড়েছিল এই ব্রেসলেট৷ 
সাজু চোখের ইশারায় মালেক মুন্সির কাজের ছেলে আকবরকে ডেকে আনেন৷ আকবর কাছে এসে দাঁড়ায়। সাজু তাকে বলে , 

“ গতকাল রাতে কফির দেওয়ার সময় এই সুন্দর ব্রেসলেটটা আপনার হাতে ছিল। দেখুন তো এটা চিনতে পারেন কি-না। ”

আকবর কাচুমাচু ভঙ্গিতে এদিক সেদিক তাকায়। কিন্তু তার দৃষ্টি বারবার মালেক মুন্সির দিকে। যেন সে নিজেকে রক্ষা করার জন্য মনিবের সাহায্য চাইছে। হলোও তাই। 
মালেক মুন্সি বলেন , 

“ সকালে পড়েছে মনে হয়। কি যেন কাজে আসছিল তখন পড়েছে। ”

সাজু সামান্য হাসে৷ আকবর নিজেই কথার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে ঠিকই কিন্তু কথার ধরনে সবাই বুঝতে পারে কথা মিথ্যা। শাহরিয়ার বললো, 
“ তাহলে তো সকালে মোহসীনের লাশ ওনার দেখার কথা। ”

মালেক মুন্সি চুপ করে রইলেন। 
সাজু বললো , 

“ আকবর ভাই, পানি যত ঘোলা করতে চাইবেন ততই ঘোলা হবে। কিন্তু একসময় আপনাকে ক্লান্ত হতেই হবে। আর তখন আবার পানি সেই আগের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। একটা খুনের দায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আপনি আবার আরেকটা খুন করেছেন। ”

মালেক মুন্সি বলেন , “ কি যা বলেন। ও কেন খুন করবে? ”

সাজু বলে, সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করেন। 
আকবর ভাই, আপনি কিন্তু পুরোপুরি ধরা পড়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। কারণ মোহসীনের শরীরে অবশ্যই আপনার হাতের ছাপ পাওয়া যাবে। কারণ লাশ পোস্টমর্টেম করা হবে। এখনই যদি সবকিছু সবার সামনে স্বীকার করেন তবে শাস্তি কিছু কম হতে পারে। 

আকবর সহজসরল মানুষ। সে দৌড়ে এসআই শাহরিয়ারের পা চেপে ধরে বলে , 
“ স্যার আমারে মাফ করে দেন। আমি আমার ইচ্ছায় কিছু করিনি। আমার দোষ নাই। ”

উপস্থিত সবাই আতঙ্কিত হয়ে যায়। আকবর এতো সহজে স্বীকার করবে সাজুও কল্পনা করতে পারে নাই। গ্রামের সহজসরল মানুষ হলে করতে পারে স্বাভাবিক। কিন্তু সে বলছে নিজে কিছু করে নাই। তাহলে কার কারণে করেছে? সাজু তাকে দাঁড়াতে বলে। 

“ তাহলে কেন করেছেন? কার হুকুমে? ”

“ কাকার হুকুমে। ” হাতের ইশারায় মালেক মুন্সিকে দেখায় আকবর। আবারো সবাই নড়েচড়ে দাঁড়ায়। 

মালেক রাগে গজগজ করে। 
“ কি ফালতু বকবক করিস? ”

আকবর বলে “ স্যার ওনার বোনকেও উনিই খুন করছে। হনুফা সাক্ষী, আপনারা হনুফার কাছে জিজ্ঞেস করেন। ’’

“ হনুফাকে কেন জিজ্ঞেস করবে? ” চিৎকার করতে শুরু করে মালেক মুন্সি। তাকে হাত দিয়ে চেপে থামিয়ে দেয় এসআই শাহরিয়ার। 

হনুফাকে সামনে আনা হয়। সে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। সাজু তাকে নির্ভয়ে সবকিছু বলতে বলে। 
হনুফা যা জানায় তা সাজিয়ে লিখে দিলে যেমন দাড়ায় সেটা নিম্নরূপ: 

