Thread Rating:
  • 10 Vote(s) - 2.7 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller পুরোনো প্রেমের আহ্বানে
#1
পর্ব ১ 

হাসপাতালের আজ অবধি বিল পুরোটা মিটিয়ে দিলে আর ফেরার টাকা হাতে থাকবে না। কাল রাত থেকে বসে বসে রেখার হাত পা যেন টানছে। স্বামী শ্যামল আইসিইউ এ ভর্তি। ছেলে সূর্য এলে হয়তো ওর কাছে টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা যাবে।  হাসপাতালের একজন স্টাফ এই নিয়ে সাতবার ডেকে গেলো রেখাকে। রেখার স্বামী ক্যান্সার আক্রান্ত। প্রোস্টেট ক্যান্সার। তার উপর আবার কিডনি ফেইল করলো। চিকিৎসা করাতে করাতে বিশাল সম্পত্তি সব শেষ। রেখা এসব ভাবতে ভাবতেই সূর্য এসে বলল শেষ সম্বল আর ব্যাংকে মাত্র 60 হাজার টাকা ছিল। সেটাই তুলে এনেছে। সেদিনের মত হাসপাতালের টাকা মিটিয়ে শেষবার একবার জালনার কাঁচ দিয়ে শ্যামল কে দেখে বেরিয়ে গেল ওরা। বাড়ি ফিরে এসে রেখা দেখলো ভাতের চাল কিনতে হবে। কিন্তু আর যে কিছুই নেই। শেষ ষাট হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। প্রতিদিনের বেসরকারি হাসপাতালের খরচ প্রায় দশ হাজার। রেখা ভাবলো আর ছয় দিন। তারপর? সূর্যকে কেন্দ্র করে রেখার জীবন। ছেলেটার বয়স কুড়ি। ইন্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়তে শুরু করে। দারুন পড়াশুনায়। ছেলের হয়তো পড়ার খরচ লাগে না। কিন্তু থাকা খাওয়া? ভগবানের দিকে তাকিয়ে কোথাও যেন রেখা একবার মুক্তি চেয়ে বসলো। সূর্য ততক্ষণে স্নান করে এলো। এবার রেখা স্নান করবে। কিন্তু তার আগেই ফোন এলো। হাসপাতালের ফোন। শ্যামল আর নেই। রেখা খবর টা শুনে ধুপ করে বসে পড়ল।

এরপর সমাজের নিয়মে যা যা কাজ হয় সবটা ঘটলো নিজের নিয়মেই। সদ্য বিধবা রেখা ভেঙে পড়েছিল মাত্র বছর পঁয়তাল্লিশে বিধবা হয়ে। মাথার উপর লোনের বোঝা। তিন কামরার ঘরটা ছাড়া হাতে মাত্র কিছু টাকা সম্বল। কি করবে কোথায় যাবে কি খাবে ছেলেটার কি হবে। এসব ভাবনায় রেখা ব্যস্ত থাকে। 

শ্যামল মারা যাওয়ার দিন পনেরো পর আবার ঘর ফাঁকা। বাড়িতে শুধু মা আর ছেলে। কাল থেকে আবার সূর্য কলেজ যাবে। অনেক ভাবনা অনেক চিন্তা করে একটু চা করে সূর্যকে দিয়ে রেখা কথা শুরু করল। 

রেখা: বাবা টাকা পয়সা কি কত আছে? 
সূর্য : মা তুমি ভেবো না। আমার কাছে এখন অনেক টাকা আছে। ওতে আর মাস দুই তিন চলে যাবে। আর তোমার কাছে যা আছে তাতে বাজার দোকানের জিনিস আনা হবে। 
রেখা কি একটু ভাবলো। তারপর টেবিলের উপর থেকে সূর্যের টাকার ব্যাগটা নিয়ে দেখলো তাতে কয়েকটা দশটাকার নোট মাত্র আছে। কি অদ্ভুত ভাবে কথাই কথাই টাকা উড়ানো এই কেনা সেই কেনা ছেলে টা অনেক বড় হয়ে গেল। এই বিশাল শহর কলকাতা, এখানে এই রকম নাটক প্রতিদিন কত ঘটে। 

