Thread Rating:
  • 56 Vote(s) - 2.68 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller মেগাসিটির নির্জনতা
(20-01-2024, 03:12 AM)কাদের Wrote: আপনি ভাল লিখেন, অনেকেই এই কথা বলে ফেলেছে তাই আর নতুন করে বললাম না। বাংলা ইরোটিকায় মৌলিক ভাল গল্পের বড় অভাব। যারা একটু ভাল লিখে তাদের অনেকের প্লটে নতুনত্বের অভাববোধ হয় পাঠক হিসেবে আমার। আপনার এই গল্পটা সেই দোষমুক্ত। ফাস্ট পেস, ঝরঝরে ভাষা। পড়তে ভাল লাগে। লিখে যান। থামবেন না এবং গল্পটা শেষ করবেন আশা করি।

আপনি এই ফোরামের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করলো। গল্পটা শেষ করার ইচ্ছা আছে। তবে আপডেট আসতে মাঝেমধ্যে বিলম্ব হতে পারে। আপনার লেখার আমি গুণমুগ্ধ পাঠক। ভালো থাকবেন ভাই। ভালোবাসা সব সময়।
[+] 1 user Likes Topuu's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
বাহ্ দুর্দান্ত  clps খুব ভালো লাগল , চালিয়ে যান, রেপু দিলাম।

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 2 users Like Somnaath's post
Like Reply
(20-01-2024, 11:46 AM)Somnaath Wrote: বাহ্ দুর্দান্ত  clps খুব ভালো লাগল , চালিয়ে যান, রেপু দিলাম।
ধন্যবাদ ভাই।
[+] 1 user Likes Topuu's post
Like Reply
আপডেট চাই topu ভাই please Namaskar
[+] 1 user Likes fucklodo's post
Like Reply
(20-01-2024, 09:34 PM)Topuu Wrote: ধন্যবাদ ভাই।
[+] 1 user Likes Rahat hasan's post
Like Reply
ভাই কবে আপডেট দিবেন
[+] 1 user Likes Rahat hasan's post
Like Reply
(29-01-2024, 02:14 PM)fucklodo Wrote: আপডেট চাই topu ভাই please Namaskar

(29-01-2024, 02:58 PM)Rahat hasan Wrote: ভাই কবে আপডেট দিবেন

ব্যস্ততা যাচ্ছে ভাই। সামনের সপ্তায় আশা করি একটা আপডেট দিতে পারব।
[+] 1 user Likes Topuu's post
Like Reply
Vai smy ber Kore aktu taratari dan
Like Reply
বেশ লাগছে। রহস্য উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে।চালিয়ে যান।
Like Reply
(31-01-2024, 03:57 PM)Patit Wrote: বেশ লাগছে। রহস্য উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে।চালিয়ে যান।

ধন্যবাদ
Like Reply
ভাই আজকে আপডেট আসার সম্ভবনা আছে??
Like Reply
(01-02-2024, 08:09 AM)Rahat hasan Wrote: ভাই আজকে আপডেট আসার সম্ভবনা আছে??

আগামী রবি মঙ্গলবার আসতে পারে।
[+] 2 users Like Topuu's post
Like Reply
ভাইজান এভাবে আপডেট দিলে, প্রতিবার আপডেটের পর গল্প আবার শুরু থেকে পড়তে হবে।
Like Reply
ভাই আজকে রাতে আপডেট দেন,, অনেক মিস করতেছি
Like Reply
(02-02-2024, 03:35 PM)milonrekha Wrote: ভাইজান এভাবে আপডেট দিলে, প্রতিবার আপডেটের পর গল্প আবার শুরু থেকে পড়তে হবে।

(03-02-2024, 03:56 PM)Rahat hasan Wrote: ভাই আজকে রাতে আপডেট দেন,, অনেক মিস করতেছি

কাল পরশুর মধ্যে আপডেট আসবে ভাই।
Like Reply
আগামীকাল রাতে আপডেট দিব৷ যারা পড়তে চান নজর রাইখেন।
Like Reply
Waiting vai
Like Reply
Waiting for update dada
Like Reply
পর্বঃ ১২

আসাদ গেট পার হয়ে এগিয়ে চলেছে ফিরোজের গাড়ি। পেছনে সমগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দ্বিতীয় গাড়িটা। দ্বিতীয় গাড়িটার স্টিয়ারিং ধরে আছে রবিন। তার চোখ একবার মোবাইলের স্ক্রিনে আরেকবার সামনে ঘোরাফেরা করছে। মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠছে সামনের গাড়িটার অবস্থান। দারোয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফিরোজের গাড়িতে একটা জিপিএস ট্র‍্যাকার চিপ লাগিয়ে দিয়েছিল রবিন৷ তাই নিশ্চিন্তে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ফলো করে যাচ্ছে সে। ফিরোজের গাড়ি যেখানেই যাক, পথের নির্দেশ চলে আসবে রবিনের ফোনে।

রাত বাড়লে পরিচিত ঢাকা শহরের রূপ অন্যরকম হয়ে যায়। বহু দিনের চেনা শহরটাকে অচেনা মনে হয়। রাস্তায় চোখে পড়ে হিজড়াদের আনাগোনা। অল্প টাকায় দেহ বিক্রি করে ওরা শ্রমজীবী পুরুষদের কাছে। অভারব্রিজগুলোর উপর নিশিকন্যাদের তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। ওরা ভাসমান দেহপসারিণী। ওদের প্রেমিকেরা অভারব্রিজের দেয়ালে ঠেকনা দিয়েই কাজ সেরে ফেলতে পারে। নোংরা কন্ডমটা পরে থাকে সেখানেই। এভাবেই জীবনের জোয়াল কাঁধে নিয়ে বেঁচে থাকে এই শহরের মানুষ। মহানগরের কোলাহলের মাঝেও থেমে থাকে না প্রেম, দেহপ্রক্ষালন কিংবা কামের সরোবরে অবগাহন। সবাই যার যার সাধ্যমতো নির্জনতা খুঁজে নেয়।

পর্বত সিনেমার সামনে গিয়ে গতি কমে যায় ফিরোজের গাড়ির। একটা ট্রাক বেরিবাধ দিয়ে ঢুকে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে পড়েছে। রাস্তা পুরোটা প্রায় ব্লক করে ফেলেছে দানব ট্রাক। রবিনও দূরত্ব বজায় রেখে গতি কমিয়ে দেয়। আজ যখন আফরিন কল দিয়ে বলল, 'ফিরোজ সাভার যাবে, তুমি বাসায় আসতে পারো', তখন রবিনের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। আফরিনকে বলেছিল, 'এমন একটা সময়ে তুমি এই সুখবরটা দিলা যখন আমি একটা অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে গাজিপুর আসছি। কি আর করা। অন্যকোনো দিন আবার হবে।' রবিনের কথা শুনে আফরিন মন খারাপ করেছিল। কিন্তু রবিনের হাতে বিকল্প অপশন নেই। ফিরোজকে ফলো তার সাভারের রহস্য উদঘাটন করতে হবে। তাই আফরিনকে মিথ্যা বলা ছাড়া উপায় ছিল না।

ট্রাক সমান্তরাল লেনে উঠতেই ফিরোজের গাড়ির গতি বেড়ে যায়। রবিনও এগিয়ে যায় ঈগলের দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে। গত এক সপ্তাহে দারুণ একটা ব্যপার ঘটে গেছে রবিনের অফিসে। ওর এক সময়ের ক্রাশ তাবাসসুম ওদের অফিসে জয়েন করেছে সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে৷ তাবাসসুম আহসান। ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক সময়ের সব ছেলেদের স্বপ্নের নারী। রবিনের চেয়ে এক ব্যাচ সিনিয়র। সব ছেলে যার জন্য পাগল তার সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করতে পারেনি রবিনও। জুনিয়র হয়েও প্রেমে পড়ে গিয়েছিল তার। কিন্তু তাবাসসুমকে সেই কথা কখনো জানানো হয়নি। কারণ সে তখন তার সহপাঠী সোহেলের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে। সোহেল ক্লাসের ফার্স্ট বয়। দেখতে শুনতেও খারাপ না। ভদ্র ছেলে হিসেবে ডিপার্টমেন্টে সুনাম আছে। এমন কারো কাছ থেকে গার্লফ্রেন্ড ছিনিয়ে নেওয়া সহজ কথা নয়। তার উপর রবিন আবার জুনিয়র। তাই মনের কথা মনেই চেপে রেখেছিল এতোদিন। ডিপার্টমেন্টে দেখা হলে তাবাসসুমের সাথে হাই হ্যালো হত। কিন্তু কখনো ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করেনি। কারণ ক্লোজ হয়ে গেলে না পাওয়ার বেদনাটা আরো তীব্রতর হবে। তার চেয়ে বরং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো।

