Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 2.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery অন্তর্বর্তী শূন্যতা
#81
দূর্নিবার – খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে এসে চুপচাপ চোখ বুজে শুয়ে পড়ল ও। কিন্তু চোখে ঘুম আসছে না কিছুতেই। অবশ্য ও ঘুমাতেও চাইছে না। একটু আগের কিছু কথা বারবার ভেসে ভেসে আসছে মনের মধ্যে। কিছুতেই যেন মনের মধ্যে শান্তি পাচ্ছে না খুঁজে। মনটা বারবার কেমন জানি একটা করছে। আর থাকতে না পেরে উঠে বসল বিছানার উপরে। বালিশের পাশে পড়ে থাকা ফোনটাকে তুলে নিয়ে এসে দাঁড়াল ব্যালকনিতে। সাথে সিগারেটের প্যাকেট আর দেশলাইটাকেও নিয়ে আসতে ভুলল না। ব্যালকনিতে এসে প্রথমেই পিছনের কাঁটের স্লাইডিং ডোরটাকে টেনে বন্ধ করে দিল। ওদের বেডরুম আর ব্যালকনির মাঝে এই একটাই আগল রয়েছে। ইতু যেকোনো সময় শুতে চলে আসবে। এখন ও কিচেনে হাতের কাজ সারছে। এরপর সোজা বিছানায় শুয়ে নিশ্চিন্তের ঘুম দেবে। ওর সবকিছুই একদম ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় মাপা। এক চুলও এদিক ওদিক হওয়ার নয়। যদিও ও এখন কোথায়, কি করছে, কার সঙ্গে কথা বলছে – এসব নিয়ে ও একদমই ভাবিত হবে না। তবুও সাবধানতাবশত ও কাঁচের স্লাইডিং ডোরটা টেনে দিল। এই অল্প পরিসরে ও এখন সম্পূর্ণ একা। হাতের প্যাকেটটা থেকে একটা সাদা কাঠি বের করে ধীরেসুস্থে সেটাকে জ্বালালো দেশলাই দিয়ে। তারপর গাল ভরা একটা ধোঁয়া ছাড়ল। একটু আগের কথাগুলো আবার ধীরে ধীরে ফিরে আসতে লাগল মনের গলি ধরে। মনটা আরো একটা আনচান করে উঠল। হাতের ফোনটাকে ধরে অ্যাপটাকে আরো একবার খুলল। সোজা চলে গেল এইসেথের প্রোফাইলে। প্রোফাইলটা আগের মতই ইনঅ্যাকটিভ দেখাচ্ছে এখনও। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অ্যাপটা থেকে বেরিয়ে এল। তারপর সোজা চলে গেল Call অপশনে। তনিমার নামটা খুঁজে ডায়াল করল। সঙ্গে সঙ্গেই রিং হতে শুরু করল। কিন্তু না। ওদিক থেকে কেউ ফোনটা রিসিভ করল না। বেজে বেজে কেটে গেল লাইনটা। “যে ব্যক্তিকে আপনি কল্ করছেন, তিনি এখন উত্তর দিতে পারছেন না। অনুগ্রহ করে পরে চেষ্টা...” বিরক্ত হয়ে কলটা কেটে দিল ও। দরকারের সময় যদি কাউকে পাওয়া যায়! আঙুলের ফাঁকে ধরে থাকা আগুনটায় আরো একবার টান দিল। পিছনে একটু আওয়াজ হল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ইতু বিছানা ঝাড়ছে। একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার বিছানা ঝাড়তে লাগল। তারপর আলোটাকে নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। একবারও জানতে চাইল না ও শোবে কিনা। বা কখন শোবে। নিজের অজান্তেই আরো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ওর নাক ও মুখ দিয়ে। তবে এবারেরটা একটু বেশীই লম্বা। ইতুর সঙ্গে ওর বিয়েটা দেখাশোনা করেই হয়েছিল। প্রেম করে নয়। অবশ্য প্রেম করার ধক যে ওর নেই, সেটা ও ভালো করে জানে। অথচ ওর নিজের মায়ের পেটের ভাই কি সুন্দর প্রেম করে বিয়ে করেছে। তবে ইতুর সঙ্গে বিয়েটা দেখাশোনা করে হলেও প্রেম কি ওদের মধ্যে একটুও ছিল না? সেটা অবশ্য ও বুক ঠুকে বলতে পারবে না। আর সবার মতোই বিয়ের প্রথম কয়েক বছর ছিল বৈকি। ইতু কিন্তু প্রথম থেকেই সিরিয়াস টাইপের একজন মেয়ে। খুবই বুদ্ধিমতি আর পড়িয়ে। পড়াশোনায় ওর চাঁড় দেখেই বাবা ওকে কলেজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। গ্রাজুয়েশন শেষ হতে না হতেই জমজ ছেলের মা। তবুও ইতু দমেনি। দুই ছেলেমেয়েকে সামলে, ওকে সামলে, সংসারকে সামলে নিজের মাস্টার্স, পি.এইচ.ডি কমপ্লিট করেছিল। তারপরে কলেজের চাকরী। সবই করেছে একা হাতে। করেছে কেন? এখনও করে চলেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ওর প্রতি একটা দূরত্ব তৈরী হয়েছে – এটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ছেলে, মেয়ে দুজনেই বড়ো হয়েছে। কলেজে পড়ছে। ওদের দুজনেরও বয়স বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। ওর নিজের মাথা জোড়া টাক দেখা দিয়েছে অনেকদিনই। ইতুরও চুলে এদিক ওদিক রূপোলী রেখা দেখা যাচ্ছে। শরীরটাও ভারী হয়েছে কিছুটা। তবুও প্রতিদিন যোগা, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ সবই করে। তবুও ওর শরীরের মেদাধিক্য চোখে পড়ার মতই। এত কিছুর পরেও ওর চোখে ইতুকে পারফেক্টই বলা চলে। অন্তত এতদিন তো তা চলত। ইদানিং সেই ধারণা সামান্য হলেও টাল খেয়েছে। অ্যাপটা যেদিন থেকে ও ইনস্টল করেছে সেদিন থেকেই ইতুর সম্পর্কে ওর ধারণাটা পাল্টাতে শুরু করে দিয়েছে। অ্যাপটার কথা মনে আসতেই, একে একে মনে এল একটু আগের কথা। আর সেই সাথে মনে এল তনিমার কথাও। মেয়েটা ফোনটা ধরছে না কেন? ফুরিয়ে আসা আগুনটাতে শেষ কয়েকটা টান দিয়ে ফেলে দিয়ে আবার ওকে কল করল। এবার বার তিনেক রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করল তনিমা। “হ্যা...হ্যালো স্যার...ব...বলুন?” কেমন যেন হাঁফাতে হাঁফাতে জিজ্ঞাসা করল তনিমা। গলাটাও কেমন যেন একটু ফ্যাঁসফ্যাঁসে টাইপের। হল কি মেয়েটার? শরীর খারাপ নাকি? উদ্বিগ্ন স্বরে ও জিজ্ঞাসা করল, “তোমার গলাটা এরকম লাগছে কেন? শরীর খারাপ নাকী?”

-  “না, ...না। আ...মি ঠিক আ...ছি।” আগের মতই হাঁফ ছাড়তে ছাঁড়তে তনিমা বলল।

-  “তাহলে তোমার গলাটা এরকম শোনাচ্ছে কেন?”

-  “ও কিছু নয়। আপনি বলুন।” এতক্ষণে ওর গলাটা একটু হলেও স্বাভাবিক শোনাল।

-  “তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল?” এবার ও ভণিতা না করে সরাসরি বলল।

-  “এক্ষুণি?!” তনিমা জিজ্ঞাসা করল।

-  “হ্যাঁ। কেন? কোনো অসুবিধা আছে?” পাল্টা প্রশ্ন করল ও।

-  “আসলে। আমরা এখন লাইভে আছি।” ফিস ফিস করে বলল তনিমা।

-  “লাইভে...!?” প্রশ্নটাকে অর্ধোচ্চারিত করে থেমে গেল ও। তনিমা কি বলতে চাইছে ও বুঝে গেল। সেই সাথে একটু আগে ওর হাঁফানোর কারণটাও পরিষ্কার হয়ে গেল।

-  “স্যার। আমরা কাল কথা বলি? অফিসে?” তনিমা একটু তাড়া লাগিয়ে বলল।

-  “হ্যাঁ। হ্যাঁ। কালকেই কথা বলব। You carry on.” ও তাড়াতাড়ি বলল।

-  “বেবি! এবার এসো। দেরী হয়ে যাচ্ছে। কাম অন!” তনিমার ফোন থেকে অন্য আরেকজনের গলা শুনতে পাওয়া গেল। সম্ভবত ওর বয়ফ্রেন্ড।

-  “থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। গুড নাইট।” এর পরের গলাটাই তনিমার। ওকে দ্বিতীয়বার আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেটে দিল ফোনটা।

কলটা কেটে যাওয়ার পর অল্প কিছুক্ষণ একভাবে স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইল। তারপর কিছু একটা চিন্তা করে একবার পিছন ফিরে তাকাল। ইতু ওর দিকে পিছন করে ঘুমাচ্ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে হাতের ফোনটার দিকে তাকাল একবার। অ্যাপটায় ঢুকল নতুন করে। সোজা চলে গেল তনিমার প্রোফাইলটায়। সবুজ রঙের জ্বলেজ্বলে বৃত্তটার পাশেই আরো একটা অপশন এই মুহুর্তে অন হয়ে আছে। Watch Her Live Video অপশনটায় বার দুয়েক আঙুলটা বোলাল। তারপর ক্লিক করল। নীলচে বৃত্তটা একবার ঘুরেই থেমে গেল। লেখা উঠল। Send Her Stars. নীচে বেশ কয়েকটা অপশন। যেমন – পনেরো মিনিটের জন্য দশটা স্টার। আধঘন্টার জন্য কুড়িটা স্টার। একঘন্টার জন্য চল্লিশটা স্টার। আর ফুল টাইমের জন্য – পঞ্চাশটা স্টার। এছাড়াও আরো অনেক অপশন আছে। বিভিন্ন রিকোয়েস্ট আছে। তার জন্য আলাদা আলাদা করে স্টার দেওয়ার অপশনও আছে। আজকে দুপুরেই তনিমার কাছে জেনে নিয়ে গোটা তিরিশেক স্টার কিনে রেখেছিল ও। এখনই সবকটাকে খরচ করার ইচ্ছা ওর হল না। তাই পনেরো মিনিটের অপশনটাতেই ক্লিক করল করল। সাথে দশটা স্টার কমে গিয়ে লেখা উঠল, Your request has been sent. Please be patient. বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। অ্যাপের পর্দায় Your request has been accepted. লেখাটা ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল। তারপর ওর ফোনের স্ক্রিণে ফুটে উঠল একটা ছবি। ছবি নয় ভিডিও। ও ভালো করে তাকিয়ে দেখল ক্যামেরা থেকে একটু দূরেই একটা বিছানা দেখা যাচ্ছে। বিছানার ওপাশে একটা দেওয়াল কেবল। আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। হ্যাঁ। দেখা যাচ্ছে। দুটো শরীর। বিছানার উপরে দুটো শরীর। একটা ছেলের। আর অন্যটা একটা মেয়ের। দুজনেরই মুখ দেখা যাচ্ছে না। দুজনেরই মুখ ব্লার করা। তবে মেয়েটা যে তনিমাই সেটা বুঝতে ওর কোনো অসুবিধা হল না। ঢোঁক গিলে ফোনের স্ক্রিণটার দিকে আরো কিছুটা ঝুঁকে পড়ল ও। নগ্ন শরীরদুটো যে কোন খেলায় মত্ত তা বুঝতে একটুও অসুবিধা হওয়ার নয়।
 
