Poll: নতুন থ্রিলার গল্প চলবে।
You do not have permission to vote in this poll.
Yes
100.00%
8 100.00%
No
0%
0 0%
Total 8 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
থ্রিলার গল্প:বোকা প্রেমিকা (লেখিকা:লুৎফুন্নাহার আজমীন)
#21
(06-03-2023, 12:39 PM)দিবাকর Wrote: পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি

ধন্যবাদ
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
 পর্ব:০৭




ইদানীং জলের বাবা মদ্যপান শুরু করেছেন।কয়েকদিন আগে ফিরোজা বেগম জলকে ফোন করে এ সম্পর্কে অবগত করেন।যদিও তাতে জল কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি।প্রত্যেকটা মানুষেরই স্বাধীনতা আছে।জল কেন যে চে অন্যের স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ করবে?আর তাছাড়াও জলও মাদক গ্রহণে সাথে জড়িত।মাদক বলা ভুল হবে।মন হালকা করার ওষুধ। ছেলেদের মতো জলও সিগারেটের ধোঁয়ায় কষ্ট উড়াতে শিখে গেছে।বর্ষণের কাছ থেকে সে প্রায়োরিটির আশা ছেড়ে দিয়েছে বহুদিন হলো।কিন্তু সে বর্ষণকে ছাড়ছে না।সম্পর্কটাকে যেভাবেই হোক জল বিয়ে অবদি নেবে।আজ দীর্ঘদিন দিন পরে জল ছাদে এলো।চাঁদের জোছনায় ছাদ আলোকিত হয়ে অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে জল একেরপর এক সিগারেট শেষ করে যাচ্ছে।এরই মধ্যে জলের ফোনটা মেসেঞ্জারের শব্দে কেঁপে ওঠে।ফোন তুলে স্ক্রিনে বর্ষার আইডি দেখতে পায় জল।বর্ষা বর্ষণের ছোট বোন।কয়েকদিন হলো জলের সাথে ফেসবুকে এড হয়েছে।বর্ষণের সাথে কথা না হলেও বর্ষার সাথে জলের প্রায় প্রতিদিনই কথা হয়।মেয়েটা বড্ড মিশুক।সবেমাত্র স্কুলের গন্ডি পাড় হয়ে কলেজের চৌকাঠে পা দিয়েছে।খুব চটপটে স্বভাবের মেয়ে।সারাদিন কি হলো না হলো সব জলের সাথে শেয়ার করে।বিয়ের পর জলের সাথে,জলকে নিয়ে কি করবে তা নিয়েও তার জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।

" কি করছো আপু?"

শুরুর দিকে বর্ষা জলকে ভাবি ডাকতো।জলই না করেছে তাকে ভাবি ডাকতে।জল বর্ষাকে নিজের বোনের মতো দেখে।আর যাকে কেন্দ্র করে জল আর বর্ষার সম্পর্ক সে জলের অনেকটাই দুরের মানুষ হয়ে আছে।সম্পর্কটা একপ্রকার ঝুলেই আছে।ফর্মালিটি আর জেদে কারণে।

" ছাদে বসে চাঁদ দেখছি।"

বর্ষা ওয়াও রিয়াক্ট দেয় জলের মেসেজের।

" এ বাবা!রাত দেড়টা বাজে তুমি এখনো ছাদে?একাই আছো?"

" একা আবার একা না।সাথে বাতাস,জোছনা আর তেনারা আছে বলতে পারো।"

" তোমার ভয় করে না?"

" ভয়ের কি আছে?তেনারাও তো একসময় আমাদের মতো ছিলো নাকি?তারা আমাদের বংশধর আর আমরা তাদের পুর্বপুরুষ।"

" ধুরররর!রাত দুপুরে এরকম কথা বলো না তো!ভয় করে।"

" আচ্ছাহ!বলবো না।"

" রাতে কি খেয়েছো?"

" জ্যাম পাউরুটি।"

" আমি তোমায় যখনই খাবারের কথা জিজ্ঞেস করি তখনই তুমি জ্যাম পাউরুটির কথা বলো।তুমি কি এটা ছাড়া অন্য কিছু খাও না?"

" খাই।তবে আমার সেগুলো বানাতে আলসেমি।আর আমি পারিও না ওভাবে বানাতে।রান্নাবান্না কম জানি।"

" তাহলে আমি ভাইয়াকে বলে দেবো নি রান্না শিখতে।"

" আচ্ছা বলে দিও।"

" আপু আমি যাই আজকে।আম্মু উঠে পড়েছে।আল্লাহ হাফেজ।"

" আল্লাহ হাফেজ।টেইক কেয়ার।"

জল বর্ষার মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে ডাটা অফ করে।তারপর আবার একেরপর এক সিগারেট টানতে লাগে।মাঝে মাঝে জল নিজেই নিজের আচরণে অবাক হয়ে যায়।সে আদোও বাঙালি মেয়েদের মধ্যে পড়ে?যেখানে বাঙালি মেয়েরা প্রেমিককে সিগারেট ছাড়াতে জান দিতেও প্রস্তুত সেখানে জল নিজেই সিগারেটে আসক্ত।বাঙালি মেয়েরা নাকি কথা বলার আগেই কেঁদে দেয়।অথচ জল কাঁদতে ভুলে গেছে বহুদিন হলো। 

____________

আজ জল ওর মায়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।বেশ কয়েকদিন ধরেই জলের মা ফোন করে কাকুতি মিনতি করছিলেন যাতে জল তার সাথে দেখা করে আসেন।জলের মায়ের নতুন স্বামী বলে খুব কড়া ধাচের মানুষ।একপ্রকার ঘর বন্দীই করে রেখেছেন জলের মাকে কারও সাথে মিশতে দেন না।যোগাযোগ করতে দেন না।জলের মায়ের নতুন স্বামীর স্ত্রীও বলে জলের মায়ের মতো একই কারণে ছেড়ে চলে গেছে।তাছাড়া লোকটার একটা বাজে অভ্যাস আছে।অতিরিক্ত মদ্যপান।প্রায় রাতেই লোকটা মদ্যপান করে এসে আগের স্ত্রীকে মারধর করতেন।যদিও জলের মায়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ভিন্ন।লোকটা জলের মায়ের ওপর কখনো হাত তুলে নি।তবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ আর অতীত নিয়ে প্রায়ই কথা শোনান।জলের মা এতটুকু জলকে ফোনে জানিয়ে।জলের বুঝতে বাকী রইলো না যে জলের মা ভালো নেই।আর মামারা সেই আগের ভুলই করেছে।টাকা দেখেই মায়ের বিয়ে দিয়েছে।একবারও যাচাই করে দেখলো না যার সাথে বিয়ে দিচ্ছে লোকটা আদোও মানুষ কিনা!
বাসায় ঢুকতেই লোকটার মানে জলের মায়ের নতুন স্বামীর মুখোমুখি হয় জল।জলকে দেখেই লোকটা যেন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে।

" তুমি?"

" মাকে দেখতে আসলাম।"

" মাকে দেখে তোমার কি লাভ?তুমি বাবার সাথে থাকছো তাকে নিয়েই থাকো না!"

" না জেনে মানুষের নামে মন্তব্য করবেন না।এতে আপনিই ছোট হবেন।আমি একা থাকি।বাবার সাথে না।আর লাভ লোকসানের হিসাব নিশ্চয়ই আপনাকে দিতে আমি বাধ্য নই "

" অবশ্যই বাধ্য।কারণ তোমার মা আমার স্ত্রী।"

" আপনার স্ত্রী হওয়ার আগে উনি আমার মা।"

" প্রথম দিনেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি কেমন!"

" বুঝতে পেরেছিলেনই যখন তাহলে এভাবে যে চে তর্ক কর‍তে এসেছেন কেন?চিন্তা করবেন না।আপনার বাড়িতে আমি এক গ্লাস পানিও খাবো না।মাকে দেখা হয়ে গেলেই চলে যাবো।"

কথায় কথা বাড়ে।যার দরুন জল কথাটা বলে এক মুহুর্তও দেরি করে না।চলে আসে লোকটার সামনে থেকে।কাজের বুয়াকে জলের মা আগেই বলে রেখেছিলো জল আসবে।সে জলকে দেখে বলে,,

" আপনেই কি খালাম্মার আগের ঘরের মাইয়া?"

" জ্বী।মায়ের ঘরটা কোনদিকে?"

" আমার লগে আহেন।আমি দেহায় দিতাছি।আপনার কথা খালাম্মা আগেই কইছাল।খালু থাকতে খালাম্মা হের ঘর থিকা বাইর হবার পায় না।খালু রাগ করে।"

" ঘর থেকে বের হলে আপনার খালু রাগ করেন কেন?"

" কি জানি।আপিসের বেগানা পুরুষ মানুষ আহে তো প্রায়ই।খালু মান চান না খালাম্মা বেগানা পুরুষের সামনে যাইক।"

" আপনার খালুর কোনো সন্তান নেই?"

" আছে।এডা পোলা আছে।ওইডা মায়ের লগে থাহে।"

" আচ্ছাহ!"

বুয়া জলকে মায়ের ঘরে নিয়ে যায়।গিয়ে দেখে মা বিছানা ঝাড়ছে।

" মা"

জলের ডাকে পেছন ঘুরে থাকায় জলের মা।জলকে দেখে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে জলকে জড়িয়ে ধরেন।অনবরত চুমু খেতে থাকেন জলকে।

" কেমন আছো?"

" ভালো।তুমি?"

" আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ভালোই রেখেছেন।"

" সত্যিই কি ভালো আছো তুমি মা?"

মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে জল।জলের মা কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যায়।চাপা হাসি দিয়ে বলেন,,,

" যেমন আছি ভালোই আছি।আমি যে অবস্থায় আছি অনেকে হয়তো এর থেকেও খারাপ অবস্থায় আছে।তাই আলহামদুলিল্লাহ।"

" আমার সাথে চলে এসো মা।"

" সম্ভব না।আর তোমার সাথে থাকলে আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব সেই ঘুরে ফিরে তোমার বাবার কাঁধেই আসবে।যা আমি চাই না।"

" জেদের বশে তুমি বিয়েটা করো নি তো মা?"

" জেদের কি আছে জল?একা থাকা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব না।আর কয়দিনই বা তোমার মামাদের ঘাড়ে বসে খেতাম?"

জল মায়ের কথার প্রত্যুত্তর খুঁজে পায় না।জলের নীরবতাকে ভেঙে জলের মা বলেন,,,

" কি খাবে বল।"

" কিচ্ছু না।আমায় দেখতে চেয়েছিলে তাই এসেছি।তাছাড়া আমারও বেশ কয়েকদিন ধরে তোমায় দেখতে ইচ্ছা করছিলো।আমার কাজ শেষ আমি চলে যাবো।"

" তাই এভাবে কিছু না খেয়ে চলে যাবে?"

" হু।তাছাড়া তুমি জানো আমি মাত্রাতিরিক্ত শুচিবায়ু।"

" কিন্তু এখানে তো আমি আছি জল।"

" প্লিজ জোর করো না।"

মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জল বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।পথে বর্ষণকে আদিবার সাথে দেখে ফুচকা খেতে।জল আন্দাজ করেছিলো বর্ষণ শুধরাবে না।মিলেই গেলো শেষমেশ জলের আন্দাজ।শুধু শুধু তো আর বলা হয় না! বন্ধুকএর গুলি মিস যায় কিন্তু মেয়েদের আন্দাজ ভুল হয় না।জল জ্যামে বসে ছিলো।সে ঠাস করে আদিবা বর্ষণকে ক্যামেরা বন্দি করে ফেলে।কোনো একসময় হয়তো কাজে দিবে সেই স্থির চিত্রটা।

চলবে..........
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#23
পর্ব:০৮



শুধু তোমার কন্ঠস্বর শুনবো বলে;
রাতের পর রাত জাগা আমার।
চোখে ঘুম নিয়ে...
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা!

তুমি ভালো থেকো..!
যদি আমার না হও;
অন্য কারও হইয়ো না।

যদি ইচ্ছে হয়,
না হও আমার সাথে তুমি করো 
প্রতারণা
তুমি অন্য কারও হইয়ো না...
তুমি অন্য কারও হইয়ো না

শুভর এই বোকা প্রেমিক গানটার সাথে জলের জীবনের অনেকটা অংশই মিলে যায়।খুব আপন মনে হয় গানের প্রতিটা লাইনকে।যদিও জল নিজের মতো করে গানটাকে একটু পালটে নিয়েছে।গানের লাইনে সে ছলনার জায়গায় প্রতারণা বসিয়ে দিয়েছে।মেয়েরা করে ছলনা আর ছেলেরা করে প্রতারণা।এই একটু হালকা পরিবর্তনে জল গানের নাম পালটে রেখেছে #বোকা_প্রেমিকা।কাল জলের বিয়ে।বর্ষণের সাথে।বিয়ের আগে মেয়েরা কত কি করে।সংসার জীবন নিয়ে কত স্বপ্ন বুনে।আর জল রাতের নির্জনে ছাদে বসে গিটারের টুংটাং সুরের সাথে নিজের পছন্দের গানে গলা মিলাচ্ছে।বাংলা গান জলের বরাবরই খুব পছন্দের।বাংলা গানের প্রত্যেকটা লাইনের কথা জলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।আর এই হার্ট টাচিং লিরিক্সের জন্যই জলের কাছে বাংলা গান এত প্রিয়।ফোনের স্ক্রিনে জল দেখে আড়াইটা বাজে।আর জাগা ঠিক হবে না।কাল বিয়ে। সারাদিন অনেক ধকল যাবে জলের ওপর দিয়ে।যদিও বিয়েটা হবে ঘরোয়া ভাবে ছোট পরিসরে।জলের বাবার ইচ্ছে ছিলো বেশ বড় পরিসরে ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দেবেন।কিন্তু তাতে জলই দ্বিমত পোষণ করে।কি লাভ ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে?অতিথি হিসাবে যারা আসবে তারা শেষমেশ পেট ভরে খেয়ে খুঁত ধরে বাড়ি ফিরবে।বাঙালির স্বভাবই তা। জলন্ত সিগারেটটা শেষ করে জল ঘরে যায় ঘুমাতে।

___________

জল খুব ভোরে উঠে বাবার বাসার দিকে রওনা দেয়।কলিংবেলে চাপ দিতেই ফিরোজা বেগম দরজা খুলে দেন।জলকে দেখে তিনি মুচকি হাসেন।জল তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের ঘরে চলে যায়।গিয়ে আবার আরেকটা ঘুম দেয় সে।যখন তার ঘুম ভাঙে তখন সকাল ন'টা।জল জাবেদ সাহেবের ডাক শুনতে পান।তিনি জলকে সকালের নাস্তা করার জন্য ডাকছেন।জল ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে যায়।গিয়ে দেখে খাবার টেবিলে সাজিয়ে বসে আছেন জাবেদ সাহেব।জলকে দেখে তিনি হেসে বলেন,,

" অবশেষে বিয়ের কনের ঘুম ভাঙলো।তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।"

জল মুচকী হেসে চেয়ারে বসে।ফিরোজা বেগম এসে জলের প্লেটে দুটো পরোটা আর মাংসের তরকারি দেন।জল করুণ দৃষ্টিতে জাবেদ সাহেবের পানে চেয়ে থাকেন।মেয়ের চাহনিতে জাবেদ সাহেব বুঝতে পারেন যে মেয়ে কিছু বলতে চাইছে।

" কিছু বলবে?"

