Thread Rating:
  • 139 Vote(s) - 3.73 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
দারুণ হচ্ছে। চালিয়ে যান।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
আশায় আছি
Like Reply
দুটো পর্ব একসাথে পড়লাম। দুর্দান্ত বর্ণনা! যেমন ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে তেমনি মনের মধ্যে অনবরত ছুটতে থাকা চঞ্চল অনুভূতি গুলোর। এ গল্প চাইলেই অশালীন পরকীয়ার দিকে চলে যেতেই পারতো কিন্তু সে পথে না গিয়ে এক কঠিন মরুভুমির পথে এগিয়ে চলেছে নিজ গতিতে। শম্ভুর মধ্যে বিষ যেমন আছে, তেমনি সে বিষকে কাবু করতেও জানে। সে প্রয়োজনে অত্যাচারী স্বৈরাচারী সব হতে পারে কিন্তু যার তার সঙ্গে নয়। চারিত্রিক দৃঢ়তা তাকে আর পাঁচটা পার্ভার্ট এর থেকে পৃথক করে। আর তাই এই কাহিনী পরকীয়ার থেকেও বেশি মানবিকতার। দারুন দারুন। ♥️
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
ফাটাফাটি আপডেট   yourock

[Image: Images-2-2-1.jpg]

Like Reply
(29-11-2023, 08:27 AM)kishen Wrote: Deshe pora golpo tir naam ki chhilo???

গিরগিটি। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর লেখা
Like Reply
(30-11-2023, 02:10 AM)Amiamarmoto234 Wrote: গিরগিটি। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর লেখা

Thank you
Like Reply
Darun Update
Like Reply
পরবর্তী আপডেট কবে আসবে?
Like Reply
Update please...
Like Reply
আপডেটের দাবি যেমন কেউ কেউ রাখছেন তেমনি আপডেট আসলে অন্তত একটা করে মতামতও দিন। একজন লেখকের কাছে আপনাদের মন্তব্য টনিকের কাজ করে। তার সকল চেষ্টা, সময় ব্যয় উসুল হয়ে যায় আপনাদের মতামত পেয়ে। আর লেখককে একটু সময় দিন। তাড়াহুড়ো করলে লেখার মান খারাপ হয়ে যাবে। তাই একটু সময় নিয়ে শান্তিতে সে লিখে পোস্ট করলে আমরাও উপভোগ করবো। ❤
[+] 8 users Like Baban's post
Like Reply
(28-11-2023, 11:01 PM)Henry Wrote: শম্ভুর মাথাটা গরম হয়ে গেল। তার আগেই ষষ্ঠীপদ সামলে নিয়ে বললে---ইউসুফ সাহেব, কুনো মেয়েছেলে লা গো। শহুর থিকে দিদিমণিটা আসসে, তার ব্যাটাটারে সাপে কাটছে বইলে। দিদিমণির বরটাও আইসে, আজই আইসছিল। কলকাতা শহুরে কলেজের বড় মাস্টারটা আছে দিদিমণির বরটা।


অমনি দীননাথ শাসিয়ে উঠল---চুপ কর ষষ্ঠী! আমরা কি বুঝি লাই, কলকাতা শহরে মাস্টারের বউটাকে ফুঁসলিয়ে লিয়ে আসসে এই বেদের ব্যাটা। শালা এর বাপটা ভি তো ফুঁসলাই ছিল জেলে পাড়ার সনাতন মাঝির বেটিরে। যাবে কুথা রক্ত আছে যে।

শম্ভুর মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। বাপের নামে গালাগালি সহ্য করতে পারলো না সে। উত্তেজিত কন্ঠে তেড়ে যেতে লাগলো দীননাথের দিকে---কি কইলি, মোর বাপের নামে গালি দিস রেন্ডির পো!

তৎক্ষনাৎ দীননাথের গলাটা চেপে ধরল শম্ভু। মাতব্বর দীননাথের তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ষষ্ঠী বুঝল প্রচন্ড বিপদ। শম্ভুর গায়ে অদম্য জোর। কিন্তু ইউসুফ মোল্লার বিশাল বাহিনী। এই মুহুর্তেই সঙ্গে আছে দশটা তাগড়া যুবক ছেলে। তবে ইউসুফ নিজেই শান্ত করল সবাইকে। শম্ভুকে বললে---বললি লা তুকে, তুই ভীমনাগ বেদের ব্যাটা আছিস। তাই তুরে কিছু বলব লাই। গায়ে হাত দিবে লাই কেউ। কিন্তু তু যদি যে মেয়েছেলেরে ভাগাই লিয়ে আসছিস, তারে ঘরে রাইখতে চাস, তবে বিয়ে কইরে রাখ। কেউ কিচ্ছু বইলবে লাই, ইটা ইউসুফ মোল্লার এক কথা। এমনি এ গাঁয়ে রাইখতে পারবি লাই।

দেয়ালের আড়াল থেকেও রমা কথাগুলো শুনতে পাচ্ছিল। গ্রামে গঞ্জে রাজনৈতিক হানাহানি আর খুনোখুনি এসব প্রতিদিন খবরের কাগজে পাওয়া যায়। কথায় কথায় ভোটের সময় গুলি-বোমা চলে। এই পরিস্থিতি যে আসলে শম্ভুকে বিপদে ফেলল সেটা বুঝতে রমার বাকি নেই।

শম্ভুর রাগে গা কাঁপছে। ইচ্ছে করছে এখুনি দীননাথকে কুপিয়ে খুন করে ফেলে। ষষ্ঠী তাকে ঠান্ডা করে বললে---শম্ভু ঘুমাবি যা। মাথা ঠান্ডা রাখ।

ঘরে ঢুকতেই সে দেখল রমা বসে রয়েছে বিছানায় শম্ভু, শান্ত স্থির হয়ে এক দৃষ্টে চেয়ে। রমা চা করে নিয়ে গিয়ে ওর পাশে রাখলো। নিজেও চায়ে চুমুক দিচ্ছে রমা। শম্ভু রমার উপস্থিতি টের পেয়েও না তাকিয়ে বললে---দিদিমণি, আপনি আজই চইলে যাবেন। বাপ-দাদার ঘর মোর। উরা সাংঘ।

----কিন্তু পিকলুটার কি হবে শম্ভু। আমার ছেলেকে কি তুমি....

