Thread Rating:
  • 139 Vote(s) - 3.73 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
Waiting for next
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
উনি আবার নিশ্চয়ই ওনার হেমন্তের অরণ্য তে নিরুদেশ হলেন
[+] 1 user Likes Amidevil's post
Like Reply
দিনভর যে তীব্র দাবদাহ গেছে, তার পরিণতি রাতে অমন বৃষ্টি আর বিদ্যুতের ঝলকানি। শম্ভু দোচালায় শুয়ে রয়েছে চিৎ হয়ে টালির চালের দিকে চেয়ে। মাটির ঘর ওর। পাশ ফিরলে শব্দ হয়। একচালার ছাদ কেঁপে ওঠে। রমাও জেগে। পিকলুকে পাশে নিয়ে শুয়েছে সে।
দুজনার চোখে নিদ্রাহীন এক অস্বস্তি। পুরুষ মানুষ শম্ভু, রমার মত ফর্সা, ভরাট চেহারার চল্লিশ ছুঁই রমণীকে আজ সে বুড়ো শিবকে সাক্ষ্য রেখে বিয়ে করেছে। অথচ আজও সে একা। শরীরের প্রতিটি রোমকূপে কামবাসনা উদ্বেলিত, তবু সে ছুঁতে পারবে না রমাকে। এ নাটকের বিয়েটা একদিন নাটকীয় ভাবে ভেঙে যাবে, রমা দিদিমণি চলে যাবে তার আসল স্বামীর বাড়িতে। দিদিমণির স্বামীটি অনেক পন্ডিত মানুষ, গাড়ি নিয়ে নাকি আসে, একথা শুনেছে শম্ভু। দিদিমণিরও তো অনেক পড়াশোনা, শম্ভুর জীবনে এ হেন রমা মৈত্রের প্রবেশ যে নিছকই অবাস্তবোচিত খোশখেয়াল, সে বিষয়ে শম্ভুর বোধ আছে।
দো চালার ঘরে দিদিমণি আসেনা, ঝাঁপির ভেতর পোষ্যদের ফোঁস ফাঁস শব্দ, বাইরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি, বজ্রবিদ্যুৎ, চুঁইয়ে পড়তে থাকা চালের জল এসব নিয়ে এই ঘরের কোনো বদল হয়নি। এ ঘরে এখনো শম্ভু তার বিড়ি ধরানো লাইটার দিয়ে লম্ফ জ্বালায়। জানলা দিয়ে বাতাস আসে। গরান গাছের ডালা এসে টালির চালে ঘষা খায়। এ ঘর এখনো শম্ভুটির।
নীচের চালাটি রমার হাতে বদলে যাওয়া সংসারী প্রাণবন্ত যেন। একপাশে আলাদা করে গ্যাস স্টোভ, চকচকে রান্নার বাসন সরঞ্জাম, মশলা বাটার মেশিন। আরেক পাশে নরম ম্যাট্রেস বিছানা, ছাপা পরিচ্ছন্ন বিছানা চাদর নরম দু'খান বালিশ, স্ট্যান্ড ফ্যান, ইলেট্রিক বাল্ব, পূর্ব পশ্চিমে দেয়াল জুড়ে বাঁধা, নাইলন দড়িতে গোছানো পাটে পাটে দিদিমণির শাড়ি ব্লাউজ, আড়াল থেকে উঁকি দেওয়া লুকোনো কালো, সাদা ব্রেসিয়ার।

এই দুই চালার ফারাকই যেন শম্ভুর চোখে দীপ্যমান; তার আর দিদিমনির জীবনের ফারাক, তাদের মিথ্যে বিয়ে, নকল দাম্পত্য। দিদিমণি কোনোদিন এ চালায় আসবে না। দিদিমণি সত্যিকারে তার বে করা বউ হলে এই চালাই হত তার আর দিদিমণির শোবার ঘর। ঠিক যেমন তার বাপ তার মাকে গভীর রাত্রি পর্যন্ত জোড় লাগাতো, তেমন শম্ভুও আজ রাতে এই তেলচিটে তক্তপোষে...। ভাবতেই গায়ে শিহরণের কাঁটা বিঁধতে লাগলো শম্ভুর। গোলাপিকে সারা রাত সে ইচ্ছে মত নিয়ে খেলেছিল একরাতে। মেয়েটা যত সময় যাচ্ছিল সহ্য করতে পারছিল না শম্ভুকে। শম্ভুও তখন বুভুক্ষু বাঘ, রাত্রি এগারোটা থেকে যে দখল নিয়েছিল, একটা পর্যন্ত সে নিস্তার দেয়নি তাকে। গোলাপির শরীরটাকে ওলট পালট করে বাপ ভীমনাগের মত আসুরিক কায়দায় ভোগ করেছিল শম্ভু। একসময় গোলাপির কোনো অনুনয় বিনয় কানে যাচ্ছিল না ওর। যৌনতার সময় যেন অসুর হয়ে উঠেছিল সেদিন। ভালো মন্দ বোধ থাকে না, শুধু হিংস্র ক্ষুধা তার মস্তিষ্কের নিউরোন জুড়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। শরীর যে তার বড় কঠোর, ভীষন উগ্র তার যৌবনের কামলোলুপতা।
শম্ভু বেদে তার এ হেন কামক্ষমতাকে নিজেই ভয় পায়। সেদিন তার কাছে মনে হয়েছিল গোলাপি একটি খেলার পুতুল মাত্র। তাকে যেভাবে ইচ্ছে সে নিয়ে খেলবে। সেই উদ্দাম খেলায় গোলাপি যে তার অসম, বুঝে উঠতে পারেনা শম্ভু। বাপ ভীমনাগ তার মা কমলাকে নিয়ে ঠিক এভাবেই খেলত যে। সেই খেলায় ছিল ভীমনাগের আধিপত্য, কমলা ভীমনাগের তীব্র আধিপত্যে সারারাতের খেলার পুতুল হতে আনন্দ পেত। খেলা শেষে ভোর রাতে বীর্য, ঘাম, লালা, স্তনদুধে মাখামাখি হয়ে যখন কমলা স্বামীর চওড়া বুকে বিশ্রাম নিত, তখন কমলার মুখমন্ডলে ফুটে উঠত ইহজগতের সবচেয়ে তৃপ্ত নারীর প্রতিবিম্ব।
কোনো কোনো নারী দুর্বল, তারা পুরুষের দাসী হতে পারে, ঘর সংসার সামলাতে পারে। কিন্তু সঙ্গিনী হতে পারে না। বিশেষ করে শম্ভুর মত বলিষ্ঠ যুবকের। গোলাপি তেমন মেয়ে। আবার কোনো কোনো নারী উগ্র যৌনচাহিদা সম্পন্না হয়। যৌনতা ছাড়া তারা কিছুই পারে না, বোঝে না। তবে রমা দিদিমণিটি এই দুয়ের চেয়ে একেবারে ভিন্ন। শম্ভু ঠারে ঠোরে রমাকে পর্যবেক্ষণ করে। বনেদী শিক্ষিতা রমা মৈত্র তার সম্রাজ্ঞী। যেমন শালীন নম্র, তেমন ব্যক্তিত্ব, তেমন লাবণ্য, তেমন সংসারী। না দেখা দিদিমণির স্বামীটির প্রতি ঈর্ষা হয় শম্ভুর। মনে মনে ভাবে ষষ্ঠীপদর কাছে শোনা দিদিমণির স্বামী কলেজের মাস্টার, প্রচুর পান্ডিত্য রাখে, দিদিমণির স্বামী হবার উপযুক্ত কি আর তার মত ময়লা গায়ের অশিক্ষিত বেদে হবে!


শম্ভুর এক রাতের বে করা গোলাপি কিংবা উগ্র যৌনগ্রাসী কামবতী নারী ছাড়াও আরেক প্রকার নারী হয়, শম্ভুর মত পুরুষরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারে না। সে কারণে তারা এমন নারীদের সম্পর্কে অজ্ঞাত। এই নারীদের ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা আর শিক্ষা-দীক্ষার আড়ালে অত্যন্ত গভীর অবচেতনে থেকে যায় সুপ্ত আগুন। যে আগুন নেভাতে তার শরীরও আকাঙ্খা করে একজন শক্ত সমর্থ পুরুষ, তেজি ঘোড়ার মত। সেই পুরুষ যে সবসময় শক্ত সবল দীর্ঘকায় হবে এমন কথা নেই, সেই পুরুষ হতে পারে প্রবল বুদ্ধিদীপ্ত, হিউমার সম্পন্ন একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। যে তার শরীর দিয়ে না পারুক, মেধা দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে যেন স্ত্রীটির ওপর। যেমনটি পীযুষ রমার কাছে। একজন সু শিক্ষিতা নারীও আকাঙ্খা করে পুরুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে, নারীকে সেই পুরুষটির দেহ কিংবা তার বুদ্ধিবৃত্তিকতা, ধী শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্য হয়ে উঠতে হয়। পীযুষ রমার আদর্শ স্বামী সেক্ষেত্রে।

শম্ভুর দো চালার নীচে একচালার ঘরে শুয়ে আছে রমা, পাশ ফিরে, চোখ খোলা। সেক্স সব সময় শারীরিক নয়, সেক্স ভালোলাগা আদর্শ পুরুষটিকে নিজের করে নেওয়ারও তৃপ্তি হতে পারে। এমন ঝড় বৃষ্টির রাতে রমারও তো ইচ্ছে হয়। পীযুষ আর তার সতেরো বছরের দাম্পত্য পরে অনিয়মিত যৌনসঙ্গমে হয়ত সবটা ঠিক সময়ে হয় না, তবু পীযুষ বুঝতে পারে, রমার কোন জায়গাটা বেশি স্পর্শকাতর, কখন ভারী ইচ্ছে হয়, এসব। সত্যিই আজ রমার ইচ্ছে করছে এমন ঝড় বৃষ্টির রাতে এই অরণ্যশঙ্কুল প্রকৃতিতে মাটির ঘরের এমন রোমাঞ্চকর মুহূর্তে পীযুষের বুকে সেঁধিয়ে যেতে, দুজনের ঠোঁট মিশিয়ে চুমুতে মেতে উঠতে সদ্য যৌবনার মত। নতুবা পীযুষকে আদর করে ওর হাতে তুলে দিতে তার স্পর্শকাতর দুটি স্তন।

শম্ভুর অস্থিরতা তাকে আজ ঘুমোতে দেবে না। উঠে বসল সে। ঝাঁপিগুলো দেখে নিল সব ঠিকঠাক আছে কিনা। ঠোঁটের ফাঁকে বিড়ি চেপে ধরে আগুন ধরাতে গিয়েও আটকে গেল, এক চালায় রমার পাশ ফেরার শব্দে। সিঁড়ির কাছে ছায়ামূর্তির মত দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো রমাকে। লাল ব্লাউজ গায়ে রমার ফর্সা কোমল পিঠ শম্ভুর দিকে, চুলের দীর্ঘ বেণী তার ওপর দিয়ে পড়েছে বিছানায়। কি করবে এখন শম্ভু? ইচ্ছে করছে এখুনি দিদিমণির পেছনে শায়িত হয়ে চুমু দেবে পিঠে, লেহন করবে দিদিমণির নরম শুভ্র সর্বাঙ্গ, মুচড়ে ধরবে স্তনটাকে।

সরে গেল ছায়ামূর্তি, শম্ভু কি জেগে? এতক্ষণ কি ও রমাকে গোপনে পর্যবেক্ষণ করছিল, নাকি ভ্রম! রমা ঘুরে পড়ে দেখল; না, কেউ তো কোথাও নেই! আলতো করে ছিপি খুলে বোতল থেকে গলায় জল ঢালল। পিকলুর পিঠে হাত রেখে বুলোতে বুলোতে ঘুমোবার চেষ্টা চালাল ও।

শম্ভুর হাত চলছে অনবরত। গমগমে শব্দে বাজ পড়ছে। শায়িত দেহ হতে লুঙ্গি সরে গেছে দুই উরুর পাশে। হাতে মুঠিয়ে ধরা খাড়া দানবটাকে, ওপর নীচ করে খান্ত না করতে পারলে আজ আর ঘুম আসবে না শম্ভুর। কল্পনার চোখে তার কামদেবী রমা দিদিমণিটি নৃত্যরত, তার ভারী স্তন, পেটের ভাঁজ, মুখমন্ডলের মিষ্টি ব্যক্তিত্বময়ী হাসি সবটাই শম্ভুর কামবাসনার তীব্র গোপন লোভ। হস্তমৈথুনে কেঁপে উঠছে এই বেদে যুবকের বিশাল দেহ, ফোয়ারার মত বার করে দিতে হবে সমস্ত ঔরস এই ঝড় বৃষ্টির রাতে। তবেই শান্তি মিলবে শম্ভুর। তা নাহলে সে ভুল করে ফেলে যদি, ধর্ষকের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে যদি দিদিমণির ওপর! না, সে তা করতে পারে না। তাকে সংযত থাকতেই হবে, প্রয়োজনে এই আত্ম মৈথুন করে।
Like Reply
পর্ব ৮

নদীর পাড়ে একরত্তি ডিঙি নৌকাটা বাঁধা। তার ওপরে কাঠ আর ত্রিপলের খোল। রাত বিরেতে মাছ ধরতে বেরোলে ওর ভেতরে দুজনের থাকার জায়গা হবে কোনোক্রমে। ষষ্ঠীপদ আর শম্ভু এই খোলেই কত রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইচ্ছে হলে দিশি মদের বোতল এনে নেশা করেছে। শক্ত পাটাতনের ওপর বসে রয়েছে শম্ভু। বিকেল গড়িয়ে পড়ছে খানিক। পিকলুকে ধরে ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করছে ও। পিকলু আগের চেয়ে এখন খানিক সবল। তবে পায়ে পায়ে হাঁটায় এখনো দুর্বল। শম্ভুই ওকে ধরে হাঁটায়, না পারলে পাঁজাকোলা করে বাড়ি আনে।

আজও পাঁজাকোলা করে পিকলুকে নিয়ে এসেছে শম্ভু। রমার খেয়াল হল সেই যে বেরিয়েছে ওরা এখনো ফেরেনি। সন্ধের আবছা অন্ধকারে ও দেখতে পাচ্ছে নৌকায় বসে রয়েছে ওরা দু'জনে। রমা কাছে যেতেই শুনতে পেল পিকলুর অনুসন্ধিৎসু মনের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে শম্ভু। এই নদীর উৎস কোথায়, সুন্দরবনের কোথায় কোথায় নদী আছে, নদীতে কুমির দেখা যায় কিনা, শম্ভু আঙ্কেল দেখেছে কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। শম্ভু নিরন্তর সবকটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছে ওর, কোনোরকম বিরক্ত না হয়ে।
রমা হেসে বললে---শেষ হল তোমাদের দুজনের গল্প? এদিকে যে সন্ধে নামছে!