রাত এখন ক’টা বাজে কে জানে। মিনিমাম দুটো তো বাজবেই। ঘুমটা একবার ভেঙ্গে গেলে আবার আসতে সময় লাগে। কখনও কখনও আবার আসেও না। তখন চোখ বুজে, চুপ করে শুয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। কিন্তু আজকে চুপচাপ শুয়ে থাকতেও ইচ্ছা করছে না। জানালার বাইরে থেকে কিছুটা চাঁদের আলো পিছলে ঘরে ঢুকছে। পাশে ইতু ঘুমিয়ে কাদা। অথচ ওর চোখে ঘুম নেই। আজ শুতে ওর অনেকটাই দেরী হয়ে গেছে। প্রায় সাড়ে বারোটা বেজে গেছিল। সাধারণত এত রাত্রি করে ও শোয় না। ইতু মোটামুটি এগারোটা বাজলেই শুয়ে পড়ে। ঘুমিয়েও পড়ে। ও তার পরে পরেই শুয়ে পড়ে। একটু অপেক্ষা করলে চোখের পাতায় ঘুমের পেপারওয়েটটাও চাপা পড়ে যায়। কিন্তু আজ যায় নি। তার কারণ, প্রথম শুতে যাওয়ার অনেকটাই দেরী হওয়া। আর দ্বিতীয়ত, একটা নীরব উত্তেজনা। অবশ্য ঘুম না আসার কারণ হিসাবে দ্বিতীয় কারণটাই যে মুখ্য সেটা ও মনে মনে ভালো করেই জানে। প্রথমত এইসেথের সাথে ঐরকম উত্তেজক বার্তালাপ। তারপর তনিমার লাইভ পারফরমেন্স। সব মিলিয়ে যে বদহজম হয়ে গেছে এখন সেটা ও ভালো করেই বুঝতে পারছে। একদিনেই এতটা উত্তেজনা ওর শরীর সহ্য করতে পারছে না। তাই এপাশ ওপাশ করেও ঘুমের দেখা পাচ্ছে না। নিদ্রাদেবী রাগ করে বোধহয় আজকের মত বিদায় নিয়েছেন। আবার চুপচাপ শুয়ে থাকাটাও কেমন জানি একটু অস্বস্তিকর। বারবার চোখের পর্দায় তনিমা আর তার বয়ফ্রেন্ডের লাইভ পারফর্মেন্সের কিছু কিছু ক্লিপ ভেসে উঠছে। আর শরীরটা ততবার আইঢাই করে উঠছে। আর ঠিক ততবারই ওকে পাশ ফিরে শুতে হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না। আজকে তনিমার লাইভ পারফরমেন্স দেখার পর ও একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পেরেছে। ও এই অ্যাপটাকে আর পাঁচটা সস্তা আর বাজারচলতি ডেটিং ও সেক্স অ্যাপ ভেবে ভুল করেছিল। এই অ্যাপটি মোটেও সেরকম নয়। তাদের থেকে অনেক অনেকটাই বেশী ডার্ক। আর সেই সাথে বোল্ডও। তা নাহলে তনিমার পারফরমেন্সের সময় লাইভ চ্যাটে যেসব রিকোয়েস্ট আসছিল তা দেখেই ওর চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার জোগাড়। পনেরো মিনিটের শো-এর রিকোয়েস্ট পাঠিযে শেষপর্যন্ত প্রায় সওয়া এক ঘন্টা ও কাটিয়েছে তনিমার পারফরমেন্স দেখে। এবং সেই সাথে ও এটাও বুঝেছে মেয়েটি মোটেও সহজ সরল নয়তার থেকে এককাঠি উপরে। ইতুর সঙ্গে ও লাস্ট কবে সেক্স করেছিল, সেটা এখন ভাবতে বসলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।হয়তো বা এক বছর। কিম্বা। দুই বছর। তিন বছর বা তার বেশী হওয়াও আশ্চর্যের নয়। কিন্তু আজকে যা ও দেখল সেটা যে কেবল সেক্স নয়, এটা ও পুরোপুরি নিশ্চিত। আর এটা যদি সেক্স হয়, তাহলে বিয়ের পর থেকে যেটা ও ইতুর সঙ্গে করে এসেছে, তা নিতান্তই ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই অ্যাপে যারা উপস্থিত আছে, তারা যে এই বিষয়টা যে একপ্রকার গুলে খেয়েছে, সেটাতেও ও নিশ্চিত। সবার কাছে নিজেকে বাচ্চা ছেলে বলে মনে হচ্ছিল নিজেকে। তনিমার কাছে আরও ক্লাস নিতে হবে এই বিষয়ে। কিন্তু এখন ঘুমের কি করা যায়? একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে শুয়ে থাকা ইতুর দিকে তাকাল। ওর দিকে পিছন ফিরে মড়ার মতো ঘুমাচ্ছে। যাক, একদিকে নিশ্চিন্তি। বালিশের পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই আর ফোনের মত দরকারী জিনিসগুলোকে আলগোছে তুলে নিয়ে চুপিসাড়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ল। তারপর সন্তর্পণে আরো একবার ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল ও। একটা সিগারেট ধরিয়ে অ্যাপটায় আরো একবার লগ ইন করল। তনিমা যে আজকে আর অ্যাকটিভ হবে না, সেটা ও জানতো। ঠিক তাই। তনিমার নিষ্প্রভ প্রোফাইলটা থেকে বেরিয়ে এইসেথের প্রোফাইলটায় ঢুকল। না। এখনও মেয়েটা ইনঅ্যাকটিভ হয়ে আছে। মনটা কেমন জানি একটু খারাপ হয়ে গেল। সেই সাথে একটু দুশ্চিন্তাও হল মেয়েটার জন্য। ও “Are you alright? If you want, I can hear you.” এক লাইনে লিখে পাঠিয়ে দিল এইসেথকে। অন্যপাশ থেকে চট করে উত্তর এলো না। আসার কথাও নয়। তার কারণ এখনও সে ইনঅ্যাকটিভ হয়ে আছে। এইসেথের প্রোফাইলটা থেকে বেরিয়ে অ্যাপেতেই এদিক ওদিক ঘুরতে লাগল ইতস্তত। বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল এইভাবেই। হঠাৎই ওকে চমকে দিয়ে একটা মেসেজ ঢুকল ওর প্রোফাইলে। তাড়াতাড়ি চ্যাটবক্সটা খুলল ও। যা ভেবেছিল ঠিক তাইই। এইসেথই ওকে মেসেজ পাঠিয়েছে। তাকিয়ে দেখল লেখা আছে, “Thanks. Can we meet?” লেখাটা পড়ে মনটা আরো একবার কেমন জানি হয়ে গেল। এটা আবার কোনো ফাঁদ নয়তো? নাকি মেয়েটা সত্যি করেই কোনো বিপদে পড়ে ওর কাছে সাহায্য চাইছে? যদি তাইই হয়, তাহলে এরকম সাহায্য? সরাসরি সেক্সের কথা? নাকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে? কিম্বা ব্রেক আপ? এখন এসব জলভাত। আকছার হচ্ছে। হতেও পারে। ঝোঁকের মাথায় লিখে ফেলেছে। তবুও ও লিখে পাঠাল, “Of course. Tell me where?” লেখাটা পাঠিয়ে একটু অপেক্ষা করল ও। ভাবল মেয়েটা নিশ্চয়ই কোনো উত্তর পাঠাবে। কিন্তু না। মেসেজটা সেন্ড করার অল্পক্ষণ পরেই প্রোফাইলটা আবার আগের মত ইনঅ্যাকটিভ হয়ে গেল। না। আজকালকার মেয়েদের মন বোঝা সত্যিই দায়ের। কখন কি বলতে চায়, আর কখন কি করতে চায়, তা বোঝা ভগবানের পক্ষেও অসাধ্যকর। আর ও তো একজন সাধারণ মানুষ। যাক, পরে এই নিয়ে চিন্তা করা যাবে। ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও সিগারেটটায় শেষ একটা টান মেরে এইসেথের প্রোপাইলটা থেকে বের হয়ে এল।
 
এরপর ইচ্ছা ছিল ঘরে এসে ঘুমের চেষ্টা করা। কিন্তু অদৃষ্টে মনে হয় আজ সেটা নেই। ঘরের দিকে পা বাড়িয়েও হঠাৎ করেই লিলিথের কথা ওর মনে ভেসে উঠল। একবার ট্রাই করে দেখা যাক। প্রোফাইলটায় ঢুকে দেখল সেটাও বর্তমানে ইনঅ্যাকটিভ। কিন্তু ওর পূর্বাভিজ্ঞতা বলছে, এটা যেকোনো সময় অ্যাকটিভ হতেই পারে। বুক ঠুকে লিখল, Hey, sweety. Do I wake you up?” ইচ্ছে করেই শুরুটা ফ্লার্ট করেই করল। দেখাই যাক না, উত্তর কি দেয়। খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না ওকে। আরো একবার ওর ধারণা সত্যি হতে দেখে ও মনে মনে খুশীই হল। সত্যি করেই লিলিথের প্রোফাইলটা অ্যাকটিভ হয়ে গেল। আজকালকার ছেলেমেয়েরা সবাই নিশাচর। উত্তর এল, “আমি এতদিন জানতাম রাতটা ঘুমের জন্যই।” দুটো কারণে উত্তরটা ওর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে হল। প্রথমটা অবশ্যই তার বাংলায় উত্তর লেখা। আর দ্বিতীয়টা তার উত্তরের মধ্যেই লুকানো ব্যাঙ্গের খোঁচাটা। খোঁচাটাকে অক্লেশে হজম করে নিয়ে ও ফিরতি উত্তর লিখে পাঠাল, “কিন্তু আমি যে জানি, রাতে ঘুম ছাড়াও আরো একটা কাজ হয়।” ও ইচ্ছা করেই এটা লিখে পাঠাল। দেখা যাক, এই উত্তর কি আসে। উত্তর অবশ্য এল সাথে সাথেই। “আর সেটা কি?” কথাবার্তা কোন দিকে এগোতে পারে ও সেটা এখন থেকেই আন্দাজ করে নিতে পারল। এর সাথে নির্দ্বিধায় কথা চালানো যেতে পারে। ও সামান্য ধাঁধা সহকারে লিখল, “ঐ যে সেইটা।” উত্তর এল সঙ্গে সঙ্গেই। ওপাশের জন কি বিরক্ত। উত্তরে একটু হলেও বিরক্তির ছোঁয়া আছে বইকি। “হেঁয়ালি না করে, যেটা বলতে চাইছেন সেটা বলুন।” ও আরেকটু তাতাবার জন্যই লিখে পাঠাল, “সব কথা কি আর মুখে বলা যায়?” ফিরতি জবাবটাও ওর মতই রসালো। “কেন? বলা যায় না বুঝি?” এর সাথে কথা বলে আরাম পাওয়া যাবে। “উঁহু। বুঝে নিতে হয়।” ইচ্ছে করেই উহ্য রেখে কথাটা বলল। বেশ সাবলীল একটা জবাব এল ওপাশ থেকে। “তাই বুঝি?” ও-ও সাবলীলভাবেই লিখল, “অবশ্যই।” এবার একটা প্রশ্ন ছুটে এল ওপাশ থেকে। অবশ্য সেটাকে চ্যালেঞ্জও বলা যেতে পারে। “তাহলে বলুন তো আপনার সঙ্গে চ্যাট করা বাদে আমি এখন কি করছি?” ও চ্যালেঞ্জটাকে গায়ে না মেখে পাল্টা প্রশ্ন করল, “তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?” ও ইচ্ছা করেই প্রশ্নটা করল। একবার বাজিয়ে দেখা দরকার। অবশ্য সত্যি কথাই যে বলবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তবুও। যাক, উত্তর এল, “ধরুন আছে।” উত্তরের ধোঁয়াশাটা ওর নজর এড়ালো না। এ আবার কেমন উত্তর? বলছে না? নাকি বলতে চাইছে না? “ধরবো কেন? খোলসা করে বলো।” স্রেটকাট উত্তর এল, “আছে।” যদিও ওর বিশ্বাস হল না। “সে কি তোমার কাছেই আছে?” জবাব এল, “এত রাতে কি আমার কাছে থাকতে পারে?” সত্যি কথা। কিন্তু হেরে গেলে চলবে না। “থাকলে ক্ষতি কি?” কথাবার্তা এখন বেশ স্মুদলী চলছে। কটা বাজে সেটা এখন আর ওর খেয়াল নেই। উত্তর এল। “থাকলে আমি কি আর আপনার সঙ্গে চ্যাট করতে পারতাম?” ঠিকই তো। কথায় যুক্তি আছে। মেনে নিয়ে লিখল, “ঠিকই। তাহলে তুমি এখন কি করছো? ঘুমাচ্ছিলে?” জবাব এল, “না। ঘুম পাচ্ছে না।” মনের প্রশ্নটাই লিখে পাঠাল ও, “কেন?” জবাবে লেখা রয়েছে, “খুব গরম লাগছে। মনে হচ্ছে...” ও তাড়াতাড়ি লিখল, “কি মনে হচ্ছে?” জবাবে সে লিখে পাঠাল, “মনে হচ্ছে সব জামাকাপড় খুলে ফেলি। তারপর...” উফ্। মেয়েটার সত্যি করেই রসবোধ আছে। না হলে এই জায়গায় কেউ থামে? “তারপর?” এরপর লম্বা একটা মেসেজ এল, “তারপর ল্যাংটো হয়ে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার খুলে দাঁড়িয়ে থাকি।” ও উত্তরে লিখল, “তুমি কি বাড়িতে সব সময় ল্যাংটোই থাকো?” কি ভাবল কে জানে। উত্তরে লিখল, “একপ্রকার তাইই।”

-  “কেন? বাড়িতে জামাকাপড় পরতে ভালো লাগে না?”

-  “না। ব্যাপারটা সেরকম নয়। আসলে আমার বয়ফ্রেন্ড এলে আমাকে জামাকাপড় বিশেষ একটা পরতে দেয় না। তাই।” এটাও মিথ্যে কথাই মনে হচ্ছে।

-  “তুমি কি বাড়িতে একলা থাকো?”

-  “আপনি কিভাবে জানলেন?”

-  “তোমার কথা থেকেই।”

-  “হ্যাঁ। আমি একাই থাকি।”

-  “তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমার সাথে থাকে না কেন?”

-  “সে সবসময় আমার সাথে থাকতে যাবে কেন? তার ফ্যামিলি নেই? অবশ্য আমি একবার ডাকলেই চলে আসে।”
-  “কখন আসে?”

-  “আমার যখনই ইচ্ছা হয়। সকালে। কিম্বা দুপুরে। কিম্বা রাতে।”

-  “তোমরা একলা ঘরে কি করো?”

-  “হা ডু ডু খেলি।” ব্যঙ্গটা পরিষ্কার বোঝা গেল।

-  “আঃ ইয়ার্কি না মেরে বলোই না, কি করো।”

-  “আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে যা করেন, সেও আমার সাথে তাই করে।”

-  “তুমি কি করে জানলে, আমার গার্লফ্রেন্ড আছে?”

-  “আপনার কথা থেকেই।”

-  “আচ্ছা। টিট ফর ট্যাট। তার মানে তোমরা সেক্স করো তাই তো?”

-  “সে আর বলতেসুযোগ পেলেই করি।”

-  “কিভাবে করো?”

-  “তার ফিরিস্তি আপনাকে দিতে যাবো কেন? আপনি আমায় বলেছেন আপনি কিভাবে সেক্স করেন?”

