Thread Rating:
  • 279 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩৩ )
শুধু ভাপা পিঠা দিয়ে আর কাজ হবে না, সকালে উঠে আপডেট পেলে কাদের ভাইকে ভাপা পিঠার সাথে রসে ভেজা পুলি পিঠা ও খাওয়াবো। কি বলেন নুসরাত আপু?
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(28-01-2024, 12:43 AM)~Kona~ Wrote: শুধু ভাপা পিঠা দিয়ে আর কাজ হবে না, সকালে উঠে আপডেট পেলে কাদের ভাইকে ভাপা পিঠার সাথে রসে ভেজা পুলি পিঠা ও খাওয়াবো। কি বলেন নুসরাত আপু?

কিছু রস আমাদের নামেও রাখিয়েন  Blush
Like Reply
(28-01-2024, 12:43 AM)~Kona~ Wrote: শুধু ভাপা পিঠা দিয়ে আর কাজ হবে না, সকালে উঠে আপডেট পেলে কাদের ভাইকে ভাপা পিঠার সাথে রসে ভেজা পুলি পিঠা ও খাওয়াবো। কি বলেন নুসরাত আপু?

প্রতিজ্ঞার কথা যেন মনে থাকে  Big Grin
[+] 2 users Like কাদের's post
Like Reply
পরবর্তী আপডেট আজকে আসবে। দুপুরের পর থেকে নজর রাখুন।       horseride horseride horseride horseride horseride
[+] 8 users Like কাদের's post
Like Reply
we are ready
Like Reply
(28-01-2024, 08:04 AM)behka Wrote: we are ready



আপনি যেভাবে রেডি বললেন মনে হল পরীক্ষার প্রশ্ন আসবে আর আপনি সিলেবাস পাচ বার রিভিশন দিয়ে কলম নিয়ে রেডি  Big Grin
[+] 2 users Like কাদের's post
Like Reply
দুপুরের পর থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো।
[+] 1 user Likes bluesky2021's post
Like Reply
Meanwhile, আমার তৃষ্ণার্ত মনঃ



[Image: cc.png]


horseride horseride horseride
Like Reply
(28-01-2024, 09:20 AM)কাদের Wrote: আপনি যেভাবে রেডি বললেন মনে হল পরীক্ষার প্রশ্ন আসবে আর আপনি সিলেবাস পাচ বার রিভিশন দিয়ে কলম নিয়ে রেডি  Big Grin

একদম ঠিক বলেছেন

পুরো গল্প ৫ বার এর বেশি পড়া শেষ
[+] 1 user Likes behka's post
Like Reply
কাদের ভাই রেডি আছি কিন্তু বিকেলে পড়ার সময় হবেনা।

রাতে পড়বো। ধন্যবাদ কাদের ভাই
[+] 1 user Likes সমাপ্তি's post
Like Reply
Ab to dedo yar


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


Like Reply
অপেক্ষা করছি ভাই!
Like Reply
অপেক্ষায় আছি কাদের ভাই ।
[+] 1 user Likes HeartBeat's post
Like Reply
আপডেট ২৯



সাফিনা করিম সাইকোলজিস্ট আদিবা রহমান এর সামনে বসে আছেন। সেইদিন সাইকোলজিস্ট এর কথা মাথায় ঢুকে নি তেমন করে কিছু। নুসাইবা কে টাকা দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে বসেছিল ভিতরে। সাইকোলজিস্ট সেটা খেয়াল করেছিল। গুড সাইকোলজিস্ট। সাফিনা কে পরে আলাদা করে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিল ডিস্টার্ব কিনা কিছু নিয়ে। সাফিনা ঠিক নুসাইবার ঘটনা বলতে না পারলেও বলেছিল একটা ব্যক্তিগত কারণে কনসার্ন ছিল। তখন সাইকোলজিস্ট বলেছিল আর দুই দিন পর একটা সেশন টাইম খালি আছে তখন আসতে চায় কিনা। সাফিনা রাজি হয়ে গেছে। আজকাল থেরাপি সেশনে যে মন খুলে কথা বলা যায় কোন জাজমেন্ট ছাড়া এইটা যেন মানসিক ভাবে একটা বড় রিলিফ। তাই রাজি হয়ে গেছে। আদিবা রহমান নরমালি প্রত্যেক সেশনের শুরুতে বলে দেন আজকে কি সেশনে কি হবে বা এই সেশনের উদ্দ্যেশ কি।


আদিবা রহমান আজকে সেশনের শুরুতে বলে দিয়েছেন আজকের সেশনে মূলত প্রশ্ন উত্তর হবে। এই কয়দিন সাফিনা নিজের গল্প বলেছেন। মাঝে মাঝে দুই একটা প্রশ্ন করলেও আদিবা খুবে বেশি কথার ব্যাঘ্যাত ঘটান নি। আদিবা রহমান সাইকোলজিস্ট হিসেবে দেখেছেন প্যাশেন্টের ট্রাস্ট অর্জন করা সবচেয়ে প্রথম কাজ। এইজন প্রথম কিছু সেশন খালি কথা শুনেন মনযোগ দিয়ে। এই সময় সম্পূরক দুই একটা কোশ্চেন করলেও খুব বেশি প্রশ্ন করেন না। কারণ আদিবা রহমান দেখেছেন ট্রাস্ট অর্জনের আগে বেশি প্রশ্ন করলে প্যাশেন্ট অনেক বেশি ডিফেন্সিভ হয়ে যায়। সাইকোলজিস্টদের আরেকটা বড় বাধা হচ্ছে প্যাশেন্টদের থেকে সত্য কথাটা বের করা। যদিও এখানে কোন জাজমেন্ট এর ভয় নেই তাও মানুষ সাইকোলজিস্টদের সামনে এসে সত্যটা আড়াল করে, কেউ মিথ্যা বলে। যারা এই কাজটা করে তারা যে মিথ্যা বলতে পছন্দ করে তেমন না, অনেক সময় না বুঝেই মিথ্যা বলে। আসলে আমরা আমাদের মনে নিজেদের একটা ভার্সন তৈরি করি সেইটা অনেক সময় বাস্তবের আমাদের থেকে আলাদা। সাইকোলজিস্টদের সামনেও লোকে নিজেদের সেই কল্পনার ভার্সনটা দেখাতে থাকে। তবে সমস্যা হল আসল প্যাশেন্ট বা তার আসল বাস্তবতা না বুঝতে পারলে সাইকোলজিস্টদের জন্য প্যাশেন্ট এর ট্রিটমেন্ট খুব জটিল। সাফিনা করিম এর সাথে এই কয়দিন কথা বলে আদিবা রহমান কিছু সিদ্ধান্তে এসেছেন। সাফিনা করিম কিছুটা ডিপ্রেসড। এই ডিপ্রেশন অল্প থাকা অবস্থাতেই উনি সাইকোলজিস্ট এর কাছে এসেছেন এইটা ভাল ব্যাপার। আবার সাধারণত বাঙ্গালী মধ্যবয়সী মহিলা বা পুরুষদের ডিপ্রেশনের কারণ অনেক সময় অনেক পুরাতন ঘটনার সাথে বা ট্রমার সাথে জড়িত। তেমন কিছু হলে ট্রিটমেন্ট অনেক সময় একটু কঠিন। সাফিনা করিম পরিবার অন্তপ্রাণ আবার একই সাথে ক্যারিয়ারিস্টিক। যদিও সাফিনা সব সময় পরিবার কে প্রাধান্য দিয়েছেন অন্তত তার কথাতে তাই মনে হচ্ছে কিন্তু এই বয়সে এসে যখন পরিবারের সবাই যার যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তখন ক্যারিয়ারে যে অংশটুকুতে পরিবারের জন্য পিছিয়ে পড়েছেন সেইটা নিয়ে এক ধরণে বিষাদ আছে তার মনে। তার সমান যোগ্যতার বা তার থেকে কম যোগ্য লোকজন সামনে এগিয়ে গেছে। এটা সাফিনার মনের মাঝে একটা অস্বস্তি তৈরি করে রেখেছে।  মেয়েদের কে ভালবাসেন। আর দশটা বাংগালী মায়ের মত মেয়েদের পিছনে অনেক সময় দিয়েছেন। এখন মেয়েরা সাবলম্বী হয়ে যার যার মত ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সেই সময়টা নিয়ে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ব্যস্ত মেয়েরা হয়ত সব সময় সময় করে মায়ের খোজ নিতে পারছে না তাতে মনের মাঝে এক ধরনের কষ্টবোধ আছে। আর সব শেষে সাফিনা করিমের স্বামী মিজবাহ করিম। সাফিনার কথায় মনে হচ্ছে মিজবাহ করিম আর দশটা সাধারণ বাংগালী পুরুষের মত। ফ্যামিলির প্রতি টান আছে এবং ফ্যামিলির প্রতি লয়াল। তবে বাংগালী পুরুষ তাদের বেড়ে উঠার সময় শেখানো নিয়মের কারণে অনেক সময় ফ্যামিলির প্রতি তাদের ভালবাসা খালি অর্থ উপার্জন বা গিফট দিয়ে নয় বরং সময় দিয়ে বা সান্নিধ্য দিয়ে কিভাবে মেটাতে হয় সেটা শিখে উঠতে পারে না। মিজবাহ করিমের মাঝেও সেই সমস্যাটা আছে বলে এই কয় সেশনের কথাতে প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পেরেছেন আদিবা রহমান। আজকের সেশন আসলে এইসব ব্যাপার নিয় হবে। আদিবা রহমান এইসব ব্যাপারে নানা প্রশ্ন করে আর বিস্তারিত জানতে চান। হয়ত এক সেশনে হবে না তাহলে দরকার হলে পরের আরেক সেশন নিতে হবে। আর বুঝতে হবে সাফিনা করিমের মনের ভিতর এই পয়েন্ট গুলোর মধ্যে কোনটা বেশি গূরুত্বপূর্ন।


আদিবা রহমান শুরু করেন সেশন। কেমন আছেন আপনি? সাফিনা উত্তর দেয় ভাল। আদিবা আবার জিজ্ঞেস করে, আজকে আর অন্য মনস্ক থাকবেন না তো। সাফিনা হাসি দিয়ে বলে না। সাফিনা এইবার বলে আমি কলেজের টিচার। সব সময় সবাই কে প্রশ্ন করে অভ্যস্ত। আজকে আপনি যেভাবে প্রশ্ন করছেন তাতে মনে হচ্ছে আমি ছাত্রী। আদিবা হাসি দিলেন, এটা গুড সাইন। প্যাশেন্ট তার সাথে বেশ খোলামেলা হচ্ছে, নিজের অনের অনুভূতি গুলো হালকা চালে প্রকাশ করছে। আদিবা বললেন না, না একদম তেমন ভাববেন না। বরং ভাবুন আমি আপনার কাউন্সিলর। সো আমি প্রশ্ন করছি আপনাকে আর ভালভাবে জানার জন্য। আপনাকে আমি যদি ভালভাবে বুঝতে না পারি তাহলে কাউন্সিলর হিসেবে আমার পক্ষে আপনাকে হেল্প করা অসম্ভব। সাফিনা মাথা নাড়েন, বুঝতে পেরেছে সাফিনা প্রশ্নের উদ্দ্যেশ। আদিবা তাই প্রথম প্রশ্ন করে, আপনি আপনার ফ্যামিলি কে ভালবাসেন? সাফিনা উত্তর দেয়, হ্যা। কতটুকু ভালবাসেন? সাফিনা কোন সময় না নিয়ে বলে একজন মানুষ যতটুকু ভালবাসতে পারে। আদিবা এইবার প্রশ্ন করেন, ফ্যামিলি বলতে আপনি কি বুঝেন? মানে আপনার সংজ্ঞায় কারা আপনার ফ্যামিলির অংশ? সাফিনা এইবার একটু সময় নেন, চিন্তা করেন। ফ্যামিলি কে কেউ এইভাবে সংজ্ঞায়িত করতে বলে নি এর আগে। ছোটকালে শেখা পরিবারের সংজ্ঞা দিবেন? সেটা তো হাস্যকর শোনায়। শিক্ষক মানুষ সাফিনা। সব সময় কথা গুছিয়ে সুন্দর করে বলেন। এইবার তাই কয়েক সেকেন্ড বললেন, ফ্যামিলির সংজ্ঞা তো আপনি জানেন। আধুনিক যুগে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি হলে হাজব্যান্ড ওয়াইফ আর বাচ্চারা। পুরাতন যুগের সংজ্ঞায় ধরলে আপনার বৃহত্তর পরিবার, মানে আপনার আত্মীয় স্বজন, ভাইবোন, হাজব্যান্ডের আত্মীয়স্বজন সবাই। তবে আমি মনে করি ফ্যামিলির সংজ্ঞা খালি এই রক্তের সম্পর্ক বা বিবাহের সম্পর্কের বাধনে বাধা না। পরিবার হল সেই মানুষ গুলো যাদের জন্য আপনি সব করতে পারেন আবার যারা আপনার জন্য সব করতে পারে প্রতিদানে। যারা ছোটখাট মান অভিমানে আপনাকে ছেড়ে যায় না আবা আপনি যাদের ছেড়ে যান না। তাই অনেক সময় রক্তের সম্পর্কের মানুষও দূরের হয়ে যায় আর দূরের মানুষ কাছের হয়। আদিবা মাথা নাড়ে। এইবার জিজ্ঞেস করে, আপনার সংজ্ঞা অনুযায়ী তাহলে কারা আপনার পরিবার? মানে কাকে আপনি একদম আপনার ফ্যামিলির কোর অংশ বলে ভাবেন। সাফিনা ভাবে। তারপর যেন মনে মনে গুণছে সেইভাবে বলে, আমার বর, মেয়েরা, মেয়ের জামাই, নুসাইবা আমার বরের বোন, আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আদিবা নোট নেয় খাতায়। আদিবা প্রশ্ন করে আপনি কি সব সময় আপনার পরিবারের সদস্যদের জন্য বেস্ট টা দিয়েছেন আপনার? সাফিনা কোন দ্বিধা না করেই বলল, সব সময়। আমার সাধ্যমত আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমার ফ্যামিলির লোকদের হেল্প করতে, তাদের সময় দিতে। আদিবা এইবার প্রশ্ন করে আপনার ফ্যামিলির লোকেরা কি সেইম ভাবে আপনাকে সময় দিয়েছে, হেল্প করেছে? সাফিনা এইবার একটু দ্বিধায় পড়ে যায়। কি উত্তর দিবে? আদিবা রহমান জানে প্যাশেন্টদের জন্য এটা বড় অসস্তিকর প্রশ্ন। অনেক সময় মনের ভিতর থাকা কথা গুলো বলা সম্ভব হয় না কারণ আমাদের সামাজিক নিয়ম বলে নিজের ফ্যামিলির সদস্যদের বিরুদ্ধে বাইরের কার কাছে খারাপ কিছু না বলতে। কিন্তু এইটা কাউন্সিলিং এর অংশ। আদিবা রহমান তাই বলে আপনি নিসংকোচে বলুন। আপনি যখন আপনার এসেসমেন্ট বলছেন তার মানে এইটা কার নিন্দা করা না, আপনার ভালবাসার মানুষ গুলোর প্রতি কোন রকম বিদ্বেষ পোষণ করা না। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই ভুল করি, আমাদের আপনজনরাও করে। সেই রকম কিছু যদি আপনার মনে লাগে বলতে পারেন। কারণ মনে রাখবেন এই রুমের কথা বাইরে কোথাও যাবে না। আমরা খালি এই জিনিস গুলো নিয়ে আলোচনা করছি খালি এইটা বুঝার জন্য আপনার ভবিষ্যতে মানসিক ভাবে ভাল থাকার জন্য এই ইনফরমেশন গুলো কে আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সেইজন্য।