সেদিন অফিসে গিয়ে তাবাসসুমকে দেখে অবাক হয়েছিল রবিন। পুরনো প্রেম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।ক্যাম্পাস ছাড়ার পর তাবাসসুমকে এক রকম ভুলেই গিয়েছিল সে। নতুন নতুন মেয়েদের শরীরের ঘ্রাণে তাবাসসুম নামক ফুলের সুবাস মিইয়ে গিয়েছিল। তারপর এতদিন পর দেখা। সৌন্দর্য সেই আগের মতোই আছে। মায়াবী একজোড়া চোখ। গভীর চোখের মণি। দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। তাবাসসুমও রবিনকে দেখে অবাক হয়েছিল। প্রাথমিক কুশলাদি সেরে ডেস্ক থেকে বেরিয়ে এসে দুজন ক্যান্টিনে গিয়ে বসেছিল। তার পর দুটো কফির অর্ডার দিয়ে শুরু হয়েছিল ওদের গল্প।
'আপনার সাথে লাস্ট দেখা হয়েছিল সম্ভবত কনভোকেশনের দিন। তারপর প্রায় ছয় বছর হয়ে গেছে। এতদিন পর আপনার সাথে দেখা হল। প্রকৃতির কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে মনে হয় এর মধ্যে। কি সেটা বলেন তো।'
'কোনো রহস্য নাই রবিন। আমি যুগের কণ্ঠ ছেড়ে দিয়ে এখানে জয়েন করেছি তাই দেখা হয়েছে। এখানে অলৌকিক কিছু নেই।'
'আপনি যাই বলেন। আমার মনে হচ্ছে কোনো রহস্য আছে। প্রকৃতি সব কথা খোলাখুলি বলে না। কিছু কথা খুঁজে বের করে নিতে হয়। তা আপনি যুগের কণ্ঠ ছাড়লেন কেন?'
'কেন আবার৷ সাংবাদিকতার সেই চিরাচরিত সমস্যা। প্রমোশন নেই। পরিশ্রমের মূল্যায়ন না হলে কাজ করে মজা নেই। তাই ছেড়ে দিলাম।'
'সোহেল ভাই কেমন আছে। কই আছে উনি এখন?'
'ভালোই আছে সম্ভবত। কই আছে জানি না।'
'মানে কি? আপনি সোহেল ভাইকে বিয়ে করেননি?'
'করেছিলাম। বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।'
'বলেন কি? কিভাবে কি হল? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।'
'এটা তোমার বোঝার বিষয় না তাই বুঝতে পারছো না। বাদ দাও ওসব কথা।'
'না আপু প্লিজ। আমি শুনতে চাই। আপনি বলেন। আপনাদের বিচ্ছেদ কেন কিভাবে হল?'
'প্রথম দিনেই সব জেনে নিতে চাও? আরেকদিন বলি?'
'ঠিক আছে। কাল আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য ডিনারের দাওয়াত রইলো। রাতে আমরা একসাথে রেস্টুরেন্টে খাব।'
'আচ্ছা দেখা যাবে।'

ফিরোজের গাড়ি হেমায়েতপুর পার হয়ে এগিয়ে চলেছে। রবিনের গাড়িও ছুটছে সমগতিতে। ল্যাম্পোস্টের আলোয় রাজপথে আলো আঁধারীর সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে গাড়ির হেডলাইটের আলো আঁধার কেটে কেটে যেন চলার পথ করে দিচ্ছে।

পরদিন অফিস শেষে রবিন আর তাবাসসুম পান্থপথের একটা রেস্টুরেন্টে বসেছিল। জীবনে এই মেয়েটার এত কাছাকাছি বসতে পারবে কখনো ভাবেনি রবিন। নিয়তি যেন ওকে নিয়ে খেলে কখনো কখনো। ভুলে যাওয়া প্রেম আবার হাজির হয়েছে। যেন শুকানো ক্ষত থেকে শুরু হয়েছে নতুন করে রক্তক্ষরণ। তাবাসসুমের ডিভোর্স হয়ে গেছে কথাটা শুনে রাতে ঘুম হয়নি রবিনের। তার হৃদয়ের গহীনে একটা সম্ভাবনার কথা নাড়া দিয়ে উঠছিল। তবে সেটা আদৌ সম্ভব কিনা জানে না সে। কিছু কিছু সময় নিয়তিকে নিজের মতো চলতে দিতে হয়। নিয়তির স্রোত যে কূলে নিয়ে ফেলে সেখানেই হয়তো কল্যাণকর কিছু থাকে।

'আপনার আর সোহেল ভাইয়ের মতো ম্যাচিউরড একটা কাপলের ডিভোর্স হয়ে গেল এটা মানতেই পারছি না। তাহলে বিয়ে করে আর লাভ কি এই জীবনে। হতাশ হলাম।' কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে বললো রবিন।
'আমি এসব বিষয়ে এখন নির্লিপ্ত। যা হবার তাই হয় জীবনে, তুমি আমি কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারব বা। এটাই সত্য। তুমি শুনতে চাইলা তাই বলছি। নাহলে এগুলো নিয়ে কথা বলার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না।'
'আমি জানি বেদনার স্মৃতিগুলো রোমন্থন কোনো ভালো কাজ না। তবে ভেবে নেন আমিই শেষ ব্যক্তি যার কাছে আপনি এগুলো বলবেন। আশা করি এরপর আর কারো কাছে বলতে হবে না।' কণ্ঠে অনুনয় ঝরে পড়লো রবিনের।
'এরপর আর কাউকে বলতে হবে না কেন? তুমি তান্ত্রিক নাকি? মন্ত্র পড়ে সব ঠিক করে দিবা?' হাসতে হাসতে কথাটা বললো তাবাসসুম। গম্ভীর পরিবেশ হালকা করা দরকার। এর জন্য হাসির চেয়ে বেটার অপশন নেই। গুমোট হয়ে থাকলে গল্প করে আরাম পাওয়া যায় না।
'দুনিয়াতে তন্ত্র মন্ত্র বলে কিছু নেই। সব হল ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছাশক্তির বলে আপনি অসাধ্যকে সাধন করতে পারবেন। আমিও ইচ্ছাশক্তির বলে পাথরে ফুল ফুটাবো।' তাবাসসুমের রসিকতায় রবিন কিছুটা সহজ হয়েছে। তার আড়ষ্টতা কেটে গেছে কিছুটা।
'এইসব ভূয়া গল্প আমার সামনে করবা না। গান কবিতা জীবন না। ওগুলো কল্পনাতেই ভালো মানায়। বাস্তবের জীবন গদ্যময়। পাথরে ফুল ফোটে শুধু গর্দভের রাজ্যে।'

তাবাসসুমের হঠাৎ আক্রমণে দিশেহারা অনুভব করলো রবিন। কি হল মেয়েটার। এই হাসি এই রাগ। ডিভোর্সের পর নাকি অনেকের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরও তাই হল নাকি?
'আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি ঠিকই বলেছেন। এবার বলেন আপনার ডিভোর্সের গল্প।' ডমিন্যান্ট মেন্টালিটির মেয়েদের সাথে তাল দিয়ে কথা না বললে অহেতুক শুধু বিতর্ক হয়। রবিন আপাতত বিতর্ক চায় না। তাই তাবাসসুমের সব কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ বলার সিদ্ধান্ত নেয়।
'তুমি হয়তো জানো যে ক্যাম্পাসে আমি আর সোহেল বেস্ট কাপল ছিলাম। সবাই আমাদের হিংসা করতো। অনেক ছেলে আমার পিছনে লাইন দিয়েছে কিন্তু কাউকে কখনো প্রশ্রয় দেইনি। আমার প্রথম এবং একমাত্র ভালোবাসা ছিল সোহেল। গ্রাজুয়েশন শেষে সোহেল একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির লেকচারার পদে জয়েন করলো। আর আমি জয়েন করলাম যুগের কণ্ঠে। কর্মজীবনে প্রবেশ করার এক বছরের মধ্যেই আমরা বিয়ে করলাম। বিয়ের পর কখনো আমাদের লাইফ বোরিং কাটেনি। অনেকে বলে দীর্ঘদিন প্রেম করার পর বিয়ে করলে বিয়েটা এক্সাইটিং লাগে না। কিন্তু আমাদের তা ছিল না। হানিমুনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি। ছবি তুলেছি। মানুষের প্রশংসা পেয়েছি। যেন একটা স্বপ্নের জগতে ছিলাম। সোহেলের সাথে সংসার হয়েছে আমার তিন বছর। এক বছর হল ডিভোর্স হয়েছে।'
'আচ্ছা। এতো সুন্দর একটা সংসার ভাঙলো কি করে? ডিভোর্সটা কে দিয়েছে? আপনি নাকি সোহেল ভাই?'
'আমিই দিয়েছি। বিষয়টা একটু লেইম। তাই কারো কাছে শেয়ার করি না। কিন্তু তুমি আমার ক্যাম্পাসের ছোটভাই আবার এখন কলিগ হয়েছো। তাই তোমার কাছে বলব। কারণ মন খুলে কথা বলতে পারি না অনেকদিন। হাপিয়ে উঠেছি। বন্ধুবান্ধব সবাই যার যার জীবনে ব্যস্ত। এই শহরে কেউ কারো আপন নয়। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মানুষ বলে মৃত্যুর পরে কেয়ামত হবে। তখন কেউ কাউকে চিনবে না। শুধু নিজের কথাই ভাববে। আমার মনে হয় এই আধুনিক যান্ত্রিক শহরব্যবস্থাও এক ধরনের কেয়ামতের ময়দান। এখানে সবাই শুধু ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করছে। কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নেই।'
'কথাটা একেবারে খারাপ বলেননি। কিন্তু এটা আসলে মানুষের দোষ না। মানুষের নিয়তিই তাকে এই যান্ত্রিক জঞ্জালে নিয়ে এসেছে।'
'যাই হোক। এবার আসল কথাটা বলি। সোহেল ওর ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। চাকরিজীবনের শুরু থেকেই ও এই কাজে জড়িয়ে যায়। এটাকে পরকীয়া বা প্রেম বলা যায় না। বরং গিভ এন্ড টেকের সম্পর্ক ছিল। শরীরের বিনিময়ে কোনো কোনো ছাত্রীকে ভালো গ্রেড দিত। তবে চোরের দশদিন আর গেরস্থের একদিন। একবার এক মেয়ে ওকে ট্র‍্যাপে ফেলে। ওই মেয়ের পছন্দের জায়গায় গিয়ে সেক্স করার কথা ছিল। সোহেল সেখানে গেলে মেয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে সোহেলকে আটক করে। মেয়ের কাছে সব রকম প্রুফ ছিল যা ভাইরাল হলে সোহেলের জীবন ধ্বংস হয়ে যেত। মেয়েটাকে ভালোই বলতে হবে। সে তার বন্ধুদের দিয়ে সোহেলকে উত্তম মধ্যম দেওয়ায় আর দশ লাখ টাকা দাবি করে। এর অন্যথা হলে মেসেজ, অডিও, ভিডিও সব ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। সোহেলকে ওরা আটকে রেখেছিল। আমার কাছে একটা ফোন আসে। সোহেলের নাম্বার থেকেই। সে বলে দশ লাখ টাকা নিয়ে যেতে। খুব নাকি ইমার্জেন্সি। কোনো প্রশ্ন করতে নিষেধ করে। বাকি কথা সে পরে বলবে জানায়। আমি হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ওর দেওয়া ঠিকানায় চলে যাই। গিয়ে আসল ঘটনা জানতে পারি। সেদিন ইচ্ছা হচ্ছিল আমি মাটির নিচে ঢুকে যাই। সোহেল আমার বিশ্বাস এভাবে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলবে কখনো কল্পনাও করিনি। এরপর আর সোহেলের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সেদিনই বাসা থেকে চলে গিয়েছিলাম। পরে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েছি। সোহেল অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে। আমার পা ধরে কান্নাকাটি করেছে। কিন্তু ওর প্রতি আমার কোনো আবেগ তৈরি হয়নি। এরপর থেকে একাই আছি।'
'খুবই দুঃখজনক। একবার বিশ্বাস ভাঙলে আসলে বিশ্বাস আর ফিরে আসে না। আমি আপনার কষ্ট অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারছি।'
'অনুভব করলে ভালো। তাহলে তুমি কাউকে ঠকানোর আগে ভাবতে পারবা। জীবনে কাউকে ঠকিও না। এটা ভীষণ অন্যায়।'

