Thread Rating:
  • 185 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩২ )
Waiting Eagerly
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
Aj ke update asbba?
Like Reply
(04-01-2024, 08:05 PM)_master_ Wrote: Aj ke update asbba?

Kader vai to bolse aske shob kiso thik thak thakle update asbe.  Akto wait koren na.  Amraw to wait kortasi. 
Onak lakhte den. Aske na hole kalke to asbei. Ato din wait korsen ar akto wait koren.
Like Reply
(04-01-2024, 08:05 PM)_master_ Wrote: Aj ke update asbba?

Kader vai to bolse aske shob kiso thik thak thakle update asbe.  Akto wait koren na.  Amraw to wait kortasi. 
Onak lakhte den. Aske na hole kalke to asbei. Ato din wait korsen ar akto wait koren.
Like Reply
রাত হয়ে গেছে কাদের ভাই। প্রিয় কাদের ভাই, আমরা যে বসে আছি পথও চেয়ে । দয়া কর কাদের ভাই........................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................
Like Reply
কাদের ভাই তোমাকে সেলাম। আমি এ সাইট এ আশি শুধু তমার আর কামদের দার উপন্যাস পরার জন্য। তোমরা যদি না লিখো তাহলে গল্পের বই পড়বো ।এখানে আর ঢুকার দরকার পরবে না।
Like Reply
(04-01-2024, 09:36 PM)mozibul1956 Wrote: কাদের ভাই তোমাকে সেলাম। আমি এ সাইট এ আশি শুধু তমার আর কামদের দার উপন্যাস পরার জন্য। তোমরা যদি না লিখো তাহলে গল্পের বই পড়বো ।এখানে আর ঢুকার দরকার পরবে না।
Ar kotokhhon?
[+] 1 user Likes mozibul1956's post
Like Reply
আপডেট আসতে আর দুই তিন ঘন্টা দেরি আছে। আপনাদের গল্প পড়ার আগ্রহ বুঝতে পারছি। তবে আমাকে লিখাটা ভাল করে শেষ করতে দিন। আর ইনবক্সে যারা মেসেজ পাঠাচ্ছেন তাদের জন্য সেইমবার্তা, লেখা শেষ হলেই আপডেট পেয়ে যাবেন।
[+] 4 users Like কাদের's post
Like Reply
Bas ab dedo yarr. Aur nehi raha jata -:-


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


Like Reply
"Ajke akta fadafadi hoibo" ei ashaa niye boshe aci -'-


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


Like Reply
আজকে একটা বিরাট ফাডাফাডি অইবো ?
Like Reply
আপডেট এর কথা শুনে ১৬ টা গেস্ট আর 5 টা মেম্বার আইডি এই থ্রেড ফলো করতেছে .... বাহ্
Like Reply
Watting............
Like Reply
আপডেট ২৮



হিট অফ দ্যা মোমেন্টে মানুষ অনেক কিছু করে। ঝগড়া করে, প্রেমে পড়ে, খুন করে। সেই হিট অফ দ্যা মোমেন্টের যে এড্রোলিন রাশ মানুষের চিন্তা কে ঘোলা করে দেয় সেইটা কমে গেলে অনেক সময় মানুষ তার সেই সময়ের কাজটা কে বিশ্লেষণ করে। হিট অফ দ্যা মোমেন্টে যেমন অন্ধ আবেগ কাজ করে ঠিক তেমনি পরে এড্রোলিন রাশ কমে গেলে লজিক কাজ করে। নুসাইবা এখন তেমন করে ভাবছে ওর জীবনের লাস্ট এক ঘন্টা কে। এক ঘন্টা আগে আসার সময় এয়ারপোর্ট রোর্ড বেশ ফাকা ছিল আর সাথে সব সিগনাল গ্রিন পেয়েছে। আর এখন এক ঘন্টা পর গাড়ির পরিমাণ বেড়েছে সাথে সিগনাল গুলোতে আটকে থাকতে হচ্ছে। হালকা গতিতে গাড়ি চলছে আবার কিছুক্ষণ থেমে থাকছে। এর মাঝে নুসাইবার মাথায় সব চিন্তা চলছে। গত এক ঘন্টার কোন অর্থ বের করতে পারছে না নুসাইবা। বাসা থেকে বের হতে পারার পর মাথার ভিতর যে উচ্ছাস চলছিল সেটার কোন তুলনা ছিল না। মনে  হচ্ছিল সত্যিকার অর্থে মুক্ত হতে পেরেছে। এরপর গাড়ির ভিতর যখন মাহফুজ কে দেখল তখন ওর মনে কোন অবিশ্বাস ছিল না যে আজকে মুন্সী বা ম্যানেজার কিছু করতে পারবে না। বিভিন্ন প্রসংগে নানা সময় আরশাদ যখন বলেছিল মাহফুজ ছেলেটার মধ্যে বুদ্ধি আছে, সাহস আছে। প্রথমে বিশ্বাস করে নি। পরে সেই আরশাদের পিছনে গুপ্তচরগিরি করার সময় আর কোন উপায় ছিল না। তখন মাহফুজের সাহায্য নিতে হয়েছিল। তখন এই বিশ্বাস জন্মেছিল মাহফুজের বুদ্ধি আছে। কোন কাজ বুদ্ধি খাটিয়ে বের করার উপায় জানে সামান্য থেকে সামান্য উপায় ব্যবহার করে। আজকের পর এই আস্থাও জন্মেছে যে মাহফুজের সাহস আছে। মুন্সী আর ম্যানেজারের মত লোকের সাথে নাহলে টক্কর দিতে কেউ আসে না। আরশাদের বন্ধু ভয়ে সিধিয়ে গেছে। নিজেদের কোন আত্মীয় স্বজনকেও বিপদে ফেলতে চায় নি নুসাইবা, আর সাহায্য চাইলেও তেমন কিছু করতে পারত তেমন আস্থা নেই নুসাইবার। কারণ বিপদে আপদে ফ্যামিলিতে লোকে হয় তার নাহলে সাফিনা ভাবীর পরামর্শ নেয়। তাই আর কার উপর আস্থা করে নি নুসাইবা। মাহফুজ ওর আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। কিন্তু এখন গাড়ি যখন ধীর গতিতে কখন থেমে থেমে সামনে এগুচ্ছে। তখন মনে প্রথমবারের মত একটা ডাউট তৈরি হচ্ছে। মাহফুজের বাসায় ফটোশুটের সময় যা হয়েছে সেটা ঠিক হয় নি। আরশাদ কে জেলাস করতে গিয়ে মাতাল হয়ে দুইজনেই সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিল। তবে সেদিন অন্তত চরম বিপদজনক কিছু হয় নি। মাহফুজের উপর তখন রাগ হলেও মাহফুজের কথা ফেলতে পারে নি। কারণ নুসাইবা জানে মাতাল হলে নিজের উপর কোন কন্ট্রোল থাকে না ওর, ওর মাহফুজের নিজের ছিল না। আর ফ্লোরার দোকানের ঘটনাটা যেন অন্যের জন্য গর্ত খুড়লে  নিজেই সেই গর্তে পড়তে হয় তার সবচেয়ে বড় উদাহারণ। ফ্লোরা কে জানতে গিয়ে কি এক গল্প বানালো ওরা সেই গল্পের চাপে যেন জান যায় অবস্থা সেদিন। কিছু বলতে পারছে না আবার কিছু সইতে পারছে না। সেদিন মাতাল ছিল না মাহফুজ বা নুসাইবা কেও। তাই সেদিন প্রথমে মাহফুজের চোখে বিস্ময় আর পরে সেখানে যে কামের চিহ্ন দেখেছে সেটা নুসাইবা কে অবাক করে দিয়েছিল।


ব্রা প্যান্টি পড়া অবস্থায় দেখে প্রথমে মাহফুজের চোখে যে বিস্ময় ফুটে  উঠেছিল সেটা পড়তে তেমন কষ্ট করতে হয় নি নুসাইবা কে। এর আগের দিন মাহফুজ যখন ওকে ছুয়েছিল তখন সেখানে ব্লাউজ আর পেটিকোটের আড়াল ছিল। ফ্লোরার দোকানে মাহফুজের চোখে তখন সৌন্দর্য দেখে চোখ ধাধিয়ে যাওয়ার মুগ্ধতা ছিল। লজ্জায় একদম মাটিতে মিশে যেতে চাইলেও মনের ভিতর একটা গর্বও হয়েছিল। মাহফুজের মত কম বয়েসী হ্যান্ডসাম ছেলে যে কিনা সিনথিয়ার মত ফ্যাশনেবল মেয়ের প্রেমে পড়ে আছে সে ওর মত মধ্য বয়স্ক নারীর সৌন্দর্যেও বাকহারা হয়ে গেছে। তবে সেই গোপন গর্ব একটু পড়েই আতংকে রূপ নিতে দেরি হয় নি। যখন ফ্লোরা ইন্টেমেসি গেমের নামে নানা ধরনের খেলা শুরু করল। একবার তো নুসাইবার মনে হচ্ছিল ফ্লোরা বুঝি ওকে চিনতে পেরেছে, অন্য একটা ছেলে কে জামাই সাজিয়ে এনেছে তাই এমন শাস্তি দিচ্ছে ওকে। নুসাইবা দাতে দাত চেপে খেলা খেলে যাচ্ছিল। এই খেলার সময় একটা সময় দেখল মাহফুজের চোখের দৃষ্টি পালটে গেছে। মাহফুজের চোখে যে দৃষ্টি সেটা এতদিনের বিবাহিত নুসাইবার চিন্তে কষ্ট হয় নি। কাম। নিখাদ কাম। মাহফুজ যেন তখন কামের ঘোরে চলে গেছে আর কোন কিছুই ওর কাছে তখন মূখ্য না। তাই মাহফুজ যেন ফ্লোরার সব আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে, পারলে আর বেশি করে। সেদিনের পর মাহফুজ কে ভালমন্দ অনেক কথা শুনিয়েছিল। তবে আসল রাগটা ছিল ওর নিজের উপর। মাহফুজের চোখের সেই কামের নেশা ওর শরীরেও যেন আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিল নুসাইবা। সারাজীবন নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণের উপর আস্থা ছিল নুসাইবার। অনেক ছেলে জীবনের অনেক পর্যায়ে নানা ভাবে নানা প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। সব এড়িয়ে গেছে সফলতার সাথে। নুসাইবা সব সময় নিজেকে ওয়ানম্যান ওম্যান ভেবেছে। মাহফুজের চোখে সৌন্দর্যের প্রশংসা আর তার উপর কামের আগুন সব যেন ওর নিজের ভিতর আগুন জ্বেলে দিয়েছে। আরেকটা ব্যাপার ছিল ফ্লোরা কে জেলাস করা। সব মিলেমিশে মাহফুজের সামনে সেদিন যা হয়েছিল সেটা কখনোই হওয়া উচিত ছিল না। সেদিন মাতাল হবার মত কোন অযুহাতও ছিল না ওর কাছে। তাই সব রাগ গিয়ে পড়েছিল মাহফুজের উপর। আর আজকের টা কিভাবে দেখবে ও?


