সাল ১৯৯৮
নাজিমুদ্দিন খান বরিশালের এমপি তার নামটা ও সততায় বরিশাল বাসির কাছে সে একজন হিরো | নাজিমুদ্দিন খান রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও তিনি অত্যন্ত সৎ সরল মনের মানুষ | তিনি যেমন সরল মনের মানুষ আবার সময় আসলে ঠিক ততটা কঠিন হয়ে জান |
যুবক বয়সে নাজিম উদ্দিন খান ছিলেন প্রেসিডেন্টের বুদ্ধিদাতা যদিও এই খবরটা নাজিমুদ্দিন খানের পরিবার জানে না |
তবে বর্তমানে তিনি বরিশালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগত আছেন | বড় ছেলে সরকারি ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা এবং ছোট ছেলে নেভি কর্নেল পদে নিযুক্ত আছে | কিছুদিন আগে তার একমাত্র প্রিয়তমা স্ত্রী রেখা বেগম তা কিন্তু নিয়ে দেখে ওপারে চলে গিয়েছেন | এ বিষয়ে নিয়ে তার একটু মন খারাপ | অনেক মন খারাপ নিয়ে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে এসেছেন |
দুপুর ১২ টায় তার ছোট ছেলে তাকে ফোন করে | ফোনটা রাখা মাত্র উচ্চস্বরে তার পিওন কে ডাকতে থাকে | পিয়ন ভয় পেয়ে নাজিমুদ্দিন খানের হাজির হন | দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ভাবতে থাকে এই বুঝি বড় সাহেব আজকে তাকে কোন বিষয়ে ঝাড়ি দিবেন সে ভাবতে থাকে ভুলে গিয়েছে |
নাজিম উদ্দিন খান বলে ওঠে তাড়াতাড়ি মিষ্টি অর্ডার দাও পুরো অফিসে মিষ্টি বিতরণ কর সবাইকে মিষ্টি খাওয়াও | পিয়ন কোন কথা না বলে চুপচাপ বলে আমি এখনই মিষ্টি ব্যবস্থা করছি |
নাজিম উদ্দিন খান এর যেন আজকে অনেক বড় খুশির দিন | কারণ তার বংশ আলো করে এসেছে তার একমাত্র নাতি আকাশ খান |
আকাশ হলেন নাজিমুদ্দিন এর একমাত্র নাতি সদ্য জন্ম নেওয়া |নাজিমুদ্দিনের খুশি দেখে তিনি এই নামটা যেন অনেক আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলেন তার কোন নাতি জন্ম নিলে তিনি এই নামটা রাখবেন |
আকাশ তার বড় ছেলের আজকে জন্ম নেওয়া একমাত্র সন্তান | অন্যদিকে নেসার খান ও রাইসা বেগম যেন খুশিতে আত্মহারা |
তাদের দাম্পত্য জীবনে ১০ বছর পরে যেন তাদের কল আলোকিত করে তাদের একমাত্র সন্তান আকাশ খানের আগমন ঘটলো |
তারা একটা সন্তানের জন্য কিছু করেছে | নেসার খান তার সন্তানের জন্য খবর পেয়ে যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন | নেসার খান জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে দেখে তার ভাই আজিম খান তাকে ধরে ফেলে এবং নার্সদের ডাকাডাকি করতে থাকে |
এরমধ্যে অপারেশন থিয়েটার থেকে ছোট্ট জন্ম নেওয়া আকাশ খানকে নার্স মালতি বেগমের কোলে দিয়ে দেন |
মালতি বেগম নাজিম উদ্দিন খানের ছোট ছেলের একমাত্র বউ |
মালতি বেগম তার বড় জায়ের ছেলেকে তুলে নিয়ে তার দিকে দেখতে থাকে | এর আগে কখনো এত সুন্দর বাচ্চাকে সামনাসামনি দেখেন মালতি বেগম | মালতি বেগম যেন অবাধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে |
এত বড় খুশির সময় কোথায় যেন তার মনের মত একটা ব্যথা অনুভব করে | তার কোন পুত্র সন্তান নেই | ছয় বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে এমনটা নয় যে তারা চেষ্টা করে নি কিন্তু তারা বাচ্চা নিতে সফল হয়নি মেডিসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে তার স্বামী তার বাচ্চার বাবা হতে পারবেন না |
হঠাৎ করে মালতি দেবী এই কথাটা মনে করার কারণে চোখের কোনায় পানি চলে আসে | এর মধ্য নেসার খানের জ্ঞান ফিরে আসে জ্ঞান ফিরে আসতেই সে তার সন্তান কে করে নিতে যায় | কিন্তু সে দেখতে পায় তার ছেলে যেন আস্তে আস্তে লালচে কালারের মত হয়ে যাচ্ছে | সঙ্গে সঙ্গে সে ডাক্তার দেখা শুরু করে ডাক্তার এসে থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া তা খারাপ |
ডাক্তার দ্রুত বাচ্চাটিকে অক্সিজেন দেন | কিন্তু ডাক্তার আসলে বুঝতে পারে না সমস্যাটা কি হচ্ছে , তাই ডাক্তার দ্রুত কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করে যদিও সে সময় বরিশাল এত উন্নত হয়নি যে শিশু বাচ্চার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবে | ডাক্তারও অনেকটা ঘাবড়ে চাই কারণ সে জানে এটা কার নাতি একটু এদিক-ওদিক হলেই তার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে |
ঢাকা তার সাধ্যমত পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শুরু করে | নাজিম উদ্দিন খান চলে আসেন দ্রুত তার একমাত্র বংশের প্রতীক কে দেখতে | এসে যেন তার মনটা খারাপ হয়ে যায় সে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চলে যায় | ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পারে না ঠিক কি হয়েছে কিন্তু ডাক্তার বুঝতে পারে বাচ্চাটা অক্সিজেন গ্রহণ করতে সমস্যা হচ্ছে | ডাক্তার নাজিমুদ্দিন খান কে বলেন আপাতত যে অক্সিজেন দিয়ে রাখলেও সমস্যা বুঝতে সে ব্যক্ত হয়েছে |
নাজিম উদ্দিন খান সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় তার বন্ধুকে ফোন করেন এবং বিষয়টা খুলে বলেন | বিষয়টা বুঝতে পেরে তার বন্ধু ঢাকার বেস্ট শিশু ডাক্তারকে সাথে নিয়ে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরঞ্জামসহ হেলিকপ্টার নিয়ে রওনা দেয় | নাজিমুদ্দিন খানকে বলেন সে যেন হেলিকপ্টার ল্যান্ড করার ব্যবস্থা করে খুব দ্রুত | নাজিমুদ্দিন খান বিষয়টা হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ ওকে জানালে সবাই দ্রুত কাজে লেগে পড়ে | একটু এদিক-ওদিক হলেই সবার জীবন নিয়ে টানাটানি উঠে যাবে এজন্য সবাই সাবধানতার সাথে কাজ করা শুরু করে |
সবাই চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে সবার মুখের দিকে তাকালে যেন সহজে বোঝা যায় | রাইসা বেগমের এখনো জ্ঞান ফিরিনি জ্ঞান ফিরে যদি দেখে এরকম অবস্থা তাহলে সে কি করবে তাকে কি জবাব দেবে তা ভাবতে থাকে নেশার উদ্দিন খান
কেমন লাগলো? শুয়ে আশা করি আপনাদের মতামত প্রকাশ করবেন