পর্ব:৬
কৌশিকদেড় ট্যাক্সির সাথে আসতে আসতে চলে আসলো বিধাননগরের, সেক্টর পাঁচের, ২৫ নম্বর রোডে The Brewhive বারে।ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে আর আকর্ষ নিজের বাইক পার্ক করে ঢুকে পড়লো বারে। বারটা দেখতে খুব সুন্দর। ভেতরে ঢুকেই দেখতে পেলো মানুষ আসছে রাত আরেকটু বাড়লে হয়তো আরো লক আসবে। ওরা বসে পড়লো টেবিলে সেখানে ওরা নিজেদের জন্য কিছু ড্রিঙ্কস অর্ডার করলো। কৌশিক আর জয়দেব ড্রিংক অর্ডার করলেও আকর্ষ খেলো না। আর রুপা ড্রিংক করে না। তাই ওরা নিজেরাই খেতে লাগলো। আর আড্ডা দিতে লাগলো। আকর্ষকে বুঝাতে লাগলো কে কেমন অফিসে। অফিসের ভেতর কিরকম অফিস পলিটিক্স চলে। কে ভালো কে খারাপ এই গুলো। মাঝে মাঝে জয়দেব সবাইকে নিয়ে কিছু জোকস বলছিলো আর ওরা সবাই হেসে শেষ।
আকর্ষের যে প্রথম দিন হিসেবে খুব খারাপ লাগছে সেটাও না, তার আগের অফিসের থেকে এখানে অনেক বেশি ভালো লাগছে, কারণ আকর্ষ যখন বেঙ্গালুরু গিয়েছিল তখন আকর্ষ পুরো একা ছিল, নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ নতুন মানুষ সব কিছুই নতুন কিন্তু কি করবে আর পেটের তাড়নায় যেতেই হয়েসিলো। আস্তে আস্তে সেখানে আকর্ষ অভ্যস্ত হয়ে যায়। নিজেকে মানিয়ে নেয়। বেঙ্গালুরুতে সব থাকলেও মন খুলে কথার মতো একজন মানুষ ছিলো না বা বলতে গেলে বাঙালি ছিলো না তার থাকলেও কম, এইসব কারণে একা লাগতো কিন্তু আজকে থেকে আর লাগবে না। এইসব ভাবছিলো আর রুপা বলে উঠে,
"কি হয়েছে কি ভাবছো?"
"নাহ কিছু না।"
এমন সময় কৌশিক বলে উঠলো,
"সামনের মেয়েটা কিন্তু গিলে খাচ্ছে তোমাকে আকর্ষ।"
এটা বলে জোরে জোরে হেসে দিলো, কৌশিক।
ওর কথা লক্ষ্য করে সবাই তাকায় সামনের টেবিলে। দেখলো একটা মেয়ে সাথে সাথে অন্য দিকে তাকালো, মেয়েটির ভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই মেয়েটিই তাকিয়ে ছিলো। কৌশিক এটা নিয়ে মজা নিতে লাগলো। তারপর আড্ডা দেখতে সময় অনেক গড়িয়ে গেলো মানুষ ও ভরে গেছে বারে। একটু পর চলেই যাবে তাই ওরা ডিসিশন নিলো ওরা ট্রুথ আর ডেয়ার খেলবে যাই কথা সেই কাজ আকর্ষের ব্যাগে একটা বোতল ছিলো সেটা নিয়ে খেলতে শুরু করলো। ঘুরালো জয়দেব বোতল থামলো কৌশিকের দিকে, জয়দেব বললো,
"বল কি নিবি?"
"আমি ট্রুথ নিবো।"
জয়দেব বললো তাহলে আমি জিজ্ঞেস করি বলে বললো
"তুই অফিসের কাউকে কি পছন্দ করিস?"
এই কথা শুনে কৌশিকের মাথায় হাত, কি বলবে এখন। কৌশিক যে অফিসার একজনকে পছন্দ করে সেটা কেউ জানে না। আর কৌশিক জানাতেও চায় না। কিন্তু কি করবে ফেঁসে গেসে,
তাই বললো,
"হ্যা।"
সবাই ওর দিকে হা করে তাকালো। কৌশিক তাই তাড়াতাড়ি করে বললো,
"এখন আমি ঘুরাবো।"
এই বলে বোতল ঘুরিয়ে দিলো, দেখলো এইবার রুপা,
কৌশিক জিজ্ঞেস করলো,
"ট্রুথ না ডেয়ার?"
"ট্রুথ।"
"তাহলে বল তোর কি বয়ফ্রেইন্ড আছে?"
"নাহ।"
এইবার রুপা বোতল ঘুরালো, এইবার হলো আকর্ষের পালা, জয়দেব দিবে এইবার,
"ট্রুথ না ডেয়ার?"