পরের দিন সকালে ছেলে কলেজ চলে গেলে একাই বসেছিল জালনার ধারে। রাস্তা দিয়ে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে। সাইকেল, মোটর বাইক যাচ্ছে। পাশের বাড়ির বৌদি, সামনের বাড়ির কাকিমা সবাই একবার করে কথা বলে যায় রেখার সাথে। তারপর ঘিরে ধরে একাকীত্ব। আগেও এই সময় একাই থাকতো। কিন্তু আজ অন্য রকম। রেখার জীবনের অনেক পাওয়া না পাওয়ার মাঝে বারবার ওর মনে পড়ে যায় সেই পঁচিশ বছর আগের একটা মানুষকে। বীরেন ঘোষ।

কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পরিচয় লোকটার সাথে। কলেজের ইউনিয়ন রুমে। রেখার বান্ধবী শেফালির কি একটা দরকার ছিল। রেখা সাথে গেছিলো। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তখন বীরেন। বিনা কারণেই শেফালিকে কথা শোনাচ্ছিল। প্রতিবাদ করে রেখা। মাত্র দুমাসেই সেই মানুষটাকেই ভালোবেসে ফেলে। বাড়ির পাশের পাড়ায় কলেজে। তাই প্রেমটা শুধু কলেজের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখে। রেখা একটা অতি সাধারণ মেয়ে থেকে গোটা কলেজের চেনা হয়ে যায়। বীরেনের প্রেমিকা বলে কথা। কলেজ শেষ করার আগেই রেখার বাবা বিয়ের দেখাশোনা শুরু করেন। রেখা তখন বীরেনের কথা বাড়িতে মাকে বলে। মা বলেছিল বামুনের মেয়ে হয়ে চাষার ছেলেকে মনে ধরলো। সাবধান করেছিল। বকা মার খেয়েছিল। কিন্তু রেখা বাবাকে সে কথা বলতে পারে নি। বীরেনের মত মস্তানকে যে শান্ত করে দিয়েছিল। সেই রেখা পারে নি তার বাবার সামনে দাড়িয়ে নিজের ভালোবাসার জন্য লড়তে। শেষে বীরেনের সাথে এক মুহূর্তে সব সম্পর্ক শেষ করে বাবার দেখা শ্যামলকে বিয়ে করে নেই রেখা। শ্যামল হয়তো অনেক টাকার মালিক ছিল। কিন্তু সুখী করতে পারে নি রেখা না। না শারীরিক না আর্থিক। জমানো টাকায় খেয়ে আর যায় হোক সখ পূরণ করে যায় না। যখন সক্ষম ছিল শ্যামল তখনও রাজনীতি আর আড্ডা ছাড়া দোকানে কিছুই বিক্রি বাট্টা হতো না। শ্বশুরের সম্পত্তি আস্তে আস্তে শেষ হয়েছে। এদিকে বীরেনের জীবন বদলেছে অন্য ভাবে। রেখাকে সত্যি ভালবেসেছিল বীরেন। কিন্তু রেখার এই রূপ বেঈমানিতে বড্ড কষ্ট পেলো ও। কলেজের জীবন শেষ করে একটা দোকানে সামান্য কিছু রোজগার করে জীবন কাটাতে থাকে। বছর দুয়েক পরে সামান্য আয় বাড়াতে এর পর চলেযায় অনেক দূরে দিল্লিতে। দিল্লিতে এটা সেটা করে করে আরও বছর দেড়েক পর হয়। কিন্তু শেষে একটা সুযোগ পেয়ে শুরু করে নিজের ব্যবসা। তারপর আর ভাবতে হয় নি। আজ বীরেন কে কাজ করতে হয় না। নিজের অধীনে  কাজ করে প্রায় দুশ লোক। অন্য কোনো মেয়েকে কোনোদিন আর ভালোবাসেনি। আজ হয়তো বীরেন ঘৃনা করে রেখাকে। কিন্তু এই ঘৃনা পাওয়াও অনেক ভাগ্যের ব্যপার। 

পঁচিশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর দুজনের দেখা না হলেও পারত। কিন্তু বিধাতার মর্জি ছিল একটু অন্য। বীরেনের বাবা মা তখনও বেঁচে। ছেলের বিশাল বাড়িতে দিল্লিতেই তাদের বাস। ছেলে তাদের জন্য সব করেছে। কিন্তু নিজে কিছু পেলো না। রেখাকে তারা গাল মন্দ করে মনে মনে।মাঝে মাঝে ভাবে সেই তো সেই রেখায়। যে আমার ছেলেটাকে গুন্ডা থেকে এত ভালো মানুষ তৈরি করে দিয়েছে। তার চেয়ে থাকতো ও গুণ্ডা। এমনি একা তো হতো না। কিন্তু বীরেনের সামনে কিছু বলে না। আর এই বয়সে বলেই বা কি হবে। জীবনের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে এই একটা ব্যথায় তাদের সারে নি। সেই বাবা মায়ের ইচ্ছাতেই একবার কলকাতায় ফিরে আসা। বাবা মা আর বীরেন একা আসেনি। সাথে আর জনা চারেকের বিশেষ দল। যারা কোম্পানির ম্যানেজার, পি এ, ইত্যাদি। কলকাতায় ফিরে একবার রেখাকে দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে বীরেনেরও। মনের গভীরে কি চলছে তা বুঝতে পারে না কেউই। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এটা সেটা দেখা, এর তার সাথে একবার দেখা করা সব চলতে থাকে। কিন্তু বীরেন সারাদিন পর যখন একা বিছানায় যায় মানি ব্যাগ খুলে সেই পুরোনো একটা ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ঘুমিয়ে পড়েন । ভালোবাসা। বড় অদ্ভুত একটা অনুভুতি। যে তাকে এত আঘাত দিয়েছে। তাকে সে এখনো ভালোবাসে। 

রেখার এদিকে এখন আর কিছুই ভালো লাগে না। সারাদিন ফাঁকা ঘরটা যেন তাকে খেতে আসে। রেখা কাঁদে। কিন্তু শ্যামলের জন্য না। শ্যামল আর যাই হোক লোকটা খারাপ না। কিন্তু রেখা তাকে ভালোবাসতে পারে নি কোনোদিন। চেষ্টা করেছে বীরেনকে ভুলে যেতে। চেষ্টা করেছে শ্যামলকে সব টুকু উজাড় করে ভালোবাসতে। কিন্তু রেখা সব দিকেই হেরে গেছে। না পেরেছে বীরেন কে সত্যি করে ভালোবেসে তাকে মনের গভীরে ধরে রাখতে, না পেরেছে স্বামীকে ভালোবাসা দিতে। আজ দুজনেই তার কাছে নেই। থাকলে হয়তো আর একবার চেষ্টা করে দেখতো। রেখা ঠিক করল সে কোনো মন্দিরে যাবে। নিজেকে সংসার থেকে বের করে আনবে। পরকালের পথ করবে। 