---দিখেন দিদিমণি, আমি জেবনটা বাঁচাই দিছি আপনার ছেলের। আপনি ইবার ডাক্তারটা দিখাই লেন। দিখবেন ঠিক সুস্থটা হয়ে যাবে।

---কিন্তু আমার যে বিশ্বাস হয় না শম্ভু। ডাক্তার তো পারেনি ওকে বাঁচাতে। তুমিই তো পেরেছ।
[quote pid='5428032' dateline='1701192696']
a ki holo go amj je akdom bonno vabe addicted hoye galam ai golpe ...arom vabau ki addict kora jai 
tomar ja lekhoni tate mone hochhe jano shikari shikar korche  
imean pathok ra shikar ar lakhok shikari
[/quote]
[quote pid='5428032' dateline='1701192696']
tar tari update din dada 
[/quote]
Like Reply
হেনরি দা খুবই সুন্দর চলছে, আশা করছি পরবর্তী অংশে কিছু একটা ভালো উত্তেজনা পূর্ণ কাহিনী নিয়ে আসবেন। আশায় রইলাম পরবর্তী আপডেটের জন্য। আপনার লেখায় জাদু আছে একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না করে থাকা যায় না।
Rajkumar Roy
Like Reply
Henry da ekta update din taratari...
[+] 1 user Likes Farz@123's post
Like Reply
সবকিছু ঠিকঠাক চললে রাতে আপডেট আসবে।
[+] 6 users Like Henry's post
Like Reply
দাদা আপডেটের অপেক্ষায় আছি
Like Reply
শম্ভু যখন ফিরল ঘরে কেউ নেই। কপাটে শেকল তোলা। ঠিক যেভাবে দু হপ্তা আগে সে ফিরে দেখত তার দোচালা ঘরটির দরজা ভেতর থেকে খুলবার কেউ নেই, তেমন। ভেতরে সমস্ত জিনিসগুলো রেখে গেছে রমা। গ্যাস স্টোভ, মিক্সি মেশিন, বাসনপত্র, স্ট্যান্ড ফ্যান যেমনটি ছিল তেমন। শুধু দড়িতে মেলা রমার আর পিকলুর জামা-কাপড়গুলো নেই।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলল শম্ভু। খাবারের ঢাকা উল্টে দেখল যাবার আগে রমা তার জন্য রেঁধে রেখে গেছে। কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না শম্ভুর। ক'টা দিন তার বৈরাগি যৌবনে হঠাৎ করে ছন্দ ফিরেছিল। নদী থেকে ফিরলে সে স্নানে যেত, নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতো যতটা পারে। মাথায় চিরুনী দিত। এখন সেসবের আর দরকার নেই।

দোচালায় গিয়ে ঝাঁপিগুলো খুলে জীবগুলোকে দেখতে লাগলো সে। মনে হল ওর জীবনে কারোরই স্থায়িত্ব নেই। এই জীবগুলোও একদিন ছেড়ে চলে যাবে তাকে, যেমন পদ্ম চলে গেছিল একদিন হঠাৎ করে।

টানটান দেহটা এলিয়ে দিল শীতলপাটিতে। অন্ধকার হাতড়ে বিড়িটা খুঁজে ধরালো। ভাবতে লাগলো যাবারই কথা ছিল একদিন দিদিমণিদের। না হয় তাড়াতাড়ি চলে যেতে হল। খালি খালি ও কিসব ভেবে কষ্ট পাচ্ছে। তবে শম্ভুর মনে এখনো ক্ষতটা রয়ে গেছে, দিদিমণির কাছে ছোট হয়ে গেল সে। কতগুলো বদ লোক এসে যা নয় তা বলে গেল, আর সে কিনা কিছুই করতে পারলো না।

উঠে পড়ল শম্ভু, কলতলায় গেল স্নানে। রমা থাকার ফলে তার দু' সপ্তাহে যে অভ্যাস তৈরি হয়েছে সেটাকে সে বদলাতে পারলো না। কলতলায় এখনো রমার স্নান করে যাওয়া সাবান-শ্যাম্পুর সুগন্ধটা পাচ্ছে সে। ভালো করে ঘ্রাণ নিল ও। শরীরটা টানটান করে উঠল তার। পাশেই রমার ব্যবহৃত ছোট হয়ে আসা সাবানটা খাপে রাখা। তুলে নিয়ে সর্বাঙ্গে মাখতে লাগলো সে। অদ্ভুত উত্তেজনা হচ্ছে তার। এই সাবান দিদিমণির গায়ের সর্বাঙ্গ ছুঁয়েছে। ছুঁয়েছে তার লুকিয়ে দেখা ব্লাউজাবৃত্ত দিদিমণির পুষ্ট স্তনগুলিতে।
সাবানটার রঙও যেন দিদিমণির গায়ের মত ফর্সা। নিজের বুকে পেটে ঘষে ঘষে তীব্র সুখ পেতে লাগলো শম্ভু। শহরের এই বিবাহিত ভদ্রবাড়ির দিদিমণি তার কাছে চাঁদের মত দূরবর্তী। তাকে ছোঁয়া তার অসাধ্য, শম্ভু তা বিলক্ষণ জানে। সেই দিদিমণির গায়ের কোনায় কোনায় পৌঁছানো সাবান এখন তার পুরুষালি কঠিন শরীরে সর্বত্র মাখামাখি।

অদম্য উত্তেজনা টের পাচ্ছে শম্ভু। বড় অবাধ্য এই উত্তেজনা শম্ভুর শরীরকে মাঝে মধ্যে তীব্র করে তোলে। হলোও তাই। স্নান করে এসে লক্ষ্য করল দিদিমণির ব্যবহৃত পোষাকের দু একটি জিনিস ছেড়ে গেছে। তার মধ্যে রয়েছে বহুমূল্যবান অন্তর্বাসটা। কালো ব্রা'টা হাতে নিল শম্ভু। নাকে ঠেকিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে এক আদিম উন্মাদনা টের পাচ্ছে। এখন তার মাথার ঠিক নেই। বারবার এই ব্রায়ে চুমু খেয়েও খান্ত হচ্ছে না তার অতৃপ্ত কামনা। কোমরের প্যাঁচ থেকে লুঙ্গিটা ছুঁড়ে ফেলল ও। ফুঁসে উঠল দুই উরুরু মাঝে ওর বৃহৎ গোখরোটা। যার বিষের জ্বালায় গোলাপি একরাতেই পালিয়েছে। বিশাল দন্ডটা ফুঁসছে ক্ষোভে। শম্ভু রমার ব্রেসিয়ারটা চেপে ধরল তার অতৃপ্ত দানবিক লিঙ্গের উপর। কামার্ত স্বরে উচ্চারণ করল---দিদিমণিইইইই...!

শম্ভু জানে এখন হস্তমৈথুন ছাড়া তার উপায় নেই। হাতের মধ্যে শক্ত দানবটা মুঠিয়ে ধরে দ্রুত ওঠানামা চালাতে লাগলো রমাকে কল্পনা করে। ব্রেসিয়ারটা তার লিঙ্গে জড়ানো। শুয়ে পড়ল রমার নরম ম্যাট্রেস দেওয়া তক্তাপোশে। চোখ বুজে শুধু কল্পনা করে যাচ্ছে সে রমাকে, ঠিক যেন রমা তার কামদেবীর প্রবল বাসনাময় মূর্তি। শম্ভুর চোখে ভাসছে রমার নরম শুভ্র শ্বেত পেটের মাংসল ভাঁজ, ভারী ও ঈষৎ ঝুলে থাকা মাংসল দুটো পুষ্ট তাল। যেগুলিকে ও কেবল ব্লাউজ আবৃতই দেখেছে। কল্পনায় শম্ভু দেখতে পাচ্ছে রমার মিষ্টি ভরাট মুখে একরাশ ব্যক্তিত্বময়ী হাসি, তার ভাত বেড়ে দেওয়া, ভদ্র সভ্য ভাবে কথা বলা, শাড়ি আর ব্লাউজের সংযত ভাঁজ। সবটাই যেন এখন শম্ভু বেদের কামোদ্দীপনার অঙ্গ।