" খাইয়ে দেবে?কতদিন তোমার হাতে খাই না।"

জাবেদ সাহেব আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।চোখের কোণে জমা নোনা জল মুছে পরোটা ছিড়ে মেয়েকে খাইয়ে দেন।খাইয়ে দিতে দিতে বলেন,,,

" যাক অবশেষে তোমার রাগ ভাঙলো আমার প্রতি।"

জল এবারও মুচকী হাসে।খেতে খেতে নিজের মনের মধ্যে আওড়াতে থাকে সে,,

" রাগ তোমার প্রতি আমার কখনোই ছিলো না বাবা।যা ছিলো অভিমান।যা তুমি কখনো বুঝো নি।এমনকি বুঝার চেষ্টাও করো নি কখনো!অথচ তুমি প্রায়ই আমায় বলতে তোমার মতো করে আমায় কেউ বুঝে না।মানুষ আসলে কেউ কাওকে বোঝার মতো ক্ষমতা রাখে না।তারপরও প্রিয়জনকে ফর্মালিটির জন্য একপ্রকার মিথ্যে স্বান্তনা দিয়েই বলে ' আমি তোমাকে বুঝি।' পৃথিবীতে এর মতো বড় মিথ্যা কথা আর একটাও নেই।"

জাবেদ সাহেব মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছেন।রান্নাঘর থেকে কাজের বুয়া এই দৃশ্য দেখে বলেন,,

" যাইক!মাইয়াডারে যত পাগুন্নি ভাবছিলাম মাইয়াডা অতও পাগুন্নি না।কত সুন্দর কইরা বাপের হাত থনে খাওন খাইতাছে!"

" ওর নাম জল। ওকে ওই নামেই ডাকবে।মেয়েকে পাগল বলছো জানলে তোমার খালু কিয়ামত লাগিয়ে দেবে।"

খালার কথা শুনে প্রত্যুত্তরে বলেন ফিরোজা বেগম।খালা কোনো কথা না বলে কাজে মন দেয়।
জল খেতে খেতে বাবাকে বলে,,,

" ছোটবেলায় প্রায়ই তুমি এভাবে খাইয়ে দিতে।কত সুন্দর ছিলো না ছোটবেলাটা?তুমি,আমি,মা কত মজা করতাম প্রতিদিন।খেলতাম,একই সাথে বসে টিভিতে টম এন্ড জেরি দেখতাম।কত সুন্দর ছিলো আমার ছোটবেলা নামক অতীতটা।"

মেয়ের কথা শুনে জাবেদ সাহেব আফসোসের দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

" আসলেই।তোর ছোট বেলাটা অনেক সুন্দর ছিলো।শুধু আমার কারণে তোর জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো।"

জাবেদ সাহেবের চোখে,মুখে,কন্ঠে তখন তীব্র অপরাধ বোধের ছাপ।জলের বুঝতে বাকী রইলো না জাবেদ সাহেব নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজের কাজের জন্য প্রতিনিয়ত নিজেকে দোষী করছে,শাস্তি দিচ্ছেন।তিনি তার কাজের জন্য অনুতপ্ত।

খাওয়া হয়ে গেলে জল শাওয়ার নিতে যায়।ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে জল।প্রায়ই নির্ঘুম রাতের জন্য চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরে গেছে।মুখে হাজারো আঘাত আর বয়সন্ধিকালে হওয়া ব্রণের দাগ।কিন্তু তাও কেন যেন জলকে সুন্দর লাগছে।অন্য রকম সুন্দর। হুমায়ুন আহমেদ বলেছেন সৃষ্টি কর্তা নাকি বিয়ের আগে মেয়েদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেন।জল আজ নিজে তা উপলব্ধি করলো।শাওয়ার নিয়ে জল নিজের ঘরে যায়।দেখে জাবেদ সাহেব আগে থেকেই শাড়ি,গয়না-গাটি রেখে গেছেন।ঠিক এই কারণেই জল এই বাড়িতে আসতে চায় না।বাড়ির প্রতিটি ধুলিকণা বারংবার জলকে ওর সুন্দর অতীতে নিয়ে যায়।যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।জল ছোট থাকতে জাবেদ সাহেব এভাবেই সব গুছিয়ে রেখে যেতেন।জলকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তিনি অফিসে যেতেন।
শাড়িটা বেশ ভারী।রঙ লাল গোলাপী।বলতে গেলে গাঢ় গোলাপী।তারমধ্যে হাতের ভারী কাজ করা।জলের শাড়ি সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নেই।তাই জল সঠিক ভাবে ধরতে পারলো না শাড়িটা আসলে কি শাড়ি।তবে আন্দাজ কর‍তে পারলো কাতান হবে শাড়িটা।
জল শাড়িটাকে সাইডে রেখে বিছানায় নিজের গা এলিয়ে দেয়।এরই মধ্যে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পায় জল।

" কে?"

" আফা আমি।টুনির মা।আপনে তৈয়র হইছেন?"

" না।"

" ওমা!এহনো তৈয়র হন নাই?আপনের হশুর বাড়ি থনে তো মানুষ আইয়া পরছে।আপনের জামাইডা যে সুন্দর আফা!কালা পাঞ্জাবীতে একেবারে ফুইট্টা উঠছে মানুষডা।"

" আপনাকে কিছু জিজ্ঞাস করেছি আমি?"

" আজ্ঞে না।"

" তাহলে শুধু শুধু আগ বাড়িয়ে কথা বলছেন কেন?"

" বিয়ার দিন মাইয়ারা জানবার চায় তো জামাইরে কিবা দেহা যাইতাছে।আমি ভাবছি আপনারও মন চাইতাছে শুনতে আপনার জামাইরে কিবা দেহা যাইতাছে।তাই কইলাম আর কি...."

" বলা হয়ে গেছে?"

" জ্যা।"

" আসতে পারেন।"

জলের এ হেন আচরণে টুনির মা বেশ অনেকটাই রেগে যায়।রাগে ক্ষোপে জলের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে তিনি বিদায় হন।

" শিক্ষা দিক্ষা কিচ্ছু নাই ছেমড়ির।থাকবো কিবায় বাপে অন্য বেডির লগে পিরিত মারাইছে।মায়ে গেছে গা এইন্না নিয়া।বাপ মায় তো নিজেগোরডাই বুঝছে।মাইয়ারে মানুষ করার সময় কই হেগো?"

টুনির মার সব কথাই জল শুনছিলো।একেকটা কথা জলের হৃদয়কে তীরের মতো আঘাত করছিলো।মানুষ এমন ভাবে জলকে নিয়ে কথা বলে যেন অতীতে সব কিছু জলের জন্যই হয়েছে।জল দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাড়িটা হাতে নেয়।মিনিট পনেরো বিশের মতো লাগে জলের শাড়ি পরতে।তারপর দীর্ঘসময় নিয়ে অদক্ষ কাঁপা হাতে কাজল দেয় জল।এই বারও জলের চোখে খোঁচা লাগে।বেশ অনেকটাই ব্যথা পায় জল।

" আপু আসবো?"

" কে?"

" আমি বর্ষা।"

" আচ্ছা।এসো।"

বর্ষা এসে দেখে জল অতি সাবধানতার সাথে নরম কাপড় দিয়ে চোখ মুছছে।বর্ষা তা দেখে জলকে বলে,,,

" কি হয়েছে আপু?"

" কাজল দিতে গিয়ে খোঁচা খেয়েছি।"

বর্ষা হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,,,

" কাজল দিতে গিয়ে কেউ খোঁচা খায়?"

" আমি আগে কখনো দিই নি কাজল।বুঝতেই পারছো।সাজগোজে ভোচার মা।"

" আমি সাজিয়ে দেবো?"

" দিবে?তাহলে তো আমার ভালোই হয়।"

বর্ষা ড্রেসিনটেবিলের কাছে গিয়ে দেখে কাজল,লিপস্টিক,প্রেস পাউডার ছাড়া আর কিচ্ছু নেই।

" আপু এগুলো দিয়ে কি বিয়ের সাজ হবে?"

" জানি না।ভারি সাজগোজ বলতে আমি যা বুঝি তাই নিয়ে এসেছি।"

" এগুলোই যদি তোমার কাছে ভারি সাজ হয় তাহলে আমার সাজ তোমার কাছে কি?মানুষজন তো দেখে বলবে তোমার না আমার বিয়ে।"

হেসে দেয় বর্ষা।সাথে জলও।



চলবে..........
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#24
সুন্দর  আপডেটট,  

লাইক আর রেপু।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#25
 পর্ব:০৯




কাবিননামায় সাক্ষর করতেই জলের মনে একটাই কথা ভেসে উঠে।তা হলো,,,

" অনেক তোমায় সুযোগ দিয়েছি বর্ষণ।এটা সর্বশেষ সুযোগ।এরপরেও যদি তুমি আমার বাবার মতো একই কাজ করো তাহলে এর ফলাফল কত ভয়াবহ হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।"

কাবিননামায় সাক্ষর করে বর্ষণ জলের দিকে তাকিয়ে বিজয়ের হাসি দেয়।জলও প্রত্যুত্তরে কৃত্রিম বিজয়ের হাসি দেয়।মনে মনে আওড়াতে থাকে জল,,

" আজ তোমার সময় শেষ।আমার সময় শুরু।দশগুণ অবহেলা আজ থেকে তোমায় ফিরিয়ে দেবো বর্ষণ।"

শুভ কাজ সম্পন্ন হলে দুই পরিবার মেতে ওঠে খাওয়া দাওয়ায়।ফর্মালিটি,লোক দেখানোর জন্য জল তাতে ওর সৎ মা ফিরোজা বেগমকে সাহায্য করে।যদিও মহিলাটিকে জলের মোটেও পছন্দ না।
খাওয়া দাওয়া শেষ হলে বর্ষণের বাড়ির লোকজন জলকে তাদের বাড়িতে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়।কিন্তু জল তাতে নাকোচ করে।ভার্সিটির ক্লাসের বাহানা দিয়ে সে বিষয়টাকে কাটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।এবং তাতে সফলও হয়। শেষে জাবেদ সাহেব মেয়েকে প্রস্তাব দেন আজকের রাতটা এ বাড়িতে কাটানোর।জল তাতেও নাকোচ করে।সে যে বাসায় ছিলো সে বাসায়ই যাবে আর থাকবেও।বর্ষণের বাড়ি টঙ্গী।যার দরুণ সে মেসে থেকে পড়াশোনা করতো।যেহেতু জল বর্ষণের বিয়ে হয়েছে।তাই আজ থেকে বর্ষণ জলের সাথে জলের বাড়িতে থাকবে।
বাসায় যাওয়ার পথে জল ফুলের দোকান থেকে কিছু ফুল কিনে নেয়।তা দেখে বর্ষণ খানিকটা অবাকই হয়।

" ফুল কেন?"

" ওমা! বিয়ে করলাম বাসর ঘর সাজাবো না?আজ তুমি আমি দুইজন মিলে ঘর সাজাবো।"

বর্ষণ আর কিছু বলে না।বেশ দ্রুতই বাড়ি পৌঁছায় দুজন।গাড়ি থেকে নামতেই বর্ষণ পুরো বাড়িটায় চোখ বুলিয়ে নেয়।কেমন যেন ভুতুড়ে ভুতুড়ে লাগছে বাড়িটাকে বর্ষণের কাছে।জল বর্ষণের চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারে বর্ষণের মনে বাড়িটাকে নিয়ে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।জল মুচকী হেসে বলে,,,

" পুরো বাড়িটাতে একা থাকি তো!তাই সেভাবে বাড়িটার যত্ন নেওয়া হয়ে ওঠে না।এবার তুমি এসেছো।দুইজন মিলে বাড়িটার যত্ন নিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে নিজেদের সুন্দর পৃথিবী বানাবো।"

কথাটা বলে জল গাড়ি থেকে ফুল গুলো নামাতে লাগে।বর্ষণ গিয়ে ফুলগুলোর কিছু অংশ হাতে নেয়।জল গাড়িটাকে গ্যারেজে রেখে আসে।
বাড়ির ভিতরে ঢুকে বর্ষণের পিলে চমকে ওঠে।বাইরের থেকে ভিতরে আরও ভয়ানক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজমান। নিচতলার পুরো জায়গা জুড়ে মোটা মোটা বড় বড় মাকড়সার জাল।জল এতদিন এই বাড়িতে একা থাকতো?ভাবতেই বর্ষণের গা শিউরে ওঠে।জল ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের আলোর সাহায্য নিয়ে ড্রয়িংরুমের লাইটটা দেয়।লাইটটা বেশ পুরোনো হবে।আবছা আবছা আলো দিচ্ছে।যাওয়ার দশা প্রায়।এই পুরোনো লাইটের আবছা আবছা আলোয় ভুতুড়ে ভুতুড়ে ভাবটা আরও বেড়ে গেলো।এই মুহুর্তে দিনের আলো ফুটলে হাফ ছেড়ে বাঁচে বর্ষণ।
জল বর্ষণকে নিয়ে ওর ঘরের পাশের ঘরটায় যায়।গতকাল নিজ হাতে ঘরটা পরিষ্কার করেছে জল।কিন্তু ভেন্টিলেটরে থাকা চড়ুই পাখির বাসাটা ভাঙে নি।ওরাও থাকুক।এটা ঘর বাঁধার জায়গা।ঘর ভাঙার না।
নবদম্পতি পরম যত্নে নিজেদের ফুলশয্যার খাট সাজায়।তারপর দুজনে ফ্রেশ হয়ে নেয়।জল সুতির নীল রঙের একটা থ্রীপিস পরে।উজ্জ্বল শ্যামবর্ণে জামাটা ভালোই মানিয়েছে জলকে।জল বর্ষণকে ট্রাউজার আর একটা টিশার্ট বের করে দেয়।বর্ষণ সেগুলোই পরে।

" তুমি কি সব আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলেন?"

