Thread Rating:
  • 186 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩২ )
কাদের ভাই রেডি আছি কিন্তু বিকেলে পড়ার সময় হবেনা।

রাতে পড়বো। ধন্যবাদ কাদের ভাই
[+] 1 user Likes সমাপ্তি's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
Ab to dedo yar


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


Like Reply
অপেক্ষা করছি ভাই!
Like Reply
অপেক্ষায় আছি কাদের ভাই ।
[+] 1 user Likes HeartBeat's post
Like Reply
আপডেট ২৯



সাফিনা করিম সাইকোলজিস্ট আদিবা রহমান এর সামনে বসে আছেন। সেইদিন সাইকোলজিস্ট এর কথা মাথায় ঢুকে নি তেমন করে কিছু। নুসাইবা কে টাকা দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে বসেছিল ভিতরে। সাইকোলজিস্ট সেটা খেয়াল করেছিল। গুড সাইকোলজিস্ট। সাফিনা কে পরে আলাদা করে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল ডিস্টার্ব কিনা কিছু নিয়ে। সাফিনা ঠিক নুসাইবার ঘটনা বলতে না পারলেও বলেছিল একটা ব্যক্তিগত কারণে কনসার্ন ছিল। তখন সাইকোলজিস্ট বলেছিল আর দুই দিন পর একটা সেশন টাইম খালি আছে তখন আসতে চায় কিনা। সাফিনা রাজি হয়ে গেছে। আজকাল থেরাপি সেশনে যে মন খুলে কথা বলা যায় কোন জাজমেন্ট ছাড়া এইটা যেন মানসিক ভাবে একটা বড় রিলিফ। তাই রাজি হয়ে গেছে। আদিবা রহমান নরমালি প্রত্যেক সেশনের শুরুতে বলে দেন আজকে কি সেশনে কি হবে বা এই সেশনের উদ্দ্যেশ কি।


আদিবা রহমান আজকে সেশনের শুরুতে বলে দিয়েছেন আজকের সেশনে মূলত প্রশ্ন উত্তর হবে। এই কয়দিন সাফিনা নিজের গল্প বলেছেন। মাঝে মাঝে দুই একটা প্রশ্ন করলেও আদিবা খুবে বেশি কথার ব্যাঘ্যাত ঘটান নি। আদিবা রহমান সাইকোলজিস্ট হিসেবে দেখেছেন প্যাশেন্টের ট্রাস্ট অর্জন করা সবচেয়ে প্রথম কাজ। এইজন প্রথম কিছু সেশন খালি কথা শুনেন মনযোগ দিয়ে। এই সময় সম্পূরক দুই একটা কোশ্চেন করলেও খুব বেশি প্রশ্ন করেন না। কারণ আদিবা রহমান দেখেছেন ট্রাস্ট অর্জনের আগে বেশি প্রশ্ন করলে প্যাশেন্ট অনেক বেশি ডিফেন্সিভ হয়ে যায়। সাইকোলজিস্টদের আরেকটা বড় বাধা হচ্ছে প্যাশেন্টদের থেকে সত্য কথাটা বের করা। যদিও এখানে কোন জাজমেন্ট এর ভয় নেই তাও মানুষ সাইকোলজিস্টদের সামনে এসে সত্যটা আড়াল করে, কেউ মিথ্যা বলে। যারা এই কাজটা করে তারা যে মিথ্যা বলতে পছন্দ করে তেমন না, অনেক সময় না বুঝেই মিথ্যা বলে। আসলে আমরা আমাদের মনে নিজেদের একটা ভার্সন তৈরি করি সেইটা অনেক সময় বাস্তবের আমাদের থেকে আলাদা। সাইকোলজিস্টদের সামনেও লোকে নিজেদের সেই কল্পনার ভার্সনটা দেখাতে থাকে। তবে সমস্যা হল আসল প্যাশেন্ট বা তার আসল বাস্তবতা না বুঝতে পারলে সাইকোলজিস্টদের জন্য প্যাশেন্ট এর ট্রিটমেন্ট খুব জটিল। সাফিনা করিম এর সাথে এই কয়দিন কথা বলে আদিবা রহমান কিছু সিদ্ধান্তে এসেছেন। সাফিনা করিম কিছুটা ডিপ্রেসড। এই ডিপ্রেশন অল্প থাকা অবস্থাতেই উনি সাইকোলজিস্ট এর কাছে এসেছেন এইটা ভাল ব্যাপার। আবার সাধারণত বাঙ্গালী মধ্যবয়সী মহিলা বা পুরুষদের ডিপ্রেশনের কারণ অনেক সময় অনেক পুরাতন ঘটনার সাথে বা ট্রমার সাথে জড়িত। তেমন কিছু হলে ট্রিটমেন্ট অনেক সময় একটু কঠিন। সাফিনা করিম পরিবার অন্তপ্রাণ আবার একই সাথে ক্যারিয়ারিস্টিক। যদিও সাফিনা সব সময় পরিবার কে প্রাধান্য দিয়েছেন অন্তত তার কথাতে তাই মনে হচ্ছে কিন্তু এই বয়সে এসে যখন পরিবারের সবাই যার যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তখন ক্যারিয়ারে যে অংশটুকুতে পরিবারের জন্য পিছিয়ে পড়েছেন সেইটা নিয়ে এক ধরণে বিষাদ আছে তার মনে। তার সমান যোগ্যতার বা তার থেকে কম যোগ্য লোকজন সামনে এগিয়ে গেছে। এটা সাফিনার মনের মাঝে একটা অস্বস্তি তৈরি করে রেখেছে।  মেয়েদের কে ভালবাসেন। আর দশটা বাংগালী মায়ের মত মেয়েদের পিছনে অনেক সময় দিয়েছেন। এখন মেয়েরা সাবলম্বী হয়ে যার যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সেই সময়টা নিয়ে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ব্যস্ত মেয়েরা হয়ত সব সময় সময় করে মায়ের খোজ নিতে পারছে না তাতে মনের মাঝে এক ধরনের কষ্টবোধ আছে। আর সব শেষে সাফিনা করিমের স্বামী মিজবাহ করিম। সাফিনার কথায় মনে হচ্ছে মিজবাহ করিম আর দশটা সাধারণ বাংগালী পুরুষের মত। ফ্যামিলির প্রতি টান আছে এবং ফ্যামিলির প্রতি লয়াল। তবে বাংগালী পুরুষ তাদের বেড়ে উঠার সময় শেখানো নিয়মের কারণে অনেক সময় ফ্যামিলির প্রতি তাদের ভালবাসা খালি অর্থ উপার্জন বা গিফট দিয়ে নয় বরং সময় দিয়ে বা সান্নিধ্য দিয়ে কিভাবে মেটাতে হয় সেটা শিখে উঠতে পারে না। মিজবাহ করিমের মাঝেও সেই সমস্যাটা আছে বলে এই কয় সেশনের কথাতে প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পেরেছেন আদিবা রহমান। আজকের সেশন আসলে এইসব ব্যাপার নিয় হবে। আদিবা রহমান এইসব ব্যাপারে নানা প্রশ্ন করে আর বিস্তারিত জানতে চান। হয়ত এক সেশনে হবে না তাহলে দরকার হলে পরের আরেক সেশন নিতে হবে। আর বুঝতে হবে সাফিনা করিমের মনের ভিতর এই পয়েন্ট গুলোর মধ্যে কোনটা বেশি গূরুত্বপূর্ন।


আদিবা রহমান শুরু করেন সেশন। কেমন আছেন আপনি? সাফিনা উত্তর দেয় ভাল। আদিবা আবার জিজ্ঞেস করে, আজকে আর অন্য মনস্ক থাকবেন না তো। সাফিনা হাসি দিয়ে বলে না। সাফিনা এইবার বলে আমি কলেজের টিচার। সব সময় সবাই কে প্রশ্ন করে অভ্যস্ত। আজকে আপনি যেভাবে প্রশ্ন করছেন তাতে মনে হচ্ছে আমি ছাত্রী। আদিবা হাসি দিলেন, এটা গুড সাইন। প্যাশেন্ট তার সাথে বেশ খোলামেলা হচ্ছে, নিজের অনের অনুভূতি গুলো হালকা চালে প্রকাশ করছে। আদিবা বললেন না, না একদম তেমন ভাববেন না। বরং ভাবুন আমি আপনার কাউন্সিলর। সো আমি প্রশ্ন করছি আপনাকে আর ভালভাবে জানার জন্য। আপনাকে আমি যদি ভালভাবে বুঝতে না পারি তাহলে কাউন্সিলর হিসেবে আমার পক্ষে আপনাকে হেল্প করা অসম্ভব। সাফিনা মাথা নাড়েন, বুঝতে পেরেছে সাফিনা প্রশ্নের উদ্দ্যেশ। আদিবা তাই প্রথম প্রশ্ন করে, আপনি আপনার ফ্যামিলি কে ভালবাসেন? সাফিনা উত্তর দেয়, হ্যা। কতটুকু ভালবাসেন? সাফিনা কোন সময় না নিয়ে বলে একজন মানুষ যতটুকু ভালবাসতে পারে। আদিবা এইবার প্রশ্ন করেন, ফ্যামিলি বলতে আপনি কি বুঝেন? মানে আপনার সংজ্ঞায় কারা আপনার ফ্যামিলির অংশ? সাফিনা এইবার একটু সময় নেন, চিন্তা করেন। ফ্যামিলি কে কেউ এইভাবে সংজ্ঞায়িত করতে বলে নি এর আগে। ছোটকালে শেখা পরিবারের সংজ্ঞা দিবেন? সেটা তো হাস্যকর শোনায়। শিক্ষক মানুষ সাফিনা। সব সময় কথা গুছিয়ে সুন্দর করে বলেন। এইবার তাই কয়েক সেকেন্ড বললেন, ফ্যামিলির সংজ্ঞা তো আপনি জানেন। আধুনিক যুগে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হলে হাজব্যান্ড ওয়াইফ আর বাচ্চারা। পুরাতন যুগের সংজ্ঞায় ধরলে আপনার বৃহত্তর পরিবার, মানে আপনার আত্মীয় স্বজন, ভাইবোন, হাজব্যান্ডের আত্মীয়স্বজন সবাই। তবে আমি মনে করি ফ্যামিলির সংজ্ঞা খালি এই রক্তের সম্পর্ক বা বিবাহের সম্পর্কের বাধনে বাধা না। পরিবার হল সেই মানুষ গুলো যাদের জন্য আপনি সব করতে পারেন আবার যারা আপনার জন্য সব করতে পারে প্রতিদানে। যারা ছোটখাট মান অভিমানে আপনাকে ছেড়ে যায় না আবা আপনি যাদের ছেড়ে যান না। তাই অনেক সময় রক্তের সম্পর্কের মানুষও দূরের হয়ে যায় আর দূরের মানুষ কাছের হয়। আদিবা মাথা নাড়ে। এইবার জিজ্ঞেস করে, আপনার সংজ্ঞা অনুযায়ী তাহলে কারা আপনার পরিবার? মানে কাকে আপনি একদম আপনার ফ্যামিলির কোর অংশ বলে ভাবেন। সাফিনা ভাবে। তারপর যেন মনে মনে গুণছে সেইভাবে বলে, আমার বর, মেয়েরা, মেয়ের জামাই, নুসাইবা আমার বরের বোন, আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আদিবা নোট নেয় খাতায়। আদিবা প্রশ্ন করে আপনি কি সব সময় আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য বেস্ট টা দিয়েছেন আপনার? সাফিনা কোন দ্বিধা না করেই বলল, সব সময়। আমার সাধ্যমত আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমার ফ্যামিলির লোকদের হেল্প করতে, তাদের সময় দিতে। আদিবা এইবার প্রশ্ন করে আপনার ফ্যামিলির লোকেরা কি সেইম ভাবে আপনাকে সময় দিয়েছে, হেল্প করেছে? সাফিনা এইবার একটু দ্বিধায় পড়ে যায়। কি উত্তর দিবে? আদিবা রহমান জানে প্যাশেন্টদের জন্য এটা বড় অসস্তিকর প্রশ্ন। অনেক সময় মনের ভিতর থাকা কথা গুলো বলা সম্ভব হয় না কারণ আমাদের সামাজিক নিয়ম বলে নিজের ফ্যামিলির সদস্যদের বিরুদ্ধে বাইরের কার কাছে খারাপ কিছু না বলতে। কিন্তু এইটা কাউন্সিলিং এর অংশ। আদিবা রহমান তাই বলে আপনি নিসংকোচে বলুন। আপনি যখন আপনার এসেসমেন্ট বলছেন তার মানে এইটা কার নিন্দা করা না, আপনার ভালবাসার মানুষ গুলোর প্রতি কোন রকম বিদ্বেষ পোষণ করা না। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই ভুল করি, আমাদের আপনজনরাও করে। সেই রকম কিছু যদি আপনার মনে লাগে বলতে পারেন। কারণ মনে রাখবেন এই রুমের কথা বাইরে কোথাও যাবে না। আমরা খালি এই জিনিস গুলো নিয়ে আলোচনা করছি খালি এইটা বুঝার জন্য আপনার ভবিষ্যতে মানসিক ভাবে ভাল থাকার জন্য এই ইনফরমেশন গুলো কে আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সেইজন্য।


সাফিনা এইবার উত্তর দেয়। সাফিনার উত্তর আদিবার আগের সন্দেহটাই সঠিক প্রমাণ করে। একজন নারী যখন সংসার শুরু করে তখন সে অনেক কিছু বিসর্জন দেয়। পরিবার গড়ে উঠার সময় অনেক অবদান রাখে। কিন্তু যখন সময় বাড়ে তখন পরিবারের বাকি সদস্যরা সেই পরিমান সময় বা ত্যাগ করতে পারে না সেই নারীটার জন্য। এমন না যে তারা একজন স্ত্রী, মা,বোন বা পরিবারের নারী সদস্য হিসেবে তাকে ভালবাসে না। আসলে নারীর অবদান কে পরিবারে মহিমান্বিত করে এমন ভাবে দেখানো হয় যে এটা দেবীর কাজ আর দেবীর কাজের প্রতিদান কে বা দিতে পারে বলুন। তাই বেশির ভাগ সময় কেউ সেই চেষ্টা করে না। দেবীর মন বুঝতে পারে না। অল্প একটু সময়, সাহচার্য আর যত্ন যে সেই প্রতিদানটুকু দিতে পারে এইটাই বুঝি অনেক সময় অনেকে বুঝে উঠতে পারে না। আদিবা বুঝেন এই ব্যাপারটায় আর প্রশ্ন করতে হবে। আজকে হয়ত প্রথমবার এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে দেখে সাফিনা সব কিছু খুলে বলতে স্বস্তি বোধ করছে না তবে পরে প্রশ্ন করলে হয়ত আর বিস্তারিত জানা যাবে। আদিবা বলে চলুন তাহলে আপনার প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে কথা বলি। সাফিনা করিম এসোশিয়েট প্রফেসর সরকারী কলেজের। এডুকেশন ক্যাডারে ঢুকেছিলেন প্রায় বিশ বছর। পড়াশুনার মাঝেই বাচ্চা হয়েছে এরমাঝে বিসিএস দিয়েছেন, এডুকেশন ক্যাডারে চাকরিও হয়েছে। সেই সময়টাতে হ্যাজব্যান্ড, ননদ, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী ভাল সাপোর্ট দিয়েছেন। আদিবা রহমান প্রশ্ন করেন আপনার কি মনে হয় আপনি আর ভাল করতে পারতেন? সাফিনা একটু ভাবে। বলে, দেখুন বাচ্চা না থাকলে আমার অনার্স মাস্টার্সের রেজাল্ট হয়ত আর ভাল হত। কে জানে হয়ত ভার্সিটির টিচার  হতে পারতাম। আর বিসিএস এর সময় আর পড়তে পারলে হয়ত এডুকেশন ক্যাডার না আর প্রেস্টেজিয়াস কোন ক্যাডার হতে পারতাম। এডমিন বা ট্যাক্স। আদিবা জিজ্ঞেস করেন পুলিশে ইচ্ছা ছিল না? সাফিনা হেসে বলেন না পুলিশে আমার আগ্রহ নেই কখনো। আদিবা জিজ্ঞেস করেন তাহলে কি আপনার মনে এইটা নিয়ে আফসোস আছে? সাফিনা বললেন দেখুন আফসোস যে একটুকু নেই তা বলব না। আমার থেকে খারাপ ছাত্ররা আমার থেকে ভাল রেজাল্ট নিয়ে বের হয়েছে। বিসিএস এর সময়টাতে আমি জানতাম আমি এর থেকে ভাল করতে পারি কিন্তু ছোট দুইটা বাচ্চা সামলিয়ে এর থেকে বেশি করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আদিবা রহমান প্রশ্ন করলেন, আপনি তো অনেক কম বয়সে ক্যাডার হয়েছেন। মাত্র ২৬ বছরে। এরপর আর কয়েকবার চেষ্টা করলেন না কেন। সাফিনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। আদিবা জিজ্ঞেস করেন আর চেষ্টা করেন নি? মাথা নাড়েন সাফিনা, না। কেন? সাফিনা বললেন প্রথমবার এডুকেশন ক্যাডার হয়ে যাওয়ার পর হাজব্যান্ড আর ফ্যামিলির অন্য লোকেরা সবাই বলল এটাই সবচেয়ে ভাল আমার জন্য। অন্য ক্যাডারে কত ঝামেলা। এখানে ঝামেলা কম। মেয়েদের জন্য নাকি শিক্ষকতা সবচেয়ে ভাল পেশা। আদিবা প্রশ্ন করে আপনি এর প্রতিবাদ করেন নি। সাফিনা বলেন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে আমার মত যেসব মেয়েরা বেড়ে উঠে বিশেষ করে ত্রিশ চল্লিশ বছর আগে তাদের শিক্ষাটাই এমন ছিল যে ফ্যামিলির সবার বিরুদ্ধে গিয়ে খুব বড় প্রতিবাদ করাটাই হত না তখন। আর সবাই যখন বলছে ভালর জন্য বলছে এমন একটা ভাব তো ছিল সব সময়। আর আমার অন্য বান্ধবীদের অনেকের যেখানে বিয়ের পর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করলাম। শ্বশুড়বাড়ী আর হাজব্যান্ড যথেষ্ট সহায়তা করেছে এইটা আমি অস্বীকার করতে পারি না এই ব্যাপারে। সেখানে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি আর কিছু করতে পারি নি। আর করতে গেলে বিসিএস এর প্রস্তুতির জন্য যে সময় দিতে হবে সেইটা আমি আর কম পাব কারণ তখন এইবার সবাই যতটা সহায়তা করেছে পরেরবার তা নাও করতে পারে এবং তখন সম্পর্ক আর খারাপ হবে। বাচ্চা গুলো তখন একদম ছোট। একটা প্রায় ছয় আরেকটা দুই বা তিন। সব ভেবে জীবনের লক্ষ্যটা খানিকটা নামিয়ে এনেছি। আদিবা রহমান নোট নেন, প্রফেশনাল লাইফ আর সাংসারিক জীবনের একটা টানাপোড়েন আছে, মেনে নিলেও মনে মনে আফসোস আছে প্যাশেন্টের।


আদিবা বলেন এরপর বলুন। সাফিনা বলল এই তো এরপর চাকরিতে জয়েন করলাম। ঢাকার বাইরে খুব একটা যাওয়া লাগে নি। মাঝে এক বছরের মত গাইবান্ধা সরকারী কলেজে পোস্টিং ছিল। এছাড়া বাকিটা সময় ঢাকাতেই বিভিন্ন কলেজে চাকরি করেছি। আদিবা বললেন বিশ বছর চাকরি জীবনের ঊনিশ বছর ঢাকাতেই? আপনি তো লাকি। সাফিনা হাসে। বলে এইটা আসলে লাকের ব্যাপার না তদবির। আমার হাজব্যান্ড বিভিন্ন কানেকশন কাজে লাগিয়ে মাঝে কয়েকবার ঘুষটুষ দিয়েও আমাকে ঢাকাতে পোস্টিং এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মেয়েরা তখন স্কুলে পড়ছে আমি বাইরে গেলে কিভাবে হবে বলেন। আর এইটা জেনে অবাক হবেন যে ঢাকার সব সরকারী কলেজ গুলো বড় আমলা নাহলে পলিটিশিয়ানদের ওয়াইফদের পূনর্বসান কেন্দ্র। প্রচুর বড় আমলা আর পলিটিশিয়ানদের ওয়াইফ এডুকেশন ক্যাডারে আছে। তাদের মান যা হোক এরা তদবিরের জোরে ঢাকাতেই থাকে। আমার হাজব্যান্ড আমলা বা পলিটিশিয়ান না হলেও কর্পোরেটে বড় চাকরি করে আর ভার্সিটির বন্ধু বান্ধব, ফ্যামিলি কানেকশন সব মিলিয়ে সব সময় তদবিরে সমস্যা হয় নি। খালি একবার ঢাকার সবাই কে বাইরে বদলি করা হল একটা কারণে। তখন আমার বদলি হল। অবশ্য ততদিনে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে। বড় মেয়ে ভার্সিটিতে আর ছোট মেয়ে কলেজে। ফলে ঐ একবছর বাইরে ছিলাম নাহলে সার্ভিসে অনেকের চক্ষুশূল হয়ে যেতাম। আদিবা জিজ্ঞেস করে আপনি পিএইচডি করেছেন বলেছিলেন না। সাফিনা বলে হ্যা। এই ডিগ্রিটা নিয়ে সাফিনা বেশ গর্বিত। পরিবারের দ্বায়িত্বের কারণে দেশের বাইরে যাওয়া হয় নি পিএইচডি করতে কিন্তু ঠিক দেশের ভিতর ঠিক পিএইচডি শেষ করেছে। এডুকেশন ক্যাডারের সিংহভাগ লোক শেষ পর্যন্ত পিএইচডি করে না। অর্নাস লেভেলের ক্লাস নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কিন্তু নেই কোন পিএইচডি। সাফিনা এটা মানতে পারে না। তাই দেশের ভিতর পিএচডি করেছে এবং মনোযোগ দিয়ে করেছে। দেশের ভিতর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পিএচডি হয় ভিক্ষার পিএইচডি। সুপারভাইজার এর পেয়ারা লোক না হলে ভর্তির সুযোগ নেই আর ভর্তি হলে সুপারভাইজার অল্প কিছু কাজ করিয়ে পিএইচডি দিয়ে দেয়। সেইসব কাজের মান কেমন হল সেগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে। সাফিনা এমন কাজ করে নি আর সাফিনার গাইডও যথেষ্ট কড়া ছিল। ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্রী ছিল সাফিনা। সাহিত্যটা ভাল বুঝে। পিএইচডিতে কাজ করেছে বাংলাভাষাভাষীদের লেখায় ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। এই ধরনের সাহিত্যের পরিমান খুব অল্প হলেও সব সময় বেশ কিছু লোক বাংলাদেশে এইভাবে লেখালেখি করে গেছে ইংরেজিতে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখেছে। তাই ওর কাজটা বেশ ইউনিক। সাফিনার পিএইচডি কাজ থেকে তিনটা আর্টিকেল বের হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। তাই নিজের এই এচিভমেন্ট নিয়ে নিজে বেশ গর্বিত। আদিবা রহমান নোট নেয়, সাফিনা নিজের একাডেমিক এচিভমেন্টে সন্তুষ্ট। তবে সাফিনা এরপর নিজেই বলে, আমার মনে হয় আরেকটু সময় দিতে পারলে আজকে হয়ত ফুল প্রফেসর হয়ে যেতাম। ঢাকার বাইরে যেতে রাজি থাকলে হয়ত একটা কলেজের প্রিন্সিপালও হতে পারতাম। দেখা যাক। এখন মেয়েরা যার যার মত ব্যস্ত, হাজব্যান্ড কর্পোরেটে সর্বোচ্চ সোপানের পানে ছুটছে। হয়ত এখন বাইরে কোথাও পোস্টিং নিব প্রিন্সিপাল হয়ে। এতদিন ধরে শিক্ষকতা করছি এইবার এখানে আরেকটু উন্নতি করলে খারাপ কি। সাফিনার কথায় সায় দেয় আদিবা রহমান। নোট নেয় প্রফেশনালি উচ্চাকাংখা আছে।
Like Reply
আদিবা রহমান ঘড়ি দেখেন সময় কমে আসছে। বেশ কিছু প্রশ্ন আছে এতক্ষণ যা  বলল তার  উপর। তবে আরেকটা মেজর টপিক বাদ পড়ে গেছে। আগে সেইটা নিয়ে কথা বলা দরকার। দাম্পত্য জীবন। আদিবা রহমান এইবার প্রসংগ শুরু করার জন্য বললেন আপনার হাজব্যান্ডের নাম জানি কি? উত্তর দিল সাফিনা- মিজবাহ করিম। কি করেন উনি। কর্পোরেট। আরেকটু ব্যাখ্যা করে সাফিনা। প্রথমে ব্যাটে চাকরি শুরু, এরপর ইউনিলিভারে অনেকদিন। এখন দেশি একটা কর্পোরেট হাউজে সেকেন্ড ম্যান। এটা দেশের টপ তিনটা দেশী কর্পোরেট হাউজের একটা। ফলে কাজের প্রেসার অনেক বেশি। আদিবা জিজ্ঞেস করল সব সময় কি উনি এমন ব্যস্ত ছিল নাকি এখন ব্যস্ততা বেড়েছে? সাফিনা উত্তর দিল গত সাত আট  বছরে ব্যস্ততা বেড়েছে। এইটা নিয়ে আপনার কোন অভিযোগ আছে? সাফিনা ভাবে, সত্যটাই বলে। আসলে কে না চায় একটু মনযোগ পেতে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় মিজবাহর অফিসটা বুঝি সব সময় খেয়ে ফেলে। আমাদের জন্য আর ওর হাতে সময় থাকে না খুব বেশি। আর যে ফ্রি টাইমটুকু পায় সেইটাও এমন কিছুতে ব্যয় করে যাতে প্রফেশনাল কানেকশন বাড়ে। হয়ত কোন কলিগের এনিভার্সারি বা বড় কর্পোরেটে আছে এমন কাউকে বাসায় দাওয়াত। সব মিলে মাঝে মাঝে মনে হয় অফিস বুঝি ওর মনোযোগ বেশি কেড়ে নিচ্ছে। আদিবা জিজ্ঞেস করে, রাগ হয় আপনার এটাতে? সাফিনা হাসে, বলে ঠিক রাগ না কিন্তু জেলাস ফিল করি। আমি জানি অফিস কোন মানুষ বা নারী নয় যে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু তবু কেন জানি জেলাসি ফিল হয়। মনে হয় মিজবাহ এর পূর্ন মনযোগ পাচ্ছে বুঝি খালি অফিস। এইবার একটু সেনসেটিভ প্রশ্ন, আপনার কি মনে হয় অফিসে এমন কেউ আছে যার জন্য অফিসে এত মনযোগ? সাফিনা প্রশ্নের অর্থ ধরতে পারে, সংগে সংগে মাথা নাড়ে আমার মনে হয় না। মিজবাহ ইজ লয়াল। অবশ্য মাথায় তখন আরশাদ আর নুসাইবার কথা মনে হয়। কয়েক মাস আগ পর্যন্ত নুসাইবাও আরশাদ সম্পর্কে এই কথাই বলত। তবে মিজবাহ এর ভিতরে ঠিক আরশাদের মত তেলতেলে ব্যাপারটা নাই। আরশাদের সব কথাতেই একটা তেল দেওয়া ভাব ছিল এইটা সাফিনার কখনো পছন্দ হত না। সাফিনা বলে মিজবাহ আসলে ঠিক প্রেম পরকীয়া করার মত লোক না। আদিবা নোট নেয়, স্বামীর উপর যথেষ্ট আস্থা আছে। আদিবা জিজ্ঞেস করে গত সাত আট বছরে বেশি ব্যস্ত হবার কারণ কি? চাকরির ধরণ পালেটেছে বা অন্য কিছু? সাফিনা বলে বলতে পারেন। তবে ওর নিজের মনে এর একটা ব্যাখ্যা আছে সেইটা বলবে কি বলবে না ঠিক করে উঠতে পারে না। আসলে এই সাত আট বছরে মিজবাহর প্রমোশন হয়েছে তিনবার। এখন ও একটা কর্পোরেট হাউজের সেকেন্ড ম্যান। ওর বয়স এখন আর্লি পঞ্চাশে। ফলে ঠিক গতিতে কাজ করতে পারলে দশ পনের বছর পর ও বাংলাদেশের কর্পোরেটের একজন লিজেন্ড হতে পারবে। আদিবার মনে হয় এর বাইরে আর কিছু বলতে চাচ্ছে সাফিনা। তাই জিজ্ঞেস করে আর কিছু কি আছে এই ব্যস্ততার কারণে। আদিবা ভাবছে সাফিনা বুঝি কোন এক্সট্রামেরিটাল রিলেশনের কথা বলবে। এইসব সেশনে মহিলারা প্রথমে নিজের স্বামীকে ফেরেশতা মানলেও পরে আস্তে আস্তে নিজেদের সন্দেহের কথা বল। তবে সাফিনা বলল পুরো ভিন্ন একটা কারণ।