কতক্ষণ শম্ভু তার দিদিমণিটিকে ভেবে হস্তমৈথুন করেছে ঠিক নেই। বীর্য স্খলনের পরও চোখ বুজে আছে। রমার পরিত্যাক্ত ব্রেসিয়ার তখন থকথকে আঠালো বেদের বীর্যে ভরে গেছে। এখন যেন হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেছে শম্ভু। যে দিদিমণিকে সে শ্রদ্ধা করেছিল, যে দিদিমণিটি কিনা অত্যন্ত শিক্ষিত একজন নারী, যার ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ভদ্র সভ্য, যে অসহায় হয়ে ছেলেকে নিয়ে তার দ্বারস্থ হয়েছিল শুধু চিকিৎসার জন্য, যে দিদিমণির সম্মান রক্ষার্থে ব্যর্থ হওয়ায় তার মনের মধ্যে গ্লানি এখনো পুষে আছে; সেই দিদিমণির প্রতিই কিনা সে শেষ পর্যন্ত বিকৃত গোপন বাসনা মেটালো!

ব্রেসিয়ারটার দিকে তাকালো শম্ভু। প্রচুর বীর্য ঢেলেছে তাতে ও। যেন দু হপ্তা ধরে তার মনের অবচেতনের গোপন পাপ জমে আছে তাতে। এখন আরেকটি গ্লানি তাকে চেপে ধরল। মন খারাপ করে উঠে বসল সে। সোজাসুজি চলে গেল নদীর পাড়ে। নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলল ব্রেসিয়ারটা। বিড়ি ধরিয়ে বসে রইল নিশ্চল হয়ে, যেন এই কালনাগিনী পাড়ের অরণ্যে ঘেরা রাতে সে এক নিঃসঙ্গ অভিশপ্ত দানব।
+++++
Like Reply
পর্ব ৭

আজ দু'দিন হল লেক টাউনের বাড়িতে ফিরে এসেছে পিকলু ও রমা। সুন্দরবনের বন্য প্রকৃতি থেকে ফেরা রমার কাছে দীর্ঘ পরিচিত কলকাতা শহর হঠাৎ করে নতুন মনে হচ্ছে। পরিবেশের কৃত্রিমতায় শ্বাস-প্রশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাবে। পিকলু শুয়ে আছে তার ঘরে, দুপুরবেলাটা অবসন্ন কাটছে রমার। বড্ড ঘুম ঘুম ভাব, আজ রান্নাঘরেও ঢোকেনি ও। সকালে এক ডাক্তার এসে পিকলুকে দেখে গেছেন। একগাদা মেডিসিন লিখে দিয়ে গেছেন তিনি।
পীযুষ কলেজ বেরিয়ে যাবার পর, রমা সেই যে স্নান করে ঘুমিয়েছে আর উঠতে ইচ্ছে করছে না। চাঁপা এখন রান্নাঘরে। রান্না সেরে ও রমাকে ডাকতে রমার মধ্যে বিরক্তির ভাব ফুটে উঠল। বললে---বল, কি বলবি?

---বৌদি আমার কাজটা শেষ হছে। আমি চইললাম। দরজাটা লাগিয়ে লেন।

রমাকে অগত্যা উঠতে হল। বাইরে ভীষণ কড়কড়ে রোদ। কোলাপ্সিবল গেটটায় তালা এঁটে ছাদে এলো ও। পিকলুকে খাইয়ে দিয়েছে সেই সকালে। ছেলেটাও কেমন ঘুমোচ্ছে। ওকে ঘুম থেকে তুলে গা হাত মুছিয়ে দিল রমা। দু'দিন হল পিকলুর মুখে কিছু রুচছে না। তবু জোর করে খাওয়ালো ওকে। তারপর ওষুধ খাইয়ে ছেলের পাশে শুয়ে পড়ল।

ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে। সবসময় তার একটা ভয়, ডাক্তারের চিকিৎসায় পিকলু উঠে দাঁড়াবে তো! যে চিকিৎসা বিজ্ঞান কার্যত পিকলুর মৃত্যু নিশ্চিত বলেছিল, জ্ঞান ফেরাতে পারেনি, সেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভরসা করতে পারছে না রমা। ছেলের গালে হাত রাখলো সে। পিকলু চায় মায়ের দিকে ঘুরে শুতে। কিন্তু ওর পক্ষে নড়াচড়া করা সম্ভব নয়। রমাই পিকলুকে ঘুরিয়ে দিল নিজের দিকে। মায়ের আদর খাবার শিশুতোষ ইচ্ছে মাঝে মধ্যেই চেপে বসে ছেলেটার মাথায়।
রমা ঠিক ছোটবেলার মত করে পিকলুকে আদর করে ঘুম পাড়াতে লাগলো। ছেলেটার আঙুলগুলো একবার দেখে নিল সচল আছে কিনা। জ্ঞান ফেরার পর এটুকুই তো উন্নতি হয়েছিল, তার আগেই চলে আসতে হল ওদের।

পীযুষ কলেজের ক্লাস সেরে স্টাফ রুমে বসেছিল, চশমা এঁটে একটা মোটা বই খুলে। এখন পরপর দুটো ক্লাস তার নেই। তারপরের ক্লাসটা সেরেই বাড়ি ফিরবে। এরমধ্যে লাইব্রেরি থেকে সে বেশ কয়েকটা বই সংগ্রহ করেছে, যেগুলি মূলত প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসা সম্পর্কে। বিপ্লব আজ কলেজ আসেনি। ওর আজ ক্লাস থাকে না। হিস্ট্রির তথাগত বাবু, মুঘল আমল নিয়ে পিএইচডি করেছেন। ভারী রসিক মানুষ, আবার ধর্মভীরুও। বয়স রিটায়ার্ডমেন্টের দিকে। সবসময় গোঁফ রাখেন, একমাত্র মুঘল সম্রাট আকবরের নাকি গোঁফ ছিল, আর তাতেই তিনি প্রভাবিত হয়ে এমন আকবরসুলভ গোঁফ রাখেন। হাতে আবার গুচ্ছের আংটি। সবকটিরই নাকি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। পীযুষের পাশে বসে বললেন---ছেলে কেমন আছে মিঃ মৈত্র?

পীযুষ চশমার ওপর দিয়ে তথাগত বাবুকে দেখল। বললে----ভালো আছে অনেকটা।

তথাগত মুখার্জী কপালে হাত স্পর্শ করে বললেন---যাক, তবে ভালো খবর।

হাতের বইটা বন্ধ করে পীযুষ বললে---আচ্ছা, তথাগত বাবু, আপনি বলতে পারবেন আপনাদের হিস্ট্রিতে চরক, শুশ্রুত এঁরা যে চিকিৎসা করতেন তা মেডিসিনাল সায়েন্স, কবিরাজি নাকি তন্ত্রমন্ত্রও ছিল?

তথাগত মুখুজ্জে হাসলেন। বললেন---আপনি যুক্তিবাদী মানুষ, হয়ত সেসব গ্রহণ করবেন না। তবে হিস্ট্রিও আবার সোশ্যাল সায়েন্স, যুক্তিবিজ্ঞান ছাড়া গ্রহণ করে না। কাজেই চরক, শুশ্রুত এদের চিকিৎসা পদ্ধতির এই তন্ত্রমন্ত্র বিষয়টাকে ইতিহাস গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু তাদের চিকিৎসা কেবল মেডিসিনাল সায়েন্সেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কবিরাজি, আয়ুর্বেদ কিংবা তন্ত্রমন্ত্রও ছিল। আয়ুর্বেদ বলে আজ যা জানেন তা আসলে কবিরাজি, প্রাকৃতিক ঔষধ, যোগ, ইউনানি, সিদ্ধা ও তন্ত্রমন্ত্রের একত্রিকরন। যা তখন আয়ুশ নামে পরিচিত ছিল।

পীযুষ বললে---আপনি বিশ্বাস করেন যে একজন মৃত প্রায় মানুষকে কোনোরকম শল্য চিকিৎসা, স্টেরয়েড, ড্রাগস, মেডিসিন, পেসমেকার, হার্ট কিংবা লাংস ট্রান্সপ্ল্যান্ট, ভেন্টিলেশন ইত্যাদি ইত্যাদি যা যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রযুক্তি ছাড়া বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব?

তথাগত মুখার্জী ঈষৎ হাসলেন। বললেন---আমরা এখন আমাদের চারপাশকে যেটুকু চিনি, তাতে হয়ত না। তবে কি জানেন মিঃ মৈত্র, আমি সম্রাট অশোকের সময়কার চিকিৎসা বিজ্ঞান বলতে পারি, যেখানে ঐতিহাসিক তথ্য সহ বলা যায় পারা যেত। এছাড়া মিশর ভ্রমণে আমি দেখেছি কিভাবে ফারাওদের সময়কালে চিকিৎসা হত, দেখলে আপনি চমকে যাবেন। আমি এক ফারাও বংশদ্ভূত স্বল্পবয়সী কিশোরের মমির ফরেন্সিক রিপোর্ট দেখেছি কায়রোতে। যেখানে বিষাক্ত ইজিপসিয়ান ভাইপারের কামড় খাওয়া এক কিশোরকে দীর্ঘদিন চিকিৎসার মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার নমুনা আছে। অদ্ভুতভাবে যে ভাইপার সাপটির সেকালে তো দূরের কথা আজও কোনো এভিএস নেই। সেই কিশোরের মৃত্যু অবশ্য যক্ষায় হয়েছিল, হয়ত স্বল্পবয়সীদের ধূমপানের প্রচলন ছিল বলে।

---এগজেক্টলি! এটাই বলতে চাইছি তথাগত বাবু। পীযুষ উঠে দাঁড়ালো। আমার ছেলের যে প্রাণ সংশয়ের পরিস্থিতি ছিল, যা খুবই ক্রিটিক্যাল। ফরচুনেটলি একজন বেদে প্রাচীন মেডিসিনাল চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে অনেকখানি সুস্থ করে তুলেছে।

হাসলেন তথাগত মুখুজ্জে। বললেন---আপনার এই কথা হয়ত অন্য কেউ বিশ্বাস করবে না বলেই কি আপনি বাকি কলিগদের মিথ্যে বলেছেন?

খানিক বিব্রত বোধ করল পীযুষ। সত্যিই তো, সে কি করে বলবে তার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছে একজন গেঁয়ো অশিক্ষিত বেদে! তাই তাকে বলতে হয়েছে; সাউথে তার বন্ধু চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকেই পিকলুর উন্নতি হয়েছে। অবশ্য তথাগত মুখার্জী মানুষটা একটু অন্যরকম। পীযুষের বিব্রত বোধ কমিয়ে বললেন---মিঃ মৈত্র, আমি কিন্তু আপনার কথাগুলো বিশ্বাস করছি। এবং গোপনও রাখছি। কোনো জনজাতি কেবল তার পেশার ওপর নির্ভর করেই টিকে থাকতে পারে। বনজ শবররা কাঠুরে হয়। জঙ্গল কমছে, জঙ্গলের ওপর অধিকারও কমছে ট্রাইবাল মানুষদের। ফলত অনেক ট্রাইবগুলির মধ্যে শবর জনজাতি সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন উপজাতি। একই চিত্র আপনি টোটো, লেপচাদের ক্ষেত্রেও দেখতে পাবেন। কিন্তু বেদেরা আজও টিকে আছে খুব ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতে হলেও। ভবঘুরে বাসস্থানহীন, কোন আধুনিক পেশাহীন এই মানুষগুলোর কমিউনগুলি কত আগে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কোনোদিন সারা বিশ্বে কোনো জনজাতির মধ্যে দেখেছেন সাপ ধরায় এমন অপূর্ব প্রাকৃতিক দক্ষতা? জার্মানিতে আছে বটে একটি প্রাচীন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান বেদে জনজাতি, তাছাড়া আর কোথাও তেমন নেই। আপনি যা পাবেন এই ভারত উপমহাদেশেই। এদের এই অপূর্ব দক্ষতা কি কেবল মন্ত্র তন্ত্রে? এরা আসলে সাপেদের খুঁটিনাটি চেনে ওদের মত করেই। সেটাও বিজ্ঞান। যা হয়ত আপনার মতো জীববিজ্ঞানীকে বুঝতে অনেক পড়াশোনা করতে হয়েছে। হয়ত বেদেরা যা জানে না, তা যেমন আপনারা জানেন, তেমন আপনারা যা জানেন না, বেদেরা জানে।

পীযুষদের স্টাফ রুমে সিগারেট ধরানোর অনুমতি লাগে না। ও তথাগত মুখুজ্জের হাতে একটা সিগারেট এগিয়ে দিয়ে নিজে ধরালো। তারপর হেসে বললে----আমার হাতে এই বইটা দেখছেন। এটা আমার স্ত্রী'র নৃতত্বের মাস্টার ডিগ্রির বই। নোম্যাডস বা যাযাবরদের জীবন শৈলীর কথা যেমন আছে, তেমন এতে ওদের কিছু যাগযজ্ঞ পদ্ধতির বিষয়ে উল্লেখ আছে। তবে যাযাবররা কখনো ক্যানিবালিজম, হলোকাস্ট এসব করেনি।

তথাগত বাবু ধোঁয়া ছেড়ে বললেন---নোম্যাডসরা ভীষণই মানবিক চরিত্রের হয়। ওরা অপরের প্রতি; এমনকি ভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষদের প্রতিও সদয় হয়। আবার গোঁড়াও হয়। ফলত যাযাবরদের মূল স্রোতে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। আমার খুব মনে আছে মিঃ মৈত্র, আমাদের বাঁকুড়া জেলার শালতোড়ার মাঠে প্রায়শই গাজনের সময় যাযাবর বেদেদের দল আসতো। ওরা অনেক ওষুধ পত্র বিক্রি করত। সাপের খেলা দেখাতো। দড়ির ওপর শিশুদের হাঁটিয়ে পয়সা উপার্জন করত। গ্রামীন প্রান্তিক মানুষগুলো ঐ ওষুধ কিনেও নিত ভিড় করে। আমার মা'ও ঠাকুমার বাতের ব্যথা কমাতে ঔষধ কিনেছিলেন। বাতের ব্যথা যে সম্পূর্ন সেরে গেছিল এমন নয়, তবে ঠাকুমা বলতেন বেশ উপশম হয়। একে আপনি কি বলবেন? এ কি প্রাচীন ভারতীয় মেডিসিনাল সায়েন্স নয়!

পীযুষ তথাগত বাবুর কথাগুলো মন দিয়ে শুনতে লাগলো। একটা কৌতূহলী মন তাকে জাগিয়ে রাখছে বারবার। তথাগত বাবুর দেশবাড়ী বাঁকুড়ার প্রসঙ্গে হঠাৎ করে একটা কথা মনে পড়ল পীযুষের। ডঃ পার্থপ্রতীম মাহাতো বাঁকুড়ার এক কিশোরের ঠিক পিকলুর মত সাপে কাটার কথা বলেছিলেন। তার চিকিৎসা কোথায় হয়েছিল বলতে পারেননি ডঃ মাহাতো। ক'দিন আগে রমাও বলেছিল ঐ শম্ভু বেদের বাবা ভীমনাগ যেন কি নাম, তাঁর কাছে বাঁকুড়া থেকে একজন রোগী এসেছিল এমন সাপে কাটা নিয়ে। ব্যাপারটা যে মিলে যাচ্ছে, আগে কখনো পীযুষ ভাবেনি। সবকিছুই স্ট্রেঞ্জ ঠেকছে পীযুষের। আবার ঐ বেদের চিকিৎসার ওপর আস্থাও দৃঢ় হচ্ছে। মনে মনে ঠিক করল সময় করে একবার ডঃ মাহাতোর সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে।
++++++
[+] 11 users Like Henry's post
Like Reply
রাত থেকে পিকলুর গা গরম। জ্বর জ্বর ভাব। রমা মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে অনবরত। আঙুলগুলো আবার শিথিল হয়ে যাচ্ছে। মাথার মধ্যে কিছু ঢুকছে না পীযুষের। ডাক্তার বাবু আবার একবার এসে দেখে গেছেন। বলে গেছেন প্রয়োজন হলে হাসপাতালে আবার ভর্তি করতে হতে পারে।

খাওয়া দাওয়ায় করেনি তখনও রমা। পীযুষ রাতের খাবার সেরে ছেলের পাশে এসে বসল। বলল---রমা তুমি এবার যাও। খেয়ে এসো।

রমার মুখটা শুকিয়ে গেছে। খুব চিন্তিত মুখে বলল---ডক্টরের মেডিসিন কি আদৌ কাজ করছে? নাকি হিতে বিপরীত হচ্ছে!

---তুমি আগে খেয়ে এসো তো। তারপর ভাবা যাবে। পীযুষ রমাকে বাধ্য করল।

রমা খাবার টেবিলে বসে কোনরকমে রুটি ছিঁড়ে ঝোলের বাটিতে ডুবিয়ে খেতে লাগলো। মুখে অরুচি তারও। ছেলেটাকে চোখের সামনে আবার অসুস্থ হতে দেখতে পারছে না ও।

পীযুষও খেয়াল করল অঘোরে ঘুমোচ্ছে পিকলু। থার্মোমিটার দিয়ে দেখল একশো তিন জ্বর। ডক্টরের প্রেসস্ক্রিবশনে কোনো জ্বরের মেডিসিন লেখা নেই। কিন্তু এখন জ্বরের ওষুধ না দিলে যে জ্বর নামবে না।

স্বামী-স্ত্রী মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে রইল ছেলের পাশে। পীযুষ এর মাঝে বারবার পায়চারি করেছে ব্যালকনিতে। একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়েছে। রাত্রি দু'টা নাগাদ খেয়াল করলো ছেলের পাশেই রমা ঘুমিয়ে পড়েছে। থার্মোমিটার দিল পিকলুর বগলে আবার। এবার জ্বরটা খানিক নেমেছে। পীযুষ রমাকে ডাকলে রমা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল, দেখল স্বামীর হাতে থার্মোমিটার ধরা। বললে---কত দেখাচ্ছে?

---নিরানব্বই।

ভোর রাত থেকে পিকলুর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে রমাই প্রথম খেয়াল করল, ঘুম ভাঙার পর থেকে পিকলু আর স্বাভাবিক কথা বলতে পারছে না। যেটুকু মাত্র জড়তা ছিল, সেটা এখন আরও বেড়ে ঠিক অসংলগ্ন ধরণের হয়ে উঠেছে। পীযুষকে ডেকে বিষয়টা রমা দেখালো। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে ছেলেটা। কথা বলতে গেলে কষ্ট হচ্ছে। সকালে ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে গেছে প্যাথলজির ছেলেটা। ব্লাড রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে।

আজ পীযুষ কলেজে যায়নি। দুজনেই পালা করে ছেলের কাছে রইল। এর মাঝে স্নান খাওয়াটা কোনরকমে সেরে নিয়েছে ওরা। ব্লাড রিপোর্ট পৌঁছল দুপুর দুটো নাগাদ। পীযুষ চোখ বুললো একবার রিপোর্টে। ভালো ঠেকলো না তার। রমাও খানিকটা এই ব্লাড রিপোর্ট বিষয়টা বোঝে। অত্যধিক প্রোটিন মাত্রা রয়েছে রক্তে। যেটা মূলত নিউরোটক্সিন যে সেটা রমাও বুঝতে পারছে। বললে---তার মানে এখনো ভেনম রয়েছে। শম্ভু ঠিক এটাই বলছিল। এত সহজে এই বিষ শরীর থেকে মুক্ত হবে না। ডক্টর বিশেষ কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না।

এমনি সময় হলে এই কথার কোনো গুরুত্ব পীযুষের কাছেও থাকতো না। গত দু-আড়াই সপ্তাহ ধরে ঘটনাপ্রবাহ পীযুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে।

ডক্টর এলেন সাড়ে চারটে নাগাদ। রিপোর্ট দেখলেন, রুগীকেও দেখলেন। খুব একটা আশাবাদী দেখা গেল না তাঁকে। রমা এমনিতেই আর ডক্টরের ওপর একেইবারেই আশা রাখছে না। তাকে যে করেই হোক পিকলুকে শম্ভুর কাছে নিয়ে যেতে হবে। যে কোনো মূল্যে সে ছেলেকে সুস্থ করতে চায়।

গাঢ় বেগুনি নাইটিটা পরে এলোমেলো খোঁপায় রমা দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যালকনিতে। ওর চোখ নিবদ্ধ উল্টো দিকের লাল হয়ে আসা সূর্যাস্তের দিকে। পীযুষ গম্ভীর ভাবে রমার পাশে এসে দাঁড়ালো। স্পষ্টতই ও রমার চোখে দেখতে পাচ্ছে এক দৃঢ়চেতা মনোভাব।

পীযুষ ডাক্তারের নির্দেশ মত বললে---পিকলুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। খুব একটা দেরী করে লাভ নেই।

রমা ঝাঁঝিয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ---লাভ কিচ্ছু হবে না। ছেলেটাকে চোখের সামনে এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখতে থাকবো, আর কিচ্ছু নয়।

---রমা, আর তো কোনো বিকল্প পথ নেই। তুমি চাইলেই তো এখন ওই বেদেকে দেখাতে পারবে না। ওর ওখানকার গ্রাম্য সমস্যা তো তুমি দেখে এসেছো। কোনো সুরাহা আছে কি? ঐ বেদেকে যে বাড়ি এনে রাখা যাবে তার উপায় নেই। ওর নাকি ঐ সুন্দরবনে ওষুধ মেলে! তাজ্জব!

পীযুষের বক্তব্যে রুমা তীক্ষ্ণ ভাবে বললে---কেন তোমার ছেলে অসুস্থ হলে কি হাসপাতাল বাড়ি পৌঁছে যায়? মেডিসিনের দোকান বাড়িতে এসে হাজির হয়? তাহলে শুধু শম্ভুর বেলায় এমন কেন ভাবছ? ও না থাকলে কবেই...

রমা ফুঁপিয়ে উঠল। পীযুষ রমাকে বুকে চেপে শান্ত করে বললে---কিছু তো একটা উপায় বার করতে হবে।

রমা কান্না থামিয়ে বললে---ওরা চায় শম্ভু যদি বিয়ে করে আমাকে রাখে তাহলে আপত্তি নেই। সেরকম হলে...

পীযুষ বিস্মিত হল। এই চরম মুহূর্তেও হেসে ফেলল ও। বললে---পাগল হয়ে গেলে নাকি রমা!

রমা বলল---যা ভাবতে পারো। ছেলেটাকে বাঁচাতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। ষষ্ঠীকে ফোন করেছিলাম। বললাম ওর বাড়িতে যদি আশ্রয় পাওয়া যায়। ও বলল দিদিমনি এই এলাকায় আপনি থাকলেই ওরা শম্ভুকে সন্দেহ করবে, বড্ড বদ লোক ওরা। শম্ভুর ওপর আক্রমণ করবে। কাজেই আমার মনে হয় একটাই পথ, ওখানে কিছুদিন শম্ভুর স্ত্রী হিসেবে মিথ্যে পরিচয়ে থাকা।

রমার এবারের কথাগুলো শুনে পীযুষ বুঝতে পারছে রমা আবেগতাড়িত হলেও সে খুব সিরিয়াসভাবেই বলছে। ছেলেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় বলে তার এই মনে হওয়াটা যদিও বড্ড অযৌক্তিক। তাই পীযুষ বললে---রমা পিকলুর এই অবস্থা দেখে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই অমন আবোল তাবোল বলছ। এটা কোনো যৌক্তিক কথা নয়।

রমা রাগত স্বরে বললে---তোমার এই যৌক্তিক, অযৌক্তিকতার বেড়াজালে পড়ে থাকলে আজ পিকলুকে আমরা দেখতে পেতাম না।
তারপর সুর নরম করে রমা পুনরায় বললে---তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না? শুধু ছেলের জন্য একটা নকল পরিচয় সামনে এনে যদি ছ'টা মাস ওখানে থাকি, কি ক্ষতি হয়ে যাবে? আমাদের ছেলের জীবনের চেয়ে বড় ক্ষতি আর কি আছে? আর শম্ভু? শম্ভু ছেলেটা মোটেই অসভ্য নয়। তুমি ওকে দেখনি হয়ত, ও বড্ড শ্রদ্ধা করে আমাকে। একটা নিতান্তই নাটক করতে পারি না, শুধু ঐ গ্রামে থেকে আমাদের ছেলেকে ভালো করে তুলতে?

পীযুষ বুঝতে পারছে না এখন, কোনটা যৌক্তিক আর কোনটা অযৌক্তিক! রমা এখন পিকলুকে বাঁচাতে মরিয়া। তাই ভালো-মন্দ বিচার করবার ক্ষমতা সে হারিয়েছে। পীযুষও তো ছেলের জীবন ফিরে পেতে চায়। তাদের ছেলেটা স্কুলে যাবে, আবার খেলবে, দৌড়বে, সুইমিং ক্লাবে সাঁতার কাটবে, এ তো তারও ইচ্ছে। কিন্তু এর জন্য রমাকে একটা নাটকীয় সম্পর্কে জড়াতে হবে একটা নিম্ন জনজাতির গ্রাম্য বেদের সাথে; এটা ভীষণই অসঙ্গতিপূর্ন। সঙ্গতিটা যে কি পীযুষও বুঝে উঠতে পারছে না।

সন্ধের দিকে রমাকে পিকুলর পাশে ঠায় বসে থাকতে দেখল পীযুষ। মাঝে মধ্যে এক দৃষ্টে জানলার দিকে বাইরে চেয়ে আছে। রমা জানে নিজের স্বামী পীযুষকে এমন একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দেওয়া তার নৈতিকতাকে হানা দিচ্ছে বারবার। কিন্তু সত্যিই এখন এসব ভাববার মত তার পরিস্থিতি নেই। সে শুধু পিকলুকে সুস্থ দেখতে চায়।

আবার রমার মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব উদ্ভূত হচ্ছে না চেয়েও আচমকা, এমন প্রস্তাব সে শম্ভুকে দিলে শম্ভুই বা মানবে কেন! রমা দেখেছে শম্ভু যতই অশিক্ষিত রূঢ় ধরনের একটা মানুষ হোক, তার মধ্যে একটা অদ্ভুত দৃঢ়তা আছে, জেদ বা গোঁড়ামিও প্রচন্ড। রমা পরস্ত্রী, শম্ভু এমন মিথ্যে পরিচয় দিতে চাইবেই বা কেন! যদিও শম্ভুর মধ্যে একটি সুলক্ষণ সে দেখেছে। সেটি হল মানবিকতা। যদি এই মানবিকতার সৌজন্যেই শম্ভুকে রাজি করানো যায়। যত্ন নিয়ে সে পিকলুকে সুস্থ করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছে। নিশ্চই রমার মত সেও পিকলুকে বাঁচাতে নিছক একটা মিথ্যে পরিচয় দিয়ে গ্রামের ঐ বর্বর লোকগুলোকে খান্ত করে রাখতে রাজি হবে!

রমার হঠাৎ করে শম্ভুর ওপর একটা আস্থা তৈরী হল। এই আস্থাটি অনেক আগেই জন্ম হয়েছিল তার মধ্যে। কিন্তু আজ তার নিজের অন্তরস্থল থেকে বাহির হল ঐ বেদে যুবকের প্রতি একটা বিশ্বাস।

রাত বাড়ছে। পিকলু খানিক সুস্থ হয়েছে বটে, কিন্তু কথা বলা কার্যত অবরুদ্ধ হচ্ছে যত সময় যাচ্ছে। পীযুষও আর পিকলুকে হাসপাতালে ভর্তি করবার প্রস্তাব দেয়নি। রমা অপেক্ষা করছে ভোরের আলো ফোটার। পীযুষের একটা অস্বস্তি হচ্ছে, সেও এখন বিশ্বাসী শম্ভুই তার ছেলেকে আবার সুস্থ করে তুলবে। কিন্তু রমা তার প্রেমিকা, স্ত্রী কিংবা সন্তানের মা, সে নামমাত্র হলেও ক'দিনের জন্য পর পুরুষের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত হবে, হতে পারে তা কলকাতা থেকে সাড়ে তিনঘন্টা পথের দূরবর্তী একটি অখ্যাত গ্রামে। তবু যে রমা মৈত্র তার অর্ধাঙ্গিনী।
চলবে।
Like Reply
Chorom....
Like Reply
(02-12-2023, 11:27 PM)Henry Wrote: রাত থেকে পিকলুর গা গরম। জ্বর জ্বর ভাব। রমা মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে অনবরত। আঙুলগুলো আবার শিথিল হয়ে যাচ্ছে। মাথার মধ্যে কিছু ঢুকছে না পীযুষের। ডাক্তার বাবু আবার একবার এসে দেখে গেছেন। বলে গেছেন প্রয়োজন হলে হাসপাতালে আবার ভর্তি করতে হতে পারে।

খাওয়া দাওয়ায় করেনি তখনও রমা। পীযুষ রাতের খাবার সেরে ছেলের পাশে এসে বসল। বলল---রমা তুমি এবার যাও। খেয়ে এসো।

রমার মুখটা শুকিয়ে গেছে। খুব চিন্তিত মুখে বলল---ডক্টরের মেডিসিন কি আদৌ কাজ করছে? নাকি হিতে বিপরীত হচ্ছে!

---তুমি আগে খেয়ে এসো তো। তারপর ভাবা যাবে। পীযুষ রমাকে বাধ্য করল।

রমা খাবার টেবিলে বসে কোনরকমে রুটি ছিঁড়ে ঝোলের বাটিতে ডুবিয়ে খেতে লাগলো। মুখে অরুচি তারও। ছেলেটাকে চোখের সামনে আবার অসুস্থ হতে দেখতে পারছে না ও।

পীযুষও খেয়াল করল অঘোরে ঘুমোচ্ছে পিকলু। থার্মোমিটার দিয়ে দেখল একশো তিন জ্বর। ডক্টরের প্রেসস্ক্রিবশনে কোনো জ্বরের মেডিসিন লেখা নেই। কিন্তু এখন জ্বরের ওষুধ না দিলে যে জ্বর নামবে না।

স্বামী-স্ত্রী মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে রইল ছেলের পাশে। পীযুষ এর মাঝে বারবার পায়চারি করেছে ব্যালকনিতে। একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়েছে। রাত্রি দু'টা নাগাদ খেয়াল করলো ছেলের পাশেই রমা ঘুমিয়ে পড়েছে। থার্মোমিটার দিল পিকলুর বগলে আবার। এবার জ্বরটা খানিক নেমেছে। পীযুষ রমাকে ডাকলে রমা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল, দেখল স্বামীর হাতে থার্মোমিটার ধরা। বললে---কত দেখাচ্ছে?

---নিরানব্বই।

ভোর রাত থেকে পিকলুর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে রমাই প্রথম খেয়াল করল, ঘুম ভাঙার পর থেকে পিকলু আর স্বাভাবিক কথা বলতে পারছে না। যেটুকু মাত্র জড়তা ছিল, সেটা এখন আরও বেড়ে ঠিক অসংলগ্ন ধরণের হয়ে উঠেছে। পীযুষকে ডেকে বিষয়টা রমা দেখালো। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে ছেলেটা। কথা বলতে গেলে কষ্ট হচ্ছে। সকালে ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে গেছে প্যাথলজির ছেলেটা। ব্লাড রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে।

আজ পীযুষ কলেজে যায়নি। দুজনেই পালা করে ছেলের কাছে রইল। এর মাঝে স্নান খাওয়াটা কোনরকমে সেরে নিয়েছে ওরা। ব্লাড রিপোর্ট পৌঁছল দুপুর দুটো নাগাদ। পীযুষ চোখ বুললো একবার রিপোর্টে। ভালো ঠেকলো না তার। রমাও খানিকটা এই ব্লাড রিপোর্ট বিষয়টা বোঝে। অত্যধিক প্রোটিন মাত্রা রয়েছে রক্তে। যেটা মূলত নিউরোটক্সিন যে সেটা রমাও বুঝতে পারছে। বললে---তার মানে এখনো ভেনম রয়েছে। শম্ভু ঠিক এটাই বলছিল। এত সহজে এই বিষ শরীর থেকে মুক্ত হবে না। ডক্টর বিশেষ কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না।

এমনি সময় হলে এই কথার কোনো গুরুত্ব পীযুষের কাছেও থাকতো না। গত দু-আড়াই সপ্তাহ ধরে ঘটনাপ্রবাহ পীযুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে।

ডক্টর এলেন সাড়ে চারটে নাগাদ। রিপোর্ট দেখলেন, রুগীকেও দেখলেন। খুব একটা আশাবাদী দেখা গেল না তাঁকে। রমা এমনিতেই আর ডক্টরের ওপর একেইবারেই আশা রাখছে না। তাকে যে করেই হোক পিকলুকে শম্ভুর কাছে নিয়ে যেতে হবে। যে কোনো মূল্যে সে ছেলেকে সুস্থ করতে চায়।

গাঢ় বেগুনি নাইটিটা পরে এলোমেলো খোঁপায় রমা দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যালকনিতে। ওর চোখ নিবদ্ধ উল্টো দিকের লাল হয়ে আসা সূর্যাস্তের দিকে। পীযুষ গম্ভীর ভাবে রমার পাশে এসে দাঁড়ালো। স্পষ্টতই ও রমার চোখে দেখতে পাচ্ছে এক দৃঢ়চেতা মনোভাব।

পীযুষ ডাক্তারের নির্দেশ মত বললে---পিকলুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। খুব একটা দেরী করে লাভ নেই।

রমা ঝাঁঝিয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ---লাভ কিচ্ছু হবে না। ছেলেটাকে চোখের সামনে এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখতে থাকবো, আর কিচ্ছু নয়।

---রমা, আর তো কোনো বিকল্প পথ নেই। তুমি চাইলেই তো এখন ওই বেদেকে দেখাতে পারবে না। ওর ওখানকার গ্রাম্য সমস্যা তো তুমি দেখে এসেছো। কোনো সুরাহা আছে কি? ঐ বেদেকে যে বাড়ি এনে রাখা যাবে তার উপায় নেই। ওর নাকি ঐ সুন্দরবনে ওষুধ মেলে! তাজ্জব!

পীযুষের বক্তব্যে রুমা তীক্ষ্ণ ভাবে বললে---কেন তোমার ছেলে অসুস্থ হলে কি হাসপাতাল বাড়ি পৌঁছে যায়? মেডিসিনের দোকান বাড়িতে এসে হাজির হয়? তাহলে শুধু শম্ভুর বেলায় এমন কেন ভাবছ? ও না থাকলে কবেই...

রমা ফুঁপিয়ে উঠল। পীযুষ রমাকে বুকে চেপে শান্ত করে বললে---কিছু তো একটা উপায় বার করতে হবে।

রমা কান্না থামিয়ে বললে---ওরা চায় শম্ভু যদি বিয়ে করে আমাকে রাখে তাহলে আপত্তি নেই। সেরকম হলে...

পীযুষ বিস্মিত হল। এই চরম মুহূর্তেও হেসে ফেলল ও। বললে---পাগল হয়ে গেলে নাকি রমা!

রমা বলল---যা ভাবতে পারো। ছেলেটাকে বাঁচাতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। ষষ্ঠীকে ফোন করেছিলাম। বললাম ওর বাড়িতে যদি আশ্রয় পাওয়া যায়। ও বলল দিদিমনি এই এলাকায় আপনি থাকলেই ওরা শম্ভুকে সন্দেহ করবে, বড্ড বদ লোক ওরা। শম্ভুর ওপর আক্রমণ করবে। কাজেই আমার মনে হয় একটাই পথ, ওখানে কিছুদিন শম্ভুর স্ত্রী হিসেবে মিথ্যে পরিচয়ে থাকা।

রমার এবারের কথাগুলো শুনে পীযুষ বুঝতে পারছে রমা আবেগতাড়িত হলেও সে খুব সিরিয়াসভাবেই বলছে। ছেলেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় বলে তার এই মনে হওয়াটা যদিও বড্ড অযৌক্তিক। তাই পীযুষ বললে---রমা পিকলুর এই অবস্থা দেখে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই অমন আবোল তাবোল বলছ। এটা কোনো যৌক্তিক কথা নয়।

রমা রাগত স্বরে বললে---তোমার এই যৌক্তিক, অযৌক্তিকতার বেড়াজালে পড়ে থাকলে আজ পিকলুকে আমরা দেখতে পেতাম না।
তারপর সুর নরম করে রমা পুনরায় বললে---তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না? শুধু ছেলের জন্য একটা নকল পরিচয় সামনে এনে যদি ছ'টা মাস ওখানে থাকি, কি ক্ষতি হয়ে যাবে? আমাদের ছেলের জীবনের চেয়ে বড় ক্ষতি আর কি আছে? আর শম্ভু? শম্ভু ছেলেটা মোটেই অসভ্য নয়। তুমি ওকে দেখনি হয়ত, ও বড্ড শ্রদ্ধা করে আমাকে। একটা নিতান্তই নাটক করতে পারি না, শুধু ঐ গ্রামে থেকে আমাদের ছেলেকে ভালো করে তুলতে?  

পীযুষ বুঝতে পারছে না এখন, কোনটা যৌক্তিক আর কোনটা অযৌক্তিক! রমা এখন পিকলুকে বাঁচাতে মরিয়া। তাই ভালো-মন্দ বিচার করবার ক্ষমতা সে হারিয়েছে। পীযুষও তো ছেলের জীবন ফিরে পেতে চায়। তাদের ছেলেটা স্কুলে যাবে, আবার খেলবে, দৌড়বে, সুইমিং ক্লাবে সাঁতার কাটবে, এ তো তারও ইচ্ছে। কিন্তু এর জন্য রমাকে একটা নাটকীয় সম্পর্কে জড়াতে হবে একটা নিম্ন জনজাতির গ্রাম্য বেদের সাথে; এটা ভীষণই অসঙ্গতিপূর্ন। সঙ্গতিটা যে কি পীযুষও বুঝে উঠতে পারছে না।

সন্ধের দিকে রমাকে পিকুলর পাশে ঠায় বসে থাকতে দেখল পীযুষ। মাঝে মধ্যে এক দৃষ্টে জানলার দিকে বাইরে চেয়ে আছে। রমা জানে নিজের স্বামী পীযুষকে এমন একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দেওয়া তার নৈতিকতাকে হানা দিচ্ছে বারবার। কিন্তু সত্যিই এখন এসব ভাববার মত তার পরিস্থিতি নেই। সে শুধু পিকলুকে সুস্থ দেখতে চায়।

আবার রমার মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব উদ্ভূত হচ্ছে না চেয়েও আচমকা, এমন প্রস্তাব সে শম্ভুকে দিলে শম্ভুই বা মানবে কেন! রমা দেখেছে শম্ভু যতই অশিক্ষিত রূঢ় ধরনের একটা মানুষ হোক, তার মধ্যে একটা অদ্ভুত দৃঢ়তা আছে, জেদ বা গোঁড়ামিও প্রচন্ড। রমা পরস্ত্রী, শম্ভু এমন মিথ্যে পরিচয় দিতে চাইবেই বা কেন! যদিও শম্ভুর মধ্যে একটি সুলক্ষণ সে দেখেছে। সেটি হল মানবিকতা। যদি এই মানবিকতার সৌজন্যেই শম্ভুকে রাজি করানো যায়। যত্ন নিয়ে সে পিকলুকে সুস্থ করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছে। নিশ্চই রমার মত সেও পিকলুকে বাঁচাতে নিছক একটা মিথ্যে পরিচয় দিয়ে গ্রামের ঐ বর্বর লোকগুলোকে খান্ত করে রাখতে রাজি হবে!

রমার হঠাৎ করে শম্ভুর ওপর একটা আস্থা তৈরী হল। এই আস্থাটি অনেক আগেই জন্ম হয়েছিল তার মধ্যে। কিন্তু আজ তার নিজের অন্তরস্থল থেকে বাহির হল ঐ বেদে যুবকের প্রতি একটা বিশ্বাস।

রাত বাড়ছে। পিকলু খানিক সুস্থ হয়েছে বটে, কিন্তু কথা বলা কার্যত অবরুদ্ধ হচ্ছে যত সময় যাচ্ছে। পীযুষও আর পিকলুকে হাসপাতালে ভর্তি করবার প্রস্তাব দেয়নি। রমা অপেক্ষা করছে ভোরের আলো ফোটার। পীযুষের একটা অস্বস্তি হচ্ছে, সেও এখন বিশ্বাসী শম্ভুই তার ছেলেকে আবার সুস্থ করে তুলবে। কিন্তু রমা তার প্রেমিকা, স্ত্রী কিংবা সন্তানের মা, সে নামমাত্র হলেও ক'দিনের জন্য পর পুরুষের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত হবে, হতে পারে তা কলকাতা থেকে সাড়ে তিনঘন্টা পথের দূরবর্তী একটি অখ্যাত গ্রামে। তবু যে রমা মৈত্র তার অর্ধাঙ্গিনী।  
চলবে।
Like Reply




Users browsing this thread: 6 Guest(s)