গাড়ি জ্যামে হালকা হালকা করে আগাচ্ছে। নুসাইবা সামনে দেখে মাহফুজ মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখছে। মুখে হালকা একটা হাসি। এই হাসিটা গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। এই হাসির মানে কি? নুসাইবা শুনেছে মাঝ বয়সী মহিলাদের নিয়ে ছেলেদের এক ধরণের ফ্যান্টাসি থাকে। নুসাইবা কি সেই ধরনের কোন ফ্যান্টাসি? সিনথিয়ার ফুফু হওয়ার কারণে সেই ফ্যান্টাসিতে খানিকটা নিষিদ্ধ গন্ধ লেগেছে তাই মাহফুজের কাছে ওর আকর্ষণ বেশী? নুসাইবা ওর শরীরে সেই পুরাতন রাগটা টের পায়। এই রাগে ও পৃথিবী পুড়িয়ে ফেলতে পারে। সাফিনা ভাবী প্রায় সময় বলে এমন রাগ হলে কোন কথা বলবি না নুসাইবা। এই সময় তুই যা বলিস তাতে তোর লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হয়। নুসাইবার মনে হয় নিজের জীবনের উপর কয়েক ঘন্টা আগে যে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে সেটা এত তাড়াতাড়ি হারাতে চায় না ও। তাই সাফিনা ভাবীর উপদেশমত রাগ কে ভিতরে আটকে রাখে। আর কয়েকটা ঘন্টা। এরপর প্লেন। তারপর লন্ডন। তাই আপাতত এই সমস্যা নিয়ে রাগ করতে চাচ্ছে না। তবে মাথা থেকে লাস্ট এক ঘন্টা ডিলিট করে দিতেও পারছে না। যদি মাহফুজের বাসায় বা ফ্লোরার দোকানে নুসাইবা ভাবে ওর শরীর বিট্রে করেছে তবে সেটা হবে ভুল, কারণ এখন যা হয়েছে সেটা অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনা করতে পারবে না। এখন ওর শরীর যেন মাহফুজ কে সহযোগিতা করেছে। অন্য সময় ওর মন যে দূভের্দ্যে দূর্গ গড়ে তুলে আজকে কেন জানি সেটাও পারল না। ওর মনের ভিতর যেন নিজে থেকেই উত্তর দেয় কেন পারলাম না জান না? একটা অমোঘ সত্য নুসাইবা নিজের মন থেকে আড়াল করতে চাইলেও আড়াল করতে পারে নি। সেটা হল মাহফুজের প্রতি আকষর্ণন। মাহফুজের ফিজিক্যাল ফিচার নুসাইবা কে কখনোই ততটা দূর্বল করতে পারে নি। সুন্দরী হিসেবে সারাজীবন নানা পদের ছেলের প্রেমের প্রস্তাব পেয়ে এসেছে। তাই সুন্দর, সুদর্শন ছেলেদের প্রেমের প্রস্তাব ওর জন্য সব সময় খুব কমন ব্যাপার। তাই খালি ফিজিক্যাল ফিচার দিয়ে নুসাইবা কে পটানো সম্ভব নয় কোন ছেলের পক্ষে। নুসাইবার কাছে সব সময় আকর্ষনীয় ছিল একজন ছেলে কতটা আস্থাবান, দ্বায়িত্বশীল। তার ভালবাসার মানুষের প্রতি কতটা যত্নবান। আরশাদের প্রেমে প্রথমত পড়েছিল সেই কারণে। এত বছরের প্রেম আর বিবাহিত জীবনে নুসাইবা তাই অন্ধের মত ভালবেসেছে আরশাদ কে, কখনো সন্দেহ করে নি ওর অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ঠকাচ্ছে। তাই প্রথম যখন সন্দেহ শুরু হল সেটা ওর জীবনে একটা  বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছিল। এই শূণ্যতা নিয়ে কি করবে বুঝতে পারছিল না নুসাইবা। সেইখানেই যেন মাহফুজের এন্ট্রি।


মাহফুজ কে প্রথমত মেনে নিয়েছিল আরশাদের অনুরোধে, যাতে সময়ের সাথে কোন একটা ফাদ পেতে মাহফুজ কে সিনথিয়া থেকে দূর করে দেওয়া যায়। মাহফুজ কে সিনথিয়া থেকে দূরে সরাতে না পারলেও সিনথিয়ার প্রতি মাহফুজের ভালবাসা নুসাইবার মনে মনে মাহফুজের প্রতি সম্মান বাড়িয়েছে। কারণ নুসাইবার মনে ছেলেদের সবচেয়ে আকর্ষনীয় জিনিসগুলোর একটা হল নিজের ভালবাসার প্রতি ছেলের ভালবাসা। তবে মাহফুজের প্রতি নুসাইবার আকর্ষণ অনেক গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে যখন আরশাদের প্রতি নুসাইবার সন্দেহ তৈরি হল। সন্দেহ দূর করার জন্য মাহফুজের সাহায্য নিতে হয়েছে তখন। আরশাদের খবর বের করা, গোপনে ফলো করা। নুসাইবা খেয়াল করে দেখে মাহফুজের প্রতি ওর যে বিতৃষ্ণা সেটা এখন আস্থায় পরিণত হয়েছে। মাহফুজের বাসা আর ফ্লোরার দোকানে দুইটা অঘটন ঘটলেও এবং মাহফুজ কে প্রকাশ্যে এইসবের জন্য দোষারপ করলেও মনে মনে নুসাইবা জানত দুই ক্ষেত্রে কিভাবে মদ আর ফ্লোরার মেনিপুলেশন ওদের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। এই কথাটাই মাহফুজ ওকে বারবার বলার চেষ্টা করলেও নুসাইবার জেদী মন সেটা শুনতে চায় নি। কিন্তু ওর মনের ভিতর ঐকথাটাও ফেলে দিতে পারে নি। বারবার খারাপ ব্যবহার করার পরও প্রত্যেকবার ওর বিপদের সময় একমাত্র মাহফুজ এগিয়ে এসেছে। এই একটা জিনিস মাহফুজের প্রতি এট্রাকশন বাড়িয়ে দিয়েছে হাজারগুণ। নুসাইবা জানে ওর নিজের পছন্দের প্যাটার্ন। তাই ওর মনের ভিতর থেকে যখন প্রশ্ন উঠে, জান না কেন ঘটল আজকের এই ঘটনা? তখন যেন স্বীকার করতে না চাইলেও মনের ভিতরের কথাটা বের হয়ে আসে ওর মাথায়। মাহফুজ ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখল। মাহফুজের চোখের দৃষ্টিতে একটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, নুসাইবা কে বলল চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে ঠিক এয়ারপোর্টে পৌছিয়ে দিব। মাহফুজের গলায় আস্থার চিহ্ন টের পায় নুসাইবা। মাহফুজ কে উত্তর না দিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। গাড়ির ভিড় কমার লক্ষণ নেই। মাহফুজের এই আস্থা, নির্ভরশীলতা ওর ভিতরে সবচেয়ে বড় জোয়ার এনেছে। আরশাদের হাওয়া হয়ে যাওয়া, ম্যানেজ্যারের কঠিন নিয়ন্ত্রণ আর মুন্সীর চোরাগোপ্তা হামলা। সব মিলিয়ে নুসাইবার মনে হচ্ছিল ওর নিজের জীবনের উপর ওর নিজের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই বুঝি। তখন মাহফুজ যেভাবে সাহস করে ওকে নানা উপায় বলে দিয়েছে। যেভাবে মুন্সী আর ম্যানেজার দুই দলের নাকের ডগা দিয়ে ওকে বের করে এনেছে এর থেকে হিরোয়িক আর কি হতে পারে। নুসাইবার ভিতর তখন মাহফুজের জন্য প্রশংসার ফুলঝড়ি। ওর জীবনে যে শূণ্যতা মাহফুজ বুঝি সেখানে আপনা আপনি এসে দাড়িয়েছিল। এরপর দরকার ছিল একটা আগুণের। মাহফুজে গাড়ির ভিতর বসে যখন ওকে বুকের সাথে চেপে ধরল সেই আগুনটা বুঝি তখন জ্বলে উঠেছিল। এরপর কি হতে কি হল সেটা যেন আর কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছে না। একটা জিনিস পরিষ্কার মাহফুজের ভিতরেও ওর জন্য সমান আগুন ছিল। এরপর খালি দুই জনে মিলে দাউ দাউ করে জ্বলার পালা। নুসাইবার মনে ঝাপসা ঝাপসা হয়ে কিছু কিছু ফিরে আসছে। নুসাইবার চোখ মুখ গাল সব লাল হয়ে যাচ্ছে সেই সব ঝাপসা স্মৃতিতে। এত বছরের বিবাহিত জীবনেও মনে হয় কখনো এতটা উদ্যাম হয়ে উঠে নি নুসাইবা। সব সময় একটা আড়ষ্টপনা ছিল ওদের সেক্স লাইফে। ওর ঝাপসা স্মৃতিতে যেন দুইটা উদ্দাম শরীর সব চিন্তা ভুলে এক অপূর্ব শারীরিক ক্রিয়ায় মত্ত হয়ে উঠেছে। মাঝখানে প্রায় দুই তিন মাসের অভুক্ত শরীর, আরশাদের বিট্রের কারণে খালি জায়গা আর সেই জায়গায় আস্থা নিয়ে মাহফুজের আগমন সব মিলিয়ে যেন এই আগুন ঠেকানোর কোন উপায় ছিল না ওর কাছে। নুসাইবা এইবার নিজেকে নিজেই শান্তনা দেয় এইটা কিছু না, এইটা কিছু না। একটু পরেও ও ইংল্যান্ডের প্লেনে উঠে যাবে। এরপর হাজার হাজার মাইলের দূরুত্ব। মাহফুজের কাছ থেকে আরশাদের কাছ থেকে। ওর জীবনে যেন এই দুইজন এখন সব শান্তি আর অশান্তির ধারক। এদের দুই জন থেকে দূরত্ব বুঝি ওকে এখন শান্ত রাখতে পারে।


আরশাদের সাথে ওর ডিলিংস করতে হবে। কিন্তু কি আর কিভাবে সেটা এখনো জানে না। আরশাদ কে ম্যানেজার হাওয়া করবার আগে আরশাদ কে ফিরিয়ে আনার একটা চিন্তা ওর মাথায় ছিল। কিন্তু ম্যানেজার আর মুন্সীর এক্সট্রিম প্রেসার ওকে সব কিছু নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। তবে এর জন্য ঠান্ডা মাথায় কিছুদিন সময় দরকার। আর মাহফুজের সাথে ওর ব্যাপারটা ও একটা ভুল হিসেবে রাখতে চাচ্ছে। দারুণ উদ্দীপক আর উত্তেজক একটা ভুল। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই তবে একে স্বীকার করে নিয়ে নিয়মিত জীবনের অংশ করারও উপায় নেই। মাহফুজ কে এখন সিনথিয়ার জীবন থেকে সরানোর উপায় নেই আবার সিনথিয়ার জীবনে ঢুকতে দিলে ওর সাথে দেখা হবে নিয়মিত বিরতিতে সেটাও এড়ানোর উপায় নেই। এটার জন্যও কোন একটা উপায় বের করতে হবে। তার জন্যও ওর সময় আর দূরত্ব দরকার। গ্রেট নুসাইবার মাথা থেকে এসব নিয়ে কোন না কোন বুদ্ধি বের হবেই, নিজে কে নিজেই শান্তনা দেয় নুসাইবা। গাড়ি বামে মোড় নেয়। এয়ারপোর্টের রাস্তার মুখে ঢুকে পড়েছে গাড়ি।
Like Reply
Just now
[+] 2 users Like কুয়াশা's post
Like Reply