সাফিনা এইবার উত্তর দেয়। সাফিনার উত্তর আদিবার আগের সন্দেহটাই সঠিক প্রমাণ করে। একজন নারী যখন সংসার শুরু করে তখন সে অনেক কিছু বিসর্জন দেয়। পরিবার গড়ে উঠার সময় অনেক অবদান রাখে। কিন্তু যখন সময় বাড়ে তখন পরিবারের বাকি সদস্যরা সেই পরিমান সময় বা ত্যাগ করতে পারে না সেই নারীটার জন্য। এমন না যে তারা একজন স্ত্রী, মা,বোন বা পরিবারের নারী সদস্য হিসেবে তাকে ভালবাসে না। আসলে নারীর অবদান কে পরিবারে মহিমান্বিত করে এমন ভাবে দেখানো হয় যে এটা দেবীর কাজ আর দেবীর কাজের প্রতিদান কে বা দিতে পারে বলুন। তাই বেশির ভাগ সময় কেউ সেই চেষ্টা করে না। দেবীর মন বুঝতে পারে না। অল্প একটু সময়, সাহচার্য আর যত্ন যে সেই প্রতিদানটুকু দিতে পারে এইটাই বুঝি অনেক সময় অনেকে বুঝে উঠতে পারে না। আদিবা বুঝেন এই ব্যাপারটায় আর প্রশ্ন করতে হবে। আজকে হয়ত প্রথমবার এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে দেখে সাফিনা সব কিছু খুলে বলতে স্বস্তি বোধ করছে না তবে পরে প্রশ্ন করলে হয়ত আর বিস্তারিত জানা যাবে। আদিবা বলে চলুন তাহলে আপনার প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে কথা বলি। সাফিনা করিম এসোশিয়েট প্রফেসর সরকারী কলেজের। এডুকেশন ক্যাডারে ঢুকেছিলেন প্রায় বিশ বছর। পড়াশুনার মাঝেই বাচ্চা হয়েছে এরমাঝে বিসিএস দিয়েছেন, এডুকেশন ক্যাডারে চাকরিও হয়েছে। সেই সময়টাতে হ্যাজব্যান্ড, ননদ, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী ভাল সাপোর্ট দিয়েছেন। আদিবা রহমান প্রশ্ন করেন আপনার কি মনে হয় আপনি আর ভাল করতে পারতেন? সাফিনা একটু ভাবে। বলে, দেখুন বাচ্চা না থাকলে আমার অনার্স মাস্টার্সের রেজাল্ট হয়ত আর ভাল হত। কে জানে হয়ত ভার্সিটির টিচার  হতে পারতাম। আর বিসিএস এর সময় আর পড়তে পারলে হয়ত এডুকেশন ক্যাডার না আর প্রেস্টেজিয়াস কোন ক্যাডার হতে পারতাম। এডমিন বা ট্যাক্স। আদিবা জিজ্ঞেস করেন পুলিশে ইচ্ছা ছিল না? সাফিনা হেসে বলেন না পুলিশে আমার আগ্রহ নেই কখনো। আদিবা জিজ্ঞেস করেন তাহলে কি আপনার মনে এইটা নিয়ে আফসোস আছে? সাফিনা বললেন দেখুন আফসোস যে একটুকু নেই তা বলব না। আমার থেকে খারাপ ছাত্ররা আমার থেকে ভাল রেজাল্ট নিয়ে বের হয়েছে। বিসিএস এর সময়টাতে আমি জানতাম আমি এর থেকে ভাল করতে পারি কিন্তু ছোট দুইটা বাচ্চা সামলিয়ে এর থেকে বেশি করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আদিবা রহমান প্রশ্ন করলেন, আপনি তো অনেক কম বয়সে ক্যাডার হয়েছেন। মাত্র ২৬ বছরে। এরপর আর কয়েকবার চেষ্টা করলেন না কেন। সাফিনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। আদিবা জিজ্ঞেস করেন আর চেষ্টা করেন নি? মাথা নাড়েন সাফিনা, না। কেন? সাফিনা বললেন প্রথমবার এডুকেশন ক্যাডার হয়ে যাওয়ার পর হাজব্যান্ড আর ফ্যামিলির অন্য লোকেরা সবাই বলল এটাই সবচেয়ে ভাল আমার জন্য। অন্য ক্যাডারে কত ঝামেলা। এখানে ঝামেলা কম। মেয়েদের জন্য নাকি শিক্ষকতা সবচেয়ে ভাল পেশা। আদিবা প্রশ্ন করে আপনি এর প্রতিবাদ করেন নি। সাফিনা বলেন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে আমার মত যেসব মেয়েরা বেড়ে উঠে বিশেষ করে ত্রিশ চল্লিশ বছর আগে তাদের শিক্ষাটাই এমন ছিল যে ফ্যামিলির সবার বিরুদ্ধে গিয়ে খুব বড় প্রতিবাদ করাটাই হত না তখন। আর সবাই যখন বলছে ভালর জন্য বলছে এমন একটা ভাব তো ছিল সব সময়। আর আমার অন্য বান্ধবীদের অনেকের যেখানে বিয়ের পর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে সেখানে আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করলাম। শ্বশুড়বাড়ী আর হাজব্যান্ড যথেষ্ট সহায়তা করেছে এইটা আমি অস্বীকার করতে পারি না এই ব্যাপারে। সেখানে সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি আর কিছু করতে পারি নি। আর করতে গেলে বিসিএস এর প্রস্তুতির জন্য যে সময় দিতে হবে সেইটা আমি আর কম পাব কারণ তখন এইবার সবাই যতটা সহায়তা করেছে পরেরবার তা নাও করতে পারে এবং তখন সম্পর্ক আর খারাপ হবে। বাচ্চা গুলো তখন একদম ছোট। একটা প্রায় ছয় আরেকটা দুই বা তিন। সব ভেবে জীবনের লক্ষ্যটা খানিকটা নামিয়ে এনেছি। আদিবা রহমান নোট নেন, প্রফেশনাল লাইফ আর সাংসারিক জীবনের একটা টানাপোড়েন আছে, মেনে নিলেও মনে মনে আফসোস আছে প্যাশেন্টের।


আদিবা বলেন এরপর বলুন। সাফিনা বলল এই তো এরপর চাকরিতে জয়েন করলাম। ঢাকার বাইরে খুব একটা যাওয়া লাগে নি। মাঝে এক বছরের মত গাইবান্ধা সরকারী কলেজে পোস্টিং ছিল। এছাড়া বাকিটা সময় ঢাকাতেই বিভিন্ন কলেজে চাকরি করেছি। আদিবা বললেন বিশ বছর চাকরি জীবনের ঊনিশ বছর ঢাকাতেই? আপনি তো লাকি। সাফিনা হাসে। বলে এইটা আসলে লাকের ব্যাপার না তদবির। আমার হাজব্যান্ড বিভিন্ন কানেকশন কাজে লাগিয়ে মাঝে কয়েকবার ঘুষটুষ দিয়েও আমাকে ঢাকাতে পোস্টিং এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মেয়েরা তখন কলেজে পড়ছে আমি বাইরে গেলে কিভাবে হবে বলেন। আর এইটা জেনে অবাক হবেন যে ঢাকার সব সরকারী কলেজ গুলো বড় আমলা নাহলে পলিটিশিয়ানদের ওয়াইফদের পূনর্বসান কেন্দ্র। প্রচুর বড় আমলা আর পলিটিশিয়ানদের ওয়াইফ এডুকেশন ক্যাডারে আছে। তাদের মান যা হোক এরা তদবিরের জোরে ঢাকাতেই থাকে। আমার হাজব্যান্ড আমলা বা পলিটিশিয়ান না হলেও কর্পোরেটে বড় চাকরি করে আর ভার্সিটির বন্ধু বান্ধব, ফ্যামিলি কানেকশন সব মিলিয়ে সব সময় তদবিরে সমস্যা হয় নি। খালি একবার ঢাকার সবাই কে বাইরে বদলি করা হল একটা কারণে। তখন আমার বদলি হল। অবশ্য ততদিনে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে। বড় মেয়ে ভার্সিটিতে আর ছোট মেয়ে কলেজে। ফলে ঐ একবছর বাইরে ছিলাম নাহলে সার্ভিসে অনেকের চক্ষুশূল হয়ে যেতাম। আদিবা জিজ্ঞেস করে আপনি পিএইচডি করেছেন বলেছিলেন না। সাফিনা বলে হ্যা। এই ডিগ্রিটা নিয়ে সাফিনা বেশ গর্বিত। পরিবারের দ্বায়িত্বের কারণে দেশের বাইরে যাওয়া হয় নি পিএইচডি করতে কিন্তু ঠিক দেশের ভিতর ঠিক পিএইচডি শেষ করেছে। এডুকেশন ক্যাডারের সিংহভাগ লোক শেষ পর্যন্ত পিএইচডি করে না। অর্নাস লেভেলের ক্লাস নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কিন্তু নেই কোন পিএইচডি। সাফিনা এটা মানতে পারে না। তাই দেশের ভিতর পিএচডি করেছে এবং মনোযোগ দিয়ে করেছে। দেশের ভিতর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পিএচডি হয় ভিক্ষার পিএইচডি। সুপারভাইজার এর পেয়ারা লোক না হলে ভর্তির সুযোগ নেই আর ভর্তি হলে সুপারভাইজার অল্প কিছু কাজ করিয়ে পিএইচডি দিয়ে দেয়। সেইসব কাজের মান কেমন হল সেগুলো নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে। সাফিনা এমন কাজ করে নি আর সাফিনার গাইডও যথেষ্ট কড়া ছিল। ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্রী ছিল সাফিনা। সাহিত্যটা ভাল বুঝে। পিএইচডিতে কাজ করেছে বাংলাভাষাভাষীদের লেখায় ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। এই ধরনের সাহিত্যের পরিমান খুব অল্প হলেও সব সময় বেশ কিছু লোক বাংলাদেশে এইভাবে লেখালেখি করে গেছে ইংরেজিতে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখেছে। তাই ওর কাজটা বেশ ইউনিক। সাফিনার পিএইচডি কাজ থেকে তিনটা আর্টিকেল বের হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে। তাই নিজের এই এচিভমেন্ট নিয়ে নিজে বেশ গর্বিত। আদিবা রহমান নোট নেয়, সাফিনা নিজের একাডেমিক এচিভমেন্টে সন্তুষ্ট। তবে সাফিনা এরপর নিজেই বলে, আমার মনে হয় আরেকটু সময় দিতে পারলে আজকে হয়ত ফুল প্রফেসর হয়ে যেতাম। ঢাকার বাইরে যেতে রাজি থাকলে হয়ত একটা কলেজের প্রিন্সিপালও হতে পারতাম। দেখা যাক। এখন মেয়েরা যার যার মত ব্যস্ত, হাজব্যান্ড কর্পোরেটে সর্বোচ্চ সোপানের পানে ছুটছে। হয়ত এখন বাইরে কোথাও পোস্টিং নিব প্রিন্সিপাল হয়ে। এতদিন ধরে শিক্ষকতা করছি এইবার এখানে আরেকটু উন্নতি করলে খারাপ কি। সাফিনার কথায় সায় দেয় আদিবা রহমান। নোট নেয় প্রফেশনালি উচ্চাকাংখা আছে।
Like Reply
আদিবা রহমান ঘড়ি দেখেন সময় কমে আসছে। বেশ কিছু প্রশ্ন আছে এতক্ষণ যা  বলল তার  উপর। তবে আরেকটা মেজর টপিক বাদ পড়ে গেছে। আগে সেইটা নিয়ে কথা বলা দরকার। দাম্পত্য জীবন। আদিবা রহমান এইবার প্রসংগ শুরু করার জন্য বললেন আপনার হাজব্যান্ডের নাম জানি কি? উত্তর দিল সাফিনা- মিজবাহ করিম। কি করেন উনি। কর্পোরেট। আরেকটু ব্যাখ্যা করে সাফিনা। প্রথমে ব্যাটে চাকরি শুরু, এরপর ইউনিলিভারে অনেকদিন। এখন দেশি একটা কর্পোরেট হাউজে সেকেন্ড ম্যান। এটা দেশের টপ তিনটা দেশী কর্পোরেট হাউজের একটা। ফলে কাজের প্রেসার অনেক বেশি। আদিবা জিজ্ঞেস করল সব সময় কি উনি এমন ব্যস্ত ছিল নাকি এখন ব্যস্ততা বেড়েছে? সাফিনা উত্তর দিল গত সাত আট  বছরে ব্যস্ততা বেড়েছে। এইটা নিয়ে আপনার কোন অভিযোগ আছে? সাফিনা ভাবে, সত্যটাই বলে। আসলে কে না চায় একটু মনযোগ পেতে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় মিজবাহর অফিসটা বুঝি সব সময় খেয়ে ফেলে। আমাদের জন্য আর ওর হাতে সময় থাকে না খুব বেশি। আর যে ফ্রি টাইমটুকু পায় সেইটাও এমন কিছুতে ব্যয় করে যাতে প্রফেশনাল কানেকশন বাড়ে। হয়ত কোন কলিগের এনিভার্সারি বা বড় কর্পোরেটে আছে এমন কাউকে বাসায় দাওয়াত। সব মিলে মাঝে মাঝে মনে হয় অফিস বুঝি ওর মনোযোগ বেশি কেড়ে নিচ্ছে। আদিবা জিজ্ঞেস করে, রাগ হয় আপনার এটাতে? সাফিনা হাসে, বলে ঠিক রাগ না কিন্তু জেলাস ফিল করি। আমি জানি অফিস কোন মানুষ বা নারী নয় যে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু তবু কেন জানি জেলাসি ফিল হয়। মনে হয় মিজবাহ এর পূর্ন মনযোগ পাচ্ছে বুঝি খালি অফিস। এইবার একটু সেনসেটিভ প্রশ্ন, আপনার কি মনে হয় অফিসে এমন কেউ আছে যার জন্য অফিসে এত মনযোগ? সাফিনা প্রশ্নের অর্থ ধরতে পারে, সংগে সংগে মাথা নাড়ে আমার মনে হয় না। মিজবাহ ইজ লয়াল। অবশ্য মাথায় তখন আরশাদ আর নুসাইবার কথা মনে হয়। কয়েক মাস আগ পর্যন্ত নুসাইবাও আরশাদ সম্পর্কে এই কথাই বলত। তবে মিজবাহ এর ভিতরে ঠিক আরশাদের মত তেলতেলে ব্যাপারটা নাই। আরশাদের সব কথাতেই একটা তেল দেওয়া ভাব ছিল এইটা সাফিনার কখনো পছন্দ হত না। সাফিনা বলে মিজবাহ আসলে ঠিক প্রেম পরকীয়া করার মত লোক না। আদিবা নোট নেয়, স্বামীর উপর যথেষ্ট আস্থা আছে। আদিবা জিজ্ঞেস করে গত সাত আট বছরে বেশি ব্যস্ত হবার কারণ কি? চাকরির ধরণ পালেটেছে বা অন্য কিছু? সাফিনা বলে বলতে পারেন। তবে ওর নিজের মনে এর একটা ব্যাখ্যা আছে সেইটা বলবে কি বলবে না ঠিক করে উঠতে পারে না। আসলে এই সাত আট বছরে মিজবাহর প্রমোশন হয়েছে তিনবার। এখন ও একটা কর্পোরেট হাউজের সেকেন্ড ম্যান। ওর বয়স এখন আর্লি পঞ্চাশে। ফলে ঠিক গতিতে কাজ করতে পারলে দশ পনের বছর পর ও বাংলাদেশের কর্পোরেটের একজন লিজেন্ড হতে পারবে। আদিবার মনে হয় এর বাইরে আর কিছু বলতে চাচ্ছে সাফিনা। তাই জিজ্ঞেস করে আর কিছু কি আছে এই ব্যস্ততার কারণে। আদিবা ভাবছে সাফিনা বুঝি কোন এক্সট্রামেরিটাল রিলেশনের কথা বলবে। এইসব সেশনে মহিলারা প্রথমে নিজের স্বামীকে ফেরেশতা মানলেও পরে আস্তে আস্তে নিজেদের সন্দেহের কথা বল। তবে সাফিনা বলল পুরো ভিন্ন একটা কারণ।


সাফিনার মনে এই সন্দেহটা অনেকদিন ধরে আছে। সাফিনা আর কার সাথে এই কথাটা শেয়ার করতে পারে নি। নুসাইবা নরমালি ওর অনেক কথা শেয়ার করার সংগী কিন্তু ওর ভাইয়ের সম্পর্কে এই কথাটা শেয়ার করতে পারে নি কোন প্রমান ছাড়া। সাফিনার মনে হয় এই কথাটা কি এখানে শেয়ার করা ঠিক হবে? আবার মনে হয় এতদিন ধরে মনের ভিতর পুষে রাখা সন্দেহটা অন্তত এক জায়গায় প্রকাশ করা দরকার। হয়ত সাইকোলজিস্ট শুনে বলতে পারবে ওর সন্দেহ কতটা যৌক্তিক। সাফিনা বলে আমার এই সন্দেহটা ঠিক কতটা যুক্তিযুক্ত আমি শিওর না। আমি ছাড়া আর কেউ এটা খেয়াল করেছে বলে মনে হয় না। আদিবা রহমান জিজ্ঞেস করে কি? সাফিনা বলেন মিজবাহ এর গত সাত আট বছরে আর বেশি অফিসে জড়িত হওয়ার পিছনে আমাদের মেয়েদের একটা সম্পর্ক আছে। আদিবা জিজ্ঞেস করেন কিভাবে? সাফিনা বলে মিজবাহ আমাদের দুই মেয়ে সাবরিনা আর সিনথিয়া কে অসম্ভব ভালবাসে এইটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। তবে মিজবাহ অন্তত একটা ছেলে চেয়েছিল। শুরুতে পর পর দুইটা বাচ্চা হবার পর আমার বিসিএস হয়ে গেল। তখন কিছুদিনের জন্য আমরা বাচ্চা না নেবার পরিকল্পনা করি। এর মধ্যে আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ী মারা গেলেন। ননদের ভার্সিটি চলছে তাই এর মধ্যে বাচ্চা নিলে আমাদের দুইজনের উপর অতিরিক্ত প্রেশার পড়বে। তাই এই সময় আমরা দুইজন আর কোন বাচ্চাকাচ্ছা চাই নি। তবে মিজবাহ এর কথা শুনে মনে হত ও আরেকটা বাচ্চা চায় এবং সেইটা একটা ছেলে হলে ভাল। এইসব কথা ও অন্য কার সামনে কখনো বলত না। আমাদের দুই মেয়ের প্রতি ওর কখনো অবহেলা ছিল না, বরং ওর অতিরিক্ত আদরে মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমাদের মেয়ে দুইটা বুঝি একটু বেশি আদুরে হয়ে গেছে, কেউ কেউ তো আমাদের ছোট মেয়ে নিয়ে বলে ও খানিকটা বখে গেছে। আদিবা জিজ্ঞেস করে আপনার ছোট মেয়ে কি আসলেই বখে গেছে? সাফিনা হেসে বলে না, সিনথিয়া একটু জেদি আবার খানিকটা দুষ্টু কিন্তু এমনিতে ওর মন ভাল। আদিবা বলে, হ্যা আপনার ব্যাখ্যাটা বলুন। সাফিনা আবার বলে, বাংলাদেশের সমাজে যে যত ভাল পরিবার বা শিক্ষাদীক্ষায় বড় হোক না কেন, যত লিবারেল বলে নিজেকে দাবি করুক না কেন খুব কম সময়ে কিছু কিছু ধারণা থেকে মানুষ বের হতে পারে। আর কোন মানুষ কতটা লিবারেল সেইটা আসলে তার হাজব্যান্ড বা ওয়াইফ থেকে ভাল কেউ বলতে পারবে না। মিজবাহ এর মেয়েদের নিয়ে সমস্যা নাই তবে ওর মনে একটা পুরাতন ধারণা রয়ে গেছে। বংশের ধারা থাকে নাকি ছেলেদের হাতে। ফলে যদি কোন ছেলে না হয় তাহলে ওর দিক থেকে ওর বংশের ধারা বন্ধ হয়ে যাবে। আরেকটা জিনিস মিজবাহ সচেতন ভাবে না খেয়াল করলেও মাঝে মাঝে ওর আচার আচরণে বুঝা যায়। যেমন মিজবাহ ওর ভাই বা অন্য কার ছেলেদের কে উপদেশ দেবার সময় বলে বাবার নাম উজ্জ্বল করার দ্বায়িত্ব তোমার। কিন্তু ঠিক সেই ফ্যামিলির মেয়েকে কিন্তু এই উপদেশ দেয় না। হয়ত মেয়েটা আর বেশি মেধাবী আর পরিশ্রমী। আমার মনে হয় ওর মনে একটা ধারণা রয়ে গেছে ওর নাম বহন করবার জন্য দরকার ছেলে আর ওর কোন ছেলে নেই। সেই কারণে ওর মনে হয়েছে এমন কিছু করে যেতে হবে ওর কর্মক্ষেত্রে যেটার জন্য ওর মৃত্যুর পর সেই কাজটা ওর নাম বহন করে। এইটা এত সুক্ষভাবে ওর ব্যবহারে আছে যে কেউ হয়ত খেয়াল করবে না আমি ছাড়া। এর মধ্যে আমার বয়স যখন ৩৫/৩৬ তখন আবার নতুন করে বাচ্চা নেবার কথা বলল মিজবাহ তবে আমি তখন পিএইচডি শুরু করেছি। সংসার, চাকরি আর পিএইচডি সব মিলিয়ে আরেকটা বাচ্চার কথা ভাবার আমার সময় ছিল না। এর মধ্যে বড় মেয়ে এসএসসি দিয়ে দিয়েছে। এই সময় আরকেটা বাচ্চা হওয়াও একটা লজ্জার ব্যাপার। আদিবা বলে আপনার তো বেশ কমে বয়েসে বিয়ে হয়েছিল ফলে আপনার বাচ্চা তাড়াতাড়ি বড় হয়েছে তাই এতে এত লজ্জা পাবার কি ছিল। সাফিনা বলে হ্যা আপনার কথা সত্য আমার ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল, ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার তখন। আর বাচ্চা হল ২০ বছর বয়সে। আদিবা বলে তাহলে ৩৫/৩৬ বছর বয়সে বাচ্চা হওয়া তো স্বাভাবিক। সাফিনা বলে হ্যা। আমার অনেক বান্ধবীর প্রথম বাচ্চা হয়েছে ঐ বয়সে। যারা ভার্সিটির পড়া শেষে কিছুদিন চাকরি করে বিয়ে করেছে। তবে আসলে পিএইচডিটা আমি করতে চাইছিলাম আর একটু লজ্জাও লাগছিল। যদিও আমার বয়স কম ছিল তবে আসলে মেয়েদের বয়স হিসাব করলে মাদারহুডের গন্ডিতে আমি তো আসলে বেশ সিনিয়র। সব মিলিয়ে আমি না করে দিয়েছি। মিজবাহ বেশ কয়েকবার বিভিন্ন প্রসংগে এই কথা তুলেছে। আমাকে অনুরোধ করেছে তবে আমি বলেছি অন্তত এই মূহুর্তে সম্ভব না। একটা ভাল দিক হল মিজবার যে ও সেই সময় আমাকে জোরাজুরি করে নি। তবে ও যে আশাহত হয়েছে সেইটা আমি পরে বুঝেছি। আর আমার পিএইচডি শেষ হতে হতে আমার বয়স ৪১ হয়ে গেল। এরপর মিজবাহ কথা তুলে নি আমিও কিছু বলি নি। আমি না বলবার পর থেকে মিজবাহ আস্তে আস্তে বেশি করে কাজে ঝুকে পড়ল। এই ব্যাপারটা আসলে আমি তখন ঠিক করে  বুঝে উঠতে পারি নি। গত এক বছর ধরে সব যখন ভাবছি পিছনের কথা তখন এই বাখ্যাটা মাথায় আসছে। আদিবা জিজ্ঞেস করে আগে বুঝতে পারলে কি করতেন? সাফিনা একটু ভাবে। বলে, হয়ত আরেকটা বাচ্চার চেষ্টা করতাম। এতে মিজবাহ হয়ত ফ্যামিলিতে আর সময় দিত, ওর মনের আশা পূরণ হত। একটু হাসে সাফিনা। আজকাল মেয়েরা বড় হয়ে যাবার পর থেকে বাসা একদম খালি খালি লাগে। আরেকটা বাচ্চা থাকলে মন্দ হত না। মিজবাহ আর আমি হয়ত সেই বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আমার একাকীত্ব আর মিজবাহ এর নিজের বংশের ধারা বজায় রাখার চিন্তা সব পূরণ হত। আদিবা খাতায় নোট নেন, বাচ্চা নেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাফিনার মনে একটা দ্বিধা তৈরি হয়েছে যে আগের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কি সঠিক ছিল না।


সাফিনা তখন অন্য প্রসংগ টানে। আপনার এখন বিয়ের বাইরে কোন সম্পর্ক নেই তো। প্রশ্ন শেষ করার আগেই না না করে উঠে সাফিনা। আদিবা হেসে উঠে। সাফিনা বলে আপনি হাসছেন কেন? আমার আসলেই এমন কিছু নেই। আদিবা বলে স্যরি আসলে সেই কারণে হাসি নি, আপনি যেভাবে প্রশ্ন শেষ করার আগেই না না করে উঠলেন তাতে হাসলাম। এইবার সাফিনাও হাসে। আদিবা বলে আপনি কিন্তু অনেক সুন্দরী। সাফিনা বলে থ্যাংক্স। আদিবা বলে অনেক আছে খালি সুন্দর ফ্যাশেনবল জামা কাপড় পড়ার কারণে সুন্দরী মনে হয় কিন্তু দেখা যায় বাস্তবে এভারেজ। কিন্তু আপনি সেই সুন্দরী যাকে সুন্দর প্রমাণ করার জন্য কিছুর দরকার নেই। দেখুন না। আজকে খালি একটা তাতের শাড়ি পড়ে এসেছেন। এমন কি সামান্য লিপস্টিক নেই আপনার ঠোটে। তাও এক দেখায় যে কেউ বলবে আপনি সুন্দরী। আপনার চেহায়ার একটা ৫০/৬০ দশকের সাদা কাল যুগের নায়িকাদের মত সৌন্দর্য আছে। চোখ ফেরানো কঠিন এমন একটা সৌন্দর্য। সাফিনা লজ্জা পায়। এইভাবে প্রসংসা শুনলে সবাই লজ্জা পায় আবার খুশিও হয়। সাফিনা একটু হেসে বলে জানেন বয়স আরেকটু কম থাকতে লোকে বলত আমার সৌন্দর্যের সাথে নাকি মধুবালার মিল আছে। আদিবা বলে হ্যা খেয়াল করলে কিন্তু আপনার ফেস কাটিংটা সেরকম মনে হয়। আর আপনার হাসির সাথেও বেশ মিল। আদিবা বলে আপনার সিক্রেট এডমায়ারার নেই? সাফিনা হেসে বলে কোন মেয়ের নেই বলুন তবে আমি কখনো এইসবে পাত্তা দেই না। বাঙ্গালদেশে কোন মেয়ে একটু সুন্দর হলে তার বয়স চল্লিশ হলেও ছেলেরা পিছনে ছোক ছোক করে। আদিবা রহমান সম্মতিতে মাথা নাড়ে। সাফিনার কথা সত্য। আর সাফিনা খালি সুন্দর না ডাক সাইটে সুন্দর। আদিবা সাফিনা কে আবার খেয়াল করেন। পাচ ফুট ছয় হবে উচ্চতা। গায়ের রঙ দুধে আলতা সাদা। তবে অনেক সাদা কে দেখলে মনে হয় খালি চেহারা সাদা কিন্তু চেহারার কোন ছিরি ছাদ নেই। তবে সাফিনার ফেস কাটিং সুন্দর তার সাথে তার গায়ের কালার মিশে একটা অন্য রকম ব্যাপার এনে দিয়েছে। কম বয়সের সেই তন্বী তরুণী ভাব নেই তবে কেউ তাকে দেখে বলবে না বয়স ৪৬, বড় বড় দুইটা মেয়ে আছে। এমন হাইটের বাংগালী মেয়ে কম। তার উপর তার গায়ের রঙ আর ফিগার। আদিবা রহমান সব সময় বিশ্বাস করেন বয়সের সাথে মেয়েদের সৌন্দর্য বাড়ে যদি তারা সেইটা ধরে রাখতে পারে। সাফিনা করিম তার পারফেক্ট এক্সামপল। বয়সের সাথে যোগ হওয়া অতিরিক্ত ওজন যেন একটা আভিজাত্য এনেছে চেহারা আর শরীরে। আর উচ্চতা ভাল হবার জন্য শরীরে যোগ হওয়া ওজন একটু বেশি মনে হচ্ছে না বরং শরীরের মেয়েলী অংশগুলো কে আর বেশি আকর্ষণীয় করেছে। আদিবা এইসব ভাবতে ভাবতে বলে, হ্যা যা বলছিলেন বলুন। সাফিনা বলে আমি কখনো এইসব পাত্তা দেই নি। আমার পরিবার আমার জন্য সব। মিজবাহ এর উপর মাঝে মাঝে রাগ হয় তাই বলে বাইরের কার কাছে আমি সেই নিয়ে গল্প করে সেইখানে অন্য কোন মানুষের ঢোকার সুযোগ দেই নি। আর আমার কাছে মনে হয় প্রেম একটা পবিত্র সম্পর্ক। সেখানে পরকীয়া হল এই সম্পর্কের একটা কালিমা। কারণ এখানে মানুষ কে ধোকা দিয়ে সব শুরু। আদিবা নোট নেন। আদিবা আবার জিজ্ঞেস করে, এখন না হয় নেই কিন্তু বিয়ের আগে ছিল না। সাফিনা প্রায় ত্রিশ সেকেন্ড নিশ্চুপ থাকে। অনেকদিন আগের কথা। এত বছর এই প্রসংগ কেউ তাকে প্রশ্ন করে নি। ভুলেই গিয়েছিল সেই কথা। এমন কি মিজবাহ পর্যন্ত জানে না। সাফিনা অস্ফুট স্বরে বলে, হ্যা ছিল। আদিবা বলে কে ছিল? কি নাম? সাফিনার মনে হয় অন্য এক জীবনের গল্প উঠে আসছে যেন। পুরাতন কত কিছু মনে পড়ছে। গত ২৫/২৬ বছর যেন ভুলে ছিল সব। সাফিনা বলে আরেকদিন বলি? আদিবা ঘড়ি দেখে। সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এইসব ব্যাপারে মেয়েরা অনেক সেনসেটিভ হয়। প্রথমবারের প্রশ্নেই যে সাফিনা বিয়ের আগের প্রেমের কথা বলেছেন সেইটা একটা বড় ব্রেকথ্রু। পরে অন্য সেশনে এইটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। দেখতে হবে এই ব্যাপারটা সাফিনা করিমের ডিপ্রেশনের জন্য কতটুকু দায়ী। আদিবা বল, ওকে আজকে তাহলে এখানে থাক। পরে কখনো অন্য সেশনে এই বিষয়ে কথা হবে।
Like Reply

গাড়ি এখন সুনামগঞ্জের ভিতর সদরপুর বলে একটা জায়গায় এসে থেমেছে। বেলা দুইটা  বাজে। গতকাল দুপুরের পর থেকে মাহফুজ বা নুসাইবা কেউ কিছু খায় নি। নুসাইবার প্ল্যান ছিল রাতে প্লেনে উঠে একেবারে খাবার খাবে আর মাহফুজের প্ল্যান ছিল নুসাইবা কে প্লেনে তুলে দিয়ে খাবার খাবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। ইংল্যান্ডগামী প্লেনের বদলে নুসাইবা এখন এক মাইক্রোর ভিতর বসে আছে। মাইক্রোটা একটা রাস্তার পাশে দোকানের পিছনে পার্ক করা। রাস্তা থেকে ঠিক দেখা যায় না। মাহফুজ গাড়ি থেকে নেমে একটু হাটছে তবে বেশিদূর যাচ্ছে না। সোলায়মান শেখের কঠিন নির্দেশ যত কম সম্ভব মানুষের চোখে পড়তে হবে। এই দোকানটা আমিনের পরিচিত এক ছেলের। আমিন এইখানে এনে গাড়ি রেখেছে। দোকান থেকে তিনটা নাবিস্কো বিস্কুটের প্যাকেট আর দুই বোতল মামের পানি নিয়ে এসেছে। দুইজন ক্ষুধার্ত ছিল তাই কোন কথা না বলে প্যাকেট খুলে বিস্কুট খেতে থাকে। ঢাকা শহরে আজকাল নাবিস্কোর বিস্কুট গুলো দেখা যায় না। তবে মফস্বল আর গ্রামের দিকে এখনো দোকানে নাবিস্কোর বিস্কুট পাওয়া যায়। নুসাইবা এই বিস্কুটের প্যাকেট দেখে অবাক হয়। ওর ছোটকালে পাড়ার দোকানে পাওয়া যেত। ছোট ছোট এই প্যাকেটু গুলা এখনো বিক্রি হয় এইটাই অবাক করল নুসাইবা কে। নুসাইবা আড় চোখে মাহফুজ কে দেখে। গতকাল রাতে মাইক্রো চলা শুরু করার পর অল্প কিছু কথা হয়েছিল। এরপর থেকে দুইজনের কথা বন্ধ। নুসাইবা টের পায় বাস্টার্ড বলাটা একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে। তবে নুসাইবা জানে ওর মেজাজ  ওর উইক পয়েন্ট। এর আগেও মেজাজের জন্য অনেকের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। তবে নুসাইবা এখনো শিওর না আসলেই কি মাহফুজ কিছু জানত না এই সোলায়মান শেখের প্ল্যান বি নিয়ে নাকি সব কিছু মাহফুজের পরিকল্পনা। আবার নুসাইবা ভাবে এয়ারপোর্টে তো আসলেই মুন্সীর লোক ছিল। সেটা তো আর মাহফুজ প্ল্যান করে দিতে পারে না। নুসাইবার মনে হয় আবার আরেকটা ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ওর মনে হয় এখন আসলেই মাথা ঠান্ডা রাখার সময়। এই সময় ওর আসল মিত্র আসলে মাহফুজ। এমন অচেনা অপরিচিত একটা জায়গায় থাকতে হবে। যেখানে একমাত্র পরিচিত মাহফুজ। আবার এই আমিন লোকটার সাথে যাচ্ছে। লোকটা কেমন কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত কোন আইডিয়া নাই। আমিন লোকটার বেশ কিছুক্ষণ ধরে খোজ নাই। নামায পড়তে গেছে বলল। ফযরের সময়ও এক জায়গায় গাড়ি থামায়ে নামায পড়ে আসছে। এমনিতে লোক ভাল মনে হচ্ছে। বেশ নামাযী লোক। ওরে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করছে ভাবী কোন দরকার থাকলে বলবেন। ভাবী ডাক শুনে বেশ কিছুক্ষণ বুঝতে পারে নি ওকে ডাকছে। নরমালি এমন লোকরা ওকে ম্যাডাম বলে। তবে এই লোকটা কেন ভাবী ডাকছে সেইটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলেও ব্যাপারটা নুসাইবা কে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। বিয়ের পর থেকে ভাবী ডাকটা খুব কমন। আরশাদের বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়, কলিগ এমন হাজার জন ডাকছে। কিন্তু এইবার ভাবী ডাকটা আরশাদের জন্য ডাকা হচ্ছে না ডাকা হচ্ছে মাহফুজের জন্য। এই বিষয়টা মাথায় আসতেই অস্বস্তিটা যাচ্ছে না। কিন্তু কিছু করার নেই। সোলায়মান শেখ বারবার বলে দিয়েছে যেন কার কোন ভাবেই সন্দেহ না হয় যে ওরা হাজব্যান্ড ওয়াইফ না। আমিন ওর কাছের লোক হলেও আমিন যেন টের না পায়। কারণ সোলায়মান শেখ বলে দিয়েছে এখন লোকজন একজন বছর চল্লিশের একজন শহুরে মহিলা কে খুজবে। কিন্তু নুসাইবা আর মাহফুজ যদি একসাথে হাজব্যান্ড ওয়াইফের অভিনয় করে তাহলে ওদের খুজে বের করতে একটু কষ্ট হবে। আর আমিন এমনিতে যথেষ্ট ধার্মিক লোক। তাই তার কাছে না বলাই ভাল যে নুসাইবা মাহফুজ আসল হাজব্যান্ড ওয়াইফ না।


আমিন নামায পড়ে ফেরত এসেছে। মাহফুজ কে বলে ভাইজান এখন তেমন কিছু খাবার ব্যবস্থা করতে পারি নাই। সামনে একটা বাজার আছে। ঐখানে কোন ভাতের হোটেলে থামানো যাইত কিন্তু সোলায়মান স্যার মানা করে দিয়েছে যেন বাজার বা হোটেল যেখানে অনেক লোক আছে তেমন কোথাও না থামাই। তাই আপাতত এই বিস্কুট দিয়ে পেট ভরান। নুসাইবার দিকে তাকিয়ে বলে ভাবীজান আপনার কিছু লাগবে? মাহফুজ হাসতে গিয়েও হাসি আটকালো। গতকাল রাতে নুসাইবা একটা সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। নুসাইবার জন্য এতবড় একটা রিস্ক নিচ্ছে ও। সেখানে ওকে সন্দেহ করে বাস্টার্ড বলে গালি দিচ্ছে। এইটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ঠিক সেই মূহুর্তে মাহফুজ ভয়ংকর রেগে গেলেও আর কিছু বলে নি। আমিনের সামনে কোন কথা বাড়িয়ে সন্দেহ তৈরি করতে চায় না। কারণ এখন নুসাইবার সেফটির সাথে ওর নিজের সেফটিও জড়িত। মুন্সী বা ম্যানেজার সম্পর্কে যা যা খবর যোগাড় করেছে মাহফুজ তাতে মনে  হয় না ওরা সহজে ওকে ছাড়বে নুসাইবা কে হেল্প করার জন্য। ফলে এই মুহুর্তে সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে নুসাইবা কে সেফ রাখা। এতে ওর নিজের সেফটিও সুরক্ষিত থাকবে। তবে নুসাইবার উপর রাগটা ভিতরে আছে ওর। তাই বারবার যখন আমিন ভাবী ভাবী বলে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে এতে মাহফুজ বেশ মজা পাচ্ছে। কারণ ও জানে নুসাইবা এই ভাবী ডাকে চরম অস্বস্তিবোধ করছে কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না। আমিনের প্রতিটা ভাবী ডাক তাই মাহফুজের জন্য মনে হচ্ছে এক একটা প্রতিশোধ। আমিন বলতেছে ভাবীসাব আমার বাড়ী হাওড়ের মাঝে। আর আধা ঘন্টা সামনে গেলে একটা ঘাট আছে। সেখান থেকে আমরা একটা ট্রলারে উঠব। এমনিতে আমার বাড়ি যাবার পথে লঞ্চ যায়। তবে সোলায়মান স্যারের কথা অনুযায়ী আপনাদের ঐখানেও তোলা যাবে না। লোকজনের নজর এড়ানোর জন্য। আমিও যাব সাথে করে। এমনিতে লঞ্চে গেলে বাড়ি থেকে আধা ঘন্টা দূরে একটা গঞ্জের বাজার আছে। সেখানে থামে। ট্রলারে একদম বাড়ির মুখে নামা যাবে। আপনারা চিন্তা কইরেন না। তিন চার ঘন্টা লাগবে। তবে মাগরিবের আযানের মধ্যে বাড়ী পৌছায়ে যাব।


আমিনের কপালে চিন্তার রেখা। অনেকদিন ধরে সে এইসব কাজের সাথে জড়িত না। ওদের এলাকায় কেউ বেশি পড়াশুনা করে না। তাও আমিন মেট্রিক পর্যন্ত পড়ছিল। এরপর আর পড়াশুনা করা হয় নায়। সিলেট শহরে গেছিল এক আত্মীয়ের কাছে কাজের জন্য। সেখানে প্রথমে কিছুদিন এক চালের আড়তে হিসাব লিখত। এইটা কাজটা ভাল লাগে নাই আমিনের। সারাদিন দোকানে বসে থাকার লোক না আমিন। আর সেইটা আর কম বয়স সারাদিন মন উড়ুউড়ু করে। সেখান থেকে বের হয়ে আসলে নানা রকম লোকের সংগে পড়ে গেল। এখান থেকেই প্রথম গাজা খাবার শুরু। এরপর আস্তে আস্তে হিরোইন। এক সময় আমিন পুরো নেশাখোর হয়ে গেল। পরিবারের সাথে যোগাযোগ নাই, হাতে টাকা নাই। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবের সাথে মিলে ছিচকা ছিনতাই করে সেই ছিনতাইয়ের টাকাটাও নেশাতে যায়। এই রকম অবস্থায় প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আমিন। যে মারটা সেইবার খাইছিল সেইটা ভুলার না। এখনো আমবস্যা পূর্ণিমার রাতে গিড়ায় গিড়ায় ব্যাথা করে। তবে ওদের দলের একজনের মামা সরকারী দলের নেতা ছিল। তাই সাত দিন জেলে থেকে শেষ পর্যন্ত ছাড়া পাইছিল। সেইবার প্রথম বড় একটা ধাক্কা খায় আমিন। সেই ধাক্কা কিছুটা সোজা করলেও পুরো নেশা থেকে বের হতে পারে নি। এই সময় আর টাকার জন্য ছিনতাই করা বন্ধ করে দেয়। পুলিশের এত মার আর সহ্য করার ক্ষমতা নাই ওর। সেই সময় এক বন্ধুর বুদ্ধিতে ড্রাইভিং শিখে। সারাদিন এইখানে সেইখানে ক্ষ্যাপ আর রাতে নেশা। এভাবে গেল আর এক বছর।


এরপর আসল আরেক সময় আমিনের জীবনে। সেই সময় টাকায় নেশায় পাইল আমিন কে। গাড়িতে যে ক্ষ্যাপ মারে তখন গাড়ির ভিতর লুকায়ে ফেন্সিডিল, হিরোইন পৌছাইতে হবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা। টাকা পাওয়া যায় প্রচুর। সেই টাকায় ফূর্তি হয়। আর এই সময় অপরাধ জগতের ভিতরে অনেকের সাথেই কমবেশি পরিচয় হয় আমিনের। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে। তবে আস্তে আস্তে খ্যাপের কাজ বেশি নেওয়া শুরু করল ঢাকার দিকে। কারণ তাইলে ঢাকা সিলেট বা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এইসব জায়গায় ড্রাগ পরিবহন করে টাকা পাওয়া যায় উপুড়ি। সেই সময় দ্বিতীয়বার পুলিশ ধরল ওরে। তবে নিজের গাড়িতে করে ড্রাগ নেবার সময় না। ভাগ্য খারাপ ছিল। আরেক ড্রাইভার বন্ধু ড্রাগ সাপ্লাই দিতেছিল, ও এমনি গাড়িতে ছিল গল্প করার জন্য। সেই সময় পুলিশের মারের ভয়ে আমিনের অবস্থা খারাপ। ঠিক তখন প্রথম দেখা হইল সোলায়মান শেখের সাথে। নতুন নতুন ডিবিতে আসছে সোলায়মান শেখ। ডিবির একটা দল কে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকায় যে রুট গুলা দিয়ে ড্রাগ ঢুকে সব গুলা আইন্ডেটিফাই করে এদের হোতাদের চিহ্নিত করা। সোলায়মান শেখ তখনো বেশ নতুন পুলিশে। মনে তাই দয়ামায়া বেশি ছিল। আমিনরে মাইর দিয়ে কথা বের করার দ্বায়িত্ব ছিল সোলায়মান শেখের উপর। তবে দুই একটা বাড়ি দেওয়ার পর আমিনের আকুতি মিনতি ভার চোখে ভয় দেখে সোলায়মানের দয়া হয়। সেখান থেকে আস্তে আস্তে সোলায়মান শেখের সোর্স হয়ে যায় আমিন। প্রায় সাত আট বছর এই লাইনে ছিল। ভাল সোর্স ছিল। প্রচুর খবর দিছে সোলায়মান শেখকে। সোলায়মান শেখের জীবনের প্রথম সোর্সও আসলে এই আমিন। তবে আমিনের জীবনের সব চেঞ্জ হয়ে গেল জোহরার সাথে দেখা হবার পর। সেটাও আজ থেকে পনের  বছর আগের কাহিনী। তবে গোপন জগতটা চাইলেই সহজে ছাড়া যায় না। তাই সেটা থেকে বের হইতে হইতে আর চার পাচ বছর লাগছে। এই সময়টা সোলায়মান স্যার তারে ছায়া দিয়ে রাখছে যাতে বড় কোন ঝামেলায় না পড়ে। এইসব কারণে সোলায়মান শেখের উপর কৃতজ্ঞ আমিন। সোলায়মান যখন তাই বলছে তার দুইজন কাছের লোকের উপকার করা লাগবে তখন চোখ বন্ধ করে রাজি হয়েছে। তবে আমিনের প্রথম চিন্তা ইনাদের সব এড়ায়ে নিজের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া। অপরাধ জগতে কাজ করার জন্য আমিন জানে এরা কত জায়গায় টাকা দিয়ে খবর বের করে ফেলতে পারে। সোলায়মান স্যার ঢাকা শহরের রাঘব বোয়াল অপরাধীদের ভয়ের কারণ। কিন্তু গতকাল সোলায়মান স্যার যেভাবে বার বার সাবধান করছে তাতে বুঝা যাচ্ছে এই মাহফুজ ভাইয়ের পিছনে যারা লাগছে তারা বড় ক্ষমতাশালী। সোলায়মান স্যার অবশ্য বলে দিছে মাহফুজ ভাই নিজেও বড় নেতা। এখন নির্বাচনের সময় কিছু লোক পিছে লাগছে, তাই কয়েক সাপ্তাহ একটু আড়ালে থাকা লাগবে এমন খানে যেখানে তাদের কেউ খুজবে না। আমিন তাই না করে নায়। তবে মাহফুজ ভাইয়ের বউ, ভাবীরে নিয়ে ওর চিন্তা। ভাবীর আচার আচরণে কোনভাবে উনারে গ্রামের মানুষ প্রমাণ করার উপায় নাই।  যে কেউ দেখলেই বুঝবে উনি শহরের লোক। উনারে তাই কিভাবে আড়ালে রাখা যায় এইটা একটা ব্যাপার। অবশ্য ওর বাড়ি এইজন্য ভাল একটা জায়গা। তবে আর সচেতন হতে হবে। আর দুই নাম্বার ব্যাপার হল জোহরা কে খবর দেওয়া হয় নায়। নরমালি ওর বাড়ির সব জায়গায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক নাই। বাড়ির দক্ষিণ কোণায় অল্প কিছু জায়গায় নেটওয়ার্ক আছে। জোহরা মাঝে মাঝে ঐ জায়গায় গিয়ে নেটওয়ার্ক পাইলে ফোন দেয় ওরে, যখন কাজের জন্য বাইরে থাকে। আজকে জোহরা একবারও ফোন দেয় নায়। শহর থেকে দুইজন দামী মেহমান নিয়ে যাচ্ছে, খাওয়া দাওয়ার কি অবস্থা হবে, থাকার কি ব্যবস্থা হবে কিছুই জোহরা কে বলা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার সময় মাগরিবের ওয়াক্তে এইভাবে মেহমান নিয়ে হাজির হলে জোহরা রাগ করবে। জোহরা বাড়িতে বাচ্চা নিয়ে একা থাকে। তাই মেহমান আসলে খুশি হয়। তবে জোহরা সব সময় আয়োজন করতে পারলে আর খুশি হয়। এখন খবর না দিয়ে গেলে আয়োজন হবে না। আপাতত কিছু করার নাই এইভাবেই যেতে হবে। আর উনাদের সবার নজর বাচায়ে ঠিক মত নিয়ে যাওয়া আসল কাজ। আমিন একবার যে কাজে কথা দেয় সে কাজ জীবন দিয়ে হলেও করে।
Like Reply

গত এক ঘন্টা ধরে ট্রলারে বসে আছে নুসাইবা আর মাহফুজ। আমিনও আছে সাথে। মালবাহী ট্রলার। চালের বস্তা থেকে নানা রকম জিনিস আছে ট্রলারে। আমিনের বাড়ির পাশে যে হাট সেখানে কয়েকটা দোকানের মাল নিয়ে যাচ্ছে এই ট্রলার। ট্রলারের সুকানি আমিনের কলেজের বন্ধু। আমিন তাই ওর ট্রলারেই নিয়ে যাচ্ছে। আমিন জানে ওর এই বন্ধু বিশ্বস্ত। ও বলে দিলে ভুলেও কোন কথা কোথাও বলবে না। আর ওর ট্রলারের বাকি ছেলে গুলা ওরে বিশাল ভক্তি করে। সাড়ে তিনটার মত বাজে। নুসাইবা ওড়নাটা টেনে ঠিকমত মাথার উপর দেয়। আজকে ঝলমলে রোদ আকাশজুড়ে। যতদূরে চোখ যায় খালি পানি আর পানি। মনে হচ্ছে যেন সমুদ্র। মাঝে মাঝে হঠাত করে জেগে উঠা গ্রাম অথবা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত একটা ভূমিখন্ড আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি ভুলে ভেংগে দেয়, মনে করিয়ে দেয় এইটা হাওড়। ঝকঝকে আকাশ থেকে আসা সূর্যকিরণ স্বচ্ছ পানিতে পড়ে ঝিকমিক করছে। বেশিক্ষণ সেই পানির দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখে লাগে। নিস্তব্ধ হাওরের মাঝে খালি ট্রলারের ইঞ্জিনের শব্দ। আমিন আর তার বন্ধু ট্রলারের মাঝ বরাবর একটা জায়গায় বসে কথা বলছে। ট্রলারের হাল আমিনের বন্ধু ট্রলারে কাজ করে একটা ছেলের উপর দিয়ে রেখেছে। এই মূহুর্তে আর কিছু করার নেই। খালি হাল সোজা করে ধরে রাখতে হবে। জটিল জায়গা আসলে আমিনের বন্ধু হাল ধরবে। রোদের কারণে ভাল করে চারপাশ দেখতে পারছে না নুসাইবা। খালি বিস্কুট খেয়েছে। মাইক্রোর ভিতর হালকা করে কয়েক দফায় ঘুম দিয়েছে তবে সেই রকম ভাল ঘুম হয় নি। এখন প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে তবে এই রোদের মধ্যে ঠিক ঘুম আসছে না। পাশ দিয়ে আরেকটা ট্রলার গেল। সেই ট্রলারের ঢেউয়ে দুলে উঠছে ওদের ট্রলার। শান্ত পানিতে শুধু আরেকটা ট্রলারের ঢেউ কাপুনি ধরিয় দিয়েছে ওদের ট্রলারে। নুসাইবার মনে হয় ওর জীবনটা কত শান্ত ছিল। যা চাওয়া যায় প্রায় সবকিছু ছিল ওর জীবনে। কিন্তু গত কিছুদিনে একের পর এক মানুষের সাথে ওর পরিচয় হচ্ছে যাদের ধাক্কায় ওর জীবনের বাক বদলে যাচ্ছে। প্রথমে এই মাহফুজ, পরে ম্যানেজার আর শেষে মুন্সী। ওর শান্ত নিস্তরংগ জীবনে এরা যেন পাশ কাটিয়ে যাওয়া ট্রলার। প্রত্যেকেই ওর জীবনে উথাল পাতাল ঠেউ তুলে দিচ্ছে।


মাহফুজ হাত দিয়ে রোদের আড়াল করতে চায় চোখ কে। যুব কমিটিতে যখন বড় পদ পেল তখন ওদের যুব সংগঠনের সভাপতি ওকে একটা কমিটির মেম্বার করে দিয়েছিল। যে কমিটির কাজ ছিল দেশ জুড়ে ঘুরে ঘুরে সংগঠনের নানা ইউনিটের সাথে কথা বলে একটা দেশব্যাপী সংগঠন পূর্নগঠনের খসড়া তৈরি করা। সেই সূত্রে বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে। তবে এমন ভ্রমণ করা হয় নি। চারপাশে তাকায় মাহফুজ। আমিন বন্ধুর সাথে গল্প করে। ট্রলারের গলুইয়ে বসে আছে একটা ছেলে, হাল ধরে আছে আরেকজন। ট্রলারের ইঞ্জিন রূমে পানি পরিষ্কার করছে আরেকটা ছেলে। নুসাইবা চালের বস্তার উপর জড়সড় হয়ে বসে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশ দেখছে। পাশ দিয়ে যাওয়া আরেক ট্রলারের ঠেউয়ে বেশ ভাল ভাবে কেপে উঠেছে ওদের ট্রলার। নুসাইবা খামচে চালের বস্তা ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। মাহফুজ হাসে। নুসাইবা ওর কমফোর্ট জোনের বাইরে চলে এসেছে। এইসব পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত নয় বুঝায় যাচ্ছে ওর আচার আচরণে। এমন করে ট্রলারের মধ্যে চালের  বস্তায় বসে আর কোথাও নুসাইবা যায় নি এইটা কোটি টাকা বাজি ধরে বলা যায়। অন্য সময় হলে আমিন বা আমিনের বন্ধু অথবা ট্রলারের ছেলে গুলো নুসাইবা কে ম্যাডাম ম্যাডাম বলতে বলতে অস্থির হয়ে যেত। কেউ একজন হয়ত মাথায় ছাতা ধরে থাকত। আমিনের বাড়ি হাওড়ের মাঝে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, কথা বলে যা বুঝেছে মাহফুজ। মনে মনে হাসে। এই ট্রলারের চালের  বস্তাতে বসে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সেই বাড়িতে দুই তিন সাপ্তাহ থাকলে কি হবে ভাবে মাহফুজ। নুসাইবা কে গ্রামের পরিবেশে চিন্তা করেই হাসি পায় মাহফুজের। দিস ইজ গনা বি ফান। সিনথিয়া সব সময় যেভাবে ওর পশ ফুফুর বর্ণনা দিয়েছে সেই পশ ফুফু এখ হাওড়ের মাঝে এক গ্রামের বাড়িতে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে এর থেকে হাস্যকর আর কি হতে পারে। তবে এর থেকেও বড় চিন্তা ঘুরছে মাহফুজের মাথায়। মুন্সী বা ম্যানেজার এখন কি করবে? এই অজপাড়াগায়ে এই লুকালেও কি বাচা যাবে কিনা? আপাতত খালি ভাবা ছাড়া কোন কাজ নেই মাহফুজের। ওর পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারে এতদিন নিজেকে অনেক ডেয়ারিং ভেবে এসেছে মাহফুজ তবে এইবারের মত এমন কিছু করে নি আগে। এখন প্রতিপক্ষ অনেক বেশি শক্তিশালী আবার ওর পিছনে কোন শক্তিশালী কার হাত নেই। ডিবির ইন্সপেক্টর সোলায়মান শেখ আর তার পুরাতন সোর্স আমিন ওর ভরসা। ম্যানেজার আর মুন্সীর তুলনায় এরা চুনপুটি। তাই হিসাবে কোন ভুল করা যাবে না। কারণ এইবার কিছু হলে জানের উপর দিয়ে যাবার চান্স আছে। পেয়াজের বস্তার গায়ে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয় মাহফুজ। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই।


আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সূর্য মাথার উপর থেকে আস্তে আস্তে পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে তখন আকাশে নানা রকম রঙ খেলা করে। রোদের কড়া তাপ তখন মিষ্টি আলো হয়ে আসে। আসরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে আসছে। আমিন ট্রলারে একটা গামছার মত বিছিয়ে নামায পড়ে নেয়। হাওড়ের আকাশ অনেক পরিষ্কার। শহরের আকাশে আলোর যে খেলা গুলো দেখা যায় না সেটাই হাওড়ের আকাশে দূর্দান্ত ভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠে। লাল থেকে বেগুনীর মাঝে সব গুলো রঙ যেন আকাশে স্তরে স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। আর প্রতি পাচ মিনিটে  বদলে যাচ্ছে আকাশের রঙ। এতক্ষণ সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করা পানি এই মিষ্টি আলোতে যেন নরম আভা ছড়াচ্ছে। আমিনের বন্ধু এখন হাল ধরছে। হাল থেকে গলা ছেড়ে হাক দেয়, এই মিরাজ গান ধর। যে ছেলেটা ট্রলারের সামনে বসা ছিল সেই ছেলেটা উত্তর দেয় ওস্তাদ কোনটা গামু। আমিনের বন্ধু বলে, গা, তোর পছন্দের একটা গান গা। ছেলেটা খালি গলায় টান দেয়। গলা ভীষণ শক্তিশালী। হাওড়ের বাতাসে ভেসে ভেসে যেন সেই গলা অনেকদূর ভেসে যায়।

বন্ধু তোর লাইগা রে
বন্ধু তোর লাইগা রে আমার তনু জর জর।

মাহফুজ চোখ খুলে উঠে বসে। নুসাইবা চালের বস্তার উপর পা গুলা কে দয়ের মত করে বসে আছে আর মুখ গুজে রেখেছে হাটুর উপর।

বন্ধু তোর লাইগারে বন্ধু তোর লাইগারে
মনে লয় ছাড়িয়া যাইতে বাড়ি ঘর
বন্ধু তর লাইগারে

ছেলেটার গলার দরদ আশেপাশের সবাই কে যেন ছুয়ে যায়। বাতাসে ভেসে যায় সেই দরদ। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসা ট্রলারের সবাই তন্ময় হয়ে শুনে সেই গলা।

অরণ্য জংলার মইধ্যে আমার একটা ঘর
ভাইও নাই বান্ধবও নাই আমার
কে লইব খবর
বন্ধু তোর লাইগা আমার তনু জর জর

ছেলেটার গলার বিষাদ আকাশের রঙের সাথে মিশে যায়। আমিনের বন্ধু হাল ধরে সুরের তালে তালে মাথা দোলায়। আমিন পানিতে তাকিয়ে থাকে। গানের কথা যেন ওকে জোহরার কথা মনে করায়ে দেয়। আরেকটা ছেলে বালতির উপর তবলার মত তাল দিতে থাকে। ছেলেটার গলা অনেক শক্তিশালী। নুসাইবা তন্ময় হয়ে শুনে। ওর মনে হয় ছেলেটা কি ওর মনের কথা জানে? কিছুদিন আগেও সব কিছু থাকলেও আজ আর কিছু নেই। আরশাদের জন্য সব ছেড়ে এখন অজানার পথে। মাহফুজের মনে হয় এই কয়দিনে কই থেকে কই এসে পড়ল।

বট বৃক্ষের তলে আইলাম ছায়া পাইবার আশে
বট বৃক্ষের তলে আইলাম ছায়া পাইবার আশে
ঢাল ভাংগিয়া রোইদ্দ উঠে আমার কর্ম দুষে
বন্ধু তোর লাইগারে আমার তনু জর জর


নুসাইবার মনে হয় এইসবের জন্য কি ও দোষী? আরশাদ কি ওকে খুশি করবার জন্য এইসব ইউরোপ ট্যুর, জমি, বাড়ি করেছে? সব কি ওর দোষ? কিন্তু তাহলে আরশাদ ফ্লোরার কাছে কেন যায়? ওকি আর সুন্দর নাই? আরশাদের ডিমান্ড কি আর ওকে দিয়ে পূরণ হয় না? নুসাইবা আবার নিজেই বলে নাহ। তাহলে আরশাদ জুয়া খেলে কেন? কিন্তু ওর এখন কি উপায়। মাহফুজ ছাড়া এই মূহুর্তে ওর কোন সহায় নাই। এই অজানায় হাওড়ের মাঝে মাহফুজ ওর একমাত্র সহায়। কিন্তু মাহফুজ ওর কাছে কি চায়? আশেপাশের সবাই যেমন ওকে একটা শরীর হিসেবে দেখে মাহফুজ কি ওকে সেইভাবেই দেখে? সিনথিয়া কে ভালবেসে আবার ওকে কেন চায় মাহফুজ? কামনা? ভাবতে একটু হলেও ইগো বুস্টাপ হয় নুসাইবার। আরশাদ ফ্লোরার কাছে গেলেও মাহফুজের মত হ্যান্ডসাম ছেলের মাথা ঘুরানোর মত উপায় আছে ওর। কিন্তু এখন কিভাবে সম্ভব সব। মাহফুজ কেন বুঝছে না ও সিনথিয়ার ফুফু। তবে মাহফুজ কে গতরাতে বাস্টার্ড বলা হয়ত বেশি হয়ে গেছে। সেই মুহুর্তে প্যানিকে ওর মাথা ঠিক ছিল না। এখন আস্তে আস্তে চিন্তা করে সব মিলাচ্ছে। মুন্সীর লোক ওকে ধরলে ওকে বাচিয়ে রাখবে কিন্তু মাহফুজের অবস্থা আর খারাপ হতে পারে। মাহফুজ হয়ত মুন্সীর লোক কে খবর দেয় নি। যতই ভাবে কুল কিনারা পায় না।

নদী পার হইতে গেলাম
নদীর কিনারে
আমারে দেখিয়া নৌকা
সরে দূরে দূরে
বন্ধু তোর লাইগা রে বন্ধু তোর লাইগারে

ছেলেটা গলায় লম্বা টান দেয়। বন্ধু তোর লাইগা রে। নুসাইবা ভাবে মাহফুজ কে এখন কি বলবে ও। সাধারণত কোন ঝগড়ার পর মানুষ কে প্রথম স্যরি বলার অভ্যাস নাই ওর। ছোটবেলা থেকে বাসার একমাত্র মেয়ে হয়ে সব সময় ওকে মাথায় তুলে রেখেছে। কলেজ, কলেজে ভাল ছাত্রী হিসেবে ভাল ফ্যামিলির মেয়ে হিসেবে সবার কাছে দাম পেয়েছে। আর আরশাদ বাইরে যাই করুক ওকে সব সময় মাথায় তুলে রেখেছে। ঝগড়া যার দোষে হোক আরশাদ প্রথম স্যরি বলেছে। তাই স্যরি কিভাবে বলতে হয় সেটাই যেন ভুলে গেছে। কিন্তু মাহফুজের সাথে একটা মিটমাট করা দরকার। আবার এমন কিছু বলা যাবে না যাতে মাহফুজ রঙ সিগনাল পায়।

সৈয়দ শাহ নূরে কান্দে
নদীর কূলে বইয়া
পার হইমু হইমু কইরা
দিন তো যায় চলিয়া
বন্ধু তোর লাইগা আমার তনু জর জর
মনে চায় ছাড়িয়া যাই বাড়ি ঘর
বন্ধু তোর লাইগা রে বন্ধু বন্ধু তোর লাইগা রে।


গানের পরশে সবাই যেন আচ্ছন্ন হয়ে আছে। অন্ধকার হয়ে এসেছে প্রায়। আমিন উঠে আসে মাহফুজের কাছে, বলে ভাই আইসা গেছি প্রায়। ঐ দেখেন দূরে যে বাড়িটা দেখা যায় ঐটা আমার বাড়ি। মাহফুজ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। দূরে একটা দ্বীপের মত জায়গা। গাছপালার মাঝ দিয়ে একটা টিনের ঘর দেখা যাচ্ছে। ওদের আগামী কয়েক সাপ্তাহের আস্তানা। আমিন বলে ভাবীসাবরে বলেন রেডি হয়ে নিতে। আর পাচ মিনিটের মধ্যে বাড়ির ঘাটে লাগবে ট্রলার। মাহফুজ উঠে নুসাইবার কাছে এসে বসে। বলে আমরা এসে গেছি রেডি হয়ে নিন। আর মনে রাখবেন এখানে খাপ খাওয়ানোর উপর আমাদের জীবন মরণ নির্ভর। সো এমন কিছু করবেন না যাতে নিজে বিপদে পড়েন আবার আমাকেও বিপদে ফেলবেন। নুসাইবা অবস্থার গভীরতা জানে তাই কথা বাড়ায় না। ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। ট্রলারের ইঞ্জিন গতি কমিয়ে এনেছে। ধীরে ধীরে ট্রলার বাড়ির ঘাটে লাগে। ঘাট বললেও আসলে তেমন কিছু না। একটা গাছের সাথে একটা নৌকা বাধা। ট্রলার ভিড়ালেও ঠিক মাটির সাথে মিশে নি। তাই একটা কাঠের পাটাতন সেট করে দিয়েছে ট্রলারের ছেলে গুলো সেখান থেকে নামতে হবে। নুসাইবা উঠে দাঁড়ায়। হাওড়ের ঢেউয়ে অল্প অল্প করে দুলছে ট্রলার। প্রথমে আমিন নেমে যায় পাতাতন বেয়ে। বাড়ির ভিতরের দিকে হাটা দেয়, আর জোরে জোরে হাক দেয়। ও জোহরা, জোহরা। মেহমান আইছে বাড়িতে, মেহমান আইছে। নুসাইবা ট্রলারের উপর পাটাতনের কাছে যায়। প্রায় দশ বারফুট লম্বা পাটাতন। কাপছে ট্রলারের সাথে সাথে। নুসাইবা সাতার জানে না। পানিতে ওর সারাজীবন ভয়। এখন এমন সরু পাটাতনে হেটে নিচে নামতে পারবে বলে মনে হয় না। ওর পা কাপতে থাকে। মাহফুজ পিছন থেকে বলে নেমে পড়। মাহফুজ ওকে তুমি বলছে কিছু বলবার জন্য ঘাড় ঘুরায় নুসাইবা তখন মনে পড়ে সোলায়মান শেখের কথা, আপনারা এখন অভিনেতা অভিনেত্রী। আপনাদের অভিনয়ের উপর আপনাদের সব কিছু নির্ভর করছে। নুসাইবা তাই কিছু না বলে আবার সামনে তাকায়। একবার এক পা দেয় পাটাতনে কিন্তু আবার পা সরিয়ে আনে। গলা শুকিয়ে যায়। আমিনের বন্ধু বলে উঠে, ভাইসাব, ভাবীসাব মনে হয় ভয় পাইছে। আপনে হাত ধইরা নামায়ে দেন। ভাবীর অভ্যাস নাই মনে হয়। মাহফুজ এইবার নুসাইবা কে ক্রস করে পাটাতনে উঠে। পাটাতন কাপছে তবে মাহফুজের ব্যালেন্স ভাল। সাতার জানে ভাল। ওর দাদা বাড়ি পানির এলাকায়। বড় হইছে বুড়িগংগার কাছে। সাতার ওর জন্য ছেলেখেলা। নুসাইবার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, আর বলে আসেন এই বাস্টার্ডের হাত ধরেন। আর কেউ হেল্প না করলেও এই বাস্টার্ড আপনাকে হেল্প করবে। নুসাইবা বুঝে মাহফুজ ওকে খোচা দিল। তবে নুসাইবা উত্তর দেয় না, খোচাটা নিরবে খেয়ে নেয়। এখন এই বিরন জায়গায় মাহফুজ ছাড়া ওর কোন মিত্র  নেই। মাহফুজের হাত ধরে কাপতে থাকা পাটাতন বেয়ে ভয়ে ভয়ে এক এক পা করে আগায় নুসাইবা। নিজেকে নিজে সাহস দেয় আর কয়েক পা এগুলেই মাটি। শক্ত করে নুসাইবা হাত ধরে রাখে মাহফুজ যেন পড়ে না যায়। দুলতে থাকা পাটাতন ভয় জাগালেও মাটিতে নামতেই হবে নুসাইবা কে আর এই জন্য মাহফুজ ছাড়া আর কোন বিশ্বস্ত হাত নেই ওর পাশে।
Like Reply

জোহরা খাতুন। আমিনের বউ। আমিনের সাথে ওর পরিচয় হইছে ষোল বছর আর বিয়ে হইছে পনের বছর। জোহরা ঠিক এই এলাকার মেয়ে না। বাড়ি সুনামগঞ্জেই তবে অন্য উপজেলায়। মাধপপুরে। জোহরার বাবার একটা ফার্মেসি ছিল। দুই ভাই দুই বোন। ও সবচেয়ে ছোট। আমিন গাড়ির ক্ষ্যাপ মারতে একবার মাধপপুরে যাওয়ার পর ঘটনাক্রমে জোহরা কে দেখে। জোহরার বয়স তখন প্রায় আঠার। তিনবার মেট্রিক ফেল করছে। তবে বাড়ির চাপে এইবার আরেকবার পরীক্ষা দিবে। ওর বড় ডিসি অফিসে কেরানি আর ছোট ভাই এক সরকারি অফিসের পিয়ন। সরাকারী চাকরি আছে দুই ভাইয়ের তাই ওদের পরিবারের বেশ একটা সম্মান আছে পাড়ায়। তাই মেয়ের বিয়ের আগে মেয়েরে অন্তত ম্যাট্রিক পাশ করাতে চাইছিল জোহরার পরিবার। পড়ালেখা ভাল লাগে না জোহরার। গায়ের রঙ চাপা একটু তবে চেহারায় একটা মিষ্টি ভাব আছে। মায়া মায়া। আর সেই বয়সে ছিপে ছিপে শরীরের মায়া মায়া চেহারার জোহরা কে দেখে চোখ ফেরাতে পারে নি আমিন। আমিন একটু বখে গেলেও ম্যাট্রিক পাশ করছিল অন্তত। এরপর আমিন কথা বলতে পারে সুন্দর। খ্যাপে গাড়ি চালায়ে সাথে গোপনে ড্রাগের সাপ্লাই দেয়। ফলে ওর হাতে তখন অনেক টাকা। কম বয়সেই জোহরা তখন বাড়ি থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার চাপে অতিষ্ঠ। গায়ের রঙ একটু ময়লা হওয়ায় ছেলেদের নজর ওর উপর পড়ে কম। কম বয়সী ছেলেরা সব ফর্সা মেয়েদের পিছনে ঘুরে। আমিন তখন ওর জন্য এক রকম পাগল। কোন ছেলে ওর জন্য এমন পাগল হইতে পারে এইটা দেখেই জোহরা প্রেমে পড়ে গেল। আর আমিনের কাছে তখন মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী জোহরা। আমিন তখন দুনিয়ার অনেক কিছু দেখে ফেলছে। মাগী পাড়ায় যায় সাপ্তাহে কয়েকদিন। হাতে টাকা আছে তাইলে আর সমস্যা কি। কিছু কিছু মেয়ের সাথে প্রেম ফেম করছে, তবে সিরিয়াস না। আসলে শরীর খাইতে চাইলে প্রেমের থেকে ভাল আর কি আছে। কিন্তু জোহরা তেমন না। জোহরা কে দেখার পর আমিনের প্রথম মনে হইল এই জীবনে প্রথমবারের মত বুঝি প্রেমে পড়ল। আগে যা প্রেম করছে সেইগুলা কে মনে হইল তুচ্ছ জিনিস। জোহরা প্রচুর কথা বলে। আমিন এমনিতে মেয়েদের বেশি কথা বলা পছন্দ করে না কিন্তু জোহরার কথা শুনলে খালি শুনতে ইচ্ছা করে। আমিন যখন তাই বিয়ের কথা বলল জোহরা কে জোহরা এক পায়ে রাজি। আর ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না এর থেকে খুশির আর কি হয়। তার উপর আর কোন ছেলে কোন দিন জোহরা কে এত দাম দেয় নায়। কিন্তু জোহরার ফ্যামিলি রাজি হয় না। ছেলে খালি মাইক্রো চালায় ভাড়ায়। এর মধ্যে বাড়ি হইল হাওড়ের মধ্যে। বাড়ির ছোট মেয়েরে এইখানে বিয়া দেওয়া যায় না। জোহরা ছোট মেয়ে হিসেবে বাড়িতে ভাল আদর পায়। জোহরা তখন তাই জেদ করে। ওর বড় ভাই ডিসি অফিসে কাজ করে এডমিন অফিসার হিসেবে এমন এক ছেলের কথা বলে ওদের ফ্যামিলিতে। সরকারি চাকরি, ডিসি অফিসে তাও। এমন ছেলের সাথে মাইক্রো চালানো আমিনের তুলনা কোথায়। সেই সময় জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেয় জোহরা। এক কাপড়ে বাড়ি থেকে চলে আসে। আমিনের খুশি তখন দেখে কে। দুই তিন জন বন্ধু কে সাথে নিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করে ফেলে। আমিনের বাড়িতে এই বিয়ে সবাই খুব খুশি মনে নিছে। আমিন উচ্ছন্নে যাচ্ছিল এখন একটা বিয়ে করে যদি লাইনে আসে। তার উপর জোহরার ফ্যামিলি ভাল। তবে জোহরার ফ্যামিলি মেনে নেয় নায়। প্রায় পাচ বছর কোন যোগাযোগ ছিল না ফ্যামিলির সাথে জোহরার। এরপর ওর মা অসুস্থ হতে ওরে ডেকে পাঠায় সেখান থেকে আবার যোগাযোগ শুরু। ফ্যামিলির লোকেরাও দেখছে আমিন তাদের মেয়ে কে খুশিতে রাখছে। জোহরা কে অনেক ভালবাসে। তাই তারা আর কিছু বলে নায় শেষে। আমিন জোহরার তিন ছেলে মেয়ে। বড় দুই ছেলের বয়স ১৪ আর ১২। এরা মামা বাড়িতে থেকে জেলা শহরের কলেজে পড়ে। আর সবার ছোট মেয়ে, নয় মাস। আমিন চার পাচ দিনের জন্য বাইরে থাকে আবার আসে। দুই তিন দিন থাকে। যে কয়দিন আমিন থাকে না জোহরা বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে একা থাকে। তবে জোহরার ভয় কম আর আমিন আর তার ফ্যামিলির এলাকায় দাপট আছে তাই কেউ ডিস্টার্ব করার সাহস পায় না। বাড়িতে বেশির ভাগ সময় একা থাকে বলে মেহমান আসলে খুব খুশি হয় জোহরা।


জোহরা যখন প্রথম নুসাইবা কে দেখে তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আলো কম। বাড়িতে সোলার প্যানেল বসাইছে আমিন। আমিন তাই প্রায় অন্ধকারে একটা টর্চ জ্বালায়ে নুসাইবা আর মাহফুজ কে যখন বাড়িতে আনে তখন জোহরা বড় করে ঘোমটা টেনে ঘরের বারান্দা থেকে নেমে উঠানে দাঁড়ায়। এই অল্প আলোতেও জোহরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কি সুন্দর গো আপাটা। ঘাড় ঘুরিয়ে মাহফুজ কেও দেখে জোহরা আর মনে মনে ভাবে জামাইটাও কি সুন্দর গো। আল্লাহ একদম কি মিলানটাই না মিলাইছে। আমিন বলে ও জোহরা ভাই ভাবীরে বসার জায়গা দাও। জোহরা ঠিক কি করবে বুঝে পায় না। বারান্দায় থাকা মোড়া দুইটা দৌড় দিয়ে গিয়ে আনে। মাহফুজ এইবার সালাম দেয় আসসালামু আলাইকুম ভাবী। সাথে সাথে নুসাইবাও সালাম দেয়। আমিন বলে উনারা অনেক বড় ঘরের লোক। একটা বিপদে পড়ছেন। তাই কিছুদিন আমাদের এখানে থাকব। সোলায়মান স্যারের কথা কইছি না তোমারে। সোলায়মান স্যারের খুব কাছের লোক ইনারা। স্যার বলছে ইনাদের কয়েকদিন সহি সালামতে আমাদের এইখানে রাখতে। কয়েক মিনিট আগে আমিন দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে এসে হাজির। আমিন কে দেখে অবাক হইছিল জোহরা। দুই দিন আগে গেল লোকটা, এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসল। শরীর খারাপ নাকি? দেখে তো মনে হয় না। কোন বিপদ হল নাকি? আমিনের অতীত জানে জোহরা। আমিন কে ঐ রাস্তা থেকে ফেরত আনানোর পিছনে জোহরার অবদান আছে। কিন্তু এতদিন পরেও জোহরা ভয়ে ভয়ে থাকে আমিনের অতীত জীবন না আবার হানা দেয় ওদের জীবনে। তাই জোহরা জিজ্ঞেস করে কি হইছে, হানিফের বাপ। সরাসরি স্বামীর নাম মুখে নিতে লজ্জা লাগে তাই বড় ছেলের নামে স্বামীকে ডাকে সব সময়। আমিন বলে শোন, মেহমান আসছে। উনারা কিছুদিন থাকবে। শহরের বড়লোক উনারা। একটা বিপদে পড়ছে, আমার কাছে সাহায্য চাইছে তাই আমি নিইয়া আসছি। জোহরা বলে  উনাগো লগে তোমার আগের কামের কোন সন্মন্ধ নাই তো? আমিন খেকিয়ে উঠে, বলে খালি বাজে কথা। উনারা মান্যগন্য লোক। দেখলেই বুঝবা। বাইরে আস। আমি উনাগো ঘাট থেকে লইয়া আসতেছি।


মাহফুজ আর নুসাইবা কে দেখে জোহরার আর সন্দেহ থাকে না ইনারা শহরের মান্যগন্য লোক। ইনাদের হাটা কথাবলা আর বসার ধরনেই বুঝা যায় ইনারা বেশ দামী লোক। গঞ্জ থেকে আসার সময় আমিন গাদা গাদা নাটক মোবাইলে লোড করে আনে। জোহরা হাওড়ের মধ্যে এই বাড়িতে বেশির ভাগ সময় কিছু করার থাকে না। সেই অবসর সময়ে এই নাটক গুলা দেখে। ওর মনে হয় এই দুইজন মনে হয় নাটকের  নায়ক নায়িকা। দুইজনেই কি সুন্দর। আল্লাহ একদম বাইছা বাইছা জুড়ি বানাইছে। আমিন পরিচয় করায়ে দেয় ইনি মাহফুজ ভাই আর নুসাইবার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে নুসাইবার নাম জানে না আমিন। তাই বলে আর ইনি হইল মাহফুজ ভাইয়ের বউ, ভাবী। নুসাইবা অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসে কিছু বলতে পারে না। মাহফুজের মুখে মুচকি হাসি। আমিন বলে আরে খাড়ায়া খাড়ায়া দেখবা নাকি ভাবী সাবরে ভিতরে  নাও, হাত পা ধোওনের ব্যবস্থা কর। আমি ভাইয়ের লগে আছি। জোহরা বলে আহেন ভাবী আহেন। নুসাইবা উঠে। ওর হাতে খালি ওর হাতব্যাগটা। আর কিছু নেই সাথে। মাহফুজ আমিনের দিকে ঘুরে বলে ভাই আমরা আসার সময় তাড়াহুড়া করে আসছি। কোন কাপড় আনতে পারি নাই। আমিন বলে ভাই এইটা কোন কথা কইলেন। আমি আছি না। আজকে রাতে আমার লুংগি গেঞ্জি পইরা লন। এরপর আপনে চাইলে নাহয় হাটে লইয়া যামু নে। আপনে কিন্না লইয়েন। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে হাট কতদূর। আমিন বলে এই ধরেন আধা ঘন্টা চল্লিশ মিনিট। মাহফুজ বলে তা ফোনের সিগনাল আছে এইখানে। আমিন বলে নাহ আমাগো বাড়িতে নাই, তবে ঐ যে ডালিম গাছটা দেখতেছনে না বাড়ির কোণায়, ঐটার তলে গেলে দুই তিন দাগ সিগনাল আসে। ফোন দিতে হইলে ঐখানে যাওন লাগে। এই বলে অন্ধকারে ডালিম গাছের দিকে আংগুল দিয়ে দেখায় আমিন। মাহফুজ অন্ধকারে কিছু না দেখলেও বুঝে নেয় ঐ কোণায় ডালিম গাছের নিচে ফোনের সিগনাল পাওয়া যায়। অবশ্য ওর বা নুসাইবা কার কাছে আপাতত ফোন নেই। মাহফুজ বলে ভাল হইছে, ফোন দিয়ে আজকাল সবাইরে ট্রেস করা যায়। সিগনাল না থাকলে আল। আমিন বলে এইখানে নিশ্চিন্তে থাকেন ভাইজান। সারাদেশ বিছরাই (খুজে) ফেললেও এইহানে আইব না কেউ। মাহফুজ আমিনের কাছ থেকে আশেপাশের এলাকা সম্পর্কে আর খোজ নিতে থাকে।
Like Reply
জোহরার সাথে ঘরের ভিতরে ঢুকে নুসাইবা। সোলার পাওয়ারে চলা একটা ফ্লুরোসেন্ট লাইন্ট। অত পাওয়ার নেই আলোর। তাই ঘরের ভিতর একটা সাদা ঝাপসা আলো। নুসাইবা জোহরার দিকে তাকায়। পাচ ফুটের মত হবে। বয়স কত বুঝা যাচ্ছে না। ৩৫-৪৫ এর মধ্যে যে কোন কিছু হতে পারে। বিছানায় একটা বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে আপনার? জোহরা উত্তর দেয়, জ্বী ভাবী। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কয় ছেলেমেয়ে আপনার? তিনজন। বাকিরা কই? জোহরা উত্তর দেয়, বড় দুই পোলা সুনামগঞ্জে ওগো মামার লগে থাকে। ভাল কলেজ আছে। এইখানে কলেজ ভালা না ভাবী। প্রতি বছর এক দুইজন পাশ করে ম্যাট্রিক দিইয়া। নুসাইবা ভাল করে জোহরা কে দেখে। জোহরার বারবার ভাবী বলা ওর জন্য অস্বস্তিকর। কি করা যায়? কথা শুনে মনে হচ্ছে ভাল মহিলা। এইখানে কয়েক সাপ্তাহ থাকতে গেলে এই মহিলার হেল্প লাগবে। নুসাইবা ছোট থাকতে দুই একবার ওদের গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। নুসাইবার দাদা বহু বছর আগে গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিলেন শহরে পড়াশুনার জন্য। ফলে ওর বাবার সময় গ্রামের সাথে সম্পর্ক অনেক কমে গিয়েছিল। তাই দুই একবার দাদা  বেচে থাকতে গ্রামে গিয়েছে। এরপর তেমন আর গ্রামে যাওয়া হয় নি। নুসাইবার কাছে গ্রাম তাই নাটক সিনেমায় দেখা জিনিস। গ্রামের মানুষদের সম্পর্কে একধরনের অজ্ঞতা আছে সেই অজ্ঞতা থেকে তুচ্চতাচ্ছিল্য। তবে নুসাইবা বোকা না। ও জানে এই মুহুর্তে মাহফুজের পর ওর সবচেয়ে কাছের মিত্র হবার চান্স আছে এই মহিলার। আর গ্রাম সম্পর্কে বা গ্রামের মানুষ সম্পর্কে কম জানা থাকলেও একটা জিনিস জানে নুসাইবা। প্রশংসা সবাই পছন্দ করে। বিশেষ করে মহিলারা তাদের রূপের প্রশংসা। এইটা বিশ্বজনীন। নুসাইবা বলে আপনাকে দেখলে বুঝাই যায় না আপনার তিন তিনটা বাচ্চা আছে। আমি তো ভাবছি বিছানায় যে ছোট বাচ্চা এইটাই বুঝি আপনার প্রথম বাচ্চা। খুশিতে মুখ ঝলমল করে উঠে জোহরার। এইরকম সুন্দর স্মার্ট শহুরে মানুষের কাছে এই রকম প্রশংসা পেয়ে খুশি আর লজ্জা দুইটাই হয় জোহরা। জোহরা বলে কি যে কন ভাবী। ভাবী ডাকে আবার অস্বস্তি হয় নুসাইবার। ভাবে এইটা নিয়ে কিছু একটা করতে হবে। নুসাইবা বলে আরে না না দেখেন না আপনার দিকে। একটু সাজগোজ করলে একদম নাটকে নামতে পারবেন। জোহরা ফিক ফিক করে হেসে বলে হানিফের বাপ হেইটা কয় মাঝে মধ্যে। নুসাইবা বলে বড় পোলার নাম। নুসাইবা বলে আপনার যে একটা বড় ছেলে আছে এইটাই তো বিশ্বাস হইতে চায় না আপনাকে দেখে। আর গলে যায় জোহরা। এই ভাবী দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি দিল পরিষ্কার। কেমনে ওর প্রশংসা করতেছে। জোহরা বলে আপনে খুব ভালা মানুষ ভাবী। আপনে এত সুন্দর তাও আমারে কইতেছেন সুন্দর। নুসাইবা বলে আরে আমারে ভাবী বইলেন না, আপা ডাকেন। আপনে আমার বোনের মত। জোহরা নুসাইবার এই কথায় আর গলে যায়। এত দিল দরিয়া মানুষ এই আপা। জোহরা বলে আসেন আপা আপনারে আমি ঘরের সব দেখাইতেছি।  


মাহফুজ আমিনের দেওয়া লুংগি আর গেঞ্জি পড়ে নেয়। হালকা একটা শীতের মত পরে গ্রামের দিকে সন্ধ্যার পর। তার উপর এটা হাওড় এলাকা। তাই আমিন থেকে একটা চাদর চেয়ে নেয় মাহফুজ। ঐদিকে নুসাইবার হয় অসুবিধা। জোহরার কাছ থেকে শাড়ি পেটোকোট তো নিয়ে পড়ে নেয় কিন্তু ব্লাউজের সাইজে সমস্যা বেধে যায়। জোহরার শরীরে এখনো ছিপছিপে একটা ভাব আছে। তিন বাচ্চার পরেও দুধ অত বড় হয় নি। ৩২ সি হবে। অন্যেদিকে নুসাইবার হল ৩৬ সি। ফলে নুসাইবার পক্ষে জোহরার ব্লাউজ পড়া প্রায় অসম্ভব। ফলে জোহরা অন্য বুদ্ধি বের করে। আমিনের বোন মানে জোহরার ননদ কিছুদিন আগে বেড়াতে এসছিল, যাওয়ার সময় একটা ব্লাউজ ফেলে গেছে। আমিনের বোনের স্বাস্থ্য বেশ ভাল। তাই সেটা দেয় নুসাইবা কে পড়ার জন্য। পড়তে গিয়ে টের পায় এইটা অনেক ঢলঢলে। কাধের উপর থেকে ঢলে ঢলে পড়ে যেতে চায়। তাই জোহরা এইবার অন্য বুদ্ধি দেয়। সারা গা চাদর দিয়ে মুড়িয়ে নেয়। ফলে ঢিলা ব্লাউজ ঐভাবে বুঝা যাবে না। জোহরা বলে আপা আমার কাছে সিলাই মেশিন আছে, আমি সিলাই পারি ভাল। কালকে আপনারে একটা ব্লাউজ সিলাই দিমু নে। আশেপাশের বাড়ির মেয়েরা আমার কাছে থেকে সিলায়ে নেয় ব্লাউজ।


আমিন মাহফুজ কে অন্ধকারে টর্চের আলোয় ওর বাড়ির সবকিছু দেখাতে থাকে। আমিনের গর্বের জায়গা এই বাড়ি। জায়গাটা বাপের কাছ থেকে পেলেও বাকি সবকিছু নিজে নিজে গড়ে তুলেছে। আগে যখন ড্রাগ এর ক্ষেপ দিত তখন বেশ কিছু টাকা জমিয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে গঞ্জে দুইটা দোকান কিনে নিয়েছে। এখন সেগুলো ভাড়ায় দেয়। এরপর আমিনের ব্যবসা বুদ্ধি ভাল। মাইক্রো চালানোর সাথে সাথে জমির দালালিও করে। এর উপর দুই একটা টুরিস্ট এজেন্সির সাথে যোগাযোগ আছে। আমিন বিশ্বস্ত ড্রাইভার বলে বিদেশী টুরিস্ট আসলে আমিনের মাইক্রো ভাড়া নেয়। বিদেশি টুরিস্টের ভাল জিনিস  হল এরা যাবার সময় প্রচুর বকশিস দেয়। সব মিলিয়ে আমিনের ইনকাম খারাপ না। মাহফুজ ঘুরে ঘুরে দেখে আমিনের সাথে আর মনে মনে ভাবে আমিন গ্রামের তুলনায় যথেষ্ট বড়লোক। বাড়িতে সোলার লাইট আছে। যদিও রাত দশটার পর আলো জ্বলে না। বাড়িতে প্রচুর গাছগাছালি। চারটা গরু আছে। টিনের ঘর। ভিটা পাকা। টয়লেট বাড়ি থেকে হালকা দূরে। গ্রামে অবশ্য এমন হয়। লোকজন ঘরের ভিতর টয়লেট রাখা পছন্দ করে না। টয়লেটের সামনে একটা টিউবওয়েল। সব মিলিয়ে যথেষ্ট অবস্থাপন্ন ঘরের ছবি আমিনের। রাতে নুসাইবা আর মাহফুজ কে প্রথমে খাবার দিল ওরা টেবিলে। ছোট একটা টেবিল আছে ঘরের ভিতর। সেইটাতে নরমালি মেহমান আসলে খাবার দেয়। দুইটাই চেয়ার। তাই মাহফুজ আর নুসাইবা ছাড়া অন্যদের বসার জায়গা নেই। তবে এইবার মাহফুজ বলল আমিন ভাই এইভাবে তো খাব না। খাইলে সবাই মিলে একসাথে বসে খাব। আমিন যত না না করুক না কেন মাহফুজের এক কথা। শেষ পর্যন্ত মাটিতে পাটি বিছিয়ে সবাই মিলে একসাথে খেতে বসে। নুসাইবার অস্বস্তি হতে থাকে এইভাবে মাটিতে বসে। মাটিতে বসে খেয়ে অভ্যস্ত না ও। তবে এখন কিছু করার নাই। তার উপর চাদরের ভিতর ব্লাউজ বার বার খসে খসে পড়ছে মনে হয়। কিন্তু আমিন আর মাহফুজের সামনে সেটা ঠিক করা যাচ্ছে না। ওরা চাদরের কারণে দেখছে না কিন্তু নুসাইবার মনে হচ্ছে গা থেকে ব্লাউজ খসে পড়ছে আর সবাই বুঝি ওকে দেখছে। কোন আয়োজন করার সময় পায় নি জোহরা। মাছ ছিল রান্না করা। আর ওরা আসার পর ডিমের তরকারি করেছে। যদিও বেশি কিছু না। তবে প্রচন্ড ক্ষিধা ছিল সবার। গোগ্রাসে গিলতে থাকে। হাওড় অঞ্চলের লোকেরা বেশ ঝাল খায়। খেতে গিয়ে টের পেল নুসাইবা আর মাহফুজ। দুই জনেই হু হা করছে কিন্তু পেটে এত ক্ষুধা যে যতক্ষণ পারা যায় খেল দুইজনেই। আমিন আর জোহরা খালি বারবার বলছে ভাইজান কালকে থেকে ঝাল কমায়ে দিমু। আমরা ঝাল একটু বেশি খাই কিছু মনে কইরেন না।


রাতে খাওয়ার পর দেখা দেয় নতুন সমস্যা। শুবে কই ওরা। জোহরা আর আমিন ওদের মেইন বেডরুমে থাকার ব্যবস্থা করেছে নুসাইবা আর মাহফুজের জন্য। আর নিজেরা থাকবে অন্য একটা রুমে। সেইটা ছোট আর পরিষ্কার করাও নাই। মাহফুজ বলে না না আমরা ঐখানে থাকি। জোহরা আর আমিন বলে না না আপনারা মেহমান তাই কেমনে হয়। এই সময় নুসাইবা দেখে এইখানে একটা বুদ্ধি খাটানো যায়। তাই ও বলে আচ্ছা এক কাজ করি আমরা। জোহরা ভাবী আর আমি একসাথে থাকি। আর আপনারা একসাথে থাকেন। ছোট বাচ্চা নিয়ে ভাবীর ঐ রুমে থাকা ঠিক হবে না, পরিষ্কার নাই রুম। আবার আপনারা আমাদের ঐ রুমে থাকতে দিবেন না। তাইলে সবার কথাই থাকল। কেউ আর অখুশি থাকবে না। আমিন বলে মাশাল্লাহ, ভাবী একটা ভাল জিনিস বলছে। আমরা ছেলেরা তাইলে ঐ রুমে থাকি আজকের মত। আপনারা এই রুমে থাকেন। মাহফুজ মনে মনে হাসে। ও জানে নুসাইবার এই কথার মানে কি। ওর থেকে আলাদা থাকতে চাচ্ছে। নুসাইবাও মনে মনে ভাবে আজকের মত অন্তত একটু আড়াল পাওয়া গেল। তবে মাহফুজ আর নুসাইবা দুইজনেই ভাবে কালকে ব্যাপারটা ডিল করা যাবে, তবে দুই জনের লক্ষ্য থাকে ভিন্ন। সেই রাতে ক্লান্ত সবার ঘুম আসতে দেরি হয় না। সামনে দীর্ঘ সময় পরে আছে। সামনে কি হবে? লুকিয়ে থাকতে পারবে কিনা এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে দুইজনেই ভিন্ন রুমে।
Like Reply
রাতের  বেলা মরার মত ঘুমিয়েছে নুসাইবা। সারাজীবন শহরে বড় হয়েছে। বাড়ির বাইরে গেলেও দামী হোটেল বা বেশ অবস্থাপন্ন কোন আত্মীয়ের বাসায় ঘুমিয়েছে। সেইসব হোটেল বা বাসায় যেই সব সুযোগ সুবিধা থাকে তার তুলনায় কিছু নেই জোহরা আর আমিনের এই ঘরে। শক্ত খাটের উপর জাজিম আর তার উপর একটা পাতলা তোষক। ঘর জুড়ে একটা হালকা অচেনা গন্ধ। নুসাইবার শহরে নাকে বোটকা গন্ধটা লাগে কিন্তু ধরতে পারে না। জোহরা কে জিজ্ঞেস করলে বলে সুপারি পানিতে পচাতে দিয়েছে। সুপারি পচানো হয় এটাই জানা ছিল না ওর। তবে আর প্রশ্ন করে না। ভীষণ ক্লান্ত। শুয়ে পড়ে। ওর পাশে জোহরা। জোহরার মত কেউ ওর পাশে শুবে এইটা কোন জন্মেই চিন্তা করে নি ও তবে আজকে জোহরা কেই যেন মনে হচ্ছে ওর পরম সুহৃদ, ওর রক্ষাকবচ। ম্যানেজার আরশাদ কে নিয়ে যাওয়ার পর এক রাতও ঠিক করে ঘুমাতে পারে নি। কয়েকবার করে রাতে ঘুম ভেংগেছে। আর মুন্সীর দেখা হবার পর তো রাতে কয়বার করে দুস্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছে হিসাব নেই। তবে আজকে আর এইসব কিছু নুসাইবা কে ছুতে পারে নি। ওর মনে হল সব দুশ্চিতা ছেড়ে এইখানে থাকা যায়। এই হাওড় কে ওর সমুদ্রের মত বিশাল মনে হয়েছে। সেই হাওড়ের ছোট দ্বীপের মত এই বাড়িতে যেখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই সেখানে ওকে ম্যানেজার বা মুন্সী খুজে পাবা না এই আস্থায় ওর ঘুম চলে আসে। শান্তির ঘুম।


সকালে নুসাইবা সবার পর ঘুম থেকে উঠে। ঘড়ি দেখে আটটা বাজে। তবে গ্রামে আটটা অনেক সকাল। মাহফুজ একবার নুসাইবা কে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিতে বলেছিল জোহরা কে। তবে জোহরা আর আমিন দুই জনেই বলল ভাইজান ঘুমাইতে দেন, উনি গতকাল এত দূর থাইকা আইসা টায়ার্ড। আর উনারে দেখলেই বুঝা যায় এই রকম জার্নি উনি আর করে নায়। তাই আরেকটু ঘুমাক। নুসাইবা তাই যখন আটটা বাজে ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে ঘরের দরজায় এসে দাড়াল, দেখল মাহফুজ বাড়ির উঠানে মোড়ায় বসে চা খাচ্ছে। জোহরা বা আমিন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মাহফুজ কে দেখে নুসাইবা বলল গুড মর্নিং। ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখল মাহফুজ। প্রথম দেখায় একটু অবাক হল। নুসাইবা কে যখন যেভাবেই দেখেছে তখন দারুপ পরিপাটি ছিল, গুছানো। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সব করে মেপে রাখা। এমনকি ওদের বাসায় প্রথমবার যখন গেল তখনো। মানুষ ঘুম থেকে উঠলে তার চেহারায় একটা আলুথালু ভাব থাকে, চুল গুলো একটু উস্কোখুস্কো হয়ে থাকে। নুসাইবার চেহারায় সেই ছাপ। মুখের কাছে হাত নিয়ে হাই তুলছে। নুসাইবা সব সময় যা কাপড় পড়ে খুব দামী কাপড় থাকে। সেটা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ যাই হোক। আজকে জোহরার দেওয়া খুব সাধারণ একটা তাতের শাড়ি, আগেও বহুবার পড়া হয়েছে বুঝা যায়। সব মিলিয়ে এই নুসাইবা ওর পরিচিত নুসাইবা থেকে অনেক ভিন্ন। তবে এর মাঝেও নুসাইবা কে সুন্দর লাগছে। মাহফুজ উত্তর দিল গুড মর্নিং। নুসাইবা জিজ্ঞেস করল আমিন আর জোহরা কোথায়। মাহফুজ উত্তর দিল আমিন লাকড়ি কাটছে আর জোহরা ওদের গরু গুলোকে খাওয়া দিচ্ছে আর এরপর দুধ দোয়াবে। নুসাইবা মাথা নাড়ে। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওকে বাস্টার্ড বলে যেন ভুলেই গেছে সেই কথা নুসাইবা। অবশ্য এখন কিছু করার নেই ওর। তবে খোচা দিতে ছাড়ে না মাহফুজ। আমার কথা জিজ্ঞেস করলেন না তো? নাকি বাস্টার্ডদের খবর নেন না? নুসাইবা বুঝে মাহফুজের রাগ পড়ে নি। গতকাল আসার পথেই চিন্তা করেছে মাহফুজের সাথে মিটমাট করে ফেলতে হবে। এই অচেনা জায়গায় মাহফুজ কে ক্ষেপিয়ে বরং বিপদ বাড়বে ওর। হেটে এসে মাহফুজের পাশের মোড়াতে  বসে। বল, স্যরি আসলে তখন রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। তুমি তো জান আমার মেজাজ একটু বেশি। মাহফুজ বলে হ্যা সিনথিয়া বলেছে আপনি দেমাগী। নুসাইবা অবাক হয় ওর সম্পর্কে এইভাবে ভাবে সিনথিয়া? মাহফুজ ইচ্ছা করেই সিনথিয়ার কথা বলে যাতে নুসাইবা বুঝে ওর ফ্যামিলির লোকেরাও এই রাগটা ভাল চোখে দেখে না।


মাহফুজ বলে তোমার কি করে মনে হল আমি তোমাকে মুন্সীর কাছে ধরিয়ে দিব? নুসাইবা খেয়াল করে মাহফুজ ওকে তুমি করে বলছে। নুসাইবা গলা শক্ত করে বলে আমাকে তুমি করে বলছ কেন? আমি তোমার থেকে কত বড় তোমার ধারণা আছে? মাহফুজ এইবার বলে হ্যা জানি আপনি আমার থেকে বড়, সিনথিয়ার ফুফু কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন কেন আমাদের ধরা খাওয়া আর না খাওয়ার মধ্যে তফাত হল আমরা কত ভাল অভিনয় করতে পারি। নুসাইবা গলা শক্ত করে বলল এটার সাথে তুমি বলার কি সম্পর্ক? এখন আশেপাশে কেউ নাই। কাকে দেখানোর জন্য অভিনয় করছ? মাহফুজ বলল কাউকে দেখানোর জন্য না। কি মনে হয় তোমার? একবার আপনি আর একবার তুমি করে বললে কি হতে পারে? একবার যদি আমি ভুল করে অন্য কার সামনে তোমাকে আপনি বলি কি হবে? কয়জন ছেলে কে তুমি চিন যে বউ কে আপনি করে ডাকে? তুমি আমাকে আপনি/তুমি/তুই যা বল কিছু মনে করবে না লোকজন। কারণ আজকাল বউরা অনেক কিছুই ডাকে জামাইদের কিন্তু বউ কে আপনি বলে এমন কাউকে আমি দেখিনি এখন পর্যন্ত। নুসাইবা মাহফুজের যুক্তি ফেলে দিতে পারে না আবার মেনেও নিতে পারে না। মাহফুজ বলে আমি জাত অভিনেতা না, এইভাবে একবার তুমি একবার আপনি করতে গেলে কোথায় কি বলব তার ঠিক থাকবে না। তাই তুমি বলব সব সময় যাতে আর গোলমাল পাকানোর ভয় না থাকে।


কিছুক্ষণ চুপ বসে থেকে নুসাইবা উঠে দাঁড়ায়। সামনের কলতলা থেকে হাত মুখ ধুতে থাকে। শাড়ির আচল কোমরে গুজে টিউবওয়ল চাপতে থাকে। মাহফুজ মনে মনে হাসে, সিনথিয়া ওর ফুফু কে এই অবস্থায় দেখলে কি ভাবত। এর মধ্যে জোহরা আর আমিন এসে হাজির হয়। জোহরা বলে আপা আপনি মুখ ধোন আমি কল চাপি। আমিন বলে ভাইজান আমি বাজারে যামু কিছু জিনিস কিনা লাগব। মাহফুজ বলে ওর যাওয়া দরকার। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হবে। নুসাইয়া কান খাড়া করে কথা শুনছিল। নুসাইবা খাওয়া ছেড়ে উঠে দাড়াল মাহফুজের কাছে এসে বলল আমারো কিছু জিনিস কিনা দরকার। আমিও যাব। তোমরা একটু ওয়েট কর। আমিন গলা খাকরি দিয়ে বলল আপা যাইয়েন না। এই গ্রামের মধ্যে আপনার মত কাউরে দেখলে সেইটা সবার নজরে পড়বে। এমনিতেও মেয়েরা হাটে যায় কম তার উপর আপনার মত শহরের কাউরে দেখলে সবাই ভাল করে খেয়াল করবে। নুসাইবা নিজের শাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে এই শাড়িতে আমাকে শহরের কেউ লাগছে। আমিন কি বলবে বুঝে উঠে না। মাহফুজ বুঝে আমিনের কথায় যুক্তি আছে। তাই বলে শোন খালি কাপড় ব্যাপার না, তোমার কথা,হাটার ধরন সব কিছুতে শহরের ছাপ। রিস্ক নেওয়ার দরকার নাই। নুসাইবার কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলে ওরা কিন্তু মেইনলি তোমাকে খুজতেছে। নুসাইবা এইবার একটু রাশ টানে। নুসাইবা বলে আমার কিছু জিনিস কেনা লাগত, আমি কিছুই আনতে পারি নাই। ব্যাগ ফেলে চলে আসছি এয়ারপোর্টে।মাহফুজ বলে আমাকে বল আমি নিয়ে আসছি। ওর এত কাছে দাঁড়িয়ে মাহফুজ ওকে তুমি তুমি বলছে এতে অস্বস্তি হয়। আবার মাহফুজ কে ওর কি কি লাগবে সেইটা বলতেও অস্বস্তি হয়। মাহফুজ বলে কি হল বলছে না যে। নুসাইবা আমিন আর জোহরার দিকে তাকায়। ওরা আবার যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমিন কাধে করে কিছু কাটা লাকড়ি নিয়ে এসেছে সেইগুলা রান্নাঘরে এক সাইডে রাখছে। জোহরার কোলে ওর বাচ্চাটা। স্বামীকে নির্দেশ দিচ্ছে লাকড়ি গুলো কিভাবে রাখলে সুবিধা হবে সেইটা নিয়ে। ওর দিকে কার  নজর নেই। মাহফুজ বলে আমার কাছে ক্যাশ টাকা নেই এই মূহুর্তে খুব বেশি। আবার কার্ড দিয়ে টাকা তোলাও ঠিক হবে না, যদি ওরা আমাকে আইন্ডেটিফাই করে তাহলে আমার টাকা তোলা থেকে বুঝে যাবে আমরা কই আছি। নুসাইবা টাকার কথাটা ভাবে নি এতক্ষণ। তবে ও একটা হাফ ছাড়ে। বড় অংকের একটা ক্যাশ টাকা ভাবীর কাছ থেকে নিয়ে রেখেছিল, কখন কি কাজে লাগে সেই জন্য। এর একটা অংশ দিয়ে ডলার কিনেছিল বাকি অংশ ওর হ্যান্ডব্যাগে আছে। নুসাইবা ফিস ফিস করে বলে আমার কাছে কিছু টাকা আছে সেগুলো নিতে পার। মাহফুজ বলে স্মার্ট গার্ল। সব সময় সব কিছুর জন্য প্রস্তুত। মাহফুজের ফ্লার্টিং এর ভংগিতে বলা স্মার্ট গার্ল কথাটাও অস্বস্তি তৈরি করে ওর মনে। আগে যতবার যাই হোক ওদের মধ্যে তখন শব্দহীন ভাবে হয়েছে। এখন মাহফুজের ওর এমন কাছে দাঁড়ানো, তুমি বলা, ফ্লার্টিং ভংগিতে কথা বলা সব কিছু নতুন ওর জন্য। তবে আপাতত চিন্তা ঝেড়ে ফেলে। নুসাইবা বলে আমার কাপড় লাগবে। এইখানে পড়ার জন্য কয়েকটা শাড়ি কিনে আনবে, তিন পিস ব্লাউজের কাপড়, তিন পিস পেটিকোটের কাপড়। মাহফুজ বলে তা ব্লাউজ পেটিকোটের কাপড় আনলে সেলাই করবে কে? নুসাইবা বলে জোহরার সাথে কথা হয়েছে। ওর সেলাই মেশিন আছে, আর আশেপাশের অনেক মহিলার কাপড় নাকি ও সেলাই করে দেয়, আমারটাও দিবে। তাহলে মাপঠিক মত হবে কেনার চাইতে। মাহফুজ হেসে দেয়। বলে বাহ এর মধ্যে জোহরার সাথে খাতির জমিয়ে ফেলেছেন। নুসাইবা বলে কেন সমস্যা কি? মাহফুজ খোচা দেবার সুযোগ ছাড়ে না। বলে, নাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিডি আমার পরিচিত নুসাইবা করিম আবার তার ক্লাসের সাথে না মিললে কার সাথে মিশে না, এমনকি পড়াশুনা জানা থাকলেও তার ভাতিজির সাথে বিয়ে দিতে চায় না। এখন দেখি একবারে এই গ্রামের মেয়ে জোহরার সাথে খাতির করে ফেলেছে। তাই ভাবছি আমার পরিচিত দেমাগী নুসাইবা করিম কি পথে কোথাও হারিয়ে গেল, নাকি আমাদের সাথে অন্য কেউ চলে এসেছে নুসাইবা নামে? নুসাইবা হঠাত করে মাথার ভিতর পরিচিত সেই আগুন অনুভব করে। ওর মেজাজ গরম হয়ে উঠছে, টের পাচ্ছে মাহফুজ সুযোগ বুঝে ওকে খোচাচ্ছে। তবে নুসাইবা নিজেকে কন্ট্রোল করে। এখনকার পরিস্থিতি আর সবসময়ের মত না। নুসাইবা শান্ত স্বরে বলে আমাকে যেমন ভাবছ আমি তেমন না। মাহফুজ হাসে তবে উত্তর দেয় না। নুসাইবা বলে ঠিকাছে তাহলে এই কয়টা জিনিস লাগবে। সাথে টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, গোসল করার সাবান এইসব লাগবে। মাহফুজ বলে আর কিছু লাগবে না? নুসাইবা বলে নাহ এইগুলা আপাতত। দাড়াও আমি টাকা এনে দিচ্ছি।


কয়েক মিনিট পর নুসাইবা ঘরের ভিতর থেকে আসে। হাতের টাকা গুলো মাহফুজের হাতে দেয়। বলে এখানে দশ হাজার আছে আপাতত এই টাকায় হয়ে যাবে আশা করি। মাহফুজ বলে নুসাইবা করিমের একটা শাড়ির দাম তো দশ হাজারের থেকে বেশি হয় বলে শুনেছি। মাহফুজের স্বরে সুক্ষ খোচা। নুসাইবা এইবার তেজ দেখায়। বলে শোন মাহফুজ, মানুষ বদলায়। আর পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষ কে থাকতে হয়। শাড়ি কিনবার সময় জোহরা যে টাইপ শাড়ি পড়ে তেমন শাড়ি আনবে, যেন আমি পড়লে ঠিক গ্রামের মেয়ে বলে মনে হয়। আর জোহরার সাথে আমি কথা বলেছি এই শাড়ি গুলোর দাম অত বেশি না। মাহফুজ হাসে। বলে, তা এরপর আর কিছু লাগবে না? নুসাইবা বলে আর কি? মাহফুজ বলে কেন আন্ডারগার্মেন্টস? ব্রা প্যান্টি লাগবে না? মাহফুজের কথা শুনেই চমকে যায় নুসাইবা। ঘাড় ঘুড়িয়ে আশেপাশে দেখে। জোহরা আর আমিন এখনো রান্না ঘরে লাকড়ি গুলো ঠিক করে রাখতে ব্যস্ত। যথেষ্ট দূরে, আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছে ওদের কথা শুনবে না। নুসাইবা হিস হিস করে বলে আস্তে, ওরা শুনতে পাবে। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে শুনলে আর কি করা। কিন্তু আপনি আজকে ব্রা প্যান্টি পড়ে নেই? নাকি গত দুই দিন ধরে এক ব্রা প্যান্টি পড়ে আছেন? এতদিন ধরে এক আন্ডার গার্মেন্টস পড়ে থাকলে কিন্তু পরে জামা কাপড় গন্ধ হয়ে যাবে। নুসাইবা টের পায় মেজাজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলেও চামড়ার নিচে আগুন জ্বলছে। অবাকও হয় নুসাইবা। এই রকম করে ওর সাথে আর কখনো কথা বলে নি মাহফুজ। এখন ওকে অসহায় পেয়ে কি মাহফুজ আসল রূপ ধরেছে নাকি গতকাল বাস্টার্ড বলার শোধ নিচ্ছে? মাহফুজ বলে কি ব্যাপার আন্ডার গার্মেন্টস লাগবে না? নুসাইবা আসলে আন্ডার গার্মেন্টস এর জন্য নিজে বাজারে যেতে চেয়েছিল কিন্তু যখন বাকিরা বলল ওর বাজারে যাওয়া রিস্কি তখন এই ব্যাপারে আর কথা বাড়ায় নি। বয়ঃসন্ধির সময় থেকে নিয়মিত আন্ডার গার্মেন্টস পড়ে এসেছে। আন্ডার গার্মেন্টস এর ব্যাপারে খুব রক্ষণশীল নুসাইবা। কাপড় যত দামী পড়ুক আন্ডার গার্মেন্টস সব সময় ও কিনে এসেছে অনেক আগে ওর মায়ের দেখিয়ে দেওয়া গাউছিয়ার এক দোকান থেকে। এখন ব্রা প্যান্টি কিনার কথা মাহফুজের সাথে আলোচনা করা ওর পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু মাহফুজ নিজে থেকে জিজ্ঞেস করছে তবে ওর এত দিনের রক্ষণশীল মন এই ব্যাপারে মাহফুজের সাথে আলোচনা করতে বাধা দিচ্ছে। নুসাইবা কোন কথা বলে না। মাহফুজ আসলে ওর মনের ভিতর থেকে বাস্টার্ড শোনার ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। আর নুসাইবা কে এইভাবে টিজ করার সুযোগ তাই ওকে একটা আনন্দ দিচ্ছে। মাহফুজ বলে চিন্তা করার দরকার নেই আমি নিয়ে আসব তোমার জন্য ব্রা প্যান্টি। হাজার হলেও তোমার হাজব্যান্ড। একা বিপদে ফেলে তো যেতে পারি না। নুসাইবা বুঝে এক ঠিলে দুই পাখি মারল মাহফুজ। ওকে আর আরশাদ দুই জনকেই খোচা দিল। আমিনের কাজ শেষ। ডাক দেয় ভাইজান চলেন বাজারে যাই। মাহফুজ নুসাইবা একদম কাছে ঘেষে দাঁড়ায়। নুসাইবা এক পা পিছিয়ে যায়। মাহফুজ বলে আমার কথায় যত রাগ কর শেষ পর্যন্ত কিন্তু আমি রক্ষা করব তোমাকে অন্য কেউ না। মাহফুজের গলায় দৃঢ়তা টের পায় নুসাইবা। অবাক হয়। এই ছেলে আসলে কি চায়? একবার ওকে টিজ করছে পরের মূহুর্তে ওকে বাচানোর প্রতিজ্ঞা করছে? একবার সিনথিয়ার জন্য পাগল হচ্ছে আবার ওকে কাছে পেলে অন্য রকম আচরণ করছে? মাহফুজ ইজ এ মিস্ট্রি টু হার। মাহফুজ বলে আমিন ভাই আসতেছে দাড়ান। তারপর আবার মাথা নুসাইবার কানের কাছে নামিয়ে আনে। বলে, ব্রা প্যান্টির সাইজ বলবেন না কেনার জন্য? নুসাইবা আতকে উঠে এক পা পিছিয়ে যায়। মাহফুজ একটা চোখ টিপ দিয়ে বলে ফ্লোরা হাসানের দোকানে আমি কিন্তু সাইজ দেখে নিয়েছি তাই না বললেও সমস্যা নাই। হাসতে হাসতে চলে যায় মাহফুজ। নুসাইবা ভাবে কি চায় এই ছেলে?
Like Reply




Users browsing this thread: bluesky2021, 79 Guest(s)