03-03-2024, 11:58 PM
• রেনেসাঁ •
আকাশীরঙা তোয়ালেটা মাথায় জড়িয়ে ভেজা পায়ে শাওয়ার থেকে বেরিয়ে এলো শিরিন; ফাঁকা বেডরুমে ও এখন সম্পূর্ণ নগ্ন, কিংশুক একটু আগেই রেনেসাঁকে নিয়ে বেরিয়ে গেছে, ওকে আজ ডাক্তার দেখানোর দিন।
নিজেকে নগ্ন অবস্থায় দেখে আজ হঠাৎই অদ্ভূত একটা ঘোর মতো লাগলো শিরিনের; এর আগেও তো বহুবার ঘরে একা থেকেছে, নগ্ন হয়েছে, কিন্তু এমন অনুভূতি তো আগে কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ছে না ওর… যদিও পুরোপুরি একা ও কখনোই থাকেনি বাড়িতে; কিংশুক সবসময় ঘরে না থাকলেও রেনেসাঁ প্রতি মুহূর্তে ওর ছায়াসঙ্গী হয়ে থেকেছে এই কবছরে।
ভিজে চুলটা মুছতে মুছতে ওয়ার্ডরোবটা খুললো শিরিন; শাড়ির অভাব নেই ওর সংগ্রহ জুড়ে, তবুও অনেক হাতড়ে অনেক ভেবে ওয়ার্ডরোবের একদম কোণা থেকে ফ্লোরাল প্রিন্টের দুধসাদা অরগ্যানজ়া শাড়িটা বের করলো শিরিন, সঙ্গে জাফরানরঙা মানানসই ব্লাউজ়… এই শাড়িটা কিংশুক দিয়েছিলো ওদের প্রথম প্রেমবার্ষিকীতে, আজকের এই বিশেষ দিনে এটাই পরতে ইচ্ছে করলো শিরিনের।
কিংশুক বলে শিরিনকে নাকি সবথেকে বেশি সুন্দর লাগে শাড়িতে; ওর শরীরে মনে ভীষণরকম অ্যারাউজ়াল শুরু হয়ে যায় শিরিন শাড়ি পরে ওর সামনে আসলে। যদিও শিরিন বলে এসবই কিংশুকের আদিখ্যেতা, হাঁ করে ড্যাবডেবিয়ে ওকে দেখে যাবে সারাক্ষণ ধরে, তারপর আনাড়ির মতো এক একটা ভুলভাল কাজ করবে যেগুলো সামাল দিতে শিরিনকেই আসরে নামতে হবে… সত্যিই ছেলেটা একদম অন্যরকম, একটুও বদলায়নি এতোদিন একসঙ্গে থাকার পরেও… শাড়িটা মুখে চেপে ধরে ফিক করে হেসে ফেললো শিরিন।
দরজার ছিটকিনিটা তুলে দিয়ে শিরিন আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো; জানলাগুলো আগেই বন্ধ ছিলো, ঘরে একা থাকলে শিরিন এভাবেই জানলা দরজা বন্ধ করে নগ্ন হয়ে স্নান করতে যায়, ওর ভালো লাগে বন্ধ ঘরে নিজের নগ্নতা উপভোগ করতে… যে নগ্নতায় কিংশুকের মন নিবদ্ধ হয়েছে সেই নগ্নতাকে শিরিনের নিজের মতো করে জানতে ভালো লাগে।
বেডরুমের বড়ো আয়নাটা কিংশুকের নিজের পছন্দ করে কেনা; ছেলেটা বড্ড সৌখিন, কোথাও গেলে কিছু আনকমন জিনিস চোখে পড়লে সেটা কিনেই ছাড়বে, তারপর যত্ন করে সেটা ঘরে সাজিয়ে রেখে ওর শান্তি। শিরিন ওর বাবা-কাকা-দাদাদের মধ্যে এমন সৌখিনতা দেখেছে বলে ওর মনে পড়ে না, আসলে পুরুষমানুষ মাত্রেই তো ভীষণ অগোছালো হয়, ছোট থেকে তাই তো দেখে এসেছে শিরিন… কিন্তু কিংশুক পুরো উল্টো, প্রচণ্ড সংসারী আর খুব গোছানো স্বভাবের, এক্কেবারে পাক্কা হাসবেন্ড মেটিরিয়াল!