"ডেয়ার।"
জয়দেব আর কৌশিক নিজেদের দিকে তাকালো,
আর হাসলো। আকর্ষ বুঝলো কিছু তো করবে ওরা।
জয়দেব ডেয়ার দিলো,
" তোমার সামনের টেবিলে বসে যে মেয়েটা আছে তার নাম্বার এনে দিতে হবে।"
আকর্ষ তো পরে গেলো বিপদে কারণ আকর্ষ নিজে গিয়ে কারো সাথে কথা বলে না কিন্তু আজ এই ডেয়ারের চক্করে বলতে হবে কি করার।
"ঠিক আছে।" বলে উঠে পড়লো টেবিল থেকে মেয়েটার কাছে গিয়ে বললো,
" এক্সকিউজ মি আমি আকর্ষ। আমার সাথে আপনার কিছু কথা ছিল। "
মেয়েটি চেয়ার থেকে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বলল, "হাই আমি কুহু বলুন আপনার কি কথা আছে?"
আকর্ষ একটু ইতস্ত করছে বুঝা যাচ্ছে,
তাই মেয়েটি বলল,
" সব ঠিক আছে কি? "
"হ্যা আমি কি আপনার নাম্বার পেতে পারি ?"
কুহু সাথে সাথে হ্যা বলে দিলো মনে হয় এইটার জন্যই বসে ছিলো ও। আর আকর্ষকে নাম্বার দিয়ে দিলো। আকর্ষ বললো,
"থ্যাংক ইউ আমি আপনাকে সময় করে ফোন দিবো।"
"ওকে।"
পরে কথা হবে এই বলে আকর্ষ চলে আসলো।
এবার জয়দেবের পালা,
" ট্রুথ না ডেয়ার।
জয়দেব ডিয়ার নিলো। কৌশিক বলল
" তুই মাথায় পানি গ্লাস নিবি আর জামাল কুদু গানে নাচবি। "
কৌশিক ডান্স কর্নারে গিয়ে বলল জামাল কুদু গান বাজাতে। যখনই গান স্টার্ট হলো জয়দেব মাথায় গ্লাস রেখে নাচতে শুরু করলো। আর তাই দেখে সবাই অনেক হাসলো ভিডিও করলো মজা নিলো। এইভাবে ঘড়িতে বেজে গেলো রাত্রি নয়টা। কোথায় দিয়ে সময় চলে গিয়েসে সেটার হিসাব নেই। তাই ওরা আর দেরি না করে ক্লাব থেকে বের হলো।
জয়দেবের আর কৌশিক রুপার জন্য ট্যাক্সি করে দিল, আর এর মধ্যেই আকর্ষ পার্কিংলট থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির। রুপা ওদের bye বলে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলো। আকর্ষ থাকে বেহালার দিকে তাই আকর্ষ ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো।
ফ্রিজ খুলে দেখলো কাজের মাসি আজকে রান্না করে গিয়েছে। রুটিটা বানিয়ে নিতে হবে তরকারি আর ডাল রান্না করে গিয়েছে। বানাতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু খেতে হবে। একা মানুষ খাবে কতই বা ইচ্ছে থাকবে। তাও খেতে হবে। তাই নায়নী কিছু রুটি বানানোর জন্য গেলো। রুটি বানাতে বানাতে ভাবতেই লাগলো আজকে যদি তার সব ঠিক থাকতো তার যদি একটা পরিবার থাকতো তাহলেও তার ঘরটা থাকতো পরিপূর্ণ। রান্নার তাগাদা থাকতো কিন্তু পরিবার নেই রান্নার তাগাদা নেই। রাখির বিয়ে হয়েসে নায়নীর পরে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজকে নায়নী এই একাকিত্বে ভুগছে। মাঝে মাঝে নায়নীরও ইচ্ছে হয় পার্টিতে যেতে রুপাদের সাথে মজা করতে কিন্তু বয়সের জন্য নিজেকে আটকে রাখতে হয়। আজকে যখন অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ভেবেছিলো রুপার সাথে যাবে। কিন্তু যখন আকর্ষ আসলো তখন কেন যেন নিজের ভেতর জড়তা ভরে কাপড়ে বসলো। হাজারো ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে পারলো না। সাদা শার্ট কালো প্যান্ট ইন করা কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলানো। দেখে নিজের ভেতর এক অচেনা অনুভূতি মাথা চারা দিয়ে উঠলো। নায়নী এইসব নিয়ে আর ভাবতেই চায় না। তাই সেখানে ওদের রেখেই প্রস্থান করলো
চলবে
এই গল্প যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। যদি কোনো মতামত থাকে জানাতে ভুলবেন না। আমাকে ইমেইল করতে পারেন lf859782; অথবা টেলিগ্রাম এ এসএমএস দিতে পারেন @Paradox78789 এই নামে। আপনাদের এসএমএস এ আমি উৎসাহ পাই। তাই আমাকে বেশি বেশি করে উৎসাহ দিবেন এই আশা করি।