বছর খানিক ধরে মালেক মুন্সির স্ত্রী অসুস্থ। তাই নিজের যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য তিনি বারবার হনুফাকে ব্যবহার করেন। হনুফা কাজ করে, গরীব মানুষ। টাকাপয়সার লোভে এবং ঝামেলা এড়াতে সবসময় নিজের সতীত্ব বিলিয়ে দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা বেলা কাপড় তোলার সময় সে যখন মরিয়ম, কল্পনা ও তার শাশুড়ীর কথাবার্তা শুনছিল তখন মালেক মুন্সি তাকে ডাকে। হনুফা কাছে যেতেই তিনি শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেয়। বেশিরভাগ সময় তারা চিলেকোঠার ঘরে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতো৷ 
তাই সেই কারণেই সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে নিজেরা যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য চিলেকোঠার ঘরে যায়। ছাদ তারা নিজেরা বন্ধ করে দেয়। যেন কেউ তখন ছাদে যেতে না পারে। কিন্তু আগে থেকেই যে চিলেকোঠার পিছনের দিকে মালেক মুন্সির বোন মরিয়ম আছে সেটা দুজনের কেউ জানতেন না। 
তাদের কাজের মধ্যে হনুফা হালকা শব্দ করে। দুজনেই তো জানতো কেউ ছাদে নেই তাই তেমন কথা বলতে সমস্যা হবে না। শারীরিক সম্পর্কের সময় যেসব কথাবার্তা হয় সেরকমই কথা হচ্ছিল। মাঝখানে নিজের কিছু চাহিদার কথাও প্রকাশ করে হনুফা। 
বাহিরে মাগরিবের আজান হয়। তাদের কাজ শেষ হতেই মালেক মুন্সি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে। হনুফা তখনও শাড়ি ব্লাউজ ভালো করে পরতে পারে নাই। দরজা খুলেই সামনে দেখা যায় মালেক মুন্সি মর বোন মরিয়ম দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ভিতরে হনুফাকে দেখতে পান। বুঝতে পারেন ভিতরে কি চলছিল। 
নিজের ভাইকে তখন চরিত্রহীন বলে বারবার বকাবকি করে মরিয়ম। মালেক মুন্সি নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে আর তৎক্ষনাৎ বিবেচনাবোধ হারিয়ে নিজের বোনকে নিজেই সেখানে খুন করেন। 
তারপর দু'জনেই নিচে নেমে আসে এবং এমন ভাবে থাকে যেন কিছু জানেন না তারা। 

হনুফার মুখে সবকিছু শুনে সাজু আর কিছু বলে না। এসআই শাহরিয়ার মালেক মুন্সির দিকে তাকিয়ে বলে , 
“ ছি ছি ছি, এরকম জঘন্য কাজ করে আবার সেই কারণে দু দুটো খুন করে দিলেন? ”

মালেক মুন্সি রাজনৈতিক মানুষ। কিন্তু অপরাধ তো সবার জন্য সমান। হনুফা সবকিছু স্বীকার করার পরে আর নিজেকে নির্দোষ দাবি করার হাস্যকর কথা বললেন না। 
সবকিছু স্বীকার করেন। এমনকি রাতে তিনি মোহসীনকে নিচে নামতে দেখে আকবরকে সঙ্গে নিয়ে তাকেও খুন করার প্ল্যান করেন। কারণ মালেক মুন্সি দেখেছেন যে পুলিশ বারবার তার ভাগ্নে মোহসীনকে সন্দেহ করছে। সুতরাং যদি মোহসীনকে সুইসাইড করার মতো সাজানো যায় তাহলে সবাই ভাববে যে নিজের মাকে খুনের প্ল্যান পরিকল্পনার জন্য মোহসীন মরেছে। আর আকবর ও হনুফা তার বাসার দীর্ঘদিনের কাজের মানুষ। তারা কাউকে বলবে না এটাই ছিল তার বিশ্বাস। 

এসআই শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে সাজু বললো , “ বাকিটা আপনার হাতে ভাই। আমি এখনো নাস্তা করিনি। আপনি কাজ করেন। আমরা চলে যাচ্ছি। ”

বিদায় নিয়ে সাজু ভাই ও তার বন্ধুরা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। একদম রাস্তায় ওঠার আগে আগে পিছন থেকে কল্পনার ডাক আসে। কল্পনার দিকে তাকিয়ে সাজু বলে , 

“ কিছু বলবেন? ”
“ নাহ, ধন্যবাদ দিতে আসছি। এভাবে যদি সব না বে হতো তাহলে আমাদের আরো ঝামেলা পোহাতে হতো। ” 

সাজু মুচকি হেসে বলে “ আপনাদের লুকানো কথাগুলো বলার জন্য আপনাকেও মেলা মেলা ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবসময়। ”

সমাপ্ত। 

কেমন হয়েছে জানাবেন। দু একদিনের মধ্যেই আবার সাজু ভাই সিরিজের নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো । 

গল্পের শেষ পর্ব, অবশ্যই মতামত দিবেন। 

মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)