ফুল লেংথ আয়নাটার কাঠের কারুকাজ করা ফ্রেমের উপর হাত বুলাতে বুলাতে এসবই ভাবছিলো শিরিন; আস্তে আস্তে নিজের আপাদমস্তক উন্মুক্ত শরীরটার প্রতি একটা মুগ্ধতা চলে আসে ওর…অদম্য একটা আকর্ষণে হাত বুলিয়ে নিজের দুই স্তন স্পর্শ করে শিরিন, স্তনবৃন্তে আলতো চাপ দিয়ে আবেশে বুজে আসে ওর দুচোখ, হাত ক্রমশ নামতে থাকে নিচের দিকে, তলপেট পেরিয়ে নাভিতে এসে থামে আঙ্গুল, একটা গভীর নিশ্বাসে মধ্যমার স্পর্শ ওর যৌনাঙ্গ ছুঁয়ে যায়, আবেগের অনুরণনে শিরিন অনুভব করে ও সিক্ত হয়ে উঠেছে… ভালোবাসা বড়োই অদ্ভূত; অন্তর ভিজতে ও ভেজাতে বেশি সময় নেয় না।
প্রশ্বাসের দ্রুততায় গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে শিরিনের; শরীরের প্রত্যেকটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন বিস্ফোরণ ঘটে ওর, তবে এই বিস্ফোরণ ভালোলাগার… একটা অদ্ভূত আরাম আছে এই শরীরী দহনে।
নিজের সর্বাঙ্গে এই শিহরণটা পেতে খুব ভালো লাগে শিরিনের; চরম একটা অনুভুতি কাজ করে ওর ভিতরে তখন। এইসব মুহুর্তগুলোয় খুব নির্লজ্জ একটা কনফিডেন্স চলে আসে শিরিনের ভিতরে, বুঝতে পারে ওর স্তনযুগল আর যোনি এখন কিংশুকের পুরুষালি ছোঁয়া চাইছে… কিংশুক নিজের ঠোঁট-জিভ-দাঁত-হাত দিয়ে ওর সর্বাঙ্গে বন্য অত্যাচার করুক এটাই চাইছে শিরিন, তারপর ধীরে ধীরে ওর পৌরষত্বের প্রবেশ হোক শিরিনের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে এবং সুখের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে যাক সে আজ জাগতিক সব কষ্ট ভুলে।
কিন্তু ছেলেটা এখনও ফিরলো না কেন?
সেই যে রেনেসাঁকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে এখনও পর্যন্ত একটাও ফোন করেনি, এতো দেরি হবার তো কথা নয়!
কিংশুক আর রেনেসাঁকে ছাড়া ঘরটা হঠাৎ করেই বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করলো শিরিনের…
আগে যতোবারই এই বড়ো আয়নাটায় নিজের নগ্ন প্রতিবিম্ব দেখেছে শিরিন, প্রত্যেকবারই রেনেসাঁ ওর সাথে ছিলো ওর মুগ্ধতার নীরব সাক্ষী হয়ে, গোলগোল চোখ আর খাড়া দুটো কান নিয়ে ঘাড় কাত করে দেখতো শিরিনকে খাটের তলা থেকে। কিন্তু আজকে দুষ্টুটা নেই বলে শিরিনের খুব মন খারাপ করতে লাগলো হঠাৎ করেই… আসলে এই কবছরে ওদের দুজনের বড্ড আপন হয়ে গেছে চারপেয়েটা, নিজের দস্যিপনা দিয়ে সারাক্ষণ মাতিয়ে রেখেছে ওদের ছোট্ট বাড়িটা।
সেই কোন অতীতে একটা ফুটফুটে সাদা আর হালকা বাদামি তুলোর বলকে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনেছিলো কিংশুক; খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলো সপ্তাহ দুয়েক আগেই বাচ্চা দিয়েছে মাছবাজারের আনাচকানাচ ঘুরতে থাকা মাদিটা। কিন্তু কমজোরি হবার জন্য মায়েরা অনেক সময় জন্মের পরপরই ত্যাগ করে বাচ্চাকে, পশুপাখিদের মধ্যে এই ব্যাপারটা আছে, নিজেরাই মেরে ফেলতে চায় দূর্বল কচি প্রাণটাকে, আর তাইই এই একরত্তিটাকেও ওর মা ওর দুধের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ফেলে দিয়ে গেছিলো বাজারের পাশের আস্তাকুঁড়ে…
কিংশুক নিজেও তো অনাথ; অনেক ছোট বয়সেই বাবা মাকে হারিয়েছে ছেলেটা, তারপর থেকে ছোটকাকার সংসারে অনাদরে মানুষ। তাই কোথাও গিয়ে যেন ওর ভিতরে ছুঁয়ে গেছিলো কালো পুঁতির মতো চোখদুটোর জুলজুলে চাহনি, মুখ ফিরিয়ে চলে আসতে পারেনি, খিদের জ্বালায় ওর কান্না শুনে দুহাতে বুকে তুলে নিয়েছিলো বাচ্চাটাকে। অপরদিকে ওই পুঁচকেটাও শরীরী ওম পেয়ে দুএকবার কুঁই কুঁই করে ডেকে ঘুমিয়ে গেছিলো ডিসেম্বরের উত্তরবঙ্গের ঠাণ্ডা সহ্য করে না পেরে।
গোলাপিরঙা পাগুলো টেনেটুনে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম যখন ভেঙেছিলো বাচ্চাটার তখন সে ভারী মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ের কোলে শুয়ে আছে; যার নাকি সেদিন জন্মদিন, এবং সে জন্মদিনের সমস্ত আনন্দ উদযাপন ভুলে দুধ গরম করতে ব্যস্ত হয়ে গেছিলো ঘরের নতুন অতিথির জন্য।