শম্ভু বললে---দিদিমণি যাবেন লা কি নদীরে?

---ওমা! এই সন্ধে বেলা? না না। পরে একদিন।

শম্ভু ঠাট্টা করে বলল---সন্ধ্যা বেলা লা হইলে, চড়া রোদে বাইর হতে হবে। তখুন দিদিমণির রঙটা চইটে যাবে লা কি। সার আইলে কি কৈফিয়ত দিব।

রমা ঈষৎ হেসে বললে---আমি কিন্তু শম্ভু; এমন নয়। স্কুল-কলেজে পড়বার সময় থেকে আমাকে রোদ জলে বেরোতে হয়। আজও কিন্তু ঘর সংসারের কাজে আমাকেই রোদে বের হতে হয়। তোমার স্যারটি মাঝে মধ্যে ফুলবাবু হয়ে যান কিনা।

শম্ভু মুচকি হাসলো। বলল---সে ঠিক কুথা। কিন্তু দিদিমণি আমার ভাল্লাগবে লাই, যদি দিদিমণির ফর্সা রঙটা চইটে যায়। চলেন দিদিমণি, সন্ধ্যা বেলাটা ঘুইরে আসি। পিকলু বাবুরও মনটা ভালো লাইগবে।

---আমার বড্ড ভয় লাগে। কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে দেখো!

হা হা করে হেসে উঠল শম্ভু। বললে---শম্ভু বেদে যতুক্ষণ আছে ভয়টা কইরবেন লাই দিদিমণি। কি পিকলু বাবু যাবে লা কি?

অনিচ্ছাস্বত্বেও কার্যত শম্ভু আর পিকলুর জেদাজেদিতে নৌকায় উঠল রমা। বৈঠা মেরে শম্ভু এগোতে লাগলো নদী বক্ষে। সন্ধে নামছে, নদীর জলে চাঁদের আভা। অসহ্য একটি আবেগ মদির আবহাওয়া। মৃদু বাতাসে নৌকা একাই এগোচ্ছে এখন।
শম্ভু বললে---দিদিমণি ডর লাইগছে লা কি?

---ধ্যাৎ! লাজুক মুখে হেসে ফেলল রমা।

গোটা নদী আর আকাশ যেন মিলেমিশে ঘনায়মান। সেখানে চাঁদ আর শম্ভুর ডিঙ্গির অস্তিত্ব ছাড়া সব কিছু বিলীন। পিকলুর নজর পড়ল আরেকটি নিঃসঙ্গ পাখির দিকে। অমনি বলে উঠল---শম্ভু আঙ্কেল, দেখো রাতের বেলা পাখি। কি নাম ওর?

শম্ভু নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে রইল মুক্ত বাতাসে। বললে---রাতচরাটা আছে। আমার মত একলা।

---তুমি বুঝি এখন একলা? রমা ওর দিকে না তাকিয়ে নদীতে হাত ডুবিয়ে জল নাড়তে নাড়তে বলল কথাটা।

শম্ভু দিদিমণির দিকে আবেশে তাকালো ক্ষণিক। মেরুন শাড়ি, তার সাথে কালো ব্লাউজ, চাঁদের আলোয় ফর্সা গায়ের আভা যেন আরো উজ্জ্বল। জল থেকে হাত তুলে গলার সুক্ষ পাতলা সোনার চেনটা হাতে নিয়ে খুঁটখাঁট করতে করতে রমা পুনরায় বললে---আমরা তো আছি এখন। আমি, পিকলু, ষষ্ঠী, বুলি, বুলির মা। এতজন তোমার চারপাশে। তাহলে কেন তুমি একলা বোধ করছ।

শম্ভুর ইচ্ছে করছিল মজিদ চাচার মত গান ছাড়তে। কিন্তু ও যে গান পারে না। গম্ভীর পুরুষালি গলায় একটা বিরাট বিষণ্নতার ঢেউ ভেঙে বললে---ই এখুনটা লয়। ক'টা দিন পরে যখুন আপনারা চইলে যাবেন, তখুন শম্ভুর কে খেয়াল রাইখে? দিদিমণি রাইখবেন আমার খেয়াল?

হঠাৎ মুখ ফস্কে বলার পর শম্ভু বুঝতে পারলো আলগা একটা কথা বলে ফেলল ও। দ্রুতই কথার বদল আনতে বললে---আজ দ্বাদশী লা দিদিমণি?

----কখন ফিরব আমরা? রমা খুব স্নিগ্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করল।

শম্ভুর মনে হল সে বোধ হয় আঘাত দিয়ে ফেলল দিদিমণিকে। তবু সে চায়, যতক্ষণ বেশি এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে। বলল---ই নদীরে খানিক পরে উজান আইসবে। তখুন ফিইরব আমরা।

খানিক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। পিকলু মায়ের দেখা দেখি জলে হাত ডুবিয়েছে। শম্ভু সাবধান করে বলল---হাত ডুবাও লাই পিকলু বাবু। ঘড়িয়াল থাইকতে পারে।

রমা অবশ্য অনেক আগেই জল থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছে। ভয় পেয়ে ও পিকলুর হাতটা টেনে সরিয়ে নিল। এখন অদূরে সুন্দরবনের অরণ্য দেখা যায়। দুরান্ত একটা ডিঙি নৌকায় আলো জ্বলছে। শম্ভুও খোলের ভিতর লম্ফটি জ্বেলে ফেলতে যেতেই রমা বললে---থাক না। চাঁদের আলোয় তো ভালোই লাগছে।

শম্ভু আলোটা জ্বেলেও নিভিয়ে ফেলল। রমা পুনরায় বলল---শম্ভু তুমি যে সেদিন বলেছিলে, তোমরা নাকি নদীতে গান গেয়ে বেড়াও।

লাজুক হেসে শম্ভু বললে---আমি গান গাতে পাইরি লাই। মজিদ চাচা বইলে রসুলপুর ঘাটের একজন মাঝি আছে, সে গান গায়।

রমা তাকিয়ে রইল নদীর আগত উজানির দিকে। পীযুষ খুব ভালোবাসতো রমার গলায় এই গানটা। মনের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরেই গুনগুন হচ্ছিল তার। এবার ইচ্ছে হল তার দু' কলি গাইবার। আসলে রমা নিজের ইচ্ছায় খুব কমই গান গায়। অনেকটা পীযুষের কিংবা কলেজে বান্ধবীদের জোরাজুরিতে তাকে গাইতে হত। স্কুলে পড়বার সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত আর নজরুল গীতি শিখেছিল তার এক পিসতুতো দিদির কাছে। সেটুকুই যা শেখা। তাতেও রমা গানটা বেশ ভালোই গায়। উরুরু উপর তাল ঠুকতে ঠুকতে গেয়ে উঠল---
''আমাকে যে বাঁধবে ধরে, এই হবে যার সাধন
সে কি অমনি হবে।
আমার কাছে পড়লে বাঁধা সেই হবে মোর বাঁধন..."

গান শেষ হতেই পিকলু বললে---ঐ দেখো মা, জাহাজ বোধ হয়।

শম্ভু বললে---অনেক দূরে আছে। জাহাজ লা বাবু। লঞ্চ আছে। মাছ ধইরবার লিয়ে গাঙে চলে যায়।

---কেন এর আগে তুই লঞ্চ দেখিসনি? ওমা! গঙ্গাতেই তো দেখেছিস।

পিকলু তাৎক্ষণিক স্মৃতিচারণ করে বলল---ও আচ্ছা। বুঝেছি।

শম্ভু নৌকাকে বৈঠা মেরে ঘোরাতে ঘোরাতে বললে---দিদিমণি এত সুন্দর কইরে গান গাতে পাইরেন, ইটা শুনে মনে হয় রবীনন্দরনাথ ঠাকুরের লা?

রমা বিস্মিত হয়ে বললে---তুমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চেনো?

শম্ভু লজ্জা পেল। বলল---তারে কে লা চিনে? ইস্কুলে দু কেলাস পইড়েছি, সহজ পাঠ ছিল। আমার মা চার কেলাস পইড়েছিল তখুন কার দিনে। মা বইলতো রবীন্দরনাথ ঠাকুরের গানে লা কি মা পেরাইমারী ইস্কুলে লেচে ছিল। ইখানে সরবেড়িয়া হাটে দুগ্গা মায়ের পূজায় মাইকে সারাদিন রবীন্দরনাথ ঠাকুরের গান হয়। ই রকমই সুর, আপনি যেমনটা গায়লেন।

হাসল রমা। রবীন্দ্রনাথ যে বিশ্ব কবি। বাংলার ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো না পৌঁছাক, রবীন্দ্রনাথ পৌঁছেছে জেনে ভালো লাগলো রমার। বললে----শম্ভু, তুমি আর পড়াশোনা করলে না কেন?

----কইরতে যে ইকেবারে মন চায় লাই তা লয়। বেদের ব্যাটা ইস্কুলে গেলে, তখুন ছিলাপিলা ডরতো। বইলত বাক্সে সাপ আছে। বেদে বইলে এই ষষ্ঠী ব্যাটা ছাইড়া আর কেউ মোর পাশে বসত লাই। একদিন মণ্ডল পাড়ার ইকটা ছিলের সাথে জাত লয়ে লড়াই লাইগল। মাইরে মুখ ফাইটে দিয়েছিলাম। তাতেও রাগ মিইটে লাই, ঘর থিকা ঢেমন সাপ লয়ে কেলাসে ছেড়ে দিলি। ব্যস, নালিশ আইলো ঘরে। বাপ বইল আর তুরে পড়তে হবে লাই। ছোট বেলাটায় বহুত রাগ ছিল মোর।

রমা শম্ভুর শৈশবের গল্প শুনে হাসি থামিয়ে বলল---রাগ তো তোমার এখনো কম নয়। সেদিন তো ঐ গ্রামের লোকগুলো যখন খারাপ খারাপ কথা বলছিল, তখনও তো দেখলাম, কেমন রাগ; বাব্বা!

----শম্ভু আঙ্কেল তুমি তো এখনো পড়াশোনা করতে পারো। আমাদের কনস্টিটিউশনে রাইটস আছে এডুকেশন ফর অল।

পিকলুর ইংরেজী শুনে ঘাবড়ে গেল শম্ভু। ক্লাস এইটের হিস্ট্রিতে কনস্টিটিউশন একটা অধ্যায় আছে। পিকলু ওটা পড়েছে। তাই ও যা পড়েছে তার ভিত্তিতেই কথাগুলো বলল শম্ভুকে। রমা শম্ভুর অবুঝ মুখটা টের পেয়ে বললে---ও বলছে আমাদের দেশে সকলের পড়ার অধিকার আছে। তাই তুমি আবার পড়াশোনা করতে পারো।

শম্ভু হেসে উঠে পিকলুর পিঠ চাপড়ে বললে---পিকলু বাবু, আমার এখুন বত্রিশ বছর চইলছে। এখুন আমি তুমার মত ইস্কুল যাবো?

পিকলু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, রমা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল---থাক, তোকে আর পাকামি করতে হবে না।

নদীর পাড়ে ডিঙি ভিড়ল যে জায়গাটা; সেটা ঘাট থেকে খানিক দূরে। প্রথমে শম্ভু নেমে গেল। দড়ি দিয়ে গরান গাছটার সাথে শক্ত করে বাঁধলো ডিঙিটাকে। তারপর হাত বাড়িয়ে দিল রমার দিকে। শম্ভুর হাতে প্রথম স্পর্শ রমার। শম্ভু টের পাচ্ছে ভীষন নরম মোলায়েম এই হাত। সারা শরীর ভীষণরকম কেঁপে উঠছে তার। ফর্সা রমণীর কোমল স্পর্শে তার ত্রিশ পেরোনো কঠোর যৌবনে উত্তাপ খেলে গেল এক ঝটকা। তারপর ও পিকলুকে কোলে করে ডিঙি থেকে বার করে এগোতে লাগলো দোচালা ঘরের দিকে।
[+] 10 users Like Henry's post
Like Reply
ঘরের কাছাকাছি আসতে রমার নজর পড়ল অন্ধকারে দাঁড়ানো ছায়ামূর্তির দিকে। ছায়ামূর্তিটি লতার। রমারা কাছে আসতেই ও বলল---দিদিমণি, পিঁয়াজ হবে, সেজন্য এয়েসেছিলি।

রমা নরম সুরে বলল---দিচ্ছি, লতা।
শেকলটা খুলে ও ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। অন্ধকার হাতড়ে সুইচ খুঁজে বাল্বটা জ্বেলে দিল। শম্ভু পিকলুকে বিছানায় শুইয়ে দিল তখন। রমা যখন লতাকে পেঁয়াজ দিতে গেল, স্পষ্টতই ও দেখল লতার চোখে একটা জ্বলন্ত ঈর্ষা। এই ঈর্ষা যে আসলে তার গোপন কামনা বাসনার পুরুষ শম্ভুর সাথে রমাকে নিয়ে ভ্রান্ত চিন্তা থেকে সেটা রমা বুঝতে পারে। কিছু বলার আগেই লতা বললে---দিদিমণি, তোমরা নদীরে ঘুরতে গিয়েছিলে গো?