সাফিনার মনে এই সন্দেহটা অনেকদিন ধরে আছে। সাফিনা আর কার সাথে এই কথাটা শেয়ার করতে পারে নি। নুসাইবা নরমালি ওর অনেক কথা শেয়ার করার সংগী কিন্তু ওর ভাইয়ের সম্পর্কে এই কথাটা শেয়ার করতে পারে নি কোন প্রমান ছাড়া। সাফিনার মনে হয় এই কথাটা কি এখানে শেয়ার করা ঠিক হবে? আবার মনে হয় এতদিন ধরে মনের ভিতর পুষে রাখা সন্দেহটা অন্তত এক জায়গায় প্রকাশ করা দরকার। হয়ত সাইকোলজিস্ট শুনে বলতে পারবে ওর সন্দেহ কতটা যৌক্তিক। সাফিনা বলে আমার এই সন্দেহটা ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত আমি শিওর না। আমি ছাড়া আর কেউ এটা খেয়াল করেছে বলে মনে হয় না। আদিবা রহমান জিজ্ঞেস করে কি? সাফিনা বলেন মিজবাহ এর গত সাত আট বছরে আর বেশি অফিসে জড়িত হওয়ার পিছনে আমাদের মেয়েদের একটা সম্পর্ক আছে। আদিবা জিজ্ঞেস করেন কিভাবে? সাফিনা বলে মিজবাহ আমাদের দুই মেয়ে সাবরিনা আর সিনথিয়া কে অসম্ভব ভালবাসে এইটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। তবে মিজবাহ অন্তত একটা ছেলে চেয়েছিল। শুরুতে পর পর দুইটা বাচ্চা হবার পর আমার বিসিএস হয়ে গেল। তখন কিছুদিনের জন্য আমরা বাচ্চা না নেবার পরিকল্পনা করি। এর মধ্যে আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ী মারা গেলেন। ননদের ভার্সিটি চলছে তাই এর মধ্যে বাচ্চা নিলে আমাদের দুইজনের উপর অতিরিক্ত প্রেশার পড়বে। তাই এই সময় আমরা দুইজন আর কোন বাচ্চাকাচ্ছা চাই নি। তবে মিজবাহ এর কথা শুনে মনে হত ও আরেকটা বাচ্চা চায় এবং সেইটা একটা ছেলে হলে ভাল। এইসব কথা ও অন্য কার সামনে কখনো বলত না। আমাদের দুই মেয়ের প্রতি ওর কখনো অবহেলা ছিল না, বরং ওর অতিরিক্ত আদরে মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমাদের মেয়ে দুইটা বুঝি একটু বেশি আদুরে হয়ে গেছে, কেউ কেউ তো আমাদের ছোট মেয়ে নিয়ে বলে ও খানিকটা বখে গেছে। আদিবা জিজ্ঞেস করে আপনার ছোট মেয়ে কি আসলেই বখে গেছে? সাফিনা হেসে বলে না, সিনথিয়া একটু জেদি আবার খানিকটা দুষ্টু কিন্তু এমনিতে ওর মন ভাল। আদিবা বলে, হ্যা আপনার ব্যাখ্যাটা বলুন। সাফিনা আবার বলে, বাংলাদেশের সমাজে যে যত ভাল পরিবার বা শিক্ষাদীক্ষায় বড় হোক না কেন, যত লিবারেল বলে নিজেকে দাবি করুক না কেন খুব কম সময়ে কিছু কিছু ধারণা থেকে মানুষ বের হতে পারে। আর কোন মানুষ কতটা লিবারেল সেইটা আসলে তার হাজব্যান্ড বা ওয়াইফ থেকে ভাল কেউ বলতে পারবে না। মিজবাহ এর মেয়েদের নিয়ে সমস্যা নাই তবে ওর মনে একটা পুরাতন ধারণা রয়ে গেছে। বংশের ধারা থাকে নাকি ছেলেদের হাতে। ফলে যদি কোন ছেলে না হয় তাহলে ওর দিক থেকে ওর বংশের ধারা বন্ধ হয়ে যাবে। আরেকটা জিনিস মিজবাহ সচেতন ভাবে না খেয়াল করলেও মাঝে মাঝে ওর আচার আচরণে বুঝা যায়। যেমন মিজবাহ ওর ভাই বা অন্য কার ছেলেদের কে উপদেশ দেবার সময় বলে বাবার নাম উজ্জ্বল করার দ্বায়িত্ব তোমার। কিন্তু ঠিক সেই ফ্যামিলির মেয়েকে কিন্তু এই উপদেশ দেয় না। হয়ত মেয়েটা আর বেশি মেধাবী আর পরিশ্রমী। আমার মনে হয় ওর মনে একটা ধারণা রয়ে গেছে ওর নাম বহন করবার জন্য দরকার ছেলে আর ওর কোন ছেলে নেই। সেই কারণে ওর মনে হয়েছে এমন কিছু করে যেতে হবে ওর কর্মক্ষেত্রে যেটার জন্য ওর মৃত্যুর পর সেই কাজটা ওর নাম বহন করে। এইটা এত সুক্ষভাবে ওর ব্যবহারে আছে যে কেউ হয়ত খেয়াল করবে না আমি ছাড়া। এর মধ্যে আমার বয়স যখন ৩৫/৩৬ তখন আবার নতুন করে বাচ্চা নেবার কথা বলল মিজবাহ তবে আমি তখন পিএইচডি শুরু করেছি। সংসার, চাকরি আর পিএইচডি সব মিলিয়ে আরেকটা বাচ্চার কথা ভাবার আমার সময় ছিল না। এর মধ্যে বড় মেয়ে এসএসসি দিয়ে দিয়েছে। এই সময় আরকেটা বাচ্চা হওয়াও একটা লজ্জার ব্যাপার। আদিবা বলে আপনার তো বেশ কমে বয়েসে বিয়ে হয়েছিল ফলে আপনার বাচ্চা তাড়াতাড়ি বড় হয়েছে তাই এতে এত লজ্জা পাবার কি ছিল। সাফিনা বলে হ্যা আপনার কথা সত্য আমার ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল, ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার তখন। আর বাচ্চা হল ২০ বছর বয়সে। আদিবা বলে তাহলে ৩৫/৩৬ বছর বয়সে বাচ্চা হওয়া তো স্বাভাবিক। সাফিনা বলে হ্যা। আমার অনেক বান্ধবীর প্রথম বাচ্চা হয়েছে ঐ বয়সে। যারা ভার্সিটির পড়া শেষে কিছুদিন চাকরি করে বিয়ে করেছে। তবে আসলে পিএইচডিটা আমি করতে চাইছিলাম আর একটু লজ্জাও লাগছিল। যদিও আমার বয়স কম ছিল তবে আসলে মেয়েদের বয়স হিসাব করলে মাদারহুডের গন্ডিতে আমি তো আসলে বেশ সিনিয়র। সব মিলিয়ে আমি না করে দিয়েছি। মিজবাহ বেশ কয়েকবার বিভিন্ন প্রসংগে এই কথা তুলেছে। আমাকে অনুরোধ করেছে তবে আমি বলেছি অন্তত এই মূহুর্তে সম্ভব না। একটা ভাল দিক হল মিজবার যে ও সেই সময় আমাকে জোরাজুরি করে নি। তবে ও যে আশাহত হয়েছে সেইটা আমি পরে বুঝেছি। আর আমার পিএইচডি শেষ হতে হতে আমার বয়স ৪১ হয়ে গেল। এরপর মিজবাহ কথা তুলে নি আমিও কিছু বলি নি। আমি না বলবার পর থেকে মিজবাহ আস্তে আস্তে বেশি করে কাজে ঝুকে পড়ল। এই ব্যাপারটা আসলে আমি তখন ঠিক করে  বুঝে উঠতে পারি নি। গত এক বছর ধরে সব যখন ভাবছি পিছনের কথা তখন এই বাখ্যাটা মাথায় আসছে। আদিবা জিজ্ঞেস করে আগে বুঝতে পারলে কি করতেন? সাফিনা একটু ভাবে। বলে, হয়ত আরেকটা বাচ্চার চেষ্টা করতাম। এতে মিজবাহ হয়ত ফ্যামিলিতে আর সময় দিত, ওর মনের আশা পূরণ হত। একটু হাসে সাফিনা। আজকাল মেয়েরা বড় হয়ে যাবার পর থেকে বাসা একদম খালি খালি লাগে। আরেকটা বাচ্চা থাকলে মন্দ হত না। মিজবাহ আর আমি হয়ত সেই বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আমার একাকীত্ব আর মিজবাহ এর নিজের বংশের ধারা বজায় রাখার চিন্তা সব পূরণ হত। আদিবা খাতায় নোট নেন, বাচ্চা নেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাফিনার মনে একটা দ্বিধা তৈরি হয়েছে যে আগের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি সঠিক ছিল না।


সাফিনা তখন অন্য প্রসংগ টানে। আপনার এখন বিয়ের বাইরে কোন সম্পর্ক নেই তো। প্রশ্ন শেষ করার আগেই না না করে উঠে সাফিনা। আদিবা হেসে উঠে। সাফিনা বলে আপনি হাসছেন কেন? আমার আসলেই এমন কিছু নেই। আদিবা বলে স্যরি আসলে সেই কারণে হাসি নি, আপনি যেভাবে প্রশ্ন শেষ করার আগেই না না করে উঠলেন তাতে হাসলাম। এইবার সাফিনাও হাসে। আদিবা বলে আপনি কিন্তু অনেক সুন্দরী। সাফিনা বলে থ্যাংক্স। আদিবা বলে অনেক আছে খালি সুন্দর ফ্যাশেনবল জামা কাপড় পড়ার কারণে সুন্দরী মনে হয় কিন্তু দেখা যায় বাস্তবে এভারেজ। কিন্তু আপনি সেই সুন্দরী যাকে সুন্দর প্রমাণ করার জন্য কিছুর দরকার নেই। দেখুন না। আজকে খালি একটা তাতের শাড়ি পড়ে এসেছেন। এমন কি সামান্য লিপস্টিক নেই আপনার ঠোটে। তাও এক দেখায় যে কেউ বলবে আপনি সুন্দরী। আপনার চেহায়ার একটা ৫০/৬০ দশকের সাদা কাল যুগের নায়িকাদের মত সৌন্দর্য আছে। চোখ ফেরানো কঠিন এমন একটা সৌন্দর্য। সাফিনা লজ্জা পায়। এইভাবে প্রসংসা শুনলে সবাই লজ্জা পায় আবার খুশিও হয়। সাফিনা একটু হেসে বলে জানেন বয়স আরেকটু কম থাকতে লোকে বলত আমার সৌন্দর্যের সাথে নাকি মধুবালার মিল আছে। আদিবা বলে হ্যা খেয়াল করলে কিন্তু আপনার ফেস কাটিংটা সেরকম মনে হয়। আর আপনার হাসির সাথেও বেশ মিল। আদিবা বলে আপনার সিক্রেট এডমায়ারার নেই? সাফিনা হেসে বলে কোন মেয়ের নেই বলুন তবে আমি কখনো এইসবে পাত্তা দেই না। বাঙ্গালদেশে কোন মেয়ে একটু সুন্দর হলে তার বয়স চল্লিশ হলেও ছেলেরা পিছনে ছোক ছোক করে। আদিবা রহমান সম্মতিতে মাথা নাড়ে। সাফিনার কথা সত্য। আর সাফিনা খালি সুন্দর না ডাক সাইটে সুন্দর। আদিবা সাফিনা কে আবার খেয়াল করেন। পাচ ফুট ছয় হবে উচ্চতা। গায়ের রঙ দুধে আলতা সাদা। তবে অনেক সাদা কে দেখলে মনে হয় খালি চেহারা সাদা কিন্তু চেহারার কোন ছিরি ছাদ নেই। তবে সাফিনার ফেস কাটিং সুন্দর তার সাথে তার গায়ের কালার মিশে একটা অন্য রকম ব্যাপার এনে দিয়েছে। কম বয়সের সেই তন্বী তরুণী ভাব নেই তবে কেউ তাকে দেখে বলবে না বয়স ৪৬, বড় বড় দুইটা মেয়ে আছে। এমন হাইটের বাংগালী মেয়ে কম। তার উপর তার গায়ের রঙ আর ফিগার। আদিবা রহমান সব সময় বিশ্বাস করেন বয়সের সাথে মেয়েদের সৌন্দর্য বাড়ে যদি তারা সেইটা ধরে রাখতে পারে। সাফিনা করিম তার পারফেক্ট এক্সামপল। বয়সের সাথে যোগ হওয়া অতিরিক্ত ওজন যেন একটা আভিজাত্য এনেছে চেহারা আর শরীরে। আর উচ্চতা ভাল হবার জন্য শরীরে যোগ হওয়া ওজন একটু বেশি মনে হচ্ছে না বরং শরীরের মেয়েলী অংশগুলো কে আর বেশি আকর্ষণীয় করেছে। আদিবা এইসব ভাবতে ভাবতে বলে, হ্যা যা বলছিলেন বলুন। সাফিনা বলে আমি কখনো এইসব পাত্তা দেই নি। আমার পরিবার আমার জন্য সব। মিজবাহ এর উপর মাঝে মাঝে রাগ হয় তাই বলে বাইরের কার কাছে আমি সেই নিয়ে গল্প করে সেইখানে অন্য কোন মানুষের ঢোকার সুযোগ দেই নি। আর আমার কাছে মনে হয় প্রেম একটা পবিত্র সম্পর্ক। সেখানে পরকীয়া হল এই সম্পর্কের একটা কালিমা। কারণ এখানে মানুষ কে ধোকা দিয়ে সব শুরু। আদিবা নোট নেন। আদিবা আবার জিজ্ঞেস করে, এখন না হয় নেই কিন্তু বিয়ের আগে ছিল না। সাফিনা প্রায় ত্রিশ সেকেন্ড নিশ্চুপ থাকে। অনেকদিন আগের কথা। এত বছর এই প্রসংগ কেউ তাকে প্রশ্ন করে নি। ভুলেই গিয়েছিল সেই কথা। এমন কি মিজবাহ পর্যন্ত জানে না। সাফিনা অস্ফুট স্বরে বলে, হ্যা ছিল। আদিবা বলে কে ছিল? কি নাম? সাফিনার মনে হয় অন্য এক জীবনের গল্প উঠে আসছে যেন। পুরাতন কত কিছু মনে পড়ছে। গত ২৫/২৬ বছর যেন ভুলে ছিল সব। সাফিনা বলে আরেকদিন বলি? আদিবা ঘড়ি দেখে। সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এইসব ব্যাপারে মেয়েরা অনেক সেনসেটিভ হয়। প্রথমবারের প্রশ্নেই যে সাফিনা বিয়ের আগের প্রেমের কথা বলেছেন সেইটা একটা বড় ব্রেকথ্রু। পরে অন্য সেশনে এইটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। দেখতে হবে এই ব্যাপারটা সাফিনা করিমের ডিপ্রেশনের জন্য কতটুকু দায়ী। আদিবা বল, ওকে আজকে তাহলে এখানে থাক। পরে কখনো অন্য সেশনে এই বিষয়ে কথা হবে।
Like Reply

গাড়ি এখন সুনামগঞ্জের ভিতর সদরপুর বলে একটা জায়গায় এসে থেমেছে। বেলা দুইটা  বাজে। গতকাল দুপুরের পর থেকে মাহফুজ বা নুসাইবা কেউ কিছু খায় নি। নুসাইবার প্ল্যান ছিল রাতে প্লেনে উঠে একেবারে খাবার খাবে আর মাহফুজের প্ল্যান ছিল নুসাইবা কে প্লেনে তুলে দিয়ে খাবার খাবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। ইংল্যান্ডগামী প্লেনের বদলে নুসাইবা এখন এক মাইক্রোর ভিতর বসে আছে। মাইক্রোটা একটা রাস্তার পাশে দোকানের পিছনে পার্ক করা। রাস্তা থেকে ঠিক দেখা যায় না। মাহফুজ গাড়ি থেকে নেমে একটু হাটছে তবে বেশিদূর যাচ্ছে না। সোলায়মান শেখের কঠিন নির্দেশ যত কম সম্ভব মানুষের চোখে পড়তে হবে। এই দোকানটা আমিনের পরিচিত এক ছেলের। আমিন এইখানে এনে গাড়ি রেখেছে। দোকান থেকে তিনটা নাবিস্কো বিস্কুটের প্যাকেট আর দুই বোতল মামের পানি নিয়ে এসেছে। দুইজন ক্ষুধার্ত ছিল তাই কোন কথা না বলে প্যাকেট খুলে বিস্কুট খেতে থাকে। ঢাকা শহরে আজকাল নাবিস্কোর বিস্কুট গুলো দেখা যায় না। তবে মফস্বল আর গ্রামের দিকে এখনো দোকানে নাবিস্কোর বিস্কুট পাওয়া যায়। নুসাইবা এই বিস্কুটের প্যাকেট দেখে অবাক হয়। ওর ছোটকালে পাড়ার দোকানে পাওয়া যেত। ছোট ছোট এই প্যাকেটু গুলা এখনো বিক্রি হয় এইটাই অবাক করল নুসাইবা কে। নুসাইবা আড় চোখে মাহফুজ কে দেখে। গতকাল রাতে মাইক্রো চলা শুরু করার পর অল্প কিছু কথা হয়েছিল। এরপর থেকে দুইজনের কথা বন্ধ। নুসাইবা টের পায় বাস্টার্ড বলাটা একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে। তবে নুসাইবা জানে ওর মেজাজ  ওর উইক পয়েন্ট। এর আগেও মেজাজের জন্য অনেকের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। তবে নুসাইবা এখনো শিওর না আসলেই কি মাহফুজ কিছু জানত না এই সোলায়মান শেখের প্ল্যান বি নিয়ে নাকি সব কিছু মাহফুজের পরিকল্পনা। আবার নুসাইবা ভাবে এয়ারপোর্টে তো আসলেই মুন্সীর লোক ছিল। সেটা তো আর মাহফুজ প্ল্যান করে দিতে পারে না। নুসাইবার মনে হয় আবার আরেকটা ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ওর মনে হয় এখন আসলেই মাথা ঠান্ডা রাখার সময়। এই সময় ওর আসল মিত্র আসলে মাহফুজ। এমন অচেনা অপরিচিত একটা জায়গায় থাকতে হবে। যেখানে একমাত্র পরিচিত মাহফুজ। আবার এই আমিন লোকটার সাথে যাচ্ছে। লোকটা কেমন কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত কোন আইডিয়া নাই। আমিন লোকটার বেশ কিছুক্ষণ ধরে খোজ নাই। নামায পড়তে গেছে বলল। ফযরের সময়ও এক জায়গায় গাড়ি থামায়ে নামায পড়ে আসছে। এমনিতে লোক ভাল মনে হচ্ছে। বেশ নামাযী লোক। ওরে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করছে ভাবী কোন দরকার থাকলে বলবেন। ভাবী ডাক শুনে বেশ কিছুক্ষণ বুঝতে পারে নি ওকে ডাকছে। নরমালি এমন লোকরা ওকে ম্যাডাম বলে। তবে এই লোকটা কেন ভাবী ডাকছে সেইটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলেও ব্যাপারটা নুসাইবা কে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। বিয়ের পর থেকে ভাবী ডাকটা খুব কমন। আরশাদের বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়, কলিগ এমন হাজার জন ডাকছে। কিন্তু এইবার ভাবী ডাকটা আরশাদের জন্য ডাকা হচ্ছে না ডাকা হচ্ছে মাহফুজের জন্য। এই বিষয়টা মাথায় আসতেই অস্বস্তিটা যাচ্ছে না। কিন্তু কিছু করার নেই। সোলায়মান শেখ বারবার বলে দিয়েছে যেন কার কোন ভাবেই সন্দেহ না হয় যে ওরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ না। আমিন ওর কাছের লোক হলেও আমিন যেন টের না পায়। কারণ সোলায়মান শেখ বলে দিয়েছে এখন লোকজন একজন বছর চল্লিশের একজন শহুরে মহিলা কে খুজবে। কিন্তু নুসাইবা আর মাহফুজ যদি একসাথে হাজব্যান্ড ওয়াইফের অভিনয় করে তাহলে ওদের খুজে বের করতে একটু কষ্ট হবে। আর আমিন এমনিতে যথেষ্ট ধার্মিক লোক। তাই তার কাছে না বলাই ভাল যে নুসাইবা মাহফুজ আসল হাজব্যান্ড ওয়াইফ না।


আমিন নামায পড়ে ফেরত এসেছে। মাহফুজ কে বলে ভাইজান এখন তেমন কিছু খাবার ব্যবস্থা করতে পারি নাই। সামনে একটা বাজার আছে। ঐখানে কোন ভাতের হোটেলে থামানো যাইত কিন্তু সোলায়মান স্যার মানা করে দিয়েছে যেন বাজার বা হোটেল যেখানে অনেক লোক আছে তেমন কোথাও না থামাই। তাই আপাতত এই বিস্কুট দিয়ে পেট ভরান। নুসাইবার দিকে তাকিয়ে বলে ভাবীজান আপনার কিছু লাগবে? মাহফুজ হাসতে গিয়েও হাসি আটকালো। গতকাল রাতে নুসাইবা একটা সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। নুসাইবার জন্য এতবড় একটা রিস্ক নিচ্ছে ও। সেখানে ওকে সন্দেহ করে বাস্টার্ড বলে গালি দিচ্ছে। এইটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ঠিক সেই মূহুর্তে মাহফুজ ভয়ংকর রেগে গেলেও আর কিছু বলে নি। আমিনের সামনে কোন কথা বাড়িয়ে সন্দেহ তৈরি করতে চায় না। কারণ এখন নুসাইবার সেফটির সাথে ওর নিজের সেফটিও জড়িত। মুন্সী বা ম্যানেজার সম্পর্কে যা যা খবর যোগাড় করেছে মাহফুজ তাতে মনে  হয় না ওরা সহজে ওকে ছাড়বে নুসাইবা কে হেল্প করার জন্য। ফলে এই মুহুর্তে সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে নুসাইবা কে সেফ রাখা। এতে ওর নিজের সেফটিও সুরক্ষিত থাকবে। তবে নুসাইবার উপর রাগটা ভিতরে আছে ওর। তাই বারবার যখন আমিন ভাবী ভাবী বলে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে এতে মাহফুজ বেশ মজা পাচ্ছে। কারণ ও জানে নুসাইবা এই ভাবী ডাকে চরম অস্বস্তিবোধ করছে কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। আমিনের প্রতিটা ভাবী ডাক তাই মাহফুজের জন্য মনে হচ্ছে এক একটা প্রতিশোধ। আমিন বলতেছে ভাবীসাব আমার বাড়ী হাওড়ের মাঝে। আর আধা ঘন্টা সামনে গেলে একটা ঘাট আছে। সেখান থেকে আমরা একটা ট্রলারে উঠব। এমনিতে আমার বাড়ি যাবার পথে লঞ্চ যায়। তবে সোলায়মান স্যারের কথা অনুযায়ী আপনাদের ঐখানেও তোলা যাবে না। লোকজনের নজর এড়ানোর জন্য। আমিও যাব সাথে করে। এমনিতে লঞ্চে গেলে বাড়ি থেকে আধা ঘন্টা দূরে একটা গঞ্জের বাজার আছে। সেখানে থামে। ট্রলারে একদম বাড়ির মুখে নামা যাবে। আপনারা চিন্তা কইরেন না। তিন চার ঘন্টা লাগবে। তবে মাগরিবের আযানের মধ্যে বাড়ী পৌছায়ে যাব।


আমিনের কপালে চিন্তার রেখা। অনেকদিন ধরে সে এইসব কাজের সাথে জড়িত না। ওদের এলাকায় কেউ বেশি পড়াশুনা করে না। তাও আমিন মেট্রিক পর্যন্ত পড়ছিল। এরপর আর পড়াশুনা করা হয় নায়। সিলেট শহরে গেছিল এক আত্মীয়ের কাছে কাজের জন্য। সেখানে প্রথমে কিছুদিন এক চালের আড়তে হিসাব লিখত। এইটা কাজটা ভাল লাগে নাই আমিনের। সারাদিন দোকানে বসে থাকার লোক না আমিন। আর সেইটা আর কম বয়স সারাদিন মন উড়ুউড়ু করে। সেখান থেকে বের হয়ে আসলে নানা রকম লোকের সংগে পড়ে গেল। এখান থেকেই প্রথম গাজা খাবার শুরু। এরপর আস্তে আস্তে হিরোইন। এক সময় আমিন পুরো নেশাখোর হয়ে গেল। পরিবারের সাথে যোগাযোগ নাই, হাতে টাকা নাই। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে ছিচকা ছিনতাই করে সেই ছিনতাইয়ের টাকাটাও নেশাতে যায়। এই রকম অবস্থায় প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আমিন। যে মারটা সেইবার খাইছিল সেইটা ভুলার না। এখনো আমবস্যা পূর্ণিমার রাতে গিড়ায় গিড়ায় ব্যাথা করে। তবে ওদের দলের একজনের মামা সরকারী দলের নেতা ছিল। তাই সাত দিন জেলে থেকে শেষ পর্যন্ত ছাড়া পাইছিল। সেইবার প্রথম বড় একটা ধাক্কা খায় আমিন। সেই ধাক্কা কিছুটা সোজা করলেও পুরো নেশা থেকে বের হতে পারে নি। এই সময় আর টাকার জন্য ছিনতাই করা বন্ধ করে দেয়। পুলিশের এত মার আর সহ্য করার ক্ষমতা নাই ওর। সেই সময় এক বন্ধুর বুদ্ধিতে ড্রাইভিং শিখে। সারাদিন এইখানে সেইখানে ক্ষ্যাপ আর রাতে নেশা। এভাবে গেল আর এক বছর।


এরপর আসল আরেক সময় আমিনের জীবনে। সেই সময় টাকায় নেশায় পাইল আমিন কে। গাড়িতে যে ক্ষ্যাপ মারে তখন গাড়ির ভিতর লুকায়ে ফেন্সিডিল, হিরোইন পৌছাইতে হবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা। টাকা পাওয়া যায় প্রচুর। সেই টাকায় ফূর্তি হয়। আর এই সময় অপরাধ জগতের ভিতরে অনেকের সাথেই কমবেশি পরিচয় হয় আমিনের। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে। তবে আস্তে আস্তে খ্যাপের কাজ বেশি নেওয়া শুরু করল ঢাকার দিকে। কারণ তাইলে ঢাকা সিলেট বা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এইসব জায়গায় ড্রাগ পরিবহন করে টাকা পাওয়া যায় উপুড়ি। সেই সময় দ্বিতীয়বার পুলিশ ধরল ওরে। তবে নিজের গাড়িতে করে ড্রাগ নেবার সময় না। ভাগ্য খারাপ ছিল। আরেক ড্রাইভার বন্ধু ড্রাগ সাপ্লাই দিতেছিল, ও এমনি গাড়িতে ছিল গল্প করার জন্য। সেই সময় পুলিশের মারের ভয়ে আমিনের অবস্থা খারাপ। ঠিক তখন প্রথম দেখা হইল সোলায়মান শেখের সাথে। নতুন নতুন ডিবিতে আসছে সোলায়মান শেখ। ডিবির একটা দল কে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকায় যে রুট গুলা দিয়ে ড্রাগ ঢুকে সব গুলা আইন্ডেটিফাই করে এদের হোতাদের চিহ্নিত করা। সোলায়মান শেখ তখনো বেশ নতুন পুলিশে। মনে তাই দয়ামায়া বেশি ছিল। আমিনরে মাইর দিয়ে কথা বের করার দ্বায়িত্ব ছিল সোলায়মান শেখের উপর। তবে দুই একটা বাড়ি দেওয়ার পর আমিনের আকুতি মিনতি ভার চোখে ভয় দেখে সোলায়মানের দয়া হয়। সেখান থেকে আস্তে আস্তে সোলায়মান শেখের সোর্স হয়ে যায় আমিন। প্রায় সাত আট বছর এই লাইনে ছিল। ভাল সোর্স ছিল। প্রচুর খবর দিছে সোলায়মান শেখকে। সোলায়মান শেখের জীবনের প্রথম সোর্সও আসলে এই আমিন। তবে আমিনের জীবনের সব চেঞ্জ হয়ে গেল জোহরার সাথে দেখা হবার পর। সেটাও আজ থেকে পনের  বছর আগের কাহিনী। তবে গোপন জগতটা চাইলেই সহজে ছাড়া যায় না। তাই সেটা থেকে বের হইতে হইতে আর চার পাচ বছর লাগছে। এই সময়টা সোলায়মান স্যার তারে ছায়া দিয়ে রাখছে যাতে বড় কোন ঝামেলায় না পড়ে। এইসব কারণে সোলায়মান শেখের উপর কৃতজ্ঞ আমিন। সোলায়মান যখন তাই বলছে তার দুইজন কাছের লোকের উপকার করা লাগবে তখন চোখ বন্ধ করে রাজি হয়েছে। তবে আমিনের প্রথম চিন্তা ইনাদের সব এড়ায়ে নিজের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া। অপরাধ জগতে কাজ করার জন্য আমিন জানে এরা কত জায়গায় টাকা দিয়ে খবর বের করে ফেলতে পারে। সোলায়মান স্যার ঢাকা শহরের রাঘব বোয়াল অপরাধীদের ভয়ের কারণ। কিন্তু গতকাল সোলায়মান স্যার যেভাবে বার বার সাবধান করছে তাতে বুঝা যাচ্ছে এই মাহফুজ ভাইয়ের পিছনে যারা লাগছে তারা বড় ক্ষমতাশালী। সোলায়মান স্যার অবশ্য বলে দিছে মাহফুজ ভাই নিজেও বড় নেতা। এখন নির্বাচনের সময় কিছু লোক পিছে লাগছে, তাই কয়েক সাপ্তাহ একটু আড়ালে থাকা লাগবে এমন খানে যেখানে তাদের কেউ খুজবে না। আমিন তাই না করে নায়। তবে মাহফুজ ভাইয়ের বউ, ভাবীরে নিয়ে ওর চিন্তা। ভাবীর আচার আচরণে কোনভাবে উনারে গ্রামের মানুষ প্রমাণ করার উপায় নাই।  যে কেউ দেখলেই বুঝবে উনি শহরের লোক। উনারে তাই কিভাবে আড়ালে রাখা যায় এইটা একটা ব্যাপার। অবশ্য ওর বাড়ি এইজন্য ভাল একটা জায়গা। তবে আর সচেতন হতে হবে। আর দুই নাম্বার ব্যাপার হল জোহরা কে খবর দেওয়া হয় নায়। নরমালি ওর বাড়ির সব জায়গায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক নাই। বাড়ির দক্ষিণ কোণায় অল্প কিছু জায়গায় নেটওয়ার্ক আছে। জোহরা মাঝে মাঝে ঐ জায়গায় গিয়ে নেটওয়ার্ক পাইলে ফোন দেয় ওরে, যখন কাজের জন্য বাইরে থাকে। আজকে জোহরা একবারও ফোন দেয় নায়। শহর থেকে দুইজন দামী মেহমান নিয়ে যাচ্ছে, খাওয়া দাওয়ার কি অবস্থা হবে, থাকার কি ব্যবস্থা হবে কিছুই জোহরা কে বলা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার সময় মাগরিবের ওয়াক্তে এইভাবে মেহমান নিয়ে হাজির হলে জোহরা রাগ করবে। জোহরা বাড়িতে বাচ্চা নিয়ে একা থাকে। তাই মেহমান আসলে খুশি হয়। তবে জোহরা সব সময় আয়োজন করতে পারলে আর খুশি হয়। এখন খবর না দিয়ে গেলে আয়োজন হবে না। আপাতত কিছু করার নাই এইভাবেই যেতে হবে। আর উনাদের সবার নজর বাচায়ে ঠিক মত নিয়ে যাওয়া আসল কাজ। আমিন একবার যে কাজে কথা দেয় সে কাজ জীবন দিয়ে হলেও করে।
Like Reply

গত এক ঘন্টা ধরে ট্রলারে বসে আছে নুসাইবা আর মাহফুজ। আমিনও আছে সাথে। মালবাহী ট্রলার। চালের বস্তা থেকে নানা রকম জিনিস আছে ট্রলারে। আমিনের বাড়ির পাশে যে হাট সেখানে কয়েকটা দোকানের মাল নিয়ে যাচ্ছে এই ট্রলার। ট্রলারের সুকানি আমিনের স্কুলের বন্ধু। আমিন তাই ওর ট্রলারেই নিয়ে যাচ্ছে। আমিন জানে ওর এই বন্ধু বিশ্বস্ত। ও বলে দিলে ভুলেও কোন কথা কোথাও বলবে না। আর ওর ট্রলারের বাকি ছেলে গুলা ওরে বিশাল ভক্তি করে। সাড়ে তিনটার মত বাজে। নুসাইবা ওড়নাটা টেনে ঠিকমত মাথার উপর দেয়। আজকে ঝলমলে রোদ আকাশজুড়ে। যতদূরে চোখ যায় খালি পানি আর পানি। মনে হচ্ছে যেন সমুদ্র। মাঝে মাঝে হঠাত করে জেগে উঠা গ্রাম অথবা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত একটা ভূমিখন্ড আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি ভুলে ভেংগে দেয়, মনে করিয়ে দেয় এইটা হাওড়। ঝকঝকে আকাশ থেকে আসা সূর্যকিরণ স্বচ্ছ পানিতে পড়ে ঝিকমিক করছে। বেশিক্ষণ সেই পানির দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখে লাগে। নিস্তব্ধ হাওরের মাঝে খালি ট্রলারের ইঞ্জিনের শব্দ। আমিন আর তার বন্ধু ট্রলারের মাঝ বরাবর একটা জায়গায় বসে কথা বলছে। ট্রলারের হাল আমিনের বন্ধু ট্রলারে কাজ করে একটা ছেলের উপর দিয়ে রেখেছে। এই মূহুর্তে আর কিছু করার নেই। খালি হাল সোজা করে ধরে রাখতে হবে। জটিল জায়গা আসলে আমিনের বন্ধু হাল ধরবে। রোদের কারণে ভাল করে চারপাশ দেখতে পারছে না নুসাইবা। খালি বিস্কুট খেয়েছে। মাইক্রোর ভিতর হালকা করে কয়েক দফায় ঘুম দিয়েছে তবে সেই রকম ভাল ঘুম হয় নি। এখন প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে তবে এই রোদের মধ্যে ঠিক ঘুম আসছে না। পাশ দিয়ে আরেকটা ট্রলার গেল। সেই ট্রলারের ঢেউয়ে দুলে উঠছে ওদের ট্রলার। শান্ত পানিতে শুধু আরেকটা ট্রলারের ঢেউ কাপুনি ধরিয় দিয়েছে ওদের ট্রলারে। নুসাইবার মনে হয় ওর জীবনটা কত শান্ত ছিল। যা চাওয়া যায় প্রায় সবকিছু ছিল ওর জীবনে। কিন্তু গত কিছুদিনে একের পর এক মানুষের সাথে ওর পরিচয় হচ্ছে যাদের ধাক্কায় ওর জীবনের বাক বদলে যাচ্ছে। প্রথমে এই মাহফুজ, পরে ম্যানেজার আর শেষে মুন্সী। ওর শান্ত নিস্তরংগ জীবনে এরা যেন পাশ কাটিয়ে যাওয়া ট্রলার। প্রত্যেকেই ওর জীবনে উথাল পাতাল ঠেউ তুলে দিচ্ছে।


মাহফুজ হাত দিয়ে রোদের আড়াল করতে চায় চোখ কে। যুব কমিটিতে যখন বড় পদ পেল তখন ওদের যুব সংগঠনের সভাপতি ওকে একটা কমিটির মেম্বার করে দিয়েছিল। যে কমিটির কাজ ছিল দেশ জুড়ে ঘুরে ঘুরে সংগঠনের নানা ইউনিটের সাথে কথা বলে একটা দেশব্যাপী সংগঠন পূর্নগঠনের খসড়া তৈরি করা। সেই সূত্রে বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে। তবে এমন ভ্রমণ করা হয় নি। চারপাশে তাকায় মাহফুজ। আমিন বন্ধুর সাথে গল্প করে। ট্রলারের গলুইয়ে বসে আছে একটা ছেলে, হাল ধরে আছে আরেকজন। ট্রলারের ইঞ্জিন রূমে পানি পরিষ্কার করছে আরেকটা ছেলে। নুসাইবা চালের বস্তার উপর জড়সড় হয়ে বসে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশ দেখছে। পাশ দিয়ে যাওয়া আরেক ট্রলারের ঠেউয়ে বেশ ভাল ভাবে কেপে উঠেছে ওদের ট্রলার। নুসাইবা খামচে চালের বস্তা ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। মাহফুজ হাসে। নুসাইবা ওর কমফোর্ট জোনের বাইরে চলে এসেছে। এইসব পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত নয় বুঝায় যাচ্ছে ওর আচার আচরণে। এমন করে ট্রলারের মধ্যে চালের  বস্তায় বসে আর কোথাও নুসাইবা যায় নি এইটা কোটি টাকা বাজি ধরে বলা যায়। অন্য সময় হলে আমিন বা আমিনের বন্ধু অথবা ট্রলারের ছেলে গুলো নুসাইবা কে ম্যাডাম ম্যাডাম বলতে বলতে অস্থির হয়ে যেত। কেউ একজন হয়ত মাথায় ছাতা ধরে থাকত। আমিনের বাড়ি হাওড়ের মাঝে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, কথা বলে যা বুঝেছে মাহফুজ। মনে মনে হাসে। এই ট্রলারের চালের  বস্তাতে বসে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সেই বাড়িতে দুই তিন সাপ্তাহ থাকলে কি হবে ভাবে মাহফুজ। নুসাইবা কে গ্রামের পরিবেশে চিন্তা করেই হাসি পায় মাহফুজের। দিস ইজ গনা বি ফান। সিনথিয়া সব সময় যেভাবে ওর পশ ফুফুর বর্ণনা দিয়েছে সেই পশ ফুফু এখ হাওড়ের মাঝে এক গ্রামের বাড়িতে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে এর থেকে হাস্যকর আর কি হতে পারে। তবে এর থেকেও বড় চিন্তা ঘুরছে মাহফুজের মাথায়। মুন্সী বা ম্যানেজার এখন কি করবে? এই অজপাড়াগায়ে এই লুকালেও কি বাচা যাবে কিনা? আপাতত খালি ভাবা ছাড়া কোন কাজ নেই মাহফুজের। ওর পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারে এতদিন নিজেকে অনেক ডেয়ারিং ভেবে এসেছে মাহফুজ তবে এইবারের মত এমন কিছু করে নি আগে। এখন প্রতিপক্ষ অনেক বেশি শক্তিশালী আবার ওর পিছনে কোন শক্তিশালী কার হাত নেই। ডিবির ইন্সপেক্টর সোলায়মান শেখ আর তার পুরাতন সোর্স আমিন ওর ভরসা। ম্যানেজার আর মুন্সীর তুলনায় এরা চুনপুটি। তাই হিসাবে কোন ভুল করা যাবে না। কারণ এইবার কিছু হলে জানের উপর দিয়ে যাবার চান্স আছে। পেয়াজের বস্তার গায়ে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয় মাহফুজ। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই।


আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সূর্য মাথার উপর থেকে আস্তে আস্তে পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে তখন আকাশে নানা রকম রঙ খেলা করে। রোদের কড়া তাপ তখন মিষ্টি আলো হয়ে আসে। আসরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে আসছে। আমিন ট্রলারে একটা গামছার মত বিছিয়ে নামায পড়ে নেয়। হাওড়ের আকাশ অনেক পরিষ্কার। শহরের আকাশে আলোর যে খেলা গুলো দেখা যায় না সেটাই হাওড়ের আকাশে দূর্দান্ত ভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠে। লাল থেকে বেগুনীর মাঝে সব গুলো রঙ যেন আকাশে স্তরে স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। আর প্রতি পাচ মিনিটে  বদলে যাচ্ছে আকাশের রঙ। এতক্ষণ সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করা পানি এই মিষ্টি আলোতে যেন নরম আভা ছড়াচ্ছে। আমিনের বন্ধু এখন হাল ধরছে। হাল থেকে গলা ছেড়ে হাক দেয়, এই মিরাজ গান ধর। যে ছেলেটা ট্রলারের সামনে বসা ছিল সেই ছেলেটা উত্তর দেয় ওস্তাদ কোনটা গামু। আমিনের বন্ধু বলে, গা, তোর পছন্দের একটা গান গা। ছেলেটা খালি গলায় টান দেয়। গলা ভীষণ শক্তিশালী। হাওড়ের বাতাসে ভেসে ভেসে যেন সেই গলা অনেকদূর ভেসে যায়।

বন্ধু তোর লাইগা রে
বন্ধু তোর লাইগা রে আমার তনু জর জর।

মাহফুজ চোখ খুলে উঠে বসে। নুসাইবা চালের বস্তার উপর পা গুলা কে দয়ের মত করে বসে আছে আর মুখ গুজে রেখেছে হাটুর উপর।

বন্ধু তোর লাইগারে বন্ধু তোর লাইগারে
মনে লয় ছাড়িয়া যাইতে বাড়ি ঘর
বন্ধু তর লাইগারে

ছেলেটার গলার দরদ আশেপাশের সবাই কে যেন ছুয়ে যায়। বাতাসে ভেসে যায় সেই দরদ। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসা ট্রলারের সবাই তন্ময় হয়ে শুনে সেই গলা।

অরণ্য জংলার মইধ্যে আমার একটা ঘর
ভাইও নাই বান্ধবও নাই আমার
কে লইব খবর
বন্ধু তোর লাইগা আমার তনু জর জর

ছেলেটার গলার বিষাদ আকাশের রঙের সাথে মিশে যায়। আমিনের বন্ধু হাল ধরে সুরের তালে তালে মাথা দোলায়। আমিন পানিতে তাকিয়ে থাকে। গানের কথা যেন ওকে জোহরার কথা মনে করায়ে দেয়। আরেকটা ছেলে বালতির উপর তবলার মত তাল দিতে থাকে। ছেলেটার গলা অনেক শক্তিশালী। নুসাইবা তন্ময় হয়ে শুনে। ওর মনে হয় ছেলেটা কি ওর মনের কথা জানে? কিছুদিন আগেও সব কিছু থাকলেও আজ আর কিছু নেই। আরশাদের জন্য সব ছেড়ে এখন অজানার পথে। মাহফুজের মনে হয় এই কয়দিনে কই থেকে কই এসে পড়ল।

বট বৃক্ষের তলে আইলাম ছায়া পাইবার আশে
বট বৃক্ষের তলে আইলাম ছায়া পাইবার আশে
ঢাল ভাংগিয়া রোইদ্দ উঠে আমার কর্ম দুষে
বন্ধু তোর লাইগারে আমার তনু জর জর


নুসাইবার মনে হয় এইসবের জন্য কি ও দোষী? আরশাদ কি ওকে খুশি করবার জন্য এইসব ইউরোপ ট্যুর, জমি, বাড়ি করেছে? সব কি ওর দোষ? কিন্তু তাহলে আরশাদ ফ্লোরার কাছে কেন যায়? ওকি আর সুন্দর নাই? আরশাদের ডিমান্ড কি আর ওকে দিয়ে পূরণ হয় না? নুসাইবা আবার নিজেই বলে নাহ। তাহলে আরশাদ জুয়া খেলে কেন? কিন্তু ওর এখন কি উপায়। মাহফুজ ছাড়া এই মূহুর্তে ওর কোন সহায় নাই। এই অজানায় হাওড়ের মাঝে মাহফুজ ওর একমাত্র সহায়। কিন্তু মাহফুজ ওর কাছে কি চায়? আশেপাশের সবাই যেমন ওকে একটা শরীর হিসেবে দেখে মাহফুজ কি ওকে সেইভাবেই দেখে? সিনথিয়া কে ভালবেসে আবার ওকে কেন চায় মাহফুজ? কামনা? ভাবতে একটু হলেও ইগো বুস্টাপ হয় নুসাইবার। আরশাদ ফ্লোরার কাছে গেলেও মাহফুজের মত হ্যান্ডসাম ছেলের মাথা ঘুরানোর মত উপায় আছে ওর। কিন্তু এখন কিভাবে সম্ভব সব। মাহফুজ কেন বুঝছে না ও সিনথিয়ার ফুফু। তবে মাহফুজ কে গতরাতে বাস্টার্ড বলা হয়ত বেশি হয়ে গেছে। সেই মুহুর্তে প্যানিকে ওর মাথা ঠিক ছিল না। এখন আস্তে আস্তে চিন্তা করে সব মিলাচ্ছে। মুন্সীর লোক ওকে ধরলে ওকে বাচিয়ে রাখবে কিন্তু মাহফুজের অবস্থা আর খারাপ হতে পারে। মাহফুজ হয়ত মুন্সীর লোক কে খবর দেয় নি। যতই ভাবে কুল কিনারা পায় না।

নদী পার হইতে গেলাম
নদীর কিনারে
আমারে দেখিয়া নৌকা
সরে দূরে দূরে
বন্ধু তোর লাইগা রে বন্ধু তোর লাইগারে

ছেলেটা গলায় লম্বা টান দেয়। বন্ধু তোর লাইগা রে। নুসাইবা ভাবে মাহফুজ কে এখন কি বলবে ও। সাধারণত কোন ঝগড়ার পর মানুষ কে প্রথম স্যরি বলার অভ্যাস নাই ওর। ছোটবেলা থেকে বাসার একমাত্র মেয়ে হয়ে সব সময় ওকে মাথায় তুলে রেখেছে। স্কুল, কলেজে ভাল ছাত্রী হিসেবে ভাল ফ্যামিলির মেয়ে হিসেবে সবার কাছে দাম পেয়েছে। আর আরশাদ বাইরে যাই করুক ওকে সব সময় মাথায় তুলে রেখেছে। ঝগড়া যার দোষে হোক আরশাদ প্রথম স্যরি বলেছে। তাই স্যরি কিভাবে বলতে হয় সেটাই যেন ভুলে গেছে। কিন্তু মাহফুজের সাথে একটা মিটমাট করা দরকার। আবার এমন কিছু বলা যাবে না যাতে মাহফুজ রঙ সিগনাল পায়।

সৈয়দ শাহ নূরে কান্দে
নদীর কূলে বইয়া
পার হইমু হইমু কইরা
দিন তো যায় চলিয়া
বন্ধু তোর লাইগা আমার তনু জর জর
মনে চায় ছাড়িয়া যাই বাড়ি ঘর
বন্ধু তোর লাইগা রে বন্ধু বন্ধু তোর লাইগা রে।


গানের পরশে সবাই যেন আচ্ছন্ন হয়ে আছে। অন্ধকার হয়ে এসেছে প্রায়। আমিন উঠে আসে মাহফুজের কাছে, বলে ভাই আইসা গেছি প্রায়। ঐ দেখেন দূরে যে বাড়িটা দেখা যায় ঐটা আমার বাড়ি। মাহফুজ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। দূরে একটা দ্বীপের মত জায়গা। গাছপালার মাঝ দিয়ে একটা টিনের ঘর দেখা যাচ্ছে। ওদের আগামী কয়েক সাপ্তাহের আস্তানা। আমিন বলে ভাবীসাবরে বলেন রেডি হয়ে নিতে। আর পাচ মিনিটের মধ্যে বাড়ির ঘাটে লাগবে ট্রলার। মাহফুজ উঠে নুসাইবার কাছে এসে বসে। বলে আমরা এসে গেছি রেডি হয়ে নিন। আর মনে রাখবেন এখানে খাপ খাওয়ানোর উপর আমাদের জীবন মরণ নির্ভর। সো এমন কিছু করবেন না যাতে নিজে বিপদে পড়েন আবার আমাকেও বিপদে ফেলবেন। নুসাইবা অবস্থার গভীরতা জানে তাই কথা বাড়ায় না। ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। ট্রলারের ইঞ্জিন গতি কমিয়ে এনেছে। ধীরে ধীরে ট্রলার বাড়ির ঘাটে লাগে। ঘাট বললেও আসলে তেমন কিছু না। একটা গাছের সাথে একটা নৌকা বাধা। ট্রলার ভিড়ালেও ঠিক মাটির সাথে মিশে নি। তাই একটা কাঠের পাটাতন সেট করে দিয়েছে ট্রলারের ছেলে গুলো সেখান থেকে নামতে হবে। নুসাইবা উঠে দাঁড়ায়। হাওড়ের ঢেউয়ে অল্প অল্প করে দুলছে ট্রলার। প্রথমে আমিন নেমে যায় পাতাতন বেয়ে। বাড়ির ভিতরের দিকে হাটা দেয়, আর জোরে জোরে হাক দেয়। ও জোহরা, জোহরা। মেহমান আইছে বাড়িতে, মেহমান আইছে। নুসাইবা ট্রলারের উপর পাটাতনের কাছে যায়। প্রায় দশ বারফুট লম্বা পাটাতন। কাপছে ট্রলারের সাথে সাথে। নুসাইবা সাতার জানে না। পানিতে ওর সারাজীবন ভয়। এখন এমন সরু পাটাতনে হেটে নিচে নামতে পারবে বলে মনে হয় না। ওর পা কাপতে থাকে। মাহফুজ পিছন থেকে বলে নেমে পড়। মাহফুজ ওকে তুমি বলছে কিছু বলবার জন্য ঘাড় ঘুরায় নুসাইবা তখন মনে পড়ে সোলায়মান শেখের কথা, আপনারা এখন অভিনেতা অভিনেত্রী। আপনাদের অভিনয়ের উপর আপনাদের সব কিছু নির্ভর করছে। নুসাইবা তাই কিছু না বলে আবার সামনে তাকায়। একবার এক পা দেয় পাটাতনে কিন্তু আবার পা সরিয়ে আনে। গলা শুকিয়ে যায়। আমিনের বন্ধু বলে উঠে, ভাইসাব, ভাবীসাব মনে হয় ভয় পাইছে। আপনে হাত ধইরা নামায়ে দেন। ভাবীর অভ্যাস নাই মনে হয়। মাহফুজ এইবার নুসাইবা কে ক্রস করে পাটাতনে উঠে। পাটাতন কাপছে তবে মাহফুজের ব্যালেন্স ভাল। সাতার জানে ভাল। ওর দাদা বাড়ি পানির এলাকায়। বড় হইছে বুড়িগংগার কাছে। সাতার ওর জন্য ছেলেখেলা। নুসাইবার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, আর বলে আসেন এই বাস্টার্ডের হাত ধরেন। আর কেউ হেল্প না করলেও এই বাস্টার্ড আপনাকে হেল্প করবে। নুসাইবা বুঝে মাহফুজ ওকে খোচা দিল। তবে নুসাইবা উত্তর দেয় না, খোচাটা নিরবে খেয়ে নেয়। এখন এই বিরন জায়গায় মাহফুজ ছাড়া ওর কোন মিত্র  নেই। মাহফুজের হাত ধরে কাপতে থাকা পাটাতন বেয়ে ভয়ে ভয়ে এক এক পা করে আগায় নুসাইবা। নিজেকে নিজে সাহস দেয় আর কয়েক পা এগুলেই মাটি। শক্ত করে নুসাইবা হাত ধরে রাখে মাহফুজ যেন পড়ে না যায়। দুলতে থাকা পাটাতন ভয় জাগালেও মাটিতে নামতেই হবে নুসাইবা কে আর এই জন্য মাহফুজ ছাড়া আর কোন বিশ্বস্ত হাত নেই ওর পাশে।
Like Reply

জোহরা খাতুন। আমিনের বউ। আমিনের সাথে ওর পরিচয় হইছে ষোল বছর আর বিয়ে হইছে পনের বছর। জোহরা ঠিক এই এলাকার মেয়ে না। বাড়ি সুনামগঞ্জেই তবে অন্য উপজেলায়। মাধপপুরে। জোহরার বাবার একটা ফার্মেসি ছিল। দুই ভাই দুই বোন। ও সবচেয়ে ছোট। আমিন গাড়ির ক্ষ্যাপ মারতে একবার মাধপপুরে যাওয়ার পর ঘটনাক্রমে জোহরা কে দেখে। জোহরার বয়স তখন প্রায় আঠার। তিনবার মেট্রিক ফেল করছে। তবে বাড়ির চাপে এইবার আরেকবার পরীক্ষা দিবে। ওর বড় ডিসি অফিসে কেরানি আর ছোট ভাই এক সরকারি অফিসের পিয়ন। সরাকারী চাকরি আছে দুই ভাইয়ের তাই ওদের পরিবারের বেশ একটা সম্মান আছে পাড়ায়। তাই মেয়ের বিয়ের আগে মেয়েরে অন্তত ম্যাট্রিক পাশ করাতে চাইছিল জোহরার পরিবার। পড়ালেখা ভাল লাগে না জোহরার। গায়ের রঙ চাপা একটু তবে চেহারায় একটা মিষ্টি ভাব আছে। মায়া মায়া। আর সেই বয়সে ছিপে ছিপে শরীরের মায়া মায়া চেহারার জোহরা কে দেখে চোখ ফেরাতে পারে নি আমিন। আমিন একটু বখে গেলেও ম্যাট্রিক পাশ করছিল অন্তত। এরপর আমিন কথা বলতে পারে সুন্দর। খ্যাপে গাড়ি চালায়ে সাথে গোপনে ড্রাগের সাপ্লাই দেয়। ফলে ওর হাতে তখন অনেক টাকা। কম বয়সেই জোহরা তখন বাড়ি থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার চাপে অতিষ্ঠ। গায়ের রঙ একটু ময়লা হওয়ায় ছেলেদের নজর ওর উপর পড়ে কম। কম বয়সী ছেলেরা সব ফর্সা মেয়েদের পিছনে ঘুরে। আমিন তখন ওর জন্য এক রকম পাগল। কোন ছেলে ওর জন্য এমন পাগল হইতে পারে এইটা দেখেই জোহরা প্রেমে পড়ে গেল। আর আমিনের কাছে তখন মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী জোহরা। আমিন তখন দুনিয়ার অনেক কিছু দেখে ফেলছে। মাগী পাড়ায় যায় সাপ্তাহে কয়েকদিন। হাতে টাকা আছে তাইলে আর সমস্যা কি। কিছু কিছু মেয়ের সাথে প্রেম ফেম করছে, তবে সিরিয়াস না। আসলে শরীর খাইতে চাইলে প্রেমের থেকে ভাল আর কি আছে। কিন্তু জোহরা তেমন না। জোহরা কে দেখার পর আমিনের প্রথম মনে হইল এই জীবনে প্রথমবারের মত বুঝি প্রেমে পড়ল। আগে যা প্রেম করছে সেইগুলা কে মনে হইল তুচ্ছ জিনিস। জোহরা প্রচুর কথা বলে। আমিন এমনিতে মেয়েদের বেশি কথা বলা পছন্দ করে না কিন্তু জোহরার কথা শুনলে খালি শুনতে ইচ্ছা করে। আমিন যখন তাই বিয়ের কথা বলল জোহরা কে জোহরা এক পায়ে রাজি। আর ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না এর থেকে খুশির আর কি হয়। তার উপর আর কোন ছেলে কোন দিন জোহরা কে এত দাম দেয় নায়। কিন্তু জোহরার ফ্যামিলি রাজি হয় না। ছেলে খালি মাইক্রো চালায় ভাড়ায়। এর মধ্যে বাড়ি হইল হাওড়ের মধ্যে। বাড়ির ছোট মেয়েরে এইখানে বিয়া দেওয়া যায় না। জোহরা ছোট মেয়ে হিসেবে বাড়িতে ভাল আদর পায়। জোহরা তখন তাই জেদ করে। ওর বড় ভাই ডিসি অফিসে কাজ করে এডমিন অফিসার হিসেবে এমন এক ছেলের কথা বলে ওদের ফ্যামিলিতে। সরকারি চাকরি, ডিসি অফিসে তাও। এমন ছেলের সাথে মাইক্রো চালানো আমিনের তুলনা কোথায়। সেই সময় জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেয় জোহরা। এক কাপড়ে বাড়ি থেকে চলে আসে। আমিনের খুশি তখন দেখে কে। দুই তিন জন বন্ধু কে সাথে নিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করে ফেলে। আমিনের বাড়িতে এই বিয়ে সবাই খুব খুশি মনে নিছে। আমিন উচ্ছন্নে যাচ্ছিল এখন একটা বিয়ে করে যদি লাইনে আসে। তার উপর জোহরার ফ্যামিলি ভাল। তবে জোহরার ফ্যামিলি মেনে নেয় নায়। প্রায় পাচ বছর কোন যোগাযোগ ছিল না ফ্যামিলির সাথে জোহরার। এরপর ওর মা অসুস্থ হতে ওরে ডেকে পাঠায় সেখান থেকে আবার যোগাযোগ শুরু। ফ্যামিলির লোকেরাও দেখছে আমিন তাদের মেয়ে কে খুশিতে রাখছে। জোহরা কে অনেক ভালবাসে। তাই তারা আর কিছু বলে নায় শেষে। আমিন জোহরার তিন ছেলে মেয়ে। বড় দুই ছেলের বয়স ১৪ আর ১২। এরা মামা বাড়িতে থেকে জেলা শহরের স্কুলে পড়ে। আর সবার ছোট মেয়ে, নয় মাস। আমিন চার পাচ দিনের জন্য বাইরে থাকে আবার আসে। দুই তিন দিন থাকে। যে কয়দিন আমিন থাকে না জোহরা বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে একা থাকে। তবে জোহরার ভয় কম আর আমিন আর তার ফ্যামিলির এলাকায় দাপট আছে তাই কেউ ডিস্টার্ব করার সাহস পায় না। বাড়িতে বেশির ভাগ সময় একা থাকে বলে মেহমান আসলে খুব খুশি হয় জোহরা।


জোহরা যখন প্রথম নুসাইবা কে দেখে তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আলো কম। বাড়িতে সোলার প্যানেল বসাইছে আমিন। আমিন তাই প্রায় অন্ধকারে একটা টর্চ জ্বালায়ে নুসাইবা আর মাহফুজ কে যখন বাড়িতে আনে তখন জোহরা বড় করে ঘোমটা টেনে ঘরের বারান্দা থেকে নেমে উঠানে দাঁড়ায়। এই অল্প আলোতেও জোহরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কি সুন্দর গো আপাটা। ঘাড় ঘুরিয়ে মাহফুজ কেও দেখে জোহরা আর মনে মনে ভাবে জামাইটাও কি সুন্দর গো। আল্লাহ একদম কি মিলানটাই না মিলাইছে। আমিন বলে ও জোহরা ভাই ভাবীরে বসার জায়গা দাও। জোহরা ঠিক কি করবে বুঝে পায় না। বারান্দায় থাকা মোড়া দুইটা দৌড় দিয়ে গিয়ে আনে। মাহফুজ এইবার সালাম দেয় আসসালামু আলাইকুম ভাবী। সাথে সাথে নুসাইবাও সালাম দেয়। আমিন বলে উনারা অনেক বড় ঘরের লোক। একটা বিপদে পড়ছেন। তাই কিছুদিন আমাদের এখানে থাকব। সোলায়মান স্যারের কথা কইছি না তোমারে। সোলায়মান স্যারের খুব কাছের লোক ইনারা। স্যার বলছে ইনাদের কয়েকদিন সহি সালামতে আমাদের এইখানে রাখতে। কয়েক মিনিট আগে আমিন দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে এসে হাজির। আমিন কে দেখে অবাক হইছিল জোহরা। দুই দিন আগে গেল লোকটা, এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসল। শরীর খারাপ নাকি? দেখে তো মনে হয় না। কোন বিপদ হল নাকি? আমিনের অতীত জানে জোহরা। আমিন কে ঐ রাস্তা থেকে ফেরত আনানোর পিছনে জোহরার অবদান আছে। কিন্তু এতদিন পরেও জোহরা ভয়ে ভয়ে থাকে আমিনের অতীত জীবন না আবার হানা দেয় ওদের জীবনে। তাই জোহরা জিজ্ঞেস করে কি হইছে, হানিফের বাপ। সরাসরি স্বামীর নাম মুখে নিতে লজ্জা লাগে তাই বড় ছেলের নামে স্বামীকে ডাকে সব সময়। আমিন বলে শোন, মেহমান আসছে। উনারা কিছুদিন থাকবে। শহরের বড়লোক উনারা। একটা বিপদে পড়ছে, আমার কাছে সাহায্য চাইছে তাই আমি নিইয়া আসছি। জোহরা বলে  উনাগো লগে তোমার আগের কামের কোন সন্মন্ধ নাই তো? আমিন খেকিয়ে উঠে, বলে খালি বাজে কথা। উনারা মান্যগন্য লোক। দেখলেই বুঝবা। বাইরে আস। আমি উনাগো ঘাট থেকে লইয়া আসতেছি।


মাহফুজ আর নুসাইবা কে দেখে জোহরার আর সন্দেহ থাকে না ইনারা শহরের মান্যগন্য লোক। ইনাদের হাটা কথাবলা আর বসার ধরনেই বুঝা যায় ইনারা বেশ দামী লোক। গঞ্জ থেকে আসার সময় আমিন গাদা গাদা নাটক মোবাইলে লোড করে আনে। জোহরা হাওড়ের মধ্যে এই বাড়িতে বেশির ভাগ সময় কিছু করার থাকে না। সেই অবসর সময়ে এই নাটক গুলা দেখে। ওর মনে হয় এই দুইজন মনে হয় নাটকের  নায়ক নায়িকা। দুইজনেই কি সুন্দর। আল্লাহ একদম বাইছা বাইছা জুড়ি বানাইছে। আমিন পরিচয় করায়ে দেয় ইনি মাহফুজ ভাই আর নুসাইবার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে নুসাইবার নাম জানে না আমিন। তাই বলে আর ইনি হইল মাহফুজ ভাইয়ের বউ, ভাবী। নুসাইবা অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসে কিছু বলতে পারে না। মাহফুজের মুখে মুচকি হাসি। আমিন বলে আরে খাড়ায়া খাড়ায়া দেখবা নাকি ভাবী সাবরে ভিতরে  নাও, হাত পা ধোওনের ব্যবস্থা কর। আমি ভাইয়ের লগে আছি। জোহরা বলে আহেন ভাবী আহেন। নুসাইবা উঠে। ওর হাতে খালি ওর হাতব্যাগটা। আর কিছু নেই সাথে। মাহফুজ আমিনের দিকে ঘুরে বলে ভাই আমরা আসার সময় তাড়াহুড়া করে আসছি। কোন কাপড় আনতে পারি নাই। আমিন বলে ভাই এইটা কোন কথা কইলেন। আমি আছি না। আজকে রাতে আমার লুংগি গেঞ্জি পইরা লন। এরপর আপনে চাইলে নাহয় হাটে লইয়া যামু নে। আপনে কিন্না লইয়েন। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে হাট কতদূর। আমিন বলে এই ধরেন আধা ঘন্টা চল্লিশ মিনিট। মাহফুজ বলে তা ফোনের সিগনাল আছে এইখানে। আমিন বলে নাহ আমাগো বাড়িতে নাই, তবে ঐ যে ডালিম গাছটা দেখতেছনে না বাড়ির কোণায়, ঐটার তলে গেলে দুই তিন দাগ সিগনাল আসে। ফোন দিতে হইলে ঐখানে যাওন লাগে। এই বলে অন্ধকারে ডালিম গাছের দিকে আংগুল দিয়ে দেখায় আমিন। মাহফুজ অন্ধকারে কিছু না দেখলেও বুঝে নেয় ঐ কোণায় ডালিম গাছের নিচে ফোনের সিগনাল পাওয়া যায়। অবশ্য ওর বা নুসাইবা কার কাছে আপাতত ফোন নেই। মাহফুজ বলে ভাল হইছে, ফোন দিয়ে আজকাল সবাইরে ট্রেস করা যায়। সিগনাল না থাকলে আল। আমিন বলে এইখানে নিশ্চিন্তে থাকেন ভাইজান। সারাদেশ বিছরাই (খুজে) ফেললেও এইহানে আইব না কেউ। মাহফুজ আমিনের কাছ থেকে আশেপাশের এলাকা সম্পর্কে আর খোজ নিতে থাকে।
Like Reply
জোহরার সাথে ঘরের ভিতরে ঢুকে নুসাইবা। সোলার পাওয়ারে চলা একটা ফ্লুরোসেন্ট লাইন্ট। অত পাওয়ার নেই আলোর। তাই ঘরের ভিতর একটা সাদা ঝাপসা আলো। নুসাইবা জোহরার দিকে তাকায়। পাচ ফুটের মত হবে। বয়স কত বুঝা যাচ্ছে না। ৩৫-৪৫ এর মধ্যে যে কোন কিছু হতে পারে। বিছানায় একটা বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে আপনার? জোহরা উত্তর দেয়, জ্বী ভাবী। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কয় ছেলেমেয়ে আপনার? তিনজন। বাকিরা কই? জোহরা উত্তর দেয়, বড় দুই পোলা সুনামগঞ্জে ওগো মামার লগে থাকে। ভাল স্কুল আছে। এইখানে স্কুল ভালা না ভাবী। প্রতি বছর এক দুইজন পাশ করে ম্যাট্রিক দিইয়া। নুসাইবা ভাল করে জোহরা কে দেখে। জোহরার বারবার ভাবী বলা ওর জন্য অস্বস্তিকর। কি করা যায়? কথা শুনে মনে হচ্ছে ভাল মহিলা। এইখানে কয়েক সাপ্তাহ থাকতে গেলে এই মহিলার হেল্প লাগবে। নুসাইবা ছোট থাকতে দুই একবার ওদের গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। নুসাইবার দাদা বহু বছর আগে গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিলেন শহরে পড়াশুনার জন্য। ফলে ওর বাবার সময় গ্রামের সাথে সম্পর্ক অনেক কমে গিয়েছিল। তাই দুই একবার দাদা  বেচে থাকতে গ্রামে গিয়েছে। এরপর তেমন আর গ্রামে যাওয়া হয় নি। নুসাইবার কাছে গ্রাম তাই নাটক সিনেমায় দেখা জিনিস। গ্রামের মানুষদের সম্পর্কে একধরনের অজ্ঞতা আছে সেই অজ্ঞতা থেকে তুচ্চতাচ্ছিল্য। তবে নুসাইবা বোকা না। ও জানে এই মুহুর্তে মাহফুজের পর ওর সবচেয়ে কাছের মিত্র হবার চান্স আছে এই মহিলার। আর গ্রাম সম্পর্কে বা গ্রামের মানুষ সম্পর্কে কম জানা থাকলেও একটা জিনিস জানে নুসাইবা। প্রশংসা সবাই পছন্দ করে। বিশেষ করে মহিলারা তাদের রূপের প্রশংসা। এইটা বিশ্বজনীন। নুসাইবা বলে আপনাকে দেখলে বুঝাই যায় না আপনার তিন তিনটা বাচ্চা আছে। আমি তো ভাবছি বিছানায় যে ছোট বাচ্চা এইটাই বুঝি আপনার প্রথম বাচ্চা। খুশিতে মুখ ঝলমল করে উঠে জোহরার। এইরকম সুন্দর স্মার্ট শহুরে মানুষের কাছে এই রকম প্রশংসা পেয়ে খুশি আর লজ্জা দুইটাই হয় জোহরা। জোহরা বলে কি যে কন ভাবী। ভাবী ডাকে আবার অস্বস্তি হয় নুসাইবার। ভাবে এইটা নিয়ে কিছু একটা করতে হবে। নুসাইবা বলে আরে না না দেখেন না আপনার দিকে। একটু সাজগোজ করলে একদম নাটকে নামতে পারবেন। জোহরা ফিক ফিক করে হেসে বলে হানিফের বাপ হেইটা কয় মাঝে মধ্যে। নুসাইবা বলে বড় পোলার নাম। নুসাইবা বলে আপনার যে একটা বড় ছেলে আছে এইটাই তো বিশ্বাস হইতে চায় না আপনাকে দেখে। আর গলে যায় জোহরা। এই ভাবী দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি দিল পরিষ্কার। কেমনে ওর প্রশংসা করতেছে। জোহরা বলে আপনে খুব ভালা মানুষ ভাবী। আপনে এত সুন্দর তাও আমারে কইতেছেন সুন্দর। নুসাইবা বলে আরে আমারে ভাবী বইলেন না, আপা ডাকেন। আপনে আমার বোনের মত। জোহরা নুসাইবার এই কথায় আর গলে যায়। এত দিল দরিয়া মানুষ এই আপা। জোহরা বলে আসেন আপা আপনারে আমি ঘরের সব দেখাইতেছি।  


মাহফুজ আমিনের দেওয়া লুংগি আর গেঞ্জি পড়ে নেয়। হালকা একটা শীতের মত পরে গ্রামের দিকে সন্ধ্যার পর। তার উপর এটা হাওড় এলাকা। তাই আমিন থেকে একটা চাদর চেয়ে নেয় মাহফুজ। ঐদিকে নুসাইবার হয় অসুবিধা। জোহরার কাছ থেকে শাড়ি পেটোকোট তো নিয়ে পড়ে নেয় কিন্তু ব্লাউজের সাইজে সমস্যা বেধে যায়। জোহরার শরীরে এখনো ছিপছিপে একটা ভাব আছে। তিন বাচ্চার পরেও দুধ অত বড় হয় নি। ৩২ সি হবে। অন্যেদিকে নুসাইবার হল ৩৬ সি। ফলে নুসাইবার পক্ষে জোহরার ব্লাউজ পড়া প্রায় অসম্ভব। ফলে জোহরা অন্য বুদ্ধি বের করে। আমিনের বোন মানে জোহরার ননদ কিছুদিন আগে বেড়াতে এসছিল, যাওয়ার সময় একটা ব্লাউজ ফেলে গেছে। আমিনের বোনের স্বাস্থ্য বেশ ভাল। তাই সেটা দেয় নুসাইবা কে পড়ার জন্য। পড়তে গিয়ে টের পায় এইটা অনেক ঢলঢলে। কাধের উপর থেকে ঢলে ঢলে পড়ে যেতে চায়। তাই জোহরা এইবার অন্য বুদ্ধি দেয়। সারা গা চাদর দিয়ে মুড়িয়ে নেয়। ফলে ঢিলা ব্লাউজ ঐভাবে বুঝা যাবে না। জোহরা বলে আপা আমার কাছে সিলাই মেশিন আছে, আমি সিলাই পারি ভাল। কালকে আপনারে একটা ব্লাউজ সিলাই দিমু নে। আশেপাশের বাড়ির মেয়েরা আমার কাছে থেকে সিলায়ে নেয় ব্লাউজ।


আমিন মাহফুজ কে অন্ধকারে টর্চের আলোয় ওর বাড়ির সবকিছু দেখাতে থাকে। আমিনের গর্বের জায়গা এই বাড়ি। জায়গাটা বাপের কাছ থেকে পেলেও বাকি সবকিছু নিজে নিজে গড়ে তুলেছে। আগে যখন ড্রাগ এর ক্ষেপ দিত তখন বেশ কিছু টাকা জমিয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে গঞ্জে দুইটা দোকান কিনে নিয়েছে। এখন সেগুলো ভাড়ায় দেয়। এরপর আমিনের ব্যবসা বুদ্ধি ভাল। মাইক্রো চালানোর সাথে সাথে জমির দালালিও করে। এর উপর দুই একটা টুরিস্ট এজেন্সির সাথে যোগাযোগ আছে। আমিন বিশ্বস্ত ড্রাইভার বলে বিদেশী টুরিস্ট আসলে আমিনের মাইক্রো ভাড়া নেয়। বিদেশি টুরিস্টের ভাল জিনিস  হল এরা যাবার সময় প্রচুর বকশিস দেয়। সব মিলিয়ে আমিনের ইনকাম খারাপ না। মাহফুজ ঘুরে ঘুরে দেখে আমিনের সাথে আর মনে মনে ভাবে আমিন গ্রামের তুলনায় যথেষ্ট বড়লোক। বাড়িতে সোলার লাইট আছে। যদিও রাত দশটার পর আলো জ্বলে না। বাড়িতে প্রচুর গাছগাছালি। চারটা গরু আছে। টিনের ঘর। ভিটা পাকা। টয়লেট বাড়ি থেকে হালকা দূরে। গ্রামে অবশ্য এমন হয়। লোকজন ঘরের ভিতর টয়লেট রাখা পছন্দ করে না। টয়লেটের সামনে একটা টিউবওয়েল। সব মিলিয়ে যথেষ্ট অবস্থাপন্ন ঘরের ছবি আমিনের। রাতে নুসাইবা আর মাহফুজ কে প্রথমে খাবার দিল ওরা টেবিলে। ছোট একটা টেবিল আছে ঘরের ভিতর। সেইটাতে নরমালি মেহমান আসলে খাবার দেয়। দুইটাই চেয়ার। তাই মাহফুজ আর নুসাইবা ছাড়া অন্যদের বসার জায়গা নেই। তবে এইবার মাহফুজ বলল আমিন ভাই এইভাবে তো খাব না। খাইলে সবাই মিলে একসাথে বসে খাব। আমিন যত না না করুক না কেন মাহফুজের এক কথা। শেষ পর্যন্ত মাটিতে পাটি বিছিয়ে সবাই মিলে একসাথে খেতে বসে। নুসাইবার অস্বস্তি হতে থাকে এইভাবে মাটিতে বসে। মাটিতে বসে খেয়ে অভ্যস্ত না ও। তবে এখন কিছু করার নাই। তার উপর চাদরের ভিতর ব্লাউজ বার বার খসে খসে পড়ছে মনে হয়। কিন্তু আমিন আর মাহফুজের সামনে সেটা ঠিক করা যাচ্ছে না। ওরা চাদরের কারণে দেখছে না কিন্তু নুসাইবার মনে হচ্ছে গা থেকে ব্লাউজ খসে পড়ছে আর সবাই বুঝি ওকে দেখছে। কোন আয়োজন করার সময় পায় নি জোহরা। মাছ ছিল রান্না করা। আর ওরা আসার পর ডিমের তরকারি করেছে। যদিও বেশি কিছু না। তবে প্রচন্ড ক্ষিধা ছিল সবার। গোগ্রাসে গিলতে থাকে। হাওড় অঞ্চলের লোকেরা বেশ ঝাল খায়। খেতে গিয়ে টের পেল নুসাইবা আর মাহফুজ। দুই জনেই হু হা করছে কিন্তু পেটে এত ক্ষুধা যে যতক্ষণ পারা যায় খেল দুইজনেই। আমিন আর জোহরা খালি বারবার বলছে ভাইজান কালকে থেকে ঝাল কমায়ে দিমু। আমরা ঝাল একটু বেশি খাই কিছু মনে কইরেন না।


রাতে খাওয়ার পর দেখা দেয় নতুন সমস্যা। শুবে কই ওরা। জোহরা আর আমিন ওদের মেইন বেডরুমে থাকার ব্যবস্থা করেছে নুসাইবা আর মাহফুজের জন্য। আর নিজেরা থাকবে অন্য একটা রুমে। সেইটা ছোট আর পরিষ্কার করাও নাই। মাহফুজ বলে না না আমরা ঐখানে থাকি। জোহরা আর আমিন বলে না না আপনারা মেহমান তাই কেমনে হয়। এই সময় নুসাইবা দেখে এইখানে একটা বুদ্ধি খাটানো যায়। তাই ও বলে আচ্ছা এক কাজ করি আমরা। জোহরা ভাবী আর আমি একসাথে থাকি। আর আপনারা একসাথে থাকেন। ছোট বাচ্চা নিয়ে ভাবীর ঐ রুমে থাকা ঠিক হবে না, পরিষ্কার নাই রুম। আবার আপনারা আমাদের ঐ রুমে থাকতে দিবেন না। তাইলে সবার কথাই থাকল। কেউ আর অখুশি থাকবে না। আমিন বলে মাশাল্লাহ, ভাবী একটা ভাল জিনিস বলছে। আমরা ছেলেরা তাইলে ঐ রুমে থাকি আজকের মত। আপনারা এই রুমে থাকেন। মাহফুজ মনে মনে হাসে। ও জানে নুসাইবার এই কথার মানে কি। ওর থেকে আলাদা থাকতে চাচ্ছে। নুসাইবাও মনে মনে ভাবে আজকের মত অন্তত একটু আড়াল পাওয়া গেল। তবে মাহফুজ আর নুসাইবা দুইজনেই ভাবে কালকে ব্যাপারটা ডিল করা যাবে, তবে দুই জনের লক্ষ্য থাকে ভিন্ন। সেই রাতে ক্লান্ত সবার ঘুম আসতে দেরি হয় না। সামনে দীর্ঘ সময় পরে আছে। সামনে কি হবে? লুকিয়ে থাকতে পারবে কিনা এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে দুইজনেই ভিন্ন রুমে।
Like Reply
রাতের  বেলা মরার মত ঘুমিয়েছে নুসাইবা। সারাজীবন শহরে বড় হয়েছে। বাড়ির বাইরে গেলেও দামী হোটেল বা বেশ অবস্থাপন্ন কোন আত্মীয়ের বাসায় ঘুমিয়েছে। সেইসব হোটেল বা বাসায় যেই সব সুযোগ সুবিধা থাকে তার তুলনায় কিছু নেই জোহরা আর আমিনের এই ঘরে। শক্ত খাটের উপর জাজিম আর তার উপর একটা পাতলা তোষক। ঘর জুড়ে একটা হালকা অচেনা গন্ধ। নুসাইবার শহরে নাকে বোটকা গন্ধটা লাগে কিন্তু ধরতে পারে না। জোহরা কে জিজ্ঞেস করলে বলে সুপারি পানিতে পচাতে দিয়েছে। সুপারি পচানো হয় এটাই জানা ছিল না ওর। তবে আর প্রশ্ন করে না। ভীষণ ক্লান্ত। শুয়ে পড়ে। ওর পাশে জোহরা। জোহরার মত কেউ ওর পাশে শুবে এইটা কোন জন্মেই চিন্তা করে নি ও তবে আজকে জোহরা কেই যেন মনে হচ্ছে ওর পরম সুহৃদ, ওর রক্ষাকবচ। ম্যানেজার আরশাদ কে নিয়ে যাওয়ার পর এক রাতও ঠিক করে ঘুমাতে পারে নি। কয়েকবার করে রাতে ঘুম ভেংগেছে। আর মুন্সীর দেখা হবার পর তো রাতে কয়বার করে দুস্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছে হিসাব নেই। তবে আজকে আর এইসব কিছু নুসাইবা কে ছুতে পারে নি। ওর মনে হল সব দুশ্চিতা ছেড়ে এইখানে থাকা যায়। এই হাওড় কে ওর সমুদ্রের মত বিশাল মনে হয়েছে। সেই হাওড়ের ছোট দ্বীপের মত এই বাড়িতে যেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই সেখানে ওকে ম্যানেজার বা মুন্সী খুজে পাবা না এই আস্থায় ওর ঘুম চলে আসে। শান্তির ঘুম।


সকালে নুসাইবা সবার পর ঘুম থেকে উঠে। ঘড়ি দেখে আটটা বাজে। তবে গ্রামে আটটা অনেক সকাল। মাহফুজ একবার নুসাইবা কে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিতে বলেছিল জোহরা কে। তবে জোহরা আর আমিন দুই জনেই বলল ভাইজান ঘুমাইতে দেন, উনি গতকাল এত দূর থাইকা আইসা টায়ার্ড। আর উনারে দেখলেই বুঝা যায় এই রকম জার্নি উনি আর করে নায়। তাই আরেকটু ঘুমাক। নুসাইবা তাই যখন আটটা বাজে ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে ঘরের দরজায় এসে দাড়াল, দেখল মাহফুজ বাড়ির উঠানে মোড়ায় বসে চা খাচ্ছে। জোহরা বা আমিন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মাহফুজ কে দেখে নুসাইবা বলল গুড মর্নিং। ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখল মাহফুজ। প্রথম দেখায় একটু অবাক হল। নুসাইবা কে যখন যেভাবেই দেখেছে তখন দারুপ পরিপাটি ছিল, গুছানো। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সব করে মেপে রাখা। এমনকি ওদের বাসায় প্রথমবার যখন গেল তখনো। মানুষ ঘুম থেকে উঠলে তার চেহারায় একটা আলুথালু ভাব থাকে, চুল গুলো একটু উস্কোখুস্কো হয়ে থাকে। নুসাইবার চেহারায় সেই ছাপ। মুখের কাছে হাত নিয়ে হাই তুলছে। নুসাইবা সব সময় যা কাপড় পড়ে খুব দামী কাপড় থাকে। সেটা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ যাই হোক। আজকে জোহরার দেওয়া খুব সাধারণ একটা তাতের শাড়ি, আগেও বহুবার পড়া হয়েছে বুঝা যায়। সব মিলিয়ে এই নুসাইবা ওর পরিচিত নুসাইবা থেকে অনেক ভিন্ন। তবে এর মাঝেও নুসাইবা কে সুন্দর লাগছে। মাহফুজ উত্তর দিল গুড মর্নিং। নুসাইবা জিজ্ঞেস করল আমিন আর জোহরা কোথায়। মাহফুজ উত্তর দিল আমিন লাকড়ি কাটছে আর জোহরা ওদের গরু গুলোকে খাওয়া দিচ্ছে আর এরপর দুধ দোয়াবে। নুসাইবা মাথা নাড়ে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওকে বাস্টার্ড বলে যেন ভুলেই গেছে সেই কথা নুসাইবা। অবশ্য এখন কিছু করার নেই ওর। তবে খোচা দিতে ছাড়ে না মাহফুজ। আমার কথা জিজ্ঞেস করলেন না তো? নাকি বাস্টার্ডদের খবর নেন না? নুসাইবা বুঝে মাহফুজের রাগ পড়ে নি। গতকাল আসার পথেই চিন্তা করেছে মাহফুজের সাথে মিটমাট করে ফেলতে হবে। এই অচেনা জায়গায় মাহফুজ কে ক্ষেপিয়ে বরং বিপদ বাড়বে ওর। হেটে এসে মাহফুজের পাশের মোড়াতে  বসে। বল, স্যরি আসলে তখন রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। তুমি তো জান আমার মেজাজ একটু বেশি। মাহফুজ বলে হ্যা সিনথিয়া বলেছে আপনি দেমাগী। নুসাইবা অবাক হয় ওর সম্পর্কে এইভাবে ভাবে সিনথিয়া? মাহফুজ ইচ্ছা করেই সিনথিয়ার কথা বলে যাতে নুসাইবা বুঝে ওর ফ্যামিলির লোকেরাও এই রাগটা ভাল চোখে দেখে না।


মাহফুজ বলে তোমার কি করে মনে হল আমি তোমাকে মুন্সীর কাছে ধরিয়ে দিব? নুসাইবা খেয়াল করে মাহফুজ ওকে তুমি করে বলছে। নুসাইবা গলা শক্ত করে বলে আমাকে তুমি করে বলছ কেন? আমি তোমার থেকে কত বড় তোমার ধারণা আছে? মাহফুজ এইবার বলে হ্যা জানি আপনি আমার থেকে বড়, সিনথিয়ার ফুফু কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন কেন আমাদের ধরা খাওয়া আর না খাওয়ার মধ্যে তফাত হল আমরা কত ভাল অভিনয় করতে পারি। নুসাইবা গলা শক্ত করে বলল এটার সাথে তুমি বলার কি সম্পর্ক? এখন আশেপাশে কেউ নাই। কাকে দেখানোর জন্য অভিনয় করছ? মাহফুজ বলল কাউকে দেখানোর জন্য না। কি মনে হয় তোমার? একবার আপনি আর একবার তুমি করে বললে কি হতে পারে? একবার যদি আমি ভুল করে অন্য কার সামনে তোমাকে আপনি বলি কি হবে? কয়জন ছেলে কে তুমি চিন যে বউ কে আপনি করে ডাকে? তুমি আমাকে আপনি/তুমি/তুই যা বল কিছু মনে করবে না লোকজন। কারণ আজকাল বউরা অনেক কিছুই ডাকে জামাইদের কিন্তু বউ কে আপনি বলে এমন কাউকে আমি দেখিনি এখন পর্যন্ত। নুসাইবা মাহফুজের যুক্তি ফেলে দিতে পারে না আবার মেনেও নিতে পারে না। মাহফুজ বলে আমি জাত অভিনেতা না, এইভাবে একবার তুমি একবার আপনি করতে গেলে কোথায় কি বলব তার ঠিক থাকবে না। তাই তুমি বলব সব সময় যাতে আর গোলমাল পাকানোর ভয় না থাকে।


কিছুক্ষণ চুপ বসে থেকে নুসাইবা উঠে দাঁড়ায়। সামনের কলতলা থেকে হাত মুখ ধুতে থাকে। শাড়ির আচল কোমরে গুজে টিউবওয়ল চাপতে থাকে। মাহফুজ মনে মনে হাসে, সিনথিয়া ওর ফুফু কে এই অবস্থায় দেখলে কি ভাবত। এর মধ্যে জোহরা আর আমিন এসে হাজির হয়। জোহরা বলে আপা আপনি মুখ ধোন আমি কল চাপি। আমিন বলে ভাইজান আমি বাজারে যামু কিছু জিনিস কিনা লাগব। মাহফুজ বলে ওর যাওয়া দরকার। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হবে। নুসাইয়া কান খাড়া করে কথা শুনছিল। নুসাইবা খাওয়া ছেড়ে উঠে দাড়াল মাহফুজের কাছে এসে বলল আমারো কিছু জিনিস কিনা দরকার। আমিও যাব। তোমরা একটু ওয়েট কর। আমিন গলা খাকরি দিয়ে বলল আপা যাইয়েন না। এই গ্রামের মধ্যে আপনার মত কাউরে দেখলে সেইটা সবার নজরে পড়বে। এমনিতেও মেয়েরা হাটে যায় কম তার উপর আপনার মত শহরের কাউরে দেখলে সবাই ভাল করে খেয়াল করবে। নুসাইবা নিজের শাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে এই শাড়িতে আমাকে শহরের কেউ লাগছে। আমিন কি বলবে বুঝে উঠে না। মাহফুজ বুঝে আমিনের কথায় যুক্তি আছে। তাই বলে শোন খালি কাপড় ব্যাপার না, তোমার কথা,হাটার ধরন সব কিছুতে শহরের ছাপ। রিস্ক নেওয়ার দরকার নাই। নুসাইবার কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলে ওরা কিন্তু মেইনলি তোমাকে খুজতেছে। নুসাইবা এইবার একটু রাশ টানে। নুসাইবা বলে আমার কিছু জিনিস কেনা লাগত, আমি কিছুই আনতে পারি নাই। ব্যাগ ফেলে চলে আসছি এয়ারপোর্টে।মাহফুজ বলে আমাকে বল আমি নিয়ে আসছি। ওর এত কাছে দাঁড়িয়ে মাহফুজ ওকে তুমি তুমি বলছে এতে অস্বস্তি হয়। আবার মাহফুজ কে ওর কি কি লাগবে সেইটা বলতেও অস্বস্তি হয়। মাহফুজ বলে কি হল বলছে না যে। নুসাইবা আমিন আর জোহরার দিকে তাকায়। ওরা আবার যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমিন কাধে করে কিছু কাটা লাকড়ি নিয়ে এসেছে সেইগুলা রান্নাঘরে এক সাইডে রাখছে। জোহরার কোলে ওর বাচ্চাটা। স্বামীকে নির্দেশ দিচ্ছে লাকড়ি গুলো কিভাবে রাখলে সুবিধা হবে সেইটা নিয়ে। ওর দিকে কার  নজর নেই। মাহফুজ বলে আমার কাছে ক্যাশ টাকা নেই এই মূহুর্তে খুব বেশি। আবার কার্ড দিয়ে টাকা তোলাও ঠিক হবে না, যদি ওরা আমাকে আইন্ডেটিফাই করে তাহলে আমার টাকা তোলা থেকে বুঝে যাবে আমরা কই আছি। নুসাইবা টাকার কথাটা ভাবে নি এতক্ষণ। তবে ও একটা হাফ ছাড়ে। বড় অংকের একটা ক্যাশ টাকা ভাবীর কাছ থেকে নিয়ে রেখেছিল, কখন কি কাজে লাগে সেই জন্য। এর একটা অংশ দিয়ে ডলার কিনেছিল বাকি অংশ ওর হ্যান্ডব্যাগে আছে। নুসাইবা ফিস ফিস করে বলে আমার কাছে কিছু টাকা আছে সেগুলো নিতে পার। মাহফুজ বলে স্মার্ট গার্ল। সব সময় সব কিছুর জন্য প্রস্তুত। মাহফুজের ফ্লার্টিং এর ভংগিতে বলা স্মার্ট গার্ল কথাটাও অস্বস্তি তৈরি করে ওর মনে। আগে যতবার যাই হোক ওদের মধ্যে তখন শব্দহীন ভাবে হয়েছে। এখন মাহফুজের ওর এমন কাছে দাঁড়ানো, তুমি বলা, ফ্লার্টিং ভংগিতে কথা বলা সব কিছু নতুন ওর জন্য। তবে আপাতত চিন্তা ঝেড়ে ফেলে। নুসাইবা বলে আমার কাপড় লাগবে। এইখানে পড়ার জন্য কয়েকটা শাড়ি কিনে আনবে, তিন পিস ব্লাউজের কাপড়, তিন পিস পেটিকোটের কাপড়। মাহফুজ বলে তা ব্লাউজ পেটিকোটের কাপড় আনলে সেলাই করবে কে? নুসাইবা বলে জোহরার সাথে কথা হয়েছে। ওর সেলাই মেশিন আছে, আর আশেপাশের অনেক মহিলার কাপড় নাকি ও সেলাই করে দেয়, আমারটাও দিবে। তাহলে মাপঠিক মত হবে কেনার চাইতে। মাহফুজ হেসে দেয়। বলে বাহ এর মধ্যে জোহরার সাথে খাতির জমিয়ে ফেলেছেন। নুসাইবা বলে কেন সমস্যা কি? মাহফুজ খোচা দেবার সুযোগ ছাড়ে না। বলে, নাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিডি আমার পরিচিত নুসাইবা করিম আবার তার ক্লাসের সাথে না মিললে কার সাথে মিশে না, এমনকি পড়াশুনা জানা থাকলেও তার ভাতিজির সাথে বিয়ে দিতে চায় না। এখন দেখি একবারে এই গ্রামের মেয়ে জোহরার সাথে খাতির করে ফেলেছে। তাই ভাবছি আমার পরিচিত দেমাগী নুসাইবা করিম কি পথে কোথাও হারিয়ে গেল, নাকি আমাদের সাথে অন্য কেউ চলে এসেছে নুসাইবা নামে? নুসাইবা হঠাত করে মাথার ভিতর পরিচিত সেই আগুন অনুভব করে। ওর মেজাজ গরম হয়ে উঠছে, টের পাচ্ছে মাহফুজ সুযোগ বুঝে ওকে খোচাচ্ছে। তবে নুসাইবা নিজেকে কন্ট্রোল করে। এখনকার পরিস্থিতি আর সবসময়ের মত না। নুসাইবা শান্ত স্বরে বলে আমাকে যেমন ভাবছ আমি তেমন না। মাহফুজ হাসে তবে উত্তর দেয় না। নুসাইবা বলে ঠিকাছে তাহলে এই কয়টা জিনিস লাগবে। সাথে টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, গোসল করার সাবান এইসব লাগবে। মাহফুজ বলে আর কিছু লাগবে না? নুসাইবা বলে নাহ এইগুলা আপাতত। দাড়াও আমি টাকা এনে দিচ্ছি।


কয়েক মিনিট পর নুসাইবা ঘরের ভিতর থেকে আসে। হাতের টাকা গুলো মাহফুজের হাতে দেয়। বলে এখানে দশ হাজার আছে আপাতত এই টাকায় হয়ে যাবে আশা করি। মাহফুজ বলে নুসাইবা করিমের একটা শাড়ির দাম তো দশ হাজারের থেকে বেশি হয় বলে শুনেছি। মাহফুজের স্বরে সুক্ষ খোচা। নুসাইবা এইবার তেজ দেখায়। বলে শোন মাহফুজ, মানুষ বদলায়। আর পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষ কে থাকতে হয়। শাড়ি কিনবার সময় জোহরা যে টাইপ শাড়ি পড়ে তেমন শাড়ি আনবে, যেন আমি পড়লে ঠিক গ্রামের মেয়ে বলে মনে হয়। আর জোহরার সাথে আমি কথা বলেছি এই শাড়ি গুলোর দাম অত বেশি না। মাহফুজ হাসে। বলে, তা এরপর আর কিছু লাগবে না? নুসাইবা বলে আর কি? মাহফুজ বলে কেন আন্ডারগার্মেন্টস? ব্রা প্যান্টি লাগবে না? মাহফুজের কথা শুনেই চমকে যায় নুসাইবা। ঘাড় ঘুড়িয়ে আশেপাশে দেখে। জোহরা আর আমিন এখনো রান্না ঘরে লাকড়ি গুলো ঠিক করে রাখতে ব্যস্ত। যথেষ্ট দূরে, আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছে ওদের কথা শুনবে না। নুসাইবা হিস হিস করে বলে আস্তে, ওরা শুনতে পাবে। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে শুনলে আর কি করা। কিন্তু আপনি আজকে ব্রা প্যান্টি পড়ে নেই? নাকি গত দুই দিন ধরে এক ব্রা প্যান্টি পড়ে আছেন? এতদিন ধরে এক আন্ডার গার্মেন্টস পড়ে থাকলে কিন্তু পরে জামা কাপড় গন্ধ হয়ে যাবে। নুসাইবা টের পায় মেজাজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলেও চামড়ার নিচে আগুন জ্বলছে। অবাকও হয় নুসাইবা। এই রকম করে ওর সাথে আর কখনো কথা বলে নি মাহফুজ। এখন ওকে অসহায় পেয়ে কি মাহফুজ আসল রূপ ধরেছে নাকি গতকাল বাস্টার্ড বলার শোধ নিচ্ছে? মাহফুজ বলে কি ব্যাপার আন্ডার গার্মেন্টস লাগবে না? নুসাইবা আসলে আন্ডার গার্মেন্টস এর জন্য নিজে বাজারে যেতে চেয়েছিল কিন্তু যখন বাকিরা বলল ওর বাজারে যাওয়া রিস্কি তখন এই ব্যাপারে আর কথা বাড়ায় নি। বয়ঃসন্ধির সময় থেকে নিয়মিত আন্ডার গার্মেন্টস পড়ে এসেছে। আন্ডার গার্মেন্টস এর ব্যাপারে খুব রক্ষণশীল নুসাইবা। কাপড় যত দামী পড়ুক আন্ডার গার্মেন্টস সব সময় ও কিনে এসেছে অনেক আগে ওর মায়ের দেখিয়ে দেওয়া গাউছিয়ার এক দোকান থেকে। এখন ব্রা প্যান্টি কিনার কথা মাহফুজের সাথে আলোচনা করা ওর পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু মাহফুজ নিজে থেকে জিজ্ঞেস করছে তবে ওর এত দিনের রক্ষণশীল মন এই ব্যাপারে মাহফুজের সাথে আলোচনা করতে বাধা দিচ্ছে। নুসাইবা কোন কথা বলে না। মাহফুজ আসলে ওর মনের ভিতর থেকে বাস্টার্ড শোনার ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। আর নুসাইবা কে এইভাবে টিজ করার সুযোগ তাই ওকে একটা আনন্দ দিচ্ছে। মাহফুজ বলে চিন্তা করার দরকার নেই আমি নিয়ে আসব তোমার জন্য ব্রা প্যান্টি। হাজার হলেও তোমার হাজব্যান্ড। একা বিপদে ফেলে তো যেতে পারি না। নুসাইবা বুঝে এক ঠিলে দুই পাখি মারল মাহফুজ। ওকে আর আরশাদ দুই জনকেই খোচা দিল। আমিনের কাজ শেষ। ডাক দেয় ভাইজান চলেন বাজারে যাই। মাহফুজ নুসাইবা একদম কাছে ঘেষে দাঁড়ায়। নুসাইবা এক পা পিছিয়ে যায়। মাহফুজ বলে আমার কথায় যত রাগ কর শেষ পর্যন্ত কিন্তু আমি রক্ষা করব তোমাকে অন্য কেউ না। মাহফুজের গলায় দৃঢ়তা টের পায় নুসাইবা। অবাক হয়। এই ছেলে আসলে কি চায়? একবার ওকে টিজ করছে পরের মূহুর্তে ওকে বাচানোর প্রতিজ্ঞা করছে? একবার সিনথিয়ার জন্য পাগল হচ্ছে আবার ওকে কাছে পেলে অন্য রকম আচরণ করছে? মাহফুজ ইজ এ মিস্ট্রি টু হার। মাহফুজ বলে আমিন ভাই আসতেছে দাড়ান। তারপর আবার মাথা নুসাইবার কানের কাছে নামিয়ে আনে। বলে, ব্রা প্যান্টির সাইজ বলবেন না কেনার জন্য? নুসাইবা আতকে উঠে এক পা পিছিয়ে যায়। মাহফুজ একটা চোখ টিপ দিয়ে বলে ফ্লোরা হাসানের দোকানে আমি কিন্তু সাইজ দেখে নিয়েছি তাই না বললেও সমস্যা নাই। হাসতে হাসতে চলে যায় মাহফুজ। নুসাইবা ভাবে কি চায় এই ছেলে?
Like Reply

আমিনের সাথে বাজারে ঘুরছে মাহফুজ। বেশ বড় বাজার। সাপ্তাহে দুই দিন হাট বসে সেই দুই দিন আর বড় হয় বাজার। সকাল নয়টার মত বাজে। গ্রামের বাজারের জন্য এইটা অনেক বেলা। মাহফুজের গ্রামের সাথে ভাল যোগাযোগ আছে। ওর দাদাবাড়ীতে নিয়মিত যায় মাহফুজ। আবার সংগঠনের কাজে আজকাল অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হচ্ছে। সেই কারণে গ্রাম সম্পর্কে বেশ ভাল আইডিয়া আছে মাহফুজের ঢাকার ছেলে হবার পরেও। আর দশটা গ্রামের বাজারেরর মত এই বাজার। প্রথমে মাহফুজ কে কাচাবাজারে ঢুকল আমিন। বেশ কিছু বাজার করল। আমিন মানা করবার পরেও বাজারের খরচ দিল মাহফুজ। মাহফুজ বলল আমিন ভাই এইটুকু তো করতে দেন। আপনি আমাদের এত বড় উপকার করছেন। আমিন আর না বলে না। মাহফুজ কে বেশ মনে ধরেছে আমিনের। শহরের লোকদের যেমন ঠাটবাট থাকে এর তেমন নাই। আপার একটু ঠাটবাট থাকলেও এমনিতে তারেও ভাল লোক মনে হচ্ছে আমিনের। আর মাহফুজ নাকি ঢাকায় বড় নেতা। কিন্তু কেমন মাটির মানুষের মত তার সাথে মিশতেছে। ভাল লাগে আমিনের। আমিন জিজ্ঞেস করে? ভাইজান এইবার নির্বাচনে আসলে কি হবে? মাহফুজ বলে কেন আপনার কি মনে হয়? আমিন হেসে বলে আমরা ছোট মানুষ এত কিছু কি বুঝি। আর আপনি হলেন রাজনীতির লোক। মাহফুজ আর আমিনের মধ্যে গল্প জমে উঠে। দুইজন ঘুরে ঘুরে হাটে সবজি দেখে, পছন্দ হলে কিনে আর সাথে রাজনীতি নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে থাকে।


মাহফুজ আর আমিন চলে যেতে জোহরা নুসাইবার পাশে এসে বসে। নুসাইবার নাস্তা খাওয়া শেষ। এমনিতে সকালবেলা জোহরা আর আমিন পান্তা ভাত খায়। আজকে মেহমান আসছে দেখে সেই ফজরের ওয়াক্তে উঠে যোগাড় যন্ত করে দুধ চিতই বানিয়েছে। নুসাইবা বলে তোমার রান্নার হাত চমতকার। জোহরা লজ্জা পায়। জোহরা বলে আপা আপনে বেশি বেশি কইতেছেন। নুসাইবা বলে আরে না সত্যি সত্যি। অনেকদিন এমন ভাল পিঠা খাই নি। জোহরা খুশি হয়। নাটক সিনেমার নায়িকার মত এমন সুন্দরী একজন সুন্দর করে ওর প্রশংসা করতেছে এইটা যেন ওর খুশি আর বাড়ায়ে দেয়। জোহরার মেয়ে কেদে উঠে। নুসাইবা বলে তোমার মেয়ের ক্ষুধা লাগছে মনে হয়। জোহরা বলে, হ আপা ওর খাওনের টাইম হইছে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে নরমাল খাওয়া শুরু করছে? জোহরা বলে হ, আপা দুই তিনমাস হইল জাউ ভাত খাওয়াইয় অল্প অল্প। তয় দুধ দিলে একদম ঠান্ডা। নুসাইবা মাথা নাড়ে। বাচ্চা আবার কেদে উঠে। জোহরা বাচ্চা কে হাটুর উপর রেখে হঠাত করে শাড়ির আচল ফেলে দেয়। নুসাইবা দেখতে থাকে। কথা বলতে বলতে ব্লাউজের বোতাম গুলো খুলে ফেলে। ভিতরে থাকা জোহরার স্তন সূর্যের আলোয় বের হয়ে আসে। নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। ওর ফ্যামিলি এমনিতেও অনেক কনজারভেটিভ ছিল। তার উপর ওদের বাড়িতে ওর দেখা প্রথম বাচ্চা হচ্ছে সাবরিনা। ফলে সাফিনা ভাবী ওর দেখা প্রথম মা যাকে ও সরাসরি মায়ের দ্বায়িত্ব পালন করতে দেখেছে প্রতিদিন। সাফিনা এইসব ব্যাপারে এমনিতে খুব লাজুক। তাই সাবরিনা কে দুধ খাওয়াতে হলে উঠে গিয়ে নিজের রুমে চলে যেত। এরপর ওর বান্ধবী বা কাজিন যাদের বাচ্চা হয়েছে সবাই বাচ্চা কে দুধ খাওয়ানোর সময় অন্য রুমে চলে যেত বা সামনে থাকলেও এমন ভাবে ঢেকে ঢুকে বাচ্চা কে খাওয়াত যেন কার চোখে কিছু না পড়ে। এমনকি রুমে সবাই মেয়ে হলেও। তাই ওর সামনে এইভাবে হঠাত জোহরার ব্লাউজ খুলে বাচ্চা কে দুধ খাওয়ানো শুরু করাতে থতমত খেয়ে যায় নুসাইবা। জোহরার দুধের বোটা মুখে পুরে নিয়ে বাচ্চাটা শান্ত হয়ে যায়। চুক চুক করে খেতে থাকে। নুসাইবা ঘাড় ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়। জোহরা কিছুই হয় নি এমন ভাবে বাচ্চা কে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে নুসাইবার সাথে কথা বলতে থাকে। নুসাইবা, জোহরার কাছে ঢাকা শহর থেকে আসা নায়িকা। তাই জোহরার কৌতুহল অফুরন্ত। নুসাইবা ভদ্রতার জন্য অন্যদিকে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করলেও এইভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলা যায় না। আর ঘাড়েও অস্বস্তি লাগছে ওর। তাই মুখ ঘুরায়। যতই জোহরার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে যায় ততই ওর চোখ জোহরার বুকের দিকে চলে যায়। নুসাইবা জোহরার সাথে কথা বলে ওর বয়স বুঝার চেষ্টা করে। ৩৬/৩৭ হবে সর্বোচ্চ। তিন বাচ্চার মা তবে সেই অনুযায়ী শরীর অনেক ভাল। গায়ের রঙ্গটা চাপা তবে মুখে একটা লাবণ্য আছে। জোহরার দুধ গুলোও ওর মত ভাবে নুসাইবা। চাপা রঙের তবে আলাদা একটা লাবন্য আছে। যথেষ্ট বড়। নুসাইবার থেকে বেশ বড় হবে। একটা বোটা মেয়ের মুখে। অন্য বোটা খাড়া হয়ে আছে। নুসাইবা নিজেই অবাক হয় এত কিছু খেয়াল করছে ও জোহরার। জোহরা জিজ্ঞেস করে আফা আপনার ছেলে মেয়ে কয়টা? নুসাইবার চোখ মুখ কাল হয়ে যায়। জোহরার স্তনে ঝুলে থাকা শিশু নুসাইবার ভিতরের গোপন ব্যাথাটা যেন মনে করিয়ে দেয়। জোহরা হঠাত টের পায় নুসাইবার মুখ কাল হবার কারণ। জোহরা কি বলবে বুঝে পায় না। বলে আফা আপনে মন খারাপ কইরেন না। আল্লাহ চাইলে সব হইব। নুসাইবা অবাক হয়। ও তো মুখে কিছু বলে নি কিভাবে বুঝল জোহরা? জিজ্ঞেস করে তুমি বুঝতে পারছ? জোহরা বলে আপা মাইয়া মানুষের দুঃখ একমাত্রা মাইয়ারাই বুঝব। নুসাইবা মাথা নাড়ে। জোহরা বলে চিন্তা নিয়েন না আপা। আমার বাপের বাড়ির ঐখানে হোসেন শাহের মাজার আছে। জিন্দাপীর। আমার বান্ধবীর অনেক বছর বাচ্চা হইতেছিল না। ঐখানে মানত করল আর এরপর এক বছরের মধ্যে ওর পোলা হইল। আমি আপনার হইয়া ঐখানে মানত করুম নে। নুসাইবা জোহরার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়।


নুসাইবা কে ওর বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জোহরা বলে অনেক ঝুইলা গেছে, তাই না আপা? নুসাইবা কে একটু বিব্রত হয়। এক দুধ মেয়ের মুখে। অন্য দুধ হাতে নিয়ে উপুড় করে তুলে জোহরা। ঠিক কইরা কন তো আপা বেশি ঝুলছে কিনা? নুসাইবা বলে আরে না না ঠিক আছে। জোহরা বলে প্রতিবার বাচ্চা হইলে আমার এই দুইটা অনেক ফুইলা যায় আপা। এরপর আবার কমে। দেখেন কেমন ফুইলা আছে। এই বলে নিজের স্তন নিজেই চাপ দেয় জোহরা। হালকা একটু দুধের ধারা টিপ টিপ করে বের হয়ে আসে জোহরার বোটা দিয়ে। নুসাইবা কখনো এমন দৃশ্য দেখে নি। জোহরার স্তন গুলো সুন্দর। ঠিক যেম মাতৃত্বের ছায়া আছে সেই স্তনে কিন্তু সেই সাথে আকর্ষণীয়। নুসাইবার শহরে জিম করা বান্ধবীরাও এমন স্তন পেলে খুশি হয়ে যাবে। আর সেই স্তন দিয়ে টপ টপ করে সাদা পানির ফোটা। মাতৃদুগ্ধ। নুসাইবা এতদিন শুনেছে অনেকের কাছে যে কার কার অনেক বেশি দুধ হয় বুকে, হালকা চাপ দিলেই তখন নাকি সেই দুধ বের হয়। আজকে জোহরার স্তন যেন এতদিন শোনা সেই সব কথার স্বাক্ষ্য দিচ্ছে। জোহরা বাচ্চা কে স্তন চেঞ্জ করে দেয়। এইবার অন্য দুধটা তুলে নুসাইবা কে দেখায় দেখছেন আপা এইটা বাচ্চা খাওনের পর কেমন ছোট হয়ে গেছে। নিজের বোটা নিজে আংগুল দিয়ে মালিশ করে দিতে দিতে বলে। মাইয়াটা দুধ খাওনের সময় এমন কামড় দেয় না আপা, ব্যাথা কইরা ফেলায়। আংগুল দিয়ে মালিশ করতে করতে বলে ওর খাওনের পর একটু মালিশ না করলে আপা পারা যায় না। নুসাইবার কাছে এইসব কিছু নতুন। ওর দেখা শহরের মেয়েরা এইভাবে এইসব বিষয়ে কখনো কথা বলে নি। জোহরা যেভাবে সব করছে নুসাইবার মনে হয় যেন এইটাই স্বাভাবিক। জোহরা হঠাত করে বলে আপা আপনার ব্লাউজ তো ঢইলা ঢইলা পইরা যাইতেছে। আমার কাছে ব্লাউজের কাপড় আছে। মাইয়াটার খাওন হোক। এরপর আপনের মাপ নিমু নে। আজকেই আপনার ব্লাউজ বানায়ে দিমুনে। নুসাইবা মাথা নাড়ে।
Like Reply
মাহফুজ একটা চায়ের দোকানে বসে আছে। কাচা বাজার করা শেষ। সেইগুলা আমিনের পরিচিত এক দোকানে রাখা আছে। যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে। এর মাঝে আমিন মাহফুজ কে একটা মোবাইল ঠিক করার দোকানে নিয়ে গিয়েছিল। কারণ মাহফুজ জানতে চাইছিল এখানে পুরাতন ফোন কই কিনতে পাওয়া যাবে। মাহফুজের একটা ফোন দরকার। তবে নতুন ফোন কিনতে চাইছে না। পলিটিক্যাল অভিজ্ঞতা থেকে জানে মানুষের কাছ থেকে লুকায়ে থাকতে হলে পুরাতন ফোন কিনা ভাল, পুরাতন অন্য কার সিম ব্যবহার করা ভাল। আমিন তার পরিচিত এক মোবাইল ঠিক করার দোকানে নিয়ে গেছে। সেই দোকান থেকে আটশ টাকায় একটা পুরাতন একটা হুয়াইয়ের ফোন নিছে। ডিসপ্লের এক সাইড ভেংগে গেছে। বহু ব্যবহারে সারা মোবাইলে নানা দাগ পড়া। আর আমিন ওর পুরাতন একটা সিম দিছে। বলছে ভাইজান এইটা ব্যবহার করেন আপাতত। মাহফুজের এই ফোন দিয়ে আপাতত কোথাও ফোন করার ইচ্ছা নাই। ওর মেইন দরকার সিনথিয়া কে জানানো নুসাইবা সেফ আছে। নুসাইবা কে বাসা থেকে বের করে ইংল্যান্ড নেওয়ার প্ল্যান করার পর মাহফুজ সিনথিয়া কে পুরো ব্যাপারটা জানায়। পুরো মানে যতটুকু জানানো যায় আর কি। আরশাদ, ম্যানেজার আর মুন্সীর  এদের কান্ডকীর্তি। সব শুনে মাহফুজ এত বড় একটা রিস্ক নিবে এইজন্য কৃতজ্ঞ হয়ে যায় সিনথিয়া। ওদের ফ্যামিলির জন্য কত কিছু করছে মাহফুজ। আর সবাই কিনা এই মাহফুজ কে জামাই হিসেবে মেনে নিতে চায় না। নুসাইবার ইংল্যান্ড গিয়ে ভাইয়ের বাসায় উঠার কথা। সিনথিয়া ওর চাচাদের থেকে কাছেই থাকে। ওদিক থেকে সাফিনা অল্প বিস্তর নিজে যা জানে সেটা ওর দেবরদের বলেছিল যাতে ওরা নুসাইবার জন্য প্রস্তুত থাকে। ফলে এখন নুসাইবা প্লেনে না গেলে সবাই দারুণ চিন্তিত হয়ে পড়বে। মাহফুজ তাই এই ভাংগা ফোন আমিনের সিম দিয়ে অনেক কষ্টে নেট চালু করে। নেটের স্পীড অত ভাল না। ভাগ্য ভাল আগে এ ইউজ করত সে ফোনে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ডাউনলোড করে রেখেছিল। মাহফুজের একটা ফেক একাউন্ট আছে। যেটা সিনথিয়ার সাথে এড করা। মাহফুজ তার আসল একাউন্ট সিনথিয়ার সাথে এড করে নি, যাতে সিনথিয়ার ফ্যামিলির কেউ গোয়েন্দাগিরি করে ওদের সম্পর্কে কিছু জানতে না পারে। মাহফুজ অনেক কষ্টে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে লগ ইন করে ওর ফেইক একাউন্ট দিয়ে। লগ ইন করেই দেখে ম্যাসেঞ্জারে সিনথিয়ার চল্লিশটার মত ম্যাসেজ। তিন চারবার কলও করেছিল। দুই টা ভয়েস ম্যাসেজ। মাহফুজ চেক করে বুঝে নুসাইবার কোন খবর না জানায় ওরা চিন্তিত। মাহফুজ ওর উত্তর লিখবার আগেই দেখে সিনথিয়ার কল ম্যাসেঞ্জারে। কল রিসিভ করলেও কথা বলতে পারে না। সিংগাল দূর্বল। কথা ভেংগে ভেংগে যাচ্ছে। দোকানের মালিক বলে ভাইজান সামনের ঐ বটগাছটা দেখতেছেন না ঐটার কাছে যান। ঐখানে সিগনাল ভাল।


কয়েকবার চেষ্টার পর সিনথিয়ার সাথে কথা বলতে পারে মাহফুজ। সিনথিয়া সহ ওদের পুরো পরিবার চিন্তিত তবে ভয়ে কেউ কোথাও কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারছে না। কারণ নুসাইবা ওর ভাবীর মাধ্যমে পুরো পরিবারকে সতর্ক করে দিয়েছে ওর সম্পর্কে কোথাও যেন খোজ না নেয়, পুলিশে রিপোর্ট না করে ও যাবার পর। এত যারা ওর উপর নজর রাখছে তারা সতর্ক হয়ে যাবে। মাহফুজ সংক্ষেপে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে সিনথিয়ার সাথে কি হয়েছে। কেন প্লেনে উঠতে পারে নি ওর ফুফু। সিনথিয়া কে সব বললেও এক্সাটলি কোথায় আছে আর সেটা বলে না। সিনথিয়া বা ওর ফ্যামিলির নিরাপত্তার জন্য। সব শুনে সিনথিয়া শান্ত হয়। বলে ও বাকি সবাই কে জানাচ্ছে। তবে মাহফুজ বলে বাকিদের অত কিছু না জানাতে। খালি জানাতে নুসাইবা ভাল আছে। সুযোগ পেলে যোগাযোগ করবে। এবং কেউ জিজ্ঞেস করলেই যেন বলে মাহফুজ ওকে এর বেশি কিছু বলে নি। সিনথিয়া এর মাহফুজ কে বলে তোমার প্রতি আমার ভালবাসা দিন দিন আর বাড়ছে যান? মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে কেন? আমি কি আর হ্যান্ডসাম হয়ে গেছি? সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলে হ্যা সেটা তো হয়েছ তবে তুমি যেভাবে আমাকে প্রথম বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলে সেইটা আমাকে তোমার প্রেমে ফেলেছিল। আর এখন যেভাবে তুমি ফুফু কে রক্ষা করছ এটাতে আমার প্রেম আর বেড়ে যাচ্ছে। সুন্দর অনেক ছেলে আছে কিন্তু কতজন বল এইভাবে নিজের বিপদের ঝুকি নিয়ে প্রেমিকার পরিবারের লোকদের উদ্ধার করবে। কিভাবে তোমার কাছে যে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করব। মাহফুজ দুষ্টমি করে বলে দেশে আস, সব কৃতজ্ঞতা সুদে আসলে উসুল করে নিব। সিনথিয়া হেসে বলে কে উসুল করে দেখা যাব। এই কয়মাস নিজে নিজে উসুল করে আমার আর হচ্ছে না। দেশে আসতে দাও এরপর তোমাকে সাত দিন রুমে বন্দী করে রাখব। মাহফুজ হাসে। বলে জ্বী হুকুম মহারানী। সিনথিয়া এইবার দুষ্টমী করে বলে তোমার অবশ্য আরাম হয়েছে এখন। মাহফুজ সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করে কেন? সিনথিয়া বলে আমি না থাকলেও এক সুন্দরী তোমার কাছে আছে? মাহফুজ বলে কে? সিনথিয়া বলে নুসাইবা ফুফু। মাহফুজ বলে আরে কি যে বল না। সিনথিয়া মাহফুজ কে খোচাতে ভালবাসে, তাই বলে হ্যা হ্যা জানা আছে। নুসাইবা ফুফুর মত সুন্দরী মেয়ে দেখলে সব ছেলে জিহবা বের করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সিনথিয়ার কথার স্টাইলে হেসে দেয় মাহফুজ। সিনথিয়া বলে ছেলেরা সব কুত্তা হয়। মাহফুজ আমিও? সিনথিয়া বলে তুমিও তো কুত্তা, সবচেয়ে বড় কুত্তা। তবে আমার কুত্তা। মনে নাই তুমি একদিন ভিডিও চ্যাটের সময় যখন দুষ্টমি করতেছিলাম তখন কি বলছিলা? মাহফুজ বলে কি? সিনথিয়া বলে, বলছিলা যে নুসাইবা ফুফুর পাছাটা নাকি তোমার কাছে সেই রকম লাগে। আর তুমি আমার পাছা যে রকম আদর কর। এখন নুসাইবা ফুফুর এত কাছে তুমি তো ফুফুর পাছা চেটে চেটে গলায়ে দিবা পুরা। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে বাজে বকো না। সিনথিয়া বলে ফুফুর পাছায় ডগি দিতে সেরকম লাগবে তাই না? মাহফুজের মনের মধ্যে দৃশ্যটা ভেসে উঠে। এই বাজারের মধ্যে ওর বাড়া খাড়া হয়ে যায়। সিনথিয়া ঐদিক থেকে হাস্কি ভয়েসে বলে কি বাড়া খাড়া হয়ে গেছে আমার সোনার? উম্মা। দাড়াও দেশে এসে নেই সব রস শুষে নিব। এখন আমার ফুফু কে দেখে ঠান্ডা হও সোনা। মাহফুজ দেখে দূর থেকে আমিন আসছে এইদিকে। মাহফুজ বলে এখন রাখি। আবার দুই তিন দিনের মধ্যে ফোন দেবার চেষ্টা করব।



জোহরা নুসাইবার ব্লাউজের জন্য মাপ নিচ্ছে। মাপ নিতে নিতে বলে দেখেন আপা আপনার বুকটা কত সুন্দর। আপনের বয়স আমার থেকে বেশি তাও দেখেন কেমন উচা বুক। নুসাইবা কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। জোহরার মুখে যেন লাগাম নেই। তবে ভাল মানুষ। এখন ওদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছে তাই নুসাইবা কিছু বলে না। জোহরা বলে দেখেন আগামী মাসে বাপের বাড়ি যামু নে, তহন আপনার লাইগা মানত দিমু। দেখবেন এক বছরের মধ্যে আপনার কোলে বাচ্চা আইব। আর তহন এই বুক জোড়া আর ভারী আর উচু হইয়া যাইব। দেখবেন ভাইসাব বাচ্চার আগে আপনার দুধ খাইয়া ফেলাইতেছে। এই বলে হি হি করে হাসতে থাকে। নুসাইবা বলে কি যে বল জোহরা। জোহরা বলে কসম কাইটা কইলাম, ব্যাটা মাইনষের যে কি হাউস, দেহেন আমার তিন তিনটা পোলা মাইয়া হইল প্রত্যেকবার ব্যাটায় এক কাম করে। বাচ্চাগো লগে হে নিজেও দুধ টানে। আমি তো কইছি তুমি তোমার বাচ্চাগো দুধ ভাই। এই বলে হাসতে থাকে জোহরা। জোহরার এই জোক্সে এমন একটা সারল্য ছিল যাতে নুসাইবাও না হেসে পারে না। জোহরা হাসতে হাসতে বলে সত্যি কইতেছি আপা। আপনে যেমন সুন্দরী বাচ্চা হইলে আপনার এই দুধ জোড়া পুরা গাভীর উলান হইয়া যাইব। ভাইসাব পাগল হইয়া যাইব কইয়া দিলাম। জোহরার কথার ভংগিতে না হেসে পারে না নুসাইবা আবার মাহফুজ কে ওর স্বামী ভেবে এইসব বলছে এতে অস্বস্তিও হয়। নুসাইবা কথা অন্যদিকে ঘুরায়ে বলে আজকে রান্না বান্না করবা না। আমিও হেল্প করব তোমারে। জোহরার হঠাত মনে পড়ে রান্না এখনো হয় নায়। জোহরা বলে চলেন আপা, আপনার মাপ নেওন হইয়া গেছে। দুপুরে খাওনের পর আপনার ব্লাউজ কইরা দিমু নে।
Like Reply

রাত আটটা বাজে। আগামীকাল ভোরে আমিন আবার কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যাবে কয়েকদিনের জন্য। তাই আজকে সন্ধ্যা হতেই রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছে সবাই। আমিন কে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। ভোরে ভোরে বের হয়ে পড়বে। খাবার শেষ হতেই নুসাইবা এক ধরনের টেনশনে পড়ে গেছে। আজকে ওকে আর মাহফুজ কে এক রুমে থাকতে হবে। হাজব্যান্ড আর ওয়াইফ এক রুমে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। গতকাল রুম গোছানো ছিল না তাই সেই সুযোগ নিতে পেরেছে। আজকে কোন উপায় নেই। এর মধ্যে জোহরা কথায় কথায় কয়েকবার বলে ফেলেছে যে আমিন প্রতিবার কাজে যাবার আগের রাতে ওকে আদর করতে পছন্দ করে। নুসাইবা তাই কোন উপায় খুজে পায় নি যাতে মাহফুজ আর ওকে একসাথে এক রুমে থাকতে হয়। মাহফুজ ওকে অনেক উপকার করলেও ঠিক এক রুমে রাতে থাকালে কি হবে সেইটার উপর ভরসা করতে পারছে না ও। মাহফুজ কি করবে ঠিক নেই। আর আরেকটা কথা স্বীকার না করলেও ও জানে মাহফুজের আক্রমণের মুখে ও কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবে। তাই নিজের উপর নিজেই ভরসা করতে পারছে না। আমিনের বাড়ি আসলে একটা লম্বা টিনের ঘর। একদম এক সাইডের একটা রুম হল আমিন জোহরার মেইন বেডরুম যেখানে নুসাইবা গতকাল জোহরার সাথে ছিল। মাঝে একটা রুম স্টোর রুম টাইপ। তার পাশের রুমটা জোহরা আর আমিনের ছেলেরা আসলে থাকে। তবে ঐ রুমটার জানলা গত কয়দিন আগে ঝড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই হাওড় পাড়ের বাড়ীতে এই রুমে এখন থাকা সম্ভব না। কারণ রাতে বাতাস ঢুকে প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে যায়। আর বাকি থাকে আরেকটা রুম সেইটা একদম আরেক প্রান্ত ঘরের। ফলে মাহফুজ আর নুসাইবা যে রুমে থাকবে সেইটা আমিন জোহরার রুম থেকে একদম আরেক প্রান্তে। সররাসরি এক রুম থেকে অন্য রুমে যাবার উপায় নাই। মাঝখানের দুইটা রুম কানেক্টড থাকলেও। এই দুই সাইডের দুই রুমে একটাই দরজা যেইটা সরাসরি বারান্দায় আসে। নুসাইবার টেনশন বাড়ছে। বেশি টেনশন হলে ওর পা ঘামে। সেইটা হচ্ছে। বেশ ভাল শীত সন্ধ্যার পর থেকে। তার উপর আজকে হালকা বাতাস আছে। সেই বাতাস হাওড় পাড়ে গা কাপুনি ঠান্ডা দিচ্ছে। তাই বারান্দা থেকে ভিতরে ঢুকতে হল। এখনো সোলার লাইটের আলো আছে। জোহরা রান্না ঘরের জিনিস গুলা গুছিয়ে নিচ্ছে। আমিন মেয়েটারে কোলে নিয়ে হাটতেছে। বাচ্চাটা আমিনের ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। মাহফুজ দৃশ্যটা দেখে। বাবার কোলে মেয়ে ঘুমিয়ে আছে, একটু দূরে মা রাতের খাবারের পর মা রান্নাঘরটা গুছিয়ে নিচ্ছে ঘুমের আগে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ফ্যামিলির চিরন্তন দৃশ্য।



মাহফুজ ওদের রুমের দরজায় এসে দাঁড়ায়। ভিতরে নুসাইবা খাটের এক কোণায় বসে আছে গায়ে শাল জড়িয়ে। রুমের মাঝখানে সোলার লাইটের একটা সাদা বাল্ব। পুরো রুমটার ভিতরে অন্ধকার দূর করতে পারছে না লাইটটা। তাই রুমের কোণায় কোণায় যেন অন্ধকার ঘাপটি মেরে আছে। নুসাইবা কে এই তাতের শাড়িতে ঝাপসা আলোর ভিতরে শাল জড়ানো গায়ে যেন অন্য রকম লাগছে। কিছুটা অপিরিচিত। নুসাইবা খাটের কোণায় বসে আছে কনফিউজড। খাটের পাশে একটা টেবিল। টেবিলের উপর একটা প্লাস্টিকের টেবিলক্লথ। জোহরা একটু আগে একটা প্লাস্টিকের জগ আর একটা পানির গ্লাস রেখে গেছে টেবিলে। নুসাইবার কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ওদের কে হাজব্যান্ড ভেবে এই রুম দেওয়া হয়েছে। এখন মাহফুজ কে অন্যখানে থাকতে বলার বা নিজে অন্য খানে যাবার উপায় নেই। এমনকি মাটিতেও শোয়ার উপায় নেই। যথেষ্ট ঠান্ডা চারপাশে। মাটিতে শুলে সকালে উঠে নিউমনিয়া বেধে যাবে। খাটটা এমন কোন বড় নয়। তাই দুইজন খাটের দুইপাশে শুবে আর মাঝখানে বালিশ দিয়ে বা অন্য কিছু দিয়ে একটা বিভাজন করবে সেই উপায় নেই। পাশাপাশি দুইজন মানুষ শুলে এখানে শরীর স্পর্শ করবেই। মাহফুজ রুমের ভিতর ঢুকে। নুসাইবার মুখ কাছে আসতে স্পষ্ট হয়। নুসাইবার মুখে এক ধরনের দ্বিধান্বিত ভাব। মাহফুজের মনে হয় আজকাল নুসাইবা কে আর ভাল করে বুঝতে পারছে ও। নুসাইবার মুখে কনফিউজড লুকের কারণ যেন বুঝতে পারে মাহফুজ। দুই জনকে এক বিছানায় শুতে হবে। মাহফুজের মনের ভিতর একটা উল্লাস তৈরি হয় আবার নুসাইবার জন্য এক ধরনের মায়াও হয়। ওর মনে হয় ওকি নুসাইবার সাথে বেশি বেশি করে ফেলছে নাকি? মাহফুজ একটা জিনিস নিয়ে সব সময় গর্বিত ছিল। মেয়েদের কে জিতে নেবার ক্ষমতা। অনেক মেয়ের সাথে শুয়েছে ও। তবে কাউকে জোর করে নি। কিন্তু নুসাইবার সাথে ওর ব্যাপার গুলো কে কি বলা যায়? নুসাইবার মনে হয় মাহফুজের সাথে ওর ভাগ্য এখন এমন ভেবে আটকে গেছে যে চাইলেও অনেক কিছু বলা যাবে না অনেক কিছু করা যাবে না। ছেলেটা ওকে সাহায্য করার জন্য লাইফ রিস্ক  নিয়েছে সেইটা অস্বীকার করা যাবে না। যতই ড্রিংক করা হোক বা ফ্লোরার দোকানে ফ্লোরার কারণে হোক বা গাড়িতে হঠাত ঝড়ের  মত উত্তেজনায় হোক সব ক্ষেত্রে ওর বডি একটা রিএকশন দিয়েছে। পজিটিভ রিএকশন। এটাও ওর জন্য কনফিউশনের ব্যাপার। এমন আর কখনো হয় নি। সুন্দর ছেলেরা সারাজীবন ওর পিছনে ঘুরেছে কিন্তু কখনো তেমন পাত্তা পায় নি। ওর কাছে ছেলেদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় গুণ ছিল কতটা আস্থার। আরশাদ কে পাত্তা দেবার প্রথম কারণ ছিল সেইটাই। যদিও এখন বুঝতে পারছে বছরের পর বছর ওকে কিভাবে বোকা বানিয়েছে আরশাদ। ভালবাসার মানুষের জন্য রিস্ক নেবার প্রবণতা, বাকি সবার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা আরেকটা বড় গুণ ছেলেদের নুসাইবার চোখে। ওর যখন বাচ্চা হচ্ছে না তখন আরশাদ যে ওর নিজের ফ্যামিলি আর সোসাইটির রক্ষচক্ষুর সাথে লড়াই করেছিল সেইটা আরশাদের প্রতি ওর ভালবাসা আর গভীর করার কারণ। কোন মেয়ে না সাহসী লয়াল ছেলে পছন্দ করে। মাহফুজের মাঝে যেন এইসব গুণ এসে জমা হয়েছে। সিনথিয়া খালি হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে নি সাথে সাথে সাহসী আর লয়াল একটা ছেলে পছন্দ করেছে। লয়াল শব্দটা মাথায় আসতেই হাসি আসে নুসাইবার। সিনথিয়ার প্রতি এত অনুগত থাকলে আবার ওর প্রতি কেন এই অবাধ্য আকর্ষণ মাহফুজের। সব ছেলেরাই কি একরকম? ঘরের খেয়ে বাইরেরটাও খেতে চায়?


মাহফুজ টেবিলের সামনে রাখা নড়বড়ে চেয়ারে বসে। জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার হাসছ কেন? নুসাইবা বলে অন্তত ঘরের ভিতর আমাকে আপনি বলতে পার না? মাহফুজ বলে নো, এখানে আমাদের অনেক বড় জিনিস বাজি লাগাতে  হচ্ছে, আমাদের প্রাণ। ভুলের কোন জায়গা নেই। রুমের ভিতর আপনি ডেকে হঠাত করে রুমের বাইরে তুমি বলতে গিয়ে যদি গোলমাল পাকিয়ে ফেলি। নুসাইবার কাছে কোন এন্সার নেই। মাহফুজ বলে ধরে নেন আমরা মেথড এক্টর। অভিনয়টাকেই জীবনের অংশ করে ফেলেছি। নুসাইবা বলে তুমি মেথড এক্টিং চিন তাহলে? গলায় একটা বিস্ময়ের ভাব। মাহফুজ বলে দেখলেন সকালে আপনাকে দেমাগী বলায় রাগ করলেন কিন্তু তোমার ভিতরে সুক্ষ একটা অহংকার সব সময় আছে, যেন বাকি সবার থেকে একটু হলেও ভাল। মেথড এক্টিং চিনব না কেন। কি মনে হয় তোমার সিনথিয়া আমাকে খালি চেহারা দেখে পছন্দ করেছে। নুসাইবা বলে তোমার কথা যখন সিনথিয়া প্রথম বাসায় বলে তখন ও তোমার চেহারার এত প্রশংসা করেছিল আমরা সবাই ভেবেছি একটা সুন্দর কোন চালবাজ ছেলের পাল্লায় পড়েছে সিনথিয়া। মাহফুজ হাসতে থাকে। দম খোলা হাসি। নুসাইবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে এতে হাসার কি হল? মাহফুজ বলে এই প্রথম তুমি কোন সত্য কথা বললে। খাটি সত্য, যেই সত্যের পিছনে কোন এংগেল লুকানো নেই। আমার সম্পর্কে সিনথিয়ার ফ্যামিলি কি ভাবে সিনথিয়ার কাছ থেকে কিছুটা শুনেছি তবে নিজের ফ্যামিলিকে তো সরাসরি কেউ খারাপ বলে না তাই ও সব সময় রেখেঢেকে বলে। আমি আন্দাজ করেছিলাম আমার সম্পর্কে ওর ফ্যামিলির কমেন্ট গুলা এর থেকে ভয়ংকর হবে। আজকে তুমি সেইটাই প্রমাণ করলে কিন্তু সত্য বলার জন্য থ্যাংক্স। নুসাইবা বুঝে ওকে এক প্রকার চালবাজ বলেছে মাহফুজ, যেন ওর সব কথার পিছনে একটা এংগেল থাকে। মন খুলে কিছু বলে না। একটু আহত হয় নুসাইবা, এত খারপ কি ও? মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করে তোমার কি মনে হয় আমি আসলেই এমন? মাহফুজ একটু ভাবে। বলে আপনি নিজেও ভাব। আমি যখন প্রথম গেলাম ভার্সিটিতে ক্যারিয়ার ক্লাবে মোটিভেশনাল স্পিচ দেওয়ার জন্য তখন কেন রাজি হয়েছিলেন, নিজেদের প্রসার হবে তাই। আমি সিনথিয়া কে ভালবাসি জানার পর এবং তুমি এই বিষয়ে রাজি না সেটা জেনেও আমাকে ডেকেছ পিকনিক আয়োজনের দ্বায়িত্ব দিতে। এরপর এক মেয়ে কে নিয়ে আসলে যাতে আমি তার প্রেমে পড়ে সিনথিয়া কে ছাড়ি। আরশাদ সাহেবের কূকীর্তি যখন পত্রিকায় আসল তখন আবার আমার শরনাপন্ন হলে। কেন? কারণ তোমার মনে হয়েছে এইসব খবর বের করার আসল লোক আমি। ফটোশূট্যের পর আমাকে বকাঝকা করে চলে গেলে কিন্তু তারপরেও আবার ফেরত আসলে। ঠিক তেমন ভাবে ফ্লোরার দোকানের পর আবার আমার কাছে ফেরত আসলে কেন? মুন্সী আর ম্যানেজার থেকে বাচতে। এইসব যদি তুমি দেখ কেউ করছে তাহলে তুমি তাকে কি ভাববে? নুসাইবা দেখে মাহফুজের কথায় লজিক আছে। এইভাবে ভেবে দেখে নি। আসলেই মনে হচ্ছে বারবার যেন স্বার্থের জন্য মাহফুজ কে ব্যবহার করছে ও। এর মধ্যে বাইরে জোহরা আর আমিনের জোরে জোরে কথার শব্দ আসে। কিছু একটা নিয়ে দুই জনের তর্ক হচ্ছে।
Like Reply
মাহফুজ আর নুসাইবা দুইজনে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। বেশ ভালভাবে তর্ক হচ্ছে জোহরা আর আমিনের। সাংসারিক মানুষদের ঝগড়া। কি বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছিল সেটা এখন আর ব্যাপার না বিবাহিত জীবনে দুইজন দুইজনের সব দোষ টেনে এনে ঝগড়া করে যাচ্ছে। মাহফুজ চিন্তিত মুখে দেখছে। নুসাইবা মাহফুজের মুখ দেখে বলে চিন্তা করার কিছু নেই। বিবাহিত জীবনে এমন হয়। এইভাবে তাকিয়ে থাকা ঠিক না। চল আমরা ভিতরে গিয়ে বসি। মাহফুজ আর নুসাইবা আবার রুমের ভিতরে ঢুকে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে তোমার সংসারেও কি এমন হয়? নুসাইবা হ্যা সূচক মাথা নাড়ে। সব সংসারেই হয়। তবে আমাদের ঝগড়ার সময় আমি বেশি বলি আরশাদ খুব কম বলে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে এই জন্য কি আরশাদ সাহেব কে এমন অন্ধের মত বিশ্বাস কর? নুসাইবা ভাবে। এরপর বলে হ্যা এটাও একটা কারণ অনেক কারণের মধ্যে। মাহফুজ বাইরে থেকে ভেসে আসা তর্কের দিকে ইংগিত করে বলে দুইজন সমান তালে তর্ক করলেও কিন্তু ভালবাসা থাকে। জোহরা আমিন কে দেখলে আমার কিন্তু মনে হয় ওদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আছে, গভীর ভালবাসা আছে। নুসাইবা বলে আজকাল আমি ভালবাসা ব্যাপারটা নিয়ে সন্দিহান। সারাজীবনে আমি একটা লোককে ভালবেসেছি। কত কত প্রেমের প্রস্তাব।  বিয়ের আগে বা পরে কিন্তু কখনো আমাকে কেউ টলাতে পারে নি। কিন্তু আমার এই অন্ধ প্রেম কি দিল বল? মাহফুজ বলে ভালবাসার উপর আমার এখনো বিশ্বাস আছে। নুসাইবা হেসে বলে, তাহলে তুমি আমার সাথে কি করছ? মাহফুজ বলে সিনথিয়া কে ভালবাসি বলেই তো তোমাকে উদ্ধার করার রিস্ক নিলাম। নুসাইবা যেন অনেকক্ষণ মাহফুজ কে কোণাঠাসা করার একটা সুযোগ পেল। বলল সিনথিয়া কে যদি এত ভালবাস তাহলে আমার সাথে যা যা করেছ তার মানে কি? মাহফুজ চুপ করে থাকে। বাইরে থেকে জোহরা আমিনের তর্কের স্বর ভেসে আসে। আমিনের বোন কোন কালে জোহরা কে কিছু একটা খোচা দিয়েছিল আমিনের সামনে তখন আমিন  এর প্রতিবাদ করে নি তাই নিয়ে। মাহফুজ নিজেও নুসাইবার প্রশ্নটা ভেবেছে কিন্তু এর উত্তর নেই ওর কাছে। চুপ করে থাকে। নুসাইবা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। নুসাইবা নিজেও আসলে মাহফুজের উত্তর শুনতে আগ্রহী। ঝিঝিপোকা ডাকছে বাইরে। মাঝে মাঝে বাতাসের কারণে গাছের পাতা নড়ার শব্দ আসছে।  মাহফুজ ঘরের এক কোণায় ঝাপসা অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে। এই প্রশ্নের উত্তর টা ঠিক এই কোণার ঝাপসা অবস্থার মত। উত্তর টা জানি জানি মনে হলেও আসলে জানে না ও। মাহফুজ সত্য উত্তর দেয়। বলে জানি না। নুসাইবা বলে তাহলে এর একটাই ব্যাখ্যা। কাম। আরশাদের আচরণের যেমন একটাই ব্যাখ্যা কামের তাড়না ঠিক তোমার আচরণের একটাই ব্যাখ্যা কামের তাড়না।



আরশাদের সাথে ওর সরাসরি এমন তুলনায় রাগ হয় মাহফুজের তবে যুক্তি দিয়ে নুসাইবা কে কাউন্টার কিছু বলতে পারে না। মাহফুজ তাই পালটা আক্রমণে যায়। বলে তাহলে তোমার আচরণ কে কি বলবে? নুসাইবা সেলফ ডিফেন্সে যায়, বলে আমি কি করেছি। মাহফুজ বলে ফটোশুট্যের সময় কি হয়েছিল মনে নেই? কিভাবে ছবি তুলেছিলে? আর শেষে কি হয়েছিল? নুসাইবা বলে কি হয়েছিল। আরশাদের সাথে তুলনায় ক্ষেপে থাকা মাহফুজ যেন নুসাইবাকেও নিজের কাতারে নামাতে চায়। বলে, কেন অর্গাজম হয়েছিল সেটা মনে নেই। মাহফুজ এইভাবে সরাসরি বলাতে হকচকিয়ে যায় তবে খুব একটা অবাক হয় না। ছেলেটার সাহস আছে বলতে হবে। নুসাইবা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে আমি সেইদিন গিয়েছিলাম আরশাদ কে জেলাস করারবার জন্য ছবি তুলতে তাই যেমন যতটা বোল্ড ছবি তোলা যায় তাই তুলেছি। আর পরে যেটা বললে সেটা ড্রিংকের জন্য হয়েছে। মাহফুজ বলে সেই ড্রিংক তো আমি আনি নি। তুমিও এনেছিলে ব্যাগে করে, তাই আবার বলো না আরশাদ সাহেবের মত প্ল্যান প্রোগ্রাম করে মেয়ে পটাতে যাই। নুসাইবা মাহফুজের খোচাটা টের পায়। বলে আমার খুব একটা ড্রিংক সহ্য হয় না তাই ঐদিন যা হয়েছে সেটাতে আমার দোষ নেই। মাহফুজ বলে তাহলে আমার দোষ থাকবে কেন? ভুলে গেছ, আমিও তোমার ব্রান্ডির বোতল থেকে নিয়ে খেয়েছিলাম। নুসাইবা ভুলে নি তাই কিছু বলে না। মাহফুজ বলে তুমি যেমন ড্রিংক করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলে আমিও সেদিন ড্রিংক করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি। নুসাইবা টের পায় মাহফুজের কথায় যুক্তি আছে। ঐদিন দুইজনেই সমানদোষী এইভাবে দেখলে। দুইজনেই চুপচাপ। বাইরে ঝিঝিপোকা আর বাতাসের শব্দ। কথায় কথায় অনেক সময় হয়েছে। সোলার লাইটের আলো কমে আসছে। হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে পাচ দশ মিনিটের মধ্যে। বাইরে থেকে এখনো জোহরা আমিনের ঝগড়ার শব্দ আসছে। ঝগড়া এখন আমিন বিয়ের আগে কোন মেয়ের সাথে প্রেম করার চেষ্টা করেছিল সেই টপিকে আছে। মাহফুজ জোহরার কথা গুলো শুনতে পায়। মনে মনে ভাবে সব মেয়েরা কি এক রকম করে যুক্তি দেয়। আমিনের যুক্তি কানে আসে নুসাইবার। ওর মনে হয় ছেলেরা কি মেয়ে দেখলে চুপ থাকতে পারে না।



চুপচাপ আমিন জোহরার ঝগড়া শুনতে শুনতে হঠাত করে আলো নিভে যায়। সোলারের চার্জ শেষ। অন্ধকার ঘরে মুখোমুখি বসে থাকে দুইজন। কোন কথা নেই। ঝিঝিপোকা,বাতাস আর তর্কের শব্দ শুধু চারপাশে। এইসব নিয়ে নুসাইবা মাহফুজের মাথার ভিতর নানা চিন্তা, যুক্তি চলতে থাকে। নুসাইবার দৃষ্টিতে এতদিন মাহফুজের সাথে যা হয়েছে সব কিছু মাহফুজের কারণেই হয়েছে। ও ইনোসেন্ট। কিন্তু ফটোশুট্যের ঘটনায় মাহফুজ যেভাবে ব্যাখ্যা করল সেটাতে নুসাইবা বুঝে মাহফুজ নিজেও ঐদিন ড্রিংকের কারণে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল ওর মত। তাই সেইদিন ও আর মাহফুজ দুইজনেই সমান ভাবী ঘটনার জন্য দায়ী। কিন্তু নুসাইবা যেন মানতে পারে না। ওর আইন্ডেটিটির একটা বড় অংশ সব সময় লয়ালটি। আরশাদ বাইরে যাই করুক নুসাইবা তো এর আগে কিছু করে নি। তাই মাহফুজের যুক্তির মুখে যখন ফটোশুট টিকল না তখন সেটা ওর জন্য বড় ধাক্কা। নুসাইবা তাই অন্ধকারে প্রশ্ন করে ফ্লোরা হাসানের দোকানের ঘটনা টা কে তাহলে কি বলবে? সেখানে তো তুমি মাতাল ছিলে না। ফ্লোরা হাসান বলল আর তুমি অমনি আমার শরীরে হাত দিলে? আমাকে সাহায্য করবার থেকে সেখানে তোমার কাছে তোমার কামনা বাসানা প্রধনা হল। নাহলে প্রেমিকার ফুফুর শরীরে সুস্থ মাথায় কেউ ঐভাবে হাত দিতে পারে? বাইরে আমিন আর জোহরার ঝগড়ার শব্দ কমে এসেছে। মাঝে মাঝে থমকে থমকে দুই জনের কেউ একজন কিছু বলছে বাকিজন একটু অপেক্ষা করে উত্তর দিচ্ছে। মাহফুজ কি উত্তর দিবে? কিভাবে নিজেকে আরশাদের সমকক্ষ হওয়া থেকে বাচাবে। মাহফুজ নিজের ভূমিকা নিয়ে ভাবে সেইদিন। অর্ধ সত্য বলবে বলে ঠিক করে। বলে ফ্লোরা হাসানের ঐখানে আমার কি ভূমিকা ছিল বল। ফ্লোরা  হাসানের সাথে তুমি সরাসরি কথা বলতে চেয়েছিল আমি ব্যবস্থা করে দিলাম। তুমি আন্ডারগার্মেন্টস এর ক্রেতা সেজে গেলে আর আমি তোমার হাজব্যান্ড। সেখানে ট্রায়াল রুমে কি হল সেটা আমি কিভাবে জানব। ফ্লোরা হাসানের সাথে তোমার কি কথা হয়েছে সেটা তো আমার জানা নেই। আমাকে যখন ভিতরে ডেকে নিয়ে গেল তখন তুমি যে ব্রা প্যান্টি পড়ে দাঁড়িয়ে ছিলে সেটা কি আমার দোষ নাকি আমি তোমার কাপড় খুলে নিয়েছিলাম। নুসাইবা ভাবে মাহফুজের কথায় যুক্তি আছে। তবে নুসাইবা হার মানে না,  বলে তাহলে ঢুকে কেন অন্যদিকে ফিরে তাকাও নি। চলে যাও নি সেই রুম থেকে। নুসাইবার গলায় ঝাঝ। অনেকক্ষণ ধরে জোহরা আর আমিনের ঐদিক থেকে আর কোন শব্দ আসছে না। খালি এখন ঝি ঝি পোকার শব্দ।


নুসাইবা খাটের কোণায় বসা আর মাহফুজ চেয়ারে। পুরো ঘর অন্ধকার। অনেকক্ষণ অন্ধকারে বসে থাকলে চোখ অভ্যস্ত হয়ে যায়। অন্ধকারে অভ্যস্ত চোখে মাহফুজ নুসাইবার অবয়ব বুঝতে পারে যেন। অন্ধকার যেন ওদের কথোপকথনে সাহায্য করছে। যে কথা আলোতে বলা যায় না সে কথা অন্ধকারে অবলীলায় বলে ফেলা যায়। নিজেদের মনের ভিতর জমে থাকা দ্বিধা সংশয় নিয়ে যেন মাহফুজ আর নুসাইবা পরষ্পর কে প্রশ্ন করছে যার উত্তর ওদের নিজেদেরও জানা নেই। আলোতে যে সত্য স্বীকার করা যায় না সহজে সেই সত্য বলে দেওয়া যায় অন্ধকারে। মাহফুজ তাই বলে ফ্লোরা হাসানের দোকানের সেই ট্রায়াল রুমে ঢুকে সেইদিন আমি আসলে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এমন কিছু দেখব আমি ভাবি নি কখনো। মেরুন রঙ্গে কাউকে এত সুন্দর লাগতে পারে ভাবি নি আমি আগে। সিনথিয়ার আগেও আমার প্রেমিকা ছিল। সিনথিয়াও দারুণ সুন্দর তবে সেইদিন আমি যা দেখেছি সেটা যেন আমার মাথায় গেথে গেছে সারা জনমের জন্য। মেরুন কালারের সেই ব্রা প্যান্টিতে আপনাকে স্বাক্ষাত দেবী লাগছিল যেন। যে দেবী কে খালি পূজা নয় বরং হাত দিয়ে ধরে দেখতে হয়। তোমার  ফিগার ভাল সেইটা সব সময় বুঝেছি তবে সেইদিন যেন সত্যি সত্যি টের পেলাম তোমার ফিগার কতটা ভাল। আরশাদ সাহেব কে সেইদিন হিংসা হয়েছিল। এমন একটা দেবী খালি তার জন্য পাগল। আর ভেবেছিলাম কতটা লুজার লোকটা এমন দেবীর অর্ঘ্য ফেলে কোথায় না কোথায় ঘুরে বেড়ায়। নুসাইবা হিস হিস করে বলে যদি দেবীই ভেবেছিলে তবে শরীরে হাত দিয়েছিলে কেন। মাহফুজ এইবার সংগে সংগে বলে কেন বললাম না তোমাকে এমন দেবী মনে হয়েছিল যাকে স্পর্শ করে অর্ঘ্য দিতে হয়। আর সেই সময় ফ্লোরা হাসান যখন তোমাকে স্পর্শ করতে বলল তখন স্পর্শ না করে তাই আর পারি নি। সেই দিনও আসলে আমি মাতাল ছিলাম। তোমার সৌন্দর্যে। তাই আগের বারের মত সেইদিন এরপর কি কি করেছি সব আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। নুসাইবা বুঝে পায় না বয়সে ছোট এই ছেলের সৌন্দর্যের প্রশংসায় খুশি হবে নাকি ওর স্পর্ধায় রাগ করবে। কি অবলীলায় নিজের মনের কথা গুলো বলছে মাহফুজ। সব সময় হিসেব করে ভবিষ্যত ভেবে কথা বলা নুসাইবার জন্য  এইটা অচিন্তনীয়। তবে আজকে এই অন্ধকার যেন ওর সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। নুসাইবা তাই বলে এই জন্য বুজি প্রেমিকার ফুফুর শরীরের গোপন জায়গায় হাত দিতে হবে। মাহফুজ বলে প্রেমিকার ফুফু নাকি প্রেমিকার মা সেইটা তখন আমার মাথায় ছিল না। আমি খালি তোমার সৌন্দর্য তখন গিলছি আর মাতাল হচ্ছি। কেউ তোমাকে বলে নি কখনো? কি সম্পদ লুকিয়ে রাখ তুমি তোমার কাপড়ের তলে? এটাতে পাগল না হলে মানুষ জন্ম তো বৃথা। আমাকে যত চাও দোষ দিতে পার তবে মনে রেখ তোমার কাপড় আমি খুলি নি, ট্রায়াল রুমে আমি নিজের ইচ্ছাতে আসি নি। এমন কি ফ্লোরা হাসান যখন তোমার শরীরে হাত দিতে বলল তখন তুমি মানা কর নি। নুসাইবা জানে এর প্রতিটা কথা সত্য। নুসাইবা বলে সেই মূহুর্তে আমি আসলে আমাদের নিজেরদের বানানো গল্পের ফাদে আটকা পড়ে গিয়েছিলাম। যদি তোমাকে মানা করি আর ফ্লোরা টের পায় আমি আসলে কে তাহলে ওতো সত্যি সত্যি আরশাদ কে বলে দিবে। মাহফুজ বলে তাহলে সেখানে আমার দোষ কোথায় বল। আমি তো খালি তোমার কথাই মেনেছি। আর তোমার শরীর কিন্তু অন্য কথা বলেছিল সেইদিন। যেইভাবে বীণার তারের মত ঝংকার তুলেছিল শরীর তাতে মনে হয় নি তুমি মানা করছ বরং মনে হয়েছিল উপভোগ করছ সব। নুসাইবা চুপ হয়ে যায়। আমিন জোহরার কোন শব্দ নেই। ঘুমিয়ে গেছে ওরা হয়ত।
Like Reply
নুসাইবা অন্ধকারে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে তাহলে আমাদের আসার সময় গাড়িতে কি হয়েছিল? আমি কৃতজ্ঞতায় যেখানে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি সেই স্পর্শ কে তুমি অপবিত্র করে দিয়েছিলে তোমার নোংরা ইচ্ছা দ্বারা। মাহফুজ বলে ভুল। আমি তোমাকে যখন স্পর্শ করি তখন পর্যন্ত আমি কিছু ভাবি নি। বরং এত বড় একটা রিস্কি অপারেশন সফল করে তোমাকে বের করে আনাতে পারার জন্য এক ধরনের এন্ড্রোলিন রাশ হয়েছিল। কিন্তু যেই মাত্র তোমাকে স্পর্শ করলাম তখন সব পালটে গেল। আমার মনে হল আর একটু পর তুমি দেশের মাটি থেকে চলে যাবে। আর কবে দেখা হবে বা হবে না জানি। ফ্লোরা হাসানের দোকানে তোমাকে স্পর্শ করার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। মনে হল আর কোন দিন যদি দেখা না হয়। তোমাকে স্পর্শ করলেও চুমু খাওয়া হয় নি। তাই ঝোকের বশে চুমু খেলাম। এরপর আবার মাতাল। তোমার মধ্যে কিছু একটা আছে যেইটা মাতাল করে দেয় বুঝলে। নুসাইবা অন্ধকারে হাসে। সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছে যেন ছেলেটা। মাহফুজ বলে এরপর সব ঠিক আগের মত। মাতাল যেমন রাস্তায় হাটার সময় হাটে কিন্তু ঠিক জানে না কিভাবে হাটছে আমিও তারপর সব করেছি ঠিক সেইভাবে। তোমার শরীরের ঘ্রাণ, স্পর্শ সব যেন মস্তিষ্কে গেথে নিচ্ছিলাম যাতে আর পরে কোনদিন দেখা না হলেও মাথায় গেথে থাকে সব। যেন সেই স্মৃতি রোমান্থন করে কাটিয়ে দেওয়া যায় জীবন। এইভাবে কোন দিন ওকে কেউ বলে নি। তাই নুসাইবা রাগতে চাইলেও ঠিক রেগে উঠতে পারে না। সিনথিয়া কেন এই ছেলের জন্য পাগল তা যেন খানিকটা বুঝে উঠতে পারে। যেইভাবে নুসাইবার প্রতি নিজের অনুভূতি জানাল তাতে নুসাইবার গায়ের রোম কাটা দিয়ে উঠে। চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ দুইজন। সেই নীরবতায় গান গায় খালি ঝিঝিপোকা। গত কয়েক মাসে অনেক গুলো ঘটনায় কাছে আসতে হয়েছে দুইজনকে। যেভাবে অনেক সময় অনেক কাপল বছরের পর বছর সংসার করার পরেও কাছে আসতে পারে না। তাই অন্ধকারে যেন পরষ্পর কে বুঝে নিতে চায় দুইজন।


নুসাইবা সিনথিয়া নিয়ে প্রশ্ন করে মাহফুজ কে। সিনথিয়ার সাথে কিভাবে পরিচয়, কিভাবে প্রেম, কতটুকু ভালবাসে সিনথিয়া কে। মাহফুজের হৃদয়ের অন্য দরজা যেন খুলে যায়। গড়গড় করে বলে যেতে থাকে মাহফুজ। নুসাইবা শুনে বুঝতে পারে এই কথা গুলোতে কোন খাদ নেই। ঠিক যেমন একটু আগে ওর সম্পর্কে নিজের মনের কথা বলেছে ঠিক সেইভাবে সিনথিয়া সম্পর্কে নিজের মনের কথা, ভালবাসার কথা বলছে। কনফিজড হয়ে যায় নুসাইবা। ঠিক কিভাবে দুইজন মানুষ সম্পর্কে এত গাড় আবেগ পুষে রাখা যায় বুকের ভিতর। তবে মাহফুজ কে কোন ডাউট দেয় না শুনে যায়। আজকে রাতটা যেন অনেক ডাউট ক্লিয়ার করার। এরপর মাহফুজ প্রশ্ন করে আরশাদ সম্পর্কে। কিভাবে ওদের প্রেম, ভালবাসা, সংসার। সব বলে নুসাইবা। প্রেম থেকে সংসার। কতটা ডেডিকেটেড আরশাদ সংসারে। কিভাবে ওদের বাচ্চা না হবার সময় আরশাদ মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে। মাহফুজ অবাক হয় যে আরশাদের কথা বলছে নুসাইবা সেই একই আরশাদ জুয়া খেলে, পরনারীতে আসক্ত? মাহফুজ জিজ্ঞেস করে এখন কি ভাব ওর সম্পর্কে? নুসাইবা চুপ হয়ে থাকে প্রায় এক মিনিট। নীরবতা যেন সত্য টা বলে দেয়। নুসাইবা এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছে। আরশাদ কে কি ও আর একবার সুযোগ দিবে নাকি দিবে না। উত্তর টা এখনো জানে না। নুসাইবা তাই বলে আমি এখনো জানি না। মাহফুজ বলে এতে কি ভাবার মত অনেক কিছু আছে। তোমাকে ফেলে গিয়ে যেভাবে বিপদে ফেলল, এত বছর গোপন করে যত আকাম করল সব কিছুর পরেও কি তোমার ভাবনার দরকার আছে। মাহফুজ অন্ধকারে দেখে না তবে নুসাইবার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। নুসাইবা ধরে আসা গলায় বলে একটা সম্পর্ক গড়তে বিশ বছর লাগে আর ভাংগতে কয়েক মূহুর্ত। তাই ভাঙ্গার আগে অন্তত একবার আর ভালভাবে ভেবে দেখা দরকার। মাহফুজ নুসাইবার গলার আদ্রতা টের পায়। তাই বলে এখনি কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে না তোমার। এইখানে আর দুই তিন সাপ্তাহ আটকে থাকতে হবে আমাদের। চুপচাপ নিরিবিলি কোন ডিসট্রাকশন ছাড়া সিদ্ধান্ত নেবার আর এমন সুযোগ তুমি পাবে না। নুসাইবা বলে হ্যা। এইভাবে কথায় কথায় সময় গড়াতে থাকে। আমিনের ঘড়ে একটা পুরাতন মডেলের দেয়াল ঘড়ি আছে যেটা প্রতি ঘন্টায় শব্দ করে জানান দেয় নতুন ঘন্টার আগমনের। তাই ঘন্টা বাজার শব্দ শুনে মাহফুজ ঘড়িতে আলো জ্বেলে সময় চেক করে বারটা বাজে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কয়টা বাজে। মাহফুজ বলে বারটা। নুসাইবা বলে ঘুমানো দরকার অনেক রাত হল। মাহফুজ বলে হ্যা। নুসাইবা টের পায় এই কয় ঘন্টা মন খুলে কথা বলায় ওদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক ইজি হয়ে এসেছে।


জোহরা ওদের জন্য একটা টর্চ রেখে গেছে। যাতে অন্ধকারে কোন দরকার হলে টর্চ জ্বালিয়ে দেখা যায় বা  রাতে বাইরে টয়লেটে যেতে হলে যেন টর্চ ইউজ করা যায়। মাহফুজ টর্চ জ্বালিয়ে দেখে ঘরের অবস্থা। নুসাইবার মুখের উপর আলো পড়তেই নুসাইবার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকক্ষণ অন্ধকারে থাকলে আলো অন্ধ করে দেয়। নুসাইবা বলে আলোটা বন্ধ কর। মাহফুজ আলো বন্ধ করার আগে দেখে নেয় নুসাইবা কে। কমদামী শাড়ি ব্লাউজে যেন অন্য রকম লাগছে নুসাইবা কে। নুসাইবা বলে তাহলে এই বিছানাতেই শুতে হবে দুইজনকে। মাহফুজ বলে কেন আর কোন বিছানা আছে নাকি এই রুমে। নুসাইবা বলে না এই খাটটা আসলে এত ছোট দুইজন শোয়া কষ্ট হবে। মাহফুজ বলে কষ্ট হলেও থাকতে হবে কিছু করার নেই। নুসাইবা বলে কালকে আমিন চলে গেলে আমি ভাবছি জোহরার সাথে থাকব। ঐ খাটটা বড় আছে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা কেন যেতে চাচ্ছে তবে এইটা নিয়ে কিছু বলে না। কালকের টা কালকে দেখা যাবে। মাহফুজ বলে থাকতে ইচ্ছা করলে থাকবে সমস্যা নাই। তবে আজকে এখানেই ঘুমাতে হবে। এই বলে টর্চ জ্বেলে বিছানার অন্যপাশে যায় মাহফুজ। নুসাইবা টের পায় শুইতে চাইলেও এখন শুতে পারবে না ও। ঐ সময় টয়লেট করে আসলেও এখন এই কয় ঘন্টায় আবার ওয়াশরুমে যাবার দরকার হয়ে পড়েছে। পেট ভর্তি পানি জমে আছে। সমস্যা হল অন্যটা। বাংলাদেশের আর অনেক গ্রামের বাড়ির মত আমিনের বাড়িতেও টয়লেট বাড়ির মূল ঘরের বাইরে। বারান্দা থেকে নেমে হাতের ডান দিকে টিউবওয়েল কে ক্রস করে আরেকটু সামনে। টয়লেটে যাবার সময় দরকার হলে বালতি করে পানি ভরে নিয়ে যেতে হয়। ভিতরে একটা বদনা আছে। ঐ সময় জোহরার সাথে করে টয়লেটে গিয়েছিল। জোহরা বাইরে দাড়িইয়ে ছিল আর নুসাইবা কাজ সেরেছে। আসলে টয়লেটের অবস্থান এমন জায়গায় অন্ধকারে ভয় লাগে নুসাইবার। আর এখন এই সময় এত রাতে কার সাহায্য ছাড়া ওর পক্ষে সেইখানে যাওয়া অসম্ভব। মাহফুজ কে তাই বলে আমার একটু ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা ওর কাছে সাহায্য চাইছে তবে না বুঝার ভান করে বলে এই যে টর্চলাইট আছে নিয়ে চলে যাও এই বলে টর্চটা এগিয়ে দেয়। নুসাইবা টর্চটা হাতে নেয়। দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলতেই অন্ধকার। ভয় ধরে যায় নুসাইবার। ছোটবেলা থেকে শোনা সব জ্বীন ভূত সাপখোপের গল্প মনে পড়ে যায়। মাহফুজের দিকে তাকিয়ে বলে একটু আসবে। ভয় লাগছে। মাহফুজ এইবার বলে এখন দরকার পড়ল বলে ডাকলে কালকে তো ঠিক জোহরার কাছে চলে যাবে। মাহফুজের খোচায় লাল হয় নুসাইবা। মাহফুজ কিছু না বলে এগিয়ে আসে। বলে দাও টর্চটা দাও। টর্চ জ্বালিয়ে সামনে এগোয় মাহফুজ। বারান্দাতে নামতেই শব্দ আসে কিছু কানে। চারপাশে বাতাস বন্ধ এখন। ঝি ঝি পোকাগুলো ডাকতে ডাকতে ক্লান্ত মনে হয় তাই তাদের কোন সাড়া নেই। একদম নিঃশব্দ চারিদিকে। এরমাঝে একটা চাপা গোংগানির মত শব্দ আসে কানে। ভয়  পেয়ে মাহফুজের হাত আকড়ে ধরে নুসাইবা। মাহফুজের মনে হয় পরিচিত শব্দ তবে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কিসের শব্দ । মাহফুজ নুসাইবা কে বলে আস্তে আস্তে আমার সাথে আসেন। মাহফুজ ধীর পায়ে বারান্দা দিয়ে সামনে এগোয়। শব্দ আর জোরে হয়। মাহফুজ হঠাত টের পায় আসলে কিসের শব্দ। প্রচন্ড হাসি আসে তবে হাসা ঠিক হবে না তাই মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসির শব্দ আটকায়। নুসাইবা বলে কি হল? কিসের শব্দ এইটা?  মাহফুজ ফিস ফিস করে বলে এত বছর বিয়ে হল কিসের শব্দ বুঝ না। নুসাইবা কান খাড়া করে। গোংগানির শব্দ তবে অসুস্থ বা আহত কার না বরং উত্তেজনায় কাতরাতে থাকা কার শব্দ। নারী কন্ঠ। লাল হয়ে যায় নুসাইবা। আমিন জোহরার রুম থেকে আসছে। মাহফুজ বলে মেকাপ সেক্স। ঝগড়ার পর মেকাপ সেক্স সবচেয়ে দারুণ হয়। নুসাইবা কিছু বলে না কিন্তু মাহফুজের হাত ছেড়ে দেয়। অন্ধকারে লাল হয়ে আছে নুসাইবা। মাহফুজ বলে পা টিপে টিপে আস। বেচারাদের মেকাপ সেক্সে বাগড়া দেওয়া ঠিক হবে না। দুইজন আস্তে আস্তে সামনে এগোয়। বাড়ি থেকে প্রায় চল্লিশ গজ দূরে টয়লেটটা। টিনের ঘেরা দেওয়া ভিতরে কংক্রিটের স্লাব। একটা বালতিতে পানি ভরা আছে সাথে একটা বদনা। মাহফুজ বলে যাও তা কি করবা হিসু না হাগু। মাহফুজ ইচ্ছা করেই এমন ভাবে বলে। নুসাইবা ভাবে কথার কি ছিড়ি ছেলের। নুসাইবা কে উত্তর দিতে না দেখে মাহফুজ বলে হাগু হলে আমি একটু আশেপাশে হেটে দেখি অন্ধকারে কেমন লাগে বাড়িটা। নুসাইবা ভয়ে বলে উঠে আরে না না দূরে যেও না। আমি হিসু করব। মাহফুজ বলে এইতো দেখলা এখন কেমন সুরসুর করে বলে দিলা কি করবা। হাজব্যান্ড ওয়াইফের অভিনয় করছি আর এইটুকু বলতে পারবে না। মাহফুজের কথায় এমন কর্তৃত্বের ভাব যে নুসাইবা অবাক  হয়। ভিতরে ঢুকে নুসাইবা। টর্চ মাহফুজের কাছে বাইরে। ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাতের আকাশের তারা ছাড়া আলো দেবার কেউ  নেই। আন্দাজ করে বসে পড়ে শাড়ি কোমড় পর্যন্ত গুটিয়ে। পেট ভর্তি হিসু। ছড় ছড় করে কংক্রিটের স্লাবে পড়তে থাকে সেই হিসু। নুসাইবা হঠাত টের পায় রাতের বেলা শব্দহীন এই বাড়িতে কংক্রিটের স্লাবে ওর জলের ধারা যেন জলপ্রপাতের শব্দ তৈরি করছে আর চারপাশে টিনের বেড়ায় ধাক্কা খেয়ে সেটা যেন আর বেড়ে বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে। কয়েক গজ দূরে মাহফুজ দাঁড়িয়ে ওর হিসুর শব্দ শুনছে এটা ভেবে বিব্রত হয়ে যায়। তবে হিসু এমন একটা জিনিস চাইলেও আটকানো যাবে না। তাই ছড় ছড় করে বের হয়ে কংক্রিটে ধাক্কা খেয়ে জলপ্রপাতের মত গর্জন তৈরি করে। কোন রকমে  হিসু শেষ করে পানি দিয়ে পরিষ্কার  হয়ে নেয়। বাইরে বের হতেই মাহফুজ বলে পেটে এমন একটা হাওড় নিয়ে এতক্ষণ বসে আমার সাথে গল্প করলে কিভাবে। মাহফুজের ইংগিত বুঝে নুসাইবা বলে তোমার মুখে কিছু কি আটকায় না। মাহফুজ বলে আরে আটকায় তো, আটকায় বলেই তো এইটা বললাম। নাইলে বলতাম ম্যাডাম যে জলপ্রপাতের শব্দ পাচ্ছিলাম তাতে তো মনে হচ্ছিল এই হাওড় ভেসে যাবে। এইবলে হাসে। নুসাইবা রেগে বলে চল যাই। বাড়ির দিকে পা টিপে টিপে আগায় ওরা। বারান্দায় আসতে আবার অস্ফুট স্বরে গোংগানির শব্দ পায়। মাহফুজ বলে আমিন ব্যাটা হুজুর হলেও মাল আছে। মেকাপ সেক্স করতেছে। নুসাইবা কিছু বলে না। মাহফুজ বলে মেকাপ সেক্স ইজ দ্যা বেস্ট সেক্স।
Like Reply

বিছানায় শোয়ার আগ পর্যন্ত একটু ঘুম পেলেও নুসাইবা ঠিক এখন ঘুমাতে পারছে না। বিছানা যথেষ্ট ছোট। এরপর হালকা শীত। তাই একটা মোটা কাথা গায়ে দিয়েছে দুইজন মিলে। জায়গা কম থাকায় শরীর শরীরে লেগে আছে। বাইরে থেকে আসায় শীতে শরীর একটু কাপছে। পাশে মাহফুজের শরীর থেকে উষ্ণতা আসছে। মাহফুজ নিজেও ঘুমাতে পারছে না। নুসাইবার শরীরের উষনতা ওকে গরম করে তুলছে যেন। সিনথিয়ারল বাড়ির মেয়েদের জেনেটিক্সে কিছু একটা আছে। এরা একের পর এক ওকে যেভাবে পাগল করে তুলছে। নুসাইবা নড়তে পারছে না। কারণ নড়লেই মাহফুজের শরীরের সাথে আর স্পর্শ হবে। মাহফুজ কে আর কোন রঙ ইম্প্রেশন দিতে চাচ্ছে না। মাহফুজ ছেলেটার প্রতি ওর এক ধরনের মুগ্ধতা আছে আবার ছেলেটাকে মানে ওর আচার আচরণ ঠিক মেনে নিতে পারছে না। বিশেষ করে ও একজন বিবাহিত মহিলা ওর নিজের কন্ট্রোল থাকা উচিত নিজের উপর। মাহফুজ নুসাইবার থেকে অন্যদিকে ফিরে এক কাত হয় জায়গা করবার জন্য। তবে ছোট খাট আর শীতে শরীর একটু বেকে থাকায় মাহফুজের পাছাটা নুসাইবার শরীরে লাগে। নুসাইবার অস্বস্তি হয়। নুসাইবাও ভাবে ও হয়ত অন্যদিকে ফিরলে জায়গা আরেকটু বাড়বে। তাই অন্যদিকে ফিরে কাত হয়। এইবার ঘটনা ঘটে উলটা।  মাহফুজ আর নুসাইবার পাছা পরষ্পরের স্পর্শে আসে। বিছানা ছোট। কাত হয়ে ঠিক লম্বা হয়ে শোয়া যায় না। একটু হাটু ভাজ করে দ এর মত শুতে হয়। ফলে দুইজনের পাছাই একটু ভিতর দিকে বেশি বেকে যায়, ফলাফল স্বরুপ দুই পাছা স্পর্শ করে পরষ্পর কে। নুসাইবা দেখে এতো বিপদ। মাহফুজ টের পায় ওর পাছায় নুসাইবার নরম পাছাটা স্পর্শ করছে। জীবনে অনেক সেক্স করলেও এমন সিচুয়েশনে আর পড়ে নি। পাছার সাথে পাছার ঘর্ষণ। হেসে দেয় মাহফুজ। মাহফুজের হাসির শব্দ শুনে নুসাইবা ভাবে ওকে নিয়ে হাসছে কি মাহফুজ। একটু নড়ার চেষ্টা করে জায়গা ঠিক করতে চায় নুসাইবা তাই। বরং উলটা হয়। এতো অল্প জায়গাতে চাইলেও অতিরিক্ত জায়গা বের করা সম্ভব না বরং নড়ানড়ি করাতে নুসাইবার পাছা বরং আর বেশি ঘষা খায় মাহফুজের পাছায়। বড় জটিল অবস্থা। না চাইতেও মাহফুজের শরীর গরম  হতে থাকে। নুসাইবার মনে হয় মাহফুজের পাছাটা বেশ শক্ত পেশি বহুল। আবার নিজেই ভাবে কি ভাবছে এইসব। আরশাদের নরম নাদুস নুদুস বডি তাই ওর পাছাটাও সেরকম নরম। আবার কি ভাবছে নিজেকে ছি ছি করে নুসাইবা। ভয়ে আর নড়ে না। মাহফুজ একটু নড়ে। নুসাইবার পাছায় ঘষা খায় মাহফুজের পাছা। নুসাইবার এক বান্ধবী বলেছিল ছেলেদের সেক্স পাওয়ার নাকি চিনতে হয় ওদের পাছা দেখে। যার পাছা যত টাইট মাসলওয়ালা তার দম তত বেশি। তত বেশিক্ষণ ধরে নাকি করতে পারে। মাহফুজের পাছা টাইট বেশ। আবার নিজেকে ছি ছি করে। তবে সমস্যা হল মানুষ অনেক সময় যেটা চিন্তা করতে না চায় সেটাই মনের ভিতর বেশি করে ঘুরে। তাই নুসাইবার মনে হয় গত পরশু কি মাহফুজ অনেকক্ষণ ধরে করছিল। ছি কি ভাবছে এইসব। হঠাত করে মাহফুজের পেনিসের কথা মনে হয় ওর। দানব। জীবনে যদিও সামনা সামনি পেনিস দেখেছে খালি আরশাদের টা কিন্তু বাকিদের কাছে শোনা সব গল্পের পরেও মাহফুজের টা ওর মনে হয়েছিল দানবের মত। গাড়ির সেই অল্প আলোতে দেখা দৃশ্যটা যেন ওর মাথায় গেথে আছে। ছি কি ভাবছে এইসব। মাহফুজ টের পায় এই শীতের রাতেও শরীরে উষ্ণতা বাড়ছে।


আমিন আর জোহরার রূমের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া যায়। কেউ একজন হেটে টয়লেটের দিকে যাচ্ছে। হঠাত করে কি মনে করে মাহফুজ বলে জীবনে এই প্রথম দেখলাম হুজুররাও মেকাপ সেক্স করে। হঠাত চুপচাপ অন্ধকার ঘরে এমন অদ্ভুত বাণী শুনে আর হাসি আটকাতে পারে না নুসাইবা। হো হো করে হেসে উঠে। হাসির দমকে ওর শরীর কাপে। নুসাইবার পাছা আবার ঘষা খায় মাহফুজের পাছায়। মাহফুজের মনে হয় নরম একটা মাংসপিন্ড যেন ওর পাছায় আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। হাসতে হাসতে নুসাইবা বলে মাহফুজ তোমার ভিতরে যে একটা শয়তান বাস করে টের পাও। মাহফুজ বলে কেন আমার কথা বিশ্বাস হয় না। গিয়ে দেখেন আমিন নাইলে জোহরা বের হইছে তাদের মেকাপ সেক্সের চিহ্ন শরীর থেকে মুছার জন্য। ভালই লদকা লদকি করছে দুইজনে আজকে। নুসাইবা আবার হাসে। বলে এইটা আবার কেমন শব্দ লদকা লদকি। জীবনেও শুনি নাই। মাহফুজ বলে লদকা লদকি মানে ধরেন ঘষাঘষি। এই বলে নিজের পাছাটা ঘষে দেয় নুসাইবার পাছায়। নুসাইবা বুঝে মাহফুজ ইচ্ছা করেই ওর পাছায় ঘষছে। কি শক্ত পুরুষালী পাছা। নিজের চিন্তা কে যতই আটকাতে চাচ্ছে তত বেয়াড়া হচ্ছে যেন। নুসাইবা কথা ঘুরাতে চায়। বলে ঠান্ডা লাগছে। মাহফুজ বলে তাহলে আরেকটু সরে আসেন। শরীরের কাছে শরীর থাকলে গরম লাগবে। নুসাইবা নড়ে না। মাহফুজ নিজেই নড়ে আরেকটু ওর পাছাকে নুসাইবার পাছার উপর লাগিয়ে দেয়। নুসাইবার মনে হয় মাহফুজের শরীর থেকে আগুন বের হচ্ছে। ওর পাছাতে টের পায় মাহফুজের পাছাটা। মাহফুজ লুংগি পড়ে আছে। নুসাইবা শাড়ি,ব্লাউজ আর পেটিকোট। কোন আন্ডারগার্মেন্টস নাই। হাটে একটা দোকান আন্ডারগার্মেন্টস বিক্রি করে আজকে সেই দোকান বন্ধ ছিল। তাই অল্প কয়েক স্তরের কাপড় ভেদ করে মাহফুজের শরীরের গরম নুসাইবা টের পায়। এইবার নুসাইবা আবার সোজা হয়ে শোয়। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে ঘুম আসছে না? নুসাইবা বলে না। মাহফুজও সোজা হয়ে শোয়। অন্ধকার ঘর। দুইজন শুয়ে আছে ঘুম নেই। মাহফুজ হঠাত জিজ্ঞেস করে আরশাদ সাহেব ছাড়া আর কার সাথে কখনো প্রেম করেছেন? নুসাইবা অবাক হয় হঠাত এই প্রশ্ন। বলে একটু আগেও না বললাম আরশাদ আমার সব ধ্যান জ্ঞান গত বিশ বছর। মাহফুজ বলে তাইলে আমি আপনার জীবনের দ্বিতীয় পুরুষ। ঢোক গিলে নুসাইবা। উত্তর দেয় না। মাহফুজ কাথার ভিতর নুসাইবার একহাতের আংগুল গুলো নিজের হাতে নেয়। নিজের আংগুলে আটকে নেয় নুসাইবার আংগুল। আবার জিজ্ঞেস করে সেইম প্রশ্ন। উত্তর দেয় না নুসাইবা। একমাত্র নুসাইবার শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ জানিয়ে দেয় নুসাইবা জাগন। মাহফুজ যেন নিজে নিজে কথা বলছে তেমন করে বলতে থাকে। সিনথিয়ার কাছ থেকে তোমাদের পরিবারের যে বর্ণনা শুনেছি তাতে মনে হয়েছে তোমার বাবা মা মানে সিনথিয়ার দাদা দাদী বেশ কনজারভেটিভ ছিল। সেইখানে পচিশ ত্রিশ বছর আগে বেরে উঠা কার পক্ষে প্রেম করা কঠিন ছিল। সিনথিয়ার মা নাকি তোমাদের প্রেমের পক্ষে থেকে বাসার সবাই কে রাজি করিয়েছিল। নুসাইবা শব্দ করে না। মাহফুজ এইবার ওর নুসাইবার দিকে কাত হয়। এক হাতে নুসাইবার এক হাত আর অন্য হাত নুসাইবার পেটের উপর রাখে। পেটের উপর হাত পড়তেই চমকে উঠে নুসাইবা। উঠে বসতে যায়। মাহফুজ নুসাইবার পেটে চাপ দিয়ে ওকে ঠিক উঠতে দেয় না। মাহফুজ বলে আরে উঠার দরকার নাই। আমি হিসাব করে দেখছি। আমি আসলে তোমার জীবনের দ্বিতীয় পুরুষ। কনজারভেটিভ পরিবেশে বড় হওয়া ছেলে মেয়েরা সাধারণত দুই রকম হয়। এক দল হয় স্লাট। আরেক দল হয় নিজের মানুষের প্রতি লয়াল। তুমি সেই ধরনের। তাই তোমার জীবনে আরশাদ ছাড়া আর কোন ছেলে নেই, ছিল না। এই বলে নুসাইবার নাভির উপর আংগুল দিয়ে খেলা করতে থাকে। নুসাইবা টের পায় ওর শরীরে আবার সেই পরিচিত শিহরণ। মাহফুজ যেন ওর শরীর চিনে ভাল করে। নুসাইবা বলে মাহফুজ ছাড়। মাহফুজ ছাড়ে না। নাভি নিয়ে খেলা করতে থাকে।


মাহফুজ বলে এরমানে যদি আমি তোমার জীবনের দ্বিতীয় পুরুষ হই তাহলে তোমার এক্সপেরিয়েন্স কম। নুসাইবা বুঝে উঠে না কি এক্সপেরিয়ন্সের কথা বলছে। ওর মনের কথা যেন শুনতে পায় মাহফুজ। তাই ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে তোমার সেক্স এক্সপেরিয়েন্স। নুসাইবার মনে হয় ওর গায়ে কাপুনি ধরবে। মাহফুজের ভারী গলা ফিস ফিস করা অন্ধকারে ওর কানের কাছে কথা বলায় গায়ে শিহরণ জাগে। মাহফুজ বলে অবশ্য তোমার  প্রথম যে অভিজ্ঞতা সেইটা একটা শিটহোল। এসহোল পুরো একটা মানুষ। নুসাইবা বলে মাহফুজ যাই হোক এখন পর্যন্ত আরশাদ আমার স্বামী। পরে আমি যেই সিদ্ধান্ত নেই না কেন এখন ওকে এইভাবে আমার সামনে অপমান করার কোন মানে নেই। নুসাইবার কানের লতিতে একটা চুমু খেয়ে মাহফুজ বলে শিটহোল বললে এত রাগ করলে? কানের লতিতে চুমু খাওয়ায় নুসাইবার কেমন জানি লাগে শরীরে। মাহফুজ বলে দেখ তোমাকে একেকটা বিপদে ফেলছে প্রথম পুরুষ আর উদ্ধার করছে দ্বিতীয় পুরুষ। মাহফুজের কথা অস্বীকার করতে পারে না নুসাইবা। তাও নুসাইবা বলে দেখ মাহফুজ অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও। বাক্য শেষ করার আগেই নুসাইবার কানের লতি মুখে পুরে চুষতে থাকে মাহফুজ। নুসাইবার গায়ে শক লাগে। উফফফফ, মাহফুজ। মাহফুজ কানের লতিতে চোষণ বাড়িয়ে দেয়। শিহরণ আর অস্বস্তিতে নড়ে উঠে নুসাইবা। উম্মম মাহফুজ উঠে বসতে চায় নুসাইবা। কিন্তু ওর কানের লতি মাহফুজের মুখে আর মাহফুজের হাত ওর পেটে। এই দুই জায়গা থেকে বাধায় উঠতে পারে না নুসাইবা। মাহফুজ বলে বল তো আরশাদ তোমার মত সুন্দরী কে ফেলে কিভাবে সব জায়গায় মেয়েদের পিছনে ঘুরে বেড়ায়। নুসাইবার বুকে খোচাটা একদম লাগে। মাহফুজ নুসাইবার গলা আর ঘাড়ের সংযোগস্থলে চুমু দেয়, জিহবা দিয়ে চেটে দেয়। ঘর একদম অন্ধকার কিন্তু মাহফুজ যেন অন্ধকারে দেখছে সব। নুসাইবা উম্মম করে উঠে। মাহফুজ বলে সেইদিন আমি ভেবেছিলাম তুমি ইংল্যান্ড চলে গেলে আর কোনদিন বুঝি দেখা হবে না তাই সব মাথায় গেথে রেখেছি। তোমার নাভীটা তোমার দূর্বল জায়গা ঠিক না। এই বলে নাভির ভিতর একটা আংগুল ঢুকিয়ে দেয়। উফফফফফ করে  উঠে নুসাইবা। পা দুইটা নাড়ায় অস্বস্তিতে। মাহফুজ বলল দেখলে দ্বিতীয় পুরুষ কিভাবে তোমার সব খবর মনে রেখেছে। এরপরের তোমার দূর্বল জায়গা তোমার গলা আর ঘাড়। এই বলে চেটে দিতে থাকে গলা আর ঘাড়ের সংযোগস্থল। সাথে নাভি নিয়ে খেলতে থাকে। নুসাইবার মনে হয় ওর শরীর এইবার জেগে উঠেছে। নুসাইবা বলে বাস্টার্ড। মাহফুজ বলে এইটার হিসাব কিন্তু নেওয়া হয় নায়। এই বলে ওর মুখটা নামিয়ে আনে নুসাইবার বুকের উপর। শাড়ির আচল আর ব্লাউজের উপর দিয়ে চুমু দেয়। নুসাইবার শরীরে আগুন জ্বলছে যেন ধীরে ধীরে। মাহফুজ শাড়ির আচল সরিয়ে দেয়। ব্লাউজের উপর দিয়ে চুমু খেতে খেতে  বলে ভিতরে ব্রা নেই না। কি নরম তোমার দুধ। নুসাইবার গায়ের উপর এক পা তুলে দেয় মাহফুজ। মাহফুজের খাড়া হয়ে থাকা বাড়া টের পায় নুসাইবা। ওর মনে হয় লুংগির ভিতর বুঝি একটা দানব লুকিয়ে আছে। ব্লাউজের উপর দিয়ে নুসাইবার দুধে কামড় দেয় মাহফুজ। আউউউ করে উঠে নুসাইবা। নুসাইবার গা থেকে শাড়ির আচল ফেলে দেয় পুরো এইবার। নুসাইবা কিছু বলার আগে অন্ধকারে নুসাইবার ঠোট চুষে ধরে মাহফুজ। চুষতে চুষতে নুসাইবা কে শান্ত করার চেষ্টা করে কিন্তু আসলে আর অশান্ত করে তুলে নুসাইবার শরীর কে। ঠোট চুষতে চুষতে হাত দিয়ে ব্লাউজের ভিতর আটকে থাকা একটা দুধ কে কচলে দেয় মাহফুজ। আউউউউউ। এইবার অন্য দুধ। আউউউউফ। হঠাত করে শাড়ির উপর দিইয়ে নুসাইবার গুদে হাত দেয় মাহফুজ। কচলে ধরে। নুসাইবার ঠোট এখনো মাহফুজের ঠোটে বন্দী। তাই মাহফুজের হাত গুদে পড়তেই কোমড় কয়েক ইঞ্চি উপরে তুলে দেয় খাট থেকে। মাহফুজ হাতের মুঠো থেকে গুদ একটু ছাড়লে কোমড় বিছানায় নামে। আবার গুদে শাড়ির উপর দিয়ে হাত দেয়। আবার কোমড় খাট থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে উঠে যায়। মাহফুজ চুমু ছেড়ে দেয়। এতক্ষণ টানা চুমু খেয়ে দুইজনেই হাফাতে থাকে। মাহফুজ আবার গুদের উপর মুঠো করে ধরে। আউউউউপ, উফফফফ।
Like Reply
মাহফুজ এইবার উঠে বসে। নুসাইবা শুয়ে শুয়ে হাফাচ্ছে এখনো। কি হচ্ছে এইসব। অন্ধকারে কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল অন্য এক মাহফুজ আর এখন আরেক মাহফুজ। তবে নিজেকেও চিনতে পারছে না যেন নুসাইবা। মাহফুজের প্রতিটা স্পর্শে যেন ওর শরীর কথা বলছে। এইভাবে ওকে বাজাতে পারে নি কখনো আরশাদ। বাস্টার্ড। অস্ফুট স্বরে বলে নুসাইবা। মাহফুজ শুনে। হঠাত করে ঝটকা দিয়ে নুসাইবার উপর উঠে বসে মাহফুজ। নুসাইবার পেটের উপর ঠিক। শরীরের দুই সাইডে দুই পা। অন্ধকারে আন্দাজ করে ঠিক বসে পড়ে। নুসাইবা বুঝে উঠতে পারে না কি হল অন্ধকারে। হঠাত টের পায় ওর পেটের উপর একটা ভার। বুঝে মাহফুজ ওর শরীরের উপর। তবে মাহফুজ পুরো ভর দেয় না। হাটু দুই সাইডে গেড়ে হাটুতে মেইন ভর রাখে। পাশের টেবিলের উপর থেকে হাতড়ে টর্চটা নেয়। নুসাইবার মুখে আলো ফেলে। চুল উস্কুখুস্কো হয়ে আছে। আচল নেই গায়ে। লাল ব্লাউজের কাপড় মাহফুজের লালায় ভিজে আছে খানিকটা। হাত চোখের উপর নিয়ে যায় আলো পড়তে নুসাইবা। টর্চটা জ্বালিয়ে পাশে বিছানায় রাখে। আলো দেয়ালে পড়ে ঘরের অন্ধকার কিছুটা কমায়। মাহফুজ দুই হাতে নুসাইবার ব্লাউজের হুক খুলতে থাকে। নুসাইবা হাত দিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। মাহফুজ আবার ঝুকে চুমু খেতে থাকে। প্রথমে একটু বাধা দেবার চেষ্টা করলেও আবার গলে যেতে থাকে চুমুতে। ওর দুই পায়ের মাঝে যেন উষ্ণতা টের পাচ্ছে নুসাইবা। আস্তে আস্তে ব্লাউজের তিনটা হুকের সব গুলো খুলে ফেলে মাহফুজ। উন্মুক্ত হয়ে যায় নুসাইবার দুধ। মাহফুজ এইবার আবার টর্চটা নিয়ে নুসাইবার বুকে ফেলে। ৩৬ সি সাইজের মাই জোড়া। কাল বোটা। মাহফুজ একটা বোটা আংগুলের মাঝে নিয়ে মুচড়ে দেয়। আউউউফ। ব্যাথা লাগছে সোনা? মাহফুজের প্রশ্নে হতচকিত হয়ে যায়। এই প্রথম ওকে আরশাদের বাইরে কেউ সোনা বলে ডাকছে। মাহফুজ এইবার মুখ নামিয়ে প্রথমে চুমু খায় দুধে। এরপর একটা বোটা মুখে পুরে দেয়। আউউউউউউ, উফফফফ। কাতরে উঠে নুসাইবা। আজকে সকালে দেখা জোহরার স্তনের কথা মনে পড়ে ওর। মাহফুজ ঠিক শিশুর মত হামলে পড়ে ওর দুধ জোড়া খাচ্ছে। পার্থক্য হল মাহফুজ বড় শিশু। ওর ক্ষুধার বুঝি শেষ নেই। দুধের উপর এই আক্রমণে নুসাইবা ক্রমে উত্তেজিত হয়ে উঠতে থাকে। ওর বোটার সাথে যেন ওর পুসির সরাসরি যোগাযোগ। ভিজছে নিচে ওর পুসি। উম্মম্ম, উফফফফ। এইসময় নতুন একটা জিনিস টের পায় নুসাইবা। ঝুকে পড়ে নুসাইবার দুধ খাওয়ার কারণে মাহফুজের লুংগি সরে গেছে অনেকটুকুই। মাহফুজের বাড়া এখন সরাসরি নুসাইবার পেটের উপর। নুসাইবা বুঝে ওর পেটের উপর মাহফুজের পেনিস। গরম, শক্ত। সেইদিন দেখা স্মৃতি মনে পড়ে দানব একটা। কিভাবে এইটা কে ভিতরে নিয়েছিল সেইদিন। উফফফফফ। নাভির উপর ঘষা খাচ্ছে পেনিসটা। ওর শরীর যেন গলে যাচ্ছে।


মাহফুজ সোজা হয়ে বসে। কোমড়ের কাছে লুংগির প্যাচটা একটানে খুলে  লুংগিটা মাথার উপর দিয়ে ছুড়ে ফেলে। ওর গায়ে এখন খালি একটা গেঞ্জি আর নিচে পুরো খালি। নুসাইবার ব্লাউজের হুক খোলা হলেও শরীর থেকে ব্লাউজ খোলা হয় নি। সাইডে জ্বলতে থাকা টর্চের আলোয় নুসাইবার দুধের উপর পড়ে। সেই আলো দেয়ালে পড়তেই নুসাইবার দুধের একটা বিশাল ছায়া পড়ে। মাহফুজের চোখে পড়ে জিনিসটা। নুসাইবা কে দেখায়। দেখ নুসাইবা। দেয়ালে তোমার দুধের কি বিশাল ছায়া পড়েছে। নুসাইবা অবাক হয়ে সাইডের দেয়ালে তাকায় ওর দুধের বিশাল একটা ছায়া। মাহফুজেরও ছায়া পড়েছে। দেয়াল দেখে মনে হচ্ছে পাহাড় চড়ার জন্য বসে আছে বিশাল এক দানব। নুসাইবার পেটে বাড়া ঘষতে থাকে মাহফুজ। গলতে থাকে নুসাইবা। মাহফুজ আরেকটু সামনে এগিয়ে আসে  হাটুতে ভর দিয়ে। নুসাইবা কে বলে দেখ নুসাইবা তোমার জন্য আমার এইটার কি অবস্থা। নুসাইবা অবাক হয়ে দেখে। কি বড় বিশাল। আগাটা যেন বুলেটের মত চোখা। ছিড়ে ফেলবে যার ভিতরে যাবে। মাহফুজের গায়ের কালার থেকে কয়েক গুণ কাল ওর পেনিস। ঘরের আলো আধারিতে এই বিশাল বাড়া নুসাইবার মনে কৌতুহল আর ভয় দুইটাই জাগায়। মাহফুজ আরেকটু আগায়। মাহফুজের বাড়া এখন নুসাইবার দুধ কে স্পর্শ করছে। মাহফুজ নুসাইবার দুধকে দুই হাতে ধরে মাঝখানে আনতে চায়। আর বাড়াটা এগিইয়ে দুধের খাজে ঘষতে থাকে। মাহফুজ বলে এইভাবে কখনো করেছে আরশাদ? তোমার এই দুধজোড়া কে এইভাবে ফাক করেছে কখনো? নুসাইবা মন্ত্রমুগ্ধের মত মাহফুজের পেনিস দেখছে। কি বিশাল, কাল পেনিস। প্রতিবার কোমড় দিয়ে যখন বাড়াটা ঠেলছে তখন দুধের খাজ বেয়ে উপরে উঠে আসছে। নুসাইবার থুতনিতে বাড়ি দিচ্ছে। অজান্তেই নুসাইবার মুখ যেন হা হয়ে গেল। ঠোটে বাড়ি দিচ্ছে পেনিস। আরশাদ ওকে কয়েকবার ব্লোজব দিতে বললেও দেয় নি নুসাইবা। দুইএকবার অবশ্য মুখে নিয়েছে তবে অতটুকুই। কয়েক সেকেন্ড রেখে ছেড়ে দিয়েছে। তবে মাহফুজের পেনিস প্রতিবার ওর মুখের কাছে আসতে জিহবা যেন আপনা আপনি  সামনে চলে যাচ্ছে। প্রথমবারের মত নুসাইবার জিহবা মাহফুজের বাড়ার আগাটা স্পর্শ করতেই যেন দুইজনেই কারেন্টের শক খেল। মাহফুজ আরেকটু এগিয়ে গেল।  নুসাইবার এইবার প্রায় মুখে ঢুকে পড়েছে মাহফুজের পেনিসের সামনের দুই ইঞ্চি। অটোমেটিক নুসাইবার মুখ যেন বন্ধ হয়ে গেল। আরশাদের পেনিসে একটা আশটে গন্ধ ছিল। মাহফুজের পেনিসে যেন একটা পুরুষালী গন্ধ। মাদকতাময়। ঐদিন গাড়িতেও মাহফুজের গায়ে এই গন্ধটা পেয়েছিল। উফফফফ। চুমু খায় বাড়াতে নুসাইবা। কেপে উঠে মাহফুজ। হাত দিয়ে দুধের বোটা মুচড়ে দেয়। আউউউ উফফফ। নুসাইবা শোয়া অবস্থা থেকে হালকা ঘাড় উঠিয়ে চুমু খেতে চায় বাড়াতে। কি হচ্ছে ওর। রাস্তার মেয়েদের মত কি করছে ও। মাথার ভিতর কেউ বলে নুসাইবা কে। কিন্তু আরেকজন বলে কি ম্যাজেস্টিক এই পেনিস। ইউ শুড কিস ইট। নুসাইবা কখনো ব্লোজব দেয় নি তাই ওর অভিজ্ঞতা নেই। তাই বলে পেনিসে চুমু খাওয়া থামায় না নুসাইবা। জিহবা দিয়ে চেটে দিতে থাকে। মাহফুজের মনে হয় উত্তেজনায় ফেটে যাবে বাড়া। দুই তিন মিনিট যেন এইভাবেই চলে। দুধের খাজ দিয়ে মাহফুজের বাড়া সামনে এগোয়। আর নুসাইবা কয়েক সেকন্ডের জন্য বাড়াটা ঠোটের মাঝে নিয়ে চুষে দেয়, চেটে দেয়। মাহফুজ কোমড় পিছায় আর বাড়াটা দুধের খাজ বেয়ে আবার পিছে আসে। তিন চার মিনিট পর মাহফুজ আর পাড়ে না। উগড়ে দেয় সাদা বীর্য। নুসাইবার গালে, ঠোটে, নাকে, চোখে কপালে সব ওর সাদা বীর্যে ভরে যায়। নুসাইবার কয়েক সেকেন্ড লাগে বুঝতে কি হয়েছে। সারাজীবন বীর্য জিনিসটা কোনভাবে গায়ে লাগলে একদম ছি ছি করে উঠেছে নুসাইবা। আজকে তেমন কিছু করে না। টের পায় ওর দুই পায়ের মাঝে ভিজে গেছে একদম। কখন যে এইসবের মাঝে ওর অর্গাজম  হয়েছে টের পায় নি। মাহফুজ নুসাইবার উপর থেকে সরে পাশে শুয়ে পড়ে। দুইজনেই ক্লান্ত। হাপাতে থাকে দুইজন। নুসাইবা ওর নাকে বীর্যের গন্ধ পায়। উম্মম। নেশা ধরে যাচ্ছে যেন ওর। প্রতিটা মানুষের বীর্যের গন্ধ কি আলাদা? আরশাদের বীর্যের গন্ধ মনে করেতে পারে না। তবে মাহফুজের টা ওর মনে হয় মতাল করা গন্ধ। শাড়ির আচল দিয়ে মুখ টা মুছে নেয়। পুরো মুখ কেমন যেন আঠাল হয়ে আছে। এই রাতে  বাইরে গিয়ে মুখ ধোয়া সম্ভব না ওর পক্ষে।


মাহফুজ পাশে শুয়ে হাফাতে থাকে। তবে ওর উত্তেজনা একদম চলে যায় নি এখনো। মাত্র দুই মিনিট আগে মাল ফেললেও এখন যেন আবার বাড়াটা খাড়া হতে চাচ্ছে। মাহফুজের মনে হয় এখনো আর অনেক কিছু করা বাকি ওর। উঠে বসে। নুসাইবা ক্লান্ত। দেখে মাহফুজ উঠে বসেছে। ওদের দুইজনের মাঝে টর্চ এখনো জ্বলছে। ঘরে একটা ঝাপসা আলো। মাহফুজ উঠে নুসাইবার পায়ের কাছে চলে যায়। নুসাইবা শুয়ে শুয়ে দেখছে কি করছে মাহফুজ। ছেলেটার দম আছে। মাহফুজ নুসাইবার একটা পা কে হাতে নেয়। চুমু খায় বৃদ্ধাংগুলিতে। আংগুল মুখে নিয়ে চুষে দেয়। আউউউ। কি করছ মাহফুজ। উত্তর দেয় না মাহফুজ চুষতে থাকে। সুরসুরি লাগে নুসাইবার। মাহফুজ এইবার চুমু খেতে থাকে গোড়ালিতে, পায়ের পাতায়। আর সামনে আগায় চুমু খেতে খেতে। যত সামনে আগায় চুমু শাড়ি তত উপড়ে উঠে। আস্তে আস্তে শাড়ি হাটুর উপরে উঠে। মাহফুজ নুসাইবার দুই রানে চুমু খায়। গলে যায় নুসাইবা। চেটে দেয় ওর রান। আহহহহহ। পেটিকোটের নিচে আজকে কোন প্যান্টি নেই। তাই আরেকটু উপরে শাড়ি তুলতেই দুই পায়ের মাঝে গুদ উন্মুক্ত হয়ে যায়। মাহফুজ ধীরে ধীরে চুমু দিয়ে যেতে থাকে গন্তব্যে। আরশাদ কয়েকবার ওর পুসি সাক করতে চাইলেও নুসাইবা রাজি হয় নি। বিয়ের শুরুর দিকে তাও জোড়াজুড়ি করে একবার কিছু সময় পুসি সাক করেছিল, ভাল লাগে নি ওর। এরপর আর সুযোগ দেয় নি আরশাদ কে। কিন্তু আজকে কিছুই বলছে না। ওর মনে আছে গাড়ির ভিতর কিভাবে চুমু খেয়েছিল ঐ জায়গাটাতে। উফফফ। উত্তেজনায় কাপছে নুসাইবা। এক চুমু দুই চুমু করে আর কাছে যাচ্ছে মাহফুজ। নুসাইবার গুদের কাছে কয়েকদিনে না কাটা বাল। অল্প খসখসে। মাহফুজ চুমু দেয়। আউউউ করে উঠে। এখনি যেন অর্গাজম হয়ে যাবে নুসাইবার। অপেক্ষার পর এই চুমু যেন আগুন জ্বলিয়ে দিয়েছে। মাহফুজ একটা দুইটা তিনটা চুমু খায় ধীরে ধীরে গুদের উপর। নুসাইবার গুদ একদম ফুলে গেছে। গুদের উপরের চামড়াটা ফুলে একদম পাপড়ির মত খুলে গেছে। মাহফুজ চামড়াটা মুখে নিয়ে চুষনি দিল একচোট। আউউউউউউ, উফফফফ, মাগোওওওওও বলে কোমড় উপড়ে তুলে ফেলল নুসাইবা। মাহফুজ এইবার জিহবা দিইয়ে ঝাপিয়ে পড়ল গুদের খুলা যাওয়া দরজার গোলাপী অংশের উপর। প্রতিটা আক্রমণে কেপে কেপে উঠছে নুসাইবা। মাহফুজের হাত উপরে উঠে নুসাইবার দুধ জোড়া চেপে ধরে। পিষে ফেলতে চায়। আর নিচে মাহফুজ একবার জিহবা দিয়ে চেটে দেয় আরেকবার গুদের উপরে চামড়া ধরে চুষনি দেয়। পাগল হয়ে যাবে নুসাইবা। আউউউউ, উফফফফ, মাআআআআআ। আআআআআ। নুসাইবা আর পারে না। পা জোড়া এক করে মাহফুজের মাথাটাকে ওর গুদে পিষে ফেলতে চায়। মাহফুজ ওর দুধের বোটা মুচড়ে দিয়ে যেন উত্তর দেয়। আর কামড়ে ধরে গুদ। আউউউউউউ,উফফফফ, আহহহহহ বলে পানি ছেড়ে দেয় গুদ। আহহ, আরেক দফা অর্গাজম হয় নুসাইবার। কি হচ্ছে এইসব। এমন হয় নি আর কখনো ওর। চিন্তা করারর ক্ষমতা যেন হারিয়ে ফেলছে ও। মাহফুজের মুখ ভিজে যায়  নুসাইবার গুদের পানিতে। মাহফুজ তারপরেও চেটে দিতে থাকে নুসাইবার গুদ। অর্গাজম শেষ না হতেই যেন আবার আরেকটা অর্গজমের ডাক আসে গুদে। মাহফুজের মাথাটা নুসাইবা দুই হাতে চেপে ধরে গুদে। সারা শরীর কাপুনি দিয়ে মিনিট দুয়েকে সেকেন্ড অর্গাজম হয়। এইটাতে আগেরবারের মত পানি ঝরে না অত তবে কাপুনি দেয় সারা শরীর মৃগী রোগীর মত। মাহফুজ উঠে বসে। বলে বলেছিলাম না দ্বিতীয় পুরুষ হল আসল পুরুষ। আরশাদ তোমাকে কিছুই দেখাতে পারে নি। নুসাইবার কানে কিছু যাচ্ছে না এইসব। ওর মাথা আউলিয়ে গেছে। হাফাচ্ছে খালি, ঝাপসা দেখছে চোখে। উফফফ এত সুখ। অসহ্য সুহ।


মাহফুজ এক দুই মিনিট বিরতি দেয়। নুসাইবার দিকে তাকায়। ওর ব্লাউজ খোলা কিন্তু শরীর থেকে আলাদা হয় নি। শাড়ি পেটিকোট কোমড় পর্যন্ত তোলা। মাহফুজ নুসাইবার গুদে হাত দেয় আবার। শিউড়ে উঠে নুসাইবা। মাহফুজ বলে উলটা ঘুর তো? এই বলে ওর নিজের বালিশটা আনে। বিছানার মাঝে রাখে। নুসাইবার বালিশটাও ওর মাথার নিচ থেকে নিয়ে ওর বালিশের উপর রাখে। নুসাইবা কে বলে এই  বালিশ গুলোর উপর উলটো হয়ে শোও। নুসাইবার তখন হুশ নেই। অসহ্য সুখের অত্যাচারে চোখ বড় করে সিলিং এ তাকিয়ে আছে। মাহফুজ এইবার নুসাইবার হাত ধরে আস্তে করে ওকে বালিশের উপর উলটো করে দেয়। উফফফ কি পাছা। এই পাছাটাই প্রথম পাগল করেছিল মাহফুজ কে। ঠাস করে একটা চড় দেয় মাহফুজ। ঠাস। আউউউ। উফফফ। প্রথমে এক দাবনায় তারপর অন্য দাবনায়। নুসাইবা উফফ করে উঠে। মাহফুজ বলে তোমার এই পাছাটা সেই ভার্সিটির অডটরিয়ামে দেখে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল আমার। আবার চড়। ঠাস। ঠাস। আফফফ, উফফফ। পাছার দাবনা দুইটা ধরে দলাই মলাই করতে থাকে। কামড় দিয়ে ধরে পাছা। আউউউ করে মাথা উপরে তুলে নুসাইবা। আবার চুমু দিয়ে আদর করে দেয়। এইভাবে এই রুটিনে কিছুক্ষণ চলে। আবার পাছার দাবনাটা ধরে আলাদা করে। দাবনার ফাকে নাক ঘষে দেয়। ঘামের গন্ধ আর শরীরের গন্ধ মিলে একটা আশটে মাদকতাময় গন্ধ সেখানে। মাহফুজ বলে তোমার এইখানে দারুণ একটা গন্ধ। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করে নুসাইবার। ঐখানে আর কেউ কখনো এমন করে নাক দেয় নি। জিহবা দিয়ে পাছার দাবনার খাজ গুলো চেটে দিতে থাকে। আআহহহহ। আরাম লাগে নুসাইবার। মাহফুজ পাছার দাবনা আলাদা করে ভিতরে তাকায়। আলোর অভাবে ঠিক বুঝা যায় না। এইবার এক হাতে দাবনা আলাদা করে অন্য হাতে টর্চ মারে পাছার গর্তে। কাল একটা ফুটো। মাহফুজ বলে তোমার পাছার ফুটোটা কিন্তু দারুণ। লজ্জায় আবার মরে যেতে ইচ্ছা করে নুসাইবার। কেউ এইভাবে বলে নি ওকে আর। কিন্তু এই সাথে পায়ের মাঝে আবার পানি আসছে টের পায় নুসাইবা। মাথা নিচু করে এইবার পাছার দাবনার ফাকে ফু দেয়। নুসাইবা টের পায় ওর পাছার ফুটোর উপর গরম বাতাসের হলকা। উফফফ। মাআআআআআ। অল্প করে খুলে যায় পাছার ফুটোটা। যেন গরম বাতাসের স্পর্শ পেয়ে দরজা খুলে গেল। মাহফুজ বলে আই উইল ফাক দিস এস সামডে। তোমার এই পাছা মারতেই হবে নুসাইবা। এই বলে আবার ফু দেয় পাছার ফুটোতে। গরম বাতাস এসে লাগে ফুটোতে। উফফফফ। আহহহ।



মাহফুজ টের পায় ওর বাড়া আবার ফুলে উঠেছে। বিস্ফোরণের জন্য ক্ষেপে আছে। মাহফুজ নুসাইবা কে উলটে দেয়। ওর কোমড়ের নিচে এখনো বালিশ। তাই গুদ উচু হয়ে আছে। মাহফুজ দেরি করে না। ওর বাড়াটা সেট করে নুসাইবার গুদে। ধাক্কা দেয় একটা। ফুলে থাকা গুদে অনেকটুকু ধুকে। অক করে উঠে নুসাইবা। আবার ধাক্কা আবার অক করে উঠে। মাহফুজ এইবার ধীরে ধীরে কোমড় আগুপিছু করে বাড়াটাকে আর ভিতরে পাঠায়। দুই মিনিট পর টের পায় পুরো বাড়া এখন ভিতরে। এরপর একেকটা লম্বা স্ট্রোক দেয়। প্রায় পুরোটা বের করে এনে একদম ধম করে এক ধাক্কা। নুসাইবার ভিতরে গিয়ে যেন গেথে ফেলে বর্শার মত বাড়া। নুসাইবার মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসবে। সুখে। মাহফুজ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে নুসাইবার চোখ বন্ধ। মাহফুজ এইবার থাপের গতি বাড়ায়। স্লপ স্লপ শব্দ ভিজা গুদে বাড়া যাবার। নুসাইবা আস্তে আস্তে ভোকাল হয়ে উঠে। সেক্স নুসাইবার কাছে সব সময় চুপ করে থেকে করার জিনিস। কিন্তু মাহফুজের বাড়া দিয়ে একেকটা ধাক্কা যেন পুরাতন নুসাইবার সব নিয়ম ভেংগে দিচ্ছে। ভোকাল হয়ে উঠছে নুসাইবা। আহহহ, উফফফ, আআআআআআআ, মাআআআআ। ক্ষেপে উঠেছে মাহফুজ। এইবার ধমাধম গুদ থাপাচ্ছে। মুচড়ে দিচ্ছে বোটা। মাহফুজ বলে দেখ কিভাবে বাস্টার্ড ফাক করে। দেখ কিভাবে তোমার দ্বিতীয় পুরুষ তোমার গুদের দখল নিচ্ছে। দেখ কিভাবে তোমার শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বাস্টার্ড। থাপ থাপ থাপ। আহহহ উউফফফ ম্মাআআআআআ উউম্মম। নুসাইবা আর পারে না। ওর নিয়ন্ত্রণ এখন আর নেই। কতবার পানি ঝরছে গুনতে পারছে না আর। গুদের দেয়াল মাহফুজের বাড়া কে আকড়ে ধরল যেন। মাহফুজ বলে উঠল দেখ কিভাবে বাস্টার্ড ফাক করে তোমাকে। এই বলে একের পর সাদা  বীর্যের দল নুসাইবার গুদের ভিতর টা ভাসিয়ে দিল। ঠিক সেই সময় নুসাইবার গুদে সবচেয়ে বড় অর্গাজমটা হল। পা দিয়ে মাহফুজকে যেন একদম আকড়ে ধরল। আর মাহফুজ ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ল নুসাইবার শরীরের উপর। দুই জন দুইজনকে যেভাবে আকড়ে ধরে আছে দেখে মনে হবে দুইটা অক্টোওপাস বুঝি যুদ্ধ করতে করতে পরষ্পরকে আকড়ে ফেলেছে নিজেদের জ্বালে।
Like Reply
এসেছে আপডেট কমেন্টের বন্য বোয়ে জাবে এবার মনে হচ্ছে!
আমি রাতে সময় কোরে গল্প পোরে মতামত জানাব।

আপনারা নিশ্চিত থাকেন কাদের ভাইয়ের লেখা কখোনো খারাপ হতে পারেই না।
[+] 3 users Like সমাপ্তি's post
Like Reply
রাতে পড়বো


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply




Users browsing this thread: Fahad23, 17 Guest(s)