তাবাসসুমের কথা শুনে মনে মনে প্রমাদ গোণে রবিন। তার ইতিহাস জানলে এই মেয়ে তো তার সাথে কথাই বলবে না। ভারী যন্ত্রণা। এত সতী সাধ্বী নারীর প্রতি কিনা সে দুর্বল। তার আফরিনের কথা মনে পড়ে যায়। মেয়েটাকে সে ধোকাই দিচ্ছে বলা যায়। এর আগে কখনো কোনো মেয়ের সাথে এই ধরনের ধোকাবাজি করেনি রবিন। যদি আফরিম জানে যে সে শুধু নিজের স্বার্থে তাকে ব্যবহার করেছে, তাহলে কি অবস্থা হবে মেয়েটার?

ফিরোজের গাড়ি উলাইল পার হয়ে বামে মোড় নিয়েছে। এতক্ষণ বড় সড়কে ছিল। এখন চিপা গলিতে গাড়ি ঢুকেছে। জিপিএস না থাকলে এসব রাস্তায় অনুসরণ করা কঠিন। রবিন তাই আগেই সব ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে। বামে ঢুকে দশ মিনিট গাড়ি চালানোর পর একটা বাড়ির সামনে গিয়ে থেমে গেল ফিরোজের গাড়ি। জিপিএস দেখে রবিনও গাড়ি থামিয়ে দিল। তারপর হেঁটে হেঁটে ওই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। দূর থেকে অস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে দারোয়ান গেট খুলে দিচ্ছে। গেটের সামনে লাইটের আলোতে জায়গাটা আলোকিত। কিন্তু দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। বাড়িটা কিছুটা ফাঁকা জায়গায়। আশেপাশে তেমন বাড়িঘর নেই। পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী একেবেকে বয়ে গেছে। সুন্দর পজিশন বাড়িটার। নদীর পাড়ে বাগানবাড়ি টাইপ বলা যায়।

ফিরোজের গাড়ি ভেতরে ঢুকতেই গেট বন্ধ করে দিল দারোয়ান। এবার ফিরোজ ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো বাড়িটার দিকে। আজকে কাজ শুধু বাড়ি চিনে যাওয়া। বাকি কাজ আরেকদিন করতে হবে। এটা কার বাড়ি? ফিরোজ এখানে কি করে? এখানে কোনো অনৈতিক কাজ হয় না তো? নাকি সাধারণ কোনো বাড়ি। হয়তো ফিরোজের কোনো বন্ধুর। অনেকগুলো প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আপাতত কাজ শেষ। এবার ফিরে যাওয়া যায়। পরশুদিন এখানে আবার আসতে হবে। ফিরোজ এখান থেকে চলে যাওয়ার পর।

অফিস থেকে ফিরে ভীষণ ক্লান্তি অনুভব করছে তাবাসসুম। রান্না করতে ইচ্ছা করছে না। মা বাসায় নেই। তার বোনের বাসায় গেছে। আজ গিয়েছিল পল্টনে বিরোধী দলের প্রেস ব্রিফিং কাভার করতে। এরপর অফিসে গিয়ে নিউজ রেডি করে ঢাকার জ্যামে পিষ্ট হয়ে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত এগারোটা বেজে গেছে। তাবাসসুমের বাসা বনানীতে। দুই ভাই বোন ওরা। বাবা নেই। ওর বয়স যখন এগারো তখন মারা গেছেন। বাবা বিজনেস করতেন এক্সপোর্ট ইমপোর্টের। মারা যাওয়ার আগে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলেন তিনি। সেখানেই এখন মা মেয়ে থাকে। বড়ভাই আমেরিকা প্রবাসী।

ফ্রিজ খুলে দুটো মিষ্টি খেয়ে শুয়ে পড়লো তাবাসসুম। অনেকদিন পর সেদিন রবিনের সাথে মন খুলে কিছু কথা বলেছে সে। রবিন ওর ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র হলেও ওর সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না সে। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে ফরমাল যতটুকু কথা বলতে হয় তাই হয়েছে ওর সাথে। কিন্তু এতোদিন পর ওকে নিজের অফিসে দেখে অনেক আপন মনে হয়েছিল। মানুষের স্বভাব বড়ই বিচিত্র। অচেনা পরিবেশে মুখচেনা লোককেও আপন মনে হয়। প্রথম প্রহরে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র কয়েকজন বড়ভাই আছে। কিন্তু তাদের সাথে আগে থেকে পরিচয় ছিল না। কারো সাথে আগ বাড়িয়ে কখনো পরিচিত হওয়ার গরজ অনুভব করেনি তাবাসসুম। বরং তার সাথে কথা বলার জন্যই লোকের সিরিয়াল পড়ে যেত। এখনো যে সে ফেলনা হয়ে গেছে তা না। চারপাশে ঘুরঘুর করার জন্য উপগ্রহের অভাব তার কোনোকালেই ছিল না। কিন্তু এখন এসব পুরুষকে দেখলে বিরক্ত লাগে। সবাইকে পটেনশিয়াল চিটার মনে হয়। সোহেলের সাথে বিচ্ছেদের পর তার মধ্যে নারীবাদী প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। আগে কখনো সে নারীবাদীদের পছন্দ করেনি। এখন মনে হয় নারীরা আসলেই বৈষম্যের শিকার। লালসার শিকার। সমাজের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। তাত্বিক নারীবাদ ছাড়া হঠাৎ তৈরি হওয়া নারীবাদীরা পুরুষবিদ্বেষী হয়। তাবাসসুম এখন তাই হয়েছে। যুগের কণ্ঠ ছাড়ার অন্যতম একটা কারণ এটা। তার ডিভোর্স হয়েছে শুনে কলিগরা মনে হয় তাকে এক্সট্রা খাতির করতো। সহানুভূতির ছলে হয়তো ফায়দা নিতে চাইতো। কেউ কেউ ডিনারের আমন্ত্রণ জানাতো। তাদের এই অতিরিক্ত আগ্রহ তার জন্য ছিল অপমানজনক। তাই হাউজ পরিবর্তন করে প্রথম প্রহরে জয়েন করেছে সে।

নতুন হাউজের কাউকে জানানো যাবে না যে সে ডিভোর্সি। ডিভোর্সি নারীদের সমাজ করুণার চোখে দেখে। তাবাসসুম কারো করুণা চায় না। তাই রবিনকে এই ব্যাপারে কারো সাথে কিছু শেয়ার করতে মানা করে দিয়েছে। রবিন ছেলেটা ওকে রেসপেক্ট করে। ওর চোখের দৃষ্টিতে কোনো কলুষতা দেখতে পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ পুরুষই ফাঁক পেলে বুক বা পেটের দিকে নজর দেয়। রবিন এ পর্যন্ত তা করেনি। তবুও তাবাসসুম ভরসা পায় না। পুরুষ জাতটাই খারাপ। সোহেলকেও তো এভাবে সে বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু কী হল শেষ পর্যন্ত। বাকি জীবনটা কি একাই কাটিয়ে দেবে, নাকি অন্য কাউকে জীবনে স্থান দিতে পারবে, নিশ্চিত নয় তাবাসসুম। তবে বিয়ের আগ্রহ যে হারিয়ে ফেলেছে সেকথা নিশ্চিত।