সেদিন তিরিশে পা দিয়েছিলো মেয়েটি; জীবনের অন্যতম পরিণত পর্বে উন্নতির প্রথম ধাপ এই তিরিশ বছর, প্রকৃত অর্থে নারীজীবনের একপ্রকার নবজাগরণ হয় এই বয়সটায়… অতএব সেই নবজাগরণের সাথে মিলিয়েই শিরিন পুঁচকেটার নাম দিয়েছিলো রেনেসাঁ, ওদের বড়ো আদরের চারপেয়ে কন্যাসন্তান হিসেবে আগলে নিয়েছিলো তাকে। অলক্ষ্যে হেসেছিলো কিংশুক সেদিন; একটু আগেই বুকের মধ্যে প্রেয়সীকে তার জন্মদিনে অভাবের তাড়নায় কিছু কিনে দিতে না পারার যে আক্ষেপটা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো এখন সেটা অনেকটাই হালকা লাগছে, চোখের সামনে এক মায়ের নবজাগরণ দেখেছিলো যে সে! বুঝতে পেরেছিলো উপহার সবসময় জাগতিক বস্তুর মাপকাঠিতে বিচার করতে নেই, কখনো উপহার ভালোবাসার প্রাণসঞ্চার হয়েও আসে…
সেদিনের সেই ছোট্ট রেনেসাঁ দেখতে দেখতে আজ পাঁচ বছরের হয়ে গেছে; এবং ঘটনাচক্রে আজও শিরিনের জন্মদিন, তবে আজ শিরিন পা দেবে পঁয়ত্রিশ বছরে। কিংশুক বলেছে আজ ওরা তিনজনে মিলে কোনো একটা পেট ফ্রেন্ডলি রেস্তোরাঁয় যাবে ডিনার করতে, তারপর পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের উডেন কটেজে ফিরবে তারাভরা আকাশ দেখতে দেখতে। তাই ওকে তৈরি থাকতে বলে গেছে কিংশুক, রেনেসাঁকে ডাক্তার দেখানো হয়ে গেলেই বাড়ি ফিরে বেরিয়ে পড়বে শিরিনকে নিয়ে।
কিংশুক বলে পশুপাখিরা নাকি খুব ভালো থেরাপি অ্যানিমাল হয়; মেন্টাল হিলিং নাকি খুব তাড়াতাড়ি হয় গৃহপালিত পশুপাখি সঙ্গে থাকলে, আজকাল তাই নাকি অনেক সাইকিয়াট্রিস্টরা মানসিক রোগীদের সঙ্গে একজন নামানুষ বন্ধু রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।
আর সত্যিই তো; রেনেসাঁ যখন ওদের জীবনে আসে তখন ওদের সম্পর্কটা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো… ইঁদুরদৌড়সম কেরিয়ারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন গড়ে ওঠা সংসারের খুচরো অভাব সামলাতে গিয়ে দুজনের মধ্যে প্রায় দিনই অশান্তি, ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান লেগেই থাকতো। বেশ কয়েকবার শিরিন মেজাজ হারিয়ে ব্রেক-আপ করার কথাও বলে ফেলেছিলো; কিংশুক ওকে অনেক মানিয়ে বুঝিয়ে সামলে নিয়েছে, আসলে শিরিন একটু বেশিই প্যাম্পার্ড কিংশুকের কাছে।
তারপর দুজনে মিলে অনেক আলোচনা করে কলকাতার সেক্টর ফাইভের ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট অফিসের চাকরি নামক পরাধীন জীবন পিছনে ফেলে দুজনের জমানো টাকা কুড়িয়ে বাড়িয়ে নর্থ বেঙ্গল চলে আসা; ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটা ফুড ট্রাক কিনে দার্জিলিং ম্যালের মতো ব্যস্ত জায়গায় কাবাব তন্দুরির একটা ছোট্ট দোকান দেওয়া… দেখতে দেখতে পাঁচ পাঁচটা শীত কেটে গেলো পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে, সেদিনের সেই ফুড ট্রাক বদলে গিয়ে আজ ওদের একটা ছোটখাটো হোটেল হয়েছে, যার দোতলায় ওরা দুজনে মিলে সাজিয়ে নিয়েছে নিজেদের ভালোবাসায় ভরা ভালো-বাসা।
হয়তো এই জীবনটায় অভাব নিত্যসঙ্গী, কিন্তু অশান্তির কোনো চিহ্ন নেই এখানে। হয়তো ওরা বোহেমিয়ান, তবুও ওরা স্বাধীন, নেই কারো চোখ রাঙানি, নেই কোনো দাসত্বের বেড়ি। ওরা কবে বিয়ে করবে ওরা জানে না, ওরা শুধু একে অপরের পাশে একে অপরের উপস্থিতিটা উপভোগ করতে পারে মনপ্রাণ ভরে।
এবং ওদের এই গত পাঁচ বছরের জীবন নামক জোয়ারভাঁটার একমাত্র পথিকৃৎ হচ্ছে রেনেসাঁ; যে ওদের সাদামাটা জীবনে খুশির রং এনে দিয়েছিলো, সাজিয়েছিলো ভালোবাসার রামধনু, শিখিয়েছিলো এভাবেও বাঁচা যায়, ভালো থাকা যায় এভাবেও, সমাজকে উপেক্ষা করে নিজেদের দুনিয়া এভাবেও গড়ে তোলা যায়।
অতএব তাই আজ রেনেসাঁর কথা খুব মনে পড়ছে শিরিনের; এবং তার একটা বড়ো কারণ হচ্ছে আজ যে রেনেসাঁরও জন্মদিন! হ্যাঁ, ওকে পাওয়ার এক বছরের মাথায় শিরিন নিজেই ঠিক করে নিয়েছিলো এবার থেকে যেদিনটা ওর জন্মদিন হবে সেই একই দিনে রেনেসাঁরও জন্মদিন পালন করা হবে। এতে সায় দিয়েছিলো কিংশুকও; ওর আদরের রেনি-রেন্যুর জন্মদিন পালন হবে ঘটা করে, এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কী হতে পারে!
শাড়ি আঁচলটা ঠিক করতে করতে অনেক কথা মনে পড়তে লাগলো শিরিনের; রেনেসাঁ যখন আরো ছোটো ছিলো ওকে শাড়ি পড়তে দেখলেই ঘরের যে কোণায় থাকুক না কেন দৌড়ে এসে শাড়ির কুঁচিটা মুখে করে টেনে ওর শাড়ি খুলে এলোমেলো করে দিতো, এইভাবে কতো শাড়ি যে নষ্ট করেছে ওর ছোট্ট অথচ ধারালো দাঁতের কারসাজিতে। শিরিন বলে এগুলো সব কিংশুকের সেখানে বদবিদ্যে; এলোমেলো শাড়ি গোছাতে ব্যস্ত থাকা বেসামাল শিরিনকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে খোলা পিঠে নাক ঘষে আদর করার সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে যে বদমাশ ছেলেটার!
তবে শিরিনের এইসব একান্ত ভাবনাগুলো শুধু রেনেসাঁর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; মাঝে মাঝে কিংশুকও উঁকি দিয়ে যায় ওর মনের অলিন্দে… কাজলটা হাতে নিয়ে ও ভাবে কিংশুক ওর কাজলকালো চোখের দিকে চেয়ে আজও নিজেকে হারিয়ে ফেলবে প্রতিবারের মতো, হারিয়ে যায় শিরিন আজ কোন পারফিউমের সৌরভে মাতাবে ওর প্রিয় পুরুষের মন সেই ভাবনায়।
যদিও এইসব ভাবনাচিন্তার মাঝেও শিরিনের মন দুশ্চিন্তামুক্ত হয় না… কখনো সংসারের খরচ তো কখনো ভবিষ্যত, আজকাল নিজেকে শান্ত রাখা খুবই কঠিন হয়ে যায় ওর পক্ষে। প্রশ্ন জাগে শিরিনের মনে কিংশুকও কি ভাবে ওর মতোই? যদিও ছেলেটা ভীষণ চুপচাপ, ওর মাথায় কী চলছে তা ওর মুখ দেখে বোঝা কঠিন।
আসলে কিংশুকের ভাবনাচিন্তাগুলো বড্ড সেকেলে, খুব ঘরোয়া ওর মন। ও চায় বিয়ে করতে, শিরিনের সাজিয়ে তোলা সংসারটাকে গুছিয়ে পরিবারে পূর্ণতা দিতে চায় কিংশুক।
নিজেকে নিয়ে তাই আজকাল অনেক উত্তরহীন প্রশ্ন জাগে শিরিনের মনে; খোলা আকাশের মতো মন যে ওর, মেঘের মতো নরম ওর আবেগ, একটুতেই দুচোখে নামে ঘনঘোর বৃষ্টি… অতএব ও কি পারবে এমন সাংসারিক জীবনে আদৌ মানিয়ে নিতে? নিজেকে হারিয়ে ফেলবে না তো? কিংশুকের সিদ্ধান্তগুলোয় ওর পাশে থাকতে পারবে তো?
ভাবনার অন্তরমহলে হারিয়ে যায় শিরিন; মনে পড়ে কিংশুকের শেখানো একটা কথা,
"নদী যতোই খরস্রোতা হোক,
মোহনায় মিলন তো শান্ত সমুদ্রের সাথেই হয় তার।"
দরজার বাইরে ভৌ ভৌ শব্দে কে যেন ডেকে ওঠে আচমকাই…
একটু উৎসাহ দেবেন আর একটু কমেন্ট করলে ভালো লাগে আসলেই ???. যদি কথা বলতে চান তাহলে টেলিগ্রাম এ id শেয়ার করে দেব এখানে
আকাশীরঙা তোয়ালেটা মাথায় জড়িয়ে ভেজা পায়ে শাওয়ার থেকে বেরিয়ে এলো শিরিন; ফাঁকা বেডরুমে ও এখন সম্পূর্ণ নগ্ন, কিংশুক একটু আগেই রেনেসাঁকে নিয়ে বেরিয়ে গেছে, ওকে আজ ডাক্তার দেখানোর দিন।
নিজেকে নগ্ন অবস্থায় দেখে আজ হঠাৎই অদ্ভূত একটা ঘোর মতো লাগলো শিরিনের; এর আগেও তো বহুবার ঘরে একা থেকেছে, নগ্ন হয়েছে, কিন্তু এমন অনুভূতি তো আগে কখনো হয়েছে বলে মনে পড়ছে না ওর… যদিও পুরোপুরি একা ও কখনোই থাকেনি বাড়িতে; কিংশুক সবসময় ঘরে না থাকলেও রেনেসাঁ প্রতি মুহূর্তে ওর ছায়াসঙ্গী হয়ে থেকেছে এই কবছরে।
ভিজে চুলটা মুছতে মুছতে ওয়ার্ডরোবটা খুললো শিরিন; শাড়ির অভাব নেই ওর সংগ্রহ জুড়ে, তবুও অনেক হাতড়ে অনেক ভেবে ওয়ার্ডরোবের একদম কোণা থেকে ফ্লোরাল প্রিন্টের দুধসাদা অরগ্যানজ়া শাড়িটা বের করলো শিরিন, সঙ্গে জাফরানরঙা মানানসই ব্লাউজ়… এই শাড়িটা কিংশুক দিয়েছিলো ওদের প্রথম প্রেমবার্ষিকীতে, আজকের এই বিশেষ দিনে এটাই পরতে ইচ্ছে করলো শিরিনের।
কিংশুক বলে শিরিনকে নাকি সবথেকে বেশি সুন্দর লাগে শাড়িতে; ওর শরীরে মনে ভীষণরকম অ্যারাউজ়াল শুরু হয়ে যায় শিরিন শাড়ি পরে ওর সামনে আসলে। যদিও শিরিন বলে এসবই কিংশুকের আদিখ্যেতা, হাঁ করে ড্যাবডেবিয়ে ওকে দেখে যাবে সারাক্ষণ ধরে, তারপর আনাড়ির মতো এক একটা ভুলভাল কাজ করবে যেগুলো সামাল দিতে শিরিনকেই আসরে নামতে হবে… সত্যিই ছেলেটা একদম অন্যরকম, একটুও বদলায়নি এতোদিন একসঙ্গে থাকার পরেও… শাড়িটা মুখে চেপে ধরে ফিক করে হেসে ফেললো শিরিন।
দরজার ছিটকিনিটা তুলে দিয়ে শিরিন আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো; জানলাগুলো আগেই বন্ধ ছিলো, ঘরে একা থাকলে শিরিন এভাবেই জানলা দরজা বন্ধ করে নগ্ন হয়ে স্নান করতে যায়, ওর ভালো লাগে বন্ধ ঘরে নিজের নগ্নতা উপভোগ করতে… যে নগ্নতায় কিংশুকের মন নিবদ্ধ হয়েছে সেই নগ্নতাকে শিরিনের নিজের মতো করে জানতে ভালো লাগে।
বেডরুমের বড়ো আয়নাটা কিংশুকের নিজের পছন্দ করে কেনা; ছেলেটা বড্ড সৌখিন, কোথাও গেলে কিছু আনকমন জিনিস চোখে পড়লে সেটা কিনেই ছাড়বে, তারপর যত্ন করে সেটা ঘরে সাজিয়ে রেখে ওর শান্তি। শিরিন ওর বাবা-কাকা-দাদাদের মধ্যে এমন সৌখিনতা দেখেছে বলে ওর মনে পড়ে না, আসলে পুরুষমানুষ মাত্রেই তো ভীষণ অগোছালো হয়, ছোট থেকে তাই তো দেখে এসেছে শিরিন… কিন্তু কিংশুক পুরো উল্টো, প্রচণ্ড সংসারী আর খুব গোছানো স্বভাবের, এক্কেবারে পাক্কা হাসবেন্ড মেটিরিয়াল!
ফুল লেংথ আয়নাটার কাঠের কারুকাজ করা ফ্রেমের উপর হাত বুলাতে বুলাতে এসবই ভাবছিলো শিরিন; আস্তে আস্তে নিজের আপাদমস্তক উন্মুক্ত শরীরটার প্রতি একটা মুগ্ধতা চলে আসে ওর…অদম্য একটা আকর্ষণে হাত বুলিয়ে নিজের দুই স্তন স্পর্শ করে শিরিন, স্তনবৃন্তে আলতো চাপ দিয়ে আবেশে বুজে আসে ওর দুচোখ, হাত ক্রমশ নামতে থাকে নিচের দিকে, তলপেট পেরিয়ে নাভিতে এসে থামে আঙ্গুল, একটা গভীর নিশ্বাসে মধ্যমার স্পর্শ ওর যৌনাঙ্গ ছুঁয়ে যায়, আবেগের অনুরণনে শিরিন অনুভব করে ও সিক্ত হয়ে উঠেছে… ভালোবাসা বড়োই অদ্ভূত; অন্তর ভিজতে ও ভেজাতে বেশি সময় নেয় না।
প্রশ্বাসের দ্রুততায় গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে শিরিনের; শরীরের প্রত্যেকটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন বিস্ফোরণ ঘটে ওর, তবে এই বিস্ফোরণ ভালোলাগার… একটা অদ্ভূত আরাম আছে এই শরীরী দহনে।
নিজের সর্বাঙ্গে এই শিহরণটা পেতে খুব ভালো লাগে শিরিনের; চরম একটা অনুভুতি কাজ করে ওর ভিতরে তখন। এইসব মুহুর্তগুলোয় খুব নির্লজ্জ একটা কনফিডেন্স চলে আসে শিরিনের ভিতরে, বুঝতে পারে ওর স্তনযুগল আর যোনি এখন কিংশুকের পুরুষালি ছোঁয়া চাইছে… কিংশুক নিজের ঠোঁট-জিভ-দাঁত-হাত দিয়ে ওর সর্বাঙ্গে বন্য অত্যাচার করুক এটাই চাইছে শিরিন, তারপর ধীরে ধীরে ওর পৌরষত্বের প্রবেশ হোক শিরিনের শরীরের ভাঁজে ভাঁজে এবং সুখের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে যাক সে আজ জাগতিক সব কষ্ট ভুলে।
কিন্তু ছেলেটা এখনও ফিরলো না কেন?
সেই যে রেনেসাঁকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে এখনও পর্যন্ত একটাও ফোন করেনি, এতো দেরি হবার তো কথা নয়!
কিংশুক আর রেনেসাঁকে ছাড়া ঘরটা হঠাৎ করেই বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করলো শিরিনের…
আগে যতোবারই এই বড়ো আয়নাটায় নিজের নগ্ন প্রতিবিম্ব দেখেছে শিরিন, প্রত্যেকবারই রেনেসাঁ ওর সাথে ছিলো ওর মুগ্ধতার নীরব সাক্ষী হয়ে, গোলগোল চোখ আর খাড়া দুটো কান নিয়ে ঘাড় কাত করে দেখতো শিরিনকে খাটের তলা থেকে। কিন্তু আজকে দুষ্টুটা নেই বলে শিরিনের খুব মন খারাপ করতে লাগলো হঠাৎ করেই… আসলে এই কবছরে ওদের দুজনের বড্ড আপন হয়ে গেছে চারপেয়েটা, নিজের দস্যিপনা দিয়ে সারাক্ষণ মাতিয়ে রেখেছে ওদের ছোট্ট বাড়িটা।
সেই কোন অতীতে একটা ফুটফুটে সাদা আর হালকা বাদামি তুলোর বলকে ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে এনেছিলো কিংশুক; খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিলো সপ্তাহ দুয়েক আগেই বাচ্চা দিয়েছে মাছবাজারের আনাচকানাচ ঘুরতে থাকা মাদিটা। কিন্তু কমজোরি হবার জন্য মায়েরা অনেক সময় জন্মের পরপরই ত্যাগ করে বাচ্চাকে, পশুপাখিদের মধ্যে এই ব্যাপারটা আছে, নিজেরাই মেরে ফেলতে চায় দূর্বল কচি প্রাণটাকে, আর তাইই এই একরত্তিটাকেও ওর মা ওর দুধের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ফেলে দিয়ে গেছিলো বাজারের পাশের আস্তাকুঁড়ে…
কিংশুক নিজেও তো অনাথ; অনেক ছোট বয়সেই বাবা মাকে হারিয়েছে ছেলেটা, তারপর থেকে ছোটকাকার সংসারে অনাদরে মানুষ। তাই কোথাও গিয়ে যেন ওর ভিতরে ছুঁয়ে গেছিলো কালো পুঁতির মতো চোখদুটোর জুলজুলে চাহনি, মুখ ফিরিয়ে চলে আসতে পারেনি, খিদের জ্বালায় ওর কান্না শুনে দুহাতে বুকে তুলে নিয়েছিলো বাচ্চাটাকে। অপরদিকে ওই পুঁচকেটাও শরীরী ওম পেয়ে দুএকবার কুঁই কুঁই করে ডেকে ঘুমিয়ে গেছিলো ডিসেম্বরের উত্তরবঙ্গের ঠাণ্ডা সহ্য করে না পেরে।
গোলাপিরঙা পাগুলো টেনেটুনে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম যখন ভেঙেছিলো বাচ্চাটার তখন সে ভারী মিষ্টি দেখতে একটা মেয়ের কোলে শুয়ে আছে; যার নাকি সেদিন জন্মদিন, এবং সে জন্মদিনের সমস্ত আনন্দ উদযাপন ভুলে দুধ গরম করতে ব্যস্ত হয়ে গেছিলো ঘরের নতুন অতিথির জন্য।
সেদিন তিরিশে পা দিয়েছিলো মেয়েটি; জীবনের অন্যতম পরিণত পর্বে উন্নতির প্রথম ধাপ এই তিরিশ বছর, প্রকৃত অর্থে নারীজীবনের একপ্রকার নবজাগরণ হয় এই বয়সটায়… অতএব সেই নবজাগরণের সাথে মিলিয়েই শিরিন পুঁচকেটার নাম দিয়েছিলো রেনেসাঁ, ওদের বড়ো আদরের চারপেয়ে কন্যাসন্তান হিসেবে আগলে নিয়েছিলো তাকে। অলক্ষ্যে হেসেছিলো কিংশুক সেদিন; একটু আগেই বুকের মধ্যে প্রেয়সীকে তার জন্মদিনে অভাবের তাড়নায় কিছু কিনে দিতে না পারার যে আক্ষেপটা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো এখন সেটা অনেকটাই হালকা লাগছে, চোখের সামনে এক মায়ের নবজাগরণ দেখেছিলো যে সে! বুঝতে পেরেছিলো উপহার সবসময় জাগতিক বস্তুর মাপকাঠিতে বিচার করতে নেই, কখনো উপহার ভালোবাসার প্রাণসঞ্চার হয়েও আসে…
সেদিনের সেই ছোট্ট রেনেসাঁ দেখতে দেখতে আজ পাঁচ বছরের হয়ে গেছে; এবং ঘটনাচক্রে আজও শিরিনের জন্মদিন, তবে আজ শিরিন পা দেবে পঁয়ত্রিশ বছরে। কিংশুক বলেছে আজ ওরা তিনজনে মিলে কোনো একটা পেট ফ্রেন্ডলি রেস্তোরাঁয় যাবে ডিনার করতে, তারপর পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের উডেন কটেজে ফিরবে তারাভরা আকাশ দেখতে দেখতে। তাই ওকে তৈরি থাকতে বলে গেছে কিংশুক, রেনেসাঁকে ডাক্তার দেখানো হয়ে গেলেই বাড়ি ফিরে বেরিয়ে পড়বে শিরিনকে নিয়ে।
কিংশুক বলে পশুপাখিরা নাকি খুব ভালো থেরাপি অ্যানিমাল হয়; মেন্টাল হিলিং নাকি খুব তাড়াতাড়ি হয় গৃহপালিত পশুপাখি সঙ্গে থাকলে, আজকাল তাই নাকি অনেক সাইকিয়াট্রিস্টরা মানসিক রোগীদের সঙ্গে একজন নামানুষ বন্ধু রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।
আর সত্যিই তো; রেনেসাঁ যখন ওদের জীবনে আসে তখন ওদের সম্পর্কটা খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো… ইঁদুরদৌড়সম কেরিয়ারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন গড়ে ওঠা সংসারের খুচরো অভাব সামলাতে গিয়ে দুজনের মধ্যে প্রায় দিনই অশান্তি, ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান লেগেই থাকতো। বেশ কয়েকবার শিরিন মেজাজ হারিয়ে ব্রেক-আপ করার কথাও বলে ফেলেছিলো; কিংশুক ওকে অনেক মানিয়ে বুঝিয়ে সামলে নিয়েছে, আসলে শিরিন একটু বেশিই প্যাম্পার্ড কিংশুকের কাছে।
তারপর দুজনে মিলে অনেক আলোচনা করে কলকাতার সেক্টর ফাইভের ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট অফিসের চাকরি নামক পরাধীন জীবন পিছনে ফেলে দুজনের জমানো টাকা কুড়িয়ে বাড়িয়ে নর্থ বেঙ্গল চলে আসা; ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটা ফুড ট্রাক কিনে দার্জিলিং ম্যালের মতো ব্যস্ত জায়গায় কাবাব তন্দুরির একটা ছোট্ট দোকান দেওয়া… দেখতে দেখতে পাঁচ পাঁচটা শীত কেটে গেলো পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে, সেদিনের সেই ফুড ট্রাক বদলে গিয়ে আজ ওদের একটা ছোটখাটো হোটেল হয়েছে, যার দোতলায় ওরা দুজনে মিলে সাজিয়ে নিয়েছে নিজেদের ভালোবাসায় ভরা ভালো-বাসা।
হয়তো এই জীবনটায় অভাব নিত্যসঙ্গী, কিন্তু অশান্তির কোনো চিহ্ন নেই এখানে। হয়তো ওরা বোহেমিয়ান, তবুও ওরা স্বাধীন, নেই কারো চোখ রাঙানি, নেই কোনো দাসত্বের বেড়ি। ওরা কবে বিয়ে করবে ওরা জানে না, ওরা শুধু একে অপরের পাশে একে অপরের উপস্থিতিটা উপভোগ করতে পারে মনপ্রাণ ভরে।
এবং ওদের এই গত পাঁচ বছরের জীবন নামক জোয়ারভাঁটার একমাত্র পথিকৃৎ হচ্ছে রেনেসাঁ; যে ওদের সাদামাটা জীবনে খুশির রং এনে দিয়েছিলো, সাজিয়েছিলো ভালোবাসার রামধনু, শিখিয়েছিলো এভাবেও বাঁচা যায়, ভালো থাকা যায় এভাবেও, সমাজকে উপেক্ষা করে নিজেদের দুনিয়া এভাবেও গড়ে তোলা যায়।
অতএব তাই আজ রেনেসাঁর কথা খুব মনে পড়ছে শিরিনের; এবং তার একটা বড়ো কারণ হচ্ছে আজ যে রেনেসাঁরও জন্মদিন! হ্যাঁ, ওকে পাওয়ার এক বছরের মাথায় শিরিন নিজেই ঠিক করে নিয়েছিলো এবার থেকে যেদিনটা ওর জন্মদিন হবে সেই একই দিনে রেনেসাঁরও জন্মদিন পালন করা হবে। এতে সায় দিয়েছিলো কিংশুকও; ওর আদরের রেনি-রেন্যুর জন্মদিন পালন হবে ঘটা করে, এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কী হতে পারে!
শাড়ি আঁচলটা ঠিক করতে করতে অনেক কথা মনে পড়তে লাগলো শিরিনের; রেনেসাঁ যখন আরো ছোটো ছিলো ওকে শাড়ি পড়তে দেখলেই ঘরের যে কোণায় থাকুক না কেন দৌড়ে এসে শাড়ির কুঁচিটা মুখে করে টেনে ওর শাড়ি খুলে এলোমেলো করে দিতো, এইভাবে কতো শাড়ি যে নষ্ট করেছে ওর ছোট্ট অথচ ধারালো দাঁতের কারসাজিতে। শিরিন বলে এগুলো সব কিংশুকের সেখানে বদবিদ্যে; এলোমেলো শাড়ি গোছাতে ব্যস্ত থাকা বেসামাল শিরিনকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে খোলা পিঠে নাক ঘষে আদর করার সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে যে বদমাশ ছেলেটার!
তবে শিরিনের এইসব একান্ত ভাবনাগুলো শুধু রেনেসাঁর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; মাঝে মাঝে কিংশুকও উঁকি দিয়ে যায় ওর মনের অলিন্দে… কাজলটা হাতে নিয়ে ও ভাবে কিংশুক ওর কাজলকালো চোখের দিকে চেয়ে আজও নিজেকে হারিয়ে ফেলবে প্রতিবারের মতো, হারিয়ে যায় শিরিন আজ কোন পারফিউমের সৌরভে মাতাবে ওর প্রিয় পুরুষের মন সেই ভাবনায়।
যদিও এইসব ভাবনাচিন্তার মাঝেও শিরিনের মন দুশ্চিন্তামুক্ত হয় না… কখনো সংসারের খরচ তো কখনো ভবিষ্যত, আজকাল নিজেকে শান্ত রাখা খুবই কঠিন হয়ে যায় ওর পক্ষে। প্রশ্ন জাগে শিরিনের মনে কিংশুকও কি ভাবে ওর মতোই? যদিও ছেলেটা ভীষণ চুপচাপ, ওর মাথায় কী চলছে তা ওর মুখ দেখে বোঝা কঠিন।
আসলে কিংশুকের ভাবনাচিন্তাগুলো বড্ড সেকেলে, খুব ঘরোয়া ওর মন। ও চায় বিয়ে করতে, শিরিনের সাজিয়ে তোলা সংসারটাকে গুছিয়ে পরিবারে পূর্ণতা দিতে চায় কিংশুক।
নিজেকে নিয়ে তাই আজকাল অনেক উত্তরহীন প্রশ্ন জাগে শিরিনের মনে; খোলা আকাশের মতো মন যে ওর, মেঘের মতো নরম ওর আবেগ, একটুতেই দুচোখে নামে ঘনঘোর বৃষ্টি… অতএব ও কি পারবে এমন সাংসারিক জীবনে আদৌ মানিয়ে নিতে? নিজেকে হারিয়ে ফেলবে না তো? কিংশুকের সিদ্ধান্তগুলোয় ওর পাশে থাকতে পারবে তো?
ভাবনার অন্তরমহলে হারিয়ে যায় শিরিন; মনে পড়ে কিংশুকের শেখানো একটা কথা,
"নদী যতোই খরস্রোতা হোক,
মোহনায় মিলন তো শান্ত সমুদ্রের সাথেই হয় তার।"
দরজার বাইরে ভৌ ভৌ শব্দে কে যেন ডেকে ওঠে আচমকাই…
একটু উৎসাহ দেবেন আর একটু কমেন্ট করলে ভালো লাগে আসলেই ???. যদি কথা বলতে চান তাহলে টেলিগ্রাম এ id শেয়ার করে দেব এখানে