প্রতিটা প্ল্যান যারা বানায় তারা ভাবে এইটা ফুলপ্রুফ। অন্তত একটা লেভেল পর্যন্ত। বেশির ভাগ সময় এই সব প্ল্যানের বিপর্যয় ঘটে বাস্তবায়নের সময়। অর্থাৎ যা প্ল্যান করা হয় সেই অনুযায়ী কাজ হয় না কিছু না কিছু একটা ভজঘট পাকে। তাই নুসাইবা যখন কোন রকম সমস্যা ছাড়া বাসা থেকে বের হয়ে আসতে পারল আর কেউ তেমন কিছু টের পেল না তাই মাহফুজ আর নুসাইবা ভেবেছিল প্রাথমিক ভাবে ওরা সফল। ওদের প্ল্যান অনুযায়ী পরের দিন সকাল বেলার আগে ম্যানেজার বা মুন্সী কার লোক কিছুই টের পাবে না। এর মাঝে নুসাইবা ইংল্যান্ডের পথে প্রায় অর্ধেকটা পথ চলে যাবে। আর যখন টের পাবে তার পর নুসাইবার হদিস বের করতে করতে নুসাইবা ইংল্যান্ড পৌছে যাবে। ফলে তখন ম্যানেজার বা মুন্সীর আর কিছু করার থাকবে না। মাহফুজের অনুমান এরপর ম্যানেজার ঠিক তেমন কিছু বলবে না। কারণ ওদের প্ল্যান ছিল আরশাদের বন্ধুর মাধ্যমে সানরাইজ গ্রুপের কাছে খবর পাঠানো যে নুসাইবা ইংল্যান্ড আছে এবং ওর সানরাইজ গ্রুপের বিরুদ্ধে কিছু করার ইচ্ছা নাই। এরফলে সানরাইজ গ্রুপ নুসাইবার অন্তর্ধানের কারণে আরশাদের উপর উলটা পালটা কিছু করবে না। আর মুন্সী বা ওশন গ্রুপ ওর গায়ে হাত দিতে পারবে না কারণ ও তখন দেশের বাইরে। আর নির্বাচন যেহেতু সামনে আসছে তাই তখন আর নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে দুই গ্রুপ ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আর একবার নির্বাচন হয়ে গেলে ঝামেলা এমনিতে কমে আসবে।

তবে সব প্ল্যানে একটা ব্যাপার পরিকল্পনাকারীরা ভুলে যায়- অপ্রত্যাশিত সারপ্রাইজ। মাহফুজ এবং নুসাইবা যখন সব বড় বড় বাধা চতুর পরিকল্পনার সাথে অতিক্রম করে বাসার বাইরে চলে গিয়েছে তখন অপ্রত্যাশিত একটা ব্যাপার ঘটল। পরিকল্পনা অনুযায়ী নুসাইবা বাসার  বুয়া কে সেইদিন বাসায় আসতে মানা করে দিয়েছিল। বলেছিল যথেষ্ট রান্না আছে তাই সেইদিন আর আসার দরকার নেই। বুয়াও খুশি হয়েছিল অপ্রত্যাশিত একটা ছুটি পেয়ে। তবে বুয়া নুসাইবার বাসার আগে যে বাসায় কাজ করে সেই বাসা থেকে নিজের ঘরে ফিরত যাবার রাস্তাতেই নুসাইবার ফ্ল্যাট। এর আগের দিন ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য বাসার কিছু খাবার প্ল্যাস্টিকের বাটিতে করে বুয়া কে দিয়েছিল যাতে বাসায় নিয়ে ফ্যামিলির অন্যদের সাথে করে খেতে পারে। বুয়া সেইদিন সকালে ভাবল বাটি তো খালি হয়ে গিয়েছে তাই ধুয়ে নিয়ে যাই, ফেরত যাবার সময় নুসাইবা খালাম্মার বাসায় বাটি গুলা দিয়ে যাব। আর নুসাইবার বাসায় অল্প কোন কাজ থাকলে সেগুলাও নাহয় করে দিয়ে যাবে, যদিও নুসাইবা বলেছে আসার দরকার নেই। আসল ব্যাপার হল নুসাইবা কে বুয়া এত পছন্দ করে তাই ভাবছিল বাটি ফেরত দিবে আর অল্প কোন কাজ থাকলে সেটাও করে দিবে তাহলে নুসাইবার হেল্প হবে। নুসাইবা বাসা থেকে মাহফুজ আর তার সাংগপাংগদের নিয়ে বের হয়ে যাবার মিনিট বিশ পচিশ পরেই হাজির হল বুয়া। লিফট দিয়ে উপরে উঠে বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজাল। কেউ সাড়া দিল না। বুয়া একবার ফোন দিল  নুসাইবার ফোনে। নুসাইবা পরিকল্পনা অনুযায়ী ওর ফোন বাসায় রেখে গেছে। যাতে কেউ ফোন ট্রাক করলে দেখে নুসাইবা বাসাতেই আছে। বুয়া খেয়াল করে দেখল ভিতর থেকে ফোনের আওয়াজ আসছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। ভাবল নুসাইবা ফোন বাসায় ফেলে গেল না তো। এর আগেও এমন একবার শুনেছিল নুসাইবার কাছে, সকালবেলা নাকি নুসাইবা ফোন বাসায় ফেলে অফিসে চলে গিয়েছিল। বুয়া ভাবল যাই হোক এখন এখানে থেকে লাভ নেই। তাই চলে যাবার সময় বাসার গার্ড জিজ্ঞেস করল কি খবর  বুয়া আজকে কাজ এত তাড়াতাড়ি শেষ? বুয়া বলল আজকে কাজ ছিল না, আসছিলাম এই প্লাস্টিকের পট গুলা ফেরত দিয়ে যেতে। গার্ড জিজ্ঞেস করল তাইলে ফেরত দিলা না কেন। বুয়া বলল খালাম্মা মনে হয় বাসায় নাই। কলিংবেল দিলাম দরজা খুলল না তো। কল দিলাম তাও রিসিভ করল না। গার্ড বলল তাইলে তুমি পট গুলা রেখে যাও, আমি খালাম্মার কাছে পৌছে দিব নে। গার্ড আসলে চিন্তিত। মুন্সী ওকে দায়িত্ব দিয়েছে নুসাইবার বাসার সব খোজ খবর রাখতে। প্রতিদিন কড়কড়ে একটা হাজার টাকার নোট দেয়। তাই বুয়া চলে যেতেই গার্ড তাড়াতাড়ি উপরে গেল। নুসাইবার বাসায় কড়া নাড়লেও কেউ দরজা খুলল না। নুসাইবার নাম্বার আছে গার্ডের কাছে। তাই সেই নাম্বারে ফোন দিল। ভিতর থেকে ফোন বাজার শব্দ আসছে তবে কেউ ফোন রিসিভ করল না। গার্ড এবার ভয় পেয়ে গেল। কারণ মুন্সী ওকে যথেষ্ট ভয় দেখিয়ে গেছে। বলেছে টাকার সমস্যা নাই, যত চাও পাবা। তবে সব খবর দিতে হবে টাইম অনুযায়ী। কিছু মিস করলে লাশ পড়ে যাবে। মুন্সী লোকটাকে আগে কখনো দেখে নাই, কিন্তু যেভাবে শীতল গলায় হাসতে হাসতে লাশ ফেলার কথা বলেছে তাতে গার্ডের সন্দেহ নাই এই লোক চাইলে সহজেই এই কাজ করতে পারবে। ভয়ে ভয়ে গার্ড তাই তাড়াতাড়ি মুন্সীর নাম্বারে ফোন লাগায়।


মুন্সীর ফোন যখন বেজে উঠে তখন মুন্সী গাজীপুরে। ওশন গ্রুপ ওকে প্রথমে সানরাইজ গ্রুপের গোপন খবর বের করার কাজে লাগালেও এখন আর বেশ কিছু কাজ দিয়েছে ওকে। নির্বাচনী এলাকার নানা প্রতিনিধিদের কিভাবে টাকা, ক্ষমতার লোভ বা ভয় দেখিয়ে নিজেদের পক্ষে আনা যায়। সানরাইজ গ্রুপের বিরুদ্ধে বড় কোন রিপোর্ট করাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না মুন্সী বা ওশন গ্রুপের মালিক কারো। মুন্সী যদিও ভেবেছিল আরশাদ নুসাইবা একটা ভাল লিড হবে তবে সেখান থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোন খবর বের করতে পারে নি। আর নমিনেশন ফাইনাল করার সময় হয়ে এসেছে। ওশন গ্রুপ তাই এখন মুন্সীর উপর নতুন কাজ দিয়েছে নির্বাচনী এলাকার ছোটখাট নেতাদের এক এক করে হাত করার। নমিনেশন যেই  পক্ষেই যাক  না কেন, এদের সমর্থন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জেতার জন্য বড় হাতিয়ার হবে। তবে মুন্সী এখনো আরশাদ আর নুসাইবার উপর থেকে নজর সরায় নাই। বলা যায় না কি বের হয়ে আসে। নুসাইবা কে সেই রাতে যখন থেরাপী দিচ্ছিল তখন মনে হয়েছে নুসাইবার কাছে আসলেই কাজের কিছু নাই। তবে এটাও ঠিক নুসাইবা হয়ত এমন কোন দিকে ইংগিত দিতে পারবে যেদিকে কিছু খবর পাওয়া যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা নুসাইবা মুন্সীর মনে এমন একটা প্রভাব বিস্তার করছে যে নুসাইবা কে আরেকবার না ছুইতে পারলে জীবন বৃথা মনে হচ্ছে মুন্সীর। এই কয়দিন ওশন গ্রুপ তাকে ভাল প্রেসারে রাখছে তাই সারাদেশ ব্যাপী ছুটা ছুটি করতে হইছে। তবে সম্ভবত দুই তিন দিনের মধ্যে নুসাইবা কে একবার দেখতে যেতে পারবে। এইটা ভেবেই মুন্সীর শরীরটা চাংগা হয়ে উঠে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়। নুসাইবার বাসার দারওয়ান ফোন দিল কেন? এই লোকটাকে হাত করে রেখেই নুসাইবার উপর নজরদারী করছিল মুন্সী। সাথে ওর আরেকটা লোক রাখা ছিল। ম্যানেজার যে পরিমান ম্যান পাওয়ার ইউজ করতেছে নুসাইবা কে সেফ করার জন্য সেখানে একটা দারওয়ান কে দৈনিক কিছু টাকা দিয়েই সব খবর পেয়ে যাচ্ছে মুন্সী। ফোন রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে সালাম আসল। উত্তর দিতেই দারোয়ান বলল,  নুসাইবা ম্যাডামের বাসায় নক করলেও কোন খবর উত্তর আসতেছে না। মুন্সী বলল, ম্যাডাম কি বাসা থেকে বের হইছে? দারোয়ান বলল না, বাসাতেই আছে। আজকে কেউ আসছিল ম্যাডামের কাছে? দারোয়ান বলল উনার কাছে কেউ আসে নাই তবে উনার বাসায় আজকে একটা ফ্রিজ ডেলিভারি হইছে। মুন্সী এইবার নড়েচড়ে বসে। বলে দেখ তো তোমাদের বাসার সামনে যে একটা মাইক্রো বসে থাকে সব সময় ঐটা আছে কিনা। দারোয়ান বলে স্যার চেক করছি ঐটা আছে। নড়ে নায় সামনে থেকে। মুন্সী এইবার বলে তুমি সিওর ম্যাডাম বাসা থেকে বের হয় নায়। দারোয়ান বলে সিওর স্যার, ম্যাডাম বের হয় নায়। মুন্সী জিজ্ঞেস করে যারা ফ্রিজ দিতে আসছিল তারা কারা। দারোয়ান বলে স্যার আমি তো চিনি না, তবে সিংগার কোম্পানির লোক। মুন্সী বলে তুমি দশ মিনিট পর গিয়ে আবার বাসা চেক কর। দেখ দরজা খুলে কিনা। আর যাই হবে জানাবা আমাকে।


দারোয়ানের সাথে কথা শেষ করে মুন্সী চিন্তা করতে থাকে ব্যাপার কি হল। বাসার সামনে এখনো মাইক্রো আছে এর মানে ম্যানেজারের লোকেরা এখনো পাহারা দিচ্ছে। নরমালি নুসাইবা বের হলে এরা সাথে সাথে যায়। তার মানে নুসাইবা বের হয় নায়। আবার বাসার দরজা খুলছে না। এর মধ্যে ফ্রিজের ডেলিভারি। মুন্সী ওর যে লোক নুসাইবার বাসার উপর নজর রাখে তাকে ফোন দিল। ফোন ধরতেই মুন্সী জিজ্ঞেস করল আজকে কোন ফ্রিজ ডেলিভারি হবার কথা ছিল। লোকটা উত্তর দিল জ্বি বস। মুন্সী বলল ডেলিভারী হইছে? লোকটা বলল হ্যা বস, ৪০/৪৫ মিনিট আগে ডেলিভারি হয়ে গেছে। মুন্সী বলল তুমি সিওর যারা আসছিল তারা ডেলিভারি কোম্পানীর লোক? লোকটা বলল বস সবাই তো সিংগার কোম্পানীর লোক ছিল। আর সিংগার কোম্পানিতেই অর্ডার দেওয়া ছিল। মুন্সী বলল, শালা বলদ। তুমি তাড়াতাড়ি ঐ সিংগারে যাও আর যেমনে পার খোজ বের কর আজকে কোন ডেলিভারি হইছে কিনা ম্যাডামের বাসায়। ফোন রেখে মুন্সী এইবার এয়ারপোর্টে নিজের এক লোক কে ফোন দিল। বলল, শোন একটা জরুরী কাজ কর। দেখতো নুসাইবা করিম নামে কার টিকেট কাটা আছে কিনা আজকে বা আগামীকালকের জন্য। থাকলে আমাকে তাড়াতাড়ি জানাও। ফোন রেখে মুন্সী চিন্তা করতে থাকে। হিসাব মিলছে না। ম্যানেজারের লোকেরা এখানে আবার যদি নুসাইবা হাওয়া হয় তাহলে কিভাবে সম্ভব। নাকি ম্যানেজার ওকে ধোকা দিল। যা চাল্লু লোক হতেও পারে। একদল লোক দিয়ে নুসাইবা কে হাওয়া করে আরেকদল কে সামনে বসিয়ে রেখেছে ধোকা দেবার জন্য। নাকি অন্য কোন প্লেয়ার আছে খেলায়। মুন্সীর মাথার চিন্তার রেখা বাড়ে। শালা নুসাইবার কেস যত সহজ হবে ভাবছিল অত সহজ বলে এখন মনে হচ্ছে না।
Like Reply


গাড়ি এয়ারপোর্টের মুখে ঢুকে পড়েছে। সিকিউরিটির জন্য পুলিশ আর র‍্যাব রাস্তায় একটু পর পর ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। গাড়ি গুলো অল্প অল্প করে সামনে এগুচ্ছে। নুসাইবার মনে হয় এখন কথা বলার উপযুক্ত সময়। মাহফুজ ওকে এত বড় উপকার করেছে সেটা নিয়ে যেমন কথা বলা দরকার ঠিক তেমনি একটু আগে গাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে ওর কথা বলা দরকার। মাঝখানে কয়মাস যেমন সব কিছু নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছিল এখন আর তেমন ঘটতে দেওয়া যায় না। নিজেই কয়েক দিন আগে নিজেকে সাহস দেবার জন্য বলা কথাটা আবার আউড়ে যায়। মাস্টার অফ মাই ফেইট, ক্যাপ্টেইন অফ মাই সোল। নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজেকেই নিতে হবে। কয়েকদিন আগে নিয়তির উপর ভরসা ছেড়ে নিজে উদ্যোগ নেওয়াতেই আজকে এতটুকু আসতে পেরেছে। সারাজীবন সবাই ওকে সুনাম করেছে ওর আত্মবিশ্বাসের জন্য, বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের জন্য। আজকেই সেইভাবে কথা বলতে হবে। ভুল সব মানুষের হয় তবে সফল মানুষ সেই ভুল কে স্বীকার করে সঠিক রাস্তা খুজে নেয়, ভুলের চক্করে বাকি জীবনটা কাটায় না। নুসাইবা তাই কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।

নুসাইবা ডাক দেয় পিছন থেকে, মাহফুজ। মাহফুজ। সামনের গাড়ি গুলো খুব ধীর গতিতে পুলিশের চেক পয়েন্ট এড়িয়ে সামনে যাচ্ছে। মাহফুজ ব্রেকে পা রেখে পিছনে তাকায়। গাড়ি সেই কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে বের হবার পর থেকে নুসাইবা কোন কথা বলে নি। মাহফুজ তাই নুসাইবার মন বুঝার চেষ্টা করেছে বারবার রিয়ারভিউ মিররে চোখ রেখে। কনস্ট্রাকশন গ্রাউন্ডে যা হয়েছে সেটা কোন রকম প্ল্যান ছিল না, মাহফুজের পরিকল্পনার কোথাও তা ছিল না। তবে নুসাইবা যখন কৃতজ্ঞতা থেকে অনেক কথা বলতে থাকল মাহফুজ তখন অনেকটা ঘোরে থাকা মানুষের মত পিছনের সিটে গিয়ে বসল। এরপর নুসাইবা মাহফুজ কে জড়িয়ে ধরতেই সব কিছু যেন উলট পালট হয়ে গেল। মনের ভিতর থাকা সব হিসাব নিকেষ উড়ে গিয়ে সেখানে ভর করল খালি আবেগ। মাঝখানে কয়দিন নুসাইবা কে ভেবে মনের ভিতর যে আবেগ গুলো জন্ম হয়েছিল সেইগুলাই যেন এখন বের হয়ে আসার জন্য লাফ দিল। আর সেই লাফে উড়ে গেল মাহফুজের মনের সব বাধা। এমনিতেই সাবরিনা দেশের বাইরে কিছুদিনের জন্য। সিনথিয়ার পরীক্ষা। সব মিলিয়ে শরীরের যে তাড়নার রিলিজ হবার দরকার ছিল সেটা হয় নি ঠিকমত। মাহফুজ ভাবে হয়ত সেই জন্য এমন করে উতলা হয়ে উঠেছিল সেই সময়টাতে। তবে মাহফুজ অবাক হয়েছে নুসাইবার আচরণে। আর অনেক বাধা আশা করেছিল  নুসাইবার কাছ থেকে। ঠিক ওর সাথে তাল মিলিয়েছে বলা যাবে না তবে নুসাইবা যেন ওর শরীর কে ফলো করছিল। প্রচন্ড ঝড়ে গাড়ির ভিতর তখন আর কার মাথায় কিছু ছিল না। এর আগে এর থেকে অনেক অল্প ব্যাপারে নুসাইবা যেভাবে রিএক্ট করেছে সেই তুলনায় এইটা মহাভারত। পিছে চুপচাপ বসে থাকা  নুসাইবার মুখ গাড়ির ভিতর রাস্তা থেকে আসা অল্প আলোয় প্রায় বোঝা যায় না। মাহফুজ তাই ওর নাম শুনে ঘুড়ে তাকায়। কি বলবে নুসাইবা?


নুসাইবা ওর প্রফেশনাল, কঠিন প্রবলেম সলভ করা পার্সনালিটিটা বের করে আনে। এখন মাহফুজ কে ও যা বলবে এইটা ওর জীবনের দেওয়া সবচেয়ে কঠিন বক্তব্য হবে। কারণ মাহফুজের এত বড় উপকারের পর মাহফুজ কে এমন কিছু বলতে চায় না যাতে মাহফুজ কে অপমান করা হয় বা ওর মন ভেংগে দেওয়া হয়। আবার এমন কোন ইংগিত রেখে যেতে চায় না যাতে মাহফুজের মনে হয় ওর বা মাহফুজের মাঝে ভবিষ্যতে কোন সম্পর্ক হবার সম্ভাবনা আছে। নুসাইবা নিজের ভিতরের মেজাজ কন্ট্রোল করে যতটা সম্ভব সুন্দর করে ওর কথাগুলো উপস্থাপন করতে চায়। মাহফুজ কে ও কথা দিয়েছে সিনথিয়ার ব্যাপারে হেল্প করবে, এত বড় উপকারের পর সেটা থেকে সরে আসা ওর পক্ষে কঠিন। আর মাহফুজ এত কিছুর পরেও সিনথিয়ার প্রতি ডেডিকেটেড। যদিও আরশাদ কান্ডের পর পুরুষ মানুষের ডেডিকেশনের প্রতি ওর আস্থা কমে এসেছে। আবার মাহফুজ ওকে যেভাবে রিস্ক নিয়ে উদ্ধার করেছে সেটাও ভুলতে পারছে না। শুধুমাত্র সিনথিয়ার কারণে ওর জন্য এত কিছু করেছে। যদিও ওর মনে একটা আশংকা হচ্ছে ওর প্রতিও মাহফুজের এট্রাকশন একটা কারণ। তবে এইটা দূর করতে হবে। ওর প্রতি বেশি থেকে কম বয়স্ক ছেলেদের একটা ফ্যাসিনেশন সব সময় খেয়াল করেছে। অন্যদের কে পাত্তা না দিলেও সময় আর পরিস্থিতির কারণে মাহফুজের সাথে কিছু লাইন ক্রস করে ফেলেছে কিন্তু এখন সেগুলো কে দূরে সরিয়ে নতুন করে ভাবার সময়। নুসাইবা তাই বলে, মাহফুজ তুমি আমার জন্য যা করেছ তার জন্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমার নিজের কাছের মানুষেরাও আমার বিপদে আমাকে কোন সাহায্য করতে পারে নায়। সেই জায়গায় তুমি আমাকে নিজের রিস্ক নিয়ে এত বড় একটা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছ। তোমার হেল্পার কারণে আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমি হয়ত ইংল্যান্ডের প্লেনে উঠে যেতে পারব। একবার প্লেন ছাড়লে, আশা করি নির্বাচনের পর সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। তখন আবার ঠিকমত দেশে ফেরত আসতে পারব। আর যখন ফেরত আসব তখন আমি তোমাকে আমার দেওয়া কথা রাখব। আমি তোমার আর সিনথিয়ার ব্যাপারে ভাইয়া ভাবীর সাথে কথা বলব। যদিও ভাবী এই ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত দিবে তবে আশা করি আমি সুপারিশ করলে ভাবী রাজী হবে। আর ভাবী যেদিকে রাজি হবে ভাইয়া শেষ পর্যন্ত সেদিকেই যাবে। মাহফুজ নুসাইবার কথা শুনে আর গাড়ির স্ট্যায়ারিং এ হাত দিয়ে মাথা নাড়ায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না মাহফুজ। নুসাইবা তার কমান্ডিং ভয়েসে কথা বলছে আর যা বলছে এতক্ষণ পর্যন্ত সব ওর পক্ষে তাই মাহফুজ এর মাঝে নতুন করে কিছু বলার খুজে পায় না।


প্রথমে সহজ কথাগুলো বলা শেষ করে নুসাইবা। এরপর কঠিন প্রসংগ। কিভাবে বলবে বা বলতে হয় জানে না নুসাইবা কিন্তু যেভাবেই হোক এই গাড়ি থেকে  নামার আগে বলতে হবে। হাত হয়ত আর তিন চার মিনিট সময় আছে। এটাই উপযুক্ত সময়। মাহফুজ ওর কথায় কোন নেগেটিভ রিএকশন দিতে চাইলেও সময় পাবে না। নুসাইবা তাই এইবার গলা আর দৃঢ় করে। বলে মাহফুজ, শোন। আমাদের মধ্যে একটু আগে যা হয়েছে তা হওয়া উচিত হয় নি। তোমার আর আমার সম্পর্ক এমন নয়। আর আমি এমন মহিলা নই যে বিবাহিত থাকা অবস্থায় অন্য কার সাথে রিলেশনে জড়াব। আর তুমি আমার ভাতিজির বন্ধু, ওকে বিয়ে করতে চাও। এমন অবস্থায় তোমার আর আমার মধ্যে যা হয়েছে সেটা কার জন্য ভাল না। আমরা দুই জনই সিনথিয়ার সাথে প্রতারণা করছি। আরশাদ আমার সাথে যাই করুক আইনগত ভাবে ও আমার স্বামী। আরশাদ তোমাকেও অনেক বিশ্বাস করে। তাই আমাদের এই কাজ ঠিক হয় নি। আরশাদ এত বছর আমার সাথে যা করেছে তোমার সাথে আমি সেই একই কাজ করে ফেলেছি। আরশাদ আর আমার মাঝে এতে আর কোন পার্থক্য থাকে না। আমি সব সময় ভালভাবে থাকতে চেয়েছি। তাই আমাদের মাঝে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা একটা ভুল। নুসাইবার গলা দৃঢ় করতে চাইলেও গলা কাপছে। একটু আগে কি ঘটছে সেটা যেন মুখে উল্ল্যেখ করতে পারছে না। একটু আগে ঘটনা, একটু আগে ঘটা ঘটানা এইভাবে বলে মনের পাপবোধ কমাতে চাচ্ছে। নিজে এমন কিছুতে জড়িয়ে যাবে সেইটা ভাবতেই পারছে না। আর জড়ালেও এইভাবে উপভোগ করবে সেটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তবে এখন সব ভুল কে পিছনে ফেলে সামনে এগুনোর সময়। নুসাইবা তাই আবার কথা বলে। মাহফুজ ছেলে আর মেয়েদের সংস্পর্শে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে যেটা কোন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। আমাদের মনের ভিতর থাকা আদিম অংশটা এমন কিছু ঘটায় যেটা আমাদের সমাজের নিয়মনীতির সাথে যায় না। আমি জানি আমি তোমার থেকে বয়সে বড় আমার অভিজ্ঞতা বেশি তাই আমার আর বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল। তবে তুমিও ছোট নও, তোমারো আর বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল। তোমার মনে রাখা উচিত তুমি সিনথিয়া কে ভালবাস, আর আমি সিনথিয়ার ফুফু। আমাদের এমন কিছু করা উচিত না যাতে তোমার আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা ঘোলাটে হয়ে যায়।


মাহফুজ কথা গুলো শুনছে আর ওর কান দিয়ে যেন গরম বাতাস বের হচ্ছে। নুসাইবা যে কথাগুলো বলছে সেগুলো যে মাহফুজ জানে না এমন না। তবে অনেক সময় আমরা কিছু কথা অন্যদের মুখ থেকে শুনতে চাই না কারণ সেগুলো আমাদের জন্য বিব্রতকর। নুসাইবার কথা গুলো মাহফুজের কান গরম করে দিচ্ছে। মাহফুজ ভাবছিল নুসাইবা কতদিনের জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছে জানে না, আবার কবে দেখা হবে জানে, আবার কখনো কিছু হবে কিনা জানে না। তাই এই অল্প কয়েকটা মিনিট নুসাইবার সাথে যে গাড়িতে কাটাচ্ছে এইটা একটা মিষ্টি স্মৃতি হয়ে থাকুক। এরপর না হয় আগামীকাল থেকে সব জটিলটা নিয়ে ভাবা যাবে। সিনথিয়া কে কি সব বলা দরকার? সাবরিনার ঘটনা তো বলে নি। তাহলে নুসাইবার টা না বললেই হয়। নুসাইবাও নিশ্চয় বলবে না। তাই নুসাইবা যখন কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কথা শুরু করেছিল তখন মাহফুজের মনটা বেশ খুশি হয়ে উঠেছিল। যাক অন্তত একবার বিদায় বেলায় নুসাইবার কড়া কথা শুনতে হবে না আর পরে সেইটা নিয়ে মনের ভিতর গিল্ট ফিলিংস নিয়ে ঘুরে  বেড়াতে হবে না। কিন্তু কথার দ্বিতীয় অংশ শুরু হতেই মাহফুজ  বুঝল ওর অনুমান ভুল। মনে একটা হাসিও আসল। সাধারণত পলিটিক্সে এই ব্যাপারটা হয়। কাউকে বাশ দেবার আগে ডেকে ভাল ভাল কথা বলে পরে আসল কথাটা বলা হয়। যাতে গায়ে ক্ষত কম লাগে। নিজেই সেইম ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে। এভার ক্লেভার নুসাইবা। একদম শেষ মূহুর্তে কথাটা বলছে যেন মাহফুজ কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে না পারে। মাহফুজ হাসে। ও নিজে হলেও এই কাজটা করত। হয়ত নুসাইবা কে এই কারণে ভাল লাগে। সৌন্দর্যের বাইরেও এই কঠিন দেয়ালের জন্য। সিনথিয়ার ফ্যামিলির সব মেয়ে কি এমন? একটা কঠিন দেয়াল তুলে রাখে। একেক জনের দেয়াল একেক রকম। এই কারণে কি সিনথিয়ার ফ্যামিলির মেয়েদের জন্য মাহফুজ অন্য একরকম এট্রাকশন ফিল করে? খালি সৌন্দর্য না সাথে এই দেয়ালের এক্স-ফ্যাক্টর। যেখানে সামনে থাকা সৌন্দর্য ধরতে পারা যায় না এত কাছে থেকেও। এই এক্স-ফ্যাক্টর কি ওদের কে মাহফুজের কাছে আরাধ্য করে তুলে? মাহফুজ খেয়াল করে নুসাইবা কথা বলে যাচ্ছে। তবে ওর কানে এখন আর তেমন কথা ঢুকছে না। এইসব নানা চিন্তা খেলা করছে মাথায়। নুসাইবা বলে যাচ্ছে। মাহফুজ কত ভাল ছেলে। একটা ভুলের জন্য ওর জীবন নষ্ট হওয়ার দরকার নেই। মাহফুজ হাসে নুসাইবা ভয় পাচ্ছে। ওর সাজানো সুন্দর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, অবশ্য সেই সাজানো জীবনের আর কি কিছু অবশিষ্ট আছে? এই হাইক্লাস মানুষগুলো এত স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখতে ইচ্ছুক যে ভুলে যায় মাঝে মাঝে একটা ইলুশন এর মাঝে আছে। মাহফুজ এইসব ইলুশনের মধ্যে নাই। ও জানে কি করেছে কি করতে চায় আর কিভাবে করতে চায়। হ্যা, নুসাইবা ওকে একটু ঘোরগ্রস্ত করে দেয়, সাবরিনার জন্য একটা এট্রাকশন ফিল করে কিন্তু ওর আসল লক্ষ্য সিনথিয়া। সিনথিয়া কে হারানো যাবে না। ওর জীবনের ভাগ্যলক্ষী। কিছু না কিছু একটা উপায় বের হবে। তবে নুসাইবা যেভাবে কিভাবে সব ভুলে সামনে এগুনো দরকার এই বক বক করছে তাতে মাহফুজের সন্দেহ হচ্ছে কতটা ওর আর সিনথিয়ার জন্য আর কতটুকু নিজের জন্য। মাহফুজ জোরে হেসে উঠে।

নুসাইবা একটু অবাক হয় বিব্রত হয়। হাসির কিছু কি বলল ও। নুসাইবা গলার স্বর দৃঢ় করে নিজের উপর আস্থা আনতে চায়। জিজ্ঞেস করে, এনি প্রবলেম মাহফুজ? মাহফুজ হাসতে হাসতে মাথা নাড়ে। বলে কিছু না আপনার কথা শুনছি তাই হাসছি। নুসাইবা এইবার নিজের উপর আস্থা পায় না কিন্তু বুঝতে দেয় না মনের ভিতরের ডাউট। বলে কেন ভুল কিছু বললাম? মাহফুজ বলল না, কিন্তু দেখেন অবস্থা কতটা চেঞ্জ হয়েছে। আপনি শুরুতে আমাকে মানতেই চান নাই আমাকে। বুদ্ধি করে এক মেয়েকে দাওয়াত দিয়েছেন আমার সাথে যাতে আমার সেখানে একটা প্রেম হয়। সব চাল চেলেছেন। আর এখন আপনি নিজে বলছেন সিনথিয়ার বাবা মায়ের কাছে আমার জন্য তদবির করবেন। গত কয়েকমাসে অনেক কিছু বদলে গেছে তাই না। নুসাইবা কথাটা ফেলতে পারে। গাড়ি এয়ারপোর্টের র‍্যাম্পে উঠছে। সামনে গাড়ির জ্যাম। খুব স্লো গাড়ি আগাচ্ছে। রাতের এই সময়টাতে প্রচুর ফ্লাইট থাকে তার উপর পুলিশের চেকিং সব মিলিয়ে খুব স্লো সব। মাহফুজের এই বোল্ডনেস টা একসাথে ইরেটেটিং আবার নুসাইবার মনে হয় এই একটা জিনিস মাহফুজ কে অন্য ছেলেদের থেকে আলাদা করে ফেলে। কী অবলীলায় বলে দিল সত্য কথাটা। নুসাইবা বলে না, না এমন কিছু না। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে কথা লুকিয়ে কি লাভ বলেন ফুফু। ফুফু শব্দটার উপর জোর দেয়। নুসাইবা লাল হয়ে যায়। মাহফুজের মনে হচ্ছে একটু মজা নেওয়া দরকার নুসাইবার সাথে। সব সময় শেষ কথা নুসাইবা কেন বলবে এইবার নাহয় ও বলবে। তাই বলে এই দেখুন না একটু আগের ঘটনা টা না ঘটলে আপনি কি ভাবতেন বলেন তো? নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। প্রশ্নটা বুঝতে পারে না। আমতা আমতা করে নুসাইবা। মাহফুজ হাসে। বলে একটা জিনিস দেখছেন ফুফু। আমি আর আপনি দুই জনেই এক ঘন্টা আগের ঘটনাটার কোন নাম নিতে পারছি না। মজা না। আপনি আর আমি অন্তত এই জায়গায় এক তাই না। গাড়ি প্রায় র‍্যাম্পের উপর উঠে এসেছে। এইবার নুসাইবার কান গরম হয়ে গেছে। কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। সময় শেষ হচ্ছে না কেন। কিছু সত্য কে কখনো ফেস করতে নেই। মাহফুজ বলে আমি জানি ফুফু এইবার আপনি ইংল্যান্ড গেলে আমাদের হয়ত এই বিষয়ে আর কথা হবে না। কথা না হওয়াই ভাল। আর যাই হোক বিলিভ মি আমি সিনথিয়া কে ভালবাসি। তাই আপনার আমার দুইজনের লাভ আর কিছু না হলে। তবে একটা কথা না বললে পারতেছি না ফুফু। ইউ আর সামথিং। ইউ হ্যাভ সামথিং দ্যাট ইজ ওয়াইল্ড। মাহফুজের বোল্ডনেস একসাথে নুসাইবার কান লাল করে দেয়, মেজাজ গরম করে দেয় আবার মনের মধ্যে একটা কেমন যেন হালকা ভাল অনুভূতি এনে দেয়। যে মেয়ের স্বামী গোপনে প্রেম করে বেড়ায় তার কিছুটা ইগো বুস্টাপের দরকার আছে। মাহফুজের কথাটা বেশ অসভ্য হলেও মনে একটা ইগো বুস্টাপ এনে দেয়। নুসাইবা কিছু বলে না। মাহফুজও আর কিছু বলে না। যেন সব কথা শেষ হয়ে গেছে এয়ারপোর্টের গেটের সামনে এসে।
Like Reply


গাড়ি এয়ারপোর্টের ডিপারচার গেটের লাইনগুলোর উপর উঠে দাঁড়ায়। একদম মাঝবরাবর এসে গাড়ি থামায় মাহফুজ। গত দুই মিনিট গাড়ির ভিতর একদম নীরব ছিল। কার কাছে কোন কথা ছিল না যেন। গাড়ি থামার পর নুসাইবা চারদিকে তাকায় গাড়ির ভিতর থেকে। রাতের এই সময়টাতে প্রচুর লোক আসে এয়ারপোর্টে। ঢাকার একমাত্র ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিক, ইউরোপগামী টুরিস্ট, বাইরে কোন দেশে পড়তে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রী, হরেক রকম লোকের ভীড়। তবে সবাই দেশ ছেড়ে যাবে। কেউ একা এসেছে কার সাথে ফ্যামিলি। গাড়ি গুলোর সামনে ট্রলির ভিড়। এমনিতে এই ট্রলি ফ্রি। কিছু দালাল জাতীয় লোক এই ট্রলি নিয়ে ব্যবসা করে। এদের দাপটে ট্রলি পাওয়া কঠিন। নুসাইবা নামতেই এমন একজন ছুটে আসল। ম্যাডাম ট্রলি লাগবে। আমার সাথে আসেন আমি হেল্প করছি। মাহফুজ গাড়ি থেকে নামে। বলে যান যান লাগবে না আমাদের ট্রলি। নুসাইবার সাথে একটা মাত্র হ্যান্ড ল্যাগেজ। ট্রলি ব্যাগ। তাই এইটা টানার জন্য কার হেল্প লাগবে না। বিদায় বেলায় কার চোখে পানি, কার মুখে হাসি। গেটের মুখে পাসপোর্ট দেখিয়ে ঢুকে যেতে হচ্ছে। আজকে কড়াকড়ি বেশি। তাই সাথে আসা লোকেরা ভিতরে ঢুকতে পারছে না। কেউ যদি কোনভাবে ভিয়াইপি পাস যোগাড় করে তাহলে অন্য কথা। তাই বাইরের দিকটাতে ভীড় বেশি। যারা ভিতরে ঢুকতে পারছে না তারা বাইরে দাঁড়িয়ে কাচ দিয়ে দেখছে। আর্মড পুলিশ একটু পর পর বাশি বাজিয়ে জায়গা খালি করছে। স্বজনদের ছেড়ে যেতে তাও মানুষের মন চাইছে না। কেউ কেউ পুলিশের হাতে টাকা গুজে দিচ্ছে আরেকটু বেশিক্ষণ থাকার জন্য।  ঠিক এই সময়টাতে ভীড় বাড়ার কারণে পুলিশ অনেক করিতকর্মা ভাব দেখায় তবে এই সময়টাই এদের ঘুষ খাবার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। মাহফুজ দেখে ওর গাড়ির পাশে আর দুইটা গাড়ি থামিয়ে মানুষ নামছে। এক লাইনে সব গাড়ি পার্ক করার কথা। কিন্তু দুই তিন লাইন করে গাড়ি পার্ক করে লোক নামছে। যে গাড়ি গুলো সেকেন্ড বা থার্ড লাইনে পার্ক করছে সেগুলো থেকে পুলিশ দুইশ টাকা করে নিচ্ছে। মাহফুজ মনে মনে গালি দেয় শালার পুলিশ। এই মূহুর্তে গাড়ি নিয়ে বের হবার উপায় নেই। তাই গাড়ি লক করে নুসাইবার সাথে হেটে হেটে গেটের দিকে যায়। পাসপোর্ট চেক করে ভিতরে ঢুকাচ্ছে দেখে প্রত্যেক দরজার সামনে লাইন। একটা লাইনে দাঁড়ায় নুসাইবা। পাশাপাশি দাঁড়ায় মাহফুজ। মাহফুজ বলে সাবধানে যাবেন। নুসাইবা ঘাড় তুলে মাহফুজের দিকে তাকায়। মাহফুজের গলায় সত্যিকারের কেয়ার। একটু আগে হাসতে হাসতে রাত তুলে দেওয়া টিজ করার ভংগিটা আর নেই। ছেলেটা কে বুঝা বড্ড কঠিন। নুসাইবা বলে তুমিও ঠিক করে থেক। ইংল্যান্ডে পৌছে আমি সিনথিয়ার সাথে কথা বলব। আই রিয়েলি মিন ইট। মাহফুজ নুসাইবার দিকে তাকায়। মাহফুজ জানে নুসাইবা কে পাওয়া হবে না সত্যিকার অর্থে এই জীবনে। সিনথিয়াকে ও ভালবাসে। আবার নুসাইবার প্রতি যে আকর্ষণ সেটাও অস্বীকার করতে পারছে না। এই যে নুসাইবা চলে যাবে সেইটা ওর মনে একটা দুঃখবোধের জন্ম দিয়েছে। না পাওয়ার একটা বেদনা। সেটাই যেন মাহফুজের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। নুসাইবার চোখ এড়ায় না মাহফুজের মুখের বদলে যাওয়া ভংগী। এটার কি অনুবাদ করবে বুঝে উঠতে পারে না ও। মাহফুজের প্রতি এক সময় একটা তাচ্ছিল্য ছিল। এখন সেই জায়গায় একটা কৃতজ্ঞতাবোধ গড়ে উঠেছে। কিন্তু ওর ভয় মাহফুজের এই অনুবাদ করতে না পারা দৃষ্টিটা। নুসাইবা বলে আমার লাইন এসে গেছে প্রায়। তুমি গিয়ে বরং চলে যাও। মাহফুজ আর কথা বলে না। খালি বলে ভাল করে যাবেন। নুসাইবাও বলে ভাল থেক।


মাহফুজ গাড়ির কাছে যায়। এখনো ওর সামনে আর সাইডে গাড়ি পার্ক করা। ঠিক এই মূহুর্তে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব না। এক পুলিশ ওর কাছে এসে বাশি বাজায়, বল - গাড়ি বের করেন, গাড়ি বের করেন। মাহফুজের মুখ দিয়ে গালি আসে। শালারা টাকা খেয়ে সব জায়গায় গাড়ি পার্ক করে রাখতে দিয়েছে এখন গাড়ি বের করবে কিভাবে। তবে আজকে এখানে কোন ঝামেলা করা যাবে না চুপচাপ বের হয়ে যেতে হবে। মাহফুজ তাই একদম মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে আমার চারপাশে গাড়ি কিভাবে বের হব বলেন। ঐগুলা কে আগে সরান আমি বের হয়ে যাচ্ছি। আমার প্যাসেঞ্জার ভিতরে চলে গেছে। পুলিশ একটু চোটপাট করে সামনের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। মাহফুজ ঘাড় ঘুড়িয়ে নুসাইবা কে দেখে। ওর যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে নুসাইবা কে দেখা যাচ্ছে। নুসাইবার সামনে আর দুইজন লোক লাইনে। নুসাইবা কে এয়ারপোর্টের উজ্জ্বল আলোয় দারুণ লাগছে। একটা সালোয়ার কামিজ পড়া। এটা নতুন। মাহফুজের মনে একটা অনুভূতি খেলা করে গেল এটা ভাবতেই। এর আগে যে সালোয়ার কামিজ পড়া ছিল সেটা আর পড়ার উপযুক্ত ছিল না গাড়িতে ওদের মিলনের পর। মাহফুজ গাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, নুসাইবা বদলে নিয়েছিল কাপড়। এখন নুসাইবার পড়নে সেই নতুন সালোয়ার কামিজ। এই কামিজ যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে যেটা নুসাইবা মাহফুজ কে ভুলে যেতে বলেছিল। মাহফুজের মনে হয় এত সহজে কি ভুলে যাওয়া যায় সব। আগের পড়ে থাকা সালোয়ার কামিজ টা কই? ব্যাগে ভরে নিয়েছে সাবরিনা? নাকি গাড়ির পিছনে পড়ে আছে? ভাবতে ভাবতে মাহফুজ দরজা খুলে গাড়ির মাঝের আর পিছনের সিটে খুজে। না নেই। সতর্ক নুসাইবা। ব্যাগে ভরে নিয়েছে। মাহফুজ গাড়ির মাঝের সিটে বসে সামনে তাকায়। নুসাইবা দরজা দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। পার্সপোর্ট দেখাল, চেক করছে যেই লোকটা তাকে। এরপর একটু ঝুকে ক্যারি অনের হ্যান্ডেল উচু করল। হালকা নিচু হতে নুসাইবার নিতম্ব যেন তার পূর্ণ গৌরবে মাহফুজের চোখে ধরা পড়ল। সারা এয়ারপোর্ট সাদা উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। তার পরেও মাহফুজের মনে হচ্ছে নুসাইবার নিতম্ব যেন সবচেয়ে উজ্জ্বল এইখানে। মনে মনে হাসে মাহফুজ। সিনথিয়া যেমন সেক্স চ্যাটের সময় মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে যায় বলে নুসাইবা ফুফুর পাছাটা মেরে লাল করে দিতে হবে। মাহফুজ তখন আর ঘি ঢালতে ঢালতে বলে, হ্যা পাছার দুই দাবনা আলাদা করে ধরে ধরে দেখতে হবে কেমন লাল হয়েছে। সিনথিয়ার ডার্টি মাইন্ড তখন বলে হ্যা ফুফুর অহংকারী এস দেখবা তখনো উচু হয়ে আছে। মাহফুজ গাড়ির ভিতর একা একা হেসে  উঠে। ডার্টি সিনথিয়া। ঠিক এই সময় আবার ফোনে একটা এসএমএসের শব্দ। মাহফুজ অবাক হয়। এই ফোনে এখন কে এসএমএস দিচ্ছে। কারণ এই ফোন টা খালি এই অপরেশনের জন্য কেনা। তিন চার জন লোকের কাছে আছে। তাদের কার এই মূহুর্তে ওকে ফোন বা এসএমএস করার কথা না। এর মধ্যে ওর সাইডে রাখা গাড়ি সরে গেছে। একটু আগে তাড়া দিয়ে যাওয়া পুলিশ সামনে এগিয়ে আসে। গাড়ির জানালায় নক করে বলে এক মিনিটের মধ্যে না গেলে মামলা দিয়ে দিবে। এর মধ্যে আবার এসএমএসের শব্দ। মোবাইলটা নিচে পড়ে গেছে ড্রাইভার সিটের পাশে। মাহফুজ খুজতে থাকে কেবিন লাইট জ্বালিয়ে। মোবাইলে আবার নতুন মেসেজ আসার শব্দ। মাহফুজ এইবার একটু চিন্তিত হয়। কি হল? ড্রাইভারের সাইডের দরজায় এসে পুলিশ বলে আর ত্রিশ সেকেন্ড এর মধ্যে গাড়ি না সরালে মামলা। মাহফুজ বিরক্ত স্বরে বলে সরাচ্ছি। ড্রাইভার সিটটা আগুপিছু করে শেষ পর্যন্ত ফোনটা তুলতে পারে। অবাক হয় মাহফুজ। সোলায়মান শেখের নাম্বার থেকে মেসেজ। প্রথম মেসেজে লেখা ৫০ টাকা লাগবে। এরপর মেসেজে লেখা ৬০ টাকার মেসেজ চেঞ্জ এখন ৫০ টাকা লাগবে। এরপর লাস্ট মেসেজ ৬০ টাকা ইমার্জনেসি লাগবে। মাহফুজ কনফিউজড হয়ে যায় হচ্ছে টা কি। সোলায়মান শেখ অনেকবার বলে দিয়েছে এই ফোন থেকে যেন কল না দেয় সোলায়মান শেখের ঐখানে। মাহফুজ তাই দ্রুত ভাবতে থাকে কি করবে সে। কারণ ৫০ টাকা চাওয়ার মানে এয়ারপোর্ট ক্লিয়ার নাই। মাহফুজ তাই দ্রুত মেসেজ পাঠায় হোয়াট?  কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এইবার একটা কল আসে। অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে। মাহফুজ কিছু বলার আগে ঐপাশ থেকে সোলায়মানের গলা শুনা যায়। বলে কোন কথা বলবেন না, আমি যা বলি শুনে যান। সেকেন্ড পার্টি জেনে গেছে খবর। জায়গামত ওদের লোক বসে আছে ধরার জন্য। আপনি দ্রুত আপনার লোক কে  সরান। আমি এরপর বিস্তারিত বলব। আর আপনি প্ল্যান বি অনুযায়ী কাজ শুরু করেন। বাকিটা আমি পরে আপনাকে বলব। এই বলে ফোন কেটে যায়। মাহফুজ, সোলায়মান শেখের কথা কি বলব বুঝার ট্রাই করে। কারণ মাত্র দশ পনের সেকেন্ডের ভিতর সব কথা বলে দ্রুত ফোন কেটে দিয়েছে সোলায়মান শেখ। সেকেন্ড পার্টি মানে মুন্সী। আর জায়গামত লোক আছে মানে কী? এয়ারপোর্ট ওদের লোক বসে আছে? মাহফুজের মনে হয় সর্বনাশ। নুসাইবা তো ভিতরে ঢুকে গেছে। ওর সাথে পার্সপোর্ট নেই। তাই ঘুষ দিয়েও ভিতরে ঢুকতে পারবে না। ঠিক এই সময় পুলিশের লোক আবার এসে বলে এখনি সরান নাইলে মামলা। মাহফুজের মেজাজ মাথায় চড়ে যায় পুলিশের কথায় কিন্তু কিছু করার নাই। মাহফুজ একটা পাচশ টাকার নোট বের করে হ্যান্ডশ্যাক করার ভংগিতে পুলিশের হাতে ধরায়ে দেয়। পুলিশ এইবার অমায়িক একটা হাসি দিয়ে বলে পাচ মিনিট। মাহফুজ বুঝে পায় না ঠিক এই সময় কিভাবে নুসাইবা কে সতর্ক করবে। সব কিছু এত পারফেক্টোলি প্ল্যান করা ছিল। এতক্ষণ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল এখন এই সোলায়মানের কথা সব ভেস্তে দিল। মাহফুজের সিনেমায় দেখা একটা ডায়লগ মনে পড়ে- অল প্ল্যান আর পারফেক্ট আনটিল দে আর ফাকড আপ। এখন ওরা পুরা ফাকড আপ। নুসাইবা কে সতর্ক করতে না পারলে ভীষণ বিপদ হয়ে যাবে।


নুসাইবা আর মাহফুজ যখন পার্ক করা মাইক্রোর ভিতর উদ্যাম খেলায় ব্যস্ত তখন মুন্সীর লোক তাকে ফোন দিয়ে বলল আজকে রাতে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে একজন নুসাইবা করিম নামে যাত্রী আছে। আর টিকেট করা হইছে আজকে বিকাল চারটার সময়। একদম শেষ মূহুর্তের টিকেট। মুন্সী বুঝে ওর সাথে গেম খেলা হয়ে গেছে। গেমটা কে খেলল? ম্যানেজার না নতুন কেউ সেইটা আপাতত ভাবার সময় নাই। আগে গেমটা আটকাতে হবে। একবার ইমিগ্রেশন পার হয়ে গেলে এরপর কাউকে আটকানো অনেক ঝামেলার কাজ। সবচেয়ে ভাল হয় ফ্লাইটে চেক ইন করার আগে আটকাতে পারলে। মুন্সী তার যে লোক কে নুসাইবার পিছনে লাগিয়ে লেগেছিল তাকে ফোন দিল তারপর। সেই লোক তখনো সিংগারের শো রুমে। মুন্সী জিজ্ঞেস করতেই সেই লোক জানাল আজকে একটা ফ্রিজ ডেলিভারির কথা ছিল, টাকাও দিয়ে দিয়েছে সব নুসাইবা। তবে বিকালের দিকে নুসাইবা ফোন দিয়ে জানিয়েছে আজকে ডেলিভারি না দিতে। একটা কাজ আছে। মুন্সী এইবার দুইয়ে দুইয়ে চার মিলায়। এখানেই গেমটা খেলা হয়ে গেছে। যারা ফ্রিজ ডেলিভারি দিতে এসেছিল এরা আসলে নুসাইবা কে নিয়ে গেছে অথবা নুসাইবা স্বেচ্ছায় তাদের সাথে গেছে। এইসব পরে ভাবা যাবে। মুন্সী তার লোককে বলল এখনি যেন বাইক নিয়ে এয়ারপোর্টে ছুটে। কারণ নুসাইবা কে সনাক্ত করতে হলে এই সবচেয়ে ভাল লোক। কারণ নুসাইবা কে কিছুদিন ফলো করার কারণে নুসাইবা কে ভাল করে চিনতে পারবে। এয়ারপোর্টে মুন্সীর আর কিছু লোক আছে পোষা। এরা হেল্প করবে একবার এইডেন্টিফাই করলে সবার নজর এড়িয়ে কিভাবে নুসাইবা কে হাতে আনা যায়। মুন্সী নিজেও রওনা দিবে। তবে রাস্তায় যে জ্যাম আসতে একটু সময় লাগবে। মুন্সী ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিল। নুসাইবা কে প্রথমে আইডিন্টিফাই করলেই যেন ওকে ফোন দেয়। আর কিভাবে নানা বাহানা করে ওকে ইমিগ্রেশন পার হতে না দিতে হবে সেই সব। একজন বড় সরকারী অফিসার যে কিনা আবার আরেকজন বড় অফিসারের বউ তাকে এয়ারপোর্টের মত জায়গা যেখানে হাজার হাজার সিসি ক্যামেরা সেখান থেকে হাওয়া করা কঠিন। মুন্সীর প্ল্যান হল ও আসা পর্যন্ত যেন ওর লোকেরা নুসাইবা কে যেভাবেই হোক ইমিগ্রেশন পার হওয়া আটকে রাখে। মুন্সীর কাছে কিছু ইনফরমেশন আছে সেইগুলা ইউজ করলে নুসাইবা হয়ত নিজে থেকেই ওর সাথে আসবে। যদি তার পরেও না আসে তাহলে ব্যাপারটা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ ওশন গ্রুপের কড়া নির্দেশ এমন কিছু করা যাবে না যাতে পত্রিকায় বা টেলিভিশনে নেগেটিভ নিউজ হবার চান্স থাকে। ফলে যা করতে হবে গোপনে। মুন্সী তার নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। এখন ঢাকার পথে ছুটছে গাড়িতে। মুন্সী আবার একটা উত্তেজনা ফিল করে। কে জানে আজকে রাতটা ওর আর নুসাইবার হতে পারে। মুন্সী মনে মনে ভাবে খেলা জমে গেছে।
Like Reply
নুসাইবা যখন পার্সপোর্ট দেখিয়ে ভিতরে ঢুকছে তখন নুসাইবার মনে একটা বড় ধরনের বোঝা নেমে গেল। মনে হল বুঝি একটা বড় বিপদ একটুর জন্য এড়িয়ে গেল। মুন্সী ম্যানেজার আর ওকে ঝামেলা করতে পারবে না। আবার মনের ভিতর একটা খচ খচ করছে। মাহফুজ। মাহফুজ কে নিয়ে ও কি করবে? মাহফুজ কে বেশ ম্যাচিওর ভাবে শক্ত গলায় সিচুয়েশন বুঝানোর চেষ্টা করলেও মাহফুজ কতটুকু বুঝেছে সেটা নিয়ে ওর মনে সন্দেহ হচ্ছে। মাহফুজ যেভাবে ওকে কিছু কথা বলল যদিও এগুলো সত্য কিন্তু সেগুলো বিপদজনক, তাতে নুসাইবার মনে হচ্ছে নির্বাচন শেষ হলেও ওর ঝামেলা বুঝি শেষ হবে না। মাহফুজের চোখে লাইনে দাঁড়ানো যে দৃষ্টি দেখেছে এটা দৃষ্টি ও চিনে। মুগ্ধ নয়নের দৃষ্টি। এটাকী ইনফেচুয়েশন নাকি প্রেম? দুইটাই বিপদজনক। নুসাইবার জন্য, মাহফুজের জন্য। আর আজকে মাইক্রোর ভিতর যে নিয়ন্ত্রনহীন উদ্যোম প্রেম এটাও নুসাইবা কে কাপিয়ে দিয়েছে। নিজেই যেন এই নুসাইবা কে চিনে না। কিন্তু এখন এইগুলা নিয়ে ভাবার সময় নেই। আপাতত আগে দেশ থেকে বের হতে হবে। এরপর বাকি সব। হাতের পার্সপোর্ট দেখিয় ভিতরে ঢুকে গেল। ভিতরেও একটা বেশ বড় লাইন। ঢুকলেই একটা স্ক্যানারে ব্যাগ স্ক্যান করে ভিতরে ঢুকতে হয়। দালালরা এখানেও জটলা পাকিয়ে রেখেছে টাকার জন্য। নুসাইবা অপেক্ষা করে সামনের বাকি লোকেরা নিজেদের ব্যাগ স্ক্যানারে দিলে ও নিজের  ব্যাগ দিবে। লোকজন স্ক্যান করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ছেলে আর মেয়েরা দুইটা ভিন্ন ভিন্ন লাইনে। সবাই কে বডি স্ক্যান করা হচ্ছে। মেয়েদের জায়গাটা একটা পার্টিশন দিয়ে আলাদা করা। নুসাইবার সামনে দিয়ে একজন মহিলা আছে। হাতে থাকা টিকেটের প্রিন্ট আউট হাত থেকে এই সময় পড়ে গেল। নিচু হয়ে তুলে উঠে দাড়াবার সময় চোখ চলে গেল পার্টিশনের পাশ দিয়ে সামনে। দুই তিনজন লোক দাড়িয়ে আছে। দুইজনের হাতে ওয়াকিটকি। গলায় এয়ারপোর্টের স্টাফদের যেমন এক্রিডেশন কার্ড ঝোলানো থাকে তেমন। অন্যজন্যের হাতে বা গলায় কিছু নেই কিন্তু এই লোকের মুখ নুসাইবার নজর কেড়ে নিল। সাইকোলজিস্ট আদিবা রহমানের রুমে দেখা সেই মুখ, যে কিনা ওকে ফলো করে সিংগারের শো রুম পর্যন্ত গিয়েছিল। নুসাইবা যেন সেখানেই জমে যায়। দাঁড়ানো আর বসার মাঝে একটা ভংগিতে তাকিয়ে থাকে লোকটার দিকে। ওরা পার্টিশনের ভিতর থেকে যে যে চেক করে বেড়োচ্ছে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। একজন বেড়োতেই লোকটা না সূচক মাথা নাড়ল। অপর দুইজন কিছু না বলে তাকিয়ে আছে। নুসাইবার মনে পড়ে মাহফুজ ওকে বলেছিল এই লোকটা সম্ভবত মুন্সীর লোক। কারণ ওকে এমনিতেই ম্যানেজারের লোকেরা প্রটেকশন দিয়ে রেখেছিল তাহলে আর কেউ ওকে ফলো করলে সেটা মুন্সীর লোক হবার চান্স বেশি। মুন্সীর নাম মাথায় আসতেই নুসাইবার শরীরের যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেলল। এতদূর এসে মুন্সীর হাতে কোন ভাবেই পড়া যাবে না। মুন্সী যেভাবে যবার সময় একটা কুৎসিত হাসি দিয়ে বলছিল এরপর আবার দেখা হবে আর দেখা হলে বাকিটা উসুল করে নিবে সেইটা ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠল নুসাইবার। মনে হল এয়ারপোর্টের মাটিতেই বমি করে দিবে। লোকটাকে দেখেই ওর মনে হল মুন্সীর হাত যেন ওর শরীরে হাত দিচ্ছে। নুসাইবা মনের ভিতর সব শক্তি এক করে দাড়ানোর চেষ্টা করে। ক্যাপ্টেন অফ মাই সোল, মাস্টার অফ মাই ফেট।

নুসাইবার সামনের মহিলা পারটিশনের ভিতর ঢুকেছে স্ক্যান করেছে। এরপর ওর পালা। নুসাইবা তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেয়। এখন আর সামনে যাওয়া যাবে না। স্ক্যান করানো হলেই ঐদিক দিয়ে বের হতে হবে। আর বের হলেই ঐ লোকের সামনে পড়তে হবে। নুসাইবার মনে কোন সন্দেহ নাই ঐ লোক মুন্সীর লোক। এত কোনইন্সিডেন্স হতে পারে না। সব জায়গায় এই লোক থাকতে পারে না। নুসাইবা পিছনের মহিলা কে  বলে আপনি আগে যান। মহিলা জিজ্ঞেস করে আপনি যাবেন না। নুসাইবা বলে আমি একটা জিনিস ফেলে আসছি বাইরে। আগে ঐটা গিয়ে  নিয়ে আসছি। নুসাইবা হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে যেতে থাকে। গেটের কাছে একজন জিজ্ঞেস করে কই যান। এদিক দিয়ে বের হওয়া যাবে না। নুসাইবা বলে আমি একটা ব্যাগ ফেলে এসেছি। লোকটা বলে সাথে করে পার্সপোর্ট নিয়ে বের হন। আবার ঢোকার সময় লাগবে। নুসাইবা থ্যাংকিউ বলে বের হয়ে আসে। নুসাইবার হাত পা কাপছে। কই যাবে? ওর কাছে ফোন নেই। মাহফুজ কে কিভাবে খুজে বের করবে? বার বার ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাচ্ছে। দরজা দিয়ে কেউ বের হবে কিনা। নুসাইবার মাথায় কিছু ঢুকছে না। কি করবে এখন।


মাহফুজ ঠিক এই মূহুর্তে কি করা যায় ভাবছিল। ওর আসল ফোন বাসায় রেখে এসেছে সোলায়মান শেখের নির্দেশে। যাতে পরে কেউ চাইলেও ওকে এই ঘটনার সাথে ফোন ট্রেস করে কানেক্ট করতে না পারে। ফলে এখন ওর কাছে কার নাম্বার নাই। ওর পরিচিত কয়েকজন লোক এয়ারপোর্ট আছে কিন্তু নাম্বার না থাকলে এইখানে এত দ্রুত কাউকে খুজে বের করা অসম্ভব। ও কয়েকবার ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করল কিন্তু পাসপোর্ট না থাকলে হবে না। টাকা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। মাঝে মাঝে বেশি কড়াকড়ি হয়। আজকে সম্ভবত এমন কিছু হচ্ছে। মাহফুজ এইবার অন্য বুদ্ধি বের করল। মাঝে অনেক দালাল আছে কোন ছুতোয় মানুষের কাছ থেকে টাকা বের করার ধান্দা। যদিও প্যাসেঞ্জারের সাথে আসা লোকেদের ভিতরে ঢুকতে দেয় না সহজে কিন্তু এই দালালরা অবলীলায় আসছে যাচ্ছে। এদের কেউ পাসপোর্ট চেক করছে বলে মনে হয় না। এরা যেন অদৃশ্য সিস্টেমের রাডারে। মাহফুজ এমন একজন কে ধরল। তাকে খুব ভালভাবে বুঝাল কাতার এয়ারওয়জের লাইনে গিয়ে নুসাইবা করিম নামে একজন কে খুজে বের করতে হবে, যাকে গিয়ে একটা কাগজ দিতে হবে। মাহফুজ একটা কাগজে খালি লিখে দিয়েছে মুন্সী নোজ, কাম ব্যাক আউটসাইড। সাইন করেছে খালি একটা এম লিখে। মাহফুজ আশা করছে এই কাগজ দেখলে নুসাইবা বুঝতে পারবে। আর এই লোককে অলরেডি পাচশ টাকার একটা নোট দিয়েছে , কাজ করে দিতে পারলে আর দুই হাজার টাকা দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এই লোক যদি এই পাচশ টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে যায় কিছু করার নেই তবে মাহফুজ এখন ডেসপারেট। যে কোন কিছু ট্রাই করে দেখতে হবে। কারণ যদি মুন্সীর লোকেদের হাতে নুসাইবা পড়ে তাহলে সেখান থেকে ওকে উদ্ধার করা মাহফুজের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। অন্তত কিছু শক্ত পলিটিক্যাল ব্যাকিং না পেলে। যেটা এই মূহুর্তে অসম্ভব মনে হচ্ছে। লোকটা মাহফুজ কে বলল সে ঝড়ের বেগে যাবে আর ম্যাডাম কে খুজে বের করে আনবে। মাহফুজ একটু উদভ্রান্তের মত ভিড়ের মাঝে হাটছে আর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। হঠাত করে মনে হল লোকটার ফোন নাম্বার নিয়ে রাখা হয় নি। ফোন দিয়ে কথা বলা যেত নুসাইবা কে পেল কি পেল না। নিজের উপর রাগ হল মাহফুজের। নরমালি এমন ভুল করে না মাহফুজ। সদা সতর্ক। কিন্তু অনেক সময় বিপদ মাথার স্বাভাবিক চিন্তাধারা উলটে দেয়। মাহফুজ যখন নিজেকে নিজে গালিগালজ করছে মনে মনে ঠিক তখন কেউ একজন পিছন থেকে ওর কাধ ধরে ঝাকি দিল। মাহফুজ বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকিয়ে দেখে নুসাইবা। হাফাচ্ছে। চোখ  গুলো বড় বড়। কপালে ঘামের চিহ্ন। হঠাত করে মাহফুজের মনে হল ওর সারা শরীরে থেকে যেন কয়েক মন ওজন নেমে গেল। মাহফুজ হঠাত করে নুসাইবা কে জড়িয়ে ধরল। ঢাকা শহরের অন্যখানে হলে লোকে চেয়ে দেখত একজন ছেলে একজন মেয়ে কে জড়িয়ে ধরলে। এয়ারপোর্ট এইটা নরমাল ব্যাপার। বিদায় নেবার সময় সবাই সবাই কে জড়িয়ে ধরে। অন্য সময় যেখানে জামাই পাশাপাশি দাঁড়ায় না সেখানে এয়ারপোর্টে বিদায়বেলায় পরিবারের সবার সামনে একে অন্যেক জড়িয়ে ধরে। তাই নুসাইবা মাহফুজের দিকে কেউ তাকায় না। হাজার বিদায় দিতে আসা কাপলের মত ওদের কে আরেকজোড়া কাপল ভেবে নেয় আশেপাশের সবাই। মাহফুজ নুসাইবা কে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় টের পায় নুসাইবা ওকে বলছে মাহফুজ ছাড়। বিপদ হয়ে গেছে। মুন্সী টের পেয়ে গেছে।


নুসাইবা তখন ভিতর থেকে বাইরে বের হয়ে আতংকে হাফাচ্ছে। মুন্সীর হাতে কোনভাবে পড়া যাবে না। আবার এয়ারপোর্ট থেকে কিভাবে বের হবে বুঝতে পারছে না। যেভাবেই হোক একটা কিছু করতে হবে। নুসাইবা হঠাত টের পায় ওর হ্যান্ড লাগেছ রয়ে গেছে ভিতরে স্ক্যানার মেশিনে উঠিয়ে দিয়েছিল। বডি স্ক্যান করার পর নিজের ব্যাগ কালেক্ট করতে দেয়। ব্যাগ ফেলেই মুন্সীর লোকের ভয়ে বাইরে  বের হয়ে এসেছে। তবে ভাগ্য ভাল ওর হাত  ব্যাগ ওর সাথে আছে। এখানে ডলার আর পাউন্ড আছে  বেশ কিছু। অল্প কিছু দেশী টাকা থাকতে পারে। যদি মাহফুজ চলে যায় তাহলে এখান থেকে কোন সিএনজি বা ক্যাব ভাড়া করে যেতে হবে। কই যাবে? নিজের বাসা? প্রশ্ন উঠে না। ভাইয়ার বাসা? ভাইয়াদের বিপদে ফেলা হবে? আর কোথায় যাওয়া যায়? নুসাইবার মাথায় ঢুকছে না কিছু। সময় যাচ্ছে দ্রুত। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নাহলে বলা যায় না মুন্সীর লোকেরা বাইরে চলে আসতে পারে ওর খোজে। এই সময় হঠাত একটা পরিচিত মুখ দেখল ভীড়ের মাঝে। ইতস্তত ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। একপ্রকার ছুটে গেল নুসাইবা ভীড় ঠেলে। দুইবার ডাকল মাহফুজ, মাহফুজ। চারদিকের শব্দে শুনল বলে মনে হয় না। কাধ ধরে ঝাকি দিতেই মাহফুজ উলটা ঘুরে তাকাল। চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি। নুসাইবা কে দেখে সেইখানে প্রথমে বিস্ময় আর এরপর একটা দারুণ হাফছেড়ে বাচার ভংগী উঠে আসল। নুসাইবা যখন মাহফুজের মুখ ভংগী ডিকোড করছে তখন কিছু বুঝে উঠার আগেই মাহফুজ ওকে জড়িয়ে ধরল। কি শুরু করল ছেলেটা? মনে মনে ভাবে নুসাইবা। কামের তাড়নায় কি একবারে পাগল হয়ে গেল? এইভাবে সবার সামনে ওকে জড়িয়ে ধরার মানে কি। আর অনেক দরকারী কাজ বাকী। মুন্সী খুজে পেলে ওদের জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে। তাই নুসাইবা বলে মাহফুজ ছাড়। বিপদ হয়ে গেছে। মুন্সী টের পেয়ে গেছে।


মুন্সীর নাম মাহফুজ কে আবার সচেতন করে তুলে। বেশি সময় নেই। এখনি এখান থেকে বের হওয়া দরকার। মাহফুজ নুসাইবা কে বলে তাড়াতাড়ি চুলুন, এই বলে গাড়ির দিকে দুইজন হাটা দেয়। নুসাইবার হাত মাহফুজের হাতে। নুসাইবা কিছু বলে না। এই ভীড়ের মাঝে মাহফুজ ভীড় ঠেলে এগুচ্ছে আর নুসাইবার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে উঠার সময় জিজ্ঞেস করল আপনার ব্যাগ? নুসাইবা বলল ভিতরে রয়ে গেছে। মাহফুজ বলল আর আনার সময় নেই। চলুন। পরে বাকি সব ব্যবস্থা করা যাবে। নুসাইবা মাহফুজের গাড়ি যখন এয়ারপোর্টের র‍্যাম্প থেকে নিচে নামছে ঠিক তখন মুন্সীর গাড়ি এসেছে থেমেছে এয়ারপোর্টে। দাবার বোর্ডের শক্তিশালী দুই ঘুটির একটুর জন্য দেখা হল না।



(বাকি অংশ পরের পৃষ্ঠায়) 
Like Reply
পড়া শুরু করলাম। শেষ করে অনুভূতি জানাচ্ছি।
Like Reply




Users browsing this thread: 10 Guest(s)