পরদিন অফিসে গিয়ে ডেস্কে বসে একটা নোট নিচ্ছিল তাবাসসুম। পলিটিক্যাল বিট কাভার করে সে৷ কাজটা একটু কঠিন। তবে ভালো করে করতে পারলে সাংবাদিকতায় লিডিং পজিশনে যাওয়া সহজ। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কাজ হওয়ায় এদের সাথে এক রকম সখ্য তৈরি হয়। যারা ধুরন্ধর তারা এই সখ্যকে ক্যাশ করতে পারে। কিন্তু তাবাসসুমের মতো সুন্দরীদের জন্য এই কাজ বেমানান লাগে। সবাই যেন ভেবে নিয়েছে সুন্দরী মেয়েরা সাংবাদিকতা করবে? আচ্ছা ঢুকিয়ে দাও বিনোদনের সাব এডিটরে বা ফিচার বিভাগে। পলিটিক্স, ক্রাইম, ইকোনোমিকস, কোর্ট এসব কঠিন বিটে ওদের যাওয়ার দরকার নাই। কিন্তু সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসা একগুঁয়ে তাবাসসুম পলিটিক্যাল বিটেই ঢুকবে, এটা কেউ আটকাতে পারেনি। সাংবাদিকতায় সহজ কাজ হল সাব এডিটরের কাজ। ডেস্ক জব। বাইরের ঝড়ঝাপটা মোকাবেলা করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এতে আসলে সাংবাদিকতার আসল থ্রিল অনুভব করা যায় না। রিপোর্টিং হল সাংবাদিকতার প্রাণ। মাঠে-ময়দানে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে সেখান থেকে নিউজ তৈরি করা একজন রিপোর্টারের দায়িত্ব। এই কাজের মধ্যে যেমন থ্রিল আছে, তেমনি সমাজের কল্যাণের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দও আছে। টিভিতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রস্তাব পেয়েছে অনেক। কিন্তু তাবাসসুমের মনে হয়েছে ওখানে নিজের সৃজনশীলতা দেখানোর সুযোগ কম। তাই যাওয়ার গরজ অনুভব করেনি।
'কি করছেন আপু?' পিছন থেকে কথাটা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো রবিন দাঁড়িয়ে আছে।
'এইতো নোট নিচ্ছিলাম একটা। কেমন আছো?'
'ভালো আছি। আপনার কি অবস্থা?'
'এইতো চলছে। তোমার কাজবাজের কি খবর। তোমার তো বেশ সুনাম শুনলাম অফিসে।'
'আরে না। সবাই আমাকে ভালোবাসে তাই সুনাম করে। আমি আসলে বেগুন।'
'তোমার বিনয়ে আমি মুগ্ধ। এবার যাও। কাজ করো।'
'আমার তো শুধু একটাই কাজ।'
'মানে?'
'মানে ওই দুই নাম্বার লোকদের খোঁজ খবর রাখা এইতো।'
'আচ্ছা। দুই নাম্বারদের সাথে থাকতে থাকতে নিজেও দুই নাম্বার হয়ে যেও না। নিজের নীতিবোধ ঠিক রেখে চইলো।'
'অবশ্যই। নীতির প্রশ্নে কোনো আপস নাই।'

রবিন নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে। ওর ডেস্ক থেকে বাম দিকে তাকালে তাবাসসুমের ডেস্ক চোখে পড়ে। তবে তাবাসসুমের সাথে আই কন্টাক্ট হওয়ার জন্য তাবাসসুমকেও ডান দিকে তাকাতে হবে। রবিন কম্পিউটার অন করে কাজে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু বারবার শুধু তাবাসসুমের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। মেয়েটাকে যত দেখছে ততই যেন ভালোবেসে ফেলছে। রবিন অবাক হয় একটা বিষয় চিন্তা করে। যাকে ভালোবাসা যায় তাকে নিয়ে বাজে কিছু ভাবা যায় না। তাই সব মেয়ের বুক পাছায় আগে চোখ গেলেও তাবাসসুমের ক্ষেত্রে এটা ঘটেনি। এমনকি এখনো পর্যন্ত সরাসরি ওর বুকের দিকে তাকায়নি রবিন। মানুষ বলে কাম থেকে নাকি প্রেমের সূত্রপাত। কথাটা হয়তো সত্যি। তবে সব সময় সেই কাম যে মূখ্য থাকে তা না। গৌণও থাকতে পারে। ভালোবাসায় কাম গৌণ থাকাটাই উত্তম। দেহের তাড়নায় তৈরি হওয়া ভালোবাসা আর যাই হোক, নিঃস্বার্থ নয়।

রবিন আবার তাকায় তাবাসসুমের দিকে। মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে কম্পিউটারে। চুলগুলো লম্বা কাঠি দিয়ে খোপার মতো করে বাধা। চোখ স্ক্রিনে আবদ্ধ। মায়াবী মুখটায় এখন আর আগের মতো হাসি লেগে থাকে না। রবিন বুকের মধ্যে কষ্ট অনুভব করে। জীবনে কখনো কোনো মেয়ের জন্য কষ্ট অনুভব করেনি। এবারই প্রথম। অনুভূতিটা টের পেয়ে অবাক হয় রবিন। নিজের কাছেই নিজেকে অপরিচিত লাগে। তাবাসসুম যে কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়েছে এরপর কি সে আদৌ কোনো পুরুষকে ভালোবাসতে পারবে? আর কোনো মতে সে যদি তাবাসসুমের হৃদয় জয় করতে পারেও, তার কর্মকাণ্ডের কথা জানলে সে কি তার সাথে থাকবে? আবার সে নিজেও কি নতুন নতুন নারীসঙ্গ ছাড়া এক নারীতে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতে পারবে? সবকিছু জট পাকিয়ে যায়। মনে হয় গোলকধাঁধায় ফেলে দিয়েছে কেউ তাকে। কিন্তু রবিন আপাতত এসব নিয়ে ভাবতে চায় না। সে শুধু তাবাসসুমকে আপন করে পেতে চায়। এর জন্য যা যা করা লাগে সে করবে। কিন্তু এই মেয়েকে জয় করা সহজ হবে না। বলা যায় জীবনের সবচেয়ে কঠিন নারী চরিত্রের মুখোমুখি সে এখন।

হঠাৎ ডান দিকে ফিরে নিজের মোবাইল হাতে নেয় তাবাসসুম। এসময় তার চোখের কোণে ধরা পড়ে রবিন তার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে গেলে রবিন দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রবিনের আচরণে অবাক হয় তাবাসসুম। ছেলেটা এদিকে তাকিয়ে কী দেখছিল? তাকে? কিন্তু তাকে কেন দেখবে? সে ওর চেয়ে সিনিয়র। ছেলেটার সিনিয়র জুনিয়র জ্ঞান লোপ পেল নাকি? এলোমেলো চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। বিষয়টাকে নিজের মনের ভুল ভেবে নিয়ে আবার কাজে মনোযোগ দেয় সে।

ওদিকে রবিন হঠাৎ ধরা পড়ে যাবে মোটেই ভাবতে পারেনি। তাবাসসুমের মধ্যে কি যেন আছে। সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকানোর হিম্মত হয় না। লুকিয়ে দেখতে গিয়ে এভাবে চোখাচোখি হয়ে যাবে কে জানতো। রবিন নিজেকে শান্ত করে কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে।

ফিরোজ সাহবে আবার তার আগের ফর্মে ফিরে গেছেন। কুকুরের ঝামেলাটা মিটে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে কুকুরটা আর জ্বালাতন করছে না। খাজা হুজুর বড় কামেল লোক। এতবড় উপকার করেছেন মানুষটা কিন্তু বিনিময়ে কিছু চাননি। আজকাল এমন সৎ লোক দেখা যায় না। চারপাশে শুধু চোর বাটপার। এর মধ্যে কামেল লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। খাজা হুজুর বলেছেন সময় হলে তিনি কিছু একটা চেয়ে নেবেন। কি চাইবেন তিনি কে জানে। যা চাইবেন তাই দেওয়ার জন্য রাজি আছেন ফিরোজ সাহবে। কত টাকা চাইতে পারেন তিনি? দেখা যাক।

রাতে বাসায় ফিরে দেখলেন আফরিন মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কয়েকদিন আফরিনকে সময় দেওয়া হয়নি। বেচারি একা থাকে বাসায়। তারও তো নিঃসঙ্গ লাগতে পারে। কিন্তু তিনি কি করবেন? পুলিশের চাকরি তার। চাইলেই কি বেশি সময় দেওয়া যায়? তিনি কি পুলিশের চাকরির আড়ালে নিজের অপরাধবোধ লুকাতে চাইছেন? জানতে চায় তার অবচেতন মন।

'তোমাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে কেন জান? নতুন করে প্রেমে পড়েছ নাকি?' পোশাক বদলাতে বদলাতে জানতে চাইলেন ফিরোজ। তার কণ্ঠে রসিকতার সুর।
'তুমি আমার সাথে কথা বইলো না প্লিজ। সারাদিন কোনো খোঁজ রাখো না। আমি কি খেলাম কি করলাম তার কোনো খবর রাখো না৷ আবার এখন ন্যাকামি শুরু করেছো। এসব আমার ভালো লাগে না।' কণ্ঠে উত্তাপ নিয়ে বলে আফরিন।
'কি করব বলো। সারাদিন অফিসের কাজে বিজি থাকি। চাইলেই কি সময় বের করা যায়?'
'শুধু শরীরটা পাশে রাখাই সময় দেওয়া না। দূর থেকেও সময় দেওয়া যায়। দিনে একটা কলও তো দিতে পারো? নাকি সেই সময়টুকুও হয় না তোমার?'
'আচ্ছা সরি। আমার ভুল হয়েছে। আর কখনো ভুল হবে না। এবার লক্ষ্মী বউয়ের মতো একটা চুমু দাও।'
'ঢং না করে খেতে বসো যাও।' কথাটা বলে আফরিন ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানো শুরু করে। ফিরোজ ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে বসেন। আফরিন সবসময়ই ভালো রান্না করে। বড়লোকের মেয়েরাও যে ভালো রান্না করতে পারে, আফরিনকে না দেখলে বোঝা যাবে না।
'আজ আমি তুমি তোমাকে খাওয়ায় দিব। আমার পাশে বসো।' কথাটা বলে আফরিনের হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দেন ফিরোজ। আফরিন কথা না বলে বসে পড়ে। ফিরোজ আফরিনকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জীবনে তিনি অনেক নারীর সাথেই মিশেছেন। তবে ভালোবেসেছেন শুধু এই একটা নারীকে৷ আফরিনের জন্য নিজের জীবন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবেন না তিনি। তবুও আফরিনকে সময় দেওয়া হয় না কেন? তার যে সময় নেই বিষয়টা কি আসলেই তাই? তা তো না৷ চাইলেই দিনে অনেকবার ফোনে কথা বলতে পারেন। তবুও বলেন না। এটা কি অবহেলা নাকি আফরিনকে নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এর কারণ? আফরিনও তো একটা মেয়ে। তার কাছ থেকে সময় না পেয়ে অন্য কারো প্রতি দুর্বল হয়ে যেতে পারে কি? ফিরোজের মন উত্তর দেয়, এটা কখনোই হতে পারে না৷ আফরিন তাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারে না। আফরিন এমন কিছু করবে সেটা বিশ্বাস করেন না তিনি।