রমা মিষ্টি করে হেসে বললে---হ্যা। তুমিও যেতে পারতে। ভারী সুন্দর নদী তোমার এখানে।

লতা কোনো উত্তর দিল না। রমার আড়াল থেকে উঁকি মেরে দেখতে লাগলো একবার শম্ভুকে। তারপর চলে গেল ও। রমা ঘরের মধ্যে এসে রান্নার জন্য সরঞ্জাম রেডি করতে লাগলো। শম্ভু ততক্ষণে পিকলুর দুটো পায়ে তার চিকিৎসার ভেষজ তেল দিয়ে মালিশ করতে ব্যস্ত। নদীর বুকে বাতাস হলেও ঘরটায় কেমন গুমোট হয়ে আছে। স্ট্যান্ড ফ্যানটা পিকলুর বিছানার কাছে। রমা যেখানে রান্না করে সেদিকটা বেশ গরম। তাছাড়া রান্নার উত্তাপে ও ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে যায়।

শম্ভুর ভালো লাগে ঘামে ভেজা কর্মব্যস্ত রমাকে দেখতে। গোপনে গোপনে ও প্রায়শই দেখে রমার ফর্সা পিঠে চাপ চাপ ঘাম, গলার কাছে ফিনফিনে সোনার হারটা চিকচিক করছে ঘামে ভিজে। কালো ব্লাউজেও স্পষ্ট বগলের কাছে ভেজা ঘামের দাগ। কাঁধের কাছে উঁকি দিচ্ছে সাদা ব্রায়ের স্ট্র্যাপ। শম্ভুর চোখ ঘোলাটে হয়ে ওঠে। মনের গোপনে তখন সে পশু হয়ে ওঠে। ক্ষুধার্ত পশুর মত চাহুনিতে তীব্র লোভ আর হিংস্রতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। আড়াল থেকে একটু সুযোগ খোঁজে ব্লাউজে ঢাকা রমার পুষ্ট বুকের ওঠানামা দেখতে। ভাগ্যিস ও ভেতরে আন্ডারওয়ার পরে আছে। তা নাহলে নিমেষেই রমার সামনে ওর নির্লজ্জ্বতা প্রকাশ পাবে।

সরবেড়িয়া বাজার থেকে সেদিন একজোড়া সস্তার আন্ডারওয়ার কিনে এনেছিল শম্ভু। এমনিতে একা ঘরে থাকলে তার সেসবের বালাই নেই। কিন্তু যখন ও বাইরে যায়, সাপ খেলা দেখাতে, জড়ি বুটি বেচতে শহর মফঃস্বলে যায়, তখন ভেতরে জংলী ছাপছাপ বা চেক কাটা ঢিলে আন্ডারওয়ারটা পরে রাখে। ওর পকেটেই ও পয়সা রাখে। ভেতরে তখন উত্তেজনা দুর্দমনীয়। শম্ভুর ভয় হয়, শুধু চেহারায় ও তাগড়া দীর্ঘদেহী যুবক যে তা নয়, তার পাশাপাশি মনের মধ্যেও ও একটি পাশব নেকড়ে। যৌবন আর যৌনতাকে দমন করে সে তার নকল বিয়ের সঙ্গিনী এই বনেদী চল্লিশ কোঠা ছুঁই নারীর প্রতি সদয় হয়ে থেকেছে। গোপনে ভালোবেসেছে দিদিমণিটিকে, ব্যক্তিত্ব, লাবণ্য, সম্ভ্রান্ত বনেদিয়ানায় রমাকে দেবীর আসনে বসিয়েছে শম্ভু। কিন্তু এসবই আবার যেন শম্ভুর মনের মধ্যে একটা অদম্য বাসনার জন্ম প্রতিনিয়ত দেয়, যা তার নিঃসঙ্গ যুবক দেহমনের গোপন পাশবতাকে উস্কানি দেয়। তখন ইচ্ছে হয়; এখুনি ঝাঁপিয়ে পড়তে দিদিমণিটির ওপর, বাঘের মত ছিঁড়ে খুঁড়ে খেতে সারা রাত ব্যাপী জিরিয়ে জিরিয়ে।

পিকলুর পায়ে তেল মালিশের কাজ শেষ। লুঙ্গির মধ্যে ঠাটিয়ে আছে শম্ভুর পুরুষাঙ্গ। এখন উঠে পড়লেই নজর আসবে রমার। শম্ভুর ঐ অঙ্গটি এমনিতেই ওর দেহকাণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্ৰকান্ড। আন্ডারওয়ারও নির্লজ্জ্বতাকে আড়াল করতে পারবে না। বসেই রইল ও। রমা রান্না করতে করতেই ওর সাথে নানা কথা বলতে লাগলো। শম্ভু অবশ্য স্বল্প কথায় হুঁ হাঁ জবাব দিয়ে যাচ্ছে কেবল। ভর সন্ধেয় শরীরে এমন দাবানল জ্বললে তাকে নামানো শক্ত। ইচ্ছে করছে এখুনি গ্যাস স্টোভের সামনে বসা তার দিদিমণিটিকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে যাবে দোচালার ঘরে। ইচ্ছেমত রমন করবে, চেঁটে চেঁটে খাবে দিদিমণির সুগন্ধী সাবান মাখা পরিচ্ছন্ন শরীরে এই মুহূর্তে জমে যাওয়া চাপ চাপ ঘাম। কিন্তু এসবই তার মনের পাশব ইচ্ছা, তার বাইরেও শম্ভু বেদের একটা বিরাট সংযম আছে। যে সংযমতার কারণে ও ষষ্ঠীর ছোট্ট মেয়ে বুলির মুখের দিকে চেয়ে লতাকে পরিত্যাগ করেছে, যে সংযমের কারণে ওর শ্রদ্ধেয় দিদিমণিটিকে ও যে রানীর আসনে বসিয়েছে তার চেয়ে নীচে নামাতে পারে না।

কিন্তু শম্ভু যে বাঘের মত। সংযম যে কখন হিংস্র সত্বায় রূপান্তরিত হয় তা নিয়ে সে দ্বিধায় থাকে সর্বক্ষণ। এখন তাকে থামতেই হবে, এই মুহূর্তে তার পাশব চাহিদার ভাবনার কালো জগতে দিদিমণিকে কল্পনা করে, স্ফীতকায় দানবটিকে হাতে নিয়ে খান্ত করা দরকার। কিন্তু এখন রমা রান্না করছে, পিকলু জেগে আছে, দোচালার চালে গিয়ে এখুনি হস্তমৈথুন করা যাবে না। তাকে দমন করতেই হবে।

এর মাঝে রমা চা দিয়ে গেল শম্ভুকে। শম্ভু সুযোগ বুঝে চায়ের কাপ নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে উঠোনে। নিস্তার পেল সে। বাইরে বাতাসটা ছাড়ছে খানিক। বিদ্যুৎ চালিত ফ্যানের বাতাস ভালো লাগে না শম্ভুর। তার ভালো লাগে নদীবক্ষ হতে বয়ে আসা সুন্দরবনের বন্য বাতাস।

ভাতটা বসিয়ে চায়ের কাপ হাতে শম্ভুর পাশে এসে দাড়ালো রমা। উঠানের অন্ধকারে টের পাওয়ার সম্ভাবনা নেই লুঙ্গির আড়ালে শম্ভুর উরুসন্ধির কাছে উত্থিত লিঙ্গটিকে। বরং রমাকে নিকটে পেয়ে শম্ভুর ভালো লাগছে।
বড্ড রোমাঞ্চকর অনুভূতি, সবল পুরুষ মানুষটি চুমুক দিচ্ছে চায়ে। রমার চেয়ে অনেক দীর্ঘ, অনেক উঁচুতে তার শির। গায়ে তার তীব্র পৌরুষ গন্ধ। যেকোনো বিবাহিত নারীর মত রমা এই ঘ্রাণ চেনে। পীযুষের কর্মস্থল ফেরত শরীরে এই ঘ্রাণ থাকে। তবে এমন বুনো নয়। শম্ভুর গায়ে একটা তীব্রতা আছে। রমা গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বললে---এবার মনে হয় নদীতে জোয়ার এলো, বেশ দখিনা বাতাস আসছে।

---আরেকটুক্ষণ থাইকে গেলে ভালো হত লা কি?

---তুমিই তো উজান আসবে বলে নৌকা ফিরালে ঘাটে।

শম্ভু তাকালো রমার দিকে, হেসে বললে---মিছা কথা কন কেন দিদিমণি? আপনিই তো তাড়া দিতে লাইগলেন তখুন থিকা কখুন ফিইরব।

রমা হেসে উঠল। শম্ভু রমার সাদা দাঁতের ঝকঝকে হাসির দিকে মোহিত হয়ে তাকালো। রমা বললে---কখনো কখনো বুঝে নিতে হয় শম্ভু। মেয়েরা সবসময় তাদের সব ইচ্ছে-অনিচ্ছে খুলে বলে না। বুঝে নিতে হয়। বিয়ে করো, বুঝবে।

রমা শম্ভুর হাত থেকে কাপটা নিয়ে চলে গেল। শম্ভু উঠানে বসে রইল একা। হৃদয়ে একটা আলগা আনন্দঘন অনুভূতি। রমা ফিরল পুনরায়, সঙ্গে আরও দু কাপ চা।

শম্ভু বললে---আবার চা?

---কেন? খাবে না? আসলে পিকলুর বাবার জন্য এমন অভ্যেস হয়ে গেছে। ওর এক কাপ চায়ে হয় না। আমারও তাই মাঝে মধ্যে ওর সাথে দু' কাপ হয়ে যায়।

শম্ভু তুলে নিল কাপটা। রমা ওর পাশেই বসেছে। খানিক দূরত্ব ওদের মাঝে। রমার গায়ের, চুলের মিষ্টি ঘ্রানটা শম্ভুর নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করলেই, ভালো লাগে। এই ঘ্রাণ কোনো সুগন্ধী পারফিউমের নয়। নিছক সাবান, শ্যাম্পু আর তার সাথে যেন রমার নিজেরই একটা মেয়েলি ঘ্রাণ আছে। যে ঘ্রাণ শম্ভুর গা ঘেঁষে দাঁড়ালে লতার গায়ে মেলে না, গোলাপির যৌনশীতল শরীরে মেলেনি। গ্রামের মেয়ে বউরা শম্ভুর কখনো নিকট দিয়ে গেলে মেলে না। শম্ভুর মনে হয় এই ঘ্রাণ বোধ হয় এমন শিক্ষিতা নারীর গায়েই থাকে। হয়ত বা রমার নিজস্বতা আছে এতে।

শম্ভুর ধ্যান ভাঙলো রমার কথায়, ও বলল---পিকলুকে আজ একটু সবল লাগলো। জানি না ছেলেটা কখন হাঁটবে, দৌড়াবে। জানো আমার ছেলে ছিল খেলা পাগল। কোথাকার কোন দেশের কে কি খেলে, সব ওর নখদর্পনে। স্কুলটাও ওর পিছিয়ে গেল। বড্ড কষ্ট হয়, এমন ছেলেকে শুয়ে থাকতে দেখলে।

শম্ভু সান্ত্বনা দিয়ে বললে----দিদিমণি, তিন চার মাসের মধ্যে ছিলাটা হাঁটতে পাইরবে। গোখরার বিষ রক্তে মিশছে তার, সহজে কি বার হবে? ধীরে ধীরে কাজটা কইরতে হছে। আমার বাপ যখুন বাঁকুড়ার সে ছিলাটার চিকিচ্ছা করছিল, তখুন দিখেছি, ছ' মাস তারে ঘরে ফেলে রাইখছিস। আদিবাসী ঘরের ছিলাটা। সুস্থ হয়ে ঘর ফিইরছিল।

----শম্ভু, তুমি যে এমন সাপে কাটা লোকেদের বাঁচাও, এর জন্য কি কোনো মন্ত্র প্রয়োগ বা এমন কিছু করো?

শম্ভু হাসলো রমার কথা শুনে। বললে---মা মনসার আশীর্বাদ ছাড়া, আর কুনো মন্ত্র লাই। আমার বাপ জন্মাইছে বেদে জাতে। বেদেরা চমক দিতে মন্ত্র পড়ে, চিকিচ্ছা কি আর সব বেদে পাইরে! ক'জন হাতে গুনা আছে যে দুনিয়ায়। আমার বাপের মুখে শুইনছি তার বাপ ছিল লখিন্দর বেদে। সে ছিল বেদে সর্দার। বাপ যদি মারে বে লা কইরত সে হই যেত সর্দার। লখিন্দর বেদে লা কি পাহাড়, জঙ্গল, হিমালয় ঘুরছে জড়ি বুটির জইন্য। পিকলু বাবুরে যে শরবতটা হপ্তারে খাওয়াইলাম সিটায় একটা দানা আছে। আমার বাপ দিয়ে গিছিল সিটা, হিমালয় হতে আনছে লখিন্দর বেদে। যা দিখছেন সবই জড়ি বুটি চিকিচ্ছা। কুনো মন্ত্র লাই।

----তাহলে যে লোকে বলে তন্ত্র মন্ত্র! এসব কি মিথ্যে?

---লোকে বইলে বেদেরা বশীকরণ জানে। আমি যখুন শহুরে যাই, ভিন গাঁয়ে যাই কত লোকে আমারে তাবিজ কবচ চায়। পয়সার লগে দিই বটে, সেগুলাতে তামা আছে, ধাতু আছে, রুদ্রা ফল আছে। তার কাজ কম। কিছু লোকে আমারে বশীকরণ করবার লগে ওষুধ চায়। আমি লা বইলে দিই। অনেক বেদে মিথ্যা কুথা কয়ে বেচে।

রমা বলল---কাগজে এমন বিজ্ঞাপন দেখে কত লোকে ছোটে। কিসব অশিক্ষা আর অন্ধকার বলো।

শম্ভু ঠাট্টা করে বলল---বশীকরণ জাইনলে, আমি দিদিমণি তুমারে বশীকরণ কইরে লিতাম।

---আচ্ছা। এত লোক থাকতে আমাকেই বশীকরণ করতে কেন শুনি?

---তালে আপনি আমার সত্যিকারে বউটা হয়ে যিতেন কি লা।

দুজনে হেসে উঠল ওরা। রমা হাসি থামিয়ে ওকে বললে---এবার একটা বিয়ে করে নেবে নিজে পছন্দ করে। কতদিন একা থাকবে। যুবক ছেলে, এমন করে কাটাবে নাকি? সমস্ত জীবনটা পড়ে আছে।

শম্ভু হাসলো। বললে---বত্রিশ বছর হই গেল, দিদিমণি। আমার বাপ বে কইরছিল আটাশ বছর বয়সে। পঞ্চাশ হয় লাই, মরে গেল। আমিও চইলে যাবো তাড়াতাড়ি।

---ধ্যাৎ! যতসব বাজে কথা। বত্রিশ কি এমন বয়স নাকি? আমি তোমার চেয়ে সাত-আট বছরের বড়। বড়দের কথা শুনতে হয়। বিয়ে করে নিও। তা নাহলে মেয়ে পছন্দ করে আমাকে জানিও। আমি বিয়ে দেব তোমার।

শম্ভুর মুখটায় একটা অমোঘ ঔদাসীন্য দেখা দিল। দিদিমণিকে সে কোনোদিন বলতে পারবে না তার পছন্দের সত্যি কথাটা। সত্যিটা যে বড্ড সাংঘাতিক, অযৌক্তিক, অবাস্তবোচিত। সে কি তার চেয়ে বয়সে বড়, উচ্চ শিক্ষিতা, পরিণত বয়সের সৌন্দর্যসম্পন্না, পরস্ত্রী একজন নারীকে তার প্রেমিকা হিসেবে তুলে ধরতে পারবে? যে নারী উপরন্তু তার সাথে সামাজিক, অর্থনৈতিক শ্রেণীগতও ভীষণ অসম!
[+] 13 users Like Henry's post
Like Reply
রমা অবশ্য লক্ষ করল শম্ভুর ভাবুক চিত্তমদির মুখটাকে। খোদাই করা পাথুরে মুখে একজোড়া ভাসা ভাসা চোখ, ঘাড়ের খানিক পর্যন্ত চুল। সেই চুলে তেল পড়ে না, সাবান শ্যাম্পু পড়ে না। দাড়িটাও আগাছার মত গোটা গাল জুড়ে। বরং গোঁফটা মৃদু। সবমিলিয়ে শম্ভুর চেহারায় একটা বন্য মাদকতা আছে, যা প্রথমদিনই নজরে এসেছিল রমার। তাই তো পরস্ত্রী হয়েও লতা শম্ভুকে পছন্দ করে। শম্ভুর মত এমন টানটান দীর্ঘ পেশীবহুল চেহারা খুব কম পুরুষেরই হয়। ছ' ফিটের সিনেমার নায়করা তাদের দেহসৌষ্ঠব ধরে রাখতে কতইই না জিম, ডায়েট করে এর জন্য। অথচ শম্ভু যেন আজন্ম এই শরীরকে লালিত করছে দৈনন্দিন শ্রমে। হেঁটে হেঁটে ফেরে মাইলের পর মাইল পথ। গা জোয়ারি করে উল্টো স্রোতে দাঁড় টেনে নৌকা চালায়, দাদু সনাতন মাঝির রেখে যাওয়া মস্ত জালটা নদীর বুকে ছুঁড়ে দেয় পঞ্চমুখী সাপের ফনার মত।

গায়ের রঙ ঘন কৃষ্ণবর্ণ। সত্যিই একটা চকচকে ভাব আছে শম্ভুর শরীরে। কালো গা'টা তার ঘামে না ভিজলেও কঠিন কষ্টিপাথরের মত চকচক করে। রমা ভাবে একবার জিজ্ঞেস করবে কিনা। পরে লজ্জায় মনে হয়েছে এভাবে জিজ্ঞেস করা যায় নাকি। আজ চাঁদের আলো পড়ে ওর পেশল বাহুর থেকে সেই ভাবটা নজরে এলো রমার। আলতো করে আঙুল স্পর্শ করল রমা। বললে---তুমি কি কোনো তেল মাখো শম্ভু?

হাসি থামাতে পারলো না শম্ভু। এই প্রশ্ন তাকে বহুজনে করেছে। তার এই প্রস্তর কঠিন গায়ের কষ্টি পাথরের ন্যায় চকচকে ভাব দেখে। শম্ভু বললে---দিদিমণি, শেষে আপনিও আমারে জিগাইছেন? শম্ভু বেদের কালা গায়ে কেনে চকচকায়!

রমা লজ্জা পেল। বললে---না না। আসলে আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি। আসলে মনে হয় যেন তুমি তেল মাখো একটা কিছু।

---লা দিদিমণি। এ রঙটা আমার বাপ মায়ের দিয়া। আমার বাপ যেমুন কালা রংটার ছিল, মা'টাও ছিলা তেমুন কালা গায়ের। তা বইলতে পারেন, ছোটবেলায় মা আমারে বাপের দিয়া তেল মাখাইছে। কিন্তু তার লগে এমন চকচকায় লা। আমার বাপের গা'ও ওমন চকচকাইতো। বাপরে লা কি লোক বইলত, বেদে বইলে লাকি কালাচ সাপের তেল মাইখে অমন হছে।

----সত্যি? তুমি কালাচের তেল...

---হে হে! কি বইলেন দিদিমণি, কালাচ কি সর্ষা বীজটা আছে লা কি! যে তেল বারাইবে? কালাচের গা অমন চকচকায় কি লা। তাই সকুলে ভাবে বুধয়, এ বেদের ব্যাটা কালাচের তেল বাইর কইরে মাখে।

ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর দখিনা বাতাসে নিস্তব্ধ রাত্রি জুড়ে দুই নারী পুরুষ একান্তে বসে জঙ্গলাকীর্ন সুন্দরবনের মাটির ঘরের উঠোনে। তাদের একজন অবিবাহিত বত্রিশ বর্ষীয় অশিক্ষিত যুবক, অপর জন নৃতত্বের স্নাতক ঊনচল্লিশ বর্ষীয় অধ্যাপক স্ত্রী। পুরুষটি বংশজাত বেদে, নারীটি বিজ্ঞানমনস্ক স্বামীর সুশিক্ষিতা স্ত্রী হলেও বংশ পরিচয়ে ব্রাহ্মণ। পুরুষটির বর্ণ কৃষ্ণ কালো, দেহকাণ্ড লৌহের মত শক্ত, নারীটি গৌরবর্ণা, কোমল। তারা সবদিক দিয়েই অসম। তবু এই মুহূর্তের প্রকৃতি সত্বা ভূমিকা নিচ্ছে তাদের নৈকট্য বাড়াতে। নিস্তব্ধ অরণ্য রাত্রির নদী তীরের দোচালা মাটির ঘরের এক গোপন ভালোলাগা প্রেম হোক বা না হোক তাদের মধ্যে খেলা করছে। এখানেও পুরুষটি উদগ্রীব নারীটির চেয়ে। নারীটির সংযম, রক্ষনশীলতা, নীতিবোধ নিশ্চল করে রেখেছে তাকে। পুরুষটির অস্থির, উগ্র যৌনজ্বালার বিষময় শরীর স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে চায়।
তবু নারীটিও গোপনে পুরুষটির দিকে তাকিয়ে আছে। এমন নিঃসঙ্গ বনজ পৌরুষময় আদিম যুবকের দীর্ঘকায় চেহারা তাকে আবেগান্বিত করে তুলছে। অথচ তা তীব্র গোপনে, অবচেতনে, বরং রক্ষণশীলতার শাসনে সীমাবদ্ধ।

দুজনের এঁটো চা কাপ পড়ে আছে দুজনের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। কাপগুলি বরং মিশে গেছে আগেভাগেই। কোনটা কার চেনা যায় না। চিনেমাটির এক জোড়া কাপ পীযুষ গত সপ্তাহে এনেছিল রমার চা খাবার জন্য। যে স্বামীটি তার সুক্ষ সুক্ষ খেয়াল রাখে সেই পীযুষ মৈত্র এখনো রমার জীবনের সর্বাধিনায়ক। রমার চেতন, অবচেতন মনও কোনো ব্যাভিচার চায় না। এই জঙ্গলদিনের সন্তানের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় জীবনযাপনে সে শুধু পুরুষটির সাহচর্য কামনা করে। একজন রক্তমাংসের নারী হয়ে দোষ কি তাতে। মানুষ তো সাহচর্য নিয়ে বেঁচে থাকে।

শম্ভু বিড়ি ধরালো। পীযুষের ঘন ঘন সিগারেট, যা এখন রমার শাসনে খানিক কমেছে সেই একই রকম ছবি শম্ভুর মধ্যে। ঘন ঘন বিড়ি খায় ও। রমা বিরক্তি প্রকাশ করে বললে---একটু স্থির থাকা যায় না। এই মুহূর্তটা কি বড্ড খারাপ, যে বিড়ি ধরিয়ে ফেলতে হল!

দেশলাই কাঠিটা নিভিয়ে জ্বলন্ত বিড়িতে টান মেরে হলদে দাঁতের হাসি মুখে শম্ভু বলল---খারাপ লাইগছে লা। ভাল্লাইগছে বইলেই বিড়ি ধরাইলি।

---ভালোলাগলেও তোমাদের বিড়ি দরকার, খারাপ লাগলেও দরকার পড়ে। পারো বটে তোমরা। পিকলুর বাবার ঠিক একই রকমের বদভ্যাস।

---সারও বিড়ি খায় লা কি?

---বিড়ি নয়। সিগারেট। ঐ হল একই।

---লা একই লয় দিদিমণি। সিগারেট হল গিয়া বড়লোকের ব্যাপার, বিড়ি মোর মত গরীবের পিরিতের নাঙ।

রমা চুপ করে গেল। শম্ভু বুঝতে পারলো মুখ ফস্কে সে আবার একটা কু' কথা বলে ফেলেছে। তৎক্ষনাৎ প্রলেপ দিতে বললে---নাঙ কুথাটা সব সময় বাজে লা গো দিদিমণি। গেরামে পিরিতের লোকটারেও নাঙ বলে।

রমা লাজুক মুখে মিছে রাগ দেখিয়ে বললে---তোমাকে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না।

---আরে আপনি অখুন ভি খারাপ ভাইবতেছেন। মজিদ চাচার গলায় গান শুইনলে কি বইলতেন। সে ইকটা গান গায় 'নাঙরে আমার নিঠুর বড়, মন বুইঝলি লা..."

বেসুরো শম্ভুর উদ্ভট গানে হেসে উঠল রমা, এঁটো কাপ দুটো তুলে নিয়ে উঠে যেতে যেতে বললে---ধ্যাৎ! অসভ্য একটা!

রমা উঠে যাবার পর শম্ভু বুঝতে পারলো কথায় কথায় কখন যেন দমে গেছে লিঙ্গদানব। এখন নেতিয়ে গেছে স্বাভাবিক হয়ে ওর আন্ডারওয়ারের একপাশে। অথচ একটু আগেই কেমন ফুঁসছিল তীব্র একরোখা দাবীতে। অদ্ভুত বোধ হল শম্ভুর, দিদিমণিই তো খান্ত করে দিল তাকে মিষ্টি কথা বলে। খানিক আগে তার দেহের আদিম বর্বর উত্তেজনা, ঔদ্ধত্যবান পুরুষাঙ্গ দিদিমণিকেই কামনা করেছিল।

ভাত হয়ে এসেছে। আনাজগুলো কেটে রেখেছিল রমা। শম্ভু এসে দেখল পিকলু হাতে একটা বই নিয়ে পড়ছে। বাংলা হরফে কঠিন যুক্তাক্ষর না হলে সে পড়তে পারে। বললে---পা-ন-ড-ব গোয়ে-এনদা।

পিকলু বললে---শম্ভু আঙ্কেল, পড়বে বইটা?

---আমি? আমি পড়ালিখা এত বেশি করি লাই রে পিকলু, যে গোটা বইটা পড়ে ফেইলতে পারব। তুরে আমি গল্প শুনাই, পিকলু বাবু। আজ তু মোরে গল্প শুনা। আমি ততুক্ষণ তোর পা'রে বাটনটা লাগাই দিই।

রমা শুনতে পাচ্ছে পিকলু গল্প শোনাচ্ছে শম্ভুকে। শম্ভু তখন পিকলুর পায়ের ক্ষতস্থানের বাঁধা কাপড়টা খুলে ফেলে ওষুধ লাগাচ্ছে। বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছু চরিত্রগুলো মনে রাখতে শম্ভুর সমস্যা হচ্ছে। বারবার গুলিয়ে ফেলছে ও। শম্ভু কখনো কখনো সময় নিতে ইচ্ছে করেই গোলাচ্ছে চরিত্রগুলোকে। পিকলু ভুল ধরিয়ে আবার শোনাচ্ছে গল্প। রমা ওদের গল্প শুনে হাসছে মনে মনে। মাঝে মধ্যে ওরা দুজনেই হাসছে একে অপরের দিকে তাকিয়ে।
+++++++
Like Reply
বড় প্রাণচ্ছল সময় কাটছে ওদের। পিকলুর ধীরে ধীরে শারীরিক উন্নতি রমাকেও চিন্তামুক্ত রাখছে। ম্যানগ্রোভ বন জঙ্গলের এমন নদী মাতৃক ভূমিতে রমার মনে হয় সে যেন ক'দিনের ভ্রমনার্থী। এই মাটির ঘরের চাল-চুলোহীন সংসার যেন একটা নতুন ফাটকা খেলা। শুধু পীযুষের অভাব বোধ করে রমা। ছুটি নিয়ে ক'টা দিন থেকে গেলেই পারতো। কিন্তু পীযুষের এখন সে সুযোগ নেই। অনার্সের সেমিস্টার শেষ হতে না হতেই মাস্টার্সের পরীক্ষা হাজির। শেষ হলেই একটা সেমিনারে যোগ দিতে দক্ষিণ এশিয়া যেতে হবে পীযুষকে। গোটা ট্যুরটাই স্পন্সর করছে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গবেষণাকারী সংস্থা। ভারত থেকে চারজনকে আমন্ত্রণ করেছে ওরা। ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া এই চার দেশে একমাসের ভ্রমণ। পিকলুর অমন না হলে পরিবার নিয়ে যেত ও।


আজ সকাল সকাল পীযুষ যখন এলো তখন রমা ঘোর দোর ঝাঁট দিচ্ছিল। নিজের স্ত্রীকে পরের উঠোনে ঘর ঝাঁট দিতে দেখে কেমন একটা বাধল পীযুষের। রমার তাঁত শাড়ির আঁচলটা কোমরে বাঁধা, কপালের ওপর এসে পড়েছে অবিন্যস্ত চুল। সদ্য ঘুমভাঙা চোখে মুখে ওর তখনও ঘুমের অবয়ব। পীযুষ এসে পড়তেই ঘড়ির দিকে তাকালো। দেয়াল ঘড়িটায় তখন সাড়ে সাত'টা। এমনিতে রমা এখানে আসার পর ভোর ভোর ওঠে। কলকাতায় যেখানে ও ছ'টায় উঠত, এখানে পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটাতেই ঘুম ভেঙে যায়। আজ দেরী হবার কারণ, কাল রাতে অকস্মাৎ শম্ভুর ডাক আসার জন্য। দেবীপুরের '. পাড়ায় নাকি কাকে সাপে কেটেছে। যেতে হবে শম্ভু বেদেকে। ফিরতে হবে কখন তার ঠিক নেই, তাই রমা হালকা টিফিন তৈরি করে দিয়েছে ঐ রাতে।

পীযুষ এসে পৌঁছে গাড়ি থেকে দুটো ভারী ব্যাগ নামালো। রমা বললে---কখন বেরোলে?

---ভোর চারটের সময়।

---ও মা! অত ভোরে কেন? পীযুষের হাত থেকে ব্যাগগুলো ধরে নিতে নিতে বললে রমা।

---অত ভারী ব্যাগ তুমি নিতে পারবে না। পীযুষ বাধা দিয়ে একটা ব্যাগ কেড়ে নিল।

রমা ভারী ব্যাগটা উঠোনে তুলতে তুলতে বলল---কি আছে গো?

---চাদর, কম্বল আছে। সামনে বর্ষা নামলে কিন্তু এসব জায়গায় ভীষণ আদ্রতা যেমন হয় তেমন ঠান্ডাও লাগে।

রমা ব্যাগটা তুলে এনে হাঁফ ছেড়ে বললে---শম্ভুটা থাকলে কষ্ট করতে হত না। এসব ভারী কাজ ও করে।

পীযুষ জুতোর লেস খুলে পা থেকে মোজা মুক্ত করতে করতে বললে---ও নেই নাকি? এবারেও ওর দেখা পাবো না!

রমা রান্নার জায়গাটা যেতে যেতে পেছন ফিরে হাসিমুখে বললে---কাল রাতে সাপে কাটা রোগী দেখতে যেতে হয়েছে। কখন ফিরবে কে জানে।

পীযুষ মুচকি হেসে বললে--বাপরে বাপ! এই বেদের যে দেখছি কলকাতার চিকিৎসকদের সমান ব্যস্ততা।


ঘরের মধ্যে তখনও পিকলু ঘুমোচ্ছে। রমা ডেকে তুলতে গেলে বারণ করল পীযুষ---ঘুমোচ্ছে ঘুমাক না।
ছেলের মুখের দিকে চেয়ে আছে পিতা। রমা বুঝতে পারছে এ ক'দিন তো শুধু তার নয়, পীযুষের ওপরও কম ধকল যায়নি। বরং এখন পিকলুর সুস্থ হওয়ার লক্ষণ রমার সামনে দিন দিন ফুটে উঠছে। পীযুষ তো সে খবর পায় না। নেটওয়ার্কহীন এই সুন্দরবনের নদীগাঁয়ে টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা বড্ড খারাপ। সরবেড়িয়া হাটের দিকে গেলে নাকি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।

রমা পীযুষের জন্য চা করে এনে বললে---খেয়েছো কিছু?

পীযুষ ছেলের থেকে মুখ ফেরালো স্ত্রীয়ের দিকে। বললে---চাঁপা পরোটা তরকারি করে দিয়েছিল।

রমা ঘুরে পড়তেই পীযুষ পুনরায় বলল---কোথায় যাচ্ছো?

---ব্রাশ করিনি গো এখনো।

পীযুষ ঘুমন্ত ছেলেকে একবার দেখে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। রমার কাঁধ ধরে ঘুরিয়ে দাঁড় করালো ওর দিকে। বললে---বেশ রোগা হয়ে গেছ রমা।

----ধ্যাৎ! মনের ভুল তোমার।

পীযুষ লক্ষ্য করল রমার হাতে শাঁখা-পোলা। দাম্পত্য জীবনে রমা কেবল সোনার দুটি সরু বালা দু'হাতে পরে থাকে, বিবাহের চিহ্ন হিসেবে একটি মাত্র লাল পোলা। যেটা নিয়েও পীযুষের বিরোধ আছে, এসব মানার কোনো যৌক্তিকতা নেই। হয়ত রমা পীযুষের মত নাস্তিক না হলেও, অতটা লৌকিকতাও মানে না। স্বামীর জন্য এই লাল পোলাটা পরতে তার ভালোই লাগে। এখন পোলার সাথে সদ্য কেনা সস্তার সাদা শাঁখা। এ যে তার স্ত্রীর নকল বিবাহের চিহ্ন তা বুঝতে বাকি নেই। রমা পীযুষের নজর এড়ায়নি, ও বললে---গ্রামের লোকেরা যাতে সন্দেহ না করে পরে থাকতে হয়।

পীযুষ রমার দিকে তাকালো। রমা তার স্বামীর এই চাহুনি চেনে। সদ্য ঘুম থেকে ওঠা রমার আধোয়া মুখ চেপে ধরল পীযুষ নিজের ওষ্ঠের সাথে। পীযুষের মুখেও সিগারেটের গন্ধ। কয়েক মাসের দূরত্বে সাত সকালের এই মিলনে দুজনেই আবেগতাড়িত ঘন চুম্বনে আবদ্ধ হল। রমাও অভুক্ত, পীযুষ তার চেয়েও বেশি যেন। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে স্ত্রীকে। এখুনি তার রমাকে চাই।

ঠোঁটের ভেতরে ঠোঁট, জিভের ঠোকাঠুকি আর মুখ ধোয়া এবং পুরুষালী ধূমপায়ী মুখের ঘ্রাণ মিশে যাচ্ছে। রমা শান্ত করল পীযুষকে। পীযুষ অবশ্য ততক্ষণে মুখ নামিয়ে রমার ঘরোয়া তাঁত শাড়ির আঁচল ঢাকা বুকে মুখ গুঁজে ওম নিচ্ছে। শিশুর মত মাতৃ স্নেহে স্বামীর চুলে বিলি কেটে আদর দিতে লাগলো রমা। বললে---পিকলু আছে, এখন নয়। ভারী মন খারাপ না গো তোমার?

পীযুষ মুখ তুলে তার চোখের চশমা ঠিক করে তাকালো। বললে---বড্ড একা লাগে। কলেজ থেকে ফিরলে তুমি, পিকলু কেউ নেই...এখন যেন রুটিন একঘেয়েমি।

রমারও চোখটা ছলছল করে উঠল। পীযুষের জামার বোতামে খুঁটখাঁট করতে করতে আবদারী সুরে বললে---আজ থেকে যেতে পারো তো।

---এখানে এইটুকু ঘরে?

---কেন নয়? আমরা আছি কি করে?


গাড়িটা দেখে ষষ্ঠী বুঝতে পারলো স্যার এসেছেন। ওকে দেখে পীযুষ বললে---ষষ্ঠীপদ, বলো কেমন আছো?

ষষ্ঠীপদ আনুগত্য দেখিয়ে বললে---ভালো আছি সার। ছিলাটাকে দেইখলেন, কত ভালো হইগেছে লা?

পীযুষ তখন পিকলুর সাথেই বসেছিল বিছানার ওপরে। পিকলু বললে---ষষ্ঠী আঙ্কেল কালকে কি শম্ভু আঙ্কেলকে কেউ ডাকতে এসেছিল?

---হুম্ম, বাবু। সাপে কাইটছে '. পাড়ার গোলাম আলির ব্যাটাটারে।

---তাকেও কি আমার মত স্পেক্টাকল্ড কোবরা কামড়েছে?

ষষ্ঠী ইংরেজি না বুঝলেও পিকলুর কথার জবাবে বললে---সে এখুনো জাইনি লা বাবু। তবে বিষধরটা মনে হয়।

পীযুষ বলল---তোর কি মনে আছে পিকলু তোকে যে সাপটা কামড়েছিল কেমন দেখতে?

---হুম্ম মনে আছে বাবা?

---তুই জানলিস কি করে ওটার নাম স্পেক্টাকল্ড কোবরা?

----মা বলছিল ষষ্ঠী কাকু যে স্পেক্টাকল্ড কোবরাটা তোমার ল্যাবে দিয়েছিল আমাকে ওটাই কামড়েছে।

ষষ্ঠী তৎক্ষনাৎ জিভ কেটে বললে---খবরদার বাবু, শম্ভুর কানে একথা তুইলবে লাই। সাংঘাতিক হবে তালে।

রমা বলল---কেন বলতো ষষ্ঠী? ওটাই কি শম্ভুর ঐ পোষা পদ্ম?

---দিদিমণি, ঠিক ধইরেছেন। শম্ভু উটারে বড্ড ভালোবাইসতো। জানতি পাইরলে আমারে আস্ত রাইখবে লাই।

রমা বললে---ওটা একটা বদ সাপ ছিল।

পীযুষ হেসে বললে---সাপের কি দোষ। ওরা আবার ভালো-বদ হয় নাকি!

---তুমি আরো বলছ? আমার ছেলেটাকে... এত সাপ তো রেখেছো, কেউ তো কোনোদিন এমন করল না। আমি ওকে মেরে ফেলেছি, ঠিক করেছি।

ষষ্ঠী তৎক্ষনাৎ চেঁচিয়ে উঠল আবার---সব্বনাশ! দিদিমণি কখুনো শম্ভুরে বইলবেন লাই, যে আপনি উটারে মাইরে ফেলছেন! বড় বিপদ হই যাবে। চিকিচ্ছাটা কইরতে দেন উরে। বড্ড মাথা গরম জোয়ান আছে, জেদ চাইপলে কি করে কে জানে...!

রমাও খানিক ভয় পেল। বললে---এই পিকলু তুইও কখনো শম্ভু আঙ্কেলকে বলবি না। যা শুনলি তা তো আবার তোর পেটে থাকে না।

পীযুষ বললে---ষষ্ঠীপদ, এসব কথা থাক। আজ ভাবছি তোমাদের এখানটা থেকেই যাবো। ভালো নোনা মাছের বাজার হয় এখানে শুনেছি।

---সত্যি! সার আজ থিকে যাবেন? ষষ্ঠী আনন্দৎসাহিত হয়ে পুনরায় বললে----সার আমি এখুনি বাজার যাবো। সেখান থিকা ভালো মাছ আইনবো।

---এনো, তার আগে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাও।

ষষ্ঠী দেখলে অদূরে তার স্ত্রী লতা দাঁড়িয়ে আছে উঠোন লাগোয়া। ঘরের ভিতরের কথোপকথন সে শুনছিল কি এক তীব্র কৌতুহলে। ষষ্ঠীপদ এত বছর পরেও তার বউটাকে ঠিক বুঝতে পারে না। সংসারের সব কাজ, ষষ্ঠীর স্বামী সেবাটুকুতেও খামতি নেই। তবু তার সাথে দু একটা ভালোমন্দ যেমন স্বামী-স্ত্রীয়ে কথা হয়, বলতে পারে না। লতার যেন কোনো আগ্রহই নেই ষষ্ঠীর প্রতি। সে যে অন্য পুরুষে ভেতরে ভেতরে মজে আছে, তা'ও ষষ্ঠী ভালোমত জানে। সে লতার কৌতুহলকে তাচ্ছিল্য করে আদেশের সুরে বলল---আজ সার ইখানে থাইকবেন, দিদিমণিরে রান্নায় সাহায্য কইরবি যা।

শম্ভু গিয়েছিল গোলাম আলির ঘরে। দাওয়ায় ছেলেটা দিব্যি বসে রয়েছে। এই যা চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। পুকুরে স্নান করতে গিয়ে কামড় দিয়েছে কিছু একটা।
[+] 10 users Like Henry's post
Like Reply
শম্ভু গোলামের ছোট ছেলে সইফুলের বাম পা'টা তুলে দেখল একবার। তৎক্ষনাৎ ওর মুখে হাসি খেলে গেল। একবার নয় দু' বার কামড় দিয়েছে সাপটা। ওর হাসিমুখ দেখে চিন্তিত গোলাম আলী বললে---কি রে শম্ভু, হাসিস কেন? ছিলাটা বাঁচবে তো।

অমনি তাগড়া বয়ঃসন্ধির কিশোর সইফুল ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠে বললে---আমি বাঁচব লাই আব্বা! মইরে যাবো!

শম্ভুর তখন অদম্য হাসি। বললে---কামড়ায়ছে বটে, তাও একবার লয়, দু'বার।

---কি কস! চিন্তিত দেখালো গোলামকে।

জায়গাটা জল দিয়ে ধুয়ে দিয়ে পরিষ্কার করে শম্ভু গোলামের বউর দিকে তাকিয়ে বললে----বোরোলিন আছে গো চাচী।

সাপে কাটা রোগীর বোরোলিন দিয়ে কি চিকিৎসা করবে শম্ভু! দাওয়ায় জমে যাওয়া ভিড়, সকলে স্তম্ভিত। শম্ভু বোরোলিন দিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে বললে---যা, চিকিচ্ছা হয়ে গেছে। পঞ্চাশ টাকা দিও গো গোলাম চাচা।

---কি মজা কইরছিস আমার সাথে? গোলাম ক্রুদ্ধ ভাবে বললে কথাটা।

শম্ভুর মুখে তখনও হাসি। সে বললে---জলঢোড়া জাইনো চাচা? তোমার ব্যাটারে জলঢোড়া কামড়ায়ছে। বিলেডে কাটলে যেমনটা হয়, তেমুন হছে। কিচ্ছু চিন্তা করার লাই।

গোলামের পাশে দাঁড়ানো তার বাপ দাড়িওয়ালা বুড়ো গিয়াসউদ্দিন বললে---তাই ক। জলঢোড়ার তো বিষ লাই।

দুটো কুড়ি টাকা আর একটা দশটাকা সহ সঙ্গে একটা মুরগী দিল গোলাম আলী। শম্ভু মাংস খেতে ভালোবাসে। দাওয়ার পাশে মুরগীটাকে ঘুরঘুর করতে দেখে লোভ করে বলেছিল---খাসা আছে গো চাচা, দিবে লাকি?

মুরগীটা বগল দাবা করে ফিরল শম্ভু। বাড়ির সামনে গাড়িটা দাঁড় করানো দেখে বুঝতে পারলো নির্ঘাত মাস্টারবাবু এসেছেন। উঠানে মুরগীটা ছেড়ে দিতেই কঁকিয়ে উঠল পাখিটা। রমা বললে---কে এলো রে লতা?

ষষ্ঠীর বাচ্চা মেয়ে বুলি বলে উঠল---শম্ভু কাকা আসছে গো দিমণি।

এই প্রথম মানুষটাকে দেখল পীযুষ। তার সন্তানের জীবন বাঁচিয়েছে যে লোকটা, তাকে লোক নয় যুবক বলা ভালো। দীর্ঘ ছয় ফিটের চেহারার শক্ত বাঁধনে সে যেন লৌহমানব। ঘোর কালো গায়ে একখান জড়িবুটির মালা ছাড়া কিছু নেই। হাতের বাহু বন্ধনীতে একটা রুদ্রাক্ষ বাঁধা ঘুমসি আছে। যেখানে তার উদ্ধত শিরা-উপশিরার কঠিন পেশী ফুলে ওঠে। এই যুবকটিই তো রমার নকল স্বামী। এই এলাকায় তো রমার এখন পরিচয় এই বেদে যুবকের স্ত্রী হিসেবে।

শুধু পীযুষ নয়, শম্ভুও লক্ষ্য করল তাকে। তার মনের চারণভূমিতে আধিপত্যকারী রমণী রমা দিদিমণির যোগ্য স্বামীটির গায়ের রঙ ফর্সা, ঠিক দিদিমণির সাথে মানানসই। সুদর্শন পুরুষ যাকে বলে পীযুষ তাই। পঁয়তাল্লিশ ছেচল্লিশ বয়সে ইতিউতি এক দুটো চুল সামান্য পাক ধরেছে। চোখে কালো ফ্রেমের চশমায় একটি শিক্ষিত ব্যক্তির পরিচয় স্পষ্ট। শম্ভু যেন এক পলকের জন্য মাস্টারবাবুকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখল। হতে মাস্টার মশায়ের গায়ের রঙ দিদিমণির সাথে মিশে যায়, হতে পারে মাস্টার মশাই দিদিমণির যোগ্য শিক্ষিত পুরুষ। কিন্তু মাস্টারবাবুর কি তার মত দেহকাঠামো আছে! আছে এমন যুবকের দীর্ঘকাণ্ড গতর!

পীযুষ মৃদু হেসে বললে---এই যে তোমার খোঁজ করেও দেখা পাই না, যখনই আসি তোমার দেখা মেলে না।

শম্ভুর প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব ভেঙে গেল নিমেষে। অনুশোচনা হল তার। ছিঃ দিদিমণির বরটাকে সে কিনা এতক্ষণ প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছিল। কোথায় দিদিমণি আর মাস্টারবাবু, আর কোথায় সে সরবেড়িয়ার জংলী একটা বেদে। হলদে দাঁত বার করে হেসে বললে---সার, দিখাটা হয় লা। আসলে কামকাজের লিয়ে যেতে বার হয় কি লা।

---তোমাকে প্রথমে ধন্যবাদ দিই। যদিও ধন্যবাদ দেওয়া মানে তোমাকে খাটো করা। তুমি আমার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছ। যেটা আমার কাছে এখনো বিস্ময়। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।

রমা বললে---পরে বোলো সেসব। এখন কেউ কোথাও চলে যাচ্ছো না। শম্ভু, এই মুরগীটা কোত্থেকে পেলে? কিনে আনলে নাকি?

লাজুক হেসে একবার পীযুষ একবার রমার দিকে তাকিয়ে সে বলল---ভেট দিছে গো দিদিমণি। সাপে কাইটছে ঢোড়া, চিকিচ্ছার তো কিছু লাই। ইটা আজ সারের লগে রাঁইধে দেন দিদিমণি। দিশি আছে। ভালো মুখে রুচবে।

পীযুষ বাধা দিয়ে বললে---এই মাংস আমার মুখে আর তেমন রোচে না। তোমাদের এখানে তো ভালো নদীর মাছ কাঁকড়া মেলে, তাই ষষ্ঠীপদকে বাজার পাঠালাম।

---আগে জাইনলে সার নদী থিকে মাছ ধইরে আনতাম। এখুন ক'টা বাজে গো দিদিমণি?

রমা বারণ করে বললে---না, থাক। এখন আর কোথাও যেতে হবে। ষষ্ঠী গেছে বাজারে। ফিরলে আমি আর লতা মিলে মাছ রান্না করে দেব। রাতে না হয় মুরগীর কিছু একটা করা যাবে।

পীযুষও বলল---তাই ভালো। অন্য একদিন নদীতে আমি নিজে গিয়ে মাছ ধরা শিখব তোমার সাথে।

হেসে উঠল শম্ভু। শহরের শিক্ষিত বাবু তার সাথে ঠাট্টা করছে। নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরা কি আর যে কেউ পারে।

দ্বিপ্রাহরিক আহারের পর শম্ভুর সাথে আড্ডা দিচ্ছিল পীযুষ। রমা তখন গা এলিয়ে শুয়ে পড়েছে পিকলুর পাশে। পীযুষ সিগারেট ধরিয়ে শম্ভুকে দিতে গেলে শম্ভু বললে---সার, আমি গরীব মানুষ, সিগারেট আমার চইলবে লাই।

তারপর ও যেই বিড়ি বার করল, পীযুষ সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে বলল---তাহলে আমাকে একটা বিড়িই দাও।

শম্ভু বিস্মিত হল। রমা দিদিমণি শুধু নয়, মাস্টারবাবুও যে একজন মাটির কাছে নামতে পারার ক্ষমতাশালী মানুষ সেটা শম্ভুর কাছে চমকপ্রদ ঠেকলো। মাস্টারবাবু বা দিদিমণিরা বড়লোক, তাদের ঐশ্চর্য, বিভব আছে, তারা এমন গরীবের বন্ধু হতে পারে অবলীলায় শম্ভুর অভিজ্ঞতায় এ বড় মধুর স্থান নিল। যুবক ছোকরা সে, তবু তো তার দরিদ্র জীবনে অভিজ্ঞতা কম হল না। এমন মানুষ ক'জন হয়, যে একজন কলেজের অধ্যাপক হয়ে সামান্য বেদের কাছে বিড়ি চেয়ে খায়।

ইউনিভার্সিটিতে পড়বার সময়, পীযুষের কিছু বন্ধু বিড়ি খেত। যাদের সাথে এক দু'বার ও বিড়ির স্বাদ পেয়েছে। বিড়িতে টান দিয়ে সেই অনুভূতি যেন মনে করালো ওকে। যদিও বিড়িটার স্বাদ ও বিশেষ পছন্দ করেনি। তবু সে চায় সরবেড়িয়ার বেদে যুবকের সাথে মিশে যেতে। শুধু যে এই যুবক তার ছেলের প্রাণ ফিরিয়েছে তা নয়, এই বেদেদের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে ইন্টারেস্টও রয়েছে পীযুষের। হালকা ধোঁয়া ছেড়ে ও বললে---শম্ভু, এই নদীপথে তুমি কদ্দুর গেছো?

----গাঙ পর্যন্ত যাই লাই কখুনো। তবে বনে যে খালগুলা ঢুইকে গেছে সিদিকে বহুতবার গেছি।

---বাঘের দেখা পেয়েছ?

শম্ভু হাসলো। বললে---যে উঠানে আপনি বইসে আছেন, সিখান দিয়ে গেছে ক'বার। তবে সে অনেক বছর আগে। আমি তখুন ছোট ছিলি। তবে নদীতে দেখছি তারে সাঁতার দিতে। বছর খানিক আগে রসুলপুর ঘাটের মন্টু পালরে বাঘ খেয়ে ফেইলল জঙ্গলটারে গিয়ে মধু ভাঙতে গিছিল।

----জঙ্গলে ঢুকেছ কোনোদিন?

--সার সে তো যিতেই হবে। জড়ি বুটি যে সব লাগাইতে হয়, সবটা লিয়ে আসি জঙ্গলটা হতে।

---সেখানে কখনো বাঘ দেখোনি?

---দিখছি। একবার বাপের সঙ্গে গিয়ে। সার দিখতিছি বাঘ লিয়ে মজা পাইছেন, পিকলু বাবুর মত। চইলেন একবার বনে দিখলেও দিখা যেতে পাইরে।

পীযুষ হাসলো। বললে---সাপ টাপ যে ধরো, সেসব কি জঙ্গল হতে?

---জলা, খাল, জঙ্গল, পুন্না ঘর, ইটের খাদাল, যিখানে তার দিখা পাই ধইরে ফেইলি।

---আচ্ছা শম্ভু তুমি আমায় একটা কথা বলো তো। এইসব যে তুমি করো তোমাদের ভয় করে না? মানে কোনো না কোনো সময় তো তোমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি নাও কাজ দিতে পারে।

----হতে পাইরে সার। সে চন্দ্রবোড়া কাইটলে মাঝে মইধ্যে হয়। তবে আমি ভীমনাগ বেদের ব্যাটা কি লা। ঠিক সময় রুগীরে হাতে পাইলে সব হয়। তবে কি জাইনেন সার, গাঙে মাছ ধইরতে গেলে গাঙের সাপ কাটে মাঝিরে, তারে বাঁচাইতে আমার বাপ পারে লাই।
পীযুষ বুঝতে পারলো শম্ভু সামুদ্রিক কোরাল স্নেকের কথা বলছে। যার এন্টি ভেনম বিরল। ও খানিক জেরা করবার ভঙ্গিতে বলল---তোমরা এত কিছু পারো, তবু মেডিক্যাল সায়েন্স মানে কোনো উন্নত বিজ্ঞান তোমাদের কাছে আসছে না কেন। কিংবা তোমরা তো কার্যত হাসপাতাল খুলে ফেলতে পারো।।

শম্ভুর মুখে হালকা হাসি। এই হাসিটা বলে দেয় শম্ভু এমন প্রশ্নের সম্মুখীন আগেও হয়েছে। বিশেষ করে ও যখন শহরে ফুটপাত পাশে সাপখেলা দেখায়, জড়িবুটি বিক্রি করে তখন শহরের বাবুরা এমন প্রশ্ন করে। খুব শান্তভাবেই বললে---সব বেদে চিকিচ্ছা পারে লাই। মিছা কথা কওয়া হাজারটা বেদেকে দিখা যায়। হাসপাতাল খুইলে বেদে রোজগার কইরবে লাই সার। আমার ঠাকুরদাদা, মানে আমার বাপের বাপ লখিন্দর বেদে ছিল যাযাবর। তাদের বসত বইলে কিছু লাই। গেরামের পর গেরাম ঘুরে ই দিশে কুত জাগায় ঘুইরে বেড়ায়। তাদের কুনো ইচ্ছা লাই যে বড় দোকান খুইলে চিকিচ্ছা কইরবে।

---তারমানে তুমি বলতে চাইছ, হাসপাতাল আসলেই দোকান?

---তা বইলছি লা সার। আমার মা'টা যখুন পোয়াতি ছিল, হাসপাতালে পইড়ে মরল দুদিন পর। পয়সা লাই তখুন তেমন যে মারে ইকটা ভালো ডাক্তার দিখাইবে। তারে আপনি দোকান বইলবেন লাকি হাসপাতাল?

পীযুষ এবার সিগারেট ধরালো। বললে---কিন্তু তুমি তো যাযাবর নও। তোমার তো কোনো এম্বিশন মানে টাকাপয়সা বাড়ুক এমন ইচ্ছে থাকতে পারে।

এবার বোধ হয় শম্ভুর কথাটা পছন্দ হল না। তবু হাসিমুখে বললে---টাকাপয়সার লোভ লাই আমার, সার। ভাত, মাছ, মাংস পাইলে আমার চইলে যায়। বিড়ি বাদ দিয়া ন্যাশা তেমুন লাই একটা।

----তুমি কি বিয়ে করবে না? মানে যুবক ছেলে। রমার কাছে শুনেছি মাত্র তিরিশ-বত্রিশ বয়স তোমার। সংসারী তো হবে। আজকের দিনে কি বেদে জীবনযাপন করে সংসার চালাতে পারবে?

দাঁড়ি গোঁফ না কাটা কালো পুরুষ্ঠু ঠোঁটের মাঝে হলদে দাঁত স্পষ্ট বার হয়ে এলো শম্ভুর। মুখের মধ্যে একটা ঠাট্টা করবার প্রবণতা যুক্ত হাসি, বললে---বে তো হই গাছে সার, দিদিমণিটার সাথে। মজা কইরলি সার। বে আমার হছিল, বউ ভেগেছে। বেদে ঘরের ছিলের লিগে মেয়েছেলে পাওয়া মুশকিল, বুইঝলেন সার। বিবাগী হইয়ে বাকি জীবন কাটাই দিব।

পীযুষও হেসে উঠল। বললে---তোমার দিদিমণি বলছিল এবার তোমার সত্যিকারে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।

ওরা দুজনেই হেসে উঠল। ওদের হাসির শব্দ রমার কানে গেল। শাড়িটা ঠিক করে উঠে এলো উঠানে। বললে---কি এত হাসি তোমাদের?

পীযুষ বললে---এই যুবক ছোকরা নাকি বিয়ে টিয়ে না করে বিবাগী হতে চায়। আমি বললাম তোমার দিদিমণি কিন্তু এবার বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।

শম্ভু বললে----দিদিমণি দিখে দেন তালে একটা মেয়ে। লিশ্চয় বে কইরব।

রমা বলল---ষষ্ঠীপদকে তো এজন্য আমি বলে রেখেছি। এই ছেলের বিয়ে করার জন্য একটা পাত্রী খুঁজে দিতেই হবে। ও নাকি খালি মাছ আর সাপ ধরে জীবন কাটিয়ে দেবে!

----একদিকে ভালো বুঝলে শম্ভু। বিবাগী জীবনে ইচ্ছেমত অনেক কিছু করা যায় বটে। তবুও দিনের শেষে একজন জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন হয়।

রমা ঘরের ভেতর থেকে বললে---তোমরা চা খাবে?
[+] 12 users Like Henry's post
Like Reply
চা খেয়ে ওরা নদীর দিকে এগোতে লাগলো। পীযুষ দেখল নদীটা এখানে বেশ প্রশস্ত। তবে সব জায়গায় এমন নয়। শম্ভুর সাথে পীযুষ চাইছে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে। বুঝতে পারছে শম্ভুর মধ্যে একটা গোয়ার্তুমি আছে। সেটাকে ভেঙে যতটা সম্ভব ওকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে লাগাতে। এ বিষয়ে কিছুদিন আগে পীযুষের সাথে ডঃ মাহাতোর ফোনে কথা হয়েছে। ডঃ মাহাতোও আগ্রহী এই বেদের অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে। পীযুষও চায় শম্ভুদের এই চিকিৎসাপদ্ধতি যেভাবে তার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছে, তেমন করেই সাপে কাটার চিকিৎসায় তা আরো মানুষের কল্যাণে লাগুক। হাঁটতে হাঁটতে খানিক বিরতি নিয়ে সে বললে---শম্ভু, এই যে তোমরা চিকিৎসা করো, এতে তো কোনো তন্ত্র মন্ত্র...

----সার, ইসব মিছা কথা। তন্ত্র মন্ত্র দিয়া চিকিচ্ছা হয় লা। সাপ ধইরতেও মন্ত্র লাইগে লা। তবে আমরা হলাম গিয়া বেদে, মিছা কথা বইলে লোকে ভিরমি খাওয়াইতে হয়। পিকলু বাবুর চিকিচ্ছা অনেক কঠিনটা আছে সার। আপনি তো সাপের মাস্টারটা আছেন, কুনো মন্ত্র দিয়া চিকিচ্ছা হতে পাইরে বইলে মনে কইরেন?

বিষয়টা ভালো লাগলো পীযুষের। ওর যুক্তিবাদী মনকে সমর্থন জোগালো। একবার ভাবলো শম্ভুকে ওর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আরো কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে একটা গবেষণাদি চালানোর কথা এখুনি বলবে। বললোও কৌশলে---শম্ভু, তুমি চাইলে আমি তোমার ঐ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে একটা গবেষণা চলতে পারে। আরো মানুষের কল্যাণে এটা অনেকদূর যেতে পারে।

শম্ভুর মুখটা গম্ভীর হয়ে উঠল। একেবারেই যা ওর পছন্দ হল না। বললে---সার, ই চিকিচ্ছা আমি কাউরে শিখাইবো লাই। ই আমার বাপর দাদারে দিয়া গেছে। আমি বেদে দলে বড় হই লাই সার, তবু তো বেদের জাত। বাপ তো মোর বেদেটা আছে। বেদে জাত তার রক্ত ছাড়া কাউরে কখুনো এ শিক্ষাটা দেয় লা। আমি যদি ইটা কাউরে শিক্ষা দিই, সেটা আমার বাচ্চা কাচ্চা হইলে।

পীযুষ হেসে বললে---তবে তো তোমার এই শিক্ষা বংশগত ধরে রাখতে বিয়ে করতেই হবে।

---সার ফাঁদটাতে ফেলাই দিলেন ইবার আমারে। বে শাদী কইরে কি আর সার ই বড় নদীর মাঝি হওয়া যায়! মজিদ চাচা বইলে এক মাঝি আছে সে বইলে বড় দরিয়ার মাঝি হতে হইলে সব কিছু ছাইড়ে দরিয়ারেই ডুব দিতা লাগে।

পীযুষ খানিক ক্রুদ্ধ হল। শম্ভু যে প্রচণ্ড গোঁয়ার মুখ্য সেটা বুঝতে ওর বাকি রইল না। তা নাহলে এমন চিকিৎসা জ্ঞান রেখে কেউ জল জঙ্গলের মাঝি হতে চায়। বিরক্ত হয়ে বললে---শম্ভু তোমার স্টুপিড ফিলোজফি...ভুল ধারণাগুলো থেকে বেরোনো দরকার। দেখো তুমি বহু মানুষের বিপদে আপদে যেভাবে দাঁড়াও, ঠিক সেভাবে এই চিকিৎসাপদ্ধতি শহর অবধি গেলে, বড় বড় বিজ্ঞানীদের নজরে এলে আরো বেশি লোকের ভালো হবে। শুধু যে তোমার আয় উপার্জন বাড়বে একথা বলছি না। মানুষের...

পীযুষকে কথা শেষ না করতে দিয়ে থামিয়ে দিল শম্ভু। বললে---সার, আপনার শহুরের শিক্ষিত মানুষটা আছেন। আপনাদিগের ভাবনাটা আমাদিগের চেয়ে আলাদা। রাতভিতে মানুষরে সাপে কাইটলে আমি শরীল চইললে যিতে পারি। কিন্তু বেদে জাতের শিক্ষাটা কাউকে দিতে পারবো লাই।

পীযুষ বুঝতে পারলো এই চিকিৎসাপদ্ধতি বেদে রক্তে পাওয়া শম্ভুর একান্ত। সে এই শিক্ষা নিয়ে কারো সাথে ভাগ করে নেবে না। সে কোনো গবেষণারও অংশ হতে চায় না। শম্ভু যে বেশ গোঁয়ার ধরনের সেটা পীযুষ ঠাহর করতে পারলো। তা নাহলে এমন চিকিৎসা পদ্ধতিকে বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাথে কাজে লাগিয়ে ও তো বেশ টাকা পয়সাও করতে পারে।

পীযুষের শম্ভুকে এর জন্য খানিক বিরক্তিকর মনে হল। নোম্যাডস অর্থাৎ যাযাবর সম্প্রয়দায় নিয়ে পীযুষ সেদিন যে বইটা পড়েছিল তাতে বেদে জনজাতি সহ যাযাবর যেকোনো সম্প্রদায় নিয়ে এমন কথাই লেখা ছিল; এই বেদেরা আপন সীমাবদ্ধ চিন্তার বাইরে বেরোতে চায় না বলেই এরা আজও যাযাবর। এরা নিজেদের গোষ্ঠীর গন্ডির মধ্যে থাকতে চায়, বিভিন্ন ধরনের কাল্ট মেনে চলে এরা। জীবন জীবিকার জন্য এদের সাপ ধরা ও তার জন্য বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ, তুকতাক করা ছাড়া এদের খানা, পিনা, দলবদ্ধ ভ্রমণ, সেক্স ও বংশবৃদ্ধি ছাড়া আর বিশেষ কিছু নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। শম্ভু আজ যাযাবর না হলেও জিনগতভাবে সেই গোয়ার্তুমি সে বহন করছে।
পীযুষের আফসোস স্নেক বাইট নিয়ে এত বড় চিকিৎসা জনিত সাফল্য আড়াল থেকে যাবে গোটা দুনিয়া থেকে। এই যুবকের যে জীবনের কোনো এম্বিশন নেই, তাও বুঝতে পারছে পীযুষ। বিয়ে থা না করলে হয়ত এই চিকিৎসাপদ্ধতি তার সন্তান-সন্ততির মধ্যে বাহিত হওয়ার বিষয়টিও আর থাকবে না। অবশ্য পীযুষ কোনো জোরাজুরিতে গেল না। কারোর ব্যক্তিস্বাধীনতা যদি এমন হয়, যে সে তার সমস্ত সঞ্চিত জ্ঞানকে জলাঞ্জলি দিয়ে এমনই বনজ জীবন কাটিয়ে দেবে, তাতে পীযুষের কিছু করার নেই। দিনের শেষে তো এরা বেদেই। এদের কাছে সংস্কারমূলক কিছু আশা করা বৃথা ভেবে কিছু হতাশ হল পীযুষ।


পীযুষের উল্টোপিঠে দাঁড়িয়ে আছে যেন শম্ভু। ঘাট লাগোয়া কয়েকটা আগাছা গাছের ডাল সরিয়ে বললে--দিখেন সার, ই হল মোর নদীঘাট। যেমুনটা আমার দাদু সনাতন মাঝির বাপ জনার্দন মাঝি বানাইছিল তেমন আছে। নদী হতে খানিক দূর পর্যন্ত আমার রায়তি জাগা। নদীঘাট বন্যার সময় কালনাগিনী মা তার বুকে টাইনে লেয়। আবার জলটা কমলে ফিইরে দে সে। আপনি যিটা ভাইবছেন যে গেরামের এই বেদে ব্যাটা চইলে গেলে হারায় যাবে এ চিকিচ্ছা গুন। সিটা আপনার মিছা ভাইবনা। নদীঘাটের মতটা ফিইরে আসবে দিখেন কেউ লা কেউ লয়ে।

----দেখো শম্ভু তুমি যেমন ভাবে ভাবছ পৃথিবী কিন্তু আজকের দিনে তেমন ভাবে চলছে না। গোটা পৃথিবী তোমার থেকে অনেকগুন এগিয়ে গেছে।

গম্ভীর মুখ অথচ তাচ্ছিল্যের হাসি শম্ভুর মুখে। বললে---দুনিয়া আগাইছে! হা হা! কি কন সার। একবার গেরামে আপনার মত এক মাস্টার আইসেছিল ভাষণ দিতে, ১৫ আগস্ট ছিল বুধহয়। বইলছিল জাতপাত মাইনা চলার দিন নাকি শেষ। যারা শুইনে তালি দিতেছিল তারা ছিল নমঃশূদ্র, জালি, চাষা ঘরের লোক। তারাই আমারে বেদের ব্যাটা বইলে দূরে রাইখে। দায়ে পইড়লে ঘরে উঠতে দেয়। এমনি সময়টা হলে জাত যাইবে বলে ডরে

----ঠিক তোমার কথা, এখনো এসব আছে। কোনো কোনো জায়গায় বাড়াবাড়িও আছে। কিন্তু সকলে নয়। আজকের দিনে...

---দিখেন সার, আমি মুখ্য লোক। জোয়ান আছি, গায়ে গতরে জোর আছে বইলে লোকে ডরে। যিদিন তা থাইকবে লাই? তখুন কেউ ডরবে লাই। তার লগে আমার একটা বে শাদী দরকার। ইটা আপনি ভুল কয়েন লাই। কিন্তু তার মাইনে ইটা লা আমি বেদে চিকিচ্ছা বেইচে হাসপাতাল হতে টাকা লিব।

পীযুষ বুঝতে পারছে বড্ড আনাড়ি আর গোঁয়ার এই যুবক। হাসপাতাল কখনোই ওর চিকিৎসাকে মান্যতা দেবে না। ওর চিকিৎসা পদ্ধতিকে গবেষণা করে থিসিস পেপার তৈরী করতে হবে। তারপর নিশ্চই তার আলোচনা সমালোচনা আসবে। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অঙ্গ হতে পারে এই বেদে চিৎসার কিছু মেডিসিনাল প্ল্যান্ট বা তার প্রোডিউস পদ্ধতি। যাইহোক এই যুবককে বোঝানোর ক্ষমতা পীযুষের যে নেই বুঝতে পেরে এখন ওকে খান্ত করাটাই লক্ষ্য হল তার। তাই প্রসঙ্গ বদলে বললে---তোমার গ্রামীন প্রকৃতি বেশ সুন্দর। আমি এর আগে খুব ছোটবেলায় বাবা মায়ের সাথে সুন্দরবনে এসেছিলাম; ঐ পিয়ালির দিকটা বোধ হয়।


শম্ভুর চোখ মুখে এখনো গাম্ভীর্য। দূর নিবদ্ধ চোখে কিছু একটা ভাবছে ও। পীযুষ বুঝতে পারছে শম্ভুদের মত মূর্খ অশিক্ষিত লোকেরা সহজে রাগ দমাতে পারে না। তাই খানিক স্থিরকৃত থাকাই ঠিক করল। অবশ্য তার আগেই শম্ভু আচমকা বললে---রমা দিদিমণি একটা আলাদা মানুষ আছে, জাইনেন সার। আপনি ভাগ্য কইরেছেন, রমা দিদিমণি আপনার সত্যিকারের বউটা আছে। পড়ালিখা করা দিদিমণি হুয়েও কত দরদ আছে তার মনে। শহুরের সব পড়ালিখা করা লোকের সেরমটা হয় লা।

পীযুষ বুঝতে পারছে শম্ভু তার প্রতি বিরক্ত হয়ে রমার সাথে তুলনা করতেই আচমকা রমার প্রশংসা করল। তাছাড়া পীযুষ এই কথায় একটা নতুন জিনিস খেয়াল করল, শম্ভু রমার প্রতি অনুরক্ত। শুধু যে রমার সংযমী ব্যক্তিত্ব, মিষ্টি ব্যবহার এবং শিক্ষিতা চেতনাতেই ওর অনুরাগ নয়, শম্ভুর এই কথাগুলিতে মিশে আছে রমার প্ৰতি তার একটি চাপা বাসনা। যার জন্যই সে পীযুষকে ভাগ্যবান মনে করছে। তাই পীযুষ স্বাভাবিক হয়ে হেসে বলল---তোমার রমা দিদিমণি যদি তোমায় বলে যে শম্ভু তোমাকে তোমার বেদে চিকিৎসার শিক্ষাকে বিজ্ঞানের কাজে দান করতে হবে, তুমি রাজি হবে?

শম্ভু খুব দৃঢ়তার সাথে বলল---দিদিমণি এমন বইলবে লাই।

পীযুষ অবাক হয়ে গেল শম্ভুর রমার প্রতি এমন দৃঢ়বিশ্বাস দেখে। ওরা ফিরে এলো নদীর পাড় থেকে। সন্ধে নেমেছে বলে একচালার আলোটা জ্বেলে দিয়েছে রমা।
ফেরার পর থেকে রমা লক্ষ্য করছে শম্ভু কেমন চুপ করে আছে। সন্ধে গড়িয়ে রাত নামলো। পিকলুর পায়ে মালিশ করে শম্ভু উঠে গেছে তার দোচালায়। আর নামেনি সেখান হতে। রমা রান্না শেষ করে পীযুষের পাশে এসে বসে বলল----তুমি কি কিছু শম্ভুকে বলেছ?

পীযুষ সকালে আসার সময় কেনা খবরের কাগজটায় পুনর্বার চোখ বোলাচ্ছিলো। কাগজ থেকে মাথা তুলে চশমার ওপর দিয়ে রমার দিকে তাকালো। রমা মনে করছে নির্ঘাত শম্ভুর সাথে পীযুষের আলাপচারিতায় এমন কিছু কথা হয়েছে, যা শম্ভুকে আঘাত করেছে।
পীযুষ বলল---আচ্ছা রমা, তোমার কি অভিমত, শম্ভু যে প্রাচীন ভেষজ চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে আমাদের পিকলুকে বাঁচালো, তা যদি বিজ্ঞানের বেনিফিটে লাগে তাহলে বিজ্ঞানের প্রগ্রেস হয়, শম্ভুও আয় উপার্জন বাড়িয়ে একটা স্বাচ্ছন্দ্যযুক্ত জীবন পেতে পারে।

রমা চমকে উঠে বললে---তুমি ওকে এমন প্রস্তাব দিয়েছ নাকি?

---হুম্ম। কিন্তু একটা স্টুপিড, স্টাব্বর্ন! নিজের ভালো বুঝতেই চায় না।

রমা বাধা দিয়ে বললে---আঃ! কি করছ কি? ও যদি শুনতে পায় কি ভাববে?

পীযুষ হেসে গলা নামিয়ে বললে---ও ইংরেজী বোঝে না, চিন্তা নেই।

---বোঝে না ঠিকই। তবে তোমার বলার ধরণ দেখে ও বুঝে নেবে, তুমি ওকে কিছু খারাপ কথা বলছ। আসলে দেখো, শম্ভুকে আমি প্রায় দেড়মাস ধরে দেখছি। এটা ঠিক ও জেদি, গোঁয়ার, তবে কি জানো তো, ও আবার বোকা নয়। যথেষ্ট বুদ্ধিমান। ও আসলে আমাদের মত নয়। ওর জীবনটাই আসলে এই জল জঙ্গল, সাপ ধরা, মাছ ধরা, ইচ্ছে হলে মানুষের চিকিৎসা করা এমন একটা এডভেঞ্চারপূর্ণ। আসলে ও যে তোমার কথা বোঝেনি তা নয়। কিন্তু ও এমনটাই থাকবে, সত্যি কথা বলতে আমার অভিমতও তাই ওকে ওর মতই থাকতে দাও। এমনভাবেই ওকে মানায়।

পীযুষ বুঝতে পারলো শম্ভুর রমার প্রতি বিশ্বাসের দৃঢ়তার কোনো ভুল নেই। রমাও চায় না এই বেদে যুবক মূলধারার জনজীবনের কাজে লাগুক। রমা পুনরায় বললে---ওকে এমন করে কখনো বলো না। ও যে তোমার সাথে এত কথা বলল, কিংবা আমার সাথে যে কথা বলে, এটা ইদানিং ওর পরিবর্তন। আগে তো ও সারাক্ষণ নিজের জগতে গম্ভীর হয়ে থাকতো। আমি তো অবাক হয়ে যেতাম একটা লোক এমনিতে এমন একটা একা নির্জন ঘরে দিনরাত থাকে। তারওপর এমন নির্বাক থাকে কি করে?

----কেন ষষ্ঠীপদ তো ওর খুব ভালো বন্ধু বলেই জানলাম! পীযুষ জিজ্ঞেস করল।

রমা বললে----ষষ্ঠীপদ তার বন্ধু হলেও শম্ভুর একার জগতে সে কেবল একাই থাকে। ষষ্ঠীপদ ঠিক শম্ভুর মত নয়। বরং ও তোমার ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করার মত কমপ্লিট বার্গেইনার।

----এটা বার্গেইন নয় রমা। এতে বিজ্ঞান, জনমানুষ, শম্ভুর; সকলেরই ভালো হবে।

রমা হেসে বললে---মোটেই না। শম্ভুর অবস্থা তখন কেমন হবে জানো? তোমার ঐ কাচের বাক্সে রাখা সাপগুলোর মত। শম্ভু কিন্তু সাপগুলোর মত বোকা নয়, ও আগে থেকেই বুঝতে পারে, তাই চায় না এই ফাঁদে পড়তে।

পীযুষের মনে হল রমাও কেমন যেন স্টুপিডের মত কথা বলছে। ও আর কথা না বাড়িয়ে বললে---যাই হোক। খিদে পেয়েছে খেতে দাও। রাত বাড়ছে। কাল কলেজ যেতেই হবে। বারোটায় ক্লাস, ঠিক সময় পৌঁছাতে হলে ভোরে বেরোতে হবে।
Like Reply
খাবার সময়ও গোঁ মেরে ছিল শম্ভু। রমা বা পীযুষ কেউই ওকে ঘাঁটানোর সাহস পেল না। নীচের তক্তাপোষে ম্যাট্রেস বিছানো বিছানা পরিপাটি করে রমা বললে---কই গো হল তোমার সিগারেট খাওয়া।

পীযুষ ধূমপান করে এসে ছেলের পাশে শুয়ে পড়ল। রমা তখন কলতলায়। এভাবে টিউওয়েল টিপে বাসন ধোয়ায় ও অনভ্যস্ত। বড্ড খাটতে হয় ওকে। পীযুষের বড্ড খারাপ লাগছিল স্ত্রী পুত্রকে এমন একটা মাটির এক কামরা ঘরে চাল চুলোহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে।

রমা যখন বাসনকোচন ধুয়ে এলো পীযুষ গা এলিয়ে ছেলের সাথে গল্প করছে। কোমরের কাছে শাড়িটা সারাদিন টাইট হয়ে বসে থাকে মৃদু ঢিলে করে চুলের খোঁপা খুলে ক্লিপটা মুখে চেপে বেঁধে নিল রমা। পীযুষ জানে রমা পরিশ্রমী, সংসার আবদ্ধ জীবন ভালোবাসে। তা বলে এমন অবস্থায় থাকতে হবে এ কথা যে ওরা কখনোই ভাবতে পারেনি। বরং রমা যেন মানিয়ে নিয়েছে এই জীবন। সাবলীল ভাবে ও এই সংসারের কাজ সামলে যাচ্ছে।
বাল্বের আলোটা নিভিয়ে ডিম আলোটা জ্বেলে তক্তাপোশে ছেলের আরেক পাশে শুয়ে পড়ল রমা। পিকলু বাবার সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। রমা বললে---জেগে আছো?

---হুম্ম।

---শম্ভুর বোধ হয় রাগ হয়েছে। দেখলে না কেমন খাবার সময়ও গম্ভীর হয়ে থাকলো।

পীযুষ ঘুরে পড়ল রমার দিকে, বললে---এমন কিছু তো বলিনি ওকে।

---আসলে ও খুব স্পর্শকাতর। ভীষণ জেদি। সে যাইহোক আমাদের পিকলুকে তো ও না থাকলে ফিরে পেতাম না।

পীযুষ চুপ করে রইল। আস্তে আস্তে রাত্রি বাড়ছে। রমা বা পীযুষ কেউই ঘুমোয়নি। রমা জানে পীযুষ তাকে ডেকে তুলবে আজ। সকাল থেকেই ওরা দুজনে অস্থির হয়ে আছে। রমার শরীরটা বড্ড চাইছে আজ। শেষ প্রায় দু' আড়াই মাস আগে ওরা শরীরী মিলনে অংশ নিয়েছিল। পীযুষ একবার পিকলুকে দেখে নিয়ে ফিসফিস করে বললে---রমা?

রমা উঠে বসল। ছেলের দিকে তাকালো একবার; পিকলু পাশ ফিরে শুয়ে আছে। একটু ঠেলে ওকে নিজের শোবার জায়গাটায় সরিয়ে দিল। তারপর পীযুষের কাছে গিয়ে শুয়ে পড়ল ও। খুব ফিসফিসে গলায় বললে---বেশি শব্দ করবে না। ওদিকটা একটু সরে শোও।

---আর কত সরব? তক্তপোষ থেকে পড়ে যাবো যে।

---বেশ শব্দ করে এই চৌকিটা। নীচে বিছানা করে নিলে ভালো হত। প্রস্তাব দিল রমা।

---এখন? এসব আর কিছুর দরকার নেই। এই তোমার আবার ঐ শম্ভু এসে পড়বে না তো?

রমা মৃদু হেসে বললে---কখনো ওকে এমন দুর্বৃত্ত হতে দেখিনি। আমি তো প্রতিদিন এখানে ছেলেকে নিয়ে শুচ্ছি। কোনোদিন ওকে দেখিনি কোনো কু আচরণ করতে।

পীযুষ ঠাট্টা করে বললে---এখন তো ও তোমার এই সরবেড়িয়াতে স্বামী বলে পরিচিত। সুযোগ নিতে পারে।

---ধ্যাৎ।
রমা স্বামীর স্যান্ডো পরিহিত পুরুষালি বুকে মুখ গুঁজে চুমু দিল একটা। বললে---আজ দুপুরে স্নান করে নিতে পারতে।

---ভোরে স্নান করে বেরিয়েছি। তোমার যা এখানে ব্যবস্থা। ঐ বাথরুমে বালতি বয়ে যাওয়া। কি করে যে পারছ রমা!

---আমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। প্রথম দিকে একটু বিষয়টা মানিয়ে নিতে হয়েছিল, এই যা।

পীযুষ পুনরায় মজা করে বললে---সে তো ঠিক, নতুন স্বামীর ঘর কিনা।

রমার মুখটা তখন দেখবার মত। হালকা ডিম আলোয় ওর ফর্সা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আঁচলের ভেতর হাত ভরে ব্লাউজের হুক আলগা করতে করতে বললে---জানো, সেদিন যখন পুরুতমশাই জিজ্ঞেস করলেন বয়স কত। বড্ড লজ্জার পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। শম্ভু আমার চেয়ে সাত বছরের ছোটো।

----তাতে কি, তুমি জানো কত প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের স্ত্রীরা তাদের চেয়ে বয়সে বড়। পাশ্চাত্যে এটা খুব স্বাভাবিক। আমাদের দেশেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। মহাভারতেই তো এমন ভুরি ভুরি চরিত্র আছে। নকুল, সহদেব দ্রৌপদীর চেয়ে বয়সে ছোট ছিল। তুমি না হয় সামান্য বেদের স্ত্রী।

রমা রাগ করে মুখ সরিয়ে বললে---এই যে মিস্টার, আমি শম্ভুর স্ত্রী নই।

পীযুষ রমাকে আরেকটু রাগানোর জন্য ইচ্ছেকৃত বললে---পিকলুর মা, যে পিকলুর বাবার একমাত্র স্ত্রী সেটা না হয় ঠিক আছে, একটা যুবক স্বামী বাড়তি থাকলে ক্ষতি কি!

---ঠিক আছে, তুমি এমন আমায় নিয়ে যতখুশি নোংরা মজা করো। আমি ওপাশে চললাম।

পীযুষ হেসে রমাকে আরো বুকের গভীরে টেনে আনলো। বললে---এই যে আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার কামদেবী, তুমি এমন মুহূর্তে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমার কি হবে!

রমা হেসে পীযুষের বুকে একটা মৃদু ঘুষি মারলো। তার শাঁখা-পোলা পরা হাতটি ছনছনিয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ। পীযুষও কথা না বাড়িয়ে নিজের ঠোঁটে রমার ঠোঁট চেপে ধরল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রমা তার প্যাসিভ অবস্থান ছেড়ে সক্রিয় হয়ে উঠল চুম্বনে। স্বামীর ঠোঁটটা ও নিজেই পুরে রেখে চুষতে লাগলো মুখে। স্বামীর মুখের চেনা সিগারেটের গন্ধটা ওর খারাপ লাগে না। পীযুষের মাথাটাকে হাত দিয়ে আরো নিজের কাছে এনে চুমু খেতে লাগলো রমা।

পীযুষ বুঝতে পারছে ওর মত রমাও উদগ্রীব হয়ে আছে। আঁচলের তলায় ব্রেসিয়ার ছাড়া এখন কিছু নেই। পীযুষ ওর ওপর দিয়েই ধরে ফেলল রমার বাম স্তনটা। রমার দুটি স্তনই স্পর্শকাতর, তবে বামস্তনটা যে ডানের চেয়ে বেশি চায় সেটা পীযুষের দীর্ঘ দাম্পত্যে চেনা। ও তাই আগেই ওখানে স্পর্শ করেছে। ঠোঁট ছেড়ে পীযুষ এখন রমার ঘাড়ে, গলায় চুমু দিচ্ছে। সেও আজ অধৈর্য্য। রমার মাতৃস্তন জোড়া মুখে নিতে ও অস্থির। শুষ্ক ডান স্তনে মুখ নামিয়ে শিশুর মত চুষতে লাগলো। রমার চোখে মুখে আনন্দছ্বলতা। স্বামীর মুখে স্তনের বৃন্তের মৃদু কামড়ে ওর উরুসন্ধির একান্ত গোপনীয় যোনিতে শিহরণ শুরু হয়েছে। তবে এখন নয়। এখন ও চায় তার অভুক্ত স্বামীটিকে তৃপ্তি মত স্তন টানাতে।

স্তনচোষনরত পীযুষের কোঁকড়া চুলের ফাঁকে হাত বুলিয়ে চুমু দিচ্ছে রমা। মাঝে একবার মুখ ঘুরিয়ে দেখে নিল ঘুমন্ত ছেলেকে। তা নাহলে এমন দৃশ্য দেখে ছেলে ভাববে তার পিতাটি শিশু হয়ে তার মায়ের দুধ খাচ্ছে এ বয়সে। ডান স্তন ছেড়ে বাম স্তনে মুখ ডোবালো পীযুষ। আঁচলের তলায় ঢেকে দিল স্বামীর মাথাটা। যেন রমা এখন পীযুষের মা। বোঁটা দুটিতে হালকা হালকা কামড় আর চোষনে রমারও শ্বাস-প্রশ্বাস বাড়ছে।

এমন চরম মুহূর্তে হঠাৎ করে রমার মনে হল দোচালার মাটির সিঁড়িতে একটা ছায়ামূর্তি। সত্যিই কি তাই? নাকি ভ্রূম! ডিম আলোয় না রমা বা পীযুষকে না ঐ ছায়ামূর্তিটিকে স্পষ্ট করে দেখা সম্ভব। তবু রমা বুঝতে পারছে শম্ভু সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে। এক ঝটকায় পীযুষকে বুক থেকে সরিয়ে শাড়িটা ঠিক করে নিল রমা। বললে---শম্ভু!

সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো ছায়ামূর্তিটি। বললে---দিদিমণি, দিশলাইটা কুথায় রাইখছেন।

---ঐ যে গ্যাস স্টোভের পাশে। শম্ভু গ্যাস স্টোভের পাশ থেকে দেশলাই নিয়ে বিড়ি ধরালো। যাবার সময় একবার রমার দিকে তাকালো। আবছা আলোয় শম্ভুর সেই মাদকতা মেশানো চোখটি একঝলক দেখতে পেয়েছে রমা। ঐ চোখে অবশ্য কোনো দুর্বৃত্তসুলভ ছাপ নেই, বরং রমা দেখতে পেয়েছে একরাশ বেদনা যেন খেলা করছে চোখের কোনে।

বিরক্ত হল পীযুষ। দীর্ঘ আড়াই মাস পর স্ত্রীকে এত কাছে পেয়েছে সে। আর সেখানেই ব্যাঘাত ঘটালো এই বেদে যুবকটা। শম্ভু চলে যেতে পীযুষ পুনরায় রমার স্তনে মুখ রাখলো। অবশ্য রমার আর এখন তেমন কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। বরং শম্ভুর ব্যথাতুর চোখ দুটো তাকে অনীহা যোগাচ্ছে। বললে---ছাড়ো!

---কি হল রমা? পীযুষ ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল স্ত্রীকে।

---ভাল্লাগছে না।

পীযুষ চিৎ হয়ে শুয়ে রইল। ওর মুখে একরাশ বিরক্তির ছাপ। রমা উঠে গেল আলোটা জ্বেলে বাথরুমের দিকে। পীযুষ উঠে গেল উঠোনের দিকে, সিগারেট ধরালো একটা। রমা বাথরুম সেরে কলতলায় এসে হাত পা ধুতে গিয়ে দেখল দোচালার জানলার কাছে দাঁড়িয়ে আছে শম্ভু। চাঁদের আলো ওর চোখে মুখে। বেদনাবিদ্ধ চোখ রমার দিকেই নিবদ্ধ।

পীযুষ আর রমার মাঝে পিকলু। পীযুষ যে বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তা রমার বুঝতে বাকি নেই। সেজন্য রমারও একটা খারাপলাগা অনুভূত হচ্ছে। ওর চোখ খোলা। শম্ভুর চোখ জোড়া ওকে এখনো অস্থির করে রাখছে। যুবক ছেলেটার বুকে অনেক ভাঙাচোরা দেখতে পায় রমা। অন্য কেউ যা টের পায় না। শম্ভু কি রমাকে ভালোবেসে ফেলছে? ভাবনার ভ্রূণের সুক্ষ জন্ম হতেই রমার বুকে আন্দোলিত হচ্ছে একটা তীব্র অকাল ঝড়। স্বামীটি তার আজ তাকে কাছে পেতে চেয়েছিল, সেও তো চেয়েছিল বহুদিন পর শারীরিক তৃপ্তি পেতে। অথচ সে স্বামীর ন্যায্য চাহিদার চেয়ে শম্ভুর বুকের অন্যায্য যন্ত্রনাকে গুরুত্ব দিয়েছে।

চলবে।
Like Reply
লেখার যা কোয়ালিটি, প্লটের যা বাঁধুনি, এ নিয়ে একটা ছায়াছবি তৈরি করা যায়।।
Like Reply
Chobi dekha jai na kno?
Like Reply
অসাধারণ!
Like Reply
Darun hoyeche dada asadharon... Porer update ee jano sombhu jano roma ke chobol mere bish dhale
Like Reply
এজন্যই আমার পছন্দতালিকায় আপনি প্রথম ।পরবর্তি আপডেট এর অপেক্ষায় আছিSmile
Like Reply
সব অভিযোগ শেষ, আপনি সেরা,
Like Reply
পরবর্তী আপডেট কবে আসবে দাদা?
Like Reply
সবুরে মেওয়াও ফলেছে। অসাধারণ হয়েছে। এত সুন্দর করে এগিয়ে যাচ্ছে যা একজন নামকরা লেখক মতো।কতো মনোযোগ দিয়ে দাদা লেখেন তা বুঝতে পারছি।
❤️‍?❤️‍?❤️‍??
Like Reply
এত সুন্দর করে কেও লিখতেও পারে!!
আহা পুরো মন ভরিয়ে দিয়েছেন দাদা
পরের অংশের জন্য মুখিয়ে আছি
Like Reply
Brilliant as always and thank you for such a huge update...saathe aachhi.
Like Reply




Users browsing this thread: 5 Guest(s)