-  “তুমি জানতে চাইলেই, আমি বলবো।”

-  “আচ্ছা বেশ। তাহলে বলুন।”

সময়ের জ্ঞান ভুলে গিয়ে মোবাইলের কিপ্যাডে দ্রুত আঙ্গুল চালাতে লাগল দূর্নিবার।
[Image: 20240303-191414.png]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
খুব সুন্দর হচ্ছে, চালিয়ে যাও।
[+] 1 user Likes ray.rowdy's post
Like Reply
#83
Please please please taratari update din, wait Kora jacche na। Ami nijeke relate korte parchi. Uff.........osomvob Sundar.
Like Reply
#84
নেশা ধরিয়ে দিলেন
Like Reply
#85
খুব সুন্দর হয়েছে দিদি চালিয়ে জান
Like Reply
#86
গল্প জমে উঠেছে। যদি সম্ভব হয় আরেকটু বড় আপডেট দিতে পারেন। এতে গল্পের বিস্তৃতি উত্তেজনা তৈরি করার জন্য উপযুক্ত জায়গা পাবে। আর পাঠক হিসেবে পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
[+] 1 user Likes কাদের's post
Like Reply
#87
"মোবাইলের কিপ্যাডে দ্রুত আঙ্গুল চালাতে লাগল দূর্নিবার।"
আপনিও চালান,,,
পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায়
Like Reply
#88
বেশ জমেছে,, তবে আরেকটু বড় করে দিবেন
Like Reply
#89
খুবই সুন্দর
Like Reply
#90
ইন্দুমতি – শরীরটা আজ খুবই ক্লান্ত লাগছে। সেই সাথে মনটাও। ওদের আর দোষ কী। সকাল থেকে কম ধকল গেল ওদের উপরে। শারীরিক ক্লান্তির থেকেও মানসিক ক্লান্তিটা যেন আজ ওকে বেশীই ভোগাচ্ছে। কিচেনে দিনের শেষ টুকিটাকি কাজগুলো সামলাতে সামলাতে এই কথাগুলোই বারবার ওর মনে হচ্ছিল। হাঁটুটা বেশ ব্যাথা লাগছে। একটু বাম ঘষতে পারলে হতো। সেটাও তো লাগিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। বর আর ছেলে দুজনেই খেয়ে দেয়ে সটান শুতে চলে গেল যে যার ঘরে। এখন গিয়ে দেখবে বর দিব্যি ঠোঁটের কোণে সিগারেট ঝুলিয়ে মোবাইল ঘাঁটছে! এই বুড়ো বয়সে যে কিসের এই ফোনের প্রতি মোহ ও সেটা বুঝতে পারে না। ও লক্ষ্য করে দেখেছে ইদানিং মোবাইল ঘাঁটার বদঅভ্যেসটা কর্তার মধ্যে বেশ জাঁকিয়েই বসেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সিগারেট ফোঁকাটাও। লোকটার চিরকাল সবই উল্টো কীর্তি! লোকে বয়স বাড়লে সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দেয়। এনার দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। দিনের শেষে বসে যে বউয়ের সাথে একটু কথা বলবে, গল্প করবে সেসবের বালাই নেই। খালি ফোন আর সিগারেট! সিগারেট আর ফোন! এইভাবেই গোটা জীবনটাতো কাটিয়ে দিল। না আছে কোনো দায়িত্ব। আর না আছে কোনো কান্ডজ্ঞান। সংসারে যে শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রোজগার করলেই হয় না, তার সাথে যে একটু সাংসারিক জ্ঞানও থাকা দরকার, সেটা আজও ও কর্তার মগজে ঢোকাতে পারল না। অবশ্য মগজ থাকলে তো ঢুকবে! সেসবেরও কোনো বালাই নেই! যাকে বলে ওয়ার্থলেস! মনের মধ্যে বরের প্রতি রাগটাকে চিবোতে চিবোতে আর সামান্য খোঁড়াতে খোঁড়াতে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল। খাবারগুলোকে টেবিলের উপরে পর পর সাজিয়ে রেখে প্রতিটার উপরে ভালো করে চাপা দিল। যাতে কিছুতে মুখ না দিতে পারে। অবশ্য এ খাবার তাদের নয়। ওর, বরের আর ছেলের তিনজনের রাতের খাওয়া হয়ে গেছে। এটা বুবলার জন্য। অর্থাৎ ওর মেয়ের জন্য। তার বাড়ি ফেরার কোনো কালেই ঠিক থাকে না। এই যেমন আজকে। খাবারগুলোকে রেখে সোজা হয়ে উঠে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালো। রাত প্রায় এগারোটা বাজতে যাচ্ছে। মেয়ের এখনও বাড়ি ফেরার সময় হল না। কোথায় কি রাজকার্য করছে কে জানে। কোন সভ্য, শিক্ষিত আর ভদ্রবাড়ির মেয়ে এত রাত করে বাড়ি ফেরে? অথচ দেখো, বাপের কোনো হুঁশ আছে এই বিষয়ে? খেলো দেলো, হাত ধুয়ে সিগারেট ফুঁকতে আর মোবাইল ঘাঁটতে চলে গেলো। এখন যদি এই বিষয়ে কিছু বলতে যায়, তো উল্টে বলবে, সবেতেই নাকি ওর বাতিক! এটা কোনো কথা? উঠতি বয়সের মেয়ে, কেন এত রাত করে বাড়ি ফিরছে, সেটা দেখতে হবে না? ওনাকে দিয়ে যদি একটা কাজ হয়! ছেলেটাও হয়েছে বাপের মতই। হাঁদা, গঙ্গারাম। জিন আর যাবে কোথায়? শরীরে তো একই রক্ত বইছে! নিরাশায় মাথা নাড়তে নাড়তে আবার কিচেনের দিকে হাঁটা দিল ও।

হাতের আর হেঁশেলের কাজ শেষ করে যখন অবশেষে বেডরুমে এল, তখন ঘড়ির কাঁটা এগারোটা পেরিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে কোথাও কর্তাকে দেখতে পেল না। রুমে যখন নেই, তখন নির্ঘাত গেছে ব্যালকনিতে। ওখানেই তো আড্ডা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওখানে সিগারেট ফোঁকে আর মোবাইল ঘাঁটে। ঐ মোবাইলে যে কিসের মোক্ষ বাপু ও জানে না। আর জানতেও চায় না। মোবাইলের একটা অ্যাপেতেই ওর যা হাঁশফাঁশ অবস্থা। এর বেশী কিছু ওর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ইচ্ছেও নেই। আজকালকার ছেলেরা তো ঐ করেই গেল রসাতলে! ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, ও যা ভেবেছে ঠিক তাই। বাবু ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দিব্যি সিগারেট ফুঁকছে আর মোবাইল ঘাঁটছে! একটু যদি লজ্জা-শরম থাকে শরীরে! দেখে ওর গোটা শরীর রাগে রি রি করে উঠল। একবার ইচ্ছে হল গিয়ে দু চার কথা শুনিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু এত রাতে আর সিন ক্রিয়েট করতে ভালো লাগছে না। যা পারে করুক। বিছানার কাছে এসে বিছানাটা ঝাড়তে শুরু করল। শোওয়ার আগে বিছানাটা না ঝাড়লে শুয়ে আর ঘুমিয়ে শান্তি হয় না ওর। বর বলে এটাও নাকি ওর একটা বাতিক। ম্যানিয়া। যে যা বলে বলুক। বিছানা ঝাড়া হলে একবার ব্যালকনির দিকে তাকালো। দেখলো বর এতক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়েছিল। যেই চোখাচোখি হল ওমনি মুখ নীচু করে আবার মোবাইলের দিকে তাকালো। একে নিয়ে ঘর করা এককথায় অসম্ভব। তাড়াতাড়ি ঘরের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। যতক্ষণ মন চায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাক, সিগারেট খাক আর মোবাইল ঘাঁটুক। কিন্তু শুয়ে পড়লেও চোখে যে চট করেই ঘুম চলে এল এরকম নয়। বরং চোখ দুটো বন্ধ করতেই আজকের সন্ধ্যের পর থেকে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটা ঘটনা এক এক করে ওর মনে পড়ে যেতে লাগল। এরকম এর আগে ওর সাথে কখনও ঘটেনি। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ঐ অ্যাপটাকে ও ইন্সটল করেছে। আবার শুধু যে ইন্সটল করেছে তাইই নয়, সেই সাথে ব্যবহারও করেছে। অ্যাপটাকে এককথায় নরক বললেও কম বলা হয়। নোংরামীর চূড়ান্ত। এমন সব জিনিস যা দেখে শুনে ও অবাক হয়ে গেছে। তা এতে ওর কি স্বার্থ? কিছুই নেই। কলেজের ছেলেমেয়েরগুলোও তো ওর নিজের ছেলেমেয়ের মতোই। যদি আজ ওর নিজের পেটের ছেলে-মেয়ে এই অ্যাপের পাল্লায় পড়ে গোল্লায় যাওয়ার রাস্তা খোঁজে, তাহলে মা হিসাবে কি ওর কোনো দায়িত্ব থাকবে না? বসে বসে চোখের সামনে নিজের ছেলে-মেয়েদুটোকে রসাতলে যেতে দেখবে? সেটা ও পারবে না। শিক্ষিকা মানে তো একপ্রকার মা। যে যাই বলুক, ও ওর কলেজের ছেলেমেয়েদেরকে এই চোরাবালি থেকে উদ্ধার করবেই। তার জন্য ওকে যা করতে হতে পারে, ও করবে। ও করছেও। কিন্তু এখানে একটাই অসুবিধে। এখানে কে যে কে, সেটাই বুঝতে পারা যাচ্ছে না। যার সঙ্গে কথা বলছে, সে যে ওরই ছাত্র কিনা সেটাও বোঝার কোনো উপায় নেই। কিভাবে তাদেরকে খুঁজে বের করা যায়, সেটাও ওর এইমূহুর্তে জানা নেই। আবার থেমে গিয়ে হাত গুঁটিয়ে বসে থাকাটাও অর্থহীন। যতদিন না একটা প্ল্যান মাথায় আসছে এভাবেই চালাতে হবে। এছাড়া আর উপায় কী? এই যেমন আজকেই। রাত তখন ন’টা বাজবে হঠাৎ করেই কিউপিড নামের একটা প্রোফাইল থেকে ওর সাথে চ্যাট করতে শুরু করল। সে কে, ওরই কোনো ছাত্র কিনা সেটা বাজিয়ে দেখার জন্যই ও খেজুরে আলাপ করতে শুরু করল। এই কদিন এইভাবেই খেজুরে আলাপ চালাবে বলে ও ঠিক করেছে। সে যাই হোক। ঠিক সেই সময়েই বর অফিস থেকে ঘরে এল। তার সামনে এসব করা একদমই ঠিক হবে না, ভেবে নিয়ে ও তৎক্ষণাৎ কথাবার্তা থামিয়ে দিল। মনে মনে একটু ভয় ছিল, এতে আবার রাগ করে ওকে বাদ দিয়ে দেবে না তো? যাই হোক বর চা-জলখাবার খেয়ে বেডরুমে ঢুকে পড়তেই ও জাঁকিয়ে বসল। চশমাটা আবার চোখে এঁটে কিউপিডকে লিখে পাঠাল, “Now I am free. We can talk freely.” মনের আশাটা সঙ্গে সঙ্গেই পূরণ হয়ে যাবে, সেটা ও ভাবেনি। যতই হোক পুরুষ মানুষ তো। ছোঁকছোঁকানি স্বভাব আর যাবে কোথায়! মেয়ে দেখতে না দেখতেই কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। এক সেকেন্ডের মধ্যেই জবাব এলো, “বাংলায় কথা বলা যেতে পারে?” সে আর বলতে, তোমার মত অশিক্ষিত যে বেশীক্ষণ ইংরেজী চালাতে পারবে না, সেটা বলাই বাহুল্য। আর শুধু তুমি কেন, এখানে যারা যারা আছে, তারা প্রত্যেকেই যে কমবেশী অশিক্ষিত সেটা আর বলে দিতে হয় না। অশিক্ষিত না হলেও রুচির যে বড়োই অভাব, সেটা তো পরিষ্কার। যাই হোক, মনের রাগ মনের মধ্যেই পুষে রেখে ও উত্তরে লিখল, “অবশ্যই যেতে পারে। আমি বাংলাতেই কথা বলতে চাই তোমার সঙ্গে।” এতেই গলে জল হয়ে গেল। সামনে থাকলে মনে হয় গড়িয়ে পায়ের উপরেই পড়ে যেত। লিখে পাঠিয়েছে, “আমিও তোমার সাথে কথা বলতে চাই।” মরণ নেই আর কি!

-  “তুমি কোথায় থাকো? কলকাতায়?” এর বেশী খেজুরে আলাপ করার সময় ওর নেই। তাই তাড়াতাড়ি কাজের কথায় চলে এল।

-  “হ্যাঁ। আর তুমি?” লিখে পাঠাল ছেলেটা।

-  “আমিও কলকাতাতেই থাকি।” এটুকু সত্যি কথা লেখা যেতেই পারে। না হলে সন্দেহ করতে পারে। এর সাথে যোগ করল, “তুমি কি করো? পড়াশোনা?”

-  “না। আমি কাজ করি।”

-  “কাজ করো! কি কাজ করো?” এবার ওর কেমন যেন একটু সন্দেহ হল। যতদূর মনে আছে এর বয়স লেখা ছিল ২৩। এখন মনে হচ্ছে সব ভুয়ো।

-  “অফিসে কাজ করি। কেন?”

-  “তোমার বয়স লেখা আছে ২৩। তোমার এখন তো পড়াশোনা করার কথা। আর তুমি বলছো অফিসে কাজ করো। এটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।” ফোনে একটানা টাইপ করা যে কতটা কষ্টের কাজ সেটা আজ ও বুঝতে পারল। আঙুল, ঘাড় আর চোখ তিনটেতেই যন্ত্রনা হচ্ছে। কিন্তু থেমে গেলে হবে না। উত্তরটা আসতে একটু দেরীই হল।

-  “আসলে আমি পড়শোনাই করতাম। কয়েক মাস আগে বাবা মারা গেছে। তাই সংসার চালাতে আমাকে কাজ করতে হচ্ছে। আর অফিসে কাজ করি মানে, তেমন কিছু নয়। ঐ পিওন গোছের।” লেখাটা পড়ে সম্পূর্ণ বিশ্বাস হল না। জল তো এর মধ্যে নিশ্চিত আছে। সে যাই হোক, এ মোটেও ওর ছাত্র হতে পারে না। তাহলে লাভ কিছুই হল না। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। দেখল এরই মধ্যে আরও একটা মেসেজ পাঠিয়েছে ছেলেটা। খুলে দেখল,
-  “কি হল? কথা বলবে বলে চুপ করে গেলে যে?”

-  “না। এমনি।” ও লিখল। ছেলেটা ওর ছাত্র না হতে পারে। কিন্তু ভদ্র তাতে সন্দেহ নেই। কথা বলতে খুব একটা খারাপ লাগছে না। এর সাথে কথা চালানো যেতেই পারে। কে জানে, হয়তো ভবিষ্যতে ওর কোনো কাজে লেগে যেতেও পারে। দেখাই যাক না। ও লিখল, “তুমি এখন কি করছো?”

-  “আমি একটু আগে অফিস থেকে ফিরেছি।” ছেলেটা লিখল।

-  “তোমার বাড়িতে কে কে থাকে?” এমনিই জিজ্ঞাসা করল ও।

-  “কেন?” প্রশ্নেই ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। এতে ভয় পাওয়ার কি আছে? ভীতুর ডিম একটা! মনে মনে না হেসে পারল না। আজকালকার ছেলেদের মতো মোটেও নয়।

-  “ভয় পেও না। আমি এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম।” ও বুঝিয়ে বলল।

-  “ভয় পাইনি। তবে তুমি এমন হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করলে আমি চমকে গেলাম।” ওহঃ বাবু নাকি ভয় পায়নি। খালি মিছে কথা।

-  “ভয় যদি না পেয়ে থাকো, তাহলে বলো বাড়িতে কে কে আছে।” মনে মনে আবার একচোট হাসল।

-  “বাড়িতে মা আছে। দাদা আছে। একটা ছোটো বোন আছে।”

-  “তাই নাকি? দাদা কি করেন?” এবারও এমনিই জিজ্ঞাসা করল। ছেলেটার সব কথা কেন জানি জানতে ইচ্ছে করছে। এরকম সরল মনের ছেলের সঙ্গে ও অনেকদিন কথা বলেনি।

-  “দাদা! দাদার একটা দোকানে কাজ করে।”

-  “ও। আর বোন?”

-  “ও পড়াশোনা করে। ওর লেখাপড়াটা ছাড়াই নি।” বেশ অকপট স্বীকারোক্তি। এই কারণেই ছেলেটাকে ওর ভালো লাগছে। কিন্তু ও কিকরে এইরকম একটা অ্যাপে এলো, সেটা জানতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখনই জানলে হবে না। ধৈর্য ধরতে হবে।

-  “বাঃ এটা ভালো করেছো। ওর পড়াশোনাটা যেন ছাড়িয়ে দিও না।”

-  “না। ও খুব ভালোবাসে পড়তে।” তারপর একটু থেমে আবার একটা মেসেজ পাঠালো ছেলেটা। “তখন থেকে তো শুধু আমাকেই প্রশ্ন করে যাচ্ছো। এবার নিজের কথা একটু বলো।”

-  “বলো, কি জানতে চাও?” ও তাড়াতাড়ি লিখল। এবার কিছু একটা বানাতে হবে।

-  “সব কিছুই। তুমি কোথায় থাকো। কি করো, বাড়িতে কে কে আছে, এই সব।” এবার একটু সময় নিল ও। মনের মধ্যে মিথ্যে গুলো একের পর এক সাজিয়ে নিয়ে ও টাইপ করতে শুরু করল, “বলছি একে একে। আমি...”


রাত এখন কটা বাজে কে জানে ঘুমটা কেন ভাঙ্গল সেটাও বুঝতে পারছে না ঘরটা অন্ধকার ঠিকই তবে একদিক দিয়ে কিছুটা আলো ঘরে ঢুকছে। তার মানে ব্যালকনিটা খোলা। এখনও বাবুর শুতে আসার সময় হল না! বালিশের পাশ থেকে চশমাটা নিয়ে পড়ল। তারপর হাতড়ে মোবাইলটাকে হাতে তুলে নিল। দুটো বেজে দশ! এখনও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কি করছে! উঠে বসতে গেল তখনই ওর চোখে পড়ল ফোনে কিছু নোটিফিকেশন এসেছে। তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে বসে অ্যাপটা খুলল। বেশ কয়েকটা প্রোফাইল থেকে ইতিমধ্যে ওর কাছে পার্টনার রিকোয়েস্ট এসেছে। এসব নিয়ে কাল ভাবা যাবে মনে করে ফোনটা রাখতে যাবে, ঠিক সেই সময়েই একটা মেসেজ ঢুকল ওর প্রোফাইলে। খুলে দেখল মেসেজটা এসেছে ব্যাফোমেট নামের একটা প্রোফাইল থেকে। মনে পড়ে গেল একেই আজ বিকালে অ্যাকসেপ্ট করেছে সেই কানাগলিটার ভিতরে দাঁড়িয়ে। এতরাতে সে কি পাঠিয়েছে? তাড়াতাড়ি খুলে দেখল, লেখা আছে, “এত রাতে জেগে আছেন?” মানে? একথার অর্থ কী? ও তাড়াতাড়ি লিখল, “তুমিও তো জেগে আছো?” উত্তর এল, “আমার কথা বাদ দাও। তুমি কেন জেগে আছো, সেটা বলো।” ন্যূনতম ভদ্রতাটাও জানে না। এদের যে কি হবে কে জানে। ততক্ষণে চোখ থেকে ঘুমের শেষ রেশটুকুও মুছে গেছে। বরের কথা ভুলে গিয়ে বিছানায় বাবু হয়ে বসল। তারপর টাইপ করল, “যদি বলি, তোমার সঙ্গেই কথা বলবো বলে, জেগে আছি, তাহলে কি করবে?” জবাব এলো, “বিশ্বাস করব না।” কোথাকার কোন খাঞ্জা খাঁ এলো রে, যেন ওকে বিশ্বাস করানোর দায় ওর। লিখল, “কেন বিশ্বাস করবে না?” ছেলেটা মহা চালিয়াৎ সেটা ওর উত্তরেই টের পাওয়া গেল, “তুমি আমার আগেই অ্যাকটিভ ছিলে। আমি পরে হয়েছি। তাই।” একে ল্যাজে খেলানো ছাড়া উপায় নেই। ও তাড়াতাড়ি লিখল, “আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।” সঙ্গে সঙ্গে উত্তরও চলে এল, “তুমি জানতে, আমি এই সময় আসবো?” নিজেকে গোয়েন্দা ভাবছে। ভাবাচ্ছি। মনে মনে রাগটাকে ধরে রেখে টাইপ করল, “জানতাম বলব না। তবে মনে হয়েছিল। তোমাদের মত ছেলেরা রাত জেগেই থাকে।” এবার একটা মনের মতো উত্তর দেওয়া গেছে। “তুমি কি করছো?” ওর এককথাতেই সুর নরম গেছে। ও লিখল, “শুয়ে শুয়ে তোমার সাথে চ্যাট করছি। তুমি কি করছো?” উত্তর এল, “তোমার সাথে আড্ডা মারবার চেষ্টা করছি।” এতো দেখছি মহা ফাজিল ছেলে। একে সাবধানে ট্যাকল করতে হবে। না হলেই মুশকিল। ও লিখল, “তাহলে চলো। গল্প করা যাক। আগে তোমার বিষয়ে আমাকে কিছু বলো। তুমি কি করো। কোথায় থাকো। পড়াশোনা করো নাকি। ইত্যাদি।” কিন্তু এ একদমই অন্য ঘাঁটি। ছেলেটা লিখল, “আমার কথা পরে হবে। আগের তোমার সম্পর্কে কিছু বলো। তারপরে আমি বলবো।” আর বেশী কথা না বাড়িয়ে মনের মধ্যে মিথ্যেগুলোকে আরো একবার সাজিয়ে নিয়ে ধীরে সুস্থে ফোনের কিবোর্ডে টাইপ করতে লাগল ইন্দুমতি।
[Image: 20240303-191414.png]
Like Reply
#91
রোমাঞ্চকর কিছু একটা আসতে যাচ্ছে বুঝতে পারছি
চালিয়ে যাও সঙ্গে আছি
Like Reply
#92
দারুণ হচ্ছে, চালিয়ে যাও।
Like Reply
#93
অনেক সুন্দর একটা আপডেট দিদি চালিয়ে জান
Like Reply
#94
সুনির্মল – রাতের খাওয়া হয়ে গেলেই আর বসে থাকতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় কখন গিয়ে বিছানায় শোবো। আবার সটান গিয়ে শুয়ে পড়লে চট করে ঘুম আসতে চায় না। তাই কিছুক্ষণ ফোন ঘেঁটে একটা বা আধটা সিগারেটে সুখটান দিয়ে তবে শুতে যায়। এই একটা সিগারেট হয় নিজের ইচ্ছেয় আর আধটা অবশ্যই রাইয়ের নির্দেশে। রাই ওর সিগারেট খাওয়া একদমই পছন্দ করে না। তাই বাধ্য হয়েই আগের থেকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে নিজের সুখটানের সংখ্যাটা। বাড়ির বাইরে থাকলে তবু দু-একটা খায়, কিন্তু বাড়িতে থাকলে সংখ্যা আক্ষরিক অর্থেই এক- আধটায় নেমে আসে। কারণ রাইয়ের খবরদারী সব সময় ভালো লাগে না ওর। কেমন যেন মাত্রাতিরিক্ত বলেই মনে হয়। এই যেমন আজকের সন্ধ্যের ঘটনাটার কথাই ধরা যাক। কোনো কারণই ছিল না এইরকম একটা সিন ক্রিয়েট করার। তবুও করল। ও ভেবেছিল আজকের রাতটা কিছু খাবে না। রাগ দেখিয়ে শুয়ে থাকবে। শেষপর্যন্ত অবশ্য তা পারেনি। খাবার বাড়ার পরে বার তিনেক ডাকার পরেও ও খেতে যায়নি, তখনই রাই বুঝতে পেরেছিল ও ভুল করেছে। তাই প্রথমে বাবানকে দিয়ে ডাকতে পাঠিয়েছিল। যখন সেই অস্ত্রেও কাজ হয়নি, তখন নিজে এসেছিল ওকে খেতে ডাকতে। প্রথমে মুখের উপরে মানা করে দিয়েছিল খাবে না বলে, কিন্তু রাই যখন বলল ও না খেলে, সে-ও খাবে না, সারারাত উপোস করে থাকবে তখন আর না গিয়ে উপায় থাকে না। খেয়ে দেয়ে এসে বিছানায় শুয়ে মোবাইলটা ঘাঁটতে শুরু করল। তারপর বাবানকে বকে ঘুম পাড়াল। আজকে আর সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না। মাথাটা একটু ধরে আছে। বাবান একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়ল। রাইয়ের কাজ সেরে শুতে আসতে এখনও অনেকটাই সময় বাকী। এই সময়টুকুকে কাজে লাগানোই যেতে পারে। বিছানায় আধশোয়া হয়ে একবার দরজার দিকে তাকালো। এখন আর বন্ধ করার উপায় নেই। তাহলেই রাইয়ের সন্দেহ হবে। আর তাহলেই মুশকিল। এখন হাজারটা প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার একদমই ইচ্ছা নেই। দরজার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলরাই এখন আশেপাশে নেই। হয় কিচেনে হেঁশেলের কাজ গোছাচ্ছে। কিম্বা মায়ের ঘরে আছে। একপ্রকার নিশ্চিন্ত হয়ে মোবাইলের অ্যাপটাকে খুলল। প্রথমেই গেল অ্যাফ্রোডাইটের প্রোফাইলে। বর্তমানে সেটা ইনঅ্যাকটিভ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে গেল এইসেথের প্রোফাইলে। কিন্তু সেটাও ইনঅ্যাকটিভ দেখে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। যদিও মন খারাপের আদৌ কোনো কারণ আছে বলে ওর নিজেরই মনে হল না। একটু আগে পর্যন্তও ও অ্যাফ্রোডাইটের সঙ্গে আড্ডা মেরেছে। এবং সে এটা বুঝছে মেয়েটা ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে সবিশেষ আগ্রহী। যদিও কারণটা ও এখনও বুঝে উঠতে পারেনি। সেটা আশা করি দিন কয়েকের মধ্যে পেরে যাবে। কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার মেয়েটা ওর সঙ্গে কথা বলে ইমপ্রেসড হয়ে গেছে। অবশ্য এর জন্য দায়ী তাপস। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে তাপস ওর হয়ে কথা বলেনি ঠিকই, কিন্তু কতকটা তাপসেরই শেখানো বুলি ও আউড়ে গেছে। ফলও পেয়েছে হাতে হাতে। মেয়েটা কথা দিয়েছে ও আবার কাল রাত নটার সময় ওর সাথে কথা বলবে। ইনফ্যাক্ট প্রতিদিন রাতেই নটার পরে ওর সাথে আড্ডা দেবে। তাপসকে কি একবার ফোন করে থ্যাঙ্কস জানানো উচিত? সেটা কি এত রাতে ঠিক হবে? শালা, কি অবস্থায় আছে তার ঠিক নেই। তার চেয়ে বরং কাল অফিসে গিয়েই কথা হবে। তবে শালা, মাতাল হলেও তালে ঠিক আছে। বারবার ওকে বলে দিয়েছিল, “শোন গান্ডু, বিয়ে না করতে পারি, তবে মেয়েদের বিষয়ে তোকে একটা জ্ঞান দিই।”

-  “কি জ্ঞান?” রঙিন তরলে এক চুমুক।

-  “সেটা হল, মেয়েরা কখনই ওভার স্মার্ট ছেলেদের পছন্দ করে না।”

-  “ওভার স্মার্ট?!” আরেক চুমুক।

-  “হ্যাঁ। ঐ বাংলায় যাকে বলে পোঁদপাকা, বুঝেছিস?”

-  “বুঝেছি।”

-  “হ্যাঁ, মানে মেয়েরা আজকালকার ঐ পোঁদপাকা, ডেঁপো ছেলেদের একদম পছন্দ করে না।”

-  “তাহলে কেমন ছেলে পছন্দ করে?”

-  “এই আমার মতো লালুভুলু ছেলেদের।”

-  “তুই? আর লালুভুলু?” চুমুকে চুমুকে গ্লাসের তরল প্রায় শেষ।

-  “সেটাই তো বলছি। মন দিয়ে শোন না, গান্ডু। তোকে লালুভুলু হতে হবে, সেটা বলছি না। তোকে লালুভুলু সাজতে হবে।”

-  “মানে!?”

-  “জানতাম বুঝতে পারবি না। শোন মেয়েদের কাছে সবসময় লালুভুলু টাইপের সেজে থাকবি। আর পারলে মাঝে মাঝে সেন্টু দিবি। আবার সেন্টু বুঝিস তো?” তাপসের প্রশ্নের উত্তরে ও কেবল একবার ঘাড়টা নাড়ল। তাপস খুশী হয়ে আবার বলতে শুরু করল, “গুড। তারপর শোন। যখন কথা বলবি তখন বুঝেশুনে, মেপে কথা বলবি। যেন ওরা তোর আসল চেহারাটাকে বুঝতে না পারে।”

তাপসের কথা ও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে। কিন্তু প্রথমেই হোঁচট খেতে হয়েছিল ওকে। মেয়েটা বুদ্ধিমতি তাতে সন্দেহ নেই। ও ভুল করে অফিসের কথা বলে ফেলেছিল। টপ করে সেটা ধরে ফেলেছে। সামাল দিতে হাজারটা মিথ্যে কথা বলতে হয়েছে। তাতে বিশেষ আফসোস কিছু নেই। মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব তো হয়ে গেল। এবার থেকে শুধু ওর সঙ্গেই নয়, সবার সঙ্গেই এই অ্যাপে সাবধানে কথা বলতে হবে। তবে অ্যাফ্রোডাইটের বিষয়েও ও অনেক কিছু জানতে পেরেছে। তার বয়স ২৩ আর কলকাতায় থাকে সেটা তো ওর প্রোফাইল থেকেই জানতে পারা গেছিল। এছাড়াও আরো অনেক কিছুই জানতে পেরেছে। যেমন মেয়েটা কলেজে পড়ে। যদিও কলেজের নামটা বলেনি। বাড়িতে মা-বাবা আর ভাইয়ের সঙ্গে থাকে। ভাই স্কুলে পড়ে। ইত্যাদি আরো অনেক কিছুই। একবার ওর ইচ্ছা হয়েছিল বাড়ির ঠিকানাটা জানার, কিন্তু সাহসে কুলায় নি। প্রথম দিনেই বাড়ির ঠিকানাটা জানতে চাওয়াটা বোকামি হয়ে যেত। সেই ভেবেই আর চায় নি। যাই হোক যা যা ইনফরমেশন পাওয়া গেছে, তাতেই যথেষ্ট।
 
বিছানায় আধশোয়া হয়ে যখন ও ফোনে ওর আর অ্যাফ্রোডাইটের চ্যাটগুলো পড়ছিল, তখনই রাই ঘরে ঢুকল। ওকে ঘরে ঢুকতে দেখে চমকে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মূহুর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিল। রাইকে দেখে ফোনটা রেখে দিলেই সন্দেহ করতে পারে ভেবে ফোনটা হাতেই ধরে রাখলসুখের থেকে শান্তি অনেক, অনেকটাই ভালো। সে যাই হোক। রাই কিন্তু অতশত লক্ষ্য করেনি। ও সোজা হাত-পা-গলা মুছে বসে পড়ল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। এখন ও চুল আঁচড়াবে। তারপর শুতে আসবে। রাই এখন ওর দিকে পিঠ করে বসে আছে। সাহস একটু বাড়ল। অল্পক্ষণ অ্যাপটায় এদিক ওদিক ঘুরল। ঠিক এই সময় রাই কিছু একটা কথা বলল। ওর মন ওদিকে না থাকায় কথাটা ও শুনতে পেল না। রাই আবার আগের মতোই বলল, “কই গো, শুনছো, আমি কি বলছি?” এবারে কথাটা ওর কানে ঢুকল। কিন্তু ফোন থেকে চট করে চোখটা সরাতে পারল না। সেইভাবেই ও উত্তর দিল, “বলো, শুনছি।” ওর এই কথাতে রাই কেন যে এত রেগে গেল ও বুঝতে পারল না। রাই তৎক্ষণাই চুল আঁচড়ানো থামিয়ে দিয়ে পিছন ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে একপ্রকার খেঁকিয়ে উঠে বলল, “না। তুমি শুনছো না। ফোনটা রাখবে? নাকি জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবো ওটাকে?” এরপর আর বিপদ বাড়ায় কোন বোকা? ও-ও বাড়াল না। সুবোধ বালকের মত অ্যাপটা থেকে বেরিয়ে এসে ফোনটাকে বিছানায় রেখে দিয়ে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভালো মানুযের মত গলা করে বলল, “বলো, কি বলছিলে?” রাই এবার খুশী হল মুচকি হেসে আবার ওর দিকে পিছন ফিরে চুলে বিনুনি করতে শুরু করল। তারপর বলল, “বলছিলাম, তপতী আবার কনসিভ করছে।” কথাটা শুনে ও প্রথমে বুঝতে পারল না, রাই আসলে কার কথা বলছে। ও একটু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, “কে?” রাই আগের মতই চুলে বিনুনি করতে করতেই জবাব দিল, “আরে তপতী। আমার বন্ধু। ঐ যে, কসবার ওদিকে থাকে।” হ্যাঁ, এইবার মনে পড়েছে। উফ্! আবার ঐ মহিলা! রাইয়ের একমাত্র বন্ধুযেমন ন্যাকা, আর ঠিক তেমনই গায়েপড়া। দেখলেই গা জ্বলে যায়। সেকথা আবার রাইকে একদম বলা যাবে না। ঐ তপতী না কি, ও হচ্ছে রাইয়ের প্রাণের বন্ধু। বরের হাজারটা নিন্দে মুখ বুজে সহ্য করে নেবে, কিন্তু বন্ধুর আধখানা নিন্দেও সহ্য করবে না। উল্টে চারখানা কথা শুনিয়ে দেবে। তো, সে কনসিভ করছে, তাতে ওর কি? রাইয়ের সবেতেই আদিখ্যেতা। কিন্তু সেকথা ওকে বুঝতে দিলে চলবে না। তাহলেই অনিবার্য কুরুক্ষেত্র। স্বাভাবিক স্বরেই ও জিজ্ঞাসা করল, “যার বর ফাইনান্সে কাজ করে?” রাই ঘাড় নেড়ে কনফার্ম করে বলল, “হ্যাঁ গো।” কাজ নেই আর! মুখটা একটু বেঁকিয়ে ও আবার প্রশ্ন করল, “ওর একটা মেয়ে আছে না?” রাই আবার আগের মতই ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল, “আছে তো। আমাদের বাবানের থেকে বছর খানেকের বড়ো” এই কথাবার্তা আর ওর ভালো লাগছে না। ও বিছানায় শুতে শুতে বলল, “এত বছর পর আবার ইস্যু নিচ্ছে?” রাইয়ের এতক্ষণে চুল বাঁধা শেষ। এখন ও ঘাড়ে, গলায় পাউডার মাখছে। এত রাতে এত সাজার কি দরকার ও বুঝতে পারছে না। যাই হোক রাই আবার আগের মতই জবাব দিল, “তবে আর বলছি কি? আমিও তো ওকে একই কথা বললাম।” বিরক্তিকর কথাবার্তা! ও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। এবার একটু ঘুমের নাটক করতেই হবে। তা নাহলে রাইয়ের হাত থেকে নিস্তার নেই। বকবক করে মাথা খারাপ করে দেবে। তাই কথাটা একপ্রকার শেষ করার জন্যই ও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে বলল, “বড়লোকেদের কথা ছাড়ো। ওরা দুটো কেন চারটে ইস্যুও নিতে পারে ইচ্ছে হলে।” কিন্তু বিধি বাম! এত সহজে রাই চুপ করার মেয়ে নয়। সাজাগোজা শেষ করে ঘরের বড়ো আলোটাকে নিভিয়ে দিয়ে নাইট ল্যাম্পটাকে জ্বেলে দিল। ও চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে শুয়ে রইল। কিন্তু কপাল আজ নেহাতই খারাপ। এত সহজে রেহাই দেবে না রাই। ওর পাশে এসে শুলো। অন্যদিন বাবানকে মাঝে দিয়ে নিজে অন্য ধারে শোয়। হাত ধরে টানলেও কাছে আসেনা। আজ আবার ন্যাকামো করে বাবানকে সরিয়ে দিয়ে নিজে ওর পাশে শুলো। তারপর মুখটাকে ওর কানের কাছে এনে ফিস ফিস করে বলল, “কি গো, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?” উফ্ কি জ্বালাতন! এখন একদম বকবক করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু কথা না বলেও উপায় নেই। তাই ইচ্ছে করেই গলাটাকে একটু ঘুমের মত জড়িয়ে বলল, “না। বলো।” হঠাৎ করেই ও টের পেল রাই ওর পিঠে নিজের মুখটা ঘষছে। কি করতে চাইছে ও? তারপর বলল, “আমরাও একটা নেবে?” এইটাই ভয় পেয়েছিল ও। মেয়েছেলের বুদ্ধি আর কি হবে? চিরকাল পরের দেখে নেচে এসেছে। আজও তাই। ও আরও ঘুম জড়ানো গলা করে বলল, “কি?” এতেও শেষ নেই। রাই এবার ওর শরীরের উপরে উঠে এল প্রায়। অন্যদিন ওকে কত সাধ্যসাধনা করতে হয়। আর আজ দেখো? হঠাৎ নিজের কানের লতিতে একটা ভেজা ভেজা স্পর্শ টের পেল। রাই কি ওর কানের লতিটা চাটল? হবে হয়তো। কিন্তু না। ওর ফাঁদে একদম পা দেওয়া যাবে নাআগে জানলে ফেরার পথেই কিনে আনত। আজ বেশ সুযোগ। কিন্তু ঘরে একটাও স্টকে কন্ডোম নেই। রিস্ক নেওয়াটা বোকামি হয়ে যাবে। যখন রাই নিজে থেকে এতটা ডেসপারেট হয়ে আছে। “কি আবার! বলছি আরেকটা ইস্যু নেবে?” রাই আবার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল। এবার আর এসব বাড়তে দেওয়া যায় না। ও হাত দিয়ে কানটাকে একবার মুছে নিয়ে বলল, “ঘুমিয়ে পড়ো, রাই। অনেক রাত হয়েছে” কিন্তু সবই ওর কপাল। এত সহজে এসব থামার নয়। রাই এবার সরাসরি ওর বুকে হাত রাখল। আঙুল দিয়ে ওর বুকে দাগ কাটতে কাটতে বলল, “বলো না। নেবে আরেকটা ইস্যু?” আর নয়। এবার রাইকে থামাতেই হবে। তা নাহলে ও নিজেকে থামাতে পারবে নাআর রাই ঠিক এটাই চাইছে। কিন্তু ও কিছুতেই এটা হতে দেবে না। নিজের বুক থেকে রাইয়ের হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিল ও। তারপর পাশবালিশটাকে শক্ত আঁকড়ে ধরে বলল, “আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। কাল সকালে আবার উঠতে হবে। এখন ঘুমাতে দাও।”
 
হঠাৎ করে কেন যে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল প্রথমে ও বুঝতেই পারল না। কেনই বা ভাঙ্গল সেটাই শুরুতে বুঝতে পারল না। পাশ ফিরে দেখল বাবান অকাতরে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু রাই কোথাও নেই। তাহলে কি বাথরুমে গেছে? হবে হয়তো। কি মনে হতে ফোনটা একবার হাতে নিল। অ্যাপটা ইন্সটল করার পর থেকেই কেমন যেন একটা নেশার মত হয়ে গেছে। লকস্ক্রিণে চোখ পড়তে দেখল দুটো বেজে তেত্রিশঅনেকটাই রাত হয়ে গেছে। অ্যাপটা একবার খুলল। কি মনে হতে সোজা চলে গেল এইসেথের প্রোফাইলে। দেখল সে এখন অ্যাকটিভ আছে। কথা বলার লোভটা সামলাতে পারল না। চ্যাটে লিখে পাঠাল, “এত রাতেও ঘুমাও নি?” তড়িৎগতিতে জবাব এল, “আমি না ঘুমালে কার কি?” কথাটার মধ্যে কেমন যেন একটা অভিমানের গন্ধ পাওয়া গেল না। এমন মাছই তো ছিপে গাঁথা দরকার। ও তাড়াতাড়ি লিখল, “কারোর কিছুই না হতে পারে। কিন্তু তোমার নিজের তো অনেক কিছুই।”

-  “তুমি নিজেও তো এখনও ঘুমাওনি, আবার আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো?” উফ্ কি মেয়ে রে বাবা! কি চ্যাটাং চ্যাটাং বুলি!

-  “জ্ঞান দিচ্ছি না, তোমার ভালো চাই, তাই বললাম।” নিজেকে গুড বয় প্রমাণ করার চেষ্টা করল।

-  “তুমি আমাকে চেনো?” সরাসরি এই প্রশ্নে হোঁচট খেল ও।

-  “না। তা চিনিনা।”

-  “তাহলে আমার সম্পর্কে ভাবতে তোমাকে কে বলেছে? আমার সম্পর্কে কাউকে কিচ্ছু ভাবতে হবে না। I am strong enough to fight alone.কথাতেই স্পষ্ট কিছু একটা হয়েছে।

-  “তুমি কি কিছু বিষয়ে ডিস্টার্বড?” প্রশ্নটা না করে ও পারল না।

-  “কেন বলোতো?” মেয়েটা উত্তর কিন্তু দিয়ে যাচ্ছে। ছাড়ছে না।

-  “না। তোমার কথা থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে।” কয়েক মূহুর্তের নীরবতা। তারপর জবাব এল,

-  “হ্যাঁ। আমি একটু ডিস্টার্বড। But You don’t need to bother about this at all.

মনে মনে একটু হলেও খুশীই হল ও। মেয়েটার কথা থেকেই পরিষ্কার কিছু একটা হয়েছে। এটাই সুযোগ। সিমপ্যাথি দেখিয়ে বন্ধুত্বটা পাতাতেই হবে। বাহ্যজ্ঞান ভুলে গিয়ে ফোনের স্ক্রিণের উপরে ঝুঁকে পড়ে টাইপ করতে লাগল সুনির্মল।
[Image: 20240303-191414.png]
[+] 5 users Like রতিদেবী's post
Like Reply
#95
খুব সুন্দর হচ্ছে, চালিয়ে যাও।
Like Reply
#96
চরিত্র গুলো এতটাই জীবন্ত হয়ে উঠেছে মনে হচ্ছে চোখের সামনে ঘটনা গুলো ঘটছে।
Like Reply
#97
আয়ুষী – প্রচন্ড জোরে খিদে পাচ্ছে। খিদের চোটে মাথাটা পর্যন্ত ধরে আছে। সেটাও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ও বুঝতে পারছে না, এই মূহুর্তে ওর ঠিক কি করা উচিত। সন্ধ্যে থেকে তিন্নিকে বার বার ট্রাই করে যাচ্ছে তার ফোনে। কিন্তু বারবার সুইচড অফ আসছে। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছিল ও। কিন্তু শেষবার আরো একটা ট্রাই করে দেখলে হতো না? ফোনটা হাতে নিয়েও সেটাকে রেখে দিতে বাধ্য হল ও। ভুলেই গিয়েছিল চার্জ শেষ হয়ে গিয়ে ওর নিজের ফোনটাই সুইচড অফ হয়ে গিয়েছে। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ফোনটাকে চার্জে বসাল। তারপর আবার ফিরে এসে বসল বিছানায়। খিদেটা এবার সত্যিসত্যিই মাত্রাছাড়া মনে হচ্ছে। না খেলেই নয়। অনিচ্ছা সত্তেও বিছানা থেকে আরো একবার উঠে গিয়ে রুমের বাইরে গেল। ডাইনিং টেবিলে ওর খাবার ঢাকা আছে অন্যান্য দিনের মতই। চুপচাপ গিয়ে বসল। তারপর একটার পর একটা ঢাকা খুলে খাবার খেতে শুরু করল। খেতে ইচ্ছে করছে না যদিও, তবুও জোর করে খাচ্ছে। খাবারগুলো যেন ওর গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। কষ্ট করে গিলতে হচ্ছে খাবারগুলোকে। তবুও ও কিন্তু খাওয়া থামাল না। খেতে খেতে ওর মনে পড়ে যাচ্ছিল এক একটা ঘটনা।

গঙ্গার ঘাটের সেদিনের সেই ঘটনার পরে কেটে গেছে বেশ কিছুটা সময়। ওরা দুজনেই একই কলেজে ভর্তি হয়েছে। সেদিনের সেই ঘটনা নিয়ে ওর কেউ কোনো কথা বলেনি। তিন্নির মত ছটফটে একটা মেয়েও এই ঘটনাটাকে যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। সেদিনের পর থেকে ওর কিন্তু আর ঘনিষ্ঠ হয়নি। বা বলা ভাল ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পায়নি। এই ভাবেই টুকটুক করে কেটে যাচ্ছিল ওদের দিনগুলো। পড়াশোনা, কলেজ, টিউশনি, গান, প্রোগাম, খুনসুটি, আনন্দ সব কিছুই চলছিল পূর্ণগতিতে। সেইদিনটার কথা ওর আজও পরিষ্কার মনে আছে। দিনটা ছিল দোলের দিন। ও ছোটোবেলা থেকেই দোল খেলতে যেত তিন্নিদের বাড়িতেই। ছোটোবেলায় কেবল ওরা দুজনেই খেলত। পরে অন্যান্য বন্ধুরাও জড়ো হত এক এক করে। এখন ওদের ব্যান্ডের অন্য বন্ধুরাও যোগ দেয় ওদের সাথে। সারাদিন রঙ খেলা, চুটিয়ে আনন্দ, এর ওর পিছনে লাগা, খাওয়া, আড্ডা, ঘুম সবই হয়। সেবারেও দোলের দিন সকাল সকাল ও তিন্নিদের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি। তারপর এক এক করে অন্যান্য বন্ধুরাও হাজির হল তিন্নিদের বাড়িতে। শুরু হল রঙ খেলা। এরকম আনন্দ আর উচ্ছাস এর আগে কোনো দিন হয়নি। সব কিছুই ঠিক মত চলছিল। বাধ সাধল একটা জায়গায়। তিন্নির দাদা তমাল ওদের সবার জন্য লুকিয়ে নিয়ে এল ভাং-এর সরবত। এই জিনিলটির কথা ও আগেই শুনেছিল। তাই ও প্রথমে খেতে রাজী হয়নি। কিন্তু বন্ধুরা সবাই যখন জোর করল তখন না বলে আর থাকতে পারল না। তার উপরে তিন্নি সরবত ভরা গ্লাসটা প্রায় ওর ঠোঁটের কাছে ধরে বলল, “খা না, একগ্লাসে কিস্যু হবে না। এই দ্যাখ, আমি খাচ্ছি।” বলে তিন্নি নিজের গ্লাসটায় চুমুক দিল। ওর দেখাদেখি এবং বাকীদের জোরাজুরিতে ওকেও গ্লাসের ঠান্ডা সরবতে চুমুক দিতে হল। প্রথম প্রথম খেতে বেশ ভালোই লাগছিল। কিন্তু মুশকিল হল খাওয়ার একটু পর থেকেইমাথাটা প্রথমে জোরে জোরে ঘুরতে শুরু করল। গাটা প্রচন্ড গোলাতে আরম্ভ করে দিল। মনে হতে লাগল পেটের নাড়িভুঁড়িগুলো সবশুদ্ধ যেন পাক খাচ্ছে। ও আর নিজেকে সামলাতে পারল না। হড় হড় করে বমি করে দিল। পেট থেকে সবটা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও শরীরটা কেমন যেন আনচান করতে লাগল। ততক্ষণে ওকে নিয়ে হুলস্থূল পড়ে গেছে। তিন্নি ওর চোখে মুখে ঘাড়ে জল ঢালছে। বাকী বন্ধুরা ওকে সামলাতে ব্যস্ত। অবশেষে তিন্নি একাই ওকে সামলাল। ধরে ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ওরই বিছানায় শুইয়ে দিল। তিন্নি যখন চলে আসছে ও তখন খপ করে ওর হাতটা ধরে জড়ানো গলায় বলেছিল, “আমায় একা ছেড়ে যাস না, তিন্নি।” তিন্নিও পাল্টা ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলেছিল, “আমি এখানেই আছি। তোর কাছে। আমি কোত্থাও যাচ্ছি না।” তিন্নির কথাটা শুনে ও পরম শান্তিতে চোখ বুজেছিল।

চোখ যখন খুলল, তখন বেলা গড়িয়ে দুপুর। মাথাটা ভারী হয়ে আছে এখনও। প্রথমে বুঝতে পারেনি, ও এখন ঠিক কোথায়। বিছানার উপরে বসে কপালের দুপাশে রগটাকে দু আঙুলে করে শক্ত করে ধরল। মাথাটা একবার টনটন করে উঠল। ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারল না, এটা কোথায়। ঠিক তখনই ওর পিছন থেকে দরজা খোলার শব্দ হল আর তারপরেই শোনা গেল, “তাহলে ঘুম ভাঙ্গল মহারাণীর?” তিন্নির গলা শুনতে পেয়ে ও পিছন ফিরে তাকাল। সত্যি করেই তিন্নি ঘরে ঢুকছে। হাতে একটা চাপা দেওয়া বড় বাটির মত কিছু একটা। সেটাকে টেবিলের উপরে রেখে ওর পাশে এসে বসল তিন্নি। তারপর মুচকি হেসে ওকে বলল, “উফ্ খেল দেখালি বটে, একটা। পেন্নাম করি তোকে। আর যদি কখনও তোর সাথে দোল খেলি। হাড়ে হাড়ে শিক্ষা হল একটা।” দোলের কথা বলতেই এক এক করে সব কথাই মনে পড়ে গেল ওর। লজ্জাও লাগল একটু। ওর জন্য বন্ধুদের, বিশেষ করে তিন্নির দোলের আনন্দটা মাটি হয়ে গেছে, এটা ভেবেই ওর মনে লজ্জা হল একটু হলেও। কিন্তু এতে ওর তো কিছু করার নেই। খসখসে গলায় বলল, “কটা বাজে রে এখন?”

-  “দেড়টা বাজতে যাচ্ছে।” তিন্নি উত্তর দিল।

-  “তোর চান হয়ে গেছে?” জিজ্ঞাসা করল।

-  “কখন। তোর ওরকম হওয়ার পরেই বাবা জানতে পেরে ছুটে এল। তারপর দাদাকে কি বকুনিটাই না দিল। তে দেখে বাকীরাও সব সুড় সুড় করে কেটে পড়ল। আমি আর কি করি, চান সেরে খেয়ে নিলাম।” একটানা বক বক করে থামল তিন্নি। তারপর অল্প একটু নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল, “মা তোর জন্য একটু স্টু করে দিয়েছে। পাঁউরুটি দিয়ে খেয়ে নে। তার আগে চান করে নে।”

-  “ভাল লাগছে না।” বলে আরো একবার বিছানায় গা এলিয়ে দিল ও।

-  “ভাল লাগছে না মানে? চানটা করে নে, দেখবি ফ্রেশ লাগবে। গায়ে আবীর লেগে রয়েছে। চান করে নে। তারপর স্টু টা খেয়ে নে।” তিন্নি একটানে বলল।

-  “তোর কাছে সিগারেট হবে?” বালিশে মাথা রেখে জানালার বাইরে চোখ রেখে বলল ও।

-  “কি?!” তিন্নি এমন চোখ গোল গোল করে ওর দিকে তাকাল যেন ও সিগারেট নয়, বিষ চাইছে।

-  “সিগারেট। আছে?” শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল ও।

-  “না নেই। তুই এখন ওঠ তো। চানটা করে নে। স্টু টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।” তিন্নি অযথাই তাড়া লাগাল।

-  “নীচে থেকে তোর বাবার প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আয়। দেশলাইটা আনতে ভুলিস না যেন।” তিন্নির দিকে পাশ ফিরে আলস্য জড়ানো গলায় বলল ও।

-  “এঃ কেমন রাণীর মত অর্ডার করছে দেখো। আমি পারবেো না। বাবা জানতে পারলে চাবকে আমার পিঠের ছাল তুলে দেবে।” তিন্নি গাল ফুলিয়ে বলল।

-  “দেরী করিস না। তাড়াতাড়ি যা।” এবার ও পাল্টা তাড়া লাগাল।

তিন্নি গজগজ করতে লাগল। কিন্তু ঠিক উঠে নিচে চলে গেল। ও জানত তিন্নির ওর কোনো কথাই ফেলতে পারে না। একটু পরেই আবার ফিরে এল ও। ঘরে ঢুকেই আগে দরজাটা বন্ধ করে দিল। তারপর ওর দিকে সিগারেট আর দেশলাইয়ের প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল, “তাড়াতাড়ি এসব করে চান টা করগে যা। তোর পায়ে পড়ি।” ও কিন্তু তাড়া দেখাল না। বরং উল্টে ধীরে সুস্থে বিছানায় উঠে বসে সিগারেটটা ধরাল। তারপর একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল, “টানবি?” তিন্নি মুখ ঘুরিয়ে বলল, “আমি তো আর তোর মত খেপে যাইনি।” ও উত্তরে কিছু বলল না। নীরবে সিগারেটটা টানতে লাগল। তারপর একসময় সেটাকে শেষ করে জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। তিন্নি এবারে বলল, “হয়েছে? এবার দয়া করে চানটা করে নে।” ও এবারও কোনো উত্তর দিল না। কেবল ওর দিকে তাকিয়ে রইল। তিন্নি অস্থির হয়ে বলল, “কি?!” উত্তরে ও তিন্নির একটা হাত ধরে নিজের দিকে টানল। তিন্নির পাতলা শরীরটা অনায়াসে ওর উপরে এসে পড়ল। আর কোনো ভণিতা না করেই, সরাসরি নিজের ঠোঁটদুটোকে মিশিয়ে দিল তিন্নির নরম ঠোঁটদুটোর সাথে। তিন্নি যে খুব একটা বাধা দিল, সেটা অবশ্য বলা যায় না। বরং দুটো শরীর অনায়াসে একে অন্যের সাথে মিশে গেল।
 
খাওয়া শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে আবার নিজের ঘরে ফিরে এল। মনটা এখনও শান্ত না হলেও, খাওয়া হতেই শরীরটা কিন্তু অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে। চার্জ থেকে ফোনটা খুলে নিয়ে আরো একবার তিন্নির নাম্বারটা ডায়াল করল। কিন্তু না। এখনও সেটা সুইচড্ অফই বলে যাচ্ছে। এমনও হতে পারে, ওর নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছে। সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু বাস্তব কোনটা সেটা ও এই মূহুর্তে বুঝতে পারল না। মনটা আগের মতই খারাপ রইল। অনেক রাত হয়েছে। এবার একটু বিশ্রাম নেওয়া উচিত। শরীরটা খুবই ক্লান্ত লাগছে। ফোনটাকে রেখে দিতে গিয়েও পারল না। কিছু একটা মনে করে সোজা অ্যাপটায় লগইন করল। রাত্রি আড়াইটে পেরিয়ে গেছে। এইসময় কারোর সাথে গল্প করার মানসিকতা ওর নেই। কেবলই একবার কৌতুহলবশত অ্যাপটায় ঢুকল। আর ঠিক তখনই হঠাৎ করে একটা মেসেজ ওর অ্যাপে ঢুকল। কিছুটা অনিচ্ছা আর বাকীটা বিরক্তি নিয়েই চ্যাটটা খুলল ও। দেখল কিউপিড ওকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। খুলে দেখল লেখা রয়েছে, “এত রাতেও ঘুমাও নি?” অতি সাধারণ একটা প্রশ্ন। কিন্তু ওর মনে হল এই কিউপিড কি ওকে স্টক করছে? হতেও পারে। এই ওঁচাটে ছেলেগুলোর আর কাজই বা কি আছে। এত রাতেও শান্তি নেই। মেয়ে দেখলেই গায়ে পড়ে কথা বলতে ছাড়ে না। এখন ওর উত্তর দেওয়ার একদমই ইচ্ছা ছিল না। তা সত্তেও ও লিখল, “আমি না ঘুমালে কার কি?” কথাটা কেন লিখল ও নিজেও জানে না। তিন্নির সঙ্গে আজকের এই ঘটনাটা ঘটার কারণে কি ও একটু বেশীই ইমোশনাল হয়ে পড়েছে? এই কথাটাই ও চিন্তা করছিল। কিন্তু আরো একটা মেসেজ এসে ওর চিন্তার জালটাকে শতচ্ছিন্ন করে দিল। আনমনা হয়েই ও দেখল লেখা রয়েছে, “কারোর কিছুই না হতে পারে। কিন্তু তোমার নিজের তো অনেক কিছুই।” আজ দেখছি সবাই ওকে জ্ঞান দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। সবাই কি ওকে এতটাই অ্যাভয়েলেবল ভেবে নিয়েছে? মাথাটা চট করেই গরম হয়ে গেল। এর উত্তর না দিতে পারলে শান্তি পাবে না ও। কড়া করে উত্তরটা লিখে পাঠাল, “তুমি নিজেও তো এখনও ঘুমাওনি, আবার আমাকে জ্ঞান দিচ্ছো?” ও ভেবেছিল এতেই কাজ হবে। কিন্তু না। হল না। ছেলেটা আবারও একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। “জ্ঞান দিচ্ছি না, তোমার ভালো চাই, তাই বললাম।” পড়েই গোটা গা জ্বলে গেল! ভালো চাই! সবাই ওর ভালো চায়। কিন্তু একজন ছাড়া। মাথাটা আবারও টিপটিপ করে ব্যথা হতে শুরু করেছে। রগদুটোকে আরো একবার শক্ত করে টিপে ধরেও শান্তি পেল না। তাড়াতাড়ি টাইপ করল, “তুমি আমাকে চেনো?” প্রায় সাথেসাথেই উত্তর এল, “না। তা চিনিনা।” ঝড়ের গতিতে টাইপ করল, “তাহলে আমার সম্পর্কে ভাবতে তোমাকে কে বলেছে? আমার সম্পর্কে কাউকে কিচ্ছু ভাবতে হবে না। I am strong enough to fight alone.” নিজের মনের বিষবাষ্পটাকে মেসেজে লিখতে পেরে ভালো লাগল একটু হলেও। কিন্তু কপাল এতটাও ভালো নয় ওর। এ ছেলে পিছু ছাড়ার নয়। এতকিছু লেখার পড়েও হার মানেনি। উল্টে লিখে পাঠিয়েছে, “তুমি কি কিছু বিষয়ে ডিস্টার্বড?” লেখাটা পড়ে এক মূহুর্তের জন্য হলেও থমকাল ও। সে কি করে বুঝতে পারল ও ডিস্টার্বড? “কেন বলোতো?” সামান্য হলেও ভণিতা করে ও লিখল। উল্টো দিক থেকে জবাব এল, “না। তোমার কথা থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে।” ও আর পারল না। শরীর আর মন দুটোই একইসাথে জবাব দিয়ে দিল। শ্রান্ত আঙুলে ও লিখল, “হ্যাঁ। আমি একটু ডিস্টার্বড। But You don’t need to bother about this at all.” ছেলেটা লিখে পাঠাল, “দেখো, তুমি আমাকে চেনোনা। আমিও তোমাকে চিনিনা। তবুও যদি তুমি আমাকে তোমার বন্ধু বলে মনে করো, তাহলে খুলে বলতে পারো।” লেখাটা পড়ে এক মূহুর্তের জন্য মনটা এলোমেলো হয়ে গেল। আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকেই ও বিশ্বাস করেনি। বন্ধুত্বও করেনি মন থেকে। তিন্নিকেই ও নিজের একমাত্র বন্ধু বলে মেনে এসেছে এতদিন। ভালবেসে এসেছে মন থেকেই। জানে না এটা ভালো, নাকি খারাপ। পাপ, নাকি পূণ্য? কিন্তু এই ছেলেটার সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে একে বিশ্বাস করা গেলেও যেতে পারে। ইচ্ছে করছে এর কাছে সব কিছু খুলে বলতে। কিন্তু বাধ সাধছে ওর মনওর শরীর। ওর চিন্তা। আর পারল না। হাল ছেড়ে দিল ও। ক্লান্ত আঙু্লে টাইপ করল ও, “আজ থাক। অন্য একদিন বলবো। সব খুলে বলবো তোমায়। তবে আজ নয়। খুব ক্লান্ত লাগছে। বাই।” প্রায় সাথে সাথেই উত্তর এল, “বাই। গুড নাইট।” উত্তরটাকে ইগনোর করে আয়ুষী বেরিয়ে এল অ্যাপটা থেকে। ফোনটাকে সুইচড অফ করে অনাদরে ছুঁড়ে ফেলে দিল বিছানার একপাশে। তারপর ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিল বিছানার উপরে। শারীরিক আর মানসিক ক্লান্তি চোখদুটো বুজে এল নিজে থেকেই। অবশেষে আরো একটা অভিশপ্ত, ক্লান্তিকর আর একঘেয়ে দিনের পরিসমাপ্তী ঘটল এভাবেই। নীরবে। নিশ্চুপে। অনাদরে। অপমানে। অভিমানে।

~ অত্র তৃতীয়োৎধ্যায়ঃ সমাপ্তঃ ~
[Image: 20240303-191414.png]
[+] 5 users Like রতিদেবী's post
Like Reply
#98
দারুণ হচ্ছে, চালিয়ে যাও।
Like Reply
#99
পরিচ্ছদ ৪ - পরাবাস্তব

অনুরাধা – আজকের সকালটাই শুরু হল একদম অন্যরকম ভাবে। সাধারণত সপ্তাহের বাকী দিনগুলোর তুলনায় রবিবারটা একটু হলেও অন্যরকম ভাবেই শুরু হয়। সপ্তাহের একমাত্র ঐদিনই ঘুম থেকে ওঠার তাড়া থাকে না। বাবানের স্কুলে এদিক ওদিক থেকে মাঝে মধ্যেই ছুটি থাকলেও, সু-এর বেসরকারী অফিসে ছুটি হাতেগোণাই থাকে। তাই রবিবারটা ওদের জন্য একটা আলাদা মাত্রাই এনে দেয় দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবনে। এইদিন বাবান বা সু-এর একদমই তাড়া থাকে না। তাই বাপ-বেটার চোখ খুলতে খুলতে কোনোদিন ন’টা কোনো কোনদিন আবার সাড়ে ন’টাও বেজে যায়। কিন্তু ওর ওর কপালে এত সুখ নেই। এত বেলা অবধি বিছানা আঁকড়ে শুয়ে থাকলে ওর হবে না। শাশুড়িকে সকাল সকাল ঘুম থেকে তুলে পেচ্চাপ-পায়খানা করানো। ব্রাশ করানো। চা-জলখাবার খাওয়ানো। তারপরে শুরু হয় সংসারের হাজারো একটা ঝক্কি। আর বাড়িতে সারাদিন বাপ-বেটা একসাথে উপস্থিত থাকলে তো আর কথাই নেই। “মা এটা খাবো – মা ওটা খাবো!” “রাই, এটা করে দাও – রাই, ওটা করে দাও।” এসব লেগেই থাকে। তাই রবিবারের সারাটাদিন একপ্রকার ব্যস্ততার মধ্যেই কেটে যায় ওর। সত্যি করেই ওর মত সব হাউসওয়াইফদেরই ছুটির দিন বলে আসলে কিছুই হয় না। কিন্তু ওর এই ব্যস্ততাটা কিন্তু ভালোই লাগে। সারাদিন জুড়ে বাবানের পিছনে ছোটাছুটি। আলগা বকুনি। সু-এর সাথে খুনসুটি। রাগ। এই নিয়েই কেটে যায় একটা গোটা রবিবার। আবার এসবের জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরো সাত সাতটা দিনের। এই দুজন ছাড়া যে ওর দুনিয়া অচল ও সেটা ভালো করেই জানে। আর তাই মনে মনে এই রবিবারের পথ চেয়ে বসে থাকে সারাটা সপ্তাহ ধরে। ব্যস্ততা সত্তেও এই রবিবারের দিনটায় ঘুম থেকে উঠতে ওর নিজেরও একটু দেরী হয়ে যায় অন্যান্য দিনের তুলনায়। কিছুটা আলস্য আর কিছুটা গড়িমসি নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে ইচ্ছা করে। যদিও সেটা খুব বেশী সময়ের না হলেও, কিছুটা আরাম তো বটে। এইটুকুই যথেষ্ট ওর জন্য। গতকাল রাতে শুতে শুতে একটু বেশীই দেরী হয়ে গিয়েছিল। গতকাল সু অফিস থেকে ফিরে ওদেরকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল। বর আর ছেলের হাত ধরে ঘুরতে বেরানোটা ওর জীবনে অলীক না হলেও দূর্মূল্য তো বটেই। আলেকালে সু-এর ইচ্ছা হয় বউ-ছেলেকে নিয়ে বেরোতে। যেমন গতকাল হয়েছিল। হঠাৎ করেই অফিস থেকে ফিরল একটু তাড়াতাড়ি। ফিরেই ওকে তাড়া লাগালো, “তাড়াতাড়ি করো। রেডী হয়ে নাও।” ও অবাক হয়ে বলল, “কেন?” পরণের জামার বোতামগুলোকে খুলতে খুলতে সু বলল, “অনেকদিন বেরোনো হয়নি। তাই ভাবলাম চলো আজ কোথাও ঘুরে আসি।” ঘুরতে যাওয়ার নাম শুনে বাবান তো এক পায়ে খাড়া। একলাফে প্রায় বাবার ঘাড়ে চড়ে বসে বলল, “কোথাও যাবো, বাবা?” সু মুচকি হেসে বলল, “সারপ্রাইজ!” সারপ্রাইজটা কি, সেটা বারবার জিজ্ঞাসা করা সত্তেও সু বলেনি। বরং মুখ টিপে হেসেছে। শেষপর্যন্ত ওরা মা-বেটা দুজনেই হাল ছেড়ে দিল। বাবানকে রেডী করে দিয়ে অবশেষে ও নিজে তৈরী হতে শুরু করল। কিন্তু মুশকিল হল অন্য জায়গায়। প্রতিবারেই এরকম হয়। কাবার্ডটা খুলে হাঁ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। কোনটা পরে যাবে এটা এখন বাছাই মুশকিল। চার-পাঁচটা শাড়ি বের করে বিছানার উপরে রাখল। তারপর এক এক করে সবকটার উপরেই নজর বোলাতে লাগল। কিন্তু কোনোটাই পছন্দ হল না। এদিকে সু-এর তাড়ার পর তাড়া! “কই, হলো রাই, তোমার? দেরী হলে কিন্তু সারপ্রাইজটা মিস হয়ে যাবে। আটটার মধ্যে পৌঁছাতে হবে কিন্তু।” এত তাড়া লাগালে হয় বাপু! তৈরী হতে সময় লাগবে না? অবশেষে মনস্থির করে হালকা নীল কালারের জামদানীটাকেই পছন্দ করল। সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। গত বছর অ্যানিভার্সারীতে সু ওকে গিফ্ট করা হয়েছিল। একবার না দুবার পরেছে শাড়িটা। এখন তাড়াতাড়িতে বাধ্য হয়েই ওটাকেই পরবে বলে ঠিক করল।
রেডী হয়ে যখন ঘর থেকে বেরিয়ে এল দেখল সু ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে। মুচকি হেসে ও বরকে জিজ্ঞাসা করল, “কি দেখছো অমন করে?” সু বলল, “তোমাকে। খুব সুন্দর দেখতে লাগছে।” ও লজ্জা পেয়ে বলল, “এখন দেরী হচ্ছে না?” সু এবার বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ। চলো।” তিনজনে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখল ক্যাব দাঁড়িয়ে আছে। ও যখন তৈরী হচ্ছিল সু নাকী বুক করে দিয়েছে। যদিও টাকা একটু বেশী খরচা হবে বলে ও খুঁত খুঁত করছিল, কিন্তু দেখল সু আজকে বেশ দিলদরিয়া। তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে গেলে ক্যাব ছাড়া নাকি উপায় নেই। কিন্তু কোথায় যে যাচ্ছে ছাই, এখনও সেটা সু বলেনি। তবে ক্যাবে ওঠার সময় হাতে একটা বড় প্যাকেট লক্ষ্য করল। কোনো নিমন্ত্রণ বাড়ি যাচ্ছে কি? কই, আজকে কোনো নিমন্ত্রণ আছে বলে তো ওর জানা নেই। তাহলে ওরা যাচ্ছে কোথায়? ও আর বাবান পিছনে বসল। সু বসল আগে। ওরা বসতেই ক্যাব ছেড়ে দিল। গাড়ি ছাড়তেই ও সু-কে জিজ্ঞাসা করল, “এখন তো বলো, আমরা কোথায় যাচ্ছি? তোমার হাতে গিফ্ট রয়েছে দেখতে পাচ্ছি। কোনো নিমন্ত্রণ বাড়ি নাকি?” সু একটু রহস্যময় হাসি হেসে বলল, “হ্যাঁতবে যেখানে যাচ্ছি, তার জন্যও সারপ্রাইজ। আর তোমার জন্যেও।” ও বলল, “তার মানে? যেখানে যাচ্ছি, তারা জানে না আমরা যাচ্ছি?” সু আরো একবার হেসে মাথা নেড়ে বলল, “না। জানলে আর সারপ্রাইজ কিসের?” ও বলল, “তুমি পারোও বটে।” সু আর কিছু বলল না। ও-ও আর কথা বাড়াল না। দেখাই যাক না সু কোথায় নিয়ে যায়। বা কি তার সারপ্রাইজ। এইসব চিন্তা ছেড়ে ক্যাবের জানালার বাইরে চোখ রাখল। ক্যাবের খোলা জানালা দিয়ে একরাশ হাওয়া আছড়ে পড়ছে ওর উপরে। একবার ভেবেছিল চুলটা বেঁধে একটা খোপা করবে। কিন্তু সু-এর তাড়ায় তা করে উঠতে পারেনি। শেষপর্যন্ত চুলটাকে খোলা রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও। কেবল একটা ব্যাকক্লিপ। হাওয়ার মুখে পড়ে শ্যাম্পু করা চুলগুলো অবাধ্য হয়ে এদিক ওদিক উড়তে শুরু করেছে। বারবার মুখের উপরে এসে পড়ছে। আর বারবার ও আঙুলে করে আলগোছে সরাচ্ছে। বিরক্ত লাগছে না যদিও। রাতের কলকাতার বুক চিরে এগিয়ে চলেছে ওদের ক্যাব। রাস্তায় একটু হলেও ভীড় আছে। বাঁ হাতের কব্জীটা ঘুরিয়ে ঘড়িটা দেখল। পৌনে আটটা বাজতে যাচ্ছে। সু বলছিল আটটার মধ্যে পৌঁছাতে হবে। পৌঁছানো যাবে কি? ও জানে না। জানবেই বা কি করে। সু তো বলেই নি ওরা কোথায় যাচ্ছে। তবে ক্যাব যত গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে, ততই ও আন্দাজ করতে পারছে ওরা কোথায় চলেছে। ধীরে ধীরে ও নিশ্চিত হতে শুরু করল। সঙ্গের ব্যাগটা থেকে একবার ফোনটা বের করে আজকের ডেটটা একবার চেক করল। ঠিকই আন্দাজ করেছে ও। ছিঃ ছিঃ ও তো একদমই ভুলে গেছে। যদিও অন্যান্য বছর সু ওকে মনে করিয়ে দেয়। এবছর দেয়নি। মনে মনে সত্যি করেই একটু লজ্জা লাগল। ফোনটা আবার ব্যাগে রাখতে গিয়ে চোখ আটকে গেল একটা নোটিফিকেশনে। একটু আগেই ঢুকেছে নোটিফিকেশনটা। সামনের দিকে একবার সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাল। সু এখন বাইরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার খেয়াল এখন এদিকে নেই। নোটিফিকেশেনটার উপরে আলতো করে আঙুল বোলাতেই খুলে গেল অ্যাপটা। ব্যাফোমেট মেসেজ পাঠিয়েছে। মেসেজটা খুলে পড়ল। একলাইনে লেখা রয়েছে, “প্লিজ। একবার দেখাও না।” কোনো উত্তর দিল না। চুপচাপ লগআউট হয়ে বেরিয়ে এল অ্যাপটা থেকে। তারপর ফোনটাকে আবার ব্যাগে রেখে দিলতারপর চোখ রাখল জানালার বাইরে। তিনদিন ধরে এই নতুন জ্বালাতনটা শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকদিনই হল অ্যাপটা ইউজ করছে। অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে ওর। এখনও কোনো অসুবিধে বা এমব্যারাসমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়নি ওকে। কিন্তু হঠাৎ করেই ব্যাফোমেট ওকে এমন একটা রিকোয়েস্ট করেছে, সেটা রাখা ওর পক্ষে মুশকিল। যদিও রিকোয়েস্টটা এই রকমের অ্যাপে এমন মারাত্মক কিছু নয়। বরং দেখতে গেলে মামুলিই বলা চলে। কিন্তু সেই রিকোয়েস্টটা রাখা ওর পক্ষে অসম্ভব। কথাটা ও ব্যাফোমেটকে ভালো করেই বুঝিয়েছে। কিন্তু ছেলেটা যাকে বলে নাছোড়বান্দা। কিছুতেই ওর কথা শুনতে চাইছে না। বাধ্য হয়ে ওকে এখন পাশ কাটাতে হচ্ছে। এই যেমন এখন। জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ওদের ক্যাব গন্তব্যে পৌঁছে গেছে সেটা ও বুঝতেই পারেনি। ঘোর ভাঙ্গল সু-এর ডাকে। “রাই, আমরা পৌঁছে গেছি। কই এসো।” ক্যাব থেকে নেমে ও দেখল ওর আন্দাজ একদম সঠিক মনের মধ্যে আরো একবার লজ্জাটা পাক খেয়ে উঠল। ড্রাইভারকে পেমেন্ট মিটিয়ে দিয়ে সু ওর পাশে এসে দাঁড়াল। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “চলো।” বাবান লাফাতে লাফাতে বাবার একটা হাত ধরল। তারপর বাপ-বেটা আগে আগে যেতে লাগল। ও যাচ্ছে পিছনে। গন্তব্যে পৌঁছে সু ডোরবেল টিপল। বার দুয়েক টেপার পরেই ভিতর থেকে আওয়াজ এল, “আসছি।” একটু পরেই দরজাটা খুলে গেল। দরজাটা খুলতেই সু প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “সারপ্রাইজ!!!” বাবানও একসাথে চেঁচিয়ে উঠল সারপ্রাইজ বলে। ও পিছনে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ। সু আর বাবান ঘরে ঢুকে পড়তেই ও এগিয়ে এল সামনের দিকে। তাকিয়ে বলল, “হ্যাপি বার্থ ডে, তাপস দা।” তাপসও ওর দিকে তাকিয়ে সলজ্জ স্বরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ।” তারপরে বলল, “চলো। ভিতরে চলো।”
 
চোখটা খুলতে গিয়েও পারল না। শরীরটা কেমন যেন একটু আনচান করছে। বিশেষ করে ওর দু পায়ের মাঝখানের জায়গাটা। একবার চোখ খুলেই সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিল। তারপর আবার খুলল। ঘরের মধ্যে আলো এসে পড়েছে। তার মানে সকাল হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। বিছানা থেকে উঠতে গিয়েও পারল না। সু আবার ওকে শক্ত করে ধরে শুইয়ে দিল বিছানায়। মাথাটা পাশে ঘুরিয়ে দেখল সু ওর আগেই উঠে পড়েছে ঘুম থেকে। আর শরীরের আনচান ভাবটার কারণও এক সাথে স্পষ্ট হয়ে গেল। চোখ বড়ো বড়ো করে বরের দিক তাকিয়ে ফিস ফিস করে ও বলল, “কি করছো? বাবান জেগে যাবে যে।” সু কেবল একবার চোখের ইশারা করে ওর মতই ফিস ফিস করে বলল, “উঁহু! জাগবে না। তুমি বেশী নড়াচড়া কোরো না। তাহলেই হবে।” ও আর কোনো কথা বলল না। এবার উল্টো দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল বাবান অকাতরে ঘুমাচ্ছে। ও আবার সোজা হয়ে শুল। নিজের শরীরের উপরে পাতলা চাদরটাকে টেনে নিল সাবধানতা বশত। সু ওকে বারণ করল নড়াচড়া না করতে। কিন্তু না করে কি আর উপায় আছে? চোখ থেকে ঘুম ঘুম ভাবটা অনেক আগেই কেটে গেছে। কিন্তু অবশ ভাবটা জাঁকিয়ে বসছে ওর গোটা শরীর জুড়ে। সু কখন থেকে এসব করছে কে জানে? চাদরের তলায় বুঝতে পারল প্যান্টিটাকে হাঁটু পর্যন্ত টেনে নামিয়ে দিয়েছে সু। পাখার হাওয়াটা সামান্য হলেও গিয়ে লাগছে ওর দুই পায়ের মাঝখানে। অসম্ভব ভিজে গেছে জায়গাটা। সেটা ও হাত না দিয়েও টের পাচ্ছে। কারণ ভিজে ভিজে ভাবটা তলপেট ছাড়িয়ে ওর জাং-এ এসে পৌঁছেছে। চাদরটা টেনে নিতেই সু আলগোছে ঢুকে পড়ল চাদরের তলায়। অকারণ সাহসে ভর করে আঙুল চালাতে লাগল। ভেজা গুদে আঙুল ছুঁলেই গোটা শরীরে যেন একটা কারেন্ট খেলে যাচ্ছে। সু কিন্তু একদমই তাড়াহুড়ো করছে না। খুব ধীরে সুস্থে আঙুল চালাচ্ছে। অনেকটা সেতার বাজানোর মতো। কিন্তু তাতেই ওর শরীরটা পাক খেয়ে উঠছে। নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। সু-এর আঙুলটা বারদুয়েক ছুঁয়ে গেল ওর ক্লিটটাকে। আলতো সেই ছোঁয়াতেই যেন আগুন লেগে ওর সারা শরীর জুড়ে। সামান্য হলেও একবার ঝাঁকি মেরে উঠল ওর শরীরটা। এটাতেই যেন সু টের পেল সবকিছু। ইচ্ছা করেই বার কয়েক আঙুলটা বুলিয়ে দিল ওর ক্লিটের উপরে। থাকতে না পেরে দুপায়ের মাঝখানে সু-এর আঙুলটাকে শক্ত করে চেপে ধরল ও। সু অন্য হাত দিয়ে ওর পা দুটোকে ছড়িয়ে দিল দুপাশে। তারপর আঙুলটাকে একটু একটু করে ঢুকিয়ে দিতে লাগল ভিতরে। শুধু ঢুকিয়েই শান্ত হল না সে। অল্প অল্প করে আঙুলগুলো নাড়াতে লাগল। নরম, পিচ্ছিল মাংসল দেওয়ালগুলোতে সু আঙুলগুলো যেন আঁচড় কেটে যাচ্ছে। আর স্থির হয়ে থাকা অসম্ভব। তলপেট থেকে সরু একটা জলের ধারা ওর জাং বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল নীচের দিকে। সু এর অন্য হাতটাও তখন আর শান্ত নেই। ওর হাউসকোটের বোতামগুলোকে খুলে সরিয়ে দিয়েছে দুপাশে। পাতলা চাদরটার তলায় ওর শরীরটা এখন আক্ষরিক অর্থেই নিরাভরণা। খাড়া হয়ে ওঠা মাইয়ের বোঁটাগুলোতে পালা করে করে আঙুল বোলাতে লাগল সু। শরীরটা ধনুকের মত বেঁকে গিয়েও সোজা হয়ে গেল। বিছানাটা দুলে উঠল সেই কারণে। বাবান পাশ ফিরে শুলো। একমূহুর্তের জন্য থেমে গেল শরীর দুটো। তারপর আবার সচল হল।
সু এর আঙুলগুলো এখন গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। ভেজা গুদে প্রায় লাঙল চালানোর ভঙ্গীতে এখন আঙুলগুলোকে চালাচ্ছে সে। মাঝে মাঝে ক্লিটটাকে নখে করে আঁচড়ে দিচ্ছে। শরীর উথালপাথাল করছে আরামেছলকে উঠছে সুখ। যেমন ওর তলপেটটা এখন ভরে উঠেছে মধু রসে। আবেশে নিজে থেকে বুজে এসেছিল ওর চোখদুটো। চোখ বুজেই ও অনুভব করতে পারছিল কিভাবে সু-এর আঙুলগুলো ওকে সুখের সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু এখানেই বিরতি। এক সেকেন্ডের মধ্যে থেমে গেল সু-এর আঙুলগুলো। বাধ্য হয়ে চোখ খুলল ও। চাদরের মধ্যে সু-এর শরীরটা ততক্ষণে অদৃশ্য হয়ে গেছে। অভ্যস্ত ভঙ্গীতে নিজের পা দুটোকে দুদিকে চওড়া করে ছড়িয়ে দিল। কারণ ও জানে সু এখন কি করবে। ওর আন্দাজই সঠিক হল। চাদরের মধ্যেই সু মুখ নামাল ওর নির্লোম তলপেটে। কালকেই শেভ করেছে ও। মাসে একবার ও শেভ করে। সু ওকে রেজার কিনে এনে দেয়। তাই দিয়েই কাজ সারে ও। মাসে একবার শেভ না করলে বড্ড কুটকুট করে। এদিকে সু জিভ রাখল ঠিক ওর ক্লিটটার উপরে। জিভের খড়খড়ে দিকটা দিয়ে বারকয়েক চেটে দিল ক্লিটটা। সু এর এই অভ্যেসটা ওর চেনা। বড্ড বেশী জানা। ভালো লাগে এটা ওর। গুদের চেরা বরাবার জিভটাকে বারকয়েক ওঠানামা করাল সু। আশ্লেষে চেটে নিতে লাগল আঁশটে গন্ধযুক্ত, নোনতা স্বাদের তরলটাকে। পিঠটা নিজে থেকেই বেঁকে যাচ্ছে ওর। আপনা থেকেই হাত পৌঁছে গেল সু-এর মাথায়। চুলগুলোকে খামচে ধরে ওর মাথাটাকে চেপে ধরল নিজের ভেজা গুদটার উপরে। একবারের জন্য হলেও খাবি খেল সু। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিল। তারপর পূর্ণগতিতে চাটতে শুরু করল ওর দেবভোগ্যা গুদে। “উম্মম...ম...মমম...” না চাইতেও আপনা থেকেই ওর মুখ দিয়ে গোঙানিটা বের হয়ে এল। এই মূহুর্তে বাবান উঠে পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে। শক্ত করে দাঁত দিয়ে নীচের ঠোঁটটাকে কামড়ে ধরে রাখল ও। সু-এর কিন্তু থামার কোনো লক্ষণই নেই। সে চেটেই চলেছে। আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। আন্দাজে সু-এর শর্ট প্যান্টটা টেনে খুলে ফেলল ও। চাদরের তলাতে আন্দাজে হাত রাখল বরের শক্ত হয়ে ওঠা বাঁড়াটার উপরে। এটুকু ইশারাই যথেষ্ট সু-এর জন্য। চাদরের তলা থেকে বারেকের জন্য মুখ বাড়াল ও। রাই একবার চোখের ইশারা করতেই আর সময় নষ্ট করল না সে। এক মূহুর্তের জন্য নিজের ভেজা গুদের চেরায় বরের শক্ত বাঁড়াটার স্পর্শ টের পেল ও। আর ঠিক তার পরেই এক ধাক্কায় নিজেকে ওর ভিতরে চালান করে দিল সু। ও শক্ত করে খামচে ধরল বরের পিঠটা। সু একবার চুমু খেল ওর ঠোঁটে। সামান্য হলেও জিভে একটু নোনতা স্বাদ ঠেকল। ওর নিজেরই গুদের স্বাদ! সু এখন একমনে মধ্যম গতিতে ধাক্কা মারতে ব্যস্ত।
 
হাউস কোটটাকে আরো একবার গায়ে জড়িয়ে নিয়ে, হাতে প্যান্টিটা ধরে বেডরুম থেকে বেরিয়ে এল ও। আগে চান করতে হবে। সারা গায়ে সু-এর চ্যাটচ্যাটে ‘ভালোবাসা’ লেগে রয়েছে। এগুলোকে না ধুতে পারলে শান্তি নেই। আবার ইচ্ছা করেই ওর প্যান্টিতে নিজের বাঁড়াটা মুছে পরিষ্কার করেছে। বারণ করলেও শোনে না। এই এক স্বভাব ওর। তোয়ালেটা নিতে গিয়েই চোখ পড়ল ফোনটার উপরে। চার্জে বসানো রয়েছে। চার্জ থেকে ফোনটা খুলে হাতে নিল। প্রথমেই চোখ গেল নোটিফিকেশনটার উপরেই। পিছন ফিরে একবার দেখল। এখন সু-এর ওঠার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আরো অন্তত ঘন্টা খানেক ঘুমাবেএখন আটটা বেজে তেরো। অ্যাপটা খুলতেই ব্যাফোমেটের মেসেজটা চোখে পড়ল। রাত একটা সাঁইত্রিশে পাঠিয়েছে। তখন ওরা সবে ঘরে ফিরেছে। সু-এর শরীর খারাপ হয়ে গেছিল। ওকে একাই বিছানায় শুইয়ে দিয়েছিল ও। বাবান তো ঘুমিয়ে কাদা। ক্লান্ত শরীরে আর মেসেজটা দেখা হয়নি। আসলে দেখার ইচ্ছেই হয়নি সেইসময়। ফোনটাকে চা্র্জে বসিয়ে শুতে চলে গিয়েছিল ওনজর পড়েনি ঐদিকে। মেসেজটা খুলতেই দেখল লেখা রয়েছে, “আর কতবার তোমাকে রিকোয়েস্ট করতে হবে, লিলিথ? তুমি কি আমার বিশ্বাস করতে পারছো না?” এর উত্তরই বা কি হতে পারে? কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। অবশেষে আরো একবার পিছন ফিরে বেডরুমের দিকে তাকাল ও। তারপর ছোট্ট একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ফোনটাকে হাতে নিয়েই বাথরুমের দিকে পা বাড়াল অনুরাধা।
[Image: 20240303-191414.png]
[+] 4 users Like রতিদেবী's post
Like Reply
~ দু - চার কথা ~

গল্পটা কি তার গতি হারিয়েছে? গল্পটা পড়ে কি আর আগের মত ভালো লাগছে না? একঘেয়েমি এসে গেছে গল্পটার মধ্যে? তাহলে অতি অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। গত কয়েকটি আপডেটে কমেন্টের সংখ্যা অতি নগন্য মনে হয়েছে। যাঁরা গল্পটা এখনও অবধি নিয়মিত পড়ে আসছেন। যাঁদের গল্পটি ভাল লেগেছে অথবা আগে ভালো লাগতো, এখন আর ততটাও ভালো লাগে না, তাঁদের সবাইকে অনুরোধ করছি, অতি অবশ্যই আপনাদের মতামত কমেন্ট করে জানান। আমরা কেউই এখানে নিজেদের জন্য লিখতে আসি না। আমরা লিখি আপনাদের জন্য। তাই আপনাদের একশো শতাংশ অধিকার আছে, গল্পটিকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করার (যদি তা যুক্তিযুক্ত হয়)। অল্প কমেন্টের জন্য লেখার ইচ্ছেটা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। তার ছাপ বোধহয় লেখাতেও ফুটে উঠছে। যদি গল্পটি আর ভালো না লাগে, উচ্চকণ্ঠে জানান। গল্পটি এখনই শেষ করে দেবো। বাংলা সিরিয়ালের মত (নো অফেন্স) অযথা টেনে বাড়াবো না। এই গল্পের পরবর্তি অংশ তখনই আসবে, যখন এই আপডেটে যথেষ্ট এবং যথার্থ পরিমানে কমেন্ট আসবে। তা নাহলে এটিই এই গল্পের শেষ পর্ব বলে ধরে নিতে পারেন। এরপর থেকে এই গল্পে আর নতুন কোনো আপডেট আসবে না। এই লেখার মাধ্যমে যদি কাউকে কণামাত্রও দুঃখ দিয়ে থাকি, তাহলে আগাম ক্ষমাপ্রার্থী রইলাম।

 

~ধন্যবদান্তে

রতিমোহিনী দেবী
[Image: 20240303-191414.png]
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)