ওদিকে আফরিনের মনে তখন দ্বিধা। সে ফিরোজকে ভালোবাসে একথা সত্য। তবে সম্প্রতি রবিনের প্রতি সে দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ এমনকি এটা শুধু দুর্বলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি৷ শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়িয়েছে। রবিনের সাথে পরিচয় হওয়ার পর একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল সে। তারপর রবিনের আন্তরিকতা, তার খুনসুটি, কথা বলার স্টাইল, টিভিতে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দেওয়া ইত্যাদি সবকিছু দিয়ে রবিন তাকে পরাজিত করে দিয়েছে। যেন রবিন জানে সে কোন জায়গায় দুর্বল। সেসব জায়গাতেই টোকা দিয়েছে সে। রবিনের সাথে প্রথমবার শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল হুট করে। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই৷ এরপর সে অপরাধবোধে ভুগেছে। কাজটা কি ঠিক হল? ফিরোজকে চরম ধোকা দেওয়া হয়ে গেল। তাই এরপর এক সপ্তাহ রবিনের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করেনি। সে চেয়েছে রবিনের বিষয়টা স্মৃতি থেকে মুছে দিতে। কিন্তু কোন অদৃশ্য সুতোয় বাধা পড়েছে তার মন।
[+] 7 users Like Topuu's post
Like Reply
রবিনের সঙ্গ পাওয়া যাবে কিভাবে তার জন্য তার মন আকুলি বিকুলি করেছে। কিন্তু সে একে প্রশ্রয় দেয়নি। কিন্তু সেদিন যখন উপমা ওকে বিয়েতে দাওয়াত করলো তখন না করতে পারেনি। যদিও শুরুতে যেতে অস্বীকার করেছে কিন্তু তার অবচেতন মনে সে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল। এরপর যখন বিয়েতে আবার রবিনের সাথে দেখা হল তখন নিজের উপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল সে। রবিন সম্ভবত জাদুকর। ওর পাশে গেলে কোনো মেয়েই সম্ভবত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এরপর বাসায় ফেরার পথে রবিনের আগ্রাসন, এগিয়ে দিতে যাওয়ার সময় অসম্পূর্ণ রোমান্স তার মধ্যে একটা অবদমিত যৌনাবেগ সৃষ্টি করেছিল। সে মন থেকে চাইছিল রবিন তাকে আবার প্রাণ খুলে আদর করুক। তাই সেদিন যখন ফিরোজ সাভার যাওয়ার কথা বলল তখন তার ভেতরটা শিশুর মতো খুশি হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে একটা সময় পাওয়া গেল। কিন্তু রবিন যখন জানালো সে আসতে পারবে না, তখন তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল একশো ডিগ্রি। সারারাত সে বিছানায় ছটফট করেছে৷ মন যখন কোনো আনন্দজনক মূহুর্তের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে তখন সেটা না হলে ফ্রাস্ট্রেশন তৈরি হয়। বিগত তিনদিন ধরে আফরিন ফ্রাস্ট্রেশনে ভুগছে। রবিন বারবার কল দিয়েছে কিন্তু সে রিসিভ করেনি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে সরি লিখেছে অনেকবার। কিন্তু সে কোনো রিপ্লাই দেয়নি।

ফিরোজ ভাবছেন আফরিনের এই মুড অফ তার অবহেলার জন্য, সময় না দেওয়ার জন্য। তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন থেকে যত ব্যস্ততাই থাকুক, আফরিনকে তিনি প্রতি ঘন্টায় কল দেবেন।

আফরিন পড়ে গেছে দোটানার মধ্যে। সে ফিরোজকে ভালোবাসে ঠিক, কিন্তু রবিনকেও সে ভালোবেসে ফেলেছে। রবিন তার জীবনে এখন একটা বাস্তবতা। তাকে সে অস্বীকার করতে পারবে না৷ ধীরে ধীরে যেন রবিনের প্রতি ভালোবাসার পারদটা ফিরোজের প্রতি অনুভূতির চেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। যদি সুযোগ থাকতো তাহলে সে আজীবনের জন্য রবিনের কাছে চলে যেত। কিন্তু সে জানে ফিরোজ তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। সে যদি ফিরোজকে ছেড়ে দেয় তাহলে ফিরোজ জীবন্মৃত হয়ে যাবে। ফিরোজকে কষ্ট না দেওয়া তার কর্তব্য। ওদিকে রবিনকেও সে একান্ত করে চায়। এর একটাই মাত্র সমাধান আছে, তাহলো রবিনের সাথে গোপন প্রেম চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু গোপনে প্রেম করার অর্থ একজনকে ধোকা দেওয়া, যা কখনো আফরিন নিজের ক্ষেত্রে মেনে নিতে পারবে না। তাহলে সে যে ধোকা দিচ্ছে এর কী জবাব আছে তার কাছে? অতৃপ্ত হৃদয় উত্তর দিতে পছন্দ করে না, শুধু চায় তার বাসনা পূরণ হোক।

খাওয়া শেষে পরম মমতায় আফরিনকে বুকের মধ্যে নিয়ে শুয়ে পড়লেন ফিরোজ। দীর্ঘদিন পর তাদের মধ্যে রোমান্টিক সঙ্গম হল। ফিরোজের প্রতিটা স্ট্রোকের সময় আফরিনের শুধু মনে পড়ে যাচ্ছিল রবিনের কথা। সে এই ফ্যান্টাসি থেকে মুক্তি চায় না। চায় তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে। তাই উপর দিয়ে ফিরোজকে জড়িয়ে ধরলেও হৃদয়ের জগতে যে অলৌকিক উদ্যান সে তৈরি করে নিয়েছে, সেখানে রবিনের বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়েছিল সে।

ফিরোজের পিছু নিয়ে সাভার যাওয়ার দুইদিন পর আবার একই জায়গায় হাজির হয় রবিন। ডিসেম্বরের হালকা শীতে ভোরবেলা বাইক নিয়ে সভার চলে যায় সে৷ বাইকটা পার্ক করে বাড়ির গেটে টোকা দেয়। ভেতর থেকে দারোয়ান জানতে চায়- 'কে, কী চাই?'
'বাড়ি ভাড়া নিতে আসছি। একটু খুললে ভালো হয়।' উত্তর দেয় রবিন।
'এই বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় না। আপনি অন্য জায়গায় দেখেন।'
'আমি এই এলাকায় নতুন ভাই। ভাল বাসার সন্ধান জানি না। আপনি একটা ভালো বাড়ি খুঁজে দিতে পারলে আপনারে বকশিস দিতাম।'
রবিনের কথায় কাজ হয়। গেট খুলে দারোয়ান বেরিয়ে আসে। দারোয়ান খবিরুদ্দিন অনেক বছর ধরে দারোয়ানির চাকরি করে। তার অভিজ্ঞতায় দেখেছে বড় ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবীরা নিজেরা বাসা ভাড়া করতে পারে না। কারণ একটা বাসা খোঁজা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার৷ যা তাদের নাই। তাই তারা ব্রোকারের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া করে। সে এক সময় বনানীতে দারোয়ানি করেছে। সেখানে এক শ্রেণির দালাল আছে যারা বাড়ি, অফিস ভাড়া, ফ্ল্যাট বিক্রি এসব পেশায় জড়িত। তাদের আয় ইনকাম বেশ ভালো। খবিরুদ্দিনও ছোটখাটো ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করে দিয়েছে। তাতে দুই পক্ষ থেকেই কিছু কমিশন সে পেয়েছে। কিন্তু বড় দাও মারার সুযোগ তার হয়নি। সে ছাপোষা একজন মানুষ। বড় মানুষদের সাথে ডিল করার ক্ষমতা তার নাই।

আগন্তুক লোকটার কথা শুনে চোখ দুটো চকচক করে ওঠে খবিরুদ্দিনের। অনেকদিন পর এরকম একজন কাস্টমার পাওয়া গেছে। দুর্মূল্যের বাজারে একটু বাড়তি ইনকাম কে না চায়। এমনিতে স্যার যা বেতন দেয় তা দিয়ে সংসার ভালো মতই চলে যায়। কিন্তু আটকে যায় অন্য জায়গায়। তার টুকটাক তামাক সেবনের নেশা আছে। দিনে এক পুড়িয়া গাঁজা টানতে না পারলে তার দিনটা ভালো যায় না। গাঁজার নেশায় টাকা নষ্ট করে বাড়িতে টাকা কম পাঠানোয় দুদিন আগে বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে তার। তার দেশের বাড়ি কিশোরগঞ্জ৷ বাড়িতে স্ত্রী আর দুইটা মেয়ে আছে। ছেলে নাই তার। একটা ছেলের জন্য তার বুকটা খা খা করে।