দিনটা সেজেছিল বড় চমৎকার করে। শরৎকাল। শিউলি গাছের তলটা সাদা হয়ে আছে ফুলে ফুলে। বাগান জুড়ে মাধবীলতা, টগর, অপরাজিতা, বাগানবিলাস আজ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। রোদ উঠেছে বেশ ঝলমলিয়ে। কি একটা পাখি খুব মিষ্টি সুরে ডাকছে। সকালের চা নিয়ে বসে রেখা।  কি যেন ভাবে। তারপর সূর্যকে ফোন করে অনেকক্ষন ধরে কথা বলতে বলতে চা শেষ করে স্নানে যায় রেখা। ঠিক এমন সময় বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে। স্নান থামিয়ে কে বলে আওয়াজ দেই রেখা। একটা ভারী পুরুষ কন্ঠে উত্তর আসে। একটু আসবেন কথা ছিল ম্যাডাম। অচেনা পুরুষকে স্নান করছে বলবে বলে খুব অসস্তিকর লাগে রেখার।
[+] 6 users Like Tarun_cuckson's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
সুন্দর শুরু
[+] 1 user Likes subnom's post
Like Reply
#3
খুবই সুন্দর শুরু। আশা করি, গল্পটিকে একইরকম করে সুন্দরভাবে শেষ করবে।
[+] 1 user Likes ray.rowdy's post
Like Reply
#4
Next porbo koi bro?
Like Reply
#5
সবকিছুই সুন্দর তবে ক্যানসারের মতো একটা দুরারোগ্য ব্যধির গল্পে উল্লেখ করা কোথাও যেন মনের ভেতর অজানা একটা ভয়ের শিড়শিড়ানি ছুটে যায়,বাকীটা সুন্দর লিখেছেন। ভালো থাকবেন।
Like Reply
#6
Khub taratari next porbo asbe. 13 may amader ekhane vote. Electricity dept. E kaj kri ektu chap ache tai.
Like Reply
#7
পর্ব ২

কোনোরকমে স্নান সেরে বেরিয়ে আসে রেখা। সম্পূর্ণ উলংগ হয়েই। তারপর বাইরে রাখা প্যাণ্টি পড়ে নাইটি পরে নিলো একটা। যুৎসই না হলেও সেখানেই থাকা একটা ওড়না দিয়ে বুকটা ঢেকে দিল নিজের। ইতিমধ্যে বাইরের আগন্তুক চার পাঁচ বার হাক দিয়েছে। যদিও রেখা সাড়া দেয় নি। রেখা দরজা খুলে দেখে একটা মাঝ বয়সী ছেলে। বয়স বড় জোর ত্রিশ। দেখতে শুনতে ভালই। ভদ্র পোশাক, স্বভাব যেন একটু দ্রুতগামী। দরজা খুলতেই আগন্তুক বললো, আপ রেখা বুয়া হো নাহ্?

রেখার হিন্দির সাথে বড় নিবিড় শত্রুতা। কেউ হিন্দি বললে তাকে অসহ্য লাগে রেখার। কিন্তু নাম তো ঠিক বললো এই ছেলে। রেখা পরিষ্কার বাংলায় বললো, আমার নাম রেখা। কিন্তু তোমাকে চিনলাম না । আগন্তুক বললো, মে পঙ্কজ। মেরে পাপা অবিনাশ মুখার্জি। নারায়নপুরওয়ালে। রেখা অবিনাশ বা পঙ্কজ কাউকেই চিনতে পারল না। যদিও নারায়নপুর চেনে। রেখার মামার বাড়ি। রেখার মামার বাড়ির কেউ ভেবে রেখা একটু মনে করার চেষ্টা করে। তারপর আগন্তুক বলে, ওয়াহ মেরে দাদী কো সব জানতে হ্যা। গোপিকা দাদী। রেখার আজ বুঝতে বাকি থাকে না। এ হলো গোপীকা মাসির নাতি। সন্তু দাদার ছেলে। পরিচয় পাওয়া মাত্র রেখা ব্যস্ত হয়ে ওঠে । 

সন্তু দাদা কাজের সূত্রে বিদেশ চলে যায়। যোগাযোগ প্রায় নেই।বছর পনের আগে একবার এসেছিল সন্তু দাদা। ওই এক রাতের জন্য। এখন আর যোগাযোগ নেই। কখনও কারো মুখে শুনেছে এই টুকুই যা। পঙ্কজ বলে, একচুয়ালী মেরা বস কে সাথ টুর পে য়াহা আয়া হু মৈন। তো পাপা নে আপকা অ্যাড্রেস দিয়া আউর কাহা আপসে জরুর মিলনে কো। পাপা দো সাল সে বেড রিডেন হ্যা। এক স্ট্রোক হুয়া থা। প্রেসার হামেশা হাই। 