" কিসের প্ল্যান?"

" এইযে আমায় এখানে নিয়ে আসবে।"

" ভেবে রেখেছিলাম।প্ল্যান করে রাখলে নতুন ড্রেসই পরতে দিতাম তোমায়।আমার ইউজ করা গুলো না।"

" মানে?এগুলো তোমার?"

" হু।ছেলেদের ড্রেসে কমফোর্ট ফিল করি।তাই বাসায় এগুলোই পরি।"

" আচ্ছাহ!"

কথাটা বলে বর্ষণ জলকে জড়িয়ে ধরে।জল এক জটকায় বর্ষণকে দূরে ঠেলে দেয়।বর্ষণ তাজ্জব হয়ে যায়।

" what's the problem Jol?তুমি কেন আমাকে এইভাবে দূরে সরিয়ে দিলে?এখন তো আমরা আর গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড না।তোমার ওপর সম্পুর্ন অধিকার আছে আমার।"

" It will take me a while to prepare myself.please give me some time to prepare myself."

" well. I gave time. But today I need a small kiss."

কথাটা বলেই বর্ষণ জলের দিকে এগিয়ে আসতে লাগে।জল পিছাচ্ছে বর্ষণ আগাচ্ছে।পিছাতে পিছাতে এক পর্যায়ে জলের পিঠ দেয়ালের সাথে ঠেকে যায়।জলের দেয়ালের সাথে মিশে যাওয়ার মতো অবস্থা।বর্ষণের সেদিকে কোনো হুশই নেই।সে তীব্র উত্তেজনা নিয়ে জলের দিকে আগাচ্ছে।এক পর্যায়ে জলের খুব কাছাকাছি এসে পরে বর্ষণ।জলের চিবুকে ধরে আলতো করে চোখ বন্ধ করে জলের কোমল ঠোঁটে নিজের ঠোঁট খানা ডুবাতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে জল আবারও বর্ষণকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়।বর্ষণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দৌড়ে ছাদের দিকে পা বাড়ায় জল।বর্ষণও তার পিছু নেয়।কিন্তু সিঁড়িকোঠার ভুতুরে অবস্থা দেখে পিছ পা হয় বর্ষণ।যেখানে বর্ষণ পুরুষ হয়ে জায়গাটায় যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না সেখানে জল কত সহজেই চলে গেলো।বর্ষণ অবাক দৃষ্টিতে জলের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে।বেশ কিছুক্ষণ।সে জলের ফেরার জন্যও অপেক্ষা করে।কিন্তু জল না ফিরায় সে ঘরে গিয়ে শুয়ে পরে।এমনিতেও সারাদিন শরীরের ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে।
ছাদের চিলেকোঠার এক কোণে জল সিগারেট আর লাইটার রেখেছিলো।সেখান থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরায় সে। রাতের শীতল হাওয়ায় সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে জল নিজে নিজেই বলে,,,,

" কিছুতেই না।বর্ষণের প্রতি দুর্বলতা কখনোই চলবে না এখন।দিনের পর দিন জলকে বর্ষণ যা অবহেলা করেছে তার প্রতিটি এখন বর্ষণকে সুদে আসলে ফিরিয়ে দিতে হবে।বর্ষণের সময় শেষ জলের সময় শুরু।"

কথাটা বলে জল অট্টহাসিতে হেসে দেয়।জলের হাসি গভীর নির্জন রাতে ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি করে।

জল যখন ঘরে ফেরে তখন রাত প্রায় সাড়ে তিনটা।বর্ষণ এতক্ষণে ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে।জল গিয়ে ঘুমন্ত বর্ষণের দিকে তাকায়।কত নিষ্পাপ চেহারা!অথচ এই মানুষটাই জলের সাথে দিনের পর দিন প্রতারণা করেছে।ব্যবহার করেছে জলকে।ঘুমালে পৃথিবীর সবচে নিকৃষ্ট ব্যক্তিকেও সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর মতো নিষ্পাপ লাগে।জল কাঁদে।প্রচুর কাঁদে।কিন্তু সেই কান্না বর্ষণের কর্ণকুহরে পৌঁছায় না।তারপর হঠাৎ করেই আদিবার কথা মনে পরে জলের।জল তীব্র ঘৃণা নিয়ে বর্ষণের থেকে দূরে ছিটকে পরে।রাগে ঘৃণায় জল কাঁপছে।উঠে দৌড়ে নিজের ঘরটায় চলে যায় জল।

সকালে জলের ডাকেই বর্ষণের ঘুম ভাঙে। আর পাঁচটা বিবাহিত নারীর মতোই জল মিষ্টি করে ডাক দিয়ে বর্ষণকে ঘুম থেকে তোলে।

" এই যে মিস্টার!সকাল হয়ে গেছে।উঠুন।"

জলের এ হেন আচরণে বর্ষণ অবাক হয়।রাতের জল আর এখনকার জলের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।বর্ষণ চোখ কোচলাতে কোচলাতে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হয়ে।জল বিছানা গুছিয়ে নিচে যাওয়ার আগে বর্ষণকে বলে,,,

" ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো।আমি নাস্তা রেডি করছি।"

জল নিচে চলে যায় নাস্তা রেডি করার জন্য।ফ্রেশ হয়ে বর্ষণ নিচে নামে।ঘুম ঘুম চোখে মেঝের দিকে তাকাতেই আঁতকে ওঠে বর্ষণ।কালচে লাল জমাট বাঁধা এগুলো কি?বর্ষণ মেঝেতে পরে থাকা জমাট বাঁধা কালচে লাল বিন্দুগুলোতে নখ ঘষে।রক্ত?রক্ত কেন এখানে?

" এখানে রক্ত?"

" মুরগী কেটেছিলাম একদিন।হঠাৎ করেই একটা ইমার্জেন্সি কল আসে।সেই কাটা মুরগী হাতে নিয়েই ফোন ধরতে ওপরে যাই।তখন মুরগী থেকে পড়েছিলো।বাসায় আমি একা থাকি।আর কেউ আসে না।যার কারণে পরিষ্কার করার প্রয়োজন মনে করিনি।"

স্বাভাবিক কন্ঠে কথাগুলো বলে জল।বর্ষণের প্রথমদিকে কথা গুলো স্বাভাবিক না লাগলেও পরে মানতে বাধ্য হয়।জল খাবারগুলো টেবিলে সাজিয়ে বর্ষণকে বসার অনুরোধ জানায়।বর্ষণ টেবিলে বসে।জল ওর প্লেটে রুটি আর সুজি দেয়।দিতে দিতে বলে,,,

" জানোই আমার রান্নার হাত কাঁচা।বেশি কিছু করতে পারলাম না।"

" তুমি যা রান্না করবে তাই অমৃত।"

বর্ষণ খাওয়া শুরু করে।জলও ওর পাশে বসে খেতে লাগে।খেতে খেতে বর্ষণ জলকে বলে,,,

" যাই বলো জল।রাতে বাড়ির অবস্থা দেখে কিন্তু আমি সেই ভয় পেয়েছি।পুরো হরর মুভির বাড়ির মতো তোমার এই বাড়িটা।কিভাবে যে তুমি এতদিন একা থাকতে?আমার তো ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।"

জল বর্ষণের কথার কোনো জবাব দেয় না।শুধু একটা মুচকী হাসি দেয়।

চলবে........
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#26
পর্ব:১০





 রেডি হয়ে শার্টের হাতা ফোল্ডার করতে করতে নিচ থেকে নামছিলো বর্ষণ।হঠাৎই তার চোখ পরে শুকিয়ে থাকা কালচে রক্তবিন্দুর ওপর।এত রক্ত?একটা মুরগীতে এতই রক্ত থাকে যে নীচতলা,সিঁড়ি,দোতলায় এভাবে পরে থাকবে!বর্ষণ রক্তবিন্দু গুলোকে অনুসরণ করতে করতে বর্ষণের ঘরের পাশের ঘরের সামনে গিয়ে ঠেকে।রক্তবিন্দুর ছাপ গুলো এখানে এসে শেষ হয়েছে।বর্ষণ ঘরে ঢোকার জন্য দরজা খুলতে যাবে ঠিক সেই সময় জল ভুতের মতো হাজির।আকষ্মিকতায় বর্ষণ ভয়ে চমকে ওঠে।

" কি হলো? "

" ক..ক...কিছু না।"

" এখানে কি করছো?"

" ঘরটা দেখে আগ্রহ জাগলো তাই আর কি..."

" ঘরটার ভেতর যেতে কৌতুহল জাগলো?"

" exactly"

" কিছুই নেই ঘরটাতে।পুরোনো আসবাব আর ধুলোবালি ছাড়া।এগুলো তোমার না দেখলেও চলবে।তোমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।"

জলের কথা শুনে বর্ষণ ঘড়ি দেখে।আসলেই অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যায় বর্ষণ।বর্ষণ চলে গেলে জল যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলে জল।এই ঘরটা এভাবে অরক্ষিত রাখা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।আজই ঘরটাতে তালা দিতে হবে।আর রক্তগুলোও মুছে ফেলতে হবে।আচ্ছা!এই রক্তবিন্দুগুলো নিয়ে কি বর্ষণের মনে একটুও প্রশ্ন জাগলো না?জল মুরগীর রক্ত বলে চালিয়ে দিলো আর তাই বর্ষণ মেনে নিলো?বর্ষণ কি পরে থাকা রক্ত বিন্দুতে জল জল ঘ্রাণ পায় নি?জল বিষাদের দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে যায়।ঘরের দরজা খুলতেই ভেতরে জমে থাকা গ্যাস আর সিগারেটের গন্ধ মিশে এক বিদঘুটে গন্ধের বায়ু বেরিয়ে আসে।জলের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতক্ষণে তার অস্বস্থি শুরু হয়ে যেত।কিন্তু জল সম্পুর্ন স্বাভাবিক।ঘরটায় ঢোকে ঠাস করে দরজা আটকিয়ে দেয় সে।ঘরে গিয়ে দুইটো সিগারেট শেষ করে বের হয় জল।আলমারি থেকে একটা পুরোনো কাপড় নেয় জল।বাথরুম থেকে একটা পুরোনো বালতিতে পানির সাথে খানিকটা স্যাভলন লিকুইড মেশায় জল।ফিনাইল বা লাইজল দিয়ে মানুষ সাধারণত ঘরের মেঝে পরিষ্কার করে। জল এর আগে কখনো এই বাড়িটার মেঝে পরিষ্কারের প্রয়োজন বোধ করেনি।তাই লাইজল বা ফিনাইল কখনো কেনা হয় নি জলের।তাই খালিকটা স্যাভলন লিকুইড আর ডিটার্জেন্ট পাউডার দিয়েই কাজ চালিয়ে দিচ্ছে জল।
দীর্ঘদিন এভাবে অবহেলা আনাদরে পরে থাকায় রক্তবিন্দু জলের সাথে অভিমান করে পাথরের মতো শক্ত হয়েছে।হাজার ঘষামাজার পরেও এগুলোর উঠার কোনো নাম গন্ধ নেই।খানিকক্ষণ পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে উঠবে হয়তো।যা ভাবনা তাই ই কাজ।জল তাই ই করে।রক্তবিন্দু গুলোর ওপরে পানি ছিটিয়ে দেয় যাতে সেগুলো পানিতে ভিজে খানিকটা নরম হয়।কিন্তু এতটা জায়গা পরিষ্কার করতে জলের বেশ অনেকটাই পরিশ্রম হবে।এবং তা জল ইতিমধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছে।কিন্তু ব্যাপার না!মানুষের সন্দেহ কাটাতে এই টুকু পরিশ্রম করাই যায়। জল রক্তবিন্দুকে নরম হওয়ার জন্য খানিকটা সময় দেয়।এর ফাঁকে জল রিফ্রেশমেন্টের জন্য আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে নেয়।সিগারেট খেতে খেতে এখন এমন দশা হয়েছে যে ক্লান্ত লাগলেই জলের সিগারেট খেতে হয়।

________

জল আর বর্ষণের বিবাহিত জীবনের দুমাস হয়ে গেলো।কিন্তু এখনো জল বর্ষণকে নিজের কাছে আসতে দিলো না।প্রতিরাতেই যখন জলকে বর্ষণ নিজের করে পেতে চায় ঠিক তখনই জল বিয়ের প্রথম রাতের মতো বর্ষণকে দূরে সরিয়ে দিয়ে জল দৌড়ে ছাদে চলে যায়।ছাদের যাওয়ার রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ থাকায় বর্ষণও আর সাহস পায় না জলকে অনুসরণ করার।ভোর রাতের দিকে ছাদ থেকে ফিরে জল।সেই প্রথম রাতের মতো ঘুমন্ত বর্ষণের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদে।তারপর হঠাৎ করেই যখন বর্ষণের কাজের কথা মনে পড়ে জল তীব্র ঘৃণা নিয়ে বর্ষণের থেকে দূরে সরে যায়।আর নিজের ঘরে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।সকালে বর্ষণের আগেই সে ঘুম থেকে জেগে যায়।বর্ষণকে আর পাঁচটা বিবাহিত নারীর মতোই জেগে তোলে।নাস্তা বানায়।একসাথে নাস্তা করে।তারপর বর্ষণ অফিসে চলে যায় আর জল বাসায়ই বসে থাকে।কখনো কখনো জলের ক্লাস থাকলে তখন জল বর্ষণ একই সাথে বেরোয়। প্রতিদিনই জলের এমন আচরণে বর্ষণের মনে খানিকটা সন্দেহ জাগে।একটাই কথা ঘুরেফিরে বর্ষণের মনে আসতে লাগে যে জল আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো নয়।সে মানসিক ভাবে কিছুটা বিকারগ্রস্থ। আদিবাকে বর্ষণ বিয়ের কয়েকদিন পরেই বলে দিয়েছে যে সে বিয়ে করেছে।তাই আদিবার সাথে রিলেশনটা কন্টিনিউ করা বর্ষণের পক্ষে আর সম্ভব না।আদিবা ভেতরে ভেতরে বেশ অনেকটাই আঘাত পায়।তারপরও মুখে হাসি নিয়ে সম্পর্কের সমাপ্তি টানে আর বর্ষণকে নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা জানায়।বর্ষণ আদিবার সাথে যোগাযোগ রাখতে চেয়েছিলো।আদিবা তাতে সায় দেয় নি।জবাবে বলেছে,,,