'জি স্যার বলেন। আপনের কেমন বাড়ি লাগবে? বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাট বাড়ি নাকি অফিস। আমার কাছে সব খোঁজ আছে। আপনি টেকা দিবেন বাড়ি পাইবেন।' আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলে খবিরুদ্দিন।
'আমার একটা বাগানবাড়ি লাগবে। নদীর পারে এরকম একটা পজিশন হলে ভালো হয়। ভাড়া যা লাগে লাগুক। বাড়ি পছন্দ হলে টাকা কোনো বিষয় না।'
ইচ্ছা করেই বাগানবাড়ির কথা বলল রবিন। কারণ সে এখন নিজেকে বড়লোক দেখাতে চায়। খবিরুদ্দিনের কথা শুনেই তার ভেতরটা পড়ে ফেলেছে সে। এই ধরনের মানুষের চোখ থাকে উঁচুতে। নিজের সমপর্যায়ের লোকদের এরা ফকিন্নি মনে করে। তাদের ধারণা তারা আসলে ওরকম বড়লোক হওয়ারই কথা ছিল। কপাল দোষে আজ গরিব। রবিন বিষয়টা আগে বুঝতে পারলে গাড়ি নিয়ে আসতো। গাড়ি নিয়ে আসলে খবিরুদ্দিন তাকে আরো বেশি সিরিয়াসলি নিত। কি আর করা। এখন এভাবেই ম্যানেজ করতে হবে।
'তা স্যার করেন কি আপনে? গাড়ি নিয়া আসছেন? চলেন ওই পাশে বাজার আছে। ওখানে গিয়া কথা বলি।' খবিরুদ্দিন বলে।
'আমি বাইং হাউজের ব্যবসা করি। বাইং হাউজ বোঝেন তো? ওই বিদেশে গার্মেন্টস প্রডাক্ট ডেলিভারি দেই আরকি। বিদেশ থেকে আমার অনেক বায়ার আসে। তাদেরকে হোটেলে রাখতে গেলে বিল অনেক বেশি আসে। তাই ভাবছি একটা বাগানবাড়ি ভাড়া নেব। আর আজকে গাড়ি আনি নাই। আমার গাড়ি নিয়ে ম্যানেজার গেছে এয়ারপোর্টে। আমি তাই বাইক নিয়ে আসছি। চলেন বাজারে যাই।'
'এইটা কোনো সমস্যা না। চলেন যাই। আমারে আপনার নিজের লোকই মনে করবেন স্যার। যেকোনো দরকারে আমারে স্মরণ করবেন। বন্দা হাজির থাকবে সব সময়।'
'তুমি তো দেখছি বেশ কাজের আছো। হুম, আমার চোখ তাই বলছে। জহুরির চোখ মিথ্যা বলে না। তোমাকে কাজে লাগানো লাগবে।' রবিন আপনি থেকে তুমিতে চলে আসে। এমনিতেও খবিরুদ্দিনের বয়স বেশি না। পয়ত্রিশের মতো হবে। তুমি বললে অধীনস্থদের মনে মালিক মালিক একটা ভাব তৈরি করা সহজ হয়।

বাজারে এসে একটা চা বিড়ির দোকানে বসে। দুটো চা দিতে বলে পকেট থেকে বেন্সনের প্যাকেট বের করে রবিন। খবিরুদ্দিনের দিকে একটা এগিয়ে দেয়। বিড়িখোরদের কাছে দামি সিগারেট মহামূল্যবান জিনিস। খবিরের মনে রবিনের দাম বেড়ে যায়। চা খেতে খেতে একটা নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় রবিন। খবির তাকে অনুসরণ করে।
'আমি যে বিজনেস করি তাতে বিদেশীদের সাথে সব কাজকাম। আর বিদেশীরা একটু লাল পানি আর ওইসব মানে বুঝোই তো, লাইক করে। তোমারে যদি এই দুইটা ম্যানেজ করার দায়িত্ব দেই পারবা না?'

খবির দেখে তার কপাল খুলে গেছে। ওইসব মানে কি সে বোঝে। বলে, 'পারব না মানে স্যার, একশোবার পারব। আপনি যেই ধরনের মাল চান সব পাবেন। আরে আমার বর্তমান মালিকরেই তো...।' কথাটা অর্ধসমাপ্ত রেখে কাশি দেওয়ার ভাব ধরে খবির।
'তোমার বর্তমান মালিকরে কি? মাল সাপ্লাই দাও?'
'আরে না না। আমার মালিক মাল পানি খায় না। উনি বড় সৎ লোক।'
'ও আচ্ছা। সৎ লোক বলে তাকে সতী নারী সাপ্লাই দাও তাই তো?' কথাটা বলে হাসতে থাকে রবিন। খবির বিব্রতভাব কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করে।
'কি যে বলেন স্যার। আমি ছোট মানুষ। ওইসব কই পাব। আর স্যার ওইসবের মধ্যে নাই। উনি ভালো লোক।'
'এই না তুমি বললা তুমি সব ম্যানেজ করতে পারবা। এখন আবার বলতেছো তুমি ছোট মানুষ। তার মানে আমাকে অন্য লোক খুঁজতে হবে। বুঝতে পারছি।'
খবির দেখে তার সোনার ডিম হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত বলে ওঠে- 'না স্যার পারব পারব। আসলে কি আমার মালিক ভালো মানুষ ঠিক আছে। কিন্তু আমার কিছু যোগাযোগ আছে এইসব বিষয়ে। আমি ম্যানেজ করতে পারব।'
রবিন খেয়াল করে খবির মালিকের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে চাচ্ছে না। তার মানে ডাল মে কুছ কালা হে।
'আচ্ছা তোমার বর্তমান মালিকের নাম কি? কি করে উনি?'
'উনার নাম আনিস চৌধুরী। উনি পরিবহন ব্যবসায় আছেন।'
খবিরের কথায় খটকা লাগে রবিনের। নাম তো মিলল না। দ্রুত চিন্তা কাজ করে রবিনের মাথায়। খবির প্রথমে যেভাবে গাইগুই করলো মালিকের বিষয়ে, তারপর আবার হঠাৎ করে মালিকের নাম বলে দিল, বিষয়টা কেমন যেন বিপরীতমুখী লাগলো। তার মানে নামটা হয়তো আসল না। রবিন তার আরেকটা কার্ড ছুড়ে মারে। কথা বের করাটা এক প্রকার কার্ড খেলার মতো। সঠিক সময়ে উপযুক্ত কার্ড শো করতে পারলে জিত তার। কিন্তু কোন কার্ডে বাজি লাগবে আর কোন কার্ডে লাগবে না তা কেউ জানে না।
'দেখো খবির। আমার সাথে মিথ্যা বলবা না। আমি ঘাস খেয়ে এতবড় বিজনেস দাড় করাই নাই। বুদ্ধি না থাকলে এতদূর আসতে পারতাম না। আমি চাই তুমি আমার বিশ্বস্ত লোক হও। আমি মানুষের চোখ দেখলে মনের খবর পড়তে পারি। তুমি আমার বিশ্বস্ত লোক হতে পারলে তোমার আর দাতোয়ানির চাকরি করা লাগবে না৷ তোমারে আমার সেক্রেটারির চাকরি দিব। তুমি তো দেখতে শুনতে খারাপ না৷ ফিটনেসও ভালো। এই ছোট চাকরি কেন করবা? তোমারে আমি ভাল পজিশনে দেখতে চাই।'
'স্যার মিথ্যা বলি নাই। মানে আর কি ওই মালিকের বিষয়ে সব কথা বলা নিষেধ আছে তো তাই।' মুখটা কাচুমাচু করে বলে খবির।
'সেতো থাকবেই। আমি এতবড় একটা বিজনেস করি এটা যদি আশেপাশের পোলাপান জানে তাইলে তো ওরা ডিস্টার্ব করবে আমারে। দুইদিন পরপর আইসা বলবে স্যার আজ এই উৎসব টাকা দেন, কাল ওমুকের '.ি টাকা দেন। চান্দাবাজি শুরু করবে। ওরা পলিটিক্যাল পোলাপান। ওদের চ্যাতাইলে এলাকায় থাকাও মুশকিল হয়ে যায়। তাই কেউ চায় না তার পরিচয় প্রকাশ পাক। কিন্তু আমারে দেইখা কি তোমার এলাকার ছিচকে মাস্তান মনে হয়? আমি কি তার কাছে চান্দা চাব? আমি জানতে চাই এইজন্য যে আমার আশেপাশে কারা থাকে বা এই এলাকার সিকিউরিটি কেমন তার জন্য। সিকিউরিটি ভালো না হইলে তো বড় মানুষরা থাকবে না তাইনা। আর এই নাও এডভান্সের টাকা৷ তোমার যা লাগে খরচ কইরো আর বাকি টাকা দিয়া বাড়ির এডভান্স কইরো। আর নাম্বার রাইখা দিবা দরকারে আরো পাঠাবো।' কথাগুলো বলে খবিরের হাতে একটা টাকার বান্ডিল তুলে দেয়।
'এইখানে তিরিশ হাজার আছে। যদি আরো লাগে বলবা। টাকা পয়সা আমার কাছে কোনো বিষয় না। আমি চাই মানুষের আনুগত্য আর বিশ্বস্ততা। তুমি আমার বিশ্বস্ত হইতে পারলে তোমার দিন ঘুরে যাবে খবির।'
হাতে এতগুলো টাকা পেয়ে চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে খবিরুদ্দিনের। তার তিন মাসের বেতন সে এক মূহুর্তে পেয়ে গেছে। নিজের চোখকেই সে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার মনে হয় এই লোক তাকে যা আদেশ করবে সে তাই শুনবে।
টাকা হাতে পেয়ে খবিররের চোখের তারায় আনন্দ রবিনের চোখ এড়ায় না। রবিন অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছে কথা বের করার সময় টার্গেট যখন ভালনারেবল হয়ে যায় তখন হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিলে টনিকের মতো কাজ করে। তাই কোথাও এই ধরনের স্ট্রিং অপারেশনে গেলে সাথে কিছু টাকা রাখে সে।
টাকা পেয়ে খবিরের প্রতিরোধের দেয়াল ভেঙে যায়৷ সে জানায় বাড়ির মালিকের নাম ফিরোজ। তিনি পুলিশের বড় অফিসার। ফিরোজের মদ ও নারীর নেশা আছে৷ প্রতি বৃহস্পতিবার সে এখানে এসে মদ খায় আর নারী নিয়ে ফূর্তি করে। উঠতি মডেল, অভিনেত্রী এগুলো ফিরোজের প্রথম পছন্দ। কোনো কোনো সময় ভদ্র ঘরের নারীদেরও দেখা যায়। যারা ফেবারের আশায় ফিরোজের শয্যাসঙ্গী হয়। তার বন্ধুকেও দেখা যায় মাঝেমধ্যে তার সাথে যোগ দিতে। সে নাকি ভার্সিটির মাস্টার।
'স্যার আমি যে এই কথা আপনেরে জানাইছি এইটা যদি ফিরোজ স্যার জানে তাইলে আমারে ডাইরেক্ট গুলি কইরা মাইরা ফালাইব। আপনার দোহাই লাগে স্যার এইটা যেন ফিরোজ স্যারের কানে না যায়।'
'আরে ধুর। তুমি পাগল নাকি। আমি এগুলো ফিরোজ সাহেবকে বলতে যাব কেন। উনার আর আমার কাজ তো একই রকম। বলা যায় আমরা ভালো বন্ধু হব দেখা হইলে।'
'ঠিক আছে স্যার। আপনের উপর ভরসা করলাম।'
'সেতো তোমাকে করতেই হবে যদি নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন চাও। আচ্ছা এই এলাকার প্রতি শতাংশ জায়গার দাম কত বলো তো?'
'এই ধরেন পাঁচ ছয় লাখ। ক্যান স্যার?'
'না মানে ভাবছি আমিও এমন একটা বাড়ি করে ফেলব কিনা। নিজের একটা বাগানবাড়ির শখ আমারও আছে। যদি বাড়ি বানাই তাইলে এর ম্যানেজিং এর সব দায়িত্ব তোমারে দেব।' রবিনের কথায় বিনয়ে গলে পড়তে চায় খবির। তার চোখেমুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ সুস্পষ্ট।