এসবের মধ্যেই পঙ্কজের জন্য একটু খাবার নিয়ে আসে রেখা। ইতিমধ্যে রেখার কথাও পঙ্কজ জেনেছে। শ্যামলের মারা যাওয়া, সূর্যর পড়াশুনা। সবই বলেছে। সন্তু দাদার সাথে ফোন হয়েছে। তারপর পঙ্কজ বললো, বুয়া আপ কেহ রেহি হো পেইসো কি দিককাত হ্যাঁ। তো আপ এক বিসনেস কিউন নেহি স্টার্ট কর রেহী হো?  
রেখা বলে, কি ব্যবসা করবো। কোনো দিন ভাবী নি। আর টাকাও নেই। টাকার দিক্কত আছে। 
পঙ্কজ এই সেই কথার পর বলে, আপ রুকো, মেইন বস সে বাত করতা হুইন। আগর কুছ হো পায়ে। কাল তো হাম লট জায়েঙ্গে। তো দেখতে হেইন। 

রেখার ফোন নম্বর নিয়ে পঙ্কজ চলে যায়। 

বলেছিলাম নাহ্ যে ভগবান অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল। হলো ও তাই। পঙ্কজ কেই বস অর্থ্যাৎ বীরেন বলল, আমাদের বিসনেস টা কলকাতাতে এক্সটেন্ড করবো ভাবছি। এখানে ভালো মার্কেট আছে। পঙ্কজ ও জানাই তার এক আত্মীয়া বিধবা গৃহবধূ। ব্যবসা করার মূলধন চাই। যদি সাহায্য করে। বীরেন সেই অফার লুফে নিয়ে আজই একটা মিটিং করে নিতে চাইলো। সেই মতো পঙ্কজ ফোন করে রেখাকে চলে আসতে বললো। 

দুজন একসাথে থাকার অনেক স্বপ্ন দেখেছিল একদিন। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় নি। কিন্তু আজ যে এত বছর পর আবার দুজনের দেখা হবে সেটা এক ভগবান ছাড়া আর কেউ জানলো না। দুপুরে একটু ডাল ভাত খেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রেখা। সাদা চুড়িদার, কালো কামিজ ।হাতে একটা ঘড়ি, অন্য হাতে ব্যাগ। যথা সময়ে যথা স্থানে পৌঁছে পঙ্কজ কে ফোন করল রেখা। পঙ্কজ রেখাকে একটা জায়গায় বসতে বলে বীরেন কে ডাকতে অন্য রুমে যাই। রেখা কিছুটা ভীত ,কিছুটা নার্ভাস। বীরেন এসে রেখার সামনে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে চেয়ে থাকে দুজন দুজনের দিকে। পঁচিশ বছরের পুরোনো পরিচয়। তবু যেন বিশ্বাস করে না কেউই। বীরেন ভাবে এটাই কি সেই তার জীবন ওলটপালট করে দেওয়া রেখা? অন্য কেউ নয় তো? রেখা ভাবে হে ঠাকুর কেন দাড় করালে এই মানুষটার সামনে? যদি প্রশ্ন করে কেন সব তছনছ করে দিয়েছ? কি উত্তর দেবে সে?