" আপনি মানুষটা বড্ড মায়াবী।নতুন করে আপনার মায়ায় জড়াতে চাই না।"

আগে জলের সাথে প্রায়ই বর্ষার কথা হতো।নিকে থেকেই ফোন দিতো মেয়েটাহ।কিন্তু আজ অনেকদিন হলো বর্ষা ফোন দিচ্ছে না জলকে।জল নিজে থেকে দুবার কল দিয়েছিলো ওয়েটিংয়ে পেয়েছে।বর্ষণকে বর্ষার কথা জিজ্ঞাসা করলে বর্ষণ জলকে বলে,,,

" ফোন হাতে পাওয়ার পর কখনো আমার বোন বিনা প্রয়োজনে আমায় কল দেয় নি।আর তোমায় প্রায় প্রতিদিনই কল দিতো।কথা হতো তোমাদের।তুমি আমায় ওর থেকে ভালো জানো।ও আমার নাম মাত্র বোন। আত্মার মিল তো রয়েছে তোমার সাথে।"

বর্ষণের কথাটা শুনে জলের খুব ভালোলাগে।অজান্তেই হেসে দেয় সে।বর্ষণ হাস্যোজ্জ্বল জলকে দেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।এই প্রথম জলের মুখে বর্ষণ নির্ভেজাল হাসি দেখতে পেলো।যার মাঝে কোনো কৃত্রিমতা নেই।জল বর্ষাকে আবার কল দেয়।এইবার বর্ষা কল রিসিভ করে।

" ব্যপার কি?কল দাও না।আবার আমি কল দিলেও ওয়েটিংয়ে পাই।"

" ভাইয়া কাছে আছে?"

" হু।"

" তাহলে তুমি একটু দূরে সরে যাও।"

" কেন?"

" তোমার প্রশ্নের উত্তর দেবো তো!"

বর্ষার কথায় জল বর্ষণের থেকে দূরে যায়।তারপর বর্ষাকে বলে,,,

" এসেছি দূরে। "

" আগে প্রমিজ করো ভাইয়াকে কিছু বলবে না।"

" আচ্ছা প্রমিজ।"

" আপু আমি একজনের সাথে রিলেশনে গিয়েছি।"

জল অবাক হয়।এইটুকু বাচ্চা মেয়ে রিলেশনে গিয়েছে!নিজেকে স্বাভাবিক করে মজার ছলে বলে,,,

" অহ আচ্ছাহ!তাই এত ওয়েটিংয়ে থাকে ফোন?"

" জ্বী।"

লাজুক কন্ঠে বলে বর্ষা।

" ছেলে কেমন?"

" মাশাআল্লাহ।"

" তোমার কাছে তো লাগবেই।ভালোবেসেছো..."

থেমে যায় জল।বর্ষণকেও জল এভাবে ভালোবাসতো।ভালো খারাপ সবটা মিলিয়ে ভালোবাসতো।কিন্তু বর্ষণ জলের ভালোবাসার কদর করলো না!জল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।জলকে চুপ থাকতে দেখে ফোনের ওপাশ থেকে বর্ষা বলে,,,

" আপু?"

বর্ষার ডাকে জলের ধ্যান ভাঙে।জল হেসে বলে,,

" ভালোবাসা অপরাধ না।কিন্তু সবাই এটার কদর করতে পারে না।সাবধানে থেকো।আবেগের বশে পথভ্রষ্ট হইয়ো না।"

" হলেও তুমি আছো না?টেনে হিঁচড়ে সঠিক পথে আনবে আমায় আবার।"

চলবে..........
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#27
দারুন আপডেট , এই ধরণের গল্প ভালো লাগে।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#28
(16-03-2023, 09:20 AM)ddey333 Wrote: দারুন আপডেট , এই ধরণের গল্প ভালো লাগে।



ধন্যবাদ আপনাকে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#29
পর্ব -১১



বর্ষার প্রেমিক রিশাদ ইদানীং প্রায়ই বর্ষাকে রু*মডেটের প্রস্তাব দিচ্ছে।আধুনিক যুগের প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে যা বর্তমানে ট্রেন্ড।প্রেমিকাকে তার প্রেমিকের কাছে বিশ্বাসের পরীক্ষা দিতে রুমডেট করতে হবে।ফিজি* ক্যাল রিলে*শন করে দিতে হবে ভালোবাসার প্রমাণ।ভালোবাসা কখনোই কুৎসিত নয়।তবে বর্তমান যুগে কপোত-কপোতীরা এই রুম*ডেট নামক নষ্টামি দিয়ে ভালোবাসা-প্রেমের মতো সুন্দর জিনিসকে বিশ্রী করে দিচ্ছে। বর্ষাকে জল বারবার করে বলে দিয়েছে আবেগের বশে যেন সে কোনো ভুল কাজ না করে।কিন্তু রিশাদের প্রস্তাবেও বর্ষা নাকোচ করতে পারছে না।বলতে গেলে একপ্রকার দোটানায় আছে বর্ষা।একদিকে নিজের, পরিবারের সম্মান অন্য দিকে একটা সম্পর্ক বাঁচানোর তীব্র আকাঙ্খা।কারও সাথে যে বিষয়টা শেয়ার করবে তারও সাহস হয়ে উঠছে না বর্ষার।সারাদিন এই বিষয়টা নিয়েই ভাবে বর্ষা।কোনো কিছুতেই এই বিষয়টার জন্য মন দিতে পারছে না বর্ষা।এদিকে বর্ষার থেকেও কোনো উত্তর না পেয়ে রিশাদ প্রায়ই বর্ষার সাথে রুড বিহেভিয়ার করছে।যা বর্ষার একদম সহ্য হচ্ছে না।প্রায়ই সে রিশাদের ব্যবহারের জন্য লুকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে।
বর্ষার হাতে থাকা ফোনটা কেঁপে ওঠে।স্ক্রিনে রিশাদের নামটা ভেসে ওঠেছে।বর্ষা ফোন রিসিভ করে।

" হ্যাঁ বলো।"

" বলো মানে?আমি বলবো না তুমি বলবে?ডিসিশন কি তাহলে তোমার?দেখো বর্ষা তোমার ডিসিশনের ওপর ভিত্তি করে আমাদের রিলেশনটা আর থাকবে কিনা।"

" আমি রাজী।"

চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে বর্ষা।ফোনের ওপাশ থেকে রিশাদ শব্দহীন পৈশাচিক হাসি দেয়।বর্ষা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,,,

" এই কাজটা করার পর তুমি আমায় ছেড়ে যাবে না তো? অনেক ছেলে তো তাই ই করে।"

" কুইন!আমায় কি তোমার আর পাঁচটা ছেলের মতো লাগে?আমি ওরকম ছেলেই না।আমি তোমায় অনেক অনেক লাভ করি। You know hah? আমি কেন তোমাকে ছেড়ে যাবো।"

" আমি তোমায় বিশ্বাস করি বলেই কিন্তু তোমার প্রস্তাবে রাজি হলাম।তুমি আমার বিশ্বাসে আঘাত করো না কিন্তু!"

" I know that Queen."

" কবে করতে হবে?"

" তুমি রাজি থাকলে কালই।"

" Are you sure? আচ্ছা আমরা এই কাজটা না করে বিয়ে করে নিলেই তো পারি।"

" তোমার ফ্যামিলি রাজি হবে বেকারের হাতে তোমায় তুলে দিতে?"

" চেষ্টা করলে ক্ষতি কি?"

" দেখো বর্ষা আমি নিজেই আমার বাবার টাকায় চলি।তারমধ্যে তোমায় বিয়ে করে নিয়ে আসলে ব্যাপারটা কেমন না?যদিও আমার ফ্যামিলি কিছু বলবে না কিন্তু সমাজ তো ছেড়ে কথা বলবে না।"

" তুমি নিজের কথাটাই ভাবলে শুধু।সমাজ যদি জানতে পারে বিয়ের আগেই আমরা ফিজিক্যাল রিলেশন করেছি তাহলে তোমায় সমাজ কিছু না বললেও আমায় আমার ফ্যামিলিকে ছেড়ে কথা বলবে না।আমার মন সায় দিচ্ছে না রিশাদ।"

" Trust me dear..the matter will be kept completely secret..আমার কিছু কাজ আছে।আমি রাখছি।কাল দেখা হচ্ছে তাহলে।আমি তোমায় তোমার কলেজের সামনে থেকে নিও যাবো।ফর নাও বাই।"

" রিশাদ শোনো...."

বর্ষার কথা না শুনেই ফোন কেটে দেয় রিশাদ।বর্ষা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

________

আজ জল বর্ষণকে নিয়ে ওর মায়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।বিয়ের সময় জলের মাকে বলা হয়েছিলো।তিনি আসার আগ্রহও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু জলের মায়ের নতুন স্বামী তাকে আসতে দেন নি।জলের মা প্রায়ই ফোন দিয়ে জলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতেন যে মেয়ের জামাইকে এখনো তার দেখা হয়ে উঠলো না।জল তার মাকে কথা দিয়েছিলো যে বর্ষণকে মায়ের সাথে দেখা করাবে।আর সেই কথা রাখতেই জল বর্ষণকে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে।
আজ বহু দিন পর জল বর্ষণ একসাথে রিকশায় চড়লো।সেই সম্পর্কের শুরুর দিন গুলো মনে পরে গেলো জলের।রিকশায় চড়ে বর্ষণকে পাশে বসিয়ে শহর দেখা।আর কত শত মুহুর্ত!কিন্তু সবই আজ স্মৃতি।
কলিংবেল চাপতেই খালা এসে দরজা খুলে দেয়।জলকে দেখে তিনি আনন্দিত হয়ে বলেন,,,

" আফা আইছেন?লগে এডা কেঠা?"

" কে হতে পারে?"

" খালাম্মা কইলো আন্নের নাকি বিয়া হইছে।এডা কি আন্নের জামাই?"

জল মুচকী হেসে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়।খালা আনন্দিত কন্ঠে বলেন,,

" মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ।ভাই তো সুন্দর আছেন।"

" মা কোথায়?"

" খালাম্মা এই মাত্র ঘরে গেলো।আপনেগো লাইগা নাস্তা বানাইতাছিলো এতক্ষণ।"

" তুমি বসো বর্ষণ।আমি মাকে ডেকে নিয়ে আসছি।"

কথাটা বলে জল মায়ের ঘরের দিকে চলে যায়।বর্ষণ সোফায় বসে।কিছুক্ষণ পরে জল ওর মাকে নিয়ে আসে।বর্ষণ উঠে দাঁড়িয়ে জলের মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে।জলের মা মাথায় হাত দিয়ে বর্ষণলে আশীর্বাদ করেন।

" কেমন আছেন?"

" আল্লাহ তায়ালা যেমন রাখেন।তোমাদের বিয়েতে আমার যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু...."

" আপনার হাজবেন্ড আসতে দেননি।বিষয়টা আমি জানি।"

জলের মা মুচকী হাসেন।

" তোমরা বসো আমি তোমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।"

" মা শুধু শুধু এগুলো করতে গেলে কেন?তুমি তো জানো আমি সব জায়গায় খাই না"

" তুমি না খেলে!জামাই এসেছে জামাই খাবে না?"

জল প্রতুত্তরে কিছু বলে না।জলের মা নিজ হাতে বেড়ে বর্ষণকে খাওয়ান।তারপর মায়ের সাথে কিছু গল্পগুজব করে বর্ষণ জল বাসার দিকে রওনা দেয়।বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জল রাতের খাবার রান্না করার লেগে পরে।জল রান্নাঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত।আর বর্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে জলের দিকে তাকিয়ে আছে আজ জলকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। বর্ষণ উঠে গিয়ে জলকে জড়িয়ে ধরে।এইবারও জল ধাক্কা দিয়ে বর্ষণকে দূরে সরিয়ে দেয়।সব কিছুরই একটা সীমা থাকে।বিয়ের এতদিন হয়ে গেলো জল বর্ষণকে কাছে আসতে দেয় নি।বর্ষণ কাছে আসলে হয় জল পালিয়েছে না হলে বর্ষণকে জল দূরে সরিয়ে দিয়েছে।জলের আচরণে বর্ষণের খুব রাগ হলো।তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে।

" এই সমস্যা কি তোমার?কাছে আসলেই এমন আচরণ করো কেন?"

জল চুপচাপ। সে বর্ষণের কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না।বর্ষণ এবার জলকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।পুরুষ শক্তির সাথে পেরে ওঠে না জল।

" কিছু জিজ্ঞেস করেছি।"

জল এবারও চুপ।বর্ষণের রাগ চরম আকার ধারণ করেছে এতক্ষণে।রাগে তার কন্ঠ কাঁপছে।কিছু বলতে গিয়েও সে বারবার আটকে যাচ্ছে।

" ভালো লাগে না আমায় আর?নতুন কাওকে জুটিয়েছিস?বাপে তো তাই করেছিলো।আগের বউ পুরোনো হয়ে গিয়েছিলো তাই নতুন মেয়ে মানুষ ঘরে তুলেছে।"

জল এবার ঠাস করে বর্ষণের গালে থাপ্পড় মেরে দেয়।জলকে নিয়ে যা বাজে কথা বলার বলুক।কিন্তু ওর বাবাকে নিয়ে মানুষ কোনো বাজে কথা বললে জলের তা একদম সহ্য হয় না।যতই খারাপ থাকুক ওর বাবা।বাবা তো!আর বাবারা কখনো খারাপ হয় না।যাই করে থাকুক জাবেদ চৌধুরী।জলের কাছে তিনিইই পৃথিবীর সবচে ভালো বাবা।
বর্ষণ গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জল ওর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।জল বর্ষণের অতীত নিয়ে বলতে গিয়েও থেমে যায়।এভাবে যদি জল বর্ষণের অতীত নিয়ে কথা তোলে তাহলে বর্ষণ আর জলের মধ্যে কোনো পার্থক্য তো থাকলো না।দুজনেই একই পর্যায়ের হয়ে গেলো।জল নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রান্নায় মন দেয়।বর্ষণ গালে হাত দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে চলে যায়।বর্ষণের যতই রাগ হোক সে খাওয়া বাদ দেয় না।খিদে সহ্য করার ক্ষমতা বর্ষণের নেই।তাই জল রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয়।

চলবে,,,
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#30
পর্ব -১২





পরিকল্পনা মোতাবেক বর্ষা কলেজ শেষে রিশাদের সাথে বেরোয়।রিশাদ ওকে রিশাদের বন্ধু সাদের বাসায় নিয়ে যায়।পুরো বাসা ফাঁকা আজ।ফাঁকা বাসায় দুটো ছেলের মাঝে বর্ষা খুব অস্বস্তি বোধ করে।ভয় হচ্ছে ওর।উল্টোপাল্টা কিছু হবে না তো?বর্ষা ভীত ও সংকীর্ণ কন্ঠে বলে,,,

" রিশাদ তুমি না বলছিলে শুধু তুমি থাকবে।তাহলে এ কে?"

" সাদ।আমার বন্ধু।"

" উনি এখানে কি করছেন?"

রিশাদ কিছু বলে না।সাদের দিকে তাকিয়ে মুচকী পিশাচ হাসি দেয়।বর্ষার কাছে ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার লাগছে না।

" আ...আ...আমি বাড়ি যাবো"

" কিসের বাড়ি যাওয়া বেবি?তুমি বাড়ি গেলে আমাদের মজা দেবে কে সোনা?"

বর্ষা পালানোর জন্য দৌড় দিচ্ছিলো।বর্ষাকে খপ করে ধরে কথাটা বলে রিশাদ।কিন্তু এ তো রিশাদ নয়।বর্ষা তো এ রিশাদকে ভালোবাসেনি।বর্ষা যে রিশাদকে ভালোবেসেছিলো সে ছিলো বর্ষার চোখে সবচে সুন্দর মনের মানুষ।যার মধ্যে কোনো হিংস্রতা নেই।কিন্তু এই রিশাদের চোখে,মুখে,কন্ঠে,আচরণে তীব্র হিংস্রতার ছাপ পাচ্ছে বর্ষা।এই মুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচে অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছে বর্ষার।বর্ষা কাকুতি মিনতি করছে নিজেকে বাঁচাতে।কিন্তু তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রিশাদ আর সাদের।হিংস্র হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে দুজন বর্ষার ওপর।পালাক্রমে চালায় শারীরিক নির্যাতন।বর্ষা তখন গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছিলো।নির্যাতন সইতে না পেরে এক পর্যায়ে বর্ষা জ্ঞান হারায়।নিজেদের লালসা মেটানো শেষ হলে দুই বন্ধু বর্ষাকে ছাড়ে।বিধ্বস্ত বর্ষাকে রাতের আঁধারে বাড়ির সামনে রেখে যায় রিশাদ।
মেয়ে এত দেরিতে এভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে দেখে মিসেস বেলী মেয়েকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।বর্ষা কষ্ট গুলো বুকে পাথর চাপা বলে,,,

" কি গরম পরেছে আর কলেজ প্রাইভেট শেষে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম।তাই আর কি..."

কথাটা বলে জল এক মুহুর্তও অপেক্ষা করে না।নিজের ঘরে গিয়ে সে ঠাস করে দরজা আটকিয়ে দেয়।আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে। সারা শরীরে জানোয়ার গুলোর হিংস্রতার ছাপ।খুব ঘেন্না করছে বর্ষার নিজের শরীরটাকে।এই প্রথম সে মাকে মিথ্যা কথা বললো।বলবে না ই ই বা না কেন?সত্যটা তো প্রকাশ করার মতো না।আজ বর্ষা ধ*র্ষিতা।আর ধ*র্ষিতাদের এই সমাজে কোনো জায়গা নেই।রিশাদ পারলো বর্ষাকে এভাবে ঠকাতে?বিবেকে বাঁধলো না ওর?কলিজা কেঁপে উঠলো না একবারও এই কাজটা করতে?ইজ্জত মেয়েদের সবচে বড় সম্পদ।আর আজ বর্ষা তাই ই হারালো।জল পই পই করে বলে দিয়েছিলো আবেগের বশে কোনো ভুল কাজ না করতে।আর বর্ষা আজ তা ই ই করলো।বুকটা ফেটে যাচ্ছে বর্ষার।এই মুহুর্তে বর্ষা মরতে পারলে বেঁচে যায়।কিন্তু আত্মহত্যা তো মহাপাপ।কিন্তু এভাবে বেঁচে থাকাও তো বর্ষার পক্ষে সম্ভব নয়।ওয়াশরুমে গিয়ে অঝোর কাঁদে বর্ষা।শাওয়ারের পানি আর চোখের নোনা জল মিশে একাকার।গ্রীষ্মের উষ্ণ বায়ুরও বোঝার সাধ্যি নেই যে বর্ষা কাঁদছে।

________

বর্ষণ আর আদিবা রেস্ট্রুরেন্টের ভেতর বসে আছে।দুজনের মাঝেই শুনশান নিরবতা।যদিও আদিবার নীরবতাটা বিরক্তের।অনেকটা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই সে এসেছে বর্ষণের সাথে দেখা করতে।

" আধ ঘন্টা ধরে এভাবেই বসে আছি।কি জন্য ডেকেছো বলবে?"

বর্ষণ খানিকটা চমকে যায়।সামনে থাকা ড্রিংকসটায় চুমুক দিয়ে বলে,,

" বলছি।"

" তাড়াতাড়ি।"

" আসলে আদিবা আমার মনে হয় কি জল স্বাভাবিক নয়।ওর আচার আচরণ ব্যবহার বার বার আমায় বলে দিচ্ছে ও সাইকো।"

" তো আমি কি করবো?জলের মেন্টাল প্রবলেম তো তোমার উচিত ব্যাপারটা আমার সাথে শেয়ার না করে জলকে নিয়ে কোনো ভালো ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়া।আমায় যে বললে আমি কি এখন জলকে ঠিক করতে পারবো?"

" তুমি কিন্তু খুব রুড বিহেভিয়ার করছো আদিবা!"

" এর থেকে বেশি কি বা আশা করো তুমি আমার থেকে?তোমার সাথে ব্রেকাপের পর আমি মুভ অনের চেষ্টা করছিলাম।ওই রকম মেন্টাল সিচুয়েশনে কোনো মেয়েই চাইবে না তার এক্স বয়ফ্রেন্ডের ছায়া তার জীবনে আসুক।আর সেখানে তুমি আমি আধ ঘন্টা যাবৎ একটা রেস্ট্রুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছি।"

বিরক্তি নিয়ে অনর্গল কথাগুলো বলে আদিবা।বর্ষণ চুপ করে আছে।আদিবা বুঝে গেছে বর্ষণের আর কিছু বলার নেই।সে উঠে চলে যায়।

________

কয়েকদিন ধরে বর্ষা প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে আছে।রিশাদ বর্ষাকে আবার রু*মডেটের কথা বলেছে।যদিও সেদিনের ঘটনার পর থেকে বর্ষা রিশাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।কয়েকদিন আগে হুট করে রিশাদ বর্ষাকে মেসেজ দিয়ে রু*ম ডেটের কথা বলে।বর্ষা শুরুতেই না করে দেয়।তারপর রিশাদ বর্ষাকে একটা ভিডিও পাঠায়।ভিডিওতে বর্ষা যা দেখে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে।ভিডিওতে বর্ষা স্পষ্ট দেখতে পারছে সেদিন তার ওপর কিভাবে নির্যাতন চালিয়ে জানোয়ারগুলো।ঠাস করে বর্ষার হাত থেকে ফোনটা পরে যায়।মুখ চেপে কাঁদতে লাগে সে।এতটা নিচে নামতে পারে কিভাবে রিশাদ!বর্ষা কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নেয়।স্ক্রিনে রিশাদের হুমকির মেসেজটা ভেসে উঠেছে।

" তুই যদি আবার না আসিস তাহলে ভিডিওটা ভাইরাল করে দেবো।"

বর্ষার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।কি করবে সে?রিশাদের কাছে এভাবে বারবার ধরা দেবে না....!রিশাদ যদি ভিডিওটা ভাইরাল করে দেয় তাহলে সমাজ তো বর্ষা,বর্ষার পরিবারকে এক ঘরে করে দেবে।

________

বেশ কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরম পরেছে।প্রকৃতি পুরো নিস্তব্ধ।গরমে তারাও নেতিয়ে পরেছে।বিকালের দিকে আকাশের কালো মেঘের উপস্থিতি পৃথিবীতে আশার সঞ্চার করে।মেঘের সাথে তাল মিলিয়ে গাছের পাতা গুলো ঝড়ো হাওয়ায় দুলতে লাগে।জল ক্লাস করে এসে পড়েছে।শাওয়ার নিয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।শাওয়ার নিতে গিয়ে জলের মনে হলো কেউ যেন ফুটন্ত পানি ট্যাংকিতে ঢেলে দিয়েছে।আর জল সেগুলো দিয়ে শাওয়ার নিচ্ছে।বর্ষণ এখনো আসে নি।জল নিজের ঘরে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে শুয়ে আছে।এরই মধ্যে আকাশে মেঘের ধরণী কাঁপানো গর্জন শুনতে পায় জল।দৌড়ে দোতলার বারান্দায় যায় জল।অন্ধকার হয়ে এসেছে।খুব তাড়াতাড়ি হয়তো বৃষ্টি নামবে।জলের ভাবনা শেষ হতে না হতেই আকাশ ভেঙে পানি বর্ষিত হতে শুরু করে।জল আর দেরি করে না।বাগানে চলে যায় বৃষ্টিতে ভেজার জন্য।যদিও তা নাম মাত্র বাগান।একটা কৃষ্ণচূড়া,বকুল,শিউলি গাছ ছাড়া কোনো গাছ বাগানে নেই।

বর্ষণ বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে বাসায় ঢোকে।ড্রয়িংরুমে থাকতেই চিৎকার দিয়ে জলের কাছে টাওয়েল চায়।কিন্তু জলের কোনো সাড়া পায় না।বাধ্য হয়ে ভেজা শরীর নিয়েই ওপরে যায় বর্ষণ। টাওয়েল খুঁজে বের করে গা মুছতে মুছতে জানালার কাছে যায় বর্ষণ।বাগানে কারও উপস্থিতি টের পায় বর্ষণ।যদিও মুষলধারে বৃষ্টির জন্য বাগানে কে তা বর্ষণ স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারছে না।কিন্তু বাগানে কেউ লাফিয়ে লাফিয়ে বৃষ্টিতে যে ভিজছে এটা বুঝতে বর্ষণের বাকী রইলো না। বর্ষণ গা মুছে ড্রেস চ্যাঞ্জ করে নিচে যায়।ড্রয়িংরুমের জানালা দিয়ে বাগানের অংশটুকু বেশ ভালোভাবেই দেখা যায়।বর্ষণ জানালার কাছে গিয়ে বাগানে জলকে দেখতে পায়।জল লাফিয়ে লাফিয়ে হেসে বৃষ্টিতে ভিজছে।সেই আগের মতো।ঠোঁটে নির্ভেজাল হাসি।চোখে মুখে বাচ্চামি।সম্পর্কের শুরু দিকে জল এভাবে বর্ষণকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছিলো।বর্ষণের ধারণা ছিলো আগেকার জল আর এখনকার জলের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।কিন্তু না,বর্ষণ ভুল।জল বদলে যায় নি।নিজেকে আড়াল করেছে।রুক্ষতার শক্ত খোলসে নিজের কোমলতাকে আড়াল করে রেখেছে সে।মেয়ে মানেই মায়ের জাত।আর কোমলতা নারীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই কোমলতা,সরলতা,মায়ার জন্যই নারী সৃষ্টিকর্তার এত সুন্দর সৃষ্টি।

চলবে,,,,
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#31
পর্ব -১৩






বর্ষা নিয়মিত ডায়েরি লিখতো।আর এই কথাটা জল ছাড়া কেউ জানতো না।এমনকি বর্ষণও না।বাইরে পড়ে আছে বর্ষার নিথর দেহ।বর্ষা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।আর এর কারণ সম্পুর্ন অজানা।কি কারণে বর্ষা এমন সিদ্ধান্ত নিলো কেউ ই খুঁজে পাচ্ছে না।পুলিশ এসেছিলো।বর্ষার পুরো ঘর তারা সার্চ করেছে।চিরকুট,সুইসাইড নোট কিচ্ছু পায় নি পুলিশ।থানায় অপমৃত্যুর মামলা করতে বলেছে।কিন্তু জলের মন বলছে অন্যকিছু।বর্ষা এভাবে এমন পথ বেছে নেওয়ার মেয়ে নয়।হাসিখুশি চঞ্চল মেয়েটা হুট করেই এভাবে দুনিয়া ছেড়ে দেবে? জল বর্ষণের ঘরের আলমারির ওপরে উঁকি দিতে লাগে।বর্ষা বলেছিলো বর্ষণ চলে যাবার পর থেকে সে এখানেই তার গোপন ও ব্যক্তিগত জিনিসগুলো রাখে।লম্বা হওয়ায় খুব ইজিলি আলমারির ওপরে থাকা খয়েরী রঙের মলাটের ডায়েরীটা দেখতে পায়।খুব সহজে পেরেও নেয় সে।জল ডায়েরীটা খুলে পড়তে শুরু করে।ফিতে দিয়ে মার্ক করা অংশটুকু থেকেই সে পড়তে শুরু করে।

' আমি জানতাম আপু ডায়েরীটা তুমি খুঁজবে আর পেয়েও যাবে।এখন আমি তোমাদের থেকে অনেক দূরে।বিশ্বাস করো এত তাড়াতাড়ি আমি তোমাদের থেকে দূরে চলে আসতে চাই নি।কিন্তু ওরাও আমায় বাঁচতে দিলো না। মরতে কেউ ই চায় না।আমিও তার ব্যাতিক্রম নই।বাঁচার মতো বাঁচতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ওরা আমায় বাঁচতে দিলো না।প্রতিটা মুহুর্তে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। সবসময় মনে হতো আমি মরতে পারলে বাঁচি।তুমি আমায় পই পই করে না করেছিলে যাতে আমি আবেগের বশে কোনো ভুল কাজ না করি।কিন্তু আমি তাই ই করে ফেলি।আবেগের বশে একটা সম্পর্ক টেকানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষায় আমি রিশাদের রু*ম ডেটের প্রস্তাবে রাজি হই।রিশাদকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম।আর এর সুযোগ নিয়েই রিশাদ আর ওর বন্ধু আমার ইজ্জতহানি করে।আমায় ধ*র্ষণ করে।এতটুকুতেও ওরা থেমে যায় নি।সেদিনের ধ*র্ষণের ভিডিও ফোনে ধারণ করে দিন রাত আমায় ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে।আবার ওদের লালসা মেটাতে হবে আমার।আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।ওভাবে থাকা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছিলো।তাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।
তোমরা আমায় ভুল বুঝো না আপু।মরতে কেউ চায় না আপু।আমি বাঁচার মতো বাঁচতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ওরা আমায় বাঁচতে দেয় নি।'

জল দীর্ঘশ্বাস ফেলে।জল ডায়েরিটা নিয়ে নেয়। বাইরে বর্ষার দেহ ধরে এখনো মা অঝোর ধারায় কাঁদছে।বর্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে বোনের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে। বর্ষাকে দাফন করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।সেদিন রাতে বর্ষণ ঘুমায় নি। ঘরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগে।ভাইদের কাছে নাকি বোনেরা কলিজার টুকরা হয়।সেই হিসাবে বোনের মৃত্যুতে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদা অস্বাভাবিক কিছু না।এই প্রথম জল বর্ষণকে কাঁদতে দেখলো।অনেকটাই মায়া হচ্ছে বর্ষণের প্রতি জলের।কিন্তু যখন বর্ষণের বিশ্বাসঘাতকতার কথা মনে পরে তখনই বর্ষণের প্রতি জলের সব মায়া নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।জলও সেদিন ঘুমায়নি।রাত জেগে বর্ষার পুরো ডায়েরীটা পড়ে।যদি রিশাদ বা ওর বন্ধু সম্পর্কে কোনো আইডিয়া পায়!

২২-৯-২১

লিস্টে একটা ছেলে ছিলো।নাম রিশাদ আহমেদ।ও প্রায়ই আমার ডে তে রিপ্লাই দিতো।সেখান থেকেই টুকটাক কথা হতো।ওর সাথে আমার বেশ একটা ভালো সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।সেটা পরে প্রেমে রূপ নেয়।আজ আমাদের সম্পর্কে তিন মাস পূর্ণ হলো।বুঝতেই পারিনি কিভাবে ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি।দেখতে দেখতে তিনটে মাসও হয়ে গেলো।

এই অংশটুকু পড়ে জলের কেন যেন মনে হলো রিশাদ প্লে বয় টাইপের ছেলে। জল বর্ষার আইডি ঘাটতে থাকে।আইডি ঘেটে অবশেষে সে রিশাদের আইডি পায়।বায়ো দেখেই বুঝতে পারে জল এই ছেলে পাক্কা প্লে বয়।বর্ষা বাচ্চা মেয়ে।তাই না বুঝে ছেলেটার ফাঁদে পা দিয়েছিলো।পরে শেষমেশ জীবনটাই দিয়ে দিলো।ছেলেটার দুর্বলতা যেহেতু মেয়ে।তাই জল নিজের ডিপিতে কোনো মডেলের শাড়ী পরা আকর্ষণীয় ছবি দেয়।দীর্ঘদিন পর সে ডিপির ছবিটা চেঞ্জ করলো।রিশাদকে সে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠায়।এবং রিশাদ তা সাথে সাথে একসেপ্ট করে।এইত্তো রিশাদ জলের ফাঁদে পা দিয়েছে।এখনই মেসেজ দিলে বিষয়টা খুব সন্দেহজনক হবে।ঠান্ডা মাথায় ধীরে সুস্থে সব করতে হবে।আর যাই হোক রিশাদ আর সাদকে জল ছাড়ছে না।বর্ষার মৃত্যুর প্রতিশোধ জল নিয়েই ছাড়বে।

১১-১১-২১
আজকে রিশাদের সাথে ফার্স্ট মিট করতাম।একই এলাকায় থাকা সত্ত্বেও ওকে কখনো আমি সামনাসামনি দেখি নি।আজই প্রথম।অনেকটাই নার্ভাস ছিলাম।ফার্স্ট মিট বলে কথা!ওকে এক পলক দেখেই আমি দৌড়ে চলে আসি।

এই অংশটুকু পড়ে জলের অতীত মনে পড়ে যায়।সম্পর্ক হওয়ার পরে জল আর বর্ষণের প্রথম দেখার সময় জলও ঠিক ওভাবেই ঘাবড়ে গিয়েছিলো।প্রেমিকের সাথে প্রথম দেখা মনে হয় সব মেয়েদেরই নার্ভাসের মধ্যে হয়ে থাকে।এতকিছুর পরেও মেয়েদের কাছে প্রেমিকের সঙ্গে প্রথম দেখার দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকে।
_______

রিশাদের সাথে জল ইদানীং বেশ অনেকটাই ভাব করে ফেলেছে।প্রায়ই কথা হয় ওদের।আজ জল রিশাদের সাথে দেখা করতে যাবে।সাথে সাদেরও আসার কথা।জল আগে থেকেই ট্রাংকুলাইজার কিনে রেখেছিলো।এই সামান্য অজ্ঞান হওয়ার ইঞ্জেকশনটা কিনতে জলের কম খাট খোড় পোড়াতে হয় নি! এটি কিনতে গেলে সরকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা সরকারি অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করা লাগে।কিন্তু জল ইঞ্জেকশনটা চোরাই পথে কিনেছে। তাই বেশ অনেকটাই টাকা খরচ করতে হয়েছে জলকে। জল রিশাদকে অনেকটা নিরিবিলি জনশূন্য স্থানে আসতে বলে। রিশাদ জলের বলা জায়গায় সাদকে নিয়ে আসে।জলের জ্যামের কারণে কিছুটা দেরি হয়ে যায়।গিয়ে দেখে রিশাদ আর সাদ সেখানে জলের জন্য অপেক্ষা করছে।জল গাড়ি থেকে নেমে ইঞ্জেকশন দুটো ওড়না দিয়ে আড়াল করে ওদের কাছে যায়।জলকে দেখেই রিশাদের মনে ধরে যায়।এমন লম্বা মেয়ে সচারাচর খুব একটা দেখা যায় না।যদিও জল শ্যামলা।কিন্তু ওর লম্বা হওয়াটা ওর শ্যামলা হওয়ার দোষটাকে ঢেকে দিয়েছে।জল আহামরি কোনো সুন্দরী নয়।শুধু লম্বা। যা ই ই রিশাদকে দুর্বল করে দিয়েছে।রিশাদের হাবভাব দেখে জল বুঝতে পারে ওর প্রেমের অভিনয়ে রিশাদ গলেছে।প্রাথমিক খোশগল্প করে রিশাদ জলকে নিয়ে দূরে কিছু কথা বলার অনুরোধ করে।জল ত এই সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিলো।মনে মনে একটা পৈশাচিক হাসি দেয় জল। রিশাদ জলকে নিয়ে ঝোপের আড়ালে যায়।

" বলো কি বলবে?"

" If you don't mind...! can I kiss you?"

" Why not..!তুমি তো আমায় বয়ফ্রেন্ড।আমার ওপর তোমার অধিকার আছে।"

জলের কথাটা শেষ হতে না হতেই রিশাদ ঝড়ের গতিতে জলের কোমল ঠোঁট খানা নিজের ঠোঁটের দখলে করে নেয়।আকষ্মিকতায় জল খানিকটা চমকে গিয়েছিলো। পরে সে নিজের স্বাভাবিক হয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে লাগে।রিশাদ যখন পুরোপুরি ভাবে জলের কোমল ঠোঁটের মাঝে ডুবে যায় ঠিক তখনই জল ট্রাংকুলাইজারটার ভরা ইঞ্জেকশনটা রিশাদের ঘাড়ে বসিয়ে পুশ করে নেয়।রিশাদ মাটিতে পরে যায়।মিনিট দশেকের মধ্যে সে অচেতন হয়ে যায়।এবার সাদের পালা।জল ঝোপের আড়াল থেকে দেখে সাদ কারো সাথে ফোনে কথা বলায় মগ্ন।ব্যস!এই সুযোগ আর হাতছাড়া করা যাবে না।জল গিয়ে সাদের ঘাড়েও ইঞ্জেকশন বসিয়ে ট্রাংকুলাইজার পুশ করে দেয়।মেডিসিনের প্রভাবে সাদও অচেতন হয়ে যায়।জল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। গাড়ি থেকে দড়ি বের করে দুটোকে বেঁধে গাড়িতে তোলে জল।মুখে টুকরো কাপড় ঢুকিয়ে দিয়ে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয় জল।সিনেমা নাটকে দেখায় যে মুখে স্কচটেপ লাগালে মানুষ মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ করতে পারে না।ভুল জিনিস দেখানো হয়।স্কচটেপ লাগানোর পরও মানুষ আওয়াজ করতে পারে। তাই জল মুখে কিছু কাপড়ের টুকরো দিয়ে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়।যাতে ওরা কোনো আওয়াজ না করতে পারে।
জলের প্রচন্ড অপরাধবোধ হচ্ছে। যে কাজটা জল আজ পর্যন্ত বর্ষণকে করতে দেয় নি সেই কাজটা আজ রিশাদকে কর‍তে দিয়েছিলো।সে ঠকালো না তো বর্ষণকে?ঠকলে ঠকলো বর্ষণ!সেও তো জলকে কম ঠকায়নি।বর্ষণ জলের থেকে এগুলোই ডিজার্ভ করে। অপরাধবোধ কাটাতে দুটো সিগারেট ধরায় জল।ভেতরের অনুভূতি গুলোকে ধোঁয়া করে মুক্ত বাতাসে ছেড়ে সে বাসার দিকে রওনা দেয়।
বাসায় ঢোকার সময় জলের বর্ষণের সাথে দেখা হয়।বর্ষণ অফিস থেকে ফিরছিলো।জলকে দেখে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।

" কোথায় গিয়েছিলে?"

" বাইরে।একটা কাজ ছিলো ওই কাজটা কর‍তেই মুলত গিয়েছিলাম।"

কথাটা বলে জল গাড়ি নিয়ে গ্যারাজের দিকে যায়।গাড়িটাকে পার্কিং করে গ্যারাজের এক কোণায় রিশাদ আর সাদকে রাখে।পকেট থেকে ফোন বের করে সীম,মেমোরি টাকে নষ্ট করে ফেলে।ফোন দুটোকে ইট দিয়ে থেঁতলে পাশে থাকা নর্দমায় ফেলে দেয়। সাদ,রিশাদ তখনও অচেতন অবস্থায়ই আছে।জল ওদের দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি দেয়।আজ রাত থেকেই শুরু হবে ওদের শাস্তি।বর্ষার প্রতি অন্যায়ের শাস্তি।ধীরে সুস্থে কষ্ট দিয়ে মেরে ওদের দুনিয়া ছাড়া করবে জল।

চলবে,,,
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#32
পর্ব -১৪





নিস্তব্ধ গভীর রাত।বর্ষণকে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে গ্যারেজে এসেছে জল।রিশাদ আর সাদ তখন বাঁধা অবস্থায়ই ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।দুজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে জলের মেজাজ বিগড়ে যায়।রাগে সজোরে লাথি মারে সাদ আর রিশাদকে।ঘুমন্ত অবস্থায় লাথি খেয়ে চমকে উঠে সাদ, রিশাদ। ঘুম ঘুম চোখে গ্যারেজের লাইটের আবছা আলোয় কোনো রমনীর ছায়া দেখতে পায় রিশাদ,সাদ।রমনীর হাতে বড় আকারের ছুরি।এমন ভাবে সে ছুড়ি ধরে আছে যেন এক্ষনি ওই ছুরি দিয়ে রিশাদ আর সাদকে আঘাত করবে।রিশাদ আর সাদকে জল যেখানে রেখেছিলো সেখানে রয়েছে বিষাক্ত লাল পিঁপড়ের বাসা।সেগুলো কামড়ের জ্বালায় রিশাদ, সাদ গোঙাচ্ছে।চিৎকার করতে চাইছে তারা কিন্তু পারছে না।মুখে কাপড় ঢুকিয়ে স্কচটেপ লাগিয়ে দিয়েছে যে জল।চিৎকার করবে কিভাবে?জল যে ওদের সেখানে ভুল করে রেখেছে তা নয়!ইচ্ছে করেই জল ওদের ওখানে রেখেছে।পৃথিবীর সবচে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু দিতে চায় ওদের জল।তার জন্যেই ত যত্ন করে ওদের জন্য একটা স্পেশাল চেয়ার বানিয়েছে জল।নিজ হাতে বানিয়েছে সে চেয়ারটা।যাতে সাদ,রিশাদ আরামে ওদের শাস্তি ওদের মৃত্যুযন্ত্রণা উপভোগ করতে পারে।

কাঠের তৈরি চেয়ারে গুনে গুনে প্রায় পনেরো সুচালো লোহা মেরেছে জল।শুধুমাত্র রিশাদ আর সাদকে শাস্তি দেবে বলে।এটি ইতিহাসের ভয়ংকর শাস্তি গুলোর মধ্যে একটি।চেয়ার অফ টর্চার বা চেয়ার অফ পানিশমেন্ট নামে এই শাস্তি পরিচিত।পনেরোশো সাল থেকে শুরু করে আঠেরোশো সাল পর্যন্ত চীন এবং ইউরোপে এই ভয়ানক সাজা দেওয়া হতো।;.,ের আসামীদের এই সাজা দেওয়া হতো।যারা কালো যাদু করতো তাদেরও এই সাজা দেওয়া হতো।ছোট খাটো আসামিদের সামনে এই ভয়ানক সাজা দেওয়া হতো।যাতে শাস্তির ভয়াবহতা দেখে আসামিরা পরবর্তীতে বড় ধরণের অপরাধ করার সাহস না পায়।শাস্তির জন্য আসামিকে লোহা মারা চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হতো।তারপর কিছু স্ক্রু দিয়ে আসামিকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হতো যাতে ধারালো সুচালো লোহা গুলো আসামীর শরীরে ঢুকে যায়।জলও ঠিক সেই ভাবেই চেয়ারটা বানিয়েছে।
জল রিশাদকে প্রথমে চেয়ারটাতে বসায়।ধারালো সুচালো লোহার আঘাতের যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ করে ফেলে।কার্ণিশ বেয়ে কিছু নোনা জলের বিন্দু কণা জলের বাহুতে পরে।কিন্তু জলের তাতে রিশাদের প্রতি একটুও মায়া মমতা হয় না।তারপর স্ক্রু গুলো দিয়ে শক্ত করে রিশাদকে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।ইতিমধ্যে রিশাদ শাস্তি পেতে শুরু করেছে।সুচালো লোহা গুলো চামড়া ভেদ রিশাদের শরীরে ঢুকে গেছে।রিশাদ চিৎকার করছে যন্ত্রণায় আর জল তা উপভোগ করে পৈশাচিক হাসি হাসছে।শাস্তি ভোগ করবে আর চিৎকার করবে না?কিন্তু এই চিৎকারে যদি বর্ষণের ঘুম ভেঙে যায়!সারাদিন অফিস করে বেচারাটা শান্তিতে ঘুমাতেও পারবে না?বর্ষণ যাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারে তাই ই তো জল রাতের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বর্ষণকে খাইয়ে দিয়েছে।

নারীদের মানুষ সর্বদায় মায়া,মমতার আধার রূপে দেখে এসেছে।এগুলো নারীর গুণ।ছলনাটা নারীর দোষ।তাই নারীকে মানুষ যেভাবে মায়াবী,মমতাময়ী হিসাবে চিনে ঠিক সেই ভাবে ছলনাময়ী হিসেবেও চিনে।কিন্তু জলকে দেখে মায়াবী,মমতাময়ী নারীর কথা ভুলে গেছে রিশাদ আর সাদ।একটা মেয়ে এত নির্দয় আর কঠিন হৃদয়ের যে হতে পারে তা জলকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না রিশাদ,সাদ।

রিশাদ চিৎকার করছে। রিশাদের চিৎকারে জল কোনো আনন্দ পাচ্ছে না।আগে থেকেই সে কয়লা নিয়ে এসেছিলো সেগুলো আগুনে গরম করে জল।জলন্ত কয়লা বর্ষণের কোলে ফেলে দেয়।বর্ষণ চিৎকার করতে লাগে।জল বর্ষণের যন্ত্রণা দেখে পৈশাচিক হাসি দেয়।জল রিশাদের সামনে গিয়ে চোখ উল্টিয়ে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলে,,

" খুব কষ্ট হচ্ছে না?বর্ষারও খুব কষ্ট হয়েছিলো যখন তুই ওর বিশ্বাস নিয়ে ওর ইজ্জত নিয়ে খেলেছিলি।"

" বর্ষা?"

" হু,বর্ষা।আমার বোন বর্ষা।শুধুমাত্র তোদের জন্য ওকে এই দুনিয়া ছাড়তে হয়েছে।ভাবলি কিভাবে ওকে কষ্ট দিতে তোরা সুখে থাকবি।ওকে যেমন ভেতর থেকে তিলে তিলে মরতে হয়েছে তোদেরকেও আমি ঠিক সেই ভাবে তিলে তিলে মারবো।মৃত্যু কত যন্ত্রণাদায়ক আর কঠিন বুঝবি তোরা।এটা তো টেইলার।সামনে আরও ভয়ানক শাস্তি আছে তোদের জন্য।"

" বর্ষা তো ওর বোনের কথা কখনো বলে নি।"

" বলে নি দেখেই তো তোরা টোপ গিলেছিস।"

কথাটা বলে জল সিগারেট ধরায়।দুটো টান দিয়ে জলন্ত সিগারেট রিশাদের ঘাড়ে আলতো করে ছোঁয়ায়।ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে রিশাদ।জল পৈশাচিক হাসি দেয়।জল ঘড়ি দেখে।দুটো বেজে গেছে।এখন সাদের পালা।ভাগ করে নিয়েছিলো জল সময়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রিশাদের তখন যাওয়ার দশা।জল টেনে হিঁচড়ে রিশাদকে চেয়ার থেকে উঠায়।তারপর মেঝেতে রেখে শক্ত করে বাঁধে।যদিও নারী হয়ে গায়ে এত জোর থাকার কথা বা জলের।কিন্তু প্রতিশোধের আগুন জলকে শক্তিশালী করে দিয়েছে।রিশাদকে বাঁধা হয়ে গেলে জল সাদকে চেয়ারে বসায়।সেই একই ভাবে।সাদ যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে।তারপর বর্ষা ডান হাতে লবণ নেয় আর বাম হাতে জলন্ত কয়লা।বাম হাতের কয়লাগুলো সাদের কোলে দেয় আর লবণের ছিটা দেয় রিশাদের ওপর।দুইজনেই কুঁকড়ে ওঠে যন্ত্রণায়। জল আবারও পৈশাচিক হাসি দেয়।ভোর হয়ে গেলে জল দুজনকে আবার আগের অবস্থায় রেখে,গ্যারেজে তালা দিয়ে ঘরে চলে।

________

বর্ষণ খুব চুপচাপ হয়ে গেছে।বর্ষার ছেড়ে যাওয়া সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।খাওয়া,দাওয়া সব কিছুতে ওর অনিহা।সব সময় মন মরা হয়ে থাকে।জলের বর্ষণকে দেখে খুব মায়া হয়।জলের উচিত বর্ষণকে একটু হলেও সময় দেওয়া।মানুষ হিসাবে জলের এটা দায়িত্ব। যতই খারাপ থাকুক জলের কাছে বর্ষণ।সেও তো মানুষ। দুঃখ কষ্ট ওরও তো আছে।বর্ষণ টেবিলে বসে ভাতে আঙুল ঘোরাচ্ছিলো। জল বর্ষণের কাছে যায়।কাঁধে হাত রাখে।

" খাচ্ছো না যে?"

" বর্ষার কথা খুব মনে পড়ছে।কেন করলো ও এমন?"

" নিশ্চয়ই কোনো কারণে এমনটা করেছে।দেখো যাদের কারণে আল্লাহ তাদের ঠিকই শাস্তি দেবেন।তুমি খেয়ে নাও।"

" ভাত আমার গলা দিয়ে নামে না জল। প্রতিটা মুহুর্তে আমি বর্ষাকে মিস করছি।"

" করবেই তো।কিন্তু মেনে নিতে হবে মানুষ মাত্রই মরণশীল।"

" তাই এভাবে চলে যাবে বর্ষা?"

জল বর্ষণের প্রশ্নের উত্তর খুজে পায় না।পাশের চেয়ারে বসে ভাত মাখিয়ে বর্ষণের মুখের সামনে ধরে জল।বর্ষণ করুণ দৃষ্টিতে জলের দিকে তাকিয়ে থাকে।বর্ষণের চাহনি দেখে জল দুর্বল হয়ে যায়।কি নিষ্পাপ চাহনি!জল নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,,,

" খেয়ে নাও।বর্ষার খুনীদের শাস্তি দেখার জন্য হলেও তোমায় বাঁচতে হবে।"

" খুনী?"

" একটা হাসি খুশী চঞ্চল মেয়ে তো এমনি এমনি আত্মহত্যা করবেনা।নিশ্চয়ই কেউ বর্ষাকে আত্মহত্যা কর‍তে বাধ্য করেছে।"

" কেস তো করতে চেয়েছিলাম।তুমিই তো না করলে।"

" কয়টা কেসের বিচার হয়েছে বলবে আমায়?শুধু শুধু টাকা নষ্ট।"

" বর্ষার জায়গায় তোমার বোন হলে কথাটা বলতে পারতে?"

" বর্ষাকে আমি নিজেই বোনের মতোই দেখি বলে কথাটা বললাম।অনেক কথা বলেছো এবার খাও।"

কথাটা বলে জল বর্ষণের মুখের সামনে ভাত এগিয়ে দেয়।বর্ষণ নোনাজল চোখে নিয়ে ভাত খায়।এ কান্না খুশীর কান্না নাকি দুঃখের কান্না বর্ষণ বুঝতে পারছে না।জলকে আজ বর্ষণ নতুন রূপে দেখলো।মমতাময়ী জল।বর্ষণ ঠিকই ভেবেছিলো।জল রুক্ষতার শক্ত খোলসে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে।

চলবে,,
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#33
পর্ব -১৫





প্রতিদিন সেই একই ভাবে বর্ষণকে ঘুম পাড়িয়ে জল রিশাদ আর সাদের ওপর নির্যাতন চালাতো।না খেয়ে থেকে নির্যাতন সহ্য করতে করতে করতে রিশাদ,সাদ দুর্বল হয়ে পরে।জল এমনটাই চেয়েছিলো।সে তার শ্বাশুড়ির থেকে শুনেছে চলে যাওয়ার আগে বলে বর্ষা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতো না। ক্ষতস্থান গুলোতেও পচন ধরেছে।এই মুহুর্তে রিশাদ আর সাদের কাছে মৃত্যুই শ্রেয়।প্রতিটি মুহুর্তে ওরা নিজেদের মৃত্যু কামনা করছে।একটা মেয়ে যে এত ভয়ানক আর নির্দয় হয়ে পারে জলকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না রিশাদ সাদ।দেড়টা মাস ধরে জল অনেক নির্যাতন চালিয়েছে ওদের ওপর।জলেরও মনে হচ্ছে এবার ওরে মুক্তি দেওয়া দরকার।বাজার থেকে ধারালো ছুরি কিনে এনেছে জল।চকচকে ধারালো ছুরি।আলো পরলেই তার প্রতিফলন হয় ছুরিতে।
রাত তিনটা তেরো মিনিটে জল রিশাদের গলায় ছুরি চালিয়ে ওকে মুক্তি দেয়।চোখের সামনে বন্ধুকে এভাবে খুন হতে দেখে শিউরে ওঠে সাদ।গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট কর‍তে করতে সাদের চোখের সামনে মারা যায় রিশাদ।

" দেখেছিস?মৃত্যু কত ভয়ানক?"

কথাটা বলেই জল সাদের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়।ছটফট করতে করতে দুনিয়া ছাড়ে সাদ।জল গুনে গুনে রিশাদ,সাদের দেহকে ছয় টুকরা করে।রাতের আধারে বাগানে দেহাংশ গুলো পুঁতে দেয়।পুঁতে দেওয়া দেহাংশগুলোর ওপরে রক্ত লাল গোলাপ গাছ লাগায় জল।চারাগুলোর প্রতিটাতেই একটা করে গোলাপ ফুটে ছিলো।জল পৈশাচিক কন্ঠে বলে,,,

" জানোয়ার গুলোর রক্ত শুষে নিয়ে তোরা আরও লাল হয়ে ওঠ।আরও সুন্দর হয়ে ওঠ।ভয়ংকর সুন্দর।"

_____________

বর্ষণ জলের সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন হয়নি।জল আগের মতোই বর্ষণের সাথে রুক্ষ আচরণ করে।এরমধ্যে জলের মা বাবা মারা যায়।জল খুব ভেঙে পরে।বাবা মারা যাওয়ায় জল মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়ে।জলের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী জলের বাবা মারা যাওয়ার পরে শাড়ি গয়নাগাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।বাবা মনে হয় বুঝতে পেরেছিলেন তার সময় নেই খুব একটা। মারা যাওয়ার আগে তিনি জলের জন্য একটা চিঠি লিখে গিয়েছিলেন।চিঠিটির প্রতিটা কথায় জল বাবার কাজের জন্য অনুতপ্ততা অনুভব করতে পারে।

ঠিকই বলতে তুমি।আমাদের অতীতটা সুন্দর ছিলো।খুব সুন্দর।অশান্তির কোনো ছায়া ছিলো না আমাদের জীবনে।আমি ফিরোজাকে বিয়ে করেই অশান্তির সূচনা করি।আমার জন্যই তোমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায়।ফিরোজাকে বিয়ে করে যে আমি খুব সুখে ছিলাম তা কিন্তু নয়।অপরাধবোধে প্রতিটা রাত আমি ধুকে ধুকে মরেছি আর মরছিও।আমি জানতাম তুমি আমার জন্যই বাসায় থাকতে না।বেশিদিন বাঁচবো না মনে হয়।আমি মারা যাওয়ার পর দয়া করে তুমি এ বাড়িতে চলে এসো।

ইতি
তোমার বাবা নামক অপরাধী প্রাণী

জলের বাবার মৃত্যুর খবর শুনে জলের মা স্ট্রোক করে মারা যান।জল তার মাকে বাবার কবরের পাশে দাফন করার প্রস্তাব দেয়।কিন্তু জলের মায়ের স্বামী,আর জলের মামারা তাতে না কোচ করেন।জলের সেদিন খুব রাগ হয়।বিশেষ করে মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর ওপর।সেদিন রাতের আধারেই জল জলের মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকে খুন করে।বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে।আর মানুষজন ভাবে স্ত্রী হারানোর শোকে সে মারা গেছে।এই রকম পরিস্থিতিতে জল বর্ষণের সহযোগিতা কাম্য করেছিলো।কিন্তু সে পায় বিপরীত জিনিসটা।বর্ষণ আবার নতুন করে আদিবার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে এবং সফলও হয়।জলও বিষয়টা জেনে ফেলে।একেরপর এক এমন ধাক্কা পাওয়ায় জল মানসিকভাবে আরও বিকারগ্রস্থ হয়ে পরে।পাগলামি বাড়তে থাকে।তবে তা শুধু অন্ধকার ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো।বাবার অনুরোধ রাখতে জল পুরোনো বাড়িতে ফিরে যায়।জলের ঘরের পাশে এক বিশাল লাইব্রেরি ছিলো।জল বেশিভাগ সময় সেখানেই কাটাতে লাগে।এদিকে বর্ষণও নতুন ভাবে আসক্ত হয়ে যায় আদিবাতে।যা জল কিছুতেই মেনে নিতে পায় না।এভাবে জিততে জিততেও হেরে যাবে জল?তাও আদিবার কাছে?

_______

আজ ছুটির দিন।বর্ষণ বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে।জল সকালে উঠে ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে কৌতুহল বশত বর্ষণের ফোনটা নেয়।ইনবক্সে ঢুকে আদিবা বর্ষণের চ্যাট পড়ে।চ্যাট পড়ে জানতে পারে আজ ওরা দেখা করতে যাবে। আগুনে ঘি ঢালার মতো জলের রাগ ক্ষোপ বেড়ে যায়।ফোনটা বর্ষণের পাশে রেখে জল নিজের ঘরে চলে যায়।আজ জল এর শেষ দেখেই ছাড়বে।এভাবে জিততে জিততে হেরে যাবে জল।সারাজীবন জল হেরেই এসেছে।শেষ বেলায় এসে জল ভেবেছিলো সে আদিবার কাছে জিতে গেছে। কিন্তু না সে হেরেই গেছে।আর হারতে আছেই সে।জল নিজের ঘরে গিয়ে চার পাঁচটা সিগারেট শেষ করে।এই প্রথম সে একসাথে এতগুলো সিগারেট খেলো।

বেশ স্বাভাবিক আচরণই করলো জল বর্ষণের সাথে।বর্ষণ তা আমলে নেয় নি।জলের স্বাভাবিক অস্বাভাবিক আচরণে সে বিরক্ত হয়ে গেছে।তাই এখন সেগুলোকে এড়িয়ে চলে।
বিকালের দিকে জল নিজের ঘরে গিয়ে শোয়।বর্ষণ এরই অপেক্ষায় ছিলো।বর্ষণ আলমারি থেকে জলের পছন্দের শার্টটা পড়ে।জল সজাগ ছিলো।পাশের ঘরে থাকায় বর্ষণের প্রতিটি পদক্ষেপ জল শব্দের মাধ্যমে আন্দাজ করতে পারে। বর্ষণ বেরিয়ে গেলে জলও ওর পেছন গাড়ি নিয়ে বের হয়।

ভার্সিটির কাছে একটা নির্জন মাঠ আছে।বর্ষণ আদিবা সেখানেই দেখা করে।আদিবা আগে থেকেই সেখানে বর্ষণের অপেক্ষায় ছিলো।বর্ষণকে দেখে সে উঠে দাঁড়ায়।

" কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।"

" উইল ইউ মেরি মি আদিবা?"

হাত ধরে বলে বর্ষণ।আদিবা আকাশ থেকে পড়ে।ঝটকা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,,,

" হোয়াট?তুমি বিবাহিত। তোমার বউ আছে।আমি কেন তোমায় বিয়ে করবো?"

" হ্যাঁ আমি বিবাহিত।আমার বউ আছে।কিন্তু আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।"

" একটা মেয়েকে তুমি বিনা কারণে কেন ডিভোর্স দেবে?একটা ডিভোর্সি মেয়ের সমাজে থাকা কতটা কষ্ট কর তুমি জানো?"

" ও সমাজ থেকেই বিচ্ছিন্ন।ওর মতো সাইকো মেয়ের সাথে সংসার করা যায়?"

" সেটা তোমার বিয়ে করার আগে ভাবা উচিত ছিলো বর্ষণ।একটা মেয়ের সংসার ভাঙার কারণ আমি কিছুতেই হতে পারবো না।"

" ওর সংসার ভাঙার কারণ ও নিজেই।এক বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।এখন পর্যন্ত ও আমায় স্পর্শ পর্যন্ত করতে দেয় নি ওকে।আমার চাহিদা নেই?"

" তো তুমি কি আমায় তোমার শারী* রিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ে করছো?"

" তুমি শুধু আমার শারী*রিক নও মানসিক চাহিদাও আদিবা।"

" এসব তোমার মুখে মানায় না বর্ষণ।আমাকে বলা ত না ই ই। এগুলো তুমি জলকে বলো।আমাকে নয়।"

" প্লিজ আদিবা আমায় ফিরিয়ে দিও না।আমি অনেক আশা নিয়ে এসেছি।"

আদিবার হাত ধরে অনুরোধ করে।এরই মধ্যে জল ওদের মাঝে আসে।দুজনকে এভাবে দেখে জলের মাথায় রক্ত চড়ে যায়।ট্রাংকুলাইজার সাথেই নিয়ে এসেছিলো জল।রাগে তৎক্ষনাৎ বর্ষণের ঘাড়ে ইঞ্জেকশন বসিয়ে ট্রাংকুলাইজার পুশ করে দেয়।বর্ষণ অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।আদিবা বেশ ভয় পেয়ে যায়।ও তাজ্জব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই জল আদিবাকেও অজ্ঞান করে ফেলে। দুজনকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে জল।
দুজনকে লাইব্রেরিতে নিয়ে যায় জল।চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাঁধে বর্ষণকে।তারপর মুখে পানির ছিটা দিয়ে সে বর্ষণের জ্ঞান ফিরায়।চোখ মেলে বর্ষণ নিজেকে লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করে।সামনে আদিবা বুকশেলফে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।পাশে জল।বর্ষণকে দেখেই জল মুচকি হাসে।বর্ষণ ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগে।

" কি হয়েছে সোনা?"

বর্ষণের দিকে ঝুঁকে বলে জল।বর্ষণ রাগে গজগজ করছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না।জল আবার জিজ্ঞেস করে,,,

" এনি প্রবলেম?"

" তুমি আদিবাকে ওভাবে রেখেছো কেন?"

" রেখেছি রেখেছিই।তোমার কি?ও তো তোমার কিছু হয় না।অহ ভুলেই তো গেছি।ও তোমার প্রেমিকা।প্রেমিকা এভাবে পরে আছে দেখেই দুঃখে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে?আমি যে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছি কই তখন তো আমার জন্য এভাবে কষ্ট পাও নি!"

বর্ষণ জলের কথার উত্তর খুঁজে পায় না।জল তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।বুকে দুঃখগুলো পাথর চাপা দিয়ে আবার বলে জল,

" দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে গেছো আমায়।ঠকিয়ে গেছো আমায়।কিচ্ছু বলিনি।বিয়ে করে নিয়েছিলাম নিজের করে তোমায় পাওয়ার জন্য।কিন্তু তাতেও আমি ব্যর্থ।তুমি শুধরে যাও নি।অনেক সুযোগ দিয়েছি তোমায়।আজ হয় আমি থাকবো নয় আদিবা থাকবে।কাকে চাও তুমি?"

বর্ষণ নিশ্চুপ।জল ধারালো ছুরি বের করে।চোখের পলকেই ছুরিটা চালিয়ে দেয় আদিবার গলায়।ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগে।বর্ষণ চিৎকার করে ওঠে।আসতে চায় সে আদিবার কাছে কিন্তু সে ব্যর্থ।জল যে তাকে শক্ত করে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে! আদিবার দেহটা শান্ত হয়ে গেলে জল ওর শরীর থেকে চামড়া আলাদা করে।বর্ষণ এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েকবার জ্ঞান হারায়।চামড়া ছাড়িয়ে জল এইবারও আদিবার দেহটাকে ছয় টুকরা করে।বর্ষণের সামনে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে দেহাংশ গুলো।যেখানে বর্ষণ হেমোফোবিয়ায় আক্রান্ত।সামান্য রক্ত দেখলেই সে ভয় পেয়ে যায়।সেখানে তাজা রক্ত ঝড়া প্রিয় মানুষের দেহাংশ দেখে বর্ষণ প্যানিক অ্যাটাক করে।জল আবারও পানির ছিটা দিয়ে বর্ষণের জ্ঞান ফিরায়।বর্ষণের দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,,,

" ডু ইউ লাভ মি?"

" আই হেট ইউ।আমি ঘেন্না করি তোমায়।তুমি এত নিচে নামতে পারো?ছি জল ছি।"

তীব্র ঘৃণা নিয়ে বলে বর্ষণ।জল তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।বর্ষণের বাঁধন খুলে দেয় সে।রক্ত মাখা ছুরিটা বর্ষণের হাতে দিয়ে বলে,,,,

" আচ্ছাহ!যেহেতু তুমি আমায় ঘৃণায়ই করি তাই আমি মনে করি আমার বেঁচে থাকার কোনো দরকার নেই।কিল মি বর্ষণ।"

বর্ষণ চুপ।ওর হাত পা কাঁপছে।জল চিৎকার দিয়ে বলে,,,

" কাম অন বর্ষণ হিট মি,কিল মি।"

বর্ষণ এবারও চুপ।জল ছুরিটা বর্ষণের হাত থেকে নিয়ে পেটের ভেতর ঢুকিয়ে দেয় জল।ক্ষতস্থান দিয়ে স্রোতের মতো রক্ত বের হতে লাগে।তা দেখে বর্ষণ আবার প্যানিক অ্যাটাক করে।জল সে ক্ষত নিয়েই নিজের ঘরে যায়।গিয়ে ঘরের দরজাটা আটকে দেয় জল।

পরের দিন বর্ষণের জ্ঞান ফিরে।চোখ মেলে কাজের মহিলা,পুলিশকে দেখতে পায় বর্ষণ।জ্ঞান ফিরতেই কাজের মহিলার প্রশ্নের সম্মুখীন হয় বর্ষণ।

" ভাইজান!আপনে অজ্ঞান হইছিলেন ক্যা?আফা কই?আর এইন্না কার শইলের টুকরা?"

মহিলা আরও কিছু জিজ্ঞাস করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু অফিসার তাকে থামিয়ে দেয়।কনস্টেবল এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় বর্ষণের দিকে।বর্ষণ ঢোক ঢোক করে সব পানি খেয়ে নেয়।তারপর পুলিশ তার কাছে গতকালের পুরো ঘটনা শুনতে চায়।বর্ষণ সব বলে দেয়।সবটা শোনার পর পুলিশ জলকে খুঁজতে লাগে।সারা লাইব্রেরি খুঁজে পুলিশ বর্ষার সেই ডায়েরীটা পায়।মানুষ নাকি গোপন অনেক কথা ডায়েরীতে লিখে রাখে।তাই পুলিশ তথ্য পেতে ডায়েরিটা পড়তে লাগে।পুলিশের পড়া হয়ে গেলে বর্ষণকে দেয় তারা ডায়েরীটা পড়ার জন্য।

৯-১১-২১
আজ রিশাদ,সাদকে খুন করলাম।বর্ষার ধর্ষকদের খুন করলাম।খুবই নির্মম ভাবে মেরেছি।যাতে বর্ষার কষ্ট গুলো ওরা একটু হলেও অনুভব করতে পারে।তারপর কেটে টুকরো টুকরো করে পুঁতে দিয়েছি।সেগুলোর ওপর লাল টুকটুকে গোলাপের চারা লাগিয়েছি।ওদের রক্ত শুষে গোলাপগুলো আরও সুন্দর হয়ে উঠুক।

১৫-১১-২১
বাবাকে হারালাম আজ।যদিও অনেক রাগ ক্ষোপ ছিলো মানুষটার ওপর।তারপরও বাবা তো!

১৭-১১-২১
বাবা-মার মধ্যে বিচ্ছেদ হলেও একেঅপরের প্রতি ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছিলো না বোধহয়। তাই মাও আমায় একা করে বাবার কাছে চলে গেলো।বাবা পাশে মাকে দাফন কর‍তে চেয়েছিলাম কিন্তু মায়ের দ্বিতীয় স্বামী তা মানে নি।তাই শেষ করে দিই লোকটাকে।বালিশ চাপা দিয়ে মারি অথচ মানুষ ভেবেছে আমার মায়ের শোকে লোকটা মারা গেছে।হাস্যকর।

২০-১২-২১
আজ হয়তো আমার শেষ দিন এই দুনিয়ায়।পেটের ক্ষতস্থান থেকে অনবরত রক্ত ঝড়ছে।বিশ্বাস করেছিলাম বর্ষণকে কিন্তু ও এর ভার সইতে পারলো না।আদিবার সাথে সে বিয়ের পরও রিলেশনটা কন্টিনিউ করে।ভাগ্যিস সব জেনেছিলাম।হাতেনাতে ধরেছি দুটোকে।আদিবাকে মেরে বর্ষণকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ও আমায় ভালোবাসে কিনা।ও না বলেছে।মা-বাবার পরে ওকেই আপনজন ভেবেছিলাম সে যখন আমায় ঘৃণা করে তাহলে বেঁচে থাকার আমার দরকারটা কি?তাই শেষ করে দিলাম নিজেকে।ভালো থেকো বর্ষণ।আর আমায় ক্ষমা করে দিও।

ডায়েরীটা পড়ে বর্ষণ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।বর্ষার খুনীদের জল এভাবে শাস্তি দিলো তারপরেও বর্ষণ জলের সাথে এমন আচরণ করেছে।একটু ভালো থাকার জন্য সেই আদিবার হাত ধরতে চেয়েছিলো।কখনো ভেবে দেখেনি জল আদো ভাও আছে কি না!আজ এই পরিস্থিতির জন্য বর্ষণই দ্বায়ী।আদিবাকেও দুনিয়া ছাড়তে হলো জলকেও।শুধুমাত্র বর্ষণের জন্য।
পুলিশ রক্তের ছাপ অনুসরণ করে জলের ঘরের দিকে যায়।দরজা বন্ধ।ভাঙতে হবে।দরজা ভেঙে পুলিশ যা দেখে তারজন্য পুলিশ মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।পুরো ঘর রক্তে মাখামাখি।দেয়ালে লেখা জল,মা-বাবার সুখের সংসার।দুটো কংকালের মাঝখানে ঘুমিয়ে আছে জল।কংকাল দুটো জলের বাবা-মায়ের।ছোটবেলার মতো বাবা-মায়ের মাঝখানে ঘুমিয়ে আছে জল।বর্ষণ হুমড়ি খেয়ে পড়ে মৃত জলের ওপর।পুরো শরীর ঠান্ডা জলের।বর্ষণ জলকে জড়িয়ে কাঁদছে। কনস্টেবল বর্ষণকে সামলায়।বর্ষণ কাঁদছে।চিৎকার করে কাঁদছে।কিন্তু কান্নার আওয়াজ কারও কানে পৌঁছাচ্ছে না।না জলের কানে না আদিবার কানে।



সমাপ্ত
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#34
অসাধারণ, অপূর্ব বললেও কম বলা হবে! খুব ভালো লাগলো পড়ে।
[+] 1 user Likes pradip lahiri's post
Like Reply
#35
(12-01-2024, 08:10 PM)pradip lahiri Wrote: অসাধারণ,  অপূর্ব বললেও কম বলা হবে!  খুব ভালো লাগলো পড়ে।

ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না আপনাকে শুধু বলবো সাথে থাকুন।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)