খবিরের সাথে কথা শেষ করে বাইক স্টার্ট দেয় রবিন। আপাতত এখানকার কাজ শেষ। ফিরোজ সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা শুধু তার নিউজের জন্যই না, দুদকেরও কাজে লাগবে। বাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে প্রায় বিশ বাইশ শতাংশ জায়গার উপর। তার মানে এভারেজ যদি পাঁচ লাখ করেও শতক ধরা যায় তাহলে বাড়িসহ প্রায় তিন কোটি টাকার সম্পত্তি আছে এখানে। ফিরোজের মতো জুনিয়র অফিসার এত টাকা কিভাবে যোগাড় করলো তা এক বিস্ময়। দুদকের কাজ সময় মতো দুদক করবে। তার কাজ এখন এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে বীরেন বাবুর খুনিদের খুঁজে বের করা। এরজন্য ফিরোজকে ফাঁদে ফেলতে হবে। কিন্তু সেটা কিভাবে? যদি ফিরোজের এই গোপন সম্পদের খবর ফাঁস করে দেয় তাহলে কী হবে? তাহলে ফিরোজ হয়তো সাসপেন্ড হবে, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে। কিন্তু বীরেন বাবুর খুনের রহস্য রহস্যই থেকে যাবে। রবিনের ইন্টারেস্ট দুর্নীতির তথ উদঘাটনে নয়, এই তথ্য কাজে লাগিয়ে খুনের রহস্য উদঘাটন করা। ফিরোজের এই সম্পত্তির খবর সে জেনে গেছে এটা বলে ব্লামেইল করা যায়? নাহ, এটা করলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা হবে। ফিরোজ তাকে বাঁচতে দেবে না। অনেক সাংবাদিকই এসব করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। এটা সেকেলে পদ্ধতি। এর চেয়ে বেটার কিছু ভাবতে হবে। রবিনের দৃষ্টি সামনে, কিন্তু তার মাথায় কাজ করছে রাজ্যের ভাবনা। ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসে সে। বিছানায় শুয়েও তার চিন্তা কূল খুঁজে পায় না। কিভাবে আটকানো যায় ফিরোজকে? হঠাৎ একটা চিন্তা মাথায় খেলে যায় রবিনের। খবির বলছিল ফিরোজের প্রথম পছন্দ উঠতি মডেল, অভিনেত্রী। তার মানে এটা ফিরোজের দুর্বলতা। মানুষের পছন্দের জিনিসই তার দুর্বল পয়েন্ট। রবিন ফিরোজের এই একিলিস হিলে আঘাত করতে চায়। এরজন্যও আফরিনকে প্রয়োজন তার। কিন্তু আফরিন দুদিন ধরে কল ধরছে না। ফিরোজকে ফাঁদে ফেলার জন্য আফরিনকে তার একান্ত প্রয়োজন। সেদিন যায়নি বলে আফরিন রাগ করে আছে। যেভাবেই হোক রাগ ভাঙাতে হবে।
আফরিনের কথা মনে হতেই আতঙ্ক আর বেদনা একসাথে ঘিরে ধরে রবিনকে। মেয়েটা তাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছে৷ সারাক্ষণ হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিতে থাকে। সে কি করছে না করছে কখন কোথায় যাচ্ছে সব জানতে চায়। দুদিন ধরে মেসেজও দিচ্ছে না। মেয়েটা যখন জানবে রবিন ফিরোজের সম্পর্কে তথ্য নিতে তার সাথে অভিনয় করেছে, তখন তার কী অবস্থা হবে? রবিনের অবচেতন মন প্রশ্ন করে, সে এখনো অভিনয় করে যাচ্ছে নাকি আফরিনকে একটু একটু ভালোও বাসতে শুরু করেছে? দুদিন কল না ধরায় তার কি একটুও খারাপ লাগছে না? সচেতন মন উত্তর দিতে চায় না। সেখানে এখন ভর করেছে তাবাসসুম। ছয় বছর পর পুরনো প্রেম ফিরে এসেছে। এবার আর তাকে হাতছাড়া করতে চায় না। যেভাবেই হোক এবার তাকে জয় করেই ছাড়বে৷ অন্যদিকে অবচেতন মন বলে আফরিন তার মনের অনেকখানি জায়গাজুড়ে অবস্থান নিয়ে ফেলেছে। সেখান থেকে তাকে সরানো সহজ হবে না। দুদিকের দোলাচলে দোল খেতে খেতে ঘুমিয়ে যায় রবিন।

পরদিন অফিসে গিয়ে দেখে তাবাসসুম এখনো আসেনি। ডেস্কটা ফাঁকা পড়ে আছে। রবিনের বুকের মধ্যে শূন্যতা অনুভূত হয়। কি হল মেয়েটার? এখনো আসেনি কেন? কোনো অসুখ বিসুখ হল না তো? সে ফোন বের করে ফোন দেয় তাবাসসুমের নাম্বারে। তাবসসুম ফোন রিসিভ করতেই শশব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে- ' কোথায় আপনি? শরীর ঠিক আছে তো? অফিসে আসবেন না আজকে?'
রবিনের প্রশ্ন শুনে অবাক হয় তাবাসসুম। বলে- 'আরে আমি তো অফিসে না গিয়ে সরাসরি প্রেসক্লাবে চলে আসছি। এখানে বিরোধীদের মানববন্ধন হচ্ছে। প্রোগ্রামটা কাভার করে অফিসে আসব। তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? কোনো সমস্যা?'
'তা না। আসলে অফিসে এসে আপনাকে দেখতে পেলাম না তো তাই জিজ্ঞেস করলাম।' সব জায়গায় আত্মবিশ্বাসী রবিনের কণ্ঠ তাবাসসুমের বেলায় কেমন ম্যাড়মেড়ে শোনায়। রবিনের কথা শুনে হেসে ওঠে তাবাসসুম। বলে- 'ওরে পাগল তুমি জানো না যে আমার কাজ তোমার চেয়ে আলাদা। পলিটিক্যাল বিটে কখন কোথায় থাকা লাগে তার নিশ্চয়তা নেই। আমি দ্রুতই চলে আসব। দেখা হবে।'

রবিন কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। তাবাসসুমের সাথে কথা বলতে গেলে এমন হয় কেন কে জানে। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। সব গোছানো কথা এলোমেলো হয়ে যায়। হৃদয় থেকে ভালোবাসা কোনো মানুষের সাথে এই প্রথম কথা বলছে সে। বলা যায় এই অনুভূতির কাছে আনাড়ি সে। যাকে হারানোর ভয় নেই, বা গেলেও কিছু যায় আসে না, তার সাথে যেভাবে ইচ্ছা কথা বলা যায়। কিন্তু যাকে হারানোর ভয় আছে তার সাথে কথা বলার সময় প্রতি পলে সাবধানে থাকতে হয়। রবিন এখন তার বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করছে।

ঘন্টাখানেক পর অফিসে আসে তাবাসসুম। একটা টপস আর একটা জিন্স পরেছে সে। দারুণ স্মার্ট লাগছে তাকে। সিনেমায় অভিনয় করলে এই মেয়ে প্রথম সারির নায়িকা হতো এটা নিশ্চিত। অফিসে এসেই রবিনের ঘাড়ে একটা টোকা দেয় তাবাসসুম। রবিন তখন কম্পিউটারে একটা নিউজ এডিট করছিলো।
'কী, খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল নাকি আমার জন্য? নাকি এমনিতেই কল দিছো?'
'দুশ্চিন্তা হচ্ছিল বৈকি। আপনাকে না দেখে হঠাৎ মনে হল আপনার অসুখ বিসুখ হল না তো! তাই কল দিয়েছিলাম।'
'আহা আমার জন্য কত চিন্তা তোমার।আমার জন্য কেউ ভাবে এটা জেনে ভালোই লাগছে।' দুষ্টু হাসি হেসে উত্তর দিল তাবাসসুম।
'আপনার জন্য ভাবার লোকের অভাব নাই আমি জানি। অফিসের সব কলিগই আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারলে খুশি হয়। কিন্তু আমার চিন্তাটা অন্যরকম। আপনি বুঝবেন না।'
'তাই বুঝি? আমার কি বোঝার বয়স হয়নি?' দুষ্টুমির ভঙ্গিতে জানতে চায় তাবাসসুম। সে আসলে রবিনের কথা সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।
'বোঝার বয়স হয়েছে। তবে সব কথা সব সময় সবাই অনুবাদ করতে পারে না।'
'আহারে আমার ব্লাডি জুনিয়র। ঠিক আছে, কাজ করো, গেলাম।' কথাটা বলে নিজের ডেস্কে চলে যায় তাবাসসুম।

রবিন কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই তাবাসসুমের দিকে তাকিয়ে থাকে। এর মধ্যে দুইবার চোখাচোখি হয়ে গেছে। দুজনই মুচকি হাসি দিয়ে নিজেদের কাজে মন দিয়েছে। অফিস শেষে রবিন তাবাসসুমকে বনানী পৌঁছে দিয়ে আসতে চায়। তাবাসসুম বলে কষ্ট করে তোমার এতদূর যাওয়া লাগবে না৷ আমি সিএনজি নিয়ে চলে যাব।

রাতে বাসায় ফিরে রবিনের আচরণের কথা মনে পড়ে তাবাসসুমের। ছেলেটা এমন করছে কেন। ভাব দেখে মনে হয় সে ওর গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। সে ওর চেয়ে সিনিয়র। তার উপর আবার ডিভোর্সি। অথচ রবিন এখনো বিয়ে করেনি। তাহলে ছেলেটা কী বোঝাতে চায় তার আচরণ দিয়ে?

রবিন যাই বোঝাতে চাক, তাবাসসুম আর এইসব প্রেম পিরিতের মধ্যে নাই। সে বিয়েই করবে না আর আপাতত এই সিদ্ধান্তে আছে। আবার যাকে বিয়ে করবে, সে যে চিট করবে না তার নিশ্চয়তা কী? এর চেয়ে একা থাকাই ভালো। সোশ্যাল ওয়ার্ক করবে, নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে আর সাংবাদিকতা, এই তিনেই জীবন কাটিয়ে দেবে সে। কোনো পুরুষকে আর সে বিশ্বাস করে না। তার ধারণা শিশ্নযুক্ত কোনো মানুষ বিশ্বাসী হতে পারে না। তাই তার এই একলা চলো নীতি।

শুয়ে শুয়ে জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি স্মরণ করে সে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই প্রেম শুরু হয় তাদের। শুরুতে সোহেলকে নিয়ে পুরো ঢাকা টইটই করে ঘুরেছে সে। আজ জিয়া উদ্যান, কাল রমনা, পরদিন বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী, কোনো জায়গা বাদ নেই তাদের পায়ের স্পর্শের। সোহেল প্রতিদিন তার জন্য একটা গোলাপ কিনতো। তাবসসুম সেই গোলাপ বাসায় নিয়ে আসতো। জমতে জমতে প্রায় দুইশোটা গোলাপ জমেছিল তার বাসায়। সেই গোলাপের মতই ভালোবাসার শেকড় এভাবে শুকিয়ে যাবে কে জানতো?

ওদিকে রবিনের চোখে ঘুম নেই। নানামুখী চিন্তা তার মাথায় ভর করেছে। আফরিন কল ধরছে না এটা একটা টেনশন। তার উপর ফিরোজের সাথে পরবর্তী চালটা কি হবে তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে৷ এরই মধ্যে বাগড়া দিচ্ছে তাবসসুমের মুখখানা। ওই মুখটা চিন্তার সূত্র এলোমেলো করে দিচ্ছে। সে এখন যেভাবে তাবসসুমের কথা ভাবছে, তাবসসুমও কি তার কথা ভাবছে? নাকি সে একাই হাওয়ায় প্রাসাদ বানিয়ে যাচ্ছে। তাবাসসুমকে তার বাইকে উঠাতেই হবে। বাইক হল প্রেমে পড়ার বাহন। বাইকে কয়েকদিন ঘোরাফেরা করলে তাবসসুম খানিকটা দুর্বল হতেও পারে।
'কি করো, বাসায় ফিরেছো?' হঠাৎ নোটিফিকেশনের আওয়াজে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আফরিন মেসেজ দিয়েছে।
'হ্যা ফিরেছি। আমার খোঁজ আর কে রাখে? আমি কি কারো কিছু হই নাকি?' কপট রাগ দেখিয়ে রিপ্লাই দেয় রবিন। যাক অবশেষে আফরিন মেসেজ দিয়েছে আপাতত এটাই সান্ত্বনা।
'দেখো, ঢং করবা না৷ আমার রাগ এখনো পড়েনি। তুমি কষ্টে থাকবা তাই টেক্সট করেছি৷ এত আকাশে ওড়ার প্রয়োজন নাই।'
'আচ্ছা। এখন মহারানীর রাগ ভাঙানোর জন্য আমাকে কি করতে হবে? শাহবাগের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত ল্যাংটা হয়ে দৌড় দিব?'
'তুমি এতো শয়তান, আগে জানলে তোমার সাথে মিশতাম না। তুমি কি আমাকে একটু রাগ করেও থাকতে দিবা না? ফাজিল একটা।' মেসেজের সাথে এক দঙ্গল হাসির ইমোজি।
'আই লাভ ইউ।'
'আই লাভ ইউ টু বেবি। আই ব্যাডলি নিড ইউ। তোমাকে প্রচুর মিস করছি।'
'আমিও অনেক মিস করছি সোনা। কতদিন কথা হয় না৷ কল দেই?'
'নাহ, ফিরোজ বাসায়। ওয়াশরুমে গেছে। সেই ফাঁকে বদমাইশটাকে টেক্সট করলাম।'
'কাল বাসায় আসব?'
'বাসায় না৷ বাসায় আসাটা রিস্কি। চলো বাইরে কোথাও বসি।'
'ঠিক আছে। কই বসবা? রেস্টুরেন্টে নাকি পার্কে?'
'রেস্টুরেন্টে। পার্কে ভয় লাগে। কে কোত্থেকে দেখে ফেলবে কে জানে।'
'ঠিক আছে। বিকেলে ফোন দিব তাহলে। রেডি থেকো।'
'হুম থাকব। উম্মাহহহ।'
'উমম্মাহহ।'

আফরিনের সাথে কথা শেষ করে আবার ফিরোজের বিষয়টা নিয়ে পড়ে সে৷ ফিরোজ মডেল লাইক করে। তার মানে মডেল দিয়ে ফিরোজকে ফাঁদে ফেলানো যায়। কিন্তু মডেলরা টাকার বিনিময়ে সেক্স করতে পারে, তার জন্য কাজ করবে কেন? তার উপর ফিরোজ আবার পুলিশ। এসব বিষয় ঝামেলায় জড়ানোর ক্ষেত্রে প্রফেশনাল মডেল অভিনেত্রীরা একশো হাত দূরে থাকবে। তাহলে উপায় কি? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শ্রাবন্তীর কথা মনে পড়ে যায় রবিনের৷ শ্রাবন্তী দৌলৎদিয়ার মেয়ে হলেও শিক্ষিত, মেধাবী। আধুনিক কালচারাল দুনিয়ার খোঁজ খবরও রাখে। নিজের জেদের বশবর্তী হয়েই সে দৌলৎদিয়ায় পড়ে আছে। ওকে মডেল হিসেবে ফিরোজের কাছে পাঠানো যায়। ওকে যা বলা যাবে তাই শুনবে। কিন্তু গীতা মাসী কি ওকে আসতে দেবে? গীতা মাসী যদিও তাকে পছন্দ করে এমনকি একবার তার সাথে সঙ্গমও হয়েছে, তবুও শ্রাবন্তী তার বিজনেসের একটা এসেট। কেউ চায় না তার বিজনেস ধ্বংস করে অন্যের জন্য কাজ করতে। শ্রাবন্তী একবার পল্লী থেকে বের হলে আর নাও ফিরতে পারে, এটা একটা ভয়ের বিষয় হতে পারে তার জন্য। তবে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। গীতা মাসী যদি সহযোগিতা করে তাহলে কাজটা সহজ হবে। তা নাহলে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে। এর জন্য শ্রাবন্তীকে আগে থেকেই ঢাকায় এসে থাকতে হবে৷ কখন কিভাবে ওকে কাজে লাগানো যায় সেটা সময় এলেই বোঝা যাবে। আগামীকাল গীতা মাসীকে একটা ফোন দিতে হবে। আপাতত ঘুমানো যাক।

বিয়ের পর দিনগুলো ভালোই যাচ্ছে অরিত্র আর উপমার। আগে থেকেই সেক্সে অভ্যস্ত অরিত্র উপমা দম্পতির তাই সেক্স বিষয়ে অস্বস্তি বা শারীরিক জটিলতা নেই। ফলে গত দুই সপ্তাহ তারা উদ্দাম যৌনতা চালিয়েছে। কিন্তু এখনো হানিমুনে যাওয়া হয়নি। উপমা চেয়েছিল বাইরে কোথাও যেতে। কিন্তু অরিত্র রাজি হয়নি। সে এখন দুটো কাজে মনোযোগ দিয়েছে। তার বাবার খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা করা আর অরুণিমা ফাউন্ডেশনকে ঢেলে সাজানো। হত্যা রহস্য উদঘাটনে রবিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন রবিনের সাথে কথা হয়নি। অগ্রগতি কতদূর হল জানতে হবে। ওদিকে অরুণিমা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার জানিয়েছেন, কেরানীগঞ্জের পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু করা দরকার। বীরের বাবু জমি কিনে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়ে যেতে পারেননি। প্রায় ষাট শতাংশ জায়গা কেনা হয়েছে কেরানীগঞ্জের একটি গ্রামে। সেখানে একটা কলেজ আর অনাথ শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। অরুণিমা ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি দিয়েছে। তাদের অনেকেই এখন কর্মজীবনে ভালো অবস্থানে আছে।
[+] 9 users Like Topuu's post
Like Reply




Users browsing this thread: 16 Guest(s)