পঙ্কজের সামনে বীরেন ঘোষ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, বসুন ম্যাডাম। দাড়িয়ে আছেন কেন? রেখা নির্বাক বসে পরে। ওর পা যেন অসাড় হয়ে গেছে। গোটা শরীর কাপছে। বীরেন পঙ্কজের দিকে তাকিয়ে বলে, পঙ্কজ প্লিজ কুছ স্ন্যাকস বুলা দো ম্যাডাম কে লিয়ে। আউর তুম একবার টিকিট কনফার্ম হুয়া ইয়া নেহি দেখলো। পঙ্কজ কিছু বলতে গেলে বললো, মেইন বাত করলেতা হুন, তুম দেখলো। পঙ্কজ জি স্যার বলে বেরিয়ে যায়। বীরেন মিনিট খানেক তাকিয়ে থাকে রেখার দিকে। তারপর একবার চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে বলে , ভালো আছো রেখা? রেখা ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। এযে কি ভীষণ ব্যথা। বীরেন আবার বলে, কত গুলো বছর পর এই শহরে ফিরলাম। প্রতি টা মুহূর্তে এটাই চাইছিলাম যদি একবার তোমাকে দেখতে পাই। যদি একবার আমার রেখা সোনাকে... ।বীরেন চুপ করে যায়। খোলা জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বীরেন। চোখের জলটা আড়াল করে নেই। সকালের রোদে রেখা শুরু করেছিল আজকের দিনটা। সন্ধ্যার প্রায় ডুবন্ত রোদে দিনটা শেষ করছে বীরেন। রেখা নিজেকে সামলে একটু কথা বলার জায়গায় যায়। কি কথা বলে শুরু করবে বুঝতে পারে না রেখা। তাও বলে, আমি সব দিক দিয়েই ব্যর্থ বীরু। আজ হয়তো জীবনটাই অন্য রকম হতো যদি ... । রেখাও কথাটা শেষ করে না। তারপর চেয়ার থেকে উঠে বীরেনের পায়ের উপর পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার ছেলেটা পড়াশুনায় খুব ভালো। Engineering কলেজে পড়ছে। কিন্তু হোস্টেলে থেকে পড়ানোর ক্ষমতা আর নেই। ওর বাবা মরে গেল। সব টাকা পয়সা জমি সব শেষ। ঘরটা যা আছে। সেটাও হয়তো বিক্রি করতে হবে। তাই যদি কিছু সাহায্য করতে। 

মিনিট খানেক সব নিস্তব্ধ। তারপর করিডোর ধরে একটা পায়ের শব্দ শুনতে পাই। দ্রুত রেখাকে টেনে তুলে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সামনের চেয়ারে নিজে বসে। কিছু আলোচনা হচ্ছে ভান করতেই ঘরে ঢোকে পঙ্কজ আর একটা ওয়েটার। কফি আর স্ন্যাকস দিয়ে ওয়েটার চলে যায়। পঙ্কজ টিকিটের কথা বল। কাল ভোর হওয়ার আগেই কলকাতাকে বিদায় করতে হবে। তারপর বীরেন নিজের থেকে বললো, ম্যাডাম কেহ রেহ হ্যাঁ কি শি ক্যান ডো। তো হাম একবার লোকেশন দেখ লেনা চাহ্তে হ্যাঁ। 

পঙ্কজকে অন্য কাজে ব্যস্ত করে রেখার সাথে বীরেন বেরিয়ে যায়। গাড়ি না নিয়ে অটো ধরে। রেখা কিছু বলে না। শুধু বীরেন যা করে তার সাথে সেই ভাবে চলে। কিছু দূর গিয়ে একটা তুলনামূলক নির্জন জায়গায় অটো থেকে নেমে যায় ওরা। বীরেন অটোর টাকা মিটিয়ে রাস্তা থেকে নেমে আসে ফুটপাথে। হাত জোড় করে দাঁড়ায় রেখার সামনে, বলে , রেখা যা করলাম তার জন্য ক্ষমা চাইছি। তুমি হয়তো ওখানে থাকলে নিজেকে সামলাতে পারতে না। হয়তো পঙ্কজ বা বাকিরা সন্দেহ করতো। তাই এখানে নিয়ে এলাম।

শহরের এই অংশটা অনেক বছর আগে ওদের দেখা করার জায়গা ছিল। একটা বাসস্টপে ওরা বসে। সময় কাটতে থাকে। দুজনের বিচ্ছেদের পর থেকে দুজনের জীবন কিভাবে কাটতে থাকে সেই কথা বলে দুজন। যখন রাত নয়টা বেজে গেল তখন সূর্যের ফোন এলো রেখার কাছে। এতে ওদের গল্পের বিরতি হলো। ফোন শেষে রেখা বলল, বিরু এবার বাড়ি ফিরতে হবে। 
বীরু বলল, সে তো যাবেই। তবে আমার ব্যবসার কলকাতার অপারেশন টা তুমি দেখো। তাহলে আর টাকার কথা ভাবতে হবে না। আমি দিল্লি ফিরে গিয়ে তোমাকে হাজার শিপমেন্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি সেটা লোকালের মধ্যে বিক্রি করো। তোমাকে এখনি কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। 

আরো কিছুক্ষন ব্যবসার কিছু জিনিস বুঝিয়ে বীরু রেখার ফোন নম্বর নিয়ে চলে যায়। রেখাও ওখান থেকে অটো ধরে চলে যায়। রেখার মনে চলতে থাকে অনেক কিছু।

দিন কয়েক পর থেকেই রেখার জীবন বদলাতে শুরু করে। ব্যবসা করতে প্রথমে অসুবিধা হয়। বীরেন্দ্র গাইড করে। রেখা মাসের শেষে প্রায় চব্বিশ হাজার টাকার ব্যবসা করে। বীরু অনলাইন টাকা পাঠানোর ব্যাপারটা শিখিয়ে দেয় রেখাকে। দশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেই বীরুকে। এভাবে কেটে যায় একটা বছর। এক বছরে কলকাতায় রীতিমত বাজার দখল করে নেয় ওরা। রেখার ধার দেনা, সঞ্চয় সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়। রেখার জীবনে বিরুর সাথে বিচ্ছেদে যেমন জীবনটা থেমে গেছিল। আবার বিরুকে পেয়ে দৌড়াতে শুরু করলো। এখন দুজন মেয়েকে সেলস গার্লস হিসাবে রাখতে হয়েছে রেখাকে। নিজে scooty কিনে সেটা চালানো শিখে কিছু দিন কাজ করছিল। কিন্তু তাতে ও পেরে উঠছিল না। 

বছর শেষে রেখাকে ফোন করে বীরু বলল সে কলকাতায় আসবে। রেখার জীবনে সব কিছু ওলটপালট হবে এবার। সেটা রেখা তখনও জানত না। 

বীরু হঠাৎ ফোন করে বলল, রেখা তুমি হিসাবের ফাইল নিয়ে আসবে। আর শাড়ি পরে না। আমার অফিসের পুরুষ মহিলা সব লোকেরাই শার্ট জিনস আর ব্লেজার পরে কাজ করে। তোমাকেও অফিসিয়াল কাজে সেটাই মেইনটেইন করতে হবে। 
বীরু এমন ভাবেই বললো যে রেখা ভাবলো যেন আদেশ করল। রেখার একটু মন খারাপ হলো। মনে মনে ভাবলো, সে নিজেকে বীরুর প্রাক্তন প্রেমিকা ভাবলেও বীরু শুধু তাকে সামান্য একজন কর্মচারী মনে করে। যায় হোক সেদিন রাতে গিয়ে জিনস, শার্ট আর ব্লেজার কিনে আনল রেখা। পরের দিন সকালে স্নান পুজো করে একটু খেয়ে বেরিয়ে গেল। এয়ারপোর্ট থেকে বিরু কে রিসিভ করবে ভেবেছিল। সেই রকম ভাবেই গাড়ি ভাড়া নিয়ে অপেক্ষা করছিল। বীরু  যখন বেরিয়ে এলো তখন দেখলো ওর সাথে আর ও একজন লোক। খুব সম্ভবত সাউথ ইন্ডিয়ান। বীরু পরিচয় করিয়ে দিল হি ইস মিস্টার রানা গুপ্তা। প্রায় সাড়ে ছয় ফুট লম্বা। পেটানো শরীর। জামার ভেতর দিয়েই বোঝা যাচ্ছে বিশাল মাসাল। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ওরা ওঠে একটা পাঁচ তারা হোটেলে। হোটেলের ভেতরে গিয়ে মিস্টার গুপ্তা আর বীরেন্দ্র আলাদা দুটো ঘর বুক করে। রেখাকে বীরেন্দ্র ওর সাথে যেতে বলে।
Like Reply
#8
Valo suru
[+] 1 user Likes Ajju bhaiii's post
Like Reply